কথা বাড়াতে ইচ্ছে করবে না বলেই হাঁটব। আমার পাশেপাশে যারা ভীড় জমাবে তাদের গা থেকে উঠে আসা ধোঁয়া গন্ধে ভয় পাব না। না জেনে না চিনে অযথা ভয়ে একটা অভিশপ্ত জীবন আঁকব না, এটুকু অন্তত আমার উত্তরণ ঘটবে আমি নিশ্চিত। গুনিনের বুকের ভিতর কোন ঝড় গেঁথে তুলেছেন লেখিকা সেকথা ভাবতে ভাবতে বরং অন্ধকারের গায়ে আঙুল রাখব। কেউ হয়ত গল্প শোনাবে তাদের গুনিন হবার কাহিনী। ভুলভ্রান্তিতে ভরা ভয়ংকর দানবীয় ইতিবৃত্ত। লেখিকাও যে 'গুনিন' গল্পে বুক মুচড়ে ওঠা শব্দটুকু লিখেছেন, ভাবতে থাকব... ... ...
প্রমদারঞ্জন রায়ের বনের খবর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের রীতি, নীতি ও দুর্নীতি - দুটি বই নিয়ে আলোচনা করলেন দিব্যেন্দু সিংহ রায়। ... ...
'এই ধরনের অপরাধে সেদিনই ছিল আমার হাতেখড়ি, যেজন্য বিপদটা হল।...' (শীতবন্দরে)। 'গোলমালটা ঠিক কীভাবে শুরু হল বলা খুব কঠিন।..' (পাইথনের গপ্পো)। 'কেলোটা হল বড়দিনে।...' (বড়দিন)। 'আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঝড় আসার কথাই ছিল।...'(ক্যাম্পফায়ার, আমাদের রাতের উৎসব)। এই জাতীয় সূচনা লেখকের একটি বিশেষ স্টাইল। শুরুর এই কৌতূহল না মেটা পর্যন্ত পাঠক স্বস্তি পাবেন না। কিন্তু চিত্তাকর্ষক হল সেটা মিটে যাওয়ার পরে পাঠক টের পাবেন অতিরিক্ত কি একটা যেন বলা হল, যা প্লটের চাইতেও বেশি করে বেরিয়ে আসছে লেখকের অননুকরণীয় নির্মাণকৌশল থেকে! ... ...
এ এক অদ্ভুত বই। পাতার পর পাতা উলটেও আমি ঠিক করতে পারিনি এ কোন বৃক্ষের ফুল, কোন জনরেঁ এর উৎস। প্রবন্ধ, ইতিহাস, রসনা-রেসিপি, ইদানীং ফুড-ব্লগ নামে যা জগত-বিখ্যাত, শিল্প ও শিল্পীর ওপর কিছু কথা, নাকি কেবলই মনোহরণ দাস্তান বা আখ্যানগুচ্ছ। সব কাননের ফুলের সুবাস পাওয়া যাবে এতে আলাদা করে, আবার প্রত্যেকটি মিলেমিশে একটি নিবিড় কথকতা! বাংলা সাহিত্যে এরকম আর কিছু আছে কি? ... ...
ধুন্দুলের লতা বা আকন্দের চারা যদিবা দেখেছি, তাও মনে হয় যেন বিগত জন্মের স্মৃতি, কাউরি গ্রাম-ফেরতা কোন গুনিনের সঙ্গেই কোনদিন কোন লেনাদেনা গড়ে ওঠেনি। না ভয়ের, না ভালবাসার। অবশ্য সে দেখলে শ্যাখের বিবি হালিমার ঘরকন্নাই বা কোন সুতোয় চেনা! তবু একুশ বছরের দিদির বিয়ের দায় মাথায় চাপানো চৌদ্দর ছোটভাই এর শিশু শ্রমের গল্পটা চেনা চেনা লাগে যে! আর তারই মাঝে লেখক কেমন বুনে দেন শবেবরাতের মোমের আলো আর দোলের চাঁদের পৃথগন্ন হওয়ার কিসসা। ... ...
মূল বইটির বিষয়ে বলতে গেলে বলতে পারি যে, ইংরাজি বইটি ২০২১ সালের মার্চে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রকাশের আগে করণ থাপার, বরখা দত্তের মত সাংবাদিকরা আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। দ্য উইক ম্যাগাজিনে কভার স্টোরি হয়। অ্যামাজনে বইটি অনেকদিন ধরেই বেস্ট সেলার হিসাবে আছে এবং বিক্রিও ভালই হচ্ছে। মারাঠি, পাঞ্জাবি, বাংলা, কন্নড় ও হিন্দীতে অনূদিত হয়েছে। তামিল অনুবাদ-ও শীঘ্রই আসছে। বইতে আপত্তিজনক কি কি আছে তা যদি কেউ তুলে ধরতে পারতেন তাহলে ভালো হত। আমি বলতে পারি, এই বইতে এমন কিছুই নেই যাতে একে মাওবাদী বলা যায়। বইটির উপসংহার বলছে যে পরিবর্তনের জন্য আনা যে কোনও সামাজিক প্রকল্প সফল হতে গেলে তাতে ব্যাক্তিত্বের স্বাভাবিকতা, অকপটতা, সততা, সারল্যের মত ভ্যালু বা মূল্যবোধের স্থান থাকতেই হবে – এমন কিছু গুণ যা আমি আমার প্রয়াত স্ত্রী অনুরাধার মধ্যে দেখেছিলাম। সেই সাথে, স্বাধীনতার অন্যতম উদ্দেশ্যই হতে হবে অধিকাংশের জন্য সুখ/আনন্দ। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তাদের কি অসুবিধা? তদুপরি, এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে মূল বিচার্য ছিল অনুবাদের উৎকর্ষ। তিনি এই কাজটি করেছেন একজন পেশাদার অনুবাদক হিসাবে। যাঁর জীবিকা অনুবাদের ওপর নির্ভরশীল, তাঁর থেকে পুরস্কার কেড়ে নিয়ে সরকার কি বার্তা দিতে চাইল? ... ...
গত দেড়দশক ধরে ইন্দ্রাণী দত্তের ছোটগল্প প্রবুদ্ধজনের কাছে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। তাঁর কাহিনীর বুনোট, গল্প বলার ধরণ, দৈনন্দিন জীবনের কাঁকর-বালি বেছে স্বর্ণরেণু আহরণের ক্ষমতা পাঠককে আবিষ্ট করে। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে উনি বাংলাভাষার অগুনতি লেখকদের ভীড়ে হারিয়ে যান না। যে ক’জন সমসাময়িক ছোটগল্প লেখককে সিদ্ধিপ্রাপ্ত বলে আঙুলে কর গুনে চিহ্নিত করা যায়—নিঃসন্দেহে উনি তার অন্যতম। প্রথম গল্পসংগ্রহ ‘পাড়াতুতো চাঁদ’ গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশনই ছেপে বের করেছিল। এটি সে’ হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ। যথারীতি, চটিবই সিরিজের, এবং ১২৮ পাতার বইটির দাম মাত্র ১৩০ টাকা। এটি বেরিয়েছিল করোনাকালে, ২০২০ সালের বইমেলায়। উনি লেখেন কম। সুদূর প্রবাসে জীবিকার এবং সংসারের দায় মিটিয়ে ফাঁকে ফোকরে চলতে থাকে তাঁর অধ্যয়ন এবং লেখাপত্তর। না, আমার ওপরের দুটো অবজার্ভেশন পরস্পরবিরোধী নয়। উনি যখন পাবলিক ফোরামে কোন লেখা পেশ করেন সেটা একবার পড়লেই বোঝা যায়—বড় যত্নে লেখা। ফরমাইশি লেখা নয়, ধর-তক্তা-মার-পেরেক গোছের তাড়াহুড়ো লেখা নয়। বোঝাই যায় এ লেখা অনেকদিন ধরে মনে মনে কম্পোজ হচ্ছে , কাটছাঁট হয়েছে। একটি শব্দ বা লাইনও অনাবশ্যক নয়। ... ...
প্রথমেই যা নিবিষ্ট করে তা হল এই বইয়ের অত্যন্ত সুলিখিত ভূমিকাটি। লেখক পাঠক দুইয়ে মিলেই তো সাহিত্যের সেতু গড়া। "সকলে কি লেখেন? কত নিবিষ্ট পড়ুয়া আছেন, খুঁজে খুঁজে বার করে আনেন সাহিত্যের মণি-মুক্তোগুলি। ভালো পড়ুয়া আছেন বলেই অনেক মহৎ লেখক বেঁচে ওঠেন বিস্মৃতি থেকে।" এইরকম পাঠকেরাই খুঁজে বার করেছেন কতোদিনের হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলি। তাদের অনেকগুলিই বিশ্বমানের, অথচ তাদের স্রষ্টারা আজ বিস্মৃত। এদের সংগ্রহ করে এবং একত্রে সংকলিত করে আমাদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন সাহিত্যিক অমর মিত্র, প্রকাশনার জন্য গুরুচন্ডা৯। আমাদের সাগ্রহ অপেক্ষা থাকে পরবর্তী খন্ডগুলির জন্য, কারণ "এই সংকলন যেন আমাদের বংশলতিকা খুঁজে বের করা। সেই খোঁজের শুরু হলো মাত্র।" ... ...
নভেম্বর বা মে নয়। ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিন, আপনাদের একখানি বিপ্লবের গল্প শোনাতে চাই। এই বিপ্লব জড়িত তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে। শিল্পবিপ্লবের কেন্দ্রে যেমন ছিল ‘শিল্প’, তথ্যবিপ্লবের কেন্দ্রেও তেমনই রয়েছে ‘তথ্য’ বা ইনফরমেশন। প্রশ্ন অতঃপর, ‘ইনফরমেশন এথিক্স’ বিষয়টি কী? খুব সোজা করে বললে, ইনফরমেশন এথিক্স হল এথিক্স বা নীতিবিদ্যার সেই শাখা, যার আলোচনার কেন্দ্রে ‘তথ্য’ বা ইনফরমেশন। এবং, তার সঙ্গে নীতিবিদ্যা বা এথিক্স নিয়ে আলোচনা। কথা হচ্ছে লুসিয়ানো ফ্লোরিদির বই দ্য ফোর্থ রেভোলিউশন: হাউ দ্য ইনফোস্পেয়ার ইজ় রিশেপিং হিউম্যান রিয়্যালিটি বইটি নিয়ে। ... ...
পেন্ডুলাম দোলে একই নিশ্চিত গতিতে –ডাইনে থেকে বাঁয়ে, ফের বাঁ থেকে ডাইনে। টিক টক, টিক টক। এই দোলনগতিকেই বোধহয় স্কুল পাঠ্য বই বর্ণনা করে সিম্পল হারমোনিক মোশন বলে। আরও দুটো শব্দ শুনি—গ্র্যাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ এবং কাইনেটিক এনার্জি বা গতিশক্তি। কিন্তু বিশেষ অবস্থায় বোধহয় মাধ্যাকর্ষণের চেয়ে গতিশক্তি জোর বেশি—যা বস্তুর অবস্থানকে বদলে দেয়। ঘাবড়াবেন না। আমি কোন স্কুলে বিজ্ঞান পড়াই না, আমার সে যোগ্যতাও নেই। কিন্তু এতসব কথা আমার মনে এল একটি গল্প-সংকলন পড়তে গিয়ে। বইটি হল একডজন গল্পের একটি সংকলন। ... ...
গত শতাব্দীর শুরুর দিকে এই কাদামাটি, বাদাবনের দেশে ‘আদর্শ সমাজ’ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন এক সাহেব। সে সময় প্রায় ৯ হাজার একর জমি কিনেছিলেন হ্যামিল্টন। ক্রমে সমবায় সমিতি, ব্যাঙ্ক, চালকল, গ্রামীণ পুনর্গঠন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন সেখানে। ১ টাকার নোটও চালু করেন গোসাবায়। গোসাবায় গেলে দেখতে পাবেন, তাঁর বাংলোটি এখনও নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে আছে। হ্যামিল্টনের কুঠি বললে যে কেউ দেখিয়ে দেবে। একবার ওই চত্ত্বরে ঢুকে পড়লে বোঝা যায়, কী যত্ন করেই না তৈরি হয়েছিল এই বাংলো। ওই বাড়িটির সামনে দু’দণ্ড দাঁড়ালে বাদাবনের ইতিহাস যেন কথা বলে। প্রায় ১০০ বছর আগে সুন্দরবনের জঙ্গলে সমবায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন স্কটল্যান্ডের ওই সাহেব মানুষটি। ... ...
চিররহস্যের আড়াল থেকে মনকে অনাবৃত করার প্রচেষ্টা দার্শনিকেরা করেই চলেছেন। গত পঞ্চাশ বছরে কম্পিউটার ও স্নায়ু বিজ্ঞানের অগ্রগতি মনোদর্শনের চর্চাকে যে ভাবে উজ্জীবিত করেছে, তার অভিঘাত বাংলা প্রকাশনার জগতে সে ভাবে পড়েনি বললেই চলে। বহু বিচিত্রপথে বিশ্বের জ্ঞানচর্চার জগতে প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া আলাপ-আলোচনার সঙ্গে বাংলাভাষার আগ্রহী পাঠকদের পরিচয় হবে এই গ্রন্থটির মাধ্যমে। অমিতাদেবী ভূমিকাতেই রবীন্দ্রনাথ থেকে ডেনেটের উক্তি তুলে ধরে দেখিয়েছেন, তাঁর উদ্দেশ্য মনোদর্শনের সরটুকু কল্পগল্পে ফুটিয়ে তোলা। প্রশ্ন ওঠে, গল্পের আগে কল্প কেন? এখানেও লেখক রবীন্দ্রনাথের শরণ নেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘গল্পমাত্রেই কি কল্পলোকের অধিবাসী নয়? ক্বচিৎ কখনও গল্প যদি সত্য হওয়ার দাবি রাখে, তবে অধিকাংশ গল্পই কেবল সত্য নয়, ‘আরও-সত্যি’।’’ ... ...
যা ছিল হাহাকার থেকে উদ্ভূত এক বিরাট অনুভূতি-স্থল, দেশপ্রেমের চরম নিশান, তা হয়ে গেল 'বাগান', প্রমোদ-উদ্যান না হলেও ভ্রমণবিলাসীর রম্য কানন! তবে কি পাঞ্জাবেরই একার দায় ইতিহাসের এই রক্ত দিয়ে লেখা অধ্যায়কে অটুট রাখবার? দিল্লি- হরিয়ানা সীমান্তে কিষাণ কিষাণীরা উধম সিং-এর ছবি-আঁকা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে আন্দোলন করেন আর আমরা দলে দলে ছুটি ওয়াগা বর্ডারে, যেখানে দু দেশের ইউনিফর্ম পরা সৈনিকের দল ঝুঁটিওয়ালা মোরগের মতো বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে রোজ অবনমিত করে যার যার দেশের পতাকা। প্রবল করতালি, হাজার মোবাইলের ঝলকে শেষ হয় সেই বিচিত্র নাচনকোঁদন, নকল দেশপ্রেমের উচ্ছাসে আকাশ বাতাস ভরে ওঠে। অথচ জালিয়ানওয়ালাবাগ আমাদের ভ্রমণ সূচিতে কদাচিৎ থাকে, ঘরের শিশুটিকে কখনও বলি না উধম সিং, ভগত সিং-এর কাহিনি! এই সত্যিকারের শহিদ-এ-আজমদের ভুলে গিয়ে নির্মাণ হতে থাকে নতুন শহিদ, ব্রিটিশের কাছে লেখা মুচলেকাকে কার্পেটের নীচে ঠেলে দিয়ে শহিদত্ব আরোপকে নতমস্তকে মেনে নিই। এইখানে, এই পরিস্থিতিতে আলোচ্য বইটির গুরুত্ব অসীম। খুবই সুলিখিত, অজস্র সাদা কালো ছবিতে সাজানো বইটি হাত ধরে আমাদের নিয়ে যায় সঠিক ইতিহাসের কাছে, সেই অর্থে সত্যেরও কাছাকাছি। ... ...
সত্য না ইন্দ্রজাল? এ প্রশ্নের উত্তর আকাশের মেঘে। "আজ দীপাবলি। বিশালার ঘরে ঘরে ধনদাত্রী লক্ষ্মীর আরাধনা, অলক্ষ্মীর বিদায়। সন্ধ্যায় এই বিশালা নগর - অবন্তী দেশের রাজধানী উজ্জয়িনী, কণকশৃঙ্গ মহাকালেশ্বর মন্দির, দুই নদী শিপ্রা, গন্ধবতীর বুক দীপের আলোয় আলোকিত হবে। অবন্তী দেশের প্রতিটি গৃহের দুয়ারে, বাতায়নে প্রদীপ জ্বলবে। আজ দীপোৎসব, আলোকোৎসব ,কোথাও কোন অন্ধকার থাকবে না।" মনের গভীরে জ্বলে উঠল অপূর্ব এক আলো। মুহূর্তে পৌঁছে গেলাম ভারতবর্ষের এক প্রাচীন নগরীতে। বর্ণনার কুশলতায় বহুযুগ আগের সেই দীপাবলির রাতের আলোকময় সন্ধ্যার ছবিটি আঁকা হয়ে গেল। সাহিত্যিক অমর মিত্রের 'ধ্রুবপুত্র' উপন্যাস শুরু থেকেই পাঠক মনে সঞ্চার করে এক মুগ্ধতার বোধ। ... ...
গাঁওবুড়ো এক যাত্রাপথের গল্প। বলে যেতে পারে হাঁটার গল্প। হাঁটতে হাঁটতে সুখ অনুসন্ধানের গল্প। সুখ এখানে বিভ্রম। কিন্তু সন্ধানটা জরুরি। যে সন্ধান, আত্মজিজ্ঞাসা, অনুসন্ধান মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। সুখের স্বপ্ন দেখায়। মানুষ তো সুখের সন্ধানে বাঁচে। সমস্ত প্রাপ্তির মধ্যেও আরেকটু সুখ বা সমস্ত অপ্রাপ্তির মধ্যেও সামান্য সুখের সন্ধান করে। ‘গাঁওবুড়ো’ তেমনই এক গল্প যেখানে বিভ্রমকে সামনে রেখে বিভ্রমের বাস্তবতাকে আবিষ্কার করে জনপদ জীবনের চরম অর্থনৈতিক অস্বচ্ছন্দতার নিত্য নৈমিত্তিক দিনলিপি। রাঙা পথের জীর্ণ চিত্রে জার্নির ক্লান্তিতে মেঠো সুরে ব্যক্তি ও সমষ্টির ব্যথিত কোলাহল সহ রূপহীন-রংহীন মানুষের সমস্ত না পাওয়া ও পথের দিকে চেয়ে থাকার উদাসীন সোপান। যে ভূগোলে কিছুই নেই, যেখানে বাঁচার তীব্র আকুতি নিয়ে মানুষ বাঁচে-স্বপ্ন দেখে, সেখানে কেউ কেউ অলীক জাল রচনা করে আরও দুই মুহূর্তের স্বপ্নের হাতছানি দিয়ে যায়, ‘গাঁওবুড়ো’ সেই স্বপ্ন হাতছানির গল্প। ... ...
প্রতিদিন খুব ভোরে কাঁখে কলসি নিয়ে গাঁয়ের অন্য বউদের মতোই নদীতে জল আনতে যায় কিশোরী পদ্মাবতী। তবে বাকিদের মতো তড়িঘড়ি সে ফিরে তো আসেইনা, বরং তাঁর ফেরার সময় রোজ সূর্যদেব উঠে পড়েন মাঝ আকাশে। রোজকার দেরি দেখে শাশুড়িমা নিশ্চিত হন, ছেলের বউটি নিশ্চই অন্য কারো সাথে জড়িয়েছে সম্পর্কে, তাই তাঁর মন বুঝি নেই ঘরে ফেরায়। এছাড়াও এই বউয়ের অজস্র দোষ। সেই কবে থেকেই গুছিয়ে রান্নাবান্না- সংসার করা, খেয়ে না খেয়ে শশুড়বাড়ির সবার সেবা করা, স্বামীর প্রতি স্ত্রীধর্ম পালন করা তো দূর, সন্তানধারণ করতেও নারাজ সে, এমনকি বিয়ের পর রীতি অনুযায়ী পদ্মাবতী নামেও তাঁর অনীহা। কেউ জানতে চাইলে নিজের পরিচয় দেয় বিবাহপূর্ব লাল্লেশ্বরী বা লাল্লা নামে। এই আজব সব ধৃষ্টতার ওপর রোজকার তাঁর এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি যেন আগুনে ঘি ঢালে। পদ্মাবতীর স্বামীকে উস্কে দেন শাশুড়ি, ঘরের অবাধ্য অলক্ষ্মী বউটিকে উচিত শাস্তি দেওয়ার জন্য... ... ...
বন্ধুরা বলেন--একুশ শতকে ভারতের মেয়েরা অনেক এগিয়ে গেছে। আমাদের সমাজে পিতৃতন্ত্রের ভিত এখন অনেক দুর্বল, থাম গুলোয় ফাটল দেখা দিচ্ছে। মেয়েরা এখন পুলিশ- মিলিটারি- প্রশাসন - সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় সবেতেই উঁচু পদে বসছেন। তাই কি? একজন ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বা একজন এ পি জে আবদুল কালামের রাষ্ট্রপতি হওয়ার উদাহরণ দেখে কি ভারতে মেয়েদের এবং অল্পসংখ্যকদের বাস্তবিক অবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত টানা যায়? আইনের চোখে তো মেয়েরা পুরুষের সমান—সেই সংবিধান প্রণয়নের দিন থেকেই। রয়েছে নারীপুরুষের ভোট দেবার সমান অধিকার। কিন্তু গাঁয়ের দিকে ক’জন ঘরের বৌ নিজের ইচ্ছের ক্যান্ডিডেটকে ভোট দিতে পারে? বেশির ভাগের ভোট দেবার নির্ণয় কী আগে ভাগে পরিবারের কর্তাব্যক্তিটি ঠিক করে দেন না? ... ...
বইটা একটা ভয়াল নকশিকাঁথার মাঠ। ছুঁচের নিপুণ বুনুনিতে গাঁথা হয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট কোলাজ। তাতে নানান চিত্র, নানান শহরের টুকরো ছবি। কোলকাতা থেকে মুম্বাই, পুনে, কেরল এবং পাটনা। সবমিলিয়ে ধীরে ধীরে উপন্যাসটি ৭২ টি পর্বে এবং পঞ্চাশ হাজার শব্দের বয়নে এক মহাকাব্যিক আকার নেয়। আর বইটি নিখাদ উপন্যাস, সমসাময়িক জীবনের জীবন্ত দলিল, কিন্তু কখনই খবরের কাগজের রিপোর্ট নয়। একশ বছর আগের স্প্যানিশ প্লেগে শুধু শহর কোলকাতায় দু’কোটি মানুষের মরে যাওয়ার গল্প আমাদের আজ তেমন বিচলিত করে না। ও তো অনেক আগের কথা, তখন ভারত ছিল ব্রিটিশের উপনিবেশ। তখন তো টিবি’রও তেমন চিকিৎসা ছিল না। স্ট্রেপটোমাইসিন আবিষ্কার হয়নি। আজ স্বাধীন ভারতে এমনটি হতে পারে না। তখন এত হাসপাতাল ছিল না। এত প্রাইভেট হাসপাতাল ছিল না। খোলা বাজারে এত ওষুধ পাওয়া যেত না। আমরা নিশ্চিন্ত থাকি। এখন মানুষের গড় আয়ু তখনকার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। কোন চিন্তা নেই। ... ...
সারা ভারত জুড়ে বছরভর যে মাইলের পর মাইল পদযাত্রা চলে এগুলো তারই সামান্য কয়েকটা টুকরো দেখলাম আমরা। এরকম আরো অজস্র হেঁটে-চলার, হাঁটতে হাঁটতে বসে পড়ার, পড়ে মরে যাবার নির্মম কাহিনী রয়েছে সমৃদ্ধ দত্তর লেখা ‘হাঁটার গল্প’ বইয়ে। এই লকডাউনে যারা হেঁটে গেল দেশজুড়ে তারা কজন পৌঁছল গন্তব্যে? কেমন ছিল সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরন্তর হাঁটার অপমানগুলোর কাহিনী? কত রকমের মাইগ্রেশান হয় দেশে? শিক্ষার নিরিখে একেবারে নীচের দিকে থাকা বিহার আর একদম উপরে থাকা কেরলে মাইগ্রেশানের হার এত বেশি কেন? কী সেই অন্তর্নিহিত সমীকরণ যার ফলে দলে দলে মানুষ বাইরে যায়? এইরকম নানা প্রশ্নের উত্তর এই বইতে খোঁজার চেষ্টা করেছেন লেখক। ... ...