আমাদের ছোটবেলায় স্কুলে বুক লিস্ট বলে একটা জিনিস দেওয়ার চল ছিল। বুক লিস্ট বা বইয়ের ফর্দ দেওয়ার পর স্কুলে কিছু সরকারি তথা দরকারি বই (যথা সহজ পাঠ, কিশলয়, গণিত মুকুল ইত্যাদি) ফ্রিতে পাওয়া যেত। টুকিটাকি বই কিনতে হত। এর মধ্যে বিশেষ করে মনে পড়ে 'জানা-অজানা' নামক বই। সে বইতে ভারতের রাষ্ট্রপতি, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের নামধাম থেকে শুরু করে, কতগুলি মহাদেশ, আসন্ন অলিম্পিকের লোগো, ইত্যাদি জানিয়ে দেওয়া হত। মনে রাখতে হবে তখন, আমাদের সেই ছেলেবেলায়, হাতের কাছে ইন্টারনেট, গুগল বা সিধুজ্যাঠা-কেউই নেই। কিন্তু, এই অ ... ...
তামুক মাঙায়ে দিছি, প্রাণনাথ, এবার তো জাগো!
শচীন খুড়ার গান বাজিতেছে, বিরহবিধুর।
কে লইবে মোর কার্য, ছবিরাণী, সন্ধ্যা রায়, মা গো!
এইক্ষণে ছাড়িয়াছি প্রিয়ঘুম, চেনা অন্তঃপুর।
তুহু মম তথাগত, আমি আজ বাটিতে সুজাতা।
জাগি উঠ, কুম্ভকর্ণ, আমি বধূ, ভগিনী ও মাতা।
তামুক সাজায়ে দিছি, দুয়ারে তৈয়ার তব হুঁকা।
তোমা লাগি সাজিয়াছে, দ্যাখো, দেওদাসী সুতনুকা।
কপালে বিন্দিয়া, আর, কেশদামে রচিয়াছি ফুল।
রবিমামা দেয় হামা, তুমি নাক ডাকিছ আকুল।
আজু শুভ রবিবার, কুচুমনা, গিয়াছ কি ভুলে? ... ...
যবে থেকে আটানা বিলুপ্ত হলো, বকুবাবু,
নদীমাতৃক সভ্যতার থেকে,
যবে থেকে বুনিয়াদী গোশালার ঠিকা নিলো রক্ষকবাহিনী,
যবে থেকে, বকুবাবু, গেরুয়ার মানে শুধু ভয়,
সেই থেকে, বকুবাবু, আমিও ভুলেছি ফুটানি।
সেই কবে বিশটাকায় খেয়েপরে লাগাতার স্বাচ্ছন্দ্য কিনেছি,
সে ছিল বিদিশাযুগ,
জীবন যখন ছিল মোটামুটি বাওয়ালসম্মত।
কিন্তু, ও বকুবাবু, শুনছেন...
যবে থেকে আটানা বিলুপ্ত হলো হরপ্পার ভাঙা ম্যাপ থেকে,
যবে থেকে তুমুল লগ্নির দাপটে আগুন লাগল ধানের গাদায়,
যবে থেকে সুলভ ম ... ...
বেহাল পাছায় তার দৈনিক বরাদ্দ লাথ,
তবু তার বেকারার দিল!
দিনগত যত পাপ ধুয়ে দেবে সন্ধ্যের লাজবাব দারু,
উপমাও এনে দেবে যথাযথ ইনসাফ
জমে গেলে তার মাহফিল।
তাকে সব ছেড়ে গেছে, কেননা এ-
মেহেঙ্গাবাজার
কাউকেই দেয়নি সেই স্বঘোষিত পাঙ্গাসুযোগ।
তবুও সে নির্বিকার, লড়ে যায়, হারামি এ-সভ্যতার খাল খিঁচে নেয়।
দ্যাখো তার সমূহ রগড়।
আ এমন ছায়াযুদ্ধ হাল ছেড়ে কখন সে অকারণ অশ্রুসজল,
তখন সে মুন্না আজিজ,
তখন সে মির্জা গালিব।
পারবে, বসন্তসেনা, মৃচ্ছকটিকের ছেঁড়া পা ... ...
এমনই গজদাঁতের মিনার, রূপ তেরা মস্তানা।
শুনেই ঈষৎ মুখ বেঁকালে : 'ধুস এত শস্তা না!'
সকল দামী, সালতামামি, শহরে ভিড় আজো।
যখন দুপুর, কিশোর-লতায় আঁধির সুরে বাজো।
হায় গো আমার দোখনো-হৃদয়, দুব্বো গজায় হাড়ে।
তোমার সঙ্গে বাজে বকায় কেবলই রাত বাড়ে।
চাল চাপিয়ে ফুঁকছি চুলো, এবার আব্বুলিশ।
ওপরচালাক ভিতরবোকা বছর ছেচল্লিশ। ... ...
চাপের নাম টরিসেলি, বাপের নাম খগেন।
লাফের নাম হনু-লুলু, বিবেকের নাম লরেন।
হাঁফের নাম কোলেস্টেরল, মাফের নাম যীশু।
আমার নাম জানতে চাও? ডেকো পিপুফিশু।
খাপের নাম পঞ্চায়েত, খাপের বাপ পঞ্চু।
বিরল খোয়াবনামায় নিদ যাচ্ছে হাঁসচঞ্চু।
সাপের নাম বালকিষণ, পাপের নাম লোভ।
রাঘব কিংবা বোয়াল জানে, কেঁচোর নাম টোপ?
গ্রাফের নাম অর্থনীতি, গ্রাফের নাম স্টেফি।
আদর ডাকে সোনা, রুপো, আয়রে আমার খেপি।
কি যায় আসে লাভের গুড় সাবড়ে দিলে ক্ষতি?
গোলাপ, চাই, অন্য ... ...
বীতশোকের প্রথম দিকের কবিতা বাংলা কবিতা-কে এক অন্য স্বর শুনিয়েছিলো, তাঁর কণ্ঠস্বরে ছিলো নাগরিক সপ্রতিভতা, কিন্তু এইসব কবিতার মধ্যে আলগোছে লুকোনো থাকতো লোকজীবনের টুকরো ইঙ্গিত। ১৯৭৩ বা ৭৪ সালের পুরনো ‘গল্পকবিতা’-র (কৃষ্ণগোপাল মল্লিক সম্পাদিত) কোনো সংখ্যায় আমার মামাবাড়ির পুরনো বইয়ের ঘরে খুঁজে পেয়েছিলাম এই কবিতা-টি, কবিতার নাম ‘শীতকাল’।
"চেয়ে দ্যাখো, সেরকম-ই রেখেছি স্বভাব;
সহজ কবচে কত যত্ন করি, বেতার যন্ত্রের কাছে কান পেতে থাকি
কারা এত শব্দ করে, মনে প’ড়ে যায়
কত ডেকে কাকে যেন লিখ ... ...
'সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি।' কবিরা সংবেদনশীল হন। কবিরা দ্রষ্টা হন।যে দৃশ্য অন্যরা সাধারণভাবে দেখেন, সেই 'কেউ কেউ কবি', এ-সব দৃশ্যের অন্তরালে দেখতে পান অন্যতর সত্য। সেই সত্যের ধারাভাষ্য লেখেন তাঁরা।
বিনয় মজুমদার এই ধরনের কবি ছিলেন। চেনা ও আপাত দৃশ্যের আড়ালে ঢাকা সত্য বের করে আনতেন স্বকীয় দক্ষতায়। তাঁর বহুচর্চিত কাব্যগ্রন্থের নাম ' ফিরে এসো চাকা'। 'ফিরে এসো চাকা'র প্রথম কবিতাটি নিয়েই এই সামান্য প্রয়াস, সেটি পড়লে বিস্ময়ের উদ্রেক হয়:
একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে
দৃশ্যত সুনীল কিন্তু প্ ... ...
শক্তির কবিতা পড়লে কখনো কখনো মনে হয় ভেতরে বারুদ ঠাসা রয়েছে। অনেকে শক্তির কবিতায় জটিলতা খুঁজে পান, কেউ পান গভীর আস্তিক্য। আমার শক্তি পাঠ করে মনে হয়েছে তিনি ভীষণ প্রশ্ন করতে ভালোবাসেন, আর নিরন্তর উত্তর খুঁজে চলেন। এবং, তাঁর কবিতায় থাকে বিনির্মাণের ঝোঁক। একটি বিখ্যাত কবিতা পড়ে যা মনে হলো লিখছি। ... ...
সবে স্লেট-পেন্সিল থেকে খাতা-পেন্সিলে উত্তরণ হচ্ছে। আঁকাবাঁকা অক্ষরে নিজের নাম লিখি। স্যার রোলকল করলে ‘ইয়েস স্যার’ বা ‘প্রেজেন্ট প্লিজ’ বলি। আমাদের বাংলা মিডিয়ামে ওইটুকু ইংরিজি-ই বলতাম। সঙ্গে চলছে যোগ-বিয়োগ আর অভিশপ্ত নামতা। একের নামতা আর দশের নামতা সবচে সুন্দর লাগতো। সকলের-ই লাগে। পাঁচেরটাও মন্দ ছিলো না। কিন্তু ঝামেলা পাকাতো বাকি সংখ্যাগুলো, বিশেষ করে পাঁচ এর পরেরগুলো। এরকম ঘোর দুর্দিনে হাতে এসে পড়লো শুকতারা পত্রিকা। কমিক্সে রঙিন বাঁটুল দি গ্রেট, আর শাদা কালোর হাঁদা-ভোঁদা। এলো বেশ স্বস্তি নিয়ে। ... ...