আমরা আলাস্কা গেছিলাম ২০০৩-এর জুলাই মাসে। আমরা মানে, পতি-পুত্র সহ ইয়র্স ট্রুলি। ক্যালিফর্নিয়া থেকে উড়ে আঙ্করেজ, সেখান থেকে ফেয়ারব্যাঙ্কস। সেখান থেকে ডেনালি দেখে, আবার উড়ে ব্যারো। এই ব্যারো হল আমেরিকার নর্থমোস্ট শহর (যদি একে শহর বলা যায়!) ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। এ অধ্যায়ে এমসালালো-র দিকে রওনা হয়ে মুকনডোকু নামের জনপদ পার করে উয়ানজি নামের গ্রামে পৌঁছনোর কাহিনি। তর্জমা- স্বাতী রায় ... ...
যদিও উপরে বলা এইসব ভাল ভাল জিনিসের আমাদের অভাব ছিল, তবু আমাদের কাছেও লবণে-জারানো জিরাফ ও জেব্রার জিভের আচার ছিল; হালিমাহের বানানো উগালি ছিল; এছাড়া মিষ্টি আলু, চা, কফি, ড্যাম্পার বা স্ল্যাপজ্যাকও ছিল; কিন্তু সেসব খেয়ে খেয়ে মুখে চড়া পড়ে গিয়েছিল। আমার দুর্বল পেট, বিভিন্ন ওষুধ, ইপিকাপ, কোলোসিন্থ, টারটার-এমেরিক, কুইনাইন এইসব খেয়ে খেয়ে বিরক্ত, কাতর। এইসব হাবিজাবি খাবারের বিরুদ্ধে সে প্রতিবাদ করছিল। "ওহ, একটা গমের রুটি!" আমার মন কাঁদছিল। "একটা রুটির জন্য পাঁচশ ডলারও দিতে পারি!" ... ...
তখন থার্ড ইয়ার। শীতের ক্ষুদ্রতম ছুটিকে দীর্ঘতম এক্সটেনশন দিয়ে জনতা সব চলে গেছে বাড়ি। হপ্তা দুয়েক হল কাঞ্চনও আর চোখের সামনে দেখা দেয় না। ঘন কুয়াশায় মুড়ে যাচ্ছে তরাই। অলস দিন ফুটে ওঠবার আগেই চা বাগানের গা বেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সন্ধ্যে। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। এঅধ্যায়ে মাটামবুরু নামের জনপদ পার করে বিহওয়ানা পৌঁছনোর কাহিনি। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
উন্যানয়েম্বে ১৯ শতকে একটি রাজ্য ছিল। এখানে বাস করতেন মূলত নিয়ামওয়েজি গোষ্ঠীর মানুষেরা। গত অধ্যায় থেকেই স্ট্যানলে বর্ণনা করছেন উন্যানয়েম্বে রাজ্যের মানুষদের কথা। ... ...
এটা সত্যিই দুঃখজনক যে, আবিষ্কারকরা যেটাকে অবিসংবাদিত সত্যি বলে জেনেছেন, সেটাও বলতে পারবেন না, বললেই তাঁদের দাগিয়ে দেওয়া হবে যে তাঁরা দেশের ভৌগোলিকদের প্রিয় তত্ত্বগুলির বিরোধিতা করার জন্য দল বেঁধেছেন। বা অভিযোগ করা হবে যে সুপরিচিত তথ্যগুলোকে তাঁরা বিকৃত করছেন। বিদগ্ধ মিঃ কুলি' একজন আরবের কথার ভিত্তিতে একটা গোটা মধ্য আফ্রিকা জোড়া বৃহৎ হ্রদের রূপরেখা এঁকেছিলেন। সেই হ্রদ নিয়াসা, টাঙ্গানিকা ও এন'ইয়ানজা ইত্যাদি বেশ কয়েকটা হ্রদকে জুড়ে রয়েছে। এদিকে লিভিংস্টোন, বার্টন, স্পেক, গ্রান্ট, ওয়েকফিল্ড, নিউ, রোশার, ইয়োন্ডারডেকেন এবং বেকার যখন প্রমাণ করলেন যে, এগুলো একটা না অনেকগুলো আলাদা আলাদা হ্রদ, আলাদা আলাদা নামের, দূরে দূরে ছড়ানো, তখন কেন তিনি একবারও স্বীকার করবেন না যে তিনি ভুল করেছেন? ... ...
একটা ব্যাপার আমার কাছে স্পষ্ট। আর আমার ধারণা ডাক্তারও তাই মনে করেন। স্যার স্যামুয়েল বেকারকে আলবার্ট এন'ইয়ানজার দৈর্ঘ্য অক্ষাংশ বরাবর ২° যদি বা নাও হয়, ১° কমাতেই হবে। এই বহু পরিচিত অভিযাত্রীটি হ্রদটিকে রুয়ান্ডাদের এলাকার অনেকটা বেশি ভিতরদিকে করে দেখিয়েছেন। আর রুয়ান্ডাকে দেখিয়েছেন তার পূর্ব দিকে। আসলে কিন্তু রুয়ান্ডার পুরোটা না হলেও একটা বড় অংশই হ্রদের উত্তরাংশ জুড়ে, তাঁর মানচিত্রে তিনি সেই জায়গাটাকে উসিগে বলে বর্ণনা করেছেন। ... ...
এ অধ্যায়ে ফের শুরু হল উন্যানয়েম্বের জীবনের বর্ণনা ও মিরাম্বোর সঙ্গে আর এক প্রস্থ যুদ্ধ। ... ...
গ্রামের মাতৃস্থানীয়রা যখন এটা-ওটা-সেটা নিরীহ কথা কানাকানি করে , তখন পরিবারের কর্তাদের পাওয়া যায় ছেলেদের আড্ডায়। সেখানে জিনিসপত্রের দাম, এলাকার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা চলে। সম্ভবত আরো অনেকটা সভ্য দেশে একই ধরণের জায়গায় যতটা বিচক্ষণতা ও বোধের সঙ্গে এই ধরণের আলোচনা হয়, এখানকার আলোচনাও সেই একই গোত্রের। কিন্যামওয়েজি গ্রামের সকলের একত্রিত হওয়ার জায়গাকে ওদের ভাষায় "ওয়ানজা" বা উওয়ানজা বলা হয়। এটা সাধারণত গ্রামের চৌকোনো জায়গার একটেরেতে থাকে। ফাঁকা সময়ে- অবশ্য ব্যস্ততা খুব কমই থাকে - তারা উবু হয়ে বসে ধূমপান করে, আর সম্ভবত মায়েদের মুখে একটু আগে যে আলোচনা শোনা গেছে, সেই একই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে । সদ্য আগত সাহেবটি হল সেই বিষয় । ... ...
এ অধ্যায়ে শুরু হল উজিজির পথে যাত্রা। ... ...
আসলে ঠিক ছিল "লা কোয়েন্টা" প্রোজেক্টের অমিতাভদের সাথে জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে যাব ২০০৬ এর ২৬শে জানুয়ারীর ছুটিটায়। তাই ২৭শে শুক্রবার, ছুটিও নিয়ে রেখেছিলাম। ২৩ তারিখ অমিতাভ বলল ওদের গ্রুপের একজনের স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাই ওরা কেউই যাচ্ছে না। যা: তাহলে কি হবে? আমার তো মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত তৈরী হয়ে আছে যাবে বলে। কি করা যায়? শুরু করলাম খোঁজখবর। কিন্তু খুব বেশী সুবিধা হল না। অত কম নোটিশে জিম করবেট ব্যবস্থা করা, তাও একলা একলা, প্রায় অসম্ভব। ... ...
ডাক্তার এবং আমি অনেক কিছু নিয়ে কথা বললাম, বিশেষ করে তার নিজের তখনকার সমস্যাগুলো নিয়ে কথা হল। উজিজি আসার পর যখন তাঁকে বলা হয়েছিল যে তাঁর সব জিনিসপত্র খরচ হয়ে গেছে, আর তিনি এখন গরীব, তাঁর তখনকার হতাশা নিয়েও কথা হল। শেরিফ নামের একটা লোককে রাজদূতমশাই সব জিনিসপত্রের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন, সে ব্যাটা একটা দো-আঁশলা মাতাল দর্জি, এখন তার কাছে মাত্র কুড়িটা কাপড়ের মতন বাকি পরে আছে। ... ...
ঐ যে কি যে বলে না- একটি ধানের ইয়ের উপর একটি ইসের বিন্দু। এ যাওয়া সেইরকমই যাওয়া। তবে একবার নয়। তিনবার। তাই এখন আর মনে পড়ে না ঠিক কখন, কোনটার পরে কোনটা। শুধু বিদেশের হোটেলের জানলায় যখন কালো মেঘ আর হাওয়ার শোঁ শোঁ, রাস্তায় লোকজন কম, জানলা দিয়ে দূর মসজিদের মিনার দেখা যায় না, তখন বাংলার শেষ জনপদের দুর্গাপূজার শান্ত স্মৃতি নিয়ে বসে থাকি। আসছে কালে আবার হবে। ... ...
প্রথমটা হল সিলুরে, জিজিরা যাকে সিংগা বলে। স্থানীয়দের কথা অনুসারে চার, এমনকি ছ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আমি যেটার ছবি এঁকেছিলাম, সেটা সাড়ে আটত্রিশ ইঞ্চি লম্বা, ওজন দশ পাউন্ড, তবে কিনা এটা ছোট মাছ হিসাবেই বিবেচিত হয়েছিল। অত্যন্ত চর্বিযুক্ত মাছ, পিঠের রং গাঢ়-বাদামী, আর পেটের দিকটা হালকা বাদামী, প্রায় সাদাই হয়ে যাওয়া। এই মাছ আঁশবিহীন। নদীতে হ্রদে যেরকমটা আমরা পেয়ে থাকি, এটা সেই রকমেরই। গোম্বে নদীতে শ’য়ে শ’য়ে এই মাছ ধরা হয়, কাটাকাটি করে শুকানো হয় আর আরব, আচারে-ব্যবহারে মুসলমান হয়ে যাওয়া নিগ্রো ও সোয়াহিলিদের কাছে বিক্রির জন্য উন্যানেয়েম্বেতে নিয়ে যাওয়া হয়। ... ...
দশম দিন সকালে আমি দলের সবাইকে আশ্বস্ত করলাম যে আমরা খাবারের কাছেই আছি; অঢেল খাবারের প্রতিশ্রুতি তাদের মধ্যে বিনীতদের উত্সাহিত করেছিল। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা না নিতেও সতর্ক করা হয়েছিল - পাছে আমি রাগের মাথায় মেরে বসি! তাতে সবথেকে পাজিগুলোকে চুপ করানো গিয়েছিল। তারপর বনের মধ্য দিয়ে উত্তর-ঈশান দিক বরাবর চললাম। ক্লান্ত মানুষের দল দুর্বলভাবে, বেদনাদায়কভাবে আমার পিছু নিল। খুবই বেপরোয়া অবস্থা তখন, বেচারাদের নিজেদের জন্য যতটা না দুঃখ হচ্ছিল, আমার তার চেয়েও বেশি করুণা হচ্ছিল; আর তারা হাল ছেড়ে শুয়ে পড়লে তাদের সামনে প্রচুর রাগারাগি চেঁচামেচি করলেও, তাদের গায়ে হাত তোলার কথা তখন স্বপ্নেও ভাবিনি। তাদের জন্য খুবই গর্বিত ছিলাম; কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে এটা খুবই বিপজ্জনক ছিল। ... ...
সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি বেশ কটা গ্রাম রয়েছে। সমুদ্রের তীরে লোকের ভিড় দেখলে জায়গাটা কত জনবহুল তা বোঝা যায়। কিসুনওয়ে ও মুরেম্বওয়ে নামের অন্তরীপ দুটোর মাঝামাঝি বিকারি নামের একটা জায়গা আছে - আসলে বেশ কটা গ্রামের সমষ্টি। সেখানকার এক মুটওয়ারের আবার ভারি নজরানার উপর লোভ। বদবুদ্ধিওলা কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে দর কষাকষি করতে পারব না। তাই জিজিদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না এমন গ্রামগুলো এড়িয়ে চলছিলাম। কিন্তু আমাদের জিজি পথপ্রদর্শকও পথ ভুল করল আর একাধিকবার আমাদের এইসব বিপজ্জনক জায়গাতে নিয়ে গিয়ে হাজির করেছিল। ... ...
হুররে! এই তো লিভিংস্টোন! নিশ্চয়ই লিভিংস্টোন! আর কেউ হতেই পারে না; তবে কিনা - অন্য কেউ হতেও তো পারে - পশ্চিম উপকূলের থেকে আগত কেউ - বা হয়তো তিনি বেকার! উঁহু; বেকারের মুখে তো সাদা দাড়ি নেই। কিন্তু এবার আমাদের দ্রুত এগোতে হবে, পাছে আমরা আসছি শুনে তিনি আবার পালিয়ে যান। ... ...
বসন্তদিনের ভ্রমণ - শহরটির নাম ন্যাচেজ( Natchez )। নদীর তীরে পুরানো শহর, তবে এই নতুন দেশের হিসেব কিনা, মাত্র শদেড়েক কি শদুয়েক বছর হলেই বলে ঢের পুরানো। তবে ঐ শহরে প্রাচীন রেড ইন্ডিয়ানদের সমাধিভূমি আছে, জায়গাটি সত্যিই বহুকাল যাবৎ মানুষের তৈরী জনপদ ছিলো,তবে তখন তো শহর ছিলো না সেটা! ছিলো আরণ্যক যাযাবরদের জনপদ মাত্র। ... ...
বাসগুমটির কাউন্টারের কাকুর কথামত ঠিক তিন ঘন্টাতেই বাস এসে পৌঁছালো নামখানায়। একটা গঞ্জ মত জায়গা, নদীর পারের গঞ্জ। অনেকটা মেঘনাপারের ভৈরববাজারের মত। এই নদীটির নাম হাতানিয়া দোয়ানিয়া। দেখে আশ্চর্য হলাম, নদীতে সেতু নেই। কলকাতার এত কাছে এই রকম একটা জায়গা আছে, যার এপার-ওপার দুপারেই বাস চলে কিন্তু নদী পেরুতে হয় নৌকায় করে! ভাবতে পারিনি সত্যিই। ... ...