রহমান ৩০ বছর ধরে কামারহাটিতে থাকে। আজ থেকে ২৩ বছর আগে রহমানের আব্বা,আফজল, সুস্থ মানুষ,হজ করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে আর পাওয়া যায় নি। রহমানের মা সাকিরা আগে খুব কাঁদত। তারপর আল্লার কাছে দোয়া করত, জলজ্যান্ত লোকটাকে ফিরিয়ে দাও। তারপর শুধু চিৎকার করত। একদিন চুপ করে গেল। সারাদিন ধরে ঘরে বসে থাকত। কোনো সাড়াশব্দ নেই। তিনবার পানি খেতো, একবার ভাত। তার চোখে পানি নেই.. সব শুকিয়ে গেছে। রহমান বাসায় ফিরে এলে তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকত। লোকে বলে রহমানকে দেখতে তার হারিয়ে যাওয়া আব্বা আফজলের মতো। সেই রকম চোখ মুখ ভুরু। ... ...
ঘরের ভিতরের ছিটকিনি জোরে ঠ্যালা দিতেই একরাশ বাতাস আকুলি বিকুলি করে বেরিয়ে এলো আটকে থাকা বাতাস নাকি খবর দিতে চাওয়া? ... ...
আলমারিটা তোলার সময় সেরকম কোন তোড়ফোঁড় হয়নি। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে নামানোর সময় আলমারির ধাক্কায় একতলার একটা দেওয়ালের গা থেকে কিছুটা সিমেন্টের চটা উঠে গেছিল। তবে ঠিক সেদিন ফাটলটা অবধেশদের চোখে পড়েনি। চোখে পড়লে দুচারটে খিস্তি অবশ্যই দিত মজুরগুলোকে। আগে খুব মুখ খারাপ করত অবধেশ। এখন ছেলে বড় হতে গালি দেবার অভ্যেসটা খানিক কমিয়েছে। ... ...
এরপর কথা শুরু হতে গিয়ে দাগের ওপর দিয়ে আবার চলাচল করল। সুকুমারকে পাটা মারতে দেখা যায়। সব ঠিকঠাক থাকে। খালি পাটার আওয়াজ হয় ধুপ ধুপ ধুপ ধুপ থ্যাস। আর কোদালের আওয়াজ হয় খ্যারর খ্যারর। কর্নিকের আওয়াজ থ্যাস থ্যাস থুপুস। সব আওয়াজ থেমে গেলে নিঃশব্দ হয়। চারদিক নিঃশব্দ না হলেও একটুখানি জায়গা যেখানে কাজকাম হচ্ছিল নিঃশব্দ হয়ে পড়ল তারপর সেটা হয়ে উঠল এমন এক নরম সরম জায়গা যেখানে খুব শিগ্গির শক্তপোক্ত এক আস্তরণ গড়ে উঠবে। সে রোদ আসুক আর না আসুক। দিনের শেষে বা রাতের শুরু আস্তে আস্তে নরম সরম জায়গার সিমেন্ট জমাট হয়ে যাবে। সেখানে তখন দাগের সম্ভবনা তৈরি করতে তিনটে কুকুর ঘোরাফেরা করতে করতে নানান দাগ সত্যিই তৈরি করছিল। সে সব ঘুরে ঘুরে নরম জায়গার আসপাশে তৈরি করা দাগেরা। ... ...
এখন আর ঘর ছেড়ে এদিক ওদিক যাবার দরকার পড়ে না। পুঁটি তবু ঘরে থাকে না, অনেকদিনের অভ্যেস। তাছাড়া যত বড় হচ্ছে ততই এ ঘর যেন তার কাছে খুবই ছোট হয়ে যাচ্ছে, স্বপ্নগুলো এ ঘরে আর খেলে না। জানলা দিয়ে আকাশ দেখা যায় না, বরং পিঙ্কিদের কোঠার পাঁচিল দেখা যায় । ভাইকে নিয়ে লালবাতির বাল্যশিক্ষা কেন্দ্রে দিয়ে আসে পুঁটি, আর নিজে চলে যায় মন্টুদাদের ক্লাবে। সেখানে পট্টির বাকি ছেলেরা থাকে, ক্যারাম পিটায়, বিড়ি-সিগারেট-গাঁজা ফোঁকে, কেউ কেউ মদও খায়। পুঁটির সেখানে কোনও কাজ নেই, তবুও সেখানেই যায়, অকাজের ছেলেদের এই একটা যাবার জায়গা আছে এখানে। ... ...
কন্ডাকটর সাড়ে সাত সেকেন্ড হাঁ করে থেকে, পিছনের দিকে এগিয়ে গেল। অফিসের স্টপ আসতেই বাস থেকে দ্রুত নেমে গেলেন বৃংহণবাবু। রাস্তা পারাপারের সময় আচমকা একটা গাড়ি সামনে এসে যাওয়ায় দুটো বাজে গালাগাল দিলেন। ড্রাইভার না শুনতে পাওয়ায় এই যাত্রায় বেঁচে গেলেন। ঝামেলা ১-০ গোলে হেরে গেল। ... ...
শৈশবের যে সময়কালের বিচ্ছিন্ন কিছু স্মৃতি কেবল মানুষের মনে থাকে ঐ বয়স থেকে বাহ্রামের কাছে ‘পরী’ একটা আকর্ষণীয় বিষয়। বাহ্রামের মা বলতেন, বাহ্রাম যখন সবে হাত বাড়াতে শিখেছে তখনই সে কোন পরীর ছবি দেখলে খটখটিয়ে হেসে উঠে হাত বাড়াতো। সে কথা সত্যি হোক বা না হোক জ্ঞান হবার পর থেকে পরীর ব্যাপারে বাহ্রামের আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমেনি, বরং দিনে দিনে তা একটু একটু করে বেড়েছে। ... ...
নানা পণ্ডিতের নানা মত, তাও মোটামুটিভাবে বহুজন গ্রাহ্য টাইম লাইনটা এরকম- কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ, যদি সত্যি ঘটে থাকে, মানে একটা বড় রকমের যুদ্ধ, তবে সেটি হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতকে (কম বেশি একশো বছর)। এবং মহাভারতের আদি রচনাকাল শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে। প্রথমে ছিল জয় নামে এক নেহাতই যুদ্ধ কাহিনী, পরে নানান ধর্ম ও উপনিষদের সংস্পর্শে এসে একটা মহাকাব্যের রূপ নেয় খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের আগেই। এটি দ্বিতীয় পর্যায়, যেখানে যুদ্ধ বিবরণীর সাথে যোগ হয়েছিলো নানান উপকথার। প্রায় এক পুরাণের মতন। ... ...
যাতায়াত কম হয়ে গেলে রাস্তাগুলো পথ হারিয়ে ফেলে ঘাস জঙ্গলে অজানা সাপখোপ, ভয় বেড়ে ওঠে। ... ...
Wittgenstein মনে করতেন দর্শন ও জীবন বা জীবনযাপন সম্পৃক্ত! এই জন্য তাঁর দর্শন Liberation-এর দর্শন বা মুক্তির দর্শন হিসেবেও পরিচিত। Russell-কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘How can I be a logician before I am a human being?’। এখানে এসে পূর্ব-পশ্চিম কোথাও একটা মিলে যায়। আদি ভারতে যাজ্ঞবল্ক্য, গার্গী, মৈত্রেয়ীরা তাঁদের নিজস্ব পথে দার্শনিক সমস্যাগুলির সমাধান খুঁজেছিলেন আর বিংশ শতাব্দীতে পশ্চিমে আরেকজন মনীষী দার্শনিক তাঁর নিজস্ব প্রতিভায় পৌঁছলেন প্রায় সেই একই পথে! সম্ভ্রমের ব্যাপার হল Wittgenstein আমাদের দেশে আধুনিককালে যার সঙ্গে তাঁর চিন্তা ও বুদ্ধির সবচেয়ে বেশি সাযুজ্য খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি তথাকথিত কোনো দার্শনিক বা ধর্মগুরু বা সমাজসংস্কারক ছিলেন না, ছিলেন মূলত একজন কবি। প্রকৃতপক্ষে যে উপনিষদীয় ভারত রবীন্দ্রনাথের আধুনিক উদার ও সংস্কারমুক্ত মনের অনুপ্রেরণা ছিল তার সাথে এসে মিশেছিল পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, অন্যদিকে যুক্তিবাদী ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন Wittgenstein-এর মধ্যে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ছড়িয়ে দিয়েছিল উপনিষদীয় প্রজ্ঞা। মৃত্যুর আগে তাঁর বলে যাওয়া শেষ কথা ছিল, ‘Tell them I have had a wonderful life’। ... ...
মুর্শিদাবাদ বাসীদের যেখানে বিশ্বাসঘাতক কিম্বা বিশ্বাসঘাতকের জেলার মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয় সেখানে মীরজাফরের বংশধরদের কী অবস্থা হয়? তাঁরা কী তবে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখেন? পূর্ব পুরুষদের কর্মকাণ্ডের জন্য লজ্জা পান? নাকি তাঁদের পূর্ব পুরুষদের গায়ে লেগে থাকা 'বিশ্বাসঘাতক' তকমার বিরোধিতা করেন নিজস্ব যুক্তি দিয়ে? চলুন কেল্লায় বসবাসকারী নিজামত পরিবারের কিছু প্রবীণ সদস্যদের কাছ থেকে এই বিষয়ে জানা যাক। ... ...
আমার কর্তা এমন ব্যবস্থা করেছিলেন যে, যতদিন আমরা আড়বালিয়ায় থাকব, বড়জেঠু, মেজজেঠু, সেজজেঠু কারোর পরিবারে আলাদা হাঁড়ি চড়বেনা, একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হবে। সে বড়ঘরের ছেলে, বাড়িতে অনেক লোকজনের থাকা খাওয়ার আয়োজনের জন্য কীভাবে সুচারু বন্দোবস্ত করতে হয় - এসব বিষয়ে অল্প বয়স থেকেই বেশ পাকাপোক্ত। তাই আমাকে কিছুই মাথা ঘামাতে হয়নি। ওর এই ব্যবস্থায় আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম, কারণ কয়েকদিনের জন্য হলেও আমার ছোটবেলা যেন ফিরে এসেছিল। ... ...
কবিতা কি সত্যি কখনো অস্ত্র হয় বা হয়েছে? মানে ঠিক যেভাবে দেখাতে চায় মেরুকরণের রাজনীতি, কবিকে নিজেদের দিকে টেনে নিয়ে? নাকি তার জায়গাটা একটু আলাদা যা চিনতে না পেরে আমরা কবিতার প্রাসঙ্গিকতাকে ওই একই খোপে ঢোকাতে চাই ও বারংবার ব্যর্থ হয়ে নিরাশায় ভুগি। আদতে, সমালোচকদের মধ্যে একটা মাপকাঠি কাজ করেছে চিরকাল, যে, যথেষ্ট দেকার্তিয়ান না হলে, সেইটে আধুনিক রাজনীতির অংশ হয় না। ... ...
উফফ্ দু-দন্ড যে একটু শান্তিতে দিন কাটাবো তার যো নেই। হতভাগাগুলো আবার “দাও দাও” আবদার শুরু করেছে। হ্যাঁ রে অনামুখোর দল, এই যে তোদের কথামত ৩৭৭ সরালুম, তাতেও তোদের আশ মিটল না। না, মানে আমরা সরিয়েছি তা নয়, সুপ্রীম কোর্ট সরিয়েছে, কিন্তু আমরা কি তাতে কিছু বলেছি? হুঁ হুঁ বাবাসকল, এ হল অমৃতকাল, সবকা বিকাশ না করে ছাড়ব না। এই যা, বাবাসকল বলে দিলাম, তোদের তো আবার কে বাবা আর কে মা তার ঠিকঠিকানা নেই। আজকে দাড়িগোঁফওয়ালা শাড়ি পরে ঘুরছে তো কাল আরেকজন মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে যাচ্ছে। এরকম ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল চলতে থাকলে আমরা কী আর তাল রাখতে পারি? যাক গে, যাক। যে কথা বলছিলাম। ৩৭৭ গেল কি গেল না, তোরা এসে উপস্থিত হলি বে করব বায়না নিয়ে। বলি বিয়ে কি ছেলের হাতের মোয়া না নোটবন্দী যে চাইলেই করে ফেলবি? এ হল অতি গুরুতর বিষয়, সমাজের হিত, দেশের ভিত, আর ঐতিহ্যের মিথ সব এতে মিলেমিশে আসে। অমন বিয়ে করব বললি আর অমনি আমরা অনুমতি দিয়ে দিলাম, এ আবার হয় না কি? ... ...
বাঙালির নববর্ষ নিয়ে অদ্ভুত কিছু বিতর্ক উত্থাপন করা হয়েছে। কে এই নববর্ষের উদ্গাতা—আকবর, নাকি শশাঙ্ক? এর পুরোটাই চলছে, প্রায় হাওয়ায় হাওয়ায়—হোয়াটস-অ্যাপ প্রচার যেমন হয়। তাই ঝট করে একবার দেখে নেওয়া যাক, আইন-ই-আকবরি-তে এই নিয়ে কী লেখা আছে। ... ...
ঝুমুর এক হাত দিয়ে ডালটা ধরে, নিজেকে টেনে তুলল গাছের উপরে। ওর মনে পড়ে গেল, যে ঠিক এক মাস আগে কি হয়েছিল ঠিক এই জায়গাটাতে, এই গাছটার নিচে। ... ...
একদিন সকালে তিতলি ঘুম থেকে উঠল এক অজানা দুনিয়াতে। ... ...