মাছ ধরার সাথে আমার সম্পর্ক মোটামুটি ডিকুরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ডিকুরি হল আমার বাড়ির পাশের পুকুর যার অন্য পাড়ে আমাদের যৌথ পরিবারের পুরানো বাড়ি। সেই অর্থে ডিকুরির একদিকে আমার বাল্যকাল আর অন্যদিকে কৈশোর সহ যৌবন। আমাদের নিমো গ্রামের অন্য পুকুর গুলি ছিল - পচাগেরে, বিশ্বেসদের ডোবা, হাজরাদের ডোবা, বামুনগেড়ে, বড় বামনা, ছোট বামনা, লালতেগড়ে, জুঙগিইতে, চেয়ো, ঠাকুরঝি এই সব। গাঁয়ের সীমানায় আছে পূবে গরাঙ্গে, পশ্চিমে বনধারা, উত্তরে ত্রিশূল ও দক্ষিণে পদ্দেরে। বলাই বাহুল্য এই সব পুকুরের নামকরণের ইতিহাস আমরা ক ... ...
অনেকদিন ইউরোপে বসবাস হয়ে গেল—কোম্পানির চাকরির দৌলতে এবার ট্রান্সফার হয়ে যেতে হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি—ছোট্ট দেশ, আগে কোনওদিন যাইনি, তাই হালকা এক উদ্বেগ থেকেই যায় তা সে যতই ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করি। মানুষ অভ্যাসের দাস—এই কথাটা আমাদের কেন, প্রায় সবারই শোনা। কিন্তু এর মর্মার্থ অনুভূত হয় এই এমনই পরিবর্তনের সময়। ভারতবর্ষের মানুষ এবং জীবনের বেশিরভাগ সময়টা এখানে কাটাবার পর নিশ্চই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আমাকে ‘কালচারাল শক’ দিতে পারবে না। তবে কিনা দীর্ঘদিন ইউরোপবাসের পর একটা অভ্যাস, একটা ... ...
আমি গণিতবিদ নই – কিন্তু গণিত ভালোবাসি। গণিতজ্ঞদের দিকে তাকাই সম্ভ্রমের চোখে – আর ঠিক এই কারণেই পাশের গ্রামে ফিরোজ, বন্ধু সুমন এরা ছিল আমার ঈর্ষা মিশ্রিত বিষ্ময়ের পাত্র। তাই এই লেখা শুরু করার আগেই সাফাইটা গেয়ে দিই – বলে রাখি যে এই প্রবন্ধ কোন নতুন তথ্য দেবার জন্য নয়, নয় কোন গালভরা গবেষণার গল্প বলার জন্য। এটা নিছকই সেই সব তথ্য, ঘটনা আর নাম সমৃদ্ধ, যা অনেক সময় আমরা খেয়াল করি না। অর্থাৎ ধরুন আপনি নিজের জামাটি রোজ পড়েন, কিন্তু সেই জামায় কয়টা বোতাম আছে তা কখনো খেয়াল করেছেন কি? এই লেখাও তেমন হবে আর কি! ... ...
আমাদের বন্ধু ব্যাচে হাবাই সর্বপ্রথম অবৈধ সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিল ক্লাস ইলেভেনে পড়ার সময়। ক্ষ্যাপা মাষ্টারের কাছে প্রাইভেট টিউশনি শেষ করা এবং ইস্কুলের গণ্ডী পেরোবার সীমারেখা থেকেই হাবা-র কাছে তার নিজেরই ‘রঞ্জিত’ নামটি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছিল। ক্ষ্যাপা মাষ্টার আজ আর নেই – আমাদের গ্রাম থেকেই টিউশনি পড়িয়ে ফেরবার পথে জি টি রোডে লরির ধাক্কায় প্রাণ হারাণ। এই ঘটনা আমাদের বিষাদগ্রস্ত করেছিল কিছুদিন কারণ খ্যাপা মাষ্টার আমাদের নিমো গ্রামের অনেক ছেলেরই কৈশোরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। আমরা তাই ক্ষ্যাপা ... ...
১।
সাদা বকেদের ভিতর দিয়ে হেঁটে যাই
বকের সাথে চেনাশুনা নেই মানুষের
তবুও কারো কারো গায়ের গন্ধে সরে না ওরা
জানি না ফেরার সময় হয়ে এলে
ঠিক কতখানি ক্লান্ত হওয়া প্রয়োজন
তোমরা কি ফিরে যাবে না? ... ...
বাউল নিয়ে আমাদের সবারই কিছু না কিছু ভাবনা আছে – আর সেই ভাবনার শুরু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের গান দিয়ে। এমনকি এটাও বলা যেতে পারে বাউল দর্শন, বাউল ধর্ম এই সব কিছুর থেকে আগে আমাদের মনের কাছা কাছি থেকে যায় বাউল গান। বাউল দীর্ঘদিন ধরেই আমার প্রিয় বিষয়, তাই অনেক দিন যাবতই ভাবছি এই নিয়ে কিছু লিখলে কেমন হয়! কিন্তু প্রশ্ন হল কিভাবে শুরু করা যায়? একটা প্রবন্ধে তো আর সম্ভব নয় বাউলদের গান থেকে শুরু করে তাদের জীবন ধারা সব কিছু নিয়ে আলোচনা করা! তাই আমি চেষ্টা করব যতটা পারা যায় বাউল সম্পর্কীয় নানা দিকগুলো ছুঁয় ... ...
অনেকদিন ধরে একটি ম্যানুয়াল তৈরীর কথা ভাবছি। সহজলভ্য ইন্টারনেট কানেকশনের যুগে কিভাবে ইন্টারনেট আঁতেল হিসাবে নাম করা যায়। অতীব কপচানো জিনিস, হয়ত আমেরিকা মহাদেশে এমন বই-এ বাজার ছেয়ে গেছে – কিন্তু সাহেব আর আমাদের মনস্তত্ত্ব আলাদা হবার জন্য, স্ট্রাটেজীতে কিছু ঈষৎ পরিমার্জন দরকার। আমি এটাও জানি না যে কোন বাঙালী ফেসবুক গোষ্ঠী অলরেডী তাদের গুপ্ত সমিতিতে এমন ম্যানুয়াল চালু করেছে কিনা! আবার এমনও হতে পারে যে অলরেডি আঁতেল বলে মার্কেটে নাম ছড়িয়ে ফেলেছেন এমন কেউ এই ম্যানুয়াল উল্টোলেন – কিছুটা কৌতুকে ও কিছুটা ... ...
প্রথম দৃশ্য
হেমাঙ্গবাবু - হ্যাঁ গো ভুতো, তোমাকে যে আমার মেয়ের জন্য কবে থেকে একটা পাত্র দেখতে বলছি তার কি হল?
ভুতো - আজ্ঞে দেখুন হেমাঙ্গবাবু, ওই যে কথায় আছে না “ঘর লেপ্যা মুছ্যা, আতুর ঘর বানাইয়া, মা ষষ্ঠীর কাছে বাচ্যা চাইলেই তো আর বাচ্যা পয়দা হয় না! তার জন্যি নয় মাস দশদিন অপেক্ষা করতে হয়!” তবে হ্যাঁ, কাজ আরম্ভ করে দিয়েছি।
হেমাঙ্গবাবু -কাজ আরম্ভ মানে? একি জলা মাঠে বাড়ি হচ্ছে নাকি যে আগে মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে তবে কাজ শুরু করা যাবে? ... ...
ললিত স্যার না থাকলে দেবু দত্তগুপ্তর লেখার সাথে হয়ত কোন দিনও পরিচয় হত না। তখন দশম শ্রেণী, স্যার একদিন আলোচনা প্রসঙ্গে একটি বইয়ের কথা বললেন, যা সারাংশ দিলেন তাতে করে খুবই আগ্রহ জন্মাল। এটাও বললেন যে বইটা আমাদের ওই বয়সী ছাত্রদের সবারই পড়া উচিত অন্তত একবার করে। ওই বই তখন আমাদের ওদিকের দোকানে বিক্রী হত না – তাই স্যারই আনিয়ে দিলেন কোথা থেকে যেন। হাতে এসে পড়ল লাল-কালো প্রচ্ছদের একশো তিরিশ পারাত বইটি – “যে পাহাড়্গুলি ডিঙোতে চাই”। আমাদের এলাকা তখন প্রবলভাবে বামপন্থী – স্কুলের স্যাররাও বেশীর ভাগ বাম মতাদর ... ...
চুপিসারে কেউ আসে না – নীরবে চলে আসার মাহাত্ম পাশের বাড়ির কালো বেড়ালটাও শিখে গেছে। আমার কোন পোষা গাছ নেই, আমার প্রিয় গাছে ফুল আসে, ফুল ঝরে যায়। বিষবৃক্ষের সাথে নিয়মিত সম্পর্কে জড়িয়ে পরে ঘুম ভাঙা চোখ। বিষবৃক্ষে মিষ্টি ফল হয় – দশ মিনিট যায়, পনের মিনিট পরে আমি বৃক্ষ ভুলে যাই। বাড়ির সামনের গাছটায় লেগে আছে গত রাতের জল – অথচ ওই পাতা, যা আমাকে অনেক বিভক্ত করেছে, তা পিচ্ছিল হবারই কথা ছিল ।
বৃষ্টির শব্দ – চেতনা – ফোঁটা থেমে গিয়েছিল ভোর রাতের অনেক আগে। জলের পরেও সিল্ক এসেছে, আধভেজা দরজা গুডনাইট বলেছে, ... ...