এই মিছিলের নাম, ‘India March for Science’। কেন এই মিছিল? এ বছর নতুন নয়। ২০১৭ সাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানসমাজ তাঁদের দেশের সরকারকে বারংবার অনুরোধ করছিল, যেন অবৈজ্ঞানিক চিন্তা, কুসংস্কার, ইত্যাদির, সরকারি খরচে প্রসার রদ করা হয় এবং বিজ্ঞানমনস্কতার চর্চা করা হয়। সরকারি নীতি – তা সে পরিবেশ বিষয়কই হোক, বা স্বাস্থ্যসম্পর্কিত, যেন বিজ্ঞান-অনুসারী ও কল্যাণকামী হয়। ভারতের বিজ্ঞানকুলও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এঁদের দাবি ছিল, বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার ও প্রচার, সংবিধানের 51(A) ধারা অনুযায়ীই, আমাদের কর্তব্য। এই সব দাবি নিয়ে এবং বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান-আন্দোলনের সমর্থনে ভারতও হাঁটতে থাকে প্রতি বছর, ২০১৭ থেকে ২০১৯। ... ...
এই হলেন দেবনুরা মহাদেব। এক আইকনিক কন্নড় সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব, জনসাধারণের বুদ্ধিজীবী এবং কর্ণাটকের এক শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক কর্মী। এতই মুখচোরা এবং আত্মপ্রচার বিমুখ, যে মাঝে মাছে সন্দেহ হতে শুরু করে, যে এই লোকটি জনজীবনে করছে টা কী। জনতার মনোযোগ থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার বিশেষ প্রতিভা রয়েছে তাঁর। মঞ্চে তাঁকে হঠাৎই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা— কেউ হয়তো দয়াপরবশ হয়ে বলল: উনি ধূমপান করতে গেছেন। মহাদেব সর্বদা এবং বিরক্তিকরভাবে দেরিতে চলেন, এমনকি আমার তুলনায়ও, সবসময় একটু অপ্রীতিকর, হয়তো কিছুটা বিকৃতও। সেটা কিন্তু বোহেমিয়ান কবির যত্ন সহকারে পরিকল্পিত অসাবধানতা নয়, তাঁর জীবনের এক আলাদা ছন্দ আছে, আছে নিজস্ব পূর্বাপরবোধ, যা চিরাচরিত কোনো খ্যাতনামা ব্যক্তির ক্ষেত্রে কল্পনাই করা যায়না। ... ...
প্রবুদ্ধসুন্দর কর। বাংলা কবিতার ক্ষণজন্মা এই কবিতাপুরুষকে নিয়ে এতো তাড়াতাড়ি লিখতে হবে, ভাবনায় আসেনি। অথচ এই কাজটাই করতে হচ্ছে কঠিন সত্যকে মেনে নিয়ে। প্রবুদ্ধসুন্দর ও তাঁর কবিতা নিয়ে চর্চার অবকাশটুকু প্রবুদ্ধসুন্দর নিজেই কিছুটা সহজ সমীকরণে নির্ণয় করে গেছেন। উপরে উদ্ধৃত ‘বায়ডাটা’ শিরোনামে কবিতা থেকে তাঁকে চিহ্নিত করতে পারবেন একজন কবিতা পাঠক। ‘সংকর’ জাত প্রবুদ্ধসুন্দর তাই অবলীলায় লিখতে পারে, ‘বাবা বেগবান অশ্ব/ মা, উদ্ভট সংসারের ভারবাহী গাধা/ আমি খচ্চর, বাংলা কবিতা লিখি।’ ... ...
তিস্তা লিখছেন তিনি গুজরাটি হওয়ায় গর্বিত। এক সময় ঐ রাজ্য তাঁর ছোটবেলার সুখস্মৃতির অঙ্গ ছিল। রাতের ট্রেনে বোম্বে থেকে আহমেদাবাদ যাওয়া, মা বোনের সাথে পুরানো শহরের জামাকাপড়ের বাজারে চক্কর মারা, তাঁকে এখনো শিহরিত করে। ‘ফেমাস’ নামক রেস্টুরেন্ট থেকে কুচো লঙ্কা, পেঁয়াজ ও পুদিনা পাতা দেওয়া মাংসের সামোসার কথা মনে হলে এখনো তাঁর জিভে জল আসে। ১৯৯১ সালে বিভিন্ন সংবাদপত্রের হয়ে ঐ রাজ্যে গিয়ে তাঁর সেই সযত্নে লালিত স্মৃতিমেদুরতা ধাক্কা খেল। তখন লাল কৃষ্ণ আদবানির রথযাত্রা চলছে, গুজরাটে সেটার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তিস্তা বিভিন্ন শহর পরিক্রমা করাকালীন কিছু ঘটনার সাক্ষী হন যা তাঁকে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এবং মুসলিমদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত করে তোলে। ট্রেনে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে উল্লসিত হয়ে বলতে শোনেন হিন্দুত্ব ও হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা এখন খুব জনপ্রিয়! হিংসাত্মক কার্যকলাপ করা, খুন করায় গুজরাটিদের যে ভয় ছিল সেটা এঁরা খতম করে দিয়েছে। এটা দারুণ! একবার শহরের গণ্যমান্য মানুষ রউফ ওয়ালিউল্লার সাথে দীর্ঘ কথোপকথনে মুসলিমদের সমস্যা সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে, সেই বিখ্যাত সামোসা কিনে, ফ্লাইট ধরে বোম্বে বাড়ি ফিরে এসেছেন। সাক্ষাৎকার থেকে বাড়ি, এতে মাত্র এক ঘণ্টা কুড়ি মিনিট সময় অতিবাহিত হয়েছে। বাড়ি ফেরা মাত্র ফোনঃ রউফসাব খুন হয়ে গেছেন! ... ...
সাহিত্য নয়, কথকতা। পড়তে পড়তে মনে হয়, কথকতাও নয়, চিত্রনাট্য। সাবলীল গদ্যের টানে টেনে নিয়ে যাওয়া চলচ্চিত্রই যেন। প্রতিটি ছোট ছোট অভিজ্ঞতা আর তার আগে-পরে বহু ফ্ল্যাশব্যাক মুহূর্তকে লেখক ধরেন কখনও ক্লোজ শট, কখনও মিড শট, কখনও লং শটে। তাঁর ক্যামেরার চোখে কখনও ভি শান্তারাম, কখনও বিমল রায়, কখনও গুলজার। ছোটখাটো চেহারার ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত আদ্যন্ত বাঙালি যে মানুষটি বাংলা সাহিত্যের পুনর্নির্মাণ করেছেন সেলুলয়েডে, তাঁর নির্ভার স্মৃতিচারণে কী অবলীলায় ধরা পড়েছে ষাট-সত্তর দশকের বোম্বে থেকে কলকাতা। শচীনকর্তার বাড়ি থেকে হেমন্ত কুমারের সঙ্গে আড্ডা, বিমল রায় থেকে সত্যজিৎ রায়ের সাহচর্য, ম্যাডাম কাননবালা থেকে মিসেস সেনের কাছের মানুষ, মহানায়ক উত্তম থেকে ম্যাটিনি আইডল রাজ কাপুরের সখ্যতা... বর্ণময় জীবন কি একেই বলে? ... ...
সকালবেলা। জোরে জোরে দরজায় বেল বাজছে। আপনি দরজা খুললেন। খুলেই কিছু অফিসারদের দেখতে পেলেন: "আমরা ইডি। আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের সাথে যেতে হবে। এক্ষুণি।" আপনি তাদের সাথে তাদের অফিসে পৌঁছালেন। আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়: "আপনি কি গত বছর আপনার একটা প্লট গুপ্তজিকে বিক্রি করেছিলেন?" আপনি বললেন: "হ্যাঁ, আমার নিজস্ব প্লট ছিল, কোনো বিতর্কিত সম্পত্তি ছিল না। দু নম্বরি করে বিক্রি করিনি, কোনো কালো মামলাও নেই। সঠিক পন্থায় নথিভুক্ত, সাক্ষী, সমস্ত প্রমাণও আছে আমার কছে।" তারা আপনার প্রমাণের প্রতি একটুও আগ্রহী নয়: "আপনি কি জানেন যে গুপ্তা, যার কাছে আপনি প্লট বিক্রি করেছেন, ব্যবসায় কারচুপি করার জন্য তার বিরুদ্ধে ৪২০ র মামলা আছে?" আপনি মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন: "দেখো ভাই, আমি তার কাছে প্লট বিক্রি করেছি, কন্যাদান করিনি। সম্পত্তির এজেন্ট চুক্তিটা করেছে। পেমেন্ট চেকের মাধ্যমে এসেছে। তার সাথে, তার পরিবার বা ব্যবসার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। মাস কয়েক আগে আমি খবরের কাগজে পড়লাম যে তার বিরুদ্ধে কিছু ফর্ম রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। কিন্তু সেসব তো আমাদের চুক্তির পরে ঘটেছে।" আপনি মনে করলেন,যে ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়েছে। বিষয়টা মিটে গেছে। কিন্তু তখনই আপনার মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়বে: "মনে হচ্ছে আপনি PMLA (প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট) আইনটার ব্যাপারে কিছু জানেন না। আপনি এই আইনের অধীনে একজন অপরাধী। কারণ অপরাধের আয় আপনার পকেটে পৌঁছেছে। কাজেই আপনিও একজন অপরাধী। এই অপরাধের দরুন আমরা আপনাকে গ্রেপ্তার করছি!" ... ...
আমার দেখা প্রথম টিভি, টেপ রেকর্ডার, এইচ এম ভি ফিয়েস্তার কলের গান, মোটর সাইকেল--সব কালামদের বাড়িতে প্রথম। টিভি আর ভিডিও দেখতে ওদের খামার লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো ১৯৮২ তে। ১৯৭৮/৭৯ ঠিক মনে পড়ছে না, টেপ এলো। শোলের গব্বর সিংয়ের সংলাপ শোনা যাচ্ছে। বিরাট ব্যাপার। আমাদের নিজেদের গলাও শোনা যাবে! লাইন পড়ে গেল। আমিও পচাশ পচাশ মাইল সে, আমজাদ খানের সংলাপ বলে নিজের গলা শুনে চমকিত। ... ...
নিজের প্লেট থেকে চামচে করে চাউমিন তুলে সৌম্যর প্লেটে দিল রজত। খাবারের প্রথম গ্রাসটা একে অন্যকে বেড়ে দেয় ওরা। বহুদিনের অভ্যেস। আগে বেশ একটা প্রেম-প্রেম ব্যাপার ছিল। এখন সেটা এতটাই অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে, যে খাওয়ার শুরুতে এই কাজটা আপনাআপনিই হয়ে যায়। রজত চাওমিন মুখে পুরে বলল, “তোর অনুমানটাই ঠিক। তুহিন সেদিন পুরো সন্ধ্যেটা ঋকের বাড়িতে ছিল না। অন্তত একবার তো বেরিয়েইছিল। ওর কল লিস্ট থেকে জানা যাচ্ছে, যে সন্ধ্যে পাঁচটা পঞ্চান্নয় ওর ফোনে একটা কল আসে। দিল্লির নাম্বার। সাম আনন্দ মিশ্র। মিনিট পাঁচেক কথা হয়। তারপর তুহিনের ফোন থেকে ওই নাম্বারে আবার একটা ফোন যায়। সেটা সাতটা পনেরোয়। সেই ফোনটা যখন করা হয়, তখন তুহিনের টাওয়ার লোকেশন হাওড়া স্টেশনের কাছাকাছি। এইবার কল ডিউরেশন দু’মিনিটেরও কম। এর ঠিক পরেই ও পৃথাকে মেসেজ করে। এরপর অনেকক্ষণ কোনো কল রেকর্ড নেই। তারপর আবার তুহিনের ফোনে কল ঢোকে রাত দশটায়। লোকেশন ঋকের বাড়ি। ফোন এসেছিল ফুড ডেলিভারি বয়ের কাছ থেকে।” ... ...
আম গাছটা খুঁজে পেতে যে অনেকটা সময় গেল এমন নয়। নজরুল অবাক হয়ে দেখে, এই যে ছ-সাত বছর বাদে সে ফিরে এসেছে দরিরামপুরে, কিছুই যেন বদলায়নি। এই আমগাছটা, এর সামনের পুকুরটাও তো ঠিক আগের মতোই আছে। এখানে বসে বসেই দূরে বিচুতিয়া বেপারীর বাড়িটা দেখা যায়, বাড়ির সামনের কাঁঠাল গাছটা একই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে আছে, কোথায় গেল মাঝখানের এতগুলো বছর! নজরুলের মনে হয়, সে যেন স্কুলের পর ওই বাড়িটাতেই কোনরকমে বইখাতাগুলো রেখে দৌড়ে এখানে এসে বসলো এইমাত্র। সূর্য অস্ত যাবার আর বেশি দেরি নেই, লালচে আকাশের রং পুকুরের জলে পড়ে নিস্তরঙ্গ জলটারও রংও বদলিয়ে দিল। এরই মাঝে এক দঙ্গল কিশোরীর কলধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পুকুর-পার। ওরই মধ্যে শ্যামলা একটি মেয়ে, বন্ধুদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বোধ হয় নজরুলের দিকে তাকিয়ে নিল একটা মুহূর্তের জন্যে। তার শিথিল বেণী থেকে কি খসে পড়ল একটা ছোট্ট মাথার কাঁটা? কবে যেন সেই ছোট্ট কাঁটাটাকে বুক-পকেটে ভরে নিয়ে যত্ন করে রেখে দিয়েছিল নজরুল তার ছোট টিনের বাক্সটায়। তারপর চুরুলিয়া-আসানসোল-শিয়ারশোল-কলকাতা-নৌশহরা-করাচি হয়ে আবার কলকাতায় যখন ফেরে নজরুল বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির বত্রিশ নম্বর কলেজ স্ট্রীটের ঠিকানায়, তখন ওর জিনিসপত্রের মধ্যে মুজফ্ফর আহ্মদের চোখে পড়ে যায় এতদিন-ধরে-যত্ন-করে-রেখে-দেওয়া ওই মাথার কাঁটা! ... ...
এই তো একবছর হয়নি, আমার অজাতশত্রু বোন, আমার অজাতশত্রু ভাই পূর্ণ মেজাজে ডালপালা মেলে ধরেছে। তাদের পাতা ঝরে পড়ছে। পাতাগুলো ঝাঁটিয়ে রাখা হচ্ছে তাদেরই ছায়ার নীচে মাটিতে। এছাড়া মাটিকে আচ্ছাদিত করে আছে কিছু প্যারা ঘাস, লজ্জাবতী, দুর্ব্বো। ভাইয়ের গায়ে লতিয়ে উঠছে অপরাজিতা। ঝরাপাতা বাদামী থেকে কালো হয়ে উঠেছে। ঘাস-পাতা-গুল্ম আচ্ছাদিত মাটি রসে টইটম্বুর। সেখানে প্রতিনিয়ত মাননীয় মিলিপেড, সেন্টিপেড, কেঁচো, শামুক, পিঁপড়ে ও অন্যান্য (আমার নাম না জানা) পোকাদের চলাফেরা। তারাই তো মাটির স্বাস্থ্য, মসৃণতা এইসব বজায় রাখবেন – যাতে মাটি গ্যালন গ্যালন জল ধরে রাখতে পারে তার পেটের ভেতরে। আর ফুল-পাতা-ঘাস যা ঝরে পড়বে সবাইকে জারিয়ে করে দেবে মাটির খাবার। মাটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। ... ...
বিলিতি সংস্কৃতির প্রভাবে বদলে যেতে থাকা বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের খাদ্য-রুচির দারুণ বিবরণ দিয়েছিলেন পরশুরাম তাঁর ছোটগল্প 'রাতারাতি'তে। সেখানে দেখি, হারিয়ে যাওয়া পুত্র বাঁটুলের খোঁজে কলকাতার আংলো-মোগলাই কাফেতে হাজির হন চরণ ঘোষ যেখানে বাঁটুলের সমবয়সী তরুণ-তরুণীদের তারিয়ে তারিয়ে মুরগির ফ্রেঞ্চ মালপোয়া খেতে দেখা যায়। আবার বাঁকুড়া ও বর্ধমানের মানুষের কলাইয়ের ডাল-প্রীতির সুখ্যাতি করে প্যারীমোহনের আর একটি গানে বলা হয়েছে, ওই ডালের বড়া খাওয়ার জন্যে বৈকুণ্ঠ থেকে নেমে এসে থালা হাতে ভগবানও লাইন দেবেন। ... ...
- ফুটবল মাঠের মত বড় জায়গায় খাবার সাজানো আছে কাউন্টার জুড়ে, আর তুমি খুঁজে খুঁজে নিয়ে এলে ভাত! এত সকালে কেউ ভাত খায়! কী আর বলি! বউয়ের তখনো মালয় থেকে শুরু করে ওদিকে ফিলিপিন্স – এদের খাদ্যসংস্কৃতি নিয়ে তেমন পরিচয় হয়নি। আমিও প্রথমদিকে অফিসে প্রচণ্ড অবাক হতাম – ওদিকে অফিস খুব সকালে শুরু হয়, যেমন আমাদের অফিস ৭.৩০ থেকে শুরু হত। স্থানীয় লোকেরা কম্পিউটার সুইচ অন করে ক্যান্টিনে চলল – আর সেখানে গিয়ে দেদার ‘নাসি লেমাক’ সাঁটাচ্ছে! এই যে সকাল থেকে শুরু হল ‘নাসি লেমাক’ খাওয়া – এটা কিন্তু সারাদিনই পাওয়া যায়, আপনি চাইলেই এবং এরা সারাদিনই সেই নাসি লেমাক বারে বারেই খেয়ে যেত! ... ...
- উড়িষ্যার ভিতরকণিকায় অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ড থেকে হাজার হাজার অলিভ রিডলে প্রজাতির কচ্ছপ আসে ডিম পাড়তে – সেটা জানিস তো? - হ্যাঁ। - কিছু কচ্ছপ জেলেদের জালে ধরা পড়ে যায়। আর চোরাশিকারিরা তো আছেই। তারা ঐ কচ্ছপ ধরে। এই এলাকার লোক কচ্ছপ খায়, মানে এমনি তো পায় না। কচ্ছপ ধরা, বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু পেলে ছাড়ে না। আর বড় অলিভ রিডলেকে বলে বালিগড়। একটা বালিগড় চোরাগোপ্তা পেয়ে গেলে এদিকের মানুষের ঘরে উৎসব লেগে যায়। গতকাল আমাদের যে দুর্গাবৌদি রান্না করে, সে খুব হেসে হেসে নাতিকে কোলে নিয়ে বলছিল, “তুমি কী খেয়েছ?” বাচ্ছাটা আধো আধো করে বলছে – বালিগল। ... ...
আমি পসরার মূল্য দিয়েছি, ওঁকে সাহায্য করার জন্য এতদূর এসেছি। তবে গত রাতে ওঁকে যতটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে যে, আমাকে যেরকমটা বিশ্বাস করানো হয়েছিল উনি ঠিক ততটা কিপটে, মনুষ্যদ্বেষী নন। স্বল্প কথায় উনি আমাকে অভ্যর্থনা করলেও, আমার সঙ্গে করমর্দন করার সময় যথেষ্ট আবেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ তাঁর পিছু নিলে তিনি যদি সে মানুষের প্রতি এতই বিরক্ত হতেন, তাহলে কি আর আমায় ওই ভাবে স্বাগত জানাতেন? ... ...
আমি নির্মলার জীবনী লিখতে বসিনি। তাঁর গায়কীর মূল্যায়নও আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বহু গানে নির্মলা যে সাধারণ থেকে দীক্ষিত শ্রোতাদের আনন্দ দিয়েছেন, এ লেখায় তার স্মরণ করিয়ে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। জনপ্রিয়তায় 'ও তোতাপাখিরে' বা 'এমন একটা ঝিনুক খুঁজে পেলাম না'র সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এরকম গান নির্মলা আর গাননি। কিন্তু শুধু জনপ্রিয় সৃষ্টিই তো শিল্পীর একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না। এখানে নির্মলার অল্পশ্রুত চারটে গানের উল্লেখ করব, যা ব্যক্তিগতভাবে আমার সবচেয়ে প্রিয়। চার দিকপাল সুরকারের চারটে গানের ধরণ আলাদা, তাদের বৈশিষ্ট্য আলাদা। ... ...
গায়ত্রী দীপালি এখন পশ্চিম বাংলার কোথাও আছে। ওর দু’ভাই ওকালতি আর পলিটিক্স নিয়ে বাংলাদেশেই থাকে। বুলু, টুলু, অঞ্জলিরাও নব্বই সালের দিকে চলে গেছে। খুব কম বেড়াতে আসে। বাংলাদেশে এ এক পরিচিত দৃশ্য। সবাই জানে, প্রতিটি হিন্দু পরিবারেরই একটি খুঁটি আছে ভারতে। রাতে গল্প করছে, চা খাচ্ছে যে বন্ধুদের সঙ্গে, তারা সকালে জানতে পারে বন্ধুটি পরিবারসহ চলে গেছে ইন্ডিয়া। ওদের বাড়িটি গোপনে বিক্রি করে গেছে কোনো মুসলমান পরিবারের কাছে। কিন্তু কবে থেকে এ দৃশ্যের আরম্ভায়ন? ... ...
ইন্ডিয়া নামক পর্দার আড়ালে যে একেবারে হদ্দ গরীব ভারতটা লুকিয়ে রয়েছে, তার অধিকাংশ সন্ধ্যেবেলা এমনভাবেই কাটে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। বছর ঘোরে। দোকানের বাঁধা খরিদ্দারের তালিকা দীর্ঘায়িত হয়। আবগারি দফতরের আদায় করা রাজস্বের খতিয়ান তার আগের বছরের হিসাবকে দশ গোল দেয়। দেশি মদ তৈরি করে যে সংস্থাগুলো, তারা গলদঘর্ম হয়ে গিয়ে প্রায় হাত জোড় করে বলে, ‘আর পারছি না।’ ট্যাঙ্কের পর ট্যাঙ্ক খালি হয়ে যায় নিমেষে। ... ...
কবিতার সঙ্গে আপোষহীন এই মানুষটিকে তাই পড়তেই হবে বর্তমান এবং উত্তর প্রজন্মকে। নিন্দিত এবং নন্দিত হওয়া যেকোনো সৃজনশীল মানুষের যাত্রাপথের পাথেয়, কেউ হয়তো ইচ্ছে করেও অধিক আলোচিত হওয়ার জন্য নিজেকে নিন্দিত এবং সমালোচিত হতে দেন, এসময়টা তখনই আসে যখন সৃজনশীলতার গতিপথে সামান্য ছায়া ঘনিয়ে ওঠে, একজন কবির কাছে এই সময়টা হলো সবচেয়ে কঠিন এবং অন্ধকারতম সময়। কোনো কোনো কবি তখন স্তব্ধ থাকেন, সরিয়ে রাখেন নিজেকে, কেউ বা অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠেন, সমস্ত বিষয়েই আক্রমনাত্মক বিচ্ছুরণ, কবিতা তখন শ্লেষ, বিদ্রুপ এবং কবির স্বভাবগত তীক্ষ্ণ মেধা ও শব্দের ওপর আসুরিক ও ঐশ্বরিক দখলে এক একটি যন্ত্রণাদায়ক উল্কির মতো বিঁধতে থাকে পাঠককে, এই চলমান সময়ে কবি প্রবুদ্ধসুন্দরের লেখাকে আমার তাই মনে হয়েছে। ... ...