এই অজানা, অনামী মুন্সি বা পণ্ডিতরাই অনুবাদে আসল ভূমিকা পালন করেছিলেন। এই সমস্ত আইনের পুস্তিকাগুলো যে পণ্ডিতদের অনুবাদ, তার বড় প্রমাণ – সব পৃষ্ঠার ওপরে ‘শ্রীশ্রীদূর্গা সহায়’, ’শ্রীশ্রীহরি’ ইত্যাদি স্মরণিকা পাওয়া গেছে। কিন্তু নিজেদের অধিকারের বলে ইংরেজ ওপরওলারা অনুবাদের ধরণ, শব্দের ব্যবহার ঠিক করে দিতেন। আর সেখানেই সমস্যার জন্ম শুরু। হ্যালহেডের প্রভাব ও আধিপত্য এইসব ইংরেজ ‘অনুবাদক-অফিসার’দের ওপর প্রচণ্ড ছিল। আর এই হ্যালহেডই প্রথম থেকে প্রচলিত বাঙলা-আরবি-ফার্সি বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন। কঠোরভাবে নির্দেশ ছিল আরবি-ফার্সি চলিত (অসাধু) বাঙলা বাদ দিয়ে সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারের জন্যে। ফলে, এই সময় থেকে এই অনুবাদগুলির মাধ্যমে আরবি-ফার্সি শব্দ বাদ পড়া শুরু হল এবং সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বাড়তে লাগল। ... ...
রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছিল, আনাজপাতির দাম বাড়ছিল, অটোভাড়া বাড়ছিল, চাকরির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সুমনের পুরোনো গান ভেসে আসছিল, কন্ঠ জোরে ছেড়ে খুব একটা লাভ হচ্ছিল না, কারণ আমরা হেজে গেছি। আমাদের মতো এরকম হাজার হাজার পরিবার যারা দেখেছে কিভাবে ভিড়ের মানুষ ক্রমশ প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতে বয়ে নিয়ে যায় উলঙ্গ রাজার পোশাক, আমরাই যারা ঝেড়েমুছে সে পোশাক পরিয়েছি বারবার রাজার গায়ে, সেইসব মানুষেরা ততদিনে হাল ছেড়ে দিয়েছে। আলো আকাশের নীচে যেদিকেই হেঁটে গিয়ে তারা দাঁড়িয়েছে, তারও খানিক আগে এসে পথরোধ করেছে শস্য নয়, মাংস নয়, তাদেরই নিজস্ব ছায়া। বয়েসের তুলনায় অরুণ বড়ো হয়ে গেছিল অনেক, শুনতে পেতাম রাজনীতির সঙ্গে তার যোগাযোগ বাড়ছে, কলেজের দিনগুলো তাকে সময়ের অশনি চিহ্ন ও সংকেতগুলোর মধ্যে সমাচ্ছন্ন করে তুলছিল। মানচিত্রের গায়ে আঁকা দেশ নয়, আমাদের হৃদয়ের গভীরের দেশ পালটে যাচ্ছিল ক্রমশই। মানুষের শ্রম নয়, নিবিড়তা নয়, অন্য কোনো অন্ধকার অনুভূতিকে সম্বল করে দেশের ভেতরে এক দেশ গড়ে উঠছিল, যেখানের জল-আবহাওয়ায় আমার প্রজাতি ক্রমে দানব হয়ে যায়। ... ...
ধার দেওয়ার জন্য বন্ধন ঋণ সংগঠন তৈরি করে দিয়েছিল। তারা ঘাড় ধরে টাকা আদায় করত – সুদ? জিগায়েন না কত্তা। বন্ধন নামেই গ্রামে এখোনো আতঙ্ক ছড়ায় – হপ্তান্তে বন্ধনের নাম শুনলেই বৌ-ঝিদের রক্ত হিম হয়ে যায়। গ্রামে বড় পুঁজি তাদের কাজ দেখে খুশ হয়ে ব্যাঙ্ক বানিয়ে দিয়েছে, যাতে তারা আরও বড় ভাবে গ্রামের টাকাটা লেপেপুঁছে আনতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক ইন্দিরা-সিপিআই জামানার পরে গ্রামে ঢুকেও গ্রামীণ মধ্যবিত্তকে সেবা দেওয়া ছাড়া বড় পুঁজির খুব বেশি সেবা করতে পারে নি। ছোট ঋণ সংগঠনের শিশুমৃত্যুর হার খুব বেশি। বড় বড় কর্পোরেট চাকরি ছাড়িয়ে, বড় পুঁজি তাদের সেবা করা সেরা মাথাদের নিয়োগ করেছিল গ্রামের সম্পদ দখলে ছোট ঋণ সংগঠনে। বহু ছোট ধার দেওয়া সংগঠন থেকে সারভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেস্ট থেকে বেছে নিয়েছে বন্ধনকে। খুব বেশি কেউ পারে নি – পারল একমাত্র বন্ধন। তারাই কর্পোরেটদের একমাত্র বাজি। ... ...
রাগপ্রধান ও রাগাশ্রয়ী গানগুলি শুনলে খুব মনে পড়ে যায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সেই অ-শিক্ষকদের, যাঁদের সাংগীতিক মধ্যমেধা বাঙালির ঘরে ঘরে ঢুকে রাগ সঙ্গীতের প্রতি সহজাত আগ্রহগুলিকে যত্নে নষ্ট করেছে। বিগত দুই প্রজন্মের এই ‘গানের মাস্টার-নাচের মাস্টার’ দৃষ্টিভঙ্গির এবং উলটো পক্ষের সেই অশ্রদ্ধার কাছে মাথা নোয়ানোর ফলাফল — জাতিগতভাবেই বাঙালির রাগ সঙ্গীতের উৎকর্ষতা তলানিতে এসে ঠেকা। ... ...
আমরা গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনীয়ারিং এন্ড টেকনোলজির ছাত্রছাত্রীরা মালদা থেকে এখন আপনার পথে পথে। সেই পথে পথেই ঘুরছি, পথেই অবস্থান, পথেই রাত কাটাচ্ছি। বারো দিন হয়ে গেল। কিন্তু, কেন? আমাদের ডিপ্লোমার বৈধ সার্টিফিকেট ও উচ্চশিক্ষার দাবিতে বিটেক এ লাটেরল এন্ট্রি তে ভর্তির দাবি নিয়ে আমরা লড়ে যাচ্ছি বহুদিনধরে। রাজ্যের কারিগরি সংস্থা আমাদেরকে তিন বছরের ডিপ্লোমার সিলেবাস পড়ার পর দুবছরের ডিপ্লোমা দিতে চাইছে যেটা কোনো সরকারি,বেসরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষাই ভর্তির জন্য বৈধ নয়।আমরা লাটেরল এন্ট্রিতে ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়েছিলাম স্টেট কাউন্সিল এর আন্ডার এ রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম আমাদের সব ডাটা ও ডকুমেন্টস আপলোড করেছিলাম তারপরেও আমাদের দুবছরের ডিপ্লোমা দিচ্ছে যদিও স্টেট কাউন্সিল অন্যান্য ইনস্টিটিউট কে তিন বছরের ডিপ্লোমা দেয়। ... ...
শিল্পকলার অন্য ক্ষেত্রে, মানে ছবি আঁকা, মূর্তি গড়া বা চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে যদি কেউ এই ধরনের রেফারেন্স বা কোটেশন ব্যবহার করেন তাহলে কি সেটা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে গন্য হবে ? আমার উত্তর হচ্ছে ‘না’। যদি কোন শিল্পী তাঁর পূর্বজ আরেকজন শিল্পীর কোন আইকনিক কাজকে অন্য ভাবে অন্য কনটেক্সটে বা অন্য মাধ্যমে ব্যবহার করে আলাদা কোন বার্তা দিতে চান, তাহলে সেটাও শিল্পের একটা ভ্যালিড পদ্ধতি বলেই ধরে নিতে হবে । এই পদ্ধতিতে সাধারণত শিল্পী তাঁর রেফারেন্স সোর্সকে গোপন রাখতে চান না বরং সেটাকেই তাঁর নিজস্ব সৃষ্টির একটা এন্ট্রি পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করবার চেষ্টা করেন । এ বিষয়ে সেরা উদাহরণ হচ্ছে পিকাসোর পঞ্চাশের দশকের বেশ কিছু ছবি, যেখানে তিনি ভেলাস্কেথ, গোইয়া, এদুয়ার মানে প্রমুখ শিল্পীর আঁকা কিছু বিখ্যাত মাস্টারপিস ছবির পুনর্নির্মাণ করেছিলেন । ... ...
এই বাঙালি হিন্দু ভদ্রলোকেদের আব্বাস বিরোধিতার আসল কারণ তার লুঙ্গি ও টুপি হলেও, তারা কখনো সে কথা প্রকাশ্যে লেখেন না। এই যে আব্বাস ও তাঁর মত মেহনতী জনতার পোষাক লুঙ্গি নিয়ে না লেখা, সেই প্রসঙ্গ না তোলা, কথা না বলা, এই স্নবারিই এঁদের সুপ্ত ইসলামোফোবিয়াকে প্রমাণ করে। ... ...
রুমেলার আকাশকে নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা আকাশের বন্ধুর ফ্যামিলিকে নিয়ে। ঐ মেয়েটা একমাত্র চাকুরে নয়, ও গৃহবধূ। বাকি সবাই বিশাল বিশাল আই টি ক্যাট। কিন্তু সবচেয়ে জিতে গেছে যেন আকাশ আর নিশান্তের চোখে সুন্দরী ওই মেয়েটাই, এত ভাল সাজতে জানে। কী প্রপার ও। কী সুন্দর ওর পা, হাত। গাল, নাক। তা ছাড়া ও ভীষণ গোছানো। আকাশের বন্ধু নিশান্ত ওর বউকে নিয়ে পাগল। প্রশংসা শুরু করলে থামতে পারেনা। ... ...
প্রথম দফায় অনশন চলাকালীন যখন একের পর এক ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং কোনো সরকারি মেডিক্যাল টিমকে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের দেখভালের জন্য সেই অবস্থায় ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার আব্দুল রাজ্জাক। তাঁরই উদ্যোগে ডাক্তার আসে জিকেসিআইইটিতে। আন্দোলনের শুরু থেকে তিনি নৈতিক ভাবে ছাত্রছাত্রীদের পাশেই ছিলেন। হঠাৎ শোনা যায় আব্দুল বাবুকে জিকেসিআইইটি থেকে সরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এনআইটি দুর্গাপুরে। স্বভাবতই ছাত্ররা এই খবরে ষড়যন্ত্রের আভাস পায়। আবারও তৈরী হয় আন্দোলনের পরিস্থিতি। এনআইটির তৎকালীন ডিরেক্টর শ্রী অশোককুমার দে-র বক্তব্য অনুযায়ী অবশ্য এর সমস্তটাই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ... ...
সারা দেশ যখন জনগণমনঅধিনায়ক সুরে মাতোয়ারা, সারে জাঁহা সে আচ্ছা গাইছে দৃপ্ত উচ্চারণে আর তেরঙ্গা ঝান্ডা দুলিয়ে গাল ফুলিয়ে নারা তুলেছে বন্দে-মাতরম, তখন বাংলা অসম আর পাঞ্জাবের বুক চিরে উঠে আসছে অক্ষম ক্রোধের দীর্ঘশ্বাস, বিশ্বাসহীনতার কাছে পরিচয়ের হারানো অপমানিতের চিখ চিৎকার - "আমগো দ্যাশ ভাগ হৈয়া গেল / মোর দেখ ভাগ হৈ গ'ল / সাড্ডা দেস ভডিয়া গৈ" আজ সেই বিশ্বাসঘাতকাতার, সেই পিঠ পিছে ছুরি মারার, সেই চুর চুর হয়ে ভেঙ্গে পড়া স্বপ্নযাপনের পঁচাত্তর বছর। কি বীভৎস মজা ! এমন দিনে চেতনে বার বার আছড়ে পড়ে গান তার সুর আর বাণী নিয়ে, যে শোনায় তার কন্ঠ, যে শোনে তার অন্তর গেয়ে ওঠে – "যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক / আমি তোমায় ছাড়বোনা মা" ... ...
আমাদের গ্রামের বাড়ি বসিরহাটের আড়বালিয়ায়। সেখানে একরকম ছোটো দানা লালচে কমলা রঙের পাতলা পাতলা ভাঙা মুসুর ডাল পাওয়া যেত। দোকানে বলত, মারুতি-ভাঙা ডাল। ঐ ডালে মা ফোড়ন না দিয়ে, শুধু ডালসেদ্ধ করত। কাঁচা ডালে জল দিয়ে, তাতে কাঁচা সর্ষের তেল, নুন, মিষ্টি, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বসিয়ে দিত। সে ডালে কি যে ছিল! ঐ সেদ্ধ ডাল যেন অমৃত লাগত খেতে। আমার বিয়ের পরেও কিছু বছর আড়বেলেতে ঐ ডাল পেয়েছি। আমার কর্তাও ঐ ডালসেদ্ধর প্রেমে মজেছিলেন। কিন্তু এখন আর পাই না। আর মাঝে মাঝে মা রাতে সাদা কাপড়ে ডাল বেঁধে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়িতে ফেলে দিত। তারপর সেই টাইট ডালের বল কাঁচা সর্ষের তেল আর নুন দিয়ে মাখা হত। বেশ খেতে লাগত। ... ...
এইসবের মাঝখানে পড়ে আমার ভাবনাচিন্তারা সব কেমন গুলিয়ে যেতে থাকল। মনের মধ্যে প্রশ্ন ওঠা শুরু হল, সত্যিই কি এই বিভিন্ন ধরনের অসাম্যের বিরূদ্ধে আন্দোলন হাত ধরাধরি করে চলতে পারে? কি ভাবে ক্যুইর আন্দোলনে একজন বামপন্থী (মতান্তরে ভাম্প্যান্টি) ও একজন দক্ষিনপন্থীর (মতান্তরে ভক্ত চাড্ডীর) সহাবস্থান হতে পারে? যখন সমকামী আন্দোলনের জন্য কথা বলছি তখন কি আমার অন্য রাজনৈতিক/সামাজিক পরিচয়টাকে সরিয়ে রাখতে হবে? তখন আমার শুধু একমাত্রিক পরিচয়, আমি একজন সমকামি? কিন্ত তাহলে, যে ঘেটোর বিরুদ্ধে এই আন্দোলন, সে গন্ডীই কি নিজের চারিদিকে টেনে নিচ্ছি না আমি? আবার লিঙ্গ-আন্দোলনকে যদি ডান-বামে ভাগ করি, তাহলে কি শক্তিক্ষয় করছি না নিজেদের? "মিনিস্কিয়ুল মাইনরিটি" কি আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে না? যদি দেখি ক্যুইর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শোভা পাচ্ছে স্পন্সর অনুপম খেরের কাট আউট, যিনি আমার মতে জে এন ইউ ইস্যুতে বাকস্বাধীনতার কন্ঠরোধ করতে চেয়েছিলেন, তখন কি করব? যেহেতু ক্যুইর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল তাই তার সঙ্গে থাকব, না কি সরে আসব, আর না কি অপছন্দটাকে যথাস্থানেভ্য জানিয়ে রেখে চুপচাপ বসে যাব? আর না কি সন্ত টেরেসার মত বলব, টাকায় কোনও দাগ নেই? টাকা কোথা থেকে এল গুরুত্বপূর্ণ নয়, কি কাজে খরচ হল সেটাই আসল? ... ...
আমরা এই মেয়েদের ঘৃণা করি, সমাজের পাঁক বলে ভাবি। ডাক্তারবাবু আর তাঁর দুর্বার মহিলা সমণ্বয় কমিটি মাত্র ২৪ বছরের সময়সীমায় আমাদের এই নজর অনেক পাল্টেছিলেন। নারী, মা এবং মানুষ, যৌনকর্মী জীবনের এই তিন অধ্যায় নিয়ে গুরুতে এবং অন্য জায়গাতেও অনেক লিখেছি। ডাক্তারবাবুর সদিচ্ছায় ব্যক্তিগত ভাবে এই লড়াইকে খুব কাছ থেকে দেখতে পেরেছি। তাই আমি এই নারীদের অত্যন্ত সমীহ করি। আদ্যন্ত লড়াকু না হলে এইরকম একটি নিষ্ঠুরতম পেশায় টিঁকে থাকা অসম্ভব, আরো অসম্ভব সমমনাদের নিয়ে এইরকম একটি সংগঠনে সামিল হওয়া ও তাকে এইভাবে সফল করে তোলা। ... ...
অনেকেই প্রশ্ন করে, “তাহলে বৌদ্ধধর্মে সরস্বতীর নাম কি?” বৌদ্ধধর্মে অনেক বৈদিক দেবদেবীর নাম পরিবর্তন করা হলেও, কোন কারণে সরস্বতীর নাম পরিবর্তন করা হয়নি। যদিও বৌদ্ধধর্ম ভারতের গণ্ডী ছেড়ে যখন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রসারিত হয়, তখন স্থান ভেদে দেবীর নাম পরিবর্তন হতে থাকে। তিব্বতে তাঁর নাম হয় ‘ইয়াং চেন মো’, সঙ্গীতের দেবী হিসাবে প্রাধান্য হলে নাম হয় ‘পিওয়া কার্পো’। মঙ্গোলিয়ায় তিনি হলেন ‘কেলেয়িন উকিন তেগ্রি’। চীন দেশে নাম হল ‘মিয়াওয়িন মু’। জাপানে তাঁকে মিলিয়ে দেওয়া হল দেবী ‘বেঞ্জাইতেন’ বা ‘বেন্তেন’-এর সাথে। যদিও বৌদ্ধ সরস্বতীর সব মন্ত্রে- তা সে যে ভাষাতেই হোক- উচ্চারণ ‘সরস্বতী’ই করা হয়। ... ...
এইসব পুরোনো বীভৎসতার ছবিকে সামনে রেখে বর্তমানের পরিস্থিতিকে যখন পড়ি, তখন বুঝতে পারি কিচ্ছু বদলায়নি। আমাদের মন বদলায়নি, সংহতি-মৈত্রীর শুভ উদ্যোগগুলিকে আজও ব্যর্থ করতে সমান ভাবে সক্ষম রাজনীতির লোকেরা, আর আমজনতা নেহাত ক্রীড়নক। গোদের উপর বিষফোঁড়ার নাম সোশ্যাল মিডিয়া। মুখে মুখে কথা ছড়াত আগে, তাকে পুলিশ আটকে রাখতে পারত অঞ্চল ঘিরে, কিন্তু আজকের নতুন দানবকে বধ করার কোনো একমুখী কৌশল নেই। দাঙ্গাবাজদের হাতে এই অস্ত্র কালাশনিকভের থেকেও বেশি ভয়ংকর। আজ যারা আগুন লাগায় তারা ঠান্ডা ঘরে বসে গোটাটাই অপারেট করে। সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে ওঠে সেই অপারেশনের বেসক্যাম্প। খবরের আগে ‘ভাইরাল’ হয় ভুয়ো খবর। প্রত্যক্ষ দাঙ্গাবাজেরা আজ প্রথমে রাস্তায় নামেন না, তাঁদের খোঁজ পেতে পেতে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ঘরবাড়ি। পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘটনা গত পাঁচ-ছয় বছরে বারবার ঘটেছে, যখন সবটা বোঝা গিয়েছে তখন লাশ গোনা ছাড়া আর কোনো কাজই বাকি ছিল না। ৩৬ বছর বয়সি মার্ক জুকারবার্গের ব্রেন চাইল্ড ফেসবুককে মানুষখেকো দৈত্যের ভূমিকা নিতে দেখে ভূতগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে নাগরিক সমাজ। কার্যসিদ্ধিতে হাসি চওড়া হয়েছে দাঙ্গা-সওদাগরদের। হুগলি, উত্তর চব্বিশ পরগনা, মালদহ, হাওড়ায় বারবার রক্ত ঝরেছে। আমরা চিনব তাদের, যারা এই জায়গাগুলিতে আগুন লাগাল, জানব কীভাবে ছলে-বলে-কৌশলে ফেসবুককেই অস্ত্র বানাল তারা। ... ...
যতবার,যতজন, শান্তভাবে কথা বলতে গেছেন, প্রতিবারই পুলিশ প্রায় বিনা প্ররোচনায় একই ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং একের পর একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ যে আচরণ করে, যে ভাষায় কথা বলে, এবং যে পরিমান মারধোর করে, বইমেলার সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তা অভূতপূর্ব। প্রায় অর্ধশতকের বইমেলার ইতিহাসে কলঙ্কলেপনের জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ। ... ...
- তবে ভেবে দ্যাখ দিনি, এই জগত সংসারের হাজার হাজার কোটি কোটি মানুষদের মধ্যে তুই লাখে এক। - তা বটে। - কেমন গর্ব হয় বল? - তা হয়। - হয়ে গ্যালো। তোরে অহম ধরলো। তোর দ্বারা আর কিছু হবে না। - সে তো তুমিও। - অ্যায়, ধরেছিস এক্কেরে ঠিক। - তবে? - তাই তো মাধুকরী। - সে আবার কী? - সে ভিক্ষেই তো। ভিক্ষে করলে সবার কাছে মাথা নীচু করতে হয়। মাথা নীচু করতে শেখ, তবে পার পাবি। রোজ তিন জনের কাছে ভিক্ষে করবি। পয়সা চাইবি না। এই যেমন চা খাওয়াতে বলবি, একটা বিড়ি চাইবি, তাতেই হবে। সক্কলের কাছে মাথা নীচু করতে শিখবি। সেই যে মাথাটা নামিয়ে দিয়েছিলেন। অমাবস্যায় চাঁদের উদয়। সে তো গুরুই পারেন। যিনি অ¡ন্ধার (গু) দূর করেন (রু)। আমার সনাতন গুরু। ... ...
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক অত্যাবশ্যক ওষুধের তালিকায় আছে ৩৭৪টা ওষুধ। ভারতের জাতীয় তালিকায় ওষুধের সংখ্যা ৩৪৮। অথচ ভারতের বাজারে ওষুধ ফর্মুলেশনের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে। এত ফর্মুলেশন তাহলে কেন? একই ওষুধ আলাদা আলাদা কোম্পানী বাজার-জাত করে আলাদা আলাদা নামে। তারপর আছে একাধিক ওষুধের নির্দিষ্ট মাত্রায় মিশ্রণ, যার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়। এছাড়া আছে অপ্রয়োজনীয় অনেক ফর্মুলেশন, যেমন—কাফ সিরাপ, হজমী ওষুধ, টনিক...। প্রচুর ওষুধ, মানুষের জন্য ওষুধ নেই... ... ...
দ্বিমেরু বিশ্বে যে ধারণা জনমানসে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিলো একটা সময়ে তা হল আমেরিকা-ইংল্যান্ড-ফ্রান্স-জাপান এতদিন ধরে (প্রায় ২০০ বছর) সার্বজনীন শিক্ষা-স্বাস্থ্য-জনস্বাস্থ্য-কাজের অধিকার-খাদ্যের অধিকার-বাসস্থানের অধিকার নিয়ে যে পথে চলে এসেছে তার বিকল্প আরেকটা রাস্তা আছে। এ রাস্তায় কার্টেলের (কর্পোরেটদের পিতৃপুরুষ) বদলে সমবায়ের ভাবনা আছে। এ রাস্তায় ব্যক্তির লাভালাভ একমাত্র বিষয় না হয়ে সমাজ ও সমষ্টির প্রাধান্য আছে। রবীন্দ্রনাথের বলা (যদিও একুশ শতকের পৃথিবীতে তার কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক এবং মতদ্বৈধ প্রত্যাশিত) গ্রামসভার কথা, গ্রামের সমূহকে ব্যবহার করে গ্রামে পুকুর খোঁড়া, গ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখা, গ্রামের সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে গ্রামে নেওয়া (প্রসঙ্গত সমধর্মী ধারণা গান্ধীজিরও ছিলো) এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মানুষের বোধে জারিত হতে শুরু করেছিলো। ... ...
এই সমাজকে পাল্টাতে হবে। এই শোষণের সাম্রাজ্যকে পাল্টাতে রাজনীতি হচ্ছে পথ। আর কবিতাও এই পাল্টানোর জন্য আমার অন্যতম হাতিয়ার। আর তাছাড়া রাজনীতিকে বাদ দিয়ে ‘মানুষের কবিতা’ লেখা যায় না। মানুষের কবিতা লিখতে চেয়েছিলেন দ্রোণাচার্যের মত অনেকেই। যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র তিমিরবরণ সিংহ। শঙ্খ ঘোষ ছিলেন তিমিরের মাস্টারমশাই। ‘আদিমলতা গুল্মময়’ ও ‘বাবরের প্রার্থনা’র কবিতায় এই সব দিনের আভাস আছে। 'কবিতার মুহূর্ত'। সেখানেও শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন— আটষট্টিতে তিমিরের মুখের রেখায় অনেক বদল হয়ে গেছে। শুধু তিমির নয়, অনেক যুবকেরই তখন পাল্টে গেছে আদল, অনেকেরই তখন মনে হচ্ছে নকশালবাড়ির পথ দেশের মুক্তির পথ, সে-পথে মেতে উঠেছে অনেকের মতো তিমিরও। তারপর একদিন গ্রামে চলে গেছে সে... যাদবপুরের বসতি এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে নকশালবাড়ি রাজনীতির আগুন মশালের মতো করে বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিমির। তারপর একদিন মালদার গ্রামে চলে যান ভূমিহীন গরিব কৃষকদের কাছে। ... ...