এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ইউনুস বিতর্ক

    Kulada Roy
    অন্যান্য | ০৪ এপ্রিল ২০১১ | ৫৩৯৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dri | 117.194.237.209 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ০০:০৬472542
  • ওকে। কিন্তু অন্য কোন এক এম এফ আই ঐ ইন্টারেস্ট চার্জ করে। এটুকু তো অন্তত ট্রু।

    কিভা যে জিরো ইন্টারেস্ট চার্জ করে সেটা ওদের ওয়েবসাইটে কোথায় লেখা আছে? পেলাম না তো।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ০০:১৫472543
  • How we're funded

    100% of every dollar you lend on Kiva goes directly towards funding loans; Kiva does not take a cut. Furthermore, Kiva does not charge interest to our Field Partners, who administer the loans.

    Kiva is primarily funded through the support of lenders making optional donations. We also raise funds through grants, corporate sponsors, and foundations.

    We are incredibly thankful for the support that has enabled us to do the work that has touched the lives of so many people.


    http://www.kiva.org/about

    কর্পোরেট স্পনসর রয়েইছে অবশ্য।
  • dri | 117.194.229.235 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ২২:২৮472544
  • কিভা ফিল্ড পার্টনারের থেকে কোন ইন্টারেস্ট চার্জ করে না। কিন্তু ফিল্ড পার্টনার তো এন্ড ইউজার নয়। ফিল্ড পার্টনার যখন কোন একজন লোককে সেই টাকাটা লোন দেয় তখন ইন্টারেস্ট চার্জ করে তো।

    যেমন জ্যাকব্যাঙ্ক কিভার এক ফিল্ড পার্টনার। এরা মঙ্গোলিয়ায় লোন দেয়। ঠিক কত ইন্টারেস্ট রেট সেটা লেখেনি। কিন্তু পোর্টফোলিও ইল্ড বলে একটা মেট্রিক দিয়েছে ২১.২০%। পোর্টফোলিও ইল্ডের ডেফিনিশান

    Kiva uses a calculation called “Portfolio Yield” to express the average interest rate and fees that Kiva borrowers pay to the Kiva Field Partner administering their loan. Portfolio Yield is defined as all interest and fees paid by borrowers to the Field Partner divided by the average portfolio outstanding during any given year.

    খুব একটা কম শোনাচ্ছে না।

    http://www.kiva.org/lend/289059

    আর কিভার বিজনেসটা তো দেখছি বেশ ভালো। টাকাটা নেয় আপনার আমার মত লোকের থেকে। পঁচিশ ডলার করে। আপনি কোন ইন্টারেস্ট পাবেন না। টাকা ফেরত পাবেন। কিন্তু ডিফল্টের ক্ষেত্রে লস আপনার। মানে কিভার কোন রিস্ক নেই। কোন প্রফিট মেকিংএর চাপ নেই। মাইনেগুলো বোধ হয় বড় বড় ডোনাররা এনশিওর করে।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ২৩:১৭472545
  • সে তো হবেই সারা পৃথিবীর ফিল্ড পার্টনাররা কোন ইন্টারেস্ট না নিলে তাদের মাইনে হবে কোথা থেকে। কিন্তু কিভা কোন কাট রাখে না। ব্যবসা নেই শুধু নিজেদের মাইনে এনসিওর করাও কম কথা নয়। কারণ নিজেদের কোন প্রফিট নেই।
  • dri | 117.194.229.235 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ২৩:২৫472546
  • কিন্তু কথা হল এই কিছু করেও ইন্টারেস্ট কম করা গেল না। যেটা অরিজিনাল 'মানবিক' উদ্দেশ্য ছিল।

    ২০% ইন্টারেস্ট তো মুখের কথা নয়। usuryই হল।

    নো ওয়ান্ডার অত কমপ্লেন হয়।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৩৬472547
  • দ্রি, আপনি পার্শিয়াল কোট করেছেন।

    The Portfolio Yield is generally based on audited financial information and is a better indication of the cost of borrowing money from a Kiva Field Partner than the simple interest rates reported by our Field Partners because it:

    a) Includes any fees associated with loans and
    b) Is expressed in one-year increments (similar to the way an APR works)

    Please note that Portfolio Yield does not yet include the concept of mandatory savings.

  • aka | 168.26.215.13 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৩৮472548
  • এদের প্রফিটেবিলিটি হল ০.৯%
  • dri | 117.194.229.235 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৪৯472549
  • মানেটা কি বদলালো? মানে এন্ড ইউজারকে কি কম দিতে হল?

    ঐ প্রফিটেবিলিটি তো কিভার। জ্যাকব্যাঙ্কের প্রফিটেবিলিটিও তো আছে।

    কিভার প্রফিটেবিলিটি তো কম দেখাতেই হবে। ওটা তো নো-প্রফিট। কিন্তু জ্যাকব্যাঙ্ক তো নো-প্রফিট নয়। লেয়ারিংটা ওভাবেই করা।

    আপনি টাকা দেবেন নো-প্রফিট কিভাকে দেখে। পেছনে জ্যাকব্যাঙ্ক যে অনেক প্রফিট করে নিয়ে যাবে সেটা ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্লার্‌ড হয়ে থাকবে।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৫১472550
  • না ওটা জাকব্যঙ্কের প্রফিটেবিলিটি, কিভার কোন প্রফিটেবিলিটি নেই।
  • dri | 117.194.229.235 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৫৩472552
  • এটা কি কিভা কতটা বিউটিফুল তার কম্পিটিশান, নাকি গরীব লোকেরা সহজ শর্তে ঋণ পেল কিনা তার কম্পিটিশান?
  • dri | 117.194.229.235 | ০৮ এপ্রিল ২০১১ ২৩:৫৭472553
  • সরি, ঠিকই। ওটা জ্যাকব্যাঙ্কের প্রফিটেবিলিটি। তার মানে হল ওরা ওদের বুকে প্রফিট বেশী রাখার চেষ্টা করে না। নিজেরা নিজেদের বেশী বেশী মাইনে দিয়ে দেয়।

    আর এই ধরণের অর্গানাইজেশানের বেশী প্রফিটি রেখে কিই বা লাভ। স্টক তো নেই যে বাড়বে।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৯ এপ্রিল ২০১১ ০০:০০472554
  • উল্টোদিক থেকে ভাবি

    ১। যদি কিভা না থাকত তাহলে এই লোনের অ্যাকসেস সাধারণ লোক পেত না। যার জাকব্যাঙ্ক বা কিভার অন্য ফিল্ড পার্টনারের থেকে লোন নিচ্ছে তারা অন্য উপায় থাকলে সেখানেই যেত।

    ২। জাকব্যাঙ্কের পোর্টফোলিও ইন্ডেক্স বলে যে মেট্রিকটা দেওয়া হয়েছে তাতে লোনের অন্যান্য খরচ অনেক আছে যা কিভা, জাকব্যাঙ্ক বা ঐদেশের অন্যান্য ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও একই ভাবে সত্যি।

    ৩। এখানে কিভার কোন কাট না রাখাটা অবশ্যই প্লাস কারণ অন্তত সেই পরিমাণ ইন্টারেস্ট কম দিতে হয়। অতএব কিভা বিউটিফুল হলে সাধারণের অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে ঋণ পেতে সুবিধা হল।
  • dri | 117.194.229.235 | ০৯ এপ্রিল ২০১১ ০০:০৫472555
  • আমি আরেকটু অন্য দিক থেকে ভাবি। এইরকম ইন্টারেস্ট রেটে আগেকর দিনে মহাজনরা সুদ দিত। এটা এক ধরনের গ্লোবাল নিও মহাজন সিস্টেম চালু হয়েছে।

    এর বিরুদ্ধে নাম্বার অফ কমপ্লেন্‌স হল তার ইন্ডিকেটার।
  • ranjan roy | 122.161.206.124 | ০৯ এপ্রিল ২০১১ ০০:৩৪472556
  • বন্ধুগণ!
    আপনাদের ইন্টারন্যাশনাল অ্যারেনার ফিল্ড প্লেয়ার্স দের স্টাডি করে এম এফ আইদের গ্যাঁড়াকল বোঝার মহতী প্রচেষ্টা সাধুবাদ যোগ্য। এতে মডেলটি অ্যানালেটিক্যালি বুঝতে সুবিধে হবে নিশ্চয়ই।
    কিন্তু খেয়াল রাখুন --ইউনুসের কনসেপ্টটি তৃতীয় বিশ্বের সমাজের মার্জিনালাইজড্‌ অংশকে স্বনির্ভর এবং ক্ষমতাবান করার সর্বরোদহর বটিকা।
    সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেখুন কেন অন্ধ্র ও কর্ণাটকে এম এফ আইয়ের চক্রে সেল্ফ হেল্প গুলো ঋণভারে ডুবছে ও আত্মহত্যার লাইনে দাঁড়াচ্ছে!
    এর মধ্যে কার কত ঋণ গ্রহণের ক্ষমতা (loan absorbing capacity) সেটা না দেখেই লোন ঠুঁসে দেয়াও একটা প্রধান কারণ।
  • aka | 168.26.215.13 | ০৯ এপ্রিল ২০১১ ০১:০৩472557
  • দ্রি, হতে পারে কিন্তু নাও হতে পারে। আমি যতক্ষণ না কোন ডেফিনিট প্রমাণ পাচ্ছি যে কিভা সেরকম কিছু করেছে ততক্ষণ বেনিফিট অফ ডাউট ওদেরই দেব।

    রঞ্জন দা, কিভা একটা সংস্থা যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে এইরকম ছোট ছোট লোন দেবার বন্দোবস্ত করে। ধরুন প:ব:য়ে কারুর ২০০০ টাকা লাগল আমি এখান থেকে ৫০ ডলার পাঠালাম। আবার কয়েকদিন বাদে সেই ৫০ ডলার ফিরে পেলাম। এটাই কিভা অ্যারেঞ্জ করে।

    কিন্তু তার সাথে অন্ধ্রে যা হয়েছে সেটাও অনস্বীকার্য।

    যাইহোক টইয়ের আসল টপিক ছিল ইউনুস বিতর্ক সেখান থেকে আমরা খানিক সরে এসেছি। কুলদা বাবু কোথায় গেলেন। উনি কি আর একটু কিছু জানাবেন ইউনুস বিতর্ক নিয়ে নইলে টই কিন্তু হাইজ্যাক হয়ে যাবে।
  • Kulada Roy | 74.72.144.174 | ০৯ এপ্রিল ২০১১ ১০:২৫472558
  • বদরুদ্দিন উমরের একটা প্রবন্ধ দেখুন। তিনি দীর্ঘদিন এই ক্ষুদ্র ঋণজাল নিয়ে কথা বলছেন। এ বিষয়ে তার একটি বইও আছে। বলা দরকার-- বদরুদ্দিন উমর কট্টর আওয়ামী বিরোধী বাম রাজনীতিক ও গবেষক।
    ........................................
    গরিবদের ‘পরিত্রাতা’ মুহাম্মদ ইউনূসের উন্মোচিত স্বরূপ
    বদরুদ্দীন উমর
    
    শতকরা ৩০ অথবা তার থেকে বেশি হারে গরিবদের সুদ দিয়ে এবং তার সুদ ও আসল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদায় করে তাদের দারিদ্‌র্‌য বাস্তবত দূর করা তো দূরের কথা, এটা সম্ভব এমন মনে করাও সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের বিপরীত। কিন্তু এই প্রচার গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক ও মালিক এবং তাদের সাম্রাজ্যবাদী পৃষ্ঠপোষকরা তাদের প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে ব্যাপক ও শক্তিশালীভাবে চালিয়ে আসছে। এর দ্বারা দেশের ও দেশের বাইরে মানুষকে যেভাবে ভ্রান্ত ধারণা পরিবেশনের মাধ্যমে প্রতারণা করা হয়েছে এবং সাফল্যজনকভাবে করা হয়েছে, এর দৃষ্টান্ত সাম্রাজ্যবাদী শয়তানির ইতিহাসেও বিরল।

    গ্রামীণ ব্যাংকের সুদি কারবারের এমনই অবস্থা যে সাধারণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ঋণ পরিশোধের জন্য যে graceperiod বা সময় দেয়া হয় সেটাও তারা দেয় না। ঋণ গ্রহণের পরবর্তী সপ্তাহ থেকেই সুদ আদায় শুরু হয়। এই সাপ্তাহিক সুদ না দিলে ঋণের শর্ত ভঙ্গ করার জন্য ঋণগ্রহীতাকে শাস্তি দেয়া হয়। এভাবে ঋণ দেয়ার পর ঋণ পরিশোধের জন্য সময় না দিয়ে পরবর্তী সপ্তাহ থেকে ঋণ পরিশোধের অর্থ হল, গৃহীত ঋণ কোন উৎপাদনশীল বা লাভজনক খাতে বিনিয়োগের আগেই প্রদত্ত ঋণের টাকা থেকেই ঋণ পরিশোধ করা। তাছাড়া প্রথম থেকেই এভাবে সপ্তাহে সপ্তাহে ঋণ পরিশোধ করতে থাকার কারণে সুদের হারও বৃদ্ধি পেয়ে শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায় ৫০%-এর বেশি! এভাবে যারা সুদি কারবারের মাধ্যমে গরিবদের পকেট মারে তাদের দাবি হল, ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তারা দেশের গরিব জনগণের দারিদ্‌র্‌য দূর করছে!! বিস্ময়ের ব্যাপার, এই অতি স্বচ্ছ মিথ্যা ও প্রতারণা সঙ্কেÄও দেশে ও বিদেশে মুহাম্মদ ইউনূস ও তার গ্রামীণ ব্যাংকের জয়জয়কার হয়েছে। এই প্রতারণার পুরস্কারস্বরূপ সাম্রাজ্যবাদীরা ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কারেও ভূষিত করেছে। সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা এভাবে ইউনূসকে মাথায় তোলার মূল কারণ অনুন্নত ও গরিব দেশগুলোর জনগণকে প্রতারণার ক্ষেত্রে ইউনূসকে তারা এক অতি নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছে। দারিদ্‌র্‌য দূরীকরণ মানবসমাজের সব থেকে প্রাচীন ও কঠিন সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান করতে এই আধুনিক বিশ্বেও দেশে দেশে সরকারগুলোর ব্যর্থতা বা অপারগতা জনগণের বিপুল অংশকে দারিদে্‌র্‌যর দু:সহ অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করতে বাধ্য করছে। জনগণের ব্যাপক, সুসংগঠিত ও শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান ছাড়া যে এই দরিদ্র অবস্থার পরিবর্তন কিছুতেই সম্ভব নয়, এ বিষয়ে মতলববাজ ছাড়া আর কার সন্দেহ আছে? কিন্তু তা সঙ্কেÄও মুহাম্মদ ইউনূস খুব সাফল্যের সঙ্গেই দেশের ও বিদেশের জনগণকে সাম্রাজ্যবাদীদের, তাদের বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর ও সেই সঙ্গে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রচার মাধ্যমগুলোর সহায়তায় সাফল্যজনকভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত করেছেন। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য, যে দেশটি গ্রামীণ ব্যাংককে সর্বোচ্চ ও হাজার হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করে এই প্রতারণামূলক অপকর্ম ইউনূসকে দিয়ে করিয়েছে, তারাই তাকে ভূষিত করেছে নোবেল শান্তি পুরস্কারে।

    প্রতারণা হিসেবে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস যে বিশ্ব প্রতারকদের মধ্যে অগ্রগণ্য, এর প্রমাণ এখন নরওয়ে, সুইডেন থেকেই যেভাবে প্রচারিত হয়েছে সেটা স্তম্ভিত হওয়ার মতো। স্তম্ভিত হওয়া এ কারণে নয় যে, এক বড় ধরনের প্রতারক হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচয় এর মাধ্যমে উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। এর কারণ, মুহাম্মদ ইউনূস তার প্রধান সাম্রাজ্যবাদী পৃষ্ঠপোষক ও তাকে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ প্রদানকারী নরওয়ে এবং সেই সঙ্গে সুইডেন, জার্মানি ইত্যাদি দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যেভাবে প্রতারণা করেছেন, তার বিবরণই নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একটি প্রামাণ্য চিত্রে গত ১ ডিসেম্বর প্রচারিত হয়েছে।

    মুহাম্মদ ইউনূসের এই চুরি ও প্রতারণা এত বড় আকারের এবং এ বিষয়ে এত কিছু আলোচনার আছে যা আলোচনায় বিস্তারিত ও সন্তোষজনকভাবে করা সম্ভব নয়। তবে এর বিশেষ কয়েকটি দিক এখানে উল্লেখ ও আলোচনা করা দরকার। ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের ওপর নির্মিত ‘ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে’ নামের উপরোক্ত প্রামাণ্যচিত্রে গোপন নথিপত্রের ভিত্তিতে বলা হয়েছে, প্রায় ৭০০ কোটি টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানো হয়েছে। দরিদ্র ঋণ গ্রহীতাদের জন্য পাওয়া ১০ কোটি ডলার অনুদানের অর্থ ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে ইউনূস ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ নামে নিজের প্রতিষ্ঠিত ও মালিকানাধীন অন্য একটি কোম্পানিতে স্থানান্তর করেন। ক্ষুদ্র ঋণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং অন্য উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানিতে এভাবে অর্থ স্থানান্তরের বিষয়টি গোপন রাখার জন্য ইউনূস নরওয়ের দাতাসংস্থা নোরাডকে অনুরোধ করেছিলেন, কারণ এটা জানাজানি হলে দেশে ও দেশের বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। নরওয়ের দূতাবাস বা সরকারকে এ বিষয় কিছু না জানালেও তাদের দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে, তারা এ বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ১৯৯৬ সালের একটি রিপোর্টের ফুটনোট থেকে এ বিষয়ে হঠাৎ করেই জানতে পারেন। তারা এ সম্পর্কে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে যে কোম্পানিতে এভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, তার কোন খবরই তাদের কাছে ছিল না। তাদের এ বিষয়ে কিছু না জানিয়েই এ কাজ করা হয়েছিল।

    গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ইউনূসের মালিকানাধীন নতুন কোম্পানি গ্রামীণ কল্যাণে ৭০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয় ৭ মে, ১৯৯৬। কিন্তু বলা হয়েছিল, এ চুক্তি ১৯৯৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। যাহোক উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, যে দিন এ অর্থ স্থানান্তর হয়েছিল সেদিনই গ্রামীণ কল্যাণ এভাবে প্রাপ্ত অর্থ ঋণ হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করে! এভাবে ইউনূস প্রতারণার যে ভেল্কিবাজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, ইতিহাসে তার তুল্য কিছু খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শুধু এ কারণেই ইউনূসের নাম বিশ্ব প্রতারক হিসেবে কীর্তিত হওয়া দরকার!!
    গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণে অর্থ হস্তান্তর করে সে টাকা আবার গ্রামীণ ব্যাংকে ঋণ হিসেবে ফেরত এনে গরিবদের জন্য আরও ‘সহজ’ শর্তে ঋণ এবং অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থার যে কথা ইউনূস এ অর্থ হস্তান্তরের যুক্তি হিসেবে উপস্থিত করেছেন সেটা নরওয়ের রাষ্ট্রদূত লেহনে এবং দূতাবাসের অফিসার ল্যান্ডমার্কের কাছে যে গ্রহণযোগ্য হয়নি, এটা তারা বলেছেন। ইউনূসের অন্যতম যুক্তি ছিল এভাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর ট্যাক্সের বোঝা কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন!! এর অর্থ কী? এ ট্যাক্স গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃক কাকে দেয়ার কথা ছিল? অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে। কাজেই যে কারসাজির মাধ্যমে ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক এবং ট্যাক্স রেয়াতের ব্যবস্থা করেছিলেন সেটা যে সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া ছাড়া আর কিছু ছিল না- এ কথা কি কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে? তাছাড়া সরকারকে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অর্থ হল ব্যবসা বা সুদি কারবার থেকে পাওয়া লাভের অংশ ট্যাক্স হিসেবে না দিয়ে জনগণের পকেট মারা। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণ নামক কোম্পানিতে অর্থ স্থানান্তর করে ইউনূস এভাবে জনগণের পকেট মারার ব্যবস্থাই করেছিলেন। এটা তার নিজের স্বীকারোক্তির মধ্যেই পাওয়া যায়। অন্য কিছু না হোক, শুধু এ কারণেই অর্থাৎ সরকারকে বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার অপরাধে মুহাম্মদ ইউনূসকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা দরকার।

    কিন্তু দরকার হলেই যে সেটা করা হবে এমন কথা নেই। কারণ বাংলাদেশ সরকার সাধারণভাবে এনজিও এবং বিশেষভাবে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম ও কার্যপরিচালনার ব্যাপারে প্রকৃতপক্ষে কোন নিয়ন্ত্রণ করে না। এখানে উল্লেখ করা দরকার, সরকারের যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আছে তার কোন এখতিয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর নেই। যেমন এ এখতিয়ার আছে দেশের অন্যান্য ব্যাংকের ওপর। এর থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশ সরকার সাম্রাজ্যবাদের কতখানি খেদমত কতভাবে করে থাকে। এ খেদমতের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক তো বটেই, সেই সঙ্গে প্রশিকা, গণসাহায্য সংস্থা, সমতা ইত্যাদি এনজিও যথেচ্ছভাবে বিদেশ থেকে পাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ইচ্ছামতো তা ব্যবহার করে এবং দুর্নীতির মাধ্যমে এগুলোর পরিচালকরা ও সেই সঙ্গে অন্য কর্তাব্যক্তিরা কোটি কোটি টাকা গোপনে নিজেদের পটেকস্থ করেন।
    গ্রামীণ ব্যাংকের এ অর্থ স্থানান্তর নিয়ে কোন বিস্তারিত আলোচনা এ মুহূর্তে এখানে সম্ভব নয়, এটা আগে বলা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন আছে এবং সেটা লেখা হবে। তবে এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, ১৯৯৬ সালে যে ৭০০ কোটি টাকা স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে তার বর্তমান পরিমাণ ও মূল্য কত তার হিসাবও করা দরকার। ১৯৯৬ সালে ৭০০ কোটি টাকা ১৪ বছর পর ২০১০ সালে যে ৭০০ কোটি নয়, এটা বলাই বাহুল্য। শুধু তাই নয়, ১৯৯৬ সালের পর থেকে আরও যে হাজার হাজার কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে ইউরোপের দেশগুলো থেকে দেয়া হয়েছে তার হিসাবও এখন নতুনভাবে তদন্তের মাধ্যমে বের করা ও জনগণের সামনে উপস্থিত করা দরকার। কারণ বিদেশ থেকে দরিদ্র জনগণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে এসে নিজেরা বিশাল আকারে ধনী হওয়ার যে দুর্নীতি ও চক্রান্ত গ্রামীণ ব্যাংক থেকে করা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে এর গুরুত্ব আছে।

    এ প্রসঙ্গে যে দাবি জনগণের দিক থেকে করা দরকার তা হল, গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের নারীদের চড়া সুদে ঋণ দিয়ে তাদের কিভাবে ও কতখানি দারিদ্‌র্‌যমুক্ত করেছে সে বিষয়ে ব্যাপক তদন্ত পরিচালনা। এ কাজ সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে হওয়া দরকার। এ তদন্ত হলেই বোঝা যাবে, গরিবের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মুহাম্মদ ইউনূস গরিবদের দারিদ্‌র্‌যমুক্তির নামে কিভাবে ও কী আকারে বাংলাদেশের জনগণকে শোষণ, সুদ আদায়ের জন্য তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন করে তাদের দারিদ্‌র্‌য দূরীকরণ নয়- উপরন্তু তাদের দারিদ্‌র্‌য আরও বৃদ্ধি করেছেন। কিভাবে তাদের নিজেদের ভিটেমাটি ছাড়া করেছেন, কিভাবে এই ঋণ গ্রহীতাদের অনেকে ঋণের বেড়াজাল ও নির্যাতন থেকে মুক্তিলাভের জন্য আত্মহত্যা করতে পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন! নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে যে তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়েছে, তাতেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গ্রাম জোবরা, যশোরের দিশারী পল্লী ইত্যাদি জায়গায় গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতারা কী নিদারুণ দুরবস্থার মধ্যে আছে, তার উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু জোবরা বা দিশারী পল্লীতেই নয়, বাংলাদেশের থানায় থানায়, গ্রামে যে গরিবদের গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ প্রদান করেছে তাদের সর্বনাশের চিত্র সেসব এলাকায় যে কোন প্রাথমিক তদন্তের মাধ্যমেই স্পষ্ট হবে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থার সঙ্গে যাদের পরিচয় আছে, তারা সবাই এর খবর রাখেন।

    পরিশেষে একটি বিষয়ের উল্লেখ করা দরকার। আমরা অবাক বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, বাংলাদেশের সব সংবাদপত্রে মুহাম্মদ ইউনূসের দুর্নীতির সংবাদ, নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত প্রামাণ্য চিত্রের রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও অভিন্ন মালিকানাধীন পত্রিকা প্রথম আলো ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারে এ বিষয়ে একটি লাইনও ছাপা হয়নি। চারদিকে এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হওয়ার কারণে পরদিন ব্যাখ্যাসহকারে এ দুটি পত্রিকায় এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে এর সত্যাসত্য যাচাই করার উদ্দেশ্যেই তারা প্রথম দিনেই সংবাদটি প্রচার করা থেকে বিরত ছিলেন! বোঝা যাচ্ছে, নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত প্রামাণ্য চিত্র যা পরিবেশন করেছে সেটা বাংলাদেশের অন্য সব পত্রিকায় ছাপা হলেও ‘দায়িত্বশীল’ পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সেটা ছাপা থেকে বিরত ছিল! কোন স্বচ্ছ রহস্যের কারণে এই দুটি পত্রিকা এ কাজ করেছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশের বোকা লোকদের ধারণা নেই এমন নয়। তবে যারা নিতান্তই বোকা তারা নিজেদের অনেক সময় সব থেকে বুদ্ধিমান ভেবে থাকে। এক্ষেত্রে এ দুটি পত্রিকা দেশের জনগণকে বোকা মনে করে যে ‘বোকামি’ করেছে, এর মূল কারণ যে গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে তাদের নিবিড় সখ্য সম্পর্ক এতে সন্দেহ নেই। এ ধরনের সখ্যের কারণে দেশের প্রচার মাধ্যমের দ্বারা যে কত রকম ক্ষতিসাধিত হচ্ছে তার শেষ নেই।
    [সূত্র: যুগান্তর, ০৫/১২/১০]

  • Kulada Roy | 74.72.144.174 | ০৯ এপ্রিল ২০১১ ১০:৩০472559
  • আরেকটি লেখার লিংক দেখুন--
    http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=15416
  • dri | 117.194.238.57 | ০৯ এপ্রিল ২০১১ ২২:৫৫472560
  • ডক্টর ইউনুসের প্রধান ব্যাকার হিসেবে নরওয়ের নাম করেছেন বদরুদ্দীন উমর। এটা খুব ইন্টারেস্টিং। কিন্তু এও ইঙ্গিত করেছেন যে মাঝে কোন একটা সময়ে ইউনুস নরওয়ের সাথেও 'প্রতারণা' করেন। এই প্রতারণার কোন ডিটেল কি আপনার জানা আছে?
  • Kulada Roy | 74.72.144.174 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ০৮:৩৫472561
  • গ্রামীণ ব্যাংকের ‘জোবরা’ গ্রামের সেই সুফিয়ার কবর চাঁদার টাকায়
    Posted23/05/2009
    |
    আলমগীর নিষাদ:

    গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য হিসেবে সারাবিশ্বে তুলে ধরা হয় চট্টগ্রামের ‘জোবরা’ গ্রামের সুফিয়াকে। প্রচার করা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে সুফিয়া স্বাবলম্বী হয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এই সুফিয়া খাতুন চরম দারিদে্‌র্‌যর মধ্যে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মারা যান ১৯৯৮ সালে। গ্রামবাসী চাঁদা তুলে তার দাফনের ব্যবস্থা করে। সুফিয়ার পঞ্চাশোর্ধ্ব অসুস্থ দুই মেয়ে হালিমা ও নূর নাহারের এখন দিন কাটে অর্ধাহারে, অনাহারে। তবে অনেক অনুরোধের পর ড. ইউনূস তাদের একটি রিকশা দিয়েছেন। সাপ্তাহিক ২০০০-এর চলতি সংখ্যায় এ প্রসঙ্গে ‘সুফিয়ার কবর চাঁদার টাকায়/ইউনূসের হাতে নোবেল’ শিরোনামে আজাদ তালুকদার একটি সরেজমিন প্রতিবেদন করেছেন।

    প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৪ সালে ‘জোবরা’ গ্রামের সিকদারপাড়ার অভাবী নারী সুফিয়া খাতুনের হাতে ঋণ হিসাবে প্রথম ২০ টাকা তুলে দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্‌ৎকালীন শিক্ষক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেশি ঋণের আশ্বাস পেয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঋণ পরিশোধ করেন সুফিয়া। নতুন করে ঋণ পান পাঁচশ টাকা। একসঙ্গে এত টাকা পাওয়ার আনন্দে সুফিয়া সেদিন তা সারা গ্রামে জানিয়ে দেন। এর অল্পদিনের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আওতায় চলে আসে পুরো জোবরা গ্রাম। জোবরার ঘরে ঘরে তখন নগদ টাকার উৎসব। কিন্তু সেই আনন্দ মিলিয়ে যেতে বেশিদিন লাগেনি। সুদে-আসলে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন, এলাকা ছেড়েছেন রহিমা ও সায়েরা খাতুনসহ অনেকেই।

    আজও জোবরা গ্রামের মানুষদের আক্ষেপ্রে স্বাবলম্বী করার নামে ড. ইউনূসের ‘ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প’ তাদের গরিব থেকে আরো গরিব করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে তারা ‘আশা’র দ্বারস্থ হয়েছেন। আশার টাকা শোধ করতে আবার দ্বারস্থ হয়েছে ‘ব্‌র্‌যাক’-এর কাছে।

    জোবরা গ্রামের অধিবাসী সাথী উদয় কুসুম বড়-য়া বলেন, ঋণ-বাণিজ্যের মাধ্যমে সহজ-সরল মানুষকে দারিদে্‌র্‌যর চূড়ান্ত পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার কারণে ড. ইউনূসের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।

    এদিকে উন্নয়ন মডেল সুফিয়ার পরিবারে এখন প্রকট দারিদে্‌র্‌যর চিহ্ন। মাথা গোঁজার কুঁড়েঘরটি ভেঙে পড়ার অপেক্ষায়। গত বর্ষায় তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এখনই যদি ঘর মেরামতের ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে এই বর্ষায়ও তাদের ভিজতে হবে। সুফিয়ার পরিবার অভিযোগ করে বলেন, বাড়ির যেখানে এমনই দশা সেখানে ড. ইউনূস প্রচার করছেন আমাদের নাকি পাকা বাড়ি আছে।

    এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী রুকুনুজ্জামান বলেন, অনেকদিন ধরে দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় সুফিয়ার বাড়ির পাশের দোতলা বাড়িটি সুফিয়ার বাড়ি বলে দেখানো হচ্ছে। গ্রামবাসীর মতো ঐ দোতলা বাড়ির মালিক দুবাই প্রবাসী জেবল হোসেনও এতে চরম ক্ষুব্ধ। গ্রামবাসীদের তিনি জানিয়েছেন বাড়ি নিয়ে প্রতারণার দায়ে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করবেন।

    http://www.amadershomoy.com/content/2009/05/22/news0630.htm
  • Kulada Roy | 74.72.144.174 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ০৮:৩৭472563
  • ক্ষুদ্রঋণের ফাদ প্রামান্যচিত্র এখন বাংলায় দেখুন-

    http://www.youtube.com/watch?v=m-tqXTau8Ng&feature=player_embedded#at=288
  • Kulada Roy | 74.72.144.174 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ০৮:৩৮472564
  • ক্ষুদ্রঋণের ফাদ প্রামান্যচিত্র এখন বাংলায় দেখুন
    http://www.youtube.com/watch?v=mtqXTau8Ng&feature=player_embedded#at=288
  • Kulada Roy | 74.72.144.174 | ১০ এপ্রিল ২০১১ ০৮:৪০472565
  • ক্ষুদ্রঋণের ফাদ প্রামান্যচিত্র এখন বাংলায় দেখার লিংক
    http://banglarbibek.amarblog.com/posts/129475/
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২২ এপ্রিল ২০১১ ১০:০৮472566
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রফেসর মুনতাসীর মামুনের প্রবন্ধ পড়ুন--

    . ইউনূস, সুশীল সমাজ বনাম ঋণদাস ও বাংলাদেশ সরকার
    Mon, 18/04/2011 - 11:51am|byMuntasir.Mamun
    . কামাল হোসেন যখন গণফোরাম করেন তখন থেকে এর শুরু। সেখানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে 'আমার স্বপ্নের দল' সম্পর্কে অনেক কথা বলেছিলেন বিদ্যমান রাজনীতির বিপএ। অনেক পরে তাঁর স্বপ্নের দল করার সুযোগ এলো। রাজনৈতিক দল করতে চাইলেন সব কিছু বদলে দেবার আশায়। বাস্তব হলো, এটি বাংলাদেশ। যে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ করেছিলেন তিনিও বাঙালীদের বোঝেননি। বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন। সেই বাংলাদেশে ই-মেইল আর এসএমএস করে রাজনৈতিক দল করবেন? আর সুশীলরা তাকে সমর্থন করলে সব মুশকিল আসান হয়ে যাবে? হয়নি। তারপর তিনি তঙ্কÄ¡বধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। সামরিক তঙ্কÄ¡বধায়ক সরকারের সময় তিনি তিন উদ্দিনকে সমর্থন করেছেন যখন আমরা তাদের রুখে দাঁড়িয়েছি এবং মৃতুয়র বা অত্যাচারের প্রহর গুনছি। তিন উদ্দিনের এক উদ্দিন ইয়েস উদ্দিন বা ইয়াজউদ্দিনের দরবারে গিয়ে তাকে এ পস্নাস দিলেন। সে দিন আমরা প্রচ- উব্ধ হয়েছি একথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। তাঁর যা মর্যাদা তা দিয়ে তিনি আমাদের ছাত্র শিক বা গণতন্ত্রমনাদের পএ একটি কথা বললেই পরিস্থিতি পাল্টে যেত। কিন্তু তিনি তা না করে স্বৈরশাসকদের সমর্থন করেছেন। সুশীল সমাজের হয়ে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ বললেন, দুই নেত্রীকে এক কএ বন্ধ করে রাখতে বললেন যতণ তারা একমত না হয়। ড. ইউনূসকে যদি এখন বদরুদ্দীন উমর বা উদ্রঋণের বিপএ একজনের সঙ্গে এক কএ বন্ধ করে রাখা হয় তিনি কি উদ্রঋণ ধারণা থেকে সরে আসবেন? তাঁর এই সব উক্তি কারও ভাল লাগেনি। তিনি অনেক নামী হতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার মতো নামী নন। জনভিত্তিও নেই। কিছু দিনের মধ্যে এই মনত্মব্য সঠিক প্রমাণিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। গ্রামীণ ব্যাংকের যারা ঋণ নেয় তাদের অনেকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি করে, কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক করে না। গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মালিক ও মক্কেলের। বন্ধুত্বের নয়। কারণ গ্রামীণ ব্যাংক কল্যাণকামী কোন প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বা অন্যকোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কটা আবেগের। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরও তিনি যে সব মনত্মব্য করেছেন তা অনেকে পছন্দ করেনি। কারণ, ক্রমে ক্রমে বিষয়টি দাঁড়িয়েছে এমন যে, তিনিই এ দেশে একমাত্র ব্যক্তি যাকে পৃথিবীর সবাই চেনে, তিনি যাকে যা খুশি বলতে পারেন, সবাইকে উপদেশ দিতে পারেন। কিন্তু কেউ তাঁকে কিছু বলতে পারবে না। এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই সুশীল সমাজের বিপরীতে নাগরিক সমাজ, স্বৈরশাসকদের বিরম্নদ্ধে গণতন্ত্রমনা, প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাবাদীদের বিপএ প্রগতিমনা বা লিবারেলদের উব্ধ করেছে।

    এ প্রসঙ্গে আমরা যারা কখনও তাঁর অপ্রশংসা করিনি তাদেরও একটা ওভ আছে। ড. ইউনূস নারীদের নিয়ে কাজ করছেন, নারীদের মতায়ন করতে চাচ্ছেন। তাঁর দর্শন নারী স্বাবলম্বী হলে মতায়ন হবে এবং দেশ অগ্রসর হবে। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। নারী কোন কোন এত্রে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলেও [ৰউদ্রঋণে তা সম্ভব নয়, বড় চাকরি করলে তা সম্ভব] তার মতায়ন হবে না। অর্থাৎ রাজনীতি এখানে আসবেই। সুশীল সমাজের কর্তারা যারা আমাদের উপদেশ দেন তারা কি মনে করেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকলে, দেশের চরম মৌলবাদ জঙ্গিবাদ কায়েম হলে, রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী হলে তারা কাজ করতে পারতেন? আমরা যদি রাসত্মায় না থাকতাম, নিয়ত এসবের বিরম্নদ্ধে রম্নখে না দাঁড়াতাম, রাজনৈতিক দলগুলো যদি এককাট্টা হয়ে স্বৈরশাসনের বিরম্নদ্ধে না দাঁড়াত, আওয়ামী লীগ বামপন্থীরা সিভিল সমাজের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে যদি খালেদা-নিজামীর সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার ষড়যন্ত্র রম্নখে না দাঁড়াত, তা হলে এসব এনজিও করে খেতে পারত বা সুশীল সমাজের কর্তারা কল্কে পেতেন? কিন্তু মনে করে দেখুনতো আপনারা সুশীলরা, ড. ইউনূসরা কখনও রাসত্মায় থেকেছেন কিনা? আপনারা বলতে পারেন আপনারা রাজনীতি করেন না, এগুলো রাজনীতি। তাহলে বলব, রাজনীতি করতে চান কেন, রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের নিয়ে কথা বলেন কেন? উদ্রঋণও তো এক ধরনের রাজনীতি। বৃহ্‌ৎ পুঁজির স্বার্থরআর রাজনীতি। সুশীল সমাজের ড. কামাল হোসেন, ড. মোজাফফর আহমেদ বা রেহমান সোবহানও রাজনীতি নিয়ে কোন মনত্মব্য করলে লোকে শোনেন, পছন্দ হোক না হোক, কারণ তারা বিভিন্ন সময় রাসত্মায় থেকেছেন, স্বৈরশাসনের বিরম্নদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরম্নদ্ধে, এ রাষ্ট্রটি গঠনের প্রাক্কালে। কিন্তু ড. ইউনূস? এত দাঙ্গা হলো, এত সংখ্যালঘু নির্যাতিত হলো, দেশত্যাগ করল, জঙ্গিবাদের ভল থাবা রোধ করলাম, কতজন প্রাণ দিল, সব সময় ভেবেছি ড. ইউনূস যদি শানত্মির স্বপএ একটি কথা বলেন, কতজন বেঁচে যাই। না, তাঁর কাছ থেকে কোন সহানুভূতি, প্রশংসা আমরা পাইনি। পায়নি দেশের মানুষও। এ বিষয়টিও কিন্তু সামগ্রিক আলোচনার মধ্যে উপাদান হিসেবে রাখতে হবে।

    এ পরিপ্রেইতেই বলতে হয়, যখন তিনি রাজনীতি নিয়ে মনত্মব্য করবেন তখন তাঁকে অন্যদের মনত্মব্যও শুনতে হবে। সমসত্ম কিছু বাদ দেন। বেগম জিয়ার সময় যখন গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়, অনেকের মৃতুয় হয়। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া সবাই তাঁকে সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। সুশীল সমাজের অনেকেও। কারণ, সেটি ছিল বর্বরোচিত হামলা। আমাদের অনেকের ওপর শেখ হাসিনা উব্ধ ছিলেন, আমাদের অনেকেও আবার তাঁর ওপর উব্ধ ছিলেন, কিন্তু সব ভুলে আমরা তাঁর কাছে গেছি কারণ মানুষতো আমরা, বিএনপি-জামায়াত তো নই। বিশেষ মর্যাদার শুধু একজন যাননি, একটি সমবেদনার বাক্যও উচ্চারণ করেননি। তিনি হলেন ড. ইউনূস। এসব বিষয় নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, উদ্রঋণ নিয়েও, কিন্তু কোন কথা ড. ইউনূসের কানে পেঁ০ছায়নি। কারণ, তাঁকে ঘিরে রেখেছে কোটারি স্বার্থ। যেমন_আমাদের নেতানেত্রীরা যখন মতায় যান তখন কোটারি স্বার্থ তাদের ঘিরে ফেলে। আমাদের কথা, প্রানত্মিকদের কথা, সমালোচকদের কথা তাদের কানে পেঁ০ছে না, কারণ তখন তারা মানুষের থাকেন না, কোটারির হয়ে যান এবং তাদের পতন হয়।

    বর্তমান বিতর্কের শুরম্ন ডেনমার্কের ডকুমেন্টারি পরিচালক টম হেইনিক্যানের 'দি মাইক্রো ডেট' নিয়ে। নরওয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে তা দেখানোর পরই বিতর্কের শুরম্ন। আমাদের এখানে যে খবর এসেছে সে সম্পর্কে, সেটি আংশিক। ছবিটি পুরো না দেখলে আমার মনত্মব্যও বিভ্রানত্মিকর হতো। আমাকে ডাকে নাম না জানা একজন সিডিটি পাঠিয়েছেন। পড়েই ছিল তা। এখন দেখেছি এবং তার ভিত্তিতেই লিখছি।

    এখানকার সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছিল, গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা কর থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গ্রামীণ কল্যাণে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, নরওয়ে সরকার তার প্রতিবাদ করেছিল এটি অন্যায়। মূল বিষয় কিন্তু তা নয়। মূল বিষয় উদ্রঋণ কীভাবে মানুষকে সর্বস্বানত্ম করছে, মানুষ আত্মহত্যা করছে এবং উদ্রঋণে বৃহ্‌ৎ কর্পোরেশন বা পুঁজিবাদ কীভাবে স্ফীত হচ্ছে সে বিষয়ে। নোরাড অংশটি কয়েক মিনিটের মাত্র। সেখানেও বাংলাদেশের অনেকে যেমন_খুশি কবির, খলীকুজ্জমান, এয়াকশন এইডের শহীদুর রহমান, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা উদ্রঋণের বিরম্নদ্ধে বলছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, আফ্রিকা, মেঙেইকা, ভারতেও কী অবস্থা হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের বিটিভিতে যদি এটি দেখান হয়, তা হলে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা যারা মানববন্ধনে নেমেছেন বা সুশীল সমাজের কর্তারা, রাসত্মায় বেরম্নতে পারবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু সে চিত্র তো মামলা শেষ না হওয়ার আগে দেখানো যাবে না। এ বিষয়টি কিন্তু অনুচ্চারিত থেকে গেছে। এবং ডকুমেন্টারিটি এত বিশ্বাসযোগ্য যে বলার নয়। আমেরিকা এবং পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রপ্রধানরা সেই কারণেই ইপ্ত। কারণ, উদ্রঋণ যে মহ্‌ৎ সেটি পৃথিবীর মানুষকে গেলাতে তাদের অনেক ইনভেস্ট করতে হয়েছে। আজ উদ্রঋণ বিপর্যসত্ম হলে তাদের বৃহ্‌ৎ লাভের বিষয় কী দাঁড়াবে? এ প্রশ্নটিই সে ডকুমেন্টারিতে এসেছে। এখানে ড. ইউনূস গৌন। মার্কিনী বা পাশ্চাত্যের ধমক-ধামক সে কারণেই।

    যে প্রসঙ্গটি আমাদের এখানে প্রচারিত হয়েছে সেটি নোরাড প্রসঙ্গ। সেটিও হালকা করে দেখার উপায় নেই। স্পষ্ট ড. ইউনূসের চিঠিতে বলা হয়েছে তিনি ১০০ মিলিয়ন সরিয়েছেন কর দিতে হবে দেখে। এবং বাংলাদেশের পাবলিক এটি জানলে খুব খারাপ হবে। নরওয়ে তখন এর প্রতিবাদ করে। ড. ইউনূস জানান, তিনি টাকা ফেরত দিচ্ছেন। এক-তৃতীয়াংশ ফেরত দেন। এবং ড. ইউনূসের অনুরোধে নরওয়ে সরকার বিষয়টিকে বোধ হয় চেপে যায়। টম নরওয়ের সরকার থেকে জানতে চেয়েছেন তারা কোন জবাব দেননি_যা অস্বাভাবিক। এসব বিষয়ে তারা স্বচ্ছ। মনে হয় এ কারণেই গ্রামীণফোনের মালিকানা হসত্মানত্মর হয় টেলিনরের কাছে। চলচ্চিত্রটি দেখানোর পর এ প্রশ্ন আবার উঠলে বোধ হয় নোরাডের অর্বাচীন কোন মুখপত্র মুখ খুলেছিল। কিন্তু মার্কিন ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ধমকে এরপর তারা নিশ্চুপ হয়ে যায়। আমি ছবিটি না দেখলে এটি বিশ্বাস করতাম না। তবে অনুমান করছি, উদ্রঋণের বিপএ যারা আন্দোলন করছেন তারাই এ ছবি নির্মাণ করিয়েছেন।

    এ পরিপ্রেইতে বলতে হয়, প্রশ্ন উঠবে, তা হলে কি উদ্রঋণের ভাল কিছু নেই? যদি ভাল কিছু না থাকে তাহলে পাশ্চাত্য ও আমেরিকা এটা নিয়ে এত প্রচার করছে কেন? তার উত্তরও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দু'একটি সাফল্যকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হয়েছে। উদ্রঋণের উপকারভোগী হলো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যারা পুঁজিবাদী সরকারসমূহের স্টেক হোল্ডার। তাদের লাভ অবশ্যই হচ্ছে। গরিব মানুষের? সে অন্য প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিখ্যাত ঋষিপাড়ার কার্তিক_ঋণ নিয়েছিলাম, এখন তার জন্য মনে হয় বাসের চাকায় মাথা পেতে দিই। এবং তারা বলছে ঋষিপাড়ার পুরো বিষয়টাই ছিল সাজানো। এগুলো বিশ্বাস করা কষ্ট। কিন্তু এটি সত্য।

    এ কারণেই, সরকার পর্যালোচনা কমিটি করেছিল। কারণ, আনত্মর্জাতিকভাবে প্রশ্নগুলো উঠেছে। লয় করবেন, সরকার তদনত্ম নয়, পর্যালোচনা কমিটি করেছিল। কারণ, গ্রামীণ ব্যাংক সরকারই করেছিল, সেখানে তাদের ৩০ ভাগ শেয়ার এখনও আছে। ইতোমধ্যে, মার্কিনীদের ধমক খেয়ে নরওয়ে বলেছে, যা নিয়ে নরওয়ে সরকার প্রতিবাদ করেছিল তা মিটে গেছে। ড. ইউনূসও ফিরে এসে একই বক্তব্য দিয়েছেন এবং বলেছেন, কর ফাঁকির জন্য টাকা স্থানানত্মর করা হয়নি। কিন্তু ডকুমেন্টারির কাগজপত্রে তা স্পষ্ট লেখা আছে। তারপরও ব্যাপারটি মিটে যেত। যদি তিনি বলতেন, ঠিক আছে, পর্যালোচনা কমিটি করেছেন করম্নন। গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী আমি সরে যাচ্ছি। [কারণ, এসব বিষয়ে তিনি অনেক উপদেশ দিয়েছেন]। যা খুশি করম্নন। তবে বিনা কারণে অভিযুক্ত করবেন না। ব্যাপারটি আর এগুতো না।

    যে বিষয়টি এই বিতর্কে চাপা পড়ে গেছে তা হলো, সরকারও তাঁকে এই অনুরোধ করেছিল। এবং সরকার নমনীয় ছিল কারণ, ড. ইউনূসের মঙ্গলাকাঙঈও অনেকে আছেন সরকারে। বাংলাদেশ সরকার সাধারণত এ ধরনের অনুরোধ করে না। ড. ইউনূস দেখেই তারা অনুরোধ রেখেছিল। কিন্তু, তিনি বললেন, না, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব ছাড়বেন না। এবং পত্রিকার খবর অনুযায়ী, যদি তা সত্য হয় যে, তিনি পাশ্চাত্যের যোগাযোগ কাজে লাগালেন। কোন সরকারই তা পছন্দ করবে না। বিএনপি যদি মতায় থাকত, তারাও করত না। এখানেই অঙ্কটা গোলমেলে হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের শিআ হচ্ছে, প্রকৃতির মতো এখানেও নিশ্চিত কিছু নেই, লজিক্যালি কিছুই এখানে ঘটে না। ড. ইউনূসকে যারা পরামর্শ দিয়েছেন, অনুমান করছি যারা তাঁকে রাজনৈতিক দল করার ভুল পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা এ এত্রে সক্রিয় ছিলেন। তাদের অঙ্ক ছিল বোধহয় এ রকম যে, পাশ্চাত্যের নামী নামী লোক এবং সরকার যখন হাসিনা সরকারের 'অবিমৃশ্যকারিতা'র বিরম্নদ্ধে কথা বলা শুরম্ন করবে তখন বাংলাদেশ সরকারের অবস্থা হবে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। কিন্তু ব্যাপারটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, সরকারের মনে হচ্ছে, ঠিক আছে দেখা যাবে। ঘটনা আরও জটিল হয়েছে তিনি আদালতে যাওয়ায়। ড. ইউনূসের দিক থেকে দেখতে গেলে বলতে হয়, তিনি মনে করেন, তাঁর ওপর অন্যায় করা হয়েছে। সুতরাং তিনি প্রতিবিধান চান। সরকারের এখন কিছু বলার নেই। এখন সর্বোচ্চ আদালতে বিষয়টি আবারও পর্যালোচনা করবে যদিও তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। আমরা সে বিষয় নিয়ে মনত্মব্য করব না। কিন্তু আদালতে যেসব যুক্তিতর্ক উপস্থাপিত হয়েছে তার ভিত্তিতে সাধারণ নাগরিক সমাজে যে প্রশ্নটা উঠছে তা হলো, অবসরের দশ বছর পরও কেন তিনি থাকবেন বা থাকতে চাচ্ছেন? এর উত্তর অবশ্য ড. ইউনূস আগেই দিয়েছেন। তিনি না থাকলে গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হয়ে যাবে।
    সমস্যাটা হচ্ছে, দু'টি প্রসত্মাবের কোনটিই গ্রহণযোগ্য ঠেকছে না সাধারণের কাছে। যেমন_তিনি দশ বছর থাকলে, অন্যরা পারবেন না কেন দশ বছর থাকতে? আর বঙ্গবন্ধু যখন দেশ পুনর্গঠন করছিলেন তখন তাঁকে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ কি তার ফলে মানচিত্র থেকে মুছে গেছে? এর সঙ্গে এ বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে, এতদিন তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে রইলেন কিন্তু এমন কোন কাঠামো তিনি কেন করলেন না যেখানে তিনি না থাকলেও ব্যাংক চলবে। কারণ তিনি তো আর যাই হোক অমর নন। এর অর্থ কি এই যে, তিনি চেয়েছিলেন, এমন অবস্থা তৈরি করতে যাতে সব তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে? তাহলে তিনি রাজনীতিবিদদের দোষ দেন কেন? তারাও তো একই কাজ করছেন, দলকে একজনের ওপর নির্ভরশীল করে রাখছেন। প্রশ্ন_কে কাকে প্রভাবান্বিত করছে।

    . ইউনূস এবং পাশ্চাত্যের লবি একটি কথা বারবার বলছেন, তিনি সম্মানজনক সমাধান চান। কিন্তু সেই সমাধানটি কি সেটি কেউ বলেননি। অনুমান করছি, গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা থাকুক, তাই তিনি চান। সরকারও তাতে নিমরাজি ছিল। কিন্তু এখন আদালতে যাওয়ায় সে পথও রম্নদ্ধ হয়ে গেল।

    . ইউনূসকে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও পাশ্চাত্য সমর্থন করছে কেন? নিশ্চয় কারণ আছে। তাদের যুক্তি, বাংলাদেশ গরিব দেশ। গরিবী হটাতে হবে উদ্রঋণের মাধ্যমে। এই ঋণ পাবে শুধু নারী। সে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এবং তাতে তার মতায়ন হবে। এবং ড. ইউনূস এই মহ্‌ৎ কাজটি করছেন। অবস্থার উন্নয়ন ঘটলে বাজার বৃদ্ধি পাবে। এতে পুঁজি ও ভোক্তা দু'পএরই লাভ। খুব সাধারণ, কিন্তু শক্তিশালী যুক্তি। উদ্রঋণ যে ব্যাপক আকারে বিশ্বে প্রচার পেয়েছে তার কারণ এই সরল কিন্তু শক্তিশালী যুক্তি। অনেকের কাছে এটি সামাজিক কর্ম মনে হয়েছে, এর পেছনে যে বাণিজ্যিক মনোভাব আছে তা কখনই প্রাধান্য পায়নি।

    আমি উদ্রঋণ বিশেষজ্ঞ নই, কিন্তু একটি প্রশ্ন জেগেছে অনেকদিন ধরে। গত চার দশক এই উদ্রঋণের উৎসব চলছে। যে পরিমাণ টাকা এতে শুধু অনুদান হিসেবে এসেছে তাতে বিশাল সংখ্যক মানুষের গরিবী আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল। সেটি বাংলাদেশ কেন, কোথাও কেন হলো না? এ প্রশ্নও কেউ করেননি কেন যে, যে ঋণ দেয়া হয় মূলধন হিসেবে এক সপ্তাহ পর থেকে সুদসহ তা ফেরত দেয়া হবে কী ভাবে? ধরা যাক সুফিয়া খাতুন ১০টি মুরগি কেনার জন্য ঋণ নিলেন। উদ্দেশ্য, মুরগির ডিম বিক্রি করে সংসার চালাবেন। এখন গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা কি তাকে সেই মুরগি বেছে দিচ্ছেন_যা এক সপ্তাহ পর থেকে ডিম দেবে? ডিম যদি তিন মাস পর দেয় তাহলে এই ১২ সপ্তাহের সুদসহ কিসত্মি কিভাবে পরিশোধ করা হবে? আর, একজন বা দু'জনের জন্য একটি গ্রম্নপের বাকি সবাই কেন লাঞ্ছিত হবে? এটি মৌলিক অধিকারের কোন পর্যায়ে পড়ে?

    দ্বিতীয়ত, নারীর মতায়নে সাহায্য করেছে রাজনৈতিক সরকার, বিশেষ করে রাজনৈতিক সরকার এবং 'মাঝারি শিল্প' যেমন_পোশাক খাত। উদ্রঋণের এএত্রে অবদান একেবারে নেই তা নয়, কিন্তু রাষ্ট্র ও শিল্প খাতের তুলনায় নগণ্য। কারণ স্বাবলম্বী না হলে নারীর মতায়ন হবে কী ভাবে? পোশাক খাতে নারী শ্রমিককে শোষণ করছে, কিন্তু সে নগদ যা পাচ্ছে উদ্রঋণ থেকে তা একেবারেই পাচ্ছে না। কিন্তু শোষণটা হচ্ছে এবং সেটি বোনাস হিসেবেই তাকে মেনে নিতে হচ্ছে।

    আমি সরেজমিনে বিষয়টি দেখার জন্য নেহাত কৌতূহলবশত রাজশাহীর গোদাগাড়ির একটি গ্রামে গিয়েছিলাম। নিয়ে গিয়েছিলেন নিমরূল কমিটির ডা. শাফিক। যে গ্রামে তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন সে গ্রামের প্রায় সব মহিলাই উদ্রঋণ গ্রহীতা। সবার পরনে জীর্ণ বসন, শীর্ণ শরীর। আমি জানতে চাইলাম, সবখানে পড়ছি, জানছি দ্রঋণ গ্রহীতারা মহাসুখে দিন কালাতিপাত করছেন, কিন্তু তাদের দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। ব্যাপারটা কী? মুচকি হেসে সবাই জানালেন, ঋণ তাদের দরকার, মহাজনও আছে, কিন্তু তার দরকার নেই, বিভিন্ন এনজিও [গ্রামীণসহ] তাদের নিয়মিত ঋণ দিচ্ছে। তারা একজন থেকে ঋণ নিয়ে অন্য কোম্পানির ঋণ শোধ করছেন। তাদের অবস্থার তাহলে পরিবর্তন হয়নি? এ প্রশ্নটি বোকার মতো করা হয়েছে, কারণ আমি তো চোখেই তা দেখতে পাচ্ছিলাম। উত্তর পেলাম, মোটেই না, তবে কোনরকমে দু'বেলা খেয়ে পরে বেঁচে আছেন। তারা র্যাডিক্যাল হবেন না।
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২২ এপ্রিল ২০১১ ১০:১২472567
  • উপরের লেখার আগের দিনের লেখা।

    . ইউনূস, সুশীল সমাজ বনাম ঋণদাস ও বাংলাদেশ সরকার--১

    মুনতাসীর মামুন
    Sun, 17/04/2011 - 1:05pm|byMuntasir.Mamun

    . ইউনূস বিতর্ক নিয়ে লিখিনি দেখে নিন্দিত না হলেও নন্দিত হইনি এবং ভাষ্যকার হিসেবে সুবিধাবাদী অবস্থান নিয়েছি বলে অভিযুক্ত হয়েছি। কাগজে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত ও অপ্রতিষ্ঠিত ভাষ্যকার ড. ইউনূস, সুশীল সমাজের প নিয়েছেন। সরকারের অবস্থা এতিমের মতো। অনেককে তারা পার্থিব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে বা রাজনীতির ভাষায় 'মূল্যায়ন' করেছে, কিন্তু তারা সরকারের পএ কথা বলতে এক কদমও এগিয়ে আসেনি। আমি লিখিনি এ কারণে যে, ড. ইউনূস বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম, ভাষ্যের জগত থেকে ধীরে ধীরে সরে আসব। কারণ, ভাষ্য লেখার পর থেকে সব সরকারেরই চউশূল হতে হয়, অন্যরা দিব্যি করে খায়। আমিও তো মানুষ, ফেরেশতা নই। আরেকটি কারণও ছিল। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মতো আমরা জনপ্রিয় নই। আমার ভাষ্য দৈনিক জনকণ্ঠ বা ভোরের কাগজ যেভাবে ছাপে এবং অবিকৃতভাবে, অন্য সম্পাদকরা তাতে রাজি নয়। তাদের শর্তানুযায়ী লিখতে হবে এবং সে শর্তটি থাকে অনুচ্চারিত, নিজেকেই বুঝে নিতে হয়। অধিকাংশ সে শর্ত মেনেই লেখেন। তাছাড়া কোন কোন বিষয়ে পত্রিকা চরমভাবে বিভক্ত হয়ে যায়। যেমন_. ইউনূসের অতি প্রশংসা করে যদি কেউ লেখেন তবে কালের কণ্ঠ বা আমাদের সময় ছাপবে কিনা সন্দেহ। আবার অতি সমালোচনা করে যদি লেখেন, প্রথম আলো বা আমার দেশ ছাপবে কিনা সন্দেহ। আরও আছে, যেমন_আমি যদি আবাসন শিল্প এবং মোবাইল ফোন কোম্পানির সমালোচনা করে লিখি তাহলে বাংলাদেশের কোন পত্রিকা তা ছাপবে না। সরকারের বিরম্নদ্ধে সোচ্চার হওয়া সহজ, কর্পোরেট হাউজগুলোর বিরুদ্ধে নয়। যেখানে সাংবাদিকরা জিম্মি। উদাহরণ স্বরূপ বলি, মার্কিন কর্মকর্তা বেস্নকের একটি মন্তব্যের বিরুদ্ধে আমরা কয়েকজন একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছিলাম সব পত্রিকায়। ছেপেছিল মাত্র চার কি পাঁচটি। আর কেউ ছাপেনি, কারণ যদি গ্রামীণফোন রাগ করে? মানে কর্মকর্তারা? গ্রামীণফোন এমনই মহাজন যে, নববর্ষে শুভেচ্ছার বদলে এসএমএস করে বিল মিটিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হতো। গ্রামীণফোন যখন যাত্রা শুরম্ন করে তখন বলা হয়েছিল কলপ্রতি এক টাকা নেবে। তারপর বেশি মাসুল নেয়া শুরম্ন করলে তার বিরম্নদ্ধে মামলা হয়। সে মামলার কী হয়েছে জানি না। যাক, ড. ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক থেকে আমার কাছে আবার মৌলবাদী এবং আমিনীদের গা মোড়ামুড়ি বেশি শঙ্কাজনক মনে হয়েছে। সে জন্য তার প্রতিবাদটা জরম্নরী মনে হওয়ায় আবারও ভাষ্যের জগতে ফিরে আসতে হয়েছে। আমিনীদের, সুবিধাবাদীদের, সরকারী ছাড়ের সমালোচনা করে লিখেছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের ভাষ্য। এতে অবশ্য নিজের মনত্মব্য কম। বিতর্কের শেষ পর্যায়ে লেখার কারণে, ঘটনার সার্বিক একটা সারমর্ম দেয়ার সুবিধা পেয়েছি।

    অবশ্য, একেকজনের কাছে 'জরম্নরী' শব্দটা একেকরকম অর্থ বহন করে। সুশীল সমাজ ও তাদের মুরবিব এবং তাদের মুখপাত্রদের মনে হয়েছে, ড. ইউনূসকে নিয়ে সরকার যে কাজটা করল তা দেশকে একেবারে ধ্বংসের প্রানত্মে নিয়ে গেছে। ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে এতবড় দুর্যোগ আর হয়নি। অন্যদের কাছে মনে হয়েছে, সরকার এমন কী খারাপ কাজটা করেছে? ড. ইউনূসই বাড়াবাড়ি করছেন। এ রকম যুযুধমান দু'প লেখালেখি করেছে। ড. ইউনূসের পএ প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, জনকণ্ঠ বিসত্মর প্রতিবেদন ছেপেছে। কালের কণ্ঠ, আমাদের সময়, এখন আবার জনকণ্ঠ বিপএর মতামত ছাপছে। দু'পএর অনেক কথাই যৌক্তিক, অনেক যুক্তি অযৌক্তিক।

    . ইউনূসের বিপএ আমার বলার কিছু নেই, অনুচ্চারিত কিছু ওভ আছে হয়ত। সেটি স্বাভাবিক, কারণ তিনি পাবলিক ফিগার, তাঁর কর্মকা- আলোচিত সমালোচিত নিন্দিত-নন্দিত হবেই। তিনি আমার ছোটবেলার বন্ধুর বড় ভাই, আমাকেও বিবেচনা করেন হয়ত সেভাবে। অবশ্য, আমাদের যোগাযোগ কচিৎ কখনও, সামাজিক অনুষ্ঠানে। আমি উদ্রঋণ বিশেষজ্ঞ নই, আগ্রহও নেই এতে। গ্রামীণ ব্যাংক গড়ার উদ্যোক্তা ড. ইউনূস নিয়েছিলেন এবং তাঁর সৌভাগ্য এই যে, তাঁকে প্রতিটি সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সৌভাগ্য বাংলাদেশে সবার হয়নি, হবেও না। তাঁর উদ্যোগ সফল হয়েছে। তাঁর সাফল্যে আমরা বেদনাবোধ করতে পারি, কিন্তু সেটাই সত্য। গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বাংলাদেশে আরও কয়েক শ' এনওজিও উদ্রঋণ দেয়। এটি আর তেমন আলোচনার বিষয় নয়। গ্রামীণ ব্যাংকও এক ধরনের এনজিও। ব্যাংক যেমন বিভিন্ন আইনকানুনে বাঁধা থাকে, গ্রামীণ ব্যাংক তেমন আইনকানুনে বাঁধা নয়। এনজিও প্রধান যেভাবে একটি এনজিও চালান, গ্রামীণ ব্যাংকও সেভাবে চলে। অনেকে বলছেন, এটি ব্যাংক তবে বিশেষায়িত ব্যাংক। যদি ব্যাংক হয়, বিশেষায়িত, তা হলেও তার নানারকম বাধা নিষেধ থাকবে। কিন্তু পত্রপত্রিকার খবরে দেখেছি তেমন কোন আইন-কানুন এএত্রে ছিল না। এর একটি কারণ ড. ইউনূস। তাঁর কার্যাবলীর ইতিবাচকভাবে এত প্রচারিত হয়েছে যে, কেউ আর তাতে মনোযোগ দেয়নি বা নাক গলায়নি। মনে রাখা দরকার এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বৈরশাসনের সময় এবং বিকশিত হয়েছে সেই আমলে, প্রবৃদ্ধি পেয়েছে আধা স্বৈরশাসনে। ইতিবাচক প্রচারে পাশ্চাত্য আগ্রহ দেখিয়েছিল বেশি। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মানুষ যদি বেশি অভুক্ত, বেশি দরিদ্র হয় তাহলে রাষ্ট্র বিপস্নব ঘটবে নিয়ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় সহায়তা করেছে স্বৈরশাসকদের। উন্নয়নগামী দেশগুলোতে তারা আবার কিছু রোল মডেল তৈরি করতে চেয়েছে_যিনি/যাঁরা এ ধরনের সঙ্কটে ভূমিকা রাখতে পারবেন। যেমন, মিসরে হোসনি মোবারকের স্বৈরশাসনকে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সহায়তা করেছে, তার বিরম্নদ্ধে যখন মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে তখন আল-বারাদীকে তৈরি করা হয়েছে এবং তাকেও নোবেলপ্রাইজ দেয়া হয়েছে। বারাক ওবামা কিছু না করেই পুরস্কৃত হয়েছেন। এঁরা সবাই শানত্মির জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। মনে রাখা বাঞ্ছনীয় যে হেনরি কিসিঞ্জারের হাত গণহত্যায় রঞ্জিত তিনিও শানত্মির জন্য নোবেল পেয়েছেন।

    . ইউনূস এ রকম রোল মডেল হয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিত্বও মানুষকে টানে। এটি অস্বীকার করা ভুল। তবে উদ্রঋণের জনক হিসেবে বাংলাদেশে তাঁকে নিয়ে যে প্রচার তাতে একটা ফ্যালাসি আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে গরিবদের ঋণ দেয়ার জন্য 'ব্যাংক' করেছিলেন এই শাহজাদপুরেই। কৃষি নিয়ে পরীআ-নিরীআ করেছেন। জার্মানিতেও এটি করা হয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় এই কার্যক্রম পরিত্যক্ত হয়। ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের একটি প্রবন্ধে দেখেছি, আফ্রিকাতেও এ রকম ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই চালু রয়েছে এবং এই ব্যবস্থা সফল হয়েছে স্বল্প সুদের কারণে। ড. হোসেন বিশ্বব্যাংকের তথ্য থেকেই তা দেখিয়েছেন। সেখানে ঋষিপাড়ার [হিলারিপাড়া] মতো নি:স্ব কেউ হয়নি। আত্মহত্যাও করেনি। এটি আমি জানতাম না। এসবই গ্রামীণ ব্যাংক হওয়ার আগে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ড. ইউনূসের কৃতিত্ব এই যে, ঋণের বিষয়টি তিনি পেশাদারিত্ব নিয়ে সংগঠন করেছেন যে কারণে টাইম পত্রিকা তাকে বলেছে 'এন্টারপ্রিউনার' বা 'উদ্যোক্তা'। এর বাংলা প্রতিশব্দে পুরো বিষয়টা অবশ্য আসে না। সে কারণেই তিনি প্রচার পেয়েছেন এবং সেটিও তিনি পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ ব্যাংককে তিনি পেশাদারি একটি সংগঠনেও পরিণত করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক প্রচলিত অর্থে ব্যাংক, অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে, একটি সংহত সংগঠনও। ওপর থেকে যে সিদ্ধানত্ম আসে সেটি তৃণমূল পর্যায় পর্যনত্ম কার্যকর হয়। ২০০১ সালে দেখেছি এবং অনেকে বলেছেনও, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ঋণ গ্রহীতারা ধানের শিষের পএ প্রচার শুধু নয়, ভোটও দিয়েছেন সংগঠিতভাবে। তবে এটি ওপরের নির্দেশ কিনা তা বলা যাবে না নির্দিষ্টভাবে। বলা যেতে পারে, যারা এমনটি করেছিল তারা বেগম জিয়ার অনুসারী। তবে এখন যা দেখছি তাতেও আমার অনুমান সত্য বলেই ধরে নেয়া যেতে পারে। কোন ব্যাংকে বোর্ড কোন সিদ্ধানত্ম নিলে ডিএমডি থেকে পিয়ন পর্যনত্ম প্রকাশ্যে সে সিদ্ধানত্মের বিরেধিতা করে নিয়মিত বিবৃতি দিয়ে রাসত্মায় থাকতে পারত? এখন পারছে, গ্রামীণ ব্যাংকের এত্রে।

    আওয়ামী লীগ, মধ্যবামের ড. ইউনূসের প্রতি খানিকটা ওভ সে সময় থেকেই। বাম ধারার মানুষজন স্বাভাবিকভাবে তাঁকে পছন্দ করেন না। তবে, মধ্যপন্থী বা আওয়ামী লীগে তাঁর সমর্থক কম নেই। মনে রাখা দরকার, বিনা ফিসে গ্রামীণফোনের লাইসেন্স শেখ হাসিনাই দিয়েছিলেন_যা দিয়ে হাজার কোটি টাকার ব্যবসার শুরম্ন। শুধু তাই নয, গ্রামীণফোনকে সরকারী বিদুয়ত বিতরণ বা যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহারের সুযোগ এই শেখ হাসিনাই দিয়ে ছিলেন। অন্য কেউ এসব সুযোগ পায়নি। গ্রামীণফোন যে সবাইকে টেক্কা মারতে পেরেছিল তার মূল কারণ এটিই। তখন আমরা জানতাম এটি গ্রামীণ বা দেশেরই প্রতিষ্ঠান, সরকারও বোধহয় তা জানত সে জন্যই এসব সুযোগ দিয়েছিল। ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বিষয়টি জানা গেল। বিদেশীরাই এর সিংহভাগের মালিক। তখনও বিতর্ক শুরম্ন হয়েছিল। ড. ইউনূস যা বলেছিলেন তার বিপরীত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল নরওয়ের অভিলেখগার থেকে। তাঁর গুণগ্রাহীর মধ্যে মধ্যপন্থার মানুষজন ছাড়াও আছেন ডানপন্থী লিবারেল, মৃদু বাম ও দইণপন্থার ধারকরা। সুতরাং, আজ অনেকেই যে বলার চেষ্টা করছেন, বিদ্বিষ্ট হয়ে সরকার এ কাজটি করেছে বা তাঁকে নিয়ে হঠাৎ বিতর্ক শুরম্ন হলো তা কিন্তু ঠিক নয়। উদ্রঋণ বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে একদশক। আগে থেকেই এ বিতর্ক শুরম্ন হয়েছে, মনোগ্রাফ লেখা হয়েছে, উদ্রঋণ নিয়ে নেতিবাচক থিসিস হয়েছে। শুনেছি লম্বা হাত কৌশল বা লং হ্যা- ট্যাকটিকসের কারণে সেগুলো প্রচার পায়নি, বা মূল ধারার বিতর্কে আসেনি। এ বিষয়গুলো এক ধরনের ওভের সৃষ্টি করেছিল যার বহিপর্‌রকাশ ঘটেছে ডেনমার্কের তথ্য চিত্রে।

    বিতর্ক হলেও মূল বিতর্কে যে বিষয়টি বার বার তুলে ধরা হয়েছে তা হলো উদ্রঋণ বিরাট জনগোষ্ঠীর উপকার করেছে এবং ড. ইউনূস পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। সুজন ও সুশীলরা তাঁর বড় সমর্থক। দেশের গণমাধ্যমে তাঁর সমালোচনা করেছেন, প্রধানত বামপন্থী কয়েকজন যার মধ্যে বদরম্নদ্দীন উমর প্রধান। লিবারেলদের মধ্যে আছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। অনুপম সেনও একটি বড় লেখা লিখেছিলেন এ বিষয়ে। ড. ইউনূস কখনও এগুলোকে বিতর্কের মধ্যে আনেননি। তিনি বরং পাশ্চাত্যের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন বেশি। মোহিত উল আনমের মতো লিবারেল প্রথম আলোর এক নিবন্ধে উলেস্নখ করেছেন যথার্থভাবে যে, উদ্রঋণ বা গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে যে বক্তব্য বা অভিযোগ তোলা হয়েছিল বা সমালোচনা করা হয়েছিল, ড. ইউনূস কখনও তার জবাব দেননি। বরং নোবেল পাওয়ার পর জানানো হয়েছিল তাঁর প থেকে যে, দেশী সাংবাদিকদের সময় দেয়ার মতো সময় তাঁর নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অপমানজনক। তার প্রতিফলন দেখি, কয়েকদিন আগে ড. ইউনূস ঢাকার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা আহ্বান করেছিলেন, তাতে কট্টর আওয়ামীপন্থী একজন এবং কট্টর বিএনপিপন্থী তিনজন সিনিয়র সাংবাদিক শুধু গিয়েছিলেন, আর কেউ নয়। এবং তাঁরা ড. ইউনূস বিষয়ে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোন মনত্মব্য করেননি। এ কারণে, বিদেশে নন্দিত হওয়া সঙ্কেÄও এবং মিডিয়া তাঁকে সাপোর্ট করলেও [অধিকাংশের মালিক দইণপন্থী] সাংবাদিকদের বড় অংশ উব্ধ।

    . ইউনূস 'অপসারণ নাটকে' এ বিষয়গুলূ মনে রাখা দরকার। তাঁর পএর মানুষজন বিষয়টিকে তাঁর সঙ্গে শেখ হাসিনার 'ব্যক্তিগত বিরোধ' বলে উলেস্নখ করেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত বিরোধ কী? ড. ইউনূস নোবেল পেয়েছেন শেখ হাসিনা পাননি, এটিই কারণ? নোবেল ছাড়া, শেখ হাসিনাও প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন। তাতে কী? শেখ হাসিনা যত নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট পেয়েছেন তার একটিও আমি পাইনি। কোনরকমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ডিগ্রী পেয়েছি। এখন আমি কি তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাতের ঘুম নষ্ট করব? কোন এয়াকাডেমিক অনুষ্ঠানে যখন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তখন তাঁর পদাধিকারের জন্য বা তিনি শেখ হাসিনা দেখে আমন্ত্রণ জানানো হয়, এয়াকামেডিক হিসেবে নয়। ড. ইউনূসের এত্রেও বিষয়টি তেমন। যে যার এত্রে কাজ করেছেন। একজন আগে নোবেল পেয়েছেন, আরেকজন পেতে পারেন, নাও পারেন তাতে কি? অধ্যাপক জগদীশ ভগবতী উদার ডান ঘেঁষা অর্থনীতিবিদ। বর্তমান সরকারকে সমর্থন করার কোন কারণ তাঁর নেই। কিন্তু তিনিও বলছেন, ব্যাপারটি শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধ নয়।

    ধরে নিলাম ব্যক্তিগত বিরোধ, তাতে সমস্যা কী? ব্যক্তিগত বিরোধ কখন হয়? স্বার্থে আঘাত লাগলে বা মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যারা প্রায় চারদশক আগে যোগ দিই তখন আমরা সবাই কাছাকাছি ছিলাম। তারপর বিএনপি-জামায়াত আদর্শে অনেকে বিশ্বাসী হলে তাদের সঙ্গে আমাদের মানসিক দূরত্ব প্রচুর বৃদ্ধি পায়। এখন দেখা হলে কখনও কখনও কথাও হয় না। একটি উদাহরণ দিই। বেগম জিয়া ও নিজামী সরকার যখন আমাকে গ্রেফতার করে, বিএনপি-জামায়াতপন্থী আমার সহকমরীরা যারা অনেকে ছিলেন বন্ধু, ছাত্র বা ছাত্রতুল্য তারা একটি সমাবেশ দূরে থাকুক, একটি বিবৃতিও দেয়নি। শেখ হাসিনার প্রথম আমলে তিনি আনত্মর্জাতিক উদ্রঋণ সম্মেলনে গেছেন, ড. ইউনূসও গেছেন। শেখ হাসিনা তখন উদ্রঋণের পএই বলেছেন। এখন তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হয়ত নেতিবাচক। তাতে মহাভারতের কি অশুদ্ধ হলো? তাঁরা কেউ কারও ওপর নির্ভরশীল নন। দ্বন্দ্ব যদি থাকে তবে তা মতাদর্শ গত। যে কারণে বেগম জিয়া সব সময় ড. ইউনূসকে সোচ্চার সমর্থন করেছেন, শেখ হাসিনা নয়।
    শেখ হাসিনা গ্রামীণ ব্যাংককে ইঙ্গিত করে 'রক্ত চোষা' 'সুদখোর' শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে 'সুদ খোর' শব্দটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বইমেলায় দেখেছি, অনেকে ড. ইউনূসের বই দেখিয়ে বলছেন, ঐ যে সুদখোরের বই। আবার এর বিপরীতে অনেকে সম্মানের সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারণ করে বই দেখতে চেয়েছেন। 'সুদখোর' ক্রোধান্বিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বটে তবে তা যথার্থ নয়। কারণ, বাংলাদেশে সবাই কমবেশি সুদখোর। আমরা সবাই সুদ খাই। খালি, ইসলামী ব্যাংক বলে, তারা সুদ দেয় না নেয় না। তাহলে কীভাবে ব্যবসা চালায় জানি না। বোধ হয় আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ আছে তাদের কাছে। পুরো দুনিয়ার ব্যবসাই চলে সুদের ওপর।

    গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র মহিলাদের উদ্রঋণ দেয় সুদ নিয়ে। সব এনজিঐ এ প্রথায় ঋণ দেয়। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার একমাত্র উঁচু এ তথ্যও ঠিক নয়। সবার সুদের হার কমবেশি একরকম। আগে মহাজনরা দাদন দিত। তবে তাদের সুদের হার এর থেকে বেশি ছিল। দরিদ্ররা একটু কম সুদে টাকা পাচ্ছে এটিই স্বসত্মি, অন্য কিছু নয়। বাসত্মব অবস্থা হচ্ছে, গরিবদের ঋণ দরকার। আগে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিত এখন গ্রামীণ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নেয়। জবরদসত্মি আগের মতৈ আছে।
    বাংলাদেশে এই প্রতিষ্ঠানগুলো জবরদসত্মি করতে পারে দু'কারণে_ সাধারণ মানুষ ততটা সচেতন নয় এবং এনজিওদের সঙ্গে সামরিক থেকে গণতান্ত্রিক সব সরকারেরই একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং আছে। অর্থাৎ, শাসকরা নতুন ভদ্রলোক মহাজনদের পএ। দ্বিতীয়, মানুষ এখনও সে পরিমাণ দলবাজ নয়। পশ্চিমবঙ্গে অধ্যাপক জয়নত্ম রায়, গ্রামীণ ব্যাংকের আদর্শেই উদ্র ঋণ প্রকল্প করেছিলেন হাসনাবাদে। আমি সেখানে গিয়েছিলামও। তিনি এবার আমাকে বললেন, তাদের প্রকল্প এখানে সুবিধা করতে পারছে না। তিনি বলেননি বটে, তবে, আমি অনুমান করে নিয়েছি সেখানে শাসকরা এনজিওকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় না। ঋণগ্রহীতারা পার্টির সদস্য হলে সাধারণত ঋণ ফেরত দিতে চায় না। বেশি চাপাচাপি করলে পার্টির হুমকি দেয়। জবরদসত্মি না থাকলে এ ঋণ আদায়ে অসুবিধা অনেক। ফলে, তাদের উদ্রঋণ ব্যবস্থা ভেসত্মে যাচ্ছে। লাতিন আমেরিকায় সরকারীভাবেই উদ্রঋণ অনুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ ফেরত না দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। মেঙেইকার এ ধরনের ব্যাংকটি বোধহয় পথে বসেছে। বাংলাদেশে উদ্রঋণ ব্যবসায়ীরা সেদিক থেকে ভাগ্যবান। তারা এখনও সুশীতল কএ বসে, পাজেরোতে চেপে এ ব্যবসা করতে পারছেন। তবে কেন জানি এখন মনে হচ্ছে, ড. ইউনূসকে নিয়ে যে তর্ক-বিতর্ক ঘটনা অঘটনা শুরম্ন হলো তার পরিণতিতে এখানকার উদ্রঋণ ব্যবস্থাও বিপর্যসত্ম হতে পারে। এই আশঙ্কা উদ্রঋণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে নেই তা নয়, এ কারণেই তারা সরকারী পদএপের বিরম্নদ্ধে।

    এ পরিপ্রেইতে বলতে পারি, যেটিকে আমরা বিরোধ বলছি তা যদি থাকে তবে তা উদ্রঋণ বিষয়ক নয়। সেটি অন্য জায়গায় এবং ডেনমার্কের চলচ্চিত্রটি তার সুযোগ করে দিয়েছে মাত্র। ড. ইউনূস যদি উদ্রঋণ নিয়ে থাকতেন, অন্যকিছু নিয়ে মাথা না ঘামাতেন তাহলে আজকের এই বিতর্ক এখনই হতো না। কিন্তু, তিনি তা করেননি, সব কিছু নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন, সব কিছু নিয়ে নেতিবাচক মনত্মব্য করেছেন, ব্যক্তি বিশেষকে আক্রমণ করেছেন, বাংলাদেশের কোন কিছু তাঁর প্রশংসা অর্জন করতে পারেনি একমাত্র গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়া। এবং রাজনীতিবিদ নন, এমন কেউ রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামালে যা হয় তাই হয়েছে।

    পটভূমিটা মনে হয় এ রকম। ড. ইউনূসও উদ্রঋণ নিয়ে পাশ্চাত্যে যখন মাতামাতি শুরম্ন হয় তখন এ দেশে অনেকে একই কাজ করেছেন যা একটু ভিন্নতর। কিন্তু তারা নিজের কাজের বাইরে খুব একটা আনাগোনা করেননি। যেমন_এদের মধ্যে সবচেয়ে রাজনীতি সচেতন ছিলেন ডা. জাফরম্নলস্নাহ চৌধুরী, ওষুধনীতি যেটি সরকার থেকে করিয়েছিলেন সেটি খারাপ ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাও তো ছিলেন। কিন্তু যে মুহূর্তে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান, বিশেষ করে এরশাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলেন এবং দু'একটি বক্তব্য রাখতে লাগলেন তখনই তিনি প্রবল প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হলেন। বুদ্ধিমান লোক তিনি। দ্রম্নত পশ্চাৎগমন করে গণস্বাস্থ্যের বাইরে গত দু'দশকে পাও রাখেননি। একটি কাজও করেননি। যাতে, তার প্রতিষ্ঠান কী করছে কী না করছে তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। কাজী ফারম্নকের কথা ধরম্নন। প্রশিকাও উদ্রঋণ ব্যবসা করেছে আবার গণমুখী প্রগতিবাদীদেরও সাহায্য সহায়তা করেছে যেটি আবার এনজিওদের বড় অংশ পছন্দ করেনি। কিন্তু যেই তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে নামলেন, তখন বাইরের কেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও সমর্থন হারালেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার তখন বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরম্নদ্ধে প্রগতিবাদীরা একত্রিত হচ্ছে, সেই সময় তিনি জেদ করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করলেন। নাহলে তো জনাব ফারুক ঠিকই ছিলেন। বা ফজলে হাসান আবেদ। তাঁর কাজের ধরনও একই রকম। তিনিও ব্যবসা করছেন, তবে ব্‌র্‌যাক কল্যাণমূলক কাজও করেছে যেটি গ্রামীণ ব্যাংক করেনি বলে অনুমিত। কিন্তু তিনি সেই ধরনের রাজনীতি থেকে গা বাঁচিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে, ড. ইউনূস কিন্তু সুযোগ পেলেই রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের নিয়ে কথা বলেছেন। সে সব মন্তব্যের ধারাবাহিক বিবরণ দিতে পারব না।
  • til | 114.198.46.214 | ২২ এপ্রিল ২০১১ ১৫:০৫472568
  • লেখাগুলো অত্যন্ত মনোগ্রাহী কিন্তু এডিটিং বা কোন সফটওয়ারের কল্যানে (?) বাঙলা ভারশনে পড়তে কষ্ট হয়।
  • Kulada Roy | 74.72.54.134 | ২২ এপ্রিল ২০১১ ১৯:২৬472569
  • মুনতাসীর মামুনের প্রবন্ধদুটো সফটওয়ারজনিত কারণে ভুলভাল হয়েছে। তা ঠিক করে দেওয়া হল।

    . ইউনূস, সুশীল সমাজ বনাম ঋণদাস ও বাংলাদেশ সরকার
    ---------------------------------------------
    মুনতাসীর মামুন

    . ইউনূস বিতর্ক নিয়ে লিখিনি দেখে নিন্দিত না হলেও নন্দিত হইনি এবং ভাষ্যকার হিসেবে সুবিধাবাদী অবস্থান নিয়েছি বলে অভিযুক্ত হয়েছি। কাগজে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত ও অপ্রতিষ্ঠিত ভাষ্যকার ড. ইউনূস, সুশীল সমাজের পক্ষ নিয়েছেন। সরকারের অবস্থা এতিমের মতো। অনেককে তারা পার্থিব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে বা রাজনীতির ভাষায় 'মূল্যায়ন' করেছে, কিন্তু তারা সরকারের পক্ষে কথা বলতে এক কদমও এগিয়ে আসেনি। আমি লিখিনি এ কারণে যে, ড. ইউনূস বিতর্ক শুরু হওয়ার আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম, ভাষ্যের জগত থেকে ধীরে ধীরে সরে আসব। কারণ, ভাষ্য লেখার পর থেকে সব সরকারেরই চক্ষুশূল হতে হয়, অন্যরা দিব্যি করে খায়। আমিও তো মানুষ, ফেরেশতা নই। আরেকটি কারণও ছিল। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মতো আমরা জনপ্রিয় নই। আমার ভাষ্য দৈনিক জনকণ্ঠ বা ভোরের কাগজ যেভাবে ছাপে এবং অবিকৃতভাবে, অন্য সম্পাদকরা তাতে রাজি নয়। তাদের শর্তানুযায়ী লিখতে হবে এবং সে শর্তটি থাকে অনুচ্চারিত, নিজেকেই বুঝে নিতে হয়। অধিকাংশ সে শর্ত মেনেই লেখেন। তাছাড়া কোন কোন বিষয়ে পত্রিকা চরমভাবে বিভক্ত হয়ে যায়। যেমন--ড. ইউনূসের অতি প্রশংসা করে যদি কেউ লেখেন তবে কালের কণ্ঠ বা আমাদের সময় ছাপবে কিনা সন্দেহ। আবার অতি সমালোচনা করে যদি লেখেন, প্রথম আলো বা আমার দেশ ছাপবে কিনা সন্দেহ। আরও আছে, যেমন--আমি যদি আবাসন শিল্প এবং মোবাইল ফোন কোম্পানির সমালোচনা করে লিখি তাহলে বাংলাদেশের কোন পত্রিকা তা ছাপবে না। সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া সহজ, কর্পোরেট হাউজগুলোর বিরুদ্ধে নয়। যেখানে সাংবাদিকরা জিম্মি। উদাহরণ স্বরূপ বলি, মার্কিন কর্মকর্তা বেস্নকের একটি মন্তব্যের বিরুদ্ধে আমরা কয়েকজন একটি প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছিলাম সব পত্রিকায়। ছেপেছিল মাত্র চার কি পাঁচটি। আর কেউ ছাপেনি, কারণ যদি গ্রামীণফোন রাগ করে? মানে কর্মকর্তারা? গ্রামীণফোন এমনই মহাজন যে, নববর্ষে শুভেচ্ছার বদলে এসএমএস করে বিল মিটিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হতো। গ্রামীণফোন যখন যাত্রা শুরু করে তখন বলা হয়েছিল কলপ্রতি এক টাকা নেবে। তারপর বেশি মাসুল নেয়া শুরু করলে তার বিরদ্ধে মামলা হয়। সে মামলার কী হয়েছে জানি না। যাক, ড. ইউনূসকে নিয়ে বিতর্ক থেকে আমার কাছে আবার মৌলবাদী এবং আমিনীদের গা মোড়ামুড়ি বেশি শঙ্কাজনক মনে হয়েছে। সে জন্য তার প্রতিবাদটা জরুরী মনে হওয়ায় আবারও ভাষ্যের জগতে ফিরে আসতে হয়েছে। আমিনীদের, সুবিধাবাদীদের, সরকারী ছাড়ের সমালোচনা করে লিখেছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের ভাষ্য। এতে অবশ্য নিজের মন্তব্য কম। বিতর্কের শেষ পর্যায়ে লেখার কারণে, ঘটনার সার্বিক একটা সারমর্ম দেয়ার সুবিধা পেয়েছি।

    অবশ্য, একেকজনের কাছে 'জরুরী' শব্দটা একেকরকম অর্থ বহন করে। সুশীল সমাজ ও তাদের মুরব্বি এবং তাদের মুখপাত্রদের মনে হয়েছে, ড. ইউনূসকে নিয়ে সরকার যে কাজটা করল তা দেশকে একেবারে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে গেছে। ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশে এতবড় দুর্যোগ আর হয়নি। অন্যদের কাছে মনে হয়েছে, সরকার এমন কী খারাপ কাজটা করেছে? ড. ইউনূসই বাড়াবাড়ি করছেন। এ রকম যুযুধমান দু'পক্ষ লেখালেখি করেছে। ড. ইউনূসের পক্ষে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, জনকণ্ঠ বিস্তর প্রতিবেদন ছেপেছে। কালের কণ্ঠ, আমাদের সময়, এখন আবার জনকণ্ঠ বিপক্ষের মতামত ছাপছে। দু'পক্ষের অনেক কথাই যৌক্তিক, অনেক যুক্তি অযৌক্তিক।

    . ইউনূসের বিপক্ষে আমার বলার কিছু নেই, অনুচ্চারিত কিছু ক্ষোভ আছে হয়ত। সেটি স্বাভাবিক, কারণ তিনি পাবলিক ফিগার, তাঁর কর্মকাণ্ড আলোচিত সমালোচিত নিন্দিত-নন্দিত হবেই। তিনি আমার ছোটবেলার বন্ধুর বড় ভাই, আমাকেও বিবেচনা করেন হয়ত সেভাবে। অবশ্য, আমাদের যোগাযোগ কচিৎ কখনও, সামাজিক অনুষ্ঠানে। আমি ক্ষুদ্রঋণ বিশেষজ্ঞ নই, আগ্রহও নেই এতে। গ্রামীণ ব্যাংক গড়ার উদ্যোক্তা ড. ইউনূস নিয়েছিলেন এবং তাঁর সৌভাগ্য এই যে, তাঁকে প্রতিটি সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সৌভাগ্য বাংলাদেশে সবার হয়নি, হবেও না। তাঁর উদ্যোগ সফল হয়েছে। তাঁর সাফল্যে আমরা বেদনাবোধ করতে পারি, কিন্তু সেটাই সত্য। গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বাংলাদেশে আরও কয়েক শ' এনওজিও ক্ষুদ্রঋণ দেয়। এটি আর তেমন আলোচনার বিষয় নয়। গ্রামীণ ব্যাংকও এক ধরনের এনজিও। ব্যাংক যেমন বিভিন্ন আইনকানুনে বাঁধা থাকে, গ্রামীণ ব্যাংক তেমন আইনকানুনে বাঁধা নয়। এনজিও প্রধান যেভাবে একটি এনজিও চালান, গ্রামীণ ব্যাংকও সেভাবে চলে। অনেকে বলছেন, এটি ব্যাংক তবে বিশেষায়িত ব্যাংক। যদি ব্যাংক হয়, বিশেষায়িত, তা হলেও তার নানারকম বাধা নিষেধ থাকবে। কিন্তু পত্রপত্রিকার খবরে দেখেছি তেমন কোন আইন-কানুন এক্ষেত্রে ছিল না। এর একটি কারণ ড. ইউনূস। তাঁর কার্যাবলীর ইতিবাচকভাবে এত প্রচারিত হয়েছে যে, কেউ আর তাতে মনোযোগ দেয়নি বা নাক গলায়নি। মনে রাখা দরকার এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বৈরশাসনের সময় এবং বিকশিত হয়েছে সেই আমলে, প্রবৃদ্ধি পেয়েছে আধা স্বৈরশাসনে। ইতিবাচক প্রচারে পাশ্চাত্য আগ্রহ দেখিয়েছিল বেশি। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মানুষ যদি বেশি অভুক্ত, বেশি দরিদ্র হয় তাহলে রাষ্ট্র বিপ্লব ঘটবে নিয়ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় সহায়তা করেছে স্বৈরশাসকদের। উন্নয়নগামী দেশগুলোতে তারা আবার কিছু রোল মডেল তৈরি করতে চেয়েছে, যিনি/যাঁরা এ ধরনের সঙ্কটে ভূমিকা রাখতে পারবেন। যেমন, মিসরে হোসনি মোবারকের স্বৈরশাসনকে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সহায়তা করেছে, তার বিরুদ্ধে যখন মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে তখন আল-বারাদীকে তৈরি করা হয়েছে এবং তাকেও নোবেলপ্রাইজ দেয়া হয়েছে। বারাক ওবামা কিছু না করেই পুরস্কৃত হয়েছেন। এঁরা সবাই শান্তির জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। মনে রাখা বাঞ্ছনীয় যে হেনরি কিসিঞ্জারের হাত গণহত্যায় রঞ্জিত তিনিও শান্তির জন্য নোবেল পেয়েছেন।

    . ইউনূস এ রকম রোল মডেল হয়েছেন, তাঁর ব্যক্তিত্বও মানুষকে টানে। এটি অস্বীকার করা ভুল। তবে ক্ষুদ্রঋণের জনক হিসেবে বাংলাদেশে তাঁকে নিয়ে যে প্রচার তাতে একটা ফ্যালাসি আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে গরিবদের ঋণ দেয়ার জন্য 'ব্যাংক' করেছিলেন এই শাহজাদপুরেই। কৃষি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। জার্মানিতেও এটি করা হয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হওয়ায় এই কার্যক্রম পরিত্যক্ত হয়। ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের একটি প্রবন্ধে দেখেছি, আফ্রিকাতেও এ রকম ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই চালু রয়েছে এবং এই ব্যবস্থা সফল হয়েছে স্বল্প সুদের কারণে। ড. হোসেন বিশ্বব্যাংকের তথ্য থেকেই তা দেখিয়েছেন। সেখানে ঋষিপাড়ার [হিলারিপাড়া] মতো নি:স্ব কেউ হয়নি। আত্মহত্যাও করেনি। এটি আমি জানতাম না। এসবই গ্রামীণ ব্যাংক হওয়ার আগে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ড. ইউনূসের কৃতিত্ব এই যে, ঋণের বিষয়টি তিনি পেশাদারিত্ব নিয়ে সংগঠন করেছেন যে কারণে টাইম পত্রিকা তাকে বলেছে 'এন্টারপ্রিউনার' বা 'উদ্যোক্তা'। এর বাংলা প্রতিশব্দে পুরো বিষয়টা অবশ্য আসে না। সে কারণেই তিনি প্রচার পেয়েছেন এবং সেটিও তিনি পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। শুধু তাই নয়, গ্রামীণ ব্যাংককে তিনি পেশাদারি একটি সংগঠনেও পরিণত করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক প্রচলিত অর্থে ব্যাংক, অন্যদিক থেকে দেখতে গেলে, একটি সংহত সংগঠনও। ওপর থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে সেটি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কার্যকর হয়। ২০০১ সালে দেখেছি এবং অনেকে বলেছেনও, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ঋণ গ্রহীতারা ধানের শিষের (বিএনপি/ জামাত) পক্ষে প্রচার শুধু নয়, ভোটও দিয়েছেন সংগঠিতভাবে। তবে এটি ওপরের নির্দেশ কিনা তা বলা যাবে না নির্দিষ্টভাবে। বলা যেতে পারে, যারা এমনটি করেছিল তারা বেগম জিয়ার অনুসারী। তবে এখন যা দেখছি তাতেও আমার অনুমান সত্য বলেই ধরে নেয়া যেতে পারে। কোন ব্যাংকে বোর্ড কোন সিদ্ধান্ত নিলে ডিএমডি থেকে পিয়ন পর্যন্ত প্রকাশ্যে সে সিদ্ধান্তের বিরেধিতা করে নিয়মিত বিবৃতি দিয়ে রাস্তায় থাকতে পারত? এখন পারছে, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে।

    আওয়ামী লীগ, মধ্যবামের ড. ইউনূসের প্রতি খানিকটা ক্ষোভ সে সময় থেকেই। বাম ধারার মানুষজন স্বাভাবিকভাবে তাঁকে পছন্দ করেন না। তবে, মধ্যপন্থী বা আওয়ামী লীগে তাঁর সমর্থক কম নেই। মনে রাখা দরকার, বিনা ফিসে গ্রামীণফোনের লাইসেন্স শেখ হাসিনাই দিয়েছিলেন, যা দিয়ে হাজার কোটি টাকার ব্যবসার শুরু। শুধু তাই নয়, গ্রামীণফোনকে সরকারী বিদ্যুত বিতরণ বা যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহারের সুযোগ এই শেখ হাসিনাই দিয়ে ছিলেন। অন্য কেউ এসব সুযোগ পায়নি। গ্রামীণফোন যে সবাইকে টেক্কা মারতে পেরেছিল তার মূল কারণ এটিই। তখন আমরা জানতাম এটি গ্রামীণ বা দেশেরই প্রতিষ্ঠান, সরকারও বোধহয় তা জানত সে জন্যই এসব সুযোগ দিয়েছিল। ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর বিষয়টি জানা গেল। বিদেশীরাই এর সিংহভাগের মালিক। তখনও বিতর্ক শুরু হয়েছিল। ড. ইউনূস যা বলেছিলেন তার বিপরীত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছিল নরওয়ের অভিলেখগার থেকে। তাঁর গুণগ্রাহীর মধ্যে মধ্যপন্থার মানুষজন ছাড়াও আছেন ডানপন্থী লিবারেল, মৃদু বাম ও দক্ষিণপন্থার ধারকরা। সুতরাং, আজ অনেকেই যে বলার চেষ্টা করছেন, বিদ্বিষ্ট হয়ে সরকার এ কাজটি করেছে বা তাঁকে নিয়ে হঠাৎ বিতর্ক শুরু হলো তা কিন্তু ঠিক নয়। ক্ষুদ্রঋণ বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে একদশক। আগে থেকেই এ বিতর্ক শুরু হয়েছে, মনোগ্রাফ লেখা হয়েছে, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে নেতিবাচক থিসিস হয়েছে। শুনেছি লম্বা হাত কৌশল বা লং হ্যান্ড ট্যাকটিকসের কারণে সেগুলো প্রচার পায়নি, বা মূল ধারার বিতর্কে আসেনি। এ বিষয়গুলো এক ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল যার বহি:প্রকাশ ঘটেছে ডেনমার্কের তথ্য চিত্রে।

    বিতর্ক হলেও মূল বিতর্কে যে বিষয়টি বার বার তুলে ধরা হয়েছে তা হলো ক্ষুদ্রঋণ বিরাট জনগোষ্ঠীর উপকার করেছে এবং ড. ইউনূস পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। সুজন ও সুশীলরা তাঁর বড় সমর্থক। দেশের গণমাধ্যমে তাঁর সমালোচনা করেছেন, প্রধানত বামপন্থী কয়েকজন যার মধ্যে বদরুদ্দীন উমর প্রধান। লিবারেলদের মধ্যে আছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। অনুপম সেনও একটি বড় লেখা লিখেছিলেন এ বিষয়ে। ড. ইউনূস কখনও এগুলোকে বিতর্কের মধ্যে আনেননি। তিনি বরং পাশ্চাত্যের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন বেশি। মোহিত উল আনমের মতো লিবারেল প্রথম আলোর এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন যথার্থভাবে যে, ক্ষুদ্রঋণ বা গ্রামীণ ব্যাংক সম্পর্কে যে বক্তব্য বা অভিযোগ তোলা হয়েছিল বা সমালোচনা করা হয়েছিল, ড. ইউনূস কখনও তার জবাব দেননি। বরং নোবেল পাওয়ার পর জানানো হয়েছিল তাঁর পক্ষ থেকে যে, দেশী সাংবাদিকদের সময় দেয়ার মতো সময় তাঁর নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অপমানজনক। তার প্রতিফলন দেখি, কয়েকদিন আগে ড. ইউনূস ঢাকার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা আহ্বান করেছিলেন, তাতে কট্টর আওয়ামীপন্থী একজন এবং কট্টর বিএনপিপন্থী তিনজন সিনিয়র সাংবাদিক শুধু গিয়েছিলেন, আর কেউ নয়। এবং তাঁরা ড. ইউনূস বিষয়ে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোন মন্তব্য করেননি। এ কারণে, বিদেশে নন্দিত হওয়া সঙ্কেÄও এবং মিডিয়া তাঁকে সাপোর্ট করলেও [অধিকাংশের মালিক দক্ষিণপন্থী] সাংবাদিকদের বড় অংশ ক্ষুব্ধ।

    . ইউনূস 'অপসারণ নাটকে' এ বিষয়গুলূ মনে রাখা দরকার। তাঁর পএর মানুষজন বিষয়টিকে তাঁর সঙ্গে শেখ হাসিনার 'ব্যক্তিগত বিরোধ' বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত বিরোধ কী? ড. ইউনূস নোবেল পেয়েছেন শেখ হাসিনা পাননি, এটিই কারণ? নোবেল ছাড়া, শেখ হাসিনাও প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন। তাতে কী? শেখ হাসিনা যত নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট পেয়েছেন তার একটিও আমি পাইনি। কোনরকমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ডিগ্রী পেয়েছি। এখন আমি কি তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাতের ঘুম নষ্ট করব? কোন এয়াকাডেমিক অনুষ্ঠানে যখন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তখন তাঁর পদাধিকারের জন্য বা তিনি শেখ হাসিনা দেখে আমন্ত্রণ জানানো হয়, এয়াকামেডিক হিসেবে নয়। ড. ইউনূসের ক্ষেত্রেও বিষয়টি তেমন। যে যার ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। একজন আগে নোবেল পেয়েছেন, আরেকজন পেতে পারেন, নাও পারেন তাতে কি? অধ্যাপক জগদীশ ভগবতী উদার ডান ঘেঁষা অর্থনীতিবিদ। বর্তমান সরকারকে সমর্থন করার কোন কারণ তাঁর নেই। কিন্তু তিনিও বলছেন, ব্যাপারটি শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধ নয়।

    ধরে নিলাম ব্যক্তিগত বিরোধ, তাতে সমস্যা কী? ব্যক্তিগত বিরোধ কখন হয়? স্বার্থে আঘাত লাগলে বা মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যারা প্রায় চারদশক আগে যোগ দিই তখন আমরা সবাই কাছাকাছি ছিলাম। তারপর বিএনপি-জামায়াত আদর্শে অনেকে বিশ্বাসী হলে তাদের সঙ্গে আমাদের মানসিক দূরত্ব প্রচুর বৃদ্ধি পায়। এখন দেখা হলে কখনও কখনও কথাও হয় না। একটি উদাহরণ দিই। বেগম জিয়া ও নিজামী সরকার যখন আমাকে গ্রেফতার করে, বিএনপি-জামায়াতপন্থী আমার সহকর্মীরা যারা অনেকে ছিলেন বন্ধু, ছাত্র বা ছাত্রতুল্য তারা একটি সমাবেশ দূরে থাকুক, একটি বিবৃতিও দেয়নি। শেখ হাসিনার প্রথম আমলে তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রঋণ সম্মেলনে গেছেন, ড. ইউনূসও গেছেন। শেখ হাসিনা তখন ক্ষুদ্রঋণের পক্ষেই বলেছেন। এখন তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি হয়ত নেতিবাচক। তাতে মহাভারতের কি অশুদ্ধ হলো? তাঁরা কেউ কারও ওপর নির্ভরশীল নন। দ্বন্দ্ব যদি থাকে তবে তা মতাদর্শ গত। যে কারণে বেগম জিয়া সব সময় ড. ইউনূসকে সোচ্চার সমর্থন করেছেন, শেখ হাসিনা নয়।
    শেখ হাসিনা গ্রামীণ ব্যাংককে ইঙ্গিত করে 'রক্ত চোষা' 'সুদখোর' শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে 'সুদ খোর' শব্দটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বইমেলায় দেখেছি, অনেকে ড. ইউনূসের বই দেখিয়ে বলছেন, ঐ যে সুদখোরের বই। আবার এর বিপরীতে অনেকে সম্মানের সঙ্গে তাঁর নাম উচ্চারণ করে বই দেখতে চেয়েছেন। 'সুদখোর' ক্রোধান্বিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বটে তবে তা যথার্থ নয়। কারণ, বাংলাদেশে সবাই কমবেশি সুদখোর। আমরা সবাই সুদ খাই। খালি, ইসলামী ব্যাংক বলে, তারা সুদ দেয় না নেয় না। তাহলে কীভাবে ব্যবসা চালায় জানি না। বোধ হয় আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ আছে তাদের কাছে। পুরো দুনিয়ার ব্যবসাই চলে সুদের ওপর।

    গ্রামীণ ব্যাংক দরিদ্র মহিলাদের ক্ষুদ্রঋণ দেয় সুদ নিয়ে। সব এনজিঐ এ প্রথায় ঋণ দেয়। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার একমাত্র উঁচু এ তথ্যও ঠিক নয়। সবার সুদের হার কমবেশি একরকম। আগে মহাজনরা দাদন দিত। তবে তাদের সুদের হার এর থেকে বেশি ছিল। দরিদ্ররা একটু কম সুদে টাকা পাচ্ছে এটিই স্বস্তি, অন্য কিছু নয়। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, গরিবদের ঋণ দরকার। আগে মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিত এখন গ্রামীণ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নেয়। জবরদস্তি আগের মতৈ আছে।
    বাংলাদেশে এই প্রতিষ্ঠানগুলো জবরদস্তি করতে পারে দু'কারণে, সাধারণ মানুষ ততটা সচেতন নয় এবং এনজিওদের সঙ্গে সামরিক থেকে গণতান্ত্রিক সব সরকারেরই একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং আছে। অর্থাৎ, শাসকরা নতুন ভদ্রলোক মহাজনদের পক্ষে। দ্বিতীয়, মানুষ এখনও সে পরিমাণ দলবাজ নয়। পশ্চিমবঙ্গে অধ্যাপক জয়ন্ত রায়, গ্রামীণ ব্যাংকের আদর্শেই ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প করেছিলেন হাসনাবাদে। আমি সেখানে গিয়েছিলামও। তিনি এবার আমাকে বললেন, তাদের প্রকল্প এখানে সুবিধা করতে পারছে না। তিনি বলেননি বটে, তবে, আমি অনুমান করে নিয়েছি সেখানে শাসকরা এনজিওকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় না। ঋণগ্রহীতারা পার্টির সদস্য হলে সাধারণত ঋণ ফেরত দিতে চায় না। বেশি চাপাচাপি করলে পার্টির হুমকি দেয়। জবরদস্তি না থাকলে এ ঋণ আদায়ে অসুবিধা অনেক। ফলে, তাদের ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা ভেস্তে যাচ্ছে। লাতিন আমেরিকায় সরকারীভাবেই ক্ষুদ্রঋণ অনুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ ফেরত না দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। মেঙেইকার এ ধরনের ব্যাংকটি বোধহয় পথে বসেছে। বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায়ীরা সেদিক থেকে ভাগ্যবান। তারা এখনও সুশীতল কক্ষে বসে, পাজেরোতে চেপে এ ব্যবসা করতে পারছেন। তবে কেন জানি এখন মনে হচ্ছে, ড. ইউনূসকে নিয়ে যে তর্ক-বিতর্ক ঘটনা অঘটনা শুরু হলো তার পরিণতিতে এখানকার ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হতে পারে। এই আশঙ্কা ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে নেই তা নয়, এ কারণেই তারা সরকারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে।

    এ পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি, যেটিকে আমরা বিরোধ বলছি তা যদি থাকে তবে তা ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক নয়। সেটি অন্য জায়গায় এবং ডেনমার্কের চলচ্চিত্রটি তার সুযোগ করে দিয়েছে মাত্র। ড. ইউনূস যদি ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে থাকতেন, অন্যকিছু নিয়ে মাথা না ঘামাতেন তাহলে আজকের এই বিতর্ক এখনই হতো না। কিন্তু, তিনি তা করেননি, সব কিছু নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন, সব কিছু নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন, ব্যক্তি বিশেষকে আক্রমণ করেছেন, বাংলাদেশের কোন কিছু তাঁর প্রশংসা অর্জন করতে পারেনি একমাত্র গ্রামীণ ব্যাংক ছাড়া। এবং রাজনীতিবিদ নন, এমন কেউ রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামালে যা হয় তাই হয়েছে।

    পটভূমিটা মনে হয় এ রকম। ড. ইউনূসও ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে পাশ্চাত্যে যখন মাতামাতি শুরু হয় তখন এ দেশে অনেকে একই কাজ করেছেন যা একটু ভিন্নতর। কিন্তু তারা নিজের কাজের বাইরে খুব একটা আনাগোনা করেননি। যেমন, এদের মধ্যে সবচেয়ে রাজনীতি সচেতন ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ওষুধনীতি যেটি সরকার থেকে করিয়েছিলেন সেটি খারাপ ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাও তো ছিলেন। কিন্তু যে মুহূর্তে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান, বিশেষ করে এরশাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলেন এবং দু'একটি বক্তব্য রাখতে লাগলেন তখনই তিনি প্রবল প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হলেন। বুদ্ধিমান লোক তিনি। দ্রুত পশ্চাৎগমন করে গণস্বাস্থ্যের বাইরে গত দু'দশকে পাও রাখেননি। একটি কাজও করেননি। যাতে, তার প্রতিষ্ঠান কী করছে কী না করছে তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি। কাজী ফারুকের কথা ধরুন। প্রশিকাও ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসা করেছে আবার গণমুখী প্রগতিবাদীদেরও সাহায্য সহায়তা করেছে যেটি আবার এনজিওদের বড় অংশ পছন্দ করেনি। কিন্তু যেই তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে নামলেন, তখন বাইরের কেন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও সমর্থন হারালেন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার তখন বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে প্রগতিবাদীরা একত্রিত হচ্ছে, সেই সময় তিনি জেদ করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করলেন। নাহলে তো জনাব ফারুক ঠিকই ছিলেন। বা ফজলে হাসান আবেদ। তাঁর কাজের ধরনও একই রকম। তিনিও ব্যবসা করছেন, তবে ব্‌র্‌যাক কল্যাণমূলক কাজও করেছে যেটি গ্রামীণ ব্যাংক করেনি বলে অনুমিত। কিন্তু তিনি সেই ধরনের রাজনীতি থেকে গা বাঁচিয়ে রেখেছেন। অন্যদিকে, ড. ইউনূস কিন্তু সুযোগ পেলেই রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের নিয়ে কথা বলেছেন। সে সব মন্তব্যের ধারাবাহিক বিবরণ দিতে পারব না

    . ইউনূস, সুশীল সমাজ বনাম ঋণদাস ও বাংলাদেশ সরকার
    -----------------------------------------------
    Mon, 18/04/2011 - 11:51am|byMuntasir.Mamun

    . কামাল হোসেন যখন গণফোরাম করেন তখন থেকে এর শুরু। সেখানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে 'আমার স্বপ্নের দল' সম্পর্কে অনেক কথা বলেছিলেন বিদ্যমান রাজনীতির বিপক্ষে। অনেক পরে তাঁর স্বপ্নের দল করার সুযোগ এলো। রাজনৈতিক দল করতে চাইলেন সব কিছু বদলে দেবার আশায়। বাস্তব হলো, এটি বাংলাদেশ। যে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ করেছিলেন তিনিও বাঙালীদের বোঝেননি। বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছেন। সেই বাংলাদেশে ই-মেইল আর এসএমএস করে রাজনৈতিক দল করবেন? আর সুশীলরা তাকে সমর্থন করলে সব মুশকিল আসান হয়ে যাবে? হয়নি। তারপর তিনি তঙ্কÄ¡বধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন। সামরিক তঙ্কÄ¡বধায়ক সরকারের সময় তিনি তিন উদ্দিনকে সমর্থন করেছেন যখন আমরা তাদের রুখে দাঁড়িয়েছি এবং মৃত্যুর বা অত্যাচারের প্রহর গুনছি। তিন উদ্দিনের এক উদ্দিন ইয়েস উদ্দিন বা ইয়াজউদ্দিনের দরবারে গিয়ে তাকে এ প্লাস দিলেন। সে দিন আমরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছি একথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। তাঁর যা মর্যাদা তা দিয়ে তিনি আমাদের ছাত্র শিক্ষক বা গণতন্ত্রমনাদের পক্ষে একটি কথা বললেই পরিস্থিতি পাল্টে যেত। কিন্তু তিনি তা না করে স্বৈরশাসকদের সমর্থন করেছেন। সুশীল সমাজের হয়ে রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ বললেন, দুই নেত্রীকে এক কএ বন্ধ করে রাখতে বললেন যতক্ষণ তারা একমত না হয়। ড. ইউনূসকে যদি এখন বদরুদ্দীন উমর বা ক্ষুদ্রঋণের বিপক্ষে একজনের সঙ্গে এক কএ বন্ধ করে রাখা হয় তিনি কি ক্ষুদ্রঋণ ধারণা থেকে সরে আসবেন? তাঁর এই সব উক্তি কারও ভাল লাগেনি। তিনি অনেক নামী হতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার মতো নামী নন। জনভিত্তিও নেই। কিছু দিনের মধ্যে এই মন্তব্য সঠিক প্রমাণিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। গ্রামীণ ব্যাংকের যারা ঋণ নেয় তাদের অনেকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি করে, কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক করে না। গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মালিক ও মক্কেলের। বন্ধুত্বের নয়। কারণ গ্রামীণ ব্যাংক কল্যাণকামী কোন প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বা অন্যকোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কটা আবেগের। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরও তিনি যে সব মন্তব্য করেছেন তা অনেকে পছন্দ করেনি। কারণ, ক্রমে ক্রমে বিষয়টি দাঁড়িয়েছে এমন যে, তিনিই এ দেশে একমাত্র ব্যক্তি যাকে পৃথিবীর সবাই চেনে, তিনি যাকে যা খুশি বলতে পারেন, সবাইকে উপদেশ দিতে পারেন। কিন্তু কেউ তাঁকে কিছু বলতে পারবে না। এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই সুশীল সমাজের বিপরীতে নাগরিক সমাজ, স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রমনা, প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাবাদীদের বিপক্ষে প্রগতিমনা বা লিবারেলদের ক্ষুব্ধ করেছে।

    এ প্রসঙ্গে আমরা যারা কখনও তাঁর অপ্রশংসা করিনি তাদেরও একটা ক্ষোভ আছে। ড. ইউনূস নারীদের নিয়ে কাজ করছেন, নারীদের ক্ষমতায়ন করতে চাচ্ছেন। তাঁর দর্শন নারী স্বাবলম্বী হলে মতায়ন হবে এবং দেশ অগ্রসর হবে। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। নারী কোন কোন এত্রে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হলেও [ক্ষুদ্রঋণে তা সম্ভব নয়, বড় চাকরি করলে তা সম্ভব] তার ক্ষমতায়ন হবে না। অর্থাৎ রাজনীতি এখানে আসবেই। সুশীল সমাজের কর্তারা যারা আমাদের উপদেশ দেন তারা কি মনে করেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকলে, দেশের চরম মৌলবাদ জঙ্গিবাদ কায়েম হলে, রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী হলে তারা কাজ করতে পারতেন? আমরা যদি রাস্তায় না থাকতাম, নিয়ত এসবের বিরুদ্ধে রম্নখে না দাঁড়াতাম, রাজনৈতিক দলগুলো যদি এককাট্টা হয়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে না দাঁড়াত, আওয়ামী লীগ বামপন্থীরা সিভিল সমাজের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে যদি খালেদা-নিজামীর সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার ষড়যন্ত্র রুখে না দাঁড়াত, তা হলে এসব এনজিও করে খেতে পারত বা সুশীল সমাজের কর্তারা কল্কে পেতেন? কিন্তু মনে করে দেখুনতো আপনারা সুশীলরা, ড. ইউনূসরা কখনও রাস্তায় থেকেছেন কিনা? আপনারা বলতে পারেন আপনারা রাজনীতি করেন না, এগুলো রাজনীতি। তাহলে বলব, রাজনীতি করতে চান কেন, রাজনীতি বা রাজনীতিবিদদের নিয়ে কথা বলেন কেন? ক্ষুদ্রঋণও তো এক ধরনের রাজনীতি। বৃহ্‌ৎ পুঁজির স্বার্থরক্ষার রাজনীতি। সুশীল সমাজের ড. কামাল হোসেন, ড. মোজাফফর আহমেদ বা রেহমান সোবহানও রাজনীতি নিয়ে কোন মন্তব্য করলে লোকে শোনেন, পছন্দ হোক না হোক, কারণ তারা বিভিন্ন সময় রাস্তায় থেকেছেন, স্বৈরশাসনের বিরম্নদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, এ রাষ্ট্রটি গঠনের প্রাক্কালে। কিন্তু ড. ইউনূস? এত দাঙ্গা হলো, এত সংখ্যালঘু নির্যাতিত হলো, দেশত্যাগ করল, জঙ্গিবাদের ভল থাবা রোধ করলাম, কতজন প্রাণ দিল, সব সময় ভেবেছি ড. ইউনূস যদি শান্তির স্বপক্ষে একটি কথা বলেন, কতজন বেঁচে যাই। না, তাঁর কাছ থেকে কোন সহানুভূতি, প্রশংসা আমরা পাইনি। পায়নি দেশের মানুষও। এ বিষয়টিও কিন্তু সামগ্রিক আলোচনার মধ্যে উপাদান হিসেবে রাখতে হবে।

    এ পরিপ্রেক্ষিতেই বলতে হয়, যখন তিনি রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করবেন তখন তাঁকে অন্যদের মন্তব্যও শুনতে হবে। সমস্ত কিছু বাদ দেন। বেগম জিয়ার সময় যখন গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হয়, অনেকের মৃত্যু হয়। বিএনপি-জামায়াত ছাড়া সবাই তাঁকে সহানুভূতি জানিয়েছিলেন। সুশীল সমাজের অনেকেও। কারণ, সেটি ছিল বর্বরোচিত হামলা। আমাদের অনেকের ওপর শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ ছিলেন, আমাদের অনেকেও আবার তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন, কিন্তু সব ভুলে আমরা তাঁর কাছে গেছি কারণ মানুষতো আমরা, বিএনপি-জামায়াত তো নই। বিশেষ মর্যাদার শুধু একজন যাননি, একটি সমবেদনার বাক্যও উচ্চারণ করেননি। তিনি হলেন ড. ইউনূস। এসব বিষয় নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, ক্ষুদ্রঋণ নিয়েও, কিন্তু কোন কথা ড. ইউনূসের কানে পৌঁছায়নি। কারণ, তাঁকে ঘিরে রেখেছে কোটারি স্বার্থ। যেমন, আমাদের নেতানেত্রীরা যখন ক্ষমতায় যান তখন কোটারি স্বার্থ তাদের ঘিরে ফেলে। আমাদের কথা, প্রান্তিকদের কথা, সমালোচকদের কথা তাদের কানে পৌঁছে না, কারণ তখন তারা মানুষের থাকেন না, কোটারির হয়ে যান এবং তাদের পতন হয়।

    বর্তমান বিতর্কের শুরু ডেনমার্কের ডকুমেন্টারি পরিচালক টম হেইনিক্যানের 'দি মাইক্রো ডেট' নিয়ে। নরওয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে তা দেখানোর পরই বিতর্কের শুরু। আমাদের এখানে যে খবর এসেছে সে সম্পর্কে, সেটি আংশিক। ছবিটি পুরো না দেখলে আমার মন্তব্যও বিভ্রান্তিকর হতো। আমাকে ডাকে নাম না জানা একজন সিডিটি পাঠিয়েছেন। পড়েই ছিল তা। এখন দেখেছি এবং তার ভিত্তিতেই লিখছি।

    এখানকার সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছিল, গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা কর থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গ্রামীণ কল্যাণে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, নরওয়ে সরকার তার প্রতিবাদ করেছিল এটি অন্যায়। মূল বিষয় কিন্তু তা নয়। মূল বিষয় ক্ষুদ্রঋণ কীভাবে মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে, মানুষ আত্মহত্যা করছে এবং ক্ষুদ্রঋণে বৃহ্‌ৎ কর্পোরেশন বা পুঁজিবাদ কীভাবে স্ফীত হচ্ছে সে বিষয়ে। নোরাড অংশটি কয়েক মিনিটের মাত্র। সেখানেও বাংলাদেশের অনেকে যেমন, খুশি কবির, খলীকুজ্জমান, এয়াকশন এইডের শহীদুর রহমান, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা ক্ষুদ্রঋণের বিরুদ্ধে বলছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, আফ্রিকা, মেঙেইকা, ভারতেও কী অবস্থা হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের বিটিভিতে যদি এটি দেখান হয়, তা হলে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা যারা মানববন্ধনে নেমেছেন বা সুশীল সমাজের কর্তারা, রাস্তায় বেরুতে পারবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু সে চিত্র তো মামলা শেষ না হওয়ার আগে দেখানো যাবে না। এ বিষয়টি কিন্তু অনুচ্চারিত থেকে গেছে। এবং ডকুমেন্টারিটি এত বিশ্বাসযোগ্য যে বলার নয়। আমেরিকা এবং পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রপ্রধানরা সেই কারণেই ক্ষিপ্ত। কারণ, ক্ষুদ্রঋণ যে মহ্‌ৎ সেটি পৃথিবীর মানুষকে গেলাতে তাদের অনেক ইনভেস্ট করতে হয়েছে। আজ ক্ষুদ্রঋণ বিপর্যস্ত হলে তাদের বৃহ্‌ৎ লাভের বিষয় কী দাঁড়াবে? এ প্রশ্নটিই সে ডকুমেন্টারিতে এসেছে। এখানে ড. ইউনূস গৌন। মার্কিনী বা পাশ্চাত্যের ধমক-ধামক সে কারণেই।

    যে প্রসঙ্গটি আমাদের এখানে প্রচারিত হয়েছে সেটি নোরাড প্রসঙ্গ। সেটিও হালকা করে দেখার উপায় নেই। স্পষ্ট ড. ইউনূসের চিঠিতে বলা হয়েছে তিনি ১০০ মিলিয়ন সরিয়েছেন কর দিতে হবে দেখে। এবং বাংলাদেশের পাবলিক এটি জানলে খুব খারাপ হবে। নরওয়ে তখন এর প্রতিবাদ করে। ড. ইউনূস জানান, তিনি টাকা ফেরত দিচ্ছেন। এক-তৃতীয়াংশ ফেরত দেন। এবং ড. ইউনূসের অনুরোধে নরওয়ে সরকার বিষয়টিকে বোধ হয় চেপে যায়। টম নরওয়ের সরকার থেকে জানতে চেয়েছেন তারা কোন জবাব দেননি--যা অস্বাভাবিক। এসব বিষয়ে তারা স্বচ্ছ। মনে হয় এ কারণেই গ্রামীণফোনের মালিকানা হস্তান্তর হয় টেলিনরের কাছে। চলচ্চিত্রটি দেখানোর পর এ প্রশ্ন আবার উঠলে বোধ হয় নোরাডের অর্বাচীন কোন মুখপত্র মুখ খুলেছিল। কিন্তু মার্কিন ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ধমকে এরপর তারা নিশ্চুপ হয়ে যায়। আমি ছবিটি না দেখলে এটি বিশ্বাস করতাম না। তবে অনুমান করছি, ক্ষুদ্রঋণের বিপক্ষু যারা আন্দোলন করছেন তারাই এ ছবি নির্মাণ করিয়েছেন।

    এ পরিপ্রেক্ষিতে বলতে হয়, প্রশ্ন উঠবে, তা হলে কি ক্ষুদ্রঋণের ভাল কিছু নেই? যদি ভাল কিছু না থাকে তাহলে পাশ্চাত্য ও আমেরিকা এটা নিয়ে এত প্রচার করছে কেন? তার উত্তরও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দু'একটি সাফল্যকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের উপকারভোগী হলো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো যারা পুঁজিবাদী সরকারসমূহের স্টেক হোল্ডার। তাদের লাভ অবশ্যই হচ্ছে। গরিব মানুষের? সে অন্য প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিখ্যাত ঋষিপাড়ার কার্তিক ঋণ নিয়েছিলাম, এখন তার জন্য মনে হয় বাসের চাকায় মাথা পেতে দিই। এবং তারা বলছে ঋষিপাড়ার পুরো বিষয়টাই ছিল সাজানো। এগুলো বিশ্বাস করা কষ্ট। কিন্তু এটি সত্য।

    এ কারণেই, সরকার পর্যালোচনা কমিটি করেছিল। কারণ, আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নগুলো উঠেছে। লক্ষ করবেন, সরকার তদন্ত নয়, পর্যালোচনা কমিটি করেছিল। কারণ, গ্রামীণ ব্যাংক সরকারই করেছিল, সেখানে তাদের ৩০ ভাগ শেয়ার এখনও আছে। ইতোমধ্যে, মার্কিনীদের ধমক খেয়ে নরওয়ে বলেছে, যা নিয়ে নরওয়ে সরকার প্রতিবাদ করেছিল তা মিটে গেছে। ড. ইউনূসও ফিরে এসে একই বক্তব্য দিয়েছেন এবং বলেছেন, কর ফাঁকির জন্য টাকা স্থানান্তর করা হয়নি। কিন্তু ডকুমেন্টারির কাগজপত্রে তা স্পষ্ট লেখা আছে। তারপরও ব্যাপারটি মিটে যেত। যদি তিনি বলতেন, ঠিক আছে, পর্যালোচনা কমিটি করেছেন করুন। গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী আমি সরে যাচ্ছি। [কারণ, এসব বিষয়ে তিনি অনেক উপদেশ দিয়েছেন]। যা খুশি করুন। তবে বিনা কারণে অভিযুক্ত করবেন না। ব্যাপারটি আর এগুতো না।

    যে বিষয়টি এই বিতর্কে চাপা পড়ে গেছে তা হলো, সরকারও তাঁকে এই অনুরোধ করেছিল। এবং সরকার নমনীয় ছিল কারণ, ড. ইউনূসের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষীও অনেকে আছেন সরকারে। বাংলাদেশ সরকার সাধারণত এ ধরনের অনুরোধ করে না। ড. ইউনূস দেখেই তারা অনুরোধ রেখেছিল। কিন্তু, তিনি বললেন, না, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব ছাড়বেন না। এবং পত্রিকার খবর অনুযায়ী, যদি তা সত্য হয় যে, তিনি পাশ্চাত্যের যোগাযোগ কাজে লাগালেন। কোন সরকারই তা পছন্দ করবে না। বিএনপি যদি ক্ষমতায় থাকত, তারাও করত না। এখানেই অঙ্কটা গোলমেলে হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের শিক্ষা হচ্ছে, প্রকৃতির মতো এখানেও নিশ্চিত কিছু নেই, লজিক্যালি কিছুই এখানে ঘটে না। ড. ইউনূসকে যারা পরামর্শ দিয়েছেন, অনুমান করছি যারা তাঁকে রাজনৈতিক দল করার ভুল পরামর্শ দিয়েছিলেন তারা এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিলেন। তাদের অঙ্ক ছিল বোধহয় এ রকম যে, পাশ্চাত্যের নামী নামী লোক এবং সরকার যখন হাসিনা সরকারের 'অবিমৃশ্যকারিতা'র বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করবে তখন বাংলাদেশ সরকারের অবস্থা হবে, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। কিন্তু ব্যাপারটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, সরকারের মনে হচ্ছে, ঠিক আছে দেখা যাবে। ঘটনা আরও জটিল হয়েছে তিনি আদালতে যাওয়ায়। ড. ইউনূসের দিক থেকে দেখতে গেলে বলতে হয়, তিনি মনে করেন, তাঁর ওপর অন্যায় করা হয়েছে। সুতরাং তিনি প্রতিবিধান চান। সরকারের এখন কিছু বলার নেই। এখন সর্বোচ্চ আদালতে বিষয়টি আবারও পর্যালোচনা করবে যদিও তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়েছে। আমরা সে বিষয় নিয়ে মন্তব্য করব না। কিন্তু আদালতে যেসব যুক্তিতর্ক উপস্থাপিত হয়েছে তার ভিত্তিতে সাধারণ নাগরিক সমাজে যে প্রশ্নটা উঠছে তা হলো, অবসরের দশ বছর পরও কেন তিনি থাকবেন বা থাকতে চাচ্ছেন? এর উত্তর অবশ্য ড. ইউনূস আগেই দিয়েছেন। তিনি না থাকলে গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হয়ে যাবে।
    সমস্যাটা হচ্ছে, দু'টি প্রস্তাবের কোনটিই গ্রহণযোগ্য ঠেকছে না সাধারণের কাছে। যেমন, তিনি দশ বছর থাকলে, অন্যরা পারবেন না কেন দশ বছর থাকতে? আর বঙ্গবন্ধু যখন দেশ পুনর্গঠন করছিলেন তখন তাঁকে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ কি তার ফলে মানচিত্র থেকে মুছে গেছে? এর সঙ্গে এ বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে, এতদিন তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে রইলেন কিন্তু এমন কোন কাঠামো তিনি কেন করলেন না যেখানে তিনি না থাকলেও ব্যাংক চলবে। কারণ তিনি তো আর যাই হোক অমর নন। এর অর্থ কি এই যে, তিনি চেয়েছিলেন, এমন অবস্থা তৈরি করতে যাতে সব তাঁকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে? তাহলে তিনি রাজনীতিবিদদের দোষ দেন কেন? তারাও তো একই কাজ করছেন, দলকে একজনের ওপর নির্ভরশীল করে রাখছেন। প্রশ্ন--কে কাকে প্রভাবান্বিত করছে।

    . ইউনূস এবং পাশ্চাত্যের লবি একটি কথা বারবার বলছেন, তিনি সম্মানজনক সমাধান চান। কিন্তু সেই সমাধানটি কি সেটি কেউ বলেননি। অনুমান করছি, গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা থাকুক, তাই তিনি চান। সরকারও তাতে নিমরাজি ছিল। কিন্তু এখন আদালতে যাওয়ায় সে পথও রুদ্ধ হয়ে গেল।

    . ইউনূসকে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও পাশ্চাত্য সমর্থন করছে কেন? নিশ্চয় কারণ আছে। তাদের যুক্তি, বাংলাদেশ গরিব দেশ। গরিবী হটাতে হবে ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে। এই ঋণ পাবে শুধু নারী। সে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এবং তাতে তার ক্ষমতায়ন হবে। এবং ড. ইউনূস এই মহ্‌ৎ কাজটি করছেন। অবস্থার উন্নয়ন ঘটলে বাজার বৃদ্ধি পাবে। এতে পুঁজি ও ভোক্তা দু'পক্ষেরই লাভ। খুব সাধারণ, কিন্তু শক্তিশালী যুক্তি। ক্ষুদ্রঋণ যে ব্যাপক আকারে বিশ্বে প্রচার পেয়েছে তার কারণ এই সরল কিন্তু শক্তিশালী যুক্তি। অনেকের কাছে এটি সামাজিক কর্ম মনে হয়েছে, এর পেছনে যে বাণিজ্যিক মনোভাব আছে তা কখনই প্রাধান্য পায়নি।

    আমি ক্ষুদ্রঋণ বিশেষজ্ঞ নই, কিন্তু একটি প্রশ্ন জেগেছে অনেকদিন ধরে। গত চার দশক এই ক্ষুদ্রঋণের উৎসব চলছে। যে পরিমাণ টাকা এতে শুধু অনুদান হিসেবে এসেছে তাতে বিশাল সংখ্যক মানুষের গরিবী আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসা উচিত ছিল। সেটি বাংলাদেশ কেন, কোথাও কেন হলো না? এ প্রশ্নও কেউ করেননি কেন যে, যে ঋণ দেয়া হয় মূলধন হিসেবে এক সপ্তাহ পর থেকে সুদসহ তা ফেরত দেয়া হবে কী ভাবে? ধরা যাক সুফিয়া খাতুন ১০টি মুরগি কেনার জন্য ঋণ নিলেন। উদ্দেশ্য, মুরগির ডিম বিক্রি করে সংসার চালাবেন। এখন গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা কি তাকে সেই মুরগি বেছে দিচ্ছেন, যা এক সপ্তাহ পর থেকে ডিম দেবে? ডিম যদি তিন মাস পর দেয় তাহলে এই ১২ সপ্তাহের সুদসহ কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করা হবে? আর, একজন বা দু'জনের জন্য একটি গ্রুপের বাকি সবাই কেন লাঞ্ছিত হবে? এটি মৌলিক অধিকারের কোন পর্যায়ে পড়ে?

    দ্বিতীয়ত, নারীর ক্ষমতায়নে সাহায্য করেছে রাজনৈতিক সরকার, বিশেষ করে রাজনৈতিক সরকার এবং 'মাঝারি শিল্প' যেমন, পোশাক খাত। ক্ষুদ্রঋণের এক্ষেত্রে অবদান একেবারে নেই তা নয়, কিন্তু রাষ্ট্র ও শিল্প খাতের তুলনায় নগণ্য। কারণ স্বাবলম্বী না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কী ভাবে? পোশাক খাতে নারী শ্রমিককে শোষণ করছে, কিন্তু সে নগদ যা পাচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ থেকে তা একেবারেই পাচ্ছে না। কিন্তু শোষণটা হচ্ছে এবং সেটি বোনাস হিসেবেই তাকে মেনে নিতে হচ্ছে।

    আমি সরেজমিনে বিষয়টি দেখার জন্য নেহাত কৌতূহলবশত রাজশাহীর গোদাগাড়ির একটি গ্রামে গিয়েছিলাম। নিয়ে গিয়েছিলেন নির্মল কমিটির ডা. শাফিক। যে গ্রামে তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন সে গ্রামের প্রায় সব মহিলাই ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা। সবার পরনে জীর্ণ বসন, শীর্ণ শরীর। আমি জানতে চাইলাম, সবখানে পড়ছি, জানছি ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা মহাসুখে দিন কালাতিপাত করছেন, কিন্তু তাদের দেখে তো তা মনে হচ্ছে না। ব্যাপারটা কী? মুচকি হেসে সবাই জানালেন, ঋণ তাদের দরকার, মহাজনও আছে, কিন্তু তার দরকার নেই, বিভিন্ন এনজিও [গ্রামীণসহ] তাদের নিয়মিত ঋণ দিচ্ছে। তারা একজন থেকে ঋণ নিয়ে অন্য কোম্পানির ঋণ শোধ করছেন। তাদের অবস্থার তাহলে পরিবর্তন হয়নি? এ প্রশ্নটি বোকার মতো করা হয়েছে, কারণ আমি তো চোখেই তা দেখতে পাচ্ছিলাম। উত্তর পেলাম, মোটেই না, তবে কোনরকমে দু'বেলা খেয়ে পরে বেঁচে আছেন। তারা র্যাডিক্যাল হবেন না।
  • Jay | 90.200.14.204 | ২৬ এপ্রিল ২০১১ ০০:৫২472570
  • বাংলাদেশের সর্কারী অনুসন্ধান মহ: ইউনুস সাহেবের ট্যাক্স ইত্যাদির কারচুপির অভিযোগের সারবত্তা খুঁজে পায় নি- আজকের খপর। তাবলে তেনারা গ্রামীন ব্যাঙ্কের এম ডি পদ ফিরিয়ে দিচ্ছে না তাঁকে- বয়সের কারনে!
  • aka | 168.26.215.13 | ২৬ এপ্রিল ২০১১ ০০:৫৪472571
  • গুড, বৃহত্তর পলিটিক্স আর কি।
  • pi | 72.83.97.171 | ০৫ মে ২০১১ ২৩:৪৫472572
  • এই নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলে একটি লেখা :

    http://www.sachalayatan.com/himu/38802
  • dri | 117.194.230.226 | ০৬ মে ২০১১ ০০:০৭472574
  • জাস্ট একটা কথা বলতে চাই।

    ডক্টর ইউনুস পার্সোনালি কিছু টাকা মেরেছেন না মারেন নি সেটা আমার কাছে তত ইম্পর্ট্যান্ট নয়। তার চেয়ে ঢের বেশী ইম্পর্ট্যান্ট ক্ষুদ্রঋণে গরীব মানুষের কতটা সুবিধে হয়েছে, এবং কতটা অসুবিধে হয়েছে তার মূল্যায়ন।

    একজন ঋণদাতার ক্ষেত্রে : আপনার ইন্টারেস্ট রেটই আপনার পরিচয়। ঋণ দিয়ে দুনিয়া উদ্ধার করব টরবগুলো নেহাতই হ্যাপি টক।

    বাংলাদেশ সরকারের সাথে ড: ইউনুসের চাপান উতোরের সম্পূর্ণ অন্য ডায়নামিক্স থাকতে পারে। যেমন কারো কারো সহ্য হচ্ছিল না একা ড: ইউনুস লাভের গুড় খান। তাই ড: ইউনুসকে সরিয়ে দিয়ে এবার তারা লাভের গুড় খাবে। জাস্ট একটা পসিবিলিটি। নীডস ফার্দার ইনভেস্টিগ্‌শান।

    নরওয়ের সাথে ড: ইউনুসের ২০০৬ নাগাদ কিছু একটা গোলমাল হয়েছিল, সেটা ঐ ডকুমেন্টারি থেকে ক্লিয়ার। কিন্তু এখন আবার সেই সমস্যা মিটে গেছে, গ্রামীন ব্যাঙ্কের ওয়েব পেজ দেখে মনে হল। নরওয়ের নোবেল কমিটি স্টেটমেন্ট দিয়েছে।

    এই গোল্মালের ডিটেলটা জানতে পারলে ব্যাপারটা বুঝতে আরো সুবিধে হত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন