এক রবিবার সকালবেলা আমি আমার বাড়িতে বসে দাবা খেলছিলাম। আমার বাবা ছিলেন আমার খেলার সঙ্গী। ... ...
"ও মা, আমায় এই রোবটটা কিনে দেবে?" "না! তোমার প্রচুর রোবট আছে।" "তুমি আমায় কক্ষনো রোবট কিনে দাও না।" "চুপ করো।" যে ছেলেটি বায়না করছে তার প্রচুর রোবট আছে; সে যত রোবট খেলনা পায় তত রোবট চায়। ... ...
আমাদের বাড়ির চারপাশে অনেক বেড়াল থাকে মাঝেমধ্যে তারা নিজেদের মধ্যে বেজায় ঝামেলা করে। ... ...
তা এই বাড়ির কোনকিছুই ওর নিজস্ব মনে হয় না, হয়ও নি কোনোদিন। আর শুধু বাড়ির কেন, এই পৃথিবীতে কোথায়ও কি ওর নিজস্ব কিছু আছে আদৌ! চাকরিটা বাবার জন্য শুরু করতে হয়েছিল, বিয়ের পরেও ছাড়তে পারে নি রমেনের জন্য। দাদার জন্যই লাইব্রেরীর চাকরি করেও পূর্বাঞ্চল সাংস্কৃতিক সঙ্ঘের হয়ে গণসঙ্গীত গেয়ে নাটক করে বেড়াতে পেরেছে। সেইটুকুই ছিল ওর নিজের আনন্দে বাঁচা। বাবা মায়ের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতো দাদা। সেই দাদাটাও অমন করে চলে গিয়ে পম্পাকে একেবারে শূন্য করে দিয়ে গেল। সেই যে ওর বুকের মধ্যে একটা আস্ত মরুভূমি ঢুকে গেল, সে কেবলই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একটু একটু করে প্রাণরস শুষে নিয়ে ওকে এমন তব্দাধরা কাঠের পুতুল বানিয়ে দিল। ফুলশয্যার রাত থেকে রমেন হিসহিস করে বলত ‘দ্রৌপদী! দ্রৌপদী এসছে আমার ঘাড়ে!’ পম্পাকে ব্যবহার করত ঠিক বাথরুমের মত। ওই করেই দুই ছেলে হল দেড় বছরের তফাতে। ... ...
সারাটা দাঙ্গার সময় খোকনের কলকাতায় কাটলো। কি আতঙ্ক, কি আতঙ্ক রে বাপ। রোজ অপেক্ষায় থাকে এই বোধহয় কেউ ছুরি হাতে বাসায় ঢুইক্যা আইলো। দাঙ্গা কি আর আগেও দ্যাখে নাই খোকন, ছোটখাটো কম হয় নাই দ্যাশেও।কিন্তু মাতব্বররা সালিসি করসে, কার দোষ ঠিক কইরা দিসে, থাইম্যা গেসে। ১৯৪৬ এর দাঙ্গার এক্কেরে আলাদা। কলুটোলা, রাজাবাজার,পার্কসার্কাস সব বেবাক চুপচাপ। লিচুবাগানের ঘটনার পর তো কলকাতা থম মাইর্যা গেলো। দ্যাশের খবরও খুব খারাপ। নোয়াখালি, আরও কত জায়গার খবর আসে। খোকন অস্থির হইয়া ওঠে, ভিতরে ভিতরে। দাঙ্গার আগুনে সব ছাড়খার।সন্ধ্যাবেলা পিসা আর পিসার বন্ধু অমলবাবু কত কথা কয়, খোকন শোনে একমনে।অমলবাবু বলেন " বুঝলে মিত্তির, লীগ আর হিন্দুমহাসভার নেতাদের বোঝানোই গেলো না, এ লড়াই হিন্দু মুসলমানের বিরুদ্ধে নয়, এ ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে" পিসা কয়,"স্বাধীনতা ও যেই ভাবে আইলো, তাতে লাভ কী হইল অমলবাবু? দ্যাশভাগ আর লাখে লাখে মানুষ আজ ভিটা মাটি ছাইড়া আইতাসে পূর্ব পাকিস্থান থিকা,দাঙ্গা কমলেও এই ভয় কী কমবো কোনোদিন! দুইটা জাতির বিশ্বাস, ভালোবাসা তলানিতে আইসা ঠেকলো ব্রিটিশের শয়তানি আর নেতাদের ভুল চালে।" অমলবাবু কন, ' দাঙ্গা সাধারণ হিন্দুও চায় না মুসলমানও চায় না।চায় শুধু দাঙ্গাবাজগুলো" খোকন ভাবে মামুদ, আনোয়ার তো তারে ভালোবাসে, চিঠি দেয়। খোকন কবে আইবি রে? খোকন তুই নাই তাই ফুটবল খেলা জমে না। তাদেরও অন্তরে বিষ? ... ...
নটেন হাঁ করে বড়ো ছেলেকে দেখতে থাকে, দেখতে থাকে নির্নিমেষ। সে একবার ভাবল বাকি ভাত ক'টি কি সত্যেনকে খাইবে দেবে? ফের ভাবে থাক, ভাতটা ঢাকা দিয়ে এখন ছেলেকে খাটে শুইয়ে দেবে? সত্যেন কি অসুস্থ? নাকি ক্ষুধায় মুমূর্ষুপ্রায়? সত্যেনের ওয়াক ওয়াক স্তিমিত হয়েছে। সাপের নিশ্বাসের মতো ফ্যাঁসফেসে শব্দ বেরোচ্ছে এখন মুখ দিয়ে। নটেন কুপি তুলে ধরে সত্যেনের মুখের কাছে ধরতে গেলে তেল ফুরিয়ে যাওয়া কুপির শিখার টুপ করে নিভে-যাওয়া নিপূণ অন্ধকার। ঘরের ভেতরের কুপিটির আলোয় মাটির দেয়ালে আবছা দেখা যাচ্ছে সত্যেনের মা আরতি মরার পর কাগজের ওপর নটেনের নেওয়া পদতলের আলতার জোড়াছাপের ফটো। আধো আলোয় অন্ধকারে দূর থেকে প্রাচীন মথের মতো দেওয়ালে সে পদচিহ্ন। ... ...
কূলের কিনার থেকে ডাক দেয় পরীবানু। মাঝির মতিগতি যেন কেমন কেমন লাগছে। এত কি কথা বলেশ্বরের সঙ্গে ! বাসুকীর মা মাসীমা এসেছিল গেল কাল সন্ধ্যায়। রোজা থেকে থেকে মিলনের মুখের রুচি চলে গেছে, খেতে স্বাদ পাচ্ছে না শুনে কলাপাতায় মুড়ে কতগুলো পুরনো টক তেঁতুল দিয়ে গেছে শরবত বানানোর জন্য। চোত বোশোখ মাসে রোজা করা মানে জাহান্নামের আগুনে সেদ্ধ হওয়ার সমান। জিভ শুকিয়ে খড়ি হয়ে যায়। খা খা করে শরীর। যাওয়ার সময় মাসী চুপিচুপি বলে গেছে, মাইয়েরে মাইয়ে, চক্ষু দুইহান চেতায়ে রাহিস। রোজার ধকল তাও সয়, সাগরের ডাক কিন্তুক মানানো যায় না রে মাইয়ে। ঢনঢন করে ওঠে পরীবানুর বুক। রাগে দুঃখে গাল পাড়ে, ঢ্যামনা বলেশ্বর। মাইয়ে পোলাপানগো লাগান ছেনাল হইছিস হারামাজাদা তুই। বলেশ্বর ঢেউ তুলে কতগুলো কচুরীপানা ভাসিয়ে দেয় কূলের কিনারে। মিলনের পেছনে দপদপিয়ে হেঁটে আসা পরীবানু কি বুঝে কে জানে। নিজের প্রৌঢ় চোখকে বিশ্বাস করতে না পেরে বার বার পেছনে তাকায়। কুলকুল করে হাসছে বলেশ্বর ! পানি ছিটোচ্ছে ওদের ফেলে আসা পদচিহ্নমাখা পথে। ... ...
শৈশবের ক্ষণস্থায়ী চিত্রণ, দুরন্ত বালকের দৌরাত্ম্য, মা-বাবার স্নেহ, গ্রামের শীতের সকাল, পল-অনুপল কৈশোরের স্মৃতি, প্রথম প্রেমের ব্যর্থতা, অসংখ্য ভুল সিদ্ধান্তের আবছায়া জাল হাতের মুঠোর আঙুলের ফাঁক দিয়ে অন্তর্হিত হয়ে যায়। এরপর আসে যুদ্ধের স্মৃতি, অসিতোপলের নির্দেশে সে দিতার কাছ থেকে একটি ঘড়ি নিয়ে এসেছিল, সেই ঘড়িটি চিতাদের বিরুদ্ধে সমতলের মানুষকে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু এর সঙ্গে একটা বেদনাবোধ জড়িয়ে আছে। রাতের ধাবমান ট্রেনের কাচের জানালায় বৃষ্টির জল ঝরে পড়ে। জানালায় মুখ লাগিয়ে পড়তে চায় সে না-থামা স্টেশনের ঝাপসা নামফলক, স্মৃতির স্টেশন থাকে থামতে দেয় না। ট্রেন থামানোর সুযোগ থাকলে সে নেমে সঙ্কেত বদলে দিত, এই লাইনে তার ভ্রমণ করার কথা নয়। এক অসীম ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে সে। ... ...
‘মা দেখো বুকাই আবার বেডকভার চাপা দিয়েছে’ চেঁচিয়ে, ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় না থেকে চাদর কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করত। পুকাই চিরকালই অস্বস্তিজনকরকম নর্ম্যাল। পরিবেশপরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাজপোশাকে বিশ্বাসী। শীতে বেশি, গরমে কম, সমুদ্রস্নানে আরও কম। কালই দেখলাম, কার্লসবাড বিচে সপরিবারে উল্লসিত স্নানের ছবি আপলোড করেছে, বিকিনিপরিহিত। না, ফেসবুকে নিজের নামে নেই আমি। ফেক থেকে দেখেছি। ... ...
বুচকুনের নাকে শিকনি দেখলে বৌমনি ভীষণ রেগে যায়।আর মা রেগে যায় মাফিনের কাগজ খেতে দেখলে।কিন্ত একমাত্র বুচকুন জানে ঐ কাগজ খাবার কী সুখ! চিবিয়ে চিবিয়ে ছিবড়ে বানিয়ে দেয় কাগজটাকে। তারপর পারলে পাপোষের নিচে ঢুকিয়ে দেয়। কুলসুম দেখতে পেলে পিঠের চামড়া তুলে দেবে। বুচকুন এইবাড়িতেই ভালোমন্দ খাবার পায়। চাউ মিন। চপ। মিষ্টি। পোলাও। কিন্ত এইসব খাবারে কোন কাগজ নেই যে খাবার শেষ হবার পরেও চিবিয়ে সুখ হবে। তাই বুচকুন মাফিনের জন্য হাঁ করে থাকে। এমনকী মা যেদিন তাকে নিয়ে যায় না, সেদিনও। ... ...
আজকের পর্বটা ভালোই জমে উঠেছে। বিজ্ঞাপনসহ পঁয়তাল্লিশ মিনিটের শো। প্রথম দুই পর্ব এরই মধ্যে শেষ। সুবহান আর লতা পাল্লা দিয়ে হেসেছে। সুবহান এমনিতেই খুব হাসতে পারে। এটা ওদের পারিবারিক রোগ। সুবহানের বাবা মাটিকাটার কাজ করত। অভাব অনটনের মধ্যেও লোকটা এত হাসত যে পাগলের মতো দেখাত। যেদিন ওর মা ইটভাটায় জ্বালানির সঙ্গে জ্বলেপুড়ে কয়লা হলো, সেদিন বিকালেও হেসেছে। তাও খুব সামান্য কারণে, একটা ছাগলের ছা লাফাতে গিয়ে দড়িতে বেঁধে উপুড় হয়ে পড়ে গেছে, তাতেই সে কী হাসি! শেষ পর্যন্ত পাগল বলে সকলে এক প্রকার মেনে নেয়। সুবহানের বাবারও মানতে অসুবিধা হয়নি। আশেপাশে কেউ পাগল বলে ডাকলেই দাঁত কেলিয়ে উত্তর নিত। আর পাগল বলেই কিনা দুজনের কাজ করে অর্ধেক মজুরি পেত। সেই থেকে সুবহানের ধারণা হাসাটা ওদের অসুখ। মেয়েকেও সেই অসুখে পেয়েছে দেখে সুবহানের কষ্ট হয়। ... ...
একটু বেলা পড়ার দিকে পদ্মপাতায় খাবার সময় ও জোরে জোরে নাক টানত, আর বলত, আঃ! কী সুন্দর গন্ধ গো বাবা! যেন ভোজ খাচ্ছি। অথচ গাছ কীই বা রাঁধতো তার পাতায়? আওতার গাছ, যতটুকু রোদ-জল রুক্ষ মাটি থেকে টেনে নিতে পারে, তা বইতো নয়? সেই তো শাক ডাঁটা, বিড়ির ডাল। বড্ড জোর চুনোমাছের চটচটে করে ঝাল। কোথাও জল ছিঁচে, নাহলে জাল টেনে ধরা। বিক্কিরি করার পর বাকিটা রান্না। বড্ড ভালো রান্না করতো। পদ্মপাতায় খেলে মনে হবেই ভোজবাড়িতে খাচ্ছো। ও আঙুল চেটে চেটে খেতো। পাত আঙুলের ডগায় পরিষ্কার হয়ে যেত। ওর খাওয়া দেখে ওরা দুজনে কী খুশিই না হতো! হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে থাকত ওর দিকে। তারপর তিনজনে একসঙ্গে হেসে উঠত। বড় সুন্দর ছিলো সেসব দিন। ... ...
মাঠে মাঠে সরষের ফুল এসেচে। উঁচু,নিচু টিলা জমি। সব ইখন হলুদ। ইখন তো ফুলেরই পরব। সরু লিকলিকে আলপথ ধরে হেঁটে হেঁটে মেলা দিখতে যাচ্ছে বুড়ো,বুড়ি,ছেলে-ছুকরা। কেউ কেউ লাল মোরাম রাস্তা ধরে ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে সাইকেল চালিয়ে ছুটচে। বনের পাশেই ডাঙা টিলা মাঠ,উখানেই মেলা বসেছে। মনোহারি জিনিসের দুকান,বাচ্চাদের বাঁশি,ডুগডুগি খেলনা। কত রকমের খাবার দাবার,তেলে ভাঁজা,ঝিলাপি। কুথাও বা গাছের তলায় মাটির হাঁড়ি-কুড়ি বিচছে। এক জায়গায় সাইকেল,পিক-আপ ভ্যান দাঁড় করানো সারি সারি। ইকটো সাঁওতাল বুড়হা ঘুরে ঘুরে আড়বাঁশি বিচছে। লিজেই সুর তুলচে মন গেলে। লাল ধুলো উড়ছে আকাশে। সেই ধুলো মেখেই মেয়ে মরদ হাত ধরাধরি করে ঘুরছে। আশপাশের সব গিরাম থিকেই ভিড় জমিয়েছে। শুধু কি সাঁওতাল? বাবুরাও মজা লুটতে আইচে। ... ...
বাঁ দিকের রাস্তাটা নেব নাকি সোজা? ঘরে পৌঁছব কী করে? বারবার এই রাস্তায়ই বা আসছি কেন? কীরকম যেন গা ছমছম করছে। কী করব? যদি এখান থেকে বেরোতে না পারি। এখানেই ঘুরব? এত বলে বড়রা, এতবার করে বলে, দলের বাইরে না যেতে – একদম নতুন জায়গা, কাউকে চিনি না, রাস্তা চিনি না... নিজের দলের সাথে সবসময় থাকতে। ... ...
বাবা যেদিন ফিরল খবর আনল হিন্দুরাও মুসুলমানেদের পালটা মেরেছে, ওদের মতই পিটিয়ে পুড়িয়ে মেরে দিয়েছে। বলতে বলতে বাবার চোখ জ্বলজ্বল করে মোটা গোঁফ থিরথিরিয়ে নাচে, টুলির মনে হয় তাহলে কি হিন্দুরাও মেয়েদের পেলেই ... আর ভাবতে পারে না, আবার শক্ত কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মা এসে দুই গালে ঠোনা মেরে বলে ‘এই এক ন্যাকাষষ্ঠী মেয়ে দ্যাখ না দ্যাখ ভিরমি যাচ্ছে।’ দুদিন পরে ওরা বামুনহাটে চলে গেল, নাকি সেখানে মুসুলমানেরা সব প্রজা, কত্তাদাদার জুতোর নীচেই থাকে সব। ওদের রেখে বাবা আর কাকামণি আবার ফিরে এসেছিল, কলকাতায় অনেকদিন পর্যন্ত সমানেই গন্ডগোল চলেছে এদিক সেদিক। ... ...
হ্যাঁ স্যার, আসলে ওটা তো হন্টেড হাউজ। আপনি দূর থেকে আর কীভাবে বুঝবেন আমার কী অবস্থা হচ্ছে। একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছি স্যার। নাক মুখ থেতো হয়ে গিয়েছে। যাকে বলে ঘাড়ে ধাক্কা। বিশ্বাস না হয় ছবি পাঠাব স্যার? ... ...
রুদ্র জ্যৈষ্ঠ। সকাল নটা-দশটাতেই রোদের যা তাত! গা যেন ঝলসে যায়, সওয়া যায় না। পিরবাবার মাজারের দিক থেকে হাওয়া আসে। হাওয়া তো নয়, আগুনের হলকা। পাক খেতে খেতে ছুটে আসে গ্রামের দিকে। ঝলসিয়ে দেয় চামারদের বিবর্ণ গেরস্থালির আয়োজন। নেহাতই একটেরেতে বাসের ব্যবস্থা, গ্রামের অনেকটা দক্ষিণে। এদের গায়ের হাওয়া যেন আশরাফদের গায়ে না লাগে। হাওয়াকে নিয়মের গণ্ডিতে বাঁধে কার সাধ্যি। তবু চেষ্টার কমতি নেই! ... ...
আমরা কাকের ডাক শুনছি। আমি আর ঝুনু। আর কোনো পাখি নেই, একটাই কাক কেবল কাঁটা কুলগাছের ডালে। ছাদের কার্নিসে বসে দু’জন তাকিয়ে আছি পশ্চিম আকাশের দিকে। গাঁথনি করা দুটো ফ্ল্যাটবাড়ির তরতর উঠে যাওয়ার ফাঁকে খণ্ড আকাশ, কয়েকটা লাল আঁচড় তার গায়ে। এত মন দিয়ে আমরা শেষ কবে কাকের ডাক শুনেছি? কাকটা একবার করে ডাকছে, পরের ডাকের আগে এক দীর্ঘ নিশ্চুপ। সেই স্তব্ধ আমাদের ভেতর অস্থির করছে। আমি একটা খুন করতে যাচ্ছি। ... ...
সে পেছন দিকে আর না তাকিয়ে একা উস্কোখুস্কো হয়ে যবুথবু পা ফেলতে থাকে রেল লাইন ধরে। তার ডানহাতের দিকে রেল পাঁচিল আর কয়েকটি ভাঙাচোরা রেল কোয়ার্টার, কোয়ার্টারগুলো এখন মালিকানাহীন ভূতুড়ে আস্থানা; কোনো দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে, মনে মনে বলে সে “হে আল্লাহতালা! যেসব ডাক্তাররা আমার কালুয়ার চিকিৎসা ঠিক মতো করেনি; তাদের তুমি হেদায়েত দান করো, ক্ষমা করে দিও তাদের।” ... ...