জেরুসালেম থেকে ছড়িয়ে পড়া ইহুদি ইউরোপে এলেন স্পেন পর্তুগালে (সেফারদি) এবং রাইন নদী ধরে আরেক দল (আশকেনাজি) গেলেন উত্তরে। নাগরিক অধিকার বস্তুটি মেলে না। পশ্চিম ইউরোপের নানা দেশের দরজা তাঁদের জন্য বন্ধ। এমন সময়ে পোলিশ রাজা পুণ্যবান বলেস্লাভ আমন্ত্রণ জানালেন - ইহুদিদের দিলেন ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার, আপন বিচার ব্যবস্থা, জোর করে ধর্মান্তরিত করার বিরুদ্ধে আইনি সমর্থন (কালিস ঘোষণা ১২৬৪)। পরবর্তী চারশ বছরের পোলিশ লিথুয়ানিয়ান রাজত্বে সকল শাসক ইহুদিদের সে অধিকার সসম্মানে রক্ষা করেছেন। ১৫শ শতকে স্পেনে যখন রাজা ফারদিনান্দ ও রানি ইসাবেলার সাদর উৎসাহে কলম্বাসের কল্পিত ভারত আবিষ্কার আর তার সঙ্গে ইহুদি ধর্মান্তর, সংহার ও বিদায় উৎসব চলছে, নরওয়ে সুইডেনের মতো আলোকিত দেশ গুলি অবধি তাদের প্রবেশাধিকার দেয় নি। পোল্যান্ড লিথুয়ানিয়া তাদের স্বাগত জানিয়েছে। স্বাধীনতা ছিল সীমিত, জীবন ধারণ অত্যন্ত কঠিন কিন্তু এই প্রথম ইউরোপ তাদের খানিকটা মানুষের মর্যাদা দিলো। ... ...
এইবার এই চারটে অ্যামাউন্ট আলাদা আলাদা বাণ্ডিল করে একটা একটা খামে ঢুকিয়ে রাখো, জয়ি ড্রয়ার খুলে কতকগুলো খাম বের করে, আর রাবার ব্যাণ্ড। নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে উৎপল। জয়ি বলে, এদিকে এসো, আমার পাশে। উৎপল চেয়ার ছেড়ে উঠে জয়ি যেখানে বসে আছে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। জয়ি চাবি দিয়ে একটা ড্রয়ার খোলে, উৎপলকে বলে, এই টাকার বাণ্ডিলগুলো আর তোমার হিসেবের কাগজটা এই ড্রয়ারে রাখো। এবার চাবিটা দেয় উৎপলকে, ভালো কোরে চাবি দাও। চাবি দেওয়া হয়ে গেলে ওর কাছ থেকে চাবিটা নিয়ে নিজের ব্যাগে ঢোকায় জয়ি, বলে, টাকাগুলো ব্যাঙ্কে জমা দিতে হবে, ব্যাঙ্কে গিয়েছো কখনো? ... ...
অনেকেই টেলি কন্সালটেশনের পর ভিজিট দিতে চাইছেন। তাঁদের সবিনয়ে বলছি, আমি নিজেই ফোনে এভাবে চিকিৎসা করার ঘোরতর বিরোধী। করোনার কাল কেটে গেলেই আবার ফোনে কোনো রকম ওষুধপত্র বলা বন্ধ করে দেব। অতএব এর জন্য আমাকে ভিজিট দেওয়ার প্রশ্নই নেই। এই লকডাউনের সময় বহু সেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রায় প্রতি এলাকাতেই মানুষের জন্য কাজ করছে। টেলিকন্সালটেশন বাবদ যে টাকা টুকু আমাকে দিতে চাইছেন, ঐ টাকা সেসব সংগঠনের হাতে তুলে দিন। ... ...
রোজরোজ এইরকম সব কথা হয় ওর সাথে। কিন্তু আলাপ পুরো হচ্ছে না। রোজই দেখি লাল টিনের বোর্ডের ওপরে সাদা দিয়ে লিখে রেখেছে "নো সুইমিং", ইংরিজি আর হিব্রু দু ভাষাতেই। এ কী অনাছিস্টি কথা! সমুদ্রে নামবো না? বালির ওপরে বসে ঢেউয়ের শব্দের সব কথা বুঝতে পারি না। আমার শ্রবণেন্দ্রিয় মাছের মত, সারা শরীর জুড়ে। স্পর্শেন্দ্রিয় পার্শ্বরেখা মনে আছে? ভেতরে বড্ড ছটফটানি জমা হয়। "কেন মানা? মানা কেন জলে নামা?" জলের কোয়ালিটি কন্ট্রোলের ওপর খুব কড়াকড়ি ওখানে। নিয়মিত দূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়। তাতে পাশ না হলে বিজ্ঞপ্তি উঠবে না! থাকো এখন বসে হাত পা গুটিয়ে! ... ...
এদিকে শেবার রানির মন উথাল পাথাল। সে আগ্রহী। সে ভয়ানক কৌতূহলী। সে শান্তি পায় না। সে জানতে চায় সেই রাজাকে। প্রজ্ঞা তো হৃদয়ের অলঙ্কার! এও তো একরকমের যুদ্ধ যাত্রা। মননের যুদ্ধ। মেধার যুদ্ধ। চাতুর্যের কৌশলী তির। জ্ঞানের শাণিত তরবারি। মগজাস্ত্র! রানি ভাবে, এই যাত্রা কি খুব সহজ? মোটেই নয়। ইতিহাসে এমন যুদ্ধযাত্রার হদিশ কি পেয়েছ কখনো আলমিত্রা? পনেরশ মাইলের এক দীর্ঘ মরুপথ। সে পথ এঁকে বেঁকে গেছে আরব মরুভূমির গভীর প্রদেশ দিয়ে, নোনা সাগরের তীর ঘেঁষে মোআব, জর্ডন, কানানের ফসলের খেত আর আঙুর বাগানের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে গেছে জেরুজালেমের পাহাড়ে। দুইমাসেরও বেশি সময় চাই। ... ...
হঠাৎ যুবকদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করে, এখানে যদি থেকে যেতে চাই আমরা দুদিন, কাছাকাছি অ্যাকোমোডেশন কোথায় পাবো? এখান থেকে বাঁ দিকে গিয়ে মাইল আষ্টেক দূরে বান্দোয়ান নামে একটা ছোট শহর আছে, সেখানে শুনেছি পি-ডব্ল্যু-ডি-র একটা ডাক-বাংলো গোছের কিছু আছে, খোঁজ করে দেখতে পারেন। বাঁদিকে না গিয়ে যদি ডান দিকে যান, তিন-চার মাইলের পর সাত-ঘুরুং নদীর কাছে একটা সরকারি ট্যুরিস্ট লজ গোছেরও আছে শুনেছি। এ ছাড়াও যেখানে বসে আছেন সেই চৌহদ্দির মধ্যে চারখানা ঘর আছে, তবে তা কী পছন্দ হবে আপনাদের? ... ...
সবটাই দামোদর নদের বালি উত্তোলন নিয়ে। ও হলো সোনার খনি। তিনি এক ব্যবসায়ীকে নিষিদ্ধ করেছেন চিঠি দিয়ে, সেই ব্যবসায়ী দিন পনের বাদে গাড়ি হাঁকিয়ে আমাকে এসে বলছেন, স্যার বলে পাঠালেন, কাগজপত্র, চালানে সই করে আমার কাজ শুরু করিয়ে দিতে। বললাম, স্যার চিঠি দিয়ে বন্ধ করেছেন, স্যার চিঠি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা রহিত না করলে তো আমি কোনো চালানে স্বাক্ষর করতে পারব না, লিজ অর্ডার দিতে পারব না। যাদব মশায় জোরাজুরি করতে লাগলেন। তিনি আমাকে হঠাৎ বলেছিলেন, আপনার বই কী বেরুলো স্যার, কত কপি ছাপা হয়, আমি কিনিয়ে নিবো। অপমানিত লেগেছিল। স্যরি। আপনি নিজেই তো বাংলা পড়তে পারেন না, আমি অফিসে বই বেচতে বসি না। তিনি না পেরে আবার জেলা সদরে ছুটলেন। বলে দিলাম, লিখিত অর্ডার যেন তিনি না নিয়ে আসেন। অফিসিয়াল চিঠি যেভাবে আসে, সেই ভাবেই আসে যেন। স্যার অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, তাঁর পাঠানো ব্যবসায়ীকে আমি প্রত্যাখ্যান করায়। ... ...
তবে সবার আগে উনুনে উঠলো জলভরা লোহার কড়াই। এতে বাঁধাকপি ভাপানো হবে। ঠাকুমা খুব ঝুরি করে বাঁধাকপি কাটছে, বাঁধাকপি যত ঝুরি করে কাটা হবে স্বাদ তত খেলবে এর। তবে আমার মনোযোগ বাঁধাকপিতে নেই। সব মনোযোগ ঠাকুমার হাতের শাঁখা-পলা এক অদ্ভুত ছন্দ তুলছে তাতে। ক্রমাগত সে ছন্দ আমার লোভ বাড়িয়ে দিচ্ছে, ও ঠাকুমা, এবার রথের মেলা থেকে আমাকে ঠিক এমন চুড়ি কিনে দিবা? ... ...
এক শীর্ণকায়া ভদ্রমহিলা এসেছেন। তাঁর স্বামী করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাগর দত্ত হাসপাতালে মারা গেছেন। ভদ্রমহিলা ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় কোয়াক ডাক্তারের নিয়মিত ডাক পড়ে। তিনি এসে দু – বোতল, তিন – বোতল স্যালাইন চালান। টালির ঘরে টিম টিমে হলুদ বালব। ঘরের এধার থেকে ওধার নাইলনের দড়ি। তার থেকে স্যালাইনের বোতল ঝোলে। মহিলা ক্রমশ বিছানার সাথে মিশে যান। কোয়াক ভরসার বাণী শোনান, 'শরীরের ভেতর শুকিয়ে গেছে। স্যালাইন দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।' ... ...
কথাটা পরিহাসের ছলে বলা কিন্তু এর ভেতরে একটি গভীর সত্য নিহিত ! ইউরোপের হাজার বছরের ইতিহাসে ইহুদি হবার অপরাধে সরকারি বা অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্ম গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল বহুকাল । সে কারণেই ওকালতি , ডাক্তারি জাতীয় বিবিধ স্বাধীন পেশা এবং আপন ব্যবসাতে ইহুদির ভূমিকা বহু বছরে সুপ্রতিষ্ঠিত । মহাজনি কারবারের জন্য তাঁরা বিশেষ দুর্নাম কুড়িয়েছেন , শেক্সপিয়ারের শাইলক যার এক প্রতীক । এক দরোজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলে জীবন ধারণের উদ্দেশ্যে অন্য দ্বারে করাঘাত করেছেন। আপন বুদ্ধি ও কর্ম বলে সফল হয়েছেন। ... ...
যে মীটিং হলো এবার তাতে সুকান্তদা আর জুঁইদি আসেনি, ওদের আশাও করেনি জয়ি। শ্যামলিমাও আসতে পারেনি, ওর শ্বশুরবাড়িতে কিছু একটা উৎসব আছে, ওরা সপরিবার গেছে সেখানে। তুলিও যথারীতি অনুপস্থিত। গেস্ট হাউজটা নিয়মিত চালাতে হবে, মীটিঙে যারা ছিলো সবাই একমত। সিনেমার লোকরা যদি শেষ পর্যন্ত পছন্দ করে খুশিঝোরাকে, সেটাও খুশিঝোরার পক্ষে, অন্তত আর্থিক ব্যাপারটা মাথায় রাখলে, ভালোই হবে, বললো প্রায় সবাই; বিশেষ করে মাত্র এক রাত্তির গেস্ট হাউজে থেকে যে টাকাটা ওরা দিয়েছে, সেটা তো অভাবনীয়, বললো কোষাধ্যক্ষ অনলাভ। সবাই সিনেমার ব্যাপারে উৎসাহী, শুধু নীরব জলধর। ও ঠিক জানে না, কেমন যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো ওর সিনেমার ব্যাপারটায়, কী অস্বস্তি স্পষ্ট করে বোঝাতে পারবে না, কাজেই চুপ করে থাকাই ওর মনে হলো ভালো। ... ...
ডাক্তারদাদা আর ওই মহিলা কারোরই নাম লিখলাম না। দাদার ফুটেজ খেতে ভয়ানক অপছন্দ। আর ঐ মহিলার লকডাউনে এমনিতেই একটা কাজ চলে গেছে। পরোপকারী কাজের মাসি অনেকের পছন্দ নাও হতে পারে। মোদ্দা কথা হলো হতাশা ক্লান্তি এরাও বেশিক্ষণ সুবিধা করতে পারছে না। আশেপাশের কিছু মানুষ এমন সব কাণ্ড ঘটাচ্ছেন, ঠিক পজিটিভ হয়ে যাচ্ছি। ... ...
হলঘর যে দুটো ছিলো, যেখানে জয়ির ছবির এগজিবিশন হয়েছিলো, তার মধ্যে একটাকে এখন বানানো হয়েছে ডাইনিং হল, লম্বা একটা টেবিল, দু সারি চেয়ার আর ছোট একটা কাঠের আলমারি। আগে যে দুটো অফিস ঘর ছিলো তার মধ্যে একটাকে চিকিৎসালয় বানিয়ে নিয়েছে সুকান্তদা। ডাক্তারের টেবিল, সামনে রোগী আর তার সঙ্গী বসার জন্যে দুটো চেয়ার। একটা চাদর দিয়ে ঘরটা ভাগ করে তার আড়ালে রোগী পরীক্ষার ব্যবস্থা। সেখানে টেবিলের নীচে একটা ওজন নেবার যন্ত্র। ডাক্তারের টেবিলে স্টেথোস্কোপ, একটা কাচের গ্লাসে থার্মোমিটার, প্রত্যেকবার এসেই কোন একটা তরল ঐ গ্লাসে ঢেলে থার্মোমিটারটা তাতে ডুবিয়ে দেয় সুকান্তদা, অন্য একটা গ্লাসে আরও কিছু টুকিটাকি। কাছাকাছি গ্রাম দুটোর মানুষরা এতদিনে সবাই জেনে গেছে এই ডাক্তারবাবুর কথা। ভীড় সামলাতে হিমসিম খেয়ে যেতে হয়। ... ...
দিন যায়, কাল যায়। ঢেউ ওঠে, ঢেউ পড়ে। চোখের ভুল সবটাই। কেউই যায়না কোত্থাও। দিন, মাস, বছর, জীবন, জোয়ার, ভাঁটা। সবকিছু চোখের ভুল। মনের ভুল। অন্ধ মানুষ কী দেখে কী ভাবে। হয় এক, মানুষগুলো বোঝে আরেক। বোকা মানুষ সব। বোকা নাহলে কেউ সুখ খোঁজে? সুখ জিনিষটা কিনতে প্রচুর দাম দিতে হয়। এমনি এমনিইই পাওয়া যাবেনা কিছুতেই। অ-নে-ক দাম। অথচ মজা এমন, যা দিয়ে তুমি দাম দেবে সেই জিনিষটা মিনিমাগনায় সারাক্ষণ এসে পড়ছে তোমার কাছে। সুখ কিনতে হয় দুঃখ দিয়ে। যন্ত্রনা দিয়েও পাওয়া যায়। কান্না দিয়ে। সেগুলো বিনি পয়সায় ঢের করে পাবে তুমি। নিয়ে যেও সুখ কিনতে। যদি সে বাজারের ঠিকানা জানা থাকে। দুঃখ এসে ওর সব কিছু উজাড় করে দেয় আমার কাছে। নিঃশেষে। আমার শরীর, মন, সত্বা, তারও আড়ালে আরো যা কিছু অদেখা হয়ে রয়েছে, সব কানায় কানায় ভরিয়ে দেয় দুঃখ। অকূল দুঃখ। আকূল। ... ...
আমার একটা বিশ্বাস আছে। তাকে আমি সত্য মনে করি। সত্য আপেক্ষিক হলেও, এই সত্যে পৌঁছতে পেরেছি আমি। একে ধরে থাকি। ক্ষমতাকে মনে করি অন্ধকারের পথে যাত্রা। ছিল না, তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পেরেছি হয়ত। সিভিল সার্ভিসে না যাওয়াও তাই হয়ত। ধ্রুবপুত্র উপন্যাস এই কথাই বলেছে শেষ পর্যন্ত। বুদ্ধের দর্শন তাইই ছিল। নিজেকে নিঃশেষ করতে করতে, শূন্যের কাছে আত্মসমর্পণ। ‘হে নবীন সন্ন্যাসী’ উপন্যাসটি সেই কথা বলতে চেয়েছে। আমি কলহ করি। সুনাম আছে। কিন্তু যখন বুঝি ভুল হয়েছে, আবার এগিয়ে যাই। হে বন্ধু, কাছে এস, হাত ধরো। বন্ধুদের অনেকে ফেরে। ফেরেও না দেখেছি। না ফিরে অপমানও করেছে সত্য। ... ...
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য আন্তরিক ভাবে লড়েছি। সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোর অভাব হয়তো ছিল, কিন্তু তা বলে চুপ করে বসে কারও মৃত্যু মেনে নিই নি। অনেক রোগী বেড পাননি। তবু মেঝেতেই রোগীর শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এমন কী নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও চেষ্টা করেছি। শুধু আমি একা নই, আমার সাথে অন্যান্য চিকিৎসক এবং জুনিয়ার চিকিৎসকরাও আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। নার্সদিদিরা, ওয়ার্ডবয় ভাইরা সাধ্যের বাইরে গিয়েও অনেক সময় সাহায্য করেছেন। ... ...
জাওয়া ফুল কী জানেন? জাওয়া ফুল আসলে ফুল নয়, তিন বা পাঁচ বা সাত রকমের দানাশস্যের অঙ্কুর, যা তারা বপন করেছিলো নিজের নিজের শালপাতার থালায় সাত দিন আগে, আর অঙ্কুরোদ্গম করিয়েছিলো রোজ সন্ধ্যেতে জল ছিটিয়ে। পুজোর পর চলবে হাঁড়িয়া পান আর সারা রাত ধরে নাচ; নাচে যোগ দেবে মেয়ের দল আর ধামসা-মাদল নিয়ে ছেলেরা। পরের দিন সকালে, ঐ যে মেয়েরা লুকিয়ে রেখেছিলো ভিজে বালিতে দানাশস্য ছড়ানো জাওয়াগুলো, সেগুলোর থেকে অঙ্কুরিত বীজ উপড়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে তারা, আর সেগুলো ছড়িয়ে দেবে নিজের নিজের বাড়িতে। করম উৎসব বন্ধুত্বেরও উৎসব। বীজ ভাগ করা হয়ে গেলে মেয়েরা পরস্পরকে পরিয়ে দেবে রাখী, এই রাখীর নাম করমডোর। এখন থেকে ওরা করমসখী... ... ...
বাঙালি হিন্দু মেয়েরা নদীতে নাইতে যায়। সিরাজের চরেরা নৌকো নিয়ে ঘুরঘুর করে খবর জোগাড় করে। মেয়েদের তুলে আনে। এইসব করতে গিয়ে সিরাজ রানি ভবানীর মেয়ে তারা সুন্দরীর পিছু ধাওয়া করেন। কিছু সুবিধে করতে পারেন নি। ভরা বর্ষায় বা জোয়ারের সময় পারাপারের নৌকোগুলোকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিতেন, কখনো নৌকো ফুটো হয়ে যেত আর তখন সাধারণ গাঁয়ের মানুষকে ছেলে বুড়ো মেয়ে নির্বিশেষে জলের মধ্যে নাকানি চোবানি খাইয়ে দারুণ মজা পেতেন! অনেকে হয়তো ডুবে যেত কিন্তু উনি খুব আমোদ পেতেন! ... ...
রোটশিল্ড অফিসে বসে কাজ করছেন অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে। দরজায় কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর দিকে না তাকিয়েই রোটশিল্ড বললেন “একটা চেয়ার টেনে বসুন”। তিনি বসলেন। রোটশিল্ড কাগজ থেকে কিছুতেই মাথা তুলছেন না। অভ্যাগত নিজেকে অপমানিত বোধ করে একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, “আমার নাম ব্যারন হারতসবেরগ- গোল্ডবেরগ”। রোটশিল্ড মাথা না তুলেই বললেন, “তাহলে দুটো চেয়ার নিয়ে বসুন”। ... ...
গঙ্গাধর গ্যাডগিল মরাঠী সাহিত্যে ছোট গল্পের জন্য খ্যাতনামা। সেদিন তাঁর সঙ্গে আলাপের পর বেরিয়ে এসে বন্ধুদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে, তুষার বলল, কেঁচিয়ে দিয়েছিস, এখান থেকে আমেরিকায় যাওয়ার সাহিত্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, তোর হলো না। হাসাহাসি হলো। সেদিন ছিল শেষ দিন। ইউথ হোস্টেলে ফেরার বাসে সঙ্গে ছিলেন তামিল ভাষার প্রবীণ লেখক অশোক মিত্রণ। এটি তাঁর লেখার নাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গ্যাডগিলের সঙ্গে কী কথা হলো ? আমি বলতে, তিনি পরামর্শ দিলেন, “তোমার লেখার পদ্ধতি তোমার, তা নিশ্চয় মিঃ গ্যাডগিল দেখতে যাবেন না, কিন্তু এই সমস্ত মানুষের কথাকে সাময়িক সমর্থন করতে হয়, উনি তো তোমাকে নিয়ে বিরক্ত হয়ে থাকলেন।” ... ...