নীলমাধব বৃদ্ধ হয়েছেন। নিজে গোলযোগ সইতে পারেন কি না, জানিনা। তবে তাঁকে নিয়ে অভ্রভেদী কোলাহল শুরু হয়েছিলো সেই কবে। উনিশ বছর পরে কায়াপলট হবে দেবতার। তাই গত বছর তিনেক ধরে সাজো সাজো প্রস্তুতি চলেছিলো চারদিকে। পুরীর জগন্নাথদেবের নবকলেবর হলো গত বছর রথযাত্রার সময়। যে শহরের স্থায়ী লোকসংখ্যা পঞ্চাশ হাজারও নয়, সেখানে পঞ্চাশ লাখ লোক এসে পুণ্য করে গেলেন। কোনও বড়োসড়ো দুর্ঘটনা হলোনা। পণ্ডাসমাজ বনাম ব্যুরোক্রেসি, নানা নাটকনবেল, মুর্গি লড়াই হলো। নবীনবাবুর আশীর্বাদে বাবুরা জয়ী হলেন। জনতাও বাবুদের সঙ্গে ছিলো। একুশ ... ...
"....অনেকদিনের মনের মানুষ যেন এলে কে
কোন ভুলে যাওয়া বসন্ত থেকে...."
-------------------------------
চার দশক আগের কথা। সদ্য কলেজ ছেড়েছি। চাকরিতে তখনও ঢোকা হয়নি। একটা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলুম রাঁচি। বি আই টি, মেসরায় ছিলো পরীক্ষাকেন্দ্র। ফেরার পথে একটু দিক বদলে বুটি রোড ধরে মোরাবাদি। ভাঙাচোরা রাস্তা। কিছু ট্রেকার, কিছু রিকশা। বাকিটা এগারো নম্বর। যাবো নিশ্চিন্দিপুর, অর্থাৎ ঠাকুর পাহাড়। মোরাবাদি ধরে যেতে যেতে বাঁদিকে ছোটো খাপরা, খড়ের প্রাসাদ। ডানদিকে মস্তো বাগানঘেরা বাংলোবাড়ির সারি। দেউড়ি ... ...
ডিসেম্বরের এই সময়টা জামশেদপুরে একটু একটু ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করে। রোদকে মনে হয় ডেকে বলি, বুলিয়ে দিও যাও গো এবার যাবার আগে। শীত পড়েনা। তবে সবজিবাজার আর ভোরবেলার কুয়াশা মনে করিয়ে দেয় এই শহরের সব চেয়ে প্রার্থিত ঋতুটি এবার আসবে। ছুটির দিন মানে এগারোটার মধ্যে বাচ্চাকাচ্চা, টিফিনবাক্সে খাবারদাবার নিয়ে ডিমনা লেকে জলের ছায়ায়, দোমুহানি'র শালবীথি বা জুবিলি পার্কে দেওদারের ছায়ায় ঘাসের কার্পেটে সাঁঝ ঢলা পর্যন্ত গড়াগড়ি দেওয়া। আমাদের গ্রামে রোববার হলে মনেই পড়েনা পৃথিবীতে কোথাও কোনও দুঃখ, শোকের লাভাস্রোত কখনও গড় ... ...
কবিরা খড়া বজার মেঁ, মাঁগে সবকা খ্যয়ের ।
না কাহুসে দোস্তি, না কাহুসে ব্যয়ের ।।
('বজার' মানে মানে এই সমাজবিশ্ব। কবির সেখানে দাঁড়িয়ে সবার মঙ্গল কামনা করছে। তার সঙ্গে কারও বন্ধুতা নেই, শত্রুতাও নেই কারও সঙ্গে।)
ছোটবেলায় পড়া কবিরের অনেক দোহার থেকে এই দোহাটি আলাদা করে মনে থেকে গিয়েছিলো। নির্গুণ ভূমাদর্শনের সব কথা এই কটা শব্দের মধ্যে ধরে ফেলা কবিরের পক্ষেই সম্ভব। বয়সের বিভিন্ন স্তরে এই শব্দনির্মাণটি বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। ... ...
দৃশ্য ১. একটি আট বছরের বালক প্রথম সিনেমা দেখতে গেছে। বাবার সাইকেলের সামনে বসে ফেরার সময় অসংখ্য প্রশ্ন করে যায় তারাপদকে নিয়ে। কেন সে ফিরে যায়। সে যায়ই বা কোথায়, ফেরেই বা কোথায়? বালক তখনও পথের পাঁচালি দেখেনি।
দৃশ্য ২. বাবা মা আলোচনা করছেন। সত্যজিৎ না তপন, কে দর্শককে বেশি কাছে টেনে নিতে পারেন। বালক বোঝেনা, কেন মা ক্ষুধিত পাষাণ আর ঝিন্দের বন্দীর জাদুর কাছে এতো নিবেদিত। তাঁরা কিছু আগে মহানগর দেখে এসে নীরবে মুগ্ধ হয়ে বসে আছেন। না, মহানগরকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন নয়। কিন্তু মা বলেন, সত্যজিৎ দর্ ... ...
"না উড়ে থেমেছো পাখি, সমস্তটা ওড়ো
কীভাবে উড়ছো তুমি, কীরকম বন্ধ হয়ে আছো
এভাবে পালকে ওড়ো
নানান আকারে একবার....."
(হাজারদুয়ার- স্বদেশ সেন)
--------------------------------
রাতের বেলা সুর যেন একটু অন্যভাবে কাছে আসে। নৈঃশব্দ্যের ফ্রেমে বাঁধানো থাকে সোনার রেখায় ফুলকারির আঁকিবুকি। মনে পড়ে কি শংকর জয়কিশনের স্প্যানিশে অমোঘ স্ট্রোকের পেলব মায়া। ধানি সারেগামাপা... ধা পা... রাজ কাপুর নেমে যান স্টুডিয়োতে সাজানো চাঁদজাগা ছায়াময় গাছগাছালির আঙিনায় হ্যামকটিকে দুলিয়ে দিয়ে... নর্গিস তাঁর দীর ... ...
.....এখন সকলে বোঝে, মেঘমালা ভিতরে জটিল
পুঞ্জীভূত বাষ্পময়, তবুও দৃশ্যত শান্ত, শ্বেত,
বৃষ্টির নিমিত্ত ছিলো, এখনও রয়েছে, চিরকাল.... (বিনয়)
পঁচিশে বৈশাখ এখন একা আসেনা। অথবা একজন মাত্র মানুষের স্মৃতি নয় তা। রাজেন্দ্র চোলের মন্দির বা রাগ য়মনকল্যাণের মতো তা বহুদিন ধরে গড়ে উঠেছে তিলে তিলে। যে সব মানুষগুলি রবীন্দ্রছায়ার আশ্রয়ে থেকে, একের পর এক ইঁট গেঁথে, বাঙালির তথাকথিত সাংস্কৃতিক সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন, পঁচিশে বৈশাখে তাঁরাও ফিরে আসেন। মৌন, উজ্জ্বল, অশরীর, স্মৃতির মুখ হয়ে।
ধরা য ... ...
'.... আমাদের সময়কার কথা আলাদা। তখন কে ছিলো? ঐ তো গুণে গুণে চারজন। জর্জ, কণিকা, হেমন্ত, আমি। কম্পিটিশনের কোনও প্রশ্নই নেই। ' (একটি সাক্ষাৎকারে সুচিত্রা মিত্র)
---------------------------
বাবার কাছে গল্প শুনেছি। সাতচল্লিশ-আটচল্লিশে সেন্ট পলস কলেজে পড়াকালীন তিনি সেখানে ছাত্রসংগঠনের সাংস্কৃতিক সচিব ছিলেন। সেই সময় ভবানীপুরের দীর্ঘ সুদর্শন ছেলেটি, যে গল্প লেখে ( দেশ পত্রিকাতে ইতোমধ্যে তাঁর গল্প প্রকাশিত হয়ে গেছে) আর আবাল্য বন্ধু 'গায়ক' সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের চাপে এদিকওদিক গান গেয়ে বেড়ায়, তার কাছ ... ...
".... Film is not made, film is built. আমি চিত্রপরিচালক নই, আমি চিত্রস্রষ্টা। চিত্র সৃষ্টি করে একজন-সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন চিত্র সৃষ্টি করে, তাঁরা (নিছক) চিত্রপরিচালক নন।" (ঋত্বিক ঘটক)
----------------------
তিনি যতোদিন বেঁচে ছিলেন, ততোদিন ব্যক্তি ঋত্বিক বিতর্কের কেন্দ্রে থাকলেও স্রষ্টা ঋত্বিক সেভাবে আগ্রহীদের উপযুক্ত মনস্কতা আকর্ষণ করেননি। ঋত্বিককে কেন্দ্র করে মনস্তত্ত্ব, নন্দনতত্ত্ব, চিত্রনির্মাণ ইত্যাদি নানা বিষয়ের উদ্দীপক চর্চা শুরু হয়েছে একটু ধীরে। কিন্তু যখন তা শুরু হয়েছে, তখন থে ... ...
পরাণপ্রিয়, কেন এলে অবেলায়....
-------------------------------
'মনে এক রমণীর বসবাস সকল সময়।
তাকে ভালোবাসতেই হয়।
বাইরের সব ভালোবাসা
তাই ভাসা ভাসা।
তুমিও যখন এসো ঘরে
দেয়ালেই শুধু ছায়া পড়ে
ঘরের ভিতরে তুমি নেই।
যা বলি তোমাকে,
বলি সে-রমণীকেই। ' ( সঞ্জয় ভট্টাচার্য)
প্রতিটি রাগের অন্দরমহলেই হয়তো এক রমণীর বসবাস সকল সময়। হয়তো আমার মনে শুধু তার ছায়া পড়ে, ঘরের ভিতর সে আসেনা। তবুও আমার সকল গান.....