এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ছত্তিশগড়ের আঁকিবুকি

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০৪ জানুয়ারি ২০১২ | ৮৮৬৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 14.97.181.109 | ০৪ জানুয়ারি ২০১২ ০০:৩৯527444
  • ( ইচ্ছে ছিল ছত্তিশগড়ের গ্রামীণ জীবনের চালচিত্র আঁকার। আদিবাসী জীবন, আধা শহুরে জীবন, পূজোপার্ব্বণ, চাষবাস, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ, ভালবাসা-ঘৃণা সব মিলিয়ে এক প্রদর্শনী। ওদের পুলিশ, মালগুজার বা জোতদার, নেতা , মন্ত্রী, শিক্ষক, লোকশিল্পী সবাইকে জায়গা দিতে চাই। কিছু বেরিয়েছিল বাংলালাইভে, আজ হারিয়ে গেছে। তাই নতুন করে লিখতে, থুড়ি আঁকতে হবে। আর সবটাই দেখা হবে গঙ্গারাম ( আসলে ভ্যাবাগঙ্গারাম) নামের ব্যাংক অফিসারের চোখ দিয়ে, তার অসম্পূর্ণতা শুদ্ধু। কিছু নামধাম পাল্টে দেব। ওদের মিঠে ভাষা কোথায় যেন বাংলা ভাষাকে মনে করায়। ধরুন ভাত খাবো, ঘর যাবো, এইরকম। এ রাজ্যে ৪২ বছর কাটিয়ে আবার কোলকাতায় ফেরার আগে এটা আমার ভালবাসার অর্ঘ্য মাত্র।)

    -----------
  • ranjan roy | 14.97.181.109 | ০৪ জানুয়ারি ২০১২ ০১:৪৯527486
  • প্রথম অধ্যায়:
    "" কেউ কিছু দেখেনি""
    ---------------------
    (১)
    কাঠঘোরা থানার থানেদার বা স্টেশন অফিসার অজয় ডোঙ্গরের মেজাজটা সকাল থেকেই খিঁচড়ে আছে। আজ ছাব্বিশে জানুয়ারি, রিপাব্লিক ডে, সরকারি হিন্দিতে গণতন্ত্র দিবস। সকাল আটটা নাগাদ থানায় ঝান্ডাতুলে জিলিপি-সামোসা পেঁদিয়ে খাতায় রওয়ানগি লিখে ছুরি গাঁয়ে গিয়ে ওখানের স্কুলের
    বিচিত্রানুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির ভূমিকাটি উতরে দিয়ে ক্রিকেট ম্যাচ খেলার কথা, তা না-- এক উটকো আপদ জুটেছে। ছুরি গাঁয়েতেই কাল একটা খুন হয়েছে।
    থানেদারের কি দোষ! মাত্র গত বছর পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছে। কয়েক মাস শিক্ষানবিশীর পর প্রত্যন্ত এলাকায় একটা থানায় কিছুদিন ছোটবাবু, তারপর এই কোরবা জেলার আদিবাসী ব্লকে তহসীল বা মহকুমা স্তরের থানায় পুরোদস্তুর দায়িত্ব। এখানে পয়সা আছে। কাছেই কয়লা পাওয়া গেছে। ওপেন কাস্ট মাইনিং শুরু হচ্ছে। আর মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে গোপালপুরে বারুদ ফ্যাক্টরি-- নাইট্রোগ্লিসারিন তৈরি হয়। সেখানে আবার এন টি পি সি'র থার্মাল পাওয়ার স্টেশনের স্টাফেদের জন্যে কোয়ার্টার তৈরি হবে, সার্ভে চলছে।
    এইসব কর্মকান্ডের একটাই মানে। সমানে বাইরের লোক আসবে। বিশেষ করে বিহার বর্ডার থেকে। অন্তররাজ্য ক্রিমিনাল গ্যাং গুলো আস্তানা গাড়বে। সংগঠিত অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তার সংগে পাল্লা দিয়ে বাড়বে থানেদারের কামাই। বছর- তিন পরে নীলামে এই থানার রেট বাড়বে। তখন অন্য কেউ বেশি দাম দিয়ে এই থানায় পোস্টিং পাবে, অজয়কে যেতে হবে আরো পিছিয়ে পড়া কোন থানায়। সে যখন হবে, তখন হবে। আপাতত: তিন বছর কিছু তো কামিয়ে নেয়া যাবে।
    ঘটনাচক্রে ছুরির গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজার ওর চেনা বেরিয়েছে, একসঙ্গে কলেজে পড়ত, বিয়েশাদি হয় নি। ওর জন্যেই আজ স্কুলের ছাত্র বনাম সরকারি কর্মচারির প্রীতিম্যাচে ওকে অনুরোধ করা হয়েছে উইকেট কীপিং করার জন্যে। ব্যাংক ম্যানেজার গঙ্গারাম জানিয়েছে ও দুর্গ গরমেন্ট কলেজের হয়ে
    টুর্নামেন্টে নিয়মিত কীপিং করত। ম্যাচের পরে গঙ্গারামের স্টাফ মেসে স্ট্যাগ পার্টি- দেশি মুর্গার রোস্ট ইত্যাদি।
    কাল বিকেলে একটু প্র্যাকটিস ও করেছিল। শরীরের আড় ভাঙছিল। কিন্তু সকালে মোটর সাইকেল করে গঙ্গারাম হাজির।
    -- যা তা ব্যাপার! আমি কাল বিলাসপুরের হেড অফিসের মিটিং সেরে অনেক রাত্তিরে ফিরেছি। সক্কালে ব্যাংকের চাপরাশি জানাল যে গতকাল সন্ধ্যেয় কে বা কারা সুদখোর আজিজ পলোয়ানকে বীভৎস ভাবে
    খুন করেছে। কে করেছে কেউ নাকি জানে না। সবার মুখে কুলুপ আঁটা। সারপঞ্চের সঙ্গে কথা বলে জানলাম যে সন্দেহের বশে লুচুকদাসকে ধরে এনে বেওয়ারিশ গরুমোষকে রাখার ঘর বা কাঞ্জি হাউসে বেঁধে রাখা হয়েছে, আপনি বল্লে কোতোয়ালের দল এখানে ওকে হাজির করবে।
    কলেজের বন্ধু হলেও গঙ্গারাম অজয় ডোঙ্গরেকে আপনি করেই বলে। ডোঙ্গরে মানে জাতে হরিজন, কোন কথায় ইগো হার্ট হবে কে বলতে পারে! থানেদার বলে কথা।
    ওরা দুজন থানার আঙিনায় মিঠে রোদ্দূরে চেয়ারে বসে কাঁচের গ্লাসে গরম চা খাচ্ছে এমন সময় তিন কোতোয়াল হাজির। তিনটেরই পরণে রেলের খালাসীদের মত নেভি ব্লু হাফ প্যান্ট, আর শার্ট; তবে কোমরে চওড়া বকলেস লাগানো বেল্ট, আর মাথায় একই রঙের টুপি।
    তিন জনে এসে সার বেঁধে দাঁড়ায়, স্যালুট মারে, ঠিক যেন কোন কমিক স্ট্রিপের ক্যারেক্টার।
    -- কি ব্যাপার? তিনমূর্তি একসাথে?
    -- হুজৌর! রিপোর্ট করনা হ্যায়, খুন!
    -- তো তিনজনে কেন এসেছো? তোমাদের তো বডির পাশে থাকার কথা?
    -- সরকার! আসামীকো লানা থা, বহুত খতরনাক আসামী, খুনী! ইসীলিয়ে--।
    -- কোথায় সেই খতরনাক আসামী?
    তিনমূর্তি মাথা চুলকোয়।
    বয়স্কটি কিন্তু-কিন্তু করে বলে -- ও হুজুর পরের বাসে আসছে, আমার ছেলেটা সঙ্গে আছে।
    গঙ্গারামের মুখ হাসি চাপার অসম্ভব কষ্টে বেগুনি হয়ে যায়। কিন্তু থানেদারের চেহারা হিংস্র হয়ে ওঠে।
    -- মেরে সাথ মজাক? চুতিয়াপনার জায়গা পাস নি? সবকটার পাছায় হান্টার লাগালে তব্র এদের ট্রেনিং পুরো হবে। যদি আসামী পালিয়েছে তো তোদের দিন খুব খারাপ যাবে, দেখে নিস্‌।
    ইতিমধ্যে পরের বাস এসে গেছে। বুড়ো কোতোয়ারের ছেলের সঙ্গে নেমেছে কোমরে দড়ি বাঁধা কথিত আসামী লুচুকদাস।
    অজয় একপলক তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেন। ন্যালা ক্যাবলা আধপাগলা গোছের একটা লোক। উস্কোখুস্কো চুল, শার্টের হাতাটা ছেঁড়া। চোখের কোণে পিঁচুটি, হলদেটে দাঁত, মুখ থেকে বাসি মদের টোকো গন্ধ, আর নিম্নাংগের পাজামাটা অনেক পুরোনো,পায়ের কাছে ফাঁসা। এ মেরেছে আজিজ পালোয়ানকে? কি করে?
    জিগ্যেস করতেই হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে লুচুকদাস। ও কিচ্ছুটি জানে না। কাল ছিল শঙ্করজীর দিন। ও গাঁজায় দম একটু বেশি চড়িয়ে মন্দিরেই ভোম হয়ে সারারাত্তির কাটিয়েছে।
    অজয় দুই ধমক দিয়ে মুন্সীকে বলেন খাতায় এϾট্র করে ব্যাটাকে লক আপে ভরতে। ডাক্তারকে খবর করা হয়, সঙ্গে গিয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা করে বডি অ্যাম্বুলেন্সে করে কাঠঘোরা মর্গে নিয়ে আসার জন্যে, কাল পোস্ট মর্টেম করতে হবে। আজ হবে না। কারণ ডোম সুখিয়া গণতন্ত্র দিবসের ছুটিতে মাতাল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
  • aishik | 122.181.132.130 | ০৪ জানুয়ারি ২০১২ ০৯:৪৪527497
  • আপনি লিখুন... আশায় থাকলুম...
  • ad | 223.223.132.232 | ০৪ জানুয়ারি ২০১২ ১০:৫২527508
  • Fastokelash! Choluk, Choluk
  • ranjan roy | 115.118.144.16 | ০৫ জানুয়ারি ২০১২ ০০:২২527519
  • (২)
    পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট এসে গেছে। রিপোর্ট পড়ে থানেদার ডোঙ্গরে'র চক্ষু চড়কগাছ। মৃতদেহের শরীরে অন্তত: ২৯ টি ছোট বড় আঘাতের চিহ্ন। কিছু ধারালো অস্ত্রের ঘা', কিছু ভোঁতা ভারী জিনিসের আঘাত, আর ডাক্তার মিশ্র বল্লেন-- এই ১১টা চোট দেখুন! একটাও ফ্যাটাল নয়। ব্লেড বা ছুরি অথবা অমনি কিছু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পুচিয়ে পুচিয়ে কাটা হয়েছে। মনে হয় আজিজ পালোয়ানের ওপর হত্যাকারীদের খুব রাগ ছিল; অনেকক্ষণ ধরে যন্ত্রণা দিয়ে মেরেছে।
    -- হত্যাকারীরা? একাধিক লোক বলছেন?
    --- হ্যাঁ, কোন একজনের পক্ষে আলাদা আলাদা হাতিয়ার দিয়ে এতক্ষণ ধরে আজিজকে যন্ত্রনা দেয়া?--ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। একাধিক লোক, আজিজকে বাগে পেয়েছিল।
    -- মানে, কোথাও বেঁধে রেখে টর্চার করেছে?
    -- তাই মনে হয়।দুটো হাত ও পায়ে গোয়ালঘরের দড়ি দিয়ে বাঁধার দাগ আছে। আর কোন রেজিস্ট্যান্সের চিহ্ন নেই।
    -- বডি পাওয়া গেছে গাঁয়ের প্রান্তে গরুমোষ ধোয়ানোর পুকুরপাড়ে, পাকুড় গাছের তলায় ফেলে রাখাছিল।
    এবার ব্যাংক ম্যানেজার গঙ্গারাম বলেন-- পুকুরপাড়ে পাকুড় গাছের তলার জমিটা? ওটা কার?
    -- ওতে কি বোঝা যাবে? ওটা সরকারি জমিন। পঞ্চায়েতের রক্ষণাবেক্ষণে আছে। তবে আশেপাশে রক্তের দাগ নেই। জমিতে কোন ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। তার মানে হল-
    -- খুনটা অন্য কোথাও করে এখানে বডি ফেলা হয়েছে। কিন্তু কে বা কারা আজিজকে এমন নৃশংস ভাবে মারল? কেন মারল? ম্যানেজার কিছু বল। আরে সায়েব তুমি তো এখানে বছরখানেক ধরে আছে। গাঁয়ে কার কার সঙ্গে ওর দুশমনি ছিল।
    ডাক্তার মিশ্র হেসে ফেলেন।
    -- কার সঙ্গে ছিল না সেটা জিগ্যেস করুন। কি হে ম্যানেজার সাহেব? সেই ছড়াটা শোনাবে নাকি? আরে লজ্জা কিসের? শুনিয়ে দাও। হতে পারে ওই ছড়াটা থেকেই আমাদের থানেদার সাহেব কোন ক্লু পেয়ে যাবেন?
    অজয় ডোঙ্গরে স্পষ্টত: বিরক্ত। ম্যানেজার আর উনি ঘন্টা দুই হল মহকুমা হাসপাতালে এসেছেন পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট নিতে আর ডাক্তারের মতামত শুনতে। রিপোর্টে ইশারা একাধিক খুনীর, অথচ গাঁয়ে কেউ কিছু জানে না। মনে হচ্ছে লুচুকদাসকে ছেড়ে দিতে হবে। ও শালা পাঁড় মাতাল আর নিঠল্লা
    আদমী। রহস্য ঘনীভূত। কাল কোরবার অ্যাডিশনাল এসপি শ্যাম সায়েবের কাছে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। উনি আবার মহা হাঁউ-মাঁউ-খাঁউ, পয়সার গন্ধ পাঁউ। আর এই ডাক্তার বয়সে বড় বলে এয়ারকি দিচ্ছে! ছড়া শোনাবে?
    -- নারাজ মত হো থানেদার সাহাব। অংরেজি সাহিত্য মেঁ এক জাসুসী লেখিকা থী, আগাথা ক্রিস্টি। উনকী সারী কহানী মেঁ সূত্র কে রূপ মেঁ এক রাইম ইয়ানে তুকবন্দী শুনায়া যাতা থা। আপ ভী শুন লো!
    শুরু হো জাও ম্যানেজার!
    ভ্যাবা- গঙ্গারাম ম্যানেজার নিরুত্তাপ ভঙ্গীতে শুরু করে:
    "" সাহস কা লন্দফন্দ, যোশী কে সলাহ্‌ , অউর আজিজ কী গবাহী,
    এ তিনোমেঁ রহবে তো ঝাঁট চাট জাহি।''

    (সাহসরামের পাতা ফাঁদ, তায় যোশীজির পরামর্শ,
    আর আজিজ সাক্ষী?- বাপ!
    এমন ত্র্যহস্পর্শের ফেরে পড়েছিস্‌?
    ---ঝাঁট চেটেপুটে সাফ্‌''। )

    -- সাহসরাম? যোশীজি? এরা কারা?
    -- সবই জানবেন, ক্রমশ: প্রকাশ্য। সহসরাম হল ব্যাংকের মকানমালিক। অতি সাধারণ অবস্থা থেকে নিজের বুদ্ধি আর সাহসের জোরে গাঁয়ের প্রচুর জমির মালিক হয়েছে। আসলে অংগুঠা ছাপ। কিন্তু শুরুতে ছুরি গাঁয়ের জমিদার বাড়ির লাঠিয়াল এই আদিবাসী মানুষটি মুখে মুখে বলে দিতে পারে এত ফিট রাস্তা বা এত উঁচু ইঁটের দেয়াল বানাতে কত ইঁট, কত গরুর গাড়ি বালি আর কত ব্যাগ সিমেন্ট লাগবে। কম তথা নয়।
    -- আর যোশীজি?
    -- যোশী মহারাজ রাজস্থান থেকে আসা মাড়োয়ারি ব্রাহ্মণ; সব মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীদের পুরুত। বুড়ো শকুনের মত দেখতে। কিন্তু বিষয়বুদ্ধিতে প্রখর। রেভিনিউয়ের সব আইনকানুন , মায় অধুনা পাস হওয়া সংশোধনী,- সব খবর রাখে। পাটোয়ারি, রেভিনিউ ইনে্‌স্‌পক্টর সবাইকে খুশি করতে পারে। সরকারি জমিন কেমন করে অবৈধ কব্জা করে নামমাত্র ফাইন দিয়ে নিজের করে নেয়া যায় তা ও তহশীলদারকে শেখাতে পারে।
    -- বাকি রইলো আজিজ পালোয়ান। ওর সম্বন্ধে আমার থানায় ফাইল আছে। লোককে ধমকানো, মারপিট, চোলাই মদের ধান্ধা আর গুন্ডাগর্দি, রংদারি ট্যাক্স ইত্যাদি। সব সময় জামিন পেয়েছে। আর কোর্টে কিছু প্রমাণ করা যায় নি, তাই খোলা ষাঁড়ের মত ঘুরে বেড়ায়, বহাল তবিয়তে।
    -- ফাইল্টা যদি মন দিয়ে পড়ে থাকেন তবে এও হয়তো আপনার চোখে পড়েছে যে অধিকাংশ সময় ওর জামিন হয়েছে হয় সহসরাম তঁয়র নয়তো মঙ্গতরাম যোশী।
    -- হুম্‌!
    -- আসলে ওই ত্র্যহস্পর্শযোগ, বল্লাম না! তিনব্যাটার সাঁটগাঁট! প্রথম জাঅলটা ফেলবে সহসরাম, তারপর ফাঁস গলায় এঁটে বসলে গেঁয়ো চাষী দৌড়ে যবে যোশীমাহারাজের কাছে শলাপরামর্শ নিতে। ওনার মনোহারী পরামর্শে ফাঅঁসটা আরো ভাঅলো করে গলায় আটকাবে। শেষে কোর্টে গেলে তহসীলদারের সামনে আজিজের শপথ নিয়ে মিথ্যে সাক্ষ্য বা গবাহী দেয়া। ফলম্‌ -ভিটেমাটি চাটি হয়ে যাওয়া। এই তিন শয়তানের দাঁও-প্যাঁচে কতজন যে পথে বসেছে। আর এরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে সম্পত্তি বাড়িয়ে গেছে। এই লোকোক্তিটি হাসির নয়, অনেক লোকের হাহাকারের শ্বাস।
    -- ওসব সেন্টিমেন্ট ছেড়ে আপনারা বলুন তো --যখন আজিজ এমন ভাবে মারা গেলো , তখন বাকি দুই মাস্কেটিয়ার্স কি করছিলো বা কোথায় ছিলো?
    -- এটা আমি বলতে পারবো না। আমিতো সদরে থাকি। গঙ্গরাম সাহেব জানলে বলুক। ও তো ছুরি গাঁয়েই থাকে।
    -- হ্যাঁ, প্রশ্নটা আমার মনেও এসেছিল। খোঁজ নিয়ে জানলাম যে ওই দিন ওঁরা দুজনেই গাঁয়ে ছিলেন না। যোশীমহারাজ চাঁপা নগরে ওনার যজমানের ছেলের পৈতের শুভকর্ম সম্পন্ন করতে দুদিন আগেই চলে গিয়েছিলেন। আর সহসরাম ওর শ্বশুরবাড়ি পেন্ড্রায় গিয়েছিল।

  • aranya | 144.160.226.53 | ০৫ জানুয়ারি ২০১২ ০২:৪৭527530
  • রঞ্জন-দা, আপনার তুলনা আপনি। জাস্ট টু গুড হচ্ছে। লিখতে থাকুন।
  • Nina | 69.141.168.183 | ০৫ জানুয়ারি ২০১২ ১০:১২527541
  • অরণ্যকে ক !
    রঞ্জনভাউ---জমে উঠেছে
  • siki | 123.242.248.130 | ০৫ জানুয়ারি ২০১২ ১০:২৪527552
  • বড্ড কম ল্যাখে।
  • bb | 117.195.167.8 | ০৫ জানুয়ারি ২০১২ ১৭:০৫527563
  • এই সব লোকগুলিকে আরও আগে স্বেচ্ছাসর দিয়ে দিলে বাংলা সাহিত্যের উপকার হত।
  • Sumit Roy | 68.192.185.249 | ০৫ জানুয়ারি ২০১২ ১৯:০২527445
  • রঞ্জন রায় "কথার পাকে নিত্য আমায় বেঁধে রাখে"!
  • ranjan roy | 14.97.128.54 | ০৯ জানুয়ারি ২০১২ ০১:২৭527456
  • ৩)
    একসময় ইংরেজ রাজত্বে ছত্তিশগড় সিপি অ্যান্ড বেরার স্টেটের মধ্যে বিদর্ভ (বেরার) রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। তখন ওর রাজধানী ছিল নাগপুর। সেখানে কমিশনার বসে সুদূর ছত্তিশগড়ে শাসন চালাতেন। ওনার লেখা একটি বইয়ে ছুরি গাঁয়ের ও সেখানের করদাতা রাজাদের কথা আছে।
    আবার বিংশ শতাব্দীতে চল্লিশের দশকে বর্গীদের বংশাবতংস মারাঠা রাজবংশীয়দের উদ্যোগে বিলাসপুর থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে প্রাচীন রাজধানী রত্নপুর, বর্তমান রতনপুর, এর কাছে মা তুলজা ভবানী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই প্রতিষ্ঠা করার সময় আয়োজিত বিরাট যজ্ঞের স্মারিকা গ্রন্থে যে আশী জন জমিদার তাতে দাঅন দিইয়েছিলেন তাদের মহিমাকীর্তন করা আছে।আমাদের গল্পের ছুরির রাজপরিবার তাদের অন্যতম।
    কাটঘোরার থানেদার অজয় আজ হাজির হয়েছেন সেই রাজপরিবারের প্রাসাদের আঙ্গিনায়। কারণ এই পরিবারের সেজকুমার উদ্যমেশ্বরশরণ মণিপাল প্রতাপ সিংহ এই গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান সারপাঞ্চ।
    লাল ইঁটের বিশাল প্রাচীরে চুণ সুড়কির পলস্তারা খসে পড়ছে। ওপরে কোট অফ আর্মস এখনো পড়া যায়। ১৮৯০ এর কাছাকাছি কোন বছর লেখা। কিন্তু অজয় চারদিকে চোখ বুলিয়ে পিচ করে পিক ফেলে ব্যাংক ম্যানেজার গঙ্গারামকে ঠেট হিন্দিতে যা বল্লেন তার বাংলা অনুবাদ হল -- নামে তালপুকুর, তায় ঘটি ডোবে না।
    খবর পেয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছেন সেজকুমার, ছত্তিশগড়ি বোলি তে "" সঝলাকুমার''। সাদা টেরিকটের সার্টের বুল্কপকেটের কাছে পানের পিকের লাল দাগ ধোবার হাত ফেরতা হয়েও পুরোপুরি ওঠেনি। এখনো মুখের পান থেকে কথা বলার সময় কিঞ্চিৎ রঙীন ফোয়ারার ছিঁটে ওনার জামার গায়ে লাগছে, কিন্তু সেজকুমার নির্বিকার।
    থানেদার ইতিমধ্যেই জেনেছেন যে এই ব্যক্তিটি একেবারেই আজকের হিসেবে সারপাঞ্চ হওয়ার উপযুক্ত নন। সজ্জন, বন্ধুবৎসল, আমোদপ্রিয় উদ্যমেশ্বরশরণ কুমারসাহেব আসলে ব্যক্তিত্বহীন। তাই সবাইকেই খুশি করতে চান, কাউকেই করতে পারেন না। উপরন্তু চালু লোকেরা , যেমন সাহসরাম বা তার ছেলেরা ওনার মাথায় কাংঠাল ভেঙে খায়। গতবারও মন্দিরের পাশ থেকে পুকুরপাড় অব্দি রাস্তাটা বানানোর ঠিকে ওনাকে পটিয়ে সাহসরাম হাতিয়ে নিয়েছিল, কাজ পুরো হওয়ার আগেই চাপ দিয়ে বিল পাশ করিয়ে নিয়েছিল। কাজ পুরো না হওয়ায় অডিটের পর বাকি টাকাটা সজকুমারকেই ভর্তুকি দিতে হয়েছিল।

    -- আসুন, আসুন! কি সৌভাগ্য, সাহেব নিজে এসেছেন! আবার ম্যানেজার সাহেবও! ভাল হল। আজ দিন ভাল যাবে।
    যথারীতি কাঠের রং ওঠা চেয়ার পেতে সবাইকে ভেতরের বাঅগানে বসানো হল। চা-সিগ্রেট, শেষে মুখশুদ্ধির মশলা সব এল।
    ওঠার আগে অজয় হটাৎ জিগ্যেস করলেন-- কুমার সাহেব! আপনি তো জানতেন যে লুচুকদাস নির্দোষ, তাই না?
  • ranjan roy | 14.97.128.54 | ০৯ জানুয়ারি ২০১২ ০২:০১527467
  • হটাৎ এই অপ্রত্যাশিত বাম্পারে সেজকুমার ধরাশায়ী। ঘাবড়ে গিয়ে তো-তো করতে থাকেন।
    -- না , মানে আমি কি জানি- কে দোষী আর কে নির্দোষ? ওসব তো, মানে আপনি ঠিক করবেন।
    --বেশ কথা। লুচুকদাসকে ধরে বেঁধে কাঞ্জিহাউসে আনা হয়েছিল কার হুকুমে?
    --- না মানে আমারই হুকুমে। কিন্তু--
    -- কিন্তু আবার কি? তাহলে আপনি জানতেন যে ওই খুনী?
    -- না, না! আমি কিছু জানি না। আমি ঘরে বসে রেডিও শুনছিলাম। আসলে আমি এখানকার রেডিও শ্রোতা সংঘের প্রেসিডেন্ট তো। তখন সবাই এসে বললো-- কুমারসাহেব, খুনী ধরা পড়েছে, আপনার আদেশ পেলে চৌকিদার চেতন সিং ওকে আজ কাঞ্জি হাউসে বেঁধে রেখে সারারাত পাহারা দেবে, সকাল থানায় খবর দিয়ে তারপর ওখানে সুপুর্দ করে দেবে। তাই আমি--।
    -- আচ্ছা? তা এই সবাই কারা?
    -- কার কার নাম নেব সাহেব? সবাই মিলে মিশে থাকি, দুশমনী বাড়বে। সবাই বলেছিল।
    -- অন্তত: পাঁচটা নাম বলুন। আর ওদের হিসেবে খুনটা কখন হয়েছিল?
    -- নাম বলতেই হবে স্যার?
    -- ন্যাকামি ছাড়ুন! আর সময়টা?
    -- কর্মনলাল, হরিরাম, মদন গুণাইত, টেলু-মেলু-মহেত্তররাম ভাইয়েরা। অমৃতলাল দেবাংগন। আর সবাই বলল-- রাত বারোটার অনেক পরে। মানে তিনজন তখন লুচুকদাসকে তালাওয়ের পাড় থেকে , মানে যেখানে খুনটা হয়েছিল সেখান থেকে দৌড়ে আসতে দেখেছে।
    -- তা সেই তিনজন অত রাতে ওখানে কি করছিল? আর আপনিই বা সেই রাতে কোথায় ছিলেন?
    -- ওরা তালাওয়ের পাড়ে ছিল না, নিজেদের বাড়ির সামনে ঘুম ভেঙে পেচ্ছাপ করছিল। জানেনই তো, অজ পাড়াগাঁয়ে আপনাদের ভিলাই-রায়পুরের মত ঘরে ঘরে বাথরুম-পায়খানা নেই পুরুষেরা সবাই রাত্তিরে নিজেদের ঘরের বাইরেই রাস্তার ওপর সেরে নেয়।
    -- আর আপনি?
    -- আমি? আমি ঘটনার একসপ্তাহ আগে থেকেই বাইরে চিলাম। মাকে নিয়ে সপরিবারে পুরী বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঘটনার পরের দিন ফিরেছি। স্যার, আমি সবসময় পুলিশের সঙ্গে কো-অপারেট করব, কিন্তু প্লীজ আমার ওই নাম বলার ব্যাপারটা--?
    - সে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।

    ফেরার পথে গঙ্গারাম বলে-- আপনার কি মনে হচ্ছে যে ও সব সত্যি বলছে? ওর পুরী থেকে ফেরার সময়টা একটু ভেরিফাই করলে হয় না, অজয়জী?
    অজয় হাসেন।-- না, না, ওসবের দরকার নেই। ও সত্যি কথাই বলছে, মোটের ওপর।
    চমকে ওঠেন ম্যানেজার।-- আপনি জানলেন কি করে?
    অজয়ের হাসি রহস্যময় হয়ে ওঠে।
    -- আমি জানি, মানে খুনীদের জানি।
    ---সে কি? তাহলে ধরছেন না কেন?
    কেউ সাক্ষী দেবে না। তাই এখন ধরলে সবাই বেকসুর খালাস হবে। তাই একটা কিছু করতে হবে যাতে সাক্ষী পাওয়া যায়।
    গঙ্গারামের হাঁ-মুখ বন্ধ হয় না। তাই দেখে থানেদারি স্টাইলে মুচকি হেসে অজয় বলেন-- চলুন! আজ আপনকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো।
    -- কোথায়?
    -- আরে চলুনই না! বড্ড কথা বলেন। অনেক কাজ হল আজকে। এখন একটু রিল্যাক্স করতে হবে না? আচ্ছা, আপনি কখনো বেশ্যাগমন করেছেন?
    গঙ্গারাম এবার পুরোদস্তুর ভ্যাবাগঙ্গারাম হয়ে যায়।
  • a | 208.240.243.170 | ০৯ জানুয়ারি ২০১২ ০৪:৩৮527478
  • রন্‌জনদা, দারুন হচ্ছে। একটা রিকোয়েস্ট, ছত্তিশগড়ি ভাষা আরেকটু বেশি ইউজ করা যায় না?
  • ranjan roy | 14.97.246.226 | ০৯ জানুয়ারি ২০১২ ০৯:৩১527480
  • অয়ন,
    ঠিক বলেছ, অয়ন। এটা শুধু একটা গল্প হয়ে যাচ্ছে, ছত্তিশগড়ি ফ্লেভারটা ঠিক আসছে না। আজ রাত্তিরে শেষ দুটো পার্ট লিখে গল্পটা শেষ করার সময় খেয়াল রাখবো।
  • Shibanshu | 59.90.221.5 | ০৯ জানুয়ারি ২০১২ ১৬:৫০527481
  • ক্রমে জমে আসিতেছে।
    রঞ্জন এই মূহুর্তে গুরুতে চারটে ফ্রন্টে একসঙ্গে মুকাবলা করিতেছেন।
    ইতর পাঠকসমূহের পক্ষ হইতে আপন স্বার্থে প্রার্থনা,
    জোশ বরকরার রহেঁ হজৌর....

  • ranjan roy | 14.97.244.251 | ০৯ জানুয়ারি ২০১২ ২২:৫০527482
  • ৪)
    কাঠঘোরা বাসস্ট্যান্ডের তেমাথার মোড়। একটা রাস্তা গেছে বিলাসপুর থেকে এসে ২৩ কিলোমিটার দূরে কোরবা থার্মাল পাওয়ার কেন্দ্রের দিকে। আর এর থেকে নব্বই ডিগ্রি কোণ করে আর একটি রাস্তা গেছে বাঙ্গো জলাশয় হয়ে অম্বিকাপুরের দিকে। এই রাস্তা ধরে গোটাকয় খাবারের দোকান, ফলমূল-শাকসব্জির দোকান, ট্রাকের টায়ার সারানোর, চাকায় হাওয়া ভরার দোকান ইত্যাদি ছাড়িয়ে প্রায় দু'শ পা হাঁটলে একটি ছোট চা আর ফুলুরির দোকান, স্থানীয় ভাষায় বলে ভাজিয়া।
    আপনি ছোট থেকে ছোট গাঁয়ে ঘুরে বেড়ান একটি ভাজিয়ার দোকান ঠিকই পাবেন। ছত্তিশগড়ের সম্পন্ন বা গরীব-গুর্বো মানুষ -- সবার সহজ জনপ্রিয় জলখাবার হল ভাজিয়া। সময়ে অসময়ে অতিথ-অভ্যাগত এলে তাদের খাতিরদারি করতে চাই ভাজিয়া।
    ছত্তিশগড়ের লোকজীবনে ভাজিয়ার গুরুত্ব বোঝাতে এই ইতরযানী লোকোক্তিটি যথেষ্ট।
    যেমন, আপনি যা ইচ্ছে করুন , চুলোয় যান, বোঝাতে ছত্তিশগড়ের লোকে বলবে--"" চাহে ভাজিয়া খায়ে,
    চাহে গাঁড় মারায়ে।''
    অথবা দেখুন গ্রামীণ শ্রমজীবি মানুষের মুখে মুখে তৈরি দদরিয়া লোকগীতের জনপ্রিয় এই পংক্তিটি:
    "" চানা কে দার রাজা, চানা কে দার রাণী,
    চানা কে দার গোঁদলী মেঁ কড়কয়থে,
    আরে টুরা রে পর-বুধিয়া, হোটেল মেঁ ভাজিয়া ঝড়কয়থে।।''

    ( ""ছোলা ডালের রাজা, ছোলা ডালের রাণী,
    ডাল আর পেঁয়াজ গরম তেলে নেচে নেচে ওঠে।
    আমার ছেলে বড় হাঁদা, টিকি অন্যের ঘরে বাঁধা,
    চেটে পুটে ভাজিয়া খেতে হোটেলেতে ছোটে।'')

    এখন বেলা বাজে তিনটে; রোদের তাপ গায়ে লাগছে। বাসের সংখ্যা কমেছে। ফলে এদিকটা একটু বেশি ফাঁকা ফঁকা। ওই ভাজিয়ার দোকানেও উনুনের ছাই নিভু-নিভু; চাকর-বাকরেরা খেতে বসেছে। আর থানেদার অজয় বাঘেল ও তাঁর কলেজ জীবনের বন্ধু গঙ্গারাম,( যিনি ব্যাংকের টেবিলে বেশিক্ষণ বসে থাকতে না পেরে কিছু নতুন বিজনেস ধরার বাহানায় খালি ছুরি- কাটঘোরা রুটে বড় রাস্তায় বা তার পাশের গ্রামগুলোতে একটি পুরনো রাজদূত মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ান) মাত্র জীপ থেকে দোকানের সামনে নাক কুঁচকে নামলেন।
    পুলিশ অফিসারের ধরাচূড়া পরা অজয়কে দেখে ছেলে-ছোকারাদের ডাল- ভাতের গ্রাস মুখের সামনে থেমে গেল।
    কিন্তু রাঁধুনী বুড়ো বিশালদাস যাদব তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে দুটো চেয়াঅর টেনে ওদের বসতে অনুরোধ করে। টেবিলের ওপর কাঁচের গ্লাসে জল দিয়ে জিগ্যেস করে-- কি খাবেন হুজুর?
    অজয় মাছি তাড়ানোর মত হাত নেড়ে বলেন-- তোদের মাঅলকিন দ্রুপতী বাঈকে গিয়ে বল, দারোগাবাবু দেখা করতে এসেছেন।
    বুড়ো দৌড়ে ভেতরে গিয়ে প্রায় তক্ষুণি ফিরে এসে বলে--- ভেতরে আসুন, সরকার! মালকিন বসে আছেন।
  • ranjan roy | 115.118.215.195 | ১১ জানুয়ারি ২০১২ ০১:০৯527483
  • প্রায়ান্ধকার গলির মধ্যে দিয়ে ভেতরের উঠোনে পৌঁছুবার সময় অজয় গঙ্গারামকে বল্লেন-- এখানে একদম মুখ খুলবে না, ম্যানেজার! আজ শুধু শুনে যাও। আর ভুলে যাও।
    ভেতরের উঠোনটা বেশ বড়, গাছের ডাল আর তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা। একপাশে সবুজ রঙের কিছু
    চানাবুট আর রেড়ির তেলের বীজ ডাঁই করে রাখা, অন্যদিকে দুটো মুর্‌রা মোষ জাবনা খাচ্ছে। গঙ্গারামের চোখ গেল আঙিনার উল্টো দিকে জং ধরা একটি জীপের দিকে। তার পেছনে রং দিয়ে বড় করে লেখা-- পোঙ্গা লা বাজা না গা!( অর্থাৎ হর্ন প্লীজ!)।
    একটা হাফপ্যান্ট পরা ছেলে গোবরলেপা উঠোনের রোদ্দূরে একটা খাটিয়া টেনে এনে তারপর আধময়লা কাঁথা পেতে দিল। আর সামনের একটি কাঠের টুলে কাঁসার বাটিতে করে লাড্ডু, পেঁড়া ও কালাকাঁদ। একটি শ্রীময়ী মেয়ে নিয়ে এসেছে কাঁসার লোটায় খাবার জল ও সঙ্গে দুটো ঝকঝকে মাজা গেলাস।
    থানেদারের ইশারায় গঙ্গারাম একটি কালাকাঁদ তুলে নিয়ে চিবুতে থাকে। বড্ড মিষ্টি। এক লোটা জল
    দুজনের দুই চুমুকে শেষ। এবার আসে পানামা সিগ্রেট ও দু'খিলি পান, মিঠি পাত্তি ও মিঠা মশলা। কিন্তু গুলকন্দ দিয়ে স্বাদটা খারাপ করে দিয়েছে।
    অজয় বাঘেল প্রায় একবছরের থানেদারিতেই স্থুল ব্যাপারগুলো আয়ত্ত করে নিয়েছেন। ওখানে বসে উঠোনেই পিচ্‌ করে থুতু ফেললেন। লাল পিকের দাগ মাটি শুষে নিতে অপারগ।
    কখন পেছনের দরজাটা খুলে গিয়েছে আর সেখান থেকে গঙ্গারামকে প্রায় চমকে দিয়ে বেজে উঠেছে একটি চড়া খনখনে কন্ঠস্বর-- প্যার লাগথন, ও সাহাবমন্‌! আজ কেইসে আয়ে হো মোর জেইসে গরীব বেসহারা আওরতকে দুয়ার মা? রদ্দা ভটক গইসে কা?
    ( গড় করি গো সাহেবেরা! আজ আমার মত গরীব অসহায় মেয়েমানুষের দরজায় কি মনে করে? রাস্তা হারিয়েছ নাকি?)
    মুচকি হাসেন অজয় বাঘেল।-- অসহায় মেয়েমানুষ বটে! চাইলে গোটা কাঠঘোরাকে কিনে নিতে পারে। বাসস্ট্যান্ড পাড়ার কোন শেঠ আছে যে আজ অব্দি তোর ঘাটে মাথা মুড়োয় নি? বল্‌, তার নামটা বল্‌। আমার বন্ধুটিকে সত্যি কথাটা বল্‌!
    --- বললে কি করবে গো তুমি সায়েব?
    --- গ্রেফতার করে নিয়ে এসে তোর সামনে ফেলে দেব। আমি থাকতে কার এত সাহস যে আমার
    দ্রুপতী বাঈয়ের দরবারে হাজিরা দেয় নি!
    ফিল্মি লফ্‌ফাজিতে অজয়ের জুড়ি মেলা ভার। দরোগা বটে! গঙ্গারামের অস্বস্তি বাড়ে। দ্রুপতী কিছু বলে না। বড়মানুষের বারফট্টাইয়ের সময় কিছু বলতে নেই যে!
    গঙ্গারাম তাকিয়ে থাকেন দ্রুপতী বাঈয়ের দিকে। ছরহরে বদন মহিলাটির তেলতেলে কালো চেহারায় বেশ জৌলুষ আছে, মানতে হবে। বয়স আটাশ বছরের গঙ্গারামের চেয়ে একটু বেশিই হবে। তেলমাখা কালো চুল শস্তা ফিতে দিয়ে আঁটোসাঁটো করে বাঁধা। পরনে ছাপা শাড়ি আর কালো ব্লাউজ, কপালে একটি কাঁচপোকা টিপ।
    হটাৎ গলায় সুর পাল্টায় অজয়ের। এবার উনি পুরোদস্তুর থানেদার।
    -- তো খবর পাক্কি?
    -- জী সাহাব! ঝুঠ নহী বোলথন্‌।
    --- কে বাজে কী বাত? কোন কোন রইসে?
    দ্রুপতী অস্বস্তিভরা চোখে গঙ্গারামের দিকে তাকায়। কিছু বলে না। বাঘেল সেটা খেয়াল করে বলেন-- এ হামারে খাস মিত্র। এখর সামনে কুছু ছিপাইকে জরুরত নো হে। অব্‌ বোল, খুলকে গোঠিয়াবে ও।
    তারপর উনি গঙ্গারামকে উদ্দেশ্য করে বলেন--শী ইজ এ প্রস্টিটিউট্‌, নজদিগকে দশ গাঁও মেঁ মশহুর। কিন্তু এ আবার আমাদের পে-রোল্‌ এ আছে, চালু শব্দে -- পুলিশের খবরী বা মোল্‌। বাকিটা আপনি ওর মুখেই শুনুন।
    দ্রুপতী বাঈ মুখে একখিলি পান ঠুঁসে বলতে থাকে।
  • ranjan roy | 115.118.223.22 | ১১ জানুয়ারি ২০১২ ১২:০৪527484
  • -- আপনারা ওই ছড়াটা তো জানেনই? সেই যে "' সাহস কী লন্দফন্দ--''?
    ওকে হাত নেড়ে থামিয়ে দিয়ে অজয় বলে ওঠেন--"" হ্যাঁ, হ্যাঁ,-- সেই "ঝাঁট চাট জাহি' তো? ওসব ফালতু কথা ছেড়ে কাম কী বাত শুরু কর্‌''।
    --সেই তো বলছি। খুন তো অনেক দিন আগেই হত। শুধু সুযোগের অপেক্ষা।
    -- মানে?
    -- তিনটে শয়তানের মধ্যে সবচেয়ে হারামী ছিল আজিজ। ও এক্‌নম্বরের আওরতখোর। গাঁয়ের বহুবেটির দিকে হাত বাড়াতে কোন লিহাজ করে না। একটা বউ মরেছে, আর একটাকে ও নিজে তালাক দিয়েছে। ওর কু-নজর পড়ায় ছেলেটা বৌ নিয়ে কোরবা শহরে চলে গেছে। সেখানে মোটর সাইকেল মেরামতের গ্যারেজ চালায়। বাপের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।
    গড়বড় হল যখন আজিজের নজর গেল রসেলু যাদবের মেয়ের দিকে। রসেলুরা চার ভাই। দুধের ব্যবসা, ভাল ক্ষেতিও আছে। মেয়েটাকে জামাই ছেড়ে দিয়েছে, বাপের বাড়িতে আছে কিছু দিন। রসেলু সম্বন্ধীবাড়িতে লোকজন পাঠাচ্ছে- একদিন জামাইয়ের মন গলবে , এসে মেয়েকে নিয়ে যাবে এই আশায়। কী করে যেন শয়তান আজিজ বশ করল ওই বাচ্চা মেয়েটাকে। নিঘ্‌ঘাৎ জাদুটোনা করেছিল। জানেনই তো, ছুরি গ্রামকে দশকোশের মধ্যে জাদুটোনার জন্যে সবাই জানে। ব্যাংকের পাশের বাড়ির গোঁড় পরিবারের বৌ, লাইনপাড়ার ডোমনের বিধবা, রহসবেড়ার টেঁটকি কোস্টিন-- সবকটা ডাকসাইটে টোনহি। একবার যদি লংকাপোড়া হাতে নিয়ে আপনার দিকে তাকিয়েছে--! সেবার হরেলি-অমাবস্যার রাতে--।
    -- ফের ফালতু বকবক শুরু করেছিস? কাজের কথা বল। আমার সময় নেই।
    ধমক খেয়ে মুষড়ে পরে দ্রুপতী বাঈ। কিন্তু গঙ্গারামের আগ্রহ হচ্ছিল টোনহি-উপাখ্যান শুনতে। কিন্তু থানেদারের চোখের দিকে তাকিয়ে চেপে যায়।
    -- সেই কথাই তো , আপনি বলতে দিচ্ছেন কই? গতবছর হরেলি-অমাবস্যার রাতে সহেলুরা দলবল লাঠিসোঁটা নিয়ে আজিজকে ওদের ঘরের পেছনে কোলাবাড়িতে( মানে বড়সড় কিচেন গার্ডেন, যাতে শাকসব্জি-লংকা-টম্যাটো-পেঁপেগাছ ও অন্তত: একটি পাতকূয়ো থাকবে) মেয়েটার সঙ্গে ঘিরে ফেলে। কিন্তু আজিজ ন্যাংটো অবস্থায় চাড্ডি হাতে পাঁচিল টপকে পালিয়ে যায়। কথা চাউর হয়ে যায়। মেয়ের শ্বশুর আর ভাসুর বাড়ি বয়ে সহেলুদের যা-নয়-তাই বলে যায়। দুমাস পরে মেয়েটা ভেদবমি হয়ে মরে।
    একসঙ্গে এতগুলো কথা বলে দ্রুপতী বাঈ একটু দম নেয়, জল খায়।
    সেই সুযোগে অজয় ডোঙ্গরে সরু চোখে তাকান ওর দিকে।
    -- ভেদবমি? আমি তো শুনেছিলাম জ্বরজারি!
    -- সত্যি সত্যি কী হয়েছিলো আমিও জানিনা।
    কুলোকে বলে ঘরের লোকই খাবারের সঙ্গে ধান কে কীড়ে মারনে কী দাওয়াই মিলিয়ে মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে, ওকর পেট হো গয়ে রইস না? দু মাহিনাকে। কা লা কা বোলবে তঁয় সহাব! কাকে কী বলা যায়?
    গঙ্গারাম জিগায়-- কোন হল্লা হয়নি? থানা-পুলিশ? চীড়ফাড়?
    -- আরে গাঁওকে আর এম পি ডাক্তার সার্টিফিকেত লিখ দিস্‌, পহলে কে থানেদার সাহাব ঘলো কুছ খুরচন-পানি লেকর মান গইস্‌। কা লা কা বোলবে, সাহাব?
    -- ওকর বাদ কা হৈস?
  • ranjan roy | 117.194.33.2 | ১১ জানুয়ারি ২০১২ ১৪:৪৫527485
  • - তারপর? তারপর রসেলুরা সবকটা ভাই গাঁয়ের ঠাকুরদেবের থানে গিয়ে কসম খেল যে ওরা একদিন আজিজকে মারবেই মারবে। যদ্দিন না পারে তদ্দিন নিরামিষ খাবে। আজিজ ও সতর্ক ছিল। বিনা হাতিয়ার চলা ফেরা করত না। তবু রাত্তিরে কাঠঘোরা থেকে ছুরি ফেরার রাস্তায় দুবার হামলা হল। একবার জেজরা গাঁয়ের নালার পাশে , আর একবার ধনরাস গাঁয়ের ভাটায়। অন্ধকারে ওৎপেতে ছিল রসেলু আর তার দলবল। কিন্তু দু'বারই সহসরাম আগেভাগে খবর পেয়ে আজিজের বডিগার্ড বাড়িয়ে দেয়। ওদের কাছে কাট্টা ( দেশি পিস্তল) থাকে।
    --- এবার কি করে ভুল হল?
    -- এবার জোশীমহারাজ আর সহসরাম কেউ গাঁয়ে ছিল না। সরপঞ্চ সঝলাকুমার সাহেব ও নেই। সহসরাম পইপই করে মানা করে গেছিল-- ওরা ফিরে না আসা অব্দি আজিজ যেন ঘর থেকে না বেরোয়। আজিজ ও বেরোয় নি,-- একদিন, দুদিন, তিনদিন। তারপরই জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করে বসল।
    -- সেটা কি?
    -- দারু কা চক্কর। দারু কা লত তো থা পর ও দিন শর্মা গুরুজী লে পইসা মাঙ্গ বইঠে। গুরুজী ইন্‌কার কিয়ে তো ওলা মা-বহিন কী গালি দে দিস অউর কসকে দু তামাচা লাগাইস। ও ঘলো ওকর লেইকা মন কে সামনে।
    গুরুজী লাজশরম কে মারে ফুট-ফুট কর রো দিস। খানা-পিনা ছোড় দিস। ফির পঞ্চকে পাস জাকে বোলিস -- তুমন ন্যায় কর। মোলা ন্যায় চাহিয়ে, তব তক অন্নজল গ্রহণ নহী করহুঁ।
    -- ফির?
    -- ফির ক্যা? সরপঞ্চ পুরী গিয়ে ছিলেন। উপসারপঞ্চ কর্মনলালের বাড়িতে বৈঠক হল। সবাই বললো-- পাঠানের বড্ড বাড় বেড়েছে। বাহমণ গুরুজীর( ব্রাহ্মণ স্কুলটিচার) গায়ে হাত? গালি গালাজ? পাপ কে ভান্ডা ফুট গয়ে। অব কুছু করনা পড়ি। সব মিলকর এক পিলান কীস। শ্যামলাল পটেল, সমেলাল সারথী অউ ইতরু যাদব লা পাঠান লা খাল্লাস করে কে ঠেকা দে দিস। জব তক ওমন জেল মা রহি ওমনকে মাইপিলা কে র‌্যাশনপানি কী জুগাড় হো জাহি। ছুরি কে পরসন উকিল বিনা ফীস ওমনকে কেস লড়ি।

    থানেদার ও ব্যাংকার যেন দ্রুপতীবাঈয়ের জাদুটোনায় পাথর হয়ে গিয়েছে।

    -- সব বুঝলাম। কিন্তু ওকে মারল কখন? আর কি করে?

    --আজিজ পাঠানকে লাইনপাড়ার ভাট্টিতে মদ খাইয়ে চুর করে নিয়ে এল ওরা তিনজন। তারপর বাজারের তেমাথায় ইতরুর পানঠেলার সামনে সিমেন্টের বিজলীখাম্বার গায়ে পিছমোড়া করে বাঁধল। সারা গাঅঁয়ের লোক ফিরিতে মজা দেখল। কেউ কেউ থুতু ছেটাল, কেউ দু-ঘা জুতোর বাড়ি লাগাল। ওরা তিনজন ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে মদ খেল আর ওকে একটু একটু করে পুচিয়ে পুচিয়ে কাটল। কয়েক ঘন্টা ধরে। ও মরলো সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ। তখন নিয়ে গিয়ে পুকুর পাড়ে ফেললো।
    -- এত লোক দেখেছে, কেউ কিছু বলবে না?
    -- না সাহেব! উকিল এবং উপ-সরপঞ্চ শিখিয়ে পড়িয়ে রেখেছে-- কেউ কিছু দেখেনি।
    -- তাহলে?
    --- একটা উপায় আছে। ঐ মোড়ের মাথার সিন্ধি দোকানদারদের ধরুন। ওরা বাইরের লোক, এদিকের গাঁয়ের কেউ নয়। একটু চাপ দিলে উগরে দেবে। তায় ওদের মাথাঅ রামচন্দর সিন্ধিটা বড্ড ভীতু। ওকেই আগে ধরুন।

    ৫)
    না,দ্রুপতীবাঈয়ের ফর্মূলা খাটে নি। কালোগাড়ি ও একঝাঁক পুলিশ দেখেও গাঁয়ের কারো হেলদোল নেই। কেউ কিচ্ছু দেখেনি।
    সিন্ধি দোকানদারেরাও মনে হয় কয় দশক ধরে ছুরি গাঁয়ে থাকতে থাকতে ওদেরই একজন হয়ে গেছে। রামচন্দর সিন্ধি বললো-- এই তেমাথায় ওরকম বীব্‌হ্‌ৎস কিছু হয় নি।
    ওকে যখন বলা হল যে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত্যু হয়েছে সন্ধ্যে ছ'টা থেকে রাত ন'টার মধ্যে তখন ও বলল-- সন্ধ্যে ছ'টা? আমাদের তো হুজুর পাঁচটার পর মানে সূর্য ডুবতেই দোকান বন্ধ হয়ে যায়। একি কাঠঘোরা না বিলাসপুর? এ হল হদ্দ পাড়া গাঁ। এখানে সন্ধ্যে হতেই সব শুনশান, সন্নাটা।
    ফিরে গেল কালো ডগ্গা বা গাড়ি নিয়ে পুলিশবাহিনী। কিন্তু থানেদার অজয় ডোঙ্গরের গোঁফের ফাঁকে যেন হাসির রেখা!
    কেটে গেল আরো দশটা দিন। তারপর এল এক বেস্পতিবার, স্থানীয় ভাষায় গুরুবার,-- বৃহস্পতি যে দেবগুরু! রাত্তির আটটা হবে। দরজা বন্ধ করে গঙ্গারাম সেভিংস ব্যাংক লেজারগুলোর ব্যালান্সিং করতে ব্যস্ত ছিল। এমন সময় চ্যাঁ-চ্যাঁ করে কলিং বেজে উঠল। খুলে দেখে কালো সোয়েটার গায়ে থানেদার ডোঙ্গরে স্বয়ং।
    -- চলো দোস্ত! বন্ধুকৃত্য কর। উইটনেস হতে হবে।
    -- সে কি? কোথায় যাব?
    -- ঐ বাজারের তিগড্ডায়। রামচন্দর সিন্ধির দোকানে। কালো গাড়ি গাঁয়ের বাইরে রেখে পেছনের রাস্তাঅ দিয়ে হেঁটে এসেছি। এখন তোমার রাজদূত স্টার্ট কর। তবে তো "" জানদার সওয়ারি, শানদার সওয়ারি'' স্লোগানটার কোন মানে হবে!
    রাত সওয়া আটটার সময় মোটরবাইক থেকে নেমে দুজনে এগিয়ে গেলেন সিন্ধির দোকানে। আলোয় ঝলমল করছে চারদিক। সবকটা দোকানে চলছে কেনাকাটা, গ্রাহকের ভীড় একেবারে কম নয়। পান দোকানে ফিল্মি গানের ক্যাসেট বাজছে। কথামত ম্যানেজার বল্লেন-- শেঠজি! এক প্যাকেট পানামা আর এক ডজন ডিম চাই যে!
    একগাল হেসে দোকানদার মাল প্যাক করে দেয়। গঙ্গারাম পয়সা দিতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে অন্যদের ঠেলে এগিয়ে আসেন অজয় ডোঙ্গরে। খপ করে চেপে ধরেন রামচন্দর সিন্ধির কব্জি।
    --- কী রে! শালা সিন্ধি! সেদিন কী বলেছিলি? পাঁচটায় সব দোকান বন্‌দ্‌ধ হয়ে যায়? চারদিক শুনশান হয়ে যায়। সবাই ঝাঁপ ফেলে ঘরে ঢোকে? এখন ঘড়িতে কটা বাজে? কটা বাজে ঘড়িতে? ঠিক করে বল হারামখোর!
    ওয়াকি টকিতে নির্দেশ পেয়ে পাঁচমিনিটের মধ্যে এসে যায় কালো গাড়ি। হাতকড়ি পরিয়ে গাড়িতে তোলা হয় সবকটা সিন্ধি দোকানদারকে।

    পরের দিন দুপুর বেলা। গঙ্গারাম গেছে লাঞ্চের ফাঁকে স্থানীয় আর এম পি ডাক্তার জয়সওয়ালের ডিসপেন্সারিতে। ডাক্তার নেই, কলে গেছেন ভিঙ্গাঁয়ে। আধঘন্টার মধ্যে এসে পড়বেন। ও চেয়ার টেনে বসে কম্পাউন্ডার শংকরের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেয়। শংকর মহা ফক্কড়। সাইনবোর্ডে লেখা আছে--"" হম সেবা করতে হ্যায়,ঈশ্বর চাঙ্গা করতে হ্যায়।''( আমরা চিকিচ্ছে করি, ঈশ্বর ভাল করেন।)
    সেদিকে চোখ পড়তেই শংকর মিচকে হাসে।
    -- ভুল লেখা আছে ম্যানেজার সাহেব। লেখা উচিত--"" ঈশ্বর চাঙ্গা করতে হ্যাঁয়, হম নাঙ্গা করতে হ্যাঁয়।''
    ( ঈশ্বর ভাল করেন, আমরা ন্যাংটো করি।)
    দুজনের হাসির ফাঁকে হটাৎ রাস্তা থেকে একটা হৈ-চৈ এর আওয়াজ, এদিকেই এগিয়ে আসছে। ওরা বারান্দায় বেরিয়ে আসে। রাস্তা দিয়ে চলেছে একটা ভীড়, তাতে গাঁয়ের গণ্যমাণ্য ভদ্রজন ছাড়াও তাতে আছে ছোট ছোট বাচ্চার দল। সবার আগে কোমরে দড়ি আর হাতে হতকড়ি বাঁধা অবস্থায় চলেছে শ্যামলল, সমেলাল ও ইতরু। গন্তব্য স্পষ্টই বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়ানো পুলিশ ভ্যান।
    গঙ্গারামের মনতা খারাপ হয়ে যায়। মাত্র তিনমাস আগে এই তিনজনকেই ও গ্রুপ-গ্যারান্টিতে আই আর ডি ই স্কীমের লোন দিয়েছিল। প্রত্যেক কে পাঁচ-পাঁচ হাজার। তখন এদের বেশ শান্ত, ভদ্র মনে হয়েছিল। এরা কি করে অমন কাজ করতে পারলো?
    হটাঅৎ ওর দিকে চোখ পড়তেই শ্যামলাল হাত তোলে, হাতকড়ায় বদ্ধ জোড়াহাত।
    -- প্যার পরথন হো সাহাব। শ্বশুরাল যাথন। ব্যাংক লোন বর চিন্তা ঝন করবে। ও পইসা পট জাহি।
    ( ব্যাংক লোন নিয়ে ভাববেন না। শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি তো কী? ও ঠিক আদায় হবে।)
    তিনজনি হেঁটে যাচ্ছে মাথা উঁচু করে। নীচু গলায় নিজেদের মধ্যে কোন চুটকি শুনিয়ে হেসে উঠছে। ওদের চেহারায় কোন গ্লানির চিহ্ন নেই।
    -------- প্রথম আঁক শেষ----
  • ranjan roy | 115.118.242.204 | ১৫ জানুয়ারি ২০১২ ০৭:১৭527487
  • দ্বিতীয় আঁক
    --------------
    ""বিক্রমাদিত্যের সিংহাসন''
    ----------------------------
    (১)
    বছর তিরিশ আগে, আপনি যদি সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ হাওড়া থেকে বোম্বে মেলে (ভায়া নাগপুর) চড়ে বসেন তাহলে সকাল ছ'টা নাগাদ ঘুম ভেঙে চোখ কচলে উঠে জানলা দিয়ে স্টেশনের নাম পড়লে দেখবেন বড় বড় করে হিন্দি ও ইংরেজিতে লেখা -- চম্পা বা চাঁপা।
    আরে:, এটাই তো আপনার জংশন, যেখানে গাড়ি বদলাতে হবে। কাঁধের ব্যাগটি মাথায় দিয়ে শুয়েছিলেন। এবার হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়লেন। আর হুশ্‌হাশ্‌ করে পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেল ডাকগাড়ি।
    বছর দুই হল আপনার চাকরি হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকে, সূদুর ছত্তিশগড়ের আদিবাসী এলাকায় নতুন পোস্টিং। এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আপনি খুলে ফেলুন আপনার বাঙালী পোশাক। ভুলে যান কলেজ স্ট্রীট, কফি হাউস, মিনার্ভা থিয়েটার বা গড়িয়ার ঠেক। নইলে স্থানীয় গাঁয়ের লোকের কাছে আপনি হয়ে যাবেন কলকাতিয়া সাহাব। এখন আপনি ভ্যাবাগঙ্গারাম বা শুধু গঙ্গারাম। আপনাকে একটি কয়লার ইঞ্জিনে টানা পাতি ছ'কামরার লোক্যাল ট্রেনে ধরে যেতে হবে কোরবা ছাড়িয়ে গেওরা রোড স্টেশনে। এলাকাটিতে নতুন নতুন ওপেন কাস্ট মাইন খুলছে। বদলে যাচ্ছে গাঁয়ের জীবন। সেখানে একটি ক্ষয়িষ্ণু জমিদারবাড়িতে আপনার নতুন ব্রাঞ্চ।
    আপাতত: আপনার কাজ হল ছোট কাঁচের গ্লাসে চা খেয়ে প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করতে করতে ক্রমশ: গঙ্গারাম হয়ে ওঠা, ওই যতক্ষণ চার নম্বর প্লাটফর্মে গেওরা- লোক্যাল ট্রেনটি না আসে! খিদেও পেয়েছে। তা কাঁচের বয়ামে রাখা বাসি বিস্কুট না খেয়ে গরম গরম ভাজিয়া খেয়ে নিলেই হয়। ওই তো ইঁটের উনুনে প্রমাণ সাইজ কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে।

    ট্রেন এল আর একগাদা মাথায় পাগড়ি, গায়ে চাদর , চেঁচিয়ে কথা বলা দেহাতি লোকজনের সঙ্গে ঠেলাঠেলি করে আপনিও উঠে পড়লেন আর কায়দা করে জানলার পাশের সীটটি হাতিয়ে নিয়ে বসে পড়লেন। কয়লা পোড়ানো কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ট্রেন ছুটে চলেছে। না , আপনি হুইলারের স্টল থেকে গত রাতে কেনা পূজোসংখ্যাটি বের করেন নি। বরং জানলা দিয়ে শহুরে লোকের মুগ্‌ধ চোখে দেখছেন হাতির পালের মত নীল পাহাড়ের সারি। কিন্তু মাঝে মাঝেই চোখে পড়ছে কয়লা খাদানের প্রাথমিক চেহারা।
  • ranjan roy | 115.118.242.204 | ১৫ জানুয়ারি ২০১২ ০৭:৫২527488
  • আবার পাহাড়ের ফাঁকে হটাৎ করে উঁকি দিচ্ছে ক্ষীণস্রোতা একটি জলধারা , হয়তো বর্ষায় নদী হয়ে ওঠে। পাহাড়ের ঢালের পাশে কুঁড়েঘর থেকে বেরিয়ে অবাক চোখে রেলগাড়ি দেখছে শীর্ণকায়া কোন কিশোরী, পাশে দিদির হাত ধরে ছোট ভাই। মাঝে মাঝে ট্রেন থামছে ছোট ছোট স্টেশনে সুন্দর সুন্দর নাম। এই যে, এই স্টেশনের নামটা পড়ুন-- মড়োয়ারাণী। প্রত্যেক স্টেশনে নেমে পড়ছে বেশ কিছু লোকজন, আর তেমনি করে লাইন বেঁধে পায়ে চলা পথ ধরে ট্রেনে উঠছে পিলপিল করে।
    কিন্তু, কী বিপদ! প্রকৃতির ডাক পেটের মধ্যেও শোনা যাচ্ছে যে! সক্কাল বেলায় দু'গ্লাস গরম চা' আর এক প্লেট গরম ভাজিয়া! ধম্মে সইবে? পাশের লোকটিকে ব্যাগটা দেখতে বলে আপনি দৌড়ে ঢুকলেন ল্যাভেটরিতে। হে ভগবান! এ যে পার্কসার্কাস পাড়ার ধাঙড় বাজারের সার্বজনীন পায়খানার চেয়েও--। কারণ সাত সক্কালে ট্রেনে চড়া গাঁয়ের লোকজনের সংস্কৃতি হল ক্ষেতে যাওয়া, সম্বল একলোটা জল, তাতে শুধু নিজেকে ধোয়া যায়। আর ক্ষেতের মাটি ধোয়ার কথা কোন উজবুকে ভাববে! যাকগে, গাঁয়ের লোকজনকে গাল দিতে দিতে নাক টিপে আপনি বসে পড়ে চটপট খাল্লাস হয়ে গোপাল ভাঁড়ের গল্পের মত পুত্রপ্রাপ্তির চেয়েও বড় সুখ পেলেন। তারপর দম ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। সঙ্গে সঙ্গে একঝাঁক হাসি ও টিটকারির শব্দ ভেসে এল।
    কয়েক সেকন্ড লাগলো বুঝতে যে সার্বজনিক উপহাসের লক্ষ্যবস্তু আপনি স্বয়ং। হয়েছে কি --- কোলকাতার ছেলে বন্ধ দরজার পেছনে জন্মদিনের পোশাকে প্রাত:কৃত্য সেরে উঠে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু খেয়াল করেনি যে জানলার শুধু ফ্রেমটি আছে, তাতে কোন কাঁচ নেই। ইতিমধ্যে পাশের লাইনে দাঁড়িয়েছে উল্টো দিকের লোক্যাল ট্রেন। তার সীট ও পাদানিতে বসা ছেলেবুড়ো-মেয়েমদ্দ ইডেনে গার্ডেনে অ্যাডামকে বিনা টিকিটে দেখতে পেয়ে নির্মল আনন্দ উপভোগ করছে। এখন একটাই অপশন। মাথা নীচু করে মনে মনে আরতি মুখুজ্জের "' লজ্জা, মরে যাই একি লজ্জা!'' গুনগুন করতে করতে নিজের সীটে এসে বসে পড়া।
  • ranjan roy | 115.118.242.204 | ১৫ জানুয়ারি ২০১২ ০৮:৪০527489
  • ২)
    সব কিছুরই একটা শেষ আছে। বেলা দশটা নাগাদ আপনি পৌঁছে গেলেন এই লাইনের অন্তিম স্টেশন গেওরা রোডে। না, স্টেশনে কেউ নিতে আসেনি। স্টেশন থেকে গেওরা গ্রাম অন্তত: তিন কিলোমিটার দূর। একপাশে দুটো ক্রেন কয়লা তুলে তুলে দুটো বিশাল ডাম্পারে ভরে যাচ্ছে। গঙ্গারাম পাশ কাটিয়ে জঙ্গলের পথ ধরেছেন, কাঁধে এয়ারব্যাগ। ঘন জঙ্গল। আম-জাম-যজ্ঞডুমুর, বট-অশ্বত্থ-পাকুড়। শিরীষ-বাবলা-বাঁশঝাড়। তার মাঝ দিয়ে পায়েচলা পথ বা প্যারডগরি। আর মাঝে মাঝে আল ভেঙে গরুর গাড়ির চাকার দাগে তৈরি রাস্তা, স্থানীয় ভাষায় গাড়ারাবণ। কোথাও কোথাও পথের পাশে উইয়ের ঢিপি, এত বড় যে মনে হয় এগুলোকেই বল্মীক বলা হত নাকি? খোঁচা দিয়ে ভেঙে দিলে ভেতরে তপস্যারত কোন রত্নাকর চোখে পড়বে! ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে জুতোর ডগা দিয়ে একটা বড় সড় ঢিপির গায়ে ঠোক্কর মারতেই ফোঁস্‌! কোথায় বাল্মীকি? ফণা তুলেছে একটি ডোমহি বা কেউটে। মানে মানে কেটে পড় হে! নইলে আজ আর তোমার ব্যাংকের সিন্দুকের তালা খোলা হবে না।
    এবার দেখা যাচ্ছে একটা দুটো করে কাঁচা ঘরবাড়ি। মূল গাঁয়ের সীমান্ত বা সরহদ। এগুলো অন্ত্যজদের পাড়া। এখানে আদিবাসীদের মধ্যেও অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া সমাজের, যেমন মঁঝওয়ার বা বিঁঝওয়ারদের বাসস্থান। আর আছে কয়েকঘর সহিস বা ঘসিয়া, যারা চামড়ার কাজ করে, প্রধানত: ঢোল-তবলা-মাদল বানায়, কিন্তু জুতো নয়। আবার খানিকটা জঙ্গল, কিন্তু আগের মত ঘন নয়। এবার একটা বাঁক পেরোতেই জেগে উঠল একটি পাকাবাড়ি, দোতলা, কিঞ্চিৎ জরাজীর্ণ। তার গায়ে লাগা ধানের মরাই, দুজন কামিয়া মোষ সামলাচ্ছে। আর একদিকে একটি অপেক্ষাকৃত নতুন একতলা দেহাতি বাড়ি। গায়ে ব্যাংকের সাইনবোর্ড। সামনে উবু হয়ে রোদ পোহাচ্ছে ম্যানেজারের ছুটি থেকে ফেরার আশায় সকাল থেকে প্রতীক্ষারত ভিন গাঁয়ের লোকজন।
    এদিক -ওদিক থেকে ওঠা হাত ও মৃদু ""জয়রাম সাহাব!'' সম্বোধনের মধ্যে মাথা নাড়তে নাড়তে ভ্যাবাগঙ্গারাম ভেতরে ঢুকে নিজের চেয়ারে বসে।
    এক গেলাস জল ও এক পেয়ালা চা। ক্রমশ: কমে আসা গুনগুন শব্দের মধ্যে ও জেনে নেয় আজকে ক্যাশ ব্যালান্স কত? স্টেট ব্যাংক থেকে ক্যাশ আনতে কাউকে কোরবা পাঠাতে হবে কি না! হেড অফিস থেকে কোন নতুন সার্কুলার বা নিদেনপক্ষে কোন ফোন এসেছে কি না? এইভাবে বেলা গড়িয়ে যায়। ব্যাচেলর ভ্যাবাগঙ্গারাম এর জন্যে টিফিন ক্যারিয়ার ভরে ভাত-রুটি-ডাল-তরকারি এসে যায়। এবার ও উঠবে উঠবে করছে এমন সময় একটা খ্যানখেনে চেরা আওয়াজ ওর মনের শান্তি কেড়ে নেয়।
    -- তঁয় হট্‌ যা মিঠলবরা! মোলা ম্যানেজারলা মিলে বর অন্দর জায়েকে দে বের্‌রা!
    ( তুই সরে যা, মিঠেমিথ্যুক কোথাকার! আমাকে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে হবে, ভেতরে আসতে দে, বদমাশ!)

  • ranjan roy | 115.118.231.97 | ১৫ জানুয়ারি ২০১২ ২৩:৩৮527490
  • গঙ্গারাম বিরক্ত হয়ে বকের মত গলা উঁচিয়ে ঝামেলা কিসের বোঝার চেষ্টা করল। চাপরাশিকে ধাক্কা মেরে কাউন্টারের পেছনে ঢুকে পড়েছে একটি মেয়ে। তারসপ্তক ছাড়িয়ে যাওয়া তার গলার আওয়াজ খানিকক্ষণের জন্যে আর সবার যাকে বলে একদম "" বোলতী বন্দ্‌'' করে দিয়েছে।
    -- কী ব্যাপার! ক্যা হুয়া?
    -- সাহেব, আমার মা বিমার হয়ে বিছানা নিয়েছে প্রায় সাতদিন হল। ঘরের পয়সা শেষ। আপনার ব্যাংকে ওর টাকা জমা আছে। আজ কিছু টাকা তুলতে এসেছি তো আপনার এই ""রোঘা'' চাপরাশি বলছে যে তোমার মাকে নিয়ে এস, ওর টিপসই চাই। কী অন্যায় বলুন তো?
    --- কিন্তু ও তো ঠিকই বলেছে। এটাই তো ব্যাংকের নিয়ম।
    -- মতলব?
    -- মতলব যাকে পয়সা দেবে ভাউচারে বা পয়সা তোলার কাগজে তার দস্তখত নেবে না? তাহলে কি করে বোঝা যাবে যে কাকে পয়সা দেয়া হল?
    -- বড় মুশকিল! পয়সা তো আমি নিয়ে যাচ্ছি, তাই আমার টিপসই নিলেই তো চলে। আপলোগ জবরন লফরা করতে হ্যাঁয়।
    -- বাজে কথা বলবে না! কিসের লফরা? অ্যাকাউন্ট তোমার মায়ের নামে, তুমি কি করে পয়সা বের করবে? যার নামে খাতা তার টিপসই ছাড়া সেই খাতা থেকে কি করে অন্যে পয়সা তুলবে?
    -- বাহ্‌ সাহাব, বাহ্‌! হর মাহ্‌ জব ম্যাঁয় পয়সা জমা করনে আতী থী তব তো নহী বোলে কি তোর দাঈকে খাতে মে ওকর আয়ে বিনা পয়সা কৈসে জমা হোহি! তখন তো দিব্বি দাঁত বের করে টাকা জমা করে নিয়েছেন। আমার টিপসইয়ে যদি মার নামে পয়সা জমা হতে পারে তা হলে পয়সা তোলা কেন যাবে না? ওইটুকু নিয়ম আমিও বুঝি।
    -- জমা করা আর টাকা তোলা আলাদা। বোকার মত কথা বোল না।
    -- কিসের আলাদা? জমা মানে টাকা আমার আঁচল থেকে বেরিয়ে ব্যাংকের সিন্দুকে ঢুকবে। আর টাকা তোলার সময় আপনাদের সিন্দুক থেকে বেরিয়ে আমার আঁচলে ফেরত আসবে। লেখাপড়া জানিনা, অংগুঠা ছাপ, কিন্তু এটুকু বুঝি। খামোকা ঘোরাবেন না।
    -- কেউ ঘোরাচ্ছে না। আমি যা বল্লাম সেটাই হল ব্যাংকের নিয়ম। তোমার মা না আসলে ওর নামে পয়সা তোলা যাবে না।
    -- আর মা যে সাতদিন ধরে বিছানা নিয়েছে?
    -- কাঁধে করে নিয়ে এস, গরুর গাড়ি করে নিয়ে এস। কিন্তু আনতে হবে।
    -- আচ্ছা? যাদি দু'কোশ ধরে গরুর গাড়ি করে আনতে গিয়ে আমার সাতদিনের জ্বরে ভোগা বুড়িমা মরে যায়? তাতে আপনার কিছু আসে যায় না? এই তাহলে আপনার শেষ কথা? আপনি হলেন
    নিয়মকানুনের পোঙ্গা পন্ডিত।
    তামাশা-দেখা ভীড়ের সামনে রাগে কাঁপতে থাকা গঙ্গারামের ভেতরে কিছু একটা ঘটে যায়। হয়ত মেয়েটির কেমনযেন চাউনি, হয়ত অসুস্থ মায়ের প্রসংগ, ঠিক যে কী ও নিজেই জানে না।
    ওর গলার স্বর খাদে নামে। চাপরাশিকে জিগ্যেস করে মেয়েটার নাম কি? ওকে চেনে কি না? ওর গাঁ কতদূরে?
    --- জী সাহাব, ওহ ঘোরাপাট গাঁও কী বুধবারিন বাঈ সতনামী। ইহাঁ লে দু'কোশ দুরিহা মা ওকর গাঁও।
    গঙ্গারাম ফরমান দ্যায় যে সেকেন্ড অফিসার চাপরাশিকে সঙ্গে নিয়ে বুধবারিন বাঈয়ের বাড়ি গিয়ে শয্যাশায়ী মায়ের টিপসই নিয়ে এসে ওকে ওর খাঅতা থেকে একশ' টাকা দিয়ে দেবে।
    মেয়েটি কোন কথা না বলে ওর দিকে আবার সেই কেমনযেন চোখে তাকিয়ে চলে যায়।
    ইতিমধ্যে সূর্য ঢলে পড়েছে। চাপরাশি এসে খবর দিল যে মকানমালিক প্রাক্তন জমিদাঅর দাদুসাহাব চা খেতে ডাকছেন।
    একটু পরে দাদুসাহেবের বৈঠকখানায় চা আর চিঁড়েভাজা খেতে খেতে ও মেতে ওঠে খোশগল্পে। উঠে আসবে এমন সময় দাদুসাহেব বল্লেন-- আরে ভাল কথা, সন্ধ্যের পর কোথাও বেরোবেন না যেন! আজকে ব্যাংকের সামনে খোলা জায়গায় বাঁধানো চাতালে পঞ্চায়েতের বিচারসভা আছে। আপনিও
    আসুন।
    --- বিচারসভা? কিসের বিচার? ঝগড়া-ফ্যাসাদ? মারপিট?
    -- আরে না না, গাঁয়ে শান্তি বজায় আছে। আসলে একটি বিধবা মেয়ে, স্বভাবটা খারাপ। ইধার-উধার ডোরে ডালনে কী আদত। জোয়ান চেলেদের নাচিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদের কাছে শিকায়ত এসেছে। জাতধর্ম বলে কিছু থাকলো না।
    রাত্তির সাতটা নাগাদ খেয়েদেয়ে আসুন। নিজের চোখেই নজারা দেখতে পাবেন।
  • ranjan roy | 59.161.31.53 | ১৭ জানুয়ারি ২০১২ ০০:২৯527491
  • ৩)
    শীতের অন্ধকার একটু তাড়াতাড়িই নামে। বাঁধানো চাতালের চারপাশে একটু একটু করে ভীড় জমতে শুরু করেছে। ব্যাংক ম্যানেজার গঙ্গারামের অবসার্ভর স্ট্যাটাস, তাই চাতালের একটু পেছনে বারান্দার একটি থামের পাশে চেয়ারে বসে উসখুস করছে। ভীড়ের মধ্যে একটি অঘোষিত শৃংখলা আছে। পুরুষেরা একদিকে, মেয়েরা একদিকে। মেয়েদের দলটি অপেক্ষাকৃত হালকা।
    বয়স্কদের হাতে হাতে ঘুরছে হুঁকো আর অন্ধকারে এখানে ওখানে জ্বলে উঠছে বিড়ির আগুন, জোনাকিপোকার মত। জনাকয় পঞ্চ এসে চাতালের দুপাশে বসেছেন। কথাবার্তা চলছে মৃদুস্বরে। মেয়েদের দলের গুনগুন স্পষ্ট নয়। চৌকিদার এসে দুপাশে দুটো হ্যাজাকবাতি রেখে গেল।
    একজন বুড়ো খোঁজ নিলেন---"" গুণাইত ( গাঁয়ের প্যাটেল) হাবে কা? যা, দাদুসাব লা বুলাকে লে আ। সব্বোজন আ গয়ে।'' ( সবাই এসে গেছে, প্যাটেল যাও, দাদুসাবকে ডেকে আন।)
    খাকি হাফ শার্ট আর ধুতি পরা সামারু প্যাটেল গিয়ে ভেতর থেকে একটা পুরোনো কাঠের চেয়ার নিয়ে এল। একটু পরে সবাই উঠে দাঁড়াল। সমবেত কন্ঠে শোনা গেল-- জয়রাম হো দাদুসাহাব, প্যার পরথন মালিক!
    দাদুসাহেব বসে পরিচিতদের কুশল-মঙ্গল জিগ্যেস করলেন। কে কে আসতে পারেনি জেনে নিলেন। ইশারায় ঘরের ভেতর থেকে ওনার রাউত( ঘরের চাকর, সাধারণত: জাতে গোয়ালা, লেখে যাদব) এসে সবাইকে গুড়ের চা দিয়ে গেল। ইদানীং ধানের কি দর চলছে? তিলহন-দলহন বোনা ( তিসি-ডাল) হয়েছে কি না-- এইসব নিয়ে কথাবার্তা কিছুক্ষণ চলল। এবার দাদুসাব গলা খাঁকারি দিতেই একদম সন্নাটা!
    গৌরচন্দ্রিকা করে উনি যা বল্লেন তার মর্মার্থ হল -- আজ সাততাড়াতাড়ি এই বৈঠক ডাকার উদ্দেশ্য হল একটি নালিশের ফয়সালা করা। আমাদের সমাজে নারীদের সম্মান সর্বোপরি। কিন্তু আজকাল কিছু বেয়াড়াপনা বেড়ে যাচ্ছে। এখন গাঁয়ের সিয়ান( বয়োবৃদ্ধরা) যদি কড়া হাতে লাগাম ও চাবুক না ধরেন তাহলে সমাজের গাড়ি রাস্তা ছেড়ে নালায় নেমে পড়বে। কাজেই--। উপসরপঞ্চ ঈশ্বরদত্ত তিওয়ারি নালিশের সার কথাটি সংক্ষেপে আপনাদের জানাবেন।
    আগের বুড়োটি বিড়ির আগুন নিভিয়ে থুতু ফেলে শুরু করলেন,"" পঞ্চ-পরমেশ্বরকে নমস্কার!নালিশ করেছে আমাদের গেবরা গাঁয়ের কিরানা শেঠ( মুদিখানার মালিক) ভাগবত আগরওয়ালের ছেলে বিনোদ।
    অপরাধী ঘোরাপাট গাঁয়ের বুধবারিন বাঈ। দুজনেই হাজির?
    কোতোয়ার (কোতোয়াল) জানাল-- দুজনেই এসেছে।
    -- বিনোদ! বাতাও কা হৈসে? পুরা পুরা বাতাও গ'।
    পরনে শার্ট-পাজামা , গায়ে একটি আলোয়ান,-- বছর বিশ-বাইশের বিনোদ আগরওয়াল উঠে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলতে শুরু করে-- শনিবারের বিকেল, তখনও পুরোপুরি অন্ধকার হয় নি। আমি সাইকেল নিয়ে কোরবা যাব বলে বেরিয়েছি। ওখান থেকে দোকানের জন্যে মাল বুক করে পেমেন্ট করতে বাবা বলে দিয়েছিলেন। সবে গাঁয়ের সরহদ পেরিয়ে নয়া-বরপালীর ভাটা পেরিয়েছি কি দেখি বড় একটা কোসম গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আমাদের বুধবারিন বাঈ। মাঝে মাঝে আমাদের দোকানে চাল-গম সাফ করতে আসে , তাই ভিন গাঁয়ের হলেও ওকে চিনি। রকম-সকম দেখে মনে হল দাল-মেঁ-কুছ-কালা-হ্যায়। ছটফট করছে, অস্থির অস্থির। যেন কারো অপেক্ষা করছে। আমিও বটগাছের আড়ালে
    লুকিয়ে দেখতে লাগলাম কি হয়।
    বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। কোলিয়ারির দিক থেকে সাইকেলে হাজির হলে আমাদের দুই মাস্টার,-- পটোয়া গুরুজি আর মিশ্রগুরুজি।
    তারপর কি আর বলব? এমন বেলেল্লাপনা সবার সামনে মুখে আনতে পারিনা। শুরু হয়ে গেল তিনজনের রাসলীলা। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যখন হুঁশ ফিরল তখন ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওদের ওপর। দু'ঘা দিতেই দুই গুরুজি সাইকেলে চড়ে হাওয়া। আর এই বাঈ বলল,-- তোর প্যার পরথন শেঠ! কোনো লা ঝন বাতাবে, তহুঁ লে লে। পর চুপ ঝা!
    আমি বল্লাম-- কাকে কী বলছিস্‌! তোর সাহস তো কম নয়? আমি রোজ হনুমান-চালিশা পাঠ করে দোকানে বসি আর--''।
  • ranjan roy | 14.97.109.117 | ২১ জানুয়ারি ২০১২ ০১:১৭527492
  • ব্যস্‌, হটাৎ যেন দীপাবলীর রাতে কালীপটকার লড়ি একসঙ্গে চড়বড় চড়বড় করে ফাটতে লাগল। কারণ আর কিছুই নয়-একটি মেয়ে। একটু দূরে ধানের মরাইয়ের বেড়ার পাশ থেকে আলকেউটের ফোঁস করার মত করে দাঁড়িয়ে উঠেছে একটি মেয়ে। অন্ধকারে চেহারা বোঝা যাচ্ছে না কিন্তু গলার স্বরে ঠাহর হয় বয়েস তিরিশের নীচেই হবে। গলার চেরা আওয়াজে যেন কালীপটকার তীক্ষ্ণতা।
    --- ঝুট ঝন্‌ বোলবে শেঠ! ম্যঁয় তোলা বিনতি করে হন? কি তঁয় মোলা?
    ( মিথ্যে কথা বলিস না শেঠজী! আমি তোকে অনুরোধ করেছি? নাকি তুই আমাকে?
    আচমকা কেউটের ছোবলে ঘায়ল শেঠ মাটিতে গড়াগড়ি খায়। পঞ্চপরমেশ্বর ও ঘায়েল! কারণ মেয়েমদ্দর সংযুক্ত বৈঠকে মেয়েদের চুপ করে থাকাই প্রথা। কথা বলতে বল্লে তবে কেউ বলে। আর এমন গলা চড়িয়ে বলা? মেয়েটার নিঘ্‌ঘাৎ মাথা খারাপ!
    শেঠ আত্মপক্ষ সমর্থনে মরীয়া চেষ্টা করে। কিন্তু প্রথম হাফে আচমকা গোল খাবার পর ওর গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর হারিয়ে গেছে। মওকা পেয়ে মেয়েটির হামলা যেন একেবারে পেনাল্টি বক্সের ভেতরে
    ঢুকে যায়!
    -- তোর নানহি লইকার সর মা হাত রাখকেবোল শেঠ! কে সত্যি কে মিথ্যে ফয়সালা হয়ে যাক।
    এবার জনতা উত্তেজনায় টানটান। কিন্তুবড় বড় সিয়ান (প্রবীণ) দের বাক্যি হরে গিয়েছে।
    তেঁতুলগাছের নীচে বসে থাকা মেয়েদের ছোট দলটির অনেকে কিচিরমিচির করে কথা বলতে শুরু করেছে, স্বর নীচু গ্রামে। কেউ কেউ ছোট বাচ্চার মাথায় হাত রেখে দিব্যি গেলার বিরোধিতা করে।
    -- এসবের মধ্যে আবার বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে টানাটানি কেন? আমরাও লইকা- নোনি নিয়ে ঘর করি। যদি পাপ হয়? যদি বাচ্চাটার কিছু অসুখ-বিসুখ হয়ে যায়?
    উৎকন্ঠায় লোকের চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়।
    এবার গর্জে ওঠেন দাদুসাহেব( খোকাসাহেব)।
    -- চুপ্‌! সবাই চুপ কর। এ কি পঞ্চায়েতের বৈঠক না কি মছলী বাজার! আর বুধবারিন বাঈ! তোমার এত সাহস? বড়দের সামনে বিনা অনুমতি মুখ খোল কি করে?
    আমি যাকে জিগ্যেস করব শুধু সে বলবে।
    -- শেঠ! কটার সময় তুমি গাঁয়ের সরহদে বুধবারিন বাঈ কে দেখতে পাও?
    -- পাঁচটা বেজে গিয়েছিল।

  • ranjan roy | 14.97.109.117 | ২১ জানুয়ারি ২০১২ ০১:৪৪527493
  • -- কি করে জানলে?
    -- আমার কোরবা শহরে রেলপুল পেরিয়ে মাল কিনতে যাওয়ার কথা। বাবুজী পাঁচটা নাগাদ এসে গদিতে বসলেন, তখন আমি বেরুলাম। তাই মনে আছে।
    বুধবারিন কিছু একটা বলার জন্যে ছটফট করে। কিন্তু দাদু সাহেবের ধমকে চুপ মেরে যায়।
    -- পটেওয়া আর মিশ্র গুরুজি হাজির হয়েছে?
    --না ঠাকুরসাহাব! আমি ওদের ঘরে ডাকতে গিয়েছিলাম, কিন্তু দরোজায় তালা বন্ধ। হয়তো আজ বিলাসপুর গেছে।
    -- হুঁ: , মনে হয় পালিয়েছে। কিন্তু কদ্দিন আঅর গা ঢাকা দিয়ে থাকবে? এবার বুধবারিন তুই বল্‌-- কি হয়েছিল?
    মেয়েটি এবার সংযত নীচু স্বরে কেমন একটা সিং-সঙ্‌ ভয়েসে একটানা বলে যায়।
    -- শেঠোয়া ঝুট বলচে দাদুসাহেব! ওর আগে দুই গুরুজি পৌঁছেছিল। আমার সঙ্গে আগে কোন কথা হয় নি। আমাকে ভর সন্ধ্যেবেলা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওরা সাইকেল থেকে নেমে এগিয়ে এল। পাটোয়া গুরুজি দাঁত বের করে বললো-- কেইসে ও? দেবে কা?
    -- আমি বল্লাম,মর্‌ রোঘা! তোর আঁখি ফুট গয়ে কা?
    এবার মেয়েদের দল থেকে একটা চাপা হসির খিলখিলানি সভার মধ্যে ছড়িয়ে যেতে থাকে। পুরুষেরা বেশ অস্বস্তি বোধ করতে থাকে। শুধু গঙ্গারাম বুধবারিন কে সক্কালে ব্যাংক- এ- এসে- ঝগড়া- ওর ইজ্জত পাংচার করে দেয়া মেয়েটি হিসেবে চিনতে পেরে ভ্যাবাগঙ্গারাম হয়ে যায়।
    একজন সিনিয়র পঞ্চ বলে-- তোলা ইঁহা কহানী শুনায়ে বর নহীঁ বুলায়ে। জলদি কাম কী বাত মেঁ আ!
    --- কা বলহুঁ মালিকমন! ওকর বাদ যো হোনা থা হো গিয়া! কিন্তু আমার মিশ্রগুরুজির বিরুদ্ধে কোন শিকায়েত নেই। কারণ উনি ব্রাহ্মণ দেবতা, আমি ওনাকে যা দিয়েছি তা স্বেচ্ছায় দিয়েছি। আমার কোন পছতাওয়া নেই। কিন্তু পটওয়া গুরুজি বড্ড জংলি! আমার সঙ্গে জবরদস্তি করেছে, পিঠ ছিঁড়ে দিয়েছে। ওলা সাজা মিলনা চাহি।
  • kallol | 115.184.83.0 | ২৬ জানুয়ারি ২০১২ ২৩:২৫527494
  • কোথায় পোস্ট করব ঠিক করতে না পেরে এখানেই দিলাম। রঞ্জনের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
    Women’s Groups Condemn President’s Medal to Ankit Garg, Soni Sori’s Torturer

    We are deeply shocked and outraged by the conferring of the President’s Police Medal for Gallantry on Ankit Garg, Superintendent of Police, Dantewada, Chhattisgarh. Ankit Garg has been named by the Adivasi school teacher, Ms. Soni Sori, in several letters to the Supreme Court, of ordering and supervising her torture and sexual violence against her, on the night of October 8th, 2011 when she was in his custody at the Dantewada police station.

    In a case which is now before the Honourable Supreme Court, Ms. Soni Sori has written that while she was in police custody in Dantewada police station, she was stripped before the Superintendent of Police, Ankit Garg, and given electric shocks under his directions. Furthermore, not only did he use abusive language against her, he ordered three police personnel to “punish her” by sexually torturing her for disobeying his commands to name well-known social activists, such as Swami Agnivesh and Medha Patkar, as Naxal supporters. An independent medical examination carried out by the NRS government hospital in Kolkata under the direction of the Supreme Court has confirmed her sexual torture by recovering stones embedded in her private parts. This flagrant violation of Ms. Soni Sori’s person is what prompted the Honourable Supreme Court to reach the conclusion that she is clearly unsafe within the reach of Dantewada police, and needs to be transferred to the Raipur Central prison.

    Is this, then, the “gallant” behaviour of our Dantewada police under the able guidance of SP Ankit Garg, which the government is now felicitating? Is this an award for ruthlessly torturing people? Does the government approve of these methods? Is this an accepted way of carrying out war against their own people in the name of anti-naxal operations?

    It is shocking to note that in spite of wide publicity and protests over SP Ankit Garg’s inhuman conduct by a large number of women’s and civil liberties groups, nationally and internationally, the government has deemed it fit to confer him with a gallantry award. It is even more baffling to note that this has occurred at a time when the Honourable Supreme Court itself has expressed anguish at the happenings and is still looking into these violations. Compounding the very serious charges of a heinous crime of sexual violence against Ms. Soni Sori that SP Ankit Garg faces, is that fact that this crime happened when she had been entrusted into his custody as a senior police officer. After the report from the Kolkata NRS Medical College and Hospital, this is no longer a case of mere allegations
    against the police, but there is also solid evidence by a government medical team to support her charges. However, none of this appears to have placed even a shadow of doubt on the gallantry of this Officer as far as the government is concerned. By giving an award in the face of these complaints which have not even received a cursory investigation, both the Central and State governments are condoning this sexual violence which is being perpetrated in the name of anti-Naxal operations.

    It is a dark day for Indian democracy today. While Ms. Soni Sori, the victim of this heinous torture languishes in the Raipur Central Jail, with a deteriorating health condition, and waits for her case to be listed in the Supreme Court, women’s teams who have been taking up the case of her torture have been refused permission to meet her. She is still under the custody of the same state police has that inflicted this torture on her.

    We are also appalled to note that a majority of “gallantry” awards this year have been given out for anti-Naxal and counter-insurgency operations. Civil liberties organisations have been pointing out the widespread human rights violations that are taking place in these areas in the cover of counter-insurgency operations. This raises grave concerns and points to a movement in the direction of a military state, which can have no place in a democratic republic such as ours.

    We condemn this action in the strongest words. There can be no excuse for torture and sexual violence in the name of anti-Naxal or counter-insurgency operations. To confer awards on a person accused of such heinous acts diminishes the respect and honour usually associated with a gallantry award.

    (Issued by Women Against Sexual Violence and State Repression (WSS) — a national network of women’s organisations, other democratic rights organisations, and individuals — on behalf of groups all across the country which have been participated in the campaign to bring justice to Soni Sori. Please write to [email protected] for more information.)

  • ranjan roy | 14.97.114.48 | ২৭ জানুয়ারি ২০১২ ০০:০২527495
  • কল্লোল,
    একদম ঠিক আছে, ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই।
  • ranjan roy | 122.163.44.160 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০২:৪৮527496
  • এবার দাদুসাহেব গলা খাদে নামিয়ে কেটে কেটে জিগ্যেস করলেন,
    --ছোটা শেঠ কখন পৌঁছেছিলো?
    -- সব চুকেবুকে গেলে; ওকে দেখেই তো গুরুজীরা সাইকেলে চেপে পালিয়ে গেল।
    -- তারপর?
    -- তারপর বিনোদ শেঠ মিচকি হেসে বললো-- আমিই বা বাদ যাই কেন?আমি বল্লাম-- আরেক দিন। আজ আমার ভাল লাগছে না। পটোয়াগুরুজির নখে পিঠ জ্বালা করছে, গায়ে ব্যথা। তো শেঠ মানতেই চাইছিল না। বলছিল আগাম দেয়া টাকা ফেরত দে, নইলে পঞ্চায়তে নালিশ করব। অব্‌ অত্তি হো গইস্‌। হমোমন কহ দিন-- যা, করগে যা, ভড়ুয়া! তো আকে ঝুটমুট নালিশ করিস্‌।
    এবার অন্য পঞ্চেরা বল্লেন-- ঢের হয়েছে, এবার বসে পর
    বুধবারিন্‌ বাঈ!
    চারদিকে মাছির মত ভনভন শুরু হয়ে গেল।
    --- বিনোদ শেঠ ! উঠে দাঁড়াও, তুইও উঠে দাঁড়া বুধবারিন। আমি পঞ্চায়েতের ফয়সালা শোনাচ্ছি।
    দুই গুরুজি মাস্টারদের নাম ডুবিয়েছে, আমাদের বাচ্চারা শিখবে কী? রেন্ডিবাজি? আইয়াশী? দুই গুরুজিকেই পঞ্চায়েতকে জরিমানার টাকা ১০০ টাকা করে দিতে হবে। দ্বিতীয়বার এইসব হলে গাঁ ছেড়ে যেতে হবে। আর বুধবারিন ব্রাহ্মণ
    গুরুজিকে মাপ করে দিয়েছে। কিন্তু পটোয়া গুরুজি জোরজবরদস্তি করেছে। কাজেই পটোয়া গুরুজি বুধবারিন বাঈকে একটি লাল
    লুগরা ( দেহাতি মহিলাদের লাল রঙা খাটো শাড়ি) কিনে দিতে হবে। আর শেঠের ব্যাটা, তুমিও তো কম যাও না! এক মওকা দিচ্ছি,-- এবার ২০০ টাকা জরিমানা দাও আর তুমিও
    বুধবারিনকে একটি লাল লুগরা কিনে দাও।
    এবার বুধবারিন, যদি গাঁ থেকে বার না হতে চাও তো একটু ঠিকঠাক থেকো, কোন বেচাল আমরা এ গাঁয়ে বরদাস্ত করব না। তঁয় এদারে গাঁও কে মন্দির কে জমিন মাঁ সাতদিন বেগারি দেবে।
    ( তুই গাঁয়ের মন্দিরের দেবোত্তর জমিতে সাতদিন বিনেপয়সায় জন খাটবি।)

    সভা শেষ। ভিড় দ্রুত হালকা হয়ে যে যার ঘরের পথ ধরেছে। হালকা কুয়াশার ভাব। গঙ্গারাম উঠে শুতে যায়। ঘুম আসে না।
    ট্রানজিস্টর চালায়, একটু লো ভল্যুমে। রায়পুর স্টেশন থেকে বাজতে থাকে লোকগীত-
    "" তঁয় একেলা যাবে, হংসা মোর, একেলা যাবে।
    যায়ে কে বেলা রে, একেলা যাবে।''
    ( তুই একলা যাবি গো, তুই একলা যাবি। ,
    যাবার সময় হলে পরে একলা যাবি ।
    ও আমার হংসরূপী আত্মা,
    তুই একলা যাবি।''

    --- দ্বিতীয় আঁক সমাপ্ত----
  • ranjan roy | 122.163.44.160 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৪:০০527498
  • তৃতীয় আঁক
    ----------------
    ""তুঁহু যাবে মহুঁ যাবো, রাজিম কে মেলা''

    (১)
    এবারে গঙ্গারাম ট্রান্সফার হয়ে এসেছে রায়পুর জেলার রাজিম ব্রাঞ্চে। মহানদীর তীরে এই প্রাচীন রাজিম নগরী, আর এখানে একটি লক্ষ্মণমন্দির আছে।
    বছর দুই আগে বিলাসপুর জেলায় থাকতেই ও এই রাজিম নগরীর কথা ও মাহাত্ম্য শুনেছিল।
    সেটা বোধহয় ছিল ফাগুন মাসের শেষ। শীতের ঝরাপাতার দিন গিয়ে এসেছিল আকন্দ গাছের থোকা থোকা লাল ফুলের দিন।সেও শেষ, এবার পলাশের বনে আগুন লেগেছে। শিলাবৃষ্টি হয় নি, তাই আমের মুকুল ঝরে যায় নি। আর সকাল সন্ধে যখন তখন ন্যাড়া ডালগুলোতে বসে কোকিল ডাকতে থাকে। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে এক আদিম বুনো গন্ধ। প্রকৃতি ঋতুমতী হয়েছে।
    গাঁয়ের লোকজন-ছেলেছোকরাদের হাতে কোন কাজ নেই। তাই অলস দুপুরে বা গুলাবী জাড়া ( গোলাপী শীত)পরা বিকেলে গাঁয়ের অলি গলিতে বাজছে নাগাড়া।
    গোটা চারেক হাফপ্যান্ট ছোঁড়া বসে দুটো কাঠি দিয়ে কালোমাটির শরীরে চামড়াছাওয়া নাগাড়া পিটছে আর ""ফাগ"' গাইছে। এ চলবে টানা দু'সপ্তাহ ধরে, সেই হোলি বা দোলের দিন পর্য্যন্ত।
    ফাগ গানের মধ্যে এই গানটা মনে হয় বেশি জনপ্রিয়।
    "" তহুঁ যাবে, মহু যাবো রাজিম কে মেলা,
    রাজিম কে মেলা রে ভাই।''
    ( তুইও যাবি, আমিও যাব-রাজিমের সেই মেলা)।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন