তা এই নাটক নিয়ে লেগে গেল গণ্ডগোল। তখন সিপিএমের পরিচালন সমিতি পরাজিত। কংগ্রেস ও আর এস এস জোট জিতেছে। স্কুল চালান কার্যত আর এস এস নেতা জগজ্জ্যোতি মিত্র। তিনি ১৯৮৩তেই পুরস্কার হিসেবে বাছাই করতেন-- 'তাজমহল কি হিন্দু মন্দির' গোছের বই। বাংলায় প্রথম হলে এই বই বাঁধা পুরস্কার। তা জগজ্জ্যোতি বাবু বললেন এই নাটক রাষ্ট্রবিরোধী। করা যাবে না। সৌম্য সৌমেন ওরা কংগ্রেসি পরিবারের ছেলে। ওঁরা জেদ ধরল, এই নাটকই হবে। নাটকটা খারাপ কিনা বলুন। সৌমেন সৌম্য দুজনের বাবাই পরিচালন সমিতির সদস্য। তাঁরা পড়লেন ফাঁপড়ে। ছেলে বড় না কমিটি? শেষে প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু চক্রবর্তী আসরে নামলেন। বললেন, নাটক হবে। তবে কিছু অংশ বাদ দিতে হবে। উনি বললেন, তুই এইগুলো কেটে দে। অমলেন্দুবাবুর বাংলা ক্লাস আমরা দুই পিরিয়ড ধরে করতাম। ছুটি হয়ে গেছে কখন। আমরা উঠছি না। উনিও থামতেন না। আমি বললাম, স্যার, আপনি কেটে দিন। বললেন, কী সমস্যায় ফেললি। ... ...
এই যন্ত্রণা হওয়ার একটা ইতিহাস আছে। খিদে যন্ত্রণা ও অপমানের ইতিহাস। ১৯৮২। মাধ্যমিক দিয়েছি। ম্যালেরিয়া নিয়েই। পরীক্ষা ছিল ২ মার্চ। এক অমানবিক অবৈজ্ঞানিক অমার্কসিয় সিদ্ধান্ত ছিল তখন ২৩ কিলোমিটার দূরে পরীক্ষা দিতে যাওয়া। আমাদের স্কুল থেকে আমাদের বাড়ি ছয় কিলোমিটার। স্কুল থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র আরো ১৭ কিলোমিটার। বাসে তখন লাগতো ঘন্টাখানেক। এখন বোধহয় চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিট। রাস্তা ঝরঝরে। বাস লঝঝরে। প্রায়ই চাকা পাংচার হয়ে যায়। তাতে আরো আধঘন্টা। দিনে দুটো করে পরীক্ষা। ... ...
এই দেখুন, শহুরে হাওয়া লেগেছে, গ্রীষ্ম গ্রীষ্ম করছি। আরে ওর আসল আদি অকৃত্রিম নাম তো, গরমকাল। ছুটির নাম গরমের ছুটি। সামার জানতাম সামার ভ্যাকেশন নাগরিক ব্যাপার। কলকাতায় শুনছি। গরমকালে চৈত মাস পড়তে না পড়তে শুরু হয়ে যায় সকালের ইশকুল। সকালের না মন্নিং স্কুল। পোশাকি নাম মর্নিং তো জানে না, তার আর আর নাই। মন্নিং স্কুল ভারি মজা। ছটায় স্কুল। টিফিন আধ ঘন্টা নয়, পনের মিনিট। আর ওই পনের মিনিটেই কত মজা। আধঘন্টা টিফিন মানে বাড়িতে ভাত খেতে আসা। বাড়ির কাছেই স্কুল। প্রাথমিক বিদ্যালয় আমাদের পূর্বপুরুষদের দেওয়া জায়গায়। পুকুরের এপার ওপার। দু মিনিটও নয়। মন্নিং ইশকুলে টিফিন নিয়ে যাই সবাই। টিফিন মানে মুড়ি গুড়/ বাতাসা বা চিনি। মাঝেমধ্যে আলুভাজা জিরে দিয়ে। কখনো বেসনের বড়া। ও জল দিয়ে মেখে খেতে কী মজা। ... ...
আমরা গ্রামে হালিমের নাম পর্যন্ত শুনিনি। হালিমের নাম শুনলাম ১৯৯১-এ বাংলাদেশ নির্বাচনের সময় ঢাকা গিয়ে।তখন সাংবাদিক। একুশের বইমেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা হালিমের স্টল দিত। সুন্দর সব বাংলা নাম। একটা স্টলের নাম মনে আছে--পৌষালী। আর মনে পড়ছে, কলমিলতা। আমি রোজ সন্ধ্যায় বইমেলা যেতাম্বই দেখতে আর হালিম খেতে। সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ ছিল,ঝকঝকে ছেলেমেয়েরা আবৃত্তি করতো। ক্যাসেটের দোকান দিত। সাগর লোহানি তখন বেশ জবরদস্ত আবৃত্তিকার্রর। বন্ধু আনিসের সৌজন্যে আলাপ এঁদের সঙ্গে। ... ...
বাবা ঠিক করলেন একটা সংগঠন করবেন। যেখানে কেউ মারা গেলে ২০ টাকা করে সংগঠনে নাম লেখান পরিবারগুলো চাঁদা দেবে। সবার এক চাঁদা। বড়লোক বলে বেশি দিতে পারবে না। এ থেকেই মাছ ভাত ডাল তরকারি হবে। সবার ক্ষেত্রে এক নিয়ম গরিব ধনী সবাই। মুখে মার্কসবাদী কথা বলা আর বাস্তব জীবনে তা পালন করা কঠিন। ... ...
আমাদের গ্রামে বা আশপাশের গ্রামে খুন জখম হতো না। তা বলে কি, হাতাহাতি হতো না? সে-ও বলার মত নয়। তবে তেড়ে যাওয়া, কুঁদে কুঁদে ছুটে আসা ছিল। ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ ছিল। মারপিটের উপক্রম হতো। বউ বেটিরা টেনে ধরত। ... ...
শুক্রবার দোল। শনিবার হোলি। এবার শুক্রবার দোলের রঙের সঙ্গে পড়েছে শবে বরাত। চলে যাওয়া মানুষদের স্মরণে দান ধ্যান করেন মানুষ। এছাড়া বাড়িতে তৈরি করা হয় চালের আটার রুটি, পোলাও (বিরিয়ানি হতো না এভাবে ঢালাও আকারে)। নানা রকম হালুয়া, ছোলার ডালের হালুয়া, গাজরের হালুয়া ছিল বিখ্যাত। হতো ফিরনি। এ-রকম শহুরে টাইপ না। ... ...
একটি মেয়েকে হিজাব পরে অনবরত নেচে যেতে দেখে অবাক হই। - হিজাব মানেই তো জানি, ধর্মীয় অন্ধতা। - মেয়েটি বলে, তা কেন? আমার যতটুকু অংশ বেশি সুন্দর সে-টুকু দেখাচ্ছি। - এতে কি বেশি সুন্দর লাগে? - আমার তো লাগে। ... ...
মানুষের ভয়ের প্রতি এক আশ্চর্য আকর্ষণ আছে। সেই আকর্ষণ থেকেই শিশুরা ভূত বা জুজুবুড়ির গল্প শুনে ভয় পায় এবং বারবার সেই ভূত ও জুজুবুড়ির গল্প শুনতে চায়। বাঙালি তরুণ-তরুণীদের মানসিক বিকাশের এক বড় বাধা এই ভূত পেত্নী ও জুজুর গল্প। ... ...