এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ইউনুস বিতর্ক

    Kulada Roy
    অন্যান্য | ০৪ এপ্রিল ২০১১ | ৫৩৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kulada Roy | 74.72.144.174 | ০৪ এপ্রিল ২০১১ ০৫:৫৫472518
  • বাংলাদেশের ড: মুহাম্মদ ইউনুস ক্ষুদ্র ঋণের ক্ষেত্রে কাজ করে নোবেল পেয়েছেন। বিশ্বব্যাপী হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। সামান্য চার/ পাঁচ শ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে গরীব মহিলাদের নিয়ে এই নতুন ধরনের ঋণদান কর্মসূচি। এখন কোটি কোটি টাকা তার সইয়ে বিনিয়োগে যায়। পৃথিবীর ধনপতি দেশগুলো ইউনুসের পূণ্যজন্মের কারণে মহামুগ্‌ধ। কারণ তার কোম্পানীর ঋণ আদায়ের সফলতা ১০০ ভাগ। গরীব মানুষের বউঝিরা ঋণ নেয় বটে--তারা আটকে রাখে না। সময়মত ফেরত দেয়। এই চল্লিশ বছরে ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংক বিশ্বজোড়া নাম করেছে। ড: ইউনুস ইউনুস নবী হয়ে নোবেল পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ারও কথাবার্তা চলছিল সন্দেহজনক রাজাউজির বানানেওয়ালের দরবারে। তার আগে জনগণ পুরনো ধাড়ি মালগুলোর একজনকে সরিয়ে আরেকজনকে এনে ফেলেছে। ইউনুস সাহেব ধনপতি বিশ্বে শান্তির ট্রেডমার্ক হতে পারলেও বাংলাদেশে ল্যাতর প্যাতর।
    তার অবস্থা কেরাসিন। ধেড়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী বলছে--ব্যাটার মধ্যে কিছু ঝামেলা আছে। এটা নিয়ে দেশে বিস্তর কথাবার্তা হচ্ছে।
    এই ইউনুস নবীকে নিয়েই বাংলাদেশের একজন সখের বিতার্কিক ডা: আব্দুর নূর তুষার একখান স্কুলপাঠ্য রচনা লিখেছেন। এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আলোচনার সূত্র হতে পারে। গুরুর গুরুতর গুরুবৃন্দ এবং আমার মত পাতি চণ্ডাল যদি এই আলোচনায় অংশ নেন-তাইলে এ সংক্রান্ত বাতচিৎ করনের ইচ্ছে আছে। আর কারো কোনো গাই গুই টের না পেলে--আজ তবে এইটুকু থাক। বাকীটুকু--আর কমু না। ভাইলোগ, তালিয়া বাজান। সিন উঠতেআছে।

    সামাজিক ব্যবসার এপিঠ-ওপিঠ
    --------------------
    আব্দুন নূর তুষার

    শ্রদ্ধেয় ড. ইউনূস বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক ব্যবসা নামে একটি নতুন ধারণার কথা দেশে-বিদেশে বলছেন এবং এই নিয়ে এক্রিয়েটিংয়ে ওয়ার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি নামে একটি বইও লিখেছেন। মুহাম্মদ ইউনুস ডট অর্গ নামের তার একটি ওয়েবসাইটে এই নিয়ে বিস্তারিত লিখে তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তিনি অতিসম্প্রতি তার কানাডা ভ্রমণকালে তাদের সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন বাংলাদেশে দেয়া তাদের দানের অর্থ থেকে একটি অংশ সামাজিক ব্যবসা তৈরিতে দিয়ে দেন। শুধু তা-ই নয়, জানা গেছে, তিনি জাপানেও একই কথা বলেছিলেন।

    এই বিষয়টি নিয়ে আমার মতামত, সবার চিন্তার জন্য এখানে লিখছি।

    . ইউনূস বলেছেন, সামাজিক ব্যবসা অন্য আর দশটি ব্যবসার মতৈ হবে, তবে পাথর্ক্য হলো:

    . এতে বিনিয়োগকারীরা কোনো লাভ নিতে পারবেন না। কেবল তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগ ফেরত পাবেন। ২. সামাজিক ব্যবসার সাফল্য বিচার করা হবে সামাজিক উন্নয়নের সূচক দিয়ে। যেমন্রে তারা কতজনকে পুষ্টি সরবরাহ করতে পারল বা কতজনকে দারিদ্‌র্‌যমুক্ত করতে পারল অথবা কতজনকে বিশুদ্ধ পানি দিতে পারল ইত্যাদি। ৩. এই ব্যবসায় যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা আত্মতৃপ্তি পাবেন কোনো ভালো কাজ করছেন, এটা ভেবে। ৪. যারা এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেন, তারা এটির মালিক থাকবেন কিন্তু লাভ নিতে পারবেন না। তবে ব্যবসার পরিচালনার সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন এবং এতে যারা চাকরি করবেন, তারা বাজারদরে বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি পাবেন। ৫. সামাজিক ব্যবসা চাইলে মালিকরা কিছুদিন পর স্বাভাবিক ব্যবসায় রূপান্তর করতে পারবেন। অর্থাৎ তারা লাভ নিতে পারবেন, যদি চান। এটা তাদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল।

    এই সবই আমি তার ওয়েবসাইট মুহাম্মদ ইউনূস ডট অর্গ থেকে পেলাম।

    আমার প্রশ্ন হলো, সব ব্যবসাই কি কোনো না কোনো উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে তৈরি হয় না? কে লাভ নিল কিংবা নিল না, সেটা কি ধর্তব্য? কারণ যদি সামাজিক সূচক দিয়েই ব্যবসার ভালো-মন্দ নির্ধারিত হয়, তবে আমেরিকাতে রেল রাস্তা তৈরি হওয়াতে বিরাট সামাজিক উপকার হয়েছিল। গরিবদের যাতায়াত ও মাল পরিবহন সহজ হয়েছিল। তাই সামাজিক লক্ষ্য বিচারে সেই ব্যবসাও তো দারুণ এক উপকারী ব্যবসা। রেল মালিকরা কোটিপতি হওয়ার পরও মার্কিন সমাজে বিরাট পরিবর্তন এসেছিল। ড. ইউনূসের গ্রামীণফোনও একই দাবি করে যে তারা বাংলাদেশের বিরাট ক্ষমতায়ন করেছে। যদি তা-ই হয়, তবে এটা তো সামাজিক ব্যবসা না হয়েও বিরাট সামাজিক লক্ষ্য অর্জন করল। আবার গ্রামীণ ব্যাংক ধার দেয়। তাতে দারিদ্‌র্‌য দূর হয়। যদি তা-ই হয়, তবে এটাও তো সামাজিক ব্যবসা। ধার নিয়ে যখন সে আর দরিদ্র থাকে না, তখন সে কেনাকাটা করতে পারে। নিজের জীবনমান বাড়াতে পারে। তাহলে আলাদা করে তার জন্য সামাজিক ব্যবসা কেন দরকার? আমাদের গার্মেন্ট ব্যবসাও কি বিরাট সামাজিক পরিবর্তন সাধন করে নাই? নারীর ক্ষমতায়নে এই ব্যবসায়ীদেরও বিরাট অবদান আছে। তাহলে এটাও তো ঠিক যে, লাভ নিয়েও সামাজিক লক্ষ্য অর্জন করা যায়।

    তিনি বলেছেন, সামাজিক ব্যবসা লাভ করবে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য, তবে তার আসল লক্ষ্য হবে সামাজিক। সেটা দিয়েই বিচার হবে তার সাফল্য ও ব্যর্থতা। যখন একটি কোম্পানি মুক্তবাজারে কাজ করে, তখন তাকে বাজারের রীতি অনুযায়ী চলতে হয়। যেখানে লাভ আর ক্ষতি তাকে হিসাব করতেই হবে। তাহলে কোম্পানিটি তার লক্ষ্য অর্জন করল কি না, সেটি কেবল সামাজিক সূচকের বিচারে হিসাব করা কি সম্ভব? যথেষ্ট লাভ না করলে কোম্পানিটি টেকসই হবে না এবং বাজার দরে বেতন-ভাতা দিতেও পারবে না। তাই তাকে নিশ্চয়ই লাভ করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ তাকে ফেরত দিতে হবে, ডিভিডেন্ড না দিলেও। শুধু তা-ই নয়, কোম্পানির ভবিষ্‌য়্‌ৎ উন্নয়নের জন্য তাকে কিছু সঞ্চয়ও করতে হবে এবং কিছু পুনরায় বিনিয়োগ করতে হবে। ফলে লাভ-ক্ষতি প্রতিযোগিতা সবই হবে বাজারের আর যেকোনো কোম্পানির মতৈ। তাকে বিজ্ঞাপন করতে হবে। এমনকি দুষ্ট প্রতিপক্ষ যদি দাম কমিয়ে বা ভর্তুকি দিয়ে তাকে বাজার থেকে হটাতে চায়, তখন তাকেও নানা রকম বাজারি কৌশল নিতে হবে। তার মানে লাভের চিন্তা তাকে করতে হবে আর সবার মতৈ।

    এবার উদাহরণ হিসেবে গ্রামীণ-ডানোন শক্তি দইয়ের কথা ভাবি। ধরা যাক, আমিও ঠিক একই রকম দইয়ের কারখানা দিয়ে একই দামে দই বেচলাম এবং একই পরিমাণ মানুষের বা বেশিসংখ্যক মানুষের জন্য পুষ্টি চাহিদা মেটালাম। তার মানে আমি একই পরিমাণ বা বেশি সামাজিক লক্ষ্য অর্জন করলাম। এবার যদি আমি লাভ ঘরে নিই, তাহলে কি কারো কোনো ক্ষতি হবে? ড. ইউনূসের বক্তব্য অনুযায়ী লাভ কে নিল বা নিল না, তার চেয়ে বড় কথা হলো সামাজিক লক্ষ্য অর্জন। তাহলে সামাজিক ব্যবসার চেয়ে বেশি সামাজিক লক্ষ্য অর্জন করে যদি কেউ লাভ ঘরে নেয়, তাতে কী-ই বা আসে যায়? এবার মনে করেন, আমি যদি ডানোনের চেয়ে কম দামে দই বেচি এবং সমানসংখ্যক লোককে দই খাইয়ে টাকা ঘরে নিই? অর্থাৎ সামাজিক লক্ষ্য অর্জনই যদি আসল কথা হয়, তবে লাভ কে ঘরে নিল, সেটা কি আর কোনো প্রভাবক থাকে?

    . ইউনূস বলেছেন, তিনি লাভের বিপক্ষে নন। লাভ হবে, তবে মালিকরা লাভ নেবেন না, কেবল বিনিয়োগ ফেরত নেবেন। এতে ব্যবসাতে নতুন মাত্রা সংযুক্ত হবে। এ ব্যবসা বাজারে মনোপলি করবে না বরং প্রতিযোগিতা বাড়াবে। তাতে ব্যবসায়ীরা নতুন উৎসাহ পাবেন।

    পুরো বিষয়টিতে একটি ফ্যালাসি আছে। লাভ নেন বা না নেন, লাভ তো করতেই হবে। আর যেকোনো কোম্পানি চায় প্রবৃদ্ধি। বাজার বাড়াতে চায়। সেটাই তো প্রতিযোগিতা। তাই সব ব্যবসারই ভেতরে একধরনের মনোপলি তৈরির বাসনা থাকে কিন্তু প্রতিযোগী থাকলে সেটা পুরোপুরি করা সম্ভব হয় না। যেমন্রে ক্লোজআপ বাংলাদেশের জেল টুথপেস্টের বাজার ৮০ শতাংশ দখল করে আছে। এখন যদি একটি বাজারে স্থির জনসংখ্যা ও ক্রয়ক্ষমতায় ক্লোজআপের বিক্রি বাড়ে, তবে অন্য পেস্টের বিক্রি কমতে বাধ্য। বাস্তবে এটা হয় না কারণ, মানুষ বাড়ে, তাদের আয় বাড়ে। ফলে বাজার বাড়লেও অন্যজন টিকেও থাকতে পারে। শুধু তা-ই নয়, কোম্পানিগুলো নিজেই অন্য নামে টুথপেস্ট ছেড়ে বাকি বাজারটুকুও নিজের কাছে রাখতে চায়। একইসঙ্গে কোম্পানিগুলো বিক্রি বাড়ায়, প্রবৃদ্ধি করে এবং নতুন নতুন বাজারের সন্ধানও করে। তারা নতুন পণ্য বাজারে আনে, গবেষণা করে।

    এবার যদি পেস্টের বাজারে একটি সোস্যাল বিজনেস তৈরি হয় এবং গরিবের দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে বাজারে আসে, তবে কী হবে? তাকে যেহেতু একই বাজারে থাকতে হবে, তাই ক্লোজআপের সঙ্গেই তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। আমরা যদি ভাবি, অন্য ব্যবসায়ীরা তাকে সামাজিক তকমা থাকার কারণে ছাড় দেবে, সেটা ভুল হবে।

    তখন তাহলে কী হবে? ব্যবসায়ীরা যেহেতু এই সোস্যাল বিজনেসে বিনিয়োগ করবেন, তাই এটা ভাবা ঠিক হবে না যে তারা নিজের আসল ব্যবসা যেটি, সেখানে সামাজিক ব্যবসা করবে। যেমন্রে স্কর নিশ্চয়ই আরেকটি সামাজিক হাসপাতাল খুলবে না। তাহলে তো তার আসল হাসপাতাল ক্ষতির মুখোমুখি হবে। ধরা যাক, তারা একটি জুতার ফ্যাক্টরি দিল, যেখানে সস্তায় স্যান্ডেল-জুতা বানানো হবে। আর বাটা কোম্পানি একটি হাসপাতাল দিল, যেখানে সস্তায় চিকিৎসা হবে। এবার বাটার হাসপাতালের কারণে স্কর হাসপাতাল লস করতে থাকল, আর স্করের জুতার কারণে বাটার লস হতে থাকল। এভাবে তাদের আসল ব্যবসার লাভ নেই হয়ে গেল আবার তারা কিন্তু তাদের সামাজিক ব্যবসা থেকেও লাভ পান না। বিনিয়োগকারী কি তখন লাভ না নিয়ে বসে থাকবেন? স্যামসন সাহেব কিংবা বাটা কি তখন একে অন্যের সামাজিক ব্যবসার হাতে নিজেদের আসল ব্যবসার ধ্বংস বসে বসে দেখবেন? বাস্তবতা বলে যে এটা তারা করবেন না। তখন প্রয়োজনে তারা সাজিক ব্যবসাটিকে প্রচলিত ব্যবসায় পাল্টে নেবেন।

    বিনিয়োগকারীরা লাভ নেবে না কিন্তু তারা মালিক থাকবে। এখানেই শুভঙ্করের ফাঁকি। আগে যখন তারা দান করতেন, সিএসআর করতেন, তখন সেই টাকাটি তাদের মূল খরচ হিসাবে লিখে রাখা হতো। ফলে ব্যালেন্স শিটে সেটি বিয়োগ হয়ে যেত। কোম্পানির অ্যাসেট কমত। এখন তারা সোস্যাল বিজনেসে বিনিয়োগ করবেন এবং সেই ব্যবসার মালিকও থাকবেন। ফলে তাদের টাকা আর বিয়োগ হবে না, কারণ তারা এই বিনিয়োগের মূল টাকা আবার ফেরত পাবেন। শুধু তা-ই নয়, যে কোম্পানিটি তারা বানালেন, সেটির যত সম্পদ সেটি বাড়িতে না নিলেও সেটিকে তাদের সম্পদ হিসেবে দেখাতে পারবেন। ফলে দান না করেও দানের মতো বাহবা নিয়ে, পুরস্কার নিয়ে, বুক ফুলিয়ে চলবে সেইসব বিনিয়োগকারী, যারা সোস্যাল বিজনেস করছেন। আবার তাদের সম্পদ কমবে না একটুও বরং বাড়তেই থাকবে। একজন চটপটিওয়ালার লাভ রোজ ঘরে না নিলে চলে না। কারণ তাকে রোজকার আয় থেকে খরচ করতে হয় জীবনের চাহিদা মেটাতে। কিন্তু যার ১০০০ কোটি টাকা আছে, তিনি ১০০ কোটি টাকা দিয়ে যদি সামাজিক ব্যবসা করেন এবং সেই ১০০ কোটি টাকা ফেরত পেয়ে যান আবার সোস্যাল কোম্পানিটিরও মালিক থাকেন এবং সেটির সম্পদ যদি ২০০ কোটি টাকা হয়, তবে তার মোট সম্পদ ১২০০ কোটি টাকা হলো। তিনি সেই টাকা ঘরে না নিলে কি কিছু আসে যায়? তিনি তো আর চটপটিওয়ালা না যে একটি ব্যবসার টাকা ঘরে না নিলে তার সংসার চলবে না। তারই তো টাকা। তার সম্পদ তো বাড়তেই থাকল। বিল গেটস কি সব টাকা বাসায় নিয়ে যান? নেন না কিন্তু তার সম্পদ বাড়ে। এটাই তার আয়। বৃহ্‌ৎ পুঁজির মালিকরা সম্পদ বাড়াতেই থাকেন, সব লভ্যাংশ তারা নিজের নামে নিয়ে যান না।

    তার মানে দান না করেও দানের ফিলিংস পেলেন, আবার টাকা আপনার বাড়তেই থাকল। এটাকেই ড. ইউনূস বলেছেন স্যাটিসফ্যাকশন, যার জন্য নাকি দলে দলে কোটিপতিরা সোস্যাল বিজনেস করবে। দান না করেও যদি দানের মর্যাদা মেলে তখন তারা সেটা করতেই পারে।

    তিনি বলেছেন, চাইলে উদ্যোক্তারা নিজের ইচ্ছামতো কোনো এক সময় ব্যবসাটিকে সামাজিক ব্যবসা থেকে নিজেদের প্রচলিত ব্যবসায় রূপান্তর করতে পারবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যদি কিছুদিন পরে ব্যবসাটিকে নিজের কাছে নিয়ে আসাই যাবে, তবে এটির অর্জিত মুনাফা, সম্পদ্রে এগুলো তখন কার কাছে যাবে? তার মানে এটা কি কিছুদিনের জন্য জনহিতকর কাজের অনুভূতি ও নানা রকম খেতাব পাওয়ার পর আবার আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া নয়? শুধু তা-ই নয়। কোনো কোম্পানি যখন তার পরিচালকদের লভ্যাংশ দেয়, তখন প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আয়কর দিতে হয়। যদি আপনি কোনো লভ্যাংশ না দেন, তবে কেবল কোম্পানিটি তার আয়ের ওপর কর দেবে এবং বিরাট লভ্যাংশ ডিভিডেন্ড হিসেবে না দেয়ার ফলে এটি আয়করের আওতামুক্ত থাকবে। এভাবে ১০ বছর পর বিরাট অংকের মুনাফা থেকে আরো অনেক নতুন নতুন ব্যবসা স্থাপন করে আপনি আপনার সম্পদ বাড়াতে থাকবেন, কিন্তু ব্যক্তিগত আয়কর থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন।

    পাঠক, ভাববেন না যে আমি ড. ইউনূসের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন। আমার তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি আছে। এই লেখাটি কেবলই তার সামাজিক ব্যবসা নামক ধারণার প্রতি একজন সাধারণ ব্যক্তির মনে জেগে ওঠা কিছু ভাবনার সমাবেশ। একটি জ্ঞানভিত্তিক ধারণা নিয়ে নানা রকম আলোচনা হবে, এটাই কি স্বাভাবিক নয়?

    দাদনদার ও ঋণদাতার মধ্যে তফাত আছে। দাদন যিনি দেন তিনি টাকা ধার দেয়ার সময় উৎপাদিত দ্রব্যের দাম আগেই নির্দিষ্ট করে, পরে সেটি কিনে নিয়ে তার দেয়া টাকার সঙ্গে সমন্বয় করেন। এতে দাদনদারের দুই দিকে লাভ হয়। এক দিকে সে ঋণের সুদ পায়, অন্য দিকে বাজারদরের চেয়ে কম দামে উৎপাদিত দ্রব্য বা ফসল কিনে নিয়ে সে আরও লাভ করে। ড. ইউনূস জোবরা গ্রামে তার এই অভিজ্ঞতার কথা নিজেই সবিস্তারে লিখেছেন। তিনি তার ক্রিয়েটিংয়ে ওয়ার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি বইয়ে গ্রামীণ-ড্যানোনের শক্তি দই উৎপাদনের কারখানাকে একটি সোস্যাল বিজনেস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে, ব্যবসাগুলো সোস্যাল বিজনেস হিসেবে চলবে, তারা তাদের অন্য কোনো ব্যবসা যেটি সোস্যাল বিজনেস নয়, সেটিকে তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করাতে পারবে না। ড্যানোন তার দই উৎপাদন শুরু করার পর দেখল যে দই তৈরির প্রধান উপাদান দুধের দাম বাড়ে-কমে। দুধের দাম কমে গেলে তাদের কোনো অসুবিধা নেই, বাড়লে অসুবিধা। কারণ, তাতে তারা দইয়ের দাম বাড়াতে বাধ্য হবে অথবা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই সমস্যার সমাধান করলেন ড. ইউনূস। তিনি বগুড়ায় গ্রামীণ ব্যাংককে দুধ উৎপাদনকারীদের গরু কেনার জন্য ঋণ দিতে বললেন। শর্ত হলো, দুধ বেচতে হবে ড্যানোনের কাছে এবং সারা বছর একই দামে। এটা কি নৈতিক কাজ হলো? দাদনদারী ব্যবসায়ীদের মতো একদিকে ঋণের সুদও গুনবেন আবার কম দামে দুধ বেচবেন ড্যানোনের কাছে? শুধু তা-ই নয়, এতে করে ড্যানোন তার অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির চেয়ে এগিয়ে থাকল ব্যবসার সুবিধাতে। যদি আরেকজন দই উৎপাদনকারী সেখানে দই প্রস্তুত করতে চান, তখন তার জন্য সারা বছর একই দামে দুধ কেনার জন্য কেউ তো দাদনের ব্যবসা করবে না, করার অনুমতিও পাবে না, কারণ সেটা করতে গেলে তার সরকারের কাছ থেকে ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার অনুমতি নিয়ে আরেকটা গ্রামীণ ব্যাংক খুলতে হবে। তিনি তার বইয়ের ১৫৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘দুধ ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এড়াতে এই ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দুধের মাইক্রোফার্ম গড়ে তোলা হয়েছে।’ আপনারা ড্যানোনের কর্মপদ্ধতি দেখলে বুঝবেন, কীভাবে সুকৌশলে পুঁজিবাদী শোষকদের হাত গ্রামের কৃষকের মাটির ব্যাংক থেকে টাকা শুষে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। ড্যানোন একটি বহুজাতিক কোম্পানি, যাদের প্রধান বাজার হলো ইউরোপ ও আমেরিকাতে। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় পণ্য হলো ইভিয়ান নামের একটি মিনারেল ওয়াটার, যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পানির একটি। এদের রয়েছে ইউরোপব্যাপী দুধ ও দুধ থেকে তৈরি নানা রকম পণ্যের ব্যবসা। ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলে মুগ্‌ধ হয়ে তারা বাংলাদেশে গ্রামীণ-ড্যানোন দইয়ের কারখানা স্থাপন করেছে। মনে রাখবেন, এরা নিজের দেশে কোনো সামাজিক ব্যবসা করে না, কিন্তু বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মানে তারা নিজেদের মালিকানায় একটি নতুন কারখানা নতুন দেশে স্থাপন করল এই শর্তে যে, তারা কোনো লাভ নেবে না, কেবল তারা তাদের বিনিয়োগ ফেরত নেবে। এভাবে তারা নতুন একটি কারখানার মালিক হলো এবং নতুন একটি বাজারে প্রবেশ করল সামাজিক ব্যবসার হাত ধরে। এতে তাদের প্রাথমিক যে লাভটি হলো সেটি বাজার সম্প্রসারণ এবং দ্বিতীয়টি হলো, তারা এই বাজারে প্রাইমারি মুভার বা ফার্স্ট মুভার হওয়ার সুযোগটিও নিল। এখন পনেরো বছর পর পুরো বাজারটি দখল করার পর যদি তারা তাদের এই সামাজিক ব্যবসাটিকে ড. ইউনূসের ওয়েবসাইটের বক্তব্য অনুযায়ী প্রচলিত ব্যবসায় রূপান্তর করে, তবে ভেবে দেখুন, তাদের কী পরিমাণ লাভ হবে। বাজার পুরোটা থাকবে তাদের দখলে এবং বাংলাদেশে সাধারণ দই প্রস্তুতকারকরা তখন না পারবে তাদের সঙ্গে দামে, না পারবে গুণগত মানে। ড্যানোন তার উৎপাদনের তিন বছরে প্রতিদিন ২২ হাজার পাউন্ড দই উৎপাদন করবে বলে ড. ইউনূস তার লেখায় বলেছেন। কারখানাটি সেটা করছে বলে আমার বিশ্বাস। তার মানে সাধারণ দই বিক্রেতার ২২ হাজার পাউন্ড দই কম বিক্রি হচ্ছে, যে বাজারটি নিয়ে নিয়েছে ড্যানোন। এরা কোথায় কারখানাটি করেছে? বগুড়ায়। কেন? কারণ সেটাই দেশের দইয়ের সবচেয়ে বড় ন্যাচারাল এরিয়া অব প্রডাকশন। বাজার যদি নিতেই হয়, তবে সেটি মূল বাজারেই নিতে হবে। এবার আসি মুনাফা প্রসঙ্গে। ড্যানোন ১ শতাংশ মুনাফা নেয়, যেটাকে বলা হয়েছে সিম্বলিক বা টোকেন প্রফিট। তার মানে ২২ হাজার পাউন্ডের ১ শতাংশ হলো ২২০ পাউন্ডের দাম। যদি এক পাউন্ডের দাম হয় ৬০ টাকা, তাহলে ২২০ পাউন্ডের দাম ১৩ হাজার ২০০ টাকা। এটা হলো গ্রস আয়। এর শতকরা ৮০ শতাংশ ধরলাম ব্যয়। তাহলে ২ হাজার ৬৪০ টাকা প্রতিদিন আয়। তার মানে ৩৬৫ দিনে আয় ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। পাঠকের কাছে মনে হচ্ছে যে এটা কোনো টাকা নাকি? আসলেই তো এটা কোনো টাকা নয়। কিন্তু চিন্তা করুন, ৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা হলো ১ শতাংশ মাত্র। মোট লাভ তার মানে ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশে আছে কোনো দই বিক্রেতা, যার বার্ষিক লাভ প্রায় দশ কোটি টাকা? তার মানে তারা এখনই দেশের সবচেয়ে বড় দই বিক্রেতা। ১৫ বছর পর এই কোম্পানিটির মোট বিক্রয় কত হবে? এর মোট আয় কত হবে? আর এই না নেয়া লাভ যদি কোম্পানিতে থাকে, তবে এর মোট আর্থিক সম্পদ থাকবে ১৫০ কোটি টাকার। ধরে নিলাম, এরপর এরা ড্যানোনের অন্য ব্যবসাগুলূ এখানে চালু করবে এই টাকা দিয়ে। তাহলে হিসাব করুন, সামাজিক ব্যবসার নামে মোট কত মূলধন অর্জিত হলো এবং পনেরো বছর পর যদি ড্যানোন মনে করে, সামাজিক ব্যবসার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, এবার এটিকে প্রচলিত ব্যবসায় রূপান্তর করা যাবে, তাহলে তাদের কি আমরা না করতে পারব?

    . ইউনূস নিজেই জানেন, এই না করাটা কত শক্ত। তিনি তার বইয়ে বলেছেন, টেলিনরের সঙ্গে তার একধরনের সমঝোতা ছিল যে তারা একপর্যায়ে গ্রামীণফোনের শেয়ার গ্রামীণ টেলিকমের কাছে ছেড়ে দিয়ে বা হস্তান্তর করে, তাদের মালিকানা ৩৫ শতাংশের নিচে নিয়ে আসবে এবং অধিকাংশ শেয়ার থাকবে গ্রামীণ টেলিকমের হাতে। তারা সেটা করেনি এবং তিনি লিখেছেন যে, তিনি বিষয়টি নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছেন এবং দু:খ পেয়েছেন। তার বইয়ের ৯৩-৯৪ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, ‘আমার শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল গ্রামীণফোনকে একটি সামাজিক ব্যবসায় পরিণত করার এবং গ্রামীণ টেলিকম তৈরি করা হয়েছিল গরিব মানুষের পক্ষ থেকে এই শেয়ারগুলোকে ব্যবস্থাপনা করার জন্য। কিন্তু এখন আমি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি। টেলিনর এখন শেয়ার হস্তান্তরে নারাজ। এমনকি যখন আমরা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার উৎসব করছি, নরওয়েজিয়ান প্রেস এ বিষয়ে দ্বন্দ্ব নিয়ে লেখালেখি করেছে। মেমোরেন্ডামে এ বিষয়ে প্রতিশ্র“তি ছিল এমনকি অংশীদারিত্বের স্বাক্ষরিত দলিলেও এটি লেখা ছিল। এখন টেলিনর এই দলিলকে সম্মান দেখাচ্ছে না। বলছে এটি আইনগতভাবে বলব্‌ৎ করা সম্ভব না।:এখন আলোচনা চলছে সমঝোতার জন্য। আমি আশাবাদী, একদিন গ্রামীণফোনকে সামাজিক ব্যবসায় পরিণত করার স্বপ্ন সফল হবে।’

    তার মানে সাদারা কথা দিলে কথা রাখে না, অথবা ড. ইউনূস ঠকেছেন। আমি প্রথমটাই বিশ্বাস করি। কারণ একজন নোবেল বিজয়ী নিশ্চয়ই এত বোকা নন যে তিনি ঠকে যাবেন। আমার প্রশ্ন হলো, ড. ইউনূস তার পদচ্যুতি ঠেকাতে কোর্টে গেলেন, বিশ্ব জনমত এক করে ফেলে সিনেটর, কংগ্রেসম্যান দিয়ে দেশের সরকারকে ধমক লাগালেন আর গরিব মানুষের সঙ্গে বেইমানি করা, চুক্তি লঙ্ঘনকারী বিদেশি বেনিয়াদের চুক্তি মানতে বাধ্য করার জন্য কোর্টে গেলেন না কেন? গরিব মানুষের স্বার্থ কি তার এমডি পদের চেয়ে কম দামি?

    এবার আসি ড্যানোনের শুভঙ্করের ফাঁকিতে। ড্যানোন এখানে মাত্র ১ শতাংশ লাভ নেয়, এটা ঠিক। তবে ফ্রান্সে তারা একটি তহবিল গঠন করেছে, যার নাম এসআইসিএভি বা সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি উইথ ভ্যারিয়েবল ক্যাপিটাল, ড্যানোন কমিউনিটিজ। এর ৯০ শতাংশ বিনিয়োগ হয় লাভজনক ব্যবসায় এবং ১০ শতাংশ বিনিয়োগ হয় সামাজিক ব্যবসায়, যার মধ্যে আছে বাংলাদেশের ড্যানোন দই। এই তহবিলটি ফরাসি স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত এবং যেকোনো মিউচুয়াল ফান্ড বা ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মতো এটি কেনাবেচা হয়। এবার মজাটা বোঝেন। শেয়ারের দাম বাড়া-কমা কেবল ডিভিডেন্ডের ওপর নির্ভর করে না। শেয়ারপ্রতি মোট সম্পদ বাড়লেও শেয়ারের দাম বাড়তে পারে। তার মানে বাংলাদেশে ড্যানোনের সম্পদ বাড়লে এই শেয়ারের মোট সম্পদ ঠিকই বাড়বে এবং সেকেন্ডারি মার্কেটে কেনাবেচা করে ঠিকই লাভ তোলা যাবে। তাহলে লাভ নিলাম না ঠিকই কিন্তু আবার নিলামও। অর্থাৎ ড্যানোন দই কাগজে-কলমে লাভ নেবে না বললেও এটিকে ব্যালেন্স শিটে রেখে এর সম্পদের সুবিধা ঠিকই নিচ্ছে ফ্রান্সের কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারী অথবা প্রতিষ্ঠান। এই তহবিলটি ১০০ মিলিয়ন ইউরো বাজার থেকে সংগ্রহ করেছে, যার অর্থমূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০০ কোটি ড্যানোন গ্র“পের। (পৃষ্ঠা ১৭২, ক্রিয়েটিংয়ে ওয়ার্ল্ড উইদাউট পোভার্টি) এ যেন মসজিদের জন্য টাকা তুলে মসজিদের সংস্কারের নামে সামনে ব্যক্তিগত দোকান বানানোর মতো এক প্রক্রিয়া। এই দইয়ের গুণাগুণ ও এই ব্যবসার সোস্যাল ইমপ্যাক্ট মূল্যায়ন করে যে প্রতিষ্ঠান, তার নাম জিএআইএন বা গেইন। এর অন্যতম স্পন্সর বা অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান হলো ড্যানোন গ্র“প।

    কর ও রেগুলেটরি ইস্যু নিয়ে ড. ইউনূস যা বলেছেন, সেটিতেও ঘাপলা আছে। তিনি এখন যে সমস্যার মধ্যে আছেন তার সূত্রপাত কিন্তু তহবিল স্থানান্তর নিয়ে। তিনি সোস্যাল বিজনেসে কর দিতে খুব একটা পছন্দ করেন না। তাই কর বাঁচাতে এক তহবিলের টাকা অন্য তহবিলে স্থানান্তরিত করেছিলেন। বইয়ে তিনি প্রস্তাব করেছেন, সরকারগুলোকেই বের করতে হবে যে সামাজিক বিভিন্ন ব্যবসায় তারা কীভাবে করারোপ করবে। তারপর তিনি বলেছেন, সরকারগুলো যদি মনে করে, তাদের কর সুবিধা দেয়া যায়, তবে তারা সেটি দেবে। এ কথা বলার পর তিনি কর সুবিধা দেয়ার পক্ষে ওকালতি করেছেন। তিনি বলেছেন, কর সুবিধা দেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে, কারণ সামাজিক ব্যবসা, করদাতাদের গরিবের প্রতি দায় লাঘব করবে। এবার যদি কর সুবিধা পেয়ে সামাজিক ব্যবসাগুলো একই ধরনের প্রচলিত ব্যবসার চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতামূলক হয়, সেটা কি অসাম্য হবে না? তিনি বলেছেন, ‘যদি এমনটি হয় তবে প্রচলিত ব্যবসাগুলো সামাজিক ব্যবসা হয়ে যাবে। যদি সামাজিক ব্যবসার সঙ্গে না পারো, তবে তার সঙ্গে যোগ দাও।’ এটা কি যুক্তিসঙ্গত? বগুড়ার দই বিক্রেতা যদি ড্যানোনের সঙ্গে টিকে থাকতে না পারে, সে কি কাল সামাজিক ব্যবসা শুরু করতে পারবে? পারবে কি ঝালমুড়ি বিক্রেতা মেশিনে বানানো ঝালমুড়ির সঙ্গে টিকে থাকতে? তারা বিজ্ঞাপন করে হাতে বানানো ঝালমুড়িতে অসুখ-বিসুখ হওয়ার কথা বলে ক্রেতাকে ভয় দেখায়। অথচ সাধারণ ঝালমুড়ি বিক্রেতাকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে শেখালেই তো হয়ে যেত। তাতে তো আর প্যাকেট ঝালমুড়ির বিক্রি বাড়বে না। তাই প্যাকেট খাও আর সাধারণ ঝালমুড়িকে বিদায় করে দাও। এটাই তো পুঁজির আগ্রাসন।

    সামাজিক ব্যবসা থেকে সংগৃহীত বিশাল পুঁজি কী হবে? তিনি বলেছেন, এটি দিয়ে আরো নতুন নতুন সামাজিক ব্যবসা তৈরি হবে। এই ব্যবসার মালিক কিন্তু থাকবেন একই মালিকরা। অর্থাৎ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি এই একই কোম্পানি সামাজিক বহুজাতিক ব্যবসা গড়ে তুলবে। যেমন ড্যানোন করেছে দই। এভাবে তারা নতুন নতুন বাজারে অনুপ্রবেশ করবে। যেহেতু সামাজিক ব্যবসা নাম দিয়ে তারা ঢুকেছে, তারা নানা রকম সুযোগ-সুবিধার জন্য আবদার করবে। কর দিতে চাইবে না। নানা রকম অগ্রাধিকার চাইবে। তারা সত্তর বছর বয়সেও ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী থাকতে চাইবে। প্রয়োজনে আইন বদলাতে বলবে। প্রয়োজনে ফরাসি কিংবা মার্কিন প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়ে ধমক লাগাবে। এভাবে গরিবের উপকারের নামে তাদের নিজেদের পুঁজির বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে, বিরাট বিরাট কারখানা তৈরি করে, আঞ্চলিক শিল্প বা কুটিরশিল্পগুলোকে শেষ করে ফেলা হবে। তারপর আমরা কেবল চাকরি করব। আমরা কেবল হব খুচরা বিক্রেতা। আমরা হব সস্তা শ্রমের বাজার। আমরা হব পুঁজিবাদের অ্যানিম্যাল ফার্ম। আমাদের বলা হবে বগুড়ার দইয়ে পুষ্টি নেই, ওটা আছে শক্তি দইয়ে। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে দই বেচবেন গ্রামীণের নারীরা। একে বলা হবে নারীর ক্ষমতায়ন। অথচ রবীন্দ্রনাথের গল্পের সেই দইওয়ালার দেখা আর পাবে না বাংলাদেশের মানুষ। এরই নাম তো উন্নয়ন।

    এবার আমার সাধারণ কিছু প্রশ্ন? যদি সোস্যাল বিজনেস এত ভালো কিছু হয়, তবে কেবল বাংলাদেশের টাকা দিয়ে একটা সোস্যাল বিজনেস কেন স্থাপন করলেন না ড. ইউনূস? এই বইটির বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন না কেন? বাংলাদেশের প্রতি তার ভালবাসা প্রবল বলেই আমার বিশ্বাস। তাহলে গ্রামীণফোন ডিজ্যুস মার্কা ভাষা প্রচলনে যে কোটি কোটি টাকা খরচ করল, দেশের সংস্কৃতিকে কদলী প্রদর্শন করে নানা রকম অসভ্য বিজ্ঞাপন করল, তিনি তাতে বাধা দেননি কেন? নারীদের ক্ষমতায়নের বিষয়ে তার এত বক্তব্য, ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে একবারও তাকে কোথাও বলতে দেখি না কেন? আজকে তার জন্য এত মানুষ এত কথা বলছে, এক-এগারোর পর অন্তত একটিবার দুই নেত্রীর মুক্তি চেয়ে তিনি কিছু বলেননি কেন? যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের, শিক্ষকদের নির্মমভাবে নির্যাতন করল সামরিক বাহিনী, তখন তিনি এমনকি শিক্ষকদের পক্ষেও একটিবার কিছু বলেছিলেন কি?

    নোবেল প্রাইজ নি:সন্দেহে গৌরবের বিষয়। তিনি নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর বলেছিলেন, আমাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিন, আমি বাংলাদেশের চেহারা বদলে দেব। নোবেল প্রাইজ পেয়ে দেশে ফিরে দেশের বন্দর চেয়েছেন, এমন আর একজন নোবেল বিজয়ী আছেন কি? তিনি সারা জীবন সুশাসন ও আইনের কথা বলেছেন। একবার স্‌ৎ ও যোগ্য প্রার্থী চাই বলে একটি আন্দোলনও গড়ে তুলেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম তিনি আন্তরিকভাবেই এটি চেয়েছিলেন। তাহলে এখন আর এ বিষয়ে কথা বলেন না কেন? নোবেল পেলে কি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে চলে যান। নোবেল তো পেলেন ২০০৬ সালে। ৬০ বছর তো হয়েছে ১০ বছর আগে। ২০০১ সালে। তিনি নিজেই কেন আইন মেনে উত্তরাধিকারীর হাতে তখনই ছেড়ে দিলেন না দায়িত্ব? নেতা তো উদাহরণ তৈরি করবেন। তিনি তো আমাদের পদ আঁকড়ে থাকতেই শেখালেন। বারাক ওবামাও তো শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। এখন তাহলে তাকেও ৭০ বছর হওয়া পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বানিয়ে রাখলে অসুবিধা কী? আমেরিকানরা তাতে রাজি হবে না। বলবে, ওটা তাদের আইনে নেই। তারা নিজের দেশে আইন মানে, অন্যের দেশে আইন না মানাকে উৎসাহ দেয়। নইলে কেন হিলারি আর ব্লেকসহ কংগ্রেসম্যানদের এত আগ্রহ আমাদের ব্যাংক-বিধি অমান্য করতে বলার জন্য?

    সরকার তার বিদেশি বন্ধুদের ধমক খেয়েছে। দেশের সরকার জনগণের প্রতিনিধি, সরকারকে ধমকানো মানে আমাদের সবাইকে ধমকানো। নোবেল প্রাইজ বিজয়ীর গ্রামীণ ব্যাংকের পদ, জাতীর সম্মানের চেয়ে বেশি বলেই মনে হচ্ছে এখন। এই ধমকটা টেলিনরকে দিলে তো কবেই গরিবের ভাগ আদায় করে নিতাম আমরা। এই ধমকটা বিএসএফকে দিলে তো ফেলানীর লাশের দায় মিটত। এই ধমকটা তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে দিতে পারলে তো আমরা আরেকটু বেশি ভাগ পেতাম নিজেদের খনির উৎপাদনে। এশিয়া এনার্জিকে ধমকটা দিলে ফুলবাড়ীতে লাশ পড়ত না। এই ধমকটা যুদ্ধাপরাধীদের দিলে বুঝতাম, দেশে আইনের শাসনের প্রতি ড. ইউনূসের বিরাট অবদান। এই ধমকটা অক্সিডেন্টালকে দিলে আমরা মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ পেতাম।

    . ইউনূস কেবল নিজের জন্যই ধমকটি ব্যবহার করলেন। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। আর সে কারণেই দু:খ পেলাম। নোবেল বিজয় এক অসাধারণ অর্জন। কিন্তু এটি ব্যক্তিগত অর্জন। গ্রামীণ ব্যাংকের অর্ধেকের দাবিদার। এটি প্রাতিষ্ঠানিক অর্জন। এই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ, এটি নোবেল পাওয়া না-পাওয়ার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়। এটি তার সরকারিভাবে অর্জিত পদ। এই পদটিতে তিনি না থাকলে যদি গ্রামীণ ব্যাংক নষ্ট হয়ে যায়, তবে বুঝতে হবে, তার ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক গলদ আছে। এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান যদি একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল হয় তবে যেদিন তিনি থাকবেন না, তখন কি এই প্রতিষ্ঠানটিকে আমরা তার সঙ্গে সঙ্গে কবর দিয়ে দেব? কানাডাতে একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক জর্জ স্ট্রমবুপোলোস বলেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক ড. ইউনূসের নিজের ব্যাংক। কথাটা কি ঠিক?

    বারবার শুনছি, ‘সম্মানজনক সমাধান’ এই শব্দটি। এই সম্মানটি আসলে কার? দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে বিদেশিরা যখন আমাদের সংবাদ সম্মেলন করে ধমকায়, তখন কি আদালত অবমাননা হয় না? সরকারের অবমাননা হয় না? সম্মান কি কেবল নোবেল বিজয়ীর একার। এই দেশের সাধারণ মানুষের সম্মান নেই? মার্চ, ১৯৭১ সালে আমরা দেখেছিলাম নিক্সন সরকারের নির্লজ্জতা। কিসিঞ্জারের কুৎসিত আচরণ। আর স্বাধীনতার ৪০তম বছরে দেখলাম হিলারির ঔদ্ধত্য ও রবার্ট ব্লেকের অসদাচরণ।

    গরিবি উধাও করার কথা বলেছিলেন ড. ইউনূস। ২০৩০ সালে দারিদ্‌র্‌যকে জাদুঘরে পাঠাবেন বলেছিলেন। আমাদের চিত্তের দারিদ্‌র্‌য দূর করতে পেরেছেন কি? নইলে কোর্টের রায়ের অপেক্ষা না করে, হিলারির পাঠানো পাইক-পেয়াদার সংবাদ সম্মেলন কেন? এই কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো, আইন সবার জন্য সমান্রে এই আপ্তবাক্যে নোবেল বিজয়ীর বিশ্বাস নেই। তাই সবার জন্য ৬০-এ অবসর, তার জন্য আজীবন। সবার জন্য কোর্ট, তার জন্য কোর্টের বাইরে সমাধানের চেষ্টা ও মার্কিনি ধমক।

    . ইউনূস জ্ঞানী মানুষ। তিনি কর্মঠ। তিনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। তিনি শ্রদ্ধেয়। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে সেরা জ্ঞানী ও শক্তিশালী মানুষ তিনি। কিন্তু তিনি কি সব আইনের ঊর্ধ্বে? তার চেয়ে কি তার এই এমডি পদের মূল্য বেশি? তাহলে এই পদে থাকতেই হবে কেন?

    স্যার, চলেন একটা সামাজিক ব্যবসা শুরু করি। কী দরকার এত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করে আইনি লড়াই করার। আপনি তো জানেন সামাজিক ব্যবসা কীভাবে তৈরি করা যায়। তাহলে অসুবিধা কী
  • Kulada Roy | 74.72.144.174 | ০৪ এপ্রিল ২০১১ ০৫:৫৬472529
  • ভাইলোগ,আগেই কইয়া রাখি : জোবরা গ্রামের কী হইছিল--হেইডা একটা কোয়েশচেন করতে পারেন।
  • aka | 24.42.203.194 | ০৫ এপ্রিল ২০১১ ০৬:২১472540
  • এইটা কি একটা সামাজিক ব্যবসা?

    http://www.kiva.org/

    এট্টু বলেন দিকি ইউনুস কি এমন ব্যবসার কথা বলেছেন?
  • kallol | 115.242.209.175 | ০৫ এপ্রিল ২০১১ ২২:৩৩472551
  • এটা এখানে প্রাসঙ্গিক মনে হলো।
    http://www.shapludu.com/article_details.php?article_serial=20
    ড: ইউনুস এবং ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ে কয়েকটি ভুলতে বসা প্রশ্ন - প্রিসিলা রাজ।
  • dri | 117.194.228.58 | ০৫ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৪২472562
  • কুলদাবাবু, খুব, খুব ইন্টারেস্টিং! মিডিয়ার কল্যাণে ক্ষুদ্রঋণের একটা জনহিতকারী ইমেজ আছে, এখনও, অনেক মানুষের মনে। এর ডিটেলটা আমি ভালো বুঝতাম না। কিন্তু খুব সন্দেহ হয়েছিল যখন জানতে পেরেছিলাম ডাচ রয়্যাল ফ্যামিলি কুইন বিয়াট্রিক্সের ফ্যামিলিও ক্ষুদ্রঋণের ব্যাবসা ফেঁদেছেন পাকিস্তানে। আপনার লেখায় আনেক কিছু ক্লিয়ার হল। আরো যদি কোন তথ্য জানা থাকে লিখুন প্লিজ।
  • ranjan roy | 122.161.206.124 | ০৬ এপ্রিল ২০১১ ১৪:৫৬472573
  • দ্রি,
    ইউনুসের ওই মডেলটি নিয়ে গত বিশবছরে ভারতে মাইক্রো ফাইনান্স আন্দোলনের বন্যা বয়ে গিয়েছে।
    প্রথমে নাবার্ড সমর্থিত ""আলিগড়'' মডেল( আলিগড় গ্রামীণ ব্যাংক মডেল), যাতে ইউনুসের মত লোন দেয়া থেকে শুরু না হয়ে চক্রটি শুরু হয় সেল্ফ-হেল্প-গ্রুপ(SHG) গঠন করে ওদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে উৎসাহিত করা, পরে আবশ্যক হলে ওদের ইচ্ছা অনুযায়ী পুঁজির আবশ্যক হলে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা।
    এখন ধীরে ধীরে এটা , সরকারী পরিভাষায় ব্যাংক লিংকেজ, কেন্দ্রীয় সরকারের যোজনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাতে ৩৩ থেকে ৫০% অনুদান আছে।
    সমস্ত ব্যাংককে টার্গেট দেয়া হচ্ছে--বছরে এত গুলো এস এইচ জি কে এই ব্যাংক লিংকেজের মাধ্যমে লোন দিয়ে ওদের পুঁজি বাড়াতে সহায়তা করতে।
    আমি নিজে একটি ট্রেনিং সংস্থার পক্ষ থেকে এখন বিভিন্ন এন জি ও স্তরে এই এস এইচ জিগুলোতে পরিচালন ও সংস্কৃতির সমস্যা নিয়ে ট্রেনিং দিয়ে থাকি।
    কোলকাতাতেও শুরু করবো ভাবছি।
    কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র।
    এই এস এইচ জি গুলোতে বিভিন্ন এন জি ও'রা এম এফ আই বা মাইক্রো ফিনান্সিং ইনস্টিট্যুট হিসেবে পুঁজি বিনিয়োগ এবং ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্ব নিয়ে বিশাল সংকটের জন্ম দিয়েছে।
    ছোট অদক্ষ প্রান্তিক মানুষদের গণতান্ত্রিক সংগঠন স্ব-সহায়তা সমুহগুলোর বিকাশ ও আয়বৃদ্ধির জন্যে এরা ইউনুস দেখানো পথে মানি-পাম্প করাকেই প্রধান কারক হিসেবে বেছে নিয়ে চড়া সূদে দাদন দিয়েছে।
    উপেক্ষা করেছে মার্কেট পোটেন্সিয়াল ও এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাক্টরগুলোকে।
    ফলে অন্ধ্র ও কর্ণাটকে বিরাটসংখ্যক সেল্ফ হেল্প গ্রুপ আজ দেউলিয়া।
    ওদের থেকে টাকা আদায় করতে এম এফ আই রা আজকাল গুন্ডা পাঠাচ্ছে ঠিক আই সি সিআই ব্যাংকের কায়দায়।
    রক্ষক হয়ে গেছে ভক্ষক!
    শোধ করতে অপারগ প্রান্তিক মানুষদের আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়ছে।
    ফলে সরকার, নাবার্ড - এরা ইদানীং এইসব এন জি ও যারা এম এফ আইয়ের ভূমিকা পালন করছে, তাদের ভাল করে স্ক্রীনিং করতে বলছে!
  • aka | 168.26.215.13 | ০৬ এপ্রিল ২০১১ ১৯:২৫472578
  • পুরো মাইক্রো ফিনান্স ইন্ডাস্ট্রীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় এক, প্রফিট মেকিং এমএফআই আর নন-প্রফিট এমএফআই। আমেরিকার রিসেশনের পরে বহু প্রফিট মেকিং এমএফআইয়ের অবস্থাই খুব খারাপ। তার কারণ তাদের অপারেটিং মডেল ওয়াল স্ট্রীটের কোন ব্যাঙ্কের থেকে কোন অংশে কম ছিল না। সেই চোখ ধাঁধানো বোনাস, লাইফস্টাইল ইত্যাদি। বহুলোকেই মনে করে প্রফিট ছাড়া এসব হয় না। কিছু ব্যতিক্রমী লোকও আছেন তাঁরা মনে করেন "যাদের দেহে শুধু হাড় তাদের থেকে রক্তচুষতে হলে আগে তাদের দেহে রক্ত তৈরি করতে হবে'। এনারা নন-প্রফিট মাইক্রো ফিনান্স সংস্থার পক্ষে। সারা পৃথিবী জুড়ে এদের মধ্যে একটা ধাক্কাধাক্কি চলছে। মহ: ইউনুস নন-প্রফিটের পক্ষে।

    মাইক্রো ফিনান্স নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলা যায়। বিশেষত ভারতে এবং আফ্রিকার কিছু কিছু দেশে যা হয়েছে। কিন্তু ম্‌হ: ইউনুসের বেসিক মডেলকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় কিনা জানি না। আমার ব্যক্তিগত ফিলিংস হল বর্তমানে ইউনুসকে নিয়ে যা হচ্ছে তা কোন বৃহত্তর রাজনীতির ফল। নইলে যে লোক আমেরিকার ইউনিভার্সিটির টেনিওর ট্র্যাক, নিজের পরিবার ছেড়ে বাঙলাদেশে ফিরে গিয়েছিলেন কিছু করবেন বলে, যাঁর এখনও অবধি প্রতিটা কাজ সেই কাজের সংগে সংগতিপূর্ণ তিনি টাকা সরিয়েছেন এটা মানতে অসুবিধা হয়। তবে এও সত্যি যে কোন এভিডেন্স নেই শুধু মানতে অসুবিধা হচ্ছে।

    বাকি ওনার থিওরেটিকাল মডেল, সোশালা এন্তারপ্রেনিওরশিপ ইত্যাদি নিয়ে অ্যাকাডেমিক আলোচনা করাই যায়। কিন্তু যেহেতু ব্যক্তির মূল মোটিফটাই ইন কোশ্চেন সেহেতু সেই আলোচনা কতটা আনবায়াসড হবে সন্দেহজনক।
  • pinaki | 138.227.189.8 | ০৬ এপ্রিল ২০১১ ২১:৩৬472579
  • হ্যাঁ, টাকা সরানোর মত ছিঁচকেমো টা মানতে অসুবিধে হয় ঠিকই। তবে তার চেয়েও বেশী অসুবিধে হয় নোবেল পাওয়াটা মানতে। আরও অসুবিধে হয় নোবেল 'পীস' প্রাইজ পাওয়াটা মানতে। অসুবিধে কি আর আজ থেকে? :-)
  • aka | 168.26.215.13 | ০৬ এপ্রিল ২০১১ ২১:৪২472580
  • কেন?
  • pinaki | 82.209.167.222 | ০৬ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৫০472519
  • বিশ্বশান্তিতে ইউনুসের বা গ্রামীন ব্যাংকের অবদান কি? আমার জানা নেই বিশেষ।
  • dri | 117.194.226.192 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০০:০২472520
  • ঋণ ব্যাপারটা খুব গোলমেলে। এই দিয়ে লোকের উপকারও করা যায়, অপকারও করা যায়। যেমন, নিউক্লিয়ার এনার্জি দিয়ে পাওয়ার জেনারেশানও হয়, বোমও বানানো যায়। যেমন, আর্টিফিশিয়াল রেইন দিয়ে মরুভূমিকে উর্বর করে তোলা যায়, আবার বিধ্বংসী বন্যাও ঘটানো যায়। যেমন, ইন্টারনেট দিয়ে মানুষের মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদান বিনিময় করানো যায়, আবার মানুষের ওপর গুপ্তচরবৃত্তিও করা যায়। যেমন, জেনেটিক স্টাডি দিয়ে জেনেটিক ডিজিজ সারানোর রিসার্চও করা যায়, আবার জিন বেস্‌ড প্রোফাইলিং এবং ডিসক্রিমিনেশানও করা যায়।

    কোন একটা জিনিষ যখন প্রোমোট করা হয়, তা সে ঋণই হোক, ইন্টারনেটই হোক তার ভালো দিকটার কথা মিডিয়াতে বার বার করে বলা হয়। খারাপ দিকটার উল্লেখ উহ্য থাকে।

    কিন্তু যে কোন কিছু প্রোমোট করার পেছনে আসল উদ্দেশ্য একটা থাকে। সেটা সবসময় সেল্‌স পিচের সাথে সমান নাও হতে পারে।

    ২০০০ সালে আম্রিকায় বাড়ি কেনা ছিল জলদি বড়লোক হওয়ার রেসিপি। তখন সকলেই বলেছিল ঋণ নাও, ঋণ নাও। কিন্তু আজকে দাঁড়িয়ে অনেকেই বলছে সবাইকে সামর্থ্যের বাইরে ঋণ নিতে উশকানো উচিত হয়নি।

    দেশকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো প্রকট। আই এম এফের পলিসি বিভিন্ন দেশকে ঋণ নিতে বলা। ডেভালাপমেন্টের খাতিরে। ঋণ দেওয়ার সময় ঋণ নিলে কি ভীষণ ডেভালাপমেন্ট হবে সেই গান গাওয়া হয়। তারপর যখন ঋণের ভার দেশ আর সামলাতে পারে না, তখন দেশের রিসোর্স, দেশের পলিসি গ্লোবালিস্টদের কাছে বন্ধক রাখতে হয়। এই জিনিষ এত বেশী দেশে এত বেশী বার হয়েছে যে এটাকে আর অ্যাক্সিডেন্ট বলা যায় না। আমার ওয়েস্ট বেঙ্গলই কেস ইন পয়েন্ট। এই সি পি এম সরকারই এত ঋণ নিয়েছে যে রাজ্যের ইনকামের প্রায় ৯৫% চলে যায় জাস্ট ইন্টারেস্ট পেমেন্টে। যখন ঋণ নেওয়ার সময় হয়েছিল তখন সবাই বলেছিল, এই ডেভালাপমেন্টের সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। অথচ এখন ঋণের বোঝা যখন চেপে বসেছে তখন সবাই দুকথা শুনিয়ে দিচ্ছে। মমতাও বলেছে ফিসকাল দুরবস্থার জন্য সিপিএমকে জবাবদিহি করতে হবে।

    মিড্‌লক্লাসকে ঋণ দেওয়া হত। এবার সেটা এক্সপ্যান্ড করা হচ্ছে গরীব লোকেদের ক্ষেত্রেও, থ্রু মাইক্রোক্রেডিট। বড় অ্যামাউন্ট নয়। কিন্তু যেটা কনস্ট্যান্ট কমপ্লেন তা হল হাই ইন্টারেস্ট রেট। গরীব লোকেরা যদি একা অনেক লোন নিতে পারে, তারা সংখ্যায় প্রচুর। তো সব মিলিয়ে ভালোই টোটাল মার্কেট। আরো আশ্চর্য্যের ব্যাপার এই যে গরীব লোকেরা বায় অ্যান্ড লার্জ সৎ, এবং টাকা ফেরত দেয়। আর যে দুচারজন ফেরত না দেওয়ার তাল করে, তাদের গুন্ডা লাগিয়ে ঢিট করা সোজা। কারণ তারা গরীব। বড়লোক, পাওয়ারফুল অনিচ্ছুক গ্রহীতার থেকে জোর করে টাকা আদায় করা অত সোজা নয়।
  • dri | 117.194.226.192 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০০:১৮472521
  • কেউ একজন বললেন, ঋণ দিয়ে আমি গরীব লোকদের উদ্ধার করব, তার মানে সেটাই তাঁর উদ্দেশ্য নাও হতে পারে। উদ্দেশ্য কী সেটা বুঝতে গেলে তাঁর কাজ দেখতে হবে। বিশেষ করে এই ড্যাননের দইয়ে কিছু গোয়ালাদের প্রথমে প্রাইস ফিক্স করে দেওয়া হল, যাতে তারা মার্কেট ওপরে গেলে তার কোন অ্যাডভান্টেজ না পায়। প্লাস তারা তাদের ব্যাবসা বাড়াতে গেলে তারা মাইক্রোক্রেডিট পাবে। অর্থাৎ সুদ দেবে। যারা দই ডিস্ট্রিবিউট করবে, তারাও এই মাইক্রোফাইনান্সের সুযোগ পাবে। অর্থাৎ বেশ অনেক গরীব লোক ঋণের নেটে ধরা পড়ল, তার বিনিময়ে ড্যানন পেল গ্যারান্টিড লো প্রাইস, লো কস্ট মার্কেটিং, মার্কেট শেয়ার। হোয়াট্‌স মোর, কিছুদিন বাদে (মার্কেট শেয়ার অনেক বেড়ে মনোপলির জায়গায় পৌঁছে গেলে) এটা আর সোশাল বিজনেস নাও থাকতে পারে!

    এটা কী একটা নিওকলোনিয়াল স্কীম?
  • a | 208.240.243.170 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০০:৩১472522
  • এটা একটূ ওভার সরলীকরণ হল না? মানে দই বানাতে খরচটা সমান ধরা হলে, পার ইউনিট প্রফিট তো সমানই রয়ে গেল।

    এবার, যত বেশী বিক্রী করতে পারবে কোম্পানি, তার লাভ তত বেশী। এবং, গোয়ালার লাভও তত বেশী (যদি ধরে নি পার ইউনিট গোয়ালাও লাভ করে)।

    এখন, অসাম্য তখনি আসবে যখন মার্কেটে দই এর দাম বাড়বে। সেটা কখন হবে? যদি সাপ্লাই কমে যায়। সেক্ষেত্রে, আরো দুটো কোম্পানিকে দই বানাতে দাও বা দামেরো সিলিং করে দাও।

    প্রশ্নটা হল অন্যায্য সুবিধা যদি একটা কোম্পানিকে দেওয়া হয়। তো সেটা কি মাইক্রো ফিনান্সিংএর দোষ?
  • aka | 168.26.215.13 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০০:৩৮472523
  • ক্যান উই যাস্ট গো ব্যাক টু মাইক্রো ফিনান্স ফার্স্ট। কাজ দেখতে হলে প্রথম থেকে দেখুন। মাইক্রো ফিনান্স থিওরি, গ্রামীণ ব্যাংক তার সাকসেস, তারপর আসা যাবে ড্যাননে। এতে মনে হয় পিনাকির প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যাবে।

    নিজস্ব মতামত জানিয়ে রাখি, মাইক্রো ফিনান্স ও গ্রামীণ ব্যাংকের ইনিশিয়াল সাকসেস বা এই নতুন ক্যাচড়া রিপোর্টেড হবার আগে আমি ভাবতাম এটা একটা রিভোলিওশনারি আইডিয়া। এখনও ভাবি কিন্তু কিছু নুন সহ। মানে অনেক কিছুর মতন প্রকৃত সত্য খুব ফাজি। সেটা বোঝার চেষ্টা করাই উদ্দেশ্য।
  • dri | 117.194.226.192 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০০:৪০472524
  • গোয়ালার লাভ আর কোম্পানীর লাভ তুলনীয় নয়। মাইক্রোফাইনান্সিংএর আওতায় যদি জিনিষটা রাখতে হয়, তাহলে কোম্পানীর এক্সপ্যানশন হবে গোয়ালার সংখ্যা বাড়িয়ে। একজন গোয়ালা যদি বেশী এক্সপ্যান্ড করেন (করতেই পারেন) তাহলে কয়েকজন বড়লোক গোয়ালা তৈরী হবে, এবং তাদের মাইক্রোফাইনান্সিংএর আওতায় রাখা যাবে না। এই ধরণের স্কীমে বেশী সংখ্যক মানুষকে ঋণের আওতায় আনাটাই হল গোল।

    মাইক্রোফাইনাঁসিং কনসেপ্টটার দোষ কি দোষ নয় সেটা ইম্পর্ট্যান্ট নয়। মাইক্রোফাইনান্সিং জাস্ট কনসেপ্টটা ধরে বিচার করলে দেখা যাবে ভালো লোকের হাতে পড়লে ভালো জিনিষই হবে। কিন্তু যদি দেখা যায় হচ্ছে না, যদি দেখা যায় যে মাইক্রোফাইনান্সিং এর কথা বলেছিল সে সাট্‌ল ভাবে মনোপলিও প্রোমোট করছে তখন ইনটেন্টের প্রশ্ন আসে।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০০:৪২472525
  • অনেকে মনে করেন মাইক্রো ফিনান্স নন-প্রফিট হওয়া উচিত। তাহলে গোয়ালা বাড়ানোর চাপ নেই।
  • dri | 117.194.226.192 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০০:৪৬472526
  • কিছুদিনের জন্য নন-প্রফিট? না চিরকালের জন্য নন-প্রফিট? :-)

    কিছুদিনের জন্য নন-প্রফিট হলে, আমি ভাবতে পারি, যদি পাঁচ বছর পরে মার্কেট মনোপলি পাওয়া যায় আর কোন সোশাল বিজনেসের অবলিগেশান না থাকে।
  • dri | 117.194.226.192 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০০:৪৯472527
  • এই মাইক্রোফাইনান্সিং ডেলিভারী সিস্টেমে যারা আছেন তাদের বিরাট মোটা মাইনে ধরে নন-প্রফিট, না মডেস্ট মাইনে ধরে নন-প্রফিট?

    দা ডেভিল ইজ ইন দা ডিটেল।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০১:১১472528
  • এত ডিটেল যোগাড় করাও মুশকিল। লোকের ইন্টেন্টও জানা যায় না। অতএব কাজেই পরিচয়। আপাতত হাতের কাছে এইটা রয়েছে।

    http://www.kiva.org/about

    এর প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হল প্রেমাল। পেপলের নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে এটা শুরু করে। বাই চান্স ছেলেটির সাথে হাই হ্যালো বলতে পেরেছি। এখনও অবধি এদের ইন্টেন্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় নি। এদের স্যালারিও খুব সামান্য বলেই জানি।
  • dri | 117.194.226.192 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০১:২০472530
  • এই ধরণের সংগঠন, এন জি ও ইত্যাদিতে যারা কাজ করে তারা কিন্তু এই ইন্টেন্টের শেয়ারহোল্ডার নাও হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এরা হয় কিছু আইডিয়ালিস্ট লোকজন। তারা মনে করে তারা একটা সোশাল চেঞ্জ করছে। ইন্টেন্টটা জানে একদম টপ লেভেলের লোকজন। যারা ব্যাপারগুলোকে ফাইনান্স করে, ইঞ্জিনিয়ার করে। যে ইজিপ্টের রাস্তায় স্লোগান দেয় সে হয়ত জানেই না এর পেছনে গুগল আছে।

    এবং ডক্টর ইউনুসের পেছনে যে পাওয়ারফুল লোকজন আছে সেটা বোঝা যায় ঐ আম্রিকার বাংলাদেশ গম্মেন্টকে ধমকানি থেকে। জাস্ট একটা পার্সোনাল ফিলনথ্রপির এফর্ট হলে এত হেভিওয়েট লোক এর পেছনে এসে জুটত না।
  • dri | 117.194.226.192 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০১:৩০472531
  • প্রেমালের প্রোফাইল দেখলাম। এর থেকে কিছুই বোঝা সম্ভব নয়। তবে ফরচুন ম্যাগাজিন যখন রেটিঁ দিয়েছে আশা করা যায় এই ধরণের কাজের একটা লং টার্ম বিজনেস গোল আছে।

    তবে এভাবে হবে না। দেখতে হবে কিভা কি প্রোজেক্ট করেছে। তার কি এফেক্ট হয়েছে লং টার্ম এবং শর্ট টার্ম।

    এই পার্টিকুলার গ্রুপটার কোন ইন্টেন্ট নেই মানে অন্য আরেকটি গ্রুপের কোন ইন্টেন্ট নেই এমনও নয়। মাইক্রোফাইনান্স জনিত প্রচুর ইররেগুলারিটির কথা মাঝে মাঝেই শোনা যায়।

    আর একটা জিনিষকে প্রোমোট করতে গেলে কয়েকটা ভালো এগ্‌জাম্পল চাই। কয়েকটা সাকসেস স্টোরি চাই।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০১:৪৩472532
  • কিভার ওয়েবসাইটে বেশ কিছু সাকসেস স্টোরি রয়েছে।

    আমার ধারণা ছিল গ্রামীন ব্যাংক একটা সাকসেসফুল স্টোরি। এখন খবরে দেখছি না। ফ্যাক্ট আর কাউন্টার ফ্যাক্টের মিশাইলে এমনিই সবকিছু ফাজি।

    ইউনুসের মোদ্দা বক্তব্য ছিল এমন

    ১। ঋণ নিতে ব্যাঙ্কে যেতে হয়। আমি ঋণ দেব বাড়ি গিয়ে।

    ২। ঋণ নিতে লেখাপড়া জানতে হয়। আমার এই ঋণে লেখাপড়া জানতে হবে না।

    ৩। ঋণ দেওয়া হবে মহিলাদের।

    ৪। নন-প্রফিট হবার জন্য সুদের হার বেশি হবার দরকার নেই।

    এই আইডিয়াটা অবশ্যই রিভোলিউশনারি। কিন্তু নিউক্লিয়ার এনার্জির মতন এও কিছু বাজে লোকের নতুন করে পয়সা কামানোর পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে সেও দেখা যাচ্ছে।

    গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সাকসেস নিয়ে অনেক স্টোরি শুনেছি, কেস স্টাডি আছে। কিন্তু সেটা কেন সন্দেহজনক তার কিছু ভালো মতন প্রমাণ পেলে বোঝা যেত।

    আর বাকিটা অর্থাৎ এর পেছনে কোন পাওয়ারফুল গ্রুপ কলকাঠি নাড়ছে কিনা এ এখনও অবধি সন্দেহ। কিন্তু যেমন ভূত, ইওফো, ভগবান, অন্য গ্রহের প্রাণী বিশ্বাস করি না, প্রমাণ ছাড়া এই কিছু সে¾ট্রালাইজড পাওয়ার পৃথিবী চালাচ্ছে তাও বিশ্বাস করি না।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ০১:৪৪472533
  • তা বলে কনস্পিরেসি নেই তাও বিশ্বাস করি না। :)
  • dri | 117.194.237.209 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ২২:৩২472534
  • বিশ্বাস আপনা আপনা। কিন্তু ফ্যাক্ট ইজ দেয়ার ফর অল টু সী।

    কিভার স্পন্সরের সাইটে গিয়ে দেখি কর্পোরেট আমেরিকার এক প্রতিচ্ছবি। পেপ্যাল, গুগল, ইয়াহু, শেভরন, সিসকো, ইন্টেল, ইউটিউব, ফেসবুক, ভিসা, অ্যামেক্স -- কে নেই। http://www.kiva.org/about/supporters

    এই ব্যাপারটাতে কী কারো কখনো খটকা লাগে? দেশে দেশে বিপ্লব করার অর্গানাইজেশানের পেছনেও যারা, মাইক্রোফাইনান্স গ্রুপের পেছনেও যারা, তারাই আবার ফ্রিমার্কেট প্রিন্সিপ্‌ল, প্রফিটের স্যাংটিটি ইত্যাদির প্রতিভু। এরা কেন নন-প্রফিট এফর্ট স্পন্সর করবে? কোন ইন্টারেস্ট ছাড়া?
  • dri | 117.194.237.209 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ২২:৩৯472535
  • ডক্টর ইউনুস বলেছিলেন, নন-প্রফিট হওয়ার জন্য সুদের হার বেশী হওয়ার দরকার নেই। (কোটিং আকাদা) কিন্তু কিভা তাদের ওয়েবসাইটে জানাচ্ছে টোগোতে তারা ১১% ইন্টারেস্ট চার্জ করে।

    Sikiratou Salami is from Togo, she took a loan out to purchase supplies for her cosmetics business and plans to use part of her profits to finance the schooling of her three children.

    The nature of microcredit - small loans - is such that interest rates need to be high to return the cost of the loan.

    "There are three kinds of costs the MFI has to cover when it makes microloans. The first two, the cost of the money that it lends and the cost of loan defaults, are proportional to the amount lent. For instance, if the cost paid by the MFI for the money it lends is 10%, and it experiences defaults of 1% of the amount lent, then these two costs will total $11 for a loan of $100, and $55 for a loan of $500. An interest rate of 11% of the loan amount thus covers both these costs for either loan.


    http://www.kiva.org/about/microfinance

    ১১% কে কি খুব কম বলা যায়? বিশেষ করে জনকল্যাণই যেখানে উদ্দেশ্য।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ২৩:১৮472536
  • এটা খুব সহজ।

    আমি প্রফিট মেকিং কোম্পানি। আমার উদ্দেশ্য হল যেনতেন প্রকারেণ নিজের প্রফিট বাড়িয়ে যাওয়া। আমি প্রফিট বাড়াবো হয় দাম বাড়িয়ে (যেমন বিএমডব্লু) নয়ত অনেক লোককে বিক্রি করে (যেমন মারুতি)। এবারে মারুতি কোম্পানি এই করে করে একসময়ে যতজন গাড়ি কিনতে পারে সবাইকে মারুতি বেচে ফেললে বাজারে কেনার জন্য আর কেউই পড়ে থাকে না। তাইজন্যই মারুতি কোম্পানির অন্যতম উদ্দেশ্য হল লোকের উন্নতি যাতে পরের দিনে তারাই তাদের ক্রেতা হতে পারে। লোকের রক্ত চোষার আগে তাদের হাড়ে মাংস লাগানো। এই হল এদের হিডেন অ্যাজেণ্ডা। এরা কিন্তু লোকজনকে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতই দেখে। একেবারে কেটে না ফেলে খাইয়ে দাইয়ে লালন পালন করার পক্ষপাতী।
  • dri | 117.194.237.209 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৪০472537
  • কর্পোরেশান চায় সব্বাই গাড়ী চড়বে? :-)

    না, আকাদা, না। ইকনমিক গ্রেডিয়েন্ট ছাড়া এই পৃথিবী চলে না। সবাই গাড়ী চড়বে বললে ক্ষেতে চাষ করবে কে? খনি থেকে মিনারেল তুলবে কে? কোকো ক্ষেতে কোকো তুলবে কে? চা বাগানে চা তুলবে কে? আমার অ্যাফ্লুয়েন্স কারো একটা কাঁধে পা দিয়ে।

    হাইতিতে লোকে দিনে পঞ্চাশ সেন্টে কাপড় বোনে বলেই তো আমেরিকার গরীবরা সস্তায় জামাকাপড় কিনতে পারে। কাপড়ের কলে যারা কাজ করে তাদের ঘন্টায় চল্লিশ ডলার মাইনে হলে আমাদের নিয়ারেস্ট ন্যুডিস্ট কলোনীর ঠিকানা খুঁজতে হত।

    সবাই একদিন সম্পন্ন হবে এই খোয়াব কর্পোরেশান দেখে না।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৫৫472538
  • না ঠিক সেরকম নয়। একটু ভুল বলেছি তাদের একাংশ ক্রেতা, কিছু হবে বিক্রেতা হবে, কিছু তাদের এমপ্লয়ী হবে, কিছু লোকে অনুসারী শিল্প গড়বে। সব মিলিয়ে যত বেশি লোক পভার্টির বাইরে আসবে তত বেশি ক্রেতা, বিক্রেতা, এমপ্লয়ী পাওয়া যাবে। এরমধ্যে শোষণ টোষণ নেই তাই অয় কিন্তু সরকারের উন্নয়ন তো অনেক হল। ট্রিকল ডাউনই হোক। :)

    সোয়েট শপ আছে কিন্তু ট্রিকল ডাউনের কোনই এফেক্ট নেই সেটাও অত্যুক্তি।
  • dri | 117.194.237.209 | ০৭ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৫৯472539
  • অ্যাকচুয়ালি পভার্টি লাইনের নীচেও যথেষ্ট পরিমান লোক থাকুক সেটাও কর্পোরেট চায়। সস্তায় লেবার পেতে সুবিধে হবে। মিনিমাম ওয়েজের নীচে কাজ করানো যাবে। উন্নত দেশগুলোতে যে এই ইল্লিগাল ইমিগ্রেশান এতে তো ওদেরও মদত আছে।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ০০:০১472541
  • দ্রি কিভা কোন ইন্টারেস্ট চার্জ করে না। ওরা ওখানে ইন জেনারাল মাইক্রোফিনান্স নিয়ে কথা বলেছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন