শিল্প আর শিল্পী নাকি আলাদা। এই আবেগ ভ্যাদভ্যাদে মৃত্যুদিনে সেসব কথা ভাবতে ভালো লাগেনা। এ সব ব্যক্তিগত অনুভূতি বড়ই ব্যক্তিগত। ফিল্ম টিল্ম গোল্লায় যাক, গোল্লায় যাক শিল্পের শবসাধনা, কবিতার বদলে ট্রামে ছেঁচড়ে যাওয়া জীবনানন্দের ডেডবডি মনে পড়ে। সেই দশকে নাকি ওটাই ছিল একমাত্র ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যু। তাকে আপতিক ভাবতে অসুবিধে হয়, যেমন অসুবিধে হয় ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে একজন সফল ফিল্ম মেকারের মৃত্যু। আসলে তো তাঁকে নেই করে দেওয়া হল। টিভিতে, খবরের কাগজে, সোশাল মিডিয়ায় যত কলকাকলি আর হাহুতাশ দেখি, সব শুধু সিনেমা। সিনেমা সিনেমা আর সিনেমা। লোকটা কোথাও নেই। কিন্তু আজ তো সিনেমার দিন না। একটা লোক মারা গেছে। একজন ব্যক্তি মারা গেছেন। সে শুধু সিনেমা নয়। নিজের আইডেন্টিটিকে সে কখনও সিনেমা দিয়ে ঢাকেনি। মেয়েলি দোপাট্টা পরে কানে দুল ঝুলিয়ে টিভি শোতে এসেছে। যত বয়স হয়েছে তত নরম হয়েছে তার গলার আওয়াজ, আর তীব্রতর হয়েছে তার আইডেন্টিটি। নমনীয়তাকে, নরম স্বরে কথা বলাকে আমরা পুরুষের দুর্বলতা বলে ধরে নিই। কিন্তু ঋতুপর্ণ জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন, ব্যাপারটা অতো সোজা নয়। যতগুলো নতুন পুরস্কার ঝুলিতে ঢুকেছে, ততই মেয়েলি হয়েছেন তিনি। ততই নরম হয়েছে তাঁর কণ্ঠস্বর। মেয়েলিপনাকে শক্তি দিয়ে আগলে রেখেছেন। ছুঁড়ে দেওয়া ইঁটগুলোকে, "লেডিস ফিংগার" তাচ্ছিল্য আসবে জেনেও, আঁকড়ে ধরেছেন ওই মেয়েলি আলখাল্লাকে। সেই নরম সাহস, সেই এফিমিনেট দৃঢ়তা ছাড়া ঋতুপর্ণ নেই। হয়না। ... ...
বামরা অনেকদিন মাটির কাছাকাছি লোককে ফোকাসে আনেনি। টিভিতে যে মুখগুলি, সবই শিক্ষিত। যেটুকু নড়াচড়া, তাও শিক্ষিত অংশটিকে নিয়েই। কেন, সে অবশ্য বোঝা মুশকিল, দেবলীনা হেমব্রমের মতো নেত্রী থাকতেও। কিন্তু সে অন্য কথা। যে কোনো কারণেই হোক, আব্বাস, এই কাঁচা আনকোরা মাটির গন্ধটি সরবরাহ করছেন। তিনিই এখন পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের প্রতিভূ। ... ...
সারা দেশ জুড়ে ভিন্ন মতের প্রতি অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরির অভিযোগ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে নতুন নয়। এই রাজনৈতিক দলটি এবং এদের শাখা প্রশাখা নানা সংগঠন একই সঙ্গে অসহিষ্ণুতার জয়গান করে এবং নিজেদের রাম ভক্ত বলে দাবি করে। অনেকেই মেনে নিয়েছেন, রামায়ণের ইজারা এখন এদেরই হাতে। কিন্তু সত্যিই কি রামায়ণ এমনই অসহিষ্ণুতার কথা বলে! ... ...
আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চাপে প্রতিটি দেশের, বিশেষ করে গরীব দুর্বল ও ছোট দেশগুলোতে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। এর জায়গা নিয়েছে কর্পোরেট হেলথ সেক্টর যেখানে স্বাস্থ্য নেই, রয়েছে বহুমূল্যে কেনা স্বাস্থ্য পরিষেবা। এ কারণে আফ্রিকার দেশগুলোতে এবোলা মহামারির চেহারা নিয়েছিলো যখন তখন স্বাস্থাকর্মীদের বেশিরভাগের কাছে একটি গ্লাভস কিংবা মাস্কও ছিলো না। এখনো ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আমেরিকার মতো দেশে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষিত হবার বিষময় ফল ২০২০-র পৃথিবী দেখছে। ... ...
ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের মতন সার্স-কোভ২ ভাইরাসও সম্ভবত আমাদের সঙ্গে অনেক, অনেক দিন থাকবে ভাইরাস-শিকারী পিটার পিওট এর সঙ্গে আলাপচারিতা, সার্স-কোভ২ ভাইরাসের সঙ্গে আগামী দিনগুলোর বিষয়ে লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পিটার পিওট টেডমেড ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টরের করা ভাইরাসের উপর ১০০ টি প্রশ্নের উত্তর দিলেন। ... ...
যুদ্ধের ক্ষেত্রে মাওবাদীদের অভিজ্ঞতা, সংযম ও পারদর্শিতা অন্যান্যদের চেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বেশি ছিল। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে লড়াইয়ের কারণে থ্রি নট থ্রি বুলেটের দাম ১২০ থেকে ১৮০ হয়ে গিয়েছিল, চাহিদা বাড়ার কারণে। তালপাটি খালের ওপার থেকে একবার বন্দুক ফুটলে আন্দোলনের স্থানীয় যোদ্ধারা দশ রাউন্ড ফায়ার করে দিচ্ছে উদ্দেশ্যহীন ভাবে, এই ছিল পরিস্থিতি। এই নৈরাজ্যবাদী অপচয় আটকাতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বুলেটের রাজনৈতিক মাহাত্ম্য ও খরচ বোঝাতে হয়েছিল কমরেড বাতাস আর গৌরাঙ্গকে। ... ...
‘আজাদি ঝুটা’ ছিল কিনা জানিনা, তবে তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসে ১৯৫০-র দশকের পটভূমিতে বাংলায় কলেরার বিবরণে, আর শরৎচন্দ্রের ব্রিটিশ আমলের বাংলায় কলেরার বিবরণের মধ্যে মূলগত কিছু ফারাক দেখা যায়। ‘আরোগ্য নিকেতন’-এ কলেরা আটকাতে ‘শিক্ষিত ছেলেরা’ ‘কোদালি ব্রিগেড’ নামে পরিশ্রুত জলের জন্য কুয়ো খুঁড়ছে। সরকারি ‘স্যানিটারি ইনস্পেক্টরেরা পুকুরে ব্লিচিং পাউডার গুলে দিয়ে জলকে শোধন’ করছে, ‘অ্যান্টি-কলেরা ভ্যাকসিন ইনজেকশন’ বা ‘কলেরার টিকে’ দিচ্ছে।৩ এই ধরণের জনস্বাস্থ্যের কিছু তৎপরতা ও জনসচেতনতা কিন্তু বাংলায় কলেরা মোকাবিলায় দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ককের ভিভরিও কলেরির বিষের ধারণার সাত দশক পরে স্বাধীন ভারতে ১৯৫১ সালে তা নিয়ে গবেষণায় এগিয়ে এলেন এক বাঙালিই। কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী শম্ভুনাথ দে। শম্ভুনাথ খরগোশে পরীক্ষা করে দেখলেন, কলেরার আক্রমণ স্থল অন্ত্র। ভিভরিও কলেরি থেকে তিনি কলেরার বিষ আলাদা করে খরগোশে প্রয়োগ করে ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম হলেন। এটা কলেরা গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন এক দিশা দিল। এর আগে ধারণা ছিল, কলেরা টক্সিন আসলে ব্যাকটিরিয়ার কোষ প্রাচীরে থাকা এন্ডোটক্সিন থেকে হয়। শম্ভুনাথ প্রমাণ করলেন, কলেরা টক্সিন ব্যাকটিরিয়ার কোষ থেকে নিঃসৃত হয় (এক্সোটক্সিন)। তাই ব্যাকটিরিয়া ছাড়াও খালি এই বিষই ডায়রিয়া ঘটাতে সক্ষম। শম্ভুনাথ দের এই আবিষ্কারের পর দু দশকের মধ্যেই কলেরা টক্সিনের গঠন, প্রকৃতি সবই জেনে ফেলা সম্ভব হয়। কোলকাতায় নিজের গবেষণাগারে যৎসামান্য যন্ত্রপাতির ওপর ভর করে ‘ভারতীয় কলেরা’র গবেষণায় বাঙালির এই অবদান স্বীকৃতি পায় বিশ্বে। ১৯৫৯ সালে বিখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর এই কাজ। তাঁর কাজ এতটাই আলোড়ন ফেলে যে নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জসুয়া লিডারবার্গ শম্ভুনাথকে নোবেল পুরস্কারের জন্যেও মনোনীত করেন। শম্ভুনাথের দেখান পথে হেঁটে পরবর্তী কালে কলেরা গবেষণার দৃষ্টিকোণ পালটে যায়। এবং পরের ষাট বছরে সারা পৃথিবীতে কলেরা টক্সিনের ওপর হাজার হাজার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। অবশ্য বাঙালি স্বাভাবিক ভাবেই শম্ভুনাথের কথা বিশেষ জানেও না, আর জানলেও মনেও রাখেনি। সে ভিন্ন প্রসঙ্গ। ... ...
তাই সবকিছুর পরেও এই বই সেই মানুষদের গল্প বলে, সেই ভূখণ্ডের গল্প বলে, আধিপত্যবাদের নিষ্পেষণে গুঁড়িয়ে যেতে যেতেও যা তুমুল জীবনের উদযাপনে বাঁচতে চায়। গ্রামের স্থানীয় মসজিদে গিয়ে সৌদির ক্যাম্প থেকে ফেরা কট্টর ইসলামিস্ট ছোকরা যখন চোখ-মুখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা’ (শ্রেষ্ঠ কে?) তার উত্তরে কেউ ‘আল্লাহু আকবর’ চেঁচিয়ে ওঠে না, বরং একে অন্যের মুখ চাওয়া-চায়ী করে। চেঁচাবে কি করে? আরবি জানলে তো! ছেলেপুলের কাছে তুমুল প্যাঁক খেয়ে চোখমুখ লাল করে সেই ইসলামিস্ট বুঝিয়ে দেয় যা এই স্লোগানের উত্তরে আল্লাহু আকবর বলাটাই নিয়ম। তারপর আব্বার চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা”। দুই একজন মিনমিন করে বলে ওঠে ‘আল্লাহু আকবর’। প্রোগ্রাম সুপারফ্লপ হবার পর এক বছর ধরে সেই ছোকরা আওয়াজ খেতে থাকে গ্রামের অন্য ছেলেপুলের কাছে। ততদিনে কিন্তু ধর্মের হাত ধরে রেজিস্টান্স পৌঁছে গেছে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে। পণ্ডিতদের মাস এক্সোডাস ঘটে গেছে, শ্রীনগরের রাস্তা উজিয়ে উঠছে আজাদ কাশ্মীরের দাবীতে, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে নিখোঁজ এবং ঘরছাড়া। কিন্তু জীবন যেখানে যেটুকু চেটেপুটে নেবার, নেবেই। আগ্নেয়গিরির চূড়ায় বসে পিকনিক করার নাম-ই কাশ্মীর, বারবার মনে করিয়ে দেয় এই বই। ... ...
স্বাস্থ্যের জগতে দু’ধরনের নাগরিকত্ব (health citizenship) তৈরি হল। একটি পূর্ণ রাশি ১, আরেকটি ০। আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও এরকম integer দেখা হয় – হয় ০ কিংবা ১। এখানে ভগ্নাংশের কোন জায়গা নেই। যেমনটা আজকের ভারতে এবং বিশ্বে দেখছি আমরা। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল যে স্বাস্থ্যের পরিবর্তে শিক্ষার চোখ দিয়ে দেখলেও আমরা একইরকম অবস্থান দেখতে পাবো। ১৯শ শতাব্দিতে আধুনিক রাষ্ট্র তৈরির শুরু থেকেই রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল মানুষ যাতে “স্বাভাবিক (normal)” এবং “অস্বাভাবিক (pathological)” এই দ্বৈত বিভাজনের গবাক্ষ দিয়ে দেখতে শেখে, সড়গড় হয়ে ওঠে। কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়োত্তর গবেষণা সবকিছুর মধ্য দিয়ে এ শিক্ষা চারিয়ে যায় প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের বোধের মধ্যে। ... ...
৫০০-১০০০ এর নোট বাতিল কেন ? মোদীর এবং সরকারী যুক্তি - ফেক ভারতীয় কারেন্সির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী,ড্রাগ এবং আর্মস স্মাগলারদের মত সরকারবিরোধী কার্যকলাপের অর্থের স্রোত বন্ধ করে দেওয়া । ৭০ বছর ধরে চলে আসা কালো অর্থ ব্যবস্থার মাজা ভেঙ্গে দেওয়া ইত্যাদি । কিন্তু যদি ধরুন আমাদের নূতন নোট ছাপবার দ্বায়িত্ব সরকার এমন এক কোম্পানির ওপর ন্যস্ত করে যাঁদের ভারত সরকার ইতিমধ্যে পাকিস্তানে নকল ভারতীয় টাকা ছাপানোর কাজে সহায়তা করবার অপরাধে ব্ল্যাক লিস্টেড করে রেখেছে ? চমকে উঠবেন না ! পড়তে থাকুন, আপনার -আমার বিপদের কথা । ... ...
ফাইজারের বায়োটেকনোলজি-জাত ভ্যাক্সিন এদেশে এখনও আসেনি। সে ভ্যাক্সিনে নরওয়েতে তেইশ জন মারা গিয়েছেন। সকলেই ভ্যাক্সিনের কারণেই মারা গিয়েছেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয় - তবু, ধরেই নেওয়া যাক, এঁদের মৃত্যুর কারণ ওই টিকা। এই ভ্যাক্সিন সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতির এম-আরএনএ ভ্যাক্সিন - পৃথিবীতে প্রথম। আগামী দিনে এই পথেই হয়ত আসবে অজস্র সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধী টিকা। ... ...
বীরচন্দ্রের মৃত্যুর পরে ১৮৯৬ সালের শেষে মহারাজা রাধাকিশোর সিংহাসনে বসেন চল্লিশ বছর বয়সে। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথেরই সমবয়সী। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। রাধাকিশোরের রাজত্বের ছমাস কাটতে না কাটতেই ১৮৯৭ সালের প্রবল ভূমিকম্পে ত্রিপুরা সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে করুণ আর্থিক অবস্থার মুখোমুখি হয় রাজ্য এবং তার মধ্যেই রাজপারিষদদের স্বার্থপর আচরণে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা। রাধাকিশোরের একান্ত অনুরোধে তাঁকে সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ভেবে অবাক হতে হয়, সাহিত্যের নান্দনিক বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে এসে বিরাট ধৈর্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বন্ধুকে রাষ্ট্রশাসনের কূটিল বিষয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, নিজে ত্রিপুরায় হাজির হয়ে শাসন ব্যবস্থার নানা ত্রুটি বিচ্যুতি লক্ষ্য করে উপযুক্ত বিশ্লেষণ সহ একটি গোপন নোট পাঠান রাজার কাছে। তাতে রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে কবির বিচক্ষণতার পরিচয় মেলে... ... ...
ওঝা যদি ভূত ঝাড়ায়, তো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে পুলিশকে দেখতে হবে যে সে টাকা নিয়েছিল কিনা (সে ক্ষেত্রে ৪২০ ধারা চলবে) বা মারধোর করেছে কিনা (সেক্ষেত্রে হয়ত ৩২৩ ধারা দেওয়া যাবে)। কারণ, 'ভূত ছাড়ানো' ব্যাপারটাতে তো আর এমনিতে কোনও আইনি বাধা নেই! ... ...
মধ্যরাতের স্বাধীনতা মিথ্যা, এ ঘোষণা ঘটে উঠেছিল যে ভাষায়, সে ভাষা আমাদের নয়। আমাদের, বাঙালিদের নয়। এমন কথা বললে প্রাদেশিকতার দায় এসে পড়ে বটে, কিন্তু প্রাদেশিকতা কি তত দূষ্য? একটা উত্তর দিচ্ছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়। ... ...
ছোটবেলা থেকেই আস্থা রেখেছিলাম বিজ্ঞানে, সত্যে, যুক্তিতে। ঠিক সেই কারণেই আজ যাদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে বাধ্য হলাম, তাঁদের একএকটা রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবেই ধরতাম। তাঁরা যখন কিছু লিখতেন, বলতেন, যাচাই না করেই সেই ফ্যাক্টগুলো মেনে নিতাম, অনেক সময় দ্বিমত হতাম তথ্যের ব্যাখ্যায়, কিন্তু তথ্যে বা basic framework এ নয়। একটা আস্থা ছিলো, বিশ্বাস ছিলো, শ্রদ্ধা ছিলো - তাঁদের সততায়, জ্ঞানে, বুদ্ধিবৃত্তিতে। কিন্তু এখন যখন দেখি এঁদের অনেকেই পূর্বনির্ধারিত বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বাস্তবকে অস্বীকার করে অন্ধ বিশ্বাসের প্রচার করেন তখন মানতেই হলো, কোভিড১৯ অনেক কিছুই কেড়ে নিয়ে গেল তার মধ্যে নিয়ে গেলো এই আস্থাটাও, এতেও কম রিক্ত হলাম না – অন্তত ব্যক্তিগত ভাবে । এই বয়সে আস্থার জায়গা খুব কম, সেখানেও যখন টান পড়ে, হতাশ লাগাটা বোধহয় অস্বাভাবিক নয়। ... ...
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মহিলা ছাত্রদের ভর্তি করা নিয়ে চিন্তাভাবনা ১৮৭৬ সাল থেকে শুরু হয়। সেসময়ের বাংলার লেফটন্যান্ট গভর্নর স্যার রিচার্ড টেম্পল এ বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন। ১৮৮১-তে প্রধানত ভর্তি হতে উৎসাহী ছাত্রীদের অভিভাবকদের চাপে এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় “discussing the question of accepting an inferior admission qualification for lady students.” (Centenary Volume, 1935, p.46) এই দলিলের ভাষ্য অনুযায়ী সম্ভবত ১৮৮৪ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে কাদম্বিনী গাঙ্গুলি অ্যাডমিশন নেন (বা বলা ভালো অ্যাডমিশনের অধিকার পান)। উল্লেখ করা দরকার যেহেতু অক্সফোর্ড এবং কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিলনা সেজন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ মহিলাদের ভর্তির ব্যাপারে গররাজি ছিল। ... ...
জনপ্রিয় ধারণায় রাম-রামায়ণ-বাল্মিকীরে কৃষ্ণ-মহাভারত-দ্বৈপায়ন থাইকা প্রাচীন ভাবা হইলেও ঘটনা কিন্তু ঠিক উল্টা। এর পক্ষে পয়লা জোরালো যুক্তিটা হইল দক্ষিণ দিকে আর্যগো ভারত-বিস্তারের কালক্রমের লগে দখলি-মানচিত্রের হিসাব। মহাভারতের ঘটনাস্থল থাইকা রামায়ণ ঘটনাস্থল আরো বহুত পূর্ব দিকে। আর্যগো দক্ষিণ দিকে পা বাড়াইবার ঐতিহাসিক সময়কাল মাথায় রাইখা রমিলা থাপারও মন্তব্য করেন যে রামায়ণ তৈরি হইছে ৮০০ খিপূর অন্তত পঞ্চাশ থাইকা একশো বছর পরে। মানে সাড়ে সাত থাইকা সাতশো খিপূর দিকে... ... ...
দ্বিমেরু বিশ্বে যে ধারণা জনমানসে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিলো একটা সময়ে তা হল আমেরিকা-ইংল্যান্ড-ফ্রান্স-জাপান এতদিন ধরে (প্রায় ২০০ বছর) সার্বজনীন শিক্ষা-স্বাস্থ্য-জনস্বাস্থ্য-কাজের অধিকার-খাদ্যের অধিকার-বাসস্থানের অধিকার নিয়ে যে পথে চলে এসেছে তার বিকল্প আরেকটা রাস্তা আছে। এ রাস্তায় কার্টেলের (কর্পোরেটদের পিতৃপুরুষ) বদলে সমবায়ের ভাবনা আছে। এ রাস্তায় ব্যক্তির লাভালাভ একমাত্র বিষয় না হয়ে সমাজ ও সমষ্টির প্রাধান্য আছে। রবীন্দ্রনাথের বলা (যদিও একুশ শতকের পৃথিবীতে তার কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক এবং মতদ্বৈধ প্রত্যাশিত) গ্রামসভার কথা, গ্রামের সমূহকে ব্যবহার করে গ্রামে পুকুর খোঁড়া, গ্রামকে পরিচ্ছন্ন রাখা, গ্রামের সিদ্ধান্ত প্রাথমিকভাবে গ্রামে নেওয়া (প্রসঙ্গত সমধর্মী ধারণা গান্ধীজিরও ছিলো) এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মানুষের বোধে জারিত হতে শুরু করেছিলো। ... ...
কিন্ত ইতিমধ্যেই বাঙলায় মুসলমান এবং হিন্দু উৎখাত শুরু হয়ে গিয়েছে । দেশভাগের অনতিপূর্বে এবং পরে কুখ্যাত কোলকাতা কিলিং এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের নিজগৃহ এবং নিজভূমী থেকে উৎখাত করা শুরু করে । তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসি সরকার মুসলমানদের জীবন এবং সম্পত্তির নিরাপত্তারক্ষায় পূর্ণ রূপে ব্যর্থ প্রমাণিত হন । ঘন ঘন মুসলমান বস্তিতে আগুণ , হত্যার ঘটনা এই ব্যর্থতা এবং উদাসীনতার অন্যতম উদাহরণ । প্রকৃত অর্থে এ কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিলোনা বরং মুসলমানদের ওপর একতরফা আক্রমণ এবংসরকারী নিস্ক্রিয়তার ইতিহাস । এই ক্রমাগত দাঙ্গার ফলে এবং ভয়ঙ্কর ভয়ের পরিবেশে পশ্চিমবঙ্গের বিপুল পরিমাণ মুসলমান প্রাণ বাচাতে গৃহত্যাগী , দেশত্যাগী হতে বাধ্য হতে থাকে ।দেশভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধিষ্ণু মুসলমান সম্প্রদায় নিরাপত্তার খাতিরে হয় শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে অথবা সদ্য গঠিত পূর্ব পাকিস্তানে দলে দলে চলে যেতে থাকেন । ... ...
কিন্তু, রবীন্দ্রনাথ তো অহিংস, তিনি হঠাৎ কেন এরকম ভাবে মোদিকে আক্রমণ করবেন। এর দায় লেখকের। ডাক পাঠকের মত সেও শুনেছে। শুধোলে ঠাট্টা করে বলে, ওনার দেড়শর ওপর বয়স, এখন কি আর মুখের ভাষা ঠিক থাকে। কিন্তু সে বস্তুত বিশ্বাস করে, এ না বলে গুরুদেবের উপায় ছিল না। তিনি হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, চলমান বিশ্বযুদ্ধ দেখতে দেখতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছেন। মুসোলিনির রাজসিক মায়াকে ঔদার্য ভেবে পরে মাথার চুল ছিঁড়েছেন। হিংসা বড় পীড়া দ্যায় তাকে। তবু সেসবই শেষ কথা নয়। দাদু উত্তরাধুনিক, সোভিয়েত পতনের পরে ক্রিশ্চান আলোকপ্রাপ্তি ছেড়ে উত্তর উপনিবেশবাদের মধ্যে ইতিহাসের আশ্রয় দেখতে পাচ্ছেন। বিশ্বনাগরিক বলে আরাফত, শ্যাভেজ, জাপাতিস্তাদেরও ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তিনি। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর থেকে শিল্পবিপ্লবের আগ্রাসী রূপটা ক্রমশঃ প্রতীত হচ্ছে তাঁর মানসে। অরণ্য, কৃষি ধ্বংস করে পরিকল্পনাহীন ভাবে বেড়ে চলেছে কিছু উঁচু মানুষের দাবি। দরিদ্র আরও দরিদ্র হচ্ছে, এত দরিদ্র হচ্ছে যে দারিদ্রের সংজ্ঞা পালটে দিতে হচ্ছে। পৃথিবী উষ্ণতর হচ্ছে। মানুষকে বের করে আনা হচ্ছে জল-মাটি-অরণ্য-পাখি-র সংশ্লেষ থেকে। আরও একলা হচ্ছে, এলিয়েনেটেড হচ্ছে সে। আর রবীন্দ্রনাথ দেখছেন, আমাদের ঐতিহ্যে, সংস্কারে, উৎসবে মিশে আছে এর বিরোধিতার বীজ। জাপাতাদের সংগঠক জেনারেল মার্কোস বলছেন, একমাত্র ট্রাইবাল কমিউইনিটি স্ট্রাকচারেই তিনি দেখছেন আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার শক্তি। রবীন্দ্রনাথও দেখছেন, এই হিন্দুত্বকে যা সবাইকে অমৃতের পুত্র বলে সম্বোধন করে। যা কুল-মান-এর তোয়াক্কা না করে মনের মানুষের সন্ধানে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। যে হিন্দুত্ব দেখায়, ছোট ছোট মানুষের কাজ, তাদের অ্যাবস্ট্রাক্ট লেবার-এর সম্মেলন শতশত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ-এর পরেও থেকে যায়। দুহাজার বছরের ইতিহাস পুনর্পাঠের সূত্র দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বলছেন, ইতিহাস, সমস্ত যুগে সমস্ত দেশে এক হবে এই কুসংস্কার ত্যাগ না করলেই নয়। তিনি জানেন রাজার রাজা হয়ে মানুষের বেড়ে ওঠার জন্য এই পঠনের দরকার কতটা। বিতর্কের গভীরে ঢুকে খুঁজে আনতে হবে সত্য কী, ঝড়ে বাইরের নিয়ম নড়ে যাওয়ার পর ভবিষ্যতের জন্য অটুট হয়ে কোনটা পরে থাকে। ... ...