বছরের সেই সময়টা এসে গেল – যখন বসের সাথে বসে ফর্মালি ভাঁটাতে হবে সারা বছর কি ছড়িয়েছি এবং কি মণিমুক্ত কুড়িয়েছি। এ আলোচনা আমার চিরপরিচিত, আমি মোটামুটি চিরকাল বঞ্চিতদেরই দলে। তবে মার্ক্সীস ভাবধারার অধীনে দীর্ঘকাল সম্পৃক্ত থাকার জন্য বঞ্চনার ইতিহাসের সাথে আমি প্রবলভাবে ফ্যামিলিয়ার। সেই ভাবধারার অনেক কিছু ভুলে গেলেও মূল সারবস্তু মাথায় গেঁথে আছে – “নিজের অবস্থার জন্য সর্বদাই পরকে দায়ী করবে, তুমি না টের পেলেও জানবে যে সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত সবসময় তোমার মাথার উপর ঘুরপাক খাচ্ছে”। সেই আমি যখন ক্যাপিটালিষ্ট ... ...
পর্ব – দুই
সমস্ত রাতের গন্ধে তুমি কি পতঙ্গ রঙ পাও?
“ডাচেরা ফুল ভালোবাসে” এই নিয়ে কবিতা হতে পারে, অথচ ডাচেদের নিয়ে কবিতা লেখার তেমন কিছু নেই আপাত দৃষ্টিতে। ওরা আঁকতে পারে, ডাচেদেরও আঁকতে পারি – সেই উইন্ডমিল, কাঠের জুতো, সাদা-নীল ফ্রক পরে হাত ধরে ঘুরতে থাকা তরুণী, যৌবন, কানের পাশ দিয়ে লতিয়ে নামা সোনালী চুল। এ শহরে কেউ নীল সাদা ফ্রক পড়ে না – গ্রীষ্ম পোষাক উড়িয়ে দেয় নয়ত হিম হিম করে আসা কান ঢাকা, খয়েরী ঠোঁটের ওভারকোট মাথায় নীচু করে বাতাস এড়িয়ে চলে। ... ...
এত প্রশ্ন আমাকে আগে কেউ করেছে কিনা আমার ঠিক মনে পড়ল না। সেই প্রশ্ন কর্তাদের লিষ্টে অন্তর্ভুক্ত আছেঃ
১। অ্যালাপ্যাথি ডাক্তার।
হোমিওপ্যাথি ডাক্তার নয় কিন্তু – তাদের আবার বিরাট রেঞ্জের প্রশ্ন ক্ষেপণের স্বভাব আছে। আমাদের নিমো বাস স্ট্যান্ডের নারাণ ডাক্তার আমার লাইফ প্রশ্নবাণে যাকে বলে জর্জরিত করে দিয়েছিল একবার। সেবার ডান হাতের তর্জনীর তালুর দিকে একটা কি ফোঁড়ার মতন হল – মাল আর ফাটছে না, এদিকে উইকেট কিপিং করতে গিয়ে দেদার লাগছে। বেশ ভজকট অবস্থা। বাপকে বলতেও পারছি না যে কিপিং করতে অসুব ... ...
১।
সেলিব্রিটি পাবলিকদের মাঝে মাঝে সাংবাদিকরা ইন্টারভিউ নেবার সময় গুগলি প্রশ্ন দেবার চেষ্টা করে। তেমনি এক অখাদ্য গুগলি টাইপের প্রশ্ন হল, আপনি জীবনে সবচেয়ে বড় কমপ্লিমেন্ট কি পেয়েছেন এবং কার কাছ থেকে। বলাই বাহুল্য আমি বিখ্যাত কেউ নেই, তাই আমাকে এই প্রশ্ন কেউ করে নি। কিন্তু আমি নিজে নিজেকে অনেক করেছি সেই জিজ্ঞাসা।
প্রচন্ড ভেবে ভেবে দেখা গেল - লাইফে কমপ্লিমেন্ট পাবার মতন তেমন কিছু তো করি নি! অবশ্য ক্লাস সেভেন থেকে প্রায় টুয়েলভ পর্যন্ত কার্তিক, চঞ্চল সহ অনেক জনতাকে দায়িত্ব নিয়ে ইংরাজ ... ...
গরমের দিনে মাটির কলসী, শীতের দিনে আসকে পিঠে বানাবার মাটির সড়া, সরুচাকলীর তাওয়া, সর্বসময়ের ধুনুচী, পুজোর সিজিনের ঘট, মোচ্ছবের – হব্যিষ্যির মালসা ইত্যাদি নানা মাটির জিনিসের ওয়ান স্টপ শপ্ আমাদের গ্রামে ছিল রশিদ চাচার দোকান। চাচার বাড়ির কাঠামো ছিল অনেকটা প্যারিসের ল্যুভের মিউজিয়ামের মত, মানে তিন দিক খোলা, একদিক ফাঁকা – আর যে তিন দিক ঘেরা তার দুই দিকে যথাক্রমে পুরানো এবং নতুন বাড়ি এবং একদিকে পাঁচিল। বাকি খালি দিকে রইল গিয়ে জুঙ্গিতে নামক এক দীঘি এবং চাচার অন্দর মহলের অপার রহস্য। এমন নয় যে চাচার অনেক ... ...
নব্বই এর দশকে “শাসো কি জরুরত হ্যা জ্যায়সে...” এবং “ইয়ে কালে কালে আঁখে...” এই দুই যুগান্তকারী ঢেঊয়ের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে আমাদের সাথে পরিচয় হয় ‘ক্যালোরি’ নামক জিনিসটির। তবে সেই ক্ষণে ক্যালোরির অর্থ আমাদের কাছে নিতান্তই আক্ষরিক ছিল – শক্তির একক হিসাবে। আরো খুলে বলতে গেলে যান্ত্রিক শক্তি কেবলমাত্র। পড়াশুনার গন্ডির বাইরে এই ক্যালোরি জিনিসটি নিয়ে যে নাড়াঘাঁটা করতে হতে পারে ভবিষ্যতে, সেই ভাবনা আমাদের কল্পনাতেও আসে নি। তবে কিনা ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন এই প্রবাদবাক্য মেনে অভিজ্ঞতা হল যে খাবার ... ...
আমরা প্রফেশনাল জীবনে কতটা ‘স্বাধীন’, তার কবল থেকে আমাদের ‘মুক্তি’র সংজ্ঞা কি ইত্যাদি ইত্যাদি চর্বিত চর্বণ আলোচনার প্রায় শেষের দিকে এসে সেদিন হঠাৎ করে কয়েক বছর আগে পড়া জনাথন উইলসন-এর (মূলত ক্রীড়া সাংবাদিক) একটি লেখার কথা মনে পড়ে গেল। আপাত দৃষ্টিতে আমাদের শুরুর আলোচনার সাথে ফুটবলের কোন সম্পর্ক ছিল না - কিন্তু কোথা থেকে কি হয়ে গেল – আমার মাথার মধ্যে ‘মুক্তি’ কথাটি গাঁথল এবং তার সাথে প্রফেশনাল জুড়ে থাকার জন্য মনটা হঠ করে ফুটবল-ফুটবল করে আনচান করে উঠল!
জনাথনের ততদিনে বেশ নামডাক হয়ে গেছে ফুট ... ...
ঘুরে ফিরে আবার সেই সরস্বতী পূজো চলে এলো। ইস্কুল জীবন শেষ হবার পর বিশেষ একটা মাথা ঘামাই নি কবে বা কিভাবে সরস্বতী পূজা হবে সেই সব নিয়ে। পূজো বিষয়ে আমার জীবনের রেফারেন্স পয়েন্ট ছিল বলতে গিয়ে দূর্গা পূজা। দেশে কবে ফিরব এবং দেশ থেকে কবে আবার বিদেশে ফিরে যাব, কেনাকাটা কবে হবে, কার সাথে দেখা হবে – সেই সবই মাপা হত সপ্তমী বা দশমীর দিন থেকে। এর প্রধান কারণ ছিল আমার বাড়িতে দূর্গা পূজো হওয়া। ওই এক সময় গেলে সবার সাথে দেখা – বৃহত্তর পরিবারের আরো বিস্তৃত আত্মীয় পরিজনের সাথে দেখা করতে গেলে তার থেকে ভালো সুযোগ আ ... ...
আমি তখন নিজের শহর খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমার শহরে একটা নদী থাকবে, অসংখ্য গাছ, বৃষ্টিভেজা পাখিরা জানালার কার্ণিশে এসে বসবে, রোদ ঝলমলে দিনে নদীর পাশ দিয়ে হাঁটতে বেড়ানো যাবে আর তৃষ্ণা পেলে ঢেউ খেলানো জলের দিকে মুখ করে বসানো চেয়ারের একটা কফির দোকান থেকে নিয়ে নেওয়া যাবে পছন্দের কাগজের কাপ – আরো অনেক কিছু – শহর আমাকে নষ্টালজিক করে তুলবে –
নষ্টালজিক কাকে বলে? আমার তো কোন শহর ছিল না কোন দিন – তাহলে শহর কি করে আমাকে ফিরিয়ে দেবে নষ্টালজিয়া? আমি ঠিক জানি না – নাকি আমি প্রকৃত অর্থে জানিই না যে নষ্টালজিয়া ... ...
ইস্কুলের সেক্রেটারীর কি মাহাত্ম্য সে বোঝার বয়স তখনো হয় নি, কিন্তু পটল বিষয়ীর মহিমা বোঝার মত বয়স হয়ে গিয়েছিল। সবে আনন্দমার্গ ইংরাজী মিডিয়াম স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে মেমারী বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দিরে ক্লাস ফাইভে ঢুকেছি – সেক্রেটারী কি জিনিস জানা নেই – পটল বিষয়ীকে চিনি না। এমন অবস্থায় দুরদার করে চলে এল হাইস্কুলে আমার প্রথম সরস্বতী পুজো আর তখনি একদিন দুম্ করে সেক্রেটারী পটল বিষয়ীর ব্যাপারটা ক্লীয়ার হয়ে গেল। এক সিনিয়ার দাদা ফিসফাস করে আমাদের জানালো পটল বিষয়ীর সেক্রেটারী রয়ে যাবার পিছনে মূ ... ...