য়োখেন আমার গভীর সংশয়ের আখ্যান শুনে বললে, জ্ঞান দিও না। .... এই যেমন তোমরা সিটি ব্যাঙ্ক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার যোগাড় করে আফ্রিকার ঘানা কোকো বোর্ডকে ধার দিচ্ছ, আর সেটা ফেরত পাচ্ছ কোকো বোর্ডের নেসলে প্রমুখ খ্যাতনামা ইউরোপীয় চকোলেট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। ঘানা কোকো বোর্ডকে চেনে দুনিয়ার কোন বান্দা? কিন্তু এক বিলিয়ন ডলার দিতে বাজার পিছপা হচ্ছে না – কারণ তারা চেনে নেসলেকে, যারা কোকো থেকে চকোলেট বানায়। কোকো গেছে নেসলের ঘরে। তোমার আমার ছেলেমেয়ের দাঁতের সর্বনাশকারী চকোলেট বেচে তারা ঠিক টাকা দেবে। আমরা সেরকম একটা কিছু করতে চাইছি। ... ...
যে পানীয় প্রস্তুত করার গৌরবে এ দেশ অমরত্বের দাবি রাখে, অকস্মাৎ ছোট ছোট গ্লাসে রাশিয়ার সেই শ্রেষ্ঠ পানীয় আমার সামনে উপনীত হল। গ্লাসের আকৃতি দেখে ভাবলাম, ভদকা তুমি এত ছোট কেনে? সকলেই সেটি দ্রুত পান করলেন। গ্লাসগুলি টেবিল থেকে অদৃশ্য হল মুহূর্তের মধ্যে। গরুর ঘাস থেকে মানুষের স্টেজে উঠলাম। এবার আগমন আলুসেদ্ধ গোছের কিছু, তার সঙ্গে বাঁধাকপি। সেগুলো টেবিলে রাখা হয়েছে কি হয়নি, কে বা কারা আবার আমার সামনে হাজির করলেন ভদকার ছোট গ্লাস। মানে কী? এঁরা কি এইভাবে কিস্তিতে কিস্তিতে ভদকা পান করেন? প্রশ্নটা ডাক্তার সাহেবের জন্যে জমিয়ে রাখলাম। ... ...
মস্কোর বয়েস ন’শ’ বছর। মাত্তর ১৮ শতকে জার পিটার দি গ্রেট এই ভুঁইফোড় শহরটির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম নাম সাঙট-পিটার-বুর্খ (ডাচ)। জার্মান প্রভাবে সেটি হয়ে দাঁড়ায় সাঙট পেটার্সবুর্গ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান শব্দ ব্যবহার জনবিরোধী বিবেচিত হল। নাম বদলে পেত্রগ্রাদ – পিটারের গড়! এই সময় ব্রিটেনেও দু’টি নামের পরিবর্তন হয় একই কারণে। লর্ড বাটেনবের্গ (ফ্রাঙ্কফুর্টের অনতিদূরের গ্রাম) হলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন (বের্গ = পাহাড় = মাউন্ট: বাটেন হল ব্যাটেন)। ব্রিটিশ রাজপরিবারের পরিচয় হাউস অফ হানোভার (জার্মান শহর, যেখান থেকে রাজা জর্জকে খুঁজে এনে সিংহাসনে বসানো হয় ১৮ শতাব্দীতে – পরবর্তী ছয় রাজার ধমনিতে ছিল জার্মান রাজরক্ত, প্রত্যেকে জার্মান বলেছেন) বদলে হাউস অফ উইনডসর। সহজ ব্যবস্থা। জার্মানির সঙ্গে যখন লড়াই চলছে, পিতৃপুরুষের নাম বদলে ইংরেজ সাজাটাই তো বাঞ্ছনীয়। ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুরমানসকের ভূমিকা বিশাল। জার্মানদের রাশিয়া আক্রমণের পর এই বন্দর দিয়েই মিত্র শক্তি সাহায্য পাঠাতে থাকেন। লেনিনগ্রাদ ও স্টালিনগ্রাদের মত মুরমানসক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি হিরো সিটি বা বীর শহর নামে পরিচিত। শহরের প্রায় চুড়োয় একটি বিশাল মূর্তি আছে, তার নাম আলইশা। সেটি সেই সংগ্রামের স্মারক। নিচের কোলা উপসাগরে বরফ ভেঙে সমুদ্রপথ পরিষ্কার করার প্রথম আণবিক শক্তি চালিত জাহাজ “লেনিন” বন্দরে নোঙর করা আছে। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে অনেক বরফের দেয়াল খনন করে ১৯৮৯ সালে লেনিন এখানে বিশ্রান্তি গ্রহণ করেছে। এতটা উত্তরে এলে সারা দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন মনে হয়! সেটি হয়তো সঠিক নয়। আলইশা স্ট্যাচুর পদতলে দাঁড়িয়ে কল্পনাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলে মনে মনে হয়তো অনেক দূরে চলে যাওয়া যায় – এই তো সামনে কোলা উপসাগর, সেটি গিয়ে মিশেছে বারেনট সাগরে। সেখান থেকে একটু বাঁয়ে ঘুরলেই কানাডার সমুদ্রপথ। বছরে অন্তত পাঁচ মাস খোলা থাকে। এর নাম সুমেরু সেতু। মালবাহী জাহাজ যেতে পারে চার হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ম্যানিটোবার চার্চিল বন্দরে। আর খাড়া উত্তরে গেলে মাত্র দেড় হাজার কিলোমিটার দূরত্বে উত্তর মেরু। পা আরেকটু বাড়ালেই তো খাঁটি উত্তর বা ট্রু নর্থ! ... ...
প্রতিবছর কেল্লা নিজামতের মধ্যে নানান উৎসব ও অনুষ্ঠান পালিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হল পারসিক নববর্ষ বা নওরোজ। নবাবী আমল থেকেই মুর্শিদাবাদে রাজকীয় ভাবে নওরোজ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এইদিন কেল্লার প্রতিটি বাড়ি সেজে উঠত। নওরোজের দিন সকাল থেকেই ইমামবাড়া আনন্দ মুখর হয়ে উঠত এবং সেখানে একটি বিরাট বড় দস্তরখওয়ান পেতে তার উপর নানান রকমের খাবার ও ফলমূল সাজিয়ে হজরত আলীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হত। ... ...
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একটি বিশাল কাঠের বাড়ির সামনে থামার নির্দেশ পেলাম। বোঝা গেলো এটি মানুষ পরীক্ষা করার কারখানা। তার চত্বরে কয়েকটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ইউনিফরম ধারি পুলিশ ইঙ্গিতে আদেশ করল গাড়ি ছেড়ে অফিসে ঢুকতে। পাঁচ ধাপ সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে যাব, আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হল বহু ভাষায় লিখিত একটি সাবধান বাণীর প্রতি। রাশিয়ান নরওয়েজিয়ান সহ সকল নরডিক, ইংরেজি, জার্মান ও ফরাসি ভাষায় লেখা আছে: এই সীমান্ত চৌকিতে কোন প্রকার ঘুষ দান করা অথবা ঘুষ দান করার প্রচেষ্টা একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ছবি তুলতে গেলে রক্ষী বাধা দিলো। আমি পিরকোকে বললাম তার মানে এখানে টাকা দেয়া নেয়ার ব্যবসা চলে। সে চিন্তিত হয়ে বললে আমার কাছে তো রুবল নেই। ... ...
কেল্লার ভেতরে নবাবের দরবারের আলো নিভে গেছে, বহু বছর হল নবাবী গৌরবও অস্ত গিয়েছে। শ্বেত পাথরের ফোয়ারায় আর রঙধনু রং ধরেনা, এখন আর নবাবের ভাঙ্গা প্রাসাদ থেকে দরবারী কানাড়া, দাদরা ঠুংরির আওয়াজ ভেসে আসেনা, প্রতি সন্ধ্যায় সারেঙ্গীর সুরও আর বাজেনা। নবাবের সাধের ফুলের বাগান আজ গভীর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ... ...
আউগুসট বেবেল স্ত্রাসের মোড়- এখানে একদিন জানতে চেয়েছিলাম মাকস শিফারডেকার স্ত্রাসে কিভাবে যাব।দশ বছর আগে গাড়ি দাঁড় করিয়ে একজনকে প্রশ্ন করলে তিনজন হাজির হতেন এখন একজন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা দূরের কথা দর্শন পাওয়া দুরূহ ব্যাপার। নীল শাদা অক্ষরে লেখা আছে মাক্স শিফারডেকার স্ত্রাসে। চেনা বাড়ি চেনা মুখ। তেরো নম্বর কিন্তু আমূল পরিবর্তিত। সেই চকচকে টালি, রাস্তা থেকে ওঠার ধাপ গুলো সুন্দর রঙ করা। হাইকে খুব খুশী হল আমাদের দেখে। জাখসেন / থুরিঙ্গেনের উচ্চারণে একটা বড়ো আদরের টান আছে। অনেকটা আমাদের বীরভূম বর্ধমানের বাংলার মতন। জানি 'কতদিন পরে এলে গো 'এ বাক্যের সম্যক অনুবাদ হয় না কিন্তু হাইকের কণ্ঠে আমি সেই সুর শুনলাম। ... ...
টেলিভিশনে ব্রায়ান হ্যানরাহান যখন এই যুগান্তকারী ঘটনাবলির বর্ণনা দিচ্ছেন, আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছি বারো বছর আগের সেই দিনটার কথা যেদিন আমি পশ্চিম বার্লিনের পতসডামার প্লাতসে একটা কাঠের পাটাতনের ওপরে উঠে প্রথম পূর্ব বার্লিন দেখি । কাঁটা তারের বেড়ার ওপারে ধূসর মাটি, ভাঙ্গা চোরা চ্যান্সেলরির বাড়ি যার নিচে ছিল হিটলারের বাঙ্কার, গোয়েরিঙের হাওয়া অফিস। সে মাত্র বত্রিশ বছর আগের কথা। লোকে কেতাবে পড়ে আমি চোখের সামনে ইতিহাস দেখছি । ঠিক এই সময়ে জার্মানি ফিরব ? কাজে? কো ইন্সিডেনসের বাংলা কি ? সমাপতন কি একেই বলে ? ... ...
তিনি লিখছেন, 'মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী / আর হাতে রণতূর্য'। সত্যই তাই । প্রেম প্রকৃতি বিক্ষোভ বিদ্রোহ বিপ্লব এসেছে তাঁর লেখায়। আবার একই সঙ্গে এসেছে বৈপরীত্যমূলকভাবে ঈশ্বরে অনাস্থা ও আস্থা । কেউ বলতে পারেন, ঈশ্বর নয়, ঈশ্বরের নামে করে খাওয়া ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তাঁর এই জেহাদ। 'গ্রাম উঠে আসে নাগরিক স্থাপত্য নিয়ে তাঁর লেখায়। খনি অঞ্চলের মানুষ। খনন করেন মানুষের মন, রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, দল—শ্রমিকের উদ্যমে, কৃষকের আবেগে, বুদ্ধিজীবীর পাণ্ডিত্যে, আবহমান বাংলা কবিতার সুরে। ... ...
মুর্শিদাবাদের কেল্লা নিজামতের ভেতরে ছোট ছোট নানান দর্শনীয় বিষয় ছিল যার অধিকাংশই আজ নষ্ট হয়ে গেছে, বিশেষ করে কেল্লার ভেতরের যেসব দৃষ্টি নন্দন বাগান ছিল আজ সেসব গভীর জঙ্গলে ঢাকা পরে আছে, যেমন আজ সেদিনের কেল্লার ‘মহল সেরা’ এলাকায় গেলে দেখা যাবে একটি বিরাট অঞ্চল জঙ্গলে পরিণত হয়েছে অথচ নবাবী আমলে এই এলাকাতেই ছিল দেশ বিদেশের দামি সুগন্ধি ফুলের বাগান, আজও অবশ্য সেই জঙ্গলের ভেতরে নবাবী আমলের কিছু ফুলের গাছ দেখা যায়। ... ...
একদিন হঠাৎ করেই কেল্লার ভেতরের ঘাটগুলির কথা মাথায় আসে। প্রথমেই আমার মনে হয়েছিল কেল্লার ভেতরে এতগুলো ঘাট কেন? আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই সেগুলি সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারি। চলুন এবার অতীতের ঘাটগুলিতে ডুব মেরে আসি। ... ...
কেল্লার ভেতরে বেগম মহলের অভাব কোনো দিনই ছিলনা। যে মহলে বেগম থাকতেন সেই মহলই বেগম মহল নামে পরিচিত হত। আজ এমনই এক বেগম মহলের কথা বলব। এই মহলটি নবাবী আমলের একেবারেই শেষ লগ্নে নির্মিত হয়েছিল। আজ মহলটি জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনো রকমে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে মাত্র। ... ...
১৭৬৫ সালের কথা। সেই বছরই মুঘল বাদশাহ বাংলার নবাবদের হাত থেকে রাজস্ব আদায়ের অধিকার কেড়ে নিয়ে সেই অধিকার ইংরেজ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে দেওয়ায় নবাবদের অর্ধেক ক্ষমতা কমে যায়। নবাবদের সেই অবশিষ্ট ক্ষমতা টুকুও নবাব মুনসুর আলির খান ফেরাদুন জা’র আমলে চলে যায় উনবিংশ শতকের অন্তিম লগ্নে। ... ...
ইমামবাড়া শব্দটির অর্থ হল ইমামদের বসবাসের জন্য নির্মিত বাড়ি। বর্তমানে হাজারদুয়ারি প্রাসাদের সামনে যেখানে মুর্শিদাবাদ নিজামত ইমামবাড়া অবস্থিত সেখানেই পূর্বে নবাব সিরাজ নির্মিত একটি কাঠের ইমামবাড়া ছিল। কিন্তু নবাব ফেরাদুন জাঁ-এর সময়ে হঠাৎ করেই একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। ১৮৪২ সালের কোনো একদিন নবাব পরিবারের একটি অনুষ্ঠান উপলক্ষে সন্ধ্যা বেলায় আয়োজিত আতসবাজির আগুনে নবাব সিরাজ নির্মিত ইমামবাড়ার একটি অংশ পুড়ে গিয়ে ভেঙে পড়ে। এই ঘটনার কয়েকবছর পর ১৮৪৬ সালের ২৩শে ডিসেম্বর মধ্যরাতে ইউরোপিয়ানদের পার্টি চলছিল ইমামবাড়ার পাশে। অসাবধানতা বসত ঐ সময়ে সেখান থেকে আগুন এসে ইমামবাড়ার বাকি অংশে ধরে গেলে এবার সম্পূর্ণ ইমামবাড়াটি পুড়ে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সাথেই নষ্ট হয়ে যায় ইমামবাড়াতে থাকা সমস্ত দলিল দস্তাবেজ সহ বহু মূল্যবান কাগজপত্র। ... ...
বড়ে কোঠির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সেই শুভ দিন এল ১৮২৯ সালের ২৯শে আগস্ট। সেদিন কেল্লার ভেতরে বহু ইংরেজ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। নবাব হুমায়ুন জা স্বয়ং সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে, একটি সোনার ইট গেঁথে, প্রাসাদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যে নবাব নাজিম নিজে প্রাসাদের ভিতের ভিতরে নামলেও, সেখান থেকে উঠতে পারেননি – কারণ ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করে নবাব নাকি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। মাটির নীচে, অত গভীরে হয়তো অক্সিজেন কম ছিল। যাই হোক, অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর ভৃত্যরা উপরে তুলে নিয়ে এসে শুশ্রূষা করতেই নবাবের জ্ঞান ফিরে আসে। এই ঘটনাটি সে সময়ে বেশ শোরগোল ফেলেছিল। ... ...
ছোটে নবাব সাহেবের সাথে বিশাল আকৃতির জরাজীর্ণ বালাখানার সামনে এসে দাঁড়ালাম। প্রাসাদের ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠার সময় নবাব সাহেব জানালেন, বর্তমানে এই বালাখানাই নাকি কেল্লা নিজামতের সব থেকে পুরনো প্রাসাদ। এই প্রাসাদ নিয়ে একটি গল্পও শোনালেন, বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকাজ চলাকালীন, কোনো এক জরুরি কাজে নবাব হুমায়ুন জা-কে নাকি ইংল্যান্ড যেতে হয়েছিল। ইংল্যান্ডে তিনি উঠেছিলেন মহারাণী ভিক্টোরিয়ার বাকিংহাম প্যালেসে। অল্পবয়সী নবাব প্যালেস দেখে মুগ্ধ হয়ে যান, এবং মুর্শিদাবাদে বাকিংহাম প্যালেসের মত একটি প্রাসাদ নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হুমায়ুন জা তাঁর সেই ইচ্ছের কথা একদিন সময় সুযোগ বুঝে রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছেও প্রকাশ করেন, এবং সেই মর্মে মহারাণীর কাছ থেকে একটি লিখিত অনুমতিও চেয়ে নিয়ে আসেন। মুর্শিদাবাদে ফিরেই তিনি বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকার্য বন্ধ করে, বাকিংহাম প্যালেসের আদলে একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করার আদেশ দেন। সেদিনের সেই প্রাসাদটিই নাকি আজকের হাজারদুয়ারি। ... ...
একটা সময় ছিল যখন এই নবাবি কেল্লার জৌলুশ ছিল দেখার মত। কেল্লার প্রধান ফটক থাকত উচ্চ নিরাপত্তায় মোড়া। সেই নিরাপত্তা ভেদ করে কোনও মাছিরও কেল্লার ভেতরে প্রবেশের অধিকার ছিল না। কেল্লার সেই প্রধান ফটকের পাশেই ছিল নবাবি সেপাইদের বসবাস করার ঘর। ভাগ্যের পরিহাসে আজ সেই ঘরে বসবাস করেন মুর্শিদাবাদের বর্তমান নবাব বাহাদুর সৈয়দ মহাম্মদ আব্বাস আলি মির্জা ও তার পরিবার পরিজন। নবাবি আমলে কেল্লায় প্রধান ফটক ‘দক্ষিণ দরজার’ মাথায় থাকত নহবৎখানা। সেখানে নবাবের শাহি বাদকরা সকাল-সন্ধ্যা সানাই বাজাত। সানাই-এর সেই সুর কেল্লা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ত দূর-দূরান্তে। আজ সেই দক্ষিণ দরজা অক্ষুণ্ণ থাকলেও, নেই সেই বাদকেরা। শোনা যায় না সানাইয়ের মন মাতানো সেই সুর। ... ...
বেগম কোম্পানি সাহেবের রাতের খানায় রাখবেন রোগনি রোটি, শামি কাবাব, বড় ডেগচিতে সারা রাত জারানো মাংস আর শালগম দিয়ে বানানো শাবডেগ। সঙ্গে মাহি পোলাও। ভাগীরথীর টাটকা মাছের পোলাও, কাঁটা ছাড়া, সুগন্ধি মশল্লায় জাফরানে আর গোলাপজলে আদুরে মখমলি মাছ ফিরিঙ্গি জিভে জমবে ভালো। বেগমের ইচ্ছে ছিল বারো ঘন্টা ধরে তরিবৎ করে বানানো সাত খানা পরত দেওয়া মিঠি পরোটাও রাখা হোক। হ্যাঁ, তাও হচ্ছে বৈকি শেষ পর্যন্ত! ... ...
অন্ত্যেষ্টিশিল্পের আলোচনা এখানেই শেষ। অনেক দেশ এবং অনেক সময়কালের কাহিনী বাকী রইল। আশা করি সেগুলি তুলে ধরার জন্য কখনও এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় খণ্ড নিয়ে ফিরে আসব। যাবার আগে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই- কেন এই ধারাবাহিক শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন সমাজের সামাজিক গঠন, তাদের ভিতরকার উঁচু-নিচুর শ্রেণীভেদ, লিঙ্গবৈষম্য, সাজপোশাক, খাদ্যাভ্যাস এগুলো তাদের সমাধি ও অন্যান্য বিদায়-উপহার দেখে বোঝা যায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বনাম গোষ্ঠীবোধ- কোন সমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটারও আভাস পাওয়া যায়। পরলোক বিষয়টিকে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ কীভাবে কল্পনা করে এসেছে তার ধারণা পাওয়া যায়। বোঝা যায় সমাজগুলির শৈল্পিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তন। পাওয়া যায় সামরিক অভিযানের কাহিনী, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিষয়ে অনেক তথ্য। পাওয়া যায় কিছু প্রেমকাহিনী, কিছু সমাধিলেখ, কিছু কবিতা। সামগ্রিকভাবে মানবসভ্যতার লিপিবদ্ধ ইতিহাসের অভাবকে অনেকটাই পুষিয়ে দেয়- অন্ত্যেষ্টিশিল্প। ... ...