এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • লাদাখ যেতে হলে

    siki
    অন্যান্য | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ | ৬০৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • siki | 132.177.20.38 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ১৬:১৫584561
  • সেদিন অরণ্য (দা?) জিজ্ঞেস করল, লাদাখেই কেন? অমন ন্যাড়া রুক্ষ পাহাড়ে যাবার থেকে কি ভালো নয় বেশ জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়ে বাইক চালিয়ে বেড়াতে যাওয়া?

    উত্তর দেব বলেছিলাম, সময় হয় নি। এখনও সময় হয়েছে, তা নয়। অজস্র কাজ এবং অকাজের মধ্যে পড়ে ফেঁসে আছি। তবু সুতোটা খুলে রাখলাম, অবরে সবরে একটু একটু করে লিখব। কেন লাদাখ? কীভাবে লাদাখ? আরও বিভিন্ন তথ্য।
  • de | 69.185.236.53 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ১৬:৩৩584575
  • সিকি, লাদাখের একটা প্ল্যান বানিয়ে দিও না সময় করে -- এই দিন দশেকের --
  • siki | 132.177.20.38 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ১৬:৩৮584586
  • দেব। সব হবে। :)
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ১৭:৫১584608
  • আমি ২০০৯ থেকে লাদাখ যাবার প্ল্যান করে চলেছি, এখনো হই নাই, শমীকদা আমায় এট্টা প্ল্যান দিয়েছিলে খুঁজে দেখি পেলে দিয়ে দেব,
  • de | 69.185.236.51 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ১৮:০৮584619
  • থ্যাংকু, ঐশিক ঃ))
  • siki | 132.177.31.0 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ২১:৪৮584630
  • দিল্লি লাহোর যাক, যাক না আগরা
    মাথায় পাগড়ি দেবে, পায়েতে নাগরা।
    কিংবা সে যদি আজ বিলাতেই ছোটে,
    ইংরেজ হবে সবে বুট হ্যাট কোটে।

    যাবার তো অনেক যায়গা আছে, লেজার ট্রিপ মারবার, অ্যাডভেঞ্চারাস ট্রিপ মারবার, সব ছেড়ে লাদাখ কেন?

    অ্যাডভেঞ্চারাস ট্রিপ বা ফ্যামিলি ট্রিপ অনেক জায়গায় হয়। ভারতেই এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে দুর্গম রাস্তা ধরে ট্রেকিং করতে হয় বা খুব খাড়াই পথে চলতে হয়, ইত্যাদি।

    লাদাখ যে এলাকাটা, মূলত পামীর মালভূমি। হিমালয় আর কারাকোরাম রেঞ্জের মধ্যে পড়ে এই এলাকা পৃথিবীর উচ্চতম মালভূমি, একে তাই বলা হয় পৃথিবীর ছাদ। এতটা উঁচুতে, আর এত কম ঢেউখেলানো অঞ্চল, যে এখানে অনায়াসে গাড়ি বা বাইক নিয়ে চলাফেরা করা যায়। কিছু কিছু স্ট্রেচ একটু বেশিই চড়াই, গাড়িতে করে যেতে গিয়ে অনেক সময়েই বিভিন্ন ভাবে ফেঁসে যাবার চান্স থাকে, তাই লাদাখকে মূলত বলা হয় বাইকার্স প্যারাডাইস। এই রাস্তায় যাবার আসল মজা হল বাইকে। গত এক দেড় দশকে এই অঞ্চলে যাওয়া আসার রাস্তা এত উন্নত হয়ে গেছে, এত ভালো হয়ে গেছে অ্যাক্সেসিবিলিটি, যে দিল্লি বা চণ্ডীগড় থেকে দীর্ঘ রাস্তা বাইকে করে যেতে বা আসতে খুব বিশাল কিছু চাপ পড়ে না। লং ড্রাইভ করা যাদের অভ্যেস আছে, এমনকি যাদের অভ্যেস নেই-ই, তাদেরকেও অনায়াসে তাই হাতছানি দেয় লাদাখের রাস্তা।

    লাদাখ একটা এলাকার নাম। উপত্যাকার নাম। আসলে তা লেহ্‌ জেলার অন্তর্গত। জম্মু কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এই এলাকা আলতো করে ছুঁয়ে রয়েছে একদিকে চীন আর অন্যদিকে পাকিস্তানকে। লাদাখ উপত্যকা আসলে বৃহত্তর তিব্বতেরই অংশ। এখানকার মানুষজনদের আচার বিচার, পোশাক আশাক, দৈনন্দিন জীবনচর্যা তাই হুবহু তিব্বতীদের মত।
  • aranya | 154.160.226.53 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:১৬584641
  • সিকি, দারুণ, দারুণ। আমারই লোভ হচ্ছে যাওয়ার জন্য, বাইক চালানোটা শিখতে হবে।
    লিখতে রহো।
  • siki | 132.177.187.182 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:২৩584652
  • দুটো রাস্তা লাদাখ যাবার। লোকে মূলত জার্নি শুরু করে দিল্লি, অথবা চণ্ডীগড় থেকে। দিল্লি থেকেই বেশি হয়, তার কারণ আছে।

    চণ্ডীগড় থেকেই হঠাৎ করে পাহাড় শুরু হয়ে যায়। ফলে ওখান থেকে জার্নি শুরু করলে সরাসরি পাহাড়ী রাস্তায় বাইক চালাবার মত কনফিডেন্স আসে না। বরং দিল্লি থেকে লং ড্রাইভ করে চণ্ডীগড়ে আসতে আসতে হাত আর মন, দুইই সেট করে যায়।

    জার্নি শুরু বলতে, সবাইই তো দিল্লির বাসিন্দা নয়, অনেকেই ট্রেনে বা কার্গোতে করে বাইক নিয়ে এসে নামায় দিল্লিতে বা চণ্ডীগড়ে। সেখান থেকে ড্রাইভ শুরু করে। অবশ্য লাদাখ সংক্রান্ত ফোরামে যাতায়াত করতে গিয়ে আমি এমন ক্রেজিও দেখেছি যে সরাসরি চেন্নাই, পুনে বা ব্যাঙ্গালোর থেকে গাড়ি চালিয়ে আসে দিল্লি, এবং তারপরে গাড়িতেই চলে লাদাখ। এতটা রাস্তা অবশ্য বাইকে সম্ভব নয়, তাই এত লং ডিসট্যান্স লোকে চারচাকাতেই সারে।

    তো, যা বলছিলাম। চণ্ডীগড় পর্যন্ত রাস্তাটা কমন। তারপরে দুটো রাস্তা। একটা রাস্তা যাচ্ছে পাঠানকোট হয়ে জম্মু। সেখান থেকে পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে কাটা জওহর টানেল পেরিয়ে শ্রীনগর। শ্রীনগর থেকে সোনমার্গ, জোজিলা পাস, দ্রাস, কারগিল, মুলবেক, কারু হয়ে লেহ্‌।

    অন্য রাস্তাটা যাচ্ছে মানালি দিয়ে। মানালির পরে রোহতাং পাস, টান্ডি, সারচু, বারলাচা-লা, উপসী, কারু হয়ে লেহ্‌।

    কোন রাস্তাটা নেওয়া উচিত?

    আলাদা কোনও রুল নেই। যে কোনও রাস্তা নিতে পারেন, দুটো রাস্তা দু রকমের সুন্দর। বরং মানালির রাস্তাকে বলা যায় ভয়ংকর সুন্দর। শ্রীনগরের রাস্তায় উচ্চতা বাড়ে ধীরে ধীরে, মাঝখানে জোজিলা ভিন্ন অন্য কোনও "পাস" নেই। মাঝে অনেকগুলো জনপদ আছে। বরফ প্রায় নেই বললেই চলে। কারগিল পর্যন্ত সবুজ দেখতে পাওয়া যায়। ... অন্যদিকে মানালির পরেই রোহতাং পাসে সেই যে বরফ শুরু হয়, সেই বরফ চলে একেবারে মুরে'জ প্লেন পর্যন্ত। (মুরে'স প্লেন কী? পরে বলব)। উচ্চতা বাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে, AMS বা অল্টিটিউড মোশন সিকনেস ধরার চান্স খুব বেশি। রাস্তাও অতি ভয়ঙ্কর, বেশির ভাগ এলাকাতেই প্রায় "নেই" বললেই চলে। প্রায় পুরো রাস্তাতেই যেখানে বরফ, সেখানে পাকা রাস্তা বানানো এবং মেনটেন করা প্রায় অসম্ভব কাজ। প্রচুর ট্র্যাভেলগে পড়েছি রোহতাং পাসের পরেই রাস্তায় এমন কাদা শুরু হয়ে যায়, পাথরের কুচি মেশানো কাদা, তাতে গাড়ি বা বাইকের চাকা প্রায় অর্ধেক ডুবে যায়, সেই অবস্থায় ওপরের দিকে বাইক বা গাড়ি চালিয়ে তোলা বেজায় শক্ত কাজ। খুব পাকা ড্রাইভার বা বাইকার না হলে ওখানেই বাইক দেহ রাখতে পারে বা মানালিতে নেমে আসতে হতে পারে বাইক সারানোর জন্য, আবার পরের দিন কি তার পরের দিন সকালে চেষ্টা করতে হতে পারে।

    সুতরাং, সেফ খেলার জন্য, যদি অ্যাডভেঞ্চারের শখ ষোলআনা থাকে অথচ ফর্মুলা ওয়ানে চালাবার মত বাইকিং স্কিল না থাকে, তা হলে ফুল সার্কিট করুন এইভাবেঃ যাওয়া শ্রীনগর হয়ে, ফেরা মানালি হয়ে। শ্রীনগর দিয়ে গেলে যেহেতু উচ্চতা বাড়ে ধীরে ধীরে, তাই AMS ধরার চান্স খুব কম, অ্যাক্লাইমেটাইজেশন হয় লেহ্‌ পৌঁছতে পৌঁছতেই। একদিন আরাম নিলেই যথেষ্ট। অন্য দিকে মানালি হয়ে গেলে, আগেই বলেছি, AMS এর প্রকোপে পড়তে পারে যে কেউই, আর না পড়লেও লেহ্‌তে পৌঁছে অন্তত দুদিন রেস্ট নিতেই হয়, নইলে পরের বেড়ানো চৌপাট হয়ে যাবে।
  • siki | 132.177.187.182 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:৪২584562
  • শ্রীনগর দিয়ে গিয়ে মানালি হয়ে ফেরার আরও একটা কারণ আছে, সেটা যথাসময়ে বলব।

    আপাতত AMS নিয়ে দু কথা বলি।

    আগেই বলেছি, এটি উচ্চতাজনিত অসুস্থতা। এর একমাত্র চিকিৎসা হল, পরিপূর্ণ বিশ্রাম, এবং খুব বেশি বাজে কেস হয়ে গেলে, সেখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিচে, সমতলে চলে আসা, ট্রিপ বাতিল করে। নইলে? মৃত্যু হওয়াও অসম্ভব নয়।

    এই ভয়ঙ্কর সুন্দর রাস্তা আর এএমএসের চ্যালেঞ্জের জন্যেই বাইকারদের কাছে এই সার্কিট এত প্রিয়।

    কার হতে পারে এই এএমএস? যে কারুর। আমি খুব সুস্থ সবল, আমি রোজ বডিবিল্ডিং করি, আমার বাইসেপ এত ইঞ্চি, ট্রাইসেপ অত ইঞ্চি, ওসব দিয়ে কিস্যু নির্ধারিত হয় না। ওটা যে কাউকে অ্যাটাক করতে পারে। খুব রোগাপাতলা পেটরোগা হাঁপানির ব্যামোওলা লোকও বিন্দাস ঘুরে আসতে পারে, আবার খুব তাগড়া জোয়ানও কাহিল হয়ে পড়তে পারে এর ধাক্কায়।

    যত ওপরে উঠি আমরা, বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে। আমাদের শ্বসন প্রক্রিয়ায় আমরা ফুসফুস ভরে অক্সিজেন নিই, হার্ট আর ফুসফুস মিলে সেই অক্সিজেন রক্তে মিশিয়ে সারা দেহে পাম্প করে, মস্তিষ্ক থেকে পায়ের টো পর্যন্ত, বদলে শরীরের দুষিত বর্জ্য মেশানো রক্ত নিয়ে ফেরত আসে। আমাদের শরীরের কলকব্জা সাধারণত এইভাবেই চলে।

    এইবার, বাতাসে যখন অক্সিজেন কমে যায়, তখন সমপরিমাণ অক্সিজেন রক্তে মেশাতে গেলে হয় হার্টকে খুব জোরে জোরে পাম্প করতে হয়, অথবা রক্তে কম অক্সিজেন মেশে। রক্তে অক্সিজেন কম মিশলে কী হবে? শরীরের কলকব্জা ঠিকমত পারফর্ম করবে না। শরীর অবশ লাগবে, মাথা ভারি লাগবে, ঝিমঝিম করবে, আঙুলের ডগায় পিন ফোটানোর মত ঝিঁঝিঁ ধরবে, খুব ঘুম পাবে, শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়াও বিচিত্র নয়।

    এই হচ্ছে এএমএস। ঘুমিয়ে পড়েছেন কি মরেছেন। বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হল তখন শরীরকে অক্সিজেন জোগানো। মানে? হার্টকে আরও জোরে পাম্প করান। হাঁটুন একটু, জল খান বোতল বোতল, জলের মধ্যে মেশানো অক্সিজেন রক্তে মিশবে, হাঁটলে হার্ট জোরে চলবে।

    ভয় পাবেন না একদম। ভয় সরাসরি হার্টে অ্যাটাক করে। সেটি খতরনক। চকলেট চিবোন। আর, আর ডায়ামক্স রাখুন হাতে।

    ডায়ামক্স হল এই এএমএস কাটানোর একমাত্র ওষুধ। লেহ-র দিকে জার্নি শুরু করার অন্তত দুদিন আগে দিনে দুটো করে ডায়ামক্স খেতে শুরু করুন, খেতে থাকুন যতক্ষণ না লেহ্‌ সিটিতে পৌঁছচ্ছেন। ওখানে পৌঁছে খাওয়া ছেড়ে দিলেই হবে। ডায়ামক্স কীভাবে শরীরকে এএমএসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে, সেটা আমি ডিটেলে লিখছি না, উইকি থেকে পড়ে নিন।

    ছোট বাচ্চাদের সাধারণত এএমএস হয় না। অনেকে মনে করেন এত উচ্চতায় বাচ্চা নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে কিনা, আমি বলব, বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া সবচেয়ে সেফ। আপনি অসুস্থ হতে পারেন, কিন্তু বাচ্চার হার্ট লাংস একদম ওয়্যার‌্যান্টি পিরিয়ডের মধ্যে আছে, তাগড়া সার্ভিস, ওদের চট করে এএমএস হয় না। হলে সেটা খুব রেয়ার কেস হয়।
  • siki | 132.177.187.182 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ২৩:৩৫584566
  • এইবারে বলি, কী নিয়ে যাবেন।

    লোকে এখানে হুদো হুদো বাইকের গল্প করে, এ বলে এনফিল্ড বুলেট তো ও বলে হার্লে ডেভিডসন, কিন্তু, বিশ্বাস করুন, লোকে পাতি এলএমএল স্কুটার নিয়ে ঘুরে এসেছে পুরো লাদাখ রিজিয়ন। কত সিসি-র বাইক সেটা টু সাম এক্সটেন্ট ম্যাটার করে ঠিকই, কিন্তু সেটা একেবারে শো-স্টপার নয়। এলএমএলের কত সিসি ইঞ্জিন আমি জানি না, তবে একশো সিসির বাজাজ প্ল্যাটিনা নিয়ে লোককে আমি নিজের চোখে খারদুংলা পাস জয় করতে দেখেছি।

    বাইক জিনিসটা বাইকার্সদের কাছে খুব যত্নের জিনিস, সন্তানসম। মেশিনই বটে, তবে মানুষের মত যত্ন বোঝে। এটা যাঁরা বাইক চালান, তাঁরাই মানবেন। বাইক যেহেতু ঢাকাঢুকি দেওয়া গাড়ি নয়, তাই বাইকের প্রত্যেকটা পার্ট বাইরের ওয়েদারের কাছে অষ্টপ্রহর এক্সপোজড। সুতরাং তার যত্নটাও ঠিক সেইভাবে করে যেতে হয়, সে আপনি নিজের হহরেই চালান বা লং ড্রাইভে যান। বেহিসেবি স্পিড তুলবেন না, সময়ে সময়ে ঠিক ঠিক মাপে সার্ভিস করান, বাইককে ভালোবেসে যত্ন নিয়ে চালান, যখন তখন নিজেকে জন আব্রাহাম ভাববেন না, বাইকের আওয়াজ শুনুন, চিনুন, বাইকও আপনার কথা শুনবে। বাইকের সাথে বাইকারের এমন টিউনিং হয়ে যায়, যে বাইকের আওয়াজ শুনে আপনি বলে দেবেন তার সার্ভিস দরকার কিনা, গিয়ার চেঞ্জ করতে গিয়ে আপনি বুঝে যাবেন ক্লাচের তার কতটা মজবুত আছে, ব্রেক কতটা ঢিলে হয়ে গেছে, ইঞ্জিন অয়েলের দরকার আছে কি নেই।

    এর বাইরে টুকিটাকি কিট নিয়ে বেরোন। দল বেঁধে যখন বেরোবেন, দলের জন্য একটা কিট নিয়ে বেরোলেই যথেষ্ট। কিট কিসের জন্য? তাতে কী কী থাকে?

    বেসিক জিনিস, পাংচার সারানোর যন্ত্রপাতি। মোটরসাইকেলের চাকা খোলা, তার থেকে টিউব বের করে পরাবার জন্য স্পেয়ার টিউব, সেফটি ভালভ, স্পেয়ার ক্লাচ-তার, হ্যান্ডপাম্প। দীর্ঘ পথে অনেকখানি দূরত্ব "নেই-রাস্তা"য় কভার করতে হয়। পাথর, জল, বালি। টায়ারের দফারফা হয়। পাংচার হবার সম্ভাবনা থাকে, হাওয়া কমে যেতে পারে। আজকাল অবশ্য টিউবলেস টায়ার হচ্ছে, তাতে পাংচারের সম্ভাবনা নেই, হলেও একসাথে হাওয়া বেরোয় না।

    তো, এই হচ্ছে বাইকের গল্প। যত্ন করুন, নির্দিষ্ট দূরত্বে গিয়ে বাইক সার্ভিস করান, আর পরের দূরত্ব মেপে নিন, সেইমত বাইককে তৈরি করুন। যেমন, দিল্লি থেকে আপনি স্টার্ট করলেন। থামলেন একেবারে মানালিতে গিয়ে। এর পরেই জনশূন্য এক লম্বা রাস্তা পেরোতে হবে, মাঝপথে কিছু হয়ে গেলেও একটা মনিষ্যি পাবেন না গাড়ি সারাবার জন্য। তাই মানালিতে পৌঁছেই প্রথম বাইক সার্ভিস করিয়ে নিন। চেন, ব্রেক, ক্লাচ, গীয়ার, সব ঠিক আছে কিনা, যথাযথ লুব্রিকেট করা আছে কিনা যন্ত্রপাতি, দেখে নিন।

    আর দেখে নিন, নিজেকে। শহরের রাস্তায় যেমন তেমন করে চালিয়েছেন, চালিয়েছেন। কিন্তু এ হল হিমালয়। ট্রাফিক পুলিশের বাবা। এখানে কোনও হিরোগিরি চলে না। হেলমেটের স্ট্র্যাপ বাঁধুন, নী-গার্ড এবং এলবো-গার্ড পরুন। বেমক্কা পাথরে ধাক্কা খেয়ে যদি বাইক থেকে ছিটকে পড়েন, কোনও লোক পাবেন না আপনাকে ধরে তোলবার জন্য। না লোক, না মোবাইলে নেটওয়ার্ক। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পেরোবেন বিনা সিগন্যালে। সুতরাং, নিজের সুরক্ষা নিজের হাতে।

    সঙ্গে প্লাস্টিকের প্যাকেট রাখবেন বেশ কিছু। এরকম অনেক স্ট্রেচ পাবেন, রাস্তার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে পাগলাঝোরা। ভাবলেন, বাইকে চেপেই পেরিয়ে যাবেন, হয় তো পেরিয়েও গেলেন, কিন্তু ছিটিয়ে ওঠা জলে আপনার জুতোমোজাটি গেল ভিজে। একে বরফজমা ঠাণ্ডা, তার ওপর রোদের তেজ নেই। ঐ ভিজে জুতো মোজা পাল্টানোরও কোনও উপায় নেই। তাই, পায়ে জুতোর ওপর প্লাস্টিক বেঁধে নিন রোহতাং পেরনোর পরেই।

    কোনও ওয়াটারবডি, পিলিয়নে কাউকে নিয়ে পেরোবার চেষ্টা করবেন না। যত পাতলা জলপ্রবাহই হোক না কেন। জলের গভীরতা দেখলে কনফিডেন্স জাগতে বাধ্য, কিন্তু পেরোবার সময়ে তার তীব্র স্রোত উল্টে দিতে পারে বাইক। আপনি ভিজবেন, পিলিয়ন রাইডার ভিজবে, বাইকের পেছনে সাইডে বাঁধা আপনার জরুরি জিনিসও ভিজবে বরফগলা জলে।

    পাহাড়ী রাস্তায়, বয়ে যাওয়া জল হইতে সাবধান।
  • siki | 132.177.187.182 | ৩০ জানুয়ারি ২০১৩ ২৩:৩৮584567
  • আবার কাল। গুডনাইট।
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ ১০:২২584568
  • শমীকদা আমার আর লাদাখ যাওয়া হইলো না, তোমার লেখাতেই পড়ে নি
  • aranya | 78.38.243.161 | ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ ১০:২৮584569
  • আমারও যাওয়া হল না, বাইক চালাতেই জানি না।
    তবে এমন লেখা পড়ে, যাইতে বড়ই ইচ্ছা করে ..
  • siki | 132.177.150.234 | ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ ১০:৪০584570
  • বাইক চালাতে শেখা এমন কোনও বড় ব্যাপার নয় কিন্তু। নইলে গাড়িতেই যাও।

    এমন রাস্তা দেখে এক্খুনি বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে না?

  • aranya | 78.38.243.161 | ৩১ জানুয়ারি ২০১৩ ১০:৫০584571
  • সে আর বলতে, এখনই বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে, দারুণ রাস্তা।
  • siki | 132.177.1.177 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:০৭584572
  • তা হলে রুট ঠিক হল, বাইক তৈরি হল। এইবার নিজেকে তৈরি করার পালা। কীভাবে তৈরি হবেন?

    যদি বাইকে না যান, তা হলে খুব সোজা। সুটকেসে গরম জামাকাপড় ভরুন। সঙ্গে রাখুন ডায়ামক্স অ্যাভোমিন ইত্যাদি ওষুধ, সাথে গ্লুকোজ, চকলেট ইত্যাদি। এইবার বেরিয়ে পড়ুন।

    বাইকার্সদের জন্য ফুল ট্র্যাভেল গীয়ার কেনা মাস্ট, দরকার হলে সেই সব ক্যারি করার জন্য বাইককেও একটু মডিফাই করে নিলে ভালো হয়। ভালো করে বাইক সার্ভিস করিয়ে তার মাইলেজ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী পেট্রল ভরে সেই পেট্রলে বাইক কতটা পথ যেতে পারে সেটা একটা প্রেডিক্টিভ প্ল্যান করে সেই মত দৈনিক ট্যুর প্ল্যান ছকতে হয়।

    সঙ্গে দুটি জ্যারিকেন, অন্তত দশ পনেরো লিটার টোটাল ক্যাপাসিটি হয় এইরকম, ভর্তি পেট্রল নিয়ে রাখতে হবে, এবং যাত্রাপথে এগুলো সবচেয়ে দামী জিনিস। যেখানেই মনে হবে তেল কমে আসছে, খোঁজ নাও পরের পেট্রল পাম্প কতদূর। আগে বাইকের ট্যাঙ্ক ফুল করো। নিতান্ত উপায় না থাকলে জ্যারিকেন থেকে তেল ভরো।

    ফর এক্সাম্পল, মানালি থেকে রোহ্‌তাং হয়ে যখন যাচ্ছো লেহ্‌র দিকে, মাঝে টান্ডি বলে একটা জায়গা পড়বে, সেইখানেই লাস্ট পেট্রল পাম্প। সেটা মানালি থেকে মোটামুটি একশো নয় কিলোমিটার পরে। এটাই এই রুটের লাস্ট পেট্রল পাম্প। এর পরের পাম্প একেবারে ৩৮০ কিলোমিটার দূরে, লেহ্‌তে ঢোকার মুখে, কারু-তে। সুতরাং, ট্যাঙ্কের তেলের পরে জ্যারিকেনের তেলের ওপর ভরসা করতেই হবে।

    সমতলে বাইকের বা গাড়ির যা মাইলেজ, আপহিল্‌সে তার থেকে অনেক কম মাইলেজ হবে। অন্তত ৫০% কম। সেই বুঝে ক্যালকুলেশন করতে হবে। ধরা যাক, একটা বাইকের এমনি মাইলেজ ৫০ কেএমপিএল, সেটা পাহাড়ে হবে অ্যাপ্রক্স ২০-২৫ কেএমপিএল। সেই মত, মানালি থেকে সোজা লেহ্‌, যা প্রায় প[আঁচশো কিলোমিটার (৪৮০ কিমি), কভার করতে লাগবে ২০-২৫ লিটার তেল। বাইকের ট্যাঙ্কের ক্যাপাসিটি যদি ১০ কিটার হয়, তো আরো পনেরো লিটার ক্যারি করতেই হবে। আর টান্ডিতে তেল ভরে নিতেই হবে যদি জ্যারিকেনের তেল বাঁচাতে চাও ভবিষ্যতের আরও দুর্গম রাস্তার জন্যে।

    এই রাস্তা ষেষমেশ সোমোরিরি লেকের খুব কাছ দিয়েই গেছে, কিন্তু তুমি সোমোরিরি লেকের দিকে যেতে পারবে না, কারণ, তুমি এখনও লেহ্‌ পৌঁছও নি, তোমার কাছে পারমিট নেই। লেহ্‌ পৌঁছে পারমিট নিয়ে আবার এই রাস্তাতে ফিরে আসতে হবে সো মোরিরি আর সো কার, এই দুই লেক দেখবার জন্যে, আবার ফিরে যেতে হবে লেহ্‌তে পরের সাইটসিয়িংয়ের জন্য, যদি না, এটাই লাস্ট দেখার জিনিস হয় এবং এর পরে তুমি মানালি হয়েই ফিরতে চাও।

    এটাই হচ্ছে সেই "দ্বিতীয় কারণ" যে জন্য আমি বলেছিলাম, শ্রীনগর দিয়ে গিয়ে মানালি হয়ে ফেরা বেটার অপশন, কারণ তা হলে এই এক্সট্রা ট্র্যাভেলটা করতে হয় না এই দুই লেক দেখার জন্য। শ্রীনগর দিয়ে কিছু মিস না করেই ঢোকো, পারমিট নাও, সব দেখে কারু হয়ে সো মোরিরি চলে এসো, এটা দেখে মানালির রাস্তা ধরো। প্লেন অ্যান্ড সিম্পল।
  • siki | 132.177.1.177 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:১৯584573
  • দে তাড়াহুড়ো করছে, তাই ওর জন্য আইটেনেরারি একটা বানিয়ে ফেলি প্রথমে। তারপরে লেখা এগনো যাবে।

    দিন -২

    দিন -১ - জার্নির দুদিন আগে থেকেই ডায়ামক্স খেতে শুরু করো। দিনে দুটো।

    দিন ১ - লেহ্‌ পৌঁছে যাও প্লেনে। সারাদিন বিশ্রাম। হোটেলে ফটো আর ডকুমেন্টের ফোটোকপি দিয়ে ট্যুর প্ল্যান জানিয়ে বলে দাও পারমিট করিয়ে আনতে। পারহেড বোধ হয় চারশো না পাঁচশো টাকা লাগে পারমিটের জন্যে।

    (আমরা বিনা পারমিটে ঘুরেছি, হে হে, আর্মির গাড়ি ছিল কিনা :))

    সারাদিনে কোনও দৌড়ঝাঁপ নয়। শরীর চাঙ্গা লাগলেও নয়। জাস্ট বিশ্রাম। সন্ধ্যে বেলায় লেহ্‌ মার্কেটে এসে ডিনার করে নাও, হাল্কা ঘোরাঘুরি, লাস্ট মিনিট শপিং ইত্যাদি সেরে নাও।

    দিন ২ - গন্তব্য নুব্রা ভ্যালি। সকাল বেলায় হাল্কা ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ো। সঙ্গে জল রাখো খাবার জন্য। গ্লুকোজ রাখো আলাদা। খুব ঠাণ্ডায় জলের সঙ্গে গ্লুকোজ মেশে না, আলাদা হয়ে ভেসে থাকে, তখন খেতে অসুবিধে হয়। র‌্যাদার মুখে গ্লুকোজ পুরে জল খাও। জল শরীরকে অক্সিজেন জোগাবে। লেহ্‌ থেকে তিরিশ পঁয়তিরিশ কিলোমিটার দূরে খারদুংলা পাস। পৃথিবীর হায়েস্ট মোটোরেবল রোড। এটি কারাকোরাম রেঞ্জ। সামনে হিমালয়ান রেঞ্জ দেখা যাবে। খারদুংলাতে নেমে ছবি তোলো, কফি খাও, এবং বেরিয়ে বড়ো। কোনওমতেই ৩০ মিনিটের বেশি কাটাবে না এখানে। খুব বেশি হলে চল্লিশ মিনিট। বেশি হলেই হাঁউ মাউ করে এএমএস এসে এতক করবে।

    খারদুংলার পরে কেবলই ডাউনহিল, ডাউনহিল, তরপরে সমতল। নুব্রা ভ্যালি। পাশ দিয়ে যাবে শিয়োক (shyok) নদী।

    পৌঁছবে ডিস্কিটে, বিকেলের একটু আগে। ওখানেই থানা গাড়ো রাতের জন্য। ছোট্ট জনপদ, ছোট্ট একটা মার্কেট আছে ডিস্কিটে, সেখানে ঘুরে এসো। সেই লামার সাথে দেখা হয়ে যাবে, যিনি দোকান চালান। ( লিখছি আর চোখের সামনে ভাসছে সেই দিনগুলো, আহা, আবার কবে যাবো, কবে যাবো)

    ডিস্কিট থেকে সাত কিলোমিটার দূরে পড়বে আরেকটা জনপদ, তার নাম হুন্ডার। এই দুয়ের মাঝে শিয়োক নদীর অনেকটা বড় ফ্ল্যাট বেড, তাতে জমা বালিতে চরে বেড়ায় দুইকুঁজওলা ব্যাকট্রিয়ান উট। তুমি যাচ্ছো এখন ঐতিহাসিক সিল্ক রুট ধরে। হুন্ডারেও থাকতে পারো, ডিস্কিটেও থাকতে পারো, তবে ডিস্কিট বেটার। যাবার সময়ে যোগাযোগ কোরো, আমি হোটেলের নাম ঠিকানা সব দিয়ে দেব।
  • কৃশানু | 213.132.214.156 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:২৩584574
  • দারুণ!!!
    তবে এই টইতে আমি লিখব না। দুটো কারণ। আমি বাইকের কিস্যু জানি না।আর দ্বিতীয়ত, আমার বেড়ানোটা ঠিক লাদাখে হয় নি, হয়েছে জংস্কার-এ।
    অন্য একটা টই একটু সময় করে নিয়ে খুলবো।
  • siki | 132.177.1.177 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:২৬584576
  • দিন ৩ - ডিস্কিটে সকালে উঠে সামনেই দেখবে এক বিশাআল বুদ্ধের মূর্তি। দেখে এসো, মন ভালো হয়ে যাবে। বুদ্ধ নজর রাখছেন পুরো নুব্রা ভ্যালির ওপর। এর পরে কোল্ড ডেজার্টে গিয়ে একটু উটের পিঠে চড়ে নাও, দুই কুঁজের মাঝে বসে ফটো তোলো। আবার এগোও।

    ডিস্কিট থেকে ৯৭ কিলোমিটার দূরে (হুন্ডার থেকে ৯০) হল তুর্তুক। এই সেই জায়গা যেটা এক সময়ে পাকিস্তানে ছিল। এই পর্যন্ত ট্যুরিস্টরা অ্যালাওড। রাস্তায় পড়বে থিওস এয়ারস্ট্রিপ। এই পর্যন্ত চলে এসেছিল পাকিস্তানি আর্মি। দুপুরের দিকে তুর্তুক পৌঁছে যে কাউকে বোলো, গ্রামের মধ্যে মটরক্ষেত ভুট্টা ক্ষেত এসব পেরিয়ে একটা ছোট ট্রিপ করিয়ে দেবে। এরা লাদাখি নয়, বালটিক উপজাতি। পাকিস্তানের এক উপজাতি। মার্চ মাসের শেষে এরা এখানে পোলো টুর্নামেন্ট করে। এটা এদের বেশ নামকরা খেলা। অ্যাপ্রিকটের জুস খাও, বোতল কিনে ব্যাগে ঢোকাও। সন্ধ্যেবেলা ক্যাম্পফায়ার করো বা এমনিই অন্ধকারে বসে বসে গল্প করো। মধুর জায়গা। স্বর্গের কত কাছাকাছি। রাত্রে ক্যাম্পে ঘুম। এখানে কোনও হোটেল নেই। শুধু ক্যাম্পিং।

    থাকার জায়গা টায়গা নিয়ে আমি আলাদা করে লিখব, এখন শুধু আইটিনেরারি।
  • siki | 132.177.1.177 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:২৭584577
  • কিশানু, এই টইতে নয়, অতি অবশ্যই অন্য টইতে লিখবি। এটা আমার!
  • de | 69.185.236.52 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:৪০584578
  • অনে এ এ এক থ্যাংকু সিকি! দারুণ হচ্ছে, খুব ভালো করে পড়ছি -- পরে একটা প্রিন্ট আউট নিয়ে নেবো -- লে লাডাখে আমারো কেমন নেশা লেগে গেছে!
  • siki | 132.177.1.177 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:৫৬584579
  • দিন ৪ - সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ো। ননস্টপ হুন্ডার-ডিস্কিট-খারদুংলা পেরিয়ে লেহ্‌। নটায় স্টার্ট করলে বিকেল তিনটে চারটের মধ্যে ঢুকে যাবে। ২৩০ কিলোমিটার টোটাল। বাকি দিন রেস্ট।

    বলতে ভুলে গেছিলাম। থৈস এয়ারস্ট্রিপ পেরনোর পরে খানিক এগোলেই দেখবে রাস্তা বাইফার্কেট হয়ে গেছে। একটি গেছে পানামিক সেক্টরের দিকে, ঐ রাস্তাতেই সিয়াচেন গ্লেসিয়ার। যদি যেতে চাও, তো এখানে এক দিন অ্যাড করো। ডিস্কিট থেকে সুমুর হয়ে পানামিকে এক রাত্তির, সেখান থেকে তুর্তুকে এক রাত্তির।

    ম্যাপ দ্যাখো। সুন্দর আইডিয়া পাবে।



    দিন ৫ - লোকাল সাইটসিয়িং। লেহ্‌ প্যালেস দ্যাখো, হল অফ ফেম দ্যাখো, স্পিটুক গোম্পা দ্যাখো, এবং শান্তি স্তুপ দ্যাখো। রাতে ডিনার সেরে লম্বা ঘুম।

    দিন ৬ - আজ যাবে সেই থ্রি ইডিয়ট্‌স খ্যাত প্যাংগং লেক। ইতিহাস ভূগোলে যাচ্ছি না, সব আগেই লিখেছি আমার লাদাখের টইতে, ঝালিয়ে নিও।

    সকাল সকাল শুরু করবে, মাঝে পড়বে কারু। এখানে এক ঝলক দেখা হবে সিন্ধু নদের সঙ্গে। তারপরেই পাহাড়ি রাস্তা, জিঙ্গরাল পেরিয়ে চাংলা পাস। থার্ড হায়েস্ট মোটোরেবল রোড। সেকেন্ড হায়েস্টটা বোধ হয় মানালি থেকে আসার রুটে পড়ে, মনে নেই।

    চাংলা পেরোলেই ডাউনহিল শুরু। পাহাড়ের শেষে তাং শে। একটা আর্মি ক্যাম্প আছে এখানে। তাংশে-র থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরে প্যাংগং লেক। ওখানেই অনেক দোকান পাবে খাবার জন্য, খাবার বলতে রাজমা চাওল নয় তো ম্যাগি।

    থাকার জন্য সমস্তই ক্যাম্পসাইট। রাতে সাবজিরো হয় ঠিকই টেম্পারেচার, তবে তেমন মারাত্মক কিছু নয়। ক্যাম্পের ভেতরে বেশ কোজি, টয়লেটের সুবন্দোবস্তও আছে, একটু প্রিমিটিভ টাইপের, এই আর কি। মানিয়ে নিতে হবে।

    মানিয়ে নিতে না পারলে বিকেল বিকেল ফেরত চলে এসো, রাতের মধ্যে লেহ্‌। আমি বলব, থেকে যাও। ক্যাম্পসাইটে আগে থেকে কথা বলে রাখো।

    এই রিজিয়নে কোনও মোবাইল টাওয়ার নেই, কোনও সিগন্যাল নেই। যা কথা বলবার, সব লেহ্‌তে সেরে আসতে হবে।

    অন্য অপশন হচ্ছে হোমস্টে, লাদাখিদের বাড়িতে লাদাখি স্টাইলে খাওন এবং ঘুমোন। অনেক শস্তা পড়ে। প্যাংগং এক সুবিশাল লেক, এর ধারে ধারে মান, মীরাক, খালসে ইত্যাদি গ্রাম আছে, যেখানে জায়গা পাবে, মানে পাবেই ফর শিওর, থেকে যাও। বুকিংয়ের দরকার হয় না।

    অ্যাবসোলিউটলি সেফ, লাদাখিরা কখনও অতিথির অমর্যাদা করে না। চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারো। খাবার খুব সামান্য পাবে, ডাল রুটি নয় তো ম্যাগি, কিন্তু যে উষ্ণতা পাবে তাদের আতিথ্যে, তার দাম টাকায় হয় না। জীবন দিয়ে হয়। অভিজ্ঞতা দিয়ে হয়।

    দিন ৭ - ফিরে এসো। লেহ্‌তে বিশ্রাম নাও। পরের দিন যাবে সো মোরিরি আর সো কার। তিব্বতী ভাষায় সো (Tso) মানে লেক।

    দিন ৮ - যদি আগের দিন লেহ্‌র বদলে কারুতে থেকে যাও তো দুদিন মিলিয়ে ৭২ কিলোমিটার কম পড়বে। কারু থেকে উপসী, কেরে চুমাথাং হয়ে সো মোরিরি আর সো কার লেক। দেখে নিয়ে সোজা রাতের মধ্যে লেহ্‌তে ফেরত এসো।

    দিন ৯ - বাফার। যদি আগে পানামিক যেতে চাও তো এই দিনটা কাজে লাগবে। অথবা যদি সো মোরিরিতে হোমস্টে বা ক্যাম্পসাইটে থেকে যেতে চাও তো এই দিনটা কাজে আসবে, নইলে আর কি, লেহ্‌তে মার্কেটিং করো, এমনি ঘুরে বেড়াও।

    দিন ১০ - সকালের ফ্লাইটে দিল্লি। লেহ্‌ থেকে কেবল দিল্লিরই ফ্লাইট চলে, সেখান থেকে বোম্বাই।
  • siki | 132.177.1.177 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৭:৫৭584580
  • ও হ্যাঁ, তাং শে থেকে যখন প্যাংগংয়ের দিকে যাবে, কপাল ভালো থাকলে মারমট পরিবারের সাথে দেখা হতে পারে। চোখকান খোলা রেখো। দেখা হলে বিস্কুট বাদাম খাইও।
  • de | 130.62.186.148 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:০২584581
  • সিকিকে বম্বে এলেই খাওয়াবো ঃ)) --

    এর মধ্যে লামায়ুরু আর আলচিটাও ঢোকাবো ভাবচি!

    আবারো অনেক ধন্যযোগ সিকি!
  • siki | 132.177.77.164 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ২০:১৪584582
  • আরে আমি অনেক কিছু মিস করেছি। পরে লিখচি আবার। হেমিস গোম্পা, শে প্যালেস, ঠিকশে গোম্পা। আলচি। লামায়ুরু।

    আলচি করতে গেলে দশদিনে হবে না।
  • jule | 131.241.218.132 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৮:৪৭584583
  • সেকান্দ হায়েস্ট তান্গ্লান্গ্লা মানালি লেহ র পথে পড়বে। কারুর আসার আগেই ।
  • jule | 131.241.218.132 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ১৮:৪৮584584
  • tanglangla ১৭৫৮২ ফুট
  • siki | 132.177.16.205 | ২৫ মার্চ ২০১৩ ১৩:১২584585
  • তা হলে চাং লা সেকেন্ড হায়েস্ট। ১৭৫৮৬ ফীট।



    আজ কিছু লিখব। দেখি।
  • siki | 132.177.16.205 | ২৫ মার্চ ২০১৩ ১৬:৩০584587
  • প্যাংগং লেকের ধার বরাবর কাঁচা রাস্তাটা গিয়ে শেষ হচ্ছে চুশূলে। এইটা হল ভারতের কোল্ডেস্ট পয়েন্ট। হিন্দুস্তান টাইমসের ডেইলি ওয়েদার রিপোর্টে দেখবেন, প্রচণ্ড গরমে দিল্লি যখন আটচল্লিশ উনপঞ্চাশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, চুশূল তখন কাঁপছে মাইনাস পনেরো কুড়িতে। শীতে সেটা পৌঁছয় মাইনাস ষাটে।

    এই চুশূল হচ্ছে ব্যাং অন চায়না বর্ডার। আগে চুশূলের পারমিট পাওয়া যেত, অ্যাডভেঞ্চারাস বাইকাররা চুশূল হয়ে মাহে হয়ে সো মোরিরি সো কারের রাস্তা ধরত, কিন্তু সম্ভবত গতবছর বা ২০১১তে একদম বাইকার, বুঝে বা না বুঝে বর্ডার ক্রশ করে চীনে চলে গিয়েছিল। চীনা সোলজার তাদের দেখতে পেয়ে পাকড়াও করে ইন্ডিয়ান সোলজারের হাতে তুলে দেয়। সেই থেকে লাদাখ অ্যাঅমিনিস্ট্রেশনের ওপর স্ট্রিক্ট নির্দেশ আছে, চুশূলের পারমিট দেওয়া হয় না। এই সিজন পর্যন্ত কেউই কোনওভাবেই কোনও ইনফ্লুয়েন্স খাটিয়েই চুশূল যেতে পারে নি। অতএব, প্যাংগং লেক থেকে সো মোরিরি যেতে হলে সোজা রাস্তা হচ্ছে কারু-তে ফিরে এসে সো মোরিরির রাস্তা নেওয়া।

    সো মোরিরি থেকে মানালির রুট ধরা সোজা, অনেকখানি রাস্তা বেঁচে যায়, সেই জন্যেই শুরুতে বলেছিলাম শ্রীনগর হয়ে এসে লেহ্‌তে সবকিছু দেখে, লাস্টে সো মোরিরি দেখে মানালি হয়ে ফেরত যাওয়াটা বেটার হবে। মানালি লেহ্‌র রাস্তা অ্যাট এনি পয়েন্ট শ্রীনগর লেহ্‌র থেকে অনেক অনেক বেশি সুন্দর, অনেক বেশি ভয়ঙ্কর এবং চ্যালেঞ্জিং। এইবারে আপনি যদি জার্নির শুরুতেই আপহিলসে চ্যালেঞ্জ ভয়ংকরতা ইত্যাদির সম্মুখীন হতে চান, তা হলে মানালি দিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়লে সমস্তটাই মাটি। সৌন্দর্য কিছুই না দেখে ফিরে আসতে হবে। বরং ফেরার পথে নামতে নামতে সৌন্দর্য দেখা ভালো।

    উদাহরণস্বরূপ, মানালি থেকে এগোবার সময়ে রোহতাং পাস পেরোবার খানিক পরেই একটা ঝোরা পড়ে, তার নাম রাণী নালা। সেই ঝোরার দাপটে ঐ স্ট্রেচটা সবসময়ে কাদা-বরফে মাখামাখি হয়ে থাকে, রাস্তা বলে কিছু নেই ওখানে। সর্বক্ষণ বহমান জলের থেকে বাঁচিয়ে রাস্তা বানানোও সম্ভব নয়। এই জায়গাটা এতই ভয়ংকর, বাইকের চাকার অর্ধেক প্রায় ডুবে যায় কাদায়, বাইক থেকে নামাও যায় না, ঐ অবস্থায় বাইক চালিয়ে পার হতে হয় স্ট্রেচটা, বেশির ভাগ সময়েই বাইকের ক্লাচ প্লেট জ্বলে পুড়ে যায় এইখানে। অনেক অ্যাসপির‌্যান্টকে এইখান থেকে বিফলমনোরথ হয়ে ট্রাকের মাথায় বাইক চাপিয়ে মানালি ফিরে আসতে হয়।

    সেফ অ্যান্ড সাকসেসফুল জার্নি করতে গেলে তাই শ্রীনগর হয়ে যাওয়া বেস্ট।

    তা সত্ত্বেও যদি মানালি হয়ে যেতে চান, তা হলে শুনুন। মানালি পৌঁছে প্রথমেই ভালো করে গাড়ি সার্ভিস করাবেন। একদিন তাই মানালিতে থাকা মাস্ট। পৌঁছেই তেল ভরবেন না। কারণ, আপনি থাকবেন হোটেলের রুমে, বাইক থাকবে বাইরের পার্কিংয়ে, এ রকম অনেক অভিযোগ শোনা গেছে, হোটেলের লোক রাতে বাইক থেকে চুরি করে পেট্রল বের করে নেয়। মাঝরাস্তায় বিপদে পড়বেন তেল ফুরিয়ে গেলে। পেট্রলের রিজার্ভ জেরিক্যানও অতি অবশ্যই নিজের লাগেজের সঙ্গে ঘরের ভেতর নিয়ে ঘুমোবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন