আধুনিক বাঙালিকে রামায়ণ বা ভাগবতের বাইরে গিয়ে অনেক বই, অন্য বইপড়ার নেশা যিনি ধরিয়েছিলেন তিনি বঙ্কিমচন্দ্র । তাঁর পাঠযোগ্য সমকালীন বই প্রায় সবই ছিলো য়ুরোপীয়। তাঁর পড়ার মতো বাংলা বই তখন বিশেষ লেখা হয়ে ওঠেনি। বিদ্যাসাগর মশায়ের শকুন্তলা পড়ে বলেছিলেন, কান্নার জোলাপ। তবু রমেশচন্দ্রের মেয়ের বিয়েতে গিয়ে তৎকালীন বাঙালি মননের সম্রাট সেই একুশবর্ষীয় তরুণের গলায় নিজের মালাটি পরিয়ে দিয়েছিলেন । সেই বিখ্যাত উক্তি, ' রমেশ, তুমি সন্ধ্যাসঙ্গীত পড়িয়াছো?' বিপুল পাঠের জগতের মধ্যে কোঁত, মিল, স্কটের সঙ্গে রবিবাবুর প্রথ ... ...
প্রিয় লেখককে নিয়ে মুগ্ধতা খুব স্বাভাবিক। যেমন প্রিয় নায়ক বা প্রিয় খেলোয়াড় । এই 'প্রেয়তা' আসলে কাঁচের দেওয়াল, চোখের কাছে স্পষ্ট, বাধাহীন, স্পর্শসম্ভব । কিন্তু ঘটনাটা সেভাবে ঘটেনা। চোখ ছুটে চলে, মনটাও; কিন্তু ছোঁয়া যায়না। কবি বা লেখকরা যে চরিত্র বা অলীকজগতকে তাঁদের সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন, তাঁরা নিজেরা কিন্তু সেই জগতের অধিবাসী ন'ন। ধরা যাক, সেই কিম্বদন্তী সময়ের শীর্ষেন্দু। সদ্য কলেজে গিয়েছি তখন। প্রতি সপ্তাহে 'যাও পাখি' ছিলো আমাদের বন্ধুদের আকাঙ্খার ঘর। আমি হয়তো তার আগে 'পারাপার' ... ...
দু'তিনদিন ধরেই ঝিরঝিরে ওলটপালট জলের ছুটোছুটি। রোদ নেই, রবি নেই, ভাদ্রের উষ্ণতাও ভিজে ভিজে শীতল হয়ে গেছে। দুদিন ধরে বেলুরু-হালেবিদুতে মজে ছিলুম। সারাদিন মেঘলা ছায়ায় এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরের দাওয়ায় গিয়ে চুপ বসে থাকা। সর্বাঙ্গ দিয়ে শুষে নেওয়া আমার ভারতবর্ষ। তবু শনিবারের অপেক্ষা ছিলো, ভাটরোগের প্রকোপ বেশ চেপে বসে ছিলো ভিতর ভিতর।
------------------------------------------------
যতোদিন দক্ষিণদেশে ছিলুম, ততোদিন হয়নি। নিজামের দেশে আমার বাড়িতে একটা জমপেশ ভাট জমেছিলো বেশ কিছুদিন আগে । কাবলিদ ... ...
(জর্জদা'র জন্মদিনে যা মনে এসেছিলো)
তোমারি দেশের আকাশ ও যে জানে,
তোমার রাতের তারা,
তোমারি বকুলবনের গানে ও দেয় সাড়া-
নাচে তোমারি কঙ্কণেরই তালে.....
---------------------------
দুই বন্ধু বসে গান শুনছিলুম । দামোদর পালুসকর সাহেবের 'শ্রী', "হরি কে চরণকমল"। যাঁরা হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্বন্ধে সামান্যতম খোঁজ রাখেন তাঁদের এই গানটি সম্পর্কে নতুন কিছু বলার নেই। শতবার শুনেছি, আবার শুনবো। বন্ধু বললেন এই স্তরের 'শ্রী' আর শুনিনি। আমি ভাবি একবার আমীর খান শোনা যাক। ... ...
মাতৃগর্ভেই মানুষের প্রথম সমুদ্রদর্শন । নোনাজলের স্বাদগন্ধ অনেকটা রক্তের মতো । অনঙ্গ অন্ধকারে হাত মেলে, পা ছড়িয়ে, অন্ধকারের মতো শীতল চোখ ছুঁয়ে ছুঁয়ে মায়ারুধির শ্যাওলা মেখে পৃথিবীতে নেমে আসা । ক্রমশঃ ট্রেনের বাঁশির স্বরে বেড়া ভাঙার আর্তকান্না, আমায় তুই আনলি কেন, ফিরিয়ে নে ... ...
একটা ছবি তৈরি হয়েছিলো ১৯৫৫ সালে, নাম ' ফান্টুস'। বড়ো কত্তা সুর দিয়েছিলেন এই ছবিটিতে । অনেকের মনে থাকবে " ইয়েহ দর্দভরা অফসানা"। তিনি প্রায় একই সময়ে এই ছবিটি আর 'প্যাসা'র সুরও করছিলেন । 'প্যাসা'তে বড়োকত্তার অনুমতি নিয়ে গুরু দত্ত পঞ্চমকে বলেছিলেন হার্মোনিকায় ব্যাকস্কোর তৈরি করতে । পঞ্চমের তখন ষোলো বছর বয়স । তিনি তো রীতিমতো পুলকিত হয়ে প্রত্যেকদিন নানা সুরের প্যাটার্ন তৈরি করছেন । দিনের শেষে সেগুলো বাবাকেও শোনান । ১৯৫৬তে 'ফান্টুস" মুক্তি পায় । তা বড়োকত্তা পুত্রকে নিয়ে ছবিটি দেখতে গেছেন । তখনই পঞ্চম ... ...
হাজার হোক, গোবিন্দমাণিক্যের রক্ত ; নির্ভেজাল রাজরক্ত, তা নিয়ে তো কারো সন্দেহ নেই । কী আর করা যাবে ? খুড়ো-ভাইপোর লড়াইয়ে ইঁটকাঠের সিংহাসনটা হয়তো হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু মানুষের হৃদয়ে যে সিংহাসন পাতা তাতে পিতা-পুত্র, দুজনেরই বাঁধা মৌরসিপট্টা । নয়তো পিতার কবে একশো পেরিয়ে গেছে, আর পুত্র আজ পঁচাত্তর । চোখের সামনে তাঁরা আর নেই । কিন্তু ছড়িয়ে আছে তাঁদের সুরসাম্রাজ্যের নিসর্গ পত্তন । তাঁরা আজও রাজপুত্র ।
-------------------------------
সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম । কিন্তু লড়াই করে অর্জন করতে ... ...
বাসুকির ব্যথা
-------------------
তখন সবে সন্ধে দশটা বাজছে ।
সারাদিন সূর্যের চুয়াল্লিশ ডিগ্রি উষ্ণতার স্নেহে আমরা গদগদ হয়ে গলেই পড়েছি । শুধু নারদের কমন্ডলুটি নেই । শরীরটা যে এখনও পুরোপুরি ত্যাগ করা যায়নি তার কিছু লক্ষণ অবশ্য টের পাওয়া যাচ্ছে ।
আমার লেখালিখি এমনিতে ডেস্কটপেই । কিন্তু যে ঘরটিতে ঐ বস্তুটি রয়েছে‚ সেখানে শীতযন্ত্র নেই । এমতাবস্থায় যতোটুকু দম বেঁচে থাকে তার সদ্ব্যবহার ল্যাপটপের পঞ্চমুন্ডিতে বসেই সারার চেষ্টা করি‚ শোবার ঘরে‚ গদিতে আধশোয়া হয়ে । সদ্য সদ্য ভ ... ...
মে-দিবসের গপ্পো
--------------------------
এই কাজটা অনেকদিন ধরে করছি, কিন্তু এখনও নির্দ্বিধা হতে পারিনা ।
মানুষের মূল্যায়ণ ! না, শুধু তার কাজের ? কিন্তু কাজটি তো মানুষের সঙ্গে ওতপ্রোত । কীভাবে করা যাবে এই কাজ ? বাংলায় অনেকগুলি শব্দ আছে, জাজমেন্টাল, ওপিনিওনেটেড, বায়াসড, ওপন, ফোকাসড, স্ট্রাকচার্ড, পজিটিভ, টাইরান্ট, নানা রকম মানে আছে এই সব শব্দের । যাঁরা চাকরি করে খান, তাঁরা নিজের নিজের উপরওয়ালা সম্বন্ধে এ রকম নানা বিশেষণ ব্যবহার করেন । বসের তো দুরকম অবতার রয়েছে । এক, নিত্যদ ... ...
ফাগুনের শুরু হতেই.......
----------------------------
আবার বছর ত্রিশ পরে
তার কথা লেখা হয় যদি,
আবার বছর ত্রিশ পরে................
একটা বিয়ের আমন্ত্রণপত্র ছাপা হয়েছিলো ঠিক তিরিশ বছর আগে । শুরুতে ছিলো প্রিয় কবির এই কবিতাংশটি , " সবিতা, মানুষজন্ম আমরা পেয়েছি, কোনও এক বসন্তের রাতে...." ;
যাঁরা বুঝেছিলেন, তাঁরা জানতে চাননি, কেন এই কবিতাটি এলো । বাকি কিছু লোকজন হয়তো ভেবেছিলেন এই সব কবিটবির কারবারই আলাদা, না বোঝাই ভালো । অল্প কয়েকজন বয়স্য জানতে চেয়েছিলো, " এই সব ... ...