জেনিফার যেরূপ বলিয়াছিল শশী সেইরূপ সাজিয়া আসিয়াছেন। বিশুদ্ধ বাঙালির বেশ। গিলে করা সাদা পাঞ্জাবি ও সঙ্গে ধুতি। বাড়তি, একটি ওড়নাসম রঙিন উত্তরীয় রহিয়াছে।
জেনিফারের অদম্য বায়না শশীকে শুনিতেই হয়। চলো শশী, কতকাল ক্যালকাটা যাই নাই। মনে পড়ে শশী, ওখানেই প্রথম দেখা, সেই স্টেজ, সেই গ্রিনরুম, যেখানে দোঁহে প্রথম দৃষ্টিপাত। কী করে জানিলে ডিয়ার, আমার প্রিয় ফুল, প্রিয় রঙ, প্রিয় চকোলেট ও কেক। বড় মিস করি শশী সেসব দিন। চলো, এইবেলা ক্যালকাটা যাই। জেনিফারের কথা ফেলিতে পারা যায় না। তথাপি ... ...
সেকালে কাঁসাই নদীতে 'সুতি' নামের একটা খেলা প্রচলিত ছিল। মাছ ধরার অভিনব এক পদ্ধতি, বহু কাল ধরে যা চলে আসছে। আমাদের পাড়ার একাধিক লোক সুতি খেলাতে অংশ নিত। এই মৎস্যশিকার সার্বজনীন, হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ে জনপ্রিয়। মনে আছে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় একদিন নদীর কাছে গিয়ে দেখি আমাদের পাড়ার প্রতিবেশী জনাব রাজা সুতিতে একটি মাঝারি রুই তুললেন। মাছটিকে খেলিয়ে টেনে তুলে এনে মাছের খাবি খাওয়া ঠোঁট মুখের কাছে নিয়ে কীসব অদ্ভুত মন্ত্র বিড়বিড় করে জপতে লাগলেন। এইসব লোকাচার খেলারই অঙ্গ।
যাই হোক, এবার নবমী ... ...
১৯৮৩ সনের মাঝামাঝি অকস্মাৎ আমাদের বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ(ক) শ্রেণী দুই দলে বিভক্ত হইয়া গেল।
এতদিন ক্লাসে নিরঙ্কুশ তথা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করিয়া ছিল কুচু। কুচুর ভাল নাম কচ কুমার অধিকারী। সে ক্লাসে স্বীয় মহিমায় প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করিয়াছিল। একটি গান অবিকল কিশোরের স্টাইলে গাহিবার অব্যবহিত পরেই সে মহম্মদ রফির স্টাইলে পরবর্তী গান গাহিত। এছাড়া মিঠুনের কোন সিনেমা রিলিজ করিল, 'তেরি মেহেরবানিয়া'র স্টোরি কীরূপে অভিনব, দলবদলে ইস্টবেঙ্গল কীরূপ কৌশলে মোহনবাগানের হাতে হ্যারিকেন ধরাইল, এইসব বিষয়েও তা ... ...
'বেকার'-এই শব্দটি আমাকে আজন্ম বিস্মিত করেছে।
বাংলায় লেখাপড়া শিখে, এমনকী একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে, সে কী বাংলায় পদার্থবিদ্যার বিদ্যা বালানীয় চর্চা! যেমন, 'ও বিন্দুর সাপেক্ষে ভ্রামক লইয়া পাই।' ভ্রামক কি রে? ভ্রম না ভ্রমণের কাছাকাছি? না, ভ্রামকের নিকটবর্তী শব্দ হলো দ্বন্দ্ব। মূল শব্দ দুটি হলো, যথাক্রমে মোমেন্ট ও কাপল। অর্থাৎ, মুহূর্ত এবং দম্পতি/যুগল ভাবলেই ল্যাঠা চুকে যায়। তা নয়, একটি তীর আঁকা ভেক্টরীয় বল এবং নির্দিষ্ট বিন্দু হইতে উল্লম্ব দূরত্বের নির্ণেয় আজব গুণফল, চিত্তরঞ্জন দা ... ...
'আচ্ছা, সারা দেশে মোট কতজন ক্যান্ডিডেট এই পরীক্ষাটা দেয়?', লোকটা সিগারেটে একটা টান দিয়ে প্রশ্ন করলো।
-'জানা নেই। তবে লাখ দশেক তো হবেই।', আমি বললাম।
- 'বাব্বা! এতজন! সিট কতো ?'
-'বলতে পারব না। ভাল কলেজ পেতে গেলে মেরিট লিস্টে যথেষ্ট ওপরে নাম থাকতে হবে।'
-' তার মানে একটা লম্বা মেরিট লিস্ট হবে নিশ্চয়। তা, সবাই সবার নাম দেখতে পাবে ?'
এই প্রশ্নে একটু অবাক হলাম। একটু বিরক্তিও বোধ হলো। ... ...
তোমার বাড়ি মেঘের কাছে, তোমার গ্রামে বরফ আজো?
আজ, সীমান্তবর্তী শহর, শুধুই বেয়নেটে সাজো।
সারাটা দিন বুটের টহল, সারাটা দিন বন্দী ঘরে।
সমস্ত রাত দুয়ারগুলি অবিরত ভাঙলো ঝড়ে। ... ...
আজ মঙ্গলবার। ভাব সম্প্রসারণের দিন। খগেনবাবু দ্রুত রোলকল সারিয়া, গলা খাঁকারিকরত, ছাত্রদের ভাব সম্প্রসারণ করিতে দিলেন। বলিলেন: 'ল্যাখো'। খগেনবাবুর উচ্চারণের বিশেষত্ব আছে। তিনি হেমন্তকে হ্যামন্ত বলেন, অথচ, লজ্জাকে, লোজ্জা উচ্চারণ করিতেই তিনি অভ্যস্ত। অতঃপর খগেনকন্ঠে উচ্চারিত হইল: "কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখলাভ হয় কি মহীতে?" ... ...
('আরেক রকম' পত্রিকার ১৬-২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সংখ্যায় নিবন্ধটি প্রকাশিত)
সন্তপ্ত কুসুম ফুটে পুনরায় ক্ষোভে ঝরে যায়। (১)
দেখে কবিকুল এত ক্লেশ পায়, অথচ হে তরু, (২)
তুমি নিজে নির্বিকার, এই প্রিয় বেদনা বোঝো না। (৩)
কে কোথায় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি না। (৪)
নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোনো পংক্তি আর (৫)
মনে নেই গোধূলিতে ; ভালবাসা অবশিষ্ট নেই। (৬) ... ...
বেশ মনে পড়ে, 'অমর প্রেম' ও 'আনন্দ' ছবিদুটি ক্লাস নাইনের আনাড়ি হৃদয়ে দাগ কেটেছিল। 'অমর প্রেম' ছবিতে রাজেশ খান্না দিব্যি ধুতি-পাঞ্জাবি পরে শর্মিলার দরজায় 'এ পুষ্পা' ব'লে সান্ধ্যকালীন, নৈমিত্তিক, টোকা মারতেন। বারবনিতা শর্মিলা দেরাজ থেকে মদের বোতল খুলে সযত্নে গেলাসে ঢেলে দিতেন রঙিন পানীয়। ক্লীন শেভড খান্না-গালে একটি লালচে দর্শনীয় ব্রণ ছিল। ব্রণসম্বলিত সুপারস্টার গেলাসে মারিতেন আলতো সিপ। মধ্যে মধ্যে, অকস্মাৎ, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনীয়তা মেনে, দার্শনিক হয়ে উঠতেন। গালে টোল পড়া প্রেমাভিলাষী শর্মিলা ঘনঘন ... ...
"যায় অন্তরীক্ষেতে অঙ্গদ ডাকাবুকা।
বায়ুভরে উড়ে যেন জ্বলন্ত উল্কা।।
লঙ্কাপুরী গেল বীর ত্বরিত গমন।
পাত্রমিত্র লয়ে যথা বসেছে রাবণ।।"
গল্পটি শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক সৌমেন্দ্রনাথ পালের কাছে শোনা। সৌমেনবাবু আমার বাবারই বয়েসী ছিলেন। স্যারের জন্মদিন বোধহয় 11ই মার্চ, বাবার 5ই মার্চ।
স্যার যাদবপুরেই পড়েছেন, তবে কিছুদিন প্রেসিডেন্সিতে পড়েছিলেন, পরে ছেড়ে দেন। সেটা ষাটের দশক। প্রেসিডেন্সির কোনো এক স্বনামধন্য বাংলার অধ্যাপক ক্লাশ নিচ্ছেন। সৌমেনবাবুর সহপাঠী একটি পাগলা মতন ছেলে, ক্লাস ... ...