এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্পন | 122.133.206.20 | ১৬ মে ২০১২ ২৩:১০546522
  • ডিপেন করে। মুডের ওপর। (পান আনইন্টেশনাল)
  • শ্রী সদা | 127.194.195.136 | ১৭ মে ২০১২ ০০:২০546523
  • সাইকেল উমদা জিনিস। আমার কতদিনের শখ সাইকেল চেপে অফিস যাব, অটোর থেকে সময়ও কম লাগবে। স্রেফ ল্যাদের বশে হয়ে উঠছে না।
  • Lama | 127.194.228.130 | ১৭ মে ২০১২ ০০:৫১546524
  • ফাইনাল ইয়ারের শেষদিকে আমাদের বিনীত গাঙ্গওয়ার তার জামাইবাবুর কাছ থেকে সাইকেল ধার করে হোস্টেলে এনে ফেলল। তারপর কদিন তুমুল এদিক সেদিক ঘোরাঘুরির পর উৎসাহ হারিয়ে ফেললে আমি সাইকেলটা চেয়ে নিলাম। একদিন দেখি আমাদের হোস্টেলের কেয়ারটেকার মাখনদা ধুতি পরে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। দেখে আমারও পুরকি চাপল। গৌরবক কোন একটা বিয়েবাড়িতে পরার জন্য ওর বাবার একটা ধুতি এনেছিল হোস্টেলে। অনেক হাতে পায়ে ধরে সেই ধুতিটা হস্তগত করলাম। একটু প্র্যাকটিসের পর বেশ আত্মবিশ্বাস এসে গেল। ধুতি পরে সাইকেল চালিয়ে ক্যান্টিন, জানাদার দোকান ইত্যাদি পরিক্রমা শুরু হল। জনগন কদিন খুব বাহবা দিল। তারপর একদিন কোথা হইতে কি হইয়া গেল, অন্য এক চলন্ত সাইকেলের স্পোকে ধুতির কোঁচা জড়িয়ে গেল। ভাগ্যিস ধুতির তলায় বার্মুডা পরতাম। সাইকেলগুলোর কোনো ক্ষতি হয় নি। ধুতিটা একটু ফেঁসে গিয়েছিল, কোলে মার্কেটের দর্জি রিফু করে দিল। যেটা রিফু করা গেল না সেটা হল আমার প্রেস্টিজ।
  • Binary | 208.169.6.50 | ১৭ মে ২০১২ ০২:৩৪546525
  • সাইকেল সম্পক্কে কিছু সাধারণ জ্ঞান ঃ-

    ১) নতুন শেখার পরে লোকে সাইকেল চালায় একটু কেতরে বসে। বাঁ দিকে না ডান দিকে কেতরানো দেখে বোঝা যায় সিপিএম না কংগ্রেস।

    ২) পিন্টু-র দোকানে টায়ারের লিক সারাই হতো। টায়ারের ব্লাডার বার করে, হাওয়া ভরে লোহার বালতির জলে চুবিয়ে কোথায় লিক বার করা হয়, তাপ্পর, আঠা আর রবারের টুকরো দিয়ে তাপ্পি মারা হয়। এরকম ৫০ তা তাপ্পি ছিলো সনাতনের সাইকেলের সামনে চাকায়, গিনিস রেকর্ড কিনা বলতে পারবো না।

    ৩) ফুল প্যান্টু বা পাজামা পরে সাইকেল চালাতে গেলে, সঙ্গে সুতলি দড়ি রাখতে হয়, কেন তা সহজ বোধ্য।

    ৪) সাইকেল নিয়ে কুকুরের সাথে কেদ্দানি মাত্তে নেই, তাইলে বাপ্পার মতন অবস্থা হবে। বাপ্পা গলির মোড়ে একটা নেড়ি-র ল্যাজের উপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে দেছিলো। তাপ্পর থেকে, বাপ্পা বাড়ির সমনে সাইকেলে উঠে বোঁ বোঁ করে কিছুটা প্যাডেল করে তার্পর, পাদুটো হ্যান্ডেল-এর উপরে তুলে গতি-জাড্যে গলির মোড় পেরোতো, আর পেচন পেছেন নেড়ি-ব্রিগেড
  • অরণ্য | 154.160.226.53 | ১৭ মে ২০১২ ০৩:১৪546526
  • আমারও বাপ্পার অবস্থা হয়েছিল। হাতির নাকি মারাত্মক স্মৃতিশক্তি, বাংলার নেড়িরা বলে বলে হাতিকে দশ গোল মারব, মেমোরি টেস্টে। একবার ন্যাজ চাপা দিয়েছিলাম বন্ধুর বাড়ির সামনে, তাপ্পর বছরের পর বছর ঐ হ্যান্ডেলে পা তুলে ...
  • Kaju in Bokolma | 131.242.160.180 | ১৭ মে ২০১২ ১৩:৩৩546527
  • name: দ mail: country:

    IP Address : 24.99.175.205 (*) Date:17 May 2012 -- 01:26 PM

    আমি সাইকেলে উঠতে নামতে পারতাম না ঠিক করে। মা দুগ্গার মত সাইকেলে চড়ে পড়লে বাঁই বাঁই করে চালিয়ে যেতে পারতাম।

    এই করে একবার আমাদের শ্রীপল্লী থেকে রেললাইনের দিকে বেরোতে গিয়ে একপাল গরুর পালের মধ্যে পড়েছিলাম। না ভুল হল, আসলে মস্ত নালার ওপরে সরু সাঁকো, উল্টোদিক থেকে আর একটা সাইকেল আসছে, এদিকে আমি তো আর মাঝখানে নামতে জানি না, বাঁদিকে গরুর পাল। তো, গরু অবোলা জীব, সাইকেলচারী অজানা লোকটি বেশ সবল দেখতে। অগত্যা গরুর পালের মধ্যেই সাইকেলটা ঢুকিয়ে দিলাম। যদিও অনেকগুলোই বেশ শিঙালো গরু ছিল কিন্তু ভয় পেয়ে আর কি হবে ।।।।

    অতঃপর গরুর পাল ছত্রভঙ্গ, একটা ছাই ছাই রঙের কাজলচোখো গরু, আমাকে ভর দিয়ে দাঁড়াতে না দিয়ে হড়বড়িয়ে পা বাড়ালো, ফলে আমিসাইকেলসহ ওটার গায়ে, ওটা সাঁকোর ধার থেকে টুপ করে খসে নালায়। অন্য কোনও একটা বুদ্ধিমান গরু অপর সাইকেলটাই যে আসলে দোষী সেটা বুঝতে পেরে দিয়েছে সেটাকে আচ্ছাসে ঢুঁসিয়ে। ফলে তিনিও ধড়াম করে নালায়। বাকী গরুরা ভোঁ দৌড়।

    এরপরে কাঠকুরুনি গোপালীর চীৎকারে পাড়া থেকে লোকজন বেরিয়ে এসেসবাইকে উদ্ধার করে। ঐ ছাই গরুটার সাইকেল ট্রমা জীবনেও কাটে নি, সাইকেলে কাউকে আসতে দেখলেই দিগ্বিদিক ভুলে বেটি দৌড় দিত, তাতে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হত আর পাষন্ড প্রতিবেশীর দল আমাকেই দায়ী করত। অবশ্য ঐ গরুদের সাথে আমার একটা মিউচুয়াল ভয়ের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল আমরা দুপক্ষই দুপক্ষকে দেখে ভয় পেতাম। প্রসঙ্গতঃ আমাকে পাড়ার ছেলেমেয়ে বুড়ো বাচ্চা সব্বাই জিগ্যেস করেছে 'তুই গরুর পালের মধ্যে ঢুকলি কেন? ভয় করলো না?'
    হায় তখনও অমর কথাশিল্পী দলছুট'এর সেই অমোঘ লাইন লেখা হয় নি 'ডরাইলেই ডর, হান্দায়া দিলে কীয়ের ডর?' তাহলে আর লোকে জিগাত না।
  • kiki | 69.93.204.197 | ১৭ মে ২০১২ ১৭:৫৫546528
  • আহা বড় ভালো টই। তা সে ভাই ভুখা হরতালের হুমকি, দেওয়ালে , সাইকেল চিহ্নে ভোট দিন এসব লিখে টিখে একখান লাল পিছনে হেলান দেওয়ার জায়গা উইদ লম্বা সিটের সাইকেল পেলো পৈতেতে। ভাই তখন সিক্স আর আমি এইট। তো ভাইতো কিনে আনার দিনেই ব্যালেন্সার খুলে দিলো। শিখেও গেলো। এবার আমাকে শেখালো। আমাদের ব্যায়লায় তখন দিগন্ত দেখা যাওয়া মাঠ টাঠ ছিলো আর কি। তো ভাই আমার পিছন পিছন ছুটতো আর মাঝে মাঝেই আমায় একা ছেড়ে দিতো। এমনি করে শিখে গেলাম এবং অন্যসবকিছুর মতো এটা ও আধখ্যাঁচরা। উঠতে বা নামতে শিখলাম না। তো ভাইকে আজ্জোতে মানে তেনার স্কুলে মাঝে সাঝে আমার ছুটি থাকলে ছাড়তে যেতাম। সেই লাল টানা সিটে পিছনে সেঁটে দিয়ে সামনে আমি বসে। কতজনকে যে গুঁতিয়েছি বলার নেই। নেহাত ই হালকা গুঁতো বলে লোকে কিছু কইতো না। আর আমার কনফি বেড়ে গেলো। একদিন কি কাজে বিজিপ্রেস দিয়ে সকাল বেলায় হু হা চালিয়ে আসছি আর সামনে জিওল মাছ নিয়ে এক মাছোয়ালা বাজারে চলেছে। সোজা পিছনে দুম। আর জিওল মাছ রা সটান নর্দমায় লাফ দিয়ে প্রান বাঁচালো। কেউ কেউ অবশ্য রাস্তায় গড়িয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা কর্ছিলো। তাবলে লোকটার ঐরম এক ছোট খুকিকে উত্তাল গাল শোনানো ঠিক হয়েছিলো বলে আমার মনে হয় না। তা সে আমার কথায় জগৎ চলবে এমন ও তো না।
  • কাজু | 131.242.160.180 | ১৭ মে ২০১২ ১৮:০৮546529
  • এইত্তো কিকিদি একবারে টইতে লিখেচে। ভেরি গুড ! জিওল মাছ না পালালে তোমাকে ও ব্যাটা বকতে পারত বলে মনে হয় না। এই তো ঝিকিদিকেও বকেনি।

    এখনো যাঁরা ট্রেলার দেখিয়ে রেখেছেন, পুরো গপ্পো বলেন্নি, কুমুদি আর পপ্পন্ঞ্জি।
  • সিকি | 132.177.163.144 | ১৭ মে ২০১২ ২০:২৭546530
  • নাঃ। কাজু চেইত্যা গেছে। ন্যাবেঞ্চুষ দেব না।

    কাজু, কুড়কুড়ে খাবা? ঃ)
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ১৭ মে ২০১২ ২১:৪৬546532
  • কল্যানীতে ক্লাস ফাইভ থেকে সাইকেল চালানো বাধ্যতামূলক ছিল আর আমি তখন আই এস আই বা নরেন্দ্রপুর - মানে কচিটি নই কোনো মতেই | সেন্ট্রাল পার্কে টার্ন নিতে গিয়ে দেখি সামনেই এক পঞ্চদশী সাইকেলে রাস্তা ক্রশ করছে - ধাক্কা লাগা আটকাতে গেলে আমাকে পড়তে হবে - একেবারে হবেই - কিচ্ছুটি করার নেই | মুহূর্তের মধ্যে ডিসিশন নিয়ে নব্বই ডিগ্রীতে ধাক্কা | বেচারী না উল্টে করে কি? ওদিকে দোষ তো আমারই | কাজেই আমি সিটে বসেই অল্প করে ধমক দিলাম - এই ভাবে কেউ রাস্তা পার হয় ইত্যাদি - মেয়েটি নিষ্পাপ বিস্ময়ের ঘোর কাটাবার আগেই আমি গন |
  • পাই | 138.231.237.4 | ১৭ মে ২০১২ ২২:০১546533
  • অভ্যু ধাক্কাও মারে আঁক কষে ! ঃ)
  • সিকি | 132.177.163.144 | ১৭ মে ২০১২ ২২:৩২546534
  • অ্যাট্টা পুরনো স্মৃতিচারণা কপি পেস্ট মেরে দিলাম।

    চালচিত্র - হুগলিঃ

    ফিরিতেছিলাম মুদ্রানিষ্কাশক যন্ত্র হইতে হাজার খানেক টাকা নিষ্কাশন করিয়া, ফিরিবার পথে প্রয়োজন হইতে পারে। পার্শ্ব দিয়া পিছনে চলিয়া যাইতেছিল স্কুল-কলেজের বইখাতার দোকান, রাজেন্দ্র সাইকেল স্টোর্স, লোকনাথ হোমিও হল, তারকনাথ জুয়েলার্স ইত্যাদিরা।

    ঘোর ভাঙিল বামাকণ্ঠে "ভাইসাব, ও ভাইসাব, জরা পাকড়িয়ে না মুঝে, ও ভাইসাব' কণ্ঠে। বিস্ময়বিনিন্দিতচক্ষে অন্যপার্শ্ব ফিরিতেই দেখি এক ষোড়শী কি সপ্তদশী, সাইকেলে টলমলায়মান অবস্থাতেই অতিধীরে আমার পার্শ্বে সঞ্চরমতী, এবং পুনঃপুনঃ কাতর আবেদনে তাহাকে "পাকড়াইবার' নিমিত্ত আমাকে অনুরোধ করিতেছে।

    মানুষের মন বায়ু অপেক্ষা দ্রুতগামী। ইহা বুঝিতে এক সেকেন্ড লাগিল যে ষোড়শীকে নহে, আহ্বান তাহার সাইকেলকে পাকড়াইবার নিমিত্ত, নচেৎ সে সাইকেল হইতে নামিতে পারিতেছে না। হুগলি শহরতলির বুকে এমনি দৃশ্য সেরূপ বিরল নয়, এস্থলে ষোড়শী-সপ্তদশীরা সাইকেলে চড়িতে বা নামিতে শিখিবার পূর্ব্বেই সাইকেল চালাইতে শিখিয়া লয়। প্রয়োজনমত সাইকেল বিপরীতপার্শ্বে নিক্ষেপ করিয়া লম্ফ দিয়া ইহারা নামিয়া থাকে।

    বলপূর্ব্বক দক্ষিণ হস্তে "পাকড়িয়া' ধরিলাম। ।।। না, ষোড়শীর ক্ষীণকটি নহে, মৃণালবাহুও নহে, ধরিলাম তাহার সাইকেলের কেরিয়ারটি। সাইকেল মুহূর্তে চলচ্ছক্তিহীন হইল, খরগোশসুলভ একটি "তুড়ুক' লম্ফনে সে নামিয়া আসিল।

    এতক্ষণে বুঝা যাইল আসল ঘটনা কী! কুমারীর পরনে ছিল লংস্কার্ট। সম্ভবত কোথা হইতে পড়িয়া ফিরিতেছিল, কিঞ্চিৎ দূরে অপর এক ষোড়শী বান্ধবীর অপেক্ষায় অপর এক সাইকেলে দাঁড়াইয়া ছিল। আমাদিগের আলোচ্য কুমারীর লংস্কার্টের প্রান্ত আটকাইয়া গিয়াছে প্যাডেলের ভিতরে, প্যাডেল করিতে গেলে তাহা আরও বেশি করিয়া জড়াইয়া গিয়া লজ্জার কারণ হইতে পারিত, তাই মোক্ষম মুহূর্তে তার করুণ "ভাইসাব' ডাক।

    স্কার্টের প্রান্ত বের করিবার তাহার প্রচেষ্টা সফল হইল না, হয় তো, কে জানে, প্রচেষ্টা আন্তরিক ছিল না। অতঃপর আমাকেই কহিতে হইল, রুক্‌ জাও, সিধি খাড়ি রহো, ম্যায় কোশিশ করতা হুঁ।

    ঝুঁকিলাম। সযত্নে উল্টাদিকে প্যাডেল ঘুরাইয়া তাহার লংস্কার্ট বাহির করিয়া আনিলাম প্যাডেলের খপ্পর হইতে। এক ঝলক পদাঙ্গুলির নেলপালিশের দিকে নজর যাইল। কিছুটা আনমনা হইয়া, অতি সাবধানে স্কার্টটা ছাড়িয়া দিলাম।

    আমার মুচকি হাসিতে কোনও ভাষা ছিল না। তরুণী মরালগ্রীবা বাঁকাইয়া 'থ্যাংকিউ ভাইসাব' কহিয়া পুনরায় সাইকেলে চড়িয়া প্যাডেলে চাপ দিল। এইবার সতর্ক হইয়া, লম্বা স্কার্ট কিঞ্চিৎ উপরে উঠাইয়া। ধীরে ধীরে তাহারা বুনো-মসজিদের পথ দিয়া দূরে হারাইয়া গেল।

    আমি, একা, ফিরিতে লাগিলাম গৃহের পথে। চলিতে চলিতে ভাবিতেছিলাম ।।।

    অফ অল পার্সন্‌স, কন্যা কীরূপে জানিতে পারিল যে আমি হিন্দি বুঝি? নাকি, হুগলির লোকেরা আজিকাল হিন্দি বাক্যালাপে অভ্যস্ত?
  • পাই | 138.231.237.4 | ১৭ মে ২০১২ ২২:৪৪546535
  • ঃ)
    এই উপাখ্যানটির নাম কী হবে ?
  • সিকি | 132.177.163.144 | ১৭ মে ২০১২ ২২:৫০546536
  • সাইকেলকন্যা ও এক বাঙালি ভাইসাব। ;-)
  • bb | 127.195.179.41 | ১৭ মে ২০১২ ২৩:১৬546537
  • স্কার্টের দাবী- আ লা শরৎ বাবু
    স্কার্টের সাথে ফ্ল্যার্ট - ভেঙ্কটেশ ফিল্ম
    সিকি,সে ও সাইকেল -তরুণ মজুমদারীয়
    বি-সাইকেল্ড (হার্ট) থিফ- ডি সিকি
    হুগলী-বাজারে- তপন সিংহ
    ডাইরী অফে আ জাম্পি চিক - হলিউড স্টাইলে
  • জটায়ু | 132.177.163.144 | ১৭ মে ২০১২ ২৩:২৭546538
  • ব্যান্ডেলে স্ক্যান্ডেল।
  • আসলি জটায়ু | 217.239.86.106 | ১৮ মে ২০১২ ০০:১৩546539
  • হুগলীতে হ্হ্পাপ্রে !
  • পাই | 138.231.237.4 | ১৮ মে ২০১২ ০০:২০546540
  • হুহহপাপ্রে।
  • কেলো | 127.99.26.252 | ১৮ মে ২০১২ ১৪:২০546541
  • কাজুদা আমার নাম যোগ করে টই খুলেছেন দেখছি। এখানে আমি নিশ্চিন্তে ভাটাতে পারি।
    নিচের লেখাটা সাইকেলের ওপর না। সাঁতারের ওপর। সাঁতারের কেলো আর সাইকেলের কেলো তো একই গোত্রের।
    তাও এখানে কিন্তু দু একবার 'সাইকেল' শব্দটা পাবেন, আর কে না জানে -
    সাইকেল + কেলো = সাইকেলো।

    সেই বিরেনব্বুই কি তিরেনব্বুই সালে যখন মেরিন সাইন্সে এম এস সি করতে ঢুকলাম তখন কলকাতা ইউনিভার্সিটির মেরিন সাইন্সে পড়তে গেলে চারটি নিয়ম ছিল-

    ১) বি এস সি তে নম্বর যতই বেশী থাক, ইচ্ছুক প্রার্থীর আলাদা ইন্টারভিউ নেওয়া হবে।
    ২) প্রার্থীকে অবশ্যই সাঁতার জানতে হবে।
    ৩) প্রার্থীকে অবশ্যই সাইক্লিং জানতে হবে। এবং -
    ৪) প্রার্থীকে অবশ্যই ছেলে হতে হবে।

    এর মধ্যে প্রথমটা ছাড়া বাকিগুলো সেরকমভাবে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হত না। সেরকম করলে আমরা অনেকেই একটা না একটা বিষয়ে আটকে যেতাম, এটা নিশ্চিত। তবে সাইক্লিং একজন সমুদ্রবিদের কোন কম্মে লাগবে সেটা আমার কাছে বেশ অস্পষ্ট ছিল। সমুদ্রে কি সাইকেল চলে? টিভিতে মাঝে মাঝে দেখায় বটে বেঢপ ফুলকো চাকাওয়ালা একটা জিনিষ জলের ওপর দিয়ে সাহেবরা বিলকুল চালিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সে হল ট্রাইসাইকেল জাতীয়, সে তো নিতান্ত শিশু ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও আরামসে চালাতে পারে। যাক্ কি হবে অত মাথা ঘামিয়ে, আমার কাজ তো টুকে ফুকে যে করে হোক, পাশটা করা।

    কোনরকমে এমএসসি পাশ টাশ করে তো গোয়া গেলাম রিসার্চ করতে। হুঁ হুঁ বাবা, সে হচ্ছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফী সংক্ষেপে শ্রী-এন্নাইও। সেই যুগেই কম্পিউটারে বসিয়ে নানা রকম পরীক্ষা নিয়ে তো ঢোকাল। সেখানকার লোকের দেমাকই আলাদা। পরীক্ষায়, ওপরে বলা ওই শেষ তিনটে পয়েন্টের পরীক্ষা নিল না বটে। কিন্তু হাবভাব দেখে আমার সবাইকেই মনে হত সাঁতার তো নিতান্ত সারফেসের ব্যাপার, তারা কমপক্ষে ফাইভ স্টার ডাইভার, ৫০ মিটারের ওপরে তারা কেউ কথাই বলে না। আর সাইক্লিং? ফুঃ একজন নায়িকা পেলেই তারা অক্ষয় কুমারের মত ওয়াটার স্কুটার নিয়ে বোঁ করে ওপারের মার্মাগোয়া পোর্ট থেকে এক চক্কর মেরে আসতে পারে।

    এইসব কৃতি ব্যক্তিদের কবল থেকে রক্ষা পেতে একটা সহজ উপায় বের করলাম। সে হচ্ছে ক্রুজে চলে যাওয়া। মানে জাহাজে করে স্যাম্পল কালেকশনে যাওয়া আর কি! তাতে সবসময়েই লোকাভাব থাকত, কারন ক্রুজে গেলে শনি রোব্বারে ছুটি থাকে না, ছোট্ট কোস্টাল রিসার্চ ভেসেল, তাতে বিলাসিতার নামগন্ধ নেই। আর খানা পিনার, বিশেষতঃ পিনার, অঢেল ব্যবস্থা থাকলেও, সবাই সাবধান করেছিল – সে সব খাওয়া যায় না মোটেও। খাবার সামনে থাকলে খাওয়া যাবে না কেন? সেখানে কি কেউ টেনিদার ব্রহ্মবিকাশবাবুর মত হাসির গল্প শোনায়? তারা পটলডাঙ্গাও চেনে না টেনিদাকেও না। তারা বোঝালো যে ওসব কিছু নয়, ওরকম ফ্ল্যাট-বটম জাহাজে উঠলে নাকি প্রাত্তিকাল থেকে বোমি শুরু হয়, তা নাকি আর থামে না।

    তা, আমার কপাল এম্নি ভাল, যে প্রথম ট্রিপেই তামিল পোশুপতিকে (কল্লোলদার জেলের পশুপতির সঙ্গে গোলাবেন না যেন) পেয়ে গেলাম জাহাজের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে। সে শ্রীসেন্নাইয়ে শ্রীশ্রীএন্নাইওট্টি মানে ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অফ ওশান টেকনোলজীতে কাজ করত। সে ব্যাটার এক্কেবারে সী সীকনেস ধাতেই নেই। তিন চার মিটার উঁচু ঢেউয়ের ধাক্কায় যখন মানুষ তো দূরস্থান, জাহাজ পর্যন্ত কাহিল হয়ে পড়েছে, তখন ব্যাটা একা একা বসে বসে মেসের সব মুর্গীর ঠ্যাং সাবাড় করত। সে আমাকে দুদিনে শিখিয়ে দিল কিভাবে বমি করতে করতেও ফাঁকে ফাঁকে মুর্গীসেবা করা যেতে পারে। ঠ্যাং ট্যাং নয়, আমি অবিশ্যি তাদের ডিমটুকুন পেলেই খুশী।

    তা শ্রীএন্নাইওর গবেষনা ও গবেষককুলের হাত থেকে পালিয়ে মাঝ সমুদ্রে আমার তো দিন কাটছিল মন্দ না। কিন্তু যাদের ডাঙ্গায় (এবং এন্নাইও তে) ফেলে এলাম তাদের তো চিরকাল ডাঙ্গায় থাকলে চলবে না, গবেষনা শেষ করতে বা নিতান্ত পদোন্নতির খাতিরে একবার না একবার জলের আশেপাশে যেতেই হবে। সে রকম পরিস্থিতি উদ্ভব হলে আগে যাঁদের কথা বলেছি, সে সব বাঘা বাঘা লোকদের প্রেফারেন্স ছিল নিতান্ত সী বিচে গিয়ে হাঁটুজলের মধ্যেই হিজিবিজি একটা কিছু কাজ দেখিয়ে পদোন্নতির কাজটা উতরে দেওয়া। কিন্তু এত সুখ সইল না তাদের কপালে। তখন সবে মুক্ত বাজার অর্থনীতি জাঁকিয়ে প্রবেশ করছে ভারতে। ফলে মুর্লীজী (মুঃ মঃ যোশী) আদেশ দিলেন, গবেষনাগারের খরচের বেশীভাগটাই গবেষনাগারগুলোকেই যোগাড় করতে হবে, বিভিন্ন কর্পোরেট প্রজেক্ট ধরে ধরে। আর কে না জানে, কর্পোরেট প্রজেক্ট ধরা মানেই হাঁটুজলের চেয়ে গভীরে যাওয়া।

    এমন সময় একটা কান্ড হল-
    ডঃ ধারগালকার ইত্যাদিদের গ্রুপ একটা বিপিসিএল না কার যেন পেড প্রজেক্ট যোগাড় করল পারাদীপ পোর্টের কাছে।তেমন কিছু না, সামান্য এনভারনমেন্টাল ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট জাতীয় জিনিস। আগেকার জমানা হলে শ্রীএন্নাইওর ক্যান্টিনে লাঞ্চের ঘন্টা বাজার আগেই ওরকম দশটা রিপোর্ট টেবিলে বসেই লিখে সাবমিট পর্যন্ত করে ফেলা যেত। কিন্তু এখানে তো পারাদীপে নৌকো করে স্পটে গিয়ে বিপিসি এলের অফিসারদের একবার মুখটুকু অন্তত দেখিয়ে আসতে হবে। নয়তো টাকাপয়সা বেবাক চেপে দেবে শালারা। বহু টাকার মামলা যে!
    ফলে তেলেগু-সতীশের ডাক পড়ল।
    (আমার এই গল্প মোটেই পোতিদিনের লোমহর্ষক 'মাওবাদী গ্রেপ্তার সিরিজ' এর কাহিনী নয়। তাই তেলেগু-দীপকের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। এই তেলেগু-সতীশের সঙ্গে দীপকের কোন যোগ নেই, দুজনেই তেলেগু হওয়া ছাড়া)

    এখানে কিছু কথা বলে রাখা ভাল, এলাইনে যাঁরা এখনও একটুও গবেষনা করেন্নি তাঁদের সুবিধের জন্যে-
    আমার মতে গবেষনার জাহাজ হয় চার রকম-
    ১) খুব দূরে এক্কেবারে অন্যরকম কিছু করার থাকলে যে জাহাজ দরকার হবে সেরকম সফিস্টিকেটেড জাহাজ আমাদের দেশের নেই। তাই গালভরা 'এক্সপিডিশন' নাম দিয়ে কিছু করতে গেলে বিলিতি জাহাজ ভাড়া করতে হয়। এই যেমন ধরুন ভারতের দক্ষিন মেরু 'অভিযান', বা ভারত মহাসাগরে পলিমেটালিক নডিউল উদ্ধার 'অভিযান'। এ সব জাহাজের মূলতঃ এনডিওরেন্স অর্থাত 'রাম' এর স্টক বেশী থাকে।
    ২) তেমন দূরে না গিয়ে যদি মাঝ সমুদ্র বরাবর দেশে বিদেশে নিজের কাজের সাক্ষর ছড়িয়ে রেখে আসতে চান তবে নিজের দেশের ছাপ মারা একটি জাহাজ অতি অবশ্যই জরুরী। সে হল গে আমাদের 'সাগর কন্যা'। যার মাথায় এক গোল বিশাল বল। যে বলটি দেখলেই দেশ বিদেশের লোক – মানে আন্দামানের সেন্টিনেলিজ থেকে আফ্রিকার নগ্ন-জুলু পর্যন্ত নেচে ওঠে।
    ৩) কিছু ব্যাদড়া লোক, যাদের প্রজেক্টে নেই কানা কড়ির ফান্ড, অথচ মনের মধ্যে আছে এক্সপিডিশনের স্বপ্ন, তাঁদের জন্যে রয়েছে আমার আগের বলা দুটি কোস্টাল রিসার্চ ভেসেল, সাগর-পূর্বী আর সাগর-পশ্চিমি। যেগুলো মোটামুটি কিনারার ১৫ মিটার গভীরতা পর্যন্ত চলে আসে। চালানোরও খরচ নামমাত্র - দিনে ৩০ হাজার টাকা মত। (এখন অবশ্য ডবলেরও বেশী)
    ৪) হাঁটুজল থেকে ওই পনের মিটার গভীরতা পর্যন্ত কভার করার জন্যে কিন্তু সরকারী কোন রিসার্চ ভেসেল নেই। তখনও ছিল না, এখনও নেই। তাই ওই হাঁটুজল থেকে ১৫ মিটার অব্ধি গভীরতা হল তেলেগু- সতীশের রাজত্ব।

    তেলেগু-সতীশ এদেশের বিঞ্জানীদের টেস্ট জানত। তাই সে নিজের বেসরকারী উদ্যোগে একখানা কাঠের ফিশিং ট্রলারকে রিমডেলিং করে রিসার্চ ভেসেল বানিয়ে নিয়েছিল। রিসার্চ ভেসেল বলতে সতীশ বুঝত একটা কেবিনে বসে পর্দা টেনে নন-মিথিলেটেড স্পিরিট নিয়ে কাজকম্মো করার সুবিধে, আর ক্লান্ত হয়ে পড়লে ক্লান্তি অপনোদন এর জন্যে একটা ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ারে কিছু বুলু দেখার সুবিধে (তখনও সিডি প্লেয়ার বাজারে আসেনিকো, পানাজিতে হেচ পি ওয়ান্স রাইটেবল সিডির এক পিসের দাম সাড়ে আট শ টাকা ) - এই হল তেলেগু-সতীশ এবং তার 'রিসার্চ ভেসেল'।

    ডঃ ধারগালকারের দলবল তো পারাদীপ গিয়ে পৌঁছাল ফলকনামা ধরে। সেই দলে ছিল আমার এক বন্ধু, সে গুরুতে এখনও লেখে না বটে কিন্তু গুরু পড়ে। তাই তার নামটি দিলাম না। পারাদীপ- কান্ড শুনুন তার জবানীতেই-

    পারাদীপ পৌঁছে তো হোটেলে জাঁকিয়ে বসা গেল। চারিদিক মেঘলা, অন্ধ্রের দিকে নাকি সাইক্লোন ফর্ম করেছে। থেকে থেকে ঝিরি ঝিরি বিষ্টি হচ্ছে, আর হু হু হাওয়া। এমন পরিবেশে ডঃ রাঠৌর তো ছিপি খুলে গেলাস নিয়ে বসে গেলেন একটা বার্মুডা পরে। সন্ধের দিকে কাঁচুমাচু মুখে তেলেগু- সতীশ এলো। বলে কিনা - স্যার, ওয়েদার তো দেখছেন? এর মধ্যে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? দুটো দিন একটু কষ্ট করে ঘরে বসেই নাহয় ….
    ডঃ রাঠৌর এর পেটে তো আগে থেকেই একটু পড়েছিল, তিনি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন - তুমি কি বলছ জানো সতীশ? পৃথিবীর মধ্যে বিগ্গানের জগতে অগ্রগন্য যে রাষ্টো সেটা হচ্চে আমাদের ভারোতবস্যো, তার মধ্যে বিগ্গানে অগ্রগন্য যে গবেষনাগার সে হচ্ছে আমাদের শ্রীএন্নাইও, এবং তার মধ্যে সবচেয়ে অসমসাহসী যে গ্রুপ, তার লীডার হচ্ছেন আমাদের সবার প্রিয় ডঃ ধারগোলকার। ….. সুতরাং কার কাছে বলছ তুমি ওসব সাইক্লোন ফাইক্লোনের গল্প!! সাইক্লোন ক্লোন করার পেটেন্ট পয্যন্ত আমাদের হাতেই রয়েছে জেনে রেখো। সামান্য সাইক্লোনের কথা বলে তুমি সন্ধেটাই খারাপ করে দিলে হে.. যাও যাও সাইকেল হাঁকিয়ে বাড়ি যাও, গিয়ে কালকের যোগাড়যন্তোর করো গে।

    শুনে টুনে আমার কেমন যেন লাগল, সতীশ ভগ্নমনোরথ হয়ে ফিরে যাচ্ছিল, তাকে ডেকে বল্লুম দেখো হে সতীশ, আমি কিন্তু সাঁতার ফাঁতার জানি নে, বোটেএকটা লাইফ জ্যাকেট অন্তত রেখো আমার কথা মনে করে। সতীশ ঘাড় নেড়ে চলে গেল। এবার স্বয়ং ডঃ ধারগালকার বোতল ছেড়ে আমাকে ধরে পড়লেন... আরে সাঁতার আমরা কেই বা জানি, তা বলে এ সব নিচূ তলার লোকের কাছে জোর গলায় বলতে আছে নাকি সে সব কথা? আমরা শ্রী-এন্নাইওর বিজ্ঞানী না? আমাদের প্রেস্টিজ বলে একটা ব্যাপার নেই?
    কি আর করব, হজম করতে হল, পেড পোজেক্টের পয়সায় মাল খাওয়াচ্ছে বলে কথা!

    পরেরদিন ভোরভোর উঠে তো সাগরপাড়ে চল্লাম। আকাশের যা অবস্থা তা দেখে তো মনটা দমে আলু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কি আর করা, গবেষনা করতে এসে কি অত বাছবিচার করলে চলে। সাগরপাড়ে গিয়ে দেখি এলাহী ব্যাপার। তেলেগু সতীশের দলবল হাজির। দূরে ব্রেকার জোনের ওপারে তেলেগু সতীশের বিখ্যাত আল্ট্রা-কোস্টাল রিসার্চ ভেসেল দাঁড়িয়ে আছে। কিন্ত সেখানেও এত বড় বড় ঢেউ, যে অত বড় ট্রলারটাও মাঝে মাঝে ঢেউয়ের মধ্যে বেমালুম হাপিশ হয়ে যাচ্ছে। তেলেগু সতীশের দল আউটবোর্ড মোটর লাগানো একটা ছোট কাঠের ডিঙ্গিতে করে সেই রিসার্চ ভেসেলে থুড়ি ট্রলারে রসদ, অর্থাত বীয়ারের ক্রেট তুলছে। যেভাবে নৌকোটা পাড়ে ফিরল তাতে আমার নেতাজী-সুভাষ ব্র্যান্ডের বাঙ্গালী মনও সাত হাত বসে গেল। ওইভাবে যেতে হবে? বাপরে। আগেই খোঁজ নিলাম সতীশ আমার লাইফ জ্যাকেটের বন্দোবস্তো করেছে কিনা।
    বিজ্ঞানীদের ফর্মাইশ খাটতে তেলেগু সতীশের কোনদিন ভুল হয় না। ওটা ওর রুজি-রুটি। আমার হাতে একটা ফ্লুওরেসেন্ট কালারের লাইফ জ্যাকেট ধরিয়ে দিল। কোনো জাহাজের স্ক্র্যাপের মাল হবে আরকি! শুধু আমিই চেয়েছি বলে সতীশ শুধু একটাই এনেছে বাকি বিজ্ঞানীদের ও মাল দিয়ে তাঁদের অপমান করার সাহস তেলেগু-সতীশের নেই।

    গতকালই সন্ধেয় 'সাঁতার জানি না' বলে চীফ সাইন্টিস্ট এর কাছে ধাতানি খেয়েছি। ধাতানির মূল বক্তব্য তো ছিল সাঁতার যে জানি না সেটা আম আদমীকে বুঝতে দেওয়া চলবে না। তাই জ্যাকেটটা হাতে নিয়েও গায়ে পরলাম না। বোটে বসে সামনের পাটাতনে কেত মেরে জ্যাকেটটা ফেলে রাখলাম, যেন ওটা আমার না। ছোট বোটটাতে তো বসলাম, আমি, আমার পাশে আমাদের প্রজেক্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট, সামনের পাটাতনে আমার ফ্লুরোসেন্ট লাইফ জ্যাকেট, তারও আগের পাটাতনে আমার দিকে মুখ করে ডঃ ধারগালকার, (তাঁর মুখটা যেন একটু চিন্তিত লাগল)। আমার পেছনে সতীশ আর ডঃ রাঠৌর। তার পেছনে সতীশের হেড-মাঝি আউটবোর্ড মোটরের হ্যান্ডেল ধরে।

    আমাদের যাত্রা শুরু হল। হাঁটুজলের জোন পার হবার আগেই একটা বিশাল ঢেউ ধেয়ে এল...মাঝি সোজা সেটার মধ্যে দিয়ে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে চালিয়ে দিল ফুলস্পীডে। বোটের Bow সোজা আকাশের দিকে উঠে গেল। আমি জ্যাকেটটা চেপে ধরে চোখ বুজে ফেল্লাম। বিশাল আওয়াজ করে আমাদের বোট আকাশ থেকে আবার জলের ওপর আছড়ে পড়ল। সব কাঠ ফাঠ খুলে গেল নাকিরে বাবা! চোখ খুলে দেখতে গিয়ে দেখি আগেরটার চেয়েও বড় ঢেউ একটা সামনেই। এবার আর নিস্তার নেই, কারন বোটের মুখ এবার নিচের দিকে। পুরো ঢেউটা বোটের ওপর দিয়েই যাবে! বাবাগো, আমি ফের ফের চোখ এবং নাক দুইই বুজে পাটাতন ও জ্যাকেট আঁকড়ে বসে রইলাম। সেকেন্ডখানিক সবকিছু জলের তলায়। তারপর সম্বিত ফিরল হেড মাঝির চীত্কারে। চোখ খুলে সামনে ডঃ ধারগালকারের হুলোবেড়ালের মত মুখটা দেখতে পেলাম না। আর দেখলাম ঢেউটা আমাদের বোটের মুখ পুরো ১৮০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমাদের সামনে এখন খোলা সমুদ্র নয়, বালুকাবেলা। হেড মাঝি আমার হাত থেকে জ্যাকেটটা ছিনিয়ে নিয়ে পেছনে সমুদ্রের দিকে ছুঁড়ে দিল। সেদিকে মাথা ঘুরিয়ে দেথি জলের মধ্যে একটা গোলমত কালো বল উঠছে নামছে.. ওটাই ধারগোলকারের মাথা। মাঝি তাঁরই হাতের নাগালে আমার জ্যাকেটটা ছুঁড়ে দিল। প্রানভয়ে লাফিয়ে পালাব কিনা ভাবছি, কিন্তু সে কাজ আর আমাকে করতে হল না, আবার একটা বিরাট ঢেউ, এবং এবার আমাদের বোটটাকে সোজা তুলে বালির ওপর ছুঁড়ে ফেলে দিল। বোটটাও একেবারে খেলনার মত চুরমার হয়ে গেল। কিন্তু আমি বালিতে। খানিক কুমড়ো গড়ান দিয়ে উঠে দেখি, হাঁটুজলে ডঃ রাঠৌর চারপায়ে হামা দিচ্ছেন, সতীশ তাঁকে ঘাড় ধরে পরের ঢেউটার আগেই বালিতে এনে ফেলার চেষ্টা করছে। আর আমাদের অ্যাসিস্ট্যান্ট আমার পাশেই বালিতে ফ্ল্যাট, নট নড়নচড়ন নট কিচ্ছু। আর হেড মাঝি আর কুচকুচে কালো রোগা রোগা কিছু মানুষ দুধসাদা ফেনা ঠেলে দূরে আমার ফ্লুওরেসেন্ট জ্যাকেটটার দিকে যাচ্ছে। ডঃ ধারগালকার সেটা প্রানপনে আঁকড়ে আছেন।

    (মানুষজনের প্রকৃত নাম এবং ঘটনা অপরিবর্তিত)

    ব্যান্ডেজ ট্যান্ডেজ বেঁধে গোয়া ফিরে আমাদের বাংলোর হাতায় বসে আমার বন্ধু আমাকে যে গল্পটা বলেছিল, সেইটা হুবহু আপনাদের শুনিয়ে দিলাম।

    এক ছেড়ে যাওয়া বাঙ্গালীর একটা মেল অ্যাকাউন্ট ক্র্যাক করে রেখেছিলাম। সেইটে থেকে পরদিন এন্নাইওর ডিরেক্টর ডঃ দিশা কে একটা মেল ঠুকে দিলাম বেনামে। এই মর্মে-

    মাননীয় ডঃ দিশা,
    পৃথিবীর মধ্যে বিগ্গানের জগতে অগ্রগন্নো যে রাষ্টো সেটা হচ্চে আমাদের ভারোতবস্যো, তার মধ্যে বিগ্গানে অগ্রগন্নো যে গবেষনাগার সে হচ্ছে আমাদের শ্রীএন্নাইও, তার মধ্যেও অগ্রগন্নো যে বিজ্ঞানীরা, তাঁদের মধ্যেও অনেকেই দেখা যাচ্ছে বেসিক সাঁতারটুকু পর্যন্ত জানেন না। ফলে সামান্য প্রাতঃকাল-বৈশাখীতে তাঁদের যে দুরবস্থা হয়েছে সেটা দেখে সূদূর ওড়িশা উপকুলের তামাম মত্সজীবী আজ হাসছে। (হ্যাঁ -লোকাল খবর কাগোজেও বেরিয়েছিল গল্পটা)
    আমার মনে হয় সাঁতার এমন কিছু একটা হাতিঘোড়া ব্যাপার না, এবং যে কোন বয়সে সেটা শেখা চলে।
    ইতি-
    বেনামে কেলো।

    দুপুরে এন্নাইও ক্যান্টিনে লাঞ্চ করতে গিয়ে শুনি লোকে ডিরেক্টরের মুন্ডপাত করছে। ডিরেক্টর নাকি আপামর এন্নাইওবাসীকে সাঁতার শেখানোর ফর্মান জারী করেছেন। কাল থেকে নাকি লিস্ট বের হবে, কার কোন ব্যাচে শিখতে হবে তারই তালিকা। ভুঁড়িওয়ালা এক সিএসআইআর গার্ড আমার সঙ্গে খেতে বসত, সে বলল আর দুবছর পরে রিটায়ারমেন্ট, এখন এসবের কোন মানে হয়! একটাই সুবিধে, মারা গেলে ছেলে চাকরীটে পাবে।

    আমি ঠিক এইটাই চাইছিলাম। কারন গোয়া গিয়েই আমি প্রথমেই সাই এর পুলে ভর্তি হয়েছিলাম, মিষ্টি জলে সাঁতার কাটার জন্য। কিন্তু ব্যাটারা মাসে আড়াইশো টাকা করে নিতো। যা কিনা কলকাতার কলেজস্কোয়ার বা হেদুয়ার যে কোন ক্লাবের সারা বছরের মেম্বারশিপ ফী। ইনক্লুডিং ডিসেম্বরে ফুলেশ্বরে একটা পিকনিক। আমার প্রতি মাসে সারা বছরের টাকা দিতে গায়ে লাগত বৈকি। তাও আবার পিকনিক ছাড়া। ভাবলাম এই তালে ওই নভিশদের দলে নাম লিখিয়ে শ্রীএন্নাইওর পয়সায় বেশ মৌজ করে নেব কদিন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। অনেকেই জানত ডাঙ্গায় থাকলে, প্রতি বিকেলে আমি হাঁটতে হাঁটতে কাম্পাল যাই সাই এর পুলে। তার থেকেও বেশী লোক জানতো (বিশেষতঃ মেয়েরা) যে শনিবার শনিবার আমি ওদের সঙ্গে সিনেমায়/বারে না গিয়ে একা একা ডায়াস বিচে যাই স্নরকেল আর স্পীয়ারগান বাগিয়ে, বারাকুডা শিকার কর্তে।

    তাও আশায় মরে চাষা। ফার্স্ট লিস্ট বেরোবার দিন খুব আশা নিয়ে নোটিস বোর্ডে গেলাম। গিয়ে কি দেখলাম জানেন?

    ফার্স্ট লিস্টের ফার্স্ট নামটাই হল -

    ডঃ এলরিচ দিশা।... (ডিরেক্টর- এন্নাইও)

    এর পরেই টিকটিকি লাগিয়ে, কে মেল করেছে সেটা ধরতে না পেরে, শেষে ওই বেওয়ারিশ মেল অ্যাকাউন্টটাই ব্লক করে দিল তো।

    ফলে সমুদ্রবিজ্ঞানে সাইক্লিং এর উপকারীতা বা নারীজাতির অপকারিতার মত পয়েন্টগুলো আর আমি শ্রী-এন্নাইও বাসীদের বুঝিয়ে উঠতে পারলাম না।
  • কাজু | 131.242.160.180 | ১৮ মে ২০১২ ১৪:২৪546543
  • আবার কাজুদা কাজুদা করে কেলোদা ! আমি কত ছোট জানেন আপনার থেকে? দা-ফা দা দিয়ে কেটে ফেলুন। ☺
  • অপু | 132.248.183.1 | ১৮ মে ২০১২ ১৪:৩৯546544
  • কৌশিক বরাবারের মতো ই দারুন ঃ-)
  • fevi | 227.162.209.11 | ১৮ মে ২০১২ ১৪:৪২546545
  • NIO তে কী এখনো হর্ষ গুপ্তা রাজ করেন? কেলো?
  • কল্লোল | 129.226.79.139 | ১৮ মে ২০১২ ১৪:৫০546546
  • এই না হলে ক্ষেলো!
  • ডিডি | 120.234.159.216 | ১৮ মে ২০১২ ১৫:২৭546547
  • বা;। কেলোশ্রী কি চমোৎকার তেল চুকচুকে মসৃন লেখে। পড়লে খুব স্বস্তি হয়।
  • সিকি | 132.177.163.144 | ১৮ মে ২০১২ ১৫:২৮546548
  • কেলোদা আবারো অসাধারণ।

    ওশেনোগ্রাফির ইনস্টিট্যুট মানে কি সেই দোনা পাওলা বিচের কাছে যেইটা?
  • প্পন | 214.138.240.254 | ১৮ মে ২০১২ ১৬:০৫546549
  • বাহ, কেলোদা বেশ মিঃ ডসের মতন লেখেন। ;-)
  • প্পন | 214.138.240.254 | ১৮ মে ২০১২ ১৬:০৬546550
  • কিন্তু আইপি অ্যাডরেস দেখে অপরাধীকে চেনা যায় নাই? নাকি টিকটিকি সেইসব জানিত না?

    (প্রশ্নটা শিশিরের মত হয়ে গেল)
  • kiki | 69.93.195.19 | ১৮ মে ২০১২ ১৭:০৫546551
  • ক্ষিন্তু ক্ষেলো মসৃন ভাবে নারী জাতীর প্রতি অবমাননা দেখালো!
  • কুমু | 132.160.159.184 | ১৮ মে ২০১২ ১৭:০৭546552
  • ভারী ভাল্লাগলো কেলোর লেখা।
    তবে প্রশ্ন আছে-

    ১।কেলো কি আইটিগাই/বৈগ্গ্যানিক/দুটোই?

    ২।তার্পর ঐ প্রজেক্টের কী হল?
  • | 24.99.53.84 | ১৮ মে ২০১২ ১৮:১৮546554
  • দুদ্দুর অদ্দিন আগের টিকটিকি আই পি অ্যাড্রেসের নামও শোনে নি। এখনকার টিকটিকিরাই বা কজন জানে!

    কথা হল সাঁতার কি সত্যিই যে কোনো বয়সে শেখা যায়? এই একটা জিনিষ শেখার আমার বহুত ইচ্ছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন