আমি খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছিলাম পৃথিবীর কোন দেশের টুরিষ্টদের সবচেয়ে বদনাম – কিন্তু সমস্যা হল এই র্যাঙ্কিং এর তো কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, আর তা ছাড়া নিজের দেশকে কে আর খারাপ বলতে চায়! তবুও দেখেছিলাম যে শিষ্টাচার বিহীন টুরিষ্ট কিছু কিছু দেশের নামের পুনরাবৃত্তি হয়েছে – যেমন ইংল্যান্ডের ছেলে ছোকরাদের। যারা ফুটবল নিয়ে মাথা ঘামান তাঁরা জানেন যে সেই ফুটবল ফলো করতে গিয়ে নানা দেশে ঘুরে এই ভাবে এরা হুজ্জুত বাধিয়ে বেড়ায়! এদের তো ‘ফুটবল হুলিগান’ ও বলা হয়। এছাড়া আছে রাশিয়ান টুরুষ্ট – এদের ব্যবহার নাকি খুব খারাপ – জার্মান টুরিষ্টদের নাম আছে, অষ্ট্রেলিয়ানদের নাম আছে তালিকায় – চাইনীজ টুরিষ্টরা তো আছেই - এবং বেশ কিছু তালিকায় ভারতীয় টুরিষ্টদের নামও আছে শিষ্টাচার মেনে চলে না বলে। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। ... ...
আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের পুজো বলে ঠাকুর দালানে পুজোর কাজে সাহায্য করার লোকের অভাব হয় না। পিসিমণি বা বড় দিদিরা ঠাকুর দালানে বসে ফল কাটা কুটি করে – আর ওপাশে কম বয়েসীরা ফুল ইত্যাদি দিয়ে মালা গাঁথে, চন্দন বাঁটে বা বেল গাছের ডাল থেকে সুন্দর করে নরম দেখে তিনটি করে বেলাপাতা গুলি সাজিতে সাজিয়ে রাখে। চন্দন দুই প্রকারেরই থাকে – শ্বেত এবং রক্ত চন্দন। আর বলাই বাহুল্য ঠাকুরের জিনিসে যারা হাত দেবে তাদের অবশ্যই স্নান করে কাচা জামা কাপড় পরে আসতে হবে। হাসি, ঠাট্টা, গল্প করতে করতে কাজ হয়। ছোট বেলায় এই দালানে খুব একটা বসে থাকার সময় থাকত না এই সময় – কিন্তু বড় হয়ে বিদেশ থেকে ফিরে গেলে এমন সময়টাই খুব সদব্যবহার করা যেত সবার সাথে ক্যাচ-আপ করার জন্য। ... ...
লৌহ স্তম্ভ কেন ক্ষইছে না তা খুঁজতে গেলে কি কি জিনিস টার্গেট করবে গবেষকরা? প্রথম ধারণা করা হবে যে আবহাওয়ার একটা ব্যাপারটা আছে। মানে যেখানে এই স্তম্ভ খাড়া ছিল আগে এবং এখন দিল্লিতে, সেখানে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা কি স্তম্ভের জন্য ভালো ছিল? অর্থাৎ বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশী নেই – শুকনো বাতাস! যেই কারণে দীঘার হোটেলের বারান্দার গ্রীল কলকাতার হোটেলের গ্রীলের থেকে অনেক বেশী তাড়াতাড়ি ক্ষয়। দ্বিতীয়ত, সেই প্রায় ষোলশো বছর আগে যারা বানিয়েছিল ওই স্তম্ভ তারা কি ধাতুর সাথে অন্য কিছু স্পেশাল মিশিয়েছিল? তৃতীয়ত, ধাতুর সাথে বানাবার সময় কিছু না মেশালেও পরে কি স্তম্ভকে সুরক্ষা দেবার জন্য তাতে কিছু্র প্রলেপ বুলিয়েছিল? ইত্যাদি ইত্যাদি। ... ...
শত্রুপক্ষের ওরা আমাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছিল – আমরা গিয়ে আশ্রয় নিলাম জঙ্গলের মধ্যে সেই বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে। একটানা সারাদিন, এমনকি গোটা সপ্তাহ ধরেও এক গলা জলে দাঁড়িয়ে থাকা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দলে ছিল একজন রেডিও অপারেটর মেয়ে যে মাত্র কয়েকমাস আগে মা হয়েছে। সেই বাচ্চার তখনো স্তন্যপান করার বয়স, কিন্তু ওদিকে মেয়েটির বুকে দুধ নেই – খেতেই পাচ্ছি না আমরা দিনের পর দিন তো কি করে বুকে দুধ আসবে! আর তাই দুধ না পেয়ে বাচ্চাটা মাঝে মাঝেই কেঁদে উঠছিল। কিন্তু তখনকার পরিস্থিতিতে বাচ্ছার কান্না ছিল আমাদের কাছে অত্যন্ত বিপদজনক – কারণ শত্রুপক্ষ যদি একবার কান্না শুনতে পেয়ে যায় তাহলে কেউই বাঁচব না আর – আমাদের তিরিশ জনের দলের একজনও নয়। আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হল – গেলাম সেই মেয়েটির কাছে – তার দিকে তাকালাম – কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউই মুখ ফুটে বলতে পারল না কমান্ডারের সিদ্ধান্তের কথা। কিন্তু মেয়েটি ততক্ষণে নিজেই বুঝতে পেরে গিয়েছিল – বাচ্চাটিকে যাতে করে বেঁধে সে বহন করছিল সেটা ধীরে ধীরে নামালো – ... ...
ডাঙ হায়াঙ নিরর্থ এক বিখ্যাত হিন্দু পুরোহিত ছিলেন সেই সময়কার – তিনি তানহা লট ছাড়াও বালিতে আরো বেশ কিছু মন্দির স্থাপন করেছিলেন তাঁর সেই তীর্থ যাত্রার সময় – যে যাত্রাপথে তিনি জাভা থেকে বালি দ্বীপে এসেছিলেন। বালিতে পোঁছবার পর নাকি নিরর্থ নিজের ভিতর থেকে ভগবানের নির্দেশ পেয়েছিলেন কোথায় কোথায় মন্দির স্থাপন করতে হবে – আর সেই নির্দেশ পালন করেই তিনি মন্দির স্থাপন করেন তানহা লট-তেও। ... ...
লক্ষ্য করে দেখেছেন কি যে ইংরাজীতে এর বানান ‘Whiskey’ এবং ‘Whisky’ এই দুই ভাবেই লেখা হয় – মানে একটা ‘ই’ এর তফাত! টাইপো ভাবছেন বা ভাবছেন আমেরিকান ইংলিশ? না, আদপে ব্যাপারটা তা নয়। মনে রাখবেন এটা কোন আইন নয়, কিন্তু হুইস্কির ইতিহাসে আগে একটা কাষ্টম ছিল যে, ‘Whisky’ লেখা হত স্কচ্, কানাডিয়ান এবং জাপানীজ হুইস্কির জন্য। আর ‘Whiskey’ লেখা হত আইরিশ এবং আমেরিকার হুইস্কির ক্ষেত্রে। কিন্তু আজকাল অবশ্য সেই কনভেনশন আর মেনে চলা হয় না – ... ...
কোভিডের পর থেকে শুধু আমেরিকায় ‘ওয়েল ফিল্ড সার্ভিস’ এর সাথে যুক্ত চাকুরী হারা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ লোক। শুনেছি আমেরিকায় আগে মেটাল-মাইনিং ইন্ডাষ্ট্রিতে ইউনিয়ান ইত্যাদি কিছু ছিল, হালকা টাকা কড়ি দিয়েছে। কিন্তু ওয়েল ফিল্ড সার্ভিসের লোকগুলোর কি হয়েছে? সব পিচবোর্ডের বক্সে করে সার্টিফিকেট আর ছবি প্যাক করে বাড়ি গেছে। দুঃখজনক? নিশ্চয়ই! কিন্তু কিছু করার আছে? না – নেই, এটাই বাস্তব। তবে এই নিয়ে তেল ব্যবসার সাথে যুক্ত যাদের চাকুরী গেছে তারা বিশাল আন্দোলন ইত্যাদি কিছু করার কথা ভাবে নি। কারণ তারা চাকুরী করতেই ঢুকেছিল এই অনিশ্চয়তা জেনে। যেকোন দিন চাকুরী চলে যেতে পারে – ৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রোজেক্ট রাতারাতি বন্ধ হয়েগেছে ৩৫০০ কনট্রাক্টর রাতারাতি নোটিশ পেতে পারে বিল্ডিং, এবং এক্সপ্যাত হলে শহর ছাড়ার জন্য। অনেকে রোটেশন বেসিস এ কাজ করে – মানে ২৮ দিন টানা কাজ, ২৮ দিন বাড়িতে ছুটি। কোভিডের সময় অনেকে ওই ২৮ দিনের ছুটিতে বাড়িতে এসে মেল/কল পেয়েছে যে আর আসতে হবে না! ... ...
ইংল্যান্ডের কর্ণওয়েল এর কাছে একটা গ্রাম – সেই ১৭৯০ সালের কথা। উইলিয়াম গ্রেগর অভ্যাসমত ভোরবেলা হাঁটতে বেড়িয়ে সেদিন গ্রামের থেকে একটু দূরেই চলে এসেছেন – আগে এদিকটাই তেমন আসা হয় নি। একটা কর্ণ মিলের পাশে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ এক অদ্ভূত ধরণের কালো রঙের বালি চোখে পড়ল। এমন নয় যে আগে কোনদিন কালো বালি দেখেননি গ্রেগর, কিন্তু সেই সব ক্ষেত্রে কালো বালি মিশে থাকে এমনি বালির সাথে – আর এই বালির টেক্সচারটাও কেমন যে আলাদা মনে হল একটু। বেড়াতে বেরিয়ে এটা ওটা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার অভ্যাস গ্রেগরের অনেক দিনের। তাই সাথে করে একটা ব্যাগ নিয়েই বেরোন। সেদিন কাঁধের ব্যাগে ভরে নিলেন কিছু বালি বাড়িতে ফিরে নিজের গবেষণাগারে আরো ভালো করে পরীক্ষা করবেন। বাড়ির গবেষণাগারে দেখতে পেলেন সেই বালিতে আবার চৌম্বক শক্তি রয়েছে। ইন্টারেষ্ট বেড়ে গেল গ্রেগরের। রোজ বেড়াতে বেরিয়ে সেই কালো বালি নিয়ে এসে আরো ভালো করে বিশ্লেষণ করা শুরু করলেন। এইভাবেই তিনি বের করে ফেললেন যে সেই কালো বালিতে সিলিকা, আয়রন ছাড়াও আদপে মিশে আছে এক অজানা পদার্থ – যার নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘মানাকানাইট’। কিন্তু তখনো গ্রেগর জানতেন না তিনি তখন যা আবিষ্কার করছেন ১৫০ বছর পর সেই জিনিস পৃথিবীর ইতিহাস অনেকটা বদলে দেবে! ... ...
পটলওলা ফিলসফিক্যাল পটলতোলা বুঝতে পারে নি বলে সক্রেটিস ঈষৎ খাপ্পা হয়ে গেছেন – আশাপাশে তখন তাঁর প্রিয় ছাত্র – গোলগাপ্পাস, হোগাসপোগাস, ফাষ্টোকেলাস, হলুদঅমলতাস, গপগপখাস ও একদমঝাক্কাস। ফাষ্টোকেলাস এমনিতে খাই খাই করলেও সে বেশী খেতে পারত না, তার আহিঙ্কেটাই ছিল ষোলআনা। খেত বেশী গপগপখাস – নিঃশব্দে খেত, যা পেত খেত। উত্থাপম খেয়ে সক্রেটিসের মতই তারও ঠিক জমে নি। তাই পটলের পাশের ঝুড়িতে কচি শসা দেখতে পেয়েই তুলে নিয়ে দিয়েছে কামড়। সব্জীওলা কমপ্লেন করলে সাথে সাথে, “স্যার দেখুন, কেমন কামড় দিচ্ছে আমার শসায়!” ... ...
ভোর হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। সক্রেটিস ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে জোব্বার ফাঁক দিয়ে হাতদুটো বের করে একটু গা-টা ছাড়িয়ে নিতে লাগলেন। সকালের দিকে এমন জোব্বা গায়ে চাপাতে ভালো লাগে না, কিন্তু একেবারে উদোম গায়ে যাওয়া ঠিক নয়। বউ অনেক করে শিখিয়েছে শুধু জ্ঞান ছড়ালেই হয় না, ইমেজ গড়ে তুলতে হবে একটা। সকালে দিকে গোটা পাঁচেক শিষ্য আসে, তারা অলরেডি চলে এসেছে দেখলেন। সকালে দিকে উঠোন ইত্যাদি ঝাঁট-টাঁট এরাই দেয় – হালকা প্রাতরাশ এরাই নিয়ে আসে। ... ...