এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • একটি রেলযাত্রার গল্প

    achintyarup ray
    অন্যান্য | ২৬ এপ্রিল ২০১১ | ৭৫৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ami sei boudir bon | 122.163.13.119 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১০:০১470273
  • আর আমার নাম দূরে থাক,গানের কথাও লিখলেনা একবারো?
    স্মৃতি তুমি--- ই:
  • kallol | 220.226.209.2 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৬:০০470274
  • অচিন্ত - পারেনও মাইরী। দিলেন তো বারোটা বাজিয়ে।
    বেশ কেমন সাঁঝের ঝোঁকে আপনার লেখা পড়তে পড়তে, আমার পথ চলছিলাম। ঐ এলাকাতেই তবে অন্য কোথা অন্য কোন পানে। গুয়াহাটি থে ভালুকপোং এর রাস্তা।
    সে যাগ্গে। মনে মনে আঁকছিলাম টিকিটবাবুর চেহারা। অনেকটা বঙ্কুবাবু আর পটলবাবু মেশানো। উনি আর আপনি পাত পেড়ে বসেছেন, বৌদি তদারকে। রান্না ঘরের দাওয়ার পাশ দিয়ে উঁকি মারছে লতানো লাউডগা। জোনাকিতে ছেয়ে গেছে আশপাশ।
    তার মধ্যে ধুস............ কোত্থেকে আমি সেই.......সিরিজ চলে এলো। আপনিও মেতে গেলেন কোন্নগর থে কামস্কাটকা না ঘোড়াড্ডিম নিয়ে। সে সব তবু ছিলো একরকম। তা না বার খেয়ে লোকটাকে ফুটবলার বানিয়ে দিলেন গো!!!! তাও আবার টালিগঞ্জ অগ্রর, যারা রোজ ব্রেকফাস্টে মন্টু বসুর ধাতানি খায়।
    না: রোমাঞ্চ বলে আর কিছু রাখলে না গো হরি হে।
  • ami boudir bon | 59.161.106.203 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৬:২৭470275
  • খেয়েদেয়ে সকাল এগারোটার টেরেন ধল্লেন তো উনি,জোনাকী কোদ্দিয়ে আসবে?
    সেই স্মৃতিটুকু কভু ক্ষণে ক্ষণে------
  • kallol | 220.226.209.2 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৬:৪২470276
  • উফ, কারে কি বোzআই!!!!!
    আরে, অচিন্ত সকালে খাচ্ছিলো তো কি। আমি তো সাঁঝের ঝোঁকে পড়ছিলাম।
    লাইন মেরেই কুল পেলেন না, এসব বুঝবেন কি? হ্যারে কয় রুমাঞ্চো। গোলাপী হাতিরা সবে সেজেগুজে হাওয়া খেতে বেরিয়েছে। ধরনী সামান্য দোদুল্যামান। রাশিয়ান সুন্দরী নেবু-কাঁচানঙ্কায় সবে আসর জমাচ্ছেন। বাইরে বিষ্টির জোলো হাওয়া কানের লতি ছুঁয়ে পনিটেইলে বিলি কাটছে। তার মধ্যে কোত্থাও কিচ্চু নেই - টালিগঞ্জ অগ্র - ওফ।
  • ami boudir bon | 59.161.106.203 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৭:২৯470277
  • আমি লাইন মাল্লুম? আর আপনাদের অচিন্টি কি ধোয়া কারিপাতা?

  • kallol | 220.226.209.2 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৭:৩৭470278
  • না তো কি? আপনি কি ওখানে শঙ্করদেবের ভজন গাইছিলেন?
    ওহ, কি দীঈঈঈঈর্ঘশ্বাস্‌স্‌স্‌স্‌স্‌স, কি আকুলি বিকুলি। যান যান মশাই, আমাদের অচিন্টি ওরম লয়। দুচারটে ঝারি মারতে পারে, তাবলে লাইন। নাহ ওটা আপনিইইই মারছিলেন।
    যাগ্গে।
  • achintyarup | 121.241.214.38 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৭:৪৪470279
  • রেলযাত্রার বারোটা বেজে গেল :(
  • kallol | 220.226.209.2 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৭:৪৭470280
  • সেজ্জোন্নো আমনিই দায়ী। ন্যান শুরু করেন তো। তাড়াতাড়ি না করলে তেরোটা-চোদ্দোটাও বেজে যেতে পারে।
  • aami boudir bon | 59.161.106.203 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৭:৫৭470281
  • ইকী,আমি আমার দিদির বাড়ী বেড়াতে যেতে পাবো না?আমি তো দশদিন ধরেই ঐখানে ছিলুম।আর অচিন্টি যখন অন্দোকারে লাটফর্মে পাইচারী কচ্চিল তকোন জামবুকে পেছনের জানলা দিয়ে আমিই তো জানিয়ে এলুম।
  • boudir bon | 59.161.106.203 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৮:০২470283
  • যাগ্গে,বিদায়,এইবার চিরকালের জন্য।
    চিনিলে না আমারে কি----
  • kallol | 220.226.209.2 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ১৮:০৪470284
  • নাও। হলো তো!
    এবার অন্দোকার পেল্যাটফর্মের গপ্পো শুরু হলো। লাও ঠ্যালা সামলাও। একোনো রবিসনি গাইছে। এপ্পর দুখু মিঞা হয়ে শ্যামাসনিতে পৌঁছালে আমায় দোষ দিও না।
  • kumudini | 122.162.148.68 | ৩০ এপ্রিল ২০১১ ২০:৫৯470285
  • অচিন্ত্যরূপ,তুমি লিখে যাও,ঐসব ইয়ার্কিতে কান দিও না।
  • ami sei dada | 96.33.89.68 | ০১ মে ২০১১ ০০:০৮470286
  • কুমুদিনির কাছে এই সব ইয়ার্কি মনে হোলো ? নিজে কাউকে খাওয়াও দিকি, তার পরে সে যদি তোমার নাম ভুলে যায় তখন বুঝবে । অচিন্টির দোষ দেখতে পাচ্ছোনা । আর আমাদের দুখ্যুর কথা বল্লাম বলে সব দোষ আমাদের ! আর যদি কারো কখোনো উপকার করি !
  • DIDI | 59.93.192.69 | ০১ মে ২০১১ ০২:৪০470287
  • সেই উন্তিরিশ এ ট্রেন ছার্লো আর এখোনো পৌছোলো না ?? এ সব সিপিএম এর চক্কান্তো...
  • achintyarup | 59.93.246.37 | ০১ মে ২০১১ ০৫:১৭470288
  • ট্রেন চলছে। অ্যাসিস্ট্যাণ্ট লোকো পাইলটের হাতে একটা খাতা আর বাইরের দিকে তিক্ষ্ণ দৃষ্টি। মাঝে মাঝেই দু-একটা সঙ্কেতবাক্য উচ্চারণ করছেন, তাই শুনে সিং সাহেব ধীর বা দ্রুত করে দিচ্ছেন ট্রেনের গতি। এই কোডগুলির কি মানে? জিগ্যেস করি দেউড়িবাবুকে। হেসে জবাব দেন, একেকটা স্ট্রেচের প্রকৃতি অনুযায়ী এক এক রকম কোড আছে। যেমন ধরুন নিচের দিকে স্লো হলে প্রথমে বলি স্টপ ডেড, তারপর বলি হোম। কিছুদূর পরপরই লাইনের পাশে দূরত্ব লেখা ফলক। সেই ফলকের আগে পরে লাইনের বাঁক বা ঢালের প্রকৃতি বোধ হয় লেখা আছে দেউড়ির হাতের খাতায়। সামনের দিকে সতর্ক চোখ মেলে তাই দেউড়ি দূরত্বফলক দেখছেন আর ইঞ্জিনের আওয়াজ ছাপিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন সঙ্কেতবাক্য। সেই অনুযায়ী ধীর, খুব ধীর বা দ্রুত হয়ে যাচ্ছে ট্রেনের গতিও।

    লোকোপাইলট সিং সাহেবের মুখে কথা নেই। গম্ভীর হয়ে একদৃষ্টে সামনে তাকিয়ে আছেন। মাত্র এক বছর আগেই এই ট্রেন চালাতে চালাতেই জঙ্গীদের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন সহকর্মী এবং বন্ধু নিত্যানন্দ বোরা।

    ডিমা হালম ডাওগা বা ডি এইচ ডি খুব শক্তিশালী জঙ্গী গোষ্ঠী। আসাম এবং নাগাল্যাণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সে সময়ে তাদের আধিপত্য। তাদের দাবী -- ডিমাসা জনগোষ্ঠীর জন্যে পৃথক রাষ্ট্র, ডিমারাজি বা ডিমাসাল্যাণ্ড। কম্যাণ্ডার-ইন-চিফ জুয়েল গোরলোসা। মূল ডি এইচ ডি থেকে বেরিয়ে এসে সে নতুন দল গড়েছে -- ডি এইচ ডি (জে) বা ব্ল্যাক উইডো। বাঙালীদের ওপর তো বটেই, অন্য অহমীয়া জনজাতির মানুষদের ওপরেও তাদের রাগ। আমরা যে সময় গিয়েছিলাম তার মাত্র কয়েকদিন আগেই গ্রেফতার হয়েছে জুয়েল।

    লামডিং-বদরপুর ব্রডগেজ লাইনের কাজ তখন চলছে। সে কাজ বন্ধ করার জন্য বারবার তারা কিডন্যাপ করেছে ক¸ট্রাক্টারদের, গুলি চালিয়ে কর্মীদের মেরেছে। এই লাইনে ট্রেন চলাচল একেবারে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ওপরও হামলা চালিয়েছে বার বার।

    নিত্যানন্দ বোরা খুন হওয়ার কিছুদিন পরই রেল দপ্তর সিদ্ধান্ত নেয় হিল কুইনের ইঞ্জিন বুলেটপ্রুফ করে দেওয়া হবে। রাখা হবে অনবোর্ড বাঙ্কার।

    অবশ্য ও সব হল গিয়ে খাতায়-কলমে। সত্যি সত্যিই কি আর বুলেটপ্রুফ? এই লামডিং কারশেডেই কোনোরকমে আরেকটু শক্তপোক্ত করে নেওয়া হয় ইঁজিনগুলোকে। বডির চারদিকে মোটা লোহার পাত লাগানো হয়, বুলেটপ্রুফ কাচ লাগানো হয় জানালায়। কিন্তু অনেক সময়েই তো গুলি চলে পাহাড়ের ওপর থেকে। ছাদ ফুটো করে অনায়াসে ঢুকে যেতে পারে ইঞ্জিনের ভেতর। আর জানালায় বুলেটপ্রুফ কাচ? হাসালেন মশাই। এইটুকু খুপরি কামরার মধ্যে নরকের মত গরম। একটা পাখা পর্যন্ত নেই। তাছাড়া জানালা বন্ধ রাখলে ঝাপসামত এই কাচের মধ্যে দিয়ে বাইরে দেখা যাবে কি করে? ওরকম করে কি আর ট্রেন চালানো যায়?

    আচ্ছা, এভাবে রোজ এই রাস্তায় যাতায়াত করতে ভয় লাগে না আপনাদের? ভয়? ভয় পেতে পেতেও এক সময় অভ্যেস হয়ে যায় জানেন। বাঁদিকের জানালার পাশে ছোট্ট টুলের ওপর বসে গল্প করেন দেউড়ি। কাচ খোলা। পাশ থেকে নুয়ে-পড়া বুনো গাছের ডালপালা জানালায় ঘষা খেয়ে খসখস সড়সড় আওয়াজ তোলে।
  • achintyarup | 59.93.246.37 | ০১ মে ২০১১ ০৫:১৯470289
  • * তীক্ষ্ণ

    ** নিচের দিকে স্লোপ...
  • achintyarup | 59.93.254.62 | ০২ মে ২০১১ ০৫:৪৩470290
  • ট্রেন চলেছে মাঝে মাঝে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে, মাঝে মাঝে এক পাশে দেখা যাচ্ছে ধানক্ষেত, দূরে পাহাড়ের গায়ে লেপ্টে আছে মেঘ, কখনো দূরের পাহাড় চলে আসছে পাশে, কখনো সামনে, তার পেট ফুঁড়ে চলে গেছে রেল লাইন। মোট সাঁইতিরিশটা টানেল আছে লামডিং এবং হাফলং-এর মধ্যে। কখনো লাইন একটু ঢালু হয়ে নেমে গেছে নিচের দিকে, কখনো বা সামান্য চড়াই। মাঝে মধ্যে একটা-দুটো নদী, তার ওপরে ব্রিজ।

    কড়া স্বভাবের সেফটি কাউন্সিলর দিলীপবাবু মানুষটি কিন্তু বেশ। চলতে চলতে কখন খুলে আসে সরকারি মুখোশ, ভেতর থেকে উঁকি দেয় একটু অন্যরকম একটি চেহারা। আমার হাতের ছোট্ট ক্যামেরা দেখে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন, জানান ওঁরও ছবি তোলার শখ। কাঁধের বড় ক্যামেরাটা কি কোম্পানির, কি কি করা যায় সেটায়, দাম কি রকম সে সব জেনে নেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। তারপর ছোট ক্যামেরাটা চেয়ে নিয়ে পাশের দরজা খুলে চলে যান ইঞ্জিনের বাইরে, একেবারে সামনের দিকে। আমাকেও ডেকে নেন। রেলিং ধরে ধরে ভয়ে ভয়ে পৌঁছে যাই আমিও। ট্রেন তখন একটা ছোট পুল পেরোচ্ছে। নিজে ছবি তোলেন, আমাকেও সাহস দেন। আমিও এক হাতে রেলিং ধরে অন্য হাতে শাটার টিপতে থাকি।

    এর মধ্যে কুড়ি কিলোমিটার পেরিয়ে এসেছি। জঙ্গলের মধ্যে ঢুকল আমাদের ট্রেন। প্রথম বর্ষার জল বেয়ে সতেজ হয়ে আছে গাছপালা, দুধার থেকে ঝুঁকে পড়ে রেলগাড়িটাকে যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। এইখান থেকেই কিন্তু ডেঞ্জারাস স্ট্রেচটা শুরু হল, জানালেন দেউড়িবাবু। তবে কিছুদিন হল সরকার থেকে ফোর্স পাঠিয়েছে পাহারা দেওয়ার জন্য। আর পাঁচ কিলোমিটার পরে একটা আর্মি ক্যাম্পও রয়েছে।

    ফোর্সের জওয়ানদেরও দেখতে পাই মাঝে মাঝেই। লাইনের পাশে পাশে সতর্ক প্রহরায়। কেউ কেউ ঘন জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য রাখছেন ট্রেনের দিকে, কেউ কেউ আবার আমাদের দিকে পেছন ফিরে বন্দুক তাক করে রয়েছেন বন-পাহাড়ের দিকে।

    দেখতে দেখতে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পও পার হয়ে যাই। ক্যাম্পের চারপাশে বালির বস্তার দেওয়াল তোলা। বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে সৈন্যরা। এর মধ্যে আবার বৃষ্টি নেমেছে। বাঙ্কারের মধ্যে দাঁড়ান সৈন্যটির ডানহাতের আঙ্গুল ট্রিগারে, বাঁহাতে ধরা রয়েছে ছাতা। জলের ছাঁট থেকে বাঁচতে জানালার কাচ একটুখানি টেনে দিই আমিও।
  • kumudini | 59.178.47.205 | ০২ মে ২০১১ ১৩:১৯470291
  • খুব ভাল লাগছে পড়তে,এত সুন্দর বর্ণনা-যেন আমরাও ট্রেনে চেপে অচিন্ত্যরূপের সাথেই চলেছি।
    সৈন্যের এক হাতে বন্দুক,এক হাতে ছাতা-এই ছবিটি বড় চমৎকার লাগল।
  • Bratin | 122.248.183.1 | ০২ মে ২০১১ ১৪:৩৭470292
  • জমে গেছে অচিন্ত্যদা।
  • Manish | 59.90.135.107 | ০২ মে ২০১১ ২০:৩৮470294
  • ছ দিনে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার।

    ট্রেনটাকে আর একটু জোরে ছোটালে হয় না অচিন্ত ভায়া।
  • I | 14.96.123.250 | ০২ মে ২০১১ ২৩:০৯470295
  • অচিন্টি কই গেলায় ?
  • aka | 168.26.215.13 | ০২ মে ২০১১ ২৩:১৭470296
  • এইটার ছবিগুলো তুরুপের তাসের মতন লুকিয়ে রেখেছে। ছবি চাই।
  • achintyarup | 59.93.203.40 | ০৩ মে ২০১১ ০০:০৯470297
  • ছবিগুলি খুব একটা ভাল হয়নি :(
  • aka | 168.26.215.13 | ০৩ মে ২০১১ ০১:১৫470299
  • আ: সব ছবি কি আর ভালো ফটোগ্রাফির জন্য দেখতে হবে?
  • achintyarup | 59.93.255.79 | ০৩ মে ২০১১ ০২:৫৩470300
  • এই বর্ষার মধ্যেও দূরে পাহাড়ের গায়ে কারা যেন আগুন জ্বালিয়েছে। ঘন সবুজ গাছপালার মধ্যে দিয়ে ধোঁয়া উঠছে পাকিয়ে পাকিয়ে, মেঘলা আকাশে মিলিয়ে যাচ্ছে। কোথাও রেল লাইনের ধারে খালি ঘাসহীন জায়গায় সিআরপিএফ-এর জওয়ানরা ক্রিকেট খেলছে। তাদের কারও কারও গায়ে স্যাণ্ডো গেঞ্জি। একটা স্টেশন পেরিয়ে গেল। প্ল্যাটফর্মে বাঙ্কার। প্ল্যাটফর্ম শুরু হওয়ার আগে এবং শেষ হওয়ার পরে বাঙ্কার। ট্রেন দাঁড়াল না।

    আবার খানিক ধানক্ষেত। ক্ষেতের পর জঙ্গলের ধার ঘেঁষে আঁকাবাঁকা মাটির রাস্তা চলে গেছে দূরে, গাঁয়ের দিকে। রেলগাড়ির ঝিকঝিক আওয়াজে লাইনের পাশ থেকে উড়ে গেল দুটো ছাতারে পাখি। আবার জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে পড়ল ট্রেন।

    রেললাইনের পাশের একটা মাইলপোস্টের গায়ে লেখা ৩১/৭ (অর্থাৎ লামডিং ছাড়ার পর ৩১ কিলোমিটার ৭০০ মিটার এসেছি আমরা)। লোকোপাইলট এ কে সিং বললেন, এইবার একটু নজর করুন। এই জায়গা এবং ৩২ কিলোমিটার পোস্টের মধ্যে একটা মালগাড়ি ডিরেল করে দিয়েছিল জঙ্গিরা। মাস তিনেক আগে। ঢালের মুখে লাইনের ওপর গ্রিজ ঢেলে রেখেছিল আর এক জায়গায় মিটারখানেক ট্র্যাক কেটে রেখে দিয়েছিল। ইঞ্জিন আর তেরোখানা বগিশুদ্ধ গোটা ট্রেনটা ছিটকে গিয়েছিল লাইন থেকে। বেশি বুঝিয়ে বলার দরকার ছিল না। জলজ্যান্ত প্রমাণ একেবারে আমাদের চোখের সামনে। লাইনের দুধারে জঙ্গলের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মালগাড়ির বেশ কয়েকটা ডিব্বা। বর্ষার জল-পাওয়া বুনো গাছ আর লতা এর মধ্যেই অনেকটা ঢেকে ফেলেছে জং-ধরা বগিগুলোকে।
  • achintyarup | 59.93.255.79 | ০৩ মে ২০১১ ০৩:৪৪470301
  • পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার। এই শেষ হল সাবোটাজ জোন, মুচকি হেসে জানালেন দিলীপবাবু। এই জায়গার পর আর অন্তর্ঘাত হয় না, পাহাড়ের ঢাল থেকে সরাসরি গুলি চলে ট্রেনের ওপর। আমার গলা শুকিয়ে আসে। ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করি। তারপর, কেমন লাগছে বুলেটপ্রুফ ইঞ্জিন? মিটমিটে হাসিটা এখনও লেগে আছে সেফটি কাউন্সিলাররে মুখে। আমতা আমতা করি। চটজলদি কোনো জবাব আসে না মুখে। স্রেফ ভগবানের ভরসায় চলছি মশাই, বুঝলেন, ভগবানের ভরসায়, দিলীপবাবু বলেন। আমি চুপ। হয়ত ঠিকই বলেছেন। হয়ত নয়। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখতে পাই দূরে আর্মি বাঙ্কার। হাতে বন্দুক নিয়ে পাহাড়ে দিকে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছেন সিআরপিএফ-এর জওয়ানরাও। কিন্তু এত সতর্কতা সঙ্কেÄও হামলা বন্ধ হয়নি। যে সময়ের কথা লিখছি তার আগের এক বছরে মোট ত্রিশ জন রেলকর্মী এবং ক¾ট্রাক্টারের লোকজন মারা গেছেন জঙ্গি আক্রমণে।

    ছাপ্পান্ন কিলোমিটার পোস্ট পার হয়ে আসি। এই জায়গায়, মুপার কাছে তিন নম্বর টানেল থেকে বেরোনোর সময় জুয়েল গোরলোসার দলবলের গুলিতে মারা যান লোকোপাইলট নিত্যানন্দ বোরা। গুলি খাওয়ার পরেও নাকি অসম সাহসী নিত্যানন্দবাবু দারুণ উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে ট্রেনটাকে রিভার্স গিয়ারে চালিয়ে ফের টানেলের ভেতরে নিয়ে যান। স্পেশাল ট্রেন ছিল সেটা, কয়েক কোম্পানি জওয়ানকে নিয়ে যাচ্ছিল হাফলং-এর দিকে। জঙ্গিরা নাকি পরে দৌড়ে এসে পয়েণ্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে মারে নিত্যানন্দবাবুকে। মরণোত্তর কীর্তিচক্র পেয়েছিলেন নিত্যানন্দ বোরা। শান্তির সময় বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য দেওয়া হয় এই সম্মান। এ যাবৎ ভারতের ইতিহাসে খুব কম সিভিলিয়ানই কীর্তিচক্র পেয়েছেন।

    সরকারি ইতিহাসের খাতায় লেখা থাকবে এ সব কথা। বোরার ত্যাগ, সাহস এবং প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের সমালোচনা না করেও এখানে এই ঘটনার আরেকটি ভার্সন দিয়ে রাখি। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর মুখে শোনা। রেলের ইঞ্জিনের বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মধ্যে একটির নাম ডেড ম্যান'স হ্যাণ্ডেল। ট্রেন চলার সময় হালকা চাপ দিয়ে সেটিকে ধরে থাকেন লোকো পাইলট। কোনো কারণে চাপ কমে গেলে নিজের থেকেই ব্রেক অ্যাপ্লাই হয়ে যায়, ধীরে ধীরে থেমে যায় ইঞ্জিন। ট্রেন চলতে চলতে চালক যদি কোনো কারণে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, বা মারা যান, সে ক্ষেত্রে ডেড ম্যান'স হ্যাণ্ডেল-এর ওপর তাঁর হাতের চাপ আলগা হয়ে আসে এবং দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায় ট্রেন। প্রত্যক্ষদর্শী -- যিনি ঘটনার সময় লোকোপাইলটের পাশে ছিলেন -- আমাকে জানালেন ট্রেন সে সময় চড়াইয়ে উঠছিল। এবং প্রথম গুলিতেই নাকি মারা যান নিত্যানন্দবাবু। ফলত ইঞ্জিন আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এবং ঢাল বেয়ে পেছনের দিকে গড়াতে গড়াতে ট্রেন ফের ঢুকে পড়ে টানেলের ভেতর। অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্যে সশস্ত্র জওয়ানদের মোকাবিলা করার সাহস পায়নি জঙ্গিরা। তারা চটপট সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

    তবে ওপরের দুটি ভার্সনের যেটিই সত্যি হোক না কেন, সব কিছু জেনেশুনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ লাইনে রোজ দুবেলা যাঁরা ট্রেন চালান এবং রেলের অন্যান্য কাজ করেন তাঁদের প্রত্যেকেরই কীর্তিচক্র পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
  • achintyarup | 59.93.255.79 | ০৩ মে ২০১১ ০৪:৫২470302
  • তিন নম্বর টানেল থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসে আমাদের ট্রেন। সশস্ত্র জওয়ানরা দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে। দেখে স্বস্তি পাই।

    আগেও লিখেছি, লামডিং থেকে হাফলং-এর মধ্যে মোট সাঁইত্রিশটি এরকম টানেল রয়েছে। ফলে আরও বিপজ্জনক হয়ে গেছে প্রতিদিনের রেলযাত্রা। যাত্রী এবং রেলকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্টেশনে বাঙ্কার বানানো হয়েছে, মারাত্মক সব মারণাস্ত্র নিয়ে সেখানে পাহারায় রয়েছেন সেনাবাহিনী এবং আধাসেনার জওয়ান ও অফিসাররা। কয়েকটি জায়গায় লাইনের দুধারেও দাঁড়িয়ে থাকেন আর্মি, সিআরপিএফ, রেলওয়ে পুলিস স্পেশাল ফোর্স, স্থানীয় পুলিস এবং জিআরপির লোকেরা। চারটি "বিপজ্জনক' স্টেশন তো বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে। (অবশ্য এ সমস্তই বেশ কিছুদিন আগেকার কথা। জুয়েলের দল অস্ত্রসমর্পণ করার পরে তো শুনি অবস্থার উন্নতি হয়েছে।)

    এত সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরও কিন্তু রোজ ট্রেন চালাতে পারেনি রেলওয়ে। যে সময়ে আমরা গিয়েছিলাম তার আগের এক বছরে বেশ কয়েকমাস বন্ধ ছিল প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচল। লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ লাইনের কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৪-এ। তা এখনো শেষ হয়নি। বেশ কয়েকজন ক¾ট্রাক্টার মারা গেছেন, কিডন্যাপ হয়েছেন কয়েকজন।

    কিন্তু রেলের ওপর জঙ্গিদের এই আক্রোশের কারণ কি? হাফলং স্টেশন ম্যানেজার শম্ভুপ্রসাদ চৌধুরী বলেন কে জানে মশাই। এ সব প্রশ্নের জবাব খুঁজে বার করার জন্য অনেক বুদ্ধিমান লোকেরা আছেন। আমরা তো চুনোপুঁটি। সমুদ্রতল থেকে ৯২১ মিটার উঁচু এই পাহাড়-শহরে দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন শম্ভুপ্রসাদবাবু। কখনো কোনো জঙ্গির সঙ্গে মোলাকাত হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করাতে বললেন, কে যে জঙ্গি আর কে যে জঙ্গি নয় কি করে বলি বলুন তো? আবার প্রশ্ন করি, কেউ কখনো জোর করে টাকাপয়সা আদায় করার চেষ্টা করেছে আপনার কাছ থেকে? উত্তর দেন না স্টেশন ম্যানেজার। বলেন, আপনারা তো আপনাদের কাজ সেরে চলে যাবেন। আমাকে তো এখানে থাকতে হবে, তাই না?

    (আমার খুব জাটিঙ্গা যাওয়ার শখ। রাতে আলো জ্বেলে পাখি দেখার শখ। কিন্তু সেখানে শুনি জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি। কোন চিন্তা নেই, বললেন শম্ভুপ্রসাদবাবু। শীতের শুরু দিকটায় একবার হাতে সময় নিয়ে চলে আসুন। আমি সব ব্যবস্থা করে দেব। শুনে খুশি হই। অবশ্য যাওয়া হয়ে ওঠেনি এখনো পর্যন্ত। হবে হয়ত কখনও।)

    জুয়েল ধরা পড়ার পর থেকেই আস্তে আস্তে কমে আসে রেলের ওপর জঙ্গি হামলা। যে সময়ে আমরা যাই তখনও অস্ত্রসমর্পণ করেনি তারা, কিন্তু সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। ব্ল্যাক উইডো দলের এক সদস্যের সঙ্গে কথা বলি। স্পষ্ট তার কথাবার্তা। বলল, উন্নতি কে না চায়, বলুন? আর সবাইয়ের মত আমরাও চাই নর্থ কাছাড় হিলস-এর উন্নতি হোক। রেল চলাচল যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সাধারণ মানুষেরই সব চেয়ে বেশি অসুবিধা হবে, সে কি আমরা জানি না? কিন্তু সরকার এই রেলপথকে ব্যবহার করছে আমাদের এলাকায় সেনা ঢোকানোর জন্য। পুলিস ঢোকানোর জন্য। সে আমরা কেন মেনে নেব? সেইজন্য লক্ষ্য করে দেখবেন, যে ট্রেনগুলিতে বেশি সিকিওরিটি ফোর্সের লোকদের নিয়ে আসা হয়, বেছে বেছে সেগুলোকেই অ্যাটাক করি আমরা। সরকারকে সতর্ক করে দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। এই তো, এখন আমরা আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছি, এখন তো কয়েকদিন বন্ধ রেখেছি হামলা। সরকার যদি আমাদের ওপর হামলা না করে আমরাই বা কেন হামলা করব, বলুন?

    কে জানে বাবা। নিত্যানন্দ বোরা তো সাধারণ রেলকর্মী ছিল। সরকারের চাকরি করতে গিয়ে প্রাণটা খোয়ালো। সে তো কাউকে আক্রমণ করতে যায়নি। অথবা যে অ্যাসিস্ট্যাণ্ট লোকো পাইলট আমাদের কাছে গল্প করছিল কি করে একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে গেল সে? যার ঘাড়ের একটু ওপর দিয়ে উড়ে-যাওয়া একটা গুলি হুক থেকে ঝোলানো জলের বোতল ফুটো করে দিয়েছিল? কিম্বা রেলের যে ক¸ট্রাক্টার কয়েকমাস আগে নিখোঁজ হয়ে গেল, আর পাত্তাই পাওয়া গেল না তার? তার সঙ্গে তো গুলি বন্দুক রকেট লঞ্চার ছিল না। কোল্যাটারাল ড্যামেজ? বুঝি না।
  • bb | 117.195.164.66 | ০৩ মে ২০১১ ০৬:৪৭470303
  • অচিন্ত আপনার লেখা দারুন হয়েছে। কিন্তু আপনি আরও বড় একটা প্রশ্ন তুলেছেন। আমরা এই জঙ্গি সমস্যার শুধু সেনাদিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করেছি।
    ভারত সরকারের কি আর কিছুই করণীয় নেই, বিশেষ করে উত্তর-পুর্ব ভারতে?
  • achintyarup | 59.93.244.250 | ০৫ মে ২০১১ ০৬:১০470305
  • হাফলং থেকে ঐ ট্রেনে করেই ফিরে এলাম লামডিং-এ। তবে এবার সেফটি কাউন্সিলর দাসবাবু আমদের নিয়ে গিয়ে একটি সাধারণ প্যাসেঞ্জার কামরায় ওঠালেন। নিজেও আমাদের সঙ্গেই এলেন, নানা গল্প করতে করতে। সন্ধের মুখে লামডিং এসে পৌঁছলাম।

    মুজতবা আলী সাহেবের দেশে বিদেশে বইতে পড়েছি বাঙালী কেন বোমা ছোঁড়ে তার কারণ জানার জন্য সাধারণ আফগানের বড়ই কৌতূহল ছিল সে সময়। (অবশ্য সে ছিল ইংরেজ আমল। এবং সেই কৌতূহল থেকেই ধীরে ধীরে লাদেনের জন্ম হল কিনা সে বিষয়ে একটি অতিদীর্ঘ থিসিস রিটায়ার করার পরে লিখব ভেবে রেখেছি।) আমারও কৌতূহল ছিল। বুঝতে চইছিলাম ডিমাসা জঙ্গিরা কেন ট্রেনের ওপর খামকা গুলি ছোঁড়ে। একটা কারণ তো ব্ল্যাক উইডো দলের সেই ছোকরা বললে, কিন্তু আরও কোনও কারণ আছে কি? লামডিং-এ নেমেও লোকের সঙ্গে কথা বলি। স্টেশনের বাইরে অটো-ওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলি। বাসস্ট্যাণ্ডে চায়ের দোকানদার এবং খরিদ্দারদের সঙ্গে কথা বলি। রেলের লোকেদের সঙ্গে, বাজার করতে যাওয়া লোকেদের সঙ্গে, হাওয়া খেতে বেরোনো লোকেদের সঙ্গে, পলিটিকসের লোকেদের সঙ্গে ... মোদ্দা কথা যাদের হাতের সামনে পাই এমন কি যাদের হাতের সামনে পাই না তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলি।

    হিল কুইন ট্রেনে আমাদের সঙ্গে লামডিং যাচ্ছিলেন এক প্যাসেঞ্জার। কথায় কথায় জানালেন, লামডিং এবং থেকে বেশিরভাগ লোক এখন শিলচর যায় বাসে করে। কে আর জানের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠতে চায়, নিতান্ত উপায় না থাকলে? তবে লামডিং-শিলচর বাস-রাস্তার অবস্থা নাকি কহতব্য নয়। বাসযাত্রা সময়সাপেক্ষও বটে। এমতাবস্থায় এই দুই শহরের মধ্যে রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা যদি স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং তদুপরি ব্রডগেজ লাইন যদি চালু হয়ে যায়, তবে বাসে নাকি কেউ উঠবেই না। মালপত্রও যাবে ট্রেনে করেই। খুবই সমস্যার কথা বাসমালিক এবং ট্রাকমালিকদের পক্ষে। রোড ট্রান্সপোর্ট লবি ঐ অঞ্চলে বেশ শক্তিশালী। একজন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও আছেন তাদের পাশে। কারণ মন্ত্রীর নিজেরই নাকি বেশ কয়েকটি মালবাহী ট্রাক চলাচল করে লামডিং-শিলচর রুটে। অবশ্যই বেনামে। এই সব বাস-ট্রাকের মালিকরাই নাকি জঙ্গিদের পয়সাকড়ি এবং অন্যান্য সাহায্য দিয়ে হামলা করাচ্ছে ট্রেনের ওপর। প্রাক্তন মন্ত্রীমশাই নিজেও নাকি প্রত্যক্ষত জড়িত পুরো ব্যাপারটায়। বোঝো কাণ্ড!

    যোগাযোগ করি সে সময়ের শিলচরের বিজেপি সাংসদ কবীন্দ্র পুরকায়স্থর সঙ্গে। ভদ্রলোক বলেন ট্রেনে হামলার ওপর রোড ট্রান্সপোর্ট লবির হাত থাকাটা বিচিত্র কিছু নয়। থাকতেই পারে। তবে জঙ্গিদের মনোভাব খুবই নেগেটিভ। তাদের আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তারা তো এখন নিজেরাই আলোচনা চেয়েছে। দেখা যাক কি হয়, ইত্যাদি।

    তবে জুয়েল গোরলোসার গ্রেফতারের পর থেকে কিন্তু ট্রেনের ওপর আক্রমণের ঘটনা অনেক কমে গেছে, বললেন পি আর শইকিয়া। জি আর পি-র অ্যাসিস্ট্যাণ্ট সাব-ইন্সপেক্টর। সিআরপিএফ আসার পর পাহাড়ে থেকে গুলি ছোঁড়াও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে (শইকিয়া বললেন)।

    মানিক দেব হচ্ছেন রেলওয়ে এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ডিভিসনাল সেক্রেটারি। বললেন, দুর মশাই, কি জন্যে কি হচ্ছে জেনে আমার কচু হাতি ঘণ্টা। আমার লোকগুলোকে বাঁচানোর ব্যবস্থা কিছু দিচ্ছে কি রেল কোম্পানি? কবে থেকে বলে আসছি আমাদের প্রপার প্রোটেকশনের ব্যবস্থা কর। কে শোনে কার কথা। বুলেটপ্রুফ ইঞ্জিনের নমুনা তো দেখেই এলেন নিজের চোখে, পাশ থেকে ফোড়ন কাটলেন আরেকজন। আজকে যদি গুলি চলত বেঁচে ফিরতেন লামডিং-এ?

    কি আর বলি। মানিকবাবু তখনো বলে চলেছেন তাঁর বিরক্তির কথা। বলছেন, আমরা ডিজি, এসপি, রেলওয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান -- কারও সঙ্গে দেখা করতে বাকি রাখিনি। কিছুতেই কিছু হয়নি। শেষে যখন ট্রেন চালানো একেবারে বন্ধ করে দিলাম কয়েকমাস, তখন কিছু ফোর্স পাঠাল। কিন্তু এও যথেষ্ট নয়। আরও ফোর্স পাঠাতেই হবে, নইলে লোক মরবে আবার। আমরাও তার জন্য আন্দোলন করেই যাব।

    মানিকবাবুদের আন্দোলনের খবর আর রাখা হয়নি। দিলীপবাবুর সঙ্গেও যোগাযোগ নেই। কিন্তু ব্ল্যাক উইডোদের উৎপাত কমেছে খবর পেয়েছি। আমরা ঘুরে আসার কিছুদিন পরেই কয়েকশ জঙ্গি নাকি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে। তারা এখন কি করছে কে জানে। কিম্বা সেই বাচ্চা কোলে ডিমাসা মেয়েটি, লাংটিং স্টেশনে যে উঠে এসেছিল আমাদের হাই-সিকিওরিটি বুলেটপ্রুফ ইঞ্জিনে? যে আমাদের সঙ্গেই গেল পরের স্টেশন পর্যন্ত? জানা হয়নি তো কোথায় তার বাড়ি। কি করে সংসার চলে তার? বড় বড় চাকলা করে কাটা আনারস কিনে খাওয়া হয় নি হাফলং স্টেশনে। আর জাটিঙ্গাও তো দেখা হয়নি। শীতের শুরুতে যেতে বলেছিলেন যে শম্ভুপ্রসাদ। যাব একবার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন