আফগানিস্তানে জমানা বদলের পর থেকেই নানা দেশ নানাভাবে তাদের লাভক্ষতির হিসেব নিকেশ করছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ভাবছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনের সমস্ত তিক্ততাকে পাশে সরিয়ে রেখে সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক দিয়েছে। বিরোধীরাও তাতে সমস্বরে সাড়া দিয়েছেন। বৈঠক থেকে আফগান-নীতি প্রসঙ্গে শাসক বিরোধী ঐক্যমত-ও তৈরি হয়েছে। বোঝা কঠিন নয় আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সবারই উদ্বেগ আছে এবং এই ক্ষেত্রে অন্তত শাসক বিরোধী রাষ্ট্র স্বার্থে অনেকটা কাছাকাছি থাকতে চাইছেন। ... ...
মাটি ভাগ হয়, দেশ ভাগ হয়, মানুষ, পাড়াপড়শি, আত্মীয়স্বজন, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জন্ম জন্মান্তর ধরে গড়ে ওঠা গ্রাম, ঝিল, পুকুর, বনবাদাড়, ঘরবাড়ি বিদীর্ণ করে দেয় দিল্লির শাসকের কাঁচি। দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী আসিফ সামিনার পরিবার এপার-ওপার হয়ে যায়, তাদের সদ্য প্রস্ফুটিত প্রেমের মাঝে রাষ্ট্র খুঁটি পুঁতে দেয়। প্রবল ঝুঁকি নিয়ে তারা খণ্ডিত হয়ে যাওয়া নাজির বিলের কাছে দেখা করে, সুখী দাম্পত্যের স্বপ্ন দেখে, তারপর একদিন সীমান্তরক্ষীর গুলিতে দুই উজ্জ্বল তরুণ তরুণী পাচারকারীর লাশ হয়ে যায় .... সম্পাদক বিমল চক্রর্তীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ, কারণ ত্রিপুরার দেশভাগের গল্প একসাথে গ্রন্থিত হয়েছে এরকমটা অন্তত এই প্রতিবেদকের আগে কখনো নজরে আসেনি। সেদিক থেকে এই সংকলনটি অনন্য ... ... ...
দেবেশ রায়, এডোয়ার্ড সয়িদ-এর কালচার অ্যান্ড ইমপিরিয়ালিজম বই থেকে তুলে এনেছেন ইতিহাসের এক নৈর্ব্যক্তিক সত্য – “সাম্রাজ্য বস্তুত এক প্রলম্বিত নৈতিক কর্তব্য।” সেই কর্তব্য পালনের জন্যেই অধীনস্থ, নীচ, পশ্চাৎপদ জাতিগুলিকে শাসন করতে হবে। আর এই ‘নৈতিক কর্তব্য’ সাধন করতে গিয়েই ব্রিটিশ শাসকেরা উপমহাদেশের ক্ষমতালোভী কতিপয় রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশে ঘটিয়ে তুলতে পারল এমন এক অভাবিতপূর্ব ঘটনা – দেশভাগ। ভারত-চেতনার হত্যা ঘটাতে তারা ঠেলে দিল আমাদের গৃহযুদ্ধে, দাঙ্গায়। রক্তপাত, অবিশ্বাস, ঘৃণার লাভাস্রোতে ছাই হয়ে গেল সাধারণ কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন আর ভবিষ্যৎ। এমন চিরস্থায়ী সেই অভিঘাত যে, সাত দশক পার হয়েও সেদিনের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে আমাদের লেখায়, চেতনায়। ... ...
কেন্দ্র রাজ্যের পুনর্বিন্যাসের দাবিতে রাজ্যে গড়ে উঠল আন্দোলন। জ্যোতি বসু প্রমোদ দাশগুপ্ত অশোক মিত্র তাকে অন্য ভাষা দিলেন। জ্যোতি বসু বললেন, খানিকটা যেন মুজিবের স্বরেই, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে টাকা ছাপানোর মেশিন আছে। ওদের যখন ইচ্ছে টাকা ছাপিয়ে নেয়। রাজ্য সরকারকে ভাগ দেয় না। আর রাজ্য সরকারের হাতে টাকা ছাপানোর মেশিনও নেই।' স্বর আরেকটু উঁচু পর্দায় যেতে পারত। গেলে দেশের মঙ্গল হতো। গেল না। কারণ সর্বভারতীয় হতে চাওয়ার দায়। অমল সরকার লিখেছেন: কংগ্রেস, বিজেপি যখন যে দল ক্ষমতায় থেকেছে, রাজ্যগুলিকে শোষণ করেছে। রাজ্যগুলিকে একদিকে রাজস্বের ভাগ কমিয়ে দিয়ে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সীমা স্থির করে দেওয়ার পাশাপাশি নানা শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যে হাজার হাজার কোটি টাকা ( এখন লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা; গত সাত বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ বেড়েছে ৪৯ লাখ কোটি থেকে বেড়ে এক কোটি দুই লাখ কোটি টাকা) ঋণ নিচ্ছে তা নিয়ে জবাবদিহির বালাই নেই। ... ...
লম্বা লম্বা শিক লাগানো পেল্লায় তার কপাট। সেই শিক ধরে ভিতরে চোখ রাখল ফায়জল। সঙ্গে সঙ্গে যেন আলিবাবার গুহার মত এক আজব দুনিয়া চিচিং ফাঁক হয়ে চোখের সামনে হাজির। কি বনবন করে ঘুরছে সবাই। সঙ্গে গান করছে কেউ মিঠে সুরে। ছোট-বড়, রোগা-মোটা, বাচ্চা-বুড়ো সবাই চরকি-ঘোরান ঘুরতে ঘুরতে খলখল করে হাসছে। জীবনটা এত মজার, এসব না দেখলে বোঝাই যায় না। পায়ে পায়ে ভেতরে ঢুকে গেছিল ফায়জল, নিজেকে গুটিয়ে কারো সঙ্গে গা ঘেঁষাঘেঁষি না করে। ভিতরে কত রকমের বাতি ঝুলছে। চলতে চলতে এক আয়নার সামনে গিয়ে তার চোখ কপালে। হুবহু তার মত একটা লোক, শুধু কেউ যেন হামান দিস্তা দিয়ে এমন পিষে দিয়েছে লম্বায় এক হাত আর চওড়ায় তিন হাত। পোশাক দেখে শুধু বুঝতে পারল, যে এটা তার নিজের সুরত। এমন সেই সিসার কেরামতি। এমনি অনেক সিসা দিয়ে একটা দেওয়াল মুড়ে রেখেছে। কোনখানে ফায়জল বেঁটে, তো কোথাও হিলহিলে লম্বা, আর এক জায়গায় সে হয়ে গেল বেলুনের মত গোল। যেন এখুনি হাওয়া বেলুন হয়ে উড়ে যাবে। আলেফ ডেকে না নিয়ে এলে সেখানেই বুঝি পুরো দিনমান কাটিয়ে দিত ফায়জল। ... ...
ভারতীয় ভারোত্তোলন তখন ধ্বংসস্তূপে। এরই মধ্যে উত্তরপ্রদেশ ভারোত্তোলন দলের সাফল্যের জন্য তাদের কোচ বিজয় শর্মাকে লন্ডন অলিম্পিকের জন্য সহকারী কোচ নিযুক্ত করা হয়। বিজয় শর্মা, নিজে ভারোত্তোলক ছিলেন এবং বেশ কিছুদিন ইউরোপেও কাটিয়েছেন। ২০১৪-য় পাতিয়ালায় ট্রেনিং-এর ভার নেবার পরে, কর্তাদের অনুরোধ করে ভারোত্তোলকদের জন্য আলাদা রান্নাঘরের ব্যবস্থা করেন। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট থেকে ভারোত্তোলকদের সরিয়ে নিয়ে প্রাকৃতিক প্রোটিনের দিকে জোর দেন বেশি। ২০১৪-তেই মীরাবাঈ গ্লাসগোয় ৪৮ কেজি বিভাগে কমনওয়েলথ গেমসে রূপো জেতেন। ওদিকে ২০১৫-য় যখন ডোপিং-এর কাদায় ভারতীয় ভারোত্তোলন আবার ডুবছে, তখন বিজয় শর্মা মীরাবাঈ, সতীশ সহ কয়েকজনকে বটগাছের মতো আগলে রাখছেন। ২০১৪-র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের পারফরম্যান্স অনুযায়ী ভারত ২০১৬-র রিও অলিম্পিকে দু’জনের কোটা পায়। সেই অনুযায়ী ট্রায়ালও হয় এবং তামিলনাড়ুর সতীশ কুমার শিভলিঙ্গম এবং মীরাবাঈ যোগ্যতা অনুযায়ী পারফর্ম করে অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু মীরাবাঈ চোট এবং ভুল ওজন নির্বাচনের কারণে রিওতে ওজন তোলার খাতাতেই নাম লেখাতে পারেননি। আসলে একবার বেশি ওজন দিয়ে শুরু করলে ফিরে যাওয়া যায় না কম ওজনে। ফলস্বরূপ ব্যর্থতা। ... ...
পালাবে কি ভাবে? কোম্পানি থেকে লোকে ডিউটি দিত। পাহাড় থেকে লাফ-ঝাঁপ মেরে যেই পালাতে গিয়েছে, ঠিক খপ করে ধরে নিয়েছে। ওই যে, রাত্তিরবেলা কোম্পানির লোকগুলো পাহারা দেয় না, ওরাই ধরেছিল। বুড়ো ছিল একটা। সেই ওনার হাঁটু ভেঙে গেল লাফ মেরে। ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে, টানতে টানতে এনে ঢুকিয়ে দিয়েছিল আবার। আর দুইজনের কেটে ছড়ে কি অবস্থা! একজন কেবল পালাতে পেরেছিল। খু-উ-ব বুদ্ধি ওর। ঠিক গাড়িতে উঠে পালিয়েছে। ফিক করে হেসে ফেলল সন্টু... ... ...
অর্চনার একজনের ওপর বিরাট ক্রাশ ছিলো। জনৈক 'লেদা রাজা'। যে যেখানে কারুর কোনো গুণের কথা বলুক না কেন, অর্চনা হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলতো "লেদা রাজার মত"। আমি তো কিছুতেই ভেবে পেতামনা যে কোনো রাজা 'ল্যাদা' হলে তাঁর এত ভক্ত হবার কী আছে! এদিকে যতই জিজ্ঞেস করা হোক না কেন এই 'লেদা রাজা'টি কে, অর্চনা খালি ফিক করে হেসে বলতো "আমি কী জানি?" শেষে একদিন কৃষ্ণর গল্প শুনে সে সটান বলে বসলো "এটা তো লেদা রাজার গল্প। আন্টি মোটেই জানেনা, লেদা রাজার গল্পে শুধুশুধু ভুলভাল কান্ড ঢুকিয়ে দিয়েছে!" সবাই মিলে তখন নানা প্রশ্ন, নানা মন্তব্য। কারুর রাগ হয়েছে, কেউ আন্টিকে বলে দিতে চাইছে। কিন্তু এই বিস্ফোরক মন্তব্য করে দিয়েই অর্চনা আবার সেই – ফিক, "আমি কী জানি?" মোডে চলে গেছে। ... ...
পরিবেশটা সহজ করার জন্যেই হোক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক উৎপল ঘোষণা করে স্কুলের ছেলেমেয়েরা এখন একটা সাঁওতালি গান শোনাবে, এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সমবেত পরিবেশিত হয় ধারমু উদুঃক্ আকাৎ লেকা গানটি। গান শেষ হলে জয়মালিকা আবার তুলে নেয় মাইক। সে ছাত্রছাত্রীদের পরিবারের থেকে যারা এসেছে তাদের উদ্দেশে এবার বলে তোমাদের ছেলেমেয়েদের মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছি আমরা। তারা লেখাপড়া যেমন শিখবে সব ধরণের কাজও শিখবে তেমনি। এই যে আজ এখানে সামিয়ানা টাঙানো হয়েছে, মাইক লাগানো হয়েছে, এসব তোমাদের ছেলেমেয়েরাই করেছে। বড়ো বড়ো শহরের ছেলেমেয়েরা যেমন শেখে সেরকমই ভালো ইংরিজি আর বাংলা শেখাবার জন্যে আমাদের স্কুলে এখন কলকাতা থেকে এসেছেন সোমেশ্বর স্যর আর সম্ভৃতা ম্যাডাম। ... ...
আজ এই হেমন্তের সন্ধ্যায় হাসপাতালের সামনের ফুটপাথে সেই কুয়াশা তাকে আবার ঘিরে ধরেছিল- যে কুয়াশা তাকে এই ক'বছরে বারে বারে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে তার শৈশবে আর সে কখনও মা, কখনও বাবা , কখ্নও জেম্মার সঙ্গে কথা বলেছে ফোনে। আজ সে' উপায় ছিল না- তার শৈশবের শেষ যোগসূত্র এই হাসপাতালের চারতলার ঘরে নাকে মুখে নল নিয়ে শুয়ে ছিল তখন। হাসপাতালের কাচ দরজা খুলছিল, বন্ধ হচ্ছিল। নীল আলো জ্বালিয়ে অ্যাম্বুলেন্স এসে থামছিল পরপর। হিম নামছিল ফুটপাথে। সেই হিমের সঙ্গে হাসপাতালের চারতলা থেকে কুয়াশার মত মৃত্যুর ছায়া এসে মিশছিল যেন। ... ...
এই ছবিতে শ্যাম বেনেগাল সচেতনভাবে যে সিদ্ধান্তটি নেন এবং যথার্থ শিল্পী হিসাবেই নেন – তা ছবিটিকে দেশভাগকেন্দ্রিক অন্যান্য ছবিগুলির থেকে স্বাতন্ত্র্য দেয়। মূলত তিনি নিবিষ্ট-চেতনার আলোয় ৭০-এর দশকের সেই গা-ছমছমে সময়ে, একজন প্ৰান্তিক মানুষের অবস্থানকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। কারণ তাঁর অসামান্য শৈল্পিক মেধা জানত, যে শতাব্দীর শেষে যখন মানুষ একটি নতুন ভোরের খোঁজে আকুল, তখন ৪৫ বছর আগের এক রাজনৈতিক অবিচক্ষণতা মানুষকে আর নতুন করে বিব্রত করতে পারে না। একমাত্র মানবিক সম্পর্ক, স্মৃতি এবং সমকালের সমাজচিত্রের মধ্যে দিয়ে উস্কে দেওয়া সম্ভব সেই দগদগে ঘায়ের ছোপ ছোপ স্মৃতি। ... ...
উৎসবের দেশ জাপানের পাঁচটি ঋতু-কেন্দ্রিক উৎসবের অন্যতম দুটি হল পুতুল-কেন্দ্রিক। পুতুল উৎসবের একটি ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত “হিনা মাৎসুরি”। এর অন্য নাম “বালিকা-উৎসব”। অন্যটি হল ৫ই মে অনুষ্ঠেয় “তানগো-নো-সেক্কু” বা “বালক-উৎসব”। জাপানের অন্যান্য উৎসবের মত এই পুতুল উৎসব দুটিরও শুরু বহুযুগ আগেই। তবে নিঃসন্দেহেই বলা যেতে পারে যে, নানা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পথ পেরিয়ে বর্তমানের উৎসব অন্যরূপে প্রতীয়মান। ... ...
কনফারেন্সে এমন জবরদস্ত লাঞ্চ হলে, তার নেগেটিভ দিক হচ্ছে, লাঞ্চের পরের টকগুলোতে খুব কম লোক হাজির হবে। যারা হাজির হবে, তারাও অনেকে ঢুলবে! আমাকে দু’একবার কোন কোন সেশনের চেয়ারম্যান হতে হয়েছিল, তাই স্টেজ থেকে একদম সামনা-সামনি দেখি অডিয়েন্স কেমন ঢুলছে! আর যদি কোনো সরকারি কোম্পানির বড় কর্তা টক দেয়, তো রুম ভরে যাবে – সেই ভরা রুমে লোকে ঢেকুর তুলছে, কেউ নিঃশব্দে বাতকর্ম করে দিল ধরুন – মাটন রোগান জুসের ঢেকুর বা পাদের গন্ধ কি আর রুম ফ্রেশনার দিয়ে আটকানো যায়! ... ...
বর্বর জাতিরা যুগে যুগে যে ভাগ্যের ওঠাপড়া দেখে এসেছে, এই সেগুহহা উপজাতির বিশিষ্ট ও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠাটা আমাদের সামনে সেই ভাগ্য পরিবর্তনের একটা উদাহরণ তুলে ধরে। তিরিশ বছর আগেও সেগুহহারা দেশের একটি সংকীর্ণ অঞ্চলে বসবাস করত। জায়গাটা সাম্বারাদের ও ডোদের দেশের মাঝখানে। উসাগারা পাহাড়ের পূর্বদিকে ডোরা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, কিন্তু দাস-ব্যবসায়ীরা এদের জীবনে ধ্বংস ডেকে এনেছে, এদের সংগঠিত দস্যুদের হাতে তুলে দিয়েছে। দস্যুদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বাসঘাতক মৃমারা, পালিয়ে যাওয়া দাসেরা, জাঞ্জিবারের আইনের চোখে অপরাধীরা, আসামীরা ও অপহরণকারীরা- উসাগারা থেকে সমুদ্র অবধি এলাকার জঙ্গলগুলো এই ধরণের লোকে থিকথিক করত। ... ...
জয়ন্তী অধিকারী, তথা কুমুদি গুরুচণ্ডালির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন ওতঃপ্রোতভাবে। তিনি এখন স্মৃতি। তবু স্মৃতিস্তম্ভের স্থবিরতাকে ভালবাসিনি আমরা। চাইছি স্মৃতির চলমানতা। আমরা চাইছি, বাংলা অক্ষর বেয়ে বেয়ে পরের প্রজন্মেও পৌঁছে যান কুমুদি। তারা আমাদের কুমুদিকে চিনুক, ভালবাসুক, লেখা পড়ুক, পড়াক বন্ধুদের। কুমুদিও তাদের চিনতে চাইবেন -- বলাই বাহুল্য। এইসব অলীক চেনাজানাকে বাস্তব করতে গুরুচণ্ডা৯ শুরু করেছে বার্ষিক 'কুমুদি পুরস্কার' -- কিশোর কিশোরীদের বাংলা গল্প লেখার প্রতিযোগিতায়। ... ...
বিজয় তেণ্ডুলকর, মহেশ এলকুঁচওয়ার অথবা সতীশ আলেকারের মত নাট্যকারের নাট্যকৃতি দেখা বা পড়ার সুযোগ থাকায় মারাঠি নাটক সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা আছে। মারাঠি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত গায়ক বা গায়িকাদের বিরাট ঐতিহ্য সম্পর্কেও আমরা সশ্রদ্ধ অনুরাগ পোষণ করি। কিন্তু মারাঠি চলচ্চিত্র বিষয়ে আমাদের বিশেষ কিছু জানা নেই। তার একটা কারণ বোধহয় এই যে আমাদের দেশে আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্রের প্রসার এখন ভীষণ অবহেলিত। তার মধ্যে আবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সর্বোৎকৃষ্ট ছবির শিরোপার ৭১ শতাংশ হিন্দি, বাংলা এবং মালয়ালম ছবির দখলে এসেছে গত ৬৯ বছরের ইতিহাসে। সত্যজিৎ রায় সমেত দশ জন পরিচালক তাঁদের প্রথম ছবিতেই এই সম্মান পেয়েছেন। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মারাঠি পরিচালক চৈতন্য তামহানের নাম ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কোর্ট’ ছবিটির জন্য। ... ...
The Economics of Biodiversity: The Dasgupta Review সেই সচেতনতা শিক্ষণের পাঠ নিয়ে এসেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রকাশিত এই রিপোর্টটি জীববৈচিত্র্যের অর্থনীতি বিষয়ে একটি পথপঞ্জী। প্রথম যে বইটি হাতে নিয়ে পরিবেশের অর্থনীতি শিখতে শুরু করেছিলাম, তার নাম The Control of Resources, লেখক পার্থ দাশগুপ্ত। তারপর ওঁর অনেক লেখা পড়েছি, বক্তৃতা শুনেছি। ইংল্যান্ডবাসী স্যার পার্থ দাসগুপ্ত পরিবেশের অর্থনীতি চর্চায় একটি অনিবার্য নাম। ব্রিটিশ সরকারের জন্য তৈরি এই রিপোর্টটি তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও অসীম মনীষার স্বাক্ষর বহন করে। বর্তমান সংকটের মুহূর্তে এই রিপোর্টটি দিগ্দর্শন করে, মানবজাতিকে এগিয়ে চলার পথ দেখায়। ... ...
মুর্শিদাবাদের একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস ছিল। একসময় দিল্লিকে পাল্লা দেবার ক্ষমতা রাখত মুর্শিদাবাদ। ব্যাংকিং হাউস হিশেবে তার এতো প্রতিপত্তি ছিল যে খোদ দিল্লির বাদশা তার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সুরম্য সৌধ মিনার অট্টালিকা, নহবতের সুর, আড়ম্বর বিলাসব্যসন নিয়ে যে একটি জবরদস্ত জনপদ গড়ে উঠছিল ভাগীরথীর তীরে তার ছায়া বিলীনপ্রায়। সংরক্ষণের অভাব কেড়ে নিচ্ছে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। সংরক্ষণের জন্য সচেতনতার অভাব তার থেকে অনেকগুণ বেশি। কত মূল্যবান স্মারক এইভাবেই আমরা হারাতে বসেছি এককালীন বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে। ... ...
লেখক সঠিকভাবে দেখিয়েছেন যে বৃটিশ কলোনিয়ালিস্টদের ভারত দখল করার লড়াইয়ে ক্রমশঃ দিল্লির মুঘল, দাক্ষিণাত্যের টিপু আদি মুসলিম শাসক ও বঙ্গে সিরাজদৌল্লাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাদের কাছে মুসলিম শাসকেরা ছিল ভবিষ্যতের কাঁটা। সেই মানসিকতায় এশিয়াটিক সোসাইটিতে উইলিয়ম জোন্সের নেতৃত্বে ভারতাবিদেরা গড়ে তোলে হিন্দু রাজত্বের স্বর্ণিম যুগ ও মুসলিম রাজত্বের মধ্যযুগীয় অন্ধকারের এক সরলীকৃত আখ্যান যা চলে আসে ২০০ বছর ধরে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে। এদিকে হ্যালহেড বাংলাভাষার কাঠামো বাঁধতে গিয়ে ব্যাকরণ লিখলেন, কিন্তু প্রচলিত বাংলাভাষার থেকে (অশুদ্ধ?) ফারসী ও দেশি শব্দ ছেঁটে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের কন্যা সিদ্ধ করে সংস্কৃত শব্দ ঢুকিয়ে ‘শুদ্ধ’ করতে উঠে পড়ে লাগলেন। এ’ব্যাপারে তাঁদের প্রবল সমর্থক ও সহায়ক হলেন ফোর্ট উইলিয়ম ও সংস্কৃত কলেজের পন্ডিতেরা। এঁদের চোখে ভাষাকে হতে হবে উচ্চবর্ণের এলিট, কাজেই সংস্কৃত ঘেঁষা। ... ...
সুবিনয় রায়ের গান শুনতে গিয়ে দেখলাম সেখানে বিভূতিভূষণ উপস্থিত। " কী অচেনা কুসুমের গন্ধে" জেগে উঠছে ছবি, আর আমি ভাবছি একের পর এক মৃত্যুমিছিলের কথা। যে মানুষ চলে গেলেন, তাঁদের যাওয়া নয়, তাঁদের সঙ্গে সামান্য কিছু কথা, দেখা, কয়েকটি মুহূর্ত। ছোটবেলার বন্ধু, বন্ধুদের বাড়ির লোক চলে গেলেন খুবই অলক্ষ্যে। আরো এমন অনেক মানুষ যাঁদের চিনিনা। কিন্তু শোক ছাপিয়ে এই ভাবনা প্রবল যে এই এঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে সেইসব জমানো মুহূর্তেরা থেকে গেল। এইসব যখন হয়েছে, তখন ভাবিনি কোন কোন পথের বাঁকে আনন্দময় স্মৃতি জমে উঠছে। হেলায় কুড়িয়ে বইয়ের ভাঁজে রাখা সেসব ফুলই অপূর্ব রূপ নিয়েছে এখন। ... ...