হিন্দুস্থানের তাজ সেই দমদার পেহলোয়ানের দঙ্গলে কেন মেয়েরা থাকবে আর উত্তর দিয়েছে মেয়েরাই, তারাও হয়েছে সমান পেহলোয়ান। বসে আছে পেহলোয়ানের দল সারি দিয়ে। বেইজ্জতির মাহোলে বেইজ্জত হয়েছে কোন মেয়ে কুস্তিগির। সুরত উল ফজরের আভায় সত্যি দেখতে দেখতে যেন সত্যিই দেখা যাচ্ছে নাইনসাফির ক্ষত। একটু বেলা হতে তাজমহলের রূপটাও একটু অন্যরকমের খোলে। সেই রূপটাকে কোরানের আয়াতে বলল সুরত উল দোহা। তাজা সূর্যের চনমনে রূপ আবার সারিসারি কুস্তিগিরের ওপর দিয়ে ঠিকরে গিয়ে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের ঐসব তাজদের বিপন্ন মুখ দেখা গেলেও তারা বেশ চনমনে এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। তারপর দুপুর বারোটা একটা নাগাদ সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপর আর গনগনে দেখা যাচ্ছে, রোজ এই সময় -তাজমহলও তার রূপ বদলে নেয়। এইরূপে তাজমহল হল সুরত উল সামস। একইভাবে কুস্তিগীরদের সারটাও দেখা যাচ্ছে বদলে গিয়েছে। এরপর মধ্য আকাশে সূর্য সরে যায়। তার জায়গা নেয় দুরন্ত মেঘেরা। ... ...
"দিম্মা, ও দিম্মা! শোনো না, আমাদের না একটা লেখাকে ব্যাখ্যা করতে বলেছে, তুমি আমায় একটু সাহায্য করবে? ও দিম্মা!" মণিমালা দেবী আকস্মিক এই ডাকে পেছন ফিরতেই দেখলেন, মিমি তার গলা জড়িয়ে খাটের উপর বসে! এখনো তার গালে অতীতের কথা চিন্তা করার প্রমাণ দৃশ্যমান। "এ বাবা, দিম্মা! তুমি কাঁদছো?" "না, দিদিভাই! ও এমনি। তুমি বলো কী বলছিলে!" "দিম্মা আমাদের স্কুলে না একটা লেখাকে ব্যাখ্যা করতে বলেছে! তুমি আমায় একটু বলে দেবে?" ... ...
তাদের মাঝখান থেকে তাপ্তী, তরুণকে এক হ্যাঁচকা টানে তুলে ফেলে টানতে টানতে আমাদের দিকে নিয়ে আসতে লাগল। এমন সময় দুই ডাইনোসরের যুদ্ধে একটা গোটা গাছ আমাদের চারজনের মাঝখানে এসে পড়ল। তরুণকে যখন এদিকে আনার চেষ্টা হচ্ছে তখন আমি হঠাৎ আমার পকেটে একটা দড়ি আবিষ্কার করলাম। একটা পাথর ঐ দড়ির মাথায় বেঁধে আমি তরুণদের দিকে ছুড়ে দিলাম। সেটা পড়ে যাওয়া গাছের ওদিকের একটা ডালে আটকাল। তরুণ দড়ি বেয়ে সহজেই এদিকে চলে এল। কিন্তু তাপ্তী যখন দড়ির কাছে যেতে যাবে, তখন ভয়ংকর এক চিৎকারে আমরা সবাই চমকে গেলাম। দেখা গেল যে, টি-রেক্স অ্যালোসরাসকে ঘোরতর যুদ্ধে পরাজিত করেছে। তাপ্তী ততক্ষণে দড়ি বেয়ে উঠতে আরম্ভ করেছে। ডাইনোসরটা এবার তাপ্তীর দিকে এগোতে শুরু করল। তাপ্তী গাছ থেকে লাফিয়ে নেমে এক হ্যাঁচকা টানে দড়িটা ছাড়িয়ে ছুট দিল। ... ...
কিন্তু গোলুর মনকেমন যায় না। ক্রমশ বাড়ে। চোখের সামনে মেয়েটাকে কষ্ট পেতে দেখতে ভালো লাগছে না গোলুর। হঠাৎ আকাশ থেকে একটা শিউলিফুল এসে পড়ে। একটু বড়! গোলু যেই না হাতে নেয়, ফুলটা কথা বলতে শুরু করে। বলে, "গোলু, তোমার মনে আছে মেঘ দিদির কথা?" গোলু বলে, "হ্যাঁ। কেন বলো তো?" "ওই আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছে। তোমার দুঃখ মেটাতে। কি হয়েছে তোমার?" শিউলি ফুল বলে ওঠে। কিন্তু গোলু কিছু বলেনা। ওর মনে হয় স্বপ্ন দেখছে। গোলু বলে, "জানো তো, ওই যে মুখুজ্যেদের বাড়ির কাছে, একটা মেয়ে বসে আছে, পুরনো গোলাপি জামা পরে, ওর খুব কষ্ট। পুজোয় একটাও জামা হয়নি। খুব দুঃখ। এদিকে দেখো। ... ...
আজ এক্কা দোক্কা খেলছিল ওরা, পাশ থেকে হঠাৎ শুনতে পেল, “এটাকে পাগলা গারদে দেয় নাকেন রে? মাথায় তো আমার ঠাকুমার থেকেও বেশি ছিট, হি হি হি”, কাকে নিয়ে ঠিক কথাটা বলল বুঝতে পারল না ঠিক তিথি, ওরা আর তিথিরা ছাড়াতো কেউ নেই। “কীরে তোর পালা তো এবার” শতাব্দীর ডাকে আবার খেলায় মন দিল সে, যদিও মনটা খচখচ করতে থাকল, কারণ মাঝে মাঝেই দেখেছে লোকে অদ্ভুত ভাবে ওর দিকে চেয়ে থাকে, হাসাহাসিও করতে ছাড়ে না আড়ালে, যেমন নীলাকাকিমা চেয়েছিল আজ। বৃষ্টি বা ঠাণ্ডার দিন ঘরে ওরা লুডো বা দাবা-টাবা খেললেও মাঝেই মাঝেই মাকে একদুৃষ্টে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে, অথচ ও বুঝতে পারে না ওর দোষটা কোথায়! বাইরে ফিটফাট পরিপাটি হয়েই বেরোয় ও, শতাব্দীও তাই, তবুও। আচ্ছা, আজ কী ওর সম্পর্কেই কথা বলছিল ওই দাদাগুলো? বলছিল হয়ত, সে যাক। ... ...
রাস্তা পেরিয়ে ঢুকল সেই বাড়িটায়। সাদা ফলকের ওপর লেখা প্রফেসর বিমলানন্দ রায়। সে বাগানের কল থেকে জল নিয়ে একটু একটু করে গাছগুলোয় জল দিল। তারপর আবার দরজায় কান রাখল। অবিকল গতকালকের মতো শব্দ। তকমক, কচতক। সে বোঝার চেষ্টা করলো, নাহ, টাইপরাইটার তো নয়। কীসের শব্দ? খাবার চিবানোর শব্দ কি? হ্যাঁ। তা-ই তো মনে হচ্ছে। দুটো মানুষ যেন কিছু খাচ্ছে। ফাঁকা ঘরে প্রতিধ্বনিত হয়ে তা বিকট আকার নিচ্ছে। দেওয়ালে দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে সেই শব্দ। জল খাওয়ার শব্দ। জলের গ্লাস ঠক করে টেবিলের ওপর নামিয়ে রাখার শব্দ। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ডাকল, প্রফেসর রায়! মিসেস রায়! শুনছেন? বাড়িতে কেউ আছেন? তারপর বন্ধ তালাটা ঠকঠক করে দু'বার ঠুকলো সে দরজার ওপর। কোন সাড়াশব্দ পেল না। কেবল সেই এক শব্দের ওঠা নাম। যেন চোয়াল, দাঁতের মাড়ি, জিভ, লালা আর পিষন যন্ত্রের অদ্ভুত ককটেল। চর্বিত চর্বন। ... ...
পরনের ফতুয়াটি দুইমাসাধিক ধীরেও নয় ধৌতি, মাদনে গন্ধ, মাতনে নালকৃষ্ণ হে মাতঃ, তত্রাচ এই গোকুল সন্ধ্যা এই ঘিরি ঘিরি কর্দম মর্তম পালং জুড়িয়া বেডশিটে সমাসীনা কার্পাস কল্লকাগুলি, শ্রীলঙ্কার নিকট অই নিউ বেঙ্গল বস্ত্রালয় ব্লকছাপখানি, এ নেহাৎ ঘন্টাঘরের কেন্দ্ররূপ বৈ ত নয়। মনোময় সেই কেন্দ্রগতে দণ্ডবৎ হইবার পারে। তাহার হস্তের অঙ্গুলিমাল নখাগ্রে ওতপ্রোত, নখাগ্র টিউলাইটের ম্লানালোকে থিরকম্প্র। আজ দুইদিবস কেহ দরোজাকরে আঘাত করে নাই। আজি মাসাধিক দ্বারদ্রুম বন্ধ। ... ...
আমার মা দিনের পর দিন আমার জন্য অপেক্ষা করত। কেবল, জন্মদিনগুলো মায়ের সঙ্গে কাটাতাম প্রত্যেক বছর। রুচিরাও কোনও কোনওবার আসত। আমার মেয়েও আসত। নাতনিকে চোখে হারাত মা। ঠাকুমা মারা যাবার পর, পিসি মারা যাবার পর ওই ভূতগ্রস্ত বাড়িতে কেবল মা একলা। বহুবার বলেছি আমাদের সঙ্গে এসে থাকো। সামান্য দু-একদিন এসে থাকলেও ওই বাড়ি ছেড়ে আসতে চাইত না মা। হয়তো শ্বশুরবাড়ি, স্বামীর স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চাইত। গোটা জীবনই একা হাতে আমাদের বড়ো করে তুলেছিল মা। নার্সিং হোম থেকে বলল, প্রায় একলাখ টাকা বাকি। কোভিড পেশেন্টের বডি ওরা বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেবে না। কর্পোরেশনের গাড়ি আসবে। ওরাই যোগাযোগ করবে। ... ...
হঠাৎ শুনলাম আমাকে কেউ ডাকছে – তার গলার আওয়াজ খুবই মিষ্টি৷ “কে কথা বলছেরে বাবা? আমি ভয পেয়ে ওই ঘর থেকে দৌড়ে চলে গেলাম৷ কেউ যেন আমাকে তাও ডাকছিল মিষ্টি আওয়াজে৷ “ভয় পেও না আমি তোমায় সাহায্য করতে এসেছি...। ... ...
ঝুমুর এক হাত দিয়ে ডালটা ধরে, নিজেকে টেনে তুলল গাছের উপরে। ওর মনে পড়ে গেল, যে ঠিক এক মাস আগে কি হয়েছিল ঠিক এই জায়গাটাতে, এই গাছটার নিচে। ... ...
মেঘনার মন ভালো নেই। ওর মনে হচ্ছে দুটো কাছের মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে মেঘনা দেখল একটা চড়ুইপাখি... ... ...
মণিকা চোখ খুলল। কোন এক কারণে তার ঘুম ভেঙে গেছে, ঘড়িতে সময় দেখলো সকাল সাড়ে সাতটা। মণিকা জানে তার একবার ঘুম ভেঙে গেলে সে ঘুম আর আসবে না। ... ...
একদিন সকালে তিতলি ঘুম থেকে উঠল এক অজানা দুনিয়াতে। ... ...
একদিন অভীক, সময়, বিমান আর নবীন গ্রামের মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। খেলতে খেলতে বলটা অভীক এত জোরে মারল যে সেটা মাঠের পাশের জঙ্গলে গিয়ে পড়ল। ... ...
আমার গল্পের ছোট্টো ছেলেটির নাম গোলগোল। গতবছর শীতকালে সে তার বাবা মায়ের সাথে কেরালা বেড়াতে গিয়েছিল। ... ...