যে সমস্ত নমস্য শিল্পী আমাদের রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে, বুঝতে ও ক্রিয়াশীলভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে শিখিয়েছেন, তাঁদের সবার নিজস্ব সদগুরু সাধন হয়েছিলো। নিজস্ব সাধনার দ্বারা তাঁরা স্বরলিপির কঙ্কালে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। পঙ্কজকুমার, সুবিনয়, দেবব্রত, হেমন্ত, সাহানাদেবী, কনক দাশ, রাজেশ্বরী দত্ত, কণিকা, সুচিত্রা, নীলিমা , ঋতু এবং আরো বেশ কিছু নাম আসা উচিত এই তালিকায়, যাঁরা আজ আমরা রবীন্দ্রসঙ্গীত বলতে যা বুঝি তার রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা যদি কৌতূহলী ও প্রশ্নশীল হয়ে নিজেদের মধ্যে খুঁজতে চাই পরিবেশ ... ...
জোড়াসাঁকো জংশন থেকে যখন গাড়িটি প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে এগিয়ে গিয়েছিলো তখন কি মায়া কেটে গিয়েছিলো তার? দক্ষিণের বারান্দার মৃদু বসন্ত বাতাস অথবা জ্যোতিদাদার ছাতবাগানের জুঁইফুল ভাসাভাসি সন্ধের বিলোল আমেজ কি ছেড়ে গিয়েছিলো তা'কে? অনেক দীর্ঘ পথ অপেক্ষা করে আছে, এমন কোনও প্রতীতি হয়েছিলো কি? জোড়াসাঁকো থেকে জালিয়াঁওয়ালা বাগ, সুরুলকুঠি থেকে সুইডিশ আকাদেমি, শিলাইদহ থেকে সান ইসিদ্রো...
ক্লান্তিহীন যাত্রাপথের গান, শুধু কি আনন্দে? নাহ, মানুষের যাবতীয় ভাবনার শ্রমসংহিতা, সবাইকে জায়গা করে দেওয়ার অলিখিত ঈশ্বরী দায় ... ...
হোরি খেলত নন্দলাল, বিরজমেঁ। ব্রজভূমিতে হোরি খেলতে গেলে কানু ছাড়া গীত নাই। ইতিহাস বলছে কানুই অনার্যদের আদি নেতা। বহিরাগত আর্যদের সঙ্গে সমানে সমানে লড়ে কখনও জিতেছিলেন, কখনও বা পারেননি ভারতভূমির এই কৃষ্ণবর্ণ ব্যক্তিত্বটি। ইনি পুরাণবর্ণিত দ্বারকার ন'ন, মথুরার ন'ন, ন'ন মহাভারতের গীতাকথক। ব্রাহ্মণদের ছাঁচে ফেলা 'ভদ্রলোক' সভ্যতার যেসব উৎসব অনুষ্ঠান, তার সমান্তরালে নিম্নবর্গীয়দের প্রাণের উদযাপন, যার আবশ্যিক অঙ্গ বন্ধহীন শৃঙ্গাররসে উত্তাল, আসব নিমজ্জিত হোলিকা দহন ও প্রমত্ত ব্যসন, তাকে আশ্রয় দিতে কানু ছাড় ... ...
আমি আর সায়ন ফিরছিলুম একসঙ্গে অটোতে। এইট বি থেকে গড়িয়া। সায়ন শুধালো, শিবাংশুদা, কেমন লাগলো আজ? তখনই প্রথম আমি আলাদা করে ভাবতে প্ররোচিত হলুম। ঠিকই তো। কেমন লাগলো আমার এইসব কিছু। জানি, এই প্রশ্ন তো আমাকে আবার করা হবে। করা হলো। অনেকরাতে। স্বয়ং পাইদিদি। জীবনে প্রথম এতোজন উন্মোচিত সমকামী ও বৃহন্নলা মানুষজনের সঙ্গে এতোক্ষণ কাটালুম। তাদের কথা শুনলুম। তাদের ভাবনার জগতে রু-ব-রু মহড়া নিলুম। প্রথমবার এ জীবনে।
কিছু বলার আগে একটা অব্স্থান নিতে হয়। 'সামাজিক অবস্থান'। নিত্য দেখি, 'মানবিকতা' নামক একটি ... ...
''.... সেই বাল্যকালে কবে থেকে গান গাইতে শুরু করলাম তা আমার মনেও নেই-- গান গাইছি-তো-গাইছি-তো-গাইছি। কোনো ওস্তাদ অথবা শিক্ষকের কাছে নাড়া বেঁধে বা রীতিমতো লেখাপড়া শেখার মতো করে গান আমি কখনও শিখিনি। ছোটবেলার দিনগুলি থেকে শুরু করে, বড় হয়েও শুধু গান শুনেছি আর গেয়েছি। কোনো সঙ্গীত-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গান শিখবার সৌভাগ্য আমার অদৃষ্টে কখনও জোটেনি।''
১৯২৮ সালের গোড়ার দিকে পূর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জ থেকে আসা এক সতেরো বছর বয়সের সদ্যোতরুণ কলেজ ছাত্র উত্তর কলকাতার সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ মন্দিরে প্রথম রবীন্দ্রনা ... ...
ছোটোবেলায় দেখা একটি লোকপ্রিয় সিনেমায় মহানায়কের একটা উক্তি মনে পড়ে। কোনও চাকরির ইন্টারভিউ তে চাওয়া হয়েছিলো প্রার্থী যেন শেক্ষপিরের মতো ইংরিজি, রবীন্দ্রনাথের মতো বাংলা আর তুলসীদাসের মতো হিন্দি জানে। তা মহানায়ককে যখন প্রশ্ন করা হলো, তিনি কী বললেন? হ্যাঁ, আমি জানি। তবে একটু এদিকওদিক। মানে? তাঁর উত্তর, তিনি শেক্ষপিরের মতো বাংলা, রবীন্দ্রনাথের মতো হিন্দি আর তুলসীদাসের মতো ইংরিজি জানেন। হ্যাঁ, চাকরিটা তাঁর হয়ে গিয়েছিলো।
গোস্বামী তুলসীদাস সম্বন্ধে বাঙালিদের ধারণা এর বেশি আর যায়নি কখনও। তবে শুধু তু ... ...
ছোটোবেলায় প্রতি রথযাত্রায় নতুন পালার নতুন চমক সিরিজে 'সিঁদুর দিওনা লেপে', টাইপ নামের ছড়াছড়ি থাকতো। ‘নামভূমিকায় লাস্যময়ী নায়িকা। অন্যদিকে কোনও মিহিগুম্ফ নায়ক। তৎসহ কিশোরকুমার, "...হাটবাজারে শাঁখাসিঁদুর অনেক পাওয়া যায়/ কপালে থাকলে পরে তবেই পরা যায়...." শাঁখা ও সিঁদুরের এই দ্বৈত বাদ্যবাদন থেকেই মেয়েদের প্রোফাইল নির্ধারিত হয়ে যেতো সেকালে। এখনও হয় অনেক জায়গায়।
-----------------------------
আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশের সংস্কৃতিতে প্রকৃতির তিনটি মৌলিক রং, যাদের earth coloures বলা হয়,, তার বিশ ... ...
" ইছামতী একটি ছোট নদী। অন্তত যশোর জেলার মধ্য দিয়ে এর যে অংশ প্রবাহিত, সেটুকু। দক্ষিণে ইছামতী কুমির-কামট-হাঙ্গর সংকুল বিরাট নোনা গাঙে পরিণত হয়ে কোথায় কোন সুন্দরবনে সুঁদরি-গরান জঙ্গলের আড়ালে বঙ্গোপসাগরে মিশে গিয়েছে, সে খবর যশোর জেলার গ্রাম্য অঞ্চলের কোনো লোকই রাখেনা।
ইছামতী নদীর যে অংশ নদীয়া ও যশোর জেলার মধ্যে অবস্থিত,সে অংশটুকুর রূপ সত্যিই এত চমৎকার, যাঁরা তা দেখবার সুযোগ পেয়েচেন তাঁরা জানেন। কিন্তু তাঁরাই সব চেয়ে ভালোভাবে উপলব্ধি করবেন, যাঁরা অনেকদিন ধরে বাস করচেন এ অঞ্চলে। ভগবানের এক ... ...
'বহুস্বর' একটা পবিত্র শব্দ। মানুষের সভ্যতার বিবর্তন ঘটেছে এই শব্দবন্ধকে কেন্দ্র করে। সরলরৈখিক, একস্বর প্রতিক্রিয়া মানবিক অধিকারের বিপ্রতীপ বিড়ম্বনা। মানুষই একমাত্র প্রাণী যার কোনও একমুখী অস্তিত্ব নেই। অনেক মানুষ তো বটেই, একাকী মানুষেরও অস্তিত্বেও বহুস্বরের ব্যঞ্জনা তাকে প্রতি মূহুর্তে সমৃদ্ধ করে। সামাজিক বা রাজনৈতিক একনায়কতন্ত্র মানুষের এই চারিত্র্যটিকে ভয় পায়। তাই তাদের আপ্রাণ প্রয়াস থাকে মানুষকে একস্বর গড্ডলিকার স্রোতে টেনে আনার, তাড়না করার। এর ব্যতিক্রম আমরা স্থান-কাল নির্বিশেষে পাইনি। তাই মা ... ...
শুদ্ধ সঙ্গীতের ভাষা মানে শুধু সুরের ভাষা। যেসব প্রাকৃতিক শব্দ থেকে মানুষের মনে সুরের ধারণা তৈরি হয়েছিলো, যেমন বিভিন্ন পশুপাখির ডাক, তা একান্ত ভাবে সুরের পর্দানির্ভর অনুভূতি। সৃষ্টি হবার পর বহুদিন পর্যন্ত সুর'কে কথার ভার বহন করতে হয়নি। আদিম সুরের ধারাটিকে যখন কথার অবলম্বন গ্রহণ করতে হয়েছিলো তখন তার পিছনে ছিলো দু'ধরনের প্ররোচনা। হয় অধ্যাত্ম নয় মানুষী প্রেমের পয়গাম পৌঁছে দেওয়া। পৃথিবীর সব দেশেই ধ্রুপদী সঙ্গীতে কথার কোনও ভূমিকা নেই। অন্যদিকে লোকগীতের যে ঘরানা, সেখানে শুধুই কথার শিল্প, সুর সেখানে বাহ ... ...