এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অথ ভূমিকম্প ঘটিত

    Nina
    অন্যান্য | ২৫ আগস্ট ২০১১ | ৩১০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Nina | 68.45.76.170 | ২৫ আগস্ট ২০১১ ০৮:০২491359
  • গত দুদিন, টিভি তে, লোকের মুখে আশেপাশে কত কি শুনছি--ভূমিকম্প নিয়ে।
    তাই ভাবলাম আরও শোনা যাক নানা রকমের অভিজ্ঞতা ---সবাই শেয়ার করবে--প্লিজ? আমারটা শুরু করলাম্পায়ের তলার মাটি ----

    নিজের পায়ের তলার মাটি না নড়ে উঠলে ঠিক বোঝা যায়না ---ভূমিকম্প কাকে বলে--কেন কিছু লোকে এত্ত ভয় পায় ভূমিকম্পের নামে---??!!

    ছোটবেলায় মা কে দেখেছি , যে মা আমার অসম সাহসী , বাড়ীর উঠোনে কেউটে সাপ --বাড়ীর মুশকো সব বিহারী চাকর ড্রাইভাররা বলে বাপরে বাপ!- আর মা এক হাতে বিশাল টর্চ, অন্য হাতে ফুটন্ত জলের কেটলী ---জোরালো আলো সেই মহাপ্রভুর ওপর ফেলে (আলোতে নাকি তাঁরা নড়তে পারেন না, মায়ের বক্তব্য) মাথার ওপর ফুটন্ত গরম জল ঢালত---তারপর বাকি বীর-কাজের লোকজন হৈ হৈ করে তার মৃতদেহ পোড়তো! অথচ মা ই বলত কেউটে সাপ নাকি লাফাতেও পারে !
    তা এই হেন বীরাঙ্গনা মা আমার, ভূমিকম্পের নামে কেমন যেন থরহরি কম্প হয়ে যেত। আর মাসীরা তো এমন হাঁইমাঁউ করত যে ছোট্ট আমির খুব হাসি পেত!

    একবার পাটনায় রাষ্ট্র হল ভূমিকম্প হবে। রাতের দিকে দু একটা ছবি-টবি দেয়ালে একটু যেন এপাশ ওপাশ করল---এবং নিউজ এ বল্ল রাতে আবার হতে পারে ট্রেমার----সে কি দৃশ্য! চতুর্দিক এ শাঁখ বাজছে, আমরা সব বাড়ীর বাইরে বাগানে, মা আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে আর বলছে ' আমার কাছে কাছে থাকবে' । বড়মাসীমা , বড়দি মা, সবার মুখ ফ্যাকাশে, যে যার ইষ্টমন্ত্র জপ করে যাচ্ছে । বাবা যে বাবা, সবসময় সব্বার ভয় ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়, সেও কেমন গম্ভীর মুখে বিনাবাক্যব্যায়ে রাত্রে বাইরে ইজি-চেয়ারে বসে। ছোট্ট-আমি তো থ", কি রে ববা এরা এত ভয় কিসের জন্য পাচ্ছে?! কিছুই তো হয়নি!

    তা এসবের একটা কারন আছে বৈকি! বিহারে 1934 (যতদূর মনে পরছে শুনেছি) বিশাল ভূমিকম্প হয়েছিল। মা রা তখন মজ:ফরপুরে থাকত। সেই ভূমিকম্প ছিল বড়ই ধ্বংসাত্বক।

    এর মধ্যে আর একটা ছোট গল্প আছে :

    দুপুর বেলায় আমার দিদা খেয়েদেয়ে ভাতঘুমে মগ্ন। কাজের লোকজনেরা ও সব বিশ্রাম নিচ্ছে, খাওয়া-দাওয়া সেরে। দিদা বলতেন ' কাজের লোকেরাই তোমার লক্ষী তাদের যত্ন করবে'।তাই দিদা নিজেই গিয়ে দরজা খুললেন।
    দেখেন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ , খুব রোগা, পরনে খাটো ময়লা ধুতি, খালি গা, শুধু মোটা একগাছা পৈতে গলায়--দাঁড়িয়ে আছেন।
    তিনি বল্লেন মা গো বড় তেষ্টা পেয়েছে, কদিন খাইনি, দুটি বতাসা আর একটু জল দেবে ? অনেকক্ষণ থেকে দোরে দোরে ঘুরছি।
    দিদা শশব্যস্ত হয়ে তাকে বারন্দায় বসালেন --বাতাসা জল দিয়ে, বল্লেন আপনি একটু জিরিয়ে নিন। আমি দুটি গরম ভত ফুটিয়ে দি ই , বেশিক্ষণ লাগবে না।
    খানিক পরে সেই মানুষটির পাতে গর ম ভাত, আলুসেদ্ধ, ঘী দিয়ে ও শেষ পাতে দুটি সন্দেশ দিয়ে তাঁকে যত্ন করে খাওয়ালেন।
    যাবার সময় সেইবৃদ্ধ বল্লেন সারাদিন আজ দোরে দোরে দুটি খেতে চেয়ে ঘুরেছি---তোমার মতন এত যত্ন কোথাও পাইনি।
    বাড়ীর দেয়াল ছুঁয়ে বল্লেন মা লক্ষী, শত ধ্বংসেও তোমার বাড়ির একটি ইঁটও বাঁকা হবেনা।
    এর পরের দিন সেই ভূমিকম্প হয়েছিল--চারিপাশে প্রচুর ভাঙচুরের মধ্যে দিদার দোতালা বাড়ীর নাকি একটি দেয়ালেও ফাটল ধরেনি। !!

    এই গল্প আমরা ছোটবেলাথেকে শুনেছি ও আমাদের সব্বার মনেগেঁথে গেছে " অতিথি নারায়ণ, তার যত্ন করবে।

    এই নাও হল তো? ধান ভানতে শিবের গীত! ওফ নিজেকে নিয়ে আর পরিনা---থামতে জানার আর্ট আর রপ্ত হলনা :-((
    ফিরে আসি 1934 থেকে 2011 এ---

    অফিসে বসে খুব জরুরি রিপোর্টে কাজ করছি কলিগের সঙ্গে, গতকাল। সে আবার আমার টেবিলের একধারে বসে আছে। হঠাৎ---কি হল--আমর মাথটা ঘুরছে যেন--আরে পেটের মধ্যেও যেন কি হচ্ছে--এই রে আমার কি সেরিব্রাল অ্যাটাক হচ্ছে? সব এমন দোলে কেন রে বাবা--- ভয়ে ভয়ে কলিগের দিকে তাকাই--ওম্মা সেও দুলছে কেমন যেন---একি জানলায় কেমন যেন আওয়াজ--দেয়ালে ছবিটা দুলছে----মাথায় চিড়িক দিয়ে উঠল মায়ের সেই ফ্যাকাশে মুখ--ভূমিকম্প!! সটান উঠে দাঁড়ালাম --কি হল-পায়ের তলায় যেন জল, আমি টলোমল!! আমি ই চেঁচিয়ে উঠলাম earthquake !
    ইতিমধ্যে সারা অফিসে কি হল কি হল রব--কেউ বলে গ্যাসলাইন কি লিক করেছে, কেউ বলে কোনও এক্সপ্লোজান হল কোথাও ----- কাঁপুনিও থেমে গেছে এতক্ষণে ।
    যন্ত্রজুগের জয়, আমিও কম্পুতে নেটপাড়ায় চলে গালাম--ঠিক দেখি সেখানেও নানা জনে --একই রব---DC র নেটবন্ধুরা বল্ল তাদের টেবিল চেয়ার ডেস্ক ইত্যাদি প্রভৃতি উল্টে পড়েছে--ভূমিকম্প 5.9 বেশ জোর। ততক্ষণে টিভি তেও নিউজ এসে গেছে---ভার্জিনিয়ার দিক থেকে নিয়ে একেবারে ক্যরোলাইনা পর্য্যন্ত কেঁপেছে --তবে ক্ষয়ক্ষতি র কোনও খবর নেই আপাতত।
    ভার্জিনিয়ার নেট-বন্ধু বলে সে বুঝেছে তার ল্যাবের সঙ্গী নাকি বুঝতেই পারেনি--এইরকম নানা জনের নানা আদান-প্রদান এর মধ্যে আমাদের অফিসের সিকিউরিটি সাহেব এলেন--বল্লেন বিল্ডিং ইভাক্যুএট কর, ইন্সপেকশন হবে কোথাও, কোনও লিকেজ হল কিনা---অফিস বন্ধ---আমরা সব বাইরে --পার্কিং লটে বসল মেলা---তখন ভয়ও করছে--মেয়ে নিউ ইয়ে্‌র্‌ক, বর ফিলিতে, ছেলে বাড়ীতে--কারুর ফোন পাচ্ছিনা --ভাইপো আবার মেরিল্যান্ডে--ফোন বিকল!!
    এনাউন্স হল অফিস বন্ধ, বাড়ী যাও। বিল্ডিং আগে থরো ইন্সপেকশন হবে তবে আবার কাজ।
    রাস্তায় ভীড় --সারে সরে গাড়ী ---washington এ সব বন্ধ নিউজে বলছে, ওখানে রাস্তার অবস্থা খুব করুণ --
    ও হ্যাঁ আর একটা শিবের গীত--আমার নাদুস-নুদুস বর , অমিতো, তার যখন ইয়ারলি চেক আপের সময় আসে সে তখন ভীষণ শাক-সব্জী ডায়েটে চলে যায়,ভাত রুটি খায়না, হাঁটে রোজ এক মাইল ইত্যাদি--তা সেই পর্ব চলছে --তার টেস্ট পরের দিন, (য়ানে কি আজ) । তা মঙ্গলবার আবার শুধু ভেজ খাবে বলেছে।

    গাড়ী স্টার্ট করার আগে তাকে পেয়ে গেলাম ফোনে---ছেলে ও মেয়ের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছে, নিশ্চিন্ত হলাম। এবার মঙ্গলবার সকালেই বলেছিল আজ বেশ ভাল করে একটা পোস্ত নামিও তো, ঘাসপাতা খেয়ে মুখটা গেছে--বলেছিলাম যদি অফিসে না আটকে যাই কাজে তো হবে --এখন এই নতুন মালিকের আপিশ মহা কড়াকড়ি---
    তা অমি ফোনে ব্যাকুল হয়ে শুধো ই তুমি ঠিক আছ তো? আমাদের অফিস ছুটি, বড়ী যাচ্ছি! অমাকে বল্ল ছেলে মেয়ে সব ঠিক আছে, আমিও ঠিক আছি--আর বাহ! তুমি বাড়ী যাচ্ছ , বেশ ভাওলো করে একটা পোস্তটা নামাও---গিয়েই কম্পুটারে বসে যেওনা দয়া করে-----একবারও জিগালোনা আমি ঠিকঠাক কিনা :X

    ভুচালে এই ছিল আমাদের হালচাল!

    এবার তোমাদেরটা শুনি-----
  • kiki | 59.93.165.102 | ২৫ আগস্ট ২০১১ ১১:৪৫491370
  • দিদিয়া,
    বড়িয়া........:P

    আচ্ছা, সেদিন ভুমিকম্পের রাতে, মানে তোমাদের দিনে আর কি, সাহেবশঙ্খকে দেখলুম যেন! সেও ভারী ভালো লিখেছিলো কিন্তু।তাকেও একটু তুমি বা তিতির বলে দেখতে পারো।আচ্ছা তিতিরের খবর ই বা কি?
  • Su | 86.160.15.140 | ২৫ আগস্ট ২০১১ ১৩:৫৬491381
  • ভুমিকম্পের রাত বললে ন হন্যতের গপ্পো মনে পড়ে যায়! মির্চা এলিয়াদ আর মৈত্রেয়ী দেবী-- আর কি যেন বইটার নাম ছিলো হাঙ্গার?

    রোম্যান্স অ্যাপার্ট- সব্বাই ভালো আছে এইটেই যথেষ্ট!
  • sumit | 68.192.169.219 | ২৫ আগস্ট ২০১১ ১৭:৩৬491392
  • নিনা, গান গাইতে গাইতে ধান ভানার কায়দাটা চমতžকার, two-fer, ওটা চালু থাক। কিন্তু হঠাতž পোস্তর কথা তুলে মনটা আর্দ্র করে দিলে। আমি দুপুরের ন্যাপে 'মারের সাগর পাড়ি' দিচ্ছিলাম কিছু টের পাইনি।
  • pi | 72.83.74.17 | ২৫ আগস্ট ২০১১ ১৮:৪৬491403
  • ভূকম্পের পর আমার থেকে থেকেই কম্প দিয়া জ্বর আসিতেছে। বিশেষজ্ঞের কথা জানিনে, কিন্তু কবি বোধহয় ইহাদেরকেই aftershock বলিয়া গেছেন।
  • kiki | 59.93.200.122 | ২৫ আগস্ট ২০১১ ১৯:৩৭491414
  • সু,
    তুমি বলেছিলে না মির্চা আর মৈত্রেয়ীর দেখা হওয়ার লাইব্রেরীতে গেছিলে, না কি যেন!পিলিজ মির্চাকে নিয়ে বলো না,আমার প্রথম প্রেম।সেই ক্লাস এইটে।এখন ভাবলেই মজা লাগে যে একটা পুঁচকে তেরো বছরের মেয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদে চলেছে মির্চার জন্য।:P সেই কষ্টের অনুভুতি আর সেভাবে ফিরে এলো না।
  • kiki | 59.93.200.122 | ২৫ আগস্ট ২০১১ ১৯:৪০491425
  • অথচ কি অদ্ভুত, আমার তখন রু এর জন্য অত কষ্ট হয়নি কিন্তু, নিজেকেই রু বানিয়ে ফেলেছিলাম বোধহয়।
  • Titir | 128.210.80.42 | ২৫ আগস্ট ২০১১ ২২:১৫491426
  • কিকি,

    খোঁজ নিয়েছ দেখে বড় ভালো লাগল। আমি বহাল তবিয়তে বেঁচে আছি, কিন্তু কাজের চাপে নাস্তানাবুদ। আমি তো ওদের থেকে অনেক দূরে থাকি। তাই নো ভূমিকম্প, শুধু বিকেলবেলা খুব বৃষ্টি হয়েছিল এখানে। আর তাই দেখে রাতের বেলা একটা জম্পেশ খিঁচুড়ি, ডিমভাজা আর আলুভাজা করেছিলাম। দুজন বন্ধু এসে পড়েছিল সেই সন্ধ্যেবেলা। তারাও ভাগ পেয়েছে সেই খিঁচুড়ির।
  • Sankha | 198.45.19.49 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০২:২৪491427
  • আরে না, কিকিদি স্মরণ করেছ দেখছি, হ্যাঁ দু-চার লাইন সেইদিন দুপুরেই লিখেছিলুম এখানে।
    পরে সন্ধ্যেবেলায় গুছিয়ে ভাট-সম্প্রসারণ করে মজলিশে পাঠিয়ে দি।
    ব্যক্তিগতভাবেও আর এক বন্ধু আমাকে এই লিংকটা পাঠিয়ে লেখাটা তুলে দিতে বলেছিলেন,তা এসে তোমার সেই ছোট্ট পোস্টটাও মনে আছে দেখে ভালো লাগলো। ঐ লেখাটাই তবে দিয়ে দিলুম।
  • Sankha | 198.45.19.49 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০২:২৮491360
  • ভূমিকম্পের গপ্প
    **********

    গুরু ট্যুরে যাচ্ছে, ফিরবে সেই লেবার ডের ছুটি পার করে। তাই একটু লাস্ট মোমেন্ট সুখদু:খের গপ্প করতে করতে বেলা গড়িয়ে গেছলো। অন্যদিন সাড়ে বারোটা থেকে একটার মধ্যেই লাঞ্চের গল্প চুকিয়ে দি, আজকে প্রায় দেড়টা বেজে গেছলো, তাই তড়িঘড়ি দৌড়োলুম, পেটে ছুঁচো অ্যান্ড কোং ডন বৈঠক ইত্যাদি সেরে শবাসন করছে।

    খাওয়া দাওয়া শেষ করে হাতমুখ ধুতে টয়লেট গেছি। বেরোলুম, দেখি দুজন মহিলা খুব ব্যগ্রভাবে দপ্তর গুছিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তারপর ফ্লোরের মাঝখান দিয়ে হাঁটছি, দেখি সব কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ফ্লোরে কয়েকটা ঠেক আছে জানি, অন্যদিন সেই সব জায়গা থেকে বেশ প্রাণখোলা হাসি, শীতল শীতল পরের কথা ভেসে আসে কানে। আজকে সব চুপচাপ। ভাবলুম ওদের গুরু ওদের বকে দিয়েছে, এই বাজারে এতো হাহা হিহি কিসের লা? মরণ!

    লবির এইখানটায় লিফট। একটু বেশিই যেন নিচে যাবার ভিড় ঠেকলো। বিশেষ করে লাঞ্চ আওয়ার প্রায় পেরিয়ে গেছে। তাইলে কি ক্যাফেটেরিয়াতে হ্যাপি আওয়ার লাঞ্চের ডীল দিলো? দেখেছ, এই সব কাজের কথাগুলো কেউ সময়ে জানায় না।

    এই সব আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম ভাঁজতে ভাঁজতে এগোচ্ছি, দুকদম গিয়ে দেখি, এক দেশি ব্যাগ গোছাচ্ছে, আর দ্যাখ না দ্যাখ, ওপরে রাখা কমলা রঙের ফায়ার কিট নিয়ে দে দৌড়।

    এবারে সিরিয়াস হলুম। প্রথম কথা, দেশি পালাচ্ছে মানে ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার মত না, তার ওপরে আবার সেয়ানা দেশি, ফায়ার কিট নিয়ে পালাচ্ছে, মানে কেস ডবল জন্ডিস। এদিকে পিএ তে সেই ক্লান্ত গলাটাও শোনাচ্ছে না, অ্যাটেনশন, অ্যাটেনশন অল পার্সোনেল অ্যান্ড ভিসিটরস অফ ... ইত্যাদি। আগুনটাগুন লাগলো? নাকি এ সেই ফায়ার ড্রিলের রসিকতা!

    কিন্তু এতক্ষণে যখন মালুম হচ্ছে ডালমে কুছ কালা হায়, ধারে কাছে কাউকেই দেখছি না, যে একটু অন্ধজনে আলো দেবে। এদিক ওদিক একটু ঘুরঘুর করে অবশেষে একজনকে পাকড়াও করলুম। সেও বিশেষ খাপ খুললো না, বললো, কিছু নেবার থাকলে নিয়ে মারো দৌড়, হোয়াইল ইউ খ্যান। চলে আসতে আসতে ভাবলুম একবার জিগগেস করি, সে কেন ক্যাসাবিয়াংকার পার্ট করছে, তারপর চাচা আপন প্রাণ বাঁচা এই আপ্তবাক্য স্মরণ করে জিগগেস করাতে ক্ষান্তি দিলুম।

    নিচে যাবার লিফট একটাও আসছে না। যারা দাঁড়িয়ে আছি সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি। সব্বাই একেবারে 'ক্যান্ট রিড মাই, ক্যান্ট রিড মাই, নো হি ক্যান্ট রিড মাই পোকার ফেস, ম্মাম্মাম্মামা'। ইতোমধ্যে লবির টিভিতে ক্যাপিটল বিল্ডিং দেখাতে শুরু করে দিয়েছে আর ইস্টকোস্টের ম্যাপ। নিচে লেখা দেখলুম আর্থ কোয়েক, 5.8 তীব্র।

    এতক্ষণে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হল। তারপর দুড়ুম করে কনফিউসড মুখে এক ছোকরা বেরিয়ে এসে সামনে চেনা কাউকে দেখে জানতে চাইলো, WTF goin' on? এবারে দেখলুম সবাই মিলে তাকে বোঝাতে শুরু করে দিলো কি ঘটেছে। একজন বেশ হাত দুলিয়ে দুলিয়ে বোঝালো এটা ঠিক হাল্কা ট্রিমর না, বেশ কেঁপে কেঁপে উঠেছে নাকি ঘরবাড়ি।

    কেউ একজন সদ্যলব্ধ জ্ঞান ফলিয়ে 5.8 স্কেলের কথা বলছিলো, এক দেশি তাকে থামিয়ে দিয়ে জানালো, টিভিতে যেটা বলছে, সেটা ভুল, ভার্জিনিয়াতে নাকি 6 রিডিং দেখিয়েছে।

    হবেও বা। নাম্বার ক্রাঞ্চিং হলে দেশির কথাই সেখানে শেষ কথা। সব্বাই চুপচাপ মেনে নিলো।

    নিচে নেমে দেখলুম লোকজন বেশ মুডে আছে। মেলা মেলা অ্যামবিয়েন্স। অনেকের কানে ফোন, বাকিরা জটলা পাকিয়ে অ্যাপোক্যালিপ্স নিয়ে ফান্ডা দিচ্ছে। কেউ কেউ একটু সন্দিগ্‌ধ। এক বছর আগেই এসে গেলো? ২০১২ র কথা ছিলো না? কানকুন যাবার ছিলো।

    আমাদের ফ্লোরে প্যাϾট্রতে বেলা চারটের দিকে একটা তামিল সম্মেলনম বসে। আংগো পোংগো ইল্লা বিংগো-র পাশাপাশি গ্রিনকার্ডম, রামায়ণম এই সব বিজাতীয় শব্দও শুনতে পাই। তারা দেখলুম নিচে এসেও একে অন্যকে খুঁজে নিয়েছে। কিছু একটা তর্ক চলছে, কিন্তু আর শোনার উৎসাহ ছিলো না (শুনলেও যেন বুঝতে পারবো, 'ওন্দিচা' আর 'তামিল তেরিউম্মা' ছাড়া কিসুই জানি না)। সোজা ফিনান্সিয়ারে চলে গেলুম। এরা ডাউনটাউনের বিখ্যাত প্যাটিসেরি। এদের তিরামিসু আক্ষা নিউইয়র্কমে ওয়ার্ল্ড ফেমাস।

    একটা কফি নিয়ে ভিয়েত ভেট প্লাজায় এসে বসলুম। লাল রঙের চেয়ার টেবিল সাজিয়ে রেখেছে কেউ বা কারা। রাস্তাঘাটে থিকথিকে ভিড়। তাও ভালো বৃহস্পতি বা শুক্রবারে হয়নি, ঐ দুটো দিনে প্রচুর ট্যুরিস্ট আসে ডাউনটাউনে, ওয়াল স্ট্রিটে।

    গুলতানি চলছে, ভূমিকম্পের প্রাথমিক শকটা কেটে গেছে। জনগণ খিল্লি করছে। কলকাতা হলে নিশ্চিতভাবে 'এয় চাইগ্রম' এসে যেত। সামনে দিয়ে হুসহাস গ্রে লাইনের ছাদখোলা ডবলডেকার বাস বেরিয়ে যাচ্ছে। বাসের মাথায় জনগণ কৌতূহল ভরে খ্রেইজি নিউ ইয়র্কারদের আজব কান্ডকারখানা দেখছে। মেঘে রোদের লুকোচুরি খেলার ছবি ভেসে উঠছে ভিনদেশি কিশোরীর বড়ো ফ্রেমের সানগ্লাসে। গলায় আইকার্ড পরে ক্যাননের প্রফেশনাল ক্যামকর্ডার নিয়ে লোকজনের রিয়্যাকশন ধরে রাখছে দু একজন নিউজ রিপোর্টার। মহিলাদের হাতে হাতে মার্লবরোর প্যাক ঘুরছে। আবার কাজে ফিরে যেতে কারোরই ঠিক মন চাইছে না। অনেকেই পড়ে পাওয়া হাফ ডের মতো ধরে নিচ্ছে। একজন মহিলা চোখের সামনে বাকিদের টাটা করে হাওয়া হয়ে গেলেন। বাকিদের মুখচোখ দেখে মনে হল 'ছাতি যাওত ফাটিয়া' অবস্থা। ইস্‌স যদি তিনটের মিটিংটা না থাকত!!

    ফালতু বসে থেকে লাভ নেই... যাদেরকে দিন গত পাপ ক্ষয় করতেই হবে, তারা গুটি গুটি নিজের নিজের বিল্ডিং এর দিকে পা বাড়ালেন। আমিও উঠলুম, অনেকক্ষণ কফি ফুরিয়ে গেছে, বসে বসে ঐ বরফগোলা জল চুষে কাজ নেই।

    ফিরে এসে টিভিতে খানিকক্ষণ খবরটবর দেখলুম। দেশি ঠিকই বলেছিলো, এখন 5.9 বলছে। এদের রিপোর্টিং ও দেখলুম আমাদের দেশের নিউজ চ্যানেলগুলোর মত। লং বীচে কাকে পাকড়াও করে জিগগেস করছে, বলুন, ভূমিকম্প হবার সময় আপনি কি করছিলেন, কেমন লেগেছিলো, ভয় পেয়েছিলেন কিনা, এখন বিপদ কেটে গেছে, গান গাইতে ইচ্ছে করছে কিনা এই সব হাবিজাবি। আরেক চ্যানেল আবার কোন এক বিশেষজ্ঞের মতামত চাইছে।

    নিজের খুপরিতে ফিরে চারিদিকে নজর চালালুম। আমার পেছনদিকের আইলে সব কটা কিউবে একেকজন চিনে বিজনেস অ্যানালিস্ট বসে। ঐ আইলটার নাম জনগণ তাই 'বাউরি (bowery) স্ট্রিট' রেখেছে :-))
    (এই পিজেটা এদিকের লোকজন ভালো বুঝবেন। আসলে বাউরি স্ট্রিট হলো যাকে বলে নিউ ইয়র্কের চায়না টাউন।)
    সেখানকার বাসিন্দারা এসে কাজে মন দিয়েছে, এক হাত দোলানো বেড়ালের একটা মূর্তিও কোথা থেকে জানি জুটিয়ে ফেলেছে।

    এত সব গোলমালের মাঝখানে দেখি গুরু ভাগলবা। ভালো। আম্মো পালামু। পাথকে বিশ্বাস নেই, এই সব ঝামেলা হলে আমেরিকার টেরেনও সব সময় টাইমে আহে না (বি দ্র: এই লিংকটা দেখলেই কনটেকস্টটা সমঝে যাবেন:
    হে: হে:)। দু একটা পাপ বাকি আছে, সেরেই।

    যেইটা মাথায় ঘুরছিলো, আগে সেই কৌতূহল নিরসন করি। আমার কিউবেও অমনি কমলা রঙের একটা ফায়ার কিট রাখা আছে, কোনদিন খুলে দেখিনি। আজকে একটি তেহকিকত করতে ইচ্ছে হল।

    দেখলুম একটা পোল্যান্ড স্প্রিং এর বোতল (বেস্ট বাই ডেট ২০০৯ এর ছিলো), একটা ছোট্ট টর্চ (জ্বলে না), একটা ক্যান্ডি, গজ প্যাড, মৃত অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট আরো কি সব।

    ভাগ্গ্যিস দেখলুম! এইবারে গড ফরবিড, কোনদিন যদি ইমার্জেন্সি কিছু হয়, আর যাই করি, এই কিটটা ভুলেও সঙ্গে নেবো না। এমনি যদি বা ধনে-প্রাণে-ক্রেডিট কার্ডে বাঁচি এই জল বা ক্যান্ডি বা ওষুধ খেলে আর দেখতে হবে না। আর ঝামেলাতে পড়লে ঐ সব ডেট ফেট দেখার কথা কি আর মনে থাকবে কারোর? প্রায় সব্বার কিউবে এই চীজ রাখা আছে, কেউ বোধহয় কোনদিন খুলেও দ্যাখেনি।

    হরি হে, তুমিই সত্য! ভূমিকম্পটা হল বলে আজ জোর বাঁচা বেঁচে গেলুম মশাই!!
  • Su | 86.160.15.140 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০২:৩৮491361
  • কিকিরে, আমি ওদের লাইব্রেরীতে যাইনি - মির্চা এলিয়াদ - (বইতে মনে হয় ইউক্লিড)এর কথা এখানে কিছু পড়েছি - । আমাদের ক্রয়ডন লাইব্রেরীতে একটা বিরাট শেলফ শুধু ওনার লেখা বইতে ভরা। রিলিজিয়ান ফিলোসফি এই ধরনের সাবজেক্টে উনি একজন অথরিটি, মারা গেছেন কিন্তু মৈত্রেয়ী দেবী যখন দেখা করতে এসেছিলেন উনি সত্যিকারের সেলিব্রিটি ছিলেন বলা যেতে পারে! সেলিব্রিটি মানে শুধু কথার কথা নয়- এদেশে সেলিব্রিটির মানে টাকাপয়সায়ও বটে!
    ন হন্যতের সেই ভাইব্রেশান টা আমারও ছিলো তাই জন্যেই মির্চার লেখা নাইটস ইন বেঙ্গল ( লা নুই বেঙ্গলির ইংরাজী অনুবাদটা পড়লাম) তোমাকেও পড়াতে পারি- আমার কাছেই আছে গো। বাংলা টা অখাদ্য - পড়োনা। দুটো পড়লে পুরো স্টোরিটা সামনে আসবে- আর তাতে বড্ড মন খারাপ হয়ে যাবে!
    মির্চার কথা তোমাকে আরো বলবো না হয় - তুমিও খুঁজতে পারো চাইলে। মির্চা সত্যি ই অ্যামেজিং -- ভালোবেসে ফেলারই মতো মানুষ!
  • nk | 151.141.84.194 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০২:৩৯491362
  • ঈশ, নতুন অবস্থায় এই কিট খুলে দেখলে তো ক্যান্ডি আর জলের বোতলটা তবু কাজে লাগানো যেতো। :-)
  • Su | 86.160.15.140 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০২:৪৬491363
  • http://en.wikipedia.org/wiki/Mircea_Eliade
    উইকি তে দেখো আগে
    মৈত্রেয়ী দেবীর বাবার কথা লেখা আছে দেখো --
  • Su | 86.160.15.140 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০২:৫০491364
  • হাত দোলানো বেড়ালটা কিসের সিম্বল বলো তো? দোকানে দেখি ঠিক আছে এমনি মাথার সামনে চব্বিশ ঘন্টা দোদুল্যমান বেড়াল দেখতে হলে আমার মাথা নিগঘাত খারাপ হয়ে যাবে।
  • nk | 151.141.84.194 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০২:৫১491365
  • মৈত্রেয়ী দেবীর "ন হন্যতে" প্রথম সেই সেভেনে টেভেনে থাকতে পড়ে যতো ভালো লেগেছিলো পরে আবার বড়ো হয়ে পড়ে মনে হয়েছিলো ন্যাকাচরণ চতুর্বেদী! অতিরিক্ত রকমের আহ্লাদীপণা টাইপের দেখে দেখে মাথায় ডান্ডা মারার ইচ্ছে হতো। আসলে সময় বদলে গেছিলো, কাব্যি করার ফ্যাশনের যুগ থেকে যন্ত্রপাতি আর আঁক কাষার ফ্যাশনের যুগ এসে গেছিলো।
    তবে এতকাল পরে নির্মোহ ভাবে পড়ে মনে হয় ন হন্যতে শৈল্পিক ভাবে লেখা, সেই হিসাবে ভালো, কিন্তু ললিতলবঙ্গ টাইপ মেয়েদের জীবন বেশী করে দেখানো, শান্তি বিমলা শ্রী জয়ন্তী সত্যবতী দের সেখানে পাই না। কথায় কথায় কেঁদে পড়া টাইপ ছিচ্‌কাদুনি র গল্প, দরকার হলে খাড়া হাতে ঐ অসুর বাপের পাপ ঘুচিয়ে দেবার মতন চন্ডী সেখানে কই? মা চরিত্রটিও তো স্বামীর ন্যায় অন্যায় সবই মেনে নেন ভিজা ভিজা টাইপ, কোনো তেজ নেই। অবধারিতভাবে তাই যা হবার তা হয়।
    লা নুই বেঙ্গলি পড়লাম অনুবাদে, সেখানে বরং একজন পশ্চিমা আগন্তুক কিভাবে আমাদের পুবের দেশকে দেখেছে আর নিজেকে কিভাবে দেখেছে সেখানে, তার প্রত্যাশা কীরকম ছিলো, তার জীবনসংগ্রাম কীরকম ছিলো সেটার ন্যাকামিবর্জিত বেশ চাঁছাছোলা কাহিনি পাওয়া যায়। সেই নায়কের সঙ্গে বরং আইডেন্টিফাই করা যায় অনেক সহজে।
  • Su | 86.160.15.140 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০২:৫৫491366
  • আমার আরো খারাপ কথা মনে হয়েছিলো এট্টুস রিসার্চ করার পর, মৈত্রেয়ী দেবী যতোটা দেবী দেবী হিসেবে বইটা লিখেছেন ঠিক ততোখানি উনি হয়তো নন! এবং পরে আমি একটা আর্টিকলে এমনি ই দেখেছিলাম- এখানে বললে লোকজন পেটানি দেবে তাই বলছিনা- লিং টা পেলে দিচ্ছি
  • Sankha | 71.187.131.156 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০৪:০৭491368
  • nk,
    হ্যাঁ, সে আর বলতে :-))

    এইবারে ফায়ার ড্রিলের মোচ্ছব হলে ফায়ার ওয়ার্ডেনকে সবার আগে একটা নতুন কিট দিতে বলবো। আর পেলেই...
    না:, অণ্না শুনলে কান মুলে দেবেন। :-((

    Su,
    বেড়ালটার নাম 'মানেকি নেকো'। কি সব ধন-দৌলত-সৌভাগ্য ডেকে ডেকে আনে। ভালোই। পেছনের আইলে রেখেছে, ২% পুণ্যের ভাগও কি পাবো না?
  • kk | 67.187.82.132 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০৪:৪০491369
  • শংখ,
    অনেকদিন থেকেই বলবো ভেবেও বলা হয়নি, আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে। এইবেলা জানিয়ে গেলাম।

    নিনা দি'র লেখাটাও ভালো লাগলো।
  • pi | 128.231.22.133 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০৪:৪৩491371
  • সুদি, ঐ আর্টিকলটা পড়ে তো আমার উল্টো কথা মনে হল ! ও তো বরং মৈত্রেয়ী 'দেবী'র ঝোল টেনেই লেখা এবং লেখক মির্চা থেকে শুরু করে মানুষ মির্চার রীতিমতন নিন্দা মন্দে ভরা।

    আর এখানে মৈত্রেয়ীদেবীকে নিয়ে কিছু বল্লে লোকে পেটানি ই বা দেবে ক্যানো ?

    শঙ্খবাবুর ভূকম্পনকথা পড়ে বেশ আমোদ পেলাম :)
  • Nina | 68.45.76.170 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০৬:৪৮491372
  • আরে ক্যায়া বাৎ! শঙ্খর লেখার আম্মো বড় পাংখা--শঙ্খকে এখানে পেয়ে দিল বাগ বাগ হয়ে গেল।
    শঙ্খ, ভাটপাড়ায় মিস করেছি তোমায়---খুব ভাল লাগছে --অনেক অনেক লেখ।

    হে হে মৈত্রেয়ী মির্চা প্রেম , সেই সময়কার নিকষিত হেম, কামগন্ধ নাহিতায় যুগে ----বেশ সাহসী।
    নিশি, মৈত্রেয়ী বেশ সাহস করে ন্যাকামির আড়ালে দিব্য সাহসী-প্রেমই করেছে। করেছে বেশ করেছে :-))

    কলি, তুমিও দুকলম লেখনা---ভূমি কি শুধু এক কারণেই কাঁপে--যে কোনও কাম্পনই আসুক না তোমার কলমে----
  • Lama | 117.194.244.10 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০৭:১২491373
  • আরে সাহেব যে! মোগাম্বো খুশ হুয়া
  • Jhiki | 182.253.0.98 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০৭:২৫491374
  • বেড়ালটা ফেং-সুই বেড়াল। ওটা বাড়ীর সদর দরজার দিকে মুখ করে বসাতে হয়, হাতটা বাইরের দিক থেকে ভেতরের দিকে দোলে, মানে হল টাকাপয়সা সব বাইরে থেকে ভেতরে এসো। এটা আমার শোনা কথা। যে শুনিয়েছিল তার বাড়ীতে সেই বেড়াল ছিল...... বেচারা বৌ এর চাপে পড়ে কিনতে বাধ্য হয়েছিল, আমাকে বলেছিল ঐ বেড়ালটা আসার পর থেকে টাকাপয়সা বাড়ী আসা তো দুরের কথা, খালি বেরিয়েয়েই যাচ্ছে!
  • kiki | 59.93.203.141 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ০৯:৪৩491375
  • তিতির,
    চাপ ফুরোলে আবার লিখো। ভারী মিঠি তোমার লেখা।

    সাহেবশঙ্খ,
    থেঙ্কু।

    সু,
    থেঙ্কু, পড়বো।আসলে বয়সের সাথে সাথে ভাবনাগুলো পাল্টায়, আমি তাই কিছুতেই আর একবার ন হন্যতে পড়িনা, যদি ভালোলাগাটা চলে যায়,তাই।আর এখন কেমন মনে হয় আর ঘটনা গুলো ইম্পর্টান্ট নয়,তার থেকে হওয়া অনুভুতি গুলো বেশী ইম্পর্টান্ট।পেগলে যাচ্ছি বোধায়।:P
  • Nina | 68.45.76.170 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ১৪:৫৬491376
  • তিতির,
    চাপের চোটে ও তো থরহরি কম্প হয় --- তাই শুনব আমরা :-))
  • Netai | 121.241.98.225 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ২০:২৯491377
  • জিএম জিএম নামটা নিকনেম। আসল নাম কি ছিল এদ্দিনে ভুলে গেছি। খুব রোগা পাতলা হওয়ার কারনে র‌্যাগিং পিরিওডে এক দাদার মনে হয়েছিল এই ছেলে চিতায় ওঠবার জন্য রেডি। একদম ঘাটের মড়া। ব্যাস। নিকনেম পড়ে গেলো ঘাটের মড়া। সংক্ষেপে জি.এম। ঘাটের মড়া নামটা চলেনি বেশী। জিএম নামটাই রয়ে গেছিল। ফাইনাল ইয়ারে উঠলে আমারা আমাদের জন্য বরাদ্দ্য তিন নম্বর হোস্টেলে এলাম। মরশুমের শুরুতে যেমন হয়, সবাই খুব মস্তি করতো। হোস্টেলের কোনায় কোনায় উঁকি মারলে দেখা যেতো হয় ছেলেপিলে জটলা পাকিয়ে হয় গ্যাঁজ মারছে নইলে তাস খেলছে। তখন তাস খেলার খুব চল উঠেছিল।

    এরপরে সেমিস্টার ঘাড়ের উপর চলে এলে জনতা পড়াশোনায় মন দিল। কিন্তু জিএম ভুলতে পারলোনা তাসের কথা। তার নাকি পরাণডা কেমন আইঢাই করতো অকশন ব্রিজ খেলার জন্য। একটু পড়েই উঠে পড়তো বই খাতা ফেলে তাস হাতে লোক ধরতে। দরজায় দরজায় উঁকি মেরে জিগ্গেস করতো- 'এই, তাস খেলবি?'
    -'#$ড়া, একটু ঘষতেও দিবিনা? এখনো তাস খেলে বেড়ালে ফেল করে যাবো।'
    -'বেশী খেলবোনা। একটুখানি। পাঁচ দান। পাঁচদান হলেই খেলা যদি না বন্ধো করি তাহলে আমার নামে কুত্তা পুষিশ। আমাকেও তো পড়তে হবে। পাস করতে হবে।'
    এরকম আরো কত অনুনয় বিনয়। বলাই বাহুল্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই প্রচেষ্টা ব্যার্থ্য হত। গুটি গুটি পায়ে জিএম তখন চলে যেত অন্য রুমে। নতুন শিকারের সন্ধানে। আমিও ফেঁসেছি বেশ কয়েকবার। জিএমের জন্যে অকশন ব্রিজের নাম বদলে 'পাঁচ দান' রাখা হয়েছিল।

    সেম শেষ হয়ে যেতেই পাবলিক আবার মস্তির মুডে ফিরে এলো। নতুন সেম এ পড়ার চাপ নাই শুরুতে। এরকমি এক রাতে, ১২ টা কি ১ টা বাজে তাও জনতার চোখে ঘুম নাই। সবাই গুলোগুলি করছে। আমারাও আবার তাস খেলতে বসে গেছি। দোতালা ফ্রন্টে কোনার রুমে। আমি আর জিএম পার্টনার। বিপরীতে ঢালি আর পানু। এচাড়াও কয়েজন আছে দর্শকের ভুমিকায়। টানটান উত্তেজনা। খুব মন দিয়ে তাস সাজাচ্ছি। একটু দেখেশুনে না খেললে গেম রাফ খেয়ে যাবো। হটাৎ দেখি চেয়ারটা ধরে কেউ টান মারলো। পিছনের দিকে ঘুরে ডামাকে বললাম -'চেয়ার ধরে টানছিস কেন?' পানু নীচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো -'আরে, খাটটা নারছে কেন'। ব্যাস। আর কাউকে কিছু বলতে হয়নি। দুলুনি আরো বেড়ে গেছে। সবাই বুঝে গেছে কি হচ্ছে। সবার আগে ঢালি দেখলাম চোঁ করে বেরিয়ে গেলো। আমিও দৌড় লাগিয়েছি পিছু পিছু। সিড়ি দিয়ে নামতে গেলে অনেকটা ঘুরে আসতে হত। রাজু ঢালি ঘুরপথে না গিয়ে শর্টকার্ট মারলো। একটু বিপদজনক পথ। রেলিংটা টপকে একতলার শেডে দাঁড়ানো। ওখান থেকে লাফিয়ে মাঝের খোলা জমিতে। তারপর কোনাকুনি দৌড়ে আরেকটা রেলিং টপকে বিল্ডিং চত্বরের বাইঅরে। আমরাও একই পথ নিয়েছি। তিন্টে লাফ আর এক্টু দৌড়। শেষ রেলিং টপকানো আগে পিছনে তাকিয়ে দেখি আরো লোকজন ধুপধুপ করে জমিতে পড়ছে। দেখতে দেখতে দেখতে পুরো হোস্টেলই বেরিয়ে এলো বাইরে। চারদিকে ফাঁকা জমি। একদিকে চা বাগান। গভীর রাতের মায়াবী চাঁদের আলো। আর তার মাঝে এক হোস্টেল ছেলের জটলা।

    জটলার মধ্যে থেকে জিএম আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললো -গিয়ে আবার খেলতে বসবো কিন্তু। হাত বার করে দেখালো -'এই দ্যাখ, আমার তাসটা আমি সাথে নিয়ে এসেছি। তোর তাসটা কোথায়?'
  • Sankha | 198.45.18.95 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ২০:৪৪491378
  • kk,
    এইতো বললেন। এই অনেক। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!

    pi,
    :-))

    নিনাদি,
    চেনাজানা লোকজনদের দেখে বেশ স্বস্তি পাচ্ছি।

    লামাস্যার,
    :-)) কেমন আছেন?

    কিকিদি,
    রু-মির্চা, আমারও ক্লাস এইট তখন। প্রচন্ড ভালো লেগেছিলো। ওফ, সেই নির্জন দুপুরে রু এর অভিসার, মির্চার অস্ফুট গডেস, গডেস, কি দিনই না গেছে।

    এখন আর নতুন করে আশাভঙ্গের কিছু নেই। বরং এই যে অন্যদিকটাও জানতে পারলুম, মৈত্রেয়ী দেবীর বিবরণ টাই যে সব না, সেটা পড়ে ভালোই তো লাগলো।

    পেটানির কি আছে, মৈত্রেয়ী দেবী তো আর বেঁচে নেই :-))
    অবশ্য শনিবারের বারবেলা লফটের ভেতর থেকে কেউ যদি বলে 'এঁই লিঁংক দিঁলি কেঁন?' তাহলে জানিনা।
  • Lama | 117.194.238.49 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ২০:৫০491379
  • নেতাই :)

    এটা আমাদের এক সিনিয়ারের কাছে শোনা-

    এক দাদা (ধরা যাক তার নাম বগাদা) মাঝরাতে হোস্টেলশুদ্ধু ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে তুলছে আর বলছে "গঙ্গায় বান আসছে, সব্বাই নিচে চল'। পাঁচতলা থেকে এইরকম সবাইকে ঘুম থেকে তুলতে তুলতে আর ডাকতে ডাকতে একতলায় নামিয়েছে। একতলায় বেশ একটা জটলা তৈরি হয়েছে।

    একজন জিজ্ঞাসা করল "বগাদা, বান এসেছে, তো আমরা নিচে এলাম কেন? পাঁচতলায় উঠে যাওয়া উচিত ছিল না কি?'

    বগাদা বলল "তাই তো, ভূমিকম্পের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছিলাম।'
  • pi | 72.83.92.218 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ২০:৫২491380
  • :))

    নেত্য, এবার পেন্ডিং লেখাটাও শেষ করে ফ্যাল :)
  • Netai | 182.64.71.29 | ২৬ আগস্ট ২০১১ ২২:১৬491382
  • পাইদি, এইতো, নেট প্র্যাকটিশ চলছে।
    শঙ্খবাবুর গল্পটা সুন্দর। বগাদাও বেশ :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন