মণিকা চোখ খুলল। কোন এক কারণে তার ঘুম ভেঙে গেছে, ঘড়িতে সময় দেখলো সকাল সাড়ে সাতটা। মণিকা জানে তার একবার ঘুম ভেঙে গেলে সে ঘুম আর আসবে না। ... ...
আমাদের বাড়ির চারপাশে অনেক বেড়াল থাকে মাঝেমধ্যে তারা নিজেদের মধ্যে বেজায় ঝামেলা করে। ... ...
আমার গল্পের ছোট্টো ছেলেটির নাম গোলগোল। গতবছর শীতকালে সে তার বাবা মায়ের সাথে কেরালা বেড়াতে গিয়েছিল। ... ...
মেঘনার মন ভালো নেই। ওর মনে হচ্ছে দুটো কাছের মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে মেঘনা দেখল একটা চড়ুইপাখি... ... ...
নববর্ষের দিনে সম্ভব হলে দিশা ‘অনিন্দ্যা’ বা ‘রূপবতী’ বা ‘নিউ স্বর্ণালী’-এর হিসেবের খাতায় থাকা বাকি বকেয়া সমুদয় মিটিয়ে দিতেন। বকেয়া মেটানো হোক বা না হোক আমাদেরকে আসতে দেখলে এই দোকানের মালিক-বিক্রয়কর্মীরা খুশি হতেন। তাঁরা আমাদেরকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করতেন। দুই-তিন বার কী করে যেন হালখাতার দিনেই আমাদের কেনাকাটা করার প্রয়োজন হয়েছিল। ঐ কয়েকবার তাঁরা বিপুল আনন্দিত হয়েছিলেন। ... ...
এসে গেল শীতকালের দিন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভ্যাকসিন মানুষের হাতের মুঠোয় আসতে চলেছে শিগগির। আনলক চতুর্থ পর্ব চলছে। যেহেতু কলেজ এখনও খোলেনি, তাই আমার লকডাউন বহমান, থামার জো টি নেই। লকডাউনের অবসরে কর্তামশাই আমার এই একচিলতে বাসার জানলাগুলো বাগান করে ভরিয়ে দিয়েছেন। জানলা থেকে পুঁইশাক কেটে খাওয়া চলল নানারকম, কখনো শাক, কখনও শুধু ডাঁটা অথবা পুঁইমিটুলির চচ্চড়ি। বিলোনোও হল কিছু নিকট আত্মীয় আর প্রতিবেশীকে। এখন ঐ জানালার একফালি রোদে তার বীজ শুকনো হচ্ছে আবার নতুন করে বোনার জন্য। বারান্দাকে তো একটু বড়সড় জানলা হিসেবে ভাবাই যায়, সেখানে তিনি ফলিয়েছেন ছোটো ছোটো বেগুন, দুরকম - সাদা আর বেগুনি। এখন শীতকালে দক্ষিণের জানলায় রোদ আসে বেশ। ছোটোবেলার স্মৃতি আর ইউ টিউবের পড়া মিশিয়ে, রান্নার মেয়েটির সঙ্গে যুক্তি করে থালায় থালায় দিলাম বড়ি। শুকোতে দিলাম সেই জানলায়। ... ...
একই জিরা,ধনে,লংকা,হলুদ (একটু গ্যাপ দিয়ে পড়বেন প্লীজ) ঐ সব দিয়ে একই ঘ্যাঁট রেঁধেছি আর খেয়েছি- দিনের পর দিন। তা ও ভালো ইউ টিউব আসায় গুল তাপ্পি মারা সহজ হয়েছে। কিন্তু মাসের পর মাস - কতোই বা লিখবো? সুবিধের মধ্যে এই, যে আপনেরাও বিশেষ পড়েন টড়েন না। তা ও, কথা যখন দিইছি, তখন লিখবোই। এইবারের থিম হচ্ছে "হারিয়ে যাওয়া খাবার"। জানেননি তো, যাদের আর কিছু নেই, তাদের নস্টালজিয়াই সম্বল। ... ...
ক্যাপ্টেন বার্টন বলেছেন যে মিঃ ডেসবোরো কুলি মনে করতেন উন্যামওয়েজি শব্দের অর্থ হিসেবে 'বিশ্বের প্রভু' শব্দটাই বেশি যোগ্য। তাঁর মতে, এর বানান অবশ্য 'মোনোমোইজি'। ক্যাপ্টেন বার্টনের কথার চেয়ে আমার নিজের মিঃ কুলির ব্যাখ্যা বেশি পছন্দ, তবুও আমার ধারণা মিঃ কুলির বক্তব্যের থেকেও আলাদা। ন্যামওয়েজিদের থেকে যতদূর যা জানতে পেরেছি, সেই সঙ্গে এদেশের লোকগাথার থেকে আরবরাও যা শিখেছে, সেটা এইরকম। ... ...
চেনা দৃশ্য, পরিচিত মানুষজন হয়ে ওঠে বর্ণময়। আর সেই রঙিন মোড়কের আড়ালে রয়েছে এক হিংস্র ও নিষ্ঠুর জীবনের ছবি। পাঠক নিমজ্জিত হন এক চমকপ্রদ মায়াবী জগতের ভিতর। ছোটা ছোটো মোচড়ে পরতে পরতে ফ্যান্টাসি জড়ানো গল্পগুলির মধ্যে বারবার নানা চোরাটান, ঘূর্ণি ও অভিঘাত তৈরি হতে থাকে। একটি গল্পসংকলন। লেখক সুদীপ বসু। পড়লেন রাহুল দাশগুপ্ত ... ...
ই. সন্তোষ কুমার। আধুনিক কাহিনিকার। ভাষা মলয়ালম। একগুচ্ছ গল্প। রহস্যময়—প্রকৃতির অতীন্দ্রীয় রহস্য নয়, মানবজীবনের ছোটো ছোটো অপরাধ বড়ো বড়ো পাপ আর গোপনীয়তায় সে রহস্যের নির্মাণ। প্রতি মুহূর্তে পাঠকের মনে এক উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। কাহিনির চলনে থাকে থ্রিলারের স্বাদ। পড়লেন লেখক ও তরজমাকার তৃষ্ণা বসাক ... ...
আমাদের নিউটনবাবু মিলিটারি ও পুলিশ পরিবৃত হয়ে শেষমেশ পৌঁছলেন তার গন্তব্যে। যদিও ইতিমধ্যে সঙ্গী আইনরক্ষকরা তাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন দূরবর্তী ক্যাম্পে বসেই কাগজেকলমে ভোটপর্ব সেরে নিতে। কারণ জঙ্গি হানায় কুঁকড়ে থাকা ঐ আদিবাসী গ্রামের নিরক্ষর স্বল্পসংখ্যক মানুষদের মধ্যে কেউ-ই কোনো কালে এই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগে অভ্যস্ত নন। নিউটনও ছাড়ার পাত্র নন। ‘স্বদেশব্রত’-ই যে তখন তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান! হয়তো তেমনটাই যৌক্তিক। প্রথমবার ইলেকশন ডিউটি পেয়ে হয়তো এমনই গরম রক্তে আমিও ফুটেছিলাম গণতন্ত্রের মহান উৎসবে সামিল হতে। কিন্তু পোড় খাওয়া অভিজ্ঞতা বড় নির্মম। মানুষকে কাপুরুষও করে তোলে। বাস্তবে এমন আশাতীত প্রস্তাব পেলে হয়তো বুদ্ধিমান প্রিসাইডিং অফিসার তা দু’হাতে লুফে নিতেন। আবারও সিনেমা-প্লটের অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে ব্যক্তিগত হিসেবনিকেশের দুস্তর ব্যবধান। তবু শিল্পমাধ্যম তো তখনই যথার্থ হয়ে ওঠে, যখন হৃদয়-উৎসারিত বেদনা উন্মোচনে তা অনুঘটকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ... ...
কখনও একটা গোটা বাজারকে প্রাণভয়ে দৌড়োতে দেখেছেন? আজ তাই দেখতে হলো। আট থেকে আশি সবাই দৌড়াচ্ছে। দেখলাম এ দৌড়ের কোনও জাত নেই, ধর্ম নেই, বর্ণ নেই, বয়স নেই, লিঙ্গ পরিচয় নেই – কিচ্ছু নেই, বিশ্বাস করুন কিচ্ছু নেই। থাকার মধ্যে আছে কেবল ভয়, প্রাণের ভয়। সবকটা লোক তেড়ে পালাচ্ছে। ... ...
ক্ষমতার লোভ বরাবরই ছিল, তার ওপর বড় নেতা আর মন্ত্রী হওয়ার উচ্চাশা তাঁকে নিয়ে গেলো হিন্দু মহাসভায়। তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখছেন যে তৎকালীন সরকারে যোগ দেওয়া তাঁর মত সাচ্চা হিন্দুর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু দু'বছরের মধ্যেই, ১৯৪১ সালের ১২ই ডিসেম্বর, তিনি ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করলেন অর্থমন্ত্রী হিসেবে। রাজনৈতিক জীবনে বারংবার তাঁর দল বদল করা কিন্তু শ্যামাপ্রসাদের মনের অস্থিরতার পরিচয় দেয়না। বরং উল্টোটাই। অত্যন্ত 'বিচক্ষণতার' সঙ্গে মওকা বুঝে, হাওয়া যেদিকে যাচ্ছে, বিবেক বিসর্জন দিয়ে সেদিকে যেতে তিনি কখনোই পিছপা হননি। ... ...
এ প্রসঙ্গে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার শেষ নবাব নবাব নাজিম মনসুর আলি খান ফেরাদুন জার বংশধর নাফিসুন নিসা নাসির (নাফিসা) এর বিয়ের খাওয়া দাওয়ার কথা আজও ভুলতে পারিনি। আগেই বলেছি এক সময় নিজামত পরিবারে বিরিয়ানির কোনো অস্তিত্ব ছিলনা তবে আজকাল নিজামত পরিবারে বিরিয়ানির খুব রমরমা শুরু হয়েছে। নাফিসার বিয়েতেও মূল খাবার হিসেবে বিরিয়ানি খাওয়ানো হয়েছিল, সেই বিরিয়ানির স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। সেবার খেতে বসে প্রথমেই দেওয়া হয়েছিল ঘিয়ে ভাজা পরোটা ও চিকেন রেজালা, ওহ সে কি অপূর্ব স্বাদ। ... ...
আলোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গয়ে উঠলো নতুন সরকার। তারপর বদলালো বিন্যাস, কি করে তা কারো জানা নেই। গঙ্গার পাড় ও জি টি রোড ধরে ত্রিপলের ঘর বাড়লো। সেখানকার বাস্তুতন্ত্র বদলাবে স্বাভাবিক। জুটমিল কিংবা সুতোকল সবেই পরিবর্তন দোরগোড়ায় এসে ঠেকলো। কীভাবে হঠাৎ করে শিং গজিয়ে ওঠে মাথায়। তারপর আর কে আটকায়? কী দুর্দান্ত সে বেগ। এখন মাহেশে বৃষ্টির রাতে রথের মেলা থেকে ফিরলে রাধারাণীর বাড়ি ফেরা নিশ্চিত মনে হয় না। খটির বাজারে বড়ো করে গেট করা আছে তারপর থেকে রিষড়া অবধি বাংলার বাইরে।সে পথের মাঝে একটুকরো বাঙালি হলো রামকৃষ্ণ আশ্রম। যেই অঞ্চলে রাম নবমীর মিছিল জুড়ে উত্তেজনা, হেডলাইন হতে পারতো শিখরে শ্রীরামপুর। যাগগে, পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা রামমন্দিরে সমস্যা ছিলনা বাঙালি পুজো করে যেত দুবেলা। এখন সেখানে হাবিজাবি ভাষার নামাবলী পরিহিত পন্ডিত (রবিশঙ্কর নয়)। ... ...
ভোটের মুখে গুরুর গুঁতোয় রামের খোঁজে বেরিয়েছি। ঝোলায়, থুড়ি মাথায়, রয়েছে রামের স্টিরিওটাইপ। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত, আমার দৌড় রামরাজাতলা পর্যন্ত। যে যত কম জানে, তার দুনিয়া তত ছোট, আর সে ভাবে সে তত বেশি জানে। হুগলী জেলার ছেলে, হাওড়া জেলার রামরাজাতলা চিনব না তা-ও কি হয়? পকেটে হাত ঢুকিয়ে শিস দিতে দিতে দিব্যি পৌঁছে গেলাম। ... ...
জেল থেকে বেরিয়ে অবধি কাজির মনে পড়ছে দুলির কথা। সমস্তিপুর থেকে কুমিল্লায় ফিরেই গ্রেপ্তার হয়েছিল ও। সে সময় মাসিমাকে ও বলে এসেছিল, ছাড়া যখনই পাব, চলে আসব আমি, সে যতদিনেই হোক না কেন। কাগজ-পত্রে জানতে পারবেন সবই। দুলিকে বলবেন, ওর জন্যে আমি অপেক্ষা করে থাকব। দুলি অপেক্ষা করে আছে, ওকে যেতেই হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ... ...
রেবা রায়চৌধুরীর নাম কতো জনপ্রিয়, তাঁর কাজকর্ম কোন মাত্রার ছিল, সে বিষয়ে কোন মন্তব্য না করাই শ্রেয়। তবে বলে রাখা ভালো যে রেবা গৌতম ঘোষের "পার"-ছবিতে নাসিরুদ্দিনের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর লেখা বই পড়ে, আপাদমস্তক এক আধুনিক মানুষকে আবিষ্কার করলাম। যার অন্য নাম সপ্রতিভতা। তাঁর জীবনসঙ্গী সজল রায়চৌধুরী। তিনি "পার"-ছবিতে নাসিরুদ্দিনের বাবার ভূমিকাতে ছিলেন। রেবা অভিনয় করেছেন মৃণাল সেনের "পরশুরাম" এবং অজয় দত্তগুপ্তর "দেবীগর্জনের" মতো ছবিতে। ... ...
ভারি আশ্চর্য। এখানকার কোন মেয়ে বসে থাকেনা। ঘরের কাজের সঙ্গে মাঠে কাজ করে, কাজু বাদামের বিচি থেকে শাঁস ছাড়ায়, বিড়ি বাঁধে। সরকারি ভাতাও পাচ্ছে। একটু সম্পন্ন ঘরে পরিচারিকা বা রান্নার কাজও করছে। আবার শ্বশুরবাড়িতে বরের মার খাচ্ছে, অভিভাবকদের বকুনি খাচ্ছে - এমন অল ইন ওয়ান উপযোগী প্রাণী যার ঘরে থাকবে তার লাভ। মেয়ে কমার তো কথা নয়। পড়াশোনা জানা ঘরে মেয়েরা কেউ কেউ শিক্ষিকা হয়, কিন্তু বেশিরভাগ নার্সিং পড়ে। বোধ করি সারা দেশে এখানকার নার্স আছে। হঠাৎ মাথার মধ্যে টপ করে একটা চিন্তা আসে। মেয়ে কমেছে না কি ছেলে বেড়েছে? ... ...