এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অথ নকশাল-বধ কথা

    Ranjan Roy
    অন্যান্য | ০৫ এপ্রিল ২০১১ | ৫৮৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 122.168.222.196 | ০৬ জুলাই ২০১১ ০১:৩০472249
  • ২২)
    সকাল প্রায় সাড়ে ন'টা।
    পার্ক স্ট্রীত পোস্ট আফিসের থেকে বেশ এক কিলো মিটার দূরে
    দেখা গেল নিয়ম্মমাফিক টাকা বয়ে আনা লালচে গাড়িটি আসছে। গাড়িটি দেখতে পাওয়া মাত্র সামনের ল্যাম্পপোস্টের নীচে দাঁড়ানো চশমাচোখে ছেলেটি মেলে ধরলো একটি রঙীন ছাতা। বৃষ্টি পড়ছে না, রোদ্দূর তেমন কড়া নয়। তবে কী ওনার শরীর খারাপ!
    সে যাক গে, অনেকটা দূর থেকে সেই রঙীন ছাতা দেখা যেতেই একটি মেয়ে যেন চমকে উঠে হাতের থেকে একটি রুমাল ফেলে দিলো।
    আগে রাস্তাটা যেখানে বাঁক নিয়েছে সেখানে চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে থাকা ছেলেটির হাত থেকে চায়ের গ্লাস হাত ফসকে মাটিতে পড়ে ভেঙে তিন টুকরো, অপ্‌র্‌স্‌তুত ছেলেটি আত আনা বের করে দোকানদারকে দেয়। বচসা বাঁধে।
    এইভাবে আধাঘন্টা ধরে পোস্ট আফিসের উল্টো দিকে বসে কোল্ড ড্রিংক খেতে থাকা চারজন যুবক হটাৎ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
    আর দাম মিটিয়ে আপাত শিথিল কিন্তু মাপা পদক্ষেপে এগিয়ে গেল পোস্ট আফিসের দিকে।
  • ranjan roy | 122.168.222.196 | ০৬ জুলাই ২০১১ ০২:১০472250
  • আরে কি আশ্চর্য! ওরা আদ্দেক রাস্তাটা পেরিয়েছে কি না সেই টাকার সীলকরা বস্তাবাহি গাড়িটি এসে যেন ওদের সামনেই দাঁড়ায়। ওরা কি মন্ত্র জানে!
    সঙ্গে সঙ্গে দুজন চলে যায় সামনের গেটের দিকে। এক জন ড্রাইভারের দরজার খোলা কাঁচের ফাঁক দিয়ে উঁচিয়ে ধরে একটি পিস্তল।-- নড়বে না! চুপ চাপ বসে থাকো।
    অন্যজন উল্টো দিকে ড্রাইভারের পাশে বসা পুলিশ্‌গার্ডের দরজার দিকে গিয়ে একটি পাইপগান উঁচিয়ে ধরে।পেছনের দিকে জালের বন্ধ দরজার আড়ে বসে থাকা দুইরক্ষী মাত্র তালা খুলে গেট ফাঁক করে নামার উদ্যোগ করছিল এমনসময় দেখে দুইছোকরার হাতে উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্র।
    তাদের মধ্যে পেটানো চেহারার একজন নীচুগলায় বলে-- তোমাদের কোন ভয় নেই। ওই খাকি থলিটা দিয়ে দাও। আমরা তক্ষুণি চলে যাব। কয়েক সেকন্ড! দুই প্রহরী বজ্রাহত। এমনটি হওয়ার তো কথা ছিল না।
    -- কি হল! কথা কানে যাচ্ছে না? তাড়াতাড়ি!
    এবার গলার আওয়াজ একটু রুক্ষ্ম।
    একজন ইত:স্তত করে থলিটির দিকে হাত বাড়াচ্ছিল কি অন্য রক্ষীটি ওইটুকু বন্ধ জায়গার মধ্যে পিছিয়ে গিয়ে হাঁটুগেড়ে বসে বন্দুক তুলে জালের ফাঁক দিয়ে গুলি চালায়। কপাল মন্দ! গুলি ডাকাতদলের নেতাটির কানের পাশ দিয়ে গরম হাওয়া ছুঁইয়ে বেরিয়ে যীদেরায়।
    মরিয়া দুই যুবক দরজা খুলে প্রায় পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জে দুই রক্ষীকে নিশানা সাধে। ওরা লুটিয়ে পড়ে। কোথা থেকে এসে পড়েছে এক কালো অ্যামবাসাডার। তার থেকে নেমে পড়েছে ড্রাইভার। এবার তারা দ্রুত হাতে গালা দিয়ে সীলকরা খাকি ঝোলাটি গাড়ি থেকে নামিয়ে আহত রক্ষীদের ভেতরে করে বাইরে থেকে জালের দরজাটা বন্ধ করে কব্জা লাগিয়ে দেয়।
    এদিকে সামনের দিকে আরেক ঝামেলা। ড্রাইভার ধীরে ধীরে হর্ণের দিকে হাত বাড়াচ্ছিল, সতর্ক যুবকটি ওর কানপটিতে পিস্তলটি দিয়ে সজোরে মারে। ড্রাইভার স্টিয়ারিং এর ওপর লুটিয়ে পড়ে।
    কিন্তু ওর পাশে বসে থাকা রক্ষীটি বসে বসেই সীটের পাশে খাড়া করে রাখা বন্দুকটির ঘোড়া টিপে দেয়। ফলটা ভালো হল না। ততক্ষণে পেছন থেকে ডাকাতদের কম্যান্ডার এসে গেছে। দ্রুত গোটাকয়েক পাইপগানের গুলি। মারাত্মক আহত অবস্থায় রক্ষীটি কেলিয়ে পড়ে।
    এর মধ্যে এইগাড়িটির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ওই কালো অ্যামবাসাডার।দ্রুত টাকার ব্যাগ চলে যায় ওর ডিকিতে। আর ওরা পাঁচজন চটপট ওই গাড়িতে সওয়ার হয়ে চম্পট দেয়। পুরো অপারেশনটা হতে সময় লাগে মাত্র সাড়ে চার মিনিট।
    উপস্থিত জনতা কিছু বোঝার আগেই ঘটে যায় দি গ্রেট কোলকাতা পোস্ট অফিস ডাকাতি। লুট হয়ে যায় চার লক্ষ টাকা। ষাটের দশকের শেষ পাদে।
    ছ'মাস কেটে যায়। কেউ ধরা পড়েনি। লালবাজার কোন ক্লু পায়নি।

  • ranjan roy | 115.240.181.125 | ০৭ জুলাই ২০১১ ০৯:২৬472251
  • ২৩)
    ছ'মাস পর স্টেটস্‌ম্যান পত্রিকায় একটি রিপোর্ট বেরুল।
    -পার্ক স্ট্রীট ব্যাংক ডাকাতি চিন্তায় ফেলেছে। লালবাজারের তাবড় তাবড় গোয়েন্দারা হতভম্ব। পার্ক স্ট্রীট থানা এত কাছে , তবু এত দু:সাহস!
    আর হলিউড ফিল্মের মত এমন প্রিসিশন, কয় মিনিটে অপারেশন শেষ! এতো পাকা প্রফেশনালদের কাজ, এরা কারা?
    পুলিশের ইনফর্মাররা সমস্ত ক্রাইম ডেন চষে ফেলেছে। পুরনো দাগীদের ধরে এনে আড়ং ধোলাই দিচ্ছে, কিন্তু কেউ জানে না এটা কার কাজ। এই প্রক্রিয়ায় অনেক পুরনো ফেরারের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, অনেক পুরনো বন্ধ ফাইল খুলছে, কিন্তু আসলীদের কোন পাত্তা নেই। হাওয়ায় গন্ধ নেই, চার লাখ টাকা নিয়ে কর্পূরের মত উবে গেল ছোঁড়াগুলো।

    ভবানীপুরের নন্দন রোডের কাছে একটি টেবিলে তিনটি ছেলে খাচ্ছে,-- তন্দুরী রোটি আর তড়কা ডাল। একজন হাত ধুয়ে কাউন্টারে টাকা দিতে গেল। কিন্তু ছোটটি শেষ রুটির টুকরোয় কামড় দিয়ে কচকচিয়ে পেঁয়াজকুচি আর লংকার ছুঁচলো মুখ চিবিয়ে জড়ানো আওয়াজে বললো-- উঁহু, উই গো ডাচ!
    বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওরা গাঁজা পার্কে ঢুকে ঘাসের ওপর বসলো।
    সিনিয়র যুবক রোগা ক্যাংলা কেলটে ছেলেটাকে বল্লেন-- রমেন, এ' মাসের ওয়েজ নাও।
    ব্যাগ থেকে একটি সাদা কাগজের খাম বের করে দিলেন ওর হাতে।
    ওতে লেখা Ramen- wage Rs.130/-.
    হরিদাস পাল খাম খুলে দেখে নিল তাতে আছে তেরোটি দশ টাকার নোট।
    সিনিয়র বল্লেন-- শোন, তুমি তো পরিবারের সঙ্গে থাক। বিছানা আর খ্যাঁটনের চিন্তা নেই তাই তোমার ওয়েজ কম। এদিয়ে গোটা মাস চালাতে হবে। বিভিন্ন মিটিংয়ে যাওয়ার খরচ, চা জলখাবারের খরচ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার খরচ, আর তুমি কাউকে রিক্রুট করলে তাকে এন্টারটেন করার খরচ- এতে হয়ে যাবে।
    হরিদাস পাল মাথা নাড়ে।
    হ্যাঁ, গড়িয়াহাটে নির্মলা বলে একটা নতুন রেস্তোরাঁ খুলেছে।
    তাতে মশলা দোসা/ ওনিয়ন দোসা ৬৫ পয়সা, কফি ৩০ পয়সা আর দুটো পানামা সিগ্রেট । শালা, রোজ একটাকায় স্বর্গসুখ। এতে তিরিশ টাকা গেল। ট্রাম-বাস আর হন্টনে সারা মাসে ৫০ব্‌টাকা। এখনো ৫০ টাকা বাকি।
    কতদিন যে কফিহাউসের আড্ডায় যাওয়া হয় নি। এবার একদিন যাবে।
    মৌলানা আর প্রেসিডেন্সির বন্ধুদের, ছোট চিকি, বড় চিকি, স্নেহাংশু, সবাইকে ডেকে, সব্বাইকে কফি-কোল্ড কফি পাকোড়া খাওয়াবে। কবি তুষার রায়কে ডেকে কফি খাইয়ে ওনার মজাদার সব গল্প, ফট-সন্দেশের গল্প শুনবে।
    আর নাকতলার বন্ধুরা কি দোষ করল!
    গড়িয়া কলেজের পাশে কাঠের বেঞ্চিওলা পোঁদে-গরম ঠেক, আর বাস স্ট্যান্ডের পাশে পাখার নীচে গদিওলা পোঁদে -আরাম ঠেক!
    আর জয়শ্রী! কোন দিন কি সাহস করে ওকে বলতে পারবে কাফে-ডি- অনিল এ চল?
    ওতো একদিন কলেজে সবার সামনে জিগ্যেস করেছিল--- তুমি কি মনে কর নক্সালবাড়ির লাল আগুন একদিন সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে?
    -- হ্যাঁ, যাবে। একদিন নিশ্চয়ই যাবে।
    -- সেই আগুনে পুড়বে কারা? মাও সে তুং এর বাচ্চা যারা।

    -- তোমার কাকা কংগ্রেসের নেতা, তুমি তো এসব বলবেই। একটু ভাবো, পড়াশুনো কর, তাহলে বুঝবে।
    -- হ্যাঁ, তোমরা তো খুব পড়াশুনো করছ, লজ্জা করে না!
    এই তোরা শোন! এই ছেলেটা না মৌলানায় ইকনমিক্সে ভর্তি হয়েছিল। এ'বছর ড্রপ নিয়ে গড়িয়া কলেজে আমার এক ইয়ার নীচে ম্যাথস্‌ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। আজেবাজে রাজনীতি করলে এইরকমই হয়।
    হরিদাস পাল বলতে চাইল-- না, জয়শ্রী! রাজনীতি নয়, ওটা অজুহাত। সত্যি কথাটা আমার কমরেডরাও জানেনা। আমি শুধু তোমার জন্যে কলেজ বদলেছি, শুধু তোমাকে রোজ দেখতে পাব বলে।
    কিন্তু বলতে পারলো না। ভালবাসার চেয়ে রাজনীতি বড়। কংগ্রেসী বাড়ির মেয়েকে বিপ্লবী রাজনীতিতে কনভিন্সড্‌ না করে তার সঙ্গে প্রেম করা যায় না।

    -- রমেন, কি ভাবছ? শোন, রোববার দিন বিকেল তিনটেয়, চিড়িয়াখানায়, বাঁদরের খাঁচার সামনে।
  • SC | 128.237.122.95 | ০৮ জুলাই ২০১১ ০৩:৪৭472252
  • এই টইটা ফাঁকে ফাঁকে পড়ে যাই। জাস্ট "শাবাশ শাবাশ" বলার জন্যে কমেন্ট কল্লাম। রঞ্জনদা, দারুণ হচ্ছে।
    আরও পড়ার আশা রইল।
  • ranjan roy | 115.240.214.102 | ০৮ জুলাই ২০১১ ০৫:৫০472253
  • ২৪)
    ভবানীপুরে হাজরা মোড়ের কাছে বড় রাস্তার ওপর কটা দোকান ঘর, পাশ দিয়ে সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলায়। দোতলায় একটি সওদাগরি অফিস। তাতে তাক ভর্তি নানারকম ফাইল। গোটা কয় টেবিল-চেয়ার।দুটো রেমিংটন টাইপ রাইটার। রোববারের সকাল দশটা।
    টেবিল ঘিরে ওরা জনা ছয়, একজন সদ্য কলেজ পেরোনো মেয়ে। মেয়েটি বড় গম্ভীর, কখনো হাসে না।হরিদাস পাল জেনে গেছে ওকে ডাকতে হবে রীনাদি।
    ফলে বাকি ছেলেগুলোর একটু ইল্লি হয়। ওরা চায় মেয়েটি একটু হাসুক, সহজ হোক।
    রমেনের কানে ফিসফিস করে সুকান্ত বলে-- ভাবটা দেখ, যেন বিপ্লবের জন্যে উৎসর্গীকৃত প্রাণ। শালা, বিপ্লবীরা ডাউন-টু-আর্থ হয় না? পরশু চিড়িয়াখানার মিটিংয়ে আসেনি। জিগ্যেস কর , ভারি গম্ভীর সব কারণ বলবে। আসলে ওর একজন লাভার আছে। সে অন্য গ্রুপে। তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল।
    -- তো কি হয়েছে? প্রেম করা কি প্রতিবিপ্লবী কাজ?
    -- ধ্যেৎ, তাই বলেছি? কিন্তু ভড়ং না করে সত্যি কথাটা বললেই পারে।
    ওরা সবাই অপেক্ষা করছে ওদের গ্রুপ লীডার প্রলয়েশের জন্যে। উনি সদ্য জন্ডিস থেকে সেরে উঠেছেন। আজ ডাকতার দেখিয়ে আসবেন। রমেনের মনে ব্যাপক কৌতূহল। আজই প্রথম দেখবে ও প্রলয়েশকে। ও জানে পোস্ট অফিস ডাকাতিতে প্রলয়েশের বিশেষ ভূমিকা ছিল। যদিও এই নিয়ে কেউ কোন কথা বলে না, তবু, যদি একটু গল্পটা জানা যায়! ব্যাপারটা কিরকম করে ঘটেছিল।
    রমেন ছটফট করে উঠে জানালার কাছে যায়, নীচে ট্রাম-বাস-ট্যাক্সির চলাচল দেখতে থাকে।
    পেছন থেকে সুকান্ত বলে -- ছটফট করছিস কেন? জানলা দিয়ে মেয়ে দেখছিস? ওদিকের ফুটপাথে কাঁধে শান্তিনিকেতনী ব্যাগ কাঁধে মেয়েটিকে দ্যাখ, ঠিক যেন ""গৃহদাহ'' ফিল্মের সুচিত্রা সেন।
    -- তাহলে এদিকের ফুটপাথে সদা স্কার্ট পরা মহিলাটি হলেন "" দ্বীপ জ্বেলে যাই''।
    ওরা হেসে ওঠে। রীনা চৌধুরি এইসব অপোগন্ডসুলভ হরকতে একটু বিরক্ত ভাব দেখান।
    --- আরে, ঐযে ট্রাম থেকে নেমেছে ওকে চিনি। আমাদের পাড়ায় চারু মার্কেটের গলিতে থাকে।
    -- কোনজন?
    -- ধ্যুৎ, ওই যে ভাগলপুরি গাই!
    -- মানে?
    -- উ: এটাও জানিস না?
    সুকান্ত মানে বোঝায়। রমেনের দন্তবিকশিত হয়।
    --জানো সুকান্তদা, আমারও না একটা ভাগলপুরি গাই জুটেছিলো, এখন কেটে গেছে। পাড়ার ডাক্তার আমার শরীর ভেঙে যাচ্ছে দেখে বলছে নিয়মিত এক পো' করে দুধ খেতে, পয়সা কোথায়? ইস্‌, তখন যদি বলতো!
    ওদের ফ্যাকফ্যাক হাসিতে রীনা ভারি বিরক্ত হয়ে বলেন-- বেটার লাফ উইথ আস, নট অন আস্‌। হাসির গল্পটা আমরাও একটু শুনি।
    আতংকিত রমেন চোখের ইশারায় না-না করে ওঠে। কিন্তু সুকান্ত যেন দেখেও দেখলো না।
    --- রীনাদি, জানেন রমেন কী বলছে? আর ভাগলপুরি গাই ছেলেরা কাকে বলে জানেন?
    রীনার চেহারা রাগে বেগুনি হয়।
    রমেন দুহাত জোড়ে।
    --বিশ্বাস করুন, আমি ঠিক ওভাবে বলিনি। এটা সুকান্তদা বাড়িয়ে বলছে। আর এসবের সঙ্গে আপনার কোন সম্পর্ক নেই।
    -- আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না রীণাদি। এই রমেন বয়সে সবচেয়ে ছোট, কিন্তু মহাবিচ্ছু, একেবারে ধানীলংকা।
    -- না রমেন, এসব সহ্য করা যায় না। আমরা কি বখামি ইতরামি করতে ঘরদোর ছেড়ে এখানে এসেছি?
    রমেনের চেহারা কাঁদো-কাঁদো। মুখদোষে মার গলে! কেন যে এত কথা বলে ও, একটু চুপ করে বসতে পারে না। ওকে আজ দল থেকে বের করে দেবে? তাহলে ওর যে বিপ্লব করা হবে না। ঠিক আছে, এরাই সব নাকি? প্রেসিডেন্সি কো-অর্ডিনেশন আছে, লোকায়ন আছে।
    দরজা খুলে যায়। প্রলয়েশ এসেছে। ফর্সা একহারা চেহারা, গালে হাল্কা চাপ দাড়ি। আরে, একে তো রমেন চেনে। বছর দুই আগের সিপিএম এর ছাত্র ফরন্টের ডাকসাইটে নেতা, বেহালায় বাড়ি।
    প্রলয়েশ ব্যাগ নামিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। সিগ্রেট ধরায়।
    --এজায়গাটা আমরা টিউটোরিয়ালের জন্যে ভাড়া নিয়েছি, তা তোমাদের বইখাতা কোথায়? সবাইকে একটা অংক-সিভিক্সের বই আর একটা পুরনো খাতা আনতে বলেছিলাম না?
    সবাই বাধ্যছেলের মত কাজ করে।
    কিন্তু, দরজাটা এবার বেশ জোরে খুলে যায়।
    দরজা আটকে দাঁড়িয়ে একজন চল্লিশ পার রাশভারী ভদ্রলোক, হাতে একটি গ্ল্যাডস্টোন ব্যাগ। অবাক বিস্ময়ে বলেন-- হু আর ইউ? এখানে আমার আফিসে ছুটির দিনে কি করছ? চাবি কোথায় পেলে?
  • til | 165.12.252.211 | ০৮ জুলাই ২০১১ ১৪:১২472254
  • তার্পর?
  • siki | 123.242.248.130 | ০৮ জুলাই ২০১১ ১৪:২০472255
  • একঘর!
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৮ জুলাই ২০১১ ২০:৫৭472256
  • উফ! রঞ্জনভাউ---প্লিজ এবারে একেবারে এটা শেষ না করে কোনো দিকে তাকাবেননা----জাস্ট অসা!!
    এটার চটি-বই কবে বেরুবে? আমি আমার কপি বুক করে রাখলাম।
  • ranjan roy | 122.168.248.196 | ০৯ জুলাই ২০১১ ০০:১৭472257
  • প্রলয়েশের স্মার্টনেস গায়েব। থতমত খেয়ে বলেন --আমরা আপনার কোম্পানির অমিতকুমারের থেকে অনুমতি নিয়েছি। রোববার-রোববার এখানে সিলেক্টেড স্টুডেন্টদের জন্যে স্পেশাল টিউটোরিয়াল চালাই।
    -- তুমি কি মাস্টার!
    -- হ্যাঁ।
    --তাহলে সিগ্রেট খাচ্ছ কেন? আর তোমার এই সব ছাত্র? মাস্টারের সামনে সিগ্রেট খাচ্ছে! আমি অমিতের সঙ্গে কথা বলবো।
    গজগজ করতে করতে উনি বেরিয়ে যান। আমরা ভাবি- যাক, শালা খোচর তো নয়।
    রীনা চৌধুরির রমেনের ব্যাপারে অভিযোগ প্রলয়েশ বিশেষ গুরুত্ব দিলেন না। রমেনকে বেশি চ্যাংড়ামি করার জন্যে বকলেন বটে, কিন্তু হরিদাস পাল দেখলো ওনার চোখ দুটো হাসছে।
    -- আমরা এবার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পড়বো লেনিনের "" হোয়াট ইজ টু বি ডান্‌''--- কী করিতে হইবে।
    বিশেষ চ্যাপ্টারগুলো মার্ক কর, সবাই। তাতে বলা হয়েছে ""পেশাদার বিপ্লবী'' বা প্রফেশনাল রেভল্যুশনারিদের কথা। আমরা সংক্ষেপে বলি PR
    আমাদের সংগঠনের লক্ষ্য এই পি আর তৈরি করা, ওদের নিয়ে কাজ করা।
    রমেন হতভম্ব। -- এক মিনিট! আমি জানতে চাই গণসংগঠন নিয়ে আমাদের দলের চিন্তা কী?
    --- আমরা গণসংগঠনে বিশ্বাস করি না। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে গণসংগঠনে সহজেই পুলিসের খোচর যাকে বলে mole সহজে ঢুকতে পারে। তাই আমরা বিশ্বাস করি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনে।
    এবং তা হবে অবশ্যই পেশাদার বিপ্লবীদের।
    -- কিন্তু, কিন্তু-- আজ অবদি যা শুনে দেখে এসেছি, মানে যেমন ধরুন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা মেহনতী জনতার বিভিন্ন ফ্রন্ট আগে বানায়-- যেমন ছাত্র, ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষকসভা, মহিলা সংগঠন--।
    এগুলো লেনিনের বক্তব্যের গৌণ দিক। শুধু এইদিকটাকেই হাইলাইট করে সংশোধনবাদীরা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা লেনিনের শিক্ষার বিপ্লবীদিকের ওপর জোর দিচ্ছি।
    এবার সুকান্ত বলে--- রমেন, লেনিন যে বলেছিলেন গিভ মি টুয়েলভ প্রফেশনাল রেভলুশনারি, আই উইল আপটার্নড দ্য হোল ওয়ার্ল্ড, সেটা কখনো এইসব সিপিআই-সিপিএম বলে? না। ওরা ভয় পায়।
    কী জানি বাবা, লেনিন কবে এইসব অলুক্ষুণে কথা বলে গেছেন।
    -- রমেনকে আজ ওই দুটো বই পড়তে দাও। এম মন্টিস্লাভস্কীর লেখা ""বসন্তের দূত রুক'', অনুবাদ অশোক গুহ।
    -- রুক কে?
    --- রুক ছিলেন লেনিনের বলশেভিক কোরের সিক্রেট পার্টি সংগঠনের প্রাণপুরুষ, এন বাউম্যান। ১৯০৫ এর ব্যর্থ বিপ্লবে মারা যান। উনি বহুবার ধরা পড়েছেন, আবার পালিয়েছেন। জারের পুলিশ ওনাকে তন্ন তন্ন করে গোটা রাশিয়া খুঁজে বেড়াত।
    --- এমনি কারো নাম তো শুনিনি!
    -- কোত্থেকে শুনবে? এগুলো তো ওরা প্রচার করে না, করলে ওদের বিপদ। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? এই দেখ, "" হোয়াট ইজ টু বি ডান'' এর উৎসর্গপত্রে এন বাউম্যানের নাম। ইসক্রা পত্রিকার গুপ্তপ্রেস উনি চালাতেন।
    -- আচ্ছা? আমাদের বিপ্লব নিয়ে ধ্যানধারণা খানিকটা ওই অনুশীলন-যুগান্তর দলের চিন্তার মত নয়?
    দু'জন হেসে ফেলে।-- বেড়ে বলেছিস, লাগসই।
    প্রলয়েশ গম্ভীর হয়ে বলে-- অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সম্বন্ধে হালকা ভাবে কথা বলবে না। মানছি, ইতিহাস শুধু বিজয়ীদের মনে রাখে। কিন্তু সাময়িক ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন মানেই তাঁদের চিন্তা ভুল, এমন তো নয়! আসলে আমরাই তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরী--- সরকারি কমিউনিস্টেরা নয়।
    অফিসটিতে তালা লাগাবার সময় ঠিক হল এখানে আর বৈঠক করা ঠিক হবে না।

  • ranjan roy | 122.168.239.216 | ১২ জুলাই ২০১১ ০০:৪৫472259
  • ২৫) হরিদাস পাল মন দিয়ে পড়ে ফেলে ''বসন্তের দূত রুক''। চমৎকার রোম্যান্টিক লেখা, থ্রিল ও সাসপেন্স এ ভরা।
    সেই সাইবেরিয়ার প্রান্তর দিয়ে ট্রেন ছুটে যাওয়ার সময় পুলিশের স্পাইকে তাসের জুয়োয় আটকে দিয়ে বাথরুম থেকে বরফের ওপর লাফিয়ে পালিয়ে যাওয়া আবার পার্টি সমর্থক ডেন্টিস্টের বাড়িতে শেল্টার নিতে গিয়ে তার যোগসাজসেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া!
    আর ১৯০৫ এর পেট্রোগ্রাডের সেই অভ্যুত্থান! তার প্রস্তুতি! শ্রমিকদের হাতিয়ারবন্দ করা!
    কিন্তু ব্যর্থতা, শেষে ব্ল্যাক হান্ড্রেড এর ভাড়াটে গুন্ডার হাতে বাউম্যানের মৃত্যু। আর পেত্রোগ্রাদের রাস্তায় বিশাল শোকমিছিল। হরিদাস পাল উর্ফ রমেনের চোখের পাতা ভিজে যায়।
    কিন্তু কিছুদিন পরে বুঝতে পারে ওর সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে যখন ইস্ক্রাপন্থীরা গুপ্তপ্রেস দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন তখন্‌কার একটি বর্ণনা।
    একটি গাঁয়ের ঘরে সেই গোপন ছাপাখানা। একটি মেয়ে আর দুজন কর্মী আগামী সংখ্যার প্রকাশন নিয়ে ব্যস্ত। সব প্রায় ঠিক। কিন্তু লেনিনের একটি বাইরে থেকে পাঠানো ছোট প্রবন্ধ এখনো এসে পৌঁছয়নি যে। বিশেষ দূত এক মহিলা সেসব নিয়ে আসবেন।
    অবশেষে সেই মহিলা পৌঁছে গেলেন। বাইরে তুষার বৃষ্টি। মোটা মত মহিলা শীতে কালিয়ে গেছেন।উনি ওনার কোট খুলতে লাগলেন। আর রোগা হতে থাকলেন। ভেতরে গায়ে গায়ে বেঁধে এনেছেন গোপন ইস্তেহার। কোট নামাতেই উনি হয়ে গেলেন একহারা সুন্দরী মহিলা। আর কি কান্ড! বাউম্যান দৌড়ে গিয়ে তাঁকে চুমো খেতে লাগলেন। আসলে তিনি বাউম্যানের স্ত্রী, হেডকোয়ার্টারের গোপন কর্মী। ওঁদের দেখা হল এক বছর পর।
    হরিদাস পাল রোমাঞ্চিত। তাহলে বিপ্লবী হতে গেলে আনন্দমঠের সন্ন্যাসী হতে হবে না! রোম্যান ক্যাথলিক পাদরী ও নয়! রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা যেমন মাছমাংস খান, তেমনি কমিউনিস্ট বিপ্লবীরাও বেশ রসে বশে থাকএন।
    --দূর বোকা! মার্ক্সের ছিলেন জেনী, এংগেলস এর ও এক আইরিশ মহিলা। লেনিনের ক্রুপ্‌স্‌কয়া, স্তালিনের তো মেয়েও ছিল। আর মাও?
    -- ওনার তো চারটে বউ।
    -- বাজে বকিস না! প্রথম বিয়ে তো বাল্যবিবাহ-পুতুলখেলা। দ্বিতীয় বউকে ফাঁসিতে লটকে দেয়া হলে মাও সারারাত কেঁদে কবিতা লিখেছিলেন-- I have lost my proud poplar!
    ----বেশ, কিন্তু তৃতীয় বউ? কাব্যে উপেক্ষিতা? লং মার্চের সাথী, অতগুলো বাচ্চার মা। শেষে অপেরার হিরোয়িন ল্যাং পিং এর সঙ্গে দেখা হতেই আগের জনকে তালাক! ধম্মে সইবে? মেয়েটা তো প্রায় আদ্দেক বয়সের।
    -- ওতো লাভ ম্যারেজ, বয়সের কথা কোত্থেকে আসছে?
    --ছো:, লাভ ম্যারেজ! মাও তখন নয়াচীনের একমেবাদ্বিতীয়ম! উনি চাইলে কোন মেয়ে না করবে?
    -- এসব চীপ বুর্জোয়া অপপ্রচার!
    প্রলয়েশ বলে-- এইসব অনর্থক তক্কাতক্কি! এনিয়ে চীনের পার্টি ও জনগণ বিচার করবে? আমাদের কি মাথাব্যথা? বরং এই ম্যাপটাকে দেখ, ফোর্ট উইলিয়মের। রমেন, ভাব তো কোথায় কোথায় এল এম জি বসালে ফোর্ট উইলিয়মের চারদিকে ঘেরাবন্দী করে অন্তত: দশঘন্টার মত ফোর্ট উইলিয়ম থেকে সৈন্যেরা বেরোতে না পারে।
  • ranjan roy | 122.168.217.200 | ১৭ জুলাই ২০১১ ০৮:৪৬472260
  • হরিদাস পাল ভ্যাবাচাকা খায়। ফোর্ট উইলিয়ামের ম্যাপ! মানে?
    আমরা কি ইস্টার্ন কম্যান্ডের ঘাঁটি দখল করতে যাচ্ছি? কবে? এই ক'জন মিলে!এ কোথায় এসে পড়েছি? পাগলাগারদে?
    হরিদাস পাল ভাবতে থাকে।
    কি করে এদের সঙ্গে জুটলাম!
    গত বছর মৌলানা আজাদ কলেজের ইকনমিক্স ডিপার্টমেন্টের এক সিনিয়র স্টুডেন্টের বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল, কিছু বইয়ের লেনদেন এবং আড্ডা।(উনি আজকাল আই আই এম জোকার অধ্যাপক ড: রাঘব চট্টোপাধ্যায়)।
    উনি তখন ভারতে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের জায়গায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের তঙ্কেÄর প্রবক্তা।
    একটু তঙ্কেÄর কচকচিতে নাক গলাই!
    সেই সময় সিপিএম-নকশাল সবাই বলতেন যে ভারতে দেশ স্বাধীন হওয়া সঙ্কেÄও জমিতে সামন্ততান্ত্রিক বন্ধন ও পুঁজির ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী নাগপাশ রয়ে গেছে। তাই আমাদের দরকার জনগাণতান্ত্রিক বিপ্লব, যার মূল কথা কৃষিবিপ্লব। এতে জোতদার-জমিদারদের থেকে জমি ছিনিয়ে নিয়ে গরীব কৃষক আর ভূমিহীনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হবে।
    আর বিদেশি পুঁজি বাজেয়াপ্ত করে দেশে শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তের সরকারের নিয়ন্ত্রণে দেশি পুঁজির বিকাশ করতে হবে।
    সিপিএম-নকশালদের মধ্যে তফাৎ ছিল বিদেশি পুঁজির নিয়ন্ত্রণ কতটুকু সে নিয়ে।
    যেমন সিপিএমের মতে টাটা-বিড়লা স্বাধীন পুঁজিপতি, ন্যাশনাল বুর্জোয়া। নকশালদের মতে ওরা বিদেশি পুঁজির এজেন্ট , কম্প্রাডর বুর্জোয়া।
    আর এস পি, এস ইউ সি--এঁরা বলতেন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের কথা।
    রাঘব চট্টো: রা ছিলেন এক মাইনরিটি গ্রুপ। ওঁরা নানা স্ট্যাটিসটিকস দিয়ে দেখাতেন যে আসলে বিকাশের প্রক্রিয়া এত সরল নয়। কৃষিতেও ক্ষেতমজুর অর্থাৎ মজুরি-শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়ছে। এবং পুঁজির ক্ষেত্রেও স্বাধীন ন্যাশনাল বুর্জোয়া ও বুরোক্র্যাট নির্ণায়ক অবস্থানে রয়েছে।
    ফলে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করতে হবে। নকশালরাও সিপিএম এর ব্যুরোক্র্যাটিক কালচার নিয়ে এগোচ্ছে। তাই ওদের ও কোন ভবিষ্যৎ নেই। আর চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব যে ভাবে এগোচ্ছে তাতে মনে হয় এখন বুড়ো মাওয়ের ডেভলাপমেন্ট জৈবিক নিয়মেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কমরেড চিয়াং চিং(মাওয়ের চতুর্থ স্ত্রী, পরে দেং জিয়াও পিং এর আমলে চারচক্রের প্রধান হিসেবে বন্দী এবং সম্ভবত: জেলেই প্রয়াত) বিশ্ববিপ্লবের নেতা ইত্যাদি ইত্যাদি।
    হরিদাস পাল সব সময়েই নতুন কথা এবং মাইনরিটি গ্রুপের ভয়েসের প্রতি আকৃষ্ট। তাই সে হাজির দক্ষিণ কোলকাতার বিবেকানন্দ পার্কের পাশে রাঘবের সেতারী পিতার সরকারী আবাসনে। ভরদুপুরে গিয়ে দেখে সেখানে আরেকজন তরুণের সঙ্গে রাঘবের তুমুল তর্ক চলছে। তার মধ্যে কিছু কথাবার্তা কোডে হচ্ছে, যার মানে বোঝা ওর অসাধ্য। সে যাই হোক, একসময় হরিদাস পাল উঠে দাঁড়ায়।
    সেই অন্য ছেলেটিও, অনেকটা বক্সার মহম্মদ আলির মত দেখতে, উঠে দাঁড়ায়। বলে- চল, বাস স্টপ অব্দি একসঙ্গে যাই।
    রাঘবের সঙ্গে ওর চোখে চোখে কথা হয়।
  • ranjan roy | 122.168.206.171 | ১৭ জুলাই ২০১১ ২৩:৪৭472261
  • তৃতীয় দিন কলেজের ক্যান্টিনে লুঙ্গিপরা মামুর দেয়া কাগজের আগুনে হরিদাস পাল চার্মিনার ধরাচ্ছিল, রাঘব ওর পিঠে হাত রাখল।
    -- নীচে রাস্তায় চল, তোর সঙ্গে কথা আছে।
    হরিদাস পাল চমকে উঠলো। কথা ঘোরানোর চেষ্টায় বললো--দেখেছ রাঘবদা, এখন থেকে চার্মিনারের প্যাকেট দাম বেড়ে ২৮ পয়সা হয়ে গেছে। আর ভেতরে একটা পাতলা সাদা কাগজ ও জোড়া হয়েছে। রজত সেন বলছিল-- চারুবালা আজকাল সায়া পরা শুরু করেছে।
    -- বাজে কথা ছাড়্‌। সেদিন আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলি? নিশচয় সোজা বাস স্টপ যাসনি। ওই ছেলেটা নিশ্চয় তোকে বিবেকানন্দ পার্কে নিয়ে গেছল। তার পর চা-সিগ্রেট খাইয়েছিল। আর তোকে বলেছে রাঘব জিগ্যেস করলে এসব অস্বীকার করতে।
    হরিদাস পালের হাওয়া বন্ধ। ও তোতলাতে থাকে।
    -- শোন, ন্যাকামো বন্ধ কর। তুই কি বলবি আর কি বলবি না! ও আমার পুরনো বন্ধু। যা বলছি মন দিয়ে শোন। ও একটা ফ্যাসিস্ট অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যুক্ত। ওরা ইয়ং ছেলেদের নিয়ে খুব ভাও দেয়। আর লেনিন-স্তালিন-বাউম্যান-জেরজিনস্কি আওড়ায়। আর ক্যাল-আপ এর কথা বলে।
    -- ক্যাল-আপ?
    -- হ্যাঁ, হ্যাঁ, ক্যালকাটা আপসার্জ। বিপ্লবের এমন গেঁড়ে ব্লু-প্রিন্ট কোথাও পাবি না। এদের কোন ইডিওলজিক্যাল কথাবার্তা বলতে শুনতে পাবি না। শুধু স্টেনগান, এল এম জি, মর্টার এইসব। এদের লং মার্চের বোকা-- প্রোগ্রাম আর মাওয়ের ইয়েনান অব্দি কয়েক হাজার লি লং মার্চ একদম আলাদা ব্যাপার। তোকে নিশ্চয়ই আবার কোন পার্কে বা সিনেমা হলের সামনে দেখা করতে বলেছে? খবর্দার যাবি না।
    -- সত্যি কথা বলতে কি, কালকেই বিকেল সাড়ে তিনটেয় ভিক্টোরিয়ার সামনে দেখা করার কথা।
    -- এদের কাজকম্মো সব পঞ্চাশ বছর আগের অনুশীলনী, যুগান্তর দলের মতন।
    --- রাঘবদা, এদের তাঙ্কিÄক নেতাটি কে?
    -- পরে কহনো জানতে পারবি। এক বিগড়ে যাওয়া প্রক্তন বিপ্লবী।
  • aranya | 144.160.226.53 | ১৮ জুলাই ২০১১ ০৭:২০472262
  • এই বিগড়ে যাওয়া অগ্নিযুগের বিপ্লবীকে চিনতে পারছি মনে হচ্ছে, 'সাদা আমি, কালো আমি'-তে রুনু কি একেই শত্রু হিসেবে বেশ সম্ভ্রম দেখিয়েছিলেন ?
    প্রাত: প্রনাম রঞ্জন-দা। কি ভয়ঙ্কর ভাল যে লিখছেন। চটি হিসেবে এটা বের করতেই হবে।
  • ranjan roy | 122.168.255.158 | ১৮ জুলাই ২০১১ ১৮:০৭472263
  • ২৬)
    না, হরিদাস পাল সেদিন আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট রাখতে পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় যায় নি। বেশ কিছু মাস কেটে যায়। ওদের কথা প্রায় ভুলে গেছিল। কিন্তু তাহলে কি করে আজ ওদের সঙ্গে বসে আছে?
    --রমেন, কি ভাবছ? শোন, তোমার চেনা কোন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার আছেন? এই পেন্সিলে আঁকা ডায়াগ্রামটা নাও। আমি এর একটা প্ল্যান আর আইসোমেট্রিক ভিউ ভাল করে ড্রয়িং শীটে আঁকা চাই। যদি কিছু অল্পসল্প খরচা লাগে তাহলেও চলবে।
    রমেন একনজর দেখে বাড়ানো কাগজটা। তাতে সিলিন্ড্রিক্যাল একটি ফিগার, তার গোলাকার মুখটাতে গোটা পাঁচেক ফুটো।
    এটা কি কোন এলএমজি বা অমনি কোন অস্ত্রের ড্রয়িং? আবার তাকে বিশ্বাস করে কাজটা দেয়া হয়েছে! রমেন রোমাঞ্চিত বোধ করে। বিশ্বাসের সম্মান রাখতেই হবে। ও হরিদাস পাল বটে, কিন্তু কারো বিশ্বাসের বাড়ানো হাতের সঙ্গে ধোঁকা! না:, নিজের কাছে ছোট হয়ে যাবে যে!
    সত্যি? তাহলে সংঘমিত্রার ব্যাপারটা কি হল?
    না, ওকে তো ঠকানো হয় নি। কিন্তু ও নাকতলা ছেড়ে হুগলী চলে গেলে হরিদাস পালের কি করার আছে।
    -- অ্যাই রমেন! ওঠ, আমরা যাই। এখন বড়দের মধ্যে ক্যাচাল হবে। তুই-আমি এসবের মধ্যে কেন থাকবো? চল, ধর্মেন্দ্র-আশা পারেখের নতুন ফিল্ম ""শিকার'' এসেছে মেনকায়।
    হেলেন আছে, "" পর্দে মেঁ রহনে দো''--- টপ দিয়েছে।
    শচীন ওর দিকে হাসি-হাসি মুখে তাকিয়ে।
    রমেনের চটকা ভাঙে, দেখে ঘরের মধ্যে আবহাওয়া বেশ গরম। রীনা চৌধুরির মাসের ওয়েজ পুরো খরচা হয়ে গেছে। হাতে আরো বারো দিন।
    দলনেতা প্রলয়েশ ওয়েজ বাড়াতে বা অ্যাডভান্স দিতে একেবারে রাজি নয়।
    -- আপনি এত কথায় কথায় ট্যাক্সি চড়লে এই ওয়েজে পোষাবে না। বাসে সবাই যাতায়াত করছে। ট্যাক্সি এমার্জেন্সিতে। আপনার রোজই এমার্জেন্সি হয় কি করে! কি এমন রাজকাজ?
    খোঁচা খেয়ে রীনা চৌশুরি প্রায় ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিলেন।
    -- আপনি মেয়েদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছেন না। সবসময় ভীড়ের বাসে আমি উঠতে পারি না।
    শচীন ও রমেন বেরিয়ে যায়।
    রাস্তায় শচীন ওকে বোঝায়।
    -- দেখ্‌, আমরা যখন তখন পয়সা ওড়াতে পারিনা। লোকের চোখ টাটাবে, তারপর পুলিশের খোচরের কানে যাবে। আর ?
    -- আর পোস্ট অফিস ডাকাতির মামলা সলভড্‌ হয়ে যাবে।
    ওরা দুজনে হা: হা: করে হেসে ওঠে।
    -- দেখ, আমরা ক্রিমিনাল নই। আমরা রাজনৈতিক ডাকাত। আদর্শের জন্যে। অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের মত।
    আমরা এই পয়সায় লাক্সারি করতে পারি না। মাগীবাজি করতে পারিনা।
    -- তা আজ যে সিনেমা দেখবো?
    হিন্দি সিনেমা!
    -- সাধারণ সীটে বসবো, ব্যালকনিতে নয়। এটুকু কিছু না। অমেরিকান থ্রিলারগুলো পড়ে দেখবি সব সাকসেসফুল ডাকাতরা ধরা পড়ে বেধড়ক পয়সা খরচ করতে গিয়ে আর রন্ডীবাজি করতে গিয়ে।
    ভালকথা, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন নিয়ে সিনেমাটা দেখেছিস?
    -- না:, কিন্তু প্রীতিলতার জীবনী পড়েছি, সুর্য্য সেনের জীবনী পড়েছি।
    -- "" চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ'' দু'খন্ডে, --পড়েছিস? অনন্ত সিংয়ের লেখা। পড়ে ফ্যাল, ঠকবি না।
    -- রীনাদির ব্যাপারটা কি বলতো? প্রলয়েশ একটু বেশি হার্শ বিহেভ করছে না কি?
    -- ঠিক করছে। রীনা ওর লাভারের সঙ্গে ফাট দেখিয়ে ট্যাক্সি করে ঘুরবে সংগঠনের পয়সায়? ওর ওয়েজ বাড়াতে হবে? এটা কোন কথা হল? আমাদের লাভার নেই তো কি আমরা ফালতু! বন্দুক ধরবো আমরা আর--।
    শোন, রীনা হল প্রলয়েশের শালী, কিন্তু ওদের মধ্যে খাড়াখাড়ি আছে। কারণ প্রলয়েশ যখন রীনার বড় বোনকে বিয়ে করতে যায়, তখন রীনা বাধা দিয়েছিল।
    -- কেন?
    -- মেয়েদের সাইকোলজি তুমি কি বুঝবে, তুমি এখনো বাচ্চাছেলে!

    শচীন হা-হা করে হেসে ওঠে।
  • siki | 122.162.75.15 | ১৮ জুলাই ২০১১ ২১:০৬472264
  • ফাটাফাটি। তুলকালাম!! আগে ...
  • A | 14.98.243.255 | ১৯ জুলাই ২০১১ ২৩:০০472265
  • দেবী রায়ের একটা বই আছে, "আরক্ষার বৃত্ত থেকে', ওখানে পার্ক স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, ব্যাংক, ডাকঘর, পান্নালাল ঘোষ, অনন্ত সিংহ ইত্যাদি আর সময়কালটা পাওয়া যাবে।
  • A | 99.183.187.229 | ১৯ জুলাই ২০১১ ২৩:০৫472266
  • উপরের A (14.98.243.255) টি আমি নই। বলার কোন দরকার ছ্যালোনা তাও বল্লাম আর কি :)

    ~অমৃতা
  • ranjan roy | 122.168.219.234 | ২৩ জুলাই ২০১১ ০১:৫১472267
  • ২৭)\
    ( ডি: সংশোধনী-- পোস্ট অফিস ডাকাতি আসলে ১লা জুলাই ১৯৬৮; বাস্তবে ওটা ছিল সদর স্ট্রীটে। আর পার্ক স্ট্রীট স্টেট ব্যাংক ডাকাতি যাতে সিকিউরিটি গার্ড মারা যায়, সেটা ঘটেছিল ১৯৬৯এ)
    আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠী ১৯৬৮র শীতের শেষে ময়দানে মুক্তমেলার আয়োজন করলেন। এক রোববার। জানা গেল কোথায় তুষার রায় গাছের তলায় দাঁড়িয়ে তাঁর কবিতা ""ব্যান্ড মাস্টার'' পড়ছেন। কোথাও সুনীল গাঙ্গুলী এসে বলছেন আমিও গান গাইব। কোথাও একটি আলাদা ভীড়ের সামনে কোন বাউল পল্লীগীতি গাইছে। কোথাও থিয়েটার ক্যাম্প বলে একটি নাটকের দল ভিয়েৎনামের নিয়ে নাটক করছে।
    কিন্তু হরিদাস পালদের কাছে খবর পৌঁছলো যে ওখানে আবাপ গোষ্ঠী ডেকাডেন্ট কালচার প্রোমোট করছে।
    ওখানে নাকি মা-মেয়ে হাতে রুমাল নিয়ে ভীড়ের সামনে নাচছে-- '' বোল, গোরী বোল, তেরা কৌন পিয়া''। আর নাকি শকুন মেরে গাছ থেকে টাঙিয়ে তার নীচে কবিতা পড়া হচ্ছে।
    - কেন?
    --- বুঝলি না? ওটাই তো বিকৃতি। এইসব আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী সংস্কৃতির ধামাধরা লোকগুলো যৌনবিকৃতি অসুস্থ সংস্কৃতির প্রচার করে। ওরা ড্রাগস্‌-গাঁজা না খেয়ে লিখতে পারে না। ওই আবাপ'র কবিগুলোকে দেখ, বীটনিক কবি অ্যালেন গীনস্‌বার্গ এর বন্ধু। ওদের লেখায় শ্রেণীসংগ্রাম নেই, খালি সেক্স আর অবক্ষয়। ইয়ং জেনারেশনকে গোল্লায় পাঠানোর চক্রান্ত। আমাদের কিছু করা দরকার।

    সম্ভবত: দু'সপ্তাহ পরে যখন মুক্তমেলার দ্বিতীয় প্রোগ্রাম আবাপ'তে ঘোষণা করা হল। ছোট ছোট দলে কিছু নকশালপন্থী ছেলেরা ওখানে পৌঁছলো।
    হরিদাস পালের তখন তিন জায়গায় ঠিহা। কফি হাউস-প্রেসিডেন্সির আড্ডায় যাওয়া বেশ কমে এসেছে। আছে নাকতলা- গড়িয়া-বাঘাযতীন , যার কেন্দ্রবিন্দু এন্ড্রুজ কলেজ, মানে মলয়-দেবু-মনোজ-হিমাদ্রী-বাদল। আর অবশ্যই একটি মেয়ে, ওর সঙ্গে দেখা হলেই ও হাসে। মেঘলা দিনট ঝলমলিয়ে ওঠে। কিন্তু মেয়েটি পড়াশুনো ছেড়ে বামপন্থী রাজনীতি করাকে নাকচ করে দেয়।
    যাকগে, হরিদাস পাল ময়দানে পৌঁছে দেখলো একজায়গায় প্রকাশ কর্মকার ও শর্বরী রায়চৌধুরী তাঁদের ছবি ও ইনস্টলেশন সাজিয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছেন।
    একজায়গায় একটি গ্রুপ করচ্ছে অলীকবাবু নাটক। তাতে এক অভিনেতা তাঁর অসাধারণ চার্লি চ্যাপলিনোপম বডি ল্যাংগোয়েজযুক্ত অভিনয়ে পাবলিককে নড়তে দিচ্ছে না। তারপর অভিনীত হল ""কালোজাম'' বলে একটি আধাঘন্টার নাটক, পাঁচশ' বছর আগের স্প্যানিশ নাট্যকারের লেখা। তাতে রঙ্গব্যঙ্গের আড়ালে ফুটে ওঠে গরীব চাষীর সামান্য জমি পাওয়ার চিরন্তন স্বপ্ন।
    এবার ও যায় বাউলদের আড্ডায়--"" সর্প হইয়া দংশ গো গুরু, রোজা হইয়া ঝাড়; রমণী হইয়া গুরু পুরুষের মন হর। ও গুরু, কাঙাল জানিয়া পার কর।''
    বাউলেরা একটু দম নিলে ধুতির ওপর কালো কোট পরা গ্রামীণ চেহারার একজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে ওঠে-- আমি পুর্ণিয়া জেলার; আপনাদের একটি চুটকুলা শোনাতে চাই।
    ভীড় সমস্বরে-- চালাও, চালাও!
    -- আমাদের গাঁয়ের একজন রেলগাড়ি চলে কলকাত্তা আসবে, কোনদিন রেলগাড়ি দেখেনি, কি করে চিনবে? আমি বলেছি,- ইস্টেশান যাইয়ে। ওহাঁ লাইন পর যো দিখবে কালে রং, নীচে সে পানি ছোড়বে, উপর সে ধুঁয়া, ওটাই রেলগাড়ি আছে। ব্যস্‌, চড় যানা।
    তো হমার দোস্ত করল কি ইস্টেশানে গিয়ে দেখল বাঙালী টিটিবাবু কালা কোট, মুখে সিগারেট, লাইনের ওপর বসে পিসাব করছে। তো ও সোজা ওর পিঠে চড়ে বসে বললো-- অব্‌ লে চলো কলকাত্তা!
    ভীড়ের মধ্যে কেউ হাসল না।
    হটাৎ দৌড়তে দৌড়তে এসে হাজির সুকান্ত,-- আরে রমেন, তুই এখানে কি করছিস্‌? চ, চ! ওখানে ঝামেলা লেগে গেছে।

  • ranjan roy | 122.168.175.34 | ২৪ জুলাই ২০১১ ০২:০৬472268
  • গিয়ে দেখি একটা জায়গায় বিশাল জটলা। পাঁচ-ছজনের হাতাহাতি চলছে, কিন্তু নিরপেক্ষ জনগণ একটু পরেই দুই যুযুধান পক্ষকে আলাদা করে জানতে চাইলেন ব্যাপারটা কি?
    আশুতোষ কলেজের ছাত্রনেতা সৎপথী উত্তেজিত ভাবে বললো--এখানে বাংলার মাটিতে অবক্ষয়ী ইয়াংকি কালচারের প্রচার আমরা সহ্য করব না!
    ( আজকে কেমন বেঙ্গালুরুর মর‌্যাল পুলিশদের কথার মত মনে হয় না?)
    তখন দর্শকদের মধ্য থেকে বলা হলো ঝগড়া না করে আপনারাও আপনাদের মত বিপ্লবী সংস্কৃতির পরিচয় দিন না!আপনারা আপনাদের গান বা নাটক করুন,অন্যদের ওদের মত করে করতে দিন। আমরা সবারটাই দেখতে রাজি।
    একজন বাউল বল্লেন-- আমরাও ইয়াংকি কালচার?
    আমাদের বন্ধুরা আলাদা বৃত্ত বানিয়ে নিজেদের মত করে গান শুরু করলেন। উৎপল দত্তের লিটল থিয়েটার গ্রুপের অভিনেতা শান্তনু ঘোষের লেখা এবং অজিত পান্ডের সুর
    দেয়া -"" বল কৃষ্ণে কি আর কংসকারায় বেঁধে রাখা যায়,
    আহা, মাঠে মাঠে লক্ষ কৃষ্ণ অগ্নিবাঁশের বাঁশি বাজায়।''
    কিন্তু সবাই তো আর গায়ক নয়। গান জমল না। ভীড় অন্য দিকে সরে গেল। তখন আই পিটি এর গায়ক প্রদীপকে গাইতে বলা হল। সে ডায়েরি বের করে গাওয়ার চেষ্টা করলো। গানের নির্বাচন ভালো হচ্ছিল না, জমলো না।
    হটাৎ হাজির সৎপথী। সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো- একটা কথা কমরেডস্‌! সবাই শুনুন। আমরা একই প্ল্যাটফর্মে ওদের সঙ্গে থেকে গান গেয়ে ওদের প্রোগ্রামকে একরকম বৈধতা দিচ্ছি, এটা ঠিক নয়। বিপ্লবী এবং প্রতিবিপ্লবী সংস্কৃতি একসাথে থাকতে পারে না, হয় ওরা নয় আমরা!
    সঙ্গে সঙ্গে দুটো পেটো ফাটলো।মারামারি শুরু, এখানে ওখানে, বিচ্ছিন্ন ভাবে। কে যে কাকে মারছে বোঝা মুশকিল। ফক্কড় হরিদাস পালের বরাবর মারামারিতে অনীহা। ও ভীতুর ডিম। চটপট নিরাপদ জায়গা খুঁজতে লাগলো। ও গেছলো ভবানীপুরের ইন্দ্র রায় রোড, নন্দন রোডের ছেলেগুলোর সঙ্গে।
    দেখা গেল ওই পাড়ার একটা ছেলেকে অচেনা কিছু লোক বেধড়ক পেটাচ্ছে। হরিদাস পাল শ্যামাদাকে ডেকে আনলো। বয়স্ক শ্যামাদা পুরনো বক্সার। উনি গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজেদের ছেলেটাকেই পেটাতে লাগলেন। কলার ধরে টেনে নিয়ে যেতে বল্লেন-- এটাকে আমি বানাচ্ছি। আপনারা অন্য দের দেখুন। তারপর ওকে টেনে কিছুদূর নিয়ে গিয়ে বল্লেন-- এবার পালা, যত জোরে পারিস।
    ওদিকে আশীষ ঘোষাল চাররথীর সঙ্গে একাই দারুণ লড়ে যাচ্ছে। আসলে দুটো লড়ছে, আর দুটো মুখের কাছে চোঙার মত হাত করে চেঁচাচ্ছে-- নকশালপন্থীরা সি আই এর দালাল!
    এর পরে পুলিশ এসে গেল। কিছু এলোপাথাড়ি অ্যারেস্ট হল। কিন্তু সৎপথীর রণনীতি সফল, মুক্তমেলা ভেস্তে গেল।
    ফেরার পথে হরিদাস পাল বন্ধুদের সঙ্গে নিজাম গিয়ে বীফরোল খেয়ে পরমবিপ্লবী কর্তব্য করার আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরল। সকালে দেখলো আনন্দবাজার লিখেছে কিছু ফুলকচি তরুণেরা হাঙ্গামা করেছিলেন। এঁদের নকশালপন্থী বললে হয়তো আসল নকশালরা রাগ করতে পারেন। এরা নাদান।
  • ranjan roy | 122.168.219.125 | ২৫ জুলাই ২০১১ ০৭:১১472270
  • ২৮)
    আনন্দবাজার পত্রিকা এবং আকাশবাণী। ১৯৬৬'র খাদ্য আন্দোলনের সময় থেকেই খবরের একতরফা এবং কখনো কখনো বিকৃত পরিবেশন নিয়ে বঙ্গের বামপন্থীরা এ'দুটোর সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন। ''বাজারী পত্রিকা'' শব্দবন্ধ তখন থেকেই চালু হয়। আর আজকে যেমন স্টার আনন্দে সুমন দে, তখন আকাশবাণীতে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ষাটের দশকে ভারত-পাক যুদ্ধ এবং সত্তরের গোড়ায় তৃতীয় ভারত-পাক যুদ্ধকালীন ওনার সংবাদ পাঠ ও তার পর ""সংবাদ পরিক্রমা'' নামে সমকালীন রাজনৈতিক খবরের রিভিউ দেবদুলালকে অনেকের চোখে হিরো এবং কারো কারো চোখে জিরো বানিয়েছিল।
    উৎপল দত্ত খাদ্য-আন্দোলন নিয়ে লেখা একটি নাটকে , ""মৃত্যুর অতীত'', দেবদুলালের একটু নাটকীয় কায়দায় খবর পাঠের ক্যারিকেচার করেন।উনি বৃদ্ধবয়সে কয়েক মাস আগে প্রয়াত।

    তখন বাম ফ্রন্টের অধিকাংশ জনসভার শেষে আওয়াজ উঠতো,-- আনন্দবাজার পুড়িয়ে ফেলো! উপস্থিত শত শত শ্রোতা সঙ্গে করে আনা আনন্দবাজার জ্বালিয়ে মশালের মতন করে তুলে ধরতেন।
    সেইসময় যাদবপুরে রাস্তায় সকালে খবরের কাগজ বিলি করতে আসা আনন্দবাজারের ভ্যান আক্রমণ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়। অতীব দু:খজনক এই ঘটনায় , যতদূর মনে পড়ছে, একজন সাধারণ কর্মী মারা যান।
    এই ঘটনার নায়ক, সিপি এম কর্মী আশুতোষ মজুমদার, ১৯৬৮ থেকে আগের পার্টি ছেড়ে একটি নকশালপন্থী উপদলে যোগ দেন। ওনার দলবদলের পেছনে নানা কারণের মধ্যে একটি হল (ওনার মুখ থেকে শোনা)-- যখন পুলিশ আমাকে খুঁজছে তখন পার্টির শেল্টর চাইলাম। কিছুদিন বাদে নেতারা বল্লেন , নেপালে চলে যাও। আরে, আমি কি শালা ক্রিমিনাল নাকি যে নেপালে যাব?
    পরে ১৯৭১ এ সিদ্ধার্থশংকর রায়ের পুলিশ আশুতোষকে এন্‌কাউন্টারে মারা গেছে দেখায়। বিধির বিড়ম্বনায় ওনার ভাই শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক অরুণ মজুমদারকে আনন্দবাজার পত্রিকাতেই চিঠি লিখে জানাতে হয় কিভাবে অসুস্থ মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসা আশুকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়ে টর্চার করে মেরেছে।
    ১৯৬৮তে রাষ্ট্রপতি শাসনের সময় পাড়ায় পাড়ায় কংগ্রেসি গুন্ডার হামলা বেড়ে যায়। কারণ, কিছুই নয়, খাদ্য আন্দোলন এবং প্রথম বাম সরকারের অস্তিত্বে আসার ফলে কংগ্রেস যে জমি হারিয়ে ছিল তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা। কংগ্রেস ভবন থেকে সাংগঠনিক নেতা অতুল্য ঘোষ ''প্রতিরোধ বাহিনী'' গঠনের কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন।
    হরিদাস পাল নাকতলায় এমনি এক ''দিলীপ''এর সঙ্গে কথা বলে। স্কুলের মাঠে এক সন্ধ্যায় বসে সে যা শোনায় তাহল একবার ঢুকলে ছেড়ে আসা মুশকিল।
    -- কেন?
    --- আরে, আমি তো যুক্তফ্রন্ট সরকার পড়ে যাওয়ার আগে ওদের গিয়ে বলে এসেছিলাম যে আর ওসবে নেই। ছোটনদা বল্লেন- যা, দেখি কতদিন থাকতে পারিস।
    তারপর দু'মাস আগে ভবানী সিনেমায় ৬৫ পয়সার লাইনে দাঁড়িয়েছি। টিকিট নিয়ে বেরিয়েছি কি দুটো ছেলে গায়ে পড়ে ঝগড়া করলো। আমার সঙ্গে মাজাখি? একটাকে খুব ক্যালালাম। তারপর সিগ্রেট কিনছি তো একটি ছেলে বললো-- দাদা, একটু এদিকে আসুন।
    পাশের পেচ্ছাপখানার গলিতে ঢুকতেই দুজন আমার হাত পেছন দিকে মুচড়ে ধরল। আর কালো চশমা পরা একজন আমার গালে একটা ব্লেড ঘষতে লাগল।
    কদিন পরে থানায় বড়বাবু ডাকলেন। আমি নাকি ভবানী সিনেমায় টিকিট ব্ল্যাক করেছি, মারপিট করেছি। তারপর থেকে শুরু হল পুলিশি হামলা। রাত্তিরে খেতে বসেছি, পুলিশ কালো গাড়ি নিয়ে বাড়ির সামনে হাজির। খাওয়া ছেড়ে পেছনের পাঁচিল টপকে পালালাম। দশদিন পরে চুপ- চাপ বাড়িতে ফিরেছি, পরের দিনই আবার পুলিশি হানা। এরকম চললো প্রায় দুমাস। কিন্তু মজার ব্যাপার, পুলিশ যেন আমাকে ধরার ব্যাপারে সিরিয়াস নয়। কখনই বাড়ির পেছন দিকটা ঘিরে ফেলে না। সত্যিই এটা এক চোর-পুলিশ খেলা! সব বুঝলাম। সোজা হাজির হলাম কংগ্রেস ভবনে ছোটনদার কাছে। উনি হেসে বল্লেন- আয়, আয়! বলেছিলাম না, ঘরের ছেলে কতদিন রাগ করে বাড়ির বাইরে থাকবি?
    হরিদাস পালের কাছে এর কোন জবাব ছিল না।
  • | 115.118.19.178 | ২৫ জুলাই ২০১১ ২২:০২472271
  • সেই সময়ে সভ্যতার স্তম্ভস্বরূপ সংবাদপত্রগুলির আসলেই কী ভূমিকা ছিল তা বিস্তারিত আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এমনকি ষষ্ঠ বেদ দ্য স্টেটসম্যানের ভূমিকাও ঠিক তর্কাতীত ছিল কী?
  • ranjan roy | 115.118.155.73 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ০১:১৭472272
  • [ডি: কোন সময়েই কোন পত্রিকার ভূমিকা তর্কাতীত নয়, হতে পারেনা। সেটা নিউ ইয়র্ক টাইমস্‌, দি টাইমস, আসাহি শিমবুন, লা মন্ডে, উমানিতে, আবাপ, আজকাল, স্টেট্‌সম্যান, গণশক্তি যাই বলুন। সব কাগজেরই কোন না কোন মালিক থাকে। পলিসি তারা ঠিক করে, তাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আসলে মালিকদের স্বাধীনতা। তবে গ্রাহকদের সন্তুষ্টি বিধান না করলে বাজার হারাতে হবে। তাই আম পাব্লিক ( মানে পার্টিকুলার পত্রিকার উদ্দিষ্ট পাঠককুল, টার্গেট গ্রুপ) যে সব খবর জানতে চায় তা প্পুরোপুরি এড়িয়ে গেলে মার্কেট-শেয়ার কমবে। তাই খানিকটা সামনে সময়বুঝে, নিজস্ব ব্যাখ্যা সহ আনতে হয়। খেলাটা এরই মধ্যে। তবে আমি তো খালি ঝাপসা স্মৃতির কোলাজ আঁকছি আর কিছু নয়, তাই বেশি আশা করবেন না।:))]
    কাল রাত্তির থেকে আবার শুরু করব।
  • maximin | 59.93.196.135 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ০২:২৬472273
  • হরপ্রসাদ মিত্র Shakespeare পড়াতেন না। যা-তা বললেই হল?
  • maximin | 59.93.196.135 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ০২:৩০472274
  • এমনিতে অবশ্য পড়তে ভালৈ লাগছে।
  • ranjan roy | 115.118.237.75 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ২৩:২২472275
  • ম্যাক্সিমিন,
    ঠিক বলেছেন। হরপ্রসাদ মিত্র ( আমার ওনার লেখা কবিতা ভাল লাগত) সম্ভবত: বাংলার অধ্যাপক ছিলেন। শেকসপীয়র হয়তো তারক সেন, সুবোধবাবুরা পড়াতেন। তবে উনি ইডেনে হস্টেলের সুপার হিসেবে যা যা করেছিলেন সেগুলো ঠিক লিখেছি।
    ওনার শেকসপিয়র পড়ানোর কথা কেন লিকেছিলাম ভাবতে গিয়ে মনে পড়ল সত্তরের দশকে একটা বাংলা অনুবাদে তলস্তয় , মোপাসাঁ, শেকসপীয়র রচনাবলী প্রকাশের হুজুগ উঠেছিল। তখন রিফ্লেক্ট পাব্লিশার্স অথবা হরফ প্রকাশনী, কারও প্রকাশিত শেকসপীয়র রচনাবলীর দীর্ঘ ভূমিকা হরপ্রসাদ বাবু লিখেছিলেন। তাতে বাংলায় শেকসপীয়র অনুবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণী দিয়েছিলেন, যেমন হ্যামলেট অনেক আগে ""হরিরাজ'' নামে অনূদিত হয়ে অভিনীত হয়েছিল। ওতে উনি উৎপলের ""শেকসপীয়রের সমাজচেতনা'' বইটিকে একহাত নিয়েছিলেন বলে মনে আছে। তাই বোধহয় গুলিয়েছি। আসলে উনি
    বোধহয় বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন।
  • maximin | 59.93.198.42 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ০০:১৯472276
  • হ্যাঁ বাংলা পড়াতেন। হরপ্রসাদ মিত্রর অসামান্য ভূমিকার জন্য প্রেসির ছাত্র বিপ্লবকে ইডেন হস্টেল বিপ্লবও বলা হয়।
  • maximin | 59.93.198.42 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ০১:০৩472277
  • অরুন মজুমদারের মুখে আশুর কথা শুনেছি। অনেক কিছু ফিরিয়ে দিলেন।
  • maximin | 59.93.198.42 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ০২:৫৪472278
  • আবার এরা ঘিরেছে মোর মন।
  • indranil | 117.201.109.9 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ২১:৪৪472279
  • দারুন, এরকম এক খান গোলমেলে সময়ে জড়িয়ে ছিলেন বলে এরকম রোমান্টিক লেখা লেখা যায় , অঈ সময় নকশালি রোমাণ্টিকতা নিয়ে বহু গল্প- উপন্যাস- সিনেমা হয়েছে ,যা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে । যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । এই অস্থির সময়গুলি না আস্লেই বোধহয় ভালো , কিন্তু ইতিহাসের প্রয়োজনেই এ সময় আসে - যেমন এসছিলো ৬৮-৭০এর দশকে একটা প্রজন্মকে মোহোগ্রস্থ জাটিঙা পাখির মত টেনে নিয়ে গেছিলো আগুনের দিকে ।

    শুনেছি সে সময়ে নাকি 'খতম' অভিযানের সময় শুধুমাত্র খাঁকি পড়েছিলো বলে পুলিশ মনে করে হত্যা করা হয়েছিলো সাইকেল আরোহী গোয়ালাকে ?

    চারুবাবু নাকি কমরেডদের তাঁর ৮ দফা ধারার বাইরে অন্যকিছু পড়ার দরকার আছে বলে মনে করতেন না ?

    পড়ছি , লিখে চলুন
  • Neelu Hasnat UK | 104.197.1.174 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ০৪:৫৬472281
  • বেশ উপভোগ্য স্টাইল করে লেখার জন্য লেখক ধন্যবাদার্হ। তবে ছোট্ট দুএকটা তথ্য ভুল আছে। যেমনঃ তারিক আলি কে নিয়ে লেখা যে গানটার কথা বলতে চাওয়া হয়েছে প্রথমতঃ সে গানটা "স্ট্রীট-ফাইটিং ম্যান" ["স্ট্রীট ফাইটিং ইয়ার"] এবং দ্বিতীয়তঃ গানটা জন লেননের নয়, রোলিং স্টোনস-এর গান মিক জ্যাগারের লেখা এবং ..."as the story goes, the Rolling Stones wrote their classic song of rebellion, সামান্য ইতিহাসঃ “Street Fighting Man,” to honour the internationally renowned radical activist, author and atheist Tariq Ali after Mick Jagger saw him speak at a 1968 anti-war rally at the US embassy in London." [http://www.vueweekly.com/front/story/tariq_ali_the_time_is_right_for_a_palace_revolution/]

    অন্যদিকে, বিট্লস-এর জন লেনন সে সময়ের 'ফায়ার-ব্রাণ্ড' নেতা তারিক আলিকে নিয়ে যে গান রচনা করেছিলেন সেটা 'পাওয়ার টু দ্য পিপল' [Power to the People: http://en.wikipedia.org/wiki/Power_to_the_People_(song)]

    শেষ করার আগে এটাও মনে হয় উল্লেখ করা ভাল যে 'স্ট্রীট ফাইটিং ইয়ার' তারিক আলির লেখা আত্মজীবনীমূলক একটি বইয়ের টাইটেল। বইয়ের নামকরণে রোলিং স্টোনের গানটির প্রভাব স্পষ্ট।

    আবারও ধন্যবাদ সুদীর্ঘ এবং ক্যাজুয়াল স্টাইলের লেখার জন্য। যদিও টেকনিক্যাল কারণে বেশ কষ্টপাঠ্য, তবুও চমৎকার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন