১৯৯৩ সালের কথা - জ্যোতিবাবু যাচ্ছেন কিউবা, প্রথমে যাবেন কিউবার রাজধানী হাভানা, সেখানে ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে দেখা সাক্ষাত করে তারপর কিউবা একটু ঘুরে দেখবেন। সিপিআইএম পার্টি থেকে জ্যোতিবাবুর সঙ্গী হয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরী। যাওয়ার কয়েকদিন আগে জ্যোতিবাবু ফোন লাগালেন ইয়েচুরী-কে। - সীতা, তা তুমি কি নিয়ে যাবে ভাবছো কাস্ত্রো-র জন্য? এত দূর থেকে যাচ্ছি, খালি হাতে তো আর যাওয়া যায় না! - জ্যোতিদা আমি তো এখনো তেমন ডিটেলস কিছু ভাবিনি! তা আপনি কি নিয়ে যাচ্ছেন? জ্যোতিবাবু ফোনের এদিকে তাঁর সেই বিখ্যাত না ফুটে বেরুনো হাসিটা হেসে নিলেন – কারণ তিনি জানেন যে এই ব্যাপারে তিনি এগিয়ে আছেন ইয়েচুরীর থেকে। তাঁর ভাবার তত কিছু নেই – কারণ কুড়ি বছর আগে কাস্ত্রো কলকাতা এলে বোঝাই গিয়েছিল তিনি কি জিনিস ভালোবাসেন। তাই জ্যোতি বসু বললেন - - আমার দিক থেকে তেমন ভাবার কিছু নেই, ও সব ঠিক আছে। - একটু খুলেই বলুন না। - অত কথা এখন ফোনে বলার সময় নেই, এয়ারপোর্টে দেখা হলে বলব সেই গল্প না হয়। - ঠিক আছে, তাহলে আমি ভেবে দেখি কি নেওয়া যায় - বেশী দামী জিনিস নিও না যেন! একটা কথা মনে রেখো সীতা, আমরা কমিউনিষ্ট পার্টি – দামী জিনিস আমাদের ইমেজের সাথে যাবে না ... ...
জামগাছটার তলায় যেতে ভয় করত – অনেক দিন আগে স্কুল ফেরত আমরা খালি ফলিডলের বোতল আর উপুড় হয়ে থাকা ঝাঁকড়া চুল দেখেছিলাম ... ...
একদিন অঙ্কের খাতার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম আমার অবধারিত প্রশ্ন বুঝতে পেরেই আগেভাগে বলে উঠেছিল - এ মেলানোর অঙ্ক নয় ... ...
কারা যেন রাতের বেলা কথা বলে বারান্দায় কাঁচের ঠোকাঠুকি শুনি মাঝে মাঝে ক্লান্ত হাসি সকালের অপেক্ষা করে চোখের কোণের কালি তবু চাঁদের আলো শুধু প্রেমের গানই শোনায় ... ...
ছোট করে চুল কাটলে আমাকে একদমই বাঙালী বলে চেনা যায় না সেটা আবার আজ টের পেলাম। আর এমনিতে আমাকে দেখে ঠিক কি মনে হয় সেটারও রিমাইন্ডার এসে গেল আজ আমাদের হাউসিং কমপ্লেক্সে ওনম উপলক্ষ্যে মেলা টাইপের বসেছে - নানা ধরণের নারকেল তেল বিক্রী হচ্ছে খুব। কি খাওয়া সেফ হবে সেই ভাবতে ভাবতে দেখতে পেলাম এক দোকানে লস্যি পাওয়া যাচ্ছে। একবোতল ম্যাঙ্গো আর একবোতল স্ট্রবেরী কিনে বগলদাবা করে ফিরছিলাম, সেই দোকানী ভালোবেসে কাগজের ঠোঙায় প্যাক করে দিল সেই প্যাকিং নিয়ে আমি লিফটে ঢুকে দেখি এক দম্পতি। লোকটি আমাকে আপাদমস্তক দেখে হিন্দীতে বলল - - অ্যাই সুইগি ভাই, তুমি এই লিফটে কেন? ভেন্ডরদের জন্য যে লিফট আছে সেটায় যাও নি কেন? - আমি তো সুইগি নয়! - তাহলে জ্যমেটো হবে! তোমাদের তো কোম্পানী লেখা টিশার্ট থাকে। সেটা পর নি কেন? ... ...
সেদিন আমেরিকান রেষ্টুরান্টে এই প্লেটের কোণে ঝিনুকের মাংস আর ভাত দেখে মনটা খুশী হয়ে গেল। দেশের কেটারিং রীতি ভুলে গেলেও এরা মনে রেখেছে! ভাবছি পুরো প্লেটটাই খালি, এবার এখানে আসল খাবার আসবে। ভাতের আকার দেখে আমি ধ্বন্দে পড়ে গেলাম - এ কি চাল? রত্না বা বাঁশকাঠিও তো এমন হয় না! তাহলে কি এগুলো ছোট কাঁকুড়ের বীচি? যে কাঁকুড় বড় হতে পারে না, তাদের বীজ এমনই হয়। টেনশন দূর করতে দাঁতে কেটে দেখলাম সেই চাল - আরে বীজ নয় তো! এ চালই বটে, কিন্তু অর্ধসিদ্ধ প্লেট নিয়ে বসে আছি, তখনো সন্দেহ হয় নি। খেয়াল হল প্লেটের বাকি খালি জায়গায় আঁকাবুকি কাটা কেন?? ... ...
যেমন তেমন শেফ হলে আমি জিজ্ঞেস করতাম – “এই জিনিস-কে কি ভাবে খাবার নামে ডাকা যায়?” এই শেফ-কে সেই প্রশ্ন করলাম না, কারণ তার উত্তর আমার জানা। বহুদিন আগে, ১৯১৭ সাল নাগাদ মার্সেল দ্যুসোঁ নামক এই বিখ্যাত ফরাসী চিত্রকর এবং ভাষ্কর, নিউ ইয়র্কের এক মর্ডান আর্ট চিত্র প্রদর্শনী-তে পোর্সেলিনের একখানি সাদা ইউরিন্যাল লাগিয়ে দিলেন দেওয়ালের গায়ে। ঠিক যেমন সাদা ইউরিন্যাল আমরা শপিং মল বা রেল স্টেশনে ব্যবহার করি। চারিদিকে হই হই পরে গেল। বোদ্ধারা ছেঁকে ধরলেন মার্সেল-কে, তাঁদের প্রশ্ন এই, “এই জিনিস কি করে আর্ট হয়”? মার্সেল দ্যুসোঁ নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, “আমি বলছি তাই এটা আর্ট”। আমি শিওর ছিলাম সেদিন শেফ-কে জিজ্ঞেস করলে ঠিক উত্তর-টাই আমি পেতাম! ... ...
এমন সময় চেরকাশভ সুইমিং পুল থেকে উঠে বাথরোব লাগিয়ে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলেন। সামনের ফিতেটা ভালো করে বাঁধা নেই। তাঁর চোখে পড়ে গেল সলিলের দিকে – দেখেই তিনি ছুটে এলেন “আর রোকতো নই নই! আর ধ্বোংসো নই নই” গাইতে গাইতে। চেরকাশভ ছুটে আসছেন, খোলা গাউন উড়ছে দুইদিকে, সামনে ফাঁকা – অনেকে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, ঋত্বিক বলছেন ‘কি দেখিলাম গ্র্যান্ডে এসে’। প্রায় সাত ফুট সেই মানুষটা কাছে এসে ‘সালিল, সালিল’ বলে প্রায় কোলে তুলে নিজের রুমের দিকে নিয়ে গেলেন। বেশ খানিক গল্পের পর চেরকাশভ আর পুদভোকিন বের করলেন ওঁদের সাথে করে আনা টিনের ক্যানের রাশিয়ান পিবা বা বিয়ার। আপনারা বললে বিশ্বাস করবেন না, সেই প্রথম সলিল এবং ঋত্বিক দুজনারই বিয়ার তথা মদ্যপান। আর সেদিন এক ক্যান বিয়ার খেয়েই ঋত্বিক পুরো আউট। চেরকাশভ আর পুদভোকিন খানিক পরে এক সভায় যোগদান করার জন্য বেরিয়ে গেলেন, কিন্তু এদিকে ঋত্বিকের নড়ার ক্ষমতা নেই! গ্র্যান্ড হোটেলের এক রুমের বারান্দায় সোফায় বসে প্রথম বারের মত মাতাল হওয়া ঋত্বিক নীচের কলকাতা দেখতে লাগলেন। কিন্তু কতক্ষণ আর বসে থাকবেন বারান্দায় চুপচাপ – তাই খানিক পরেই বিরক্ত হয়ে সলিল-কে বললেন, “এখানে বসে থাকার চেয়ে বরং চল গঙ্গার হাওয়া খেয়ে আসি”। এই বলে দুজনা হোটেল থেকে বেরিয়ে ইডেন গার্ডেন এর পাশ দিয়ে গঙ্গার ধারে এসে বসলেন। ঋত্বিক বলতে লাগলেন, “এ জিনিস কেন মানুষ খায়! আমি এই প্রতিজ্ঞা করছি, জীবনে আর এই জিনিস ছোঁব না!” ... ...
আমাকে এই বিখ্যাত সী-ফুড রেষ্টু্রান্টে এনে মেনু কার্ড দিয়ে বলা হল কি খাবে? ইংরাজীতে লেখা থাকলেও একটা খাবারের নাম বুঝতে পারলাম না! কিন্তু চাষার ছেলে হলেও বুদ্ধি খাটিতে চাল দিলাম ভাঙলেও মচকাবো না এই টাইপের। বললাম, "তোমরা যা রেকমেন্ড করবে তাই খাবো" বিশাল ভুল করলাম! এটা শুধু ঐতিহাসিক নয়, একেবারে প্রাগঐতিহাসিক ভুল যাকে বলে প্রায় কাঁচা চাল। দাঁতে কেটেই পাশের জনকে - চাল তো সেদ্ধ হয় নি! - মানে? আবার আমার অ্যান্টেনা সংকেত পেল। কিছু না বলে সেই প্রায় কাঁচা চাল খেলাম, মাঝে মাঝে চিঙড়ি, শামুক এই সব মুখে এল রিসোত্তো না কি যেন একটা নাম বলল! বিখ্যাত ইতালিয়ান ডিস নাকি এটা! ইতালিতে কি আগুনের অভাব নাকি যে ব্যাটারা চাল সিদ্ধ করে না! ... ...
এ এক অসম্ভব ছবি আলো, আঁধার, গাঢ় রঙ ধরা থাকে – ধরা আছে রোজ সামনেই চোখ খুললে কেবল চোখের পাতার কোণা থেকে তুলে নেওয়া হায়াসিন্থের পরাগ আমিই শুধু ছুঁতে পারি সেই তারার অতলে ঢুকলে ... ...