এক শীর্ণকায়া ভদ্রমহিলা এসেছেন। তাঁর স্বামী করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাগর দত্ত হাসপাতালে মারা গেছেন। ভদ্রমহিলা ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় কোয়াক ডাক্তারের নিয়মিত ডাক পড়ে। তিনি এসে দু – বোতল, তিন – বোতল স্যালাইন চালান। টালির ঘরে টিম টিমে হলুদ বালব। ঘরের এধার থেকে ওধার নাইলনের দড়ি। তার থেকে স্যালাইনের বোতল ঝোলে। মহিলা ক্রমশ বিছানার সাথে মিশে যান। কোয়াক ভরসার বাণী শোনান, 'শরীরের ভেতর শুকিয়ে গেছে। স্যালাইন দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।' ... ...
কথাটা পরিহাসের ছলে বলা কিন্তু এর ভেতরে একটি গভীর সত্য নিহিত ! ইউরোপের হাজার বছরের ইতিহাসে ইহুদি হবার অপরাধে সরকারি বা অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্ম গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল বহুকাল । সে কারণেই ওকালতি , ডাক্তারি জাতীয় বিবিধ স্বাধীন পেশা এবং আপন ব্যবসাতে ইহুদির ভূমিকা বহু বছরে সুপ্রতিষ্ঠিত । মহাজনি কারবারের জন্য তাঁরা বিশেষ দুর্নাম কুড়িয়েছেন , শেক্সপিয়ারের শাইলক যার এক প্রতীক । এক দরোজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে জীবন ধারণের উদ্দেশ্যে অন্য দ্বারে করাঘাত করেছেন। আপন বুদ্ধি ও কর্ম বলে সফল হয়েছেন। ... ...
যে মীটিং হলো এবার তাতে সুকান্তদা আর জুঁইদি আসেনি, ওদের আশাও করেনি জয়ি। শ্যামলিমাও আসতে পারেনি, ওর শ্বশুরবাড়িতে কিছু একটা উৎসব আছে, ওরা সপরিবার গেছে সেখানে। তুলিও যথারীতি অনুপস্থিত। গেস্ট হাউজটা নিয়মিত চালাতে হবে, মীটিঙে যারা ছিলো সবাই একমত। সিনেমার লোকরা যদি শেষ পর্যন্ত পছন্দ করে খুশিঝোরাকে, সেটাও খুশিঝোরার পক্ষে, অন্তত আর্থিক ব্যাপারটা মাথায় রাখলে, ভালোই হবে, বললো প্রায় সবাই; বিশেষ করে মাত্র এক রাত্তির গেস্ট হাউজে থেকে যে টাকাটা ওরা দিয়েছে, সেটা তো অভাবনীয়, বললো কোষাধ্যক্ষ অনলাভ। সবাই সিনেমার ব্যাপারে উৎসাহী, শুধু নীরব জলধর। ও ঠিক জানে না, কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো ওর সিনেমার ব্যাপারটায়, কী অস্বস্তি স্পষ্ট করে বোঝাতে পারবে না, কাজেই চুপ করে থাকাই ওর মনে হলো ভালো। ... ...
আমাদের ছোটবেলায় একজাতের বই বাড়িতে এবং স্কুলে অবশ্য পাঠ্য ছিল – মহাপুরুষদের জীবনী। তাতে ক্ষুদিরাম, নেতাজি ও সূর্য সেনের মত স্বাধীনতা সংগ্রামী, রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও আম্বেদকরের মত সমাজসংস্কারক, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের মত সাহিত্যিক এবং চৈতন্য, রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের মত ধর্ম সংস্কারক সকলেই একসারিতে জায়গা পেতেন। এঁদের জীবনীর একটি ছাঁচ আছে। এঁরা কোন বিশেষ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে প্রেরিত। এঁদের জন্মসূত্রেই প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায়। এঁরা কখনও ভুল করেন না। কাজেই ভুল স্বীকার করার প্রশ্ন ওঠে না। ... ...
গত প্রায় দেড় বছর ধরে করোনাভাইরাসের অতিমারী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করেছে, জীবনের নানান দিক আর আগের মতন নেই | প্রাণঘাতী এই বিশ্বব্যাপী অতিমারী না হয় একরকম, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরেকটি অতিমারী মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, সেটি তথ্যবিভ্রান্তির অতিমারী। বিশেষ করে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের টিকা, এবং টিকা দেওয়া-নেওয়া নিয়ে নানান রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য চোখে পড়ছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি নিয়ে এই আলোচনা। প্রতিটি “ভ্রান্ত ধারণা” (“মিথ”) আমরা প্রথমে উল্লেখ করে তারপর সেটিকে নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছি। ... ...
আজকে ১৩৮ কোটি মানুষ প্রত্যেকেই মনে করবে টিকা নেওয়া দরকার যত টাকাই লাগুক না কেন, সেটা অসম্ভব। হাজার বারোশ টাকা খরচ করে টিকা নিতে যাবে ভারতের কত শতাংশ মানুষ? অনেকের ক্ষমতা নেই, কিন্তু এটা পুরোপুরি ক্রয় ক্ষমতার প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হল আমি এতে খরচ করব কি করব না এটা অর্থনীতির নিয়ম। এর সঙ্গে ন্যায্যতার প্রশ্ন। অর্থনীতির প্রশ্ন আর ন্যায্যতার প্রশ্ন আলাদা করে বলতে চাইছি এই কারণে যে, আমেরিকাতে শোনা যাচ্ছে আমি ততক্ষণ সুরক্ষিত নই যতক্ষন না সবাই সুরক্ষিত। এটার মানে হচ্ছে আমার নিজের সুরক্ষার জন্য অন্যদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু এটা সংক্রমক রোগ, অতএব যতক্ষণ সেটা ঠেকাতে না পারছি আমি সুরক্ষিত নই। এখানে কিন্তু একটা সেল্ফ ইন্টারেস্ট-ই আমাকে এই কথা বলাচ্ছে। সরকারও একরকম ভাবে এই সেল্ফ ইন্টারেস্টটা মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তোমার প্রয়োজনেই দরকার অন্যদের ফ্রিতে টিকা দেওয়ার। এটা আমরা অর্থনীতির যুক্তি দিয়ে বলতে পারি। এখানে প্রশ্ন হল, যদি রোগটা সংক্রমক না হয় তাহলে কি আমি প্রতিবেশীর থেকে সেই ইন্টারেস্টটা দেখতে পাব না? আমার যদি হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে আমি তো সংক্রমণ করছি না কাউকে, তাহলে কি পাশের বাড়ির মানুষটির কিছু এসে যাবে না? সেল্ফ ইন্টারেস্ট ছাড়া সমাজে আর কিছু আমাদের প্রণোদিত করবে না? তাহলে টিকার বন্টনের ক্ষেত্রে সব যুক্তিগুলোকে যদি শুধু সেল্ফ ইন্টারেস্টে নিয়ে আসি, যেটা এক্সটার্নিলিটির আর্গুমেন্ট, তাহলে ন্যায্যতার বা সমানুভুতির কোনও পরিসর থাকবে না? এই এক্সটার্নিলিটির জন্য অবশ্যই সরকারের ভূমিকা আছে। একজনও যদি সংক্রমিত থাকে তাহলে বাকিদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। ফলে সরকার এই ভাবে বোঝাচ্ছে যে, যতক্ষণ না সবাই সুরক্ষিত হচ্ছে তুমিও সুরক্ষিত নও। এটা আমি আমার সেল্ফ ইন্টারেস্ট থেকেই চাইব সবাই সুরক্ষিত হোক। এমনকি দরকার হলে পাশের বাড়ির লোকের যদি পয়সা না থাকে, আমি তাকে পয়সা দিয়ে বলব টিকাটা নিতে। কারণ আমি নিজে সুরক্ষিত থাকতে চাই। কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের অন্য মোটিভেশন নিয়েও ভাবতে হবে। ... ...
খবরে প্রকাশ দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দু হাজারের কম হয়ে যাওয়ার কারণে রাজ্যে লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে। যে রাজ্যে কোনও সংবেদনশীল প্রশাসন নেই, নেই নূন্যতম স্বাস্থ্যব্যবস্থা সেখানে লকডাউন থাকলেও বা কী না থাকলেও বা কী? এখনো অক্সিজেন, বেড, ওষুধ অমিল তেমনই দাহ করার কাঠের চূড়ান্ত অভাব। পাওয়া গেলেও দাম এতো চড়া যে গরিব মানুষের পক্ষে তা কেনা দুঃসাধ্য। এখনো মৃতদেহ কোনও রকমে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হচ্ছে, কুকুর বিড়াল তা নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করছে। কোথাও প্রিয়জনের দেহ জঞ্জালের ট্রাকে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে, কোথাও সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে, এখনো কিছু জায়গায় গণচিতা জ্বলছে। সুপ্রিম কোর্ট মৃতদের প্রাপ্য সম্মান প্রদান করার কথা বলছেন, কিন্তু এই নেই-রাজ্যের জড়ভরত মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের কাছে এসব কথা মূল্যহীন। উত্তরপ্রদেশে নীরবে যা ঘটে গেল তা এক কথায় নরমেধ। মানবতার বিরুদ্ধে এই চূড়ান্ত অপরাধ ইতিহাস মনে রাখবে। সব কুছ ইয়াদ রাখা যায়েগা। ... ...
কিন্তু এতদসত্ত্বেও শেষেশ বিজেপির ব্যর্থতা নিয়ে এ যাবৎ কালে বহু আলোচনা সামনে এসেছে। আদি-নব্য সংঘাত, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ঠিক করতে না পারা, মেরুকরণের তাস ঠিক মতো কাজে না আসা ইত্যাদি ইত্যাদি নানাবিধ ব্যখ্যা রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীর অতি হিন্দুত্ব, যোগী আদিত্যনাথের অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াডের হুঙ্কার ইত্যাদি নানা কিছু। আমার মনে হয়েছে এর কারণ 'আরবিট্রারি মেকানিজম', খেয়ালখুশির নীতি। ২০১৪-এর আগে থেকেই বিজেপি আর স্রেফ রাজনৈতিক দল নয়, তার কর্মপরিচালন পদ্ধতি একটা কর্পোরেট হাউজের মতোই। ভোট পরিচালনার জন্য আইটি-সেল সহ নানা বিভাগের কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, টার্গেট ঠিক করে দেওয়া হয়। পাখির চোখটাও সুনির্দিষ্ট থাকে। ঠিক যেমন কোনও পণ্যের বাজারিকরণের ক্ষেত্রে প্রচার অভিযান যে ভাবে হয়, বিজেপিও সেইটাই করে। এমনটাই হয়ে এসেছে এ যাবৎ। বিজেপি ঘেঁষা বুদ্ধিজীবী সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিজেপির ভোট বিস্ফোরণ না হওয়া নিয়ে। তাঁর যুক্তি, বিজেপি যথেষ্ট হিন্দুত্বের প্রচার করেনি। মোহিত রায়ের যুক্তি একরকম ভাবে ঠিকই। বিজেপির নির্বাচন পটীয়ানরা এই একটা ইস্যুতে লক্ষ্য স্থির না করে যেখানে যেমন সেখানে তেমন নীতি নিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। কোথাও চেয়েছেন শুভেন্দু অধিকারীকে মুসলিম বিরোধিতা ও হিন্দুত্বের মুখ করতে। কোথাও চেয়েছেন নতুন জেলার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরতে। কোথাও আবার মতুয়া তাস, রাজবংশী তাস ফেলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর অভিন্নহৃদয় সহোদর। ভার্চুয়াল ক্যাম্পেনিংও হয়েছে তদনুসারী। ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ঈষৎ জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তিমাত্রেই বলবে, বিপর্যয়ের কারণটাই এইটাই, একটি মূল ফোকাস ঠিক করতে না পারা। ... ...
রাষ্ট্রসংঘ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি আমাদের দেশের জাতীয় পরিবহন-নীতিসহ কেন্দ্র বা রাজ্যনিয়ন্ত্রিত সংস্থার বিভিন্ন সুপারিশে বারবার সাইকেলকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা থাকলেও বিড়ালের গলায় ঘন্টাটি এখনও বাঁধা যাচ্ছে না। কোভিড-পরবর্তী সময়, যখন বিশেষভাবে আমাদের সাইকেলমুখী করেছে – শহরে সাইকেলের পক্ষে পদক্ষেপ নেওয়ার এটাই সঠিক ও সুনির্দিষ্ট সময়। শহর বদলালে বদলাবে পৃথিবী। রাষ্ট্র বা প্রশাসনের বাইরে যে বৃহত্তর পৃথিবী ও সমাজ – যে সমাজ ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ বিভিন্নভাবে বিভক্ত ও বিপন্ন, যে পৃথিবী উষ্ণায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে জর্জরিত – সাইকেল তাতে কিছুটা মুক্তির হাওয়া আনুক। ... ...
ওয়াঙ কিপিং। বিশ্ববিখ্যাত ভাস্কর। দুনিয়ার নানা গ্যালারি, জাদুঘরে ছড়িয়ে আছে তাঁর শিল্প। বাসিন্দা প্যারিসের। সেখানেই পরিচয়। বিপুল খ্যাতি। কিন্তু বোঝার উপায় নেই, ব্যবহারে এমনই অমায়িক। হিরণ মিত্র ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। এ অধ্যায় থেকে শুরু হল চুন্যো থেকে রওনা হয়ে এমভুমি বলে একটি গ্রামে পৌঁছনোর কাহিনি। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
এদেশটার নাম ভারত, তাই আশা করি না, কিন্তু অন্য দেশে হলেও হতে পারে, হওয়া উচিত, তাঁর ইতালির বারবিয়ানা স্কুলের ছাত্রদের সম্মিলিত চিঠিভিত্তিক গ্রন্থের অনুবাদ, "আপনাকে বলছি স্যার" বইটির অবশ্যপাঠ। অন্তত শিক্ষকদের শিক্ষাদান করবার আগে এ বই পড়াই উচিত। শিক্ষা যখন পণ্য, আর শিক্ষার্থীরা বাজার নামক দাবাবোর্ডে দিব্যি জ্যান্ত বোড়ে, তখন বিকল্প শিক্ষার ওপর এ বই হয়তো কাউকে অন্য পথের সন্ধান দেবে। আরেকজন সলিল বিশ্বাস তৈরি হবেন যাঁর মনন জুড়ে থাকবে বিকল্প শিক্ষা ভাবনা। ব্রাজিলের নিপীড়িতের শিক্ষাবিদ পাউলো ফ্রেইরি হবেন যাঁর দিগদর্শক। ... ...
বিনয় চৌধুরীর মণ্ডল কমিশনকে এই রাজ্যে পশ্চাদপদ শ্রেণি বা ওবিসি নেই চিঠি দিয়ে জানানোর প্রায় ২৩-২৪ বছর বাদে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের সময়ে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওবিসি বা পশ্চাদপদ জাতির বা ওবিসিদের তালিকা তৈরি করতে শুরু করে। বলা যায় বাধ্য হয়ে এই কাজে হাত দেওয়া হয়। কারণ ততদিনে, অনেক রাজ্যেই ওবিসি এবং দলিতরা নির্বাচনে বড়ো ভূমিকা পালন করছে, তাঁদের নেতা-নেত্রীরাও বিভিন্ন রাজ্য-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। ওই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক মাপকঠিতে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণও ঘোষণা করা হয়। মুসলিমদেরও একটা বড়ো অংশ এই তালিকাভুক্ত হন। ২০১০-১১ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত এলাকায় একটি সমীক্ষা হয় পশ্চাদপদ জাতির সংখ্যা ঠিক মতো জানতে। যতটুকু সমীক্ষা হয়েছিল তা থেকে তখন একটা ধারণা হয়েছিল, গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশ ওবিসি। যদিও এটা সরকারি তথ্য নয়। ... ...
আজ ‘যৌনকর্মী’ কথাটা উচ্চারণ যতটা সহজ লাগে নব্বইয়ের দশকে তা ছিল না। আশির দশকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে নব্বইয়ের দশকে এইডস মহামারী সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। রোগটা ছড়াচ্ছিল মূলত যৌনকর্মীদের যৌনরস ও রক্ত থেকে, তাঁদের থেকে অন্যেরা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, অন্যের থেকে তাঁরাও আক্রান্ত হচ্ছিলেন। এই রোগকে বাগে আনতে ১৯৯২ সালে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর তরফে এসটিডি/এইচআইভি ইন্টারভেনশন প্রজেক্ট-এর ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব এসে পড়ে স্মরজিৎদার উপর। এশিয়ার বৃহত্তম যৌনপল্লি সোনাগাছিতে শুরু হয় ‘সোনাগাছি প্রজেক্ট’। কিন্তু কাজ শুরু করার কিছুদিন পর তাঁর মনে হয়েছিল, শুধু প্রচারের মাধ্যমে যৌনকর্মীদের শিক্ষিত করে, আক্রান্তের চিকিৎসা করে এইসব রোগের সংক্রমণ থামানো যাবে না। যৌনকর্মীদের কালেক্টভ বার্গেইনিং পাওয়ার না বাড়াতে পারলে এইডস বা সিফিলিস, গনোরিয়ার মত সেক্সচুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিস (এসটিডি) কমানো যাবে না। সংক্রমণ বাগে আনতে গেলেও যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে যৌনকর্মে কন্ডোম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই পর্যন্ত তাঁর ভাবনা ছিল বিশেষজ্ঞের। এ কথা বলে তিনি সরে যেতে পারতেন। বলতে পারতেন যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়ন একজন ডাক্তারের কাজ নয়। তা না করে যৌনকর্মীদের মধ্যে এইসব রোগ নির্মূল করার কাজে নেমে পড়লেন। সারা জীবন ধরে রয়ে গেলেন তাদের ভালমন্দে। তাঁর নেতৃত্বে শুরু হল যৌনকর্মীদের মর্যাদার লড়াই। ... ...
পাখিদের তো আর শেখানো যায় না যে তোরা হাওড়া ব্রিজে আর মল ত্যাগ করিস না বাপু! এত তো জায়গা রয়েছে! কিন্তু দেখা গেল শুধু পাখি নয়, মানুষদের শেখানোও খুব চাপ – এত পোস্টার, অনেক সচেতনতা ক্যাম্পেনের পরেও পাবলিক পানের আর গুটকার পিক হাওড়া ব্রিজের পিলার গোড়ায় ফেলা বন্ধ করল না। পিলারের গোড়ার ঠাকুর দেবতার ছবি আটকেও তেমন সাফল্য এল না। আগে যেমন লিখেছি, পানের/গুটখার থুতু বেশ বেশ অম্ল এবং তাই লোহার জন্য ক্ষতিকারক। প্রথমে পিলারের গোড়া গুলি বার বার রঙ করা হচ্ছিল এবং পরিষ্কার করা হচ্ছিল – কিন্তুতেই কিছু হল না। বরং দেখা গেল মাত্র চার বছরে, ২০০৭ থেকে ২০১১ এর মধ্যে পান/গুটখার পিক পিলার ক্ষইয়ে দিয়েছে ৩ মিলিমিটার! দৈনিক হাওড়া ব্রিজের ফুটপাথ ব্যবহার করেন প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ (১-৫ লক্ষের মধ্যে)। এর মধ্যে শতকরা এক ভাগও যদি থুতু ফেলেন, তাহলে দৈনিক পিলারে থুতু ফেলছেন কয়েক হাজারের মত লোক! সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়! ... ...
মাদের দেশে ‘দর্শন’ বলে আলাদা কোনো বিষয় কখনও ছিল কি? বেদে, উপনিষদে যা আছে বা মহর্ষি কপিল, কণাদ, জৈমিনি, ব্যাস, মধ্বাচার্য, রামানুজম, শঙ্করাচার্য ইত্যাদিরা যা বলে বা লিখে গিয়েছিলেন তৎকালে তা ‘দর্শন’ নামে বিবেচিত হতো কি? সম্ভবত না। প্রকৃতপক্ষে বৃহৎ ও অপার বৈচিত্র্যময় এই জগতের দিকে তাকিয়ে যুগপৎ বিস্মিত ও কৌতূহলী হয়েছিলেন অগাধসলিলা সরস্বতী নদীর তীরের আমাদের সুপ্রাচীন পূর্বপুরুষেরা। তারই ফল স্বরূপ যেগুলি বিবেচিত হয়েছে সাংখ্য, বৈশেষিক, পূর্বমীমাংসা, উত্তরমীমাংসা, দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ ইত্যাদি হিসেবে, এগুলির ভিতর দিয়ে তাঁরা যা বলতে চেয়েছিলেন নিজেদের জীবন-চর্যায় তাই তাঁরা প্রতিভাত করে গিয়েছিলেন, যার অন্ত বোধিতে বা মুক্তিতে। এমনকি বস্তুবাদী চার্বাকেরাও চর্যায় ছিলেন বস্তুবাদী দর্শনানুগ। অর্থাৎ, আদিতে দর্শন আসলে জীবন-চর্যার নামান্তর ছিল ও পরিশেষে জীবনের অন্তিম লক্ষের সন্ধানী। এসব দূর অতীত বা সুপ্রাচীন কালের কথা। স্বতন্ত্র একটি বিষয় হিসেবে ‘দর্শন’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বহু পরে মূলত পাশ্চাত্যের হাত ধরে। আমাদের নিকটবর্তী সময়ে বিংশ শতাব্দীর দর্শন বলে যা পরিচিত বলা বাহুল্য তা জোরালো ভাবে পাশ্চাত্যেরই অবদান। এর সূত্রপাত মোটামুটি ভাবে George Edward Moore-র আধুনিক বাস্তববাদের হাত ধরে, প্রসারিত হাল আমলের Slavoj Zizek পর্যন্ত। ... ...
কুরেশির বিশ্লেষণে যেমন আছে তথ্যের সমাহার তেমনই আছে যুক্তির জোর। বস্তুত, বইটাতে তিনি যা লিখেছেন তার অনেক কিছুই জানা। অবশ্য, সবার নয়, যাঁরা জানতে চান তাঁদের – অনেকেতো জানতে চানই না। এ বই, বিশেষত শেষের দিকে, “জনসংখ্যার রাজনীতি” বিষয়ক অষ্টম অধ্যায়টা পাঠকের মনকে বিশেষভাবে বিচলিত করবে। এই অধ্যায়ে কুরেশি হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচারিত জনসংখ্যা বিষয়ক গালগল্পগুলোকে ভেদ করে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছেন। আশা করা যায় যে, এখানে উপস্থাপিত তথ্য ও সেগুলোর ব্যাখ্যা ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক বিভাজন রোধ করার কাজে লাগবে। ... ...
নির্বাচিত ও চর্চিত চোদ্দোটি কবিতা। আলোচিত হয় সেগুলি রচনার ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতিসহ পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রেক্ষিত। এমনকি উদ্ধৃত নানা তরজমার মাধ্যমে বিকশিত হয় একই কবিতার বিবিধ পাঠও। সব মিলিয়ে উন্মোচিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যের ভিন্নতর পাঠের দিক্নির্দেশ। সুমিতা চক্রবর্তী-সম্পাদিত একটি বই। পড়লেন ইমানুল হক ... ...
শঙ্খ ঘোষ কেন স্বতন্ত্র তা বোঝা যায়, অনুভব করা যায়, এবং সর্বোপরি অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহের উপর তাঁর নিবন্ধ, কবিতাগুলি পড়লে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, ক্ষমতার স্পর্ধার নিরলস বিরোধিতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সপক্ষে সোচ্চার থেকেছেন আজীবন। কে পাশে আছে তার তোয়াক্কা করেননি। লিখছেন সুজাত ভদ্র ... ...
মেঘনাদ সাহা। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জগতে স্মরণীয় নাম। কঠোর দারিদ্র ও ‘নিচু’ জাত হওয়ার অভিশাপ— এ দুয়ের সঙ্গে লড়াই করে বিজ্ঞানচর্চার শীর্ষ পরিসরে পৌঁছনর জীবনকাহিনি সমসাময়িক বঙ্গীয় সমাজের এক অনবদ্য দলিলও বটে। ঝরঝরে ভাষায় লেখা একটি বই। পড়লেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক সুমিত্রা চৌধুরী ... ...