এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  বই পছন্দসই

  • গল্পসমগ্র’ (২০২২) প্রথম খণ্ড (উপল মুখোপাধ্যায়)

    পুরুষোত্তম সিংহ
    পড়াবই | বই পছন্দসই | ২২ এপ্রিল ২০২৪ | ৩৪৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • ছবি: রমিত


    তুমি কেমন করে বাজাও বাঁশি বুঝিতে না পারি


    (১)



    একুশ শতকের সূচনালগ্নেই আমরা পেয়ে গেছি গল্পকার উপল মুখোপাধ্যায়কে। প্রথম থেকেই সচেতনভাবে তিনি ভিন্ন পথের অশ্বারোহী হয়ে উঠেছেন। সেই পথ চলা একাকী, বিচ্ছন্ন কিন্তু প্রবলভাবে বীক্ষমাণ। একাধিক সত্যকে সামনে রেখে তিনি গল্পবীক্ষণে নেমেছেন। ফলে গল্পের দৃশ্যপট বারবার বদলে গেছে। একটা বিরোধাভাস রেখে গল্পের সমান্তরাল বয়ানকে তিনি যেমন ভেঙে দেন তেমনি সময়ের একাধিক নথিনামা রেখে দেখান ঘটমান সত্য এমন। ক্ষুধার সত্য, ক্ষুধাকে কেন্দ্র করে শিল্প, নাগরিক মানুষের বিনোদন, সেখানেও ক্ষুধার্ত মানুষের আর্ত চিৎকার ভুলে থেকে শিল্পের আনন্দ জোগান এবং নাগরিক আধিপত্যের মধ্যে সমস্ত বিকৃত সত্য কীভাবে ডুবে থাকে তার রসদ নির্মিত হয় ‘লোকটা কি পুতুল’ গল্পে। বাখতিনের কার্নিভাল লোকায়ত সংসারকে কেন্দ্র করে নাগরিক বিনোদনের মঞ্চ হল বটে কিন্তু প্রান্তিক মানুষের জীবনযুদ্ধকে মর্যাদা দেওয়া হল না। প্রান্তিকের জীবনযুদ্ধ নাগরিক মানুষের কাছে বিনোদনের মঞ্চ হয়ে উঠল। বন্যা হচ্ছে, জলে সব ভেসে যাচ্ছে, পূজা মণ্ডপে রঙিন জল বিতরণ, দর্শকের এগিয়ে যাওয়া, বিতর্ক, হইহুল্লোড় ইত্যাদি দৃশ্যপটে তিনি বিরোধাভাসের জন্ম দেন। উপলের কৃতিত্ব এখানেই যে তিনি গদ্য সরণিতে একটা সূক্ষ্ম বিদ্রুপ রাখেন। কিন্তু সেটা সহজে চোখে পড়বে না। কেননা দৃশ্যপট দ্রুত বদলে যাচ্ছে। প্রান্ত ব্যবহৃত হচ্ছে নগরের বিনোদনের কাছে। আবার যেখানে অর্থ রোজগার, ক্ষুধাই একমাত্র সত্য সেখানে শিল্পের বিকৃতি কী। নগর হয়ে উঠেছে নিয়ন্ত্রক। নগরের চাহিদা, রসদ, উপভোগ, বক্তব্য দ্বারা প্রান্ত চালিত হচ্ছে। আধিপত্য ও মুনাফার সংস্কৃতি ভেঙে দিচ্ছে সত্যকে অথবা সত্যের বুকে পিঠ চাপড়ে উদ্‌ঘাটন করছে সত্যের একাধিক জটিল প্রহরকে। উপল শুধু কলম নিয়ে বসে আছেন। পাঠককে অলিগলিগুলি শুধু চিনিয়ে দিচ্ছেন। পাঠক নিজেই বোধে উপনীত হচ্ছে। গল্প হয়ে উঠছে বুদ্ধিচর্চার পাঠশালা।

    প্রচলিত গল্পপাঠের সঙ্গে উপলের গল্প মেলে না। তিনি সচেতনভাবেই দূরে চলে যান। কাহিনির বদলে তিনি একটা কথাজাল নির্মাণ করে যান। একাধিক বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সংযোগ করে একটা সূত্রমালা গড়ে তোলেন। জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক নথিনামা এনে জীবনকে নানা কৌণিক বিন্দু থেকে বিশ্লেষণ করে দেখান সত্য এমন। সেখানে গল্প শোনানোর কোনো রেওয়াজ নেই। ফলস্বরূপ দৃশ্যান্তর ঘটে যায়। একাধিক খণ্ড সত্যকে সূত্রবদ্ধ করে তিনি একটি বৃহৎ সত্য নির্মাণ করেন। সবটাই জীবনের অঙ্গ। জটিল জীবনের ব্যাধিকে ভিন্ন ভিন্ন মেরুকরণে বিভাজন করতে গেলে বৃহৎ উপন্যাস হয়ে যাবে। তার বদলে তিনি ক্ষণিক উদ্ভাসনেই জীবনের বিপ্রতীপ সত্যকে দেখাতে চান। ফলস্বরূপ ছিন্ন সূত্র, সত্যের খণ্ড অংশ, বহমান সময়ের খণ্ড দলিল, জীবনের হরেক রকম ছাঁচ ও মানুষের বিবিধ প্রবৃত্তি নিয়ে চলমান গদ্যমন্থনে একটা আলেখ্য নির্মাণ করে দেন। যেন একটা সংগীতের প্রয়াস। পুরোটা মিলেই গান। বিচ্ছিন্ন করলে কোনো সত্য মিলবে না। বিপ্লব, মধ্যবিত্ত জীবন, অর্থ, ব্যবসা, রুচি, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, শ্রেণিশত্রু নিধন, বিজ্ঞাপন, বাজার ধরার টেকনিক, মানুষকে প্রতারণা করার নব্য প্রয়াস, বিপ্লবের মহৎ প্রয়াস নিয়ে নিজেকে নির্মাণ করা বিমলের চেতনাহীনতা, সংসার, সব গুছিয়ে নেওয়া, ফাঁকি, সাপ লুডোর খেলা, চড়াই উতরাইয়ের আরোগ্য ব্যাধি, চালমাত সব মিলিয়ে সময়ের জায়মান সত্যকে তিনি যে ভঙ্গীতে ‘হরপ্পার অজানা শিলালিপি’ গল্পে জানান দেন তা ভয়ানক সুন্দর। হ্যাঁ ভঙ্গিটাই উপলের গল্প। গল্প বলা, উপস্থাপনের চলমানতা ও একাধিক বয়াননামা এনে একটি সারোৎসার সত্য আবিষ্কার। আজও আমাদের পাঠকের গল্পে কাহিনি খোঁজার অভ্যাস যায়নি তাই উপলরা বেশি সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছতে পারেন না। অথচ সচেতন বীক্ষণে বাংলা গল্পকে আধুনিক করে চলছেন।

    আখ্যানমাঠে উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত, নগর-প্রান্ত, নগরায়ণ-প্রান্তের সমস্যা, রাষ্ট্র-মিডিয়া, জীবন-জীবিকার সংকট, বিজ্ঞাপন, সাধারণ মানুষের টানাপোড়েন, স্বপ্ন-স্বপ্নহীনতা নিয়ে একটা কথামন্থন গড়ে তোলেন। তিনি সচেতন বীক্ষণে কোনো কিছুকেই বাদ দিতে চান না। বিজ্ঞাপন কীভাবে মন ভোলায়, মিডিয়ার চটজলদি সংবাদ, মেইনস্ট্রিম বলে মন ভোলানো কেতাবি বিদ্যা, বৃত্তের মধ্যে প্রবেশ ও বাইরে যাবার প্রয়াস, স্বাধীন ও স্বাধীনতাহীনতার ইচ্ছা-অনিচ্ছাপ্রবণ মানসিকতা, সমষ্টি ও ব্যক্তির সমস্যা, সিন্ডিকেটরাজসহ একাধিক সত্যনামা এনে সময়ের বুক আঁচড়ে আখ্যান লিখে চলেন। প্রবাহমান সত্যকে ধরেও সত্যের বিপরীতে তিনি দাঁড়িয়ে আখ্যান সাজান। হ্যাঁ অ্যাবসার্ড, মরবিড, নিঃসঙ্গতা, নির্জ্ঞান, নিয়মহীনতা, বৃত্তের মধ্যে ঘোরাফেরা করার প্রয়াস ও বৃত্তকে আউট করে দেবার প্রবণতা, শেষে পরাজিত হয়ে বৃত্তের অংশ হয়ে ওঠা আখ্যানে লিপিবদ্ধ হয়ে চলে। ‘চরণ ও আইকন’ গল্পে চরণ সম্পর্কে উচ্চারিত হয়—“চরণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কারণ সে একজন মুক্ত ও স্বেচ্ছাধীন হ্যান্ড এবং মেইনস্ট্রিমের বাইরে।” অথচ মেইনস্ট্রিম তাকে বিকৃত করে, দাস, চোর উপাধিতে ভূষিত করে। চরণ মেইনস্ট্রিমকে উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় অথচ অক্ষম হয়ে মেইনস্ট্রিমেই ফিরে আসতে হয়। সমস্যাকে তিনি বহুমুখী বিন্যাসে ধরতে চান। ফলস্বরূপ একটা অশ্চর্য কথাজাল গড়ে নিতে হয়। অনুপস্থিত, অবচেতন, অব্যক্ত, চড়াই উতরাইকে সঙ্গী করে নতুন আলেখ্য নির্মাণ করে চলেন। স্বভাবতই সমালোচক মহাশয় সচেতন বীক্ষণে উপলকে চিহ্নিত করেন এইভাবে—“কথাসাহিত্য এক স্বয়ম্ভু অস্তিত্ব। তার নিজস্ব নিয়মে মেজাজে সে চলবে। রাজনীতি বা দর্শনের খিদমতগারি করবে না। রব-গ্রিয়ের সঙ্গে গলা মিলিয়ে যেন বলতে চান কমল কুমার, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বা অরূপরতন বসুর মতো উপল মুখোপাধ্যায়ও।” (তৃণাঞ্জন চক্রবর্তী)

    ‘স্টিফেন হকিং-এর ইউনিভার্স আর আমাদের রাস্তা’ গল্পে উপল পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সত্যকে খুঁজতে পথে নেমেছেন। গল্পকথক নিজের কন্যার শারীরিক অক্ষমতাকে বাস্তব জীবনের সম্মুখীন করে কলকাতার জীবন নিকেতন থেকে স্টিফেন হকিং এর ইউনিভার্সে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু সেই উত্তীর্ণ সত্য কলকাতার পথে ঘাটে মিলছে না। জীবন নিকেতনের আকাশ-পাতাল ফারাকই তবে কি ভিন্ন বোধের জানান দেয়? না আবিষ্কারের জন্য পরিবেশ চাই। সমস্যা থেকে মানুষ সমাধান খোঁজে ঠিকই কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের মানুষ ভিন্ন সত্যে আবিষ্কারে সক্ষম কেননা পরিবেশ পরিস্থিতি আলাদা।
    উপল মুখোপাধ্যায়ের গল্প স্কেচ সময়ের নৃমুণ্ডমালা। একাধিক সত্যকে তিনি এক পাত্রে ডুবিয়ে দেন। বৃহৎ বলয়ের ছিন্ন ছিন্ন সূত্রকে টেনে এনে এমন একটা উড়ান দেন যেখানে কোনো কিছুই বাদ যায় না। এখানেই উপলের গল্প নির্মাণের কারিগরি দক্ষতা। নশ্বর সময়কে, সময়ের মানুষকে, দুর্বৃত্তায়ন, শ্রেণি ও রাষ্ট্রের জালে বন্দি মানুষকে একটা বড় বৃত্তের মধ্যে আটকে রাখেন। গল্পের ভূগোলে, চরিত্রের অস্থিরতায় পারিপার্শ্বিক বাস্তবতাকে তিনি নিপুণ বিন্যাসে ধরে রাখেন। একটি সত্যের সঙ্গে একাধিক সত্য সংযুক্ত বলেই সমস্যা এত জটিল। একটি সমস্যার সন্ধানে নেমে তিনি দেখান সেখানে সমস্যার ধারাপাত কীভাবে জাল বিছিয়ে আছে। সেই সমস্যার ধারাপাতকে নির্মাণ করাই উপলের গল্প ক্যানভাস। সেখানে গদ্যের একটা অবভাস আছে। গদ্যের অবিচ্ছন্নতার মধ্যে সেই সত্যনামা ও সূত্রগুলি ধ্বনি তোলে। একটা সাংকেতিক প্রয়াস তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে খণ্ড খণ্ড সত্যকে নিয়ে একটা মালা গাঁথায় প্রচেষ্টা। সম্পূর্ণটা মিলেই উপলের গল্প। ‘সমুদ্রের গন্ধ’ গল্পে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে ভূগোলের বাস্তবকে সঙ্গী করে যে অধিবাস্তবে ডুব দেন সেটাই গল্প। উপলের গল্পে স্থানকালের প্রেক্ষাপট, ভূগোল থাকে বটে। তবে তা প্রতিয়মান বাস্তবকে সাক্ষ্য দেয় না। বলা ভালো উপল সেই ঘটনাকে বাস্তবের ডকুমেন্ট করতে চান না। আবার বাস্তবকে পাশ কাটিয়েও যান না। বাস্তবকে স্পর্শ করেই মরবিড, অ্যাবসার্ড, ঘূর্ণয়মান অসমান্তরাল বিন্যাসে একটা শিল্পকানন গড়ে তোলেন। সাহিত্যের সত্য যেমন বিনোদন নয় তেমনি বাস্তবের ডকুমেন্ট নয় তা বাস্তবকে ধরে রহস্যময় নন্দনকানন গড়ে তোলায়। সেখানেই আর্টের সৌন্দর্য। সেখানে পরিসর কোনো সত্য নয়। উপল দুই পৃষ্ঠা বা আঠারো পৃষ্ঠায় সমানতালে সেই সত্যকে জানান দিয়ে যান।

    বিজ্ঞাপনের মোহিনী মায়া, সংবাদের আলো-আঁধারি ভাষা, কুঞ্ঝটিকা, বাজার ধরার কৌশল সমস্ত মিলিয়ে যে ফাঁদ তার প্রগাঢ় ভাষ্য উপল নির্মাণ করে নেন। সেই নির্মাণে গপ্প হিসেবে উপলকে অনেক সময়ই বাস্তবের আড়ালে চলে যেতে হয়। বাস্তবকে ধরে অপ্রচ্ছন্ন বাস্তবের প্রতিমূর্তি গড়ে তোলেন। সেই অপ্রচ্ছন্ন বাস্তবের ছায়ামূর্তির মধ্যেই বাস্তবের প্রতিমা লুকিয়ে আছে। সেখানে পাঠক বাস্তবকে আবিষ্কার করবেন বা প্রত্যাখ্যান করে অধিবাস্তবের স্বরকে দেখবেন সেটা পাঠকের প্রত্যাশার উপর ছেড়ে দেন। পাঠকের ভাষ্যে তা শিল্প হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। সেসব নিয়ে উপলের কোনো মাথা ব্যথা নেই। তিনি শিল্প বা না-শিল্প বৃত্তের ভাবনায় পাঠককে যে মাতিয়ে রাখতে পারেছেন সেটাই তাঁর সার্থকতা। হ্যাঁ তিনি রীতিমতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যান। গদ্যসেতু ধরে ভাবনার তরঙ্গ বিচ্ছুরণে পাঠকের মস্তিষ্কে একাধিক বিরোধাভাসের জাল বুনে দিতে চান। সেখান থেকে পাঠক বাস্তবের সত্যে ফিরুক বা বাস্তবকে অস্বীকার করে শিল্পের সত্য বুঝে নিক। ‘মানুষখেকো বাঘের নাম’ গল্পে বৃত্ত, বৃত্তের বাইরের অজানা কেচ্ছা, বানিয়ে তোলা মোহিনীমায়া, আশ্চর্য সত্য, নিপীড়ন, বন্দি বাঘের হতাশা বা হাহাকার এবং ব্যক্তিবোধের পাঠশালায় উপস্থিত-অনুপস্থিত সত্য নিয়ে যে পথ নির্মাণ করেন সেটাই গল্প। তিনি পাঠককে একটা বীক্ষণে ডুবিয়ে দিতে চান। সেখানে ভাবমন্থন করলে একাধিক সত্যের সূত্রনামা পাওয়া সম্ভব।

    একাধিক দৃশ্যসজ্জাই উপলের গল্পমালার কবজকুণ্ডল। সেখানে দৃশ্যান্তর বড় ভূমিকা পালন করে। উপল ইচ্ছাকৃতই দৃশ্যান্তর ঘটিয়ে দেন। পুরাণ, লোকায়ত পরিসর, জীবনের অমাবস্যা, অন্ধকারের নিগূঢ় নিকেতন, রহস্য বারান্দা, ঘূর্ণয়মান সত্য, পরিবর্ধিত জীবনচেতনা এবং পরিস্থিতির সত্যকে বিভিন্ন আঙ্গিকে জানান দেন। সত্যও পরিবর্ধিত, পরিবর্তিত হচ্ছে। সমস্যা ভেঙে নব সমস্যার জন্ম হচ্ছে। সেই সমস্যার বিন্দু থেকেই একাধিক সমস্যার জন্মবিন্দু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। উপল সমস্তকেই ট্রিটমেন্ট করেন। সেকারণে উপলকে একটা আশ্চর্য ভাষা আয়ত্ত করতে হয়েছে। স্থিরতা-অস্থিরতার মধ্য দিয়ে দুলতে দুলতে জীবন নিকেতনের খোঁজ দিয়ে যান। ‘এঁদোগলির এপিকপাঠ’ গল্পে একাধিক দৃশ্যান্তর এনে সময়ের বীভৎস পদাবলিকে জানান দেন। ‘আক্রমণ পর্ব’, ‘উড়ান পর্ব’, ‘ক্ষরণ পর্ব’ পরিচ্ছেদে বিভক্ত করে যে ন্যারেটিভ নির্মাণ করেন তা সময়ের জালবিভাজিকে নানামাত্রায় খণ্ডন করে চলে। আড়ালের বাস্তব ঘটমান বাস্তবকে খণ্ডন করে। রক্ত, ক্ষরণ, রজস্বলা, ধর্ষণ, পুরাণ ইত্যাদি ইমেজে গল্পের নতুন ন্যারেটিভ আবিষ্কৃত হয়ে চলে।


    (২)


    উপল মুখোপাধ্যায় বারবার ইমেজ তৈরি করেন। পাষাণের ছায়ামূর্তি ভেদ করে জীবন্ত প্রতিমা নির্মাণ করেন। সেখানে অবচেতনের ভাষা বিশেষ জরুরি হয়ে ওঠে। আছে অস্থিরতার অসমান্তরাল বিন্যাস। বিচ্ছিন্নতার অবভাস। খণ্ড ভাব, দৃশ্য, মুহূর্তকে নিয়ে তিনি অখণ্ড সত্য গড়ে তোলেন। সময়তন্ত্রের পাঠে অত্যাচার, ধর্ষণ, খুন, বিজ্ঞাপন, ভোগবাদ, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, শোষক, রক্তপাত, ধর্মীয় হানাহানি, দাঙ্গা এসব সত্য। এই সত্যের নানা প্রকরণ আছে। সেই বিবিধ প্রকরণের নৃমুণ্ডমালাকে একটা উথালপাতাল গদ্যে অবচেতনায় ভাষায় নির্মাণ করে চলেন। অন্ধকার, রক্তের খেলা কতরকমভাবে নাচতে পারে তার অশনি সংকেত গড়ে ওঠে ‘ভালো লাগা টর্চের আলো’ গল্পে। অন্ধকার, মৃত্যু, রক্তপাত কাল থেকে কালান্তরে চলছে। রাজনীতি, ধর্মকে সামনে রেখে মানুষের দাঙ্গা, মানুষের ধর্মীয় জেহাদ ও মনের অন্ধকার। ব্যক্তি মনের বাইরে ও ভিতরের অন্ধকার, ক্লেদ, সংখ্যালঘুর ভয়, সংখ্যাগুরুর আধিপত্য ইত্যাদি নিয়ে উপল নিজস্ব কায়দায় বাজিমাত করেন। রক্ত উৎসব, রক্তের খেলা, অন্ধকার যাপন, অন্ধকারের বিবিধ পাঠ দ্বারা সময়ের অস্থিরতাকে খণ্ডন করে চলেন। এই বিন্যাসে উপলের নিজস্ব উড়ান আছে। অবচেতনের ভাষা, বিচ্ছিন্নতার ভাষা, বক্তব্যের আড়াল, ক্ষণিক মুহূর্ত ও অস্পষ্ট-অব্যক্ত চিত্র দ্বারা নিজের ফর্ম গড়ে নিয়েছেন। গল্পকথনে তিনি ব্যক্ত ও বক্তব্যধর্মিতাকে প্রাধান্য দেননি। নিবিড়ি ডিটেলিং এ বিশ্বাস করেননি। একটা কুঞ্ঝটিকা, বিরোধভাস, সংকেত, ইমেজ দ্বারা পূর্ণপ্রতিমা গড়ে তুলতে চেয়েছেন। সেখানে একাধিক বাঁক রেখেছেন। বাঁকের আশপাশ দিয়ে নানাবিধ চিত্র ঘুরছে। তারা বাঁকবদলের অভিমুখকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার উপল নিজস্ব বীক্ষণে সব ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ন্যারেটিভকে আপনতালে আরেক সত্যে নিয়ে যাচ্ছেন।

    ‘পক্ষীবিষয়ক’ আখ্যান প্রবাহমান সত্যকে দুমড়ে মুচড়ে বিপরীত দিক থেকে দেখার প্রয়াস। সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে, সময়ের নথিনামাকে স্পর্শ করে আরেক জারণ আবিষ্কার। গদ্যের চলমানতায় তিনি বাস্তবের ধারাপাতকে খুব সূক্ষ্মভাবে ধরে দেন। ভাগাড়, টাউনশিপ, পাখি নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত দখল, মদ্যপান, অস্থিরতা সমস্ত সত্যকে সামনে রেখে একটা গদ্য সরণি নির্মাণ করেন। দ্রুত গদ্যে সময়ের মন্থনই এই আখ্যানের কেন্দ্রীয় সত্য। ‘জেল থেকে বেরনোর পর’ গল্পে সময়ের পালাবদলে জীবনচেতনার রং কীভাবে বদলে যায় সেই চেতন-অবচেতন সত্তাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর, উপস্থিত সত্য থেকে অনুপস্থিত বলয় মানুষকে কীভাবে বিভ্রান্ত বোধে আক্রান্ত করে তার বিরোধাভাস বেরিয়ে আসে। রাজনীতির রং থেকে পোশাকের রং, রংহীনতা, রংরুট, পার্টিচেতনা, ট্রেড ইউনিয়ন, কারখানা লকআউট, দেবব্রতের জেল সব মিলিয়ে সময়ের পালাবদলকে বহুমাত্রায় চিহ্নিত করে চলেন। উপল সময়ের বিবর্তনকে বহুমাত্রায় দেখাতে সিদ্ধহস্ত। বলা ভালো এটাই তাঁর গল্পধর্ম। ভাঙন, বদল বহুভাবে বহুস্তরে ঘটছে। রাজনীতি, ভোগবাদ, বিজ্ঞাপন, মূল্যবোধ সহ একাধিক প্রবণতা সেই বদল ঘটাচ্ছে। উপল সূক্ষ্মবিন্দু দ্বারা সেই একাধিক সত্যকে গল্পে বুনে দেন। গল্পের গল্পত্ব অপেক্ষা এখানে একটা জার্নি প্রধান হয়ে ওঠে। গদ্যের চলমান খাতে তা নানা ভেল্কি তোলে। সেটাই উপলের শিল্পধর্ম। বৃত্ত থেকে দূরে গিয়ে গোলার্ধের একাধিক রহস্যকে তিনি কেন্দ্র নিয়ে আসেন। সেখানে নায়ক, ন্যারেটর থাকেন বটে কিন্তু সেটাই প্রধান কথা নয়। উপল ভাবনার মহাসিন্ধু দিয়ে, অস্থিরতার নানা বিন্দু দিয়ে, মহাগোলকের নানা চক্রান্ত দিয়ে ও নিজস্ব বোধের মাত্রা দ্বারা একটা জটিল অবয়ব গড়ে দেন। মূর্ত-বিমূর্ত মিলিয়ে সেই কালপ্রতিমা যেন কথা বলে। পাঠককে ছলনা করে। আবার পাঠকের অবস্থান সঠিক হলে পেয়ে যান ভাবনার ক্ষণিক মুহূর্ত।

    উপল সময়ের একককে নানামাত্রায় ধরতে চান। বাস্তব-অবাস্তব, লৌকিক-অলৌকিক, ঘটমান বর্তমান-ইতিহাসের বিচ্ছুরণে তা হাজির হয়। বলা ভালো তিনি পিছন থেকে শুরু করে বর্তমানে ফেরেন। এই বর্তমান থেকে অতীতে ফেরা বা অতীত থেকে বর্তমানে প্রত্যাবর্তনের মধ্যে নানা চিত্রকল্প, দৃশ্যসজ্জা, আড়াল-অবডাল, বিরোধাভাস, লৌকিক-অলৌকিকের বয়াননামা সময়কে নানা পরিসরে উদ্‌ঘাটন করে চলে। ‘কল্যাণীতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মৃতদেহ পাওয়া যেত’ আখ্যানের প্রথমেই জানান দেন—“১৯৪৭ সালে কল্যাণীতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার পাওয়া যেত।” বাঘের মৃত্যু, ছবি টাঙিয়ে রাখা, কলকাতার জীবন, বনবিড়াল, ভাম, খাটাসের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি মিলিয়ে তিনি কেন্দ্রস্থিত সত্যকে নানাদিকে টেনে নিয়ে যান। কলকাতা, সুন্দরবন, কল্যাণী মিলে যে ভূগোল, কলকাতা নামক কেন্দ্র থেকে বিচ্ছুরণ এবং আবার কেন্দ্রেই ফিরে আসা সমস্ত মিলিয়ে অদ্ভুত কায়দায় আধিপত্যের ক্ষমতা ও রাজনীতির ক্ষমতাতান্ত্রিক বয়ানকে সূক্ষ্মভাবে ব্যক্ত করে যান। উপল কোনো কিছুই স্পষ্ট করে বলেন না। আবার আখ্যানজালে তা অলীক বা অস্পষ্টও নয়। স্পষ্ট-অস্পষ্টের মধ্যবিন্দু দিয়ে একটা বিরোধাভাস রেখে কিছুটা ব্যক্ত করে অব্যক্তের রোমন্থনে পাঠককে ঠেলে দিয়ে উত্তরণের সত্য খোঁজেন। যেন একটা নলের মধ্যে চারিদিক থেকে ছুটে আসা সত্যের বিচ্ছুরণের মালা পিণ্ড আকারে প্রবেশ করতে চায়। উপল তা প্রবেশ করানও। ফলে দ্রুত দৃশ্যপট বদলে যায়। একাধিক সত্যকে আনতে হবে বলে লেখক তা বদলাতে বাধ্য হন। তবে তা বিচ্ছিন্ন নয়। উপলের গদ্যজালে তা আশ্চর্যরকমভাবে আটকে থাকে। এখানেই উপলের যাবতীয় মুন্সিয়ানা।


    (৩)


    গল্পযাত্রায় উপল বারবার নিজের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। আখ্যান পরিকল্পনা, বয়ান ও উপস্থাপনে নানা বদল লক্ষ্য করা যাবে। ‘হরপ্পার অজানা শিলালিপি’ (২০০৫), ‘পক্ষীবিষয়ক’ (২০০৯) গ্রন্থ থেকে ‘পড়তে না পারা নাম’ (২০১৮) গ্রন্থে এসে অনেক বদল ঘটে গেছে। আবার ‘হরপ্পার অজানা শিলালিপি’ থেকে ‘পক্ষীবিষয়ক’ এ নানা বদল লক্ষণীয়। গল্প বলয়ের পরিসর আজ তিনি নানাভাবে ভেঙে ফেলেছেন। গল্পের ফর্ম নিয়ে পরীক্ষায় মেতেছেন। রূপকের মাত্রা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। ‘শহর ছোট হয়ে গেছে’ আখ্যানে কয়েকজনের বক্তব্য, আদান-প্রদান, দাতা-গ্রহীতা-ক্রেতা-বিক্রেতার রূপকে শহরের বিবর্তত চিত্র আড়ালে উঁকি দেয়। হ্যাঁ শহর বদলে যাচ্ছে। ফুটপাত বদল হয়ে গেছে। সেই বৈষম্যকে ভারসম্যে ফিরিয়ে আনতে তিনি উলটো দিকে হাঁটেন। বাস্তবে তা সম্ভব কী অসম্ভব এই নিয়ে সংশয় আছে কিন্তু শিল্পের বাস্তব তো ভিন্ন সত্য খোঁজে।

    ‘পড়তে না পারা নাম’ গল্পগ্রন্থে এসে উপল আগের গল্পের ফর্মকে এড়িয়ে গেছেন। টুকরো টুকরো গদ্যে জীবনের সম্পাদ্যকে তীব্র ও প্রখরভাবে জানান দিতে চেয়েছেন। পরিসরের সংক্ষিপ্ততা, বক্তবের প্রগাঢ়তা, মননচেতনা, সময়কে ছিন্নভিন্ন করার প্রয়াস ও জীবনকে নানা কৌণিক বিন্দু থেকে দেখার গভীর দার্শনিক উপলব্ধি গল্পে নতুন বীভঙ্গের জন্ম দিয়েছে। ‘পড়তে না পারা নাম’ গল্পটি পুরোটাই পাঠকের জন্য তুলে দেওয়া রইল—

    “নামটা ছিল। তবু পড়তে ভুল হল। আমি কোথায়। সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ ছিলাম কি। সে দিন প্রচুর আলোচনা হল। কাজও এগিয়েছে মেলাই। সকলে মাইনে পেয়েছে। সকলে খুশি। আমারও কাজ শেষ বলে মনে হচ্ছিল। আর কী। তখনই বলল, ‘ভাঙ্গার গল্পটা টানছে না।’ বললাম, ‘হতে পারে কারণ আমি ওখানে ছিলাম আর তুমি নেই।’ পুরোটা যে নেই এটা ঠিক বলি নি। তবুও বলতে থাকি। বললাম, লেখাটার নাম হল : কথা। বলল, ‘না। লেখাটার নাম : কথা নিরন্তর চলে।’ ভুলটা যে হল সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ ছিলাম কি?” (গল্পসমগ্র, চিন্তা প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ, আগস্ট ২০০২, পৃ. ২৫৬)
    তির্যক মন্তব্য, পরিসর বদল, বিচ্ছুরণের সত্য, সময়ের নৃমুণ্ডমালা তিনি বিভিন্ন উপকরণে অব্যক্ত-ব্যক্তের লীলায় সাজিয়ে দেন। পরিবর্ধিত সত্য ও পরিস্থিতির সত্য মিলিয়ে তিনি গল্পের নতুন সমীকরণে এগিয়ে গেছেন। ‘শকুন্তলা হাঁসদা’, ‘আমরা তিনজন’ ‘খাবার’, ‘ঠাণ্ডা মাংস’ প্রভৃতি গল্পে রাজনীতির অস্থিরতা, সময়ের নানা গোলার্ধ, বোধের বিচ্ছুরণ, বাস্তব-অধিবাস্তবের নানামাত্রিক স্বর নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিরাজ করেন। হ্যাঁ বাংলা গল্প নানা বিভঙ্গ নিয়ে দশকে দশকে নতুন ভূমি আবিষ্কার করে চলেছে। দশ পনেরো বছর আগের গল্পের সঙ্গে উপল এই পর্বে এসে নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে নিয়েছেন। সময়ের চলমানতার অলিগলি এবং সাহিত্যের প্রকরণে নিজেকে সম্পূর্ণ নতুনভাবে প্রস্তুত করে জানান দিয়েছেন।

    ‘স্ট্রাইক’, ‘বুলেট’, ‘দিদি’, ‘স্ট্রাইক ব্রেকার’ গল্পগুলিতে রাষ্ট্র, অফিস, জনগণ, নিয়ন্ত্রণ, প্রতিবাদ, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, গণমাধ্যম, পুলিশি নিপীড়নের কোলাজ এনে দলদাস সময়ের ভঙ্গিল রূপচিত্র এঁকে দেন। ‘পড়তে না পারা নাম’ পর্বে এসে উপল গল্পের বদলে একটা মুহূর্তকে এঁকে দিতে চেয়েছেন। এখানে পাঠক গল্পের স্বাদ নাও পেতে পারেন। একটা অস্থিরতাকে ধরে বাঁক বদল করে ভিন্ন সত্যের সমীকরণে পাঠককে ভাসিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। শ্রেণির সত্য, বিরোধিতার সত্য এবং বিরোধী অবস্থানকে ভেঙে ফেলার কায়দাকে উপল নানা আঙ্গিকে পরিবেশন করেছেন। উপলের কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকারী হয়ে উঠেছে।


    (৪)


    ‘পড়তে না পারা নাম’ (২০১৮) থেকে ‘মহারগ্গড়’ (২০১৯) আবার বাঁক বদল ঘটেছে। প্রথম গল্পেই (‘সুমঙ্গল’) অ্যাবসার্ড, বিভ্রান্ত প্রবণতা, অস্থিরতা, পাগলামি, মরবিডকে প্রাধান্য দিলেন। উপল সময়ের অস্থিরতাকে নানা বিভঙ্গে ট্রিটমেন্ট করতে চেয়েছেন। ফলস্বরূপ পরিসর বদল করে নিতে হয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে সব, চক্রান্ত, ক্রাইমে সমস্ত লোপাট হচ্ছে। এই অস্থিরতার সত্যকে তিনি একটা সংশয়, দ্বিধা, পাগলামি ও বিভ্রান্ত প্রবণতার ভাসিয়ে দিলেন। সুমঙ্গলের জীবনবৃত্তান্তের সামান্য তুলে ধরা যাক—
    “এইভাবে সুমঙ্গলের সব মানবিক জিনিসপত্র গুলিয়ে যাওয়া নিশ্চিত হল। সে অফিস যাওয়া বন্ধ করে দিল। বাইরের সঙ্গে তার যোগাযোগের জিনিসপত্র সে আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলল। যার গুরুত্বপূর্ণ হল টাকা। সে আর টাকার হিসেব মেলাতে পারে না। ছুটির হিসেব মেলাতে পারে না। সংখ্যার হিসেবে মেলাতে মেলাতে অজস্র ভুল করে ফেলে। তাকে অফিসে আলাদা করে ডেকে পাঠানো হয়।” (তদেব, পৃ. ২৭৩)

    চেতন-অবচেতন-অর্ধচেতন, অস্থিরতা, দ্বিধা, সংশয়, সংকট, বিভ্রান্তি, পাগলাটে মননকে সঙ্গী করে সিস্টেমের ঘর-বাইরের চিত্রনামা ব্যক্ত হয়ে চলে। আবার বেশ কিছু গল্পে উপল পিছনে ফিরে গেছেন। এই দুই গল্পগ্রন্থের মধ্যে যেমন অমিল আছে তেমনি মিলও আছে। কেননা সময়ের এপিঠ-ওপিঠ ধরে উপল নিজেকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রেখেছেন। পরিসরের তোয়াক্কা না করে, অণুগল্পের ছাঁচকে পাত্তা না দিয়ে গল্পের বিভঙ্গে নতুন আঙ্গিক নিয়ে বিচরণ করেছেন। সংলাপ, যতিচিহ্ন, বিরোধভাস ও দ্বন্দ্বমুখর সময়ের দুইপিঠে লাঙল চালিয়ে দেখান এইভাবে সব ভাঙছে।

    উপল মুখোপাধ্যায় একটা উত্তর আধুনিক ডিসকোর্স গড়ে তুলেছেন। গল্পের গল্পত্ব থেকে দূরে গিয়ে তিনি অস্থিরতার একটা অসহ্য উপনিবেশ গড়ে তুলেছেন। সেখানে কখনো বীভৎস রস, কখনো ক্রমাগত খুন, কখনো রাজনীতির আধিপত্যবাদ, শোষকের রক্তচক্ষু তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ করে একটা অস্পষ্ট অন্ধকার ছায়া নির্মাণ করে চলেন। শেষ পর্বে এসে উপল পাঠককে রীতিমতো অস্থিরতায় ভুগিয়েছেন। একটা দ্বিধা, বহুরৈখিক ঘটনা পরম্পরা, চিত্রের নানামাত্রিক বিন্যাস ও খনন খাদের গভীর তলদেশে ক্রমেই নেমে যাওয়ার অমসৃণ পথ দ্বারা গল্পকে জটিল তত্ত্বের ভাষ্যে পরিণত করেন। সুনির্দিষ্ট তত্ত্ব বা চেতনা অপেক্ষা একটা অ্যাবসার্ড গোলক নির্মাণ করে যান। বিবিধ পাঠকের বহুবিধ সত্তা থেকে যে পাঠ নির্মিত হবে তাই গল্পের ভবিষ্যৎ। ঘটনার বিপ্রতীপ সত্য, বিকেন্দ্রীভূত ক্ষমতাতান্ত্রিক বয়ান, জেদ, বিদ্রোহ, বিপ্লব, স্বীকার-অস্বীকার, ইউটোপিয়া মিলিয়ে জীবনচেতনার নিগূঢ় পাঠ আবিষ্কৃত হয়ে চলে ‘কে এই সানি লিওন’, ‘বন্ত সিং—যার কিছু রইল না’ গল্পে। ‘সিপিয়া টোন’ গল্প থেকে একটা অংশ পাঠকের সামনে তুলে ধরি—
    “সম্পাদক ভাবতে বসলেন তাঁর ভুল কোথায়। ভেবে ভেবে বের করে ফেললেন আসলে ভুলটা ছিল প্রচ্ছদে। সেটায় বিপ্লবের ছবি ছিল কিন্তু তা ম্যাড় ম্যাড়ে সিপিয়া টোনে। একে অতীতের জিনিস তায় রঙে গন্ডগোল আর বিক্রি হয়! অনেক ভেবেচিন্তে সম্পাদক উজ্জ্বল চকচকে লাল রঙ বাছলেন। এবার পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেল। সম্পাদক অবাক হয়ে জিগ্গেস করলেন, ‘আমাকে ধরলেন কেন আমি তো অতীতের জিনিস বিক্রি করছিলাম।’
    — তালে লাল রঙ দিলে কেন?
    — সে তো বিক্রির জন্য।
    — বিপ্লব মাড়াচ্ছ বোকাচোদা।
    সম্পাদক বুঝতে পারলেন তিনি আবার ভুল করে ফেলেছেন অতীতের জিনিসে বর্তমানের লাল রঙ লাগাতে সবাই ভাবছে তিনি বিপ্লবী। তাঁর কদরও গেছে আর টাকা তো কোন কালেই হয়নি। সিপিয়া টোনই ঠিক ছিল।” (তদেব, পৃ. ২৮৬)

    বিপ্লব, বিপ্লবের নায়ক, সংগ্রাম কীভাবে বিজ্ঞাপন, পণ্যায়নের অংশ হয়ে ওঠে তা একভাবে নির্মাণ করেছিলেন আশিস মুখোপাধ্যায়। উপল মুখোপাধ্যায় ভিন্নভাবে। অতীত, বিপ্লবের তত্ত্ব, বিপ্লবের ভূত, ক্ষুধার সংস্থান সবমিলে এক অদ্ভুত অস্থিরতার আখ্যান গড়ে ওঠে। আবার নকশাল বন্ত সিং এর সমস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গ ধীরে ধীরে ছেদ করা হয়। শেষে আর রক্ত বের হয় না। মরবিড, অ্যাবসার্ড দ্বারা জেদি মানুষের ট্র্যাজিক পরিণাম চিহ্নিত হয়ে চলে। সেই বৃত্তান্তে উপল একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেন। একটা রহস্যকে ধরে সে একাধিক রহস্যকে ক্রমাগত জানান দিয়ে যান। সেখান থেকে একটা নিত্যসূত্র আবিষ্কার করেন। সেই সূত্রমালাই উপলের নান্দনিক ভাষ্য।

    বাজারি লেখাপত্র বা প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপত্রের সম্পূর্ণ বিপরীতে দাঁড়িয়ে উপল বাংলা গল্পকে যেমন চ্যালেঞ্জ করেন তেমনি নিত্য নতুন বিভঙ্গ দ্বারা একলা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেই অস্থির স্বরলিপিতে বসন্তের বাতাসের মতো সময়ের সত্য ভেসে আসে। বাস্তব থেকে শুরু করে বর্তমানের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে করতেই সেই অতীতের প্রসঙ্গ ভেসে আসে। অতীত যেন বর্তমানে থাবা বসায়। তেমনি বাতিল অতীত নিঃসাড় ক্লান্তি নিয়ে বিদায় নেয়। তেমনি সাহিত্য পাঠ যেন একটা ঘূর্ণি। তার ব্যাখ্যা হয় না, তার সারসত্য, ভাষ্য হয় না। সেই সত্য যেন ‘মহারগ্গড়’ গল্পে আড়াল দিয়ে জানিয়ে যান। সাহিত্য সম্মেলন, পুলিশ, এস্টাব্লিশমেন্ট, সাহিত্যের ব্যাখ্যা, লেখক সম্পর্কে ধারাভাষ্য, টীকা, নোট সমস্ত কিছুকে তির্যক মন্তব্যে বিশ্লেষণ করে দেখান বাতিল হবার প্রক্রিয়া কেমন। বিপ্লবী সাহিত্য, পোস্টার, ক্ষমতাতান্ত্রিক বয়ান, পুলিশি পাহারায় সাহিত্য সভা, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার ঊর্ধ্ব সোপান সমস্ত মিলিয়ে তিনি যে ন্যারেটিভ রচনা করেন তা প্রকৃতপক্ষে একাধিক প্রশ্নের বিচ্ছুরণের মালা। বলা, ভাষণ দেওয়া, লেখার থেকে পাঠকের কাজ যে চিন্তা করা, আখ্যানকে ভেঙে ভেঙে নানাবিধ সত্য উন্মোচন করা, সেই পাঠক অন্য টেক্সটের ক্ষেত্রে লেখক নিজেও। পাঠতন্ত্রের শ্রেণিবিন্যাসে এ গল্প এক নতুন সমীকরণ।


    (৫)


    গল্প ভেঙে গল্প, গল্পের ভিতরে গল্প ফর্মে উপল মুখোপাধ্যায় নানা আখ্যান নির্মাণ করেছেন। উপল বারবার প্রচলিত ফর্ম থেকে যেমন দূরে চলে গেছেন তেমনি নিজেকেও বদলে নিয়েছেন। সাইকোলজি, রহস্য, জাদুবাস্তবতা, অনুপস্থিত সত্য এবং বাস্তবকে বিভিন্ন দিকে থেকে ছিন্নভিন্ন করার সত্য গল্পের পরিবেশকে বদলে দিয়েছে। অবচেতন, অনুপস্থিত অবয়ব এসে বাস্তবকে ধাক্কা দিয়ে সত্যের বহুমুখ উন্মোচন করে দেয়। আবার কখনো তথ্য, সত্য পর্যায় সরণি ধরে এগিয়ে আসে। এই জীবনকে উপল দেখেছেন অসহিষ্ণু, অসহ্য, অসীমান্তিক তন্তুর মালা হিসেবে। সেখানে বাস্তবের পরম্পরা নিয়ে সমাজতান্ত্রিক বয়ন সম্ভব কিন্তু প্রকরণের শিল্প সম্ভব নয়। বিষয়ের সঙ্গে গল্প বিষয়ীও। সেই উড়ানে, আখ্যানের চলমানতায়, পাঠের নতুন প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় উপল নিজস্ব প্রকরণ প্রয়োগ করে থাকেন। ‘গন্ধবাজার’ গল্পের ন্যারেটিভের ভিতর আরেক ন্যারেটিভ তৈরি হচ্ছে। গল্পকথককে পাশে বসিয়ে ন্যারেটর আরেক কথনক্রিয়ার জাল উন্মোচন করছেন। এই উন্মোচনটাই গল্প। গল্প তো শুধু পড়া নয়, তার রহস্য তাকিয়ে দেখাও, গল্পকথনের পথ চলাটা পাঠকের আবিষ্কারও বটে। সেই রোমন্থন সেতু নির্মাণ করে চলেন উপল মুখোপাধ্যায়।

    বাস্তব-অবাস্তবের লীলা, সমান্তরাল বাস্তবের পাশ দিয়ে অসমান্তরাল অবাস্তব, মানুষের জৈবিক ক্রিয়া, পরিবেশ, সংগম, খিস্তি, লাঞ্ছনা, ভোগবাদ, বদলে যাওয়া মানচিত্র, কুহকের বাস্তব ও বাস্তবের কুহক নিয়ে উপল এমন এক পাঠবিশ্ব গড়ে তুলেছেন যা বাংলা গল্পে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিসর। পার্টি রাজনীতি, সময়ের জারণ ক্রিয়া, পারিপার্শ্বিক বাস্তব ও জীবনের নানামাত্রিক বিচ্ছুরণকে নিয়ে তিনি একটা গদ্যসরণি গড়ে তুলেছেন। গল্পের সমূহ বৈশিষ্ট্যকে ভেঙে দিয়ে একটা অসমান্তরাল, অবিন্যাস্ত প্লট রেখে গেছেন মাত্র। সেখানে নানাবিধ সত্য আসছে, তা ভাঙছে, বাস্তব-অবাস্তবের খেলা চলছে, রহস্য গড়ে উঠছে। উপল বাস্তবের বিভঙ্গমালাকে ট্রিটমেন্ট করেন কিন্তু তা সম্পূর্ণ নতুন কায়দায়। বাস্তবের উপস্থিতি চোখে পড়ছে। কিন্তু পাঠকের সামনে তিনি পুরো বাস্তবকে মেলে দিচ্ছেন না। একটা আড়ালের বাস্তব দিয়ে শিল্পের বাস্তব গড়ে তুলছেন। মেলা, না মেলা, রহস্য, রহস্যের আপাত সত্য উন্মোচন, বৃহৎ সত্য-ক্ষুদ্র সত্যের মাঝ বরাবর একটা রেখাচিত্র এঁকে দেওয়ার বিবিধ সত্য নিয়ে গল্পবলয় নির্মাণ করেন। ‘গাছটা এমনভাবে দেখছিল’, ‘কুইলাপাল’ গল্পে সেই ছাঁচ নানাভাবে ধরা দিয়েছে।

    প্রবাহিত সময়, পরিবর্তিত সময়কে উপস্থাপনের অভিনব আঙ্গিক উপল আবিষ্কার করেছেন ‘ম্যাকলাস্কিগঞ্জ’, ‘পাইস হোটেল’ গল্পে। হঠাৎ বিচ্ছুরণ থেকে কলরব স্রোতে ভেসে যাওয়া, বীক্ষণের তরঙ্গ নগর থেকে সংযুক্ত বাস্তবের অভ্যন্তরে পৌঁছে যাওয়া, ক্ষণিক উদ্ভাসন থেকে বড় সময়ের পাদমূলে প্রবেশের প্রচেষ্টা, আবার ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সময় সংকেত থেকে পাঠকের মনে একটা ধারণার জন্ম দেওয়া প্রভৃতি মিলিয়ে একটা রহস্য অবয়ব গড়ে তোলেন। সেখানে অভিযান থাকে, মুক্তমালা থাকে, খুঁজে দেখার প্রয়াস থাকে, অভিনব বলয় গড়ে দিয়ে বাজিমাতের নিকেতন থাকে কিন্তু সব থেকে বড় হয়ে ওঠে একটা অস্থির বোধে আক্রান্ত বয়ান। যা থেকে উপল পাঠককে নির্দিষ্ট কোনো ধারণাতেই পৌঁছতে দেবেন না। উপল শক্ত হাতে ক্রমাগত বয়ানের বিচ্ছুরণ গড়ে তোলেন। সেখানে একাধিক বাঁক রেখে ভাবনাসাগরে ঢেউ তোলেন। সেই বুদবুদ আবার তলিয়ে যায় পাঠক মনে সুনির্দিষ্ট ধারণা গড়ে ওঠার আগেই। আড়াল থেকে উপল যেন ব্যঙ্গ হাসি হাসেন। পাঠককে যেন গাম্ভীর্য কণ্ঠে বলতে চান পড় পড়, পড়ে দেখ বাংলা গল্পের আধুনিকতার চোরাগোলি কেমন।

    উপল মুখোপাধ্যায়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ‘একালের রক্তকরবী’ পত্রিকায় ‘স্টিফেন হকিংয়ের ইউনিভার্স আর আমাদের রাস্তা’ গল্প দিয়ে । কালক্রমে ‘হরপ্পার অজানা শিলালিপি’ (২০০৫), ‘পক্ষীবিষয়ক’ (২০০৯), ‘পড়তে না পারা নাম’ (২০১৮), ‘মহারগ্গড়’ (২০১৯), ‘কুইলাপাল’ (২০২২) গল্পগ্রন্থ হয়ে ‘গল্পসমগ্র’ (২০২২) প্রথম খণ্ডে পৌঁছে গেছেন। এই গল্পসরণিতে উপল নিজেকে বারবার বদল করেছেন। গল্পের বয়ান, অবয়ব, বীক্ষণ, ন্যারেটিভ, উপস্থাপনে নিজেকে বারবার ভাঙছেন। রীতিমতো পরীক্ষা নিরীক্ষায় মেতে আছেন। সুবিমলীয় স্টাকচার না ভেঙেও গল্পের অভ্যন্তর দিয়ে রীতিমতো গেরিলা সন্ত্রাস চালিয়েছেন। যা প্রবাহিত পাঠচক্রকে ক্রমাগত হোঁচট খাওয়ায়। ভবিষ্যতে উপল আবার কেমন বয়ান নিয়ে আসেন তার অপেক্ষা করা ছাড়া আপাতত আর কোনো কথা নেই।

    পুরুষোত্তম সিংহ। ঘোষপাড়া, সুভাষগঞ্জ, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর। ৬২৯৭৪৫৮৫৯১। ৭৩৩১২৩।



    গল্পসমগ্র’ (২০২২) প্রথম খণ্ড
    উপল মুখোপাধ্যায়

    প্রকাশক:
    মূল্য— টাকা।
    বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ২২ এপ্রিল ২০২৪ | ৩৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন