১৯৬৫ সালেই লুডভিগ বলে চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে মিলান কুন্দেরা তাঁর ‘দ্য জোক’ উপন্যাসটি লিখে ফেলেছিলেন। তবে রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের আওতায় তা তখন প্রকাশিত হয় নি। ১৯৬৭ সালে সেটি প্রকাশিত হল। অনতি পরেই অবশ্য সেটি আবার নিষিদ্ধ হয়ে যায় চেকস্লোভাকিয়ায়। পরবর্তীকালে মিলান কুন্দেরাকে দেশও ছাড়তে হয়। আশ্রয় নিতে হয় প্যারিসে। আমৃত্যু সেটাই ছিল তাঁর শহর। একসময় তিনি চেক ভাষায় লেখালিখিও ছেড়ে দেন। লেখার ভাষা হিসেবে বেছে নেন ফরাসী। চেক কমিউনিজম ও কুন্দেরার সম্পর্ক নানা পর্বে ওঠানামা করেছে। যে কুন্দেরা কমিউনিস্টরা চেকস্লোভাকিয়ায় ক্ষমতায় আসার আগেই নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ, কমিউনিস্টদের চেকস্লোভাকিয়ার ক্ষমতা দখলের লড়াইতে ছিলেন প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী, তিনি অচিরেই এর বিরোধী হয়ে উঠলেন। এতটাই কড়া সমালোচনা শুরু করলেন কমিউনিস্ট পার্টির যে ১৯৫০ সালেই তাঁকে পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হতে হল ? ১৯৫৬ সালে আবার তাঁকে পার্টিতে ফেরানো হল। ১৯৬৭ – ৬৮ র পালাবদলের সময়ে তিনি হয়ে উঠলেন পার্টির এক প্রধান বুদ্ধিজীবী লেখক। তৎকালীন সংস্কার কর্মসূচীর পক্ষে চলল তাঁর সওয়াল ও লেখালিখি। কিন্তু সংস্কারকে যখন আবার আটকানো হল, কুন্দেরা আবার চলে গেলেন কালো তালিকায়। তাঁকে আবার কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হতে হল। নিষিদ্ধ হল তাঁর উপন্যাসও। কুন্দেরার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য জোক’ এর বিলম্বিত প্রকাশ, সাময়িক সাফল্য ও পুনরায় রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের আওতায় পড়ার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে চেকস্লোভাকিয়ার রাজনীতির নানা পালাবদল। বিশেষ করে ১৯৬৮ র প্রাগ বসন্ত। প্রাগ বসন্তের সেই ইতিহাস বাদ দিয়ে কুন্দেরা, তাঁর লেখালিখি পড়াই সম্ভব নয়। বোঝা সম্ভব নয় কুন্দেরার রাজনৈতিক দর্শনকেও। ... ...
জাগ্রেবের দুই শিল্পী, অলিঙ্কা ও দ্রাঝান একদিন অনুভব করলেন তাঁদের কণ্ঠে জড়ানো গভীর ভালবাসার মন্দার মালিকা ম্লান হয়ে এসেছে – এবার কি খেলা ভাঙার খেলা? ভালবাসার স্বর্গ হতে বিদায় নেওয়ার কাল আসন্ন হলে দ্রাঝান বলেন, “আচ্ছা, আমাদের এই চারটে বছরের প্রেমের, এক অন্তহীন খুশির দিনগুলির স্মৃতি কি হারিয়ে যাবে? তুমি আমি একসঙ্গে হয়তো কিছু কিনেছি, ছবি এঁকেছি তোমার। ভোলার পালা শুরু হলে এই ছবি, ওই পেয়ালা তারা কি চলে যাবে জঞ্জালের স্তূপে?” ... ...
শিয়ারশোলের ইশকুলে যখন ভর্তি হলুম, কাজি বলতে থাকে, তখন আমার কবিতা নজরে পড়ল হেড স্যর নগেন্দ্রবাবুর। তিনি মাঝে-মাঝেই আমার কবিতার খাতা দেখতে চাইতেন; দেখে, ছন্দ-টন্দ নিয়ে খানিকটা আলোচনাও করতেন। মাঝে মাঝে এক-আধটা শব্দ এক-আধটা লাইন বদলিয়ে দেবার উপদেশও দিতেন স্যর। তিনিই স্কুলের আর একজন মাষ্টারমশাই, সতীশবাবু স্যর, সতীশ কাঞ্জিলাল – শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা করতেন তিনি নিয়মিত – তাঁর কাছে আমার কথা বলেছিলেন। কাঞ্জিলাল স্যর আমাকে তাঁর বাড়ীতে নিয়ে গেছেন অনেকবার। তাঁর কাছে সঙ্গীতের গোড়ার কথা কিছু কিছু শিখেছি। ... ...
ব্যথা যে অন্য রোগের উপসর্গ মাত্র নয়, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাকে রোগ হিসেবে গণ্য করা দরকার এই উপলব্ধি আসে এই চিকিৎসকের মননে। তারপর নিজেকে শিক্ষিত করা, স্বীকৃতি অর্জন করা, সরকারি ব্যবস্থার লাল ফিতে ছিঁড়ে ব্যথা চিকিৎসার এক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা ইএসআই হাসপাতালে, ভারতের প্রথম ব্যথা চিকিৎসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-ই এস আই ইনস্টিটিউট অফ পেইন ম্যানেজমেন্ট। ব্যথা চিকিৎসার এই পুরোধা পুরুষ চলে গেলেন ২০২৩-এর ৫ই জুলাই। ... ...
কর্মস্থল বাঁকুড়ায়, ভোট হুগলীতে। আমি প্রথমে ঠিক করেছিলাম ভোট দিতে যাবো না। বাঁকুড়া থেকে সিঙ্গুরে গিয়ে ভোট দিয়ে সেই দিনেই ফেরা পোষাবে না। পরে মতবদল হল। সিদ্ধান্ত নিলাম যাব। কারণ কয়েকটা বিশেষ কারনে আমাকে একবার বাড়ি ফিরতেই হবে। তাই ভোটের দিনেই ফিরি, রথ দেখা কলা বেচা একসাথে হবে... সেদিন সকাল সাড়ে ছটায় বের হলাম। এখান থেকে দুর্গাপুর স্টেশন ৩০ কিমি প্রায়। রাস্তায় পুরো শান্ত পরিবেশই পেলাম। দিকে দিকে নানা দলের দলীয় পতাকা উড়ছে। ট্রেনে চলেছি, সেদিন ট্রেনটাও অনেকটা ফাঁকা, তাই জানালার ধারে বসে, মাঠ ঘাট দেখতে দেখতে... কোথাও ভোট হচ্ছে, ভোটের লাইন দেখা যাচ্ছে ... দূর থেকে অন্তত কোনো গন্ডগোল চোখে পড়ল না। ... ...
থ্রি নট থ্রি রাইফেল বাগিয়ে ধরে আড়ষ্ট কনস্টেবল বললেন- 'স্যার, আমাকে একটু গার্ড দিয়ে রাখুন। গুলি চালানোর অর্ডার নেই, শুনেছি এইসব অঞ্চলে বন্দুক ছিনতাই হয়। বন্দুক গেলে চাকরিতে টান পড়বে' ২০২৩ এর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা দিতে আসা রাজ্যপুলিশের নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় অস্থির, ভোটার বা ভোটকর্মী কোন ছাড়? অঞ্চলটি আমডাঙা। পুলিশের মুখে এ-কথা শুনে ভোটকর্মীরা হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠে পারছেন না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশা তাঁদের। ... ...
- ওহ, রুশ ভাষায় মাকে বুঝি নেনকো বলে? আর কী কী শিখেছিলে? - বাড়িতে বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে অনেক গুলো ডিকশনারি ছিল। সেখান থেকে এ টি দেবের ইংরেজি থেকে বাংলা ডিকশনারির শেষে দেখলাম গ্রিক আর রুশ বর্ণমালা রয়েছে। ব্যাস আর আমায় পায় কে? দিনরাত নতুন বর্ণমালা মকশো চলল রাফ খাতায়। প্রগতি প্রকাশনের রুশ গল্পের বাংলা অনুবাদ যত আছে, সব নিয়ে খাটে ছড়িয়ে বসলাম। মলাটের পরের পাতায় বাংলার নিচে ছোট ছোট করে রুশ ভাষাতেও লেখা থাকত। উভচর মানুষ বইটার লেখক আলেকজান্ডার বেলায়েভ। রুশ বর্ণমালা মিলিয়ে দেখলাম, লেখা আছে, এ বেলায়েভ। বাংলায় মস্কোর নিচে যা লেখা আছে, তা বাংলা মতে উচ্চারণ করলে দাঁড়ায় মস্কভা - মানে মস্কো। হায় কপাল! ইস্কুলের ভূগোল বইতে লেখা আছে, মস্কো শহর মস্কোভা নদীর ধারে। ভুল, এ যা দেখছি, তাতে মস্কো শহর মস্কো নদীর ধারে। দৌড়লাম, মাকে এই নতুন আবিষ্কার জানানোর জন্য। মা শুনে বেশ অবাক হল, বলল - - ‘বাবা! পড়ে ফেললি তুই। তুই যেমন রুশ ভাষা শেখার চেষ্টা চালাচ্ছিস, আমার মাও এভাবে ইংরেজি শেখার চেষ্টা করত।’ ... ...
নিজের চার্টখানা বার করলাম - আমি নিজেই সেটা তৈরি করেছিলাম - তার উপর আমার অটুট ভরসা। উন্যানয়েম্বে যাওয়ার এমন একটা পথ খুঁজে বার করলাম যে পথে একটাও কাপড় নজরানা দিতে হবে না - আর জঙ্গল ছাড়া আর কিছু খারাপ জিনিসও পথে পড়বে না। সেই পথ ধরে চললে ভিনজাদের আর লুঠেরা হহাদের পুরো এড়ানো যায়। আর এই শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ পথটি দক্ষিণে চলেছে জলের ধার দিয়ে দিয়ে, উকারাঙ্গা ও উকাওয়েন্দির উপকূল ধরে কেপ টংওয়ে পর্যন্ত। কেপ টংওয়েতে যেখানে পৌঁছব, সেটা উকাওয়েন্দির ইউসাওয়া জেলার ইটাগা, সুলতান ইমরেরা গ্রামের বিপরীতে ; এর পরে আমরা আমাদের পুরানো রাস্তায় পড়ব। যে রাস্তা ধরে আমি উজিজি যাওয়ার জন্য উন্যানয়েম্বে থেকে পাড়ি দিয়েছিলাম। ডাক্তারকে এই রাস্তার কথা বললাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই এর সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যাপারটা বুঝলেন; আর যদি আমরা ইমরেরায় পৌঁছাই, আমার যেমন মনে হয়েছিল, তাহলে তো প্রমাণই হয়ে যাবে যে আমার চার্ট ঠিক না ভুল। ... ...
কাফকা কেন এখনও প্রাসঙ্গিক, এবং পূর্বইউরোপেও ভীষণভাবে সমসাময়িক, তা নিয়ে কুন্দেরা একদা একটি লম্বা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সে পূর্ব ইউরোপ অবশ্য আর নেই। কুন্দেরাও আর নেই। তাই এবার আমাদের লেখার সময়। ওইসব পুরোনো পুরোনো লেখা, যার বহুলাংশই সোভিয়েত-যুগ নিয়ে লেখা, সেসব কি আদৌ প্রাসঙ্গিক আর? মার্কেজ, কুন্দেরা আর একো, এই তিনজন আমাদের যৌবনের বিদেশী হিরো ছিলেন, হলিউডি ক্লিন্ট ইস্টউড যেন, কিন্তু সেটা তো কুন্দেরা পড়ার কোনো কারণ হতে পারেনা। সেই সোভিয়েত নেই, সেই বার্লিন পাঁচিল নেই, সেই লৌহ-যবনিকা আর নেই, এমনকি প্রাহার সেই বসন্তও আর নেই। তাই, কেন কুন্দেরা? ... ...
গোড়াতেই নিজেদেরকে প্রশ্ন করা যায় – এরকম হিংস্রতা, রক্তপাত, অবান্তর মৃত্যু, সরকারি সম্পত্তির ধ্বংস আমাদের কাছে খুব অজানা বা অপ্রত্যাশিত ছিল কী? ওপরে যে ছবিটি আছে সেরকম ছবি তো আমরা যখন তখন দেখে থাকি। আমাদের স্নায়ু বা চিন্তার ওপরে আদৌ কোন ছাপ ফেলে কি? আমরা তো সইয়ে নিয়েছি। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, মনন, অনুভূতি বা, একটু বাড়িয়ে বললে, আমাদের সুকুমার প্রবৃত্তি এগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। Numbing of our collective consciousness – আমাদের সামগ্রিক চেতনার বিবশতা। কিন্তু এগুলো তো একদিনে হয়নি। ধাপে ধাপে, প্রতি মুহূর্তে সমস্ত রকমের মিডিয়ার অপার মহিমায়, ছাপার অক্ষরে এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় (যদি কখনো কিছু হয়ে থাকে) আমরা একটি অসংবেদনশীল পিণ্ডে পরিণত হচ্ছি? যদি সমাজতত্ত্ব এবং আমাদের পারিবারিক জীবনের প্রেক্ষিতে দেখি তাহলে সবচেয়ে ক্ষতিকারক যে ফলাফল জন্ম নিচ্ছে তার চরিত্র হল শিশু থেকে কিশোর এবং সদ্য যৌবনে পা-রাখা (বাংলা শুধু নয়, সমগ্র ভারত জুড়েই) প্রজন্ম একে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিচ্ছে। এমনকি হিংস্রতার মাঝে আমোদও পাচ্ছে। ... ...
ডে স্কুলে একবার আমাদের স্কুলে একজন অঙ্কের টিচার এলেন। সারনেম মান্ডি। অর্থাৎ শিডিউলড ট্রাইব। তিনি যে কিছুই জানেন না—সেটা প্রমাণ করার জন্যে আমাদের চেষ্টার খামতি ছিল না। সেই বয়সে মব মেন্টালিটিতে তাঁর প্রতি কী মনোভাব ছিল আমার—সেটা ভাবলে এখনো লজ্জাই পাই।এমন নয় যে আমাদের স্কুলে বাকি অঙ্কের মাস্টাররা সকলে রামানুজনের মত ব্রিলিয়ান্ট ছিলেন, কিন্তু ঐ যে জাত—ঐতেই আমরা বুঝে গেছিলাম, যে উনি কিচ্ছু জানেন না। জাতের দোহাই দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। এ নিয়ে কথাও হত আমাদের মধ্যে। একটু উঁচু ক্লাসে উঠলে অনেক বলত এসব কথা। ... ...
মূল শিল্পীর অনুষ্ঠানে জাঁকজমক এবং শব্দের মাত্রা আরো কয়েককাঠি ওপরে। কেউ যে নিজের গাওয়া অত্যন্ত বিখ্যাত কিছু গানের পিণ্ডি এইভাবে চটকাতে পারেন—তা না শুনলে বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়। শিল্পীর যত না গানে মনোযোগ, তার কয়েকগুণ বেশি মনোযোগ কেশসজ্জায় কিংবা লাফালাফিতে। তবে যে পুজোর যা মন্ত্র—যেরকম মাল দু-তিন কোটি টাকায় বিক্রি হবে, গায়ক তো তেমন জিনিসই উপহার দেবেন। সুরমণ্ডল সহযোগে সঠিক সুরে গাওয়া গানের দাম যদি দু্-তিন কোটির সামান্য ভগ্নাংশ মাত্র হয় (এবং তাও যদি সঠিক সময়ে না পাওয়া যায়), তবে কর্কশ চেঁচামেচির রাস্তা বেছে নেওয়াই ভালো। ... ...
বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ফুরিয়ে গেছে অগ্রহায়ণের নগরকীর্তনও। তবে বাড়ি ফেরার কড়ে গোনা দিন এখনো শেষ হয়নি আমার। ক-দিন আগেই পিয়ন চাচা লাল ঝুলি থেকে দিয়ে গেছে চিঠি। পোস্টকার্ডে লেখা চিঠি। গোটা শব্দের সে চিঠিতে যতটুকু বাড়ি আর নিজের কথা লেখা তারচেয়ে অনেক বেশি লেখা আমার কথা। কেমন হল আমার পরীক্ষা, কতটুকু বড় হলাম আমি, এখনো পাতের খাবার না ফুরাবার অজুহাত খুঁজি কিনা, বাড়ির কথা মনে করে মনমরা হয়ে থাকি কিনা—কতশত প্রশ্ন! সেই পোস্টকার্ড আমি বারবার পড়ি, অনেকবার পড়ি। বিছানার তোষকের তলা থেকে সুযোগ পেলেই বের করে সামনে ধরি সেই পোস্টকার্ড, মা… ও মা…. ঠাকুমা আর কী লিখেছে? বাইরবাড়ির অর্জুন গাছে ফল এসেছে এবার? গোলেনূর দাদীর তেজপাতা গাছে নতুন পাতা এল? এবার কি পাটাই ব্রত করবে ঠাকুমা? ... ...
- তোমার ছোটবেলার সিনেমার গল্প বল। - আরে তখন যুগটাই ছিল, যে কোনো উপলক্ষে আত্মীয় স্বজন- বন্ধু বান্ধব মিলে সিনেমা দেখতে যাবার যুগ। জ্ঞান হওয়ার আগে থেকে অসিত বরণ, উত্তম কুমারের সিনেমা দিয়ে হাতেখড়ি। মামার বিয়ে হল - নতুন বৌকে নিয়ে মায়ার সংসার। রবিবার এলো তো বাবা মার হাত ধরে সব্যসাচী। মাসিমণির বিয়ের কথা চলছে, নতুন পাত্রকে নিয়ে চিরন্তন। কালে কালে বাবার হাত ধরে টোয়েন্টি থাউজ্যান্ড লীগস আন্ডার দ্য সী, এন্টার দ্য ড্রাগন, গ্রেট এসকেপ, গানস অফ নাভারোন। অবশ্য হিন্দি সিনেমায় বাধানিষেধ ছিল। স্কুল পাশ করে কলেজ পর্যন্ত শুধু সফেদ হাতি আর পার। কলেজে উঠে ও ব্যথাও মিটে গেল। নুন শোয়ে ফুল অর কাঁটে, প্রতিবন্ধ, লমহে - আহা কীসব দিন। - দাঁড়াও, কলেজে উঠি, তারপর আমিও যাব। - যাবি। - সিনেমা দেখে দেখে সিনেমা প্রীতি? - না না তা কেন? আসল হল, চরিত্র চিত্রণ, কোন সিন কীভাবে তোলা হচ্ছে, এসবের চুলচেরা আলোচনা। - কীরকম? ... ...
রুচিকা গিরহোত্রার কথা হয়ত কারোর কারোর মনে থাকবে। এই চৌদ্দ বছরের লন টেনিস প্লেয়ারটি হরিয়ানার লন টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও পুলিশ অফিসার রাঠোরের দ্বারা যৌন নিগৃহীত হয় ১৯৯০ সালে। ঘটনার তিনদিন বাদে মেয়েটি নালিশ জানায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ অফিসারের দোষও ধরা পড়ে। কিন্তু এফ আই আর হয় না। ইতিমধ্যে রাঠোরের চাপে মেয়েটি নিজের স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়। তার দাদার বিরুদ্ধে ছটি কেস রুজু করা হয়। রাঠোরের সমর্থনে রাজপুত সভার সদস্যরা রুচিকার বাড়ির সামনে দিয়ে প্রসেসন করে, তাঁকে রাস্তাঘাটে রেন্ডি বলে অভিহিত করা হয়। ক্রমাগত মানসিক নির্যাতনে মেয়েটি ১৯৯৩ সালে আত্মহত্যা করে। কত বছর বয়স তখন ওর? আর সেই পুলিশ অফিসারের কি হয়? ... ...
নাহ, সীতা ও বোধহয় এঁদের থেকে ভালো ছিলেন, ওনার আসে পাশে রাবণ নিযুক্ত চেড়ি রা সর্বদাই মুখের কাছে খাদ্য বস্তু, এটা ওটা ধরছেন, রাবণ মাঝে মধ্যে এসে মিষ্টি কথায় চিঁড়ে ভেজাবার চেষ্টা করছেন আর সীতার সেখানে কাজ বলতে যাকে বলে "ল্যাদ" খাওয়া আর মাঝে মাঝে রামের নাম ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠা। "এঁরা" বলতে এদেশে অর্থাৎ আমেরিকায় যে সমস্ত সদ্য বিবাহিতা নারী ভারত থেকে স্বেচ্ছায় এসে উপস্থিত হন তাঁদের গল্প কিন্তু অন্য। সিনেমায় দেখা আমেরিকা আর শিকড় উপড়ে আসা অভিবাসী ভারতীয়দের জীবনযাত্রার মধ্যে বিশাল ফারাক। কুড়ি বছর আগে সেটা আরোই কঠিন ছিল কারণ বর্তমানে ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ, বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, স্থানীয় অঞ্চলে ভারতীয় দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি, ভারতীয়দের জোট বেঁধে নির্দিষ্ট শহরে থাকা ইত্যাদি বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত যেন একেবারে হাতের মুঠোয় এসে গেছে, তবুও যে সমস্ত সমস্যা রয়ে গেছে তা চিরন্তন। ... ...
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপের ভয়াবহ ধর্মযুদ্ধে আশি লক্ষ মানুষ (ইউরোপীয় জনসংখ্যার দশ শতাংশ) মারা যান। সে সময়ে ক্যাথলিক ক্রোয়েশিয়ার সৈন্য ফরাসিদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বিধর্মী প্রটেস্টান্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আজকের বিচারে ভাড়াটে সৈন্য কিংবা রাশিয়াতে এই ভাগনারের মতন মারসিনারি হিসেবে। ফরাসি সমর বাহিনির পোশাক পরার অধিকার তাদের নেই - যুদ্ধক্ষেত্রে তারা নামে নিজেদের ইউনিফরম পরে আর গলায় রঙ্গিন রুমাল বেঁধে,আমাদের যুবাকালে দেব আনন্দ যেটাকে স্টাইলে পরিণত করেছিলেন! রুমাল বাঁধার ফলে জ্যাকেটের ওপরের বোতাম থাকে টাইট, সেটি কারণে অকারণে খুলে গিয়ে অস্ত্র চালনায় বাধা সৃষ্টি করে না – এই তাদের ভাষ্য। ... ...
প্রায়-তিরিশের কাজি যেন সদ্য-প্রেমোন্মত্ত কিশোর। পরের দিন সকালেই কৃষ্ণনগর, আর সেই বিকেলেই আবার চিঠি লিখতে বসে কাজি। এবার আর কোন কাব্যিক ব্যঞ্জনা ছল-চাতুরী নয়; স্পষ্ট ঘোষণা, সে ডুবেছে। প্রেমোন্মাদের চিরকেলে বিলাপের মতোই এই তিরিশ-ছুঁই-ছুঁই নব কিশোর যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করে প্রিয়াকে লিখতে পারে না সোজাসুজি; মোতাহারকে লেখে, এ চিঠি শুধু তোমার এবং আর একজনের। একে secret মনে করো। আর একজনকে দিও এই চিঠিটা দুদিনের জন্য। ভাবা যায়! ... ...
- "মা, তুমি গান জানো, আমাকে তো কোনদিন বলোনি। - গান জানিনা তো। - তাহলে বাজাচ্ছো কি করে? - আমার মায়ের কাছে শিখেছি। শুরু করেছিলাম। তারপর আর হলনা। - হলনা কেন? - হারমোনিয়ামটা হারিয়ে গেল। - কীকরে? - সে অনেক কথা, পরে বলব।" ছোটো করে একটা ধাক্কা লাগল মনে। লাবণ্যর হারমোনিয়াম হারিয়ে গিয়েছিল? কি এমন কথা আছে, মা বুকে চেপে আছে? ... ...
নিজেদের কালো ভালুক-চামড়া, উজ্জ্বল পারস্য দেশীয় কার্পেট ও পরিষ্কার নতুন মাদুরের উপর গুছিয়ে বসে ভারি আরাম হল। দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে আরামসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে আমাদের পিকনিকের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে গল্প শুরু হল। লিভিংস্টোন আমাদের রুসিজির যাত্রাকে পিকনিকই বলে থাকেন। মনে হচ্ছিল পুরোন সুখের স্মৃতিচারণ করা দিনগুলো ফিরে এসেছে। যদিও আমাদের বাড়িটা নেহাতই সাধারণ, চাকরবাকরেরাও নেহাতই সামান্য, নগ্ন, বর্বর; তবু উন্যানিয়েম্বে থেকে সেই ঘটনাবহুল যাত্রার পর এই বাড়ির কাছেই আমার লিভিংস্টোনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল— এই বারান্দাতে বসেই টাঙ্গানিকা হ্রদের পশ্চিমপারের বহুদূরের, মনোমুগ্ধকর জায়গাগুলোর সম্বন্ধে তাঁর বিস্ময়কর গল্পগুলো শুনেছিলাম; ঠিক এই খানেই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়; আর সেই থেকে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়েই চলেছে আর তিনি যখন বললেন যে আমার প্রহরায়, আমার খরচে আর আমারই পতাকার তলায় তিনি উন্যানিয়েম্বে যেতে চান, আমি তো সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে গেলাম। ... ...