এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অথ নকশাল-বধ কথা

    Ranjan Roy
    অন্যান্য | ০৫ এপ্রিল ২০১১ | ৫৮৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 59.93.240.250 | ০৫ এপ্রিল ২০১১ ০১:২২472225
  • ( বাংলা লাইভে লেখাটা শুরু করার পর অনেকে যেমন ব্ল্যাংকি, অরিজিৎ-- এঁরা আমায় খুব উৎসাহ দিয়েছিলেন।
    ব্ল্যাংকি মনোযোগের সঙ্গে কিছু জিনিস খোঁজপাত্তা করে কালপঞ্জীর ত্রুটি, কিছু ঘটনার তথ্যে অন্য ভার্সন এসব দেখিয়েছিলেন।
    তারপর এপাড়ার অনেকে লেখাটার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করায় আবার শুরু করছি।
    কিন্তু একটা কথা বলি। আমি সুমন্ত ব্যানার্জি বা সুনীতি ঘোষ নই। আমি নকশাল আন্দোলনের ইতিহাস বা মূল্যাংকন করতে বসিনি। সেসব যোগ্য লোকেরা করছেন ও করবেন।
    আমি খালি চেষ্টা করছি এক আঠেরো বছরের চোখের ক্যামেরায় ধরে রাখা কিছু ছবি, ইম্রেশন যাতে একটি উত্তাল সময়ের স্বাদ-গন্ধ-রূপ কিছুটা ফুটে ওঠে। তাইআমি সময় ও তথ্যের্ব কোন পরিবর্তন বা সংশোধন করছি না। সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি সহ এ হল আমার একান্ত নিজস্ব দর্শন। এর সমস্ত ভুলের দায়িত্ব আমার, শুধু আমার।)
  • ranjan roy | 59.93.240.250 | ০৫ এপ্রিল ২০১১ ০১:২৭472236
  • ""অথ নকশাল-বধ পালা""
    --------------------------
    প্রথম পর্ব: প্রদীপ জ্বালানোর আগে সলতে পাকানো
    ------------
    ষাটের দশকে একটা ব্যাপার ঘটছিলো। স্বাধীন ভারতে নেহরু-মহলানবীশ মডেল তৃতীয় পাঁচসালা পরিকল্পনা অব্দি পৌঁছতে পৌঁছতে
    কোথায় যেন একটা দমবন্ধ ভাব ছড়িয়ে পড়লো।
    জিনিসপষেনর দাম বাড়ছে, কিন্তু রোজগার বাড়ছে না। অথচ প্রথম দুটি পরিকল্পনার সময় সমান্য দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোজগারও
    বাড়ছিলো। পাবলিক সেক্টর এ বিশেষ করে। ভিলাই রাউরকেলা, দুর্গাপুর ; ওদিকে ভাকরা নঙ্গাল , ডিভিসি , দক্ষিণে ও কিছু। রাঁচি-
    বোকারোর পদচাপ শুনতে পাচ্ছি। চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ, সিন্ধ্রিতে সার কারখানা, কল্যাণীতে মাদার ডেয়ারি। খুলছে অনেকগুলো
    ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। খরহগপুর আই আই টি খুলে গেছে। কিন্তু ষাটের দশকের শেষের দিকে আর নতুন কিছু হচ্ছে না।
    কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপষেনর দাম বাড়ছে। সব চেয়ে বাড়ছে খাদ্যদ্রব্যের দাম।
    না, তখনো সবুজ বিপ্লবের সুফল ( অন্তত: উৎপাদন বৃদ্ধির মাপে) চোখে পড়ছে না। কিছুটা গমের ক্ষেষেন হলেও চালের ক্ষেষেন একেবারে
    না। চাল আমদানী করতে হচ্ছে।
    এদিকে ১৯৬৩ আর ১৯৬৫তে হয়ে গেল প্রতিবেশীদের সঙ্গে দুদুটো যুদ্ধ। চীন আর পাকিস্তান। প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়লো, ট্যাক্স বাড়লো,
    কিন্তু শিক্ষা আর স্বাস্থ্যের খাতে সরকারী বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য কিছু হল না।
    হ্যাঁ, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ এ শিক্ষিত বেকারের ভীড় ও লম্বা লাইন বাড়তে লাগলো। অর্থনীতিবিদরা structuralstagnancyর কথা বলতে
    লাগলেন।
    হ্যাঁ। এই সময় থেকেই কৃষি ও শিল্পে রোজগার বাড়ার থেকে tartiarysector , যেমন বীমা- ব্যাংক এই সবেতেই কিছু লোকের চাকরি
    হয়েছিলো।
    রাজনৈতিক ক্ষেষেন তখন বিরোধী দল বলতে কম্যুনিস্টরাই চোখে পড়ে। দক্ষিণপন্থী দলগুলোর মধ্যে জনসংঘ দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ,
    মধ্যভারতে সীমাবদ্ধ। গুজরাত বা মহারাস্ট্রে ওদের আজকের বিজেপি নামক নতুন অবতারের মতন প্রতিপত্তি নেই। সারা ভারতেই প্রায়
    গাঁয়ের ভোট একপেশে ভাবে কংগ্রেস পায়।
    চীন ভারত সীমান্ত যুদ্ধের পর থেকে দেশে লাগু হল "" ভারতরক্ষা আইন"" বা DefenceofIndiaRules "" , সংক্ষেপে ডি আই আর।
    ১৯৬৪ সালে প্রধান বিরোধী দল( যাদের তখন অন্ধ্রে , উত্তর বিহারে, মহারাষ্ট্রের শ্রমিক বলয়ে চোখে পড়ার মত প্রভাব) দু"ভাগ হয়ে গেল।
    ডান-পন্থী ও বাম পন্থী । ডানেরা চীনভারত প্রশ্নে নেহরুর পাশে দাঁড়ালেন।
    ( খেয়াল করুন, জরুরী অবস্থার সময়েও ওঁরা ইন্দিরার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। )
    তবে অধিকাংশ বামপন্থী কমরেডরা , অর্থাৎ সিপিএম নেতারা কিন্তু ভারত রক্ষা আইনে জেলে পোরা।
    আকাশবাণীতে তখন সকালে দশ মিনিট দেশাত্মবোধক গান কম্পালসারি।
    শুনবেন নাকি একটু?
    "" আর একপাও নয় শষনু!
    সময় দিলাম পিছু হটবার।
    অনেক রক্ত তুমি নিয়েছ,
    সব ঋণ শোধ কর এইবার।
    কোরাস: ঋণ শোধ কর, ঋণ শোধ কর, ঋণশোধ করও-ও-ও এইবা-আ-আ -র।""
    আর একটি :
    "" ওরে ও শ্রমিক ভাই, এবার তোমার অØষনটাতে শান দিয়ে নাও, শান দিয়ে নাও, শান দিয়ে নাও।
    তোমার ঐ সবল পেশির ইস্পাতে আজ দেশেরই রক্ষা কবচ বানাও।""
    আর হ্যাঁ, তরুণ ভাদুড়ির দেশ পষিনকায় বেরুনো ধারাবাহিক "সন্ধ্যাদীপের শিখা"" সিনেমা হল। তাতে সুচিষনা সেন সীমান্তের কড়া পাহারা
    এড়িয়ে বর্ডারে নিহত স্বামী বিকাশ রায়ের কবর ছোঁয়ার চেষ্টায় চীনা ( নাকি নেপালী:)সোলজরের গুলিতে মারা গেলেন।
    কিন্তু বাড়ি পালিয়ে অরুণা সিনেমার ৪৭ পয়সর সিটে বসে দেখা এক চোদ্দ বছরের ছোকরার চোখে ছবি হয়ে রইলো কাশ্মীরের ডাল লেকে
    নৌকোতে বসে সুচিষনার লিপে সন্ধ্যার গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত ।
    "" ক্ষণে ক্ষণে , মনে মনে, শুনি অতল জলের আহ্বান , মন রয়না ঘরে।""
    --আজো কি রয়?
    আচ্ছে!, আমি গপ্পো শোনাঐচ্ছে। কোন ইতিহাস লিখছি না। ফলে মাঝে মাঝেই এ-গপ্পো থেকে সে-গপ্পোতে ভেসে যাবো। গুরুগম্ভীর দর্শন
    চর্চার মাঝে ঢুকে পড়বে কিছু ""নটি"" কেচ্ছে!।
    (কোনো লিনিয়র আখ্যান লেখার দায় ঐনঐচ্ছেনে। সেরকম আশা করলে বা আপত্তি করলে খেলবো না।)
    ছেষট্টির শুরুতে অবস্থা খারাপের দিকে। ইতিমধ্যে রেশনে চালের-চিনির কোটা কমে গেছে। বাঙালী গম কিনে রোজ একবেলা ঋ¤টি খেতে
    বাধ্য হল। ভালো রুটি বাননো বিশুদ্ধ বা`ঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে আজো খাপ খায় না। ফলে ঘরে ঘরে হাহাকার, চাপা দীর্ঘশ্বাস।
    ইহা কেমন আজাদী , যাহাতে বাঙালী একবেলা চাপাটি খাইতে বাধ্য হয়।
    বাড়িতে বিয়েসাদি হলে স্পেশাল দরখাস্ত দিয়ে ভেরিফিকেশন এবং কখনও কখনও র্যাশন অফিসে কারো পকেট গরম করলে অতিরিক্ত
    চল-চিনি মঞ্জুর হয়।
    হ্যাঁ, নাটকে সাড় ফেলে দিলো উৎপল দত্তের লিটল থিয়েটার গ্রুপের "" কল্লোল""। পটভূমি হল ১৯৪৬ এর নৌ-বিদ্রোহ।
    উত্তর কোলকাতার বিডনস্ট্রীটের মিনার্ভা থিয়েটারে তাপস সেনের আলো আর সুরেশ দত্তের মঞ্চসজ্জার জোরে স্টেজ্বে এলো আস্ত জাহাজ
    -- তলোয়ার । তাতে শেখর চাটুজ্জের শার্দুল সিং , শোভা সেনের মা, মৃণাল সেনের Øষনী গীতা সেনের বৌ, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের
    ক্যাপ্টেন রেবেলো --আহা!। আর হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সঙ্গীত, যাতে ছিলো মারাঠী পোয়াডা ও লাওনি লোকসঙ্গীত
    হ্যাঁ, এ নাটককে রাষ্ট্রদ্রোহ বলা হলো। প্রমথ নাথ ব ইশী এ" নাটককে ব্যান করর দাবি জানলেন। হলে গুন্ডার আষন²মণ হল, ভাঙ্‌চুর
    হল। উৎপল ভারতরক্ষা আইনে গ্রেফতার হলেন। কিন্তু নাটক লোকজনের ব্যাপক সমর্থনে শো" চালিয়ে এক ইতিহাস সৃষ্টি করলো,
    সন্দেহ নেই।
    তখন শহর জুড়ে হাতেলেখা পোস্টার ছড়িয়ে পড়লো। "" কল্লোল চলছে, চলবে""।
    এই লাগসই বিজ্ঞাপনী স্লোগানটি এত জনপ্রিয় হয় যে পরবর্তী কালে বড় বাম রাজনীতির দলটি এটাকে পালটে "" সংগ্রাম চলছে চলবে
    ""করে নেয়।
    আজো কোথাও কোন কিছু চলছে-চলবে গোছের লেখা দেখলে বা স্লোগান শুনলে মনে পড়ে যায় ঐ নাটকটির কথা।
    নাকতালা হইস্কুলে তখন একটি ছেলে (আমি নই) বন্ধুদের নাটকটির গল্প একটু শুনিয়ে কৌতূহল জাগায় । বলে- ঐ নাটকটা প্রথম বার
    দেখে ঠিক বোঝা যায় না। তবে সঙ্গে একজন নাটক দেখা বোদ্ধা থাকলে পাশের থেকে ফিসফিস করে দোভাষীর কাজ করতে পারে।
    যা ভাবা তাই বন্ধুরা ওপে ঝুলোঝুলি করলে ও যেন
    অঐনচ্ছ!য় রাজি হল। এবং ঐ পরস্মৈপদী ভাবে নাটকটি কয়েক বার দেখা হল।
    পরীক্ষা সামনে কিন্তু রেশনের কেরোসিনও অপ্রচুর। র্যাশনের লালচে মোটা চাল খাওয়া যায় না। লোকেদের প্রতিবাদ মুখর হতে
    লাগলো। নেতৃত্বে অনামা সব লোকজন। এমনি সময়ে বাদুড়িয়ার কাছে স্বরূপনগরে কেরোসিন ওশস্তা দরে খাদ্যের দাবিতে বেরোনো মিছিলে
    পুলিস গুলি চালালে নুরুল ইসলম নামে বিধবা মায়ের একমাষন সন্তান সিক্সের ছাষনটি মারা গেল। প্রতিবদে দক্ষিণ বঙ্গ মুখর হল।
    খাদ্যমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া ""আরামবগের গান্ধী"" প্রফুল্ল সেন গুলি চালানোর আদেশ দিলেন। লোক মরতে লাগলো। কিন্তু রেলের
    লাইন উপড়ে ফেল্লো। রেলস্টেশনে , গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হঐচ্ছল।
    সেষেন²টারির সামনে মুখ্যমন্ত্রী অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে দু"কলি গান গেয়ে উঠলেন,
    "" কৃষ্ণনগর ডুবু-ডুবু , কোন্নগর ভেসে যায় রে।""
    (চলবে)।
    প্রথম পর্ব
    -------------
    ২) স্বাধীন ভারতে প্রথম অ-কংগ্রেসী সরকার
    ---------------------------------------------
    সামনে হায়ার সেকন্ডারি পরীক্ষা। কয়েক মাস বাকি। কিন্তু শুরু হয়ে গেছে ""খাদ্য আন্দোলন""। চারদিকে কারফিউ , ১৪৪ ধারা, মিছিল।
    আরেকটি ছেলে মারা গেল। ক"দিন চুফাপ থাকার পর অবার আন্দোলন। সরকার ঐকচ্ছে. করতে পারছে না। কেন?
    ত্‌ৎকালীন খাদ্য-তথা- মুখ্য মন্ত্রী একসময়ের গান্ধীবাদী কংগ্রেসি প্রফুল্ল সেন মশায়ের চোখের ছানি নাকি বেয়াড়া গোঁ ? আজও বুঝিনি।
    আমি নিশ্চিত যে আজকের দিন হলে কেন্দ্রীয় সরকার ও অন্যান্য পড়শী রাজ্যসরকারদের সহযোগে খানিকটা রিলিফের ব্যবস্থা করা হবে।
    তখন কেন্দ্রে ইন্দিরা অল্পদিন হল এসেছেন। বয়স্ক হাইকম্যান্ডদের্দ প্রভাবের বাইরে তাঁর স্বতন্ত্র চিন্তা বা ব্যক্তিত্বের আভাস তখনও পাওয়া
    যায়নি।
    হ্যাঁ, পিএল- ৪৮০ র সুবাদে আমেরিকা থেকে গম,জোয়ার -বাজরা এইসব আসছিলো। তা" সেই প্রজন্মের বাঙালী হরিয়ানা-পাঞ্জাবের
    রুটিই গিলতে পারে না, তো আমেরিকান বাজরা! ফলে কংগ্রেসি সরকার বঙ্গদেশে অপ্রিয় হতে লাগলো।
    মাঝে মাঝেই বন্ধ, কারফিউ আর সি আর পি। তাদের ওপর হয় ইঁট ও হাতবোমা দিয়ে গলি থেকে আষন²মণ। পিচড- ব্যাটল?
    ছড়িয়ে পড়ে নানান গল্পকথা-রূপকথারা , মুখে মুখে।
    বেহালার দিকের কোন গলিতে কারফিউয়ের সময় সন্ধ্যেবেলা দুইভাই মই লাগিয়ে বন্ধের সমর্থনে পোস্টার সাঁটছিলো। ছোটভাই মই ধরে
    , বড়ভাই ওপরে চড়ে। সাইরেনের শব্দ শুনে পালাতে দেরি করে ফেল্লো । গুলি খেয়ে বড় ভাই ঢলে পড়তেই ছোট-- দাদারে! বলে কেঁদে
    উঠলো।
    বড় হাঁফাতে হাঁফাতে বল্লো- শিগ্গির বাড়ি যা, মাকে বলিস-- আমি ভালো আছি, কোন চিন্তা করবে না। একটু পরেই আসছি।
    নাকতলা স্কুলের সুরঞ্জন স্যার ( সুদর্শন, চুলে উত্তমছাঁট, নিক নেম লক্কা পায়রা) বল্লেন--- আমাদের পাড়ায় রাত্তিরে বাড়ি ফেরা এক
    অধ্যাপককে মিলিটারি গাড়িতে তুলে নেয়। পরিচয় দিলেও ছাড়ে না। থানায় নিয়ে যাবে। রাস্তায় ওদের লরির সামনে পেটো ফাটে। ওদের
    কম্যান্ডার তখন ঐ ভদ্রলোক কে এক থাপ্পড় লাগিয়ে বলে ---দেখ বে" সালে প্রোফেসর! ক্যায়সা স্টুডেন্ট পয়দা কিয়া হ্যায়!
    পাড়ায় সবাই সারাদিন খালি খবর শোনে। মোড়ে মোড়ে গুলতানি। বড়রা অফিস থেকে সময়মত বাড়ি না ফিরলে চিন্তা শুরু হয়ে যায়।
    একদিন হরতাল হল। আমার মনে হল কিছু করা উচিৎ। সবাইকে বল্লাম যে ছাষন ফেডারেশন ( তখনও এস এফ আই হয় নি, ডি ওয়াই
    এফ জন্ময়নি), পি এস উ ; ডিএফ ও সবাই মিলে ডাক দিয়েছে। আমাদেরও কিছু করা উচিৎ। কি করি? ঠিক হল মিছিল করে বিডিও
    অফিসে গিয়ে মেমোর্যান্ডাম দেয়া হবে। আমি পাড়ায় নতুন, সে অফিস কোথায় তাই জানি নে। দেখা গেল কেউ কেউ জানে । তা"
    জনাচল্লিশেক ছাষন, তাতে খানপুর স্কুলেরও ক"জন মিলে মিছিল শুরু হল। কি বলবো ? বড়দের থেকে শোনা স্লোগান --"" রাজবন্দীদের
    মুক্তি চাই, শস্তাদরে খাদ্য চাই"" এইসব চলতে লাগলো। রাস্তার পাশের দোকানদার, পথচারীরা একটু অবাক হয়ে দেখছে স্কুলের ছাষনদের
    মিছিল।
    এসে গেল বিডিও অফিস। এবার কি হবে? সবাই ইতস্তত: করছে। আমরা জনা তিন গিয়ে দারোয়ানকে বল্লাম -- বিডিও স্যার আছেন?
    আমর দেখা করবো।
    দারোয়ান ফিরে এসে বল্লো-- কাগজ আমার হাতে দ্যাও , দেখা-টেখা হবে না।
    ব্যস, আর যায় কোথায় ? স্লোগান্‌হুরু হল ।
    আমি একটু সাহস পেয়ে বল্লাম -- আমরা শুধু দেখা করে দাবীপষন দিয়ে চলে যাবো। উনি বা&#৯৫৬;চ!দের থেকে ভয় পাচ্ছেন?
    ভেতরে গেলাম। ওনার চারপাশে অফিসের জনাদশেক স্টাফ ভীড় করে দাঁড়িয়ে। কেউ কেউ হাসছে। সাদামাটা সিনেমার সরকারি
    অফিসারের মত দেখতে। ভদ্রলোক। বল্লেন -এইসব দাবি আমার কাছে করলে কি হবে? আমি কি রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে পারি , না
    র্যাশনে চল বাড়াতে পারি?
    যাও , স্কুলে গিয়ে ভালো করে পড়াশুনো কর। বড় হয়ে এইসব করতে এসো।
    আমি ব্যাকফুটে, মিনমিন করে বল্লাম - আপনি আমাদের কথাগুলো ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিন।
    --বেশ, লিখে দাও।
    কি যে করি ! ওনার থেকেই একাতা ফুলক্যাপ কাগজ নিয়ে লিখতে শুরু করলাম। ততক্ষণে বাইরে সঙ্গীসাথীরা অপেক্ষা করতে করতে
    বোর হয়ে গেছে। হঠাৎ শোনা গেল শ্লোগান ভেসে আসছে। জানলা গলে টেবিলে এসে পড়লো একটি টোম্যাটো। ছেতরে গিয়ে ছড়িয়ে
    পড়লো আমার এবং বিডিও স্যারের জামায়।
    উনি রেগে গিয়ে বল্লেন -- খাদ্যের জন্যে দাবী নিয়ে এসেছো আবার খাদ্যদ্রব্য এই ভাবে নষ্ট করছো!
    কাগজ দিয়ে মানে মানে বেড়িয়ে এসে বাড়ি ফেরার পালা। শ্লোগান-হাসি ; যুদ্ধজয়ের ভাব। ""আনন্দ আশ্রম গার্লস স্কুল"" এর সামনে
    এসে সে কি উৎসাহ ! স্লোগান বেড়ে গেল।
    আমি ভয় পেয়ে হাত জোড় করলাম।
    -- চল, চল, মেয়েদের জোর করে স্ট্রাইকে আনতে হবে না।
    --হ্যাঁ, হ্যাঁ, পদ্মশ্রী হলে নতুন বই এসেছে ""কাঁচ কাটা হীরে"", সেখানে গেলে কাজ দেবে।
    কারফিউ বন্ধ হল। সি আর পি , মিলিটারি ফিরে গেল। বাজার খুলতে লাগলো, রেশনে কোটা একটু বাড়লো।
    উৎপল দত্তের দলের প্রখ্যাত অভিনেতা শান্তনু ঘোষ গান লিখলেন --""" ও নুরুলের মা, সরাদিন চোখের জলের বান ডাকাইয়া জমিন
    ভিজাইস্না। ওরা নুতন স্বরাজ তুইল্যা ধুয়া কাটাইলো দেড় যুগ, আর পেটের জ্বালায় দারুণ খিদায় , জোটেনা কড়াই সিদ্ধ মুগ।""
    আর লিখলেন -"" বল কৃষেঞ্ঝ কি ওপই কংসকারায় বেঁধে রাখা যায়? আহা, মাঠে -মাঠে লক্ষ কৃষ্ণ অগ্নিবাঁশের বাঁশি বাজায়।"" সুর দিয়ে
    গাইলেন
    পরের দিকের প্রখ্যাত গণশিল্পী অজিত পান্ডে।
    গান দুটো বেশ জনপ্রিয় হল।
    কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন হয়রান। সমস্ত প্রথম ও দ্বিতীয় সারির বামনেতারা ভারতরক্ষা আইনে জেলে পোরা। তাহলে সারা বাংলা জুড়ে নানান
    জায়গায় আন্দোলনের গোপন সংগঠন চালাচ্ছে কারা? নেট ওয়ার্ক কাদের হাতে?
    আস্তে আস্তে জানা গেল ,-- পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে দুই অগ্নিযুগের বিপ্লবীকে। একজন অনুশীলন দলের হয়ে ইংরেজ আমলে জেল
    খাটা সতীশ পাকড়াশী, আর একজন মাস্টারদা" সূর্য্য সেনের সঙ্গে চট্টগ্রাম অØষনাগার লুন্ঠনের অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত থেকে কালাপানি
    যাওয়া গণেশ ঘোষ। দুজনেই অকৃতদার, দুজনেই সারাজীবন সাদা টুইলের হাফশার্ট বা পাঞ্জাবী, খদ্দরের ধুতি ও চপ্পলেই কাটিয়ে গেলেন।
    (চলবে)

    ""অথ নক্সালবধ পালা""
    --------------------
    সাধারণ নির্বাচন: ১৯৬৭
    ----------------
    ইন্দিরা গান্ধী জরুরী অবস্থা তুলে ভোটের প্রাক্কালে রাজবন্দীদের মুক্তি দিলেন। চারদিকে বেশ উৎসব উৎসব ভাব।
    বয়স্করা কংগ্রেস, চ্যাংড়ারা বামপন্থী। জেল থেকে বেরিয়ে উৎপল দত্ত চুটিয়ে নাটক করছেন --@@দিন বদলের পালা। পাব্লিক এমন
    খাচ্ছে যে সিপিএম এর কাগজে দিতে হচ্ছে আগামী শো গুলো কোন তারিখে কোন ইলেকশন মিটিংয়ে হবে।
    হায়র সেকন্ডারি পরীক্ষা সামনে, কোচিং কেটে বিজয়গড়ের মাঠে আর নাকতলা স্কুলের মাঠে উৎপল দত্তের বক্তৃতা শুনতে গেলাম।
    ততদিনে ""কল্লোল"", অঙ্গার , বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ এইসব নাটক দেখে আর চীনের কালচারাল রেভোলুশনের ওপর ওনার লেখা
    পড়ে আমি ওনার ফ্যান হয়ে গেছি।
    পাজামা-পাঞ্জাবী পড়া ভদ্রলোক ঘাসের ওপর বসে আড্ডা দিচ্ছেন , মাইক বাঁধা চলছে, জেলের গপ্পো শোনাঐচ্ছেলেন। আমি আস্তে আস্তে
    কাছে এগিয়ে বসছি --ভালো করে শোনার জন্যে। দেখলাম মহা আড্ডাবাজ লোক, হাসির কথা বলতেবলতে নিজে একবার গড়িয়ে নিলেন

    মন্টু ব্রহ্ম মাইকে পাব্লিক জমার ফাঁকে গান গইছিলেন-- গ্রাম-নগর-মাঠ-পাথার-বন্দরে তৈরি হও।
    উৎপল গপ্পো থামিয়ে কান খাড়া করে শুনলেন, হেসে বল্লেন --- এইসব গানের বিরুদ্ধেও কালচারল রেভোলুশনের দরকার আছে।
    যখন মঞ্চে উঠে মাইক ধরে দাঁড়ালেন তখন অন্য চেহারা। আমার পাশের থেকে এক বন্ধু বড়দের শোনা গসিপ থেকে শোনালো- দেখছিস ,
    কত রোগা হয়ে গেছে ! আসলে জেলে থেকে মদ পায়নি তো, জানিস , ভ্যাট সিকস্টিনাইন খায়!
    ইতিমধ্যে কংগ্রেসের সেবাদলের প্রমুখ অতুল্য ঘোষ প্রতিরোধ বাহিনী গড়ার ডাক দিয়ে বেশ বদনাম হয়ে গেছেন।
    একদিন কাছ থেকে দেখলাম গণেশ ঘোষকে। বেঁটেখাটো কালো শান্ত চেহারার মানুষটি টুইলের হাফ্‌হাতা শার্ট আর হেটো ধুতি, পায়ে
    চপ্পল, জানুয়ারির শীতে গায়ে চারটাকার মলিদা।
    নাকতলার মোড়ে পথসভা। খুব আস্তে আস্তে কথা বলছেন, বেশ খানিকক্ষণ পরে শুনতে পাওয়া গেল। কেটে কেটে বলছিলেন --- খেতে
    দেবে না? বাড়ি বাড়ি কংগ্রেসি নেতাদের জবাবদিহি করতেৎ হবে।
    অমনি আর একদিন নেতাজিনগরে খাদ্যের দাবিতে প্রদর্শন, গণেশ ঘোষ আসছেন। কোচিং কাটলাম।
    দেখি সদ্য তৈরি ঈঢঊ এর নেতা চিষনাভিনেতা নিরঞ্জন রায় টেরিকটের স্যুট পরে হাতে ডায়েরি নিয়ে গরম বক্তৃতা দিচ্ছেন। জানলাম এর পর
    টালিগঞ্জে শুটিংয়ে যাবেন। ছোকরাদের কি উৎসাহ,--- মা-মাসিরা , তাড়াহুড়া কইরেন না, আগে আমরা মরুম, আপনাদের দেরি আছে।
    (শহীদ হওয়া ব্যাপারটা তখন থেকেই বেশ গ্ল্যামারাস হতে চলেছে।)
    কিছু অতি-উৎসাহী ছেলের সঙ্গে উপস্থিত পুলিশ কর্মিদের বচসা শুরু হলে গণেশ মধ্যস্থতা করলেন । পুলিশ অফিসার ছেলেদের
    অভব্যতার কমপ্লেন করলে গণেশ বল্লেন-- খেতে না পেলে যা হয়!
    ইতিমধ্যে বৌবাজারে এক মজদুরদের লম্বা মিছিলের মধ্যে ঢুকে পড়লো এক জীপ, তার থেকে নামলো রড ও পিস্তল নিয়ে কিছু লোক।
    কিছু গুলি, কিছু হাতাহাতি , মিছিল ভ্যাবাচাকা । জীপ পালিয়ে গেল, পেছনে পড়ে গোটা দুই লাশ, কিছু হতাহত।
    আনন্দবাজার ও এই ঘটনা নিয়ে কিন্তু -কিন্তু সুরে লিখতে বাধ্য হল।
    সেই থেকে বাম মিছিলে ঝান্ডা ও ফেস্টুনে পাতলা বাঁশের কঞ্চির বদলে লাঠি ও লোহার রডের ট্‌র্‌যাডিশন শুরু হল। কিটব্যাগে করে বোমা
    একবছর পরে। (চলবে)।
    অথ নক্সাল-বধ পালা
    -----------------------
    নির্বাচনের সময় দেখা গেল পুরনো জেনারেশনের বেশির ভাগই কংগ্রেস সমর্থক, দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে --সেই স্বপ্নে মশগুল।
    নতুন প্রজন্ম বাম-ঘেঁষা ।
    কিন্তু অনেক গুলো প্রদেশে কংগ্রেসের একটি স্থানীয় ফ্যাকশন আলাদা হয়ে কংগ্রেস বিরোধী মোর্চায় সামিল হল। যেমন বঙ্গে অজয়
    মুখুজ্জে, প্রফুল্ল ঘোষ এদের নিয়ে বাংলা কংগ্রেস।
    আবার এমন মজা, যে কমিউনিস্ট পার্টিও এই প্রথম দুটো আলাদা দল হিসেবে আলাদা নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে ময়দানে নামলো।
    আমরা আগে জানতাম--- @@ জোড়া-বলদের চারটে শিং, কংগ্রেসকে ভোট দিন।"" ( প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সময় থেকে কংগ্রেসের
    প্রতীক হল জোড়া-বলদ। হাত-ছাপ ইন্দিরাজীর সময় কংগ্রেস দুভাগ হলে তারপর হয়েছে।)
    আর ছিল "" ভোট দেবেন কীসে? কাস্তে-ধানের শীষে ""।
    এবার ঠিক হল পুরোনো চিহ্ন পাবে সিপিআই , আর কাস্তে -হাতুড়ি-তারা পাবে সিপিআই (এম)।
    তা" এই ""ব্‌র্‌যাকেটে মার্কস্বাদী "" নিয়ে পুরোনোরা নতুনদের বেশ খিল্লি ওড়ালো।
    কিন্তু নির্বাচন-পূর্ব সীটভাগাভাগি নিয়ে কংগ্রেস- বিরোধী ফ্রন্ট দুটুকরো হল--- সিপিএম ও অন্যান্যরা মিলে বাম- যুক্তফ্রন্ট, ওদিকে
    বাংলা কংগ্রেস ও সিপিআই মিলে প্রগতিশীল বাম যুক্ত ফ্রন্ট।
    ঢাকুরিয়ায় প্রখ্যাত সাংবাদিক বুদ্ধিজীবি সোমনাথ লাহিড়ির বিরুদ্ধে সিপিএম দাঁড় করালো উষা ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা হরিদাস
    মালাকারকে।
    স্লোগান উঠলো-- ""ৎ অজয়-অতুল্য-ডাঙ্গে , ভোট পাবে না বঙ্গে ""।
    কিন্তু সুভদ্র, পরিশীলিত সুবক্তা- সুলেখক সোমনাথবাবু অনেক ভোটে জিতলেন। কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হল, তবে অ্যাবসলুট
    মেজরিটি পেল না।
    তবে দুই কংগ্রেস -বিরোধী ফ্রন্ট মিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে সরকার বানালো। অজয় মুখ্যমন্ত্রী , জ্যোতি উপ-মুখ্যমন্ত্রী ও হোম মিনিস্টার ।
    খাদ্যমন্ত্রী প্রক্তন গান্ধী বাদী প্রফুল্ল ঘোষ।
    কংগ্রেস শ্লোগান তুল্লো-- যুক্তফ্রন্ট যুক্ত নয়, গদির লোভে যুক্ত হয়।
    তবে এর আগে দেয়ালে দেয়ালে লেখন আর ব্যঙ্গের ছড়াছড়ি।
    সুকান্তের কবিতা থেকে --@@ শোনরে মালিক, শোনরে মজুতদার। তোদের প্রাসাদে জমা হল আজি কত মানুষের হাড়, হিসাব দিবি কি
    তার?""
    আবার সুভাষ মুখুজ্জের কবিতা থেকে --"" পেট জ্বলছে , ক্ষেত জ্বলছে, হুজুর শুনে রাখুন।
    খাজনা এবার মাফ না হলে উঠবে জ্বলে আগুন""। সঙ্গে এক কংকালসার বুড়োর ছবি।
    দুটো বা&#৯৫৬;চ! ছেলে অবাক হয়ে দেয়াল দেখতে দেখতে বলে উঠলো --দ্যাখ, সুকান্তকে গুলে গুলে দিয়েছে , মাইরি!
    আবার লেখা হলো "" শুনলেও হাসি পায়, কমিউনিস্ট ভোট চায়।""
    অন্যদিকে - জোড়াবলদের দুধ নেই, কংগ্রেসের ভোট নেই।""
    তখন প্রচার এত হাইটেক ছিল না।
    ফলে গেঁয়ো লেভেলে লেখা হল ---- বাজারেতে বেগুন কিনে মন হল মোর ""প্রফুল্ল"", বাড়ি গিয়ে কেটে দেখি এ রাম! কানা ""অতুল্য""?
    পাড়ার ভদ্র কাকাবাবু শারীরিক বিকৃতি নিয়ে খোঁচা দেয়ার প্রতিবাদ করলেন।
    তবে "" আয়লো দিদি, মাইলো খাই, কংগ্রেসকে বাঁচিয়ে যাই""; সবার মনে ধরলো।
    আসলে চালের বদলে আমেরিকার থেকে আনা মাইলো ও পি এল -৪৮০ "র গমে সবার পিত্তি চটে গেছলো।
    ভোটের দিন দেখা গেল বাবা কংগ্রেস এর পোলিং এজেন্ট, ছেলে কমিউনিস্টের হয়ে ফলস ভোট দিতে এসেছে।
    বাবা চ্যালেঞ্জ করে বল্লেন--- একে চিনি, ফলস ভোট দিচ্ছে, এত আমার ছেলে , ওর আসল নাম আমার চেয়ে কে বেশি জানে?
    ছেলে বল্লো বাবাকে -- বাজে কথা বলবেন না মশাই! কংগ্রেসি হয়ে আমার বাবা সাজতে এসেছেন? সাহস তো কম নয়!
    হতভম্ব পোলিং অফিসার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন--
    নাম, বাবার নাম, র্যাশন কার্ডে কজন মেম্বার এইসব।
    ছেলে পুরো মুখস্ত করে এসেছে।
    উত্তরগুলো সঠিক হওয়ায় অফিসার বাবাকে বল্লেন-- না মশায়, মনে হচ্ছে এ জেনুইন। একে ভোট দিতে বাধা দেব না।
    বাবা মাথার চুল ছিঁড়লেন।
    যাহোক, বামফ্রন্ট সরকার হল। বিজয় উৎসব মনুমেন্ট ময়দানে ঘটা করে হল। উৎপল দত্ত ওনার কল্লোল নাটকের ""খাইবার "" জাহাজের
    মত করে স্টেজ সাজালেন। তার ওপর সমস্ত মন্ত্রী ও জেল ফেরত নেতারা বসলেন।
    চারদিকে লোকের মধ্যে কি উৎসাহ! এমনটি অনেক পরে "" জরুরী অবস্থা"" ওঠার পর সাতাত্তরে ইন্দিরা গান্ধীর পরাজয়ে দেখেছিলাম।
    আমার অংকের স্যার বল্লেন -- খাদ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষ খুব অনেস্ট। বিধান রায়ের প্রথম মন্ত্রীসভায় ছিলেন। এবার খাদ্যনিয়ে কালোবাজারী
    বন্ধ হবে।
    বাসে চড়ে যেতে যেতে স্লো-স্পীড নিয়ে বিরক্ত হয়ে কোন যাষনী কমেন্ট করলে দশটা মুখ হাঁ-হাঁ করে আসে।
    -- ভাই, সরকারি বাস, ডিজেল বাঁচাতে হবে না? কংগ্রেসিরা তো ছিবড়ে করে গিয়েছে। ট্রেজারি খালি।
    পাব্লিককে বোঝানো কঠিন যে খুব স্লো- করে চালালে আদৌ ডিজেল কম লাগে না।
    হ্যাঁ, চালের দাম হুড়-হুড় করে নামতে লাগলো। বাঙালী আবার দুবেলা পেট পুরে ভাত খেতে লাগলো।
    ক"মাস আগে বাঁশদ্রোণী বাজারের কাছে মরা গঙ্গার কাঠের পূল দিয়ে ওপার্ব থেকে দশ কিলো চাল সস্তায় নিয়ে আসার সময় পুলিশ
    খেঁকিয়ে উঠেছিলো -- আমাদের নাকের ডগা দিয়েচাল নিয়ে যাবেন? মশাই? আমরা কি চেলাকাঠ দাঁড়িয়ে আছি?
    সেইসব চলের জেলাওয়ারি কর্ডনের দিন গুলো অতীত হয়ে গেলো। চা।অলের দাম নামলো একটাকা ষাট পয়সা কিলো অব্দি।
    কংগ্রেসিরা মুখচুণ করে বলতে লাগলেন--- দেখি, দেশ চালানো কি এত সোজা? কদ্দিন বাদেই বাছাধনেরা বুঝবে।
    কিন্তু ছেলে-ছোকরারা বাম ছাষন ইউনিয়নের মেম্বার হতে লাগলো। বাম-ঘেঁষা বিপ্লবী-বিপ্লবী কবিতায় কলেজের হাতেলেখা
    দেয়াল ম্যাগাজিন গুলো ( আমি প্রেসিডেন্সী , মৌলানা আজাদ ও গড়িয়ার দীনবন্ধু এন্ড্রুজ কলেজের গুলো পড়েছিলাম ) ভরে যেতে
    লাগলো।
    মে-দিবসে যুব-ছাষনরা সলিল চৌধুরির "" আয়রে পরাণ ভাই, আয়রে রহিমভাই,"" এই সব গান নিয়ে র্যালি বের করলো।
    ইতিমধ্যে তরুণ মজুমারের "" বালিকা বধূ "" ফিল্ম সুপারহিট হোলো, রেকর্ড করলো, প্রায় তিন বছর চলেছিলো প্রাচীতে।
    অল্পবয়সে বিয়ে করার একটা হিড়িক উঠলো। আর প্রথম বাংলা সেক্স -ম্যাগাজিন "" জীবন-যৌবন"" ও তারপর "" সুন্দর-জীবন"" প্রকাশিত
    হল। (চলবে)

    অথ নকশাল-বধ পালা
    -----------------------
    হায়ার সেকেন্ডারির রেজাল্ট বেরুনোর আগে শহরে রিলিজ হল তরুণ মজুমদারের "" বালিকা বধূ"" ।
    টাইট এডিটিং, ফাটাফাটি গান, ফেলে আসা সময়ের নস্টালজিয়া , কৈশোর প্রেম, দেশপ্রেম, সফট সেক্স, সব মিলিয়ে ""এই গরু সরোনা ""
    ভিজে গামছার সোঁদা রোমান্সে আবদ্ধ বাঙালীর জন্যে দিক্বদল। আর মৌসুমী !
    বইয়ের নায়কও যে স্কুল গন্ডী পেরুচ্ছে!
    এই ব্যাচের সবারই খালি এক কথা। এখনও দেখিস্নি? দেখে ফ্যাল।
    -- গুরু, হল থেকে বেরুনোর সময় মনে হলো বুকের ভেতরটা যেন খালি হয়ে গেছে।
    ( বাংলা বাজারে কিছুদিন আবার কম বয়সে বিয়ের হিড়িক উঠলো।)
    ইতিমধ্যে পিকিং রেডিও একদিন "" বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ "" বলে পিপলস ডেইলীর একটি লেখা পড়লো। তাতে নকসালবাড়িতে বিগুল
    কিসানের ঘটনার ফলশ্রুতিতে কমিউনিস্টদের একাংশের নেতৃত্বে কৃষক জনতা হাতিয়ার তুলে নিচ্ছে বলে তাকে অভিনন্দন জানানো হল।
    কোলকাতায় আপামর বাম- জনগণ একটু ভেবড়ে গেলেন।
    নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলনের ঘটনা নিয়ে বিগুল কিসানের আদালতে জিতেও ক্ষেতের ফসল তুলতে না পারা, তারপর সাব
    ইনস্পেকটর সুনাম ওয়াংদির তীরবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু ও এরপর স্থানীয় জোতদার ঈশ্বর তিরকির সমর্থনে প্রসাদু জোতে পুলিসের আষন²মণে
    সাতজন নারীর ও দুই শিশুর মৃত্যুর অথেন্টিক বিবরণ আগের মাসের একটি পোস্টে বুনান খুব বিশ্বস্ততার সঙ্গে দিয়েছে। তাই রিপিট করছি
    না।
    তখন চারদিকে কনফিউসন।
    প্রেসিডেন্সি কলেজে অ্যাডমিশনের ফর্ম আনতে গিয়ে দেখি কফি হাউস, হেয়ার স্কুল, ইউনিভার্সিটির দ্বারভাঙ্গা বিল্ডিং সর্বষন পোস্টারে
    পোস্টারে ছয়লাপ।"" তরাইয়ের কৃষক সংগ্রামের সমর্থনে ---"" ইত্যাদি । রামমোহন হলে কনভেন্সন --- নকশালবাড়ি ও কৃষক সংগ্রাম
    সহায়ক কমিটি। বক্তা : সুশীতল রায়চৌধুরি, সরোজ দত্ত প্রমুখ।
    আরে, এরা তো আবার সিপিএম এর মুখপষন "" দেশহিতৈষী""র এডিটোরিয়াল বোর্ডের সষিন²য় সদস্যরা।
    হরেকৃষ্ণ কোঙর নকশালবাড়ি ঘুরে এলেন ।
    উৎপল দত্ত বল্লেন-- পার্টি অনেক সময় রাজনৈতিক কম্পালসনে খোলাখুলি সমর্থন না করতে পারে, কিন্তু কালচারাল ফ্রন্টের কাজ
    দীর্ঘকালীন নীতিহত পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলা।
    কাজেই ওনার পৃষ্ঠপোষকতায় মিনার্ভা থিয়েটারে
    রানার-ব্যালে ফেম শম্ভু ভটচাজ এর "" অহল্যা "" নৃত্যনাট্য দেখলাম।
    সুর সলিল চৌধুরি ।
    সেই চল্লিশের দশকের শেষে তেভাগা আন্দোলনের সময় সুন্দরবনের চন্দনপিঁড়ি গাঁয়ের বধূ গর্ভবতী অহল্যা গুন্ডা ও পুলিসের আষন²মণে
    মারা গিয়েছিলেন। সেই ঘটনা নিয়ে গণনাট্য সংঘের অমর কৃতি অহল্যা ব্যালে।
    পর্দা উঠতেই নীল আলোর মাঝে একদ মানুষের অঙ্গসঞ্চালনে আমরা বুঝি তারা নৌকো বেয়ে সুন্দরবনের গভীরে যাচ্ছেন,
    সলিলের লিরিক, "" ও মাঝি ভাইয়ো, বইয়ো রে নাও বাইয়ো,। খর নদীর উজান স্রোতে -- যাইয়ো। ""
    আর শেষ পর্বে অহল্যার মৃতদেহের সামনে কোরাসের গান-- "" অহল্যা-মা , তোমার সন্তান জনম নিলো না। ঘরে ঘরে সেই সন্তানের প্রসব
    যন্ত্রণা। ""
    একদিন সকালে জানা গেল আমাদের নাকতলার ভোলা বোসের নেতৃত্বে একদল পার্টিকর্মী " দেশহিতৈষী পষিনকার অফিসে ঢুকে পুরনো
    কর্মীদের গলাধাক্কা দিয়ে তালা লাগিয়েছে।
    সুশীতল , সরোজ, নিরঞ্জন বসু, প্রবীর আচার্য্য সব গলা ধাক্কা খেয়ে আর একটি ছোট পষিনকা "" দেশব্রতী""কে আশ্রয় করে পাল্টা প্রচার
    চালাতে লাগলেন।
    সিপিএম এর কুলীন সাহিত্য পষিনকা মাসিক ""নন্দন"" এ জঙ্গল সাঁওতাল স্বাক্ষরিত লিফলেট "" তরাই এর কৃষকের পক্ষে দাঁড়ান "" ছাপা
    হল।
    কৈফিয়্‌ৎ এ বলা হল এটি আমাদের ডাকবাক্সে পড়ে ছিল। ( যেন যা পড়ে থাকে সবই ছাপা হয়:)))।
    আমরা ছেলেছোকরারা, নতুন নতুন শব্দ শিখলাম ।
    জোতদার, তরাই, হঠকারী, উগ্রবাদী, বিপ্লবী, অতিবিপ্লবী, প্রতিবিপ্লবী, ইনার -পার্টি স্ট্রাগল, বাইরে থেকে লড়াই, ভিতরে-থেকে-লড়াই।
    আর গণশিল্পী অজিত পান্ডে গান ধরলেন ----
    "" তরাই কান্দে গো, জ্বলছে আমার হিয়া।
    নকশালবাড়ির মাঠ কান্দে সপ্তকন্যার লাগিয়া।""
    (চলবে)

    অথ নকশাল বধ পালা
    -------------------------------
    ও হ্যাঁ, আগের একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাষন আন্দোলন। সেটা না বললে কোলকাতার নকশাল আন্দোলনের
    পেডিগ্রি ( মইরি, ভাল অর্থে বলছি; কেউ ভুল ভেবে আমার নাম প্লীজ, হিট লিস্টে তুলবেন না।) ঠিক বোঝা যাবে না।
    ১৯৬৬"র শেষ ভাগে যখন খাদ্য আন্দোলন শেষ হয়েগেলেও তার রেশ রয়ে গেছে আর শহর কোলকাতায় বামপন্থীরা বেশ জনমানসে
    লেজিটিমেসি আদায় করে নিয়েছে, তখন এক শীতের ভোরবেলায় পাব্লিক চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজ খুলে পিনকে
    গেল।
    প্রেসিডেন্সি কলেজের অনশনরত ছাষনদের ভোরবেলা পুলিশ ঠেঙিয়েছে, কালোগাড়ি ভরে তুলে নিয়েগেছে । তারপর লক আপে পুরেছে।
    আরে, প্রেসিডেন্সি তো এলিট ক্লাসের ছেলেপুলেদের পড়াশুনোর জায়গা। ওরা গাড়ি চড়ে আসে। ইংরেজিতে কথা বলে, ইংরেজিতে বা
    ইতিহাসে মাস্টার্স করলে অকস্ফোর্ডে যায়, ইকনমিক্সে করলে কেম্ব্রিজে, আর ম্যাথস, ফিজিকস বা স্ট্যাটিসটিকস এ করলে সিধে
    আমেরিকা।
    ওখানে ছাষন আন্দোলন? তাও অনেকদিন ধরে? আবার অনশন? পুলিশ- অ্যারেস্ট ? ইস্যু কি?
    পরে জেনেছিলাম -- ইডেন হোস্টেলের ওয়ার্ডেন ছিলেন কবি হরপ্রসাদ মিষন। শেকস্পীয়র পড়াতেন।
    ( চুপিচুপি বলি-- ওনার কবিতা আমার বেশ ভালো লাগতো।
    "" বিদ্যুৎবেগ, নিকটবৃত্ত,চেনামহল নিরুৎসুক,
    এমনসময় কি ঝরঝর , নামলো মনে অসীম সুখ।
    সবুজশাড়ির ভঙ্গিমা তার কি আশ্চর্য্য অনুপ্রাস"
    অনেকযোজন বালির পরে পাহাড়িজল,চিকনঘাস"")
    উনি নাকি হোস্টেলের ছেলেরা কি ধরনের বইপত্তর পড়ে, তার তদারকি করতেন, মার্ক্সিজম এর বই পড়লে ব্যঙ্গ করতেন, বজেয়াপ্ত
    করতেন রেইড্‌করতেন। ভয় দেখাতেন।
    সেই নিয়ে লাগলো। তার সাথে হোস্টেলের মিস ম্যানেজমেন্ট , খারাপ খাওয়াদাওয়া। উনি কয়েকজনকে সাসপেন্ড করলেন। কলেজ থেকে
    তাড়াবার বন্দোবস্ত করলেন। যে দশ্‌জনকে চিঠি ধরালেন তাদের অধিকাংশই ব্রিলিয়ান্ট। যদ্দুর মনে আছে অমলকান্তি সান্যাল ( কৃষ্ণনগর
    থেকে পড়তে আসা), সুলেখক নারায়ণ সান্যালের ভাইপো, হায়র সেকন্ডারিতে সেকন্ড হয়েছিলো।
    ছাষনরা ষন²মশ: সাথীদের টার্মিনেশনের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হঐচ্ছেলো।
    আজ আমার মনে হয় হরপ্রসাদবাবু প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাষনদের মধ্যে মার্কসবাদ নিয়ে আলোচনা-পড়াশুনো এসব দেখে প্যারানয়েড হয়ে
    গিয়েছিলেন।
    (হায়, উনি যদি জানতেন যে ক"বছর পর স্ট্যানফোর্ড মানবেন্দ্রনাথ রায়ের ওপর সবচেয়ে ডকুমেন্টেড স্টাডি এবং তাঁর রচনাবলী ছাপবে।
    কমিন্টার্নের প্রতিনিধি হিসেবে চীনে তাঁর কাজকর্মের ষিন²টিক্যাল রিভিউ প্রকাশ করবে!)
    বহুবছর পরে যখন বাবরি মসজিদ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে তখন কল্যান সিংয়ের রথ কোলকাতা দিয়ে গেল। আবাপ রিপোর্ট বের করলো যে
    য আঁরা তেল-সিঁদুর দিয়ে সেই রথকে বন্দনা করেছেন এবং স্লোগান দিয়েছেন--- ""কল্যণ সিং , কল্যান কর"" , তাঁদের একজন ড:
    হরপ্রসাদ মিষন।
    কবিতার স্বাদ তেতো হয়ে গেল।
    তখন কোলকতা দ্বিধা-বিভক্ত। একদল বলছেন -রাজনীতি ঢুকে কলেজের সর্বনাশ করলো। এমন একটা কলেজকে এসব থেকে আলাদা
    করা যায় না?
    ( যেন মেট্রোস্টেশনে পানের পিক, সেলোফেন কাগজ ফেলবে না, শেয়ালায় ফেলতে পারো।)
    আর ছাষনদের গণতান্ত্রিক অধিকার-ফধিকার আবার কি? পড়তে গেছে, পড়বে। সন্ধ্যেবেলায় বই বগলে বাড়ি আসবে, ব্যস। কোন
    ইন্টুমিন্টু নয়।
    তখনও ইংরেজি বিভাগে তারক সেন , স্ট্যাটিস্টিকস এ ড: অতীন্দ্রমোহন গুণ সগৌরবে পড়াচ্ছেন।
    ওদিকে বামপন্থী বিদ্বজ্জন বেশ উল্লসিত। এলিটিজম এর গড়ে স্টুডেন্ট ফেডারেশন এর ইউনিট ? যেন হিন্দুর মেয়ে মুসলমন পরিবারে
    বিয়ে করে "" খাতুন"" হয়েছে।
    দেখেছ বাওয়া! হতেই হবে। সুর্যের আলো কি মেঘে ঢাকা যায়। কে যেন বলেছিলেন -- সব লাল হো যায়েগা!
    সুনীল গাঙ্গুলী তখন দেশ পষিনকায় "" নীরার অসুখ"" বলে কবিতায় লিখলেন যে নীরা সেরে উঠলেই দুনিয়া সুন্দর হবে, ঝলমলিয়ে রোদ
    উঠবে গোছের কিছু ব্যাপার। কিন্তু শেষ লাইনটা?
    "" আর প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাষনদেরও দাবি মিটে যাবে।""
    কিন্তু শেষরাতে ঐছেলেগুলোকে বিনা প্ররোচনায় পুলিশের লাঠিপেটার ফোটো আর খবর সবাইকে নিন্দা করতে বাধ্য করলো। প্রফুল্ল সেন
    সরকার
    অপ্রিয় হলেন। কিছুদিন পরে নিষ্কাসিত ছেলেরা পরীক্ষা দিতে পারলো । ষন²মশ: প্রেসিডেন্সি কলে বামরাজনীতি লোকের কাছে
    একধরণের স্বীকৃতি পেলো। এদের মধ্যে থেকে ক্যারিশম্যাটিক লীডার হিসেবে ধীরে ধীরে লাইমলইটে এলেন বীরভূমের লাভপুর থেকে
    ফিজিক্স অনার্স পড়তে আসা এক ব্যক্তিত্ব- যাঁর প্যারালিটিক বাঁকা মুখ আর বিতর্কের অসীম ক্ষমতা ভীড়ের মাঝে আলাদা হয়ে সবার
    চোখে পড়লো , পুলিসেরও।
    অসীম চাটুজ্জে, -- "" কাকা""।
    প্রেসিডেন্সি ষন²মশ: কাকার হেড কোয়ার্টার হয়ে উঠলো। ওখানেই বারান্দায় সতরঞ্চি পেতে শোয়া, কলাবাগান বস্তির শস্তা দোকানে খাওয়া।
    এভাবেই গড়ে উঠলো এক হার্ডকোর।

    অথ নকশাল-বধ কথা
    ---------------------------
    (৭)
    ছাষন আন্দোলনের কথা কেন উঠলো?
    আরে সেইসময়টা তো সারাদুনিয়া জুড়ে ছাষন আন্দোলনের জোয়ার।
    ভিয়েৎনামের যুদ্ধ নিয়ে সারা দুনিয়ার ছাষন সমাজ তোলপাড়। এইসাথে মিশে যায় প্রত্যেক দেশের আর্থিক সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেষেন
    রিফর্মের দাবী। ভারতে বর্ষে তখনও টিভি আসেনি। কিন্তু একটি দেরিতে হলেও খবরের কাগজের দৌলতে আমরা কিছু জানতে পাঐচ্ছে।
    একদিকে উত্তর ভিয়েৎনামের শহর গুলোয় , যেমন হ্যানয়, হাইফং য়ে বোমা পড়ছে, আবার দক্ষিণ ভিয়েৎনামে নাপাম বোমার ফলে
    বাতাসে লেগে যাচ্ছে আগুন, নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতখামার , গবাদি পশু , ঝলসে যাচ্ছে মানুষের গায়ের চামড়া।
    ফেলিক্স গ্রীন, উইলফ্রেড বার্চেটদের মত নামী সাংবাদিকরা সেখানের পরিস্থিতি নিয়ে ফোটো অ্যালবাম প্রকাশ করছেন।
    বার্ট্রান্ড রাসেলের মত মনীষী নব্বই বছর বয়েসে ভিয়েৎনামে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জুরিস্ট, সাংবাদিক,
    লেখকদের নিয়ে আমেরিকার সরকারকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করে বিচার সভা বসিয়েছেন।
    আমেরিকান সেনাদের ভিয়েৎনাম থেকে ফিরিয়ে আনার দাবীতে ওদেশের ইউনিভার্সিটির ছাষনরা পথে নেমেছে। বিশাল শান্তি মার্চে গিটার
    হাতে গান গাইছেন জোয়ান বেইজ । বব ডিলান, পিট সিগাররা মানুষের যন্ত্রণাকে ভাষা দিচ্ছেন। সেই সময় নবনীতা দেবসেন বার্কলেতে
    কোন কোর্স করছিলেন। ওনার একটি স্মৃতিচারণে তখনকার ছাষন আন্দোলন, আমেরিকান পুলিসের সঙ্গে ছাষনদের সংঘর্ষ--সব কিছুর
    বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে।
    এদিকে প্যারিসে রেনো মোটর কারখানার মজদুরদের স্ট্রাইক ও সরবোর্ন ইউনিভার্সিটির ছাষনদের আন্দোলন মিলেমিশে এমন অবস্থা হল
    যে ফ্রান্সের সরকারকে প্রায় পদত্যাগ করতে হয়।
    বিশাল হরতাল। রাস্তায় নেমে ব্যারিকেডে দাঁড়িয়েছেন বিখ্যাত দার্শনিক লেখক , অস্তিত্ববাদের রূপকার জাঁ-পল সাষের্ন ।
    শোনা যেতে লাগল নতুন ছাষন নেতা ড্যানিয়েল কোহন-বেন্ডিটের নাম। তেমনি পশ্চিম জার্মানীর বন শহরে রুডি ডুশ্চেক।
    চাষনদের মধ্যে তখন জনপ্রিয় চে গুয়েভারা আর দার্শনিক হার্বার্ট মার্কুইস।
    ""ওয়ান ডাইমেনশনাল ম্যান""এর লেখক মার্কুইস মার্ক্সের ""দুনিয়ার মজদুর""এর জায়গায় "" দুনিয়ার ছাষনসমাজ"" কেই সমাজ পরিবর্তনের
    এজেন্ট বল্লেন। ব্যস, আর পায় কে!
    একেবারে হে সময়! উত্তাল সময়!
    এমন সময় বলিবিয়ার জঙ্গলে চে ধরা পড়লেন । বারিয়েন্টোস জুন্টা সম্ভবত: চেয়ারের সঙ্গে হাত-পা-চোখ বাঁধা অবস্থায়"" চে"" কে গুলি
    করে।
    সারাদুনিয়া জুড়ে তখন লিন্ডন জনসন সরকার ও পরবর্তী নিক্সন সরকার ঘৃণার পাষন।
    এদিকে লন্ডনে পাকিস্তান থেকে পড়তে যাওয়া ছাষননেতা তারিক আলির রম্রমা। বিটল গায়ক জন লেননের "" স্ট্রীটফাইটিং ইয়ার্স"" গান,
    বিবিসিতে বিতর্ক , রাস্তায় রাস্তায় অবরোধ ও মিছিল । মিছিলে ছাষনদের স্লোগান--"" হো- হো -হোচিমিন। ""
    কোলকাতার বাম ছাষনরা নিশ্চিত দুনিয়া বদলাচ্ছে। মন দিয়ে পড়াশুনো করে ভালো চাকরি বাগানো, সুন্দরী বৌ খোঁজা ( ভাইস- ভার্সা )
    মানে ক্যারিয়ারিজম । আর তখন ক্যরিয়ারিজম একটা নোংরা গালাগাল।
    অথ নকশাল-বধ পালা
    --------------------------
    (৮)
    এবার বলি কিছু শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের কথা।
    ১৯৬৭র জুনের পর ( যখন বিগুল কিসান আদালতে জিতেও নিজের জমির দখল নিতে পারলো না, জোতদার ঈশ্বর তির্কি উ&#৯৫৬;চ আদাল
    থেকে স্টে আনলেন, কিন্তু নিজের গুন্ডাবাহিনী দিয়ে ক্ষেতের ফসল কাটতে লাগলেন তখন জঙ্গল সাঁওতালের কিসান সভা প্রতিরোধ
    করল। সুনাম ওয়াংদি বলে কুখ্যাত পুলিস ইনসপেক্টর তিরের ঘায়ে মারা গেল। ব্যাস, প্রসাদু জোতে তিস্তাপূজার দিন গাঁয়ের পুরুষরা
    বাইরে ছিল। পুলিশ-জোতদার ঢুকে আষন²মণ চালালো। সাত মহিলা মারা গেলেন। দুজনের পিঠে বাঁধা শিশুও মারা পড়লো।
    সিপিএম এর মন্ত্রীসভা প্রথমে কৃষকদের পক্ষে কথা বল্লেও পরে স্থিতবস্থার পক্ষে বলতে লাগলো। কৃষিমন্ত্রী হরেকৃষ্ণ কোঙার শিলিগুড়ি
    গিয়ে পুলিশ ও কানু সান্যালদের সঙ্গে কথা বল্লেন কিন্তু কৃষক নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী রইলো। )
    পুলিশ খুঁজে বেড়াতে লাগলো ৪য & ১ওকে।
    অর্থাৎ, কানু সান্যাল, কেশব সরকার , কদম মল্লিক, খোকন মজুমদার ও জঙ্গল সাঁওতালকে।
    তখনও চারুমজুমদারের নাম কোলকাতা ভাল করে শোনেনি।
    একদিন আবাপ লিখলো সম্ভবত: কানু ইদানীং কোলকাতায় বালিগঞ্জে তাঁর চিষনাভিনেষনী বোনের বাড়িতে ক"দিন ছিলেন।
    আমরা ছেলেছোকরারা চোখ কপালে তুললাম।
    আচ্ছে!! সত্যজিৎএর ""নায়ক"" ( পরবর্তী কালে হিন্দি ""আনন্দ"" এ অমিতাভর বিপরীতে) এর সুমিতা সান্যাল কমরেড কানুর বোন?
    সমস্ত বামসমর্থক ছাষন-যুবসমাজের সামনে নকশালরা তখন সিপিএম এর একটি কট্টর গোষ্ঠী, যারা মনে করে বিপ্লব সমাসন্ন। সরকারে
    গিয়ে সিপিএম নেতারা সুবিধেভোগী হয়ে গিয়েছে।
    এইখানে একটু শুকনো কথার কচ্‌কচি ( নিরুপায় হয়ে, যতটুকু না হলে নয়) ।
    তফাৎটা কোথায় ? দু"পক্ষের মূল প্রোগ্রামে খুব তফাৎ ছিল না।
    বিপ্লবের স্তর : জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব। অর্থাৎ, সমাজতান্ত্রিক নয়। ব্রিটিশ গেছে, জমিদারী গেছে, কিন্তু জোতদার ও অন্য মধ্যস্বঙ্কÄ ভোগীর
    মাধ্যমে গ্রামে সামন্তবাদ রয়ে গেছে। ফলে দেশের আর্থিক বিকাশ হচ্ছে না। চাই ""কৃষি বিপ্লব""। মানে, বড় জোতদারদের জমি ফালতু পড়ে
    থাকে। সেগুলো জব্দ করে ভুমিহীন ও ছোট গরীব কৃষকের মধ্যে বিলি করতে হবে। তাহলে সব কিসান নিজের জমি থেকেই দুবেলা
    পরিবারকে খাওয়া তে পারবে। বাড়তি ফসল বাজারে বিক্কিরি করবে। করে জামাকাপড় ও অন্যান্য জিনিস কিনবে। এখন গ্রামের লোক ,
    জনসংখ্যার ৭০% যদি উদ্বৃত্ত ধান বেচে, তাহলে শহরের ২৫% পাব্লিকের শস্তায় খাওয়ার সমস্যা মিটলো। আবার৭৫% লোকের হাতে
    ক্যাশ আসলে কারখানায় তৈরি কাপড় ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের এমন চাহিদা বাড়বে যে কলকারখানা রমরমিয়ে চলবে। সারা দেশের
    লোকজন দুধে ভাতে থাকবে। এই হল কৃষিবিপ্লবের ফান্ডা। তাহলে তফাৎটা কোথায়?
    দুটো জায়গায়।
    এক, নখালরা মনে করে দেশে আসল স্বাধীনতা আসেনি। ভারতের বড় পুঁজিপতিরা আসলে বৃটিশ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এজেন্ট বা
    মুৎসুদ্দি।
    ভারত সরকারকে নাকে দড়ি দিয়ে আমেরিকা-ইউরোপের ফিনান্স ক্যাপিটাল ( মাল্টিন্যশনাল-ট্রান্সন্যাশনাল)রা চালাচ্ছে। ওদের মতে
    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোন সাম্রাজ্যবাদ আর আগের মত খোলাখুলি কলোনি রাখে না। ওরা মনাপসন্দ দেশি সরকার বসায় যর বিদেশি
    পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করবে। কিন্তু সিপিএম মনে করে টাটা-বিড়লা স্বাধীন পুঁজিপতি। নকশালরা ভাবে কেবল ছোট পুঁজিপতিদেরই
    প্রোটেকশন দিয়ে আগে বাড়তে দেয়া উচিৎ।
    দুই, সিপিএম ভাবে এখন দেশের লোক কোন বিপ্লবের জন্যে তৈরি নয়, সংসদীয় পথে আস্তে আস্তে জনগণকে তৈরি হতে হবে।
    আমরা দুটো কথা শিখলাম --- অবজেক্টিভ কন্ডিশন আর সাবজেক্টিভ কন্ডিশন।
    ময়দানে নামলেন প্রখ্যাত নট-নাট্যকার ও পরিচালক উৎপল দত্ত। নকশালবাড়ি ঘুরে এলেন,
    হরেকৃষ্ণ কোঙারের সঙ্গেদেখা করে এলেন।
    তারপর সুশীতল্বাবু -সরোজ দত্তদের বিপ্লবী কমিউনিস্টদের কো-অর্ডিনেশন কমিটির মনুমেন্ট ময়দানের সভায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিলেন।
    বল্লেন--- কি বৈষ্ণবী নাম ! হরেকৃষ্ণ !! উনি আমাকে জিগ্যেস করলেন--চা খাবেন? কি কফি খাবেন?
    আমার মনে হল বল্লেন---চাষীর রক্ত খাবেন, কি শ্রমিকের রক্ত খাবেন?
    শ্রোতারা রোমাঞ্চিত হলেন। এরপর উনি লেনিনের লেখা"" দ্বিতীয় অন্তর্জাতিকের পতন"" থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝালেন যে ভারতে
    বিপ্লবের অব্জেকটিভ কন্ডিশন বা জমি প্রস্তুত, শুধু সাবজেক্টিভ কন্ডিশন বা রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতিটা বাকি, শুরু করতে হবে। সিপিএম
    ভয় পাচ্ছে। শ্রোতারা আবার রোমাঞ্চিত হল।
    ইতিমধ্যে বাংলার প্রথম সেক্স পষিনকা বেরিয়ে গেছে -""জীবনযৌবন""। তাতে সুনীল গাঙ্গুলি মশায় উপন্যাস লিখলেন ""নদীর পারে খেলা""
    । কিন্তু আরেক নামজাদা গাঙ্গুলি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় অ্যাডভান্স দিতে আসা প্রকাশককে ফিরিয়ে দিয়ে বল্লেন--- আমি সেক্স পষিনকায়
    লিখিনা।
    এরপর শারদীয়া সংখ্যা ""দেশব্রতী "" আর ""জীবনযৌবন"" প্রায় একসাথেই বেরুলো আর নতুন কলেজে যাওয়া ছেলেরা দুটোপই কিনে
    পড়লো। কোনটা আগে পড়লো তা " আন্দাজ করার জন্যে কোন প্রাইজ নেই।
    কিন্তু ""দেশব্রতী"" খুলে চোখ ছানাবড়া! উৎপল দত্ত করেছেন কি! ভারত সরকারের ""সংগীত- নাটক অ্যাকাদেমি"" থেকে ওনাকে
    পুরস্কার দেয়া হয়েছে, আর উনি তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। তারপর নকশালদের পষিনকায় কবিতা লিখেছেন --""শাহেনশা" , তোমার পুরস্কার
    তোমার থাক""। দীর্ঘ তিনপাতা কবিতা।
    প্রথমটা এইরকম----
    ""পুরস্কার দিতে চেয়ে করেছ যে অপমান,
    কী জবাব দেব তার, শক্তিমান!
    মুটে-মজুরের কবির ঘর
    লাভ করে তোমার করুণা বর
    ধন্য হবে, এইকি ভেবেছিলে?""
    মাত্তর দু"বছর পরে উনি মৃণাল সেনের ""ভুবন সোম"" ছবিতে অভিনয় করে ভরত পুরস্কার পেলেন, সেটা নিতে কোন সংকোচ করলেন
    না।
    তারপর যখন তিনি ইমার্জেন্সির সময় সিপিএম এর সঙ্গে দাঁড়িয়ে , নাটক করছেন ""দু:স্বপ্নের নগরী"" বা ""ব্যারিকেড"" ,"" এবার রাজার
    পালা"", তখন ইন্দিরা গান্ধীর সামনে লালকেল্লায় নাটক করলেন -
    "টোটা"", সিপাহীবিদ্রোহের ওপর। ব্যাখ্যা দিলেন-- এই সুযোগে ভারতীয় ফৌজের সামনে রাজনীতি পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে। সেটা কম কথা নয়।
    আমার খালি প্রত কবি সমর সেনের প্রিয় একটি উদ্ধৃতি মনে পড়ে-- "" কত রঙ্গ দেখালি খেঁদি, অম্বলে দিলি আদা।""
    নোট: অরিজিতের জন্যে। আজকের শিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরি কিন্তু অসীম চাটুজ্জেদের সঙ্গে একসাথে প্রেসিডেন্সি থেকে বিতাড়িত
    দশজনের একজন । ( চলবে)

    অথ, নকশাল-বধ কথা:
    ----------------------------
    (১০)
    ১৯৬৭"র মে মাস থেকে ১৯৬৯ এর মে"দিবস; সে"ছিল নকশালদের ইনি্‌কউবেশন পিরিয়ড। ডিমে তা" দেয়া এবং ষন²মশ: ডিম ফুটে
    বেরুনোর সময়।
    তখন নখাল মানে সিপিএম এর কিছু বিক্ষুব্দ অংশ আর প্রেসিডেন্সি, বঙ্গবাসী, সুরেন্দ্রনাথ, দ্বারভাঙ্গা বিল্ডিং , রাজাবাজার সায়েন্স
    কলেজ,সিটি, আরও পরে বালিগঞ্জ সায়েন্স এবং শেষের দিকে যাদবপুর এর ছাষনরা। । হ্যাঁ, সাউথ সিটির ইকনমিক্স বিল্ডিং এর কথা বলতে
    ভুলে গেছি। এছাড়া দমদম মতিঝিল , গড়িয়ার এন্ড্রুজ , মৌলানা আজাদ এসবের ছোট ছোট ইউনিটগুলোর কথা ধরিনি।
    তখন নকশাল মানে বুদ্ধিজীবী, তখন নকশাল মানে আঁতেল। কাঁধে ঝোলা , উস্কোখুস্কো চুল আর হাতে নানা বই , চটি বই , ইস্তেহার।
    সিপিএম এর ত্‌ৎকালীন লৌহপুরুষ প্রমোদ দাশগুপ্ত বলেছিলেন--- দাড়ি রাখলেই যদি বিপ্লবী হওয়া যায় , তবে রামছাগল সবচেয়ে বড়
    বিপ্লবী।
    নখালদের আড্ডায় আওয়াজ উঠতো -- বাবা -আ-আ- কার্ল মার্ক্সের চরণে সেবা লাগে-এ-এ; প্রমো-ও-ও-দ।
    তখন নখল মানে একধরনের মার্ক্সবাদী ফান্ডামেন্টালিস্ট , যারা মার্ক্সবাদী প্রয়োগ কে বাংলা তথা ভারতে একধরনের প্রিস্টাইন
    বিশুদ্ধতায় ফিরিয়ে আনতে চায়।
    ফলে তারা মার্ক্সের পভার্টি অফ ফিলজফি, লেনিনের ফিলজফিক্যল নোটবুক, মাওয়ের অন ক¾ট্রাডিখন, অন প্‌র্‌যাকটিস থেকে শুরু করে
    ইউরোপীয় ও আমেরিকান সাংবাদিকদের চীন ও ভিয়েৎনাম নিয়ে লেখা ( যেমন রেডস্টার ওভার চায়না , বা ফেলিক্স গ্রীন , উই®Òফ্রড
    বার্চেট এর সচিষন রিপোর্ট) গোগ্রাসে গিলছে আর পথে ঘাটে তর্ক করছে।
    সিপিএম এর ভাবটা ছিল---- আ মোলো যা! তিনদিনের এঁড়ে , এল শিং নেড়ে!
    বালিগঞ্জের জাঁদরেল সিপিএম দম্পতী শচীন সেন--সাধনা সেন। ছেলেছোকরাদের প্রশ্নে উত্যক্ত হয়ে খেঁকিয়ে উঠলেন-- বিপ্লব করবি!
    বড় বেশি চেইত্যা উঠছস। দিমু ঘাড়টাৎ ধইর্যা পার্টি থেইক্যা বাইর কইর্যা!
    সিপিএম এর চোখে তখন নকশালরা হল একদল ঘরভাঙানী ( খুব ভুল নয়:)))))।
    আমরা জানলাম অনেকদিন আগে থেকেই সিপিএম এর মধ্যে অনেক আদর্শগত কোঁদল চলছিল, ডকুমেন্ট ছিল। নেতৃত্ব সেগুলো
    সার্কুলেট করছে না। সর্বস্তরে বিতর্ক ছড়াতে দিচ্ছে না। চেপে দিচ্ছে। ডিসিপ্লিন এর নামে বের করে দিচ্ছে। স্তালিনিস্ট মডেল?
    ( পরে দেখা গেল নখালরাও কিছু কম স্তালিনিস্ট নয়, বরং মতের অমিল হলে প্রাণ হারাতে হয়।)
    আমরা জানলাম নতুন নতুন ডকুমেন্ট এর নাম , যেমন চিন্তা-১ , চিন্তা -২ , সুর্য্য সেন, সুবিনয় রায়, ইত্যাদি।
    এদিকে সিপিএম এর ছাষন সংগঠনের মুখপষন "" ছাষনফৌজ"" নখলদের হাতে। শৈবাল মিষন( আজকে নামকরা লেখক) , নির্মল ব্রহ্মচারী (
    উৎপল দত্তের দলে নাটক করতেন, কবিতা লিখতেন) বিতাড়িত হলেন । ছাষনফৌজ বন্ধ হয়ে গেল।
    হ্যাঁ, নাটকের ও গানের দলে নখালদের বান ডাকলো। উৎপল দত্ত নখালবাড়ি ঘুরে এসে মিনার্ভা থিয়েটারে নতুন নাটক করলেন-
    ""তীর""।
    স্ক্রিপ্ট একটু ঢিলে। ( আর রামক্যালানি খাবার আশংকা নিয়েও বলছি ওনার নাটকের কাঠামোয় মার্কিন থ্রিলারের ছায়া নিয়ে রিসার্চ
    পেপার হতে পারে।)
    কিন্তু নির্মল গুহরায়ের মঞ্চসজ্জা , যাস্ট অসাধারণ, কোন কথা হবে না। অভিনয়ে সঞ্জু ওরাওঁ এর ভূমিকায় শোভা সেন, জোতদার
    তির্কি"র ভূমিকায় ইন্দ্রজিৎ সেন ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। আর গান , সম্ভবত: অজিত পান্ডের সুরে। ইন্টারভ্যালের আগে একটি দৃষ্টিনন্দন
    কম্পোজিশান , তাপস সেনের আলো-আঁধারি আর সাউন্ডট্‌র্‌যাকে "" হৈ হৈ হৈ! দুশম্ন ঐ, আসে বুঝি আমার টারেৎ, বীরাও গাঁয়ের গেরিলা
    জোয়ান।
    কেশব সরকার, কানু সান্যাল, হাঁকে শোন জঙ্গল সাঁওতাল, -- বীরাও গাঁয়ের গেরিলা জোয়ান!
    টুকুরিয়ার ঝোপেঝাড়ে চল সাথী হুঁশিয়ারে ,
    হাতে হাতে লয়ে হাতিয়ার।--""
    আবার নেতাজীনগরে চিষনাভিনেতা সুখেন দাসের ভাই অজয় দাস (পরবর্তী কালের সুপারহিট ফিল্মি সংগীত পরিচালক ) গানের স্কোয়াড
    বানালেন -"" বিংশ শতাব্দী""। হাতাগোটানো সাদা শার্ট ধুতি , হার্মোনিয়াম নিয়ে গাইতেন--
    "" ভিয়েৎনামের রক্তক্ষয়ের সংগ্রামে,
    আমরা আছি , আমরা রব সর্বদুখের সঙ্গী হয়ে ।
    হো-ও-ও , আহা রে , আহা রে এ-, আহা-আ -রে। ""
    কিছু মজার ঘটনা বলি। গড়িয়ার এন্ড্রুজ কলেজ।
    বি এস সি ফাইনালের প্‌র্‌যাক্টিক্যাল পরীক্ষা। সম্ভবত: কেমিস্ট্রির। সায়েন্স কলেজ থেকে একজন এক্টার্নাল এসেছেন। জর্মানী না
    কোথায় গিয়ে ডক্টরেট। ( মজলিশি বোন দেবযানীর প্রতি কোন কটাক্ষ নয়:)))।
    ছেলেদুটো একটাও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না। ইন্টার্ন্যাল স্যার বল্লেন -- এরা পড়াশুনো করে না। ক্যান্টিনে বসে গ্যাঁজায়, নখাল
    করে।
    একস্টার্নাল লাফিয়ে উঠলেন।
    -- আচ্ছে!? তাই বুঝি ? বেশ মার্ক্স-লেনিন- মাওয়ের কি পড়েছ দেখি?
    চললো একঘন্টা অন্তাক্ষরী। মাঝে মাঝে মতভেদ, বিতর্ক। কলেজের কেমিস্ট্রির প্রফেসর সচকিত। একবার এর মুখের দিকে তাকান,
    আর একবার ওর মুখের দিকে।
    শেষে বিগলিত হয়ে আগন্তুককে মিস্টির প্লেট এগিয়ে দিয়ে বল্লেন-- এরা অনেক জানে, না স্যার?
    বলা বাহুল্য , ছেলেদুটো ভালো নম্বর পেল।
    সেইসময় চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। রেড্‌গার্ড দের কাজকম্মো ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে
    গেছে। চীন ভারতের দুই রাজদূতকে অপমান করে ফের্ৎ পাঠালো। বদলায় বিজেপির দিল্লির কার্যকর্তারা চীন দূতাবাসের সামনে উগ্র
    প্রদর্শন করলো, পাথর ছুঁড়লো আর একটা গাধার গায়ে "" থট অফ মাও "" লিখে পেস্ট করে দিলো।
    কেম্ব্রিজ থেকে ইকনমিস্ট জোয়ন রবিনসন, ইতিহাসের জোসেফ নীডহ্যাম এঁরা এক চায়না পলিসি স্টাডি গ্রুপ বানিয়ে ""ব্রডশীট "" বলে
    পষিনকায় নিয়মিত চীনের অভ্যন্তরের খবর দিতে লাগলেন।
    ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি পাঁচহাজার ক্যাডারকে মাওবাদী আখ্যায় বের করেছে শোনা গেল।
    হটাৎ প্রেসিডেন্সির আখড়ায় হাজির হল এমনি এক মাওবাদী ফ্রেঞ্চ ছাষন যার নামের দাঁতভাঙ্গা উ&#৯৫৬;চ!রণ হবে "" সেইর`।"" বা এমনি কিছু ।
    সে হয়ে গেল ""সরোজ""। রয়ে গেল প্রেসিডেন্সির চাতালে, শীত বর্ষায় কারো কারো বাড়িতে। ফর্সা ,দীর্ঘদেহী সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, গম্ভীর
    ছেলেটি, হাসতে বিশেষ দেখিনি।
    প্রাজ্ঞজনেরা বল্লেন -- দেখতো, ওর পকেটে ডলার আছে কিনা।
    একজন উঠতি কৃত্তিবাস কবি কফিহাউসের আড্ডায় বল্লেন -- আহা, যদি বিপ্লব-টিপ্লব ছেড়ে মেয়েপটানোর রাস্তায় যায় তো কোথায়
    লাগে---।
    অন্যেরা তাকে গালাগাল শেখাতো, সে কিছুদিন পরে বুঝে গিয়ে ফরাসী গালি দিতে শুরু করলো। অসীম চাটুজ্জে(কাকা)র বিশেষ
    স্নেহধন্য ছিলো।
    গলায় সুর ছিলো। একদিন নিজের লেখা গান গেয়ে শোনালো--।
    "" ষনম্বলে বুর্জোয়া, ষনম্বলে জোতদার, ষনম্বলে এক্‌স্‌প্‌লয়তিয়ের দ্য লা ষিন!
    নখালবাড়ি ন্যুএর ফ্লে""।( আমার কানে যেমন বেজেছে আর কি!)
    মানেটা খানিকটা এরকম:
    সাবধান বুর্জোয়া, জোতদার সাবধান , সাবধান তোমরা - শোষক ষনয়ী ! নখালবাড়ি অØষন ধরেছে। ( চলবে)।
    অথ নকশাল-বধ পালা
    ---------------------------
    (১১)
    নখালদের প্রাথমিক হল্লা বোল কিছুটা থিতিয়ে এসেছে , আম পাব্লিকের প্রাথমিক উৎসাহে কিঞ্চিৎ ভাঁটার টান। সিপিএম যাদের যাদের
    তাড়াতে-টাড়াতে চেয়েছিল , তাদের কোণঠাসা করে নিশ্চিন্ত। জনরব ছিল দুই কালাপানি ফের্ৎ অগ্নিযুগের বিপ্লবী ( এঁরাই ছেষট্টির খাদ্য
    আন্দোলনের সময় সিপিএম এর গোপন সংগঠনকে গড়ে তুলেছিলেন) সতীশ পাকড়াশী আর গণেশ ঘোষ পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন।
    কিন্তু তাঁরা ভেতরে থেকেই ""সংগ্রাম "" চালাবেন ঠিক করলেন ।
    গণেশ ঘোষ কে পার্টি একবার এম পি করে পার্লামেন্টে পাঠাল, তারপর রিজর্ভ বেঞ্চে বসিয়ে রাখলো। সতীশ পাকড়াশীর হাল আরো
    খারাপ। আজীবন অবিবাহিত অনুশীলন ও যুগান্তর দলের আনন্দমঠের সন্ন্যাসী মডেলের কলচারে বেড়ে ওঠা এই দুই বৃদ্ধ ভাঙামন নিয়ে
    আস্তে আস্তে অন্ধকারে চলে গেলেন।
    তা " বিতাড়িত দের নিয়ে নকশালরা গড়ে তুল্লো সারাভারতের কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের কো- অর্ডিনেশন কমিটি। সিপিএম এর বর্ধমান
    প্লেনামে অন্ধ্র থেকে এসে পোল্লা রেড্ডি ও নাগী রেড্ডি অফিসিয়াল প্রস্তাবের পাল্টা দলিল রাখতে গিয়ে খুব হ্যাটা খেলেন ও বুঝতে
    পারলেন যে সিপিএম এর ভেতরে ওনাদের জায়গা নেই। বিহারে সত্যনারায়ণ সিং ও সত্যনারায়ণ মিশ্র, আজাদ, উত্তরপ্রদেশে শিউকুমার
    মিশ্র, উড়িষ্যাতে অন্ধ্র বর্ডার এলাকায় নাগভুষণ পট্টনায়েক এর নকশাল মডেলের সংগঠন গড়তে মাঠে নামলেন।
    কোলকাতায় চারুবাবু এসে সরোজ দত্তের আর সুশীতল বাবুর সঙ্গে ঘুরে কিছু কিছু বৈঠক করলেন। ঢাকুরিয়ার ছেলেছোকরারা আদৌ
    ইম্প্রেস হল না।
    -- বুঝলি, খেঁকুরে এক বুড়ো, খালি ইমোশনাল কথা বলে। বড্ড ছটফটে। এই চৌকিতে উঠে বসে, এই চেয়ারে, এই দাঁড়িয়ে পড়ে।
    আবার হেঁপো রুগী। সরোজবাবু ওষুধ খাওয়াচ্ছেন।
    বলেন-- তোমরা কি বুঝবে? কোন দিন চাষীর দু:খ বুঝেছ? তার জন্যে কেঁদেছ? আমি একবার তিনদিন ধরে কেঁদেছি। কানু সাতদিন
    ধরে গড়াগড়ি দিয়ে কেঁদেছে। এসব খালি বই পড়ে , কমুনিস্ট ম্যানিফেস্টো পড়ে হয় না। ওদের জীবনের সঙ্গী হতে হবে। ওদের
    লংকাপোড়া-পান্তাভাত খেতে হবে। হো চি-মিন হ্যানয়ের রাস্তায় একসময় রিকশা চালিয়েছিলেন। তোমরা স্বপ্নবিলাসী ছেলেছোকরার দল কি
    বুঝবে?
    বুঝলি, টেবিলের ওপর অনেকগুলি মাওব্যাজ রাখাছিল। আমরা টেবিল ঘেঁষে ঢুকেছিলাম আর তেমনি করেই বেরুলাম। মিটিং আদ্দেক
    চলতেই টেবিল ফাঁকা।
    এদিকে ঢাকুরিয়ার রামচন্দ্র হাইস্কুলে একটা ছাষন-যুব সম্মেলন হল। নখালদের। সবার কি উৎসাহ! কারণ তাতে উত্তরবঙ্গ অর্থাৎ
    শিলিগুড়ি(মানে প্রায় নকশালবাড়ি:)) থেকে কিছু যুব-ছাষন আসছে। বিশেষ করে শোনা যাঐচ্ছেল নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের রিসার্চ স্কলার
    কিষেণলাল চাটুজ্জে , ইংরেজির দিলীপ বাগচী ও পবিষনপাণি সাহার কথা।
    সম্মেলন শুরু হতেই দেখা গেল স্পষ্ট দুটো ভাগ।
    একদিকে সিপিএম থেকে বিতাড়িত প্রাক্তন বয়স্ক ছাষননেতারা। যেমন আজিজুল হক, দিলীপ পাইন ও বীরেশ। আর একদিকে নতুন
    প্রজন্মের ছাষননেতারা । প্রেসিডেন্সির অসীম চাটুজ্জে, দ্বীপাঞ্জন রায়চৌধুরি, বঙ্গবাসীর অচিন্ত্য গুপ্ত এঁরা।
    আসলে নতুন ও পুরোনোর ক্ষমতা দখলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব। কিন্তু সম্মেলনে সেটা বাইরের রং ধরালো বিরাট ইন্টেলেখুয়াল ডিবেটের
    চেহারায়। সেটা কি? ভারত-রাষ্ট্রের শ্রেণী চরিষন কি? আধা-উপনিবেশ ? নাকি ন-উপনিবেশ ? সেমি -কলোনিয়াল , নাকি নিও -
    কলোনিয়াল?
    সবাই বুঝলো এ হচ্ছে ""পাষনাধার কি তৈল? নাকি তৈলাধার কি পাষন""?
    একবার এক বক্তা এসে নানা ডাটা -ফাটা দিয়ে ঝাড়ে এটা সেমি? তারপর আরেকন আজিজুলের পক্ষ নিয়ে বলে না , এটা নিও।
    হুগলির প্রতিনিধি ডেস্কে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। তিনঘন্টা ঘুমিয়ে নিয়ে উঠে দু"মিনিট বক্তিমে শুনে বল্লেন --- উ: , এখনও সেই
    নিও- আর সেমি-? সেমি- আর নিও-?
    তারপর ফের ঘুমিয়ে পড়লেন।
    শেষকালে উত্তর্বঙ্গ থেকে বল্লম ও তীর বেঁধা আহত (সাম্রাজ্যাবাদী) বাঘের পোস্টার নিয়ে আসা দলটির নেতা কিসেন চাটুজ্জে ক্ষেপে
    গিয়ে বল্লেন -- হচ্ছেট! কি? কোলকাতা দেখছি খালি আঁতলেমির জায়গা। আগামী ধানকাটার মরসুমে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর কথা কেউ
    বলছেনা। আরে, লড়াইয়ের ময়দানে নাম। রাষ্ট্রযন্ত্রকে আঘাত কর । ওরা পাল্টা আঘাত করবে। সংপঘর্ষের রাস্তায় চলতে চলতে স্পষ্ট হবে
    নিও কি সেমি-কলোনিয়াল!
    তা না, এখানে খালি কে অসীমের ছেলে , আর কে আজিজুলের! ধুত্তোর!
    এর কদিন পর প্রেসিডেন্সির কন্সোলিডেশনের কয়েকজন কোলকাতা ছেড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা-গোপীবল্লভপুর এলাকায়
    ক্ষেতমজুরের সঙ্গে বাঁধ তৈরির কাজে মাটিকোপানোর লেবর হিসেবে এϾট্র নিয়ে সংগঠন গড়ার চেষ্টা করতে লাগলো। এদের মধ্যে
    নববিবাহিত অতি -উ&#৯৫৬;চঐশঐক্ষত এক দম্পতী রাষেন সুবর্ণরেখার তীরে চাঁদ ওঠায় "" আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে"" গেয়ে ফেলে
    ঝটপট কোলকাতায় ফিরে আসতে বাধ্য হলেন।
    কিন্তু শহর কোলকাতায় তখন নকশালদের বাজারদর কানাকড়িও নয়।
    গড়িয়া কলেজের যাদবচন্দ্র ফুট কাটলো -- নকশালরা বিপ্লব কইরবো কইর্যা যে রাইফেলগুলি জুগাড় করছিলো সেইগুলি দিয়া এখন
    পুঁটিমাছ ধর তে আছে।
    এমন সময় চারটে ঘটনা ঘটলো -- দুটো বিদেশে, দুটো ভারতবর্ষে।
    একটা বলিভিয়ার জঙ্গলে,-চে" গুয়েভারা ধরা পড়লেন। আর একটা প্রাগে , ডুবচেক সরকারকে উৎখাৎ করতে রাশিয়ান ট্যাংক প্রাগে
    ঢুকলো।
    ভারতের ঘটনা দুটো কেরালার পালঘাটের জঙ্গলে আর কোলকাতার রাইটার্স এ। (চলবে)
    ""অথ নকশাল-বধ কথা""
    ---------------------------
    (১২)
    প্রথমে চেকোস্লোভাকিয়া ।"" ১৯৬৮তে প্রাগে নতুন বসন্ত, মুক্ত বাতাস-"" - এইসব বলে পশ্চিমী দুনিয়ার প্রেস খুব হইচই করেছিলো।
    জনপ্রিয় নির্বাচিত আলেকজান্ডার ডুবচেক এর কমুনিসণট সরকার একের পর এক ""সংস্কার"" , আর্থিক এবং রাজনৈতিক , শুরু করে
    ওয়ারশ" চুক্তির অধীন চেকোস্লোভাকিয়ায় লৌহযবনিকায় ড্রিল দিয়ে একের পর এক ছ্যাঁদা করছিলো। প্রায় দুই দশক পরে খোদ রাশিয়ায়
    গর্বাচেভের কায়দায়।
    তো রাশিয়ান ট্যাংক প্রাগের রাস্তায় গড়গড়িয়ে ঢুকে ডুবচেককে নামিয়ে পাপেট স্লবোদা কে গদিতে বসাল। বামপন্থীরা দ্বিধাগ্রস্ত। সিপিএম
    থেকে শুরু করে সবাই রুশ কমুনিস্টদের মৃদু সমালোচনা করেও ওদের সরকারী ভাষ্য , অর্থাৎ এর পিছনে সি আই এ ইত্যাদি বাঁধাবুলি ই
    কপচালো। সাময়িকভাবে চেক দুনিয়ায় বা, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে চোখপাকিয়ে ভয় দেখানো গেল বটে । কিন্তু ক"দিন? "" বকরী
    কী আম্মা, কব তক খের মনাওগে?"" ( ওগো পাঁঠার মা, তোমার সুখের দিন ফুরিয়ে এল বলে!)
    দুই দশক পরে খোদ রাশিয়ায় গ্লাসনস্ত-পেরে¯Øষনকার ঠ্যালায় চেক আর স্লোভাক দুটো আলাদা রাষ্ট্র হল, বিখ্যাত লেখক মিলান কুন্দেরা
    একটার প্রেসিডেন্ট হলেন। জার্মানীতে বার্লিন ওয়াল ভেঙে পড়ল । রুমানিয়ায় চাওসেস্কু বলতে গেলে নির্বংশ হলেন। আর খোদ
    সোভিয়েৎ রাশিয়া ভেঙে খান খান হয়ে গেল।
    আসলে সব সরকারই ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য অসন্তুষ্ট পাব্লিককে ""দেশ বিপন্ন"" বলে ভয় দেখায়।
    সত্তরের দশকে ""চেতনা"" নামে নাটকের দলটি ""মারীচ সংবাদ"" বলে একটি নাটক করে, যা সুপার -ডুপার হিট হয়। কোলকাতা স্টেজে
    প্রথম ব্রেখটিয় আংগিকের সফল প্রয়োগ। তাতে "" চাপের মহিমা"" বলে একটা কোরাসের গানে বলা হয়েছে সবচেয়ে কঠিন চাপ হল
    দেশপ্রেমের চাপ।
    ""মা- মাটি-মানুষ"" স্লোগানের রকমফেরে যুগে যুগে দেশে দেশে মানুষকে ইমোশনলি ব্ল্যাকমেল করা হয়। শাসকেরা দাবার চাল চালে,
    কোলাকুলি করে, ডিনার খায় আর দুইদেশের "" ভফশষক্ষতশঢ় ততক্ষলভনড় দরততড়ব থঁ শভফবঢ়"".
    চীন তিব্বত আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদী চষন²¡ন্ত দেখে, ভারত কাশ্মীরে পাকিস্তানি চষন²¡ন্ত দেখে। পাকিস্তান পাখতুনিস্তান , বেলুচিস্তান
    আন্দোলনের পেছনে ভারতের জুজু দেখায় , বার্মা সু-চি কে বিদেশি চষন²¡ন্তের এজেন্ট বলে নজরবন্দ করে রাখে।
    আমেরিকা যষনতষন লাদেনকে দেখতে পায়, সদ্দাম হুসেনের ইরাকে
    বিশ্বজোড়া সার্বিক ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের গল্প বেচেছিলো।
    তখন চীন -আলবেনিয়া-রোমানিয়া এরা রাশিয়ার সমালোচনা করেছিলো এইভাবে।
    হবেনা? যেমন মা", তেমনি ছা"। আমড়া গাছে কি আম হয়? তোরা আগেই সমাজবাদের বিশুদ্ধ আগমার্কা রাস্তা ছেড়ে গলি ঘুঁজি ধরেছিস,
    তোদের শিক্ষায় এই চ্যাংড়া গুলো আর কি করবে? তোরা আবার চেকস্লোভাকিয়াকে বলার কে? আমেরিকা পুরনো ধরনের সাম্রাজ্যবাদী।
    তোরা হলি নতুন ধরনের-- সোশ্যাল ইম্পিরিয়ালিস্ট ,সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী। অ্যাই , ট্যাংক ফের্ৎ নে"।
    নকশালরা চীনের সুরে সুর মেলালো। অর্‌থ্‌ৎ এটা দুই একদা মহান সমাজবাদী , বর্তমানে বখে যাওয়া দুই ""সংশোধনবাদী"" ( এটার মানে
    জিগ্যেস করবেন না, এটা কমুনিস্ট দুনিয়ায় একে- অপরক্বে দেয়া সবচেয়ে খারাপ গালাগাল। )
    এর বছরখানেক পরে সাইবেরিয়া বর্ডারে উসুরি নদীর মাঝে একটা ছোট দ্বীপ নিয়ে ( যার চীনের দেয়া নাম চেনপাও আইল্যান্ড, আর
    রুশীদের দেয়া আরেকটা সাইবেরিয়ান নাম) দু"দেশের লাল ফৌজ রক্ত ঝরাল।
    ত্‌ৎকালীন রুশ কবি ইয়েভতুশেংকো কবিতা লিখলেন-- "" মা তার জন্যে ক্ষেতের থেকে শসা তুলেছিলেন, ছেলে তার শুয়ে আছে উসুরি
    নদীর তীরে শান্ত তুষারে""।
    পশ্চিমী দুনিয়া যেন জ্যাকপট জিতলো।
    তৃতীয় বিশ্বে সমাজবাদের স্বপ্ন দেখা মানুষ ভেতরে ভেতরে ভাঙতে লাগলো। কোথায় যেন ঘুণ ধরেছে।
    নকশালদের ""দেশব্রতী "" পষিনকার পূজোসংখ্যায় পদ্য ছাপা হল। নমুনা ঐদঐচ্ছে:
    "" শোধনবাদের দুই কুকুরে ঝগড়া করে চেকে,
    মুখোস দিয়ে মুখটারে আর যায় না ঢাকা রেখে।
    কে যে সতী, কে অসতী ? যাচ্ছে না তা বোঝা,
    মার্কিনে আর বিলেতে তার চলছে সাক্ষী খোঁজা।
    কে যে আগে প্রেম দিয়েছে, কে দিয়েছে দেহ?
    তাই নিয়ে আজ সতীপাড়ায় এ-ওকে সন্দেহ।
    সতীপাড়ায় কী করে আর ৎমুখ দেখাব, দিদি ?
    চেকভূমিতে পাঠিয়েছি তাই সৈন্য প্রতিনিধি।
    পাঠিয়েছি ট্যাংক-বোমা আর আর্সেনিকের শিশি,
    মিটলে খেউড় সব সতীতে ঘষবো দাঁতে মিশি। "" ( চলবে)
    ""অথ নখাল বধ পালা""
    -----------------------------
    (১৪)
    হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইতিমধ্যে একটা ঘটনা ঘটে গেছে।
    বিশ্ব জুড়ে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখা এক চির তরুণ বলিভিয়ার জঙ্গলে ধরা পড়লেন। সি আই য়ের খুঁটির জোরে টিকে থাকা বারিয়েন্তোস
    সরকার চিনতে পারলো যে উনি আর কেউ নন,-- স্বয়ং চে গুয়েভারা । যদ্দূর শোনা যায় টর্চারের পর চেয়ারের পায়ার সঙ্গে বেঁধে তার
    শরীরটা মেশিনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়।
    এ নিয়ে এখানে বিশদ কিছু বলছিনে। কারণ আপনারা অনেকেই "" মোটরসাইকেল ডায়েরি"" বইটা পড়েছেন বা সিনেমাটা দেখেছেন।
    আরো অনেকে চে গুয়েভারার পরবর্তী ডায়েরি, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে ওনার চাঁচাছোলা বক্তব্য পড়েছেন।
    আমি খালি বলতে চাইছি চে"র মৃত্যু সত্তরের দশকের তরুণ প্রজন্মকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়েছিল। শুধু কোলকাতায় নয়, বঙ্গে নয়, সারা
    ভারতে এবং দুনিয়াজুড়ে।
    প্রশ্ন উঠলো গোটা কয়েক সাথী নিয়ে কিউবা"র গ্রানাদা প্রাসাদ আষন²মণ করে বাতিস্তা সরকারের হাত থেকে ক্ষমতা দখলের মডেল কি
    ব্যতিষন²মী , না লাতিন আমেরিকা"র বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রাসংগিক এবং রেপ্লিকেবল?
    চে কেন ধরা পড়লেন? প্রশ্ন উঠেছিলো ওনার জঙ্গলের ভ্রাম্যমাণ জীবনে এক রুশী মহিলা সঙ্গীর ভূমিকা নিয়ে।
    নকশালরা সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস করে বসলো -- ওপই রুশী মহিলাই ধরিয়ে দিয়েছে। ওদের তো এটাই চরিষন।
    যেমন একটা সময়ে সব শিখই খালিস্তানী। আবার আজকাল দাড়ি থাকলেই জেহাদী , সন্ত্রাসবাদী।
    ধরা পড়লেন এক ফরাসী বুদ্ধিজীবী --- রেজি দ্যেব্রে । উনি একটা বইও লিখেছেন-- ""ছন্‌ৎষরয়ঢ়ভষশ ঠভঢ়বভশ ছন্‌ৎষরয়ঢ়ভষশ"".
    যা হয় , কিছু দিন পরে দ্যেব্রে ছাড়া পেলেন। সময়ের সাথে সবকিছুই বদলায়। ওনার রাজনৈতিক বিশ্বাসেও চিড় ধরলো। একসময় উনি
    ফ্রান্সে দক্ষিণপন্থী সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রী হলেন।
    যদ্দূর মনে পড়ছে ১৯৮৮তে যখন সত্যজিৎ রায়কে লেজিয়ঁ দ্য অনর দেয়া হল তখন ন্যাশনাল লাইব্রেরি লনে ওনাকে সেই সম্মান -পদক
    দিতে পারি থেকে ফরাসি সরকারের যে প্রতিনিধি উড়ে এলেন তাঁর নাম রেজি দ্যেব্রে।
    এবার নখালদের মধ্যে একটা বিতর্ক উঠলো যে শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে রণনীতি কি হবে? মাওয়ের পাহাড়ে ঘাঁটি
    গেড়ে লাল এলাকা বাড়িয়ে তোলা ? নাকি চে"র ছোট ছোট ভ্রাম্যমণ গেরিলা ব্যান্ড?
    অবিশ্যি চে" এবং মাও --দুজনেই মনে করতেন আমেরিকা , ইউরোপ ও জাপান হল বিশ্বের শহর, আর এশিয়া-আফ্রিকা-লাতিন আমেরিকা
    হল বিশ্বের গ্রামাঞ্চল।
    এখানে জনান্তিকে বলে রাখি -- নকশালরা সরকারী ভাবে মাওয়ের মডেলকে সঠিক আর চে"র মডেলকে রোমান্টিক বল্লেও কার্যত:
    ওদের উজ্বল দিনে চারু মজুমদারের নেতৃত্বে চেতনে বা অবচেতনে চে"র বিকেন্দ্রীকৃত ছোট ছোট রোভিং গেরিলা ব্যন্ডের মডেলকেই
    অনুসরণ করেছিলো।
    এবার বলি দেশের দুটো তাৎপর্য্যপূর্ণ ঘটনা নিয়ে।
    এক, কেরালায় বাপ-মা-মেয়ের গেরিলা স্কোয়াড মিলে পুলিশের ওপর হামলা!
    দুই, বঙ্গদেশে প্রথম অ-কংগ্রেসি যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন ।
    ইতিমধ্যে পাব্লিকের কলেক্টিভ চেতনায় নখালদের মার্জিনে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
    গড়িয়ার দীনবন্ধু এন্ড্রুজ কলেজের যাদব বল্লো- "" নকশালরা বিপ্লব কইর্বো বইল্যা যেসব রাইফেল আর গাদা বন্দুক জোগাড় করছিলো ,
    হেইগুলান দিয়া এখন পুঁটিমাছ ধইরতে আছে, নইলে জং লাইগ্যা যাইবো।""
    তখন নকশাল মানে কাঁধে ঝোলা নিয়ে আর কিছু চোথাপত্তর নিয়ে পাগলের মত ঘুরে বেড়ানো কিছু যুবক। যারা যেখানে সেখানে
    স্যলভেশন আর্মির মত লোক জড়ো করে বোঝাতে থাকে যে মুঢ় জীব! জেগে ওঠো। তোমার চারদিকে কি বিপদ বুঝতে পারছো না?
    ক্যারিয়ার করছো? বান্ধবীকে বোটানিক্যাল গার্ডেন বা জাহাজ দেখাচ্ছে!? সিনেমা দেখছো? দাঁত ক্যালাচ্ছে!?
    সবাই হাসে। বলে এভাবে দেড়ফুট --দেড়ফুট করে বিপ্লব এগুবে না।
    ব্যর্থ মনোরথ, ফ্রাস্টু ছেলের দলকে তাদের নেতা বোঝান--- "" যে তোরে পাগল বলে, তুই তারে বলিসনে কিছু। আজ যে তোরে পাগল
    ভেবে অঙ্গেতে তোর ধূলো দেবে , কাল প্রাতে সে মালা নিয়ে আসবে রে তোর পিছু-পিছু। ""
    এইরকম এক মেঘলা মনখারাপকরা সকালে শহর কোলকাতা চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে প্রভাতী খবরের কাগজ খুলে স্তব্ধ হয়ে গেল।
    কেরালায় পালঘাট পর্বতমালার কাছে উইনাদ বলে জায়গাটার ওয়ার্লেস স্টেশনে পাহারাদার সিপাহীটি অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারিয়েছে।
    আষন²মণকারী দলটির নেতা হলেন জনৈক স্কুল- শিক্ষক কুন্নিক্কল নারায়ন্নন । সঙ্গে ছিলেন Øষনী মন্দাকিনী ও আঠেরো বছরের অজিতা
    নারায়ন্নন। সবাই শিগ্গির ধরা পড়লেন।
    দেখা গেল এঁরা ভারতের অল ইন্ডিয়া কো-অর্ডিনেশন কমিটির থেকে স্বতন্ত্র এক নখাল গোষ্ঠী।
    বন্দী অবস্থায় খোলা ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হল এই অদ্ভূত পরিবারটিকে। শ্যামলা জীনস পরা মেয়েটার অপমানিত, কিন্তু দৃঢ় মুখশ্রী
    টিন-এজার হবু বিপ্লবীদের বুকে এক ব্যথাভরা তরঙ্গ তুললো।
    সবাই অবাক, মেয়েটা বছর দুই পরে ছাড়া পেল। বাবা-মা জেলেই মারা গেলেন। কোন এক পষিনকায় সচিষন ইন্টার্ভিউ এ দেখলাম ---
    আজ প্রৌঢ় অজিতা বিয়ে- থা করে দিব্যি ছানাপোনা নিয়ে সংসার করছে, সে এখন আর হিংসায় বিশ্বাসী নয়।
    সে তো বুঝলুম, কিন্তু সেই নিহত গরীব সেপাইটি?
    "" হায় ব্রাহ্মণ! তুমি আজ এক অভ্যাস ত্যাগ করিয়া নুতন অভ্যাস গ্রহণ করিয়াছ, কিন্তু --"" ?
    (চলবে)
    অথ নকশাল-বধ কথা""
    ------------------------------ (১৪-ক)
    "" স্কুল-কলেজে খিল, রাস্তায় মিছিল।
    ষন²É¡কারের শব্দে কাঁপে রাজপথ , কিনুগোয়ালার গলি;
    হীরের টুকরো ছেলেরা সব অশ্বমেধের বলি।
    বারুদগন্ধ বুকে নিয়ে আকাশে ওঠে জ্যোৎস্না ,
    ময়লা হাতে ওকে যেন ছোঁস্না।
    ওরে মন,
    পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন।অ। ""
    "" আপনজন "" সিনেমার পোস্টারে পুর্ণেন্দু পষনীর এই কবিতাটি মনে হয় ৬৭-৬৮"র কোলকাতার যুবসমাজের ছবিকে অনেকটা ধরতে
    পেরেছে।
    কিন্তু তার আগে একটা ঘটনা । বঙ্গের প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের ( যদ্দূর মনে পড়ে নভেম্বর ১৯৬৭তে) পতন হইল।
    ব্যাপারটা এইরকম।
    দুই কমিউনিস্ট পার্টির খেয়োখেয়িতে দুটো আলাদা ফ্রন্ট হওয়ায় ( ইউনাইটেড ও প্রগ্রেসিভ ) বামেরা বাস্তবিক শক্তি ও প্রত্যাশার
    অনুপাতে অনেক কম সীট পেয়েছিলো। ফলে মুখ্যমন্ত্রী হলেন বাংলা কংগ্রেসের অজয় মুখুজ্জে , ঐ দলেরই খাদ্যমন্ত্রী --- ড: প্রফুল্ল ঘোষ(
    : বিধান রায় মন্ত্রীসভার খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে বাঙালীর মনে ওনার ভাবমূর্তি ছিলো এইরকম;---অকৃতদার, অনেস্ট, অন্যায়ের সঙ্গে
    সমঝোতা করেন না, ইত্যাদি, ইত্যাদি। )
    জ্যোতি বসু ছিলেন গৃহমন্ত্রী।
    শরিকী সংঘর্ষ (মূলত: আর এস পি"র সঙ্গে) এবং আইন শৃংখলার প্রশ্নে ইন্দিরা কলকাঠি নাড়লেন। রাজ্যপাল ধর্মবীর পুতুলের মতন
    নড়লেন। যুক্তফ্রন্ট সরকার বরখাস্ত হয়ে দলছুট প্রফুল্ল ঘোষ , হুমায়ুন কবীর এদের কয়েকজনকে নিয়ে দৃষ্টিকটু ভাবে এক মাইনরিটি
    কেয়ারটেকার সরকার খাড়া করা হল।
    এব্যাপারে ইন্দিরাজীর পঞ্চাশের দশকে কেরালায় নাম্বুদ্রি সরকারকে বরখাস্ত করার চম্‌ৎকার রেকর্ড ছিলই। (চলবে)
    অথ নকশাল-বধ কথা:
    -------------------------------(১৪-খ)
    ফাঁপরে পড়লো নকশাল- তাঙ্কিÄকরা । ওরা অ্যাদ্দিন ধরে বলে আসছিল কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার বঙ্গীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ফেলে দেবে
    না। কারণ দুই সরকারই নাকি একই শ্রেণীর স্বার্থরক্ষা করে। নকশালবাড়ির ঘটনায় এটা নাকি তর্কাতীত ভাবে প্রমাণিত যে বামপন্থী
    সরকার আসলে জোতদার-মজুতদারদের সাহায্য করছে। আইনি-পথ কোর্ট -কাচারীর কথা বলে গরীব-গুর্বোদের পেছনে বাঁশ দিচ্ছে।
    কখনও ছাষনদের ওপর পুলিশ লাঠি ও টিয়ারগ্যাসের শেল নিয়ে হামলা করেছে, তো প্রেসিডেন্সীর অসীম চাটুজ্জের নির্দেশে কিছু ছেলে
    লালবাজারের মুখে প্রদর্শন করলো। বল্লো- গুলিতে একজন মারা গেছে, আরেকজন হাসপাতালে।
    অফিস-ফেরত করণিকেরা বিরক্ত হয়ে বল্লেন - এইসব চ্যাংড়াদের নর্তন-কোদনের ফলে সি আর পি - মিলিটারি নামবে। দিল্লি সরকার
    রাষ্ট্রপতি-শাসন জারি করার সুযোগ পাবে।
    খবর এলো -- কেউ মরে নি। ( আসলে গুলি চলেই নি,)।
    কাকা(অসীম ) বল্লেন-- তো কি হয়েছে? কেউ মরলে কি খুশি হতিস?
    যাকগে, যখন সরকার পতনের খবর এলো নক্সালেরা মনে করলেন এইবার রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ তীব্র করা যেতে পারে। তাতে
    গ্রাসরুট লেভেলে সিপিএম এর ছেলেদের সাথে ব্যবহারিক যুক্তফ্রন্ট করা যেতে পারে।
    লক্ষ্য হবে অজয়-জ্যোতিবাবুদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের সীমায় আটকে না থেকে জঙ্গী আন্দোলনে যাওয়া। যেন স্বাধীনতা আন্দোলনে
    কংগ্রেস ও যুগান্তর-অনুশীলন দলের সমান্তরাল ভাগীদারী।
    এবার বাম নেতারা শুরু করলেন আইন-অমান্য আন্দোলন। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের সামনে মিছিল করে স্লোগান দিতে দিতে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে
    গ্রেফতার হওয়া। একদিন রাজনৈতিক দলের-- জ্যোতিবাবু-অজয় মুখুজ্জে -বিশ্বনাথ মুখুজ্জে এরা কারাবরণ করলেন। দ্বিতীয় দিন মহিলা
    দিবস --- কনক মুখুজ্জে, গীতা মুখুজ্জে , এস ইউ সি র প্রতিভা এরা জেলে গেলেন। তৃতীয়দিন ছাষন-যুব দিবস। পুলিস উত্তাল
    ক্যালালো। কাজল রায় বলে এক ছাষনকে চারজন পুলিস তুলে তুলে রাস্তায় আছড়াতে লাগলো, আর লাঠি পেটা। রক্তগঙ্গা বইলো, কোন
    মতে হাসপাতাল থেকে বেঁচে ফিরলো।
    তারপর কয়েক বছর ধরে ও দেয়াল পোস্টারে পুলিশি অত্যাচারের আইকন হয়ে রইলো। সেই গুজরাত দাঙ্গায় আনসারির মত।
    ইতিমধ্যে খবর পেলাম আমার বন্ধু বঙ্গবাসীর রঘু , আজকের সাংবাদিক- লেখক- ও চর্চাপদ প্রকাশনীর মালিক রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়
    আইন অমান্য আন্দোলনে জ্যোতিবাবুদের মিছিলে গিয়ে নিরিমিষ কারাবরণ করেছেন।
    সেকি? হৃদয় পরিবর্তন? যা`: , রঘুর আর ""বিপ্লবী"" হওয়া হল না। (চলবে)
    ""অথ নখাল-বধ পালা""
    ----------------------------
    (১৬)
    সে যাই হোক প্রফুল্ল ঘোষ -হুমায়ুন কবীরের সরকার (বাংলা কংগ্রেসের দলত্যাগীদের নিয়ে) সাত-আটমাসের বেশি চললো না।
    বামপন্থীদের আন্দোলনের দুটো শ্লোগান--- "" ঘোষ-কবীরের আরেক নাম, বেইমান-শয়তান "" আর "" ধর্মবীর বাংলা ছোড়"" লোকের
    মুখে মুখে ছড়িয়ে গেল।
    প্রখ্যাত কবি ও সাংবাদিক সমর সেন "" নাউ "" বলে ইংরেজি পাক্ষিক পষিনকাটি সম্পাদনা করতেন। তখন ইংরেজিনবীশ কোলকাতার
    বাঙালী বুদ্ধিজীবিরা ওপই পষিনকায় লিখতেন।
    অর্থনীতিবিদ অশোক মিষন , নাট্যকার -পরিচালক উৎপল দত্ত সবাই ছিলেন ওখানে।
    কিন্তু পষিনকাটির মালিক ছিলেন হুমায়ুন কবীর।
    ফলে ওপই সময় হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে লেখা সমর সেনের পক্ষে সম্ভব হঐচ্ছেল না।
    তাই নিজস্ব লেখকগোষ্ঠী নিয়ে সমর সেন ""নাউ"" ছেড়ে বেরিয়ে এসে শুরু করলেন ""ফ্রন্টিয়ার ""। বাসে-ট্রামে হ্যান্ডবিল বিলির মধ্যে দিয়ে
    প্রচার শুরু হল।
    তখন সমর সেন আমাদের চোখে ছিলেন "কাল্ট ফিগার""। "মৈমনসিংহ গীতিকা""র সংগ্রাহক ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য
    দীনেশ চন্দ্র সেন এর নাতি ও সিটি কলেজের প্রিন্সিপাল অরুণ সেনের ছেলে। ইংরেজি সাহিত্যে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েও বিয়ের
    যৌতুকের টাকায় অকসফোর্ডে পড়তে যাবার প্রস্তাব শুনে অনায়াসে দাদুকে বলে দিয়েছেন ---""পুরুষাঙ্গ বাঁধা দিয়ে পড়তে যাব না।""
    বাংলা কবিতায় দিকবদলের চারজন মেজর কবির মধ্যে একজন হয়েও হ`টাৎ কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছেন। রাশি গিয়ে তলস্তয় ও আরও
    কিছু সাহিত্যকর্মের চম্‌ৎকার সব বাংলা অনুবাদ করে আবার কোলকাতায় ফিরে সম্পাদনার কাজ করছিলেন।
    অল্পদিনেই সমস্ত ""নাউ "" এর পাঠক ""ফ্রন্টিয়ার"" এর পাঠক হয়ে পড়ল। ""নাউ "" পষিনকা বন্ধ হয়ে গেল।
    তবে নকশাল আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে সমর সেন খোলাখুলি ওপই আন্দোলনের সমর্থনে এবং সিপিএম আদি মূলধারার বিরুদ্ধে
    লিখে অনেক বন্ধু ও পাঠক হারালেন।
    মারা গেলেন চরম দারিদ্‌র্‌য ও কষ্টের মধ্যে, কিন্তু কোন আপোষ করেন নি।
    ফ্রন্টিয়ার পাক্ষিক আজও প্রকাশিত হয় সেই স্কট লেনের গলি থেকে, তিমির বসু"র সুযোগ্য সম্পাদনায়।
    বর্তমান সমাজ-সাহিত্য -সংস্কৃতির প্রতি এক ষিন²টিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা স্বাদু প্রবন্ধগুলি যেন ছোট আকারে কোলকাতার উঙঠ।
    এল রাষ্ট্রপতি শাসন।
    এদিকে ইন্দিরা পুরোনো কংগ্রেসি যেমন নিজলিঙ্গাপ্পা আদিদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে তরুণ তুর্কিদের( অর্জুন অরোরা, মোহন ধারিয়া,
    চন্দ্রশেখর, কৃষ্ণকান্ত) নিয়ে কংগ্রেস (আই) গঠন করে কংগ্রেস (ও ) দের সঙ্গে পাঞ্জা কষার খেলায় মেতেছেন।
    ১৯৬৯ এ একটা সাধারণ নির্বাচন আসন্নপ্রায়। কারণ অধিকাংশ রাজ্যে অ-কংগ্রেসি জোট সরকারগুলো নিজেদের মধ্যে খেয়োখেয়ি ও
    দিল্লির চালে কুপোকাৎ।
    এই অবস্থায় পাড়া স্তরে বহুজায়গায় সিপিএম নখাল দের ক্যাডাররা একসঙ্গে যুব কংগ্রেসের ক্যাডারবাহিনীর মোকাবিলা করছে।
    নকশালদের মধ্যে তখন দশটা গ্রুপ। সবাই একটা করে মুখপষন আর দলিল বার করছে। বিতর্কের বিষয় হল--- সামন্ততন্ত্র প্রধান শষনু না
    সাম্রাজ্যবাদ ?
    চেকোস্লোভাকিয়া আষন²মণের পর সোভিয়েত রাশিয়া ন -সাম্রাজ্যবাদ হয়েছে কি হয় নি? নির্বাচন বহিষ্কার রণনীতি না রণকৌশল?
    সশØষন সংগ্রাম আর গণ আন্দোলনের সম্পর্ক কি হবে?
    আজকাল ওপই সব বিতর্ক ""টুইডল ডম ,না টুইডল ডি ?"" এইরকম মনে হয়।
    ইতিমধ্যে অনেক লোকজন অ্যারেস্ট হল, সিপিএম-নকশাল দুদিকেই। ফলে অল্পদিনের জন্যে হলেও নকশল ছেলেদের সিপিএম কে
    বুর্জোয়ার পোষা দালাল বলা বা সিপিএম এর নকশালদের সি আই এর এজেন্ট প্রোভোকেচার বলা একটু কমল।
    মৌলানা আজাদ কলেজের কেমিস্ট্রি অনার্সের বাঘা ছাষন নবারুণ রায় , বঙ্গবাসীর অচিন্ত্য গুপ্ত ( আজকাল একটি অখাদ্য উপন্যাস লিখেছে
    , নিজের অগুনতি প্রেমের জোলো আখ্যান) ও আরও অনেকে কুখ্যাত পিডি অ্যাক্টে গ্রেফতার হল।
    জানলাম ওরা পিডি(এ) তে রাজনৈতিক বন্দীর স্ট্যাটাস পেয়ে ভালই ছিল। খাওয়াদাওয়া , সিগ্রেট ও মাসিক ভাতা সবই পেত।
    উৎপল দত্ত গ্রেফতার হলেন। জেলের ভেতর দাবাখেলা, নাটকের রিহার্সাল ( বিশেষ করে ওনার লেখা জনপ্রিয় ""কঙ্গোর কারাগারে "" ),
    রাজনীতির ক্লাস এইসব সংগঠিত করে উনি তরুণদের মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন।
    হটাৎ উনি জেলের বাইরে। কি ব্যাপার ? কানাঘুষোয় শোনা গেল মুচলেকা দিয়েছেন। চারদিকে ছি-ছি পড়েগেল।
    সেই সময় টোয়েন্টিয়েথ সেন্‌হুরি ফক্স পরিবেশিত জেমস আইভরি- ইসমাইল মার্চেন্টের "" দি গুরু"" ফিল্ম রিলিজ হল। মূল ভূমিকায়
    উৎপল দত্ত ও অপর্ণা সেন।
    ব্যস। সিপিএম এর ছেলেরা ফুট কাটল।
    "তীর ছুঁড়বে, বেশ বলেছ, কোথায় তোমার তীরন্দাজ?
    তোমার নেতা উৎপল দত্ত আমেরিকার গোলন্দাজ""।
    এবার উৎপল মিনার্ভায় নামালেন "" মানুষের অধিকারে""। আমেরিকায় নিগ্রোদের ওপর বর্ণবিদ্বেষী অত্যাচার নিয়ে "স্কটস্বরো বয়"" বইয়ের
    আধারে লেখা। ফাটাফাটি প্রোডাকশন । ইহুদি উকিল লিবোভিটজের ভূমিকায় উনি নিজে।
    যেমন বলেছি --তখন নকশালদের দশ রকম উপদল। চিন্তা, সূর্য্য সেন, ভিত্তি, দক্ষিণ দেশ, দেশব্রতী ইত্যাদি,
    একদিন উৎপল সন্ধ্যেয় নাকতলায় এক চায়ের দোকানের পেছনে মোমবাতির আলোয় কিছু ছেলের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন। নিয়ে এলেন
    পুলিশ ইউনিয়নের স্বদেশ মিষন। তখন জানা গেল উনি "সূর্য্য সেন"" উপদলের সঙ্গে যুক্ত। সাদা পাজামা- পাঞ্জাবীতে সতরঞ্জির ওপর বসে
    চায়ের গেলাস ও পানামা সিগারেট অ্যাকসেপ্ট করে আড্ডায় ও বিতর্কে মেতে উঠলেন। দেখা গেল হাঁপানীর বা ইউসোনোফিলিয়ার টান
    আছে।
    কথা বলছিলেন তখন ওঠা এক ন ফ্যাকড়া নিয়ে। মাওয়ের গেরিলা যুদ্ধ বনাম চে গুয়েভারার। অসিত সেনের লেখা এক প্রবন্ধের
    সমালোচনা করছিলেন। যাতে বলা হয়েছিলো যে চে"র রোভিং গেরিলা ব্যান্ডের ""ফোকুইসিমোপইস"" তঙ্কÄ কিউবার মত ছোটদেশেই
    সফল, আর কোথাও নয়। আর রুশঘেঁশা কা®Øষনা দেশে মাও নিষিদ্ধ।
    উৎপল বল্লেন--- বাজে কথা, আমার ঘরে হাভানা প্রকাশিত মাও রচনাবলীর স্প্যানিশ এডিশন আছে , কেউ গিয়ে দেখতে পারেন।
    দুজনের লাইন কমপ্লিমেন্টারি, কোন ভেদ নেই। অমন ব্যক্তিত্বের সামনে ছেলেছোকরারা মুখ খুলতে সাহস পেলো না। উনি যাবার সময়
    ট্যাক্সিভাড়া ওপই বেকার ছোকরাদের থেকে নিয়ে গেলেন। স্বদেশবাবু বোঝালেন -- ওনার পেছনে পুলিশের টিকটিকি আছে, তাই ট্যাক্সি
    করে ওদের ধোঁকা দেয়া হবে।
    একটা আঠেরো বছরের ছোকরা সাহস করে জিগাইলো --- কিন্তু আপনি যে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন শুনছি, অন্যেরা জেলে আছে।
    সত্যি কথাটা কী?
    উৎপল স্বদেশের দিকে তাকালেন।
    স্বদেশ বল্লেন-- এ"ব্যাপারে উনি একটা চট ই বই লিকছেন, তাতে এইসব অপপ্রচারের জবাব দেয়া হবে। উৎপল সকারাত্মক মাথা
    নাড়লেন।
    সে বই আজও বেরোয় নি।
    "" কত রঙ্গ দেখালি খেঁদি ,অম্বলে দিলি আদা""।
    (চলবে)
  • Nina | 64.56.33.254 | ০৫ এপ্রিল ২০১১ ১৯:২০472247
  • রঞ্জন ভাউ
    একেবারে সময় পাচ্ছিনা, অফিসেও কড়াকড়ি--তাই নেট প্রায় খুলি ই না--তবু একটু উঁকি মারতে গিয়ে চোখে পরল----সেই লেখা যেটা কিনা আমরা বর-বউ দুজনে গিলতাম গোগ্রাসে ( খুব কম ই এমন হয় নেটের পরিবেশনায়)
    মনটা তো আনন্দে অস্থির--কিন্তু ভাউ মাঝপথে আবার থেমে গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি---চালান পানসি বেলঘড়িয়া ----:-))

  • kallol | 115.242.183.109 | ০৫ এপ্রিল ২০১১ ২১:৩০472258
  • ক্যাবাৎ। রঞ্জন, মাঝখানে যদি কাটার মতলব করিস, তবে তোরই একদিন কি আমারই। রায়পুরে গিয়ে পিটিয়ে আসবো।
    একটা আবদার আছে। চিন্তা, সূর্য সেন, দক্ষিন দেশ, হাওড়ার বনবিহারীদের গোষ্ঠী, দেশব্রতী, এনএলডিএফ, তোদের কলেজের রাঘব চটুজ্জের দল - এদের চিন্তা ভাবনা নিয়ে দুপয়সা হোক।
    আমি তখন ইস্কুলে। ফলে এদের তর্কগুলো পরে জেনেছি, যখন সেগুলো প্রায় অপ্রাসঙ্গীক হয়ে গেছে। তুই বল, আমরা শুনি।

  • I | 14.99.120.46 | ০৫ এপ্রিল ২০১১ ২৩:১৫472269
  • ব্যাপক হচ্ছে।
    কিন্তু রঞ্জনদা! কুন্দেরা আবার কবে প্রেসিডেন্ট হলেন? আপনি বোধ হয় হাভেল'এর কথা বলতে চেয়েছেন। চেক রিপাবলিকের প্রথম প্রেসিডেন্ট।
  • ranjan roy | 122.161.206.124 | ০৬ এপ্রিল ২০১১ ১০:০৭472280
  • থ্যাংক ইউ, ডাক্তার!
    হ্যাভেল, কুন্দেরা ন'ন।
    যদিও আমার স্মৃতির চিত্রশালায় কালপর্ব এদিক-ওদিক হতে থাকবে, তবু এইধরণের তথ্যবিকৃতির তৎক্ষণাৎ সংশোধন কাম্য।
    কারণ, এগুলো ঐতিহাসিক সত্য, আমার ব্যক্তিগত অনুভবের অংশ নয়।
  • ranjan roy | 122.161.206.124 | ০৬ এপ্রিল ২০১১ ১৮:৫৬472286
  • ১৭)
    না:, কিঞ্চিৎ ক্ষমাপ্রার্থনার সঙ্গে একটু সংশোধন কাম্য।
    সেই যে বলেছিলাম-- কেরালার পালঘাটে অস্টাদশী অজিথা নারায়ন্ননের পুলিশের ওয়ারলেস স্টেশনে হামলা করে পুলিশ মারার অভিযোগে জেলে যাওয়ার কথা। পরে বল্লাম-- আজ উনি ঘরকন্না করা মাঝবয়েসী গিন্নিবান্নি-- হিংসায় বিশ্বাস করেন না।
    মাইরি, এমনি একটি পত্রিকায় পড়েছিলাম। ওনার ছবি ও ইন্টারভিউ শুদ্ধু। কিন্তু ওটি অর্ধসত্য।
    গত ২০০৭ এ রজত গেল কেরালার একটি নামজাদা ইউনিভার্সিটিতে উন্নয়ন/মানবাধিকার এইসব নিয়ে একটি সেমিনারে আমন্ত্রিত হয়ে। সেখানে কলামনিস্ট প্রফুল্ল বিদওয়াইয়ের সঙ্গে খানিকক্ষণ আড্ডা দিয়ে নিজের পেপারটি পড়ে বাইরে লবিতে গিয়ে সিগ্রেট ধরিয়েছে এমন সময় প্রফুল্ল'র একটি চিরকুট পেল।
    -- অজিতা নারায়ন্নণ তোমার সঙ্গে একটু আলাদা করে কথা বলতে চান। উনিও এখানে পেপার পড়তে আমন্ত্রিত।
    তুমি রাজি হলে জানাও, তাহলে উনি ওই লনেই আসছেন।
    --ক্যাবাৎ! আজি কি তোমার মধুর মূরতি--, কে আবার বাজায় বাঁশি-- ইত্যাদি, ইত্যাদি।
    উনি এলেন। চশমা চোখে একটু মোটার দিকে, বিষণ্ন হাসি-- এক প্রৌঢ়া।

    জানালেন উনি আদৌ ঘরের দেউড়ির ওপারে থাকা গৃহবধূ ন'ন। সামাজিক ভাবে অত্যন্ত সক্রিয়,একটি এন জি ও'র সঙ্গে যুক্ত। ওনার সংগঠন কেরালায় special economic zone আনার বিরোধিতা করছে, আন্দোলন-জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
    রজতকে উনি ওনাদের তথ্যসম্বলিত পেপার ইত্যাদি দিলেন। জানালেন ওনাদের মূল আর্গুমেন্ট।
    রজত দেখছিলো-- এক বিদ্রোহী নারীর দেহে মনে সময়ের পদচাপ।
    বললো--সেই ৬৮-৬৯ এ আপনার বাবা-মার সঙ্গে ওই সাহসী কদম কোলকাতায় আমাদের বুকে যা ঢেউ তুলেছিল না----।
    আজকে আপনি সমাজ পরিবর্তনের জন্যে হিংসার প্রয়োজনীয়তায় বিশ্বাস করেন না?
    --কেন?
    -- মানুষের চিন্তা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। সময়ের সঙ্গে বদলায়। থেমে যাওয়ার মানে মৃত্যু।

    রজতের মনে পড়ে সেই ৯০-৯১ এ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তখন বাজেটে নতুন ইকনমিক পলিসি পেশ করছেন। নিয়ন্ত্রণমুক্ত খোলা বাজারের পক্ষে খোলাখুলি ওকালতি করছেন। কথা উঠছে---একদা কেম্ব্রিজ
    স্কুল অফ ইকনমিক্সের বামপন্থী কেইনসিয়ান গোষ্ঠীর( যার মধ্যে অমর্ত্য সেন, জোয়ান রবিনসন, স্রাফা, ক্যালডোর এদের সবাইকে ধরা হয়,)সঙ্গে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করা মনমোহন সিং হের এ কি দশা! সবই কি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মায়া?

    তখন এক মিট দ্য প্রেস প্রোগ্রামে রজত ওনাকে প্রশ্ন করেছিল--- আপনার ব্যক্তিগত বন্ধুদের মধ্যে অনেক বামপন্থী ইকনমিস্ট ও আছেন। আপনার এহেন দিকপরিবর্তনে তাঁরা ব্যথিত, বিমুঢ়।
    মনমোহন স্বভাবসিদ্ধ নীচু আওয়াজে বল্লেন-- মানুষের চিন্তা কি সময়ের সঙ্গে একই জায়গায় থেমে থাকে? পরিবর্তন বেঁচে থাকার নিয়ম।
  • arnab | 223.223.140.198 | ১৪ এপ্রিল ২০১১ ১১:২৯472287
  • কারো কাছে প্রেসি কলেজের 'নস্টালজিয়া' ম্যাগজিনটা থাকলে দেখতে পারেন, বিশেসত কাকা আর রজত্‌কান্ত রায়ের লেখাটা
  • bitongsho | 143.111.80.26 | ১৯ এপ্রিল ২০১১ ০০:৫১472288
  • রঞ্জন বাবু, আপনার বা কল্লোলদার চোখ দিয়ে ঐ সময়কে দেখার লোভ আমার কাছে গুরুর প্রধান আকর্ষণ | আপনারা দুজন, (বাম দান ভুলে গিয়ে) ,আমার ফেভারিট |
    ঐ সময় নিয়ে এর আগেও আপনার লেখা একটা তই ছিল মনে পড়ছে||
    এই লেখা নিয়ে একটা দাবী/অনুরোধ আছে | আমাদের মত পাঠকদের জন্য ( যাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের বোধটা একটু ঘাঁটা, আর যারা এই প্রজন্মের ) সময় টা একটু লিনিয়ার হলে ভাল হয়| ঐতিহাসিক দলিলএর মত চাইছি না, এই ইনফরমাল ব্যাপারটাই লেখাটাকে উপভোগ্য করেছে , কিন্তু সময়টা আরেকটু একরৈখিক হলে আমাদের সুবিধে| যেমন যুক্তফ্রন্টের পতনের ব্যাপারটা|
    আর একটা কথা: আপনার একটা রাজনৈতিক লিনিয়েজ ছিল| মেনস্ট্রিম কমিউনিস্ট পার্টির ভিতর সংশোধনবাদী রাজনীতিকে প্রশ্ন করতে করতে উঠে আসা | আর এইভাবে আলাদা হয়ে যাওয়া| কিন্তু প্রাথমিক রাজনৈতিক শুরুটা হয়েছিল সিপিআই সিপিএমের ছায়ায় | বাবা মায়ের কাছে নকশাল আন্দোলনের গল্প বলতে আমরা শুনেছি, কাতারে কাতারে তরুণ স্বত:স্ফুর্ত ভাবে এসে ভেসে গেল | খটকাটা লাগে- এরা কি সবাই কমিউনিস্ট পার্টির ভেতর থেকে ইভলভ করে অন্তর্দ্বন্দ থেকে বেরিয়ে আসা, না এদের অনেকেরই আগে কোনো রাজৈ্‌নতিক ট্রেনিং ছিল না| হয়ত এদের কথা এখনো আসে নি, তবে যখন সময় আসবে এদের কথা, এদের মতিভেসানের কথাও শুনতে চাই|
  • bitongsho | 143.111.80.26 | ১৯ এপ্রিল ২০১১ ০০:৫৬472226
  • আচ্ছা এই কিশেন বাবুই কি মিটিঙে তাঙ্কিÄক আলোচনার তোয়াক্কা না করে এটা ন্যায় আর ঐ টা অন্যায় বলে শুরু করতেন| আপনি যার কথা লিখেলেন তার সাথে আরেকজনের মিল পেলাম | উনিও নর্থ বেঙ্গল আর ফিসিক্স |
    তবে গোলাতে পারি |
  • kallol | 220.226.209.2 | ১৯ এপ্রিল ২০১১ ১৫:২৫472227
  • বাধ্য হয়ে এখানে পোস্ট করলাম। দু:খিত।
    রঞ্জন - তোকে ফোনে পাচ্ছি না। আমায় তোর নতুন নম্বর মেল কর [email protected]
  • kallol | 220.226.209.2 | ২০ এপ্রিল ২০১১ ১৩:৪৭472228
  • কি রে ভাই! রঞ্জন গেলি কোই???????
  • Bratin | 122.248.183.1 | ২১ এপ্রিল ২০১১ ১৬:৫৬472229
  • রঞ্জন দা আজকে পুরো টা শেষ করলাম। খুব ভালো লাগলো ।
  • Sushanta Kar | 117.198.56.57 | ২৪ এপ্রিল ২০১১ ২২:২৪472230
  • রঞ্জন রায়ের বিষয় : অথ নকশাল-বধ কথা লেখাটা পড়লাম। বেশ ভালো রসিয়ে রসিয়ে লিখেছেন। লেখাটা তথ্য আর
    সুরের জন্যে টানে। পুরো করুন। কিন্তু প্রচন্ড টাইপো আছে। সেগুলো একটু উনি না সামলাতা পারলেও গুরুচন্ডালীর সম্পাদক দেখবেন এই অনুরোধ রইল। আগামী দিনে কিন্তু (মাওবাদী) নয়, নতুন রূপে নকশালদের দেখবে বাংলা তথা ভারত। অনেকটাই নেপালের মাওবাদিদের মতো, মার্ক্সবাদের গনতন্ত্রের সমস্যাটার রহস্য এখন কেউ কেউ গুরুত্ব দিয়েই ভাবছেন। এরা নকশালই। আপনি গোপীবল্লভপুরের বিদ্রোহ আর বিদ্রোহীদের কথা উল্লেখ করলেন না!
  • rokeyaa | 203.110.243.21 | ২০ মে ২০১১ ১৭:০২472231
  • উঠে গ্যালো|
  • ranjan roy | 122.168.229.168 | ২০ মে ২০১১ ১৮:০৮472232
  • ১৮)
    অর্ণবের কথাটি ঠিক। প্রেসিডেন্সি কলেজের ম্যাগাজিনের ওই বিশেষ সংখ্যাটি অসীম চাটুজ্জে(কাকা) ও ঐতিহাসিক/শিক্ষাবিদ রজতকান্ত রায়ের লেখায় সমৃদ্ধ হয়ে কলেক্টরস্‌ ইস্যুর মর্যাদা পেয়েছে। তৎকালীন স্টেটস্‌ম্যানও , সম্ভবত: ক্যালকাটা নোটবুকে এই কমেন্ট করেছিল।
    গুরুতে অনেকেই অর্ণবের মত প্রেসি'র ছাত্র হওয়ার সুবাদে ওই ইস্যুটি জোগাড় করতে পারবেন।

    আবার আসি যুক্তফ্রন্ট ভঙ্গের সময়।
    ১৯৫৭ তে কেরালায় প্রথম কম্যুনিস্ট সরকার ফেলে দেয়ার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ইন্দিরাজী এখন প্রধানমন্ত্রী। নিজলিঙ্গাপ্পা-কামরাজ ইত্যাদি ওল্ড গার্ডদের সামলে কংগ্রেস(ও)কে আঁতুড়েই কোণঠাসা করে হাতমার্কা কংগ্রেসকেই আগমার্কা সিদ্ধ করে ফেলেছেন। উনি উসখুস করতে লাগলেন বঙ্গের বামসরকারকে ল্যাজেগোবরে করতে।
    বামদুর্গে সিঁদ দেবার জন্যে বিভীষণ পেয়ে গেলেন যুক্তফ্রন্টের শরিক বাংলা কংগ্রেসের একাংশকে।
    সুযোগ এল বামমোর্চার দলগুলোর হিংস্র শরিকী সংঘর্ষ থেকে।
    দক্ষিণ বঙ্গে সুন্দরবন এলাকায় এস ইউ সি। ওদের তাঙ্কিÄক প্রবক্তা শিবদাস ঘোষকে ওঁরা প্রচার করতেন "" এশিয়ার লেনিন'' বলে। ওঁরা মাওকে মানতেন না। লেনিনের পরে সোজা কমরেড শিবদাস ঘোষ। উনি কিছু সভায় আগুন ধরানো বক্তব্য রাখতেন, খানিকটা নব্বই দশকের বসপা নেতা কাঁসিরামের স্টাইলে।
    তবে কাঁসিরামের টার্গেট গ্রুপ হল ব্রাহ্মণ-কায়স্থ-বানিয়া ছেড়ে বাকি দলিত বহুজন যারা মনুবাদী সমাজের অন্যায়ের শিকার।
    আর এস ইউ সির হল শ্রমিক ও ক্ষেতমজুর। তাঁরা চাইতেন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, জনগণতান্ত্রিক নয়! বারুইপুর-জয়নগর-সোনারপুরে তখন থেকেই ওদের সংগঠন ছিল।
    ওদের ছাত্র সংগথন ডি এস ও কোলকাতার কিছু কিছু কলেজে ক্ষমতায় নগণ্য হলেও বেশ প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
    কলেজে কিছু নতুন মেয়েরা ওদের দিকে ঝুঁকতো। আমাদের বুক জ্বলে যেত।
    একবার ভিয়েতনাম দিবসে ইউসিস এর সামনে দুই মিছিলে মারামারি লেগে গেল। আজকের তুলনায় নেহাতই নিরিমিষ।
    ডি এস ও সংখ্যালঘু। ওদের ব্যানার, বাঁশের বাতায় তৈরি প্ল্যাকার্ড সব কেড়ে ভেঙে ফেলা হল। কেউ কেউ সামান্য আহত হল।
    ফরওয়ার্ড ব্লক/ আর এস পি এদের উত্তরবঙ্গে কোচবিহার/জলপাইগুড়ি এবং কিছুটা রাঢ়বাংলায় পার্টি সংগঠন
    ছিল। মেদিনীপুরে সিপিআই।
    কিন্তু সিপিএম তখন --
    আমি পিণাকপাণির ডমরু, আমি ধর্মরাজের দন্ড,
    আমি চক্র, মহাশংখ, প্রলয়নাদ প্রচন্ড।

    ফলে লেগে গেল শিয়া-সুন্নী দাঙ্গার মত।
    সাধারণ লোক হতবাক। সমস্ত মন্ত্রীরা আশ্বাস দেন। একে অন্যের মৃদু সমালোচনা করেন। কিন্তু হানাহানি বন্ধ হয় না। কংগ্রেস সমানে দিল্লিতে নালিশ করে আর ধারা ৩৫৬ লাগিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানায়।
    সিপিএম যথারীতি এর মধ্যে পুঁজিবাদী চক্রান্ত, সি আইয়ের কালো হাত ইত্যাদি দেখতে পায়।
  • ranjan roy | 122.175.131.121 | ২৩ জুন ২০১১ ১৮:৩০472233
  • ১৯)
    অবশেষে প্রফুল্ল ঘোষ, হুমায়ুন কবীর প্রমুখ আট জনকে নিয়ে একটি অল্পমতের এবং কেন্দ্রের আশীর্বাদপুষ্ট সরকার তৈরি হল।
    তখন ব্যাপক জনগণের ইচ্ছা যুক্তফ্রন্ট সরকারকে কাজ করার সুযোগ দেয়ার। কংগ্রেসের বি-টিম কেউ চাইছে না।
    প্রফুল্ল ঘোষ ( সেন নয়) মশায়ের ব্যাপারে একটি মিথ ছিল যে উনি খুব অনেস্ট, আর বিধান রায়ের প্রথম মন্ত্রীসভায় উনি খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু মজুতদারদের বিরুদ্ধে কিছু স্টেপ নেয়ায় প্রভাবশালী লবি ওঁকে সরিয়ে দেয়।
    কিন্তু ওনার এই সস্তাখেলাটি ওনার জনপ্রিয়তাকে ধূলোয় মিশিয়ে দিল। তেমনি হাল হল কবীর সাহেবের। বুদ্ধিজীবী বলে নাম ছিল। ড: রাধাকৃষ্ণনের সম্পাদনায় এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের আগ্রহে বিশ্বের সমস্ত দার্শনিক চিন্তার সার নিয়ে যে কয়েকটি অমূল্য ভল্যুম প্রকাশিত হয়েছিল তাতে ঘোষিত ভাবেই কবীরসাহেবের বিশেষ ভূমিকা ছিল। এছাড়া ইংরেজি ""নাউ'' পত্রিকা ছিল কোলকাতার সমর সেন, অশোক মিত্র,উৎপল দত্ত প্রভৃতি বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের আকর্ষণীয় প্ল্যাটফর্ম।
    এই ঘটনায় সবাই নাউ ছেড়ে সমর সেনের পরিচালনায় ""ফ্রন্টিয়ার'' পত্রিকায় যোগ দিলেন। ""নাউ'' বন্ধ হয়ে গেল।
    এই অল্পমতের সরকার কাজ করতে না পেরে পটল তুললো।
    কোলকাতা এবং সারা বাংলা জুড়ে মিছিল। স্লোগান উঠছে--
    ""ঘোষ-কবীরের আর এক নাম,--- বেইমান, শয়তান।'' আর "" ধর্মবীর বাংলা ছোড়ো, আভি ছোড়ো, জলদি ছোড়ো''।
    রাজ্যপাল ড: ধর্মবীর তখন নতুন ভিলেন।
    বিধানসভায় এই অল্পমতের সরকারের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস প্রস্তাব আনার সময় বিতর্ক হাতাহাতিতে পরিণত হল। কেউ একজন সদস্যদের নাম লেখা কাঠের ব্লকটি তুলে প্রফুল্ল ঘোষের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। অল্পের জন্যে তাঁর মাথায় লাগলো না।
    তখন টিভি ছিল না।
    আকাশবাণীতে মুখ্যমন্ত্রী ড: ঘোষ জনগণের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখলেন। বিরোধীদের বিধানসভায় হিংসাকে আস্কারা দেয়া নিয়ে অনেক কাঁদুনি গাইলেন।
    ওনার "" আমি আজ মরিয়াও যাইতে পারিতাম'' লোকের হাসির খোরাক হয়ে রইলো।
    ম্যাঙ্গো পাব্লিক কোনদিনই legal niceties বা ভব্য আচরণবিধি নিয়ে কেয়ার করে না। তাদের কাছে তখন ঘোষ-কবীর জনপ্রিয় সরকার ফেলে দিয়ে শয়তান কা নানা।
    এইসময় বামফ্রন্টের প্রতিদিন আইন অমান্য আন্দোলন ( যুব দিবস, মহিলা দিবস, ছাত্র দিবস ইত্যাদি)ভালভাবে পাব্লিকের মনে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের ছবিটি তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছিল। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধীর ইমেজ বঙ্গের জনগণের কাছে মার খেলো। বরং জ্যোতি বসু ধীরে ধীরে একজন সক্ষম দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন।
    একবার বাসে শুনি্‌চলাম কুদঘাটা এলাকার কটি টিন এজারের বাক্যালাপ শুনছিলাম।
    --- ফ্যালাকে সবাই জ্যোতি বসু বলে কেন রে?
    --- ঠিকই তো বলে। দেখিস নি, কোথাও কোন কিচ্যাইন হলে জ্যোতি বসু গিয়ে একটা বক্তৃতা দেয় আর সব শান্ত হয়ে যায়!
    ফ্যালা ও তো তেমনি।

    এই আন্দোলনের সময় নকশালরা কি করছিলেন?
    প্রথমত: একটু লজ্জা-লজ্জা ভাব করছিলেন। কারণ, বাম সরকার জোতদারদের সরকার, কাজেই দিল্লি ওদের অপদস্থ করবে না-- এই থিওরি ফুটে গেল।
    দ্বিতীয়ত: ওরা সামান্য শক্তি নিয়ে সিপিএম এর জঙ্গীদের সঙ্গে মিলে আন্দোলনকে আরো জঙ্গী করার চেষ্টা করছিলেন।
    তৃতীয়ত: নিজেদের মধ্যে মতাদর্শগত খেয়োখেয়ি , যা প্রায় প্ত্রাধার -কি-তৈল, না তৈলাধার-কি-পাত্র গোছের, করে দশটা একপাতা- দুপাতা- বা চারপাতার পত্রিকা বের করছিলেন।
    ""দেশব্রতী'' আর "" দক্ষিণদেশ"" তো ছিলই, এচাড়া কো-অর্ডিনেশনের ""ভিত্তি'', ''হাতিয়ার'', ""লোকায়ন'', ""কালপুরুষ'' আরো কত কি!
  • Manish | 59.90.135.107 | ২৩ জুন ২০১১ ১৯:২৮472234
  • Ranjan, মোটামুটি ভাবে সময়টা যদি উল্লেখ করতে তবে ঘটনাগুলোকে রিলেট করতে সুবিধা হতো।
  • ranjan roy | 122.168.251.121 | ২৩ জুন ২০১১ ২১:৫৭472235
  • ২০)
    যদ্দূর মনে পড়ছে প্রথম যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন হল অক্টোবর ১৯৬৭। মাসটি ভুল হতে পারে। আর ঘোষ-কবীরের অন্তর্বর্তী সরকার খারিজ করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারী হল ৬৮'র বসন্তকালে।
    এক অর্থে বামদলগুলোর আন্দোলনের পরিণতিতে দিল্লি মেসেজ পেল যে এই জোড়াতালি সরকার অত্যন্ত অপ্রিয় এবং কাজ করতে অক্ষম। তাই রাষ্ট্রপতি শাসন। তারপর ১৯৬৯ এর শীতের শেষভাগে আবার মধ্যবর্তী নির্বাচন। ইন্দিরা ভেবেছিলেন কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরবে।
    কিন্তু কংগ্রেসের সাধ-না-মিটিল, আশা-না-পুরিল।
    দ্বিতীয় বামফ্রন্ট আরো বড় জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করল।
    জ্যোতিবসুর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে।
    রাষ্ট্রপতি শাসনকাল জুড়ে বামদলগুলো কোন বড় জনান্দোলন করেনি। বরং ওরা ক্রমাগত প্রচার করে গেছে ,মিটিংয়ে মিছিলে, জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব দেশের খোল নলচে বদলে দেবে। লোকে শস্তা দরে খাদ্য পাবে। বেকার ছেলেরা চাকরি পাবে আর স্কুল কলেজে পড়াশোনা হবে।কিন্তু জনগণের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া দিল্লির প্রতিনিধি বসিয়ে এসব কাজ হবে না।
    শ্লোগান দেয়া হত--""এই সমস্যার সমাধান--- মধ্যবর্তী নির্বাচন।''
    এই সময় নকশালদের মিছিলে বলা হত-- ""নির্বাচন পথ নয়, নক্‌শালবাড়ি সঠিক পথ।''
    বা, ""নির্বাচনের পথ ছাড়, কৃষিবিপ্লবের পথ ধর।''
    সেইসময় সিপিএম থেকেই নকশালরা ধার নিয়েছিল জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব ও তার অন্তর্বস্তু হিসেবে কৃষিবিপ্লবের কথা। অর্থাৎ চাষীর হাতে জমি দাও, সে তার নিজের খাবার রেখে বাকিটা বিক্কিরি করবে। তাতে শহরের লোক খেতে পাবে। আর ওরা ধান বিক্রির টাকায় জামাকাপড়, ঘর মেরামত, বইপত্তর কিনবে। ফলে কলকারখানার প্রোডাক্টের উৎপাদনের ডিমান্ড বাড়বে। নতুন নতুন কলকারখানা খুলবে, শহরের ছেলেগুলো চাকরি পাবে। বঙ্গদেশে দুধ-দই-মধুর স্রোত বইবে।
    নকশালরেরা বলতো এই ব্যবস্থায় কিছু সম্ভব নয়, তাই সশস্ত্র পথে ক্ষমতা দখল কর। সিপিএম বলত-- জনগণ এখনো প্রস্তুত নয়। তাই নিয়মতান্ত্রিক পথে চলে কিছু রিলিফ দিয়ে ব্যাপক জনগণকে নিজেদের পক্ষে আন।

    কিন্তু, বাম সরকারের পতনের পর বিক্ষোভের সময় নকশালেরা কিছুদিন সিপিএম কর্মীদের সঙ্গে ছিল বলেছি।
    এই নিয়ে একটি ঘটনার কথা বলি। আগে সংক্ষেপে বলেছি, কিন্তু ঘটনার নায়ক আমাকে জানিয়েছেন যে অর্ধসত্য না বলে পুরোটা খুলে বল্‌, আমার আপত্তি নেই।

    ঘোষ সরকারের বিরুদ্ধে আইন আমান্য আন্দোলনের প্রথম দিনে সব রাজনিতিক নেতারা মিছিল করে ধর্মতলার থেকে হেঁটে গিয়ে রাজভবনের সামনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গ্রেফতারি দিলেন।
    মৌলানা আজাদ কলেজের ক্যান্টিনে শুনলাম আমাদের বন্ধু বঙ্গবাসীর ইংরেজি অনার্সের ছাত্র রঘু( পরবর্তী কালে আবাপ'র সাংবাদিক ও লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক রাঘব বন্দ্যো, বর্তমানে " চর্চাপদ প্রকাশনী''র মালিক) নাকি আইন অমান্য আন্দোলনে অজয় মুখুজ্জে-জ্যোতিবসুদের সঙ্গে গ্রেফতার হয়েছে?
    হটাৎ রঘুর এমন হৃদয় পরিবর্তন! নন-ভেজ থেকে ভেজ রাজনীতি! একচোট হাসি।
    পরে যা জানা গেল তাহল----
    রঘু তখন নকশালদের একটি উপদল প্রেসিডেন্সির গা-ঘেঁষা পিজি-এসএফ কনসলিডেশন, অর্থাৎ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত।
    ওদের ডিসিশন হয় যে জনগণের পবিত্র ক্রোধ এমন নিরিমিষ আইন অমান্য আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নষ্ট হতে দেয়া যায় না। তাই প্রথম দিনই ওদের অ্যাকশন স্কোয়াড ওখানে বোম চার্জ করবে । সেটা এমন্‌ব্‌হাবে হবে যে পাব্লিকের গায়ে না লাগে বরং পুলিশের ভীড়ে টপকানো হবে।
    সোনু মালচার্জ করবে, লাল-সাদা ( মানে অর্সেনিক সালফাইড ও পটাশিয়াম ক্লোরেট এর পাউডারের পিন্ড, তাতে সি্‌প্‌লনটার লোহার পেরেক বা গ্রামোফোনের পিন , আর শক্ত করে পাটের দড়ি দিয়ে বলের মত করে বাঁধা।
    উদ্দেশ্য অতি মহৎ--- জনগণকে আন্দোলনের পথ নিয়ে সচেতন করা, খানিকটা ভগৎ সিংদের সংসদভবনে বোম মারার মত আর কি!
    রাঘব পজিশনে যাওয়ার আগেই সোনু চার্জ করল। করে দৌড়লো আর ভীড়ে মিশে গেল। রাঘবের দৌড়নো দেখে সাদা পোশাকের পুলিশ-- ধর্‌ ধর্‌, ঐযে! বলে তাড়া করলো। ও পা হড়কে পড়ে যেতেই পেছন থেকে একটা হাত ওর কলার চেপে ধরল। রঘু দেখলো সমূহ বিপদ। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ও হাত টাকে আড়াআড়ি করে পেছনের লোকটার পেটে মারলো। আঁক করে লোকটা পড়ে গেল। তারপর অনেক পুলিশ দৌড়ুচ্ছে ওর দিকে।
    এবার ধরে উত্তাল ক্যালাবে!
    কিন্তু রাখে কেষ্ট মারে কে!
    পাশ দিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে যাচ্ছে বিশাল মিছিল, তাতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখুজ্জে, প্রাক্তন হোম মিনিস্টার জ্যোতি বসু, সিপি আইয়ের বিশ্বনাথ মুখুজ্জে ইত্যাদি।
    ব্যস্‌, রঘু সোজা দৌড়ে ঢুকে গেল ওই মিছিলে, তারপর শ্লোগান দিতে দিতে ওঁদের সাথে উঠে পড়লো অপেক্ষমাণ দোতলা বাসে। কদিন জেল খেটে দিব্যি বাড়ি ফিরে এল।
  • ranjan roy | 122.168.223.229 | ০৩ জুলাই ২০১১ ২৩:৩৮472237
  • ২১)
    সেটা বোধহয় আটষট্টির জানুয়ারী। প্রেসিডেন্সির ক্যান্টিনে কাকা ( অসীম চাটুজ্জে) বল্লেন --বালিগঞ্জে ফাঁড়ি থেকে হাজরা রোড দিয়ে একটু এগিয়ে নিউ অ্যালেনবুরি'র কারখানাটিতে শ্রমিক আন্দোলন চলছে। তুই মৌলানা থেকে এসে
    রোজ প্রেসিডেন্সি'র ক্যান্টিনে বসে আগড়ম বাগড়ম বকে যে চুতিয়ামি করছিস তার---। তার চেয়ে আজ আমাদের সঙ্গে ওখানে চল, ওদের আন্দোলনকে সমর্থন করে একটা স্ট্রীট কর্নার মিটিং আর ছোটখাট মিছিল করে আসবো।
    তা আমরা জনাদশেক গেলাম। এন্থো(ENTHO) হল মন্দ না। সন্ধ্যে নেমেছে ঝুপ করে। শীত শীত ভাব। আমরা ক'জন
    মিছিল শেষে ফাঁড়িতে ফিরে পাঞ্জাবী ঢাবায় চা খাচ্ছি। এমন সময় ট্রানজিস্টারে বাংলা খবরে দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় জানালেন-- ঘোষ-কবীরের অল্পমতের কোয়ালিশন সরকার ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন ঘোষণা করা হয়েছে।
    আমরা উত্তেজিত। এইবার জনতা জাগবে। সিপিএম এর নীচুতলার ক্যাডাররা বুঝবেন যে ওদের দেউলে নেতৃত্ব সংসদীয় পথে হেঁটে সংগ্রামী জনতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। সত্যিকারের জনগণ্‌তান্ত্রিক বিপ্লব ( যা ছাড়া মুক্তি নেই, আমরা নিশ্চিত!)করতে হলে আমাদের সঙ্গেই আসতে হবে।
    কিছুদিন রাস্তায় রাস্তায় মিলিটারির টহলদারি। কিছুদিন এখানে ওখানে আলটপকা পেটো পড়ল। আস্তে আস্তে সব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল।
    সিপিএম নেতৃত্ব কিন্তু বুদ্ধিমানের মত পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট প্রচার মিছিলে (তখন বলা হত জাঠা), ক্লাবগুলোতে বিতর্কসভায় জনতার মধ্যে প্রচার করতে লাগলো-- এই সমস্যার সমাধান মধ্যবর্তী নির্বাচন। আর নকশালপন্থী সপ্লিন্টার গ্রুপগুলো সিপিএম এর ছেলেদের সঙ্গে সংযুক্ত মিছিল করে আলাদা শ্লোগান, নির্বাচন বয়কটের শ্লোগান দিতে লাগলো।
    কিন্তু উনসত্তরের গোড়ায় মধ্যবর্তী নির্বাচনের সময় প্রচূর লোক ভোট দিয়ে সিপিএমকে আরো বাড়তি তাগদের সঙ্গে ক্ষমতায় নিয়ে এলো।
    হাওড়ার শ্যামপুরে কোলকাতা থেকে যাওয়া কিছু ছেলে গাঁয়ে বয়কটের পক্ষে প্রচর করছিলো।
    তাদের চাষীরা বললো-- বড়লোকদের জেতাতে এয়েছ বাবুরা? ভালয় ভালয় গাঁ ছেড়ে চলে যাও, নইলে সবাই মিলে পিটবো।
    কিন্তু শহরে ছাত্র-যূবকদের একাংশের মনে ভীষণ অস্থিরতা। ওরা আলোচনা চালাচ্ছে পাড়ার নকশালপন্থীদের সঙ্গে, পড়ছে মাওয়ের লেখ, শুনছে রেডিও পিকিং।
    সেইসময় রেডিও পিকিং( বেইজিং , মাও জে-দং, ঝৌ এন-লাই অনেক পরের কথা।)এর বাংলা অনুষ্ঠানে ঘোষকেরা কেউ বাঙালী ছিলেন না। তাই চীনে অ্যাকসেন্টে এক অদ্ভূত কৃত্রিম বাংলায় শোনা যেত আধাঘন্টার প্রচার কার্যক্রম।
    একটু নমুনা পেশ করি।

    "" রেডিও পিকিং! রেডিও পিকিং!
    আপনারা এখন শুনছেন পিকিং বেতারকেন্দ্রের বাংলা অনুষ্ঠান।
    সর্বপ্রথমে শুনুন ""লাললন্ঠন'' বিপ্লবী অপেরা থেকে এই গানটি। এতে জনগণকে হতাশা ঝেড়ে ফেলে গণমুক্তি ফৌজের কার্যকলাপের প্রতি আস্থা রাখতে বলা হয়েছে। আর শেষে আমাদের পথপ্রদর্শক এবং মহান শিক্ষক
    কমরেড মাওয়ের নির্দেশ মেনে শত্রুদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে বিপ্লবকে জয়যুক্ত করতে বলা হয়েছে।''
    চীনাভাশায় গানটি শেষ হল। আমর যেভাবে আমীর খানের মারোয়া বা ভাটিহার রাগে বিলম্বিত আলাপ শুনি তেমনি শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনলাম।
    "" এবারে শুনুন ""রেনমিন রিবাও'' পত্রিকায় প্রকাশিত এই প্রবন্ধটি,--" ভারতের আকাশে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ''।
    তারপর শোনা গেল নক্সালবাড়ির কৃষক
    আন্দোলনকে সমর্থন করে একটি পুরনো আর্টিকলের পুন: প্রচার। ব্যাস্‌, আমরা আহ্লাদে আটখানা।
    হুঁহুঁ বাবা! নিজের কানে শুনেছি, মাওয়ের রেডিও আমাদের সমর্থন করেছে। ব্যস্‌, বিপ্লব এসে গেল বলে।
    এইভাবেই চলছিল। কিন্তু সম্ভবত: ৬৭'র শেষভাগে এক সকালে চায়ে চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজে চোখ বুলোতে গিয়ে চমকে উঠলো শহর কোলকাতা।
    --পার্ক স্ট্রীট পোস্ট আফিসে এক্‌দল যুবকের দু:সাহসিক ডাকাতি। ডাকাতিতে প্রযুক্ত একটি ব্ল্যাক অ্যাব্যাসাডর কার। লুটের পরিমাণ চার লক্ষটাকা। দু'জন রক্ষী গুলিবিদ্ধ। একজনের অবস্থা আশংকাজনক।
  • I | 14.96.186.144 | ০৪ জুলাই ২০১১ ০০:২৭472238
  • দারুন !
  • Arpan | 122.252.231.10 | ০৪ জুলাই ২০১১ ০০:৩৬472239
  • নিউ অ্যালেনবুরি! রঞ্জনদাদের মিটিং করে আসার তিন দশক পরে ওখানে সামার ট্রেনিং করেছিলাম দেড় মাসের। কারখানাটাতে বেশ সফি টাইপের মেশিনপত্তর ছিল।

    রঞ্জনদার এই লেখাটা শেষ হলে গুরুচন্ডালী প্রকাশন থেকে যেন বই ছেপে বেরোয়। আগাম দাবি জানিয়ে গেলাম!
  • til | 165.12.252.211 | ০৪ জুলাই ২০১১ ০৭:৩৩472240
  • আটষটি্‌তর পর ১৯৬৭ র শেষ? এমন কিছু নয় তবু চোখে লাগছে।
    রঞ্জন চালিয়ে যান, একটু হাত লাগিয়ে।
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ০৪ জুলাই ২০১১ ১০:১০472241
  • গ্রেট রঞ্জন দাদা। আমি পড়ছি। ভাল লাগছে।
  • dd | 59.97.120.235 | ০৪ জুলাই ২০১১ ১৬:৪৫472242
  • ৬৯-৭০ সালে অ্যালানবারীতে আম্মো গেছি। "তোমার বাড়ী আমার বাড়ী নকশালবারি ,অ্যাল্যানবারি" এইমতন ছিলো সে সময়। জলজ্যান্তো শ্রমিক ভায়েরা ছিলেন।

    ধীরেন দে ই ছিলেন মালিক? তাই না? দেওদার স্ট্রীটে বিরাট প্রাসাদ। তিনি আবার পাড়ার কোনো নকশাল বেশী ট্যাঁ ফোঁ করলেই টপ করে চাকরী দিয়ে দিতেন।

    একটাই প্রশ্চেন আছে (সেটা প্রশ্নের টই তেও যেতে পারতো)। তখন খুব শুনতাম "শ্রমিক শ্রেনীর নেতৃত্বে কৃষি বিপ্লব" হবে। একজন নেতাও বুঝাতে পারতেন্না শ্রমিক শ্রেনী অ্যাক্‌চুয়ালি কি করবে? বেশ ন্যাজে গোবরে হয়ে যেতেন। রঞ্জন তোমার মনে আছে?

    এই শ্লোগানের ব্যাখ্যা তখন শুনেছিলে? এখনো মনে থাকলে জানি ও তো।
  • kallol | 220.226.209.2 | ০৪ জুলাই ২০১১ ১৭:১৫472243
  • আমারে খুব সহজভাবে বুঝায়ে দেছিলো আমাদের পাড়ার পরিমলদা।
    আমরা যারা বিপ্লবে নেতৃত্ব দেবো তারা কোন শ্রেণীর? পেতিবুর্জোয়া থেকে শ্রেণীচ্যুত হয়ে প্রোলেতারিয়েৎ।
    প্রোলেতারিয়েৎ=শ্রমিক শ্রেণী
    আমাদের নেতৃত্বে কৃষি বিপ্লব হবে।
    অর্থাৎ শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে কৃষি বিপ্লব হবে।
    QED
  • santanu | 91.226.168.2 | ০৪ জুলাই ২০১১ ১৭:২৪472244
  • অথবা শ্রেনীচ্যুত পেতিবুর্জোয়াদের নেতৃত্বে কৃষি বিপ্লব হবে।
  • kallol | 220.226.209.2 | ০৪ জুলাই ২০১১ ১৭:৩৫472245
  • ওরে অবোধ, শ্রেণীচ্যুত বুর্জোয়া, পেতিবুর্জোয়া আরও যা যা হয়, হলেই শ্রোমিক শ্রেণী।
    মহাভারত না পড়লে এইই হয়। দুজ্জোধন যুধিস্টিরদের আগেই সগ্গে গ্যালো কমনে? ক্ষত্রিয় হয়ে যুদ্ধে নিহত হলে সিধে সগ্গো। ত্যামনই শ্রেণীচ্যুত হলে তা সে যে শ্রেণী থেকেই হোক সিধে শ্রোমিক শ্রেণী।
  • ranjan roy | 122.168.222.196 | ০৫ জুলাই ২০১১ ০৬:৪৬472246
  • তিল,
    আসলে আমি আঁকতে চাইছি ৬৭ থেকে ৬৯-- এই সময়টাতে কি করে ছাত্র-যুবদের একটা বড় অংশ, অবশ্যি শহর কোলকাতায়, প্রতিবাদী বামপন্থী রাজনীতি করতে গিয়ে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে হাতিয়ার তোলার আহ্বানে আকর্ষিত হল সেই প্রসেসটা।
    তবে কোন ক্রনোলজিক্যাল অর্ডারে লেখা ইতিহাস আদৌ নয়। সেই ক্ষমতা আমার নেই।
    লিখছি ছোট ইতিহাস, তাও স্মৃতির কোলাজে ভর করে টুকরো টুকরো সময়ের জলছবি।
    অর্থনীতিবিদ প্রভাত পটনায়েক দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিক্সের তাঁর এক মালয়ালী অধ্যাপকের স্মৃতিচারণে বলেছিলেন যে উনি খুব সময় নিয়ে এলিজাবেথান যুগে কর্ন ল', খামারের অর্থশাস্ত্র, মধ্যযুগীয় চাষিদের অবস্থা এইসব পড়াচ্ছিলেন, তাতে প্রভাত ইত্যাদি ছাত্রের দল খুব বোর হচ্ছিলেন।
    পরে বুঝলেন যে শিল্পবিপ্লব কেন অবধারিত সেটা বোঝার জন্যে ওই আগের সময়ের খুঁটিনাটি কেন জরুরি ছিল।:)))))
    তবে আপনার কথা মেনে নিয়ে একটা কথা-- এই লেখাগুলো যদি পরে কেউ চটি বই করেও বের করেন তাহলে ব্যাপক সম্পাদনা করতে হবে। অনেক জায়গায় চটজলদি লিখতে গিয়ে অনাবশ্যক রিপিটেশন হয়ে যাচ্ছে।

    কল্লোলকে ক'।

    ডিডিকে,
    আর একটি আঁতেল রাংতায় মোড়া ব্যাখ্যা।
    অনগ্রসর কৃষিপ্রধান দেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রলেতারিয়েত সংখ্যায় এত কম যে তাঁরা বাস্তবিক নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতায় নেই। তাই ভারতের মত অনগ্রসর দেশে সেই কাজ করবে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকশ্রেণীর বদলে তার পার্টি। অর্থাৎ, ফিজিক্যাল লীডারশিপ নয়, মতাদর্শগত লীডারশিপ। অর্থাৎ (কল্লোল কথিত) (বকলমে কমিউনিস্ট পার্টি।বকলমের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন):)))))।
    কিন্তু কিউবার মত কৃষিপ্রধান অনগ্রসর দেশে কি করে পার্টি ছাড়া বিপ্লব হল? এগুলো মার্ক্সবাদীদের বারমুডা ট্র্যাংগেল।
  • kallol | 220.226.209.2 | ০৫ জুলাই ২০১১ ১০:১১472248
  • এইটা ভালো দিয়েছিস রঞ্জন ""মার্ক্সবাদের বারমুডা ট্র্যাংগেল""।
    আমাদের বোঝানো হতো কিউবা লাইন অমার্ক্সবাদী, কিন্তু চারুবাবুর চটেরহাট-ইসলামপুর লাইন ছিলো একেবারে কিউবা লাইনের কপি-পেস্ট।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন