তখন দক্ষিণ কোলকাতায় একটা বড় ক্লাবের প্রথম শীতের সময়ে ফাংশন। অনেকের সাথে টেক্কা দেবার চেষ্টা এদের – কিন্তু পয়সা থাকলেই তো হবে না, বনেদীয়ানা দেখাতে হলে ভালো শিল্পী-কে এনে আর্ট-কালচার লাইনে নাক গলাতে হবে। এই ক্লাবের একজনের সাথে হেমন্ত মুখার্জী-র চেনাশুনা। সেই ভদ্রলোক গিয়ে হেমন্ত-বাবুকে ধরলেন – বোম্বে থেকে লতা-দিদিকে বলে কয়ে আনতেই হবে ফাংশনে। হেমন্ত বাবু আবার এমন অনুরোধ ফেলতে পারেন না। লতাকে ফাংশানে আনবেন বলে কথা দিলেন। ... ...
যে সমস্ত প্রবলেম সলভিং মডেল নিয়ে কাজ করেছি তার মধ্যে সিক্স-সিগমা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত DMAIC খুব কাজের মনে হয়েছে প্ল্যান্ট বা ফিল্ডে প্রয়োগ করতে। D = Define, M = Measure, A = Analuze, I = Improve, C = Control ব্যাপারটা অনেকটা “চক্রাকার পরিবর্তন্তে সুখানি চ সুখানি চ” কেস। দেখা গেছে আমরা অনেক সময় ছাড়াই ‘কনট্রোল’ স্টেপটায়। এই স্টেপটা সিরিয়াসলি না নিয়ে, এক বার কিছুর একটা সমাধান বা আপাত উন্নতি করেই আমরা হাল ছেড়ে দিই। ফলে এই সমগ্র চক্রটায় একটা বিচ্ছেদ চলে আসে। ... ...
যত গভীরে ঢুকব দেখব তত মজার ব্যাপার – যেহেতু শুরু করেছিলাম যদুবাবুর চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনা নিয়ে লেখাটি উল্লেখ করে, তাই আজকের পর্ব শেষ করি যদু বাবুর লেখা দিয়েই। ওই পর্ব একজায়গায় উনি লিখেছেন, “উৎক্ষেপণের ঠিক ৭৩ সেকেন্ডের মাথায় চ্যালেঞ্জার ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বিস্ফোরণে – সাতজন নভচরের সকলেই প্রাণ হারান মুহূর্তেই”। এই যে “মুহুর্তে প্রাণ হারানো ব্যাপারটা”, এটা চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনা নিয়ে অনেকে লেখাতেই দেখা যায় – আদপে এটা একটা মিথ। এমনকি যেটাকে ‘বিষ্ফোরণ’ বলে জেনারেলাইজ করা হয় সেটা ‘ক্রু কম্পার্টমেন্টের’ জন্য প্রযোজ্য নয় – স্পেস শাটলটা ভেঙে টুকরো হয়ে গিয়েছিল, বিস্ফোরণে ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যায় নি। মহাসমুদ্রে আছড়ে পড়ার মুহুর্তেও ক্রু কম্পার্টমেন্টটি ছিল অক্ষত, এবং তার ভিতরে ক্রু এবং প্যাসেঞ্জারের অনেকেই বেঁচে ছিলেন তখনো! এই “মুহুর্তে প্রাণ হারানো” আর “মহাসমুদ্রের বুকে আছড়ে পড়ার পর মৃত্যু” এই দুই পৃথক তথ্য কি রুট কজ অন্যালিসিস-কে প্রভাবিত করতে পারে? পারে, প্রবল ভাবেই পারে। ... ...
সেদিন খুব ভোর ভোর সৌমিত্র হাজির হলেন উত্তমকুমারের বাড়ি। সেখান থেকে দুজনে গড়ের মাঠে যাবেন উত্তমকুমারের গাড়িতে করে। এমনটাই চলছিল বেশ কয়েকদিন। এমনিতে উত্তমকুমার আর সৌমিত্র দুইজনাই একদম সাহেবী টাইম মেনটেন করতে ভালোবাসেন। সৌমিত্র পৌঁছালে দুজনে এককাপ করে চা খেয়েই বেড়িয়ে যেতেন গাড়ি নিয়ে। অন্যদিনের মত বাড়ি ঢুকেই সৌমিত্র হাঁক দিলেন, “বৌদি, চা দাও”। কিন্তু সেদিন আশেপাশে উত্তমকুমারকে দেখা গেল না। বরং বাড়ির ভিতর থেকে দাদার আওয়াজ ভেসে এল, “পুলু, তুই খানিক বসে চা খা – আমি আসছি”। ... ...
তখন সারা ভারত জুড়ে চলছে ডিস্কো জ্বর, ফলতঃ বিডিও-কে ঘেরাও করা হল একদিন এই দাবী জানিয়ে যে বোম্বে থেকে বাঙালীর ছেলে ডিস্কো সম্রাট বাপ্পি লাহিড়ি-কে আনা হোক। সে সব দাবী শুনে বিডিও তো কোন ছাড়, স্থানীয় হোমড়াচোমড়া ব্যক্তিদের মাথায় হাত পড়ে গেল! আমাদের দৌড় বলতে হাওড়া ব্রীজ পেরিয়ে চিৎপুরে যাত্রা পার্টি খুঁজতে যাওয়া পর্যন্ত! এখন বোম্বে থেকে আর্টিষ্ট কিভাবে আসবে কেউ বুঝতে পারছে না! ... ...
এই ধরুণ যেমন আমরা সবাই জানি নায়ক সিনেমায় উত্তমকুমারকে হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের খন্যান স্টেশনে চা-খেতে নামিয়ে মাষ্টার স্ট্রোক দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনদিন ভেবে দেখেছেন কি এত স্টেশন থাকতে খন্যান কেন? এখনকার খন্যান স্টেশন আর সেই ১৯৬৫-৬৬ সালের খন্যান স্টেশনের মধ্যে যদিও অনেক পার্থক্য, কিন্তু তখনো খন্যান স্টেশনের একদিকে ছিল তালান্ডু আর অন্যদিকে পান্ডুয়া। তাহলে খন্যান কেন? ... ...
হোটেলের রেষ্টুরান্টের বোরিং মাপাজোপা খাবার খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে এই ভাবেই একদিন ধর্মতলার ছোলে-বাটোরা-র প্রেমে পড়ে গেল রাসেল। হয়েছে কি একদিন বিকেলে প্র্যাক্টিস থেকে ফিরে হোটেলের বাইরে একটু ঘুরতে বেরিয়েছে, একটা দোকানে দেখে লোকজন বিশাল ফুলো ফুলো বান্-এর মতন কি খাচ্ছে! ইন্টারেষ্ট লেগে গেল রাসেলের – জয় মা বলে ঢুকে পড়ল দোকানে, আঙুল দিয়ে দেখালো যে ওই খাবার তার চাই। দোকানে যে ক্যাশে বসেছিল সে অনেক কষ্টে ভাঙা ভাঙা ইংরাজীতে জানালো যে ওই খাবারের নাম “ছোলে-বাটোরে”। ব্যাস, সেই খাবার খেয়ে রাসেল ফিদা! নামটা মুখস্ত করে নিল কয়েকবার আউড়ে নিজের মনে মনেই। ... ...
হাঁটতে হাঁটতে তিনি পোঁছে গেলেন সেই জায়গাটায় এখন যেখানে গেলে গঙ্গার উলটোদিকে মেটিয়াবুরুজের ফেরিঘাট দেখা যাবে। আর বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভিতরে তখন এই পাশের পুরো জায়গাটা জুড়ে চাষ হত গাঁজার। হাঁটতে হাঁটতে জগদীশ বসু ভাবতেও পারেন নি সেদিনের থেকে প্রায় ১২০ বছর পরে এই বোটানিক্যাল গার্ডেন তাঁর নামেই নামাঙ্কিত হবে। আগেকার দিনের শিবপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন এখন পরিচিত “আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন”। ভারতের সবচেয়ে বড় বোটানিক্যাল গার্ডেনের নাম ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত বোটানিষ্টের নামে হবে সে আর আশ্চর্য কি! তবে হালকা আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে বোটানিক্যাল গার্ডেনে জগদীশ বসু-র প্রথম পদার্পণ কোন স্পেশাল গাছ গাছালি দেখতে নয় – গাঁজার চাষ দেখতে! গাঁজার চাষ এবং গাঁজা গাছের ব্যাপারে আলোচনার জন্যই কিউরেটর ডেভিড প্রেইন ডেকে পাঠিয়েছিলেন জগদীশ বোস-কে। একদম সরাসরি তাঁর অফিসে চলে যেতে বলেছিলেন, কিন্তু জগদীশ বোস ভাবলেন আলোচনায় ঢোকার আগে নিজের মত করে গাঁজা গাছগুলিকে দেখে নেওয়া যাক! ... ...
সেদিন নৈহাটি থেকে বেশ দেরী করেই আনন্দবাজারের অফিসে ঢুকলেন সমরেশ বসু। দেশ পত্রিকার সেকশনে ঢুকতেই সাগরময় ঘোষের সাথে দেখা। সাগরবাবু মাত্র কিছু দিন আগেই দেশ-এর সাব-এডিটরের দায়িত্ব থেকে প্রধান সম্পাদক হয়েছেন। তবে সাব-এডিটর থাকা কালীনও দেশ-র বেশীর ভাগ সিদ্ধান্তের পিছনে সাগরবাবুই ছিলেন শেষ কথা। সমরেশ বাসুর সাথেও তাঁর চেনা শুনে বহু বছর ধরেই – আজ পুরী, কাল কুম্ভ মেলা, পরশু কেঁদুলি – এই সব জায়গায় সমরেশ বাবুকে ঠেলেঠুলে তিনিই পাঠাতেন লেখা বের করার তাগিদে। ... ...
নীলরতন বাবু বয়েসে প্রায় বছর কুড়ি বড় ছিলেন বিধান রায়ের থেকে। ভালোবেসে তিনি বিধান রায়কে ‘বিধে’ বলে ডাকতেন আর একদম ভাইয়ের মত ভালোবেসে তুই বলেই সম্বোধন করতেন। সেই ভালোবাসা ছিল রেসিপ্রোক্যাল – কুড়ি বছরের বড় হওয়া সত্ত্বেও বিধান রায় ডাকতেন ‘নীলুদা’ বলে। প্রথম থেকে আলাপের পরেই নীলরতন বাবু বুঝে গিয়েছিলেন যে বিধান রায় খুবই প্রতিশ্রুতিবান ছাত্র এবং কালে কালে খুব নামকরা ডাক্তার হবে যদি ঠিক ঠাক গাইড করা যায়। তাই তিনি নিজে থেকেই বলেছিলেন, “বিধে, সময় পেলেই বিকেলের দিকে আসিস হাসপাতালে আমার রুমে। রাউন্ড দেবার আগে তোর সাথে চা খেতে খেতে বিশেষ কেস গুলো নিয়ে আলোচনা করব”। তা এমন সুযোগ কি আর হাতছাড়া করেন বিধান রায়! তাঁরও শেখার আগ্রহ প্রচুর, প্রায় প্রতিদিন সময় পেলেই ছুটতেন ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল কলেজে – যাকে আপনারা আজকে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ বলে চেনেন। ... ...