গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে জগদ্ধাত্রী পুজোকে ঘিরে বেশ একটা সাজো সাজো ব্যাপার স্যাপার বাংলা বছরের শুরু থেকেই থাকে। চন্দননগর মা জগদ্ধাত্রীর মনোপলি একটা সময় পর্যন্ত নিয়ে ধরে রেখেছিল। গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে ঠাকুরণ প্রায় আসতেনই না। শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনের প্রভাবে বাঁকুড়ার জয়রামবাটী তে প্রায় একশো বছর ধরে জগদ্ধাত্রীর বেশ জনপ্রিয়তা। তবে এই জনপ্রিয়তার সঙ্গে ধর্মের মাত্রাতিরিক্ত প্রলেপ মিশে, যে সামাজিক সঙ্কট মোকাবিলা করতে সারদামণির গর্ভজননী শ্যামাসুন্দরী দেবী, জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করেছিলেন, সেই প্রেক্ষিতটি কিন্তু ঢাকা পড়ে গেছে। ... ...
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের জোয়ারের মাঝেই ভগিনী নিবেদিতা (২৮শে অক্টোবর ১৮৬৭ - ১৩ই অক্টোবর ১৯১১) আশঙ্কা করেছিলেন ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করতে যে বিপ্লববাদী কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়েছেন তাতে যে কোনো সময়ে ইংরেজ তাঁকে গ্রেপ্তার করবে। নিবেদিতা নিজে লিখছেন তাঁর বিশেষ কাছের মানুষ মিস ম্যাকলাউডকে; "মানুষের চরিত্র পরিবর্তনের জন্যে জেলের জীবন কি বিশেষ কোনো সুযোগ এনে দেয়? তেমনটি তোমার মেয়ের (অর্থাৎ নিবেদিতারই) বিষয়ে বাস্তব হয়ে উঠুক তা বিশেষ ভাবে চাই (১৯০৬ সালের মে মাসের ৩০ তারিখে এই চিঠিটি নিবেদিতা লিখেছিলেন)। ... ...
বাংলায় "শিয়াল মামা"র কদর তার দিমাগের জন্যে। বুদ্ধির দৌলতেই সে বাংলাভাষায় "ধুর্ত শেয়াল" নামক শব্দের সংযোজন ঘটিয়েছে। "বিড়াল" বা "বেড়ালে"র মতোই "শিয়াল" আর "শেয়াল" নিয়ে ঘটি-বাঙালের ঝগড়া বুঝি বা সৃষ্টির আদিযুগ থেকে। কিশোরগঞ্জের উপেন্দ্রকিশোরের দৌলতে শেয়ালের দিমাগের সঙ্গে পরিচয় বাঙালির শৈশবেই হয়। এই সুপার কম্পিউটারের যুগেও শৈশবে উপেন্দ্রকিশোরের শেয়াল আর কুমিরের গল্প পড়ে নি বা শোনে নি এমন বাঙালির সংখ্যা খুব কম আছে। ... ...
চোদ্দ শাক ঘিরে কালীপুজোর আগের দিন হিন্দু বাঙালি মহলে বেশ শোরগোল শুরু হয়ে যায়। কবে কি করে এই লোকাচার হিন্দু বাঙালির জীবনযাত্রার সঙ্গে একাত্ম হল, তা নিয়ে নথিগত কিছু পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। লোকাচার, কখন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের আচারের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, সেই হওয়া কখন বিচারের স্রোতঃপথ কে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে শুরু করেছে, তার খোঁজ খবর কে রাখে? সময়ের কষ্টি পাথরে কি সব কিছু খোঁদাই হয়? সেই কবে, কোন মান্ধাতার ঠাকুর্দ্দাদার আমলে র কোন লোক বিশ্বাস, ধীরে ধীরে আমাদের লোকজীবনের অঙ্গ হয়েছে, সেই অঙ্গীভূত হওয়ার হালহকিকৎ জীবনযাত্রার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে, সেইসব খবর কে রাখে? ... ...
হঠাৎ করে সত্যজিৎ রায়ের ফিল্ম 'দেবী' র সঙ্গে উত্তর চব্বিশ পরগণার নৈহাটি শহরের নামটা কেন মনে পড়ে গেল বলতে পারেন পাঠক বন্ধুরা? সত্যজিৎ তো কস্মিনকালে তাঁর 'দেবী' ছবি তৈরি করবার আগে, পরে এই 'নৈহাটি' র নামগন্ধ করেন নি। তবে কেন এমন স্মরণ-বিস্মরণের অতিকেন্দ্রিক সার্বভৌম অভিবিন্দু? নৈহাটিতে কি এই ঘোর কলিকালে 'দেবী' ছবির দেবত্ব ঘিরে নোতুন করে কোনো কর্মকান্ডের উদয় হল? বা উদয় হবো, হবো জনিত একটা পরিস্থিতি তৈরি হল? ... ...
হঠাৎ যখন খবরের কাগজে, টিভি চ্যানেলে জানতে পারলুম, লোকাল ট্রেন আবার চালু হচ্ছে, মনটা কেমন যেন অপু-দুর্গার মতো হয়ে উঠেছিল। কেমন একটা অচেনার আনন্দে মনটা মেতে উঠেছিল। অতিমারী, রোগ, যন্ত্রণা, মৃত্যু, হাহাকার - সব যেন কি রকম ছাপিয়ে উঠে, রেল গাড়ি চলার, রেল গাড়ি চড়ার সেই চিরপরিচিত আনন্দে মনটা আমাদের ভরে উঠেছিল। ... ...