এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অ্যাডাম্‌স্‌ রোডের বাড়ি

    Achintyarup Ray
    অন্যান্য | ০৭ মার্চ ২০১২ | ৭৩৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • achintyarup | 59.93.244.77 | ০৭ মার্চ ২০১২ ০৩:৫৯536175
  • এই লেখাটি বেশ কয়েক বৎসর পূর্বে অন্য সাইটে কিঞ্চিৎ সম্পাদিত অবস্থায় প্রকাশিত হইয়াছিল।
  • achintyarup | 59.93.244.77 | ০৭ মার্চ ২০১২ ০৪:২০536186
  • স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে আছি। বেশ রাত হয়েছে। যেটা আসবে সেটাই হয়ত ইউনিভার্সিটি যাওয়ার শেষ বাস। মাঝ ডিসেম্বর। বাস স্টপের কাচের দেওয়াল ভেঙ্গে গেছে। হুহু করে হাওয়া দিচ্ছে। সঙ্গে বৃষ্টি। গায়ে তিন পরত গরম জামা চাপানো, কিন্তু বুদ্ধি করে ট্রাউজার্সের নিচে গরম পাৎলুন পরিনি। হিহি করে কাঁপছি। ঠাণ্ডায় একেক সময় মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে। পুঁটলি খুলে মাফলারা বের করে কান-মাথায় জড়িয়ে, তার ওপর জ্যাকেটের হুড টেনে দিয়েছি। অবিশ্রাম বৃষ্টির ছাঁটে শরীরের এক দিক আস্তে আস্তে ভিজে যাচ্ছে। বাসের দেখা নেই। বেঞ্চির ওপর বসে মাঝে মাঝে সিগরেট টানছি, হাতে হাত ঘষছি।

    আমি ছাড়া বাস স্টপে আর দুটি প্রাণী। দুটি ছেলেমেয়ে। ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীই হবে। আমার দিকে দেখিয়ে ছেলেটি মেয়েটিকে বলছে -- পাকি, পাকি। হেসে গড়িয়ে পড়ছে দুজনে। প্রতিবাদ করার ইচ্ছে, শক্তি, সাহস ইত্যাদি না থাকার কারণে সে সব আমি শুনতেও পাই না, দেখতেও পাই না।

    বাস আসছে। দূর থেকে আলো ঝলমল দোতলা গাড়িটাকে দেখে কি ভাল যে লাগল। একেবারে খালি বাস নয়। কয়েকজন যাত্রী রয়েছে। হুড়মুড় করে উঠে সিটে গিয়ে বসলুম। ঠাণ্ডায় তখনও কাঁপছি। পাশে কে বসে আছে সেটা পর্যন্ত খেয়াল করিনি। হঠাৎ শুনলুম বলছে, একেবারে ভিজে গেছ যে। তাকিয়ে দেখি আমারই ডিপার্টমেণ্টের সিলভি। হাসতে গিয়ে দেখি হাসিটা পর্যন্ত জমে গেছে। মিনিট পনেরো পর ইউনিভার্সিটির স্টপে নেমে প্রায় দৌড়ে যাই আমার ফ্ল্যাট পর্যন্ত। কোনোরকমে চাবি খুলে ভেতরে ঢুকেই গরম গরম সুপ বানাই, ব্র্যাণ্ডি বের করি। দুটোই খাই ঢকঢক করে। প্রায় আধ বোতলটাক ব্র্যাণ্ডি পেটে যাওয়ার পর মোটামুটি সুস্থ লাগে। তারপর বাড়িতে চিঠি লিখতে বসি। একদিন একরাতে অভিজ্ঞতা কম হয়নি।
  • achintyarup | 59.93.244.77 | ০৭ মার্চ ২০১২ ০৪:৫১536197
  • গিয়েছিলাম কেম্ব্রিজে। মাত্তর দেড়দিনের জন্যে। হাতে সময় এবং পয়সা বিশেষ ছিল না। কিন্তু বেড়ানোর ইচ্ছে ছিল। দু একটা কাজও ছিল। সেণ্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ-এর আর্কাইভিস্ট কেভিন-এর সঙ্গে অনেক দিনের আলাপ। তার সঙ্গে দেখা করব, আর কিছু বইপত্র দলিল-টলিল কপি করে নিয়ে আসব, এই বাসনা। কিন্তু সেখানে গিয়ে থাকব কোথায়? কোনো ছোটোখাট হোটেল-টোটেল, বি-অ্যাণ্ড-বি কি পাওয়া যাবে না? তা কেন যাবে না? কিন্তু তোমার স্টাইপেণ্ডের এই কটা টাকা যদি হোটেলেই দিয়ে দাও, বাকি মাসটা কি করে চালাবে ভেবে দেখেছ কি? বকে দেন আমাণ্ডা। ইউনিভার্সিটির যে সেণ্টারে আমি কাজ করি সেখানকার ডিরেক্টর। এবং আমার ফ্রেণ্ড, গাইড, স্ব-নিয়োজিত লোকাল গার্জেন ইত্যাদি। তাহলে থাকবটা কোথায়? এই ডিসেম্বরের ঠাণ্ডায়, খোলা মাঠে? আমাণ্ডা বিরক্ত হন। কেন, রোজমেরি আছে না? আমার কাজিন। ওর বাড়িতে গিয়ে থাকবে। বিরাট বাড়ি -- আ হিউজ এডওয়ার্ডিয়ান পাইল। তবে হ্যাঁ, ও বাড়ির লোকগুলো সবাই একটু ইয়ে, মানে এক্সেϸট্রক। সেটুকু যদি মানিয়ে নিতে পার...

    সুতরাং টিকিট কেটে চেপে বসলাম কেম্ব্রিজের রেলগাড়িতে। আর তারপর--
  • achintyarup | 59.93.244.77 | ০৭ মার্চ ২০১২ ০৫:১২536208
  • সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছিল, আর বাড়ির গায়ে নম্বরও লেখা ছিল না, বহু লোককে জিগ্যেস করে করে অ্যাডাম্‌স্‌ রোডে তো পৌঁছলাম, তারপর ছ নম্বর বাড়িটা খুঁজে পেলাম। রোজমেরির বাড়ির নম্বর নয়। আন্দাজে একটা বাড়িতে গিয়ে বেল বাজালাম, বাজল কি না বুঝতে পারলাম না, সামনে আলোও নেই, দাঁড়িয়ে আছি অন্ধকারে, ভাবছি ডানদিক দিয়ে গিয়ে রান্নাঘরে ঢোকার চেষ্টা করব কি না, এমন সময় দরজা খুলে গেল। একটা লোক মুখ বাড়িয়ে জিগ্যেস করল, হু'জ দ্যাট? আমি বললাম, ইজ ইট নাম্বার নাইন? সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে এক মহিলা বললেন, ইজ দ্যাট অচিণ্টি? প্লিজ কাম ইন। একটা টিমটিমে আলো জ্বলছে, চারদিকে জিনিসপত্র, বইয়ের তাক ডাঁই করে রাখা আছে। আমি ঢুকতে ঢুকতেই লোকটা সিঁড়ি দিয়ে ওপরের তলায় চলে গিয়েছিল, আর রোজমেরি প্রথমেই বলল আগে তোমার থাকার ঘরটা দেখিয়ে দিই। আই অ্যাম ভেরি সরি, উই লিভ ইন ভেরি প্রিমিটিভ কণ্ডিশন, আর হিটিং-টাও কাজ করছে না।

    ঘরে ঢুকে আলো জ্বালাল, তারপর বিছানাটা দেখাল। চারিদিকে গাদা করা জিনিসপত্র। বিছানার দুদিকে দুটো লাইট। বলল কোনো একটা লাইট জ্বলে না। পরীক্ষা করে দেখা গেল বাঁ দিকেরটা জ্বলে। তারপর বলল, এখানে খুব ঠাণ্ডা, তুমি রান্নাঘরে এসে বস। ব্যাগটা এখানে রেখে যেতে পার। ঘর থেকে বেরোলাম, লাইট নেভাই নি। বলল, অলওয়েজ সুইচ অফ দ্য লাইট বিফোর লিভিং দ্য রুম। তারপর রান্নাঘরে গেলাম। জিগ্যেস করল, চা খাবে? বললাম, হ্যাঁ। (পরে বুঝলাম সেটা ও ভুলে গিয়েছিল।) সেই আশ্চর্য রান্নাঘরে বসে বসে ও রান্না করতে লাগল আর আমি কী করি, কেমন লাগছে ইত্যাদি জিগ্যেস করতে লাগল। একটা কেটলিও উনুনে বসানো আছে দেখলাম। আমি জিগ্যেস করলাম, তুমি কি ডাক্তার? বলল, হ্যাঁ, কিন্তু রিটায়ার করেছি। আমাদের পাঁচ জেনারেশন ডাক্তার। আমার মা-ও ডাক্তার ছিল। কথা বলতে বলতে হঠাৎ দেখি ভেতরের দিকের দরজাটা অর্ধেক খুলে গেল, আর পারমিতার একদিনের সোহিনী হালদারের মত একটা মেয়ে সেই আধখোলা দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে আমাকে দেখতে লাগল।
  • d | 14.99.4.115 | ০৭ মার্চ ২০১২ ০৯:০৪536219
  • এইটা পড়েছি তো আগে। দারুণ লেখা।
  • siki | 155.136.80.36 | ০৭ মার্চ ২০১২ ১০:৪৯536230
  • না, আমি পড়ি নি। চলুক। পুরোটা পড়তে চাই। এখানেই। :)
  • Lama | 117.194.240.6 | ০৭ মার্চ ২০১২ ১৩:০৯536241
  • অচিন্দা, মেয়েটা এখনও তাকিয়ে আছে তো!

    আমিও। তাকিয়ে আছি :(
  • Tim | 98.249.6.161 | ০৭ মার্চ ২০১২ ১৩:৩৯536247
  • আমিও আগে পড়িনি। ভাটে লিখেছিলাম তখন। এখানেও বলে রাখলাম। বসে আছি পড়বো বলে।
  • achintyarup | 59.93.212.232 | ০৭ মার্চ ২০১২ ১৮:১৪536248
  • এই লেখাটা যে ওয়ার্ড ফাইলে সেভ করেছিলাম, সে ফাইলের নাম দিয়েছিলাম গ্রাণ্টা। কেম্ব্রিজের ছোট্ট ছিমছাম রোগাপাতলা নদিটার নামে। সে নদির এখনকার নাম ক্যাম। আগে নাকি তাকে ওই গ্রাণ্টা নামে ডাকা হত। পুরোনো মেল থেকে ফাইল ডাউনলোড করতে গিয়ে এতসব মনে পড়ল।
  • achintyarup | 59.93.212.232 | ০৭ মার্চ ২০১২ ১৮:২৫536176
  • তারপর ঢুকে এল বাঘের মত বড় একটা কুকুর। কিন্তু খুব নিরীহ তার হাবভাব। আমাকে একবার শুঁকেও দেখল না। কথা বলতে বলতেই একটা লোক ঢুকে এল ঘরে, পরে বুঝলাম সে-ই দরজা খুলেছিল। একটু খ্যাপাটে হাবভাব, জোরে জোরে কথা বলে। তার নাম রবিন। বহু বছর এই বাড়িতে আছে, এমনিতে রোজমেরির আত্মীয় নয়। চেক-কাটা একটা কোট পরা, তার দুহাতেই কনুইয়ের কাছটা ছিঁড়ে ঝুলছে। আলাপ হওয়ার পরেই একটা ক্র্যাকারের প্যাকেট আমার সামনে রেখে বলল, হ্যাভ দিস। তারপর আরেকটা প্যাকেট রেখে বলল, অ্যাণ্ড দিস। তারপর আরও একটা প্যাকেট এনে দিয়ে বলল, অ্যাণ্ড দিস। তারপর এক প্লেট ঘরে তৈরি চিজ এনে বলল, অ্যাণ্ড দিস। দেখি রান্না করতে করতে রোজমেরি মুচকি মুচকি হাসছে।

    বললাম, আমাণ্ডার কাছে শুনেছি তোমাদের ডেয়ারি আছে? বলল, ডেয়ারি? ছিল এককালে। কিন্তু সে তো বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে। হিসেব টিসেব করে বলল, শেষ গরুটাও চলে গেছে সে চল্লিশ বছর হল। এখন কিছু পোলট্রি আছে। জিগ্যেস করলাম গরুর দেখাশোনা কে করত? বলল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমবয়সী মেয়েদের নিয়ে ইংল্যাণ্ডে একটা ল্যাণ্ড আর্মি তৈরি হয়েছিল। সেই ল্যাণ্ড আর্মির মেয়েরা বিভিন্ন ফার্মে গিয়ে কাজ করত। সে রকমই একজন এখানেও এসেছিল। সে-ই দেখাশোনা করত। তারপর থেকে সে এখানেই থেকে গেছে। এখন তার সাতানব্বই বছর বয়েস।
  • titir | 128.210.80.42 | ০৭ মার্চ ২০১২ ২১:৫৩536177
  • অচিন্ত্য,
    লেখাটা আগেই পড়েছিলাম বাংলালাইভে। অনেকদিন পরে আবার পড়তে পারলাম। ভালো লেখা বারবার পড়া যায়। ভাগ্যিস লেখাটা সংরক্ষণ করা ছিল।
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৮ মার্চ ২০১২ ০০:১০536178
  • চিন্টুবাবু--
    এমন লেখা বারবার পড়বার জন্যই----
    একটু হাত চালিয়ে ,জনাবেআলী
  • achintyarup | 59.93.195.102 | ০৮ মার্চ ২০১২ ০০:৪৬536179
  • এর মধ্যে রবিন বেরিয়ে চলে গেছে। মাঝখানে একজন এসে রোজমেরির কাছে পয়সা চাইল। সে বাড়ির কাজ করছিল। চা-ও খাচ্ছিল বুঝলাম। কাপটা টেবিলে রাখল। তখন রোজমেরি আমাকে আবার জিগ্যেস করল, চা খাবে? বললাম হ্যাঁ। অনেকটা চিনি দিয়ে। জিগ্যেস করল টি-ব্যাগে আপত্তি নেই তো? ইণ্ডিয়ায় তোমরা কি ভাবে চা বানাও?

    কথা বলতে বলতে আরেকটা ছেলে রান্নাঘরের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে এল। ঢুকেই বিরিঞ্চিবাবা গল্পের সত্যপ্রসাদের মত বলল, ওফ্‌। মহা সমস্যা। রোজমেরি জিগ্যেস করল, কি হল? বলল, আজকেও মেয়েটা পাত্তা দিল না। লাইব্রেরির সামনে দেখা হল, আমাকে দেখে বলল, হ্যালো, আমিও বললাম, হ্যালো, আর তারপর আমার একটা বন্ধু এসে গেল আর মেয়েটা না থেমে চলে গেল। রোজমেরি জিগ্যেস করল, হাও লং হ্যাভ ইউ বিন স্টকিং হার? খুব উত্তেজিত হয়ে ছেলেটা বলল, স্টকিং? ইউ কল ইট স্টকিং? তারপর বলল, টু অ্যাণ্ড আ হাফ উইকস। এবার আমার সঙ্গে আলাপ হল। কলকাতা থেকে এসেছি শুনেই বাংলায় বলল, বোতলটা খোলা যাক। (বোতল-টোতল কিছু ছিল না অবশ্য।) তারপর জিগ্যেস করল, আর ইউ বদ্রলোক? জানা গেল পরিমল ঘোষ নামে একজন আগে এই বাড়িতে থাকত। সে কলকাতার পরিবর্তন এবং সেখানে ভদ্রলোকদের ভূমিকা নিয়ে রিসার্চ করত। এখন সে কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়। সে নাকি অসাধারণ লোক ছিল। সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আমাকে বলল কলকাতায় ফিরে গিয়ে অবশ্যই যেন তার সঙ্গে দেখা করি। জিগ্যেস করলাম সে কবে ছিল এখানে? রোজমেরি বলল, বেশিদিন আগে না, দাঁড়াও ভিজিটার্স বুকটা দেখি।
  • Anindya Sur | 117.200.129.168 | ০৮ মার্চ ২০১২ ০৩:১৫536180
  • থামলি ক্যানো? চালা
  • achintyarup | 59.93.195.102 | ০৮ মার্চ ২০১২ ০৩:৪৯536181
  • জিগ্যেস করলাম ভিজিটার্স বুক মানে? বলল, আমার মা এই ভিজিটার্স বুক রাখতে শুরু করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল যারা এখানে থাকবে তাদের নাম-ঠিকানাটা যাতে থেকে যায়, কিন্তু এই দেখ সবাই কত কি লিখে গেছে। দেখলাম পাতার পর পাতা লিখেছে একেক জন লোক। বলল, মা বেঁচে থাকতে একটা ভল্যুম শেষ হয়েছিল, তারপর আরও অনেকগুলো ভল্যুম হয়ে গেছে।

    খুঁজে খুঁজে দেখা গেল পাঁচ বছর আগে থাকত এখানে পরিমল। যোধপুর পার্কে তার বাড়ি। হাঁটতে পারত না, ছোটবেলায় পোলিও হয়ে পা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তাই হুইল চেয়ারে চলাফেরা করত। ওর বাবা চেয়েছিল যাতে ছেলের পড়াশোনাটা অন্তত ভালো হয়। তো, সেটা হয়েছিল। ভালো ছাত্র ছিল, এখানে পিএচডি করছিল। আগে কোনো একটা বাড়িতে থাকত, কিন্তু সেখানে হুইল চেয়ার নিয়ে থাকার অসুবিধা বলে ওর গার্লফ্রেণ্ড খুঁজে খুঁজে এখানে এনে তুলেছিল। অ্যাণ্ড হি ওয়জ অ্যান এক্সেলেণ্ট পার্সন।

    সত্যপ্রসাদের নাম হল রোরি। জিগ্যেস করলাম কতদিন এখানে আছ? বলল, যতদিন আমি মনে করতে পারি ততদিন এখানেই আছি। পিএচডি করছে, সাউথ আমেরিকান ল্যাঙ্গুয়েজ, লিটারেচার অ্যাণ্ড কালচার নিয়ে। জিগ্যেস করলাম মার্কোয়েস পড়েছ? দেখলাম অনেকই পড়েছে, আমার থেকে অনেক বেশি। রাবাসার কথা উঠল। ওর খুব পছন্দ দেখলাম। জিগ্যেস করল হপস্কচ পড়েছ? জুলিও কোর্টাজারের লেখা। রাবাসা অনুবাদ করেছিল। সে নাকি অসাধারণ বই। আমি বললাম, বইটার ফর্মটা একটু অদ্ভুত শুনেছি? বলল হপস্কচ খেলার মত। একটু এগিয়ে, একটু পিছিয়ে পড়তে হয়। আমি বললাম ওয়ান হাণ্ড্রেড ইয়ার্স-ও তো রাবাসা অনুবাদ করেছিল। পড়েছ? বলতেই বইটার শুরু থেকে মুখস্থ বলতে আরম্ভ করল। আবৃত্তি করার মত বলেই যেতে লাগল প্যারাগ্রাফের পর প্যারাগ্রাফ। আমি তো মুগ্‌ধ। এ সব করতে করতেই কিন্তু ও কিন্তু রোজমেরিকে এটা ওটা হেল্প করে যাচ্ছে। সাপারের জন্য টেবিল গোছাতে শুরু করে দিয়েছে। বলল, ওর প্ল্যান আছে নেক্সট ইয়ার ইণ্ডিয়ায় যাবে।
  • achintyarup | 59.93.195.102 | ০৮ মার্চ ২০১২ ০৪:২৪536182
  • রান্নাঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইণ্ডিয়ান গাঁজা সম্পর্কে পেঙ্গুইনের একটা লেখার কালেকশান মন দিয়ে দেখছিলাম, হঠাৎ দড়াম করে দরজাটা খুলে গেল, আর হুড়মুড় করে লম্বা একটা ছেলে ভেতরে এসে ঢুকল। বলল সরি, আই অ্যাম লেট। আলাপ হল। তার নাম ডেভিড। রোরির চেয়ে একটু বেশি সিরিয়াস, কিন্তু সেও ইণ্টারেস্টিং। পরে রাত্রে রোজমেরি বলল, ওর একটা অদ্ভুত ধারণা আছে (যেটা রোজমেরি বিশ্বাস করে না), সেটা হল থিয়োরি অব রিলেটিভিটির সঙ্গে থিয়োরি অব গ্র্যাভিটির একটা ইউনিটি বের করা যায়। সেটাই ও চেষ্টা করছে, বিভিন্ন ম্যাথেমেটিক্যাল ক্যালকুলেশানের সাহায্যে। কিন্তু পারছে না।
  • pi | 128.231.22.249 | ০৮ মার্চ ২০১২ ১০:১৭536183
  • একটা নাটক দেখছি মনে হচ্ছে :)
  • achintyarup | 59.93.209.77 | ০৮ মার্চ ২০১২ ১৯:১৫536184
  • ছবির লিঙ্ক লেখার শেষে দেওয়া যাইবে।
  • achintyarup | 59.93.209.77 | ০৮ মার্চ ২০১২ ১৯:৩৬536185
  • ভাবতেও পারবে না... এই মুহূর্তে আমি জিমেলে রোরির সঙ্গে চ্যাট করছি :-))
  • S | 99.26.200.89 | ০৮ মার্চ ২০১২ ১৯:৫০536187
  • মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি।
  • sayan | 115.241.57.81 | ০৮ মার্চ ২০১২ ২০:১৫536188
  • থিওরি অব রিলেটিভিটির সঙ্গে থিওরি অব গ্র্যাভিটির ইউনিটি শেষমেষ পাওয়া গেল কি না সে তো অ্যাডাম্‌স রোড শেষ হলে জানা যাবে কিন্তু অলরেডি অচিন্ত্যদার লেখা ও চৌম্বকত্বের ইউনিটি আছে। আছেই।

    বাকিটা চাই। সবটা। চটপট।
  • ranjan roy | 14.97.108.146 | ০৮ মার্চ ২০১২ ২১:২৯536189
  • পাই,
    এই নাটকের শেষ দৃশ্যের ক্লাইম্যাক্স--। না, ডিটেকটিভ গল্পের শেষ বলে দেয়ার মত বালখিল্য অসভ্যতা করব না।
  • achintyarup | 59.93.255.233 | ০৯ মার্চ ২০১২ ০০:৩৬536190
  • এর মধ্যে খাওয়ার জায়গা করা হয়ে গেছে। লোকজনও সবাই এসে গেছে। রবিন এসেছে, থুড়থুড়ে বুড়ি ফ্রান্সেস (যে যুদ্ধের সময় থেকে ওই বাড়িতে আছে) এসেছে, রোরি আছে, সেই মানসিক অসুস্থ মেয়েটা আছে, ডেভিড আছে, সানি নামের কুকুরটা আছে। আরেকটা মেয়ে, যার ইংরিজি উচ্চারণ খুব একটা ভালো নয়, সেও এসেছে। সে কোনো রেস্তোঁরায় ওয়েট্রেসের কাজ করে বুঝলাম। তার সঙ্গে রেস্তোঁরা মালিকদের কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। ও বোধহয় রেস্তোঁরার কোনো খাবার খেয়ে ফেলেছিল (পরে বলল প্রায়ই খায়), সেই সব নিয়ে ঝামেলা মনে হল। ওর নাম গোশো। পোল্যাণ্ডের মেয়ে। এখানে ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ, লিটারেচার অ্যাণ্ড টিচিং নিয়ে এম এ করছে। আর রেস্তোঁরার কাজ করে পড়ার খরচ যোগাড় করছে।

    খেতে বসা হল। রোজমেরি বলল, যে যার খাবার নিয়ে নাও। আভেন থেকে একটা রোস্ট পোট্যাটো তুলে নিলাম, বিশাল ডেকচি থেকে একটু রেড ক্যাবেজের চচ্চড়ি, আর টিনের টুনা বের করে একটা বোলে রাখা ছিল, তার থেকে একটু নিলাম।

    অসুস্থ মেয়েটির নাম ক্যাথি (ক্যাথলিন বোধহয়)। মোটামুটি সবই বুঝতে পারে দেখলাম। আমাকে বলল, আই অ্যাম ক্যাথি। ডক্টর সামারস' ডটার। (আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলল) আই অ্যাম হার ডটার। বছর পঁচিশেক বয়স হবে মেয়েটির। পরে আমাণ্ডা বলেছিল ও ডাউন সিণ্ড্রোমে ভুগছে। এই রোগীরা সাধারণত তিরিশ বছর পর্যন্ত বাঁচে না। এ ছাড়া রোজমেরির দুই ছেলে ছিল। তারা মারা গেছে কম বয়েসে। তারপর থেকে ইউনিভার্সিটিতে বাইরে থেকে পড়তে আসা ছেলেমেয়েদের ও বাড়িতে রাখে।
  • achintyarup | 59.93.255.233 | ০৯ মার্চ ২০১২ ০৩:১২536191
  • আমরা খাচ্ছি, এমন সময় রান্নাঘরের দরজা খুলে লম্বা লম্বা সোনালী চুলের একটা ছেলে ঢুকে এল। সে ইংরিজি প্রায় বলতেই পারে না। পোলিশ। মনে হল গোশোর বয়ফ্রেণ্ড। বলল, ওর কাছ থেকে পড়া দেখতে এসেছে। রোজমেরি গোশোকে বকল। বলল, সাপারে আসতে বলনি কেন? ছেলেটির নাম ভালদেক। পোল্যাণ্ড থেকে এসেছে কাজের খোঁজে। নানা রকম অড জবস করে। আজকে কারও বেড়া সারাই, কালকে কারও নর্দমা পরিষ্কার -- এই রকম। মনে হল সঙ্গে একটা কাগজের পুঁটলিতে করে নিজের খাবার নিয়ে এসেছিল। ঘরের বাইরে কোথাও গিয়ে খেয়ে এল। ক্যাথি হঠাৎ বলল, বয়ফ্রেণ্ড। আই ভেরি মাচ লাইক বয়ফ্রেণ্ডস। সবাই বলল, ওকে ওকে।
  • cb | 192.193.164.9 | ০৯ মার্চ ২০১২ ০৮:৪০536192
  • এইটা অভিনয় করলে কেমন হয়?
  • ranjan roy | 14.97.252.24 | ০৯ মার্চ ২০১২ ১২:১১536193
  • পূর্ণ সমর্থন। আমি ক্যাথি'র রোলটা পাওয়ার জন্যে পরিচালককে তেল মারতে রাজি।
  • cb | 192.193.160.9 | ০৯ মার্চ ২০১২ ১২:১৪536194
  • ভাবছি সানি র রোলটা নেব। যখন তখন স্টেজে ঢোকা বেরোন যাবে। :)
  • kumu | 122.160.159.184 | ০৯ মার্চ ২০১২ ১২:২৪536195
  • মোট্টেই না,রঞ্জনদা কেন ক্যাথির রোল নেবে?এত মেয়েরা গুরুতে থাকতে?

    রোজমেরী -নীনা/মিতা,ক্যাথি-মিঠু/ব্যাঙ,সত্যপ্রসাদ-সিকি,ভালদেক-ফরিদা/অনির্বাণ,বাকীগুলো পরে বলচি।
  • b | 125.20.82.168 | ০৯ মার্চ ২০১২ ১২:৩১536196
  • পরিমল ঘোষ মানে কলকাতা ইউনিভার্সিটির সাউথ অ্যান্ড সাউথ ইস্ট এশিয়ান স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের বাঘা অধ্যাপক... তাই কি?
  • Nina | 12.149.39.84 | ০৯ মার্চ ২০১২ ২৩:৩০536198
  • চিন্টুবাবু
    এটা কি বাংলায় ট্রানশ্লেট করছ? ইনজিরিতে পড়েছিলুম না এটা ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন