এই ফুটপাথেই থাকেন সেরিনা বিবি পুরকাইত (৩৩)। লক্ষ্ণীকান্তপুর লাইনে গ্রাম। বাসন মাজা, ঘর মোছা, কাচাকাচির কাজ করেন আশেপাশের তিনটে বাড়িতে। তিন সন্তানের জননী। বাচ্চারা কর্পোরেশনের স্কুলে পড়ে। স্বামী ভ্যান চালান। কথা শুরু হয় তাঁর সঙ্গে। লকডাউনে কী করেছেন? “লকডাউনের সময় বাড়ি চলে গেছিলাম। বসেই ছিলাম বাড়িতে। কিন্তু খাবার জোটাতে পারছিলাম না। খুব কষ্ট হচ্ছিল। গ্রামের কিছু লোকের দানে চলছিল। এভাবে কী চলে? তাই শহরে চলে এলাম।” এসেই কাজ পেলেন? ... ...
এ রাজ্যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা না ঘটা নিয়ে আমরা গর্ব অনুভব করে এসেছি, এবং সেটা সঙ্গত কারণেই। কিন্তু, হিংসার ঘটনা না ঘটা মানেই সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দূর হয়ে গেছে – এই ভাবনার মধ্যে অতি সরলীকরণ থেকে গেছে। বরং বলা চলে, বাংলার রাজনীতি, এবং রাজনীতি নিয়ে বিদ্যাচর্চা ও অন্যান্য আলোচনায় সামাজিক বিভাজনে ধর্ম, জাতি, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি প্রসঙ্গগুলোকে সযত্নে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এই এড়িয়ে যাওয়ার পিছনে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষে মানুষে দূরত্ব বেড়ে চলা – সেটা আর্থ-সামাজিক দিয়েও যেমন বেড়েছে, তেমনি সাংস্কৃতিক দিয়েও বেড়েছে। ... ...
মানসিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন ছেলেমেয়েদের যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে পুলিশ প্রথমত অভিযোগ নিতে গড়িমসি করে, দ্বিতীয়ত অনেক সময় আদৌ নেওয়াই হয় না। পুলিশ চায় আপোষ মীমাংসা করে নেওয়া হোক, ক্ষতিপূরণ দিয়ে মিটিয়ে ফেলা হোক। সুতরাং পুলিশি চিন্তা ভাবনারও বদল চাইছেন ওঁরা। চাইছেন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। ... ...
আমি যদি মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল অঞ্চলের কথা ধরি… যেখানে অষ্টাশি শতাংশ মুসলিম… কজন মুসলমান মেয়ে এখানকার গার্লস হাইস্কুলে শিক্ষকতা করে? কিম্বা হসপিটালে চাকরি করে? কিম্বা কোর্টে ওকালতি করে? কিম্বা এসডিও-বিডিও অফিসে চাকরি করে? এত মেজরিটি থাকা সত্বেও শুধু ডোমকল না, পুরো মুর্শিদাবাদ জেলায় যেখানে ৭৩% মুসলিম সেখানেও চাকরির ক্ষেত্রে, শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করছি মেজরিটি কিন্তু হিন্দুরা, মুসলিমরা নন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এটা দেখছি। মেয়েরা তো আরও পিছনে, অ-নে-ক পিছনে। দু’একজন মেয়ে ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। ... ...
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে কেজরিওয়ালকে হারানো সম্ভব হয়নি। তাই তাঁকে গদি থেকে নামানোর জন্য অন্য উপায় অবলম্বন করতে হয়েছে - ঘোষণা হয়ে গেলো যে বিজেপি-নিযুক্ত লেফটেন্যান্ট-গভর্নর এখন একাই দিল্লির 'সরকার', জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসা আম আদমি পার্টিকে কাজ করতে হবে তাঁর হুকুম মাফিক। আর তাছাড়া যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, সেই প্রত্যেকটি রাজ্যের রাজ্যপাল আর তাঁদের ওপরে থাকা দেশের রাষ্ট্রপতির ধমনীতেও তো বয়ে চলেছে গোলওয়ালকারেরই রক্ত। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একএকজন আরএসএস প্রাক্তন। তাই কানহাইয়া বা উমার খালিদের মতন অপ্রিয় প্রশ্ন করা ছাত্র-ছাত্রী আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে দেখা যাবে না আজ থেকে দশ বছর পর। ... ...
আমাদের ডোমকলের জনকল্যাণ মাঠে একবার বামফ্রন্টের মিটিং হয়েছিল… তাতে রেজ্জাক মোল্লা বলেছিলেন, ‘ভারতবর্ষে কি মুসলিমের যোগ্যতা নাই মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার? কেন হতে পারে না?’ তারপর থেকেই কিন্তু রেজ্জাক মোল্লা রাগ করে নেমে গেছেন। ... ...
সব ভালো জিনিসই এক সময় শেষ হয়। ভোটদান শেষ হলো। আবারো নানাবিধ হিসাবনিকাশ ও কাগজপত্রের পর, এবার ফেরার পালা। সব পাখী ঘরে ফেরে, কবি এরকম অযৌক্তিক দাবি করে থাকলেও, সব ভোটকর্মী ঘরে ফিরবেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। ফেরার সময় হলে দেখা যায়, সোনার তরীর মত ট্রেকারের স্থান অকুলান। আসার সময় একটা ট্রিপে পাঁচজনকে নিয়ে এসেছে ট্রেকার, ফেরার সময় পাঁচজন এবং খেলার ফল সমেত ইভিএম ---সবার জায়গা নেই। ... ...
শুরু অনেক আগেই হয়েছে। সে কারণেই সম্ভবত গুজরাট দাঙ্গার সময়ে যিনি দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন, সেই কে আর নারায়ণন অবসরের পর বলেছিলেন, তিনি সব থেকে বেশি পীড়িত হয়েছিলেন এটা দেখে যে, এত বড় একটা গণহত্যা ঘটে গেল, সারা দেশ ছিল প্রায় নীরব। সেই সাক্ষাৎকারে ইউটিউবে যে কেউ দেখে নিতে পারেন। ... ...
২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি সংসদে প্রথম ইলেক্টোরাল বন্ড বাজারে আনার কথা বলেন। অবশ্য এর জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সম্মতির দরকার ছিল। জানুয়ারির ২৮ তারিখই অর্থমন্ত্রক থেকে ই- মেইল যায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তদানীন্তন ডেপুটি গভর্নর রামা সুব্রমনিয়ম এবং সেকেন্ড ইন কম্যান্ড উরজিৎ প্যাটেলের কাছে। আরবিআই-এর তরফে দুদিনের মধ্যে জানানো হয়, এই ইলেক্টরাল বন্ড অনেকটা বেয়ারার বন্ডের মতো, যেখানে মালিক হবেন বেনামী, শেষমেশ রাজনৈতিক দলের হাতে কে বা কারা টাকা তুলে দিল তা জানার উপায় থাকছে না। ... ...
আসামে এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই যারা এনআরসি বিরোধী। এবং বিজেপি বাদে বাকি সবাই সিএএ বিরোধী। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার (বিজেপির সহযোগী বা প্রতিযোগী) সব রাজনৈতিক দলই সিএএ বিরোধী, কারণ সিএএ এনআরসি-র মূল অবস্থানটিকেই চ্যালেঞ্জ করে। বাঙালি হিন্দুরা সিএএ-র পক্ষে, কিন্তু বাঙালি মুসলিমরা বিপক্ষে। বরাক উপত্যকার প্রায় সব রাজনৈতিক দল সিএএ-র পক্ষে কিন্তু এনআরসির বিরুদ্ধে। ... ...
কবীর সুমন সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার বাড়ির সামনে বাজারে যে-মাসি ক্যানিং থেকে রোজ এসে শাকসব্জী নিয়ে বসেন, তাঁর সারাদিনে জলবিয়োগের কোনও জায়গা ছিল না, সরকার বাজারে একটি ‘পথের সাথী’ নামক স্নানাগার করে দিয়েছেন যেখানে স্নান-পায়খানা-পেচ্ছাপ ছাড়াও খানিক বিশ্রামও করা যায়। ‘পথের সাথী’ এখন বড় রাস্তার ধারে দৃশ্যমান। সংস্কৃতি মানে কেবল গান-বাজনা-গল্প-কবিতা লেখা নয়, এই ‘পথের সাথী’ নির্মাণ বা নির্মাণের ভাবনাও একটা সংস্কৃতি। ওই মাসি সারাদিন কীভাবে টয়লেটবিহীন হয়ে কীভাবে থাকেন, কী আশ্চর্য, কেউই ভাবেননি আগে! বাংলার বিপুল এই নারীসমাজ দু’হাত ভরে নিজেদের মেয়ে মমতাকে জানিয়েছেন কৃতজ্ঞতা ও আশীর্বাদ। ... ...
২০১৯-এর নির্বাচনে ওই রকম জাতীয়তাবাদী প্রচারে বাংলা থেকে ১৮টা আসন বিজেপির পায়। শুধুমাত্র বামের ভোট রামে গেছে বললেই কিন্তু এই সমস্যা থেকে মুক্তি নেই। নিজেদের দলেরও সমালোচনা তৃণমূলকে করতে হবে। কেন নীচের তলায় এতো ক্ষোভ তৈরি হল তা পর্যালোচনা করতে হবে। শুধুমাত্র অঞ্চল স্তরের নেতাদের দুর্নীতির কারণে ক্ষোভ বেড়েছে তা কিন্তু নয়। নীচের তলার নেতাদের দাদাগিরিও ও ঔদ্ধত্যও আছে। যে রোগে ৩৪ বছরের বাম শাসনের পতন হয়েছিল, সেই একই রোগে কিন্তু তৃণমূলও আক্রান্ত। বিরোধীশূন্য রাজনীতি আসলে দক্ষিণপন্থী উত্থানের সিঁড়ি সেটা আরো একবার আজ বাংলার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন। ... ...
মুশকিল হচ্ছে দু'জায়গায়। এমনটা নয় যে আমাদের রাজ্যে খুব শান্তিপূর্ণ ভোট হয় এবং স্থানীয়রা বুথে গিয়ে ঝামেলা করেনা। কিন্তু, শীতলকুচির ঘটনায় যতগুলো ন্যারেটিভ বাজারে ঘুরছে তাতে আমরা মেনেই নিচ্ছি যে স্থানীয়রা ওখানে ঝামেলা করেছিল। এখন অব্দি কোনো প্রমাণ নেই। স্থানীয়রা এরকম কোনো ঘটনার কথা স্বীকার করছেন না। কিন্তু আমরা, ব্যানানা রিপাবলিকের ম্যাঙ্গো পাবলিকেরা প্রকারান্তে মেনে নিচ্ছি যে তারা ঝামেলা করেছিলেন। এবং এরাজ্যে যেহেতু, সংখ্যালঘুদের একটা অংশ বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টির মাসলম্যান হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাতে এ ভাবনা আরও প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের মাসলম্যান হিসেবে ব্যবহার করার তালিকায় মুসলিম বিদ্বেষী প্রচার চালানো বিজেপিও পিছিয়ে নেই। চব্বিশ পরগণার ত্রাস ফিরোজ কামাল গাজী ওরফে বাবু মাস্টার এইমুহুর্তে বিজেপির সম্পদ। প্রসঙ্গত, আমাদের রাজ্যের সংখ্যালঘুরা প্রায়ই গলা ফাটান যে তাদের রাজনৈতিক দলগুলি ব্যবহার করে থাকে এবং অভিযোগটি অসত্য নয়। সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেরা কোন যুক্তিতে নিজেদের এতদিন ধরে ব্যবহৃত হতে দিচ্ছেন তার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। ... ...
সিএএ বা নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন হিন্দু-মুসলমান কাউকেই সুরক্ষা দেওয়ার আনা হয়নি। এই আইন বিজেপির জুমলাবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়। আসামে বিজেপি অসমীয়াদের বলছে তাদের সুরক্ষা দেবে, আসাম চুক্তির ছয় নং ধারা বাস্তাবায়িত করবে এবং তা করছেও। ওদিকে বাঙালি হিন্দুদের বলছে মুসলমানদের দেশ থেকে তাড়ানো হবে, হিন্দুদের কোনো ভয় নেই সিএএ দিয়ে তোমাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে হিন্দু বাঙালির কপালে সেই বিদেশী নোটিশ, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল এবং ডিটেনশন ক্যাম্প। এনআরসি আর ডি-ভোটারের কবলে পড়ে মুসলমানরা যত না ভুগছে তার থেকে তিনগুণ বেশি ভোগান্তি হচ্ছে হিন্দুদের। ... ...
এই ২০২১ সালের মার্চ মাসের ১৬ তারিখে 'টাইমস্ অফ ইন্ডিয়া' কাগজে একটা খবরে চোখ আটকে গেল। খবরটির মোদ্দা কথা হল, নোটা চালু করার অনুমতি দেওয়ার আট বছর পরেও আমাদের মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট, সেন্টার এবং ইলেকশন কমিশনের কাছে জানতে চাইছেন, নোটার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা কোনোভাবে কোনো কেন্দ্রে সর্বাধিক হয়ে দাঁড়ালে, আইনত, সেই কেন্দ্রের দ্বিতীয় সর্বাধিক ভোট পেয়ে জয়ী প্রার্থীকে কি পরাজিত হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে! ... ...
থ্রি নট থ্রি রাইফেল বাগিয়ে ধরে আড়ষ্ট কনস্টেবল বললেন- 'স্যার, আমাকে একটু গার্ড দিয়ে রাখুন। গুলি চালানোর অর্ডার নেই, শুনেছি এইসব অঞ্চলে বন্দুক ছিনতাই হয়। বন্দুক গেলে চাকরিতে টান পড়বে' ২০২৩ এর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে আসা রাজ্যপুলিশের নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় অস্থির, ভোটার বা ভোটকর্মী কোন ছাড়? অঞ্চলটি আমডাঙা। পুলিশের মুখে এ-কথা শুনে ভোটকর্মীরা হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠে পারছেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশা তাঁদের। ... ...
আড়া হয়ে মুচিপাড়া ফেরার পথে, আড়া হোস্টেল মোড়ের কাছে মাঝের পাড়ার আর একটা পথ। রিক্সায় বসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব চালক। নাম অজয় যাদব। কাকে ভোট দেবেন? "দেবো। কংগ্রেস, বিজেপি, তৃণমূল, দেব একজনকে।" প্রতিবার এক একটা দলকে সে ভোট দেয়। এবার এখনও সে ঠিক করেনি কাকে ভোট দেবে। ... ...
টোটোদের না-পাওয়ার তালিকা দীর্ঘ। খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের সমস্যা খানিক সামাল টোটোরা দিতে পেরেছেন নিজেদের চেষ্টায়। কিন্তু আজও বর্ষার দিনে হাউরি, বাংরি, তিতি নদীতে পাহাড়ি স্রোতের ঢল নামে। নদীগুলির উপর সেতু না থাকায় বর্ষার দুর্যোগে টোটোরা বিচ্ছিন্ন থাকেন সংলগ্ন শহরাঞ্চল থেকে। ভোটের আগে আর্থসামাজিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির একাধিক প্রতিশ্রুতির কথা শুনে আসছেন টোটোপাড়ার বাসিন্দারা। ... ...