প্রথমত, কবিতা ব্যাপারটাই, মানে সেই রবীন্দ্রনাথের কথায়, ফুলের গন্ধের মত। ব্যাপারটা কী ইউ ক্যানট ডিফাইন। মানে এই অস্পষ্টতাটাই কবিতার বৈশিষ্ট্য। আমি যেমন কবিতা একেবারে লিখতে পারি না। একসময় রবীন্দ্রনাথের কিছু গান বা কবিতা অনুবাদের চেষ্টা করেছি। আমার ভাই সৌমিত্রও করতো, আমারা একে অপরের সঙ্গে মেলাতাম; কিন্তু আমি দেখেছি যে আমার হাতে সেটা প্যারাফ্রেজিং হয়ে যাচ্ছে। মানে সেটা পড়ে মূল কবিতার অর্থটা বোঝা যাচ্ছে, কিন্তু দ্যাট ইজ নট দি পোয়েম। কাজেই কবিতার ক্ষেত্রে ওই যে এক্সট্রা মাত্রাটা, সেটা শুধু তার লজিক নয়, শুধু তার শব্দ নয়, অথবা সবকিছু মিলিয়ে, ধরো তার ধ্বনি, মানে এই সবকিছু মিলিয়ে যে বাড়তি ব্যাপার, আমার মনে হয় অনুবাদে সেটা সম্ভবই না। তাহলে কি বলবে কবিতা অনুবাদের কোনো মানে নেই? এক অর্থে হয়তো নেই! রবীন্দ্রনাথ নিজেই তার প্রমাণ। কোনো কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় ইংরেজি গীতাঞ্জলি বেশ ভালো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই! কিন্তু যারা গীতাঞ্জলিকে বাংলা-গীতাঞ্জলি হিসেবে পড়েছে তারা সেই রসটা খুঁজে পাবে না। অর্থাৎ যে লোক বাংলা জানে না তার কাছে কিন্তু ওটার মূল্য আছে এবং সেখানেই আমি বলবো কবিতা অনুবাদের সার্থকতা; যেটা বুদ্ধদেব বসুও পয়েন্ট আউট করেছিলেন। ... ...
পুষে রাখা সারমেয়র যত্ন কিভাবে করা যায়, তা নিয়ে প্রায়ই পড়ি খবরের কাগজে। কালীপুজোর রাতে বাজির প্রবল আওয়াজে বাড়ির কুকুরটি যেন ভয় না পায়, জানালার সামনে মাইক বাজিয়ে ডিজে সঙ্গীত হলে প্রিয় সারমেয়টি যেন আতঙ্কিত না হয়, তা নিয়ে বহু টোটকা দেন পশু বিশেজ্ঞরা। হৃদযন্ত্রের সমস্যার ভোগা আপনার মানুষ-প্রিয়জনকে এই অত্যাচারের হাত থেকে থেকে কিভাবে নিরাপদ রাখা যায়, তার তুলনায় অনেক বেশি নিউজপ্রিন্ট খরচ হয় পোষ্যের যত্নের সন্ধানে। কিন্তু ঘরে পুষে রাখা অবাধ্য পশুকে কিভাবে লাগাম দিতে হয়, তা নিয়ে চোখে পড়ে না কিছু। অন্যের শরীরে দাঁত বসিয়ে দিলেও দিনের শেষে সেই সারমেয় ‘অবলা’ই থেকে যায়। ... ...
পদবী-বর্জিত সুবিমলমিশ্র কোনোদিন একটি বর্ণও কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকায় লেখেননি। আমি তাঁকে পড়েছি লিটল ম্যাগাজিনে। সুবিমল কোনোদিন সাহিত্যের প্রতিষ্ঠান, একাডেমির কাছ দিয়ে হাঁটেননি, আমি তাঁকে পড়েছি মানিক তারাশঙ্কর পড়তে পড়তে নিজ প্রয়োজনে। তাঁর লেখার ভিতরে যে ঝাঁজ দেখেছি সেই চল্লিশ বছর আগে, তা আমাকে শিখিয়েছিল অনেক। আমি নিজে সুবিমলের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই সহমত নই, তাঁর পথ আর আমার পথ আলাদা কিন্তু দূরে থেকেও আমি তাঁর লেখার অনুরাগী। ... ...
এ এক অদ্ভুত বই। পাতার পর পাতা উলটেও আমি ঠিক করতে পারিনি এ কোন বৃক্ষের ফুল, কোন জনরেঁ এর উৎস। প্রবন্ধ, ইতিহাস, রসনা-রেসিপি, ইদানীং ফুড-ব্লগ নামে যা জগত-বিখ্যাত, শিল্প ও শিল্পীর ওপর কিছু কথা, নাকি কেবলই মনোহরণ দাস্তান বা আখ্যানগুচ্ছ। সব কাননের ফুলের সুবাস পাওয়া যাবে এতে আলাদা করে, আবার প্রত্যেকটি মিলেমিশে একটি নিবিড় কথকতা! বাংলা সাহিত্যে এরকম আর কিছু আছে কি? ... ...
ধুন্দুলের লতা বা আকন্দের চারা যদিবা দেখেছি, তাও মনে হয় যেন বিগত জন্মের স্মৃতি, কাউরি গ্রাম-ফেরতা কোন গুনিনের সঙ্গেই কোনদিন কোন লেনাদেনা গড়ে ওঠেনি। না ভয়ের, না ভালবাসার। অবশ্য সে দেখলে শ্যাখের বিবি হালিমার ঘরকন্নাই বা কোন সুতোয় চেনা! তবু একুশ বছরের দিদির বিয়ের দায় মাথায় চাপানো চৌদ্দর ছোটভাই এর শিশু শ্রমের গল্পটা চেনা চেনা লাগে যে! আর তারই মাঝে লেখক কেমন বুনে দেন শবেবরাতের মোমের আলো আর দোলের চাঁদের পৃথগন্ন হওয়ার কিসসা। ... ...
ভারতের নাগরিকেরা কি তবে আর ভারতীয় গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসব, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইছেন না? অন্তত নির্বাচন কমিশনের তথ্য তো তাই বলছে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং তারপরে যে কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ভোটদানের হার ক্রমশ কমছে। গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের আগে, নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মৌ চুক্তি অবধি করেছিল, যাতে সেই সব সংস্থাতে কর্মরত মানুষেরা ভোট দিতে অনীহা প্রকাশ না করেন। যে সমস্ত কর্মীরা নির্বাচনে অংশ নেবেন না, তাঁদের নামের একটি তালিকা অবধি প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। বিরোধীদের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, এই বন্দোবস্ত তো ‘বাধ্যতামূলক’ ভোটদানের প্রক্রিয়া, কোনও গণতন্ত্রে একজন মানুষ, নানান কারণে ভোট নাও দিতে চাইতে পারেন, তা’বলে কি একজন মানুষকে ভোটদানে অংশ নিতে বাধ্য করা যায়? ... ...
আরতুরোস বললে, ‘দেখতে থাক। পাঁচ মিনিটের বেশি যদি লাগে, হোটেলে ফিরে গিয়ে আমার পয়সায় বিয়ার খাওয়াব। কৌতূহল বেড়ে গেল। বিয়ারের জন্য নয়। সপরিবারে পরায়া গাড়িতে কারো লিফট পাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছিল। তিরিশ বছর আগে জার্মানিতে হাত দেখিয়ে লিফট জোগাড় করার ভীষণ চল ছিল। নিজে করেছি। তবে সেটা অটোবানে। শহরে নয় -সেখানে সরকারি পরিবহন ব্যবস্থা আছে, আমেরিকার মতন নয়। কথ্য জার্মানে বলা হয়, বুড়ো আঙ্গুল (প্যার দাউমেন) দেখিয়ে সফর করা। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার কারণে হয়তো জার্মানিতে এই যানযাত্রার পদ্ধতি প্রায় বিলীন এখন। ... ...
আগুন জ্বললো পরের দিন, সম্পূর্ণ নতুন আবহে। এমনটা কাজি দেখেনি আগে; দোলের আগের দিন, সন্ধ্যে পেরিয়ে তখন রাত অনেকটাই। পরের দিন পূর্ণিমা, আজই আকাশ ভেসে যাচ্ছে আলোর বন্যায়। নানারকমের কাঠকুটো যোগাড় করে গ্রামের ছেলেরা এসে জমিদারবাবুর প্রাঙ্গনে আগুন জ্বালাল। ছেলের দল বলল নেড়াপোড়া, কিরণশঙ্কর বললেন চাঁচর। তারপর বললেন, ওদের নেড়াপোড়া কথাটাও কিন্তু বেশ যুক্তিযুক্ত। ধানকাটা হয়ে গেছে, পিঠেপায়েসের উৎসবও শেষ। এখন নতুন করে জমিতে কাজ শুরু হবে, তার আগে ক্ষেতে পড়ে-থাকা শস্যস্তম্ব, মানে, শস্য কেটে নেবার পর ক্ষেতে পড়ে থাকে যেটুকু, যাকে গ্রাম্য ভাষায় নেড়া বলে, তা পোড়ানো হবে। ... ...
সমস্যা শুধু এবছরের বা মধ্যপ্রদেশের নয়। এই পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রায় আমি ৭টি রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছি। একেক জায়গার সমস্যা একেক রকম। কিন্তু একটি যন্ত্রণা দেশের প্রত্যেক কৃষককে এক করে দেয়: বাজারে ফসলের সঠিক দাম পাওয়া যায় না। পেঁয়াজ এবং রসুনের মত শাকসবজি বা ফলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নেই, তবে যে সব ফসলের সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা হয়েছে তাও পাওয়া যায় না। মুগ, ছোলা, অড়হরের মত ডালের জন্য কাগজে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা হয় কিন্তু বিক্রি হয় না। ফলে বাজারে ঘোষিত ন্যূনতম মূল্য থেকে এক হাজার বা দুই হাজার টাকা ক্ষতি হয় কৃষকের। ধান ও গমের সরকারি ক্রয় সত্ত্বেও অধিকাংশ জায়গায় কৃষক লোকসানের মুখে পড়ে ব্যবসায়ীর কাছে ফসল বিক্রি করেন। ... ...
না, যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, এটা দার্জিলিং বা মসালা চা নয়। এই "এক কাপ চা" লেখাটা ক্যালিফোর্নিয়ার, স্যান ডিয়েগোর একটি হাই স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম (স্পেশাল এডুকেশন) নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের যৌন শিক্ষার ক্লাসের বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে। এখানে হাইস্কুলে ঢুকেই যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্য ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে শিক্ষাদান অনেকটাই সহজ, কিন্তু এদের? যারা অটিস্টিক, বা ADHD (মনোযোগ ঘাটতি) কিম্বা ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত, অথবা প্রায় অন্ধ ও বধির তাদের কী করে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যাবে? অথচ দিতেই হবে, কারণ যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা এদেরই সব থেকে বেশি, কয়েকজন তো শিশুকালেই তাদের সৎ বাবা অথবা মায়ের পুরুষ বন্ধুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারাতেই বসেছে। ... ...
আজ আকাশের গায়ে অন্ধকার একটুও বসতে পারছে না। সুপারি বাগানের মাথায় বসে থাকা চাঁদটা এরইমধ্যে আরোও বড় হয়ে উঠেছে। সেই চাঁদের আলো সন্ধ্যা আকাশের গা থেকে ঠিকড়ে পড়ছে আমাদের উঠোনে। উঠোনে এবার পাঁচ প্রদীপ জ্বলে উঠল। কলার মাইজে একমুঠো ধান, একগোছা দূর্বা আর ক’খানা কড়ি রাখল ঠাকুমা। আর কলার খোলে পড়ল তালের ক্ষীর, তালের ফুলুরি, তিলের ক্ষিরশা আর পাতাপোড়া পিঠা। ... ...
—বাবা, কীসব ব্যাপার! আচ্ছা মা, তুমি বলেছিলে আমাদের বাড়ির পুজো দুশ বছরের পুরোনো। দশমীতে লোকজন ডেকে খাসির মাংস খাওয়ানোও কী দুশ বছর ধরে চলছে? — সেটা আমি নিশ্চিত নই। অবশ্য আগে তো শাক্ত মতে পুজো হত, বলিও হত, তখন রেওয়াজ ছিল কিনা শুনিনি কখনও। তারিণীপ্রসাদ পুজো বৈষ্ণব মতে চালু করলেন। তখন থেকে দেবীর নিরামিষ ভোগ। মাংস উনি খেতেন না। আর তোর বাবা বলে যে বাড়িতে মাংস ঢোকাও তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন। — তাহলে এই খাওয়াটা কবে থেকে শুরু হল? — তোর ঠাকুরদা অমরেন্দ্রনাথের আমলে। — হঠাৎ এমন কেন হল? — খুব সম্ভবত এর ওপরে আছে ইংরেজ আমলে মেদিনীপুরের সশস্ত্র বিপ্লবের প্রভাব। — সেকী? ব্যাপারটা একটু খোলসা কর তো। ... ...
আশেপাশের সব জায়গার থেকে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু। মাগালা কেপের থেকে উত্তর দিকে, দুটো পর্বতমালার মধ্যে দিয়ে হ্রদের জল বয়ে যাচ্ছে। এই পর্বতশ্রেণি দুটো আমাদের অবস্থানের প্রায় ত্রিশ মাইল উত্তরের একটি বিন্দুতে এসে মিলেছে। মাগালার রুন্ডিরা খুবই সভ্য ভব্য। অবশ্য নিষ্পলক হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেও এদের জুড়ি নেই। তাঁবুর দরজার কাছে ভিড় করে এরা আমাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়েছিল, যেন আমরা অতীব কৌতূহলের বস্তু, আর ঝপ করে উবেও যেতে পারি। ... ...
না, যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, এটা দার্জিলিং বা মসালা চা নয়। এই "এক কাপ চা" লেখাটা ক্যালিফোর্নিয়ার, স্যান ডিয়েগোর একটি হাই স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম (স্পেশাল এডুকেশন) নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের যৌন শিক্ষার ক্লাসের বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে। এখানে হাইস্কুলে ঢুকেই যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্য ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে শিক্ষাদান অনেকটাই সহজ, কিন্তু এদের? যারা অটিস্টিক, বা ADHD (মনোযোগ ঘাটতি) কিম্বা ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত, অথবা প্রায় অন্ধ ও বধির তাদের কী করে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যাবে? অথচ দিতেই হবে, কারণ যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা এদেরই সব থেকে বেশি, কয়েকজন তো শিশুকালেই তাদের সৎ বাবা অথবা মায়ের পুরুষ বন্ধুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারাতেই বসেছে। ... ...
না, যা ভাবছেন ঠিক তা নয়, এটা দার্জিলিং বা মসালা চা নয়। এই "এক কাপ চা" লেখাটা ক্যালিফোর্নিয়ার, স্যান ডিয়েগোর একটি হাই স্কুলে বিশেষ ভাবে সক্ষম (স্পেশাল এডুকেশন) নবম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের যৌন শিক্ষার ক্লাসের বোর্ডে জ্বলজ্বল করছে। এখানে হাইস্কুলে ঢুকেই যৌন শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্য ছাত্রছাত্রীদের এ বিষয়ে শিক্ষাদান অনেকটাই সহজ, কিন্তু এদের? যারা অটিস্টিক, বা ADHD (মনোযোগ ঘাটতি) কিম্বা ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত, অথবা প্রায় অন্ধ ও বধির তাদের কী করে এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া যাবে? অথচ দিতেই হবে, কারণ যৌন নিগ্রহের আশঙ্কা এদেরই সব থেকে বেশি, কয়েকজন তো শিশুকালেই তাদের সৎ বাবা অথবা মায়ের পুরুষ বন্ধুর দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিক ভারসাম্য প্রায় হারাতেই বসেছে। ... ...
উৎসব সার্বিক এতে আমার কোনও দ্বিমত নেই, বরং আনন্দ হয়, খুশিই লাগে এটা ভেবে যে প্রান্তিক পরম্পরা সার্বিক হচ্ছে। কিন্তু উৎসব আর রীতি-রিওয়াজ প্রতিপালন এক নয়। মকরপরব বা টুসু পরবের যে রিচুয়াল (নেগাচার) সারা বাংলায় প্রতিপালিত হয় তার সিংহ ভাগই কুড়মি উপজাতির রীতির পরিশীলিত রূপ। কিন্তু কি আশ্চর্য দেখ সবগুলোই আসলে নবান্নকে কেন্দ্র করেই। আদতে কৃষিজীবী মানুষদের। আর সৌব পরবগিলার লে প্রাচীন হল এই মকর পরব। অর্থাৎ একটা সহজ সমীকরণ টানা যায় সব পরবগুলোই মকর থেকে ইনফ্লুয়েন্সড। কারণ মকরের পরের দিন নতুন বছর আর বাকিদের কারুর পালন হয় না। শুধুমাত্র কুড়মিদের বাদে। বাংলায় যারা মকর সংক্রান্তি পালন করে তাদের, সবার নয়। ... ...
আলোচনাটা ছিল এম সি কিউ বা আজকাল মুখের ভাষায় যাকে বলে মাল্টিপল চয়েস – পরীক্ষা বা শিক্ষামূলক সমীক্ষা করার সেই পদ্ধতিটা নিয়ে। গুগল বলছে, এই মাল্টিপল চয়েসের উদ্ভাবক হলেন মার্কিন মনস্তত্ত্ববিদ এবং শিক্ষাবিদ বেঞ্জাবিন ডি হুড। মূলত একযোগে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা নেওয়ার এবং ফলাফলের মধ্যে সামঞ্জস্য আনার লক্ষ্যেই এই পদ্ধতির প্রয়োগ শুরু হয়। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে স্ক্যানার এবং ডেটা-প্রসেসিং মেসিন এসে যাবার সুবাদে এই পদ্ধতি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষত আমেরিকা এবং ভারতের মত জায়গায় – যেখানে যেকোনো সরকারী পরীক্ষাতেই বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে, সেখানে দ্রুত সুসমঞ্জস মূল্যায়নের জন্য এই পদ্ধতি খুবই কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়। তারই ফলস্বরূপ আজ মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক হোক বা সরকারী চাকরির পরীক্ষা, ন্যাস হোক বা স্যাস, টেলিভিশনে রিয়ালিটি শো হোক বা পাড়ার ক্যুইজ কনটেস্ট – সর্বঘটের কাঁঠালি কলা হয়ে জাঁকিয়ে বসেছে এই এম সি কিউ বা মাল্টিপল চয়েস। ... ...
আমি কয়েক বছর আগের একটি সেলফি হামলার কথা ভুলতে পারি না। তখন দুই সন্তানকে নিয়ে দিল্লির বিশ্ব বইমেলায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ ছোট সন্তান চোখের আড়ালে চলে যায়, তখন সবে সাত বা আট বছর তার বয়স। চলন্ত ভিড়ের মাঝখানে তাকে খোঁজার সময় আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করেছিল। সেই মুহূর্তে আমার কাঁধে একটি হাত অনুভব করলাম, “যোগেন্দ্রজি, এক সেলফি হো যায়ে (একটি সেলফি হয়ে যাক?)”, আমি শুনলাম এবং সেটা উপেক্ষা করে চারপাশে তাকাতে থাকলাম। তখন সেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেলফি শিকারি আমাকে একপাশে টেনে নিয়ে গেল। আমি তাকে আমার পরিস্থিতি বোঝালাম এবং ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। “অবশ্যই,” তিনি বললেন, “পর এক সেলফি তো বনতি হ্যায়”। আমি ঘুরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এই অবস্থায় কেউ তার সঙ্গে এমন করলে তার কেমন লাগবে? তিনি সহানুভূতিতে মাথা নাড়লেন এবং তবুও সেলফি তুলতে গেলেন! ... ...
আসলে মা দুর্গা তো বাড়ির মেয়ে। মেয়ে যখন বাপের বাড়ি আসে, তখন কিছু না কিছু উপহার আনে। সেই সূত্র ধরে বাড়ির দুর্গার তরফ থেকে গ্রামের প্রাচীন শীতলা মন্দিরে মায়ের জন্য শাড়ি পাঠানো হয়, মানে শাড়ি পাঠিয়ে শীতলা মাকে বাড়ির উৎসবে আসার জন্য নেমন্তন্ন করা হয়। মায়ের সঙ্গে মন্দিরে ছোট গণেশ আছেন। তাঁর জন্য বাড়ি থেকে একটা ছোট কমলা পাড়ের ধুতি যায়। আবহমানকাল থেকে এই নিয়ম মানা হচ্ছে। এখন শাড়িটা ভুল করে পাঠানো হয়নি। বিসর্জন হয়ে গেলে প্রতিমা থেকে মা মুক্ত হয়ে যাবেন। তখন তো আর বাড়ির মেয়ে থাকবেন না। নেমন্তন্নও করা হবেনা। প্রথায় ছেদ পড়বে, তাই হুড়োহুড়ি। ... ...