এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ছত্তিশগড়ের আঁকিবুকি

    ranjan roy
    অন্যান্য | ০৪ জানুয়ারি ২০১২ | ৮৮৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 122.163.33.27 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৩:০৮527499
  • ২)
    আজকে গঙ্গারাম যাবে রাজিমের মেলায়। চারদিন আগে মকরসংক্রান্তি থেকেই মেলা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যাংক ছেড়ে বেরোনোয় বড্ড চাপ।
    দু'জন স্টাফ ছুটিতে। এই সময় রোজ হেড অফিস থেকে কৃষি লোনের আদায় আর রবি ফসলের লোন বিতরণ নিয়ে হুড়কো আসতেই থাকে। আহা! তার কি ভাষা! একেবারে ""সচিত্র প্রেমপত্র''।
    যার সারমর্ম হচ্ছে যে এই কৃষিপ্রধান রাজ্য ছত্তিশগড়কে লোকোক্তিতে " ধান কী কটোরা'( ধানের ভান্ডার) বলা হইয়া থাকে। কাজেই এই ক্ষেত্রের কৃষকদের সময়মত কৃষিজনিত উৎপাদক ঋণ দেয়া সমস্ত ব্যাংক সমাজের (বিশেষত: গ্রামীণ ব্যাংকের) পরমকর্তব্য। এই ব্যাপারে কোন লাপরবাহী বরদাস্ত করা হইবে না। বর্তমান সীজনে লক্ষ্যমাত্রার হইতে কম ঋণ বিতরণ হইলে সম্বন্ধিত ব্যাংক ম্যানেজার ব্যক্তিগত রূপে
    উত্তরদায়ী হইবেন। শালা! কেন "ব্যক্তিগত" রূপে ? কেন 'সমষ্টিগত' রূপে নয়?
    ফলশ্রুতি এই গোবরগণেশ ম্যানেজার গঙ্গারম রোববারের আগে আর মেলার দিকে পা বাড়াতে সাহস করেনি। আজ রোববার, আজ যাবে। অবশ্যি ঘটনাচক্রে একদিন ব্যাংকের ডিউটি করতে করতেই ওর এক ঝলক মেলা দেখা হয়ে গেছে।
    হয়েছে কি, শুক্কুরবার ডিফল্টারের লিস্ট দেখতে দেখতে ওর হটাৎ মটকা গরম হয়ে গেছল। মাঝামাঝি জায়গায় একটি নামে চোখ পড়েছে, ঘনশ্যাম যাদব।
    উনি সরকারি স্কুলের মাস্টার, কিন্তু ক্ষেতিবাড়ি ও আছে। তাই তিন একড়ে খরিফ ধান বোনার জন্যে ওনাকে একড় প্রতি দশহাজারের হিসেবে তিরিশহাজার লোন দেয়া হয়েছিল। এবার তাগাদায় তিন বার ওনার বাড়ি যাওয়া হয়েছিল, তাতে ফল হয়েছিল কিছু শুকনো কথা দেয়া,-- এই দেখুন, আগামী সপ্তাহেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু টাকা এলোনা।
    তা এবার শুক্কুরের বারবেলায় বার খেয়ে গঙ্গারাম ঠিক করলো আজ এই গুরুজি বা ম্যাথসের টিচার ঘনশ্যাম যাদবের থেকে ও কিছু আদায় করেই আনবে। ব্যাংকের চাপরাশি জীবনলালকে সঙ্গে নিয়ে ও বেরিয়ে পড়লো গুরুজির খোঁজে। উনি বাড়িতে নেই, স্কুলে নেই, গেলেন কোথা?
    -- এই তোর বাপ কোথায়?
    -- তালাও গয়ে।
    এই ছোট্ট দুটি শব্দের অনেক মানে। ওই বাক্যটির প্রথম পাঠ হল--- বাবার পেট গড়বড়, এখন অবেলায় গেছে পুকুর পানে, সব সেরে সাফসুতরো হয়ে ফিরবে।

  • ranjan roy | 122.163.33.27 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৩:২৯527500
  • খানিকক্ষণ পরে গিয়ে দেখা গেল--- এই তো ছিল, পঞ্চায়েত অফিসের দিকে গেছে। তা পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে দেখা গেল সেখান থেকে ক্ষেত গেছে। এই ভাবে বার- আটেক নাকানি চোবানি খাবার পর জানা গেল উনি মেলার দিকে গেছেন।
    মেলা যাবার পথে রাস্তার দুধারে বিক্রি হচ্ছে মুড়ি-মুড়কি, চিনির পুতুল, ক্যালেন্ডার আর্ট। গঙ্গারাম ক্যালেন্ডার আর্টের নায়িকাদের বোকা-বোকা হাসি, বুকের দুই পর্বতের মাঝখানে খাই, উপত্যকা এইসব মগ্ন হয়ে দেখছিল।
    চটকা ভাঙল চাপরাশি জীবনলালের চাপা চিৎকারে।
    -- সাহেব! ওই দেখুন! মেলার মেইন গেটের বাইরে শুঁড়িখানায় গুরুজি আছেন। আমি গিয়ে দেখে এসেচি, আপনি শিগ্গির চলুন।
    ঢুকে দেখা গেল আধো-অন্ধকার। আধময়লা কাঠের বেঞ্চি-টেবিল। তাতে দাগধরা প্লাস্টিকের বড় জাগ, তাতে জল আর ছোট ছোট কাঁচ বা প্লাস্টিকের গেলাসে ছোটবেলায় কৃমির ওষুধ হিসেবে খাওয়ানো চুনের জলের মত দেখতে কিছু পানীয়। গুরুজি এবং তাঁর জনা কয়েক বন্ধু মিলে কথা তুলেছেন যে এবছর দারুতে জল মেশানো হচ্ছে; নইলে কি করে এতটা খেয়েও কোন নেশা হচচে -টচ্চে না!
    গঙ্গারামকে দেখে গুরুজির মুখে একগাল হাসি।
    -- আসুন, স্যার! আপানারো চলে নাকি? অ্যাই, নিয়ে আয় একবোতল হিরণছাপ, আর দুটো গ্লাস। ম্যানেজার সায়েব নিজে এসেছেন, খেয়ে রায় দেবেন কতটা জল মেশানো হয়েছে।
    গঙ্গারাম হাতের ইশারায় বারণ করে জিগ্যেস করে,"" গুরুজি, আমি আপনার বাকি টাকার জন্যে এসেছি। কিন্তু, আপনি এখানে? আপনার ওপর ভবিষ্যতের ভার। আপনি এভাবে দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
    -- দেখুন স্যার! আমাকে সরকার পয়সা দেয় পাঁচঘন্টা পড়াতে। তাই সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা অব্দি আমি দেশকে একদম সঠিক পথে নিয়ে যাই, কিন্তু একটার পর? তখন আমি নিজেই জানিনে যে আমি কোথায় যাই, তো আমি দেশকে আর কি পথ দেখাব?
  • ranjan roy | 122.163.38.66 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৫:০৫527501
  • ৩)
    ওরকম আউট অফ সিলেবাস জবাব শুনে গঙ্গারাম আবার ভ্যাবা গঙ্গারাম। ফলে ও শুধু মেলার বাইরে থেকে পাঁপড় ও তেলেভাজার দোকান, নাগরদোলা, বোম্বাই ড্যান্স পার্টির তাঁবু এবং ""ট্যুরিং টকিজ'' এর বিজ্ঞাপন দেখেই ফিরে এল। গিন্নি গেছে একসপ্তাহের জন্যে মাইকা, মানে বাপের বাড়ি। কাজেই রোববারের দুপুরে খেয়েদেয়ে দিব্যি মেলায় একা-একা ঘোরা যাবে।
    এল রোববার। ব্যাংকের চাপরাশি জীবনলাল ডিমের ঝোল ,
    আলুকপি আর ভাত রেধে বলল-- দু'বেলার মত করা রইল, ওবেলা গরম করে নেবেন। আমি আসবো সোমবার সকালে,-- ভাবীজি পৌঁছনোর আগেই।
    খেয়েদেয়ে বেরোতে বেরোতে প্রায় তিনটে বাজল। গঙ্গারাম পরেছে প্যান্টের সঙ্গে কাজ করা খাদির পাঞ্জাবী, এদিকের লোকজনের ভাষায় "কুর্তা'। পনের মিনিট হাঁটতেই মহানদীর পুল, সেটা পেরিয়ে ডানদিকের ঢালে নামতেই অনেকটা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশাল মেলা। আজ ছুটির দিন হওয়ায় এখন থেকেই লোকজনের ঢল নেমেছে। সাইকেল আর বাইক রাখার স্ট্যান্ড পেরোতেই কেউ সলজ্জ ভাবে স্যালুট মারল। একটি কিশোর।
    -- সাহেব, বাবা আপনাকে ডাকছে।
    গিয়ে দেখা গেল পান চিবিয়ে দাঁত বের করে হাসছে ব্যাংকের চাপরাশি জীবনলাল।
    -- ছেলের নামে সাইকেল স্ট্যান্ডের ঠিকে নিইচি, আপনাদের আশীর্বাদে হাতে দু'পয়সা আসছে। রোজ ব্যাংক বন্ধ হলে এখানে এসে একটু হাত লাগাই, হিসেবপত্তর দেখি। অ্যাই, যা দু'কাপ ইস্পেশাল চা নিয়ে আয়।
    গঙ্গারাম নিরস্ত করে এগিয়ে যায়। দুপাশে দোকানের সারি। ভাজিয়া, লাড্ডু, বুড়ির চুল, রংচঙে মিঠাই, ছানার জিলিপি ও
    মুগডালের বড়া বা মুঙ্গোড়া। অনেকেই গঙ্গারামের ব্যাংকের খাতক। নমস্কার-চমৎকারের পালা সেরে ও এগিয়ে যায়। সামনে
    ট্যুরিং টকি।
  • ranjan roy | 122.163.38.66 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৭:৪২527502
  • একটি বড় তাঁবু। অনেকটা জায়গা ঘিরে মাটিতে খুঁটি পুঁতে বানানো, সার্কাসের তাঁবুর চেয়ে একটু ছোট।
    প্লাইউডের ওপর কাপড় লাগিয়ে তার ওপর রং দিয়ে বড় বড় করে লেখা "" মা মহামায়া ট্যুরিং টকিজ'', প্রোপাইটার রবিকুমার ট্যান্ডন। আর পাশে বড় করে টাঙানো দুটো সিনেমার বিজ্ঞাপন-" ভগবান সমায়ে সংসার মেঁ' আর "তড়িপার'(এলাকাছাড়া)।
    সম্ভবত: একটি শো শেষ হয়েছে। পিলপিল করে লোক বেরোচ্ছে, স্থানীয় ভাষায় বলা যায়- ভেড়িয়া দশান বা ভেড়ার চাল। একটি অল্পবয়েসী বৌ ভীড়ের ঠেলায় মুখ থুবড়ে পড়ছিল, ওকে তুলতে গিয়ে ওর পতিদেবের কনুই লেগেছে পাশের কারো চোখে। ব্যস, প্রথমে গালাগালি-রোঘা! বের্‌রা! তোর আঁখি লা ফুট গয়ে কা!( রোগেভোগা পাজি বদমাস্‌! তোর চোখ গলেছে নাকি)। শীগ্গিরই স্বর চড়ে মুদারা ছাড়িয়ে তারসপ্তকে শুরু হল-- তেকর দাঈ(তোর মা) ইত্যাদি। এরপর হাতাহাতি। গঙ্গারাম আবার ভ্যাবাগঙ্গারাম হয়ে একপাশে সরে দাঁড়ায়, শারীরিক হিংসায় ওর অনীহা।
    ইতিমধ্যে ম্যনেজার-কাম-প্রোপাইটার বছর চল্লিশের রবিকুমার এসে গেছে, সঙ্গে দুটো ষন্ডামার্কা গেটম্যান। এসেই ওরা হাত-পা চালিয়ে এইসব ""লফরা'' থামিয়ে দিল। তারপর গঙ্গারামকে দেখতে পেয়ে একটু লাজুক মুখ করে এসে বলল-- করনা পড়তা হ্যায়, সাহাব! ইস ধান্ধে মেঁ যো করো ও কম হ্যাঁয়। ইন লোগ সব জানোয়ার হ্যাঁয়। দো-চার লাথ-মুক্কা জমা দেনে সে তব মানতা হ্যাঁয়। ( এই ব্যবসায় আপনি যাই করুন কোনটাই যথেষ্ট নয়। এখানকার লোকজন হল জানোয়ার। গোটা কয় লাথি-ঘুঁষি লাগান, দেখবেন সব ঠিক)।
    আসুন স্যার, একটি সিনেমা দেখে যান। গঙ্গারাম পকেটে হাত দিতেই ম্যানেজার জিভ কাটে।
    আপনার ব্যাংকে টকিজের টিকিট বিক্রির জন্যে খাতা খুলেছি, একটি সিনেমা দেখতে এসেছেন, তাও আজ প্রথমবার, পয়সা নিলে ধম্মে সইবে?
    ও গঙ্গারামকে প্রায় হাত ধরে গাইডেড ট্যুরের মত করে নিয়ে যাচ্ছিল, তক্ষুণি ওর পথ আটকে দাঁড়াল একটু আগে স্ত্রীকে বাঁচাতে ঝামেলা বা লফরায় পড়া স্বামীটি। ওর হাতের ইশারায় বউটি ঢিপ করে প্রণাম করতেই গঙ্গারাম অপ্রস্তুত। উত্তেজিত স্বামীটি হাত জোড় করে তড়বড় করে কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু ও বেশ তোতলা। ম্যানেজার হেসে বলল-- ও হল হকলারাম ছিপিয়া। উত্তেজিত হলে বেশি হকলায়। শান্ত হয়ে যা, তোর কথা আমি বুঝিয়ে বলছি। ও বলছে আপনি যে লোন দিয়েছেন তার আদ্দেক ও দোকানে লাগিয়েছে আর আদ্দেক গেছে নতুন বৌয়ের ''গওনা''য়। (গওনা হল-- বালিকা বধূ রজ:স্বলা হইলে তাহার পিতৃগৃহ হইতে প্রথম স্বামীসন্দর্শনে যাত্রার আচার-অনুষ্ঠান।)
    কিন্তু আগামী মাস থেকে কিস্তি পটানো শুরু করবে। আজ নতুন বৌটিকে ওর অনুরোধে মেলা দেখাতে এনেছে, ও ভিন গাঁয়ের মেয়ে, আগে কখনো এমন মেলা দেখেনি, সাহেব যেন রাগ না করেন, ইত্যাদি। কি রে, ঠিক বল্লাম তো?
    হকলারাম সম্মতি সূচক মাথা নাড়ে।
  • ranjan roy | 122.163.38.66 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৮:২৬527503
  • প্রোপাইটার ওকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে প্রায় প্রথম সারির পাশে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে বসিয়ে দেয়, নিজেও একটু বসে। শো শুরু হচ্ছে, মাঝে মাঝে বিড়ি-নেভাও জাতীয় চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
    আলো নিভলো। কিন্তু, একি? বেশ খানিকক্ষণ হয়ে গেছে, না দেখাচ্ছে সার্টিফিকেট, না নায়ক-নায়িকার নামধাম। এদিকে ফাইট, রেপ, গান-নাচ নিয়ে তুলকালাম। অন্ধকারে বেজে উঠছে সিঁই-সিঁই করে সিটি। গঙ্গারাম অস্বস্তিতে। এটা কি ফিলিম ?ম্যানেজার ব্যাখ্যা করে। -- এটা "তড়িপার' ফিলিমের দ্বিতীয় ভাগ। প্রথম ভাগ দেখানো হয়ে গেছে। আজ্ঞে না, ওটা শো ভাঙার নয়, ইন্টার্ভ্যালে ছোট বাইরে যাবার ভীড় ছিল। তাতে কি আছে স্যার? আপনি সেকন্ড হাফটা আগে দেখছেন। শেষ হলে পনের মিনিট পর আবার নতুন ব্যাচের জন্যে শুরু হবে। তখন প্রথম ভাগটা দেখে নেবেন। হরে দরে একই হোলো, ল্যাজা-মুড়ো জুড়ে গেল।
    গঙ্গারাম দ্বিতীয় ভাগ টুকু দেখে বেরিয়ে আসে। দমবন্ধ গুমোট, বিড়ির ধোঁয়া আর গাঁজাখুরি গল্পে মাথা ধরে গেছে।
    এবার সামনে এয়ার গান দিয়ে বেলুন ফাটানোর খেলা। পাঁচটাকা দিয়ে দশবার ট্রাই মারলো, একটা বেলুন ফাটলো। পরের স্টলে কপাল ভালো ছিল। রিং ছুঁড়ে একটি বৃত্তের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোন জিনিসের ওপর রিংয়ের মত পরাতে পারলে সেটা তোমার। গঙ্গারাম জিতে নিল একটি বোরোলীন, একটা ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি আর একটা গায়েমাখা সাবান।
    বেশ খুশিমনে জেতা জিনিসগুলো নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছে এমন সময় পেছন থেকে কানে এল-- অল্‌ দ্যাট গ্লিটার্স ইজ নট গোল্ড, জানেন বোধহয়। ওই নকল সাবান ব্যবহার করলে চর্মরোগ হবে। আর কসমেটিকস এর প্যাকেট গুলো চোখের সামনে এনে ভাল করে দেখুন!
    ইংরেজির টিচার শ্যামসুন্দর তিওয়ারিজী।

    বিমুঢ় গঙ্গারাম দেখে হুবহু একইরকম প্যাকেটে বোরোলীনের জায়গায় লেখা আছে কোরোলীন, আর ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি হয়েছে কেয়ার-অ্যান্ড-লাভলি; অক্ষরগুলো পর্য্যন্ত একইরকম।
    কেন জানিনা ওর মেলাওয়ালা দোকানদারের প্রতি কোন রাগ হয় না। বরং রাগটা হয় জেতার আনন্দ চুপসে দেয়ার জন্যে তিওয়ারি স্যারের ওপর। ধন্যবাদ জানিয়ে ও এগিয়ে চলে ""বম্বে ড্যান্স পার্টি''র স্টলের দিকে। ভেতরে ঢুকে দেখে খালি স্টেজে স্পট পড়েছে, শুরু হল বলে। আলো নেভে, ব্যাকগ্রাউন্ডে ক্যাসেটে বেজে ওঠে-- মার দিয়া জায়ে, কি ছোড় দিয়া যায়ে? বোল্‌ তেরে সাথ ক্যা সলুক কিয়া জায়ে!
    তেহাইয়ের সঙ্গে ঠুমকা লাগিয়ে নাচছে একটি রোগা পটকা লম্বা মত মেয়ে। উচ্ছসিত দর্শককুল। এবার আইটেম নাম্বার
    টু। চুড়িদার-কুর্তার সঙ্গে হাফ জ্যাকেট পরা একটি ছেলে
    দিলীপকুমারের অতিরঞ্জিত অনুকরণে গাইছে- শালা ম্যায় তো সাহাব বন গয়া।
    গঙ্গারাম অন্যমনস্ক, ওর কানে বাজছে ধরতাইটা।
    --"" আগ লাগে হামারি ঝোপড়িয়া মেঁ, হম গাহে মলহার।'' ও বেরিয়ে হাঁটতে থাকে। সামনে চায়ের দোকান আর পুলিশ
    চৌকি। একটু গলা ভেজাবে নাকি? কিন্তু পুলিশ চৌকির সামনে এত ভীড় কেন?

  • ranjan roy | 14.97.39.251 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০১:২৪527504
  • ৪)
    একটি টেবিল, কাঠের চেয়ার, একটি ব্যাটারি-সেট হাত-মাইক বা চোঙা; পেছনে চাটাইয়ের বেড়া, মাথার ওপরে তেরপলের ছাউনি।- এই নিয়ে মেলার অস্থায়ী পুলিশ চৌকি। ফোর্স বলতে গোটা দুই সেপাই আর একজন হাবিলদার।
    কিন্তু ভীড় কিসের?
    জিগ্যেস করায় কেউ বলল-- তামাশা হো গইস্‌, এক বাঈ লা লেকর এক আদমী অউ পুলিসমন খিঁচাতানি করথে। আদমী ঘলাউ হাকলা হবে, এ কাকর সঙ্গোয়ারি কউন জানে!
    ( ভারি তামাশা!একটি মেয়েছেলেকে নিয়ে পুলিশ আর একজন ব্যাটাছেলের মধ্যে টানাটানি চলছে। ব্যাটা আবার তোতলা! মেয়েটা যে কার ঘরের বউ কে জানে?)
  • ranjan roy | 115.118.159.175 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:৫১527505
  • বকের মত গলা বাড়িয়ে গঙ্গারাম লফরাটা বোঝার চেষ্টা করে। দুটো পুলিশ মিলে একটা গেঁয়ো লোককে থাপ্পড় মারছে আর বলছে-- ভাগতা হ্যায় কি নেহি? অন্দর কর দু ক্যা?
    আর লোকটা উত্তেজিত তোতলামিতে কি যেন বলতে চাইছে বোঝা যাচ্ছে না। ওদিকে গোঁফের ফাঁকে মুচকি হাসি এক হাবিলদার একটি মেয়ের ডানা ধরে রয়েছে আর পাবলিককে বলছে--
    ফুটো শালেলোগ! খড়ে খড়ে তামাশা দেখ রহে হো।
    এক আউরত খো গয়া হ্যায়, হমলোগ উসীকে আদমীকে তলাশ মে লগে হ্যায়।
    অল্পবয়সী মেয়েটি পরিত্রাহি কাঁদছে- কয়েকটি কথা অল্পস্বল্প ভেসে আসছে,-- ছোড় দে হমলা, সাহাব! হমন গাঁও যাবো, কভি ন মেলে মা আবো।
    -- দাঁড়া, দাঁড়া! বাড়ি যাবি, সে তো আমরা সবাই যাবো। আমাদেরও বাড়ি ঘর আছে। এত ভয় পাচ্ছিস কেন? ঠিক করে খোঁজ খবর না নিয়ে তোকে যার তার হাতে তো ছেড়ে দিতে পারিনা!
    গঙ্গারামের মাথায় হটাৎ টিউবলাইট জ্বলে ওঠে। ও এগিয়ে গিয়ে গোঁফওলাকে বলে-- ক্যা বাত হ্যায় হাবলদার সাহাব? লফরা কাহে কি?
    -- আপ কৌন হ্যায়? ও আচ্ছা, ব্যাংকওয়ালে সাহাব! দেখিয়ে না, ইয়ে লড়কি মেলে মেঁ খো গয়ী থী। মতলব ফালতু ঘুম রহী থী, হমারে আদমী পাকড়কে লায়ে। তখন ও বলে কি স্বামীর সাথে মেলায় এসেছিল, ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে। তা গাঁয়ের নাম, স্বামীর নাম কিছুই ঠিক করে বলতে পারছে না।
    বিকেলের দিকে এইএকটা তোতলা হারামজাদাকে দেখে বলছে যে ওই নাকি ওর স্বামী। আমাদের সন্দেহ সবটাই বানানো। ধান্ধেওয়ালী লড়কী। আজকাল গাঁয়ের থেকে রাজিম মেলায় খুব অল্পবয়সী খাপসুরত লড়কিলোগ আসছে। এখন অ্যারেস্ট হওয়ার ভয়ে উল্টোপাল্টা লোককে স্বামী বানিয়ে কেটে পড়বার মতলব। কিন্তু দুধনাথ হাবিলদারকে চেনে না। আমি উড়ন্ত পাখির লেজে ক'টা লোম বলে দিতে পারি। আমার চোখকে ফাঁকি দেবে?
    গঙ্গারাম এখন আর ভ্যাবাগঙ্গারাম নয়। মৃদু হেসে হাবিলদারকে বলে--এদের ছেড়ে দিন। আমি এদের দুজনকেই ভালোভাবে চিনি। এরা হল বরপালী গাঁ নিবাসী হকলারাম আর ওর নয়ী নবেলী দুলহন, মাত্র গওনা হয়েছে, প্রথমবার মেলাতে এসেছে। আমার ব্যাংকে ওদের ছবি আর রেশন কার্ড আছে। কোন চিন্তা করবেন না।

    এবার হাবিলদারের তো-তো করার পালা।
    -- আমাদের কোন ভুল নেই, ওর স্বামী তখন থেকে তোতলাচ্ছে, ঠিক করে বলতে পারছে না। আমি কি করবো!ঠিক আছে আপনি যখন বলছেন ওদের চেনেন, ছেড়ে দিচ্ছি।
    -- কোন টিপছাপ?
    -- না, না! কেস বানাইনি তো!
    এবার মেয়েটি ছুটে গিয়ে হকলারামের বুকে মাথা লুকিয়ে হু-হু করে কেঁদে ফেলে।
    পুলিশগুলো অন্যদিকে তাকায়। একজন সিপাহী ব্যাজার মুখে লাঠি নিয়ে ভীড়ের দিকে তেড়ে যায়।
    গঙ্গারাম ওদের নিয়ে একটি চা-ভাজিয়ার দোকানে নিয়ে গিয়ে তিন প্লেটের অর্ডার দ্যায়।
    ওরা লজ্জা পায়, বলে শিগ্গির গাঁয়ে ফিরে যেতে চায়। ভাজিয়া খেতে খেতে গঙ্গারাম আড়চোখে দেখে নতুন স্বামীর কোন কথায় মেয়েটির ব্রীড়াবনত মুখ। ওদিকে বম্বে ডান্সের তাঁবু থেকে গান ভেসে আসছে -"' সজনী তু কাহে আয়া নগরী হমার, ধরেগা বিদেশি বাবু বাহিয়া তোহার''।
    গঙ্গারাম বলে-- আজ তো ভীড়ে ছাড়াছাড়ি হয়ে আর পুলিশের চক্করে পরে তোমাদের মেলা দেখা হয় নি। কাল আসবে কি?''
    মেয়েটি উত্তেজিত গলায় বলে-- নহী সাহাব, অউ কবভো মেলে মা নহী আবো। ইঁহা জানবর রহতে সব, জানবর। ও শালে মুচ্ছল মোলা কহত রইসে-- আজ রাত মা মোর ঘর খালি হ্যায়, রুক জা! মোর আদমী মোলা ঢুঁড়ত ঢুঁড়ত ওহাঁ পৌঁছ গঈস। কহিস এ মোর বাঈ হবে, ছোড় দে সাহাব। তো ওলা ধাক্কা মারকে গালি দেকে ভগাওত রঈস্‌।মর যাবো, পর ইঁহা নহী আবো।
    -- না, না! তঁয় গলত গোঠিয়াথস্‌ সওয়ারি!

    ( না, না! তুই ভুল বলছিস বৌ!)
    টেবিলে ঘুঁষি মেরে চায়ের কাপ উল্টে দাঁড়িয়ে পড়েছে হকলারাম, এখন ও একটুও তোতলাচ্ছে না। স্পষ্ট গলায় বলে-- হমন কাল আবো, পরশু আবো, রোজ আবো। পর অকেলা নহী, বিনুদাদা, সমারিন ভৌজি, সেবারাম অউ পাঁচজন অলা সঙ্গ ধরকে আবো। এমন চোর-চোট্টা লালচী হমার কা উখাড় সকী?
    ( আমরা কাল,পরশু রোজ এখানে আসবো। কিন্তু একা নয়, গাঁ থেকে অনেকে মিলে একজোট হয়ে আসবো। এই চোর-লোভী গুলো আমাদের কি ছিঁড়বে?)

    গঙ্গারাম আবার ভ্যাবাগঙ্গারাম হয়ে যায়।

    --------তৃতীয় আঁক শেষ----

  • ranjan roy | 59.161.24.213 | ২২ মার্চ ২০১২ ০৮:৫৯527506
  • চতুর্থ আঁক
    --------------
    "রিমির- ঝিমির বরষে পানি'
    -----------------------
    ১)
    বাসের জানলা দিয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়ায় একটু চোখটা লেগে এসেছিল। হটাৎ জোরে ব্রেক কষতেই মাথাটা সামনের সীটের লোহার রডের গায়ে ঠুকে গেল। তন্দ্রার ঘোর কেটে গেছে। গঙ্গারাম কপালের ওপরে দ্রুত টোপাকুলের মত ফুলে ওঠা জায়গাটায় হাত বোলায়। অপ্রস্তুত চেহারায় এদিক-ওদিক তাকায়। না, সহযাত্রীদের কেউ ওকে দেখে হাসছে না।
    এল কোথায়?
    বাইরে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারে যে রজকম্মা পেরিয়েছে;
    ঘুইচুবার আগে একটি প্রায় ঘোড়ার নালের মত বাঁক নিয়েছে রাস্তা, আর হটাৎ সামনে এসে পড়া মোষের পালের সঙ্গে টক্কর বাঁচাতে ড্রাইভার প্রাণপণে ব্রেক কষেছে, তাই এই বিপত্তি।
    যাহোক, বাস আবার স্পীড তুলেছে।
    ও আন্দাজ করে যে এভাবে চললে আর ঘন্টাখানেকের মধ্যে ও পৌঁছে যাবে ওর গন্তব্যস্থল পালি-- আদিবাসী এলাকার একটি ব্লক হেডকোয়ার্টার।

    ভর দুপুরে গায়ে একটি ফ্লানেলের ফুল শার্ট , তবু যেন
    শীত শীত করে।
    ফেব্রুয়ারির শেষ, দুপুরে গরম, সন্ধ্যেয় কোমল শীত, যাকে বলে গুলাবী-জাড়া। গঙ্গারামের শাল-ফুল সোয়েটার সব বাসের ছাদে তোলা সুটকেসের ভেতর। রাস্তার দুধারে ঘন শাল-সেগুনের বন আর দিগন্তে হাতির মত উঁচু পাহাড়ের সারি। তাই রোদ্দূরও কেমন মরা মরা, যদিও ঘড়ি বলছে বেলা তিনটে।
    ছত্তিশগড়ের ইস্পাতনগরী ভিলাইয়ে বড় হয়েছে গঙ্গারাম দেবাঙ্গন। ও যখন মায়ের কোলে তখনই গাঁ ছেড়ে বাবার নতুন চাকরির সুবাদে ওরা এসে ওঠে ইস্পাতকারখানার সেক্টর ফোরের লেবার কোয়ার্টারে।
    সাত সকালে উঠে ওর মা কাঠকয়লা দিয়ে উনুন ধরাতো, চায়ের কেটলি চাপাতো, তারপর বাবার জন্যে ছটা হাতে গড়া রুটি আর ছেঁচকি, পেঁয়াজ, আচার দিয়ে দুপুরের জন্যে টিফিন বানিয়ে কৌটোয় ভরে দিত। আটটার আগেই বাবা মাথায় হেলমেট, পায়ে গামবুট পড়ে সাইকেল নিয়ে কারখানার জন্যে বেরিয়ে যেত। তারপর মায়ের অখন্ড অবসর। ওদের দু'ভাইকে জলখাবার দিয়ে মা পড়তে বসাত, তারপর গল্প জুড়তো পাশের কোয়ার্টারের
    চাচীদের সঙ্গে। গায়ে গায়ে কোয়ার্টার। দুটো কামরা, একচিলতে উঠোন, একটু বাগানের জায়গা। তাই চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে দুই বা তিনজন গিন্নির কনফারেন্স সহজেই চলতে থাকতো।
    তার আবার একটা বাঁধা ছক ছিল। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে যতটুকু কানে আসতো তাতে কিছুদিন বাদেই সেটা গঙ্গারামদের কানে ধরা পড়লো।
    প্রথমে যে ঘরের গিন্নি খালি হাত হলেন তিনি রান্নাঘরের সঙ্গে লাগোয়া উঠোনে গিয়ে উঁচু গলায় জিগাইবেন-- আজ কা সাগ রাঁধে হস্‌ দিদি ও?
    ( কি তরকারি রেঁধেছ গো দিদি?)
    বলে রাখা ভাল যে বাংলায় যেটা শাক, ছত্তিশগড়িতে সেটা ভাজি।
    এরপর কনফারেন্সের দ্বিতীয় এজেন্ডা আইটেম হবে উনি আজ খেয়ে গেলেন কি না, এবং ওনার আজকে মুড ভাল আছে তো?
    তৃতীয় আইটেম সেক্টর এলাকার চিত্রমন্দির হলে বা হাইওয়ের ওপারে ভেঙ্কটেশ্বর হলে কোন হিন্দি সিনেমা এসেছে কি না।
    শেষপাতে চাটনির মত অধিবেশনের শেষ আইটেম হল
    নতুন কোন কেচ্ছা, অভাবে পাড়ার কোন বাড়িতে বেড়াতে আসা অল্পবয়সী ধিঙ্গি মেয়ের বেহায়াপনা।
    তারপর সবার খেয়াল হবে যে বাচ্চাদের এবার চানটান করিয়ে খাইয়েদাইয়ে স্কুলব্যাগ গুছিয়ে পাঠাতে হবে। এগারটায় স্কুল শুরু হয়ে যায়।
    এভাবেই গঙ্গারামেরা দুভাই বড় হয়ে উঠল। পড়াশুনায় মন্দ ছিল না। অংক-হিন্দি-ইতিহাস-ভূগোল নিয়ে কোন সমস্যায় পড়তে হয় নি। কিন্তু ইংরেজি ভাষাটা শেষপর্য্যন্ত অন্যরকম সাজগোজ করা অফিসার পাড়ার মেয়ে হয়েই রইল।
    তারপর হাল ফ্যাশনের প্রাইভেট কলেজে না গিয়ে ও ভর্তি হল সরকারি কলেজে। ওখানে সব বিষয় হিন্দিতে পড়ানো হয়। প্রথম বিভাগে বি এ পাশ করে এম এতে ভর্তি হবে কি না ভাবছে এমন সময় বাবা নিয়ে এলেন একটি বিজ্ঞাপন।
    জরুরী অবস্থায় ইন্দিরাজী গাঁয়ে মহাজনী -সুদখোরি নিষিদ্ধ করে তার বদলে গরীবদের শস্তা লোন দেয়ার জন্যে
    খুলেছেন গ্রামীণ ব্যাংক। তাতে অফিসার নিচ্ছে।
    -- আমার বড়া সাহাব বলেছেন তোমার ছেলেটা তো ফার্স্ট ডিভিসনে পাশ করেছে। এইখানে দরখাস্ত পাঠিয়ে দিক। চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?
    ঝামেলা হল তারপর। গঙ্গারাম ফর্ম ভরে পাঠিয়ে দিল। ঠিক সময়ে লিখিত পরীক্ষায় বসল। ইন্টারভিউ কল পেল। তারপর একদিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেল। ওকে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে শিক্ষানবিশী ম্যানেজার হিসেবে কাজে জয়েন করতে হবে।
    ওর বাবা সুখরাম মিষ্টি নিয়ে বসের সঙ্গে দেখা করতে গেল। ফিরে এল মুখগোমড়া করে। বস দেখা করেন নি।
    সুখরাম জানতে পারল ওনার ছেলেকেও এই চাকরির জন্যে উনি ফর্ম ভরিয়েছিলেন। ও পাশ করেনি।
    সাতদিন পর সুখরামের বদলি হল ব্লাস্ট ফার্নেস বিভাগে। ফুটন্ত লোহার উত্তাপের সামনে দাঁড়িয়ে আটঘন্টা ডিউটি করতে হবে।
  • প্পন | 122.133.206.25 | ২২ মে ২০১২ ২১:৩৫527507
  • ...
  • ranjan roy | 24.99.212.215 | ২৩ মে ২০১২ ০০:২১527509
  • ২)
    সে যাই হোক, গঙ্গারাম গ্রামীণ ব্যাংকের ম্যানেজারের চাকরি পাওয়ায় ওর মা স্বামীর ব্লাস্ট ফার্নেসের পোস্টিং নিয়ে মুখপোড়া ভগবানের একচোখোমি নিয়ে নালিশ করতে ভুলে গেল। উল্টে সংকটমোচন মন্দিরে নারকেল চড়িয়ে এল। প্রতিবেশীদের নারকেলের টুকরো আর নকুলদানার প্রসাদ দিতে দিতে জানাল যে যদিও তার স্বামী মজদুর বা ওয়ার্কার, ওদের ছেলে কিন্তু চাকরি জীবন শুরু করেছে অফিসার হয়ে, সোজা কথা না।
    কিন্তু গঙ্গারামের এখনো শিক্ষানবিসি চলছে, এ ব্রাঞ্চ, ও ব্রাঞ্চ করে প্রায় ছ'মাস ধরে তিনবার ট্রান্সফার হয়েছে । বস বলছেন যে আর ছমাস পরেই ও কোন ব্রাঞ্চের চার্জ পাবে, পেয়ে পুরোদস্তুর ম্যানেজার হবে।
    এখন ও চলেছে পালি নামের ব্লক হেডকোয়ার্টারে, এই ট্রাইব্যাল এলাকার শাখার ম্যানেজার যা্চ্ছে ছুটিতে, প্রায় দশদিনের জন্যে, সেখানে ওকে ডেপুটেশনে পাঠানো হচ্ছে স্থায়ী ম্যানেজারের টেম্পোরারি চার্জ নিতে।
  • ranjan roy | 24.99.252.204 | ২৩ মে ২০১২ ১৫:৪৫527510
  • পালি বাসস্ট্যান্ডে নেমে ওর মনটা কেমন হয়ে গেল। শীতের বিকেল। আজ বেস্পতিবার বা গুরুবার। বোধহয় এখানের সাপ্তাহিক হাটের দিন। ব্যাপারি-চাষি সবাই ধীরে ধীরে ঝাঁপ গোটাচ্ছে। টম্যাটো-মূলো-বেগুন-কপিওলারা সাইকেলের পেছনে রবারের টিউব দিয়ে ওদের ঝুড়ি বা ঝাউয়াগুলো বেঁধে নিচ্ছে। আর কাপড়-রেডিমেড পোষাক অথবা ছিপিয়া বা আলতা-সিঁদুর-চুলের ফিতে ইত্যাদি প্রসাধন সামগ্রীর ব্যাপারিরা ওদের গাঁঠরি বেঁধে তুলছে ভাড়ার জীপে, ম্যাটাডোরে, ট্রাকে বা বাসের মাথায়।ময়লা আকাশ, কোথাও কোথাও এই অবেলাতেই জ্বলে উঠছে এক-আধটা হলদেটে আলো। কাছেই দেশি মদের দোকান থেকে লোকজন ফিরছে একেবারে টুন্‌ হয়ে। বিক্রি বাড়ছে পাশের তেলেভাজার দোকানের। গাঁয়ের দোকানিদের মাসিক দশ টাকা হারে সুদে পয়সা খাটানো চিমসে সর্দারজীও নিজের হাটকি ব্যাংক
    অর্থাৎ ক্যাশ ও টিপছাপের কাগজভরা ব্রিফকেস বন্ধ করে চলেছে দীঘির উঁচু পাড়ে বটগাছের পেছনে ঝোপড়িতে, শরীরের খিদে চটজলদি মিটিয়ে নিতে।
    গঙ্গারামের সুটকেস আর একটি এয়ারব্যাগ কাঁধের বাঁকে তুলে নিয়ে হাঁটতে থাকে বাসস্ট্যান্ডের একজন মুটে বা বোঝা-বহনেওয়ালা।
  • ranjan roy | 24.99.252.204 | ২৩ মে ২০১২ ১৬:০৬527511
  • বাজারের পর সরকারি স্কুল, আর তার পরেই একটি ছোট বাড়িতে গ্রামীণ ব্যাংক। গঙ্গারাম সেখানে গিয়ে ম্যানেজারের চার্জ নেবে! একটু রোমাঞ্চ যে হচ্ছে না তা নয়, হোক না মাত্র দু'সপ্তাহের জন্যে অস্থায়ী ম্যানেজার। ওর মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে যে চার্জ নিয়েই ও বাড়িতে চিঠি দেবে, ব্যাংকের ঠিকানা ও মোনোগ্রাম ছাপা খামে। মা সেই খাম দু'পাশের দুই প্রতিবেশিনীদের দেখাবে, তারপর গঙ্গারামকে জবাব দেবে। সেই চিঠি আসবে পালি ব্যাংকে, তাতে খামের ওপর লেখা থাকবে শ্রীমান গঙ্গারাম দেবাঙ্গন,
    শাখা প্রবন্ধক!
    কিন্তু ব্যাংকে ঢুকেই ও চমকে যায়। ফিটফাট কেতাদুরস্ত দাড়িকামিয়ে- নীলগাল ম্যানেজার একটি টেবিলে বসে টাকা গুনছে, মানে ক্যাশ মেলাচ্ছে। আর গালে চারদিনের না-কামানো দাড়ি ক্লার্ক পাজামা -পাঞ্জাবী ও হাওয়াই চটি পরে চেয়ারে বসে পা-নাচাচ্ছে আর মাটির ভাঁড়ে চা খেতে খেতে একজন ক্লায়েন্টের সঙ্গে গল্প করছে।
    বিরক্ত গঙ্গারাম সোজা গিয়ে নোট গুনতে থাকা ম্যানেজারের সামনে দাঁড়ায়, গলা-খাঁকারি দেয়, তারপর বলে--- আমি দেবাঙ্গন; পালি ব্রাঞ্চের অস্থায়ী চার্জ নিতে এসেছি। এই আমার পরিচয়পত্র, হেড অফিস থেকে অ্যাটেস্ট করা স্পেসিমেন সিগনেচার।
    ক্যাশ গুনতে থাকা ভদ্রলোক ঝট করে দাঁড়িয়ে উঠে বলেন,-- নমস্কার স্যার! আমি ক্যাশিয়ার মাধবন। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার উনি, ঐ যে হলের ওপাশে বসে চা খাচ্ছেন। চিঠিটা ওনাকে দিন।
  • b | 135.20.82.164 | ২৪ মে ২০১২ ১২:৫৭527512
  • ফাডাফাডি।
  • ranjan roy | 24.99.158.53 | ২৫ মে ২০১২ ০০:৫৩527513
  • পাজামা-পাঞ্জাবী উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,-- বাঁচালেন! আপনাকে যে কি বলে ধন্যাবাদ দেব। আপনি রিলিভ করতে না আসলে আমার কাল থেকে ছুটিতে যাওয়া হত না, ঘরে ভীষণ অশান্তি হত। শালাবাবুর বিয়ে যে! একমাস আগে দরখাস্ত দিয়েছি, কিন্তু এখানে কেউ রিলিভার হয়ে আসতে চাইছে না। কিন্ত আমাকে যে যেতেই হবে। কথায় বলে না?-- সারে দুনিয়া একতরফ, জরু কে ভাই একতরফ।
    আপনি কিচ্ছু চিন্তাকরবেন না। এই যে ক্যাশিয়ার ছেলেটি -- এ কাজ খুব ভাল জানে। এম কম, বুঝলেন। পাব্লিক রিলেশন ভাল, আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আগে কখনো ম্যানেজারি করেন নি? এই প্রথম? ভয় করছে? আরে মশাই, ভয়ের কিছু নেই। দুগ্গা বলে ঝুলে পড়ুন। আমরা জীবনে অনেক কাজই প্রথম করি। আরে বিয়ের সম্বন্ধ এলে কি করবেন? আগে কখনো করেন নি বলে না করে দেবেন? হা-হা-হা!
    মাধবন থাকতে কোন চিন্তা নেই। ও সব করে সাজিয়ে দেবে। ভাউচার বানিয়ে লেজারে পোস্ট করে দেবে। আপনি খালি ঠিক জায়গায় সইটি করবেন, ব্যস্‌।
    ও হ্যাঁ, আমি একটা কথা বলে দিই। ছুটি নিয়েছি দশদিনের। গিয়ে কিন্তু ঘর থেকে টেলিগ্রাম পাঠাবো- সিক হব। একমাস পরে ফিরবো। আপনি এইটুকু হেল্প করুন, আপনার কোন চিন্তা নেই। আমার ঘর খুলে দিয়ে গেলাম। খাটিয়া টেবিল সব আছে। মেসেঞ্জার জগদীশ রান্না করে দেবে। ও জাতে গোয়ালা, যাদব। আপনার খেতে কোন অসুবিধা হবে না। রোবাবারদিন বিলাসপুর গিয়ে সিনেমা-টিনেমা দেখে ফিরবেন। থাকুন মশায় একমাস, কোন চিন্তা নেই।
    বলছি কি বেশি লোন-টোন দেবেন না। এখানে বেশি স্কোপ নেই। কিন্তু কৃষি ঋণ চাইলে না করবেন না। আমরা গ্রামীণ ব্যাংক, মনে রাখবেন। ঘাবড়াবেন না। মাধবন ফর্ম ফিল আপ করে দেবে। ডকুমেন্ট বানিয়ে দেবে। কোন চিন্তা করবেন না।
  • ranjan roy | 24.99.210.180 | ২৫ মে ২০১২ ২১:১৫527514
  • শুরু হয় গঙ্গারামের ম্যানেজারি। আস্তে আস্তে বুঝতে পারে প্রচুর কাজ পেন্ডিং রেখে ছুটিতে গেছেন স্থায়ী ম্যানেজার শ্রীমান বনছোড়। তাই শুধু মাধবন যেখানে আঙুল রাখবে সেখানে সই করলেই কাজ হবে না। হেড অফিস থেকে অনেকগুলো মেমো এসে পড়ে আছে। রিজার্ভ ব্যাংকের কোয়ার্টার্লি রিটার্নস্‌ এবং অনেকগুলো রুটিন স্টেটমেন্ট তৈরি হয় নি। তাই গঙ্গারাম রাত্তিরে বসে "ময়লা সাফ" করে! দুটো টেবিল জোড়া দিয়ে কাগজ পত্তর বিছিয়ে ডেটা শীট বানায়, স্কেল দিয়ে লাইন টেনে ফরম্যাট বানিয়ে সাহায্য করে চাপরাশি জগদীশ, কায়দা করে দুটো কার্বন এমন ভাবে লাগায় যাতে ট্রিপ্লিকেট সহজেই তৈরি হয়ে যায়। মাথার ওপরে একটি টিউব লাইট জ্বলে। আস্তে আস্তে কামরা ভরে যায় শ্যামাপোকা বা" মাহো"তে। ধানকাটা শেষ হয়েছে যে!
    এছাড়া উচ্চিংড়ে, গান্ধীপোকা, নানারকম শুঁয়োপোকা আস্তে আস্তে ঘরে ঢোকে।
    মেজের মধ্যে একটি কোটর। তাতে থাকে একটি কোলাব্যাঙ, রোজ বেরিয়ে এসে পোকা ধরে খেয়ে মোটা হতে থাকে। কিন্তু বেশ লাজুক। গঙ্গারামের সঙ্গে চোখাচোখি হলেই মুখ নামিয়ে তাড়াতাড়ি গর্তে ঢুকে যায়।
    কাছেই পাহাড় আর জঙ্গল। মহুয়ার ফুল ঝরে পড়া শুরু হয়েছে। সন্ধে হতেই ঝিঁঝির ডাক শুরু হয়ে যায়। আর কাছের জঙ্গল থেকে ভেসে আসে একটা মাদক গন্ধ। জঙ্গল ঋতুমতী হয়েছে।
    পাশের টেবিলে একটি ছোট ট্রানজিস্টার থেকে রয়পুর স্টেশন থেকে ভেসে আসে স্থানীয় খবর, ছত্তিশগড়ি পল্লীগীতি।
  • ranjan roy | 24.99.0.170 | ২৫ মে ২০১২ ২৩:১৩527515
  • হলঘরের এক কোণে জনতা স্টোভে রান্না চড়িয়েছে জগদীশ। আলু আর কুঁদরু, একটু ডাল। স হেষ পাতে আচার। এই দিয়ে ভাত খেয়ে নেয় ওরা দুজনে। রাত হলে ওরা শুয়ে পড়ে। মশা আছে একটু, খাটাখাটনির পরে চাদর মুড়ি দিলে আর ওসব টের পাওয়া যায় না। আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়। সাপের ভয় আছে। একদিন একটা করাত সাপ ঢুকে পড়েছিল। ইস্পাতনগরী ভিলাইয়ে বড় হওয়া গঙ্গারাম কখনো ঘরের মধ্যে সাপ দেখেনি। জগদীশ অবিচলিত। ঝাড়ু দেয়ার ভঙ্গিতে একটা চ্যালা কাঠ তুলে নিয়ে মেরে ফেলে সাপটাকে, তারপর উঠোনে কেরোসিন তেল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়। নইলে নাকি বৃষ্টি পড়লে বেঁচে উঠতে পারে।
    সময় কাটাতে গঙ্গারাম গল্প শোনে, জগদীশের গল্প। রান্না করতে করতে ও শোনায় চটকদার সব কিস্‌সা। এবারে পুসউ সতনামী কি করে উপসরপঞ্চ হল, নতুন স্কুলবিল্ডিং বানাতে ঠিকেদার আর প্রিন্সিপাল স্যারের মধ্যে কত টাকার লেনদেন হয়ে ছিল, সুদখোর ননকীরামের সোমত্ত মেয়ে কার সঙ্গে পালিয়েছে, আগের ম্যানেজারের ঘুষের টাকা আদায়ের মিডিয়াম কোন কোন গ্রামসেবক ছিল এইসব।
    ইতিমধ্যে মায়ের চিঠি পায় গঙ্গারাম। হ্যাঁ, কথামত খামের ওপর শ্রীমান গঙ্গারাম দেবাঙ্গন, শাখা প্রবন্ধক লেখা ছিল।
    নিজেদের কুশলমঙ্গল, ছোট ভাইয়ের স্কুলের রেজাল্ট, প্রতিবেশি সোহনলাল চাচার বাঁদিকটা লকওয়া মেরে যাওয়া সব কিছু লেখার পর মা লিখেছে যে মায়ের শরীরটা আজকাঅল ভাল যাচ্ছে না। খাটা খাটনির পরে কোমর ধরে যায়, রাতে ঘুম আসে না। এখন বাড়িতে বৌ এলে ভাল হয়। নানা জায়গা থেকে প্রস্তাব আসছে। কিন্তু ম্যানেজারের বৌ একটু লিখি-পড়ি হলে ভাল হয়। তাই মা গাঁয়ের থেকে আসা সবগুলো প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। তবে ভিলাইয়ের প্ল্যান্টের ভাল স্কুলে পড়া ইংরেজি জানা মেয়ের বাড়ি থেকেও ফটো এসেছে। একটু বাজিয়ে নিতে হবে। ঘরে এসে পরে যেন শ্বাশুড়িকে ভক্তিছেদ্দা করে।
    গঙ্গারাম কি মাসের প্রথম রোববারে দিন দুয়ের জন্যে ভিলাই আসতে পারবে ? তাহলে ভাল হয়।
  • নিশান | 82.89.200.226 | ২৭ মে ২০১২ ০৮:১২527516
  • অতি মনোরম, এবং সুখপাঠ্য :)
  • a | 132.179.51.221 | ২৭ মে ২০১২ ১০:৩৪527517
  • বস, টু গুড
  • ranjan roy | 24.96.71.192 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ০২:৪৫527518
  • মাসের প্রথম রোববার? এখনো তিন সপ্তাহ বাকি। যাবে গঙ্গারাম, নিশ্চয়ই যাবে। ততদিনে মাইনে জমা হবে ওর সেভিংস অ্যাকাউন্টে বা বচত খাতায়। কিছু টাকা নিয়ে যাবে, সোজা মার হাতে তুলে দেবে। বাবা এখনো স্টিল প্ল্যান্টের চাকরিতে, রিটায়ার হতে আরও বছর দশ- বারো। ওর থেকে টাকা কেউ চায় না, বাবা-মা কেউ না। তবু নিজের হাতে যদি মাকে কিছু দিতে পারে, নিদেন পক্ষে একটা শাড়ি।
    ঠিক, ও তাই করবে। চল্লিশ কিলোমিটার দূরের ছুরি গাঁয়ের থেকে নিয়ে যাবে কোসা বা তসরের শাড়ি।
    যখন কোন কথা না বলে ও মায়ের হাতে শাড়িটি তুলে দেবে তখন মায়ের মুখটা কেমন হবে ও এখন থেকেই যেন দেখতে পাচ্ছে।
    ও চিঠি লিখতে বসেঃ
    পূজ্য মাতাজি, প্রণাম। বাপু কো প্যার লাগুঁ।
    তারপর? তারপর কি লিখবে? মেয়ে দেখতে যাচ্ছে? না, না! ও কি দেখবে? দেখে নিন মা-বাবা। ওর দাঈ-দদা। ওঁরা যা করেন ওর ভালর জন্যেই। আর ওর নিজের তো কোন অভিজ্ঞতা নেই। মেয়েদের দুনিয়া অন্যরকম, তার কিছুই ওর জানা নেই।
    তারপর ও লেখে যে ওর আলাদা কোন পসন্দ-না পসন্দ নেই। বাবা-মা যা ঠিক করবে তাতেই ওর মত ।
    এরপর চিঠিটা চুপচাপ চাপরাশির হাত দিয়ে ডাকবাক্সে ফেলে দেয়া হয়।
    রোববার দিন ওর মনে হল আজ দাড়ি কামালে হয়। এমনিতেই ওর দাড়ি-দোঁপ একটু কম। কলেজে ছেলেদের থেকে 'চিকনা-চিকনা' বলে বেশ আওয়াজ খেত। চাপরাশির থেকে জানা গেল যে বাসস্ট্যান্ডের কাছে গোটা কয় নাপিত আছে।
    আজ সিগ্রেট খেলে কেমন হয়? ও পানঠেলা থেকে একটা পানামা ধরিয়ে নাপিতের জন্যে ইতিউতি তাকাতে লাগল। চাপরাশি ইশারা করল--- একটা লোক হাতবাক্স নিয়ে ওর মতই এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে মোড়ের মাথা থেকে এদিকে এগিয়ে আসছে।
    নাপিতই বটে! ভিন গাঁ থেকে কাজের ধান্ধায় এদিকে পাল্বাজারে এসেছে। কিন্তু লোকটা কেমন ভ্যাবলাকান্ত মার্কা, 'নাউয়া' বলতে লোকে যেমন ধূর্ত চালু টাইপের লোক বোঝে তেমন নয়। একটা বন্ধ দোকানের সামনে ভাঙা চেয়ার লাগিয়ে বাটিতে করে জল আর ছোট্ট হাত-আয়না নিয়ে ওর ক্ষৌরকর্ম শুরু। ব্যাংকওলা সাহেবের জন্যে ও নতুন ব্লেড লাগিয়েছে, কিন্তু হাত চলছে বড্ড ধীরে।
    একটা গাল শেষ হতে না হতেই বন্ধ দোকানের মালিক এসে গেল। এসেই নরসুন্দরকে দুই ধমক। ও এখন দোকান খুলবে। নাপিত যেন ওর চেয়ার-টেয়ার অন্ততঃ পাঁচ হাত দূরে সরিয়ে নেয়। আর সাহেবের দাড়ি কামানো হলে সামনেটা যেন ঝাঁট দিয়ে সাফ-সাফাই করে যায়।
    মনঃক্ষুণ্ণ নাপিত বিড়-বিড় করে --' ও শালে চুতিয়া হ্যায় সাহাব!"
    বিরক্ত গঙ্গারাম জিগ্যেস করে--- তোমার নিজের কোন স্থায়ী দোকান ঘর নেই?
    নাপিতের গলার স্বর খাদে নামে।
    -- তিনদিন হলে এখানে এসেছি সাহাব। আমার ছোদ্দপুরুষের ভিটে হল চোরভাট্টী গাঁয়ে। সেখানে ঘরদোর -দোকান সব আছে। সেসব ছেড়ে পালিয়ে এসেছি। আর ফিরব না।
    --- সেকি ? কেন?
    ---- সায়েব, পর পর দুটো বাচ্চা মরে গেল। কি ফুটফুটে ছিল। আমার পিঠে চড়ত, ফোকলা মুখে হাসত, আমার গায়ে নাল গড়াত। কিন্তু কার যে নজর লাগল। পর পর তিনমাসে দুটোই মরে গেল। ডাক্তার-বদ্যি-ওঝা-বৈগা সব করিয়েছি। কিছু হল না। বুখার আসত, ঝিমোতে থাকত। কিছু খেত না। ব্যস্‌, চলে গেল। আর আমার ঘরে কুরুক্ষেত্র শুরু হল। মোর দাঈ-বাঈ দোন মাঁ নহি পটত রঈসে। আমার মা আর বৌ একে অন্যকে শাপ দিতে লাগল। এ বলে--- তুই খেয়েছিস, ভিন গাঁয়ের রক্তচোষা মাগি! আগে আমার সোনার বন্ন ছেলেটার রক্তচুষে খেয়ে ওকে দুবলা করেছিস, এখন বাচ্চাদুটোকে খেলি!
    ও পাল্টা বলে--- বুড়ি ডাইনি কোথাকার! নিজের সোয়ামিকে খেয়ে আশ মেটেনি? এখন নাতি-নাতনিকে খেলি? এমন সব্বনাশি চুড়েল কে মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে গাঁছাড়া করা উচিত।
    আমি কি করি? একজন আমার মা, আমাকে জন্ম দিয়েছে। আরেকজন আমার বৌ, সোহাগ করে, ওর কোলে আমার বাচ্চাদুটো এসেছিল।
    রোজ রোজ কাঁহাতক পোষায়! শেষে ধেত্তেরি বলে পালিয়ে এলাম, ওরা মরুক চুলোচুলি করে, আমি এখানেই জুটিয়ে নেব।
  • ranjan roy | 24.99.53.25 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ২১:০৪527520
  • ৩)
    ইতিমধ্যে এই ব্রাঞ্চের স্থায়ী ম্যানেজার শ্রীমান বনছোড়ের থেকে খবর এসেছে-- ব্যস্‌, আর দুটো সপ্তাহ। তারপরই আমি এসে আপনাকে রিলিভ করে দেব।আশাকরি আপনার কোন অসুবিধে হচ্ছে না। জগদীশ নিশ্চয়ই আপনার সুবিধে-অসুবিধের খেয়াল রাখছে।
    খুশির কথা। নিজের মূল হেডকোয়ার্টারে ফেরার আগে ও একসপ্তাহের ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবে। কিন্তু তেমন আনন্দ হচ্ছে কই? বরং একটু খারাপ লাগছে। নিজের অজান্তে এই গেঁয়ো আদিবাসী জঙ্গলি এলাকা কেমন ভাল লেগে গেছে। ভাল লাগছে সন্ধ্যেয় জগদীশের সঙ্গে নদীর তীর অব্দি বেড়াতে যাওয়া। হাটের দিনের ভীড়, নানান গাঁয়ের থেকে আসা দোকানদারদের দেহাতি জিনিসপত্র আর মানুষজনের হৈ-চৈ। সন্ধ্যের পর ঝুপ করে নামে অন্ধকার। রাস্তা, অলিগলি একেবারে শুনশান। দূরের কোন পাড়া থেকে রামায়ণ গানের সুর হাওয়ায় ভাসে। কখনো সুর কাটে এক-আধটা পেঁচি মাতালের বেসুরো গানের কলি আর খিস্তি-খেউড়ে।
    জগদীশ কাঠের আগুনে রুটি সেঁকে, হাতের সঙ্গে সঙ্গে মুখ চলে। ওর নানান রকমের গল্প শুনে গঙ্গারাম ভাবে ---সত্যি, এত সব আগে জানা ছিল না। দুনিয়াটা কত বড় আর কত বৈচিত্র্যময়!
    অনায়াসে ম্যানেজার ও চাপরাশির মাঝখানের লক্ষ্মণরেখা মুছে যায়। গঙ্গারাম জিগ্যেস করে--- হাটের দিনে ওই যে একজন বসে, সব্জি নিয়ে, তাজা সব্জি, কিন্তু বড্ড দাম। এত দাম কেন?
    জগদীশের ঠোঁটে চাপা হাসি। রুটি বেলতে বেলতে গোবেচারা মুখ করে বলে--- কার কথা বলছেন বলুন দিকি?
    -- আরে ওই যে বেশ চোখা নাকমুখ, অহংকারী চেহারা!
    হো-হো করে হেসে ওঠে জগদীশ।
    -- ও হো, ঠাকুরাঈনের কথা বলছেন? ওদিকে তাকাবেন না। ওরা জাতে ঠাকুর। কিন্তু ওদের তিনবোনের একজনই সোয়ামী। সে আবার জাতে সপেরা, মানে সাপুড়ে। ওরা এক পুরুষকে নিয়ে মিলেমিশে আছে। ওদের আধা একরের কোলাবাড়ি( ঘরের গায়ে লাগা পাতকো সমেত তরিতরাকারির বাগান)। পরিশ্রম করে ভালো বেগুন-টম্যাটো-লংকা-লাউকুমড়ো ফলায়। দাম বেশি হবেই।
    তবে ওই যে বল্লাম,--- ওদের কোন বোনের দিকে তাকিয়েছেন তো সাপুড়ে ব্যাটা ঘরে নাগিন ছেড়ে দেবে।
    আপনি ব্যাংকের ম্যানেজার। অনেক মেয়ে পাবেন। বলুন তো কালই--।।
    গঙ্গারামের ম্যানেজার সত্ত্বা জেগে ওঠে। কড়া গলায় বলে--- একদম ফালতু কথা বলবে না। কাকে কি বলছ খেয়াল রেখো। উঙ্গলি পকড়নে দিয়ে তো পুরা হাত পকড়কর খিঁচনে লগে!
    ( আঙুল ছুঁতে দিয়েছি কি গোটা হাত ধরে টানাটানি!)
    ধমক খেয়ে কথার স্রোতে ছেদ পড়ে। গঙ্গারাম ট্রান্জিস্টার চালায়।
    বিবিধ ভারতী স্টেশন থেকে পুরনো ফিল্মের সুর ঘরের দেয়ালে পাক খায়-- ও দূর কে মুসাফির! হামকো ভি সাথ লে লে"।। রাতের হাওয়ায় ভেসে আসা মহুয়ার গন্ধ আরও তীব্র হয়।
  • sosen | 125.241.77.159 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ২১:০৫527521
  • পড়ছি
  • ranjan roy | 24.99.53.25 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ২১:৪৫527522
  • ,মাঝরাত্তিরে ঘুম ভেঙে যায় গঙ্গারামের। বাইরে তুমুল ঝড় আর বৃষ্টি। বৃষ্টির ছাঁট জানলা দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে বিছানা। ঘরের মধ্যে মাটিতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে জগদীশ নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। হ্যাজাকবাতির আলো নিভু নিভু।আরে! শিল পড়ছে,! টিন ও খাপরার ছাদের ওপর চড়বড় চড়বড় আওয়াজ।
    জগদীশ ঘুম জড়ানো স্বরে বলে --ওলে গির রহা হ্যায় সাহাব। খিড়কি বন্দ্‌ করকে সো জাইয়ে।
    পরের দিন রোদ্দূর উঠেছে। অসময়ের এই বর্ষণে চারদিকে বেশ একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। বড় বড় সেগুন-শাল ও বনইমলি গাছের পাতায় শীতকাল জুড়ে জমে থাকা ধূলো ধুয়েমুছে সাফ। মনটা ভাল হয়ে যায় গঙ্গারামের। চা' দিতে এসে জগদীশ বলে-- সায়েব রাগ করেছেন? আমার বেয়াদপি মাপ করে দিন। আর কখনো হবে না।
    গঙ্গারাম একটু লজ্জিত হয়ে বলে--- ওসব ভুলে যাও।
    ইতিমধ্যে বাবার কাছ থেকে একটি চিঠি এসেছে। মায়ের শরীর সারাজীবন খাটাখাটনির পরে ইদানীং একটু বিশ্রাম চাইছে। ঘরে ছোট বোন সাহায্য করে বটে, কিন্তু সে আর কতদিন! ষোলয় পড়লেই ওকে পাত্রস্থ করতে হবে। হাজার হোক, বেটি তো হ্যায় পরায়া ধন। পরের গচ্ছিত আমানত। একদিন বিদেয় করতেই হবে। তাই যত শিগ্গির সম্ভব মায়ের পায়ে পায়ে ঘোরা কাজকম্মে হাত লাগানো একটি ছোটখাট পয়মন্ত বৌ আনতে হবে। পাত্রী একরকম দেখা হয়ে গেছে। পাল্টি ঘর। মেয়ের বাবা গঙ্গাসাগরে তীরথ করতে গেছে। ফিরে এলেই গঙ্গারামকে পাকাদেখার জন্যে খবর দেয়া হবে।।

    ৪) কিন্তু জগদীশ কথা রাখেনি। ক'দিন পরে এক শনিবারের বিকেলে ফের শুরু করল।
    --- সাহাব আপনাকে তীজ কুঁয়র নেওতা দিয়েছে।
    --- তীজ কুঁয়র? সে আবার কে?
    ---- আরে, এখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরের মাদন গাঁয়ে থাকে। দুজ আর তীজ দুইবোন। এখানে সবাই চেনে। শুনুন, জঙ্গলের ধারে বনবিভাগের জমিতে ওদের কুঁড়ে ঘর। বাবা জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে এনে পালি বাজারে জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করত। ওরা দু'বোন বন থেকে বহেরা, আমড়া, হর্তুকি, মহুয়া এনে শুকিয়ে বিক্কিরি করত। এমন সময় বাবাকে জঙ্গলে ভালুকে ধরল। কাঠঘোরার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে প্রাণ বেরিয়ে গেল।
    মাকে নিয়ে ওরা দুইবোন মহা ঝামেলায়। এম সময় ভগবানের দয়া হল। ওরা বনবিভাগের বড়বাবুর নজরে পড়ল।
    দু'বোন ফরেস্ট অফিস গেছল ভালুকের হামলায় বাবার মৃত্যুর ক্ষতিপুরণ দাবি করতে।। ফিরে এল চাল-ডাল-তেল বাহারি জামাকাপড় আর কিছু কাঁচাপয়সা নিয়ে।
    তারপর ওদের কাঠপাতার ঘরে টালির ছাদ হল, মাচানে কুমড়ো ফুল, গভীর পাতকুয়ো। ঘরে ট্রানজিস্টর বাজে। বদলে পালির রেস্টহাউসে বনবিভাগের বড়সায়েবরা রাত্রিবাস করতে এলে ওদের ডাক পড়ে ফাই-ফরমাস খাটার জন্যে। তবে বনবিভাগের দৌলতে ওরা রান্না যা শিখেছে না! একেবারে শহুরে বাবুদের জিভের মত করে। আর ওদের হাতের তৈরি মহুয়ার মদ। আঙুল ডুবিয়ে মাচিস মারবেন, আঙুল জ্বলবে মোমবাতির মত।
    ---- কিন্তু আমাকে নেমন্তন্ন করেছে কেন? আমি তো মদ খাইনে?
    --- আপনি না সাহেব, কি করে যে ব্যাংক চালাবেন! সোজা কথাটা বুঝলেন না? রাত্রিবাস করতে।
  • pi | 78.48.231.217 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ২২:০৭527523
  • রঞ্জনদা, মেইল দেখবেন একটু।
  • ranjan roy | 24.99.157.91 | ১৭ এপ্রিল ২০১৩ ২৩:১২527524
  • গঙ্গারামের কান গরম হয়ে যায়।
    --- ফের শুরু করলে? আর কোন কথা নেই কি?
    কিন্তু জগদীশ যেন কথা কানেই তুলছে না।
    --- সাহেব আপনার ভালোর জন্যেই বলছি। এমন সুযোগ আর পাবেন না আপনার ট্রেনিং হয়ে যাবে।
    ---- মানে?
    --- কেন কথা ঘোরাচ্ছেন সাহেব? আম্মা-বাবুজির চিঠি আসছে না? আপনার জন্যে মেয়ে দেখা হচ্ছে। তো জরুর আংরেজি স্কুল কী লড়কী হোগি। উমর তো বিশ কে আসপাশ হোগি?
    গঙ্গারাম ঘাড় নাড়ে।
    --- তো ওহ লড়কী পহেলি রাত তো আপকী ইম্তিহান লেগি। অউর আপ উস ইম্তিহান মেঁ ফেল হো গয়ে তো? পহেলি রাত কো লোগবাগ বিল্লি কো মার দেতেঁ পর আপকা বিল্লা মারা জায়েগা।( সবাই প্রথম রাতে মেনি বেড়াল মারে, কিন্তু আপনার তো হুলো
    --- ভাইগে জগদীশ, চুপ হো জাও। মেরা ভালাই ম্যাঁয় খুদ সমঝতা হুঁ। আপনা কাম করো।
    ( ব্যস, ব্যস্‌, জগদীশ। আমার ভালো তোমাকে ভাবতে হবে না। নিজের চরকায় তেল দাও।)
    কিন্তু গঙ্গারামের গলায় অফসরি ঝাঁঝ যে তেমন ফুটছে না!

    রাত্তিরে গঙ্গারামের ঘুম আসে না। অবাক হয়ে ভাবে একটা অচেনা মেয়ে এসে ওর ঘরে উঠবে? দড়ি থেকে ওর জামা প্যান্টের সঙ্গে ঝুলবে মেয়েটার সালোয়ার-কুর্তা, ওড়নি, শাড়ি-ব্লাউজ-সায়া , নাঃ ওর আগে গঙ্গারাম ভাবতে চায় না।
    খালি এটুকু ভেবেছে যে মাকে বলতে হবে--- বিয়ের খাট যেন একটু বড় সাইজের হয়। তাহলে সেই নতুন মেয়েটা আর ও ভাল ভাবে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোতে পারবে। একজনের শরীরের সঙ্গে আর একজনের ছোঁয়া লাগবে না।

    কিন্তু মেয়েটার চোখ-মুখ? নাক-নকশা? সে কেমন হবে?
    ভাবতে ভাবতে ভেসে ওঠে একটা মুখ। জোড়া বিনুনী করা কানে সোনার রিং , বড় বড় চোখ আর ডান গালে একটা বড় তিল। ঝলমলে নকশাদার স্কার্ট ও সাদা টপ পরা বছর তেরোর একটা মেয়ে। চোখ দুটো সারাক্ষণ হাসছে আর চোখ চলে যায় বুকের ওপর মাথা তোলা জোড়া- কোসগাই পাহাড়ের দিকে।
    রীতা বিশ্বাস। ভিলাইয়ের সেক্টর-২ স্কুলের ইংরেজির টিচার বাঙালী বহেনজির মেয়ে।
    ওরা তখন পাশাপাশি কোয়ার্টারে থাকত। রীতা গঙ্গারামের থেকে এক ক্লাস উঁচুতে পড়ত। কিন্তু সন্ধেবেলা বাঙালী বহেনজি নিজের মেয়েকে নিয়ে পড়াতে বসার সময় গঙ্গারামকেও ডেকে নিতেন। যত্ন করে দেখিয়ে দিতেন অংক ও ইংরেজি গ্রামারের গাড্ডা থেকে বেরোনোর কায়দা। বাবা পয়সা দিতে গেলে হাত জোড় করেছিলেন।
    জীবন চলছিল বাঁধা গতে। এমন সময় টাটানগর থেকে এই পাড়ায় বদলি হয়ে এলেন এক পাঞ্জাবী দম্পতি। ওদের ছেলে কাক্কে ভর্তি হল রীতার ক্লাসে। ছেলেটা বড় দুরন্ত।
    বিকেলে যখন ক্লাস সেভেনের গঙ্গারাম ও এইটের রীতা পাড়ার আরও কিছু বাচ্চার সঙ্গে মিলে রুমাল-চোর, এক্কাদোক্কা, লেংড়ি এইসব খেলছে তখন কাক্কে শুরু করল এক নতুন খেলা। বলল--- তোদের খেলাগুলো ভীষণ বোরিং। আয়, এইসব দুধুভাতু খেলা ছেড়ে পটকা-পটকি খেলি।
    শুরু হল পটকা-পটকি। একটা ছেলে একটা মেয়েকে তুলে দুপাক ঘুরিয়ে পাশের বালির গাদায় আছড়ে ফেলছে।
    একটু পরে গঙ্গারাম বুঝতে পারল যে খেলছে আসলে দু'জন। কাক্কে আর রীতা। ওরা কেমন করে যেন গঙ্গারামকে দুধভাত করে দিয়েছে।। গঙ্গারামের গোটা বিকেলটা বিস্বাদ লাগতে থাকে। ভাবে বাড়ি ফিরে যাবে কি না। এমন সময় স্কুল থেকে ফিরছিলেন বাঙালী বহেনজি। উনি এই খেলা দেখে দূদ্দূর করে তেড়ে গেলেন কাক্কের দিকে, হাতের লেডিস ছাতা দিয়ে কষালেন দু'ঘা। রীতার গালে এক চড় দিয়ে ওকে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে গেলেন। সন্ধ্যেবেলা ওনার কোয়ার্টারে পড়তে গিয়ে গঙ্গারাম জানল যে রীতার শরীর খারাপ, আজ প্ড়তে বসবে না। বহেনজি ওকে কাল থেকে আবার পড়তে আসতে বললেন। আর সতর্ক করে বল্লেন যে কাক্কে ছেলেটা বদ। ওর সঙ্গে যেন এপাড়ার কেউ না খেলে। আর ওই সব পটকা-পটকি খেলতে গিয়ে রীতার পেটে চোট লেগে বাচ্চাদানীর ক্ষতি হতে পারে। তাহলে আর ও বিয়ের পরে মা হতে পারবে না। গঙ্গারাম নিশ্চয়ই চাইবে না যে রীতার এমন ক্ষতি হোক।
  • ranjan roy | 24.99.40.139 | ১৮ এপ্রিল ২০১৩ ১৯:৩২527525
  • ওই ঘটনার প্রায় একসপ্তাহ পরে । গঙ্গারাম টিফিন পিরিয়ডে মায়ের দেয়া চিলা( একরকম গোলা রুটি) আর গুড় খেয়ে কলে হাত ধুচ্ছিল, তো সমারু এসে বলল--তোকে ডাকছে।
    --কে ডাকছে?
    --- ক্লাস টেনের ক'জন ভাইয়া।
    --কেন?
    --- কি জানি! আমাকে বলল গঙ্গারামকে খেলার মাঠে গোলপোস্টের কাছে আসতে বল।
    গঙ্গারাম গুটি গুটি খেলার মাঠে গিয়ে দেখে উঁচু ক্লাসের জনাতিনেক ছেলে গোলপোস্টের পাশে একটা ভাঙা পাঁচিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। একজন আবার সিগ্রেট ফুঁকছে।
    একজন ওকে অবাক চোখে দেখে পেছন ফিরে কাউকে বলল,---- এহি হ্যায় ও টুরা?
    --- হাঁ ভাইয়া! দেখনে মে বাচ্চা সা, পর বহুত বদমাশ হ্যায় এ দদুয়া!
    পাঁচিলের পাশ থেকে এগিয়ে এসেছে কাক্কে, ওর মুখে শিকার ধরার আনন্দ।
    -- সারে বদমাশি ইসীকী, পর ঝুটমুট চুগলি করকে মুঝে মার খিলায়া!
    সবচেয়ে বড় ছেলেটা ব্রণ ওঠা মুখে দেঁতো হেসে বলল,-- কিঁউ বে, লড়কিয়োঁ কী ছাতি পর হাত ফেরতা হ্যাঁয়, ফির ঝুট বোলতা হ্যাঁয়?
    ও ভ্যাবাচাকা খেয়ে এর ওর মুখের দিকে তাকায়, কিছু বলতে পারেনা।
    এবার অন্য ছেলেটা হাতের সিগ্রেট ফেলে দিয়ে কোমর থেকে বেল্ট খুলতে লাগল।
    -- হমলোগোঁ কে দোস্ত কী মাল পর হাত ডালতা শালে? ইয়ে জুর্রত?
    আচমকা সামনের ছেলেটা হাত চালায় আর গঙ্গারাম ছিটকে পড়ে পাঁচিলের পাশে। তারপর শুরু হয় বেল্টের বাড়ি।
    --- রীতা কে সাথ খেলনা তো দূর, উসকে ঘর কে তরফ ভী আঁখ উঠাকে দেখনা নহী।
    ও ভয়ের চোটে চিৎকার করতে ভুলে গেছে।
    এমন সময় কোত্থেকে হাজির হয় রামখিলাওন ভাইয়া, স্কুলের দারোয়ান। টেনে তোলে গঙ্গারামকে আর ধমাকাতে থাকে বড় ছেলেগুলোকে।
    -- তোদের লজ্জা করে না রে! যত ধম্মের ষাঁড় অকালকুষ্মান্ডের দল? সবাই মিলে একটা বাচ্চা ছেলেকে পিটিয়ে মর্দানগী দেখাচ্ছিস? চল প্রিন্সিপাল স্যারের চেম্বারে।
    ছেলের দল ব্যাকফুটে।
    -- নহী ভাইয়া! এহি লড়কা বদমাশ হ্যায়, বহুত গন্দা। আপকো মালুম নহী, হমারী বঙ্গালী বহিনজি কী বেটি রীতা কী ছাতি পর হাত ডালা, উল-জলুল বাতেঁ কিয়া। হমলোগ ইসীলিয়ে উসকো থোড়া কড়কা রহে থেঁ, তো আপ আ গয়ে।
    রামখিলাওন অবাক হয়ে গঙ্গারামকে দেখে।
    --- ছি ছি! কিতনি শরম কী বাত! তুম সব চলো বড়ে সাব কে পাস। ওহি ন্যায় করেংগে।
  • ranjan roy | 24.99.40.139 | ১৮ এপ্রিল ২০১৩ ২০:০২527526
  • প্রিন্সিপালের অফিস ঘরে দারোয়ান ওদের হাজির করলে ক্লাস টেনের ছেলের দল কোনরকমে ওদের অভিযোগ রিপিট করে।
    গঙ্গারামের জিভে যেন পক্ষাঘাত হয়েছে। কিসের থেকে কী হয়ে গেল ওর মাথায় ঢুকছে না।
    প্রিন্সিপাল এবার স্লিপ পাঠিয়ে ডেকে পাঠালেন বঙ্গালী বহিনজি কে। স্টাফ রুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে রেজিস্টার হাতে মিসেস বিশ্বাস প্রিন্সিপালের রুমে ঢুকে গঙ্গারামকে দেখে চমকে গেলেন।
    -- এই ছেলেটাকে চেনেন ম্যাডাম?
    -- হ্যাঁ, আমাদের পাশের কোয়ার্টারে থাকে, গঙ্গারাম দেবাঙ্গন। কেন, কি হয়েছে?
    প্রিন্সিপাল সংক্ষেপে ঘটনাটি বলা মাত্র ম্যাডাম বিশ্বাসের চেহারা বদলে গেল।
    --- না স্যার! ব্যাপারটা একদম উলটো। এ একেবারে নিরীহ গোবেচারা ভ্যাবাগঙ্গারাম টাইপ। যত নষ্টের গোড়া ওই কাক্কে! এসব ওদেরই পেজোমি।
    কিন্তু সেদিন থেকে গঙ্গারামের বঙ্গালী বহিনজির বাড়ি গিয়ে হোমটাস্ক করা বন্ধ হয়ে গেল।
    তবে গোটা ক্লাসে সবার মুখে মুখে বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে এই "ভ্যাবাগঙ্গারাম" কথাটা চালু হয়ে গেল।
    এই নাম মাহাত্ম্য ওকে ওর কলেজ জীবনেও ওকে তাড়া করে বেড়াল। ছত্তিশগড় কল্যাণ কলেজ যে আবার ওর পাশের পাড়ায়। মেয়েদের গ্রুপের পাশ দিয়ে যাবার সময় মাঝে মাঝে কানে ভেসে আসত--- ওই দ্যাখ, যাচ্ছেন শ্রীমান ভ্যাবাগঙ্গারামজী,
    --- ভ্যাবাগঙ্গারাম? সে আবার কি?
    --- ওটা একরকম বাঙ্গালী স্ল্যাং! মানে ভোঁদু!
    --- খালি ভোঁদু? ভ এর জায়গায় চ বসাবি না?
    ---- হট্‌ রে শালি! খালি নোংরা কথা।
    --- আরে, আমি জানি । ওর মানে হল জো খায়ে-পিয়ে কুছ নহীঁ, পর বারো আনে কী গিলাস ফোড়ে। ( খায়-দায় না ভোম্বলদাস, তবু ভাঙল কাঁচের গ্লাস)।
    ---- জানিস, এই ছেলেটা না স্কুলে পড়ার সময় ওর টিচারের মেয়ের বুকে হাত দিয়ে ধোলাই খেয়েছিল, আমার ভাইয়া বলেছে।
    ---- দূর দূর! ও তো কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই সাহস পায় না, ও দেবে গায়ে হাত!
    -- সাবধানে থাকিস, এইসব ন্যাকা ভাজামাছটি উল্টে খেতে জানে না টাইপের ছেলেগুলোই অনেক সময় ছুপা-রুস্তম হয়।

    ফলে গঙ্গারাম নিজেই সাবধান হল, মেয়েদের এড়িয়ে চলা অভ্যেস করে ফেলল।
  • ranjan roy | 24.99.40.139 | ১৮ এপ্রিল ২০১৩ ২১:৩৮527527
  • ৫)
    আর তিন দিন বাকি। হাতে গোনা তিনটে দিন। শুক্কুর, শনি, রবি। ব্যস্‌, সোমবারে এসে পড়বেন শ্রীমান বনছোড়, স্থায়ী ম্যানেজার। গঙ্গারাম চার্জ হ্যান্ড ওভার করে চলে যাবে ওর হেড কোয়ার্টারে। তারপর এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে ভিলাই।
    কাজ গোছানো চলছে। ক্যাশিয়ার-কাম-ক্লার্ক অভ্যস্ত হাতে হ্যান্ড-ওভার ফর্ম , রিলিভিং লেটার সবই তৈরি করে রেখেছে, খালি তারিখ বসানো বাকি।
    গঙ্গারাম জগদীশকে বলল--- কালকে এবারের শেষ ট্যুর করে ফেলব ভাবছি। চল, কাল ফার্স্ট হাফে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ব। পনের কিলো মিটার দূরের পাহাড়ি গ্রাম রজকম্মা গিয়ে গণেশ রাম গোঁড় ও দু-তিনটে কুয়ো আর ক্ষেতের অবস্থা সরেজমিনে দেখে রিপোর্ট লিখব-- যতটা লোন দেয়া হয়েছে তাতে কাজ হয়েছে কতটুকু।
    পরের দিন ট্যুর করে ফিরতে ফিরতে ছায়া ঘনিয়ে আসে। পাহাড়ি এলাকায় উঁচু আলপথ ধরে সাইকেল চালানো চাট্টিখানি কথা নয়। ফুসফুসে চাপ বাড়ে। আর কয়েক কিলোমিটার পেরিয়ে তবে গোটাকয় ঘর-- ওই হল গ্রাম। দোকানপাট নামমাত্র। কপালে জুটেছে গুড়ের চা আর ভাজিয়া।
    পালি তখনো কিছুটা দূর, জঙ্গলের ধারে চোখে পড়ল আম-জাম আর ডুমুরের গাছে ছাওয়া টালির ঘর। বেশরমের বেড়ার গায়ে বুনোলতায় ফুল ধরেছে। আর চোখে পড়ছে বাগানের মধ্যে কুয়ো, তাতে জল তোলার জন্যে বাঁশ কেটে টেরা লাগানো, তার থেকে ছোট বালতি ঝুলছে।
    দেখেই গঙ্গারামের তেষ্টা যেন দ্বিগুণ হয়ে উঠল।
    ---- জগদীশ, যা তো! ও ঘরসে পানি মঙ্গকে লে আ।
    জগদীশ বিনাবাক্যব্যয়ে সাইকেল নিয়ে চলে যায় বাড়িটির বেড়ার ধারে।
    কিছু বলে চিৎকার করে ডাকে।
    ঘরের থেকে বেরিয়ে এসেছে একটি মেয়ে।। কপালে কালো টিপ, টান টান করে বাঁধা চুল, , পরনে ফলসা রঙের শাড়ি। জগদীশের কথা শুনে সে ভেতরে গিয়ে একটু পরে আবার বেরিয়ে এল। নিয়ে এসেছে কাঁসার খালি গ্লাস, ঝকঝকে লোটায় ঠান্ডা জল আর কাঁসার বাটিতে খানকয় বাতাসা।
    গঙ্গারাম চোঁ-চোঁ করে খানিকটা জল খেয়ে কড়মড় করে বাতাসা চিবোল। তারপর বাকি জলটা শেষ করে ঘটি-বাটি সব জগদীশের হাতে তুলে দিয়ে গাছের গায়ে হেলান দিয়ে রাখা সাইকেলের পাশে দাঁড়াল।
    কিন্তু জগদীশ যেন একটু দেরি করছে। মেয়েটির সাথে হাসিঠাটায় মেতে উঠেছে। একটা দুটো কথা কানে আসছে।
    ---প্যাসা ক্যুয়েঁ কে পাস যাতে কি কুয়াঁ চলকে প্যাসা কে পাস আতে? ( যার তেষ্টা পেয়েছে সে কুয়োর কাছে যাবে কি কুয়ো নিজে হেঁটে হেঁটে ওর কাছে আসবে?)
    --- ওহ ভী হোতা হ্যায়।
    আবার হাসি।

    জগদীশ ফিরে এলে গঙ্গারাম একটু বিরক্ত হয়ে বলল-- এত কি কথা হচ্ছিল? মেয়েটি তোমার চেনা নাকি?
    --- সাহাব, ওই তো সেই তীজ কুঁয়র, সেই যে দু'বোন আপনাকে নেওতা (নিমন্ত্রণ) দিয়েছিল। আপনি তো রাজি হলেন না? আজকেও বলছিল, মালিক যদি রাতটা এখানে কাটান! কেউ জানবে না।
    ---- আচ্ছা, তোমরা আমার পেছনে উঠে পড়ে কেন লেগেছ বল দেখি? ওদের মতলব কী?
    --- সরকার , আপনি মিছিমিছি রাগ করছেন। আপনি হলেন সরকারি আদমি, ব্যাংকের ম্যানেজার। এ গ্রামে এসেছেন, আবার চলে যাবেন। এটা ওদের পক্ষে সম্মানের ব্যাপারের। এটা ধরুন আপনার ওই যে কী যেন বলে -- ফেয়ারওয়েল।
    আবার বলছি কেউ জানতে পারবে না। আমি আপনাকে সঙ্গে করে ভোর বেলা ব্যাংকবাড়িতে পৌঁছে দেব। আপনার লাগবে শুধু একটা দেশি মোরগের দাম। ওরা রাঁধবে , মা আর দুই বোন, আমি-আপনি পাঁচজনের মত। আমি বলেছি হুজুর রাগ করছেন।
    --- আচ্ছা, ওকে বল-- আজ নয়, কাল রাত্তিরে, শনিবারে।
    ( গঙ্গারাম নিজেই চমকে উঠেছে। এটা ও কি বলল? ভর সন্ধ্যেবেলায় ওর গলায় কে ভর করেছে? কোথায় গেল ওর অফিসরের রোয়াব!)
    চমকে উঠেছে জগদীশও।
    --- হুজুর হ্যাঁ বল্লেন ? ঠিক শুনেছি তো? যাকগে, আমি এখনই বলে আসছি।

    সারা রাস্তা গঙ্গারাম কোন কথা বলল না।
    শুধু শোবার আগে জগদীশকে বলল-- শোন, তখন রাস্তায় যা বলেছি ভুলে যাও। মাথার ঠিক ছিল না। কাল আমি কোথাও যাচ্ছি না। ক্যানসেল।
    জগদীশ খেপে গেল।
    --- ক্যানসেল বললেই ক্যানসেল? এতক্ষণে ও মোরগ জোগাড় করে ফেলেছে। অন্য সব কিনে ফেলেছে। আর শেষ সময়ে এমন পিছিয়ে আসলে আপনাকে কি ভাববে?
    ভয় কাটিয়ে উঠুন সাহাব। বিয়ের পর এমনি করবেন নাকি? আমি সাবধান আছি। আপনার সম্মানে আঁচ পড়তে দেব না।
  • siki | 132.177.73.249 | ১৮ এপ্রিল ২০১৩ ২১:৫৩527528
  • বর্ডারলাইন কেস।

    মন দিয়ে পড়ছি।
  • ranjan roy | 24.96.57.81 | ২০ এপ্রিল ২০১৩ ০১:১৪527529
  • পরের দিন শনিবার। ব্যাংকের হাফ-ডে। আজ যেন ঘড়ির কাঁটাএকটু তাড়াতাড়ি ঘুরছে।আর ক্রমশঃ গঙ্গারামকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছে-অনিচ্ছের বেড়া পেরিয়ে অন্য এক জগতে। কিন্তু দিনটা মেঘলা। আকাশের মুখভার। রেডিওর খবর বলছে আবহাওয় ভাল নয়। বঙ্গাল কী খাঁড়ি ( বে অফ বেঙ্গল) তে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, তাই ছত্তিশগড়ের দক্ষিণ-পূবে কিছু বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
    বিকেলের দিকে গঙ্গারাম একবার নিজের মনেই বিড়বিড় করল--- বৃষ্টি-বাদলার দিনে সন্ধ্যের পর ঘর থেকে বেরনো কি ঠিক হবে?
    ক্যাশিয়ার ক্যাশ গুণে গেঁথে চেস্ট বন্ধ করে চাবি নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল-- কোথায় স্যার? একফোঁটা জলও পড়ে নি।
    চাপরাশি জগদীশ শুধু একবার তাকিয়ে দেখল, কিছু বলল না।
    রাত্তির আটটা নাগাদ দরজার ঘন্টি বেজে উঠল।
    গঙ্গারাম চমকে উঠে দরজা খুলে দেখল জগদীশ।।
    -- একি সাহেব! এখনো তৈরি হন নি? আমি তো ব্যাংক বন্ধ হতেই মুর্গা কিনে পৌঁছে দিয়ে এসেছি।এতক্ষণে রান্না নেমে গেছে। চলুন,
    চলুন।
    দুজনের সাইকেল চলে বিনা বাক্যবয়ে। অন্ধকার পথে কোন আলো নেই। চাপরাশি জগদীশের সাইকেল আগে আগে চলছে। ওর হাতের থেকে একটি ছোট টর্চের তীব্র আলোয় ফুটে উঠছে কাঁটাঝোপ, বালি বালি পথ, গরুর গাড়ির চাকার গর্ত, আর কখনো সখনো ঝোপের পাশ ন্থেকে উঁকি দেয়া কোলিহা বা খ্যাঁকশেয়াল।
    অবশেষে ওরা পৌঁছেচে মাদন গাঁয়ের বস্তি ছাড়িয়ে বনের প্রান্তে। হ্যাঁ, অন্ধকারেও একটি বাড়িতে হ্যারিকেন জ্বলছে। জগদীশকে অনুসরণ করে গঙ্গারাম পৌঁছে যায় বেশরমের ডালের বেড়া দেয়া আঙিনায়। সাইকেলটি পেয়ারা গাছটার গায়ে ঠেকিয়ে রাখে।
    এমন সময় ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়া শুরু হয়।
    ওরা ভেতরে ঢুকতেই একটি মেয়ে এসে জগদীশের হাতে গামছা ধরিয়ে দেয়। আর ঘরের ভেতর থেকে ভেসে আছে এক বুড়ির ভাঙা গলার স্বর--- ভিগ গয়ে গা ।! লেও,, সর- হাত পাও বনে পোঁছ লেও।
    ( ভিজে গেছ গো, নাও, এবার মাথা-হাত-পা ভাল করে মুছে ফেল।)।
    ভেতর বারান্দায় ওদের একটি নেয়ারের খাটিয়ায় বসতে দেয়া হয়, তাতে একটি সুজনি পাতা। জগদীশ ওখানে না বসে উনুনের পাশে একটি মেয়ের কাছ ঘেঁষে জলচৌকিতে বসে পড়ে। একটু পরে
    ওদের বালতি করে হাত -পা ধোয়ার জল দেয়া হয়। তারপর দাওয়ার একপাশে মাটিতে ঘরে তৈরি আসন পেতে ওরা খেতে বসে।
    গঙ্গারাম ফিসফিস করে জগদীশকে বলে -- খেয়ে দেয়ে তাড়াতাড়ি কোয়ার্টারে ফিরে যাব। আকাশের অবস্থা ভাল নয়। বৃষ্টি। বেড়ে যেতে পারে। আর যদি ঝড় হয়--।
    ওর নিজের কথা নিজের কানেই কেমন যেন ঠেকে, জগদীশ কোন উত্তর দেয় না।
    ভাত-মুগের ডাল- মুরগীর ঝোল আর আমের শুকনো আচার, সঙ্গে কাঁচালংকা নুন মাখিয়ে ভাজা। জগদীশ তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে গোছগাছ করতে লেগেছে। আর দুইবোনের সঙ্গে চাপাস্বরে ওর খুনসুটি এককোণে একঘেয়ে বাজতে থাকা ট্রানজিস্টারের খরখর-ঘরঘর ছাপিয়ে গঙ্গারামের কানে আবছা আবছা পৌঁছে যাচ্ছে।
    গঙ্গারামের গলা দিয়ে ভাত নামছে না। বুকের মধ্যে কারা যেন ঢেঁকিতে ধান কুটছে। ও সমানে গেলাস গেলাস জল খেয়েই চলেছে। যদি এই খাওয়া আরো খানিকক্ষণ চালিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু খাওয়া শেষ হবেই। পর উসকে বাদ্‌? গঙ্গারাম ভাবতে পারছে না।
    -- সাহাবের কি রান্না পছন্দ হয় নি? সব যে পড়ে থাকছে।
    এগিয়ে এসেছে বুড়ি, দুজ ও তীজ কুঁয়রের মা।
    ---না, না। রান্না ভালই ত, বেশ হয়েছে।
    --তবে কি আপনার শরীর খারাপ? খাচ্ছেন না যে ভাল করে!
    -- আসলে আমি রাত্তিরে একটু কম খাই।
    এই বলে কোনরকমে খানিকটা গিলেও পাতে জল ঢেলে দিয়ে উঠে পড়ে। বৃষ্টি ধরেছে একটু আগে। কিন্তু রায়পুর রেডিও বাজাচ্ছে পরিচিত ছত্তিশগড়ি লোকগীত-- " রিমির-ঝিমির বরষে পানি"। সমবেত কন্ঠে গাওয়া এই গানের কথা ও সুর গঙ্গারামের বুকের ভেতরে ঢেউ তোলে। বুকের মধ্যে ঢেঁকির পাড় পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
    দাওয়ার একপাশে সজনে গাছের গোড়ায় বালতি ভরে জল, লোটা, সাবান আর গামছা নিয়ে জগদীশ গঙ্গারামের হাত ধোয়াতে থাকে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় ঝিঁঝির ডাক আর ট্রানজিস্টারের গান বেশ কানে এসে লাগছে। একটা চাপা খুশির ভাব নিয়ে গঙ্গারাম হাতের তেল-হলুদ ভাল করে রগড়ে রগড়ে ধোয়। জগদীশের হাত থেকে লবঙ্গ ও এলাচদানা নিয়ে মুখে ফেলে গুনগুন করতে থাকে।
    এমনসময় কড়া হেড লাইটের আলোয় অন্ধকার কে চমকে সিয়ে বেড়ার ওপারে দাঁড়ায় একটি জিপগাড়ি। অ্যাকসিলাটরে চাপ দিয়ে বার কয়েক বিকট আওয়াজ করে ইঞ্জিন বন্ধ হয়। আর পোড়া পেট্রলের উৎকট গন্ধে হাঁপিয়ে ওঠে ভিজে বাতাস।
    জীপ থেকে নেমে দাঁড়ায় দুই মূর্তি, নাম ধরে ডাকে দুইবোনকে।
    আর বাধ্য মেয়ের মত দ্রুত পায়ে জীপের পাশে দাঁড়ায় ওরা। কিছু কথা কাটাকাটি ও খিলখিল হাসি কানে ভেসে আসে। ইতিমধ্যে জগদীশও জুটে গেছে ওখানে।
    একটা মোটা গলা সবাইকে ছাপিয়ে ধমকে ওঠে।
    --- ,মেহমান এসেছে তো কি হয়েছে? খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। ব্যাংকের সাহাব!
    কোন ফালতু অজুহাত শুনব না। বিলাসপুর থেকে রেঞ্জার এসেছেন। গোটা মহকুমার রেঞ্জার-ডেঞ্জার। তোরা যাবি না মানে
    আরে তোদের ঘরদোর তো বনবিভাগের জমিতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে না কি?
    এবার জগদীশ মৃদু প্রতিবাদ করে।
    -- আমাদের সাহেব যে মুর্গাটা কিনে দিয়েছেন?
    --- হোঃ! মূর্গা কিনে দিয়েছেন? অমন দশটা মূর্গা কাল তোর সাহাবের ব্যাংকের দোরগোড়ায় বেঁধে দিয়ে আসব। বলিস তো ম্যানেজারকে এখনই জিপে করে ব্যাংকে পৌঁছে দিচ্ছি। পর অপনী ইয়ে দো মূর্গীকো তো কোঈ হাথ ন লাগাঁয়ে।
    গঙ্গারাম আর পারে না, দুহাতে পেট চেপে গাছের গোড়ায় হড়হড় করে বমি করতে থাকে।
    রেডিওতে কোরাস গানটি তেহাই মেরে মেরে শেষ হচ্ছেঃ
    "রিমির-ঝিমির, রিমির-ঝিমির, রিমির-ঝিমির বরষে---এ-এ পা-আ-নি।"

    ( চতুর্থ আঁক সমাপ্ত)।
  • ranjan roy | 24.96.83.37 | ২০ এপ্রিল ২০১৩ ২২:৫৯527531
  • পঞ্চম আঁকঃ
    -----------------------
    বড়জাত-মেজজাত-ছোট জাত-বজ্জাত
    --------------------------------------
    (১)
    আজকাল গঙ্গারাম লাফটার ক্লাবের সভ্য হয়েছে। বিলাসপুরে জোনাল অফিসে পোস্টিং পাওয়ার পর ওর বড্ড একা একা লাগছিল। সহকর্মীদের মধ্যে কেউ চেনা নয়, ওর ব্যাচেরও নয়। হেল্থ চেক আপে ধরা পড়েছে রক্তে শর্করা সীমান্তরেখা ছুঁই ছুঁই করছে। ওর গোমড়ামুখ দেখে বৌ বলল-- রোজ সকালে কোম্পানি গার্ডেনে গিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি কর, অনেকে যায়। আর হু-হু-হা-হা ক্লাব জয়েন কর।
    --হু-হু-হা-হা ক্লাব?
    --- ইংরেজি নাম লাফটার ক্লাব, কিন্তু পাড়ায় সবাই বলে হু-হু-হা-হা। আসলে সাতসক্কালে ,মেয়ে-মদ্দ-জোয়ান-বুড়ো সবাই মিলে একে অন্যের পিঠ থাপড়ায়, হাতে হাত মেলায় আর জোরে জোরে হা-হা-হা-হা, হু-হু-হু-হু করে হাসির ভান করে।
    -- কাজ-কম্ম নেই, খামোকা হাসবে? তার জন্যে কেলাব?
    -- আরে ও একটা ব্যায়াম, তবে একা-একা নয়, তোমার ভাল লাগবে।
    গঙ্গারাম বৌয়ের উপরোধে ঢেঁকি গিলল, ক্লাবের মেম্বার হল।
    কিন্তু হাসি যে কি কঠিন? তাও বিনা প্ররোচনায়।ওর পিঠে থাব্ড়া কসিয়ে হাসতে থাকা এক প্রৌঢ় বোঝালেন যে হাসলে বডির মধ্যে যে কেমিক্যাল রিয়্যাকশন হয়, মেটাবলিজমে পজিটিভ এফেক্ট হয়। তা সে হাসি জোর করেই হাসুন আর পেটে সুড়সুড়ি লাগলে!
    দু'হাত তুলে এইসব হাসাহাসি ও শ্বাসের ব্যায়ামের পর অল্পবয়েসি ও মহিলারা বাড়ি যায়। গোটা পাঁচেক রিটায়ার্ড ও আধা-রিটায়ার্ড বুড়ো ঘাসের ওপর বসে গুলতানি করে, প্লাস্টিকের গ্লাসে চা খায়, এ ওর পেছনে লাগে; তারপর রোদ্দূর চড়লে নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গে বাড়ি যায়।
    গঙ্গারামের পিঠে থাবড়া মারা প্রৌঢ় তামসকর হলেন এই সংঘের প্রেসিডেন্ট, দশাসই চেহারার ভদ্রলোক, রিটায়ার্ড ডিএসপি। আর সেক্রেটারি হলেন শুঁটকো খেঁকুরে দেওয়ানজি, রেজিস্ট্রি অফিসের বড়বাবু,রিটায়ার করতে ছ'মাস বাকি।
    কেমন করে যেন গঙ্গারাম এই বুড়োদের ঘাসে বসে ফুটকাটা আড্ডারও সদস্য হয়ে পড়ল। ও বসে থাকে এককোণে, রা কাড়ে না। অবশ্যি কেউ ওর মতামত চায়ও না।
    কেননা বুড়োগুলো সবাই পুরনো বন্ধু, কেউ কেউ এই শহরেই জন্মেছে, বাকিরা কর্মসূত্রে এখানে এসে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। ওদের হাঁটুর বয়েসি গঙ্গারামকে কেউ লক্ষ্য করে না। কিন্তু চা আসলে ও বাদ পড়ে না, আর পালা করে দামটা চুকোনোয় ওর নম্বরও লেগে যায়।
    এদের আড্ডায় বসে গঙ্গারামের যেন কপালের ওপর আর একটা চোখ খোলে। সত্যি, সংসার যে কতবড় হরেকরকমবা তা এতদিন গঙ্গারাম জানতো না।
    এই যেমন সেদিন তামসকরজি বললেন-- আচ্ছা, গোপালদাস, একটা কথা বল দেখি। অনেকদিন তোকে জিগ্যেস করব করব করছি।
    সদরবাজারে ফার্টিলাইজার শপের মালিক গোপালদাস কেশবানী মৃদু মৃদু হাসেন।
    -- বলেই ফেল।
    ---- সত্যি বলবি তো? এই যে প্রত্যেক রোববারে তোকে দেখি সকাল দশটায় গোলবাজারের মোড়ে দাঁড়িয়ে একগাদা ফুটপাথের বাচ্চা, জুতো পালিশদের জিলিপি খাওয়াতে আর প্রত্যেককে আট আনা করে দিতে--- ব্যাপারটা কি? কোন ব্রত-টত রেখেছিস নাকি?
    গোপালদাসের মুখের থেকে কান এঁটো করা হাসি মিলিয়ে যায়।
    বলছি, বলে উনি গম্ভীর হয়ে বাকি চারজনের মুখের দিকে তাকান। সবার চোখে অদম্য কৌতূহল।
    তামসকর ঝামরে ওঠেন,-- এই আমাদের কাছে লুকোবি না। সত্যি কথা বলবি।
    গোপালদাসের চেহারায় আবার সেই হাসি উঁকিঝুঁকি মারে।
    --- দাদা, সক্কালে এখনো কাঅকে গু খোটেনি, মিথ্যে বললে ধম্মে সইবে? বলছি।
    আবার একটু দম নিয়ে শুরু করেন--- কি জান, প্রথম জীবনে আমি গোলবাজার পাড়াতেই থাকতাম। এখন ভাবি এই যে পথশিশুগুলো, অজ্ঞাতকুলশীল । এদের মধ্যে ক'জন আমার নিজের ঔরসজাত তা কে জানে। আমার স্বভাব কেমন ছিল তা তো তোমাদের জানা। এদের প্রতি কিছু কর্তব্য তো আছে। তাই প্রত্যেক রোববারে----'।
    সবার মুখে এক বিচিত্র হাসি ফুটে উঠেছে।
    তামসকর ঘোষণা করেন--- এমন সত্যি বলার জন্যে গোপালদাসের আজকের চায়ের পয়সাটা আমি দেব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন