আঁকা বাঁকা সরু সরু রাস্তা দিয়ে চলেছি। পুরোন শহর। ঝাঁ চকচকে নয় মোটেই। বরং একটু ধুলোভরা, অগোছালো – পথের পাশের বেআব্রু দারিদ্রে একটু যেন আবছা মত। পথের বাঁক ঘুরলে হঠাৎ হঠাৎ চোখে ভেসে ওঠে এক একটা পাথরে গড়া মায়া – কালের প্রলেপে ধুসর তাদের রং। ট্যুরিস্ট নেই মোটেই – শুধু পাড়ার দু চার জন লোকের ইতস্তত ঘোরাফেরা, নতুন লোক দেখে একবার তাকিয়ে দেখা – ব্যস ওইটুকুই। অটো নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থামছে, ড্রাইভার শুধু জায়গার নামটা বলে দিচ্ছেন। বেশি কথাবার্তা হচ্ছে না, দুপক্ষেরই ভাষাজ্ঞানে ঘাটতি হচ্ছে। এরই মধ্যে দেখে নেওয়া গেল ইব্রাহিম রোজা। দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহের স্ত্রী তাজ সুলতানার সমাধি, সুলতানেরও। পাথরের দৃঢ়তার সঙ্গে অলংকরণের সূক্ষ্মতার আর আর্চের পেলবতার মিশেলে তৈরি একটা ছবি। ... ...
এর ঠিক দুদিন পরেই এসে পড়ল সেই অভিশপ্ত দিন, ৬ই ডিসেম্বর। তারপর সারা ভারত জুড়ে তাণ্ডব – এমন কি এই কলকাতা শহরেও আমার জীবনের সেই প্রথম কার্ফিউ দেখা। সুমনের বসে আঁকো তখনও বেরোয়নি – মগজে কারফিউ শব্দবন্ধ তখনো অচেনা, শহরে কারফিউ চিনে ফেললাম। কিন্তু দাঙ্গা হল না পশ্চিমবঙ্গে। রাজাবাজার, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস, কোথাও না। আস্তে আস্তে আবার স্বাভাবিক হয়ে এল শহর – কিন্তু মনের কালো ছায়াটা সরছিল না কিছুতেই। উত্তর ভারত জুড়ে চলমান অশান্তি – আদবানীর গ্রেপ্তারী, খবর আসছিল সবই, যদিও খবরের কাগজই ছিল আমাদের প্রধান ভরসা – আর ডিডি ওয়ান এর সংবাদ। আর এসবের মধ্যেই ১৯ তারীখে এসে পড়ল বাবা, মা, বোন – কুচবিহার থেকে। তিনদিন গজল্লা পাড়ার পরে ২১শে সন্ধেবেলা ট্যাক্সি ধরে সোজা হাওড়া - রাতে ম্যাড্রাস মেল সাড়ে দশটায়। স্লিপার থ্রি-টায়ার। থ্রি-এসি তখনো ভবিষ্যতের গর্ভে, এসি কামরা বিরাট বড়লোকেদের ব্যাপার। ... ...
বড়বড় ধনীদের তো কথাই নেই। আয়েশে আমোদে দিন কাটত। গ্রানাইট পাথরে বাঁধানো রাস্তা। রাস্তার মধ্যে রথের চাকা যাবার জন্য সমান্তরাল ভাবে ও সমান দূরত্বে উঁচু করে দেওয়া আছে। ফুটপাথ ও জলের লেড পাইপ। আর রোমান বাথ। রোমানরা কী নাইতে ভালোবাসে ! পাবলিক বাথ। ঠাণ্ডা জল, গরম জল। গরম বাষ্প। সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যাবে স্টাবিয়ান বাথে। মাঝে মাঝে সারনো নদীর জল উঠে আসতো শহরে। ওই জলে একবার পা পিছলে গ্রানাইট পাথরের পথে পিছলে গেছিলাম। রুটির বাস্কেট হাত থেকে পড়ে গেছিল। আমার মনিবের কাছে কী মারটাই খেয়েছিলাম, মনে আছে। আভেন থেকে গরম রুটি আর মাছের আচার গারুম, খুব লোভনীয়। গরম গরম রুটি, তাজা ফল রোমানদের চাইই চাই। বন্দর আর সমুদ্র এই শহরকে কত বৈচিত্র্য দিয়েছে। কত রকম লোক দেখতে পেতাম। ফোরামের বাজার ভরে থাকতো রাশি রাশি জিনিশে। মন্দ ব্যাপারও কম ছিল না। আমার বরাত ভালো রুটির বেকারিতে কাজ করতাম। মারধোর খেতাম।সেটাও ভালো ছিল কারণ বেশীর ভাগ ক্রিতদাসীরা ভিনদেশি বণিক আর রোমানদের সঙ্গিনী হত। সেই সব ঘরের ধ্বংসাবশেষ পম্পেই তে আছে । ভাল্লাগে না দেখতে ! যে দেশে এতো ধনী আর এতো ব্যাবসায়ী ছিল, মেয়েরা তো সেখানে প্রমোদের উপকরণ মাত্র। ... ...
সর্দার একজন লম্বা শক্তপোক্ত লোক। তাকে ও তার দলবলকে বসার জন্য বললাম। তারা আমার দিকে, আমার মুখের দিকে, আমার জামাকাপড় ও বন্দুকের দিকে এমন খুশিভরা অবাক চোখে তাকাতে লাগল যে কী বলব! কিছুক্ষণ মন দিয়ে আমাকে দেখল, তারপর একে অপরের দিকে তাকাল, আর শেষে হো হো করে গলা ছেড়ে হেসে উঠল আর আঙ্গুল মটকাতে লাগল। ... ...
একটা বটগাছের নিচে ছাউনি খাটানো হল; চারপাশে টাঙ্গানিকার হালকা-ধূসর জলরাশি, তার পাশে ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া পাহাড়ের সারি। পাম-কুঞ্জ, কলাঝাড়, সাবু-সহ শস্যখেত দিয়ে সাজানো নিয়াসাঙ্গা গ্রামটি অবস্থিত নিয়াসাঙ্গা নদীর মুখে। তাঁবুর কাছেই গ্রামবাসীদের ছোট-বড় আধা ডজন ক্যানো ছিল। তাঁবুর দরজার সামনেই যতদূর চোখ যায় মিষ্টি জলের রাশি মৃদু বাতাসকে ডাক পাঠাচ্ছে— দূরের উগোমা, উকারাম্বা চোখে পড়ে। ঘন-নীল-শিরা-লাঞ্ছিত মুজিমু দ্বীপপুঞ্জও ফুটে ওঠে চোখের সামনে। আমাদের পায়ের তলায় পরিষ্কার, জলে-ধোয়া নুড়ি, সমুদ্রের অস্থির ঢেউয়ে ভেসে ভেসে কূলে এসে সারি বেঁধে জমা হয়, কোথাও বা স্তূপের আকার নেয়। আমাদের ডাইনে বাঁয়ে পিছনে যে পাহাড়ের রাশি সেগুলো কি দিয়ে তৈরি তা এই পাথরগুলোর থেকেই হদিশ পাওয়া যাবে। ... ...
কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছি যে সাদা মানুষেরা এখানকার লোকদের 'মুলুঙ্গু' বা আকাশের দেবতার ভাষা শেখাচ্ছে, তাদের কিভাবে ফসল বপন করতে হয় বা ফসল কাটতে হয় বা বাড়ি বানাতে হয় তা শেখাচ্ছে , শেখাচ্ছে কিভাবে আরও স্বচ্ছন্দে থাকা যায়— মোদ্দা কথা, তাদের সভ্য করে তুলছে। আর পুরোন কাদেতমারের লোকরা সেই দেখে খুশিতে হাত ঘষছে। তবে কিনা সফল হতে গেলে, একজন নাবিককে যেমন দড়িদড়া সামলানো, পাল গোটানো থেকে হাল ধরা অবধি নৌকা চালানোর সব গুণই রপ্ত করতে হয়, মিশনারিকেও তেমন নিজের সব কাজেই পটু হবে। নরম-সরম মেয়েলি মানুষ হলে চলবে না, জার্নাল-লিখিয়ে বা ঝগড়ুটে তার্কিকও চলবে না, রেশমী-পোশাক-প্রিয় পাদ্রী হলেও হবে না— প্রভুর বাগানের একজন উদ্যমী পুরোদস্তুর শ্রমিক হতে হবে তাঁকে – যেন ডেভিড লিভিংস্টোন বা রবার্ট মোফ্যাটের ছাঁচে গড়া। ... ...
একটা জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পথ গিয়েছিল। এখানেই সেই সেবল হরিণটি দেখা গিয়েছিল। এই জঙ্গলে শিকারের ছড়াছড়ি। পশ্চিম-বায়ু কোণ বরাবর একটি দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা ব্যাপী পদযাত্রা আমাদের একটা নদীর কাছে নিয়ে এলো। নদীটি বয়ে গেছে একটা উঁচু শঙ্কু-আকৃতি পাহাড়ের গোড়া দিয়ে, এই পাহাড়ের ঢালে গজিয়েছে পালকের মতন বাঁশের ঘন বন। ... ...
মাথার টুপি খুলে তাঁকে বললাম: 'ডঃ লিভিংস্টোন, তাই তো?' ‘হ্যাঁ,’ তিনি মৃদু হেসে বললেন, নিজের টুপিটি সামান্য তুলে। আমি নিজের মাথায় ফের টুপিটা বসালাম, আর তিনিও ফের টুপি পরলেন, আর আমরা দু'জনের হাত আঁকড়ে ধরলাম, তারপর আমি জোরে জোরে বললাম: ‘ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, ডাক্তার, আপনার সঙ্গে দেখা হল।’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমিও খুশি যে আপনাকে এখানে স্বাগত জানাতে পারছি।’ ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। চলছে সিম্বামওয়েন্নি থেকে উগোগো অঞ্চলের চুন্যো জনপদের উদ্দেশে বেরিয়ে ভয়ংকর মাকাটা জলা-অঞ্চল পার হওয়ার কথা। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
উরিম্বা কাওয়েন্দির একটা বড় জেলা। যদিও একই নামের একটি গ্রামও রয়েছে - সেখানে ইয়োম্বেহের থেকে পালিয়ে আসা লোকেরা থাকে, তারা লোজেরির ব-দ্বীপে বাসা বেঁধেছিল। যদিও রুসিজির দ্বীপের মতোই অস্বাস্থ্যকর জায়গা, তবু তাদের মনে হয়েছিল দক্ষিণ কাওয়েন্দির সুলতান পুম্বুরুর এলাকার আশেপাশের থেকে অনেক বেশি যুতসই। বিজয়ীদের ভালমতো তাড়া তাদের অভ্যাস নাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে হল, কারণ তারা খুব ভীতু আর অপরিচিতদের প্রতি ঘোর অবিশ্বাসী, কোনমতেই তাদের গ্রামে আমাদের ঢুকতে দিল না। অবশ্য সত্য বলতে, যে পচা গলা জায়গাটার উপর তারা আস্তানা গেড়েছিল, সেদিকে এক ঝলক দেখে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। আমার ধারণা যে একদম ওই এলাকায় —না, দু'পাশেই কয়েক মাইল জুড়ে —একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষের পক্ষে এক রাত ঘুমানো মানেই নিশ্চিত মৃত্যু। গ্রামের দক্ষিণে যাওয়ার পথে, আমি টংওয়ে উপসাগরের শেষতম দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, কিভাঙ্গা বা কাকুঙ্গু পাহাড়ের উঁচু চুড়ো থেকে প্রায় দেড় মাইল পশ্চিমে একটি উপযুক্ত ক্যাম্পিং-এর জায়গা পেলাম। ডাক্তার যা মাপজোক নিলেন সেই অনুসারে আমরা ৫° ৫৪' দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থান করছিলাম। ... ...
লিভিংস্টোনের কাছাকাছি থাকার সম্ভাবনার খবর সত্বেও এবং উজিজির কাছাকাছি এসেও এখনও তিনি অধরা। ... ...
প্রিয় স্যার - সাধারণতঃ অদেখা কাউকে চিঠি লেখাটা খানিকটা কঠিন কাজ - অনেকটা কোন একটা বিমূর্ত ধারণাকে সম্বোধন করার মতই বলা যায় - তবে আপনার প্রতিনিধি, মিঃ এইচ এম স্ট্যানলির, এই দূরের দেশে উপস্থিতি আপনার সঙ্গে আমার অপরিচয়ের ব্যবধান ঘুচিয়েছে। উনি না এলে আমি অবশ্যই এই চিঠি লিখতে কিন্তু কিন্তু করতাম। তবে ওঁকে পাঠিয়ে আপনি যে অসীম দয়া দেখিয়েছেন সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি লিখতে খুবই স্বচ্ছন্দ বোধ করছি। ... ...
"ওই যে জায়গাটা একটা দমবন্ধ করা সংঘর্ষের প্রায়-সাক্ষী হতে যাচ্ছিল, সেই জায়গাটা ছাড়ার প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা পরে জিওয়ানিতে পৌঁছলাম। জিওয়ানি, বা হ্রদে কোন জল ছিল না, এক ফোঁটাও না, যতক্ষণ না আমার লোকেদের শুকনো জিভ তাদের মনে করিয়ে দেয় যে জলের জন্য মাটি খুঁড়তে তাদেরই এগিয়ে যেতে হবে ।" - চলছে উজিজির পথে এগিয়ে চলার বর্ণনা। এ পর্বে কাফেলার সদস্যদের কথা এবং এক নির্জলা হ্রদে পৌঁছনর কাহিনি। ... ...
মধ্য আফ্রিকার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপজাতি হল ন্যামওয়েজিরা। আমার কাছে একজন ন্যামওয়েজির সৌন্দর্যের আদর্শ হল একজন লম্বা দীর্ঘপদ কালো মানুষ, ভালো মানুষের মতন সদা হাসিভরা মুখ, হাসির ফাঁকে দাঁতের উপরের সারির মাঝখানে একটা ছোট গর্ত দৃশ্যমান। সে যখন বালকমাত্র, তখন তার গোত্র বোঝাতে এই গর্তটা তৈরি করা হয়েছিল। তার গলার থেকে শত শত লম্বা তারের ঝুমকো ঝুলছে; মানুষটা প্রায় নগ্ন হওয়ায় তার গোটা সুন্দর শরীরটা দেখতে কোন অসুবিধা নেই। ... ...
এ অধ্যায়ে স্ট্যানলে বর্ণনা করছেন এক আফ্রিকান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধ যুদ্ধের কথা। ... ...
ডাঃ লিভিংস্টোনের বয়স প্রায় ষাট, অবশ্য শরীর সেরে ওঠার পরে তাঁকে পঞ্চাশও পেরোয়নি এমন মানুষের মত দেখাচ্ছিল। তাঁর চুল এখনও বাদামী রঙের, তবে রগের কাছে একটা দুটো ধূসর দাগ দেখা যায়; তাঁর গোঁফ-দাড়ি ঘোর ধূসর। প্রতিদিন দাড়ি কামান। তাঁর হালকা বাদামি রঙের চোখ, দারুণ ঝকঝকে; বাজপাখির মতন তীব্র দৃষ্টি। শুধুমাত্র তাঁর দাঁতই তাঁর বয়সের দুর্বলতা প্রকাশ করে; লুন্ডার কঠিন খাদ্য তাঁর দাঁতের সারিটি ধ্বংস করেছে। শিগগিরই একটু মোটা মতন হয়ে গেলেও, তাঁর চেহারা সাধারণের তুলনায় একটু বেশিই লম্বা, কাঁধটা একটু সামান্য ঝোঁকা। হাঁটার সময় তাঁর পদক্ষেপ ভারী হলেও দৃঢ়, অনেকটা একজন অতি-পরিশ্রান্ত মানুষের মত। একটা নৌবাহিনীর টুপি পরেন, তার ডগাটা অর্ধবৃত্তাকার, এই টুপি দিয়েই তাঁকে সারা আফ্রিকা চেনে। যখন তাঁকে প্রথম দেখি, তাঁর পোশাক তাপ্পি-মারা, তবু অত্যন্ত পরিষ্কার। ... ...
"উন্যানয়েম্বেতে আছি প্রায় তিন মাস হল, এখনও এখানেই আছি, তবে আশা করছি তেইশ তারিখের আগেই এখান থেকে চলে যাব।" - এ অধ্যায়ে ফের শুরু হল উন্যানয়েম্বে ছেড়ে যাওয়ার তোড়জোড়। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। চলছে সিম্বামওয়েন্নি থেকে উগোগো অঞ্চলের উদ্দেশে পথচলার কথা। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
এইভাবে যতদূর সম্ভব গবেষণা করে, এলিফ্যান্টাইন বা তার থেকেও দূরে গিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আর অন্যের মুখের কথা থেকেও এইটুকুই জানতে পেরেছি। এলিফ্যান্টাইন শহর পেরিয়ে আরও উজানে যেতে গেলে এলাকাটা খাড়া উপরের দিকে উঠে গেছে, তাই, এখানে, নৌকার দুদিকে দড়ি বেঁধে এগোতে হয়, যেমনটা লাঙ্গলে বলদ জোতার সময় করতে হয়; কিন্তু দড়ি ছিঁড়ে গেলে স্রোতের টানে নৌকা ভেসে চলে যায়। এইভাবে চার দিনের পথ চলা। এখানে নীল নদ এঁকেবেঁকে চলে। বারো শোয়েনি পথ এইভাবে চলতে হয়; আর তারপরে একটা সমভূমি আসে, সেখানে নীল নদ একটা দ্বীপের চারপাশে প্রবাহিত হয়; এর নাম ট্যাকোম্পেসো। এলিফ্যান্টাইনের লাগোয়া উজান এলাকায় ও দ্বীপটার অর্ধেকাংশে ইথিওপিয়ানরা বাস করে; বাকি অর্ধেক অংশে মিশরীয়রা থাকে। এই দ্বীপের কাছেই একটা বিস্তীর্ণ হ্রদ রয়েছে, যার সীমানা বরাবর ইথিওপিয়ান যাযাবরদের বাস। ... ...
পরের দিনেও আমরা ওখানেই ছিলাম, এখানে এত বিভিন্ন রকমের পশুর সমাবেশ যে শিকারের পিছনে ধাওয়া করার জন্য আমি খুবই উৎসুক। সকালের কফিপানের পর আমার বন্ধু সেই অ্যামোনিয়া-বোতল খ্যাত মামান্যারার জন্য উপহারসহ কয়েক জনকে পাঠানো হল। তারপরই আমি আরও একবার মাঠের দিকে বেরিয়ে পড়লাম। শিবির থেকে পাঁচশো গজ দূরেও যাইনি, হঠাৎ আমি ও আমার দলবল খুব কাছেই, সম্ভবত পঞ্চাশ গজ বা তার চেয়েও কম দূরত্বে, একটা সমবেত গর্জন শুনে থেমে গেলাম। ... ...