এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সংরক্ষণ - সত্যিই কি দরকার?

    Riju
    অন্যান্য | ৩০ এপ্রিল ২০০৬ | ৪৮৩২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • seuli | 65.82.126.100 | ২৪ মে ২০০৬ ১২:৩৯560725
  • সংরক্ষন আর মেরিট তর্ক নিয়ে সবাই বলছে যে সংরক্ষন থাকলে নাকি গুনগত অবনতি হবে। কিন্তু যখন কিছু বড়োলোক এর দুলাল ছেলেরা শুধু পয়্‌সার জোরে কর্নাটক (ব্যাঙ্গালোর) এ গিয়ে ডাক্তার বা ইনজিনিয়ার হচ্ছে তখন মেরিট নিয়ে কথা হচ্ছে না কেন?
    আমি ইনটারভিউ নিতে গিয়ে এমন ছেলে দেখেছি যে WB higher Secondary মাত্র 43% পেয়ে ব্যাঙ্গালোর অ গিয়ে engineering করেছে। তার বাবা একটা নামি company'VP
    বাপ এর জোরে চাকরি পেয়ে গেছে। এখানে কি merit দরকার নেই। টাকা থাকলে merit না হলে চলে যায়। টাকা দিয়ে degee কিনে নেবে। টাকা দিয়ে মন্ত্রী ধরে
    মন্ত্রী কোটা তে ভর্তি হবে। Merit শুধু চাই village side গরীব মানুষ দের জন্যে।

  • Arijit | 128.240.229.65 | ২৪ মে ২০০৬ ১৪:১৭560726
  • Exactly. এই কথাটা আমি যে লিংকটা দিয়েছি সেখানে আছে।
  • Arijit | 128.240.229.65 | ২৪ মে ২০০৬ ১৫:০৭560727
  • এর সাথে আরো গোটাকয়েক প্রশ্ন -

    (১) ভিপি সিং-এর আমলে মণ্ডল নিয়ে প্রথম যখন ঝড় উঠলো, তখন যুক্তি ছিলো চাকরীক্ষেত্রে নয়, উচ্চ-শিক্ষায় সুযোগ দাও, যাতে পরে চাকরীক্ষেত্রে তারা কমপিট করতে পারে। এখন শিক্ষায় সুযোগ দিতে গেলে বলা হচ্ছে স্কুল-শিক্ষায় দাও, স্কুল-শিক্ষায় দিতে গেলে কি বলবে জন্মের আগে দাও?

    (২) ধরা যাক কাউকে উচ্চশিক্ষায় সুযোগ দেওয়া হল - ধরা যাক জয়েন্টে তার র‌্যাঙ্ক ৮০০, তাও সে যাদবপুরে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হল। সে তো শুধু ভর্তিই হল - তাকে তো চার বছর প্রতিটা পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। সে যদি সেটা করতে পারে তাহলে কি তার মেরিট নেই? তথাকথিত উচ্চবর্ণের মেরিটোরিয়াস ছাত্র (জয়েন্টে র‌্যাঙ্ক করেই যারা কম্পিউটার সায়েন্সে ঢুকেছে, বা অন্য উপায়ে - দক্ষিণের কলেজে) তারা যখন বছর-বছর ঘষটায়? ওই সীটটায় তাদের কোন যোগ্যতা ছিলো/আছে কি?

    (৩) মেরিট শুধু জীন নয়, নির্ভর করে ট্রেনিংএর ওপরেও। কলকাতা বা দিল্লীতে থাকা ছেলেপুলেরা যে কোচিং পায় (বই-পত্র-স্কুল-কলেজ-কোচিং সেন্টারে) পুরুলিয়ার গ্রামের একটা ছেলে সেটা কোথায় পাবে? তার কি মেরিট নেই সেটা অলরেডী গ্রান্টেড? সেতো কোনদিন সুযোগই পেলো না।

    সংরক্ষণের আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ ছিলো এই সুযোগটুকু করে দেওয়া, ডিপেন্ডেন্ট বানিয়ে দেওয়া নয়, বা শুধু পাইয়ে দেওয়া নয় - দুর্ভাগ্যক্রমে যেটা হয়েছে। আন্দোলনটা হতে পারতো এই নিয়ে - কি করে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায় যাতে পুরুলিয়ার গ্রামের ছেলে/মেয়েও আমাদের মতন সুযোগটুকু পায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য শুনলে বিতৃষ্ণা জাগে - এদের মেন্টালিটি নিয়ে - মোটামুটি মধ্যযুগীয় "ওরা অচ্ছ্যুৎ" মেন্টালিটি। আন্দোলনটা বলতে পারতো - যে হ্যাঁ, শিক্ষায় সুযোগ দাও, যাতে ওরা কলেজে পড়তে পারে, লাইব্রেরী থেকে বই নিতে পারে, দুটো বেশি বই কিনতে পারে তার জন্যে অল্প হলেও স্কলারশিপ দাও - তারপর চাকরিক্ষেত্রে ওদের কমপিট করতে দাও - সেখান থেকে সংরক্ষণ তুলে দাও। আন্দোলনটা বলতে পারতো সংরক্ষণকে বংশানুক্রমিক করা বন্ধ হোক, আর জাতের বিচারে নয়, অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে করা হোক - শুধুমাত্র সুযোগটুকু করে দেওয়ার জন্যে...আন্দোলনটা বলতে পারতো খালি থেকে যাওয়া সংরক্ষিত সীটগুলোকে ওপেন করে দাও...

    সে সব কিছু নয় - আমরা উঠে পড়ে লাগলাম আমাদের সুযোগ কমে যাবে কিনা তাই নিয়ে। স্বার্থপর? তা ছাড়া কি?
  • vikram | 134.226.1.136 | ২৪ মে ২০০৬ ১৫:৪৩560728
  • একটা গন্ডগোল - ৮০০ যার র‌্যাংক সে মোটামুটি যাদবপুরে সব সাবজেক্টেই পাস করবে। অনেক দুর্ধর্ষ ফিকিক্স এর ছেলেপুলে ১০০০ ১২০০ কোরেছে তাতে কিছু আসে যায় নি। অবার প্রথম ১০০ সাধারন ছেলেপিলে এয়েচে। এক্টা কথাই খালি অস্বীকার করতে পারএব না যে একটা সার্টেন নম্বর (প্লাস মাইনস্‌স উইন্ডো) এর পর অন অ্যান অ্যাভারেজ কোয়ালিটি পড়বে - পড়বেই।
    কিন্তু যদি পাশ করার কথা কও - তাহলে সেই উইন্ডোটা বেড়ে যায়।

    আর নতুন করে কথা বলে কি হবে? পড়লাম তো কাগজে যে আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে ও চাকুরি ক্ষেত্রে চুদে গেছি। এর পর সব আলোচনা ধাষ্টামোর সমান।

    বিক্রম

  • Arjit | 128.240.229.65 | ২৪ মে ২০০৬ ১৬:০১560729
  • সমস্যাটা চালু পদ্ধতি এবং আন্দোলন - দু জায়গাতেই। সরকারের চোখ খোলানোর জন্যে আন্দোলনটা যা হওয়া উচিত ছিলো, সেটা হল না - কোন অল্টারনেটিভ কথা উঠে এলো না - এটাই আপশোস। এভাবে নতুন রাস্তা কখনোই বেরোবে না।
  • seuli | 65.82.126.100 | ২৪ মে ২০০৬ ১৬:১০560730
  • আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখেছি সংক্ষরন যাদের জন্যে তাদের থেকে যাদের নয় তারা নিয়ে গেছে।
    একটা ছেলে যখন South Point এ পড়ছে তখন কি আমরা ধরে নিতে পারি না যে তার বাবার economic condition বেশ ভালো আর ছেলে টা বেশ ভালো পড়াশুনার পড়িবেশ পেয়েছে। কিন্তু আমি দেখেছি south point পড়ুয়া ছেলে কে SC কোটা তে engineering ভর্তি হতে। এই জিনিস টা অনেক সময় ছেলেদের anti-Quota mind করে তুলেছে। সেই situation এ যখন আর একটা South Point এর তথাকথিত higher caste ছেলে টা ভর্তি হতে পারলো না, তখন সে anti-Quota হতে বাধ্য। কারন এখানে তাকে বোঝানো যাবে না কেন এই সুযোগ টা সেই ছেলেটা পেলো।

    Presently Indian higher study তে এটাই হচ্ছে। আমার মনে হয় যদি real needy ছেলে রাই যদি Reservation এর ফায়দা নিতে পারে তবে খুব conservative & extremist (like Prabin Todariya, ashok singhal) রা ছাড়া বাকি দের খুব একটা আপত্তি থাকবে না।
  • Samik | 221.134.225.20 | ২৫ মে ২০০৬ ০০:২৯560731
  • টপিকটা খুব সহজ নয়। 'সংরক্ষণ' সত্যিই দরকার কিনা, এক কথায় এর হ্যাঁ বা না বলে দেওয়াও অত সহজ নয়। সংরক্ষণ বিভিন্ন স্তরে আছে। বিভিন্ন ভাবে আছে। দু-পয়সা দিই। আজ, এই ২০০৬ সালের চব্বিশে মে-তে দাঁড়িয়ে যা মনে হচ্ছে।

    যেদিন এই থ্রেডটা চালু হল, সেদিন আমাদের কাছে অনেক তথ্যই ছিল না, তারপরে মিডিয়ার কল্যাণে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে এর পক্ষে বিপক্ষে অজস্র তথ্য পেয়েছি, তাই শুরুতে যে মত পোষণ করতাম, ঠিক সেইভাবে মত পোষণ করতে পারছি না।

    এই থ্রেড চালু হয়েছিল অর্জুন সিংয়ের প্রোপোজালের বেসিসে, উচ্চশিক্ষায় ওবিসিদের জন্য কিছু পরিমাণ সিট সংরক্ষণ করা নিয়ে। শুধু যদি সেটার জন্য উচিৎ কি উচিৎ নয় প্রশ্ন করা হয়, আমি বলব, না, উচিৎ নয়। উচ্চশিক্ষাটা শুধুই মেধার বেসিসে লড়াই করার জায়গা। বাংলায় বিএ পড়াটাও উচ্চশিক্ষা, আইআইটি বা আইআইএমএ বিটেক বা বিবিএ করাও উচ্চশিক্ষা। ক্লাস টুয়েল্‌ভ পর্যন্ত পড়াটা একরকমের, আর তার পরের পড়াটা আরেকরকমের। প্রথমটা জরুরি, ভারতের সমস্ত নাগরিকের জন্য জরুরি। এর জন্য মেধা থাকুক বা না থাকুক, প্রত্যেককে পড়ার সুযোগ করে দেওয়াটা সরকারের দায়িত্ব, আমাদেরও। তার পরের শিক্ষাটা বাধ্যতামূলক নয়। যে যার মেধা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা পছন্দ করতে পারে। না-ও পারে। সামর্থ্য বলতে আমি অর্থনৈতিক সামর্থ্যের কথা বলছি, কারণ এই উচ্চশিক্ষায় সরকারের নৈতিক দায়িত্ব নেই, আছে ছাত্রের শেখার ইচ্ছা, বা চাকরির বাজারে টিকে থাকার ইচ্ছা। সরকার এখানে ভরতুকি দিতে বাধ্য নয়। কিন্তু দেয়, অনেক ক্ষেত্রেই দেয়, মেডিকেলে দেয়, আইআইটিতে দেয়, জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে দেয়।

    কেন দেয়? কারণ, এই উচ্চতর শিক্ষা, দেশের সাধারণ সাক্ষরতার মান বাড়ানোর কাজে না লাগলেও পরোক্ষভাবে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের জন্যই দেশের বিকাশ ঘটে। এই সব কলেজের বাংলায় বিএ এমএ ছাত্ররাই বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা করে কি পরের প্রজন্মকে স্কুল কলেজের মাধ্যমে বাংলা শেখায়, এই সব কলেজের ইঞ্জিনীয়ারেরাই দেশে শিল্পব্যবস্থায়, যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লব আনে, এই সব কলেজের ডাক্তারেরাই দুদিন বাদে আমাদের অসুখ বিসুখে সহায়। ডাক্তারদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। একজন মানুষ সারা জীবনে একজনও ইঞ্জিনীয়ার বা উকিলের সাথে ইন্টার‌্যাকশন না করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে, কিন্তু একজন ডাক্তার দেখায় নি, এ রকম লোক পৃথিবীতে একটাও মিলবে না। তো, সার্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা দেশের বিকাশে পরোক্ষভাবে সহায়ক, যেখানে নিম্নতর শিক্ষাও দেশের অগ্রগতির পক্ষে সহায়ক, কিন্তু দু রকম ভাবে।

    কিন্তু আজ স্বাধীনতার ষাট বছর পরেও দেখছি ব্যাপারটা সেরকম ভাবে ঘটে নি। আজও কেবল মাত্র নিচু জাত দোহাই দিয়ে, 'ও আসলে পরে আমাদের স্কুলের অন্যান্য ছাত্ররা আসবে না বলেছে' দোহাই দিয়ে হেডমাস্টার সেক্রেটারির দল একদল ছোটো ছেলেমেয়েকে শিক্ষাজগৎ থেকে অচ্চুৎ করে রেখেছে। অন্ত্যোদয় যোজনাতে ' ও নিচু জাত, ও রান্না করলে আমরা খাবো না' এই কথা বলছে ছোটো ছোটো ছেলেরা মিড ডে মিল খাবার সময়ে, এই বিষ তাদের মনে ঢোকাচ্ছে তাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা। আবার, 'আমি বামুনের মেয়ে, নিচু জাতের ছেলেদের জন্যে রাঁধতে পারব না'-ও শোনা যাচ্ছে বাঁকুড়া পুরুলিয়ায়। এখনও।

    একটা আইডিয়াল সিটুয়েশন কল্পনা করা যাক। আমরা শহুরে সভ্য মানুষ, আমাদের হাতে দেশের ভালোমন্দ নির্ধারণের ক্ষমতা। আমরা নিচু জাতের জন্য সংরক্ষণ তুলে দিলাম। সবাই সমান। কেউ ছোটো বড় নয়।

    আইন হল। কিন্তু আইন মানা হচ্ছে কিনা কে দেখবে? আমার অত ফোর্স আছে? পারব হেডমাস্টার লোধা ছেলেটাকে স্কুলে জাতের দোহাই দিয়ে ভর্তি না নিলে সেই শালা শুওরের বাচ্চা হেডমাস্টারের কান ধরে দুটো থাপ্পড় মারতে?

    পারব না। দেশের কথা ছেড়ে দিলাম, আমার রাজ্যে সমস্ত স্কুলেও আমি নজরদারি করতে পারব না। সেই ইনফ্রাস্ট্রাকচার এতদিনে তৈরি হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু হয় নি। গণচেতনা ধাপে ধাপে বাড়াতে হয়, গণচেতনা একদিনে জন্ম নিয়ে একমাসের মধ্যে জাতপাত দেশ থেকে তুলে দিতে পারে না। সেই সদিচ্ছা স্বাধীনতার ষাট বছর পরেও কারুর মনে দেখা দেয় নি, কারণ এই জাতপাতই ভোটব্যাঙ্কে ঢেউ তোলে, সর্বত্র। পশ্চিমবাংলাতেও। অথচ হতে পারত এই পশ্চিমবাংলাতেই। সারা দেশের কথা ছেড়ে দিলাম, কংগ্রেস বিজেপির রাজনীতিই ধর্ম জাতপাতের ওপর তৈরি, কিন্তু সিপিএমএর তো তা নয়, জাতপাতের রাজনীতি তো তাদের ঘোষিত নীতি নয়! তাও পারে নি। গ্রাম বাংলার আনাচে কানাচে সিপিএমএর ক্যাডার পৌঁছে গেছে, লাল পতাকা পৌঁছে গেছে, কিন্তু সার্বিক চেতনা পৌঁছয় নি।

    তো, সেখানে যদি আবার কোনও চুনি কোটাল স্কুলে ঢুকতে না পেরে আত্মহত্যা করে, রাষ্ট্রযন্ত্রই কিন্তু তার জন্য দায়ি থাকবে। কারণ, 'আমার চারপাশে' এই ঘটনা না ঘটলেও ঘটনা ঘটছে। চোখ বুজে থাকলেই সত্যকে অস্বীকার করা যায় না। আমি হুগলিতে বসে ব্যান্ডেল সেন্ট জনসে রিক্সাওলার ছেলের পাশে বসে তিনবছর পড়েছি, কারণ আমাদের দুজনকেই মাসে চল্লিশ টাকা মাত্র দিতে হত, আমার কোনওদিন খারাপ লাগে নি তার সাথে মিশতে, খেলতে, টিফিন খেতে, কিন্তু 'আমি'টাই পুরো বাংলা নয়। পুরো ভারত নয়।

    বৃহত্তর ক্ষেত্রে যখন চোখ মেলি, তখন কিন্তু সত্যিই বুঝতে পারি, জাতিগত ভাবে 'নিচু জাত' যাদের বুকে দাগিয়ে দিয়েছে সমাজ, আমরা প্রত্যক্ষভাবে না দেখলেও তাদের সামনে কিন্তু অনেক অনেক বাধা। পয়সা থাকলেও তারা সব সুযোগ সত্যিই পায় না। কাস্ট ব্যাপারটা ভারতে এত ভয়ঙ্কর। এখনও।

    সে দিন কুন্তি একটা খুব দামি কথা বলল। আমরা বলি, 'আমাদের' শহরে ও সব জাতপাতের বাড়াবাড়ি নেই, 'আমি' ও সব জাতপাত মানি না। হ্যাঁ, আজকাল শিডিউল্‌ড পদবিওলা ছেলেমেয়েরাও প্রচুর প্রচুর পড়াশোনা করছে, ডক্টরেট করছে, অফিসে আমাদের বস হয়ে বসছে, আমাদের মোটেই খারাপ লাগছে না। আমরা শিক্ষিত। কিন্তু কখনও দেখা গেছে কি, মুখার্জি ব্যানার্জি চ্যাটার্জি চক্রবর্তি পদবিদের রিক্সা চালাতে, লোকের বাড়ি বাসন মাজতে, জুতো পালিশ করতে? আস্থার ফের সবারই ঘটে, কিন্তু কোনও বামুনের ছেলে মেয়ে হাজার গুণ গরীব হলেও এই সব কাজে নামবে না।

    দেখা যায় কিনা, আমি শিওর নই, তবে রেয়ার কেস। রেয়ারেস্ট রেয়ার কেস। কেন? আমরা যদি 'সবাই সমান' মেনে চলি, তা হলে তথাকথিত নিচু মানের কাজ কেন করবে না পেটে-বিদ্যে-না-থাকা বামুনের ছেলে? সে বরং ভুলভাল সমোস্‌কিতো আউড়ে যজমানি করবে, বয়েসে বড় বৌদি তার পায়ে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করবে, তবু সে রিক্সা চালাবে না।

    তার মানে একটা ভেদরেখা আছে, সত্যিই আছে, আমাদের শিক্ষিত শহুরে সমাজেও। আছে যখন, তখন সেটা মেনে নিতে আমাদের এত আপত্তি কেন? কেন এত মুখোশবাজি?

    প্রশ্ন হচ্ছে, সমাজে ক্ষত আছে, কিন্তু সংরক্ষণ কি সেই ক্ষত নির্মূল করার একমাত্র রাস্তা?

    ক্ষত এত গভীর, একে নির্মূল করা মুখের কথা নয়। সরকারের ভালমনের লোকেদের চেষ্টা এই ক্ষতের জ্বালা যতটা সম্ভব কমানোর। তাই সংরক্ষণ। হ্যাঁ, একটা অল্টারনেটিভ হতে পারত, রাজ্যের অনগ্রসর এলাকায় এমন কিচু স্কুল খুলতে যেখানে কেবল শিডিউল্ড কাস্ট, ট্রাইব বা ওবিসিদেরই পড়ার অধিকার থাকবে, আর কারুর নয়। এটাও সঠিক সমাধান নয়, কিন্তু সেটা অন্তত গর্বিত উচ্চবর্ণের মুখে একটা জোরালো থাপ্পড় হতে পারত। তাদের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। একটা জেনারেল স্কুলকে যারা কেবল উচ্চবর্ণের স্কুল বানিয়ে দিতে পারে, তখন সরকারেরও হক্‌ বনতা হ্যায় কেবল নিম্নবর্ণের স্কুল খোলার। কেন সরকার এভাবে ভাবে নি, জানি না। নিশ্চয় কোনও অসুবিধা ছিল।

    কিন্তু এই সংরক্ষণটা জরুরি কেবল ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত। কেউ কখনও শোনে নি 'নিচু জাত' বলে কাউকে আইআইটি বা আইআইএম বা আরইসিতে ভর্তি নেওয়া হয় নি, জয়েন্টে ভালো র‌্যাঙ্ক থাকা সত্বেও। এইখানে সংরক্ষণটা হাস্যকর। হ্যাঁ, উচ্চবর্ণ হোক বা নিম্ন, আর্থিক অবস্থা যদি খারাপ হয়, সরকার তাকে সাহায্য করতেই পারে সরাসরি বা ব্যাঙ্ক থেকে অল্প সুদে ঋণের মাধ্যমে, কিন্তু সিট রিজার্ভ করা, যেখানে সে সিট খালিই পড়ে থাকে একটা বড় অংশ, সত্যিই হাস্যকর, এটাকে ভোট টানার চেষ্টা ছাড়া আর কিচুই বলা যায় না। এতে করে সত্যিই নিম্নবর্ণ সংরক্ষণের উপযোগিতা পায় না। এটা কাইন্ড অফ ব্যাকডোর হয়ে যায়।

    (হাঁফিয়ে গেছি, পরে আবার লিখছি)
  • Arjit | 62.31.187.171 | ২৫ মে ২০০৬ ০১:৪৩560732
  • ভালো লিখেছ।

    তবে শুধুমাত্র ক্লাস টুয়েলভ অবধি রেখে কতটা সুযোগ করে দেওয়া যাবে সে বিষয়ে আমার একটু সন্দেহ আছে। কখনো দেখোনি, এক স্কুলের ক্লাস টুয়েলভের ফার্স্ট বয় জয়েন্টে র‌্যাংক পায় না? তার মানে কি সেই ছেলেটার মেধা কম? শুধু স্কুলে পড়া নয় - জয়েন্ট বা আইআইটিতে সুযোগ পেতে হলে সঙ্গে আরো কিছু লাগে - স্পেশ্যাল ক্লাস,স্পেশ্যাল কোচিং - বড় শহর ছাড়া বা গভীর পকেট ছাড়া এগুলো কোথায় পাবে?

    হ্যাঁ, বলতে পারো চার বছর যাদবপুরে/শিবপুরে পড়ার সময় যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হল - এর পর গেট দিয়ে সাধারণের মতই মাস্টারসে ভর্তি হতে হবে।
  • Ishan | 130.36.62.121 | ২৫ মে ২০০৬ ০৩:২০560733
  • সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলনের একটা খুব ইন্টারেস্টিং পলিটিকাল মাত্রা আছে। আন্দোলনকারীরা যা-ই ভাবুন/বলুননা কেন, এই আন্দোলন আল্টিমেটলি সেই উচ্চবর্ণ বনাম নিম্নবর্ণ দাঁড়িয়ে যাবে।

    আগের দফার সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলনের কথা মনে আছে। আন্দোলনকারীরা জুতো পালিশ করে প্রমাণ করেছিলেন তাঁরা উচ্চবর্ণ। ওদিকে সরকার সংরক্ষণ চালু করে প্রমাণ করেছিল তারা নিম্নবর্ণ। যত বেশি আত্মাহুতি, যত বেশি স্লোগান, যত বেশি হুঙ্কার দিয়ে বেড়ে উঠছিল আন্দোলন, তত বেশি শক্ত হচ্ছিল মন্ডল রাজনীতির ভিত।

    এবারও তাই ই হবে। আন্দোলন বাড়লে ইউ-পি বিহারে মুলায়ম-মায়াবতী-লাল্লু যাদবের পালের হাওয়া চিরতরে কেড়ে নেবে কংগ্রেস। ফলে পক্ষান্তরে, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সরকার মূলত: ব্যবহার করছে। সরকার বিরোধী স্লোগান পোক্ত করছে সরকারের পায়ের নিচের জমি।

    অর্জুন সিং/কেন্দ্রীয় সরকার এই খেলাটা খুব ভালো বোঝেন। আন্দোলনকারীদেরও এটা নিয়ে ভাবা দরকার কিন্তু।
  • Lyadosh Chandra Mitra | 24.5.216.83 | ২৫ মে ২০০৬ ১২:২৪560735
  • দিলে uniformly করা উচিত...

    brilliant / agarwal বা আরো যে সব private coaching আছে সব জায়গাতে ছাড় দেওয়া উচিত

    বই প্রকাশক-দের sc/st স্টুডেন্ট-দের বই-এর দামে ছাড় দেওয়া উচিত

    রেশনে চাল-ডাল-গম এর দামে

    বাস, ট্রেন, প্লেন এর ভাড়া-তে

    কৌন বানেগা ক্রোড়পতি-তে অপেক্ষাকৃত সহজ কোশ্চেন সেট

    .....
  • vikram | 134.226.1.136 | ২৫ মে ২০০৬ ১৩:৫৪560736
  • জয়েন্ট ইত্যাদিতে কোচিং ছাড়াও হাইলি চলে। এগুলো মিথ - কিন্তু লোকে খুব খায়। মাধ্যমিকেও কোচিং লাগে না।
    দাবি সহযোগে বলছি। তবে ইস্কুলে ভালো পড়াতে হবে সেটা ঠিক। সেটা না হলে দাবি ফেরত নিলাম।

    বিক্রম

  • Arjit | 128.240.229.65 | ২৫ মে ২০০৬ ১৪:৫৪560737
  • আমাদের ইস্কুলে জয়েন্টকে টার্গেট করতো - কৌশিক রায় স্পেশ্যাল অঙ্ক ক্লাস নিত, এবং আমরা যেতুম। কোচিং সেন্টারে পড়তে যাইনি কারণ ইস্কুল সেই দরকার মিটিয়ে দিত। এবার শহরের ইস্কুল আর শহরতলির ভালো ইস্কুল ছাড়া ক'টা ইস্কুলে এরকম করে দেখাও দেখি?

    আইআইটি মনে হয় বিনা স্পেশ্যাল কোচিং হয় না - সিলেবাস/স্টাইল সবই তো আলাদা...যারা পারে তারা মহান।
  • vikram | 134.226.1.136 | ২৫ মে ২০০৬ ১৫:০৩560738
  • আই এস সি বা অ হাই সেকেন বোর্ডের সিলেবাস অনেক অনেক ভালো এবং আই আই টি উপযোগী।
    আমাদের সালা ইলেকট্রনের প্লাম পুডিং মডেল থেকে বেরোতেই চার চ্যাপ্টার।

    বিক্রম
  • vikram | 134.226.1.136 | ২৫ মে ২০০৬ ১৮:১৪560740
  • সকালে করলাম জে।

    বিক্রম
  • Samik | 221.134.238.172 | ২৬ মে ২০০৬ ০০:০৪560741
  • এ সব পিটিশনে সই করে কিছু লাভ হয়?
  • seuli | 65.82.126.100 | ২৬ মে ২০০৬ ১০:১৭560742
  • আমাদের মুল সমস্যা হোলো আমাদের দেশ এখন ধর্মের সাথে জুড়ে আছে।
    রাস্ট্র আর ধর্ম এক সাথে চলতে পারে না।
    ১১০০-১৫০০ সময় এর ইউরোপ আর বর্তমান ইউরোপ এর দিকে তাকালে দেখতে পাবে রাস্ট্র আর ধর্ম এক সাথে থাকলে আর না থাকলে কি হয়।
    এখন ইউরোপ এ কেউ ভাবতে পারে গ্যালিলিও বা
    কোপারনিকাস থাকলে কেউ disturb করতো।
    কিন্তু india তে সরকার এর মদতে riot হয়। Da Vinci Code সারা worldchristian রা মেনে নিয়েছে, কিন্তু india Government Ban করার কথা ভাবে।

    একটা জিনিস অবাক করার মতো যে সবাই reservation টা শুধু ধর্মের মোড়কে বাধতে চাইছে। তথাকথিত higher caste এ কি গরিব মানুষ নেয়? তারা কি গ্রামে থাকে না?

    আমি বোলতে চাই reservation এর ভিত্তি টা শুধু ধর্ম দিয়ে ধরে রাখলে হবে না economic condition, family background & previous family education etc. add করতে হবে।
    তাহলে প্রতিবাদ টা একটু কম হতে পারে।
  • Arjit | 128.240.229.67 | ০১ জুন ২০০৬ ১৯:৫০560743
  • সরি - এটা দেওয়ার লোভ সামলাতে পারলুম না। রাজনৈতিক দলগুলোকে তো অনেক কিছুই বলছি - তাও একটা দলের বক্তব্যটা তাদের মুখ থেকেই শুনি - কাগজ থেকে নয়।

    On Reservation in Educational Institutions

    1. The Constitutional rovision of reservation for socially and economically backward classes is meant to provide access to education and jobs for the scheduled castes, scheduled tribes and other backward classes.

    This provision for reservation is a partial acknowledgement of the inequities of the caste system and the discrimination and deprivation that it entailed for centuries in Indian society.

    The CPI(M) has viewed such reservation as a limited step to provide opportunities for the dalits, adivasis and other backward classes to acquire education and jobs. At the same time, the CPI(M) has stressed that there can be no emancipation without basic land reforms and changes in the socio-economic system which breed exploitation and inequality.

    2. Extension for OBC reservation to education is based on the same principle as its application to jobs. The CPI(M) supports reservation in higher educational institutions for SC, ST and OBC. The state governments are to decide the quantum of reservation in the institutions run by them. In higher education, since there is a scarcity of seats, especially in professional institutions, reservation should be accompanied by a commensurate increase in the number of seats in the institutions run or aided by the Central government.

    According to the UGC Chairman, there was provision for an increase of 10 per cent annually in the seats in colleges for which financial allocations have been made in the tenth five year plan.

    3. While the CPI(M) is for reservation, it has maintained that distinct from the scheduled castes and scheduled tribes, there is differentiation among the other backward classes. Reservation should benefit the poorer and needy sections among these communities. For this, there has to be a socio-economic criteria which excludes the affluent and those already having access to jobs and higher education. This came to be known as exclusion of the "Creamy Layer" based on the Supreme Court judgement on the implementation of the Mandal Commission report.

    4. While expanding the seats in educational institutions, students coming from weak and poorer background and who do not come in the reservation categories should also be provided for through a separate allocation of seats.

    5. The government of India should prepare a proposal which should be put for a public debate, so that the widest agreement is reached before it is taken up for implementation.

    6. Alongwith this, the government should immediately prepare a legislation for regulating all private higher educational institutions. The legislation should enable state governments to regulate admission and fees in all private higher educational institutions which are aided or unaided. The crass commercialisation of higher education has closed the doors for a large number of deserving students irrespective of their background and even when they have the necessary qualifications and merit. Social control of the burgeoning "educational industry" is an urgent necessity.


    এর মধ্যে কিছু কিছু কী-ওয়ার্ড লক্ষ্য করো - limited, partialeconomically - যেগুলো আমরা বলছি নিজেদের মধ্যে কথা-বার্তায়। ওপাড়ায় দিলুম না কারণ এটা বড় পলিটিক্যাল - এই নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলার মতন ম্যাচিওরিটি ওখানে নেই।

    অন্য দলগুলোর অফিসিয়াল স্ট্যাণ্ড/বক্তব্য কারো কাছে থাকলে পোস্ট করো তো।

  • Samik | 221.134.239.86 | ০২ জুন ২০০৬ ০০:০২560744
  • আমার আগের লেখাটা শেষ হয় নি। আরও কিচু দেবার ছিল, সময় করে দেব এই উইকএন্ডে।
  • dam | 208.251.193.3 | ০২ জুন ২০০৬ ০৭:০২560746
  • Sc, St, OBC দের জন্য এই ৭৭ থেকে ০৬ এ কতটা সুযোগ করে দেবার চেষ্টা হয়েছে?

    যা হয় নি তা কেন হয় নি?

    যখন কোন সিপিএম কর্মীর নামে অভিযোগ আসে জাতপাত মানবার অথবা নিম্নবর্ণের হাতে বানানো খাবার না গ্রহণ করবার --- তখন তাদের কোন ক্লাস নেওয়া হয়? হলে কোন কোন ক্ষেত্রে কবে কোথায় হয়েছে?

    না হলে, কেন হয় নি?

    এই পাবলিক ডিবেটের গল্পটা সেই "অভিন্ন কর্মসূচী" ন কি যেন -- তাতে আছে কি?

  • Ishan | 67.173.95.147 | ০২ জুন ২০০৬ ০৯:৪৭560747
  • এই নিয়ে পোচ্চুর লেখার ছিল, কিন্তু সময় নাই। তাই শুধু এক লাইনে বলি -- আবাপ তে ইয়ুথ ফর ইকুয়ালিটির একজনের লেখা পড়লাম, ওদের সাইটটাও দেখলাম। বক্তব্য কিন্তু বেশ যুক্তিযুক্তই লাগল। আগেরবারের সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলনের মতো ধর-তক্তা-মার-পেরেক গাঁটপনা নেই। তবে একজন ভালো থিয়োরিটিশিয়ানের অভাব আছে :-)
  • Arjit | 128.240.229.66 | ০২ জুন ২০০৬ ১৪:৩২560748
  • দমু কি আমারে জিগালে? আমি পলিটব্যুরো-র স্টেটমেন্ট মেল-এ পাই, কোথাও জেলা বা লোকাল কমিটিতে কাউকে ঝাড়লো কিনা সে খপর কোত্থেকে পাবো? আর আমি পোস্ট করলুম অফিসিয়াল স্ট্যান্ড হিসেবে - অন্যদেরগুলো তো আমি পাই নে - তার মানে এই নয় যে ওটা পুরো ঠিক বা পুরো ভুল।
  • dam | 208.251.193.3 | ০৩ জুন ২০০৬ ০৭:৩২560749
  • হ্যাঁ তোমারেই করলাম। কিন্তু তোমার মনে প্রশ্নগুলো জাগে না?
  • Arjit | 128.240.229.65 | ০৫ জুন ২০০৬ ১৭:২৬560750
  • কারো নামে অভিযোগ এলে ব্যবস্থা হয় বলেই জানি। জাতপাত নিয়ে অভিযোগ আসতে কখনো দেখিনি, তবে অন্য অভিযোগে ব্যবস্থা নিতে দেখেছি (প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থেকে)। আসলে, আমার অভিজ্ঞতায় - একটা সময় থেকে কিছু ক্লাস, মীটিং ইত্যাদির সুফল এটাই দেখেছি যে এই ধরণের অনেক দ্বিধা থেকে লোকে বেরিয়ে আসতে পারে - সেই পৈতে, আঙুলে আংটি থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছু থেকে। হ্যাঁ, এটা আমার অভিজ্ঞতা, তোমার অভিজ্ঞতা আলাদা হতেই পারে, এবং আমি কখনোই দাবি করছি না যে চার লাখ সদস্য এবং তার একশো গুণ সমর্থকের মধ্যে প্রত্যেকে এই ধরণের দ্বিধা থেকে মুক্ত। সেটা অসম্ভব।

    এবার প্রথম প্রশ্ন - আলাদা করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ৭৭ সালেও তো সিপিএম বলেছে বলে শুনিনি? আমার আগের পোস্টে স্টেটমেন্টে একটা কথা পরিস্কার ছিলো - ভূমি সংস্কার এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন না হলে যারা পিছিয়ে আছে, তাদের এগিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় - অর্থাৎ, দলগতভাবে সিপিএম সংরক্ষণের পক্ষপাতী নয়, এটাকে শুধুমাত্র স্টপ-গ্যাপ ব্যবস্থা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম (বলা ভালো বামফ্রন্ট) এই পরিবর্তনগুলোর চেষ্টা করেছে - হ্যাঁ, তা সঙ্কেÄও আমলাশোল হয় - তার মানে সেই পরিবর্তনের কাজ শেষ হয়নি। তাও, "পিটিং দিদি" এখানেই উঠে আসে, অন্য দলে বা অন্য রাজ্যে নয়। শুধুমাত্র মেয়েদের পরিচালনায় পঞ্চায়েতও এখানেই হয়, অন্য কোথাও নয় - সম্ভবত কেরালাতেও একটা এরকম আছে)। পাশাপাশি মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট নিয়েও অনেক খবর কাগজে বেরোয়। হ্যাঁ, এরপরেও "রামধনু" লাগে - আর সেটাও প্রমাণ করে যে সেই কাজগুলো শেষ হয়নি।

    এর বেশি প্রশ্নগুলোর কিছু বুঝলাম না। যদি বলো সংরক্ষণ প্রশ্নে সিপিএম এবং কংগ্রেসের বা রাষ্ট্রীয় জনতা দলের স্ট্যাণ্ড এক, তাহলে সেটা ভুল কথা।

    তৃতীয় প্রশ্ন - "CMP"-তে এই ডিবেটের কথা আছে কিনা - এটা জানি না।
  • Ishan | 130.36.62.129 | ০৬ জুন ২০০৬ ২২:০৯560751
  • সি পি আই এম এর অফিসিয়াল স্ট্যান্ড পড়ে, প্লাস আজকের আজকালে কান্তি বিশ্বাসের লেখা পড়ে, যে জিনিসটা মাথায় এল, সেটা হল, এতে সংরক্ষণবিরোধীদের তোলা প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবার কোনো চেষ্টাই নেই। প্রশ্নগুলো এইরকম হতে পারে:

    ১। একটি সীমিত সময়ের স্টপগ্যাপ ব্যবস্থা ঠিক কতদিন চলতে পারে? শর্ট রান সমস্ত ব্যবস্থার মতো এরও একটা সময়সীমা থাকা উচিত, যেমন কপিরাইটের থাকে। সেই সময়সীমা কদ্দিন?

    ২। দীর্ঘদিন সংরক্ষণের ফলে বৈষম্যমূলক সমাজিক ব্যবস্থার কিছু উন্নতি হয়েছে কি? হলে কতটা? উন্নতি-অবনতি মাপার মাপকাঠিটাই বা কি?

    ৩। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ চলার পরে আবার নতুন করে আরও একগুচ্ছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যা দেখে ধারণা হওয়া স্বাভাবিক, যে অবস্থার তেমন কিছু উন্নতি হয়নি। এতদিন পরেও যদি উন্নতি না হয়ে থাকে, তাহলে কিভাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যে, স্টপগ্যাপ ব্যবস্থা হিসাবে সংরক্ষণই যথাযথ?

    ৪। সংরক্ষণ ছাড়া বৈষম্যমূলম সামাজিক অবস্থা ঘোচানোর জন্য আর কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এবং সেগুলির সাফল্যের খতিয়ান কি?

    এই প্রশ্নগুলো করলেই মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো তেড়ে আসবে -- রে পামর, রে উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি, যুগ যুগ ধরে যে বঞ্চনার ইতিহাস রচিত হয়েছে, শূদ্রের কানে যুগ যুগ ধরে যে গলিত সীসা ঢেলে দিয়েছে তোর বাপ-ঠাকুদ্দা, সেই পাপ প্রক্ষালনের ন্যূনতম যে সুযোগটুকু পাচ্ছিস, দুহাত ভরে গ্রহণ কর। নচেৎ , রে উচ্চবর্ণ, রে বুর্জোয়া, তোর এবং তোর ঊর্ধ্বতন-অধ:স্তন চোদ্দগুষ্টির রৌরব নরক অনিবার্য।

    এই জ্বালাময়ী ভোটপ্রিয় ও পপুলিস্ট জার্গনসমূহের মেলোড্রামার সামনে আমি এক বিনীত বিদূষক, যার পলিটিকালি কারেক্ট হবার কোনো দায় নেই। অতএব প্রশ্নগুলো জারি থাকবে।

    অবশ্যই একথা আমি মানি, যে,

    এক। কাস্ট সিস্টেম ভারতে আজও রাজত্ব করে। পশ্চিমবঙ্গেও। উচ্চবর্ণের প্রগতিশীল কোনো চাটুজ্জে বাঁড়ুজ্জে মিত্তির বসু আজও শিডুল কাস্টের ব্যাটা-বেটিকে বে করেন না -- সে সম্বন্ধ করে বিয়েই হোক, বা লাভ ম্যারেজ।

    দুই। পলিটিক্যাল সিস্টেমেও উচ্চবর্ণের মর্মান্তিক প্রাধান্য। বেশি দূর যেতে হবেনা, যেকোনো পার্টির রাজ্য -নেতৃত্বের একটা ছোটো খতিয়ান নিলেই দেখা যাবে নব্বই শতাংশ বামুন ও কায়েত। এক-দু পিস বিলাসীবালা সহিসও দেখা যায়, যেমন বিজেপির মন্ত্রীসভায় ছিলেন জনৈক সংখ্যালঘু।

    তিন। সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, অর্থাৎ চাকরি বাকরি/উচ্চশিক্ষা সর্বত্র এই একই গপ্পো। রিপিট করলামনা।

    এসব স্বীকারোক্তির পরেও, একদম প্রথমে করা প্রশ্নগুলো থেকেই যাচ্ছে। যে, সংরক্ষণই কি এই বৈষম্য ঘোচানোর একমাত্র রাস্তা? হয়ে থাকলে সেই রাস্তায় সাফল্যের খতিয়ান কি? ইত্যাদি ইত্যাদি।
  • Samik | 221.134.239.3 | ০৬ জুন ২০০৬ ২৩:৪২560752
  • ঈশান,

    এক নম্বর পয়েন্টটা কাটব। আমার বড়মামা ব্যানার্জি হয়েও পোলবা থেকে হালদারবাড়ির মেয়েকে বিয়ে করেছে সেই ১৯৮৫ সালে। হালদার শিডুলকাস্ট কিনা আমি জানি না। তবে উচ্চবর্ণ নয়।

    এ রকম আরও কিছু উদা দেওয়া যেতে পারে। তবে এ রকম ক্রস ব্রিডিং কেবল শহর বা শহরতলির শিক্ষিত লোকের মধ্যেই তবু কিছু দেখা যায়, বাকি প: ব:তে এ সব চলে না।
  • tan | 131.95.121.251 | ০৬ জুন ২০০৬ ২৩:৪৩560753
  • জিন শাফলিং?
  • Arjit | 82.39.106.46 | ০৭ জুন ২০০৬ ০১:১৯560754
  • ক্যানো আমার বৌ তো তথাকথিত উচ্চবর্ণ নয় - লালুর জ্ঞাতি - যদিও সাট্টিফিকেট করাতে যায়নি:-) ইশেন সব জেনেশুনে এত্ত বড় অভিযোগ করলি? শালা!!!

    (আচ্ছা, অন্য মানে দাঁড়াবে না তো? ভয় করে মাইরি)

    ইশেনের পয়েন্টগুলো আমারও আছে - একইরকম প্রায়। স্টপগ্যাপ - কিন্তু কতদিন? বা এতদিনেও কিছু লাভ হয়েছে কি? ইত্যাদি। এটুকু বলতে পারি (অন্তত সিপিএমে) এই নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে, অন্য দলে কিভাবে কি হয় জানি না। তবে সেই বিতর্কের কি সমাধান হবে, আবারো সেই "ঐতিহাসিক ভুল" হবে কিনা সে আর কি করে বলবো?
  • Ishan | 130.36.62.122 | ০৭ জুন ২০০৬ ০১:৪৮560755
  • অরিজিৎ/শমীক,

    কথাটা বেজাতে বিয়ে নিয়ে একেবারেই নয়। সেটা তো শহরের দিকে মোটামুটি স্বীকৃতই এখন। আমার এমনকি আমার বাবারও অসবর্ণ বিবাহ। কথাটা সেটা নিয়ে নয়। তথাকথিত লিবারাল এই আমি, আমার ছেলে যদি পরশুদিন এসে বলে আমি আমার বাড়ির কাজের মেয়েকে বিয়ে করব, তাহলে আমার কি রিয়াকশান হবে, সেটাই হল প্রশ্ন। আমি কি সোনা মুখ করে বলব, বাবা তোমার পছন্দই আমার পছন্দ, নাকি ছেলের মাথা খারাপ হয়েছে বলে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাব?

    কাজের লোকেদের ঘেটো, জেলেপাড়া, দুলেপাড়া এগুলো এখনও আমাদের ভদ্রলোকেদের পাড়া থেকে বহু বহু দূরে। আমরা সেখানে জ্ঞানের আলো ছড়াতে যাই, সচেতনতার আন্দোলন শেখাতে যাই, তাদের দুটো পয়সা কি একখন্ড জমি পাইয়ে দিয়ে তাদের মিছিলে টেনে আনি, কিন্তু ঐ অবধি ই। তারা চিরকাল ক্যাডার থাকে এবং আমরা নেতা। দুর্নীতিমুক্ত উদারমনা সর্বজনশ্রদ্ধেয় লিবারাল চাটুজ্জেমাস্টার কখনও নিমাই মিস্ত্রীর ছোটোমেয়ের সঙ্গে তাঁর ছেলের বিয়ে দেন না।

    এ একদম চোখে দেখা বাস্তবতা, দু-একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা দিয়ে একে ভুল প্রমাণ করা যাবেনা। যেকোনো পার্টির স্থানীয়-আঞ্চলিক নেতৃত্বের একটা লিস্টি বানাও পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে -- এই একই জিনিস দেখতে পাবে।

    মজাটা হচ্ছে, কোনো পার্টিকে, ধরা যাক সিপিএমকে যদি বলা হয়, যে, এই সমস্যার সমাধানের জন্য, এসো, সমস্ত লোকাল কমিটিতে ৩০% শতাংশ আসন তফশিলী জাতি/উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হোক, তারা কিন্তু রাজি হবেনা। শুধু সিপিএম না, কেউ ই রাজি হবেনা। তাদের কাছে সাংগঠনিক দক্ষতাই কমিটিতে আসার একমাত্র মাপকাঠি, এইসব জাত ফাত না। কিন্তু আরও মজা হচ্ছে, সংরক্ষণবিরোধীরা যখন এই একই যুক্তি তুলে বলে, যে, দক্ষতা বা মেধাই উচ্চশিক্ষার একমাত্র মাপকাঠি হওয়া উচিত, তখন তাদের তেড়ে গাল পাড়া হয় উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি বলে।

    এইটা হল আরেকটা প্রশ্ন, যেটা আগের তালিকায় যুক্ত হবে।
  • Arjit | 82.39.106.46 | ০৭ জুন ২০০৬ ০২:০৭560757
  • এই শেষ প্রশ্নটা নিয়ে এই মুহুর্তে একটা ফাটাফাটি চলছে আমাদের একটা mailing list-এ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন