এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ইঁদুর-মানুষদের গল্প ও টিকাসমূহ

    sosen
    অন্যান্য | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ | ৫৩৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • T | 24.139.128.15 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৬:৫৩582959
  • 'সিরিয়াস সায়েন্স' ভাষার ঊর্দ্ধে। কিন্তু সিরিয়াস সায়েন্স 'চর্চা' বা প্রকাশ কোন ভাষায় করবেন তা ব্যক্তিগত পছন্দ। বাংলা ভাষায় এধরনের নজির প্রায় নেই, কিন্তু তার কারণ যে ভাষার সীমিত ক্ষমতা তা নিশ্চয়ই নয়। আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি নানান গুরুগম্ভীর বিষয়।

    'সিরিয়াস সায়েন্স' কে পপুলার সায়েন্সের ঢঙেও প্রকাশ করা যায়, বিষয়কে লঘু না করেই। ফিল্ড মেডেলিস্ট টেরেন্স টাও এর লেখা রিয়েল আনালিসিসের বই দেখুন। স্রেফ সিম্বল দিয়েই প্রকাশ করতে হবে এই বিমূর্ত ডেকার্তিয়ান মোহ ছেড়ে অনেকটাই রক্তমাংসের। ফলে এপ্রোচ যদি এইরকম হয় তাহলে বাংলা না ইংরেজী না জার্মান সেটা ম্যাটার করে না।

    ভাষারীতিকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে অতীব সুখপাঠ্য করে তুলতে অনেকে বিষয়কে লঘু করেন যেমন পথিক গুহ। ফলে সেটি পপুলার সায়েন্সের পর্যায়ে চলে যায়। এটি প্রমাণিত। কিন্তু সুখপাঠ্য অথচ যুক্তি তথ্য সমৃদ্ধ লেখা সম্ভব কি না সেই এক্সপেরিমেন্ট চালালে কি জিনিস তৈরি হয় তা দেখতে ক্ষতি কি? আরো বেশী উদ্যোগ নিলে আরো উঁচুদরের কিছুর আত্মপ্রকাশও অসম্ভব নয়। ইউরোপীয় বিজ্ঞান চর্চার স্ট্রাকচার যেভাবে তৈরী হয়েছে, প্রথমে ব্যক্তিগত গবেষণা, তারপর বইপত্র চিঠি চালাচালি, সার্কল ইত্যাদির আবির্ভাব, শেষে ফর্মাল জার্নাল বা ট্রান্স্যাকশন, তেমন কোনো কিছু গড়ে উঠতেই বা বাধা কোথায়? দরকার উদ্যোগী লোকজন।

    সুতরাং সোসেনদি আপনি চালিয়ে যান।
  • kiki | 69.93.196.247 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:১৫582960
  • সোসেন কি সুন্দর আমাদের মতন লিখছে, শিবুদার কানে জোরে কু দিয়ে দেওয়া হোক।
  • ব্যাং | 132.172.195.226 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:২১582961
  • সোসেন রে, আমি তো গোমুখ্যু মানুষ। কিন্তু তোর লেখাগুলো এমনি টেনে ধরে রাখে জে বারবার করে পড়ি, কিন্তু যতবারই পড়ি, একটুও পুরনো লাগে না। সেই বিষয়ে আরো জানতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, তুই আরো বেশি করে লিখলি না কেন? ব্যাং
  • sosen | 126.203.188.242 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:৫০582962
  • ও বাবা!
    প্রথমত, পরের কিস্তি লেখার আগে সবাইকে ধন্যবাদ। কল্লোলদা এমন করে লজ্জা দেবেন না।

    দ্বিতীয়ত, এই লেখাটি যে বৈজ্ঞানিক লেখা, তা নয়। কিন্তু বিজ্ঞানের সঙ্গে জড়িত। আমি এমন কিছু মানুষী উদাহরণ দিতে চাইছি, যাদের বিজ্ঞানের স্বার্থে এক্সপ্লয়েট করা হয়েছে, কখনো বিজ্ঞান তাদের দ্বারা উপকৃত হয়েছে, কখনো হয়নি। তাদের মানবিক সত্তাগুলি বেশির ভাগ সময়েই উপেক্ষিত। পেপারে ও রিসার্চ জার্নালে তারা অনাম্নী, বিস্মৃতির অন্তরালে, সংখ্যার নিচে তারা হারিয়ে যান। এই লেখাটিকে পপুলার সায়েন্স না বলে, একটি নন-ফিকশন বলে ভাবলেই যথেষ্ট। যা ১২ থেকে ৮২ কারোরই পড়তে অসুবিধা হবে না।

    তৃতীয়ত, যা নিয়ে এখানে প্রচুর আলোচনা হয়ে গেছে। না, আমি মনে করি, বাংলা কেন, কোনো ভাষাই বিজ্ঞানের ভাব প্রকাশের অন্তরায় হতে পারেনা। সেটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জার্গনের বেড়াজাল ভাঙ্গতে হয়, কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়। কেউ কেন সেটা করবেন? কেউ কেউ ঠিক ই করবেন। আমি করছি আমার ভালো লাগে বলে। আমার বিষয় নিউরোলজি নয়। আমার বিষয় আইন ও নয়, ক্রিমিনাল সাইকোলজি ও নয়। কিন্তু এইসব আমি পড়ি, মনে হয় মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দেওয়া দরকার, তাই একটু লিখি। এর আগে ধর্ষণ নিয়ে যে লেখাটি লিখেছিলাম, সেটি কিন্তু অনেকটাই একটা পেপারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লিখেছিলাম, বাংলায় লিখতে অসুবিধা হয়নি, মাঝে মাঝে প্রতিশব্দ খুঁজতে হয়েছে। অনেকের অনুরোধে ইংরাজিতে লিখেছি কিছু জিনিস যেগুলো ইচ্ছে হলে অনুবাদ করাই যেত। মোদ্দা কথা, আমি বাংলায় ভাবি। তাই কক্ষনো ওই রকম কিছুই মনে হয়না যে বাংলায় বিজ্ঞান করা সম্ভব নয়। জাপানিতে সম্ভব, চিনায় সম্ভব, ল্যাটিনে সম্ভব, জার্মানে সম্ভব, সবকটি ভাষায় পিয়ার রিভিউড জার্নাল আছে , তবে বাংলায় নয় কেন? বাংলায় দুরারোহ জীববিদ্যার তত্ত্ব পড়াতে শুনেছি অধ্যাপক এ কে শর্মাকে, আল্পনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে, আমি তো ওনাদের কাছে পড়ে খুব খুশি।
    ল্যাবরেটরিতে আর অক্ষরের দুনিয়ায় বাঁচি । এদের মধ্যে মেল ঘটাতে তত অসুবিধে হয় বলে মনে হয়না। চর্চার অভাবে বাংলাও ভুলে ভুলে যাই, তাই একটু লেখার চেষ্টাও করি। বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, অঙ্ক, আর নিত্যকার বেঁচে থাকার মধ্যে কি এমন দূরত্ব আছে তা বুঝতে নারি। সব ই মাইল মিশেই যায়।

    ইত্যকার আত্মবিশ্লেষণের পর একটু চা -কফি খুঁজতে যাই।
  • pi | 24.99.126.221 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:৫২582963
  • মানুষের এই ইঁদুর জীবনের গল্পটা সুন্দর লিখেছো, সোসেন।

    ওঁর দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতি পুরো চলে গেছিল, এমন নয় । লং টার্ম প্রসিডিউরাল মেমরি ছিল। কোন নতুন কিছু প্রসেস প্র্যাকটিশ করলে শিখতে পারতেন, একরকম ক'রে নিজের অজান্তেই। শিখেছেন, সেই ব্যাপারটা ভুলে যেতেন, সচেতনভাবে মনে রাখতে পারতেন না।
    যে শব্দগুলো পড়ছেন, সেগুলো পড়েছেন ভুলে যেতেন, কিন্তু বারে বারে পড়ার ফলে পরের বারে পড়ার গতি দ্রুততর হত।
    যেটা পুরো চলে গেছিলো, সেটা দীর্ঘস্থায়ী এপিসডিক স্মৃতি। ওয়ার্কিং মেমরির অনেকটা ছিল, কিছু কিছু ছিলনা। এগুলোর জন্য মস্তিষ্কের অন্য অংশ দায়ী ও বলা যায় যেমনি, তেমনি এই বিতর্কও তো রয়েছে দেখলাম, যে পুরো হিপ্পোক্যাম্পাসই সরানো হয়েছিল, নাকি অল্প কিছু অংশ রয়ে গেছিল। বেশ জটিল কেস।
  • sosen | 126.203.188.242 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:৫৩582964
  • *সবই মিলে মিশেই যায়।
  • pi | 24.99.126.221 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:৫৬582965
  • আরে লিখতে লিখতে দেখি তোমার পোস্ট। হ্যাঁ, আমারো মনে হয়েছিল, এটাকে বৈজ্ঞানিক লেখা হিসেবে না দেখে নন-ফিকশন ভেবেই পড়া ভাল।
  • kumu | 132.160.159.184 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৯:০২582966
  • কী সাংঘাতিক!বহু ভাষায় পিয়ার রিভিউড জার্নাল আছে-এই কথাটি লিকতে যাব যাব কচ্চি,আর সোসেন মনের কথা মাউসে টেনে নিল?
    টেলিপ্যাথী!!
  • sosen | 126.203.188.242 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৯:০৫582967
  • কুমুদি :)
  • kumu | 132.160.159.184 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৯:২৪582969
  • ডক্টর স্কভিল কেন মলেসনের অপারেশন করেছিলেন?
    তিনি ভেবেছিলেন আরোগ্যের এটি একটি সম্ভাব্য উপায়,অর্থাৎ তিনি জেনেবুঝে একটি ইঁদুর তৈরী করেন নি।তাই তো?
  • sosen | 126.203.188.242 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৯:৩৪582970
  • ঠিক। তখন তো চিকিত্সাবিদ্যার এত উন্নতি হয়নি। মগজের কোন অংশ কি নিয়ন্ত্রণ করে তাও জানা ছিলনা। স্মৃতি, যাঁরা মনে করতেন মগজের কারিকুরি , তারাও ভাবতেন যে স্মৃতি সারা মগজে ছড়িয়ে আছে। স্কভিল আগে মৃগীর রোগীর উপর এমন অপারেশন করে সুফল পেয়েছিলেন। তাই এই অপারেশন করেন। এবং মৃগীর আক্রমণ এক্ষেত্রেও বন্ধ হয়। শুধু, এই রকম প্রতিক্রিয়া হবে তা উনি বুঝতে পারেন নি। পরে সমস্ত জীবন সংশোধনমূলক সার্জারির বিপক্ষে সওয়াল করে গেছেন উনি।
  • pi | 24.96.90.38 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ২০:৪২582971
  • আগে এমন অপারেশন বলতে, আংশিক হিপ্পোক্যাম্পাস বাদ দেওয়া ? আগেরগুলোতে সফল হলে,এঁর বেলায় হঠাৎ পুরোটা বাদ দেবার কথা মনে এসেছিলো কেন স্কভিলের ? জাস্ট পরীক্ষা, নাকি কোন নির্দিষ্ট ভাবনা ছিল ? নেট ঘাঁটতে ল্যাদ লাগছে ঃ(

    জেনেবুঝে ইঁদুর বানানো হয়েছিল তো টাস্কিগি আর গুয়াতেমালার রোগীদের , সেই কুখ্যাত সিফিলিস এক্সপেরিমেন্ট। আর এখনো দিনরাত্র বানানো চলছে, তৃতীয় বিশ্বের গরীব লোকজনকে, নানা ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মধ্যে দিয়ে।
  • aka | 85.76.118.96 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ২১:০০582972
  • সোসেন আমার মতন অন্যমনস্ক, অ্যাটেনশন ডেফিশিয়েন্সির পাঠককেও আটকে রাখতে পারে। গুজ্জব সোসেন। শ্যামনগর অর নো শ্যামনগর এই গুজ্জব টা প্রাপ্য। সরকার সুইটসের লাল দই, আর রামের কচুরি খাইয়ে দেব। ঃ)
  • sosen | 126.203.200.47 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ২১:৩২582973

  • আমি তো কেবলি মরি, আবার বেঁচেও উঠি, রোজ রোজ গণখোঁজ
    ক্লান্ত লাগে, শক্তিক্ষয়, বৃথা মনে হয় এই বাধ্যতামূলক অমরতা
    আমার কস্মিনকাল কবরের চারিধারে লাইল্যাক হয়ে ফুটে ওঠে,
    কালো কাপড়ের ভাঁজে পরাগের রেণু হয়ে ঝরে নশ্বরতা
    বাঁচা ও মরার মাঝে ভারী হই, মহাবিশ্ব জুড়ে ঢলে পড়ি
    এই পুনর্জন্মে কেউ যতি দাও, শ্রান্ত লাগে, বড় শ্রান্ত লাগে-
    _______________________________________________________________________________________________

    ১৯৫১ সাল। বাল্টিমোর কাউন্টির টার্নার স্টেশন এলাকা। আমেরিকার পুরনো কালোমানুষদের কলোনি। ধারে কাছে রয়েছে একটা শিপইয়ার্ড, আর একটা স্টিল কারখানা। এখানের অধিবাসীদের অধিকাংশ রোজগেরে গৃহকর্তারা ওই দুটি জায়গায় কাজকর্ম করেন। তখনও সিভিল রাইটস মুভমেন্টের আঁচ লাগেনি বাল্টিমোরে। কালোদের বাথরুম থেকে হাসপাতাল , ইস্কুল থেকে সাইকেল রোড, চার্চ থেকে খেলার মাঠ, সবই আলাদা। ওই কারখানায় চাকরি ছাড়াও কেউ কেউ চাষ করেন। তেমনি এক তামাক চাষী ডেভিড ল্যাকস। বৃষ্টিস্নাত এক বসন্তের দিনে জনস হপকিন্স হাসপাতালে কালোদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের সামনে বসে রয়েছেন তিনি। পঞ্চম সন্তানের জন্ম দেওয়ার দু-তিনমাস পর থেকেই অসুস্থ স্ত্রী হেনরিয়েটা। কিছুদিন থেকেই পেটের যন্ত্রণার সঙ্গে সঙ্গে রক্তপাতে ভুগছেন ৩১ বছরের এই শক্ত সমর্থ তরুণী । শরীরও হয়ে পড়েছে শ্লথ। আজ তাই কাজ বন্ধ রেখে স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছেন ডেভিড। অপেক্ষা করছেন কখন শেষ হবে চেক-আপ।
    ভিতরে ডাক পড়ল ল্যাকসের। চিকিত্সক জোন্সের মুখে কুঞ্চন, শায়িত হেনরিয়েটার মুখে আতঙ্কের ছাপ দেখে ঘাবড়ে গেলেন তিনি। জোন্স ল্যাকসের দিকে তাকিয়ে শান্তভাবে আউড়ে গেলেন কয়েকটি বাঁধা বুলি। জরায়ুমুখে একটি বড় টিউমার হয়েছে হেনরিয়েটার। বায়োপসি করা দরকার। তার জন্য কেটে নিতে হবে টিউমারের কিছু অংশ। কাগজপত্রে সই করতে হবে ল্যাকসকে।
    ল্যাকস সই করলেন কালোদের জন্য আলাদা করে রাখা বন্ডে। স্ত্রীর অসুস্থতার রীতি প্রকৃতি পড়ে দেখার ক্ষমতা তাঁর নেই। ভগবানের কাছে প্রার্থনা জানাতে জানাতে হেনরিয়েটাকে হাসপাতালে রেখে বাড়ি ফিরলেন তিনি।
    স্ক্যালপেল হাতে হেনরিয়েটার টিউমারটি স্পর্শ করলেন জোন্স। প্রায় সমস্ত জরায়ু মুখ জুড়ে একটি ছোট বেগুনের আকৃতির টিউমার, শক্ত কিন্তু নমনীয়, ছুঁলেই যা থেকে রক্তপাত হচ্ছে। প্রায় এক চতুর্থাংশ একটি স্লাইস কেটে নিলেন জোন্স, বায়োপসিতে পাঠানোর জন্য। হেনরিয়েটাকে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে ছেড়ে দিলেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় জানেন, এই টিউমার হয়ত বা নিশ্চিত মৃত্যু।
    আটদিন পর, আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো হেনরিয়েটাকে। এবার মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে নিয়ে। ক্যান্সার।

    রেডিয়েশন দিতে হবে ওই ক্যান্সার নির্মূল করার জন্য। রেডিয়ামের প্রলেপে টিউমারটি ঢেকে দেওয়ার জন্য যখন জোন্স ও সহকর্মীরা প্রস্তুত হচ্ছেন, দৌড়তে দৌড়তে ঘরে ঢুকলেন এক তরুণ রেসিডেন্ট। হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন " আপনারা নাকি অনেক বড় গ্রোথ পেয়েছেন? আমায় একটু স্যাম্পল দিন, রেড দেওয়ার আগে। ডক্টর গে কিছুটা চেয়েছেন। "
    জর্জ গে ও মার্গারেট গে দম্পতির সাথে কাজ করেন এই রেসিডেন্ট। বিভিন্ন ক্যান্সার কোষ থেকে এমন কোষ আলাদা করে আনার চেষ্টা করছেন গে দম্পতি, যা কিনা মানুষের শরীরের বাইরে বিভাজিত হবে, এক থেকে দুই, দুই থেকে চার হয়ে। তবেই কিনা ক্যান্সার, আরো অনেক রোগের কারণ খোঁজা যাবে? বেশি কথা কি, তখনও মানবদেহের ৪৬ টি ক্রমজমকেও আলাদা করে চেনা যায়নি, ওরকম বিভাজনশীল কোষ মেলেনি বলে, যাতে কিনা ক্রমজমগুলো একে অন্যের সঙ্গে জড়াজড়ি করে নয়, একেবারে আলাদা সোজা সোজা হয়ে থাকবে, গোনা যাবে, মাপা যাবে, চাইকি রং করা যাবে। মানুষের রিসার্চ স্যাম্পল মেলা বড় শক্ত। তাই এই মরণাপন্ন মানুষগুলোর কাছে দৌড়ে দৌড়ে আসতে হয়।
    এক স্লাইস টিউমার নিয়ে ল্যাবে জর্জের কাছে দিয়ে এলেন সেই রেসিডেন্ট। ওদিকে রেডিয়ামের আস্তরণে ঢাকা পড়ল হেনরিয়েটার শরীরের একাংশ।
    জানা নেই কি ভাবছিলেন তখন এই তরুণী। ২৩ বছর বয়স থেকে পাঁচটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, খেতে খেটেছেন, এক স্বচ্ছল জীবনের, কালো-সাদা রংহীন জীবনের স্বপ্ন কি দেখেছিলেন তিনি? ভেবেছিলেন উঠে দাঁড়াবেন আবার? কেউ জানেনি। কেউ লিপিবদ্ধ করেনি তাঁর ইতিহাস, সেই পাঁচমাসে, যখন এই আফ্রিক্যান আমেরিক্যান তরুণী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা কষ্ছিলেন। অথচ, জনস হপকিন্সের আর এক কোণে, জর্জ গে'র ল্যাবরেটরিতে , তাঁর শরীর থেকে সৃষ্টি হচ্ছিল তখন ইতিহাস।
    অবাক বিস্ফারিত চোখে চার গবেষক, জর্জ সমেত, তাকিয়ে ছিলেন প্লেটের দিকে। এই প্লেটে, ১৪ নম্বর প্লেটে রয়েছে এক রোগিনীর জরায়ু -ক্যান্সার কোষ। এক ই দিনের অন্য সব প্লেটে কোষগুলি শুকিয়ে গেছে। কিন্তু এই প্লেটে, কোষগুলি বেঁচে রয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সুস্থ শিশুর মত, সংখ্যায় বাড়ছে, জুড়ে যাচ্ছে একে অন্যের সাথে, বিভাজিত হচ্ছে। দীর্ঘ দুই দশকের প্রাণপণ চেষ্টায়, যা করতে পারেননি তারা, আজ তা সম্ভব হয়েছে। অমর একদল কোষ খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা, যা মানুষের দেহের বাইরেও বাঁচবে। জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে এক সু-উচ্চ লাফ।

    গে ফাইল খুলে দেখলেন এই কোষের অধিকারিণীর নাম। হেনরিয়েটা ল্যাকস। কালো ওয়ার্ড এর রোগিনী। একটি শ্বাস পড়ল তাঁর।

    এই কোষের খাবার দাবারের রেসিপি ঠিক করা হয়ে গেল। শুরু করলেই হয় এবার বিশ্বব্যাপী প্রচার, এক্সপেরিমেন্ট। কিন্তু না, গে অপেক্ষা করতে লাগলেন। এক এক করে গেল পাঁচ মাস। অবশেষে, অক্টোবর মাসের ৪ তারিখ, প্রেস কনফারেন্সে , টেলিভিশনের সামনে, টেস্ট টিউব তুলে ধরে গে সারা বিশ্বকে জানালেন, তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন "ইমমরটাল সেল লাইন " অমর কোষ, যার নাম HeLa । বেশ কয়েকটি ইউ এস মেইল পার্সেল জনসমক্ষে নাম ধাম জানিয়ে পাঠানো হলো বিভিন্ন বিজ্ঞানীর কাছে। তাঁরাও আবার অন্যদের পাঠাবেন। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গে, ৪ই অক্টোবর। যেদিন জনস হপকিন্স থেকে শোকস্তব্ধ পরিবার হেনরিয়েটার দেহ নিয়ে ফিরছিল পারিবারিক সমাধিপ্রাঙ্গনে । ডেভিড বা তাঁর সন্তানেরা, কেউই জানলেন না, যখন তারা হেনরিয়েটার দেহের ওপর মুঠো মুঠো মাটি ছড়াচ্ছেন, তখনই হেনরিয়েটা ছড়িয়ে পড়ছেন সারা দেশে। সকলের অজান্তে। শুধু গে ছাড়া কেউ জানলেন না HeLa র উত্স কোথায়। কেউ মনে রাখলেন না হেনরিয়েটার কথা, কেউ জানলেন না। ১৯৭০ সালে জর্জ গে র মৃত্যুর আগে অবধি হেনরিয়েটা বিজ্ঞানে অনাবিষ্কৃত থেকে গেলেন।
  • a x | 118.204.210.38 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ২১:৪৪582974
  • সোসেন এই ইতিহাস জানি। মানে যারাই হেলা সেল নিয়ে কাজ করেছে জানে। তাহলে কি গে'র মৃত্যুর পরে হেনরিয়েটার কথা কেউ প্রচার করে? করলে কে সে?
  • a x | 118.204.210.38 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ২১:৫৪582975
  • আর একটা জিনিস মনে হচ্ছে। ঠিক ইঁদুর মানুষ কি এদের বলা যায়? এই ঘটনাগুলোতে এক্সপেরিমেন্টেশনের জন্যই এদের ওপর কিছু করা বা চিকিৎসা হয়েছে এমন না। বরঞ্চ পাই যেমন বলল, সেই ঘটনাগুলো পুরোপুরি ইচ্ছাকৃত ইঁদুর মানুষ বা গিনিপিগ মানুষ গড়ার কাহিনী।

    সেল লাইন্স নিয়ে যত কাজ হয়, সবই তো কারো না কারো। হেলার ক্ষেত্রে তাও তার নামটা যুক্ত, এরকম কিছু ব্যতিক্রমী লাইন ছাড়া বাকি সব তো নম্বর। নামহীন, পরিচয়হীন। BT474, U87, DU145, U231, MDA-MB-231, NIH3T3... ইত্যাদি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যে কাজের জায়গায় লাইনটা এস্টাব্লিশড সেখানের নামেই এদের নাম। MDA-MB প্রিফিক্স মানে এমডি অ্যান্ডারসন ইত্যাদি। এদের ব্যক্তিগত জীবন, আর্থিক, সামাজিক পরিচয় কিছুই জানা যায়না। কি ধরণের ক্যান্সার, কি গ্রেড ইত্যাদি তথ্য ছাড়া সবই গোপন। তাহলে এরাও কি এক একজন ইঁদুর মানুষ?
  • sosen | 126.203.200.47 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ২১:৫৬582976
  • অক্ষদা , লিখছি। গে'র মৃত্যুর পরই হেনরিয়েটার নাম বের হয়। কেন, সে নিয়ে মতান্তর আছে। শেষ হয়নি লেখা এখনও ।
    বায়োলজির লোক মাত্রে এসব অনেক ভালো করেই জানবেন। আমি এই লেখাটা একটু বায়োলজিতে এক্সপোজার কম এমন অডিয়েন্স এর কাছে নিতে চাইছি। হেলা বায়োলজিস্ট এর কাছে রোজকার ব্যাপার, কিন্তু অন্য অনেকেই জানেন না তো। একটু লোককে গুগলাতে উদ্বুদ্ধ করছি মাত্র। সায়েন্স ডিটেইল ও কম থাকবে তাই, জটিল ব্যাপার স্যাপার এড়িয়ে যাব।
  • sosen | 126.203.200.47 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:০২582977
  • ইচ্ছাকৃত গিনিপিগ গড়ার কথা নিয়ে এই লেখাটা না। যেসব রিসার্চ থেকে থেকে কিছু পজিটিভ আউটকাম এসেছে তাদের হিউম্যান সাবজেক্টদের জীবন সম্পর্কে যদি কিছু জানা গিয়ে থাকে সেটা জানানোর চেষ্টা। ইঁদুর মানুষ বলতে কেউ বানিয়েছে বা গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করেছে এটা আমার উপজীব্য নয়। জাস্ট এঁদের প্রায় না জানা জীবন সম্পর্কে কিছু জানা গেছে কিনা সেটা খোঁজা।
  • Sibu | 118.23.96.4 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:৩৭582978
  • ওহে সোসেন, তুমি বড্ড ভাল লেখ (মানে একটানা পরে যেতে হয়)। দু-চাট্টে তক্কো যা তুলেছি সে নিয়ে কিছু মনে কোরো না মাইরী।

    একন লাইফ অফ পাই দেখতে চল্লাম।
  • sosen | 126.203.200.47 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ২৩:০৬582980
  • কি কারণে জর্জ গে লুকিয়ে রেখেছিলেন HeLa কোষের জন্মাতিহাস, তা নিয়ে আছে প্রশ্নচিহ্ন। কেউ অনুমান করেন , হেনরিয়েটার আফ্রো-আমেরিক্যান অরিজিনই এর কারণ। সিভিল মুভমেন্টের আগে, কালো মানুষের দেহাংশ নিয়ে ছুঁতমার্গ তো ছিলই। গে'র মৃত্যুর আগেই কমার্শিয়ালাইজড হয় হেলা কোষ। স্যাক ইন্সটিটিউটে পোলিও ভ্যাকসিন তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। মহাশূন্যে পাঠানো হয়, শূন্য গ্র্যাভিটিতে তার বৃদ্ধি কিভাবে এদিক ওদিক হয় দেখার জন্য। গে এই বানিজ্যিকরণের একজন প্রধান শেয়ারহোল্ডার ছিলেন। বহু পেপারে হেলেন লারসন বা হেলেন ল্যান নামে হেলার দাত্রীর বিবরণ দেওয়া হয়। এই পুরো সময়ে গে হেনরিয়েটার ফাইল নিজের কাছেই রাখেন, এবং এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
    ১৯৭০ এ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে গের মৃত্যুর পর, ১৯৭১ এ গে'র সহকর্মী বন্ধুরা জনস হপকিন্সের নিজস্ব প্রকাশনায় জানান হেনরিয়েটার নাম। তাঁরা দাবি করেন ডেভিড ল্যাকস তাঁদের মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন গবেষণার কাজে তাঁর স্ত্রীর দেহাংশ ব্যবহার করতে। এর পর থেকে, একের পর এক প্রবন্ধে হেনরিয়েটার নামোল্লেখ হয়। ১৯৭৪ এ সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় প্রবন্ধ " HeLa (for Henrietta Lacks). " যা কিনা প্রায় স্বীকৃতিই বলা চলে।
    ১৯৭৫ সালে এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে ল্যাকস পরিবার জানতে পারেন, তাঁদের আদরের মানুষটির দেহাবশেষ এখন সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে। গোঁড়া ক্যাথলিক এই পরিবারের ক্ষেত্রে এই খবর খুব আনন্দের সাথে পরিগৃহীত হবার ছিলনা। কিন্তু মেনে নেওয়া ছাড়াও তাঁদের কিছুই করণীয় ছিলনা।
    নব্বইয়ের দশকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সম্মানিত করা হয় ল্যাকস পরিবারকে। টার্নার স্টেশনে একটি বিশেষ দিন পালন করা হয় হেনরিয়েটার স্মৃতির উদ্দেশ্যে। আর্থিক কোনো লাভ না হলেও হেনরিয়েটার পরিবার এই সম্মানে আপ্লুত। কিন্তু এর মধ্যে কি আর কোনো রহস্য লুকিয়ে নেই?
    জনস হপকিন্স বায়-এথিক্স ডিরেক্টর জানাচ্ছেন, দুটি কেস ল্যাকস পরিবার তুলতে পারেন। এক, অনুমতি ছাড়া দেহাংশ সংগ্রহ। দুই, বানিজ্যিকরন, যার লভ্যাংশ হেনরিয়েটার পরিবারের কাছে পৌঁছায় নি। এতদসত্বেও, যে সময় এই পরিবার বাইরে থেকে এই সমস্ত ব্যাপার জানতে শুরু করেন, সেই সময়ে জনস হপকিন্সের গবেষকেরাও এঁদের যোগাযোগ করেন। কেন? এতদিন পরে কেন এই পরিবারের খোঁজ পড়ল?
  • sosen | 126.203.200.47 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ০০:০৪582981
  • হেনরিয়েটার পরিবারের অভিযোগের থেকেও বড় ভয়াবহ অভিযোগের মুখে দাঁড়িয়ে জনস হপকিন্স এর বিজ্ঞানীরা সেদিন হেনরিয়েটার পরিবারকে খুঁজে বার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই অভিযোগের কথা এবার বলি।
    হেলা কোষের মনুষ্যদেহের বাইরে বৃদ্ধির ক্ষমতা অবিশ্বাস্য। হেলা আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত, কোনো কোষকেই দেহের বাইরে বাঁচানো যায়নি। কিন্তু, আশ্চর্য্যজনক ভাবে, হেলার আবিষ্কারের পর থেকে প্রচুর কোষ একই ভাবে দেহের বাইরে বাঁচানো বা বাড়ানো সম্ভবপর হলো। প্রচুর সেল লাইন তৈরী হলো, যারা হেলার মতই বাড়ে।কি করে হঠাত সব কোষের মতিবুদ্ধি এমন শুধরে গেল?
    পৃথিবীর বিভিন্ন কোণের থেকে হেলা ছাড়া কোষ কালচার নিয়ে পরীক্ষা করে প্রায় সাতাশটি স্বাধীন পরীক্ষায় দেখা যায়, ৮০% এর উপর কোষ হেলা সেল মিশ্রিত। এক ভয়ংকর সন্দেহ দেখা দেয় সকলের মনে , এবং এমনকি এই দাবিতে পেপার ও বেরোয, যে গবেষকদের হাতে হাতে হেলা সেল মিশে গেছে সমস্ত কোষ কালচারে, এবং প্রচন্ড বিভাজনক্ষমতার বলে অন্য কোষেদের দমিয়ে একাই দখল করে রেখেছে কালচার। অর্থাত যে সব অন্য সেল লাইন আছে, কোনটা ব্রেস্ট সেল লাইন, কোনটা কিডনি সেল লাইন, এর সব কটি আসলে হেলা সেল।
    তাই, হেলা সেলের জেনেটিক উত্স মেলানোর জন্য তাঁর ছেলেমেয়েদের রক্ত ও টিসু স্যাম্পল চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। তাঁরা অবশ্য অন্যরকম ই বোঝেন। হেনরিয়েটার ছেলে বলেন-" আমার মায়ের শরীরে ছিল অমরত্ব । আমাদের দেহেও তা রয়েছে কিনা, বিজ্ঞানীরা তা দেখে দেবেন। "সময়মত রক্ত দিয়েও আসেন তাঁরা। কিন্তু তার পরে আর যোগাযোগ করেননি বিজ্ঞানীরা। শত তদ্বির সত্বেও। কোন লুকোনো পলিটিক্সের সুতোয় ঝুলছে এই খেলা, কে-ই বা জানে। এটুকু জানা গেছে যে বহু সেল লাইন মিশে গেছে হেলা সেলের সাথে, এবং কোথাও কোথাও নতুন জিনোটাইপ এর হদিস ও মিলেছে।

    এই প্রবল টানামানির মধ্যে হেনরিয়েটা শুধু একটি অবজেক্ট হয়েই থেকে গেলেন। এমনকি, যে পরিবারের কাছে তাঁর সত্যিকারের আইদেন্তিটি বেঁচে বর্তে ছিল, তা-ও শেষ অবধি বুঝি হারিয়ে গেল। আজ তাঁদের কাছেও তিনি অমর, হেলা সেলের ধাত্রী। কাছের মানুষ, মা, ঠাকুমা নন।

    অগ্ন্যাশয়ের অস্ত্রোপচারের আগে গে বলেছিলেন, তাঁর অগ্ন্যাশয় থেকেও যেন একটি ইমমরটাল লাইন তৈরির চেষ্টা করা হয়। সঙ্গীরা তাঁর নির্দেশ মানেননি। জেগে উঠে বড়ই রেগে গিয়েছিলেন গে। নিজের উপরে অনাদ্যন্ত আস্থা ছিল তাঁর, তাই হয়ত কোথাও জানিয়ে যাননি কেন গুপ্ত রেখেছিলেন হেনরিয়েটার পরিচয়। আজ আর তা জানার কোনো উপায় নেই।
    __________________________________________________________________________________

    এক কাকতালীয়, কিন্তু অদ্ভুত পর্যবেক্ষণের কথা না বলে এই গল্প শেষ করতে পারছিনা। আজ দুপুরে টুকটাক যত্নআত্তি পেতে একটি বিউটি পার্লারে গেলাম। চেনা পার্লার, চুলে কিছু মিশ্রণ মাখিয়ে বসিয়ে রেখে দিল। বসে বসে একটি বই পড়ছি, হঠাত পিছনপানে একটু তর্কাতর্কির আওয়াজ। বেড়ে যেতে পিছনে চাইলাম। দেখি ৩৩-৩৪ বছরের এক মহিলা, চোয়াল শক্ত করে চেয়ারে বসে আছেন। লাল দুচোখ বেয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে জল। আর চীনা বিউটি পার্লারের মালকিন আপত্তি জানাতে জানাতে , ইলেকট্রিক শেভার দিয়ে তাঁর কোমর ছোঁয়া কালো কোঁকড়া চুল কেটে ফেলে দিচ্ছে। মুড়িয়ে দিচ্ছে মাথা। প্রাইভেসি ইত্যাদির কথা ভুলে গিয়ে আরো পাঁচজনের মত আমিও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
    পাশের থেকে আমার এটেনদ্যান্ট মেয়েটি ফিসফিস করে জানালো: ক্যান্সার। কেমো কাল থেকে, তাই আজি চুল ফেলে দিচ্ছেন।

    পলকে একটিই কথা মনে হলো: ইনফর্মড ডিসিশন এরকমই হয়। কি হত, যদি ওই মরণপণ লড়াইয়ের মাঝে গে হেনরিয়েটাকে জানাতেন, তাঁর কোষ থেকে শত সহস্র মানুষের রোগের সমাধা করার পথ পাওয়া গেছে। তাহলে কি হেনরিয়েটা একটা ইনফর্মড ডিসিশন নিতে পারতেন না? তাঁর মৃত্যু কি হত না আর একটু অর্থবহ?
    _____________________________________________________________________________________
    তথ্যসূত্র: সায়েন্স, জনস হপকিন্স নিউজলেটার, পাব্মেড, দ্য ইমমরটাল লাইফ অফ হেনরিয়েটা ল্যাকস।
  • siki | 24.97.148.192 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ০০:১৮582982
  • উফ্ফ, তুলকালাম। তুলকালাম। হ্যাটস অফ।

    এটা শেষ করার জন্যেই বোধ হয় এতক্ষণ জেগে বসে ছিলাম।

    অসম্ভব রকমের ভালো লাগল।
  • sumeru | 127.194.85.232 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ০০:৫৪582983
  • ইঁদুর ইঁদুর খেলা।
  • siki | 126.203.189.43 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ১০:১৯582984
  • সিকি
    ভালো লেগেছে শুনে আমারও ভালো লাগলো।
  • sosen | 126.203.189.43 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ১০:২১582985
  • উফ ঘুমচোখে এককের কেস করলাম , ওপরের কমেন্ট আমার, সিকির উদ্দেশে।
  • siki | 24.140.82.133 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ১০:৫৩582986
  • ঃ)

    এইবার দুটি কোচ্চেন করি। কাল খানিক টাইপ করার পরে হারিয়ে গেছিল।

    গজনিতে তো মেডিক্যাল টার্ম দিয়ে বোঝানো হয় নি, আর মস্তিষ্কের ব্যাপারে ঐ ফ্রন্টাল লোব, প্যারাইটাল লোব, অক্সিপিটাল লোব পর্যন্ত মনে আছে, হিপ্পোক্যাম্পাসের নামই প্রথম শুনলাম। তো, সিনেমাটা দেখতে দেখতে প্রশ্নগুলো মাথায় এসেছিল, আজ যোগ্য লোকের কাছে করেই ফেলি।

    মানুষটি কুড়ি সেকেন্ডের বেশি কিছু মনে রাখতে পারতেন না, কিন্তু বাকি ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়াগুলো কী করে মনে রাখতেন? মানে, প্রতি বিশ সেকেন্ডে কারুর স্মৃতি রিফ্রেশ হয়ে গেলে সে তো সবসময়েই সদ্যোজাত শিশুর মত আচরণ করবে, যে জানে না চেয়ারে বসতে হয়, পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে হয়, টয়লেট পেলে ওয়াশরুম যেতে হয়, বা বাক্য গঠন করে কথা বলতে হয়।

    এই মানুষটির কি এই সমস্ত আচরণগুলো স্বাভাবিক ছিল? মানে, এইগুলো কি হিপ্পোক্যাম্পাস দিয়ে কন্ট্রোলড হয় না? আমার মতে, মায়ের দুধ খাওয়া বা নিশ্বাস নেবার মত সহজাত প্রক্রিয়া তো নয় এগুলো, এগুলো অ্যাকোয়ার্ড প্র্যাকটিস, অভ্যেসের মধ্যে দিয়ে সিভিলাইজড মানুষ এগুলো তৈরি করে, আত্মস্থ করে, নিজের সমাজে বেঁচে থাকার জন্য। এগুলো কি আলাদা করে নিয়ন্ত্রিত হয়? হিপ্পোক্যাম্পাস ঠিক কতটুকু স্মৃতির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে?

    আরও কোশ্নো। কিছু জিনিস, প্রথম দিকে মনে করে করে করতে হয়, পরে ব্যাপারগুলো, আমরা যাকে বলি "রক্তের মধ্যে মিশে যায়"। বাঙালির সন্তানের ইংরেজি বলতে-পড়তে শেখা, ড্রাইভিং শেখা ইত্যাদি স্কিল। প্রথম দিকে মনে করে করে ক্লাচ গিয়ার অপারেট করতে হয়, পরে ব্যাপারটা এমনই অভ্যেস হয়ে যায় যে গল্প করতে করতে, ফোন করতে করতে, বা গান শুনতে শুনতেও যে কেউ গাড়ি চালাতে পারে। এই স্কিল-সংক্রান্ত স্মৃতিগুলো কি ব্রেনের একটা লোবে প্রথমে থাকে, পরে অন্য কোনও লোবে ট্রান্সফার্ড হয়ে যায়? প্রতিবর্ত ক্রিয়া বানিয়ে দেয় নিজে থেকেই? মানে, এটা আমি নিজেও দেখেছি, নিজে যখন ড্রাইভিং সিটে থাকি না, অথচ গাড়িতে বসে আছি, সামনে অবস্ট্যাকল দেখলেই নিজের অজান্তে ডান পা দিয়ে গাড়ির মেঝে দাবিয়ে ফেলি।

    এগুলো কীভাবে কন্ট্রোলড হয় ব্রেনে?
  • sosen | 126.203.189.43 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:১১582987
  • সিকি, বেসিক আর জরুরি প্রশ্ন। তো, এই টই তে আর একটা লেজুড় হিসেবে এগুলো বোঝাবার চেষ্টা করছি।

    প্রথমে স্মৃতির প্রকারভেদ গুলো পরিষ্কার করে নেওয়া যাক।
    এই ছবিটা দেখো :
  • sosen | 126.203.189.43 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৪৫582988
  • স্মৃতির এই মডেলকে বলা হয় modal বা multi-store বা Atkinson-Shiffrin মডেল। এছাড়া আর একটি মডেল ও আছে, তবে এইটা বেশি স্বীকৃত। একে একে আলোচনা করি। এখানে প্রত্যেকটা শ্রেণীবিভাগ, স্মৃতি-গঠনের পদ্ধতির সাথে জড়িত। এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

    সেন্সরি মেমরি সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী, যেমন ছবিতে দেখছ। পাঁচ রকম সেন্স, দৃষ্টি, শ্রুতি, গন্ধ, স্পর্শ ও স্বাদ নিয়ে সেন্সরি স্মৃতি তৈরী হচ্ছে। এই স্মৃতির উপর আমাদের কোনো সচেতন নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনো একটা জিনিস দেখলে, চাখলে , শুঁকলে তার স্মৃতিটুকু একটা নিতান্ত স্বল্পস্থায়ী বাফার স্টেটে খানিকক্ষণ থাকে, তারপর অতিদ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, সময় লাগে ২০০-৫০০ মিলিসেকেন্ড (১/৫-১/২ সেকেন্ড)। প্রাথমিক অনুভবের ঠিক পরের ধাপ এই স্মৃতি। এর মধ্যে গন্ধের অনুভূতি সবচেয়ে দ্রুত স্মৃতিতে চলে যেতে পারে, কারণ olfactory বালব/কর্টেক্স (যেখানে গন্ধ অনুভূত হয়), হিপ্পক্যাম্পাস ও এমিগদালা (যেখানে প্রাথমিক স্মৃতি তৈরী হয়) থেকে মোটে ২-৪ টে স্নায়ুকোষ দূরে। তাই গন্ধ স্মৃতির সাথে অনেক ভালোভাবে ও দীর্ঘদিন ধরে সংযুক্ত থাকে।

    সেন্সরি স্মৃতি থেকে স্মৃতি দ্রুত রি-কনসলিডেশন( গুছিয়ে নেওয়ার ) মাধ্যমে শর্ট টার্ম বা স্বল্পস্থায়ী স্মৃতিতে চলে যায়। কোন স্মৃতি স্বল্পস্থায়ী স্মৃতি তে যাবে তা ঠিক করে মনোযোগ (attention ) , অর্থাত সেই মুহূর্তে আমাদের ইন্টারেস্ট কিসের উপর কেন্দ্রীভূত তার উপর নির্ভর করে আমাদের অনুভূতি পরবর্তী ধাপে যায়, বা স্মৃতিতে প্রবেশ করে ।
  • sosen | 126.203.189.43 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৫৬582989
  • ব্যাপারটা এই রকম দাঁড়ালো-

  • siki | 24.140.82.133 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১২ ১২:০২582991
  • পড়ছি। লিখে যাও।

    ছবি দেখতে পাবো না। পোস্টইমেজ আপিস থেকে খোলে না। সন্ধ্যের পরে দেখব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন