অনেক সময় এমন হয়, কিছু কিছু বই আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে। যেন সে বলতে চায়, পড়ে দেখা দেখি, কেমন দম আছে। এই সমস্ত বইয়ের ক্ষেত্রে দুটো পথ। এক, বইটাকে না পড়া; এবং দুই, বইটাকে ঠেলে গুঁতিয়ে শেষ করে বলে ওঠা, হিপ্ হিপ্ হুররে... তৃতীয় আরেকটা পথ আছে। বইটাকে পড়ার জন্য পড়াশোনা করা। ইংরাজীতে যাকে বলে ‘প্রিপারেশান’। সেই সাথে পড়ার মাঝে মাঝেও পড়াশোনা করা। এবং আস্তে ধীরে, সময় নিয়ে, বইটাকে শেষ করা। তৃতীয় ক্ষেত্রে আপনি পরিশ্রমী, কারণ, বিশেষ করে, যে পর্যায়ে আপনাকে পৌছতে হচ্ছে, সে পর্যায়ে পৌছনোর একটা মানসিকতা থাকা চাই। সেই মানসিকতা না থাকলে এ বই শেষ করতে ... ...
অদ্রীশ বর্ধনের দুর্ভাগ্য তিনি বাংলায় জন্মেছেন। অদ্রীশ বর্ধনের দুর্ভাগ্য, তার ‘আদিম আতঙ্ক’ উপন্যাসটা কেউ উদ্যোগ নিয়ে ইংরাজীতে অনুবাদ করেন নি। অদ্রীশ বর্ধনের দুর্ভাগ্য, সেই ইংরাজী অনুবাদটার বিশ্বে প্রচার ও প্রসার হয় নি। অদ্রীশ বর্ধনের দুর্ভাগ্য, সঠিক কোন হলিউড পরিচালকের চোখে সেই উপন্যাসটা পড়ে নি। না হলে এতদিনে, তার এই উপন্যাসটা, অন্তত বিশ্বসাহিত্যে একটা স্থায়ী দাগ রেখে যেতে পারত। আর কল্পবিশ্ব প্রকাশ করার আগে, বাঙালীরা এমন একটা উপন্যাসকে স্রেফ ভুলে মেরে দিয়েছেন একটাই কারণে, এটা একটা কল্পবিজ্ঞান থ্রিলার। আর কে না জানে, বাঙালী বেডরুম ড্রামা পড়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ নাক ডাকিয়ে ঘুমাতে ভালোবাসে, যা কি না বর্তমানের বাংলা সিরিয়ালের ... ...
উপন্যাসটা পড়ার ইচ্ছে জেগেছিল মূলত দুটো কারণে --- এক, এর অদ্ভুত প্রচ্ছদ, এবং দুই, অদ্রীশ বর্ধনের মৌলিক লেখা। এরকম একটা প্রচ্ছদের ওপরে আকর্ষণের কারণ আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি। অনেকদিন ধরেই বইটা চোখের সামনে ঘোরাফেরা করছিল, এমনিই ফেলে রেখেছিলাম, কিন্তু তবুও, টানছিল আমাকে নিতাই ঘোষের আঁকা ওই অদ্ভুত প্রচ্ছদটা। কিছু একটা চেনা, তবুও যেন চিনতে পারছিলাম না। অবশেষে একটানে বইটা শেষ করলাম। কিশোর উপন্যাস। পড়তে পড়তে একটা কনসেপ্টে এসে আসল ব্যাপারটা খোলসা হল। তা হল, মগজ ধোলাই টাইপের মেশিন, যার নাম এখানে ‘মগজ’। ‘হীরক রাজার দেশে’ ১৯৮০ সালে নির্মিত, আর ‘মিলক গ্রহে মানুষ’ লেখা হয়েছে ১৯৮৪ সালে। আমি জোর করে অবশ্যই ... ...
"চারিদিকে মরচে ধরা লোহালক্কড় আর সিমেন্টের ফাঁকা পিপে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত। তারের তালগোল পাকানো কুন্ডলী, ভাঙা কলকব্জা, তার মধ্যে আবর্জনার স্তুপের ওপর ঘাসের রুগ্ন শীষ গজিয়েছে।" লাইনদুটোর মধ্যে কাব্যের ছোঁয়া পেতেই আমি নড়েচড়ে বসলাম। যারা 'গারিনের মারনরশ্মি' পড়েছেন, তারা জানেন আলেক্সেই নিকোলিওভিচ তলস্তয়ের মধ্যে যতটা মার্ক্সিজম আছে, কাব্যিক ব্যাপার স্যাপার তার ছিঁটেফোঁটাও নেই। যদিও একটা উপন্যাস দিয়ে একজন লেখককে যাচাই করা উচিৎ নয়, তবুও, একটা ধারণা তো করা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে হঠাৎ করে এমন একটা কাব্যিক বাক্যের জন্যে সত্যিই আমি প্রস্তুত ছিলাম না। 'বিনিদ্র রাত্রি' নামক পর্বে এসে আবার চমকালাম। কি লাইন বেরিয়ে এসেছে ওনার হাত ধরে! তলস্তয় লিখছেন, "প্রেমের বিষ ... ...
জঁ-র ব্যাপারটা আমার কোনকালেই পছন্দের ছিল না। এইভাবে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মে ভেঙেচুরে ‘ট্যাগ’ করাটা শপিং মলে কিম্বা ওষুধের দোকানেই শোভা পায়। সেখানকার যারা কর্মচারী তাদের সহজ হয় বিক্রীবাট্টার ক্ষেত্রে। তেমনই জঁ-র ব্যাপারটা স্কলার বা রিসার্চারদের ক্ষেত্রে ঠিকঠাক মনে হলেও পাঠক মহলে এটা বর্জনীয় হলে আত্মিক দৃষ্টি সুদূরপ্রসারিত হয়। নাহলে যে সমস্ত পাঠক শুধু ‘গোয়েন্দা’ কিম্বা ‘তন্ত্র’ ইত্যাদি (উদাহরণস্বরূপ) নিয়েই শুধু থাকতে চাইছেন, তাদের অবস্থা খানিকটা একদৃষ্টি হরিণের মতো হয়ে যায়। লাভের লাভ খুব একটা কিছু হয় না। যারা নিজেদেরকে জঁ-র-এর জটাজালের থেকে বাইরে নিয়ে আসতে চান তাদের লাভ বেশি। এর একটা বড়ো উদাহরণ ‘গারিনের মারনরশ্মি’ নামক উপন্যাসটি। ... ...
“মৃত্যু তো অপরিহার্য, কেউই তাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না। কিন্তু শুধু কারুর অনুপস্থিতি নয়, মৃত্যু যেন তার চেয়ে অনেক বেশি শূণ্যতা সৃষ্টি করে। ... আসলে মৃত্যু এমন একটা ঘটনা যাতে কেউই অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে না।” খুব কম বই-ই আছে, যেটা শুরু করার সময়ে মনে হয়েছে, না করলেই ভালো হত। আসলেই সেক্ষেত্রে বইটার মানসম্মত প্রশ্ন, কিম্বা রুচিতে আঘাত করলে বেশি করে মনে হত। কিন্তু এবারে একেবারে অন্যরকম। এমন সত্য যা’র মুখোমুখি না হওয়াই ছিল ভাল, অন্তত মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে। অলোক কাকুর কথা আমি আগে অনেকবার বলেছি। এই অলোক কাকু যে কয়েকজনের লেখা পড়তে অত্যন্ত পছন্দ করেন, ... ...
আমাকে যে কয়েকটা শব্দ সবথেকে বেশি ভাবিয়েছে, তার মধ্যে ‘ঈশ্বর’ একটা শব্দ। যখন টিন এজ বয়সে ছিলাম, আমার, আর চার-পাঁচজন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর মতোই মনে হত, ঈশ্বরের অস্তিত্ব কেবলমাত্র অন্ধবিশ্বাসে। তারপর যখন পড়াশোনা আরেকটু এগোলো, বিজ্ঞানের হাত ধরে, যত এগোতে লাগলাম, দেখলাম, বিজ্ঞানের চোখে ঈশ্বরের কনসেপ্টটা একটু অন্যরকম। বিজ্ঞান ঈশ্বরকে স্বীকার করে না, অস্বীকারও করে না। যে ঈশ্বর দশহাত, কিম্বা দুইহাত, কিম্বা একটা বিমূর্ত আবহ নিয়ে ধর্ম ও দর্শনে প্রতিভাত হয়, বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণটা তার থেকে একটু অন্যরকম। আমি মূলত যে বইটা পড়ে উঠলাম, The God Equation, সেই বইটার কথা বলতে হলে, মূলত পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই কথা বলব। সে বিষয়ে আসার আগে ... ...