এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • ছড়ানো ছেটানো কথা ও ঘটনা।

    সে
    নাটক | ২০ আগস্ট ২০১৩ | ২৭৪০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • phutki | 212.142.75.21 | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ১১:১৩619871
  • উচিত অনুচিতে মনে হয় এই জীবনটা বাঁধা যাবে না। সত্যি মিথ্যে জানি না। কুমড়ো লিখতে থাকুন।
    আপনার এই দেওয়ালকে বলছি স্টাইলে কাহিনী বর্ণনার ধরণ আমার ভারি ভাল লাগে।
  • Abhyu | 125.187.60.159 | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ১১:১৯619872
  • কি মুশকিল লিখতে দিন না। বাচ্চা বাচ্চাই - যেমন সুবিধে হয় বয়স ধরে নিন। সাধারণনীতি হল কেউ কোর্টে হলফনামা দিয়ে কিছু না বললে সেটা পুরো সত্যি না হলেও মহাভারত অশুদ্ধ হয় না। কিন্তু লেখাটা ভালো হচ্ছে।
  • d | 144.159.168.72 | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ১১:৪৫619873
  • সত্যি! লোকে যেমন বিচারসভা বসিয়ে ফেলেছে দেখছি।

    কুমড়ো লিখতে থাকুন।
  • রোবু | 213.132.214.88 | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ১২:১২619874
  • সে-দির প্রায় সব লেখার মতোই এটাও খুবই ভালো লাগছে।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ১২:২৬619875
  • হাতজোড় করে নমস্কার করে সোশ্যালি পরিচয় বিনিময় হলো আমাদের মধ্যে। মধ্যবয়সী এই লোকটিই এই কোম্পানীর আইটি ডিপার্টমেন্টের হেড। দরজা ঠেলে এরই মধ্যে এসে ঢুকেছে এক তরুণ। ডার্ক হ্যান্ডসাম ছিপছিপে চেহারা। তার ঠোঁট ও চোখের কোণে লেগে রয়েছে একটা হাসি। এই কোম্পানীর তরফ থেকে এই লোকটিই টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের হেড। তার নাম কামেশ। সে এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে শেকহ্যান্ড করল।
    বেলা গড়িয়ে গেছে অনেকটাই। এরা দুজন আমাকে নিয়ে চলে লাঞ্চ করাতে ক্যান্টিন অভিমুখে। আমাদের নিজেদের অফিসের দুটি অপরিচিত মুখও এসে যোগ দেয়। আমরা রয়েছি দোতলায়, ক্যান্টিন নীচে। লম্বা একটা কাচের দেওয়ালওয়ালা করিডোর পার হয়ে ক্যান্টিনে যাবার সিঁড়ি। কাচের দেওয়াল দিয়ে দেখতে পাই ফ্যাক্টরীর ভেতরের যন্ত্রপাতি। ফ্যাক্টরীর ভেতরটায় দেখি প্রকাণ্ড একটা হলঘর, একটা টেনিস কোর্টের চেয়ে বড়ো বই ছোট নয়, এবং তিন তলা মত তার উচ্চতা। মেশিন টেশিন রয়েছে। কী বানায় এরা?
    আমার সদ্য পরিচিত অফিস কোলিগ কৌশিক নীচুস্বরে বলে, মেডিক্যাল ইকিউপমেন্টস।
    মানে সার্জিকাল ইকিউপমেন্টস? স্ক্যালপেল, কাঁচি, এইসব বানানো হচ্ছে ওখানে?
    কৌশিক একটু ভেবে নেয়, তারপরে বলে, এখনো ফুল ফ্লেজেড প্রোডাকশান স্টার্ট হয়নি তবে এখন এরা বানাচ্ছে ইঞ্জেকশানের সিরিঞ্জ।
    বিংগো! আমি কিন্তু এটাই ভাবছিলাম মনে মনে। লাস্ট পনেরো বিশ বছর ধরে যেভাবে ডিসপোজেবল সিরিঞ্জের ডিম্যান্ড বেড়েছে, সেভাবেই ফেজড আউট হয়ে গেছে পুরোনো দিনের সিরিঞ্জ। খুবই ভালো ব্যবসা এটা। রেগুলার ডিম্যান্ড। কোম্পানীর নামটা খুবই বিলিতি বিলিতি। এই ফ্যাক্টরীতে ঢুকবার আগে অবধি নামটা জানতাম না। শুনতে কিছুটা ব্রিটিশ কিছুটা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান লাগছে। টেকনোলজি ওসব দেশ থেকেই ইম্পোর্ট করেছে হয়ত। এসব ভাবতে ভাবতে ক্যান্টিনের ভেতর অবধি পৌঁছে গেলাম। ফাঁকা ক্যান্টিন। অন্যদের খাওয়া দাওয়ার পাট আগেই চুকে গেছে। আমি একাই খাবো। বিরাট ডাইনিং হলটা ফাঁকা। বাসনকোসন ধোবার শব্দ শোনা যায়।
    আইটি হেড চলে গেল, তার সঙ্গ নিলো কামেশ। কৌশিক আমাকে খাবারের ব্যাপারে বুঝিয়ে দেয়, এটা পুরোপুরি ভেজিটেরিয়ান ক্যান্টিন। তবে স্পেশান রিকোয়েস্টে ডিম ভেজে দিতে পারে, যদিও তা আগে থেকে বলে রাখতে হবে। রুটি তরকারি ডাল ইত্যাদি রয়েছে কিছু। নিজের খাওয়া নিয়ে আমার সেরকম কিছু চিন্তা নেই। কৌশিক ও ব্রতীন(অন্য কোলিগটি) আমাকে সঙ্গ দেবার জন্য চেয়ার টেনে নিয়ে বসে, তাদের খাওয়া আগেই হয়ে গেছে। খাবারদাবারের নিন্দে করে। আমার মাথার মধ্যে অন্য চিন্তা ঘুরঘুর করছে, টেলিফোনটা তখন হুট করে কেটে দিয়ে ঠিক করলাম কি? ঠিক শুনেছিলাম কি হ্যালো বলেছিল ওপ্রান্ত থেকে? নাকি ভুল শুনেছি। খাবার খেতে খেতে ভাবি বাচ্চাটা খেয়ে নিয়েছে কি এরমধ্যে? ফোন তুলতে এত দেরি করছিল কেন?
    ব্রতীন বলে, এই খাবার মুখে দেওয়া যায় না, ডিনারটা দিল্লিতে ফিরে ভালো করে কোরো।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ১৩:২১619876
  • ইন্সটলেশান যদি এখন শুরু করে দিই, তাহলে আজ আমার দিল্লি ফেরা হবে না। ক্রমাগত কাজ করে যেতে হবে। তারপরে একটা সময়ে সিস্টেম ঘন্টা আট কি দশ ভেতরে ভেতরে কাজ করে, বাইরে থেকে দেখে মনে হয় স্থির হয়ে রয়েছে, তখন করণীয় কিছুই থাকে না, তা সেই স্থির স্টেজটা আসবার আগে অবধি যাযা কাজ তা যদি করে ফেলতে পারি, তাহলে দিল্লি ফেরা যায়, তারপরে কাল ফিরে এসে বাকি কাজ করা যাবে। কিন্তু ঐ স্টেজ অবধি পৌঁছনোর জন্যও তো ঘন্টা চারেক উইদাউট এরর কাজ করতে হবে, তারও আগে আছে প্রিপারেশন ফেজ, সেটাও ঘন্টা দেড় দুইয়ের কাজ, অথচ তিনটে বাজতে চলল এখনই।
    আমি থালা গেলাস ট্রে তে তুলে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে সার্ভাররুম মুখো হই। কৌশিক ও ব্রতীন চলে যায় অন্যদিকে, ওদের কীসব টিম মিটিং রয়েছে।
    সারভাররুমে ঢুকে দেখি কামেশ মনিটরের সামনে বসে কাজ করছে। আমাকে দেখেই তাড়াহুড়ো করে বলে, সো ক্যান উই স্টার্ট দ্য ইন্সটলেশন নাউ?
    ইন্সটলেশন কিটের বাক্সটা তার হাতে। বাক্সটা খুলে সে সিডিগুলো বের করতে থাকে।
    এবার বাক্সের কভারের দিকে আমার চোখ পড়ে। ঠিক দেখছি তো? এটা কোন ভার্শান? এতো দেখছি লেটেস্ট ভার্শান! বাজারে এসে গেছে অলরেডি? খবর পাই নি তো। এই জিনিসের নামও শুনিনি। সর্বনাশ! আমাকে এসব না জানিয়ে অফিস থেকে এতদূরে তড়িঘড়ি পাঠিয়ে দিলো কেন? আমার তো কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। এখন কোনো একটা ঝামেলা হয়ে গেলে আমি তো পুরো আটকে যাবো এখানে। সবার আগে অফিসের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কামেশ এরমধ্যে একটা সিডি ঢুকিয়ে ফেলেছে ড্রাইভে। মনিটরের স্ক্রীণে অনেক কিছু ফুটে উঠছে। ওকে থামাতে হবে। আমি ওকে বলি, প্লীজ ডোন্ট ডু এনিথিং নাউ, ওয়েট; ফার্স্ট অফ অল আই মাস্ট মেক অ্যা ফোন কল।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ১৪:২৮619877
  • ওয়েট করতে তো বললাম কামেশকে, কিন্তু ওয়েট সে করছে না। আমার নির্দেশ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সে তার কাজ করে চলেছে। সম্ভবত মেয়েদের থেকে ইন্সট্রাকশান নেবার অভ্যাস নেই। আমি টেলিফোনের দিকে এগিয়ে যাই, অফিসের নম্বর আমার মুখস্থ। আমি ডায়াল করতে থাকি কোলকাতার এরিয়া কোড এবং বাকি নম্বরগুলো। ফোন বেজে যায়। সাধারণত অফিসে ফোন করলে রিং হয় না, অফিসের নাম দিয়ে রেকর্ড করা কথা বাজে, সেটা বেজে বেজে থেমে গেলে অপারেটর ফোন ধরে। এখন সেসব কিছু হচ্ছে না। আরেকটু অপেক্ষা করি। ওদিক থেকে ফোন তুলেছে কেউ, কিন্তু চুপ, কিছু বলছে না। এক দু সেকেন্ড থেমে আমি বলি, হ্যালো।
    ও! মা তুমি?
    বুঝতে পারি অফিসের নম্বরের বদলে বাড়ির নম্বর ডায়াল করে ফেলেছি।
    হ্যাঁ আমি। সব ঠিক আছে তো? ফোন তুলে কথা বলছিলে না কেন?
    হ্যাঁ হ্যাঁ সব ঠিক আছে, কিন্তু কিছুক্ষণ আগে না একটা ফোন এসেছিল, আমি তখন বাথরুমে ছিলাম, এসে যেই হ্যালো বলেছি কোনো কথা না বলে ফোনটা কেটে দিল। তাই ভাবলাম সেই লোকটাই আবার ফোন করেছে, তাই চুপ করে ছিলাম। তোমার কাজ ঠিকঠাক হচ্ছে তো?
    তুই খেয়েছিস?
    হ্যাঁ হ্যাঁ, ওসব নিয়ে চিন্তা কোরো না।
    শোন, আমি হয়ত কাল ফিরতে পারব না, পরশু ফিরব।
    পরশু কখন?
    সন্ধেবেলায়, কি রাত্রে।
    ঠিক আছে। কোনো চিন্তা কোরো না।
    তাহলে কেটে দিচ্ছি এখন, পরে কথা বলব আবার।
    ওকে। ও হ্যাঁ, মা শোনো শোনো, যদি তোমার আসতে দেরী হয়, মনে কর যদি আমি ঘুমিয়ে পড়ি তুমি বারবার কলিং বেল বাজিও।
    আমি ফোন কেটে দিয়ে এবার অফিসের নম্বর ডায়াল করি। দীপ্তজিতের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
    দীপ্তজিৎ অফিসেই ছিলো। ও জানে আমি ক্লায়েন্ট সাইটে গেছি।
    দীপ্তজিৎ, তোমরা আমাকে কেউ বলোনিতো এটা একেবারে নতুন ভার্শান। এত অল্প সময়ের মধ্যে আমি পারব কেমন করে?
    আরে বাবা, পারবে না কেন? কাউকে না কাউকে তো নতুন জিনিস ইনস্টল করতেই হতো। সময় যদি একটু বেশি লাগে, থেকে যাও একস্ট্রা কয়েকদিন। ওতে কোনো অসুবিধে হবে না।
    ফোন করবার পরে বুঝতে পারলাম ওরা অফিসের সুবিধে অসুবিধে বিলিং এসব নিয়েই ভাবে, আমার ব্যক্তিগত সুবিধে অসুবিধে নিয়ে কোনো কথাই তোলে না। সেসব নিয়ে বললেও কিছু সুবিধে হবে না। একটা দিন অতিরিক্ত থাকতে হবে সেটা বুঝে গেছি, বাচ্চাও এখন অবধি নিরাপদ আছে, অতয়েব চিন্তা একটু কমল। কিন্তু কামেশকে থামানো যাচ্ছে না। ইন্সটলেশনের স্ক্রীণ একের পর এক বদলে যাচ্ছে, মনে আনন্দে কামেশ কতকিছু ইনপুট দিচ্ছে সেখানে। তার হাতের কাছে ইন্সটলেশন ম্যানুয়াল নেই। ইনফ্যাক্ট ইন্সটলেশন ম্যানুয়ালটাও আলমার দরকার। দু তিনশো পাতার ঐ ম্যানুয়ালে যেমন যেমন লেখা আছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই কর্তব্য, কিন্তু ইট ইজ টূ লেট, বড্ড দেরী হয়ে গেছে।
    কামেশকে জিজ্ঞাসা করলাম, ইন্সটলেশন গাইড কোথায়?
    সে একটা সিডি দেখিয়ে দিয়ে জানালো, এখন আর গাইড প্রিন্টেড ফরম্যাটে আসে না। সব সিডিতে।
    তাহলে তো সিডি থেকে প্রিন্ট আউট নিতে হবে।
    কামেশ তাতেও রাজি হয় না। বলে যে প্রিন্টার ইনস্টল করা নেই সার্ভারে।
    কিন্তু ইন্সটলেশন গাইড তো লাগবেই।
    এবার কামেশ আমার কথার কোনো উত্তরই দেয় না। আমি অপেক্ষা করি তার উত্তরের। তারপর আবার কথাটা রিপিট করি তাকে লক্ষ্য করে। ঘরে আমরা দুজন ছাড়া কেউ নেইও অবশ্য।
    এবার সে বিরক্ত হয়, এবং বলে, সময় অনেক ওয়েস্ট হয়েছে, আরো বেশি টাইম ওয়েস্ট না করে আমিও যেন ইন্সটলেশনে মন দিই।
    এবার আমি ঐ ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে গেলাম। কাছাকাছি ডানদিকে আরেকটা সিঁড়ি আছে, যেটা দিয়ে গেটের দিকে পৌঁছনো যায়। সেইখানে জানলা খোলা। ছোট্টমত স্মোকিং জোন। অপরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ আগে পরিচিত হওয়া কৌশিক সিগারেট খাচ্ছে। তার হাতে একটা পেপারব্যাক বই। বইটা বিল গেটসের আত্মজীবনী। আমি কৌশিককে ডেকে বলি, কামেশকে একটু সামলাতে হবে, কোনো কথাই শুনছে না। এরকম করলে কাজ করব কীকরে বলোতো?
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ১৫:২০619878
  • কামেশকে বাইরে ডেকে নিয়ে কৌশিক কী বলে আমার জানা হয় না, কেবল কয়েকটা জিনিস পরপর হয়ে যায়, ও আমাকে সীট ছেড়ে দেয়, ইন্সটলেশন ম্যানুয়াল অন্য কোনো ঘর থেকে প্রিন্ট করে নিয়ে আসে এবং আমার কথামতো ডিস্কস্পেস ফরম্যাট করে চুপচাপ পাশে বসে থাকে। সমস্ত হিসেব টিসেব করে কাজ এগোচ্ছে, একটু পরে বুঝতে পারি এবারে পদ্ধতিগত পরিবর্তন অনেক। সন্ধে ছটা নাগাদ কৌশিকরা এসে তাড়া দেয়, দিল্লি ফিরবার পুলকার টাটা সুমো এসে গেছে। আমাদের কোম্পানীর সবাই সেটাতেই ফেরে রোজ।
    আর আধ ঘন্টা ওয়েট করতে পারবে?
    ওরা রাজি হয়। আরো আধঘন্টায় কাজ আরো কিছুটা এগোয়, কিন্তু সেই আট থেকে দশ বারো ঘন্টার সবকিছু স্থির হয়ে যাবার ফেজটা যে কখন আসবে কিচ্ছু আঁচ করা যাচ্ছে না। তাহলে কি ওদের চলে যেতে বলে থেকে যাবো?
    কামেশকে বললাম, আমি হয়ত থেকে যেতে পারি, যদি কাজ করতে হয় সারারাত।
    সে হাসি হাসি মুখে বলে, বেশতো আমিও থাকব তাহলে। যদি দশটা এগারোটা বেজে যায়, আমার বাইক আছে, তোমাকে পৌঁছে দেবো দিল্লি।
    আর তুমি নিজে কোথায় থাকো?
    সে কোনো একটা জায়গার নাম বলে, আমি চিনিনা সে জায়গা। ওরা ডাকতে আসে আমাকে। বলি, আমাকে এখন থেকে যেতে হচ্ছে।
    আর ইউ শিওর?
    কৌশিকের প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বলে দিই। ওরা বেরিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ আমার ডিসিশান বদলাই, কী এমন হাতিঘোড়া কাজ হবে আজ রাত্রে, ওদের ডাকি, ওয়েট ওয়েট, আমিও ফিরছি আজ দিল্লি।
    বাই কামেশ, উই উইল কন্টিনিও ইট টুমরো।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ২৬ আগস্ট ২০১৬ ১৭:০৭619879
  • জমাট অন্ধকার ন্যাশানাল হাইওয়েতে। হাইওয়েতে যেহেতু আলোর ব্যবস্থা থাকে না রিফ্লেকটরই ভরসা। সাঁই সাঁই করে চলে যাচ্ছে ট্রাক, আবার ওজনের ভারে নুয়ে পড়া ধীরগতি ট্রাকও আছে। লেন টেন মানবার সেরকম সীন নেই, তাও ভালো রাতের অন্ধকারে মালবাহী উটেরা নেই, সন্ধে হতেই গেছে ঘরের পানে। সুমোয় আমি পেয়েছি একটা উইন্ডো সীট। অন্ধকারে যদিও দেখবার কিছু নেই, তবুও সামনের দিকে তাকিয়ে না থাকলে আমার বমি পায়, এটা একটা জন্মগত সমস্যা। কোলিগরা আমার ওপর একটু অসন্তুষ্ট, কারণ আমার জন্যই তাদের আধঘন্টার বেশি দেরি হয়ে গেল। হোটেলে পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় নটা বেজে যাবে, তারপরে ডিনারের খোঁজে বেরোনোর ব্যাপার আছে। ব্রতীনের তো আরো দেরি হবে, কারণ ও হোটেলে থাকে না। হোটেলের কাছে একটা জায়গায় ওকে নামিয়ে দেওয়া হয়, সেখান থেকে অটো নিয়ে ও যায় ওর দিদির বাড়ি। হোটেলের বদলে দিদির বাড়ি থেকে ও কিছু টাকা বাঁচাচ্ছে। কিন্তু দিদির বাড়িতে কড়া নিয়ম আছে নটা সাড়ে নটার মধ্যে ঢুকতে হবে। ব্রতীন খুব টেনশনে। আধঘন্টা চলবার পরে দেখা গেল গাড়িগুলোর গতি কমে যাচ্ছে, শুধু তাইই নয়, উল্টো দিক থেকে ট্রাক আসছে। একটা নয়, পরপর আসছে তো আসছেই। কী হলো রে বাবা? সব ট্রাক পথ ভুলে এক্সিট মিস করেছে নাকি? পাশের রাস্তায় কোনো ট্র্যাফিক চলছে না। আরেকটু চলবার পরে কারণটা বোঝা গেল। উল্টোমুখো রাস্তাটায় উল্টেছে একটা ট্রাক। তখনো পড়ে রয়েছে অন্ধকারে, অন্যান্য গাড়ির আলোয় যেটুকু দেখা যায়। কোনো পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স কিচ্ছু নেই। কতজন আহত বা মৃত কিছুই বুঝবার উপায় নেই। কেউ থামেও না। সবার যাবার তাড়া। পাশ কাটিয়ে সব চলে যাচ্ছে। আমরাও দাঁড়ালাম না।
  • sch | 55.251.235.236 | ২৭ আগস্ট ২০১৬ ০৭:১৬619881
  • tarpor
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১৮619882
  • সেরাতেই হোটেলের কাউন্টারে বলে দিলাম ফেরার টিকিটের তারিখ কনফার্ম করে দিতে। আমি পরশু ফিরব। কৌশিক ও আরো দুয়েকজন আমার পাশে ছিল। তারা একটু অবাক হয়ে বলল, এত তাড়াতাড়ি? এইতো সবে আজ এলে?
    ওদের অবাক হওয়া দেখে কাউন্টারের লোকটি একটু ইতস্তত করে, ঠিক বুঝতে পারে না কী করবে।
    আমি আবারো বলি, হ্যাঁ আগামী পরশু বিকেলের ফ্লাইট হলে খুব ভালো হয়।
    আমার কোলিগরা তখনো বলে চলেছে, এত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে যাবে?
    কেন যাবে না? বলছি তো যে আমার কাজ আমি শেষ করে দিয়েই যাব।
    মনে মনে ততক্ষণে ঠিক করে ফেলেছি যে আগামীকাল যেমন করে হোক কাজটা শেষ করতেই হবে, তেমন হলে সারারাত কাজ করব। পরশু দুপুরের মধ্যে হোটেলে ফিরব, ফিরে টিকিট নিয়ে চলে যাব এয়ারপোর্টে। কেউ পারবে না আমাকে আটকে রাখতে। হোটেলের ফোন নম্বর রেখে দিই নিজের কাছে। কালকে কাজের ফাঁকে ফোন করে জানতে হবে ফেরার ফ্লাইটে কনফার্ম হল কিনা আমার টিকিট।
    হোটেলের খুব কাছেই ম্যাকডোনাল্ডস। ইন্ডিয়ায় ম্যাকডোনাল্ডস এসে গেছে শুনেছিলাম, কোলকাতায় আসেনি যদিও। অনেক পুরোনো স্মৃতি আছে আমার বিগ ম্যাক খাবার। সেসব স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে হাসি পেয়ে যায়। আবার হঠাৎ করে দুশ্চিন্তা উঁকি মারতে থাকে মনের ভেতর। যদি কাজ শেষ করতে না পারি? তাহলে কী হবে? কিন্তু আমি তো মনস্থির করেই ফেলেছি। একটা জায়গায় এসে বাধা দিতে হয়, "না" বলতে জানতে হয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে ঐ "না" বলতে আমি পারিনা, বা জানিনা, কিংবা সময়মত বলতে পারি না, বলতে দেরি হয়ে যায়। অনেক সময় এতটাই দেরি হয়ে যায়, যে তখন ক্ষতি হয়ে যায়। দেশে ফিরে চাকরি বাকরি করতে গিয়ে দেখছি সবখানেতে বার্গেইন করে যেতে হয়। ঠিক মত বার্গেইন করতে না পারলেই লোকে তোমায় ঠকিয়ে নিতে পারে। ঠেলতে ঠেলতে এমন কোণঠাষা করে দেবে যে তোমার পালানোর সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আত্মরক্ষার একমাত্র পথ থাকে রুখে দাঁড়ানো। সেই রুখে দাঁড়ানোর স্টেজে যখন জিনিসটা পৌঁছে যায়, তখন যে রুখে দাঁড়ালো তাকে কেউ ভালো চোখে দেখবে না। কেউ জানতে চাইবে না আসল কারণটা কী। হ্যাঁ, আমারও "না" বলতে দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই এখন রুখে দাঁড়ানোর টাইম। ফিরতে আমাকে হবেই। কে আটকে রাখে দেখবো। কথা ছিল দুদিন একরাত। তার বেশি আর একটা রাত একটা দিন, ফেয়ার এনাফ। তার পরে জোরাজুরি করলে দড়ি ছিঁড়ে বেরিয়ে যাব। কী করবি আমার? বড়জোর তো চাকরিটা খেতে পারবি। তাতে বাল হবে আমার।
  • ... | 177.124.124.21 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:২৭619883
  • "দেশে ফিরে চাকরি বাকরি করতে গিয়ে দেখছি সবখানেতে বার্গেইন করে যেতে হয়। ঠিক মত বার্গেইন করতে না পারলেই লোকে তোমায় ঠকিয়ে নিতে পারে। ঠেলতে ঠেলতে এমন কোণঠাষা করে দেবে যে তোমার পালানোর সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আত্মরক্ষার একমাত্র পথ থাকে রুখে দাঁড়ানো। সেই রুখে দাঁড়ানোর স্টেজে যখন জিনিসটা পৌঁছে যায়, তখন যে রুখে দাঁড়ালো তাকে কেউ ভালো চোখে দেখবে না। কেউ জানতে চাইবে না আসল কারণটা কী।" -- অসাধারন!
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০619884
  • এই হোটেলে চমৎকার সব ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা। দুরকমের কর্ণফ্লেক্স, দুধ, কফি, চা, ডিমসেদ্ধ, স্ক্র্যাব্ল্ড এগস, আরো অনেক কিছু। এলাহী ব্যাপার। কিন্তু ঐ যে, মনের মধ্যে খচখচ করে। তাও পেট ঠেষে খেলাম।
    সাদা পুলকার এলো আমাদের তুলতে। সবাই দৌড়ে গিয়ে ঠেলাঠেলি করে দখল করে নিলো প্রথম ও দ্বিতীয় সারির সিটগুলো। আমরা জনা তিনেক মানুষ বসব পেছনের দিকে আড়াআড়ি করে মুখোমুখি। যাবার পথে ব্রতীনকে তুলে নেওয়া হবে কিছুটা দূর থেকে। পেছনের সিটের একটা প্রবলেম হচ্ছে যে গাড়ির গতি যে দিকে, সেদিকে তাকিয়ে থাকতে হলে ঘাড় একদিকে ঘুরিয়ে বসে থাকতে হবে। সঙ্গে আছে ঝাঁকুনি। একটু পরেই বমি পেতে লাগল। প্রায় দুঘন্টার পথ। মনে মনে নিজেকে দোষ দিচ্ছি কেন দৌড়ে ঠেলাঠেলি করে সামনের দিকের সীট নিলাম না। মাঝেমাঝে একটু ধাতস্থ হচ্ছি, আবার একটু পরে মাথা ঘুরছে। নিজেকে ভোলাচ্ছি, এটাই লাস্ট ট্রিপ। এইতো, আর দেড়ঘন্টাও বাকি নেই। এমনি করে করে চলতে চলতে অনেকটা যাবার পর, সামনের সীটের লোকেরা ইশ ইশ আহা এঃ এরকম শব্দ করে উঠল। গাড়ী চলছে ন্যাশানাল হাইওয়েতে। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম কালকের উল্টে যাওয়া ট্রাক যেখানে পড়েছিল, সেখানটা। তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম। আরো কিছুদূর যাবার পরে আবার সেই গতকালের মতো কখনো আনম্যান্ড উটের দল, কখনোবা কাছেপিঠের গ্রামের বাসিন্দাদের বিপজ্জনকভাবে রাস্তা পার হবার চেষ্টা। মনে হয় হাইওয়ের দুপারে দুটো গ্রাম। দুয়েকজন চেষ্টা করছে দৌড়ে রাস্তা পার হতে। হয়ত আর কোনো পথ নেই, আর কোনো শর্টকাট নেই। এভাবে চললে গাড়ি চাপা পড়তে কতক্ষণ।
    সাইটে পৌঁছে দেখি। কামেশ অলরেডি উপস্থিত। সে অন্য একটা কম্পিউটারে কীসব কাজ করছিল। এই কম্পিউটার গতকাল এঘরে ছিল না। আমি দুরুদুরু বুকে আমার গতকালের ফেলে যাওয়া কাজ কতদূর এগোলো দেখি। তাও ভাল এতক্ষণে কোনো এরর দেয় নি, কিন্তু কাজ থেমে রয়েছে পরবর্তী স্টেপের অপেক্ষায়। চুপচাপ কাজ করতে থাকি। কামেশ আজ অনেকটা সংযত গতকালের তুলনায়। বেশিক্ষণ এভাবে চলল না অবশ্য। একটা অদ্ভূত ধরণের এরর হলো। এতক্ষণে আমার টেনশন একদম কেটে গেছে। হলে হবে, না হলে না হবে মানসিকতা। টুক করে একটা ফোন করে নিলাম বাড়িতে। গতকাল রাতে হোটেল থেকে ফোন করা হয়নি। এমনিতেই বেশ রাত হয়ে গেছল। যদি সে ঘুমিয়ে পড়ে থাকে? খামোখা ফোন ধরতে গিয়ে ঘুমটা ভেঙে যাবে। আজ সে ফোন ধরেছে রিং হবার সঙ্গে সঙ্গে। জানিয়েছে সব ঠিক আছে। এটুকু শুনলেই মন ভাল হয়ে যায়। তারপর আবার জিগ্যেস করে, তোমার কাজ ঠিকমত চলছে তো?

    অনেক ঝামেলা ইত্যাদি হবার পরেও, আমার সমস্ত প্রেডিকশান নস্যাৎ করে দিয়ে সেদিন বিকেল পাঁচটার একটু আগেই গোটা ইন্সটলেশন কমপ্লিট। সেই আট দশ ঘন্টার ফেজটাও এই নতুন ভার্শানে অনেকটাই কম ছিল। বাঁচা গেল। আগামীকাল পোস্ট ইন্সটলেশন ফেজটা কম্পলিট করতে পারলেই কেল্লা ফতে। ওটা করতে বিশেষ সময় নেবে না। এখনই গাড়ি আসবার আগে অবধি কিছুটা করে ফেলা যায়।
    ঝপ করে ফোন করি হোটেলে। টিকিট কনফার্ম হয়েছে কি? জানা যায় হয়েছে। তবে বিকেলের নয়, সন্ধের ফ্লাইট।
    আমার মনটা এখন ফুরফুরে। কামেশের বস লোকটি একবার খোঁজ নিয়ে গেছে আমার কাজের ব্যাপারে।
    ফিরবার পথে অল্পের জন্য সামনের দিকের সীট মিস করে গেলাম মিউজিক্যাল চেয়ারের মত। ওদের বলেছি যে আমার মাথা ঘোরে, বমি পায়, তবু কেউ রাজি হয় না দুঘন্টা পেছনের সীটে বসে ঝাঁকুনি খেতে। কী দরকার? আমার কাজ তো প্রায় শেষ। দীপ্তজিৎকে জানিয়ে দিতে হবে কাল ফোন করে - কাজটা ফাইনালি নেমে গেছে।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১619885
  • স্ক্র্যাম্বল্ড এগস্*
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:৪৫619886
  • কোলকাতার ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছি আমি ডোমেস্টিক টার্মিনালের ওয়েটিং এরিয়ায়। আজকে দিনেরবেলা কাজের সময় ছিল সংক্ষিপ্ত। সকালবেলা সিস্টেম হ্যান্ডওভার করে দেবার একটু পরেই একজন দুজন করে আসছে আমার কাছে, কী যেন একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এরা সব আমার কোম্পানীরই কোলিগ, তাদের ট্রেনিং হচ্ছে অন্য কোনো একটা ঘরে। কৌশিকরা এসে বলল, দ্যাখোতো এরকম কেন হচ্ছে? একই ইউজার আইডি দিয়ে দুজন লগ অন করতে পারছিনা কেন? আমরা প্রায় দশজন আছি, পরে আরো লোক আসবে। বরাবর গোটা তিন চারেক ইউজার আইডি হলেই ট্রেনিংএর কাজ চলে যায়। ঠিকমতো ইন্সটলেশান হয়েছে তো?
    আমি একটু থতোমতো খেয়েও তড়িঘড়ি সামলে নিয়ে বলি, দেখছি।
    মোটামুটি দেখে নিয়ে যা বুঝি, তাতে নতুন ভার্শানে এরকমই ব্যবস্থা। প্রত্যেকজনের জন্য আলাদা আলাদা ইউজার তৈরী করতে হবে। এটাও একটা নতুন বৈশিষ্ট। ট্রেনিং এর লোকজন এতে অভ্যস্থ নয়, তারা মানবে কেন? না, না, তুমি আরেকবার দ্যাখো একটু।
    আরেকবার মাথা ঠাণ্ডা করে বুঝিয়ে দিলাম, দ্যাখো এরকমই লেখা রয়েছে, আমি গণহারে আপাতত গোটা দশবারো ইউজার বানিয়ে দিচ্ছি, পরে আরো দরকার হলে ঐ কামেশকে বোলো।
    সবাই নিমরাজি হয়ে খুঁতখুঁত করতে লাগল। কোথায় নতুন একটা জিনিস নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনা ঝামেলায় ইন্সটল করে দেবার জন্য একটু বাহবা পাবো, একটু উৎসাহ দেবে লোকজন, এরকম একটা আশা তো মনের ভেতরে থাকেই। তা অস্বীকার করবার কোনো মনে হয় না। কিন্তু, আপাতত সকলে ইউজার সমস্যা নিয়ে খুবই চিন্তিত। হয়ত তাদের মনে হয়েছে যে, আমার কাজে কোথাও একটা খুঁত রয়ে গেছে। তাদের পুরোনো অভ্যেস মতো ট্রেনিং সিস্টেমে "একই ইউজার দিয়ে সকলের লগইন" করবার ব্যাপারটা আর রইল না। এতে তাদের কাজের কিছু অসুবিধে হতে পারে হয়ত, সেসব আমার জানার স্কোপ নেই।
    দীপ্তজিৎকে ফোন করবার একটা দরকার ছিল। তাকে ফোনে জানালাম, কাজ হয়ে গেছে, কিছু সমস্যা হয়েছিল কিন্তু মিটে গেছে, এবং একটা নতুন জিনিস দেখা গেছে আপাতত। তাকে এই ইউজারঘটিত বৈশিষ্টের কথা বললাম।
    এর মধ্যে কৌশিককে ডেকে এনেছি সেখানে, কৌশিক, তুমি নিজে একবার কথা বলে নাও দীপ্তজিতের সঙ্গে।
    ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে। দীপ্তজিৎও মনে হয় একটু আশ্চর্যই হয় এরকম নতুন বৈশিষ্টের কথা জেনে। যদিও এখনো অবধি নতুন সিস্টেম চোখে দেখেনি, কিন্তু জানালো যে সে খোঁজখবর নেবে।
    লাঞ্চের একটু পরেই সকলকে বিদায় টিদায় জানিয়ে আমি আলাদা একটা গাড়িতে করে দিল্লি অভিমুখে রওনা হই। গত দুই থেকে আড়াই দিনে কামেশ কথা বলেছে খুবই কম আমার সঙ্গে। তার মানে কিন্তু এরকম নয়, যে সে স্বল্পভাষী। তাকে ইতিমধ্যেই কয়েকজনের সঙ্গে অনর্গল কথা বলতে দেখা গেছে। যখন রান্নাঘরসদৃশ সার্ভাররুম থেকে বেরিয়ে আসছি কামেশও আমাকে এগিয়ে দিতে কয়েকপা হেঁটে এলো সিঁড়ি কাছটায়।
    সে একটু ভেঙেছে এতক্ষণে। আমার ফোন নম্বর চাইছে। আমার তো টেবিল বলে কিছু নেই অফিসে, যে যেখানে পারি বসি, টেলিফোন বলেও কিছু নেই। তাকে বলি, গোটা তিনেক ফোন নম্বর আছে অফিসের, এই নাও কার্ড, রিসেপশানে আমার নাম বললেই যোগাযোগ করিয়ে দেবে। তবে মনে হয় না সেরকম কোনো প্রয়োজন হবে বলে। তুমি নিজেই পারবে সামলাতে যদি কোনো সমস্যা হয়।
    সে হাসিমুখে আমাকে বিদায় দেয়।
    তারপরে বেশ কয়েকঘন্টা কেটে গিয়েছে। তিনটে দিন দুটো রাত কাটিয়ে আমি ডোমেস্টিক টার্মিনালের ওয়েটিং এরিয়ায় অপেক্ষারত। এখানে বেশ ভিড়। কোলকাতাগামী যাত্রী আছে বলে, বাংলাভাষা শোনা যাচ্ছে। বসবার চেয়ারের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। কাছাকাছি কোথাও একটা চেনা গলার স্বর কানে এলো। আসলে ঠিক চেনা গলার স্বর নয়, চেনা কিছু শব্দ, কিছু চেনা বাক্যবন্ধ, যেগুলো আমাদের কোম্পানীতে শোনা যায় প্রায় প্রতিদিন নানাজনের মুখে। কথাগুলো লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাতেই চোখে পড়ে একটু দূরে আমাদের কোলকাতা অফিসের জনাদুই হর্তাকর্তা ব্যক্তিকে, সঙ্গে আরো জনা দুই কম ইন্ফ্লুয়েনশিয়াল কর্মচারী। দুইয়ের বেশিও হতে পারে, তবে তাদের দেখা যাচ্ছে না এই ভিড়ের ঠেলায়। আমাদের অফিসে দাদাদিদি কালচার। সিনিয়রদের দাদা বা দিদি বলার রেওয়াজ। রাজদীপদা এবং বিশ্বজিৎদার সঙ্গে নানারকম কথা বলে চলেছে দুজন। একজন গৌতম, অন্যজনকে আমি দেখেছি আগে কিন্তু নাম জানি না। ওরা আমাকে দেখেছে কিনা জানি না। আমি মাথা ঘুরিয়ে নিই। এখন উঠে গিয়ে ওখানে আলাপ জমাতে গেলে আমার বসবার জায়গাটুকু বেদখল হয়ে যাবে। সৌজন্য দেখাতে ভিড় ঠেলে ঐ অবধি গিয়ে অল্প হেঁ হেঁ করা ছাড়া আর তো কোন বক্তব্য রাখতে পারব না আমি। কর্পোরেট জগতের ভোকাবুলারি এখনো শিখে উঠতে পারিনি। ওই সব বাক্য বন্ধ মুখস্থ করবার নয়, ওগুলো বলবার বা ওরকম ডায়ালগ চালাবার প্র্যাক্টিস নেই আমার। তারপর, এমনিতেই আমি ক্লান্ত। শুধু গত দুদিনের কাজের জন্য নয়, শুধু এত যাতায়াত করতে হচ্ছে বলে নয়, আমার ক্লান্তি আসে আরো অন্য কারণে, যেটা আমি ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারি না। সেখানেও শব্দের মানের ভোকাবুলারির অভাব ঘটেছে মনে হয়। টাকার প্রয়োজনেই একটার পর একটা চাকরি খুঁজতে হয়েছে। অলরেডি জেনে গেছি যে টাকার চেয়ে নিরাপদ নির্ভরতার উপায় বিশেষ কিছু আর পড়ে নেই। কিন্তু কতটা নিরাপত্তা আমার জন্য ফেয়ার এনাফ? দিনকে দিন কতটা নির্ভরশীল হয়ে চলেছি টাকার ওপরে? এই সবই ভাবছি বসে বসে। সবাই মিলে এত কথা বলছে চারদিকে, তার ওপরে অ্যানাউন্সমেন্ট তো আছেই। আমাদের ফ্লাইটের ঘোষণা হয়ে যায়। কাচের দরজা খুলে দেবে। প্রথমে উঁচু ক্লাসের প্যাসেঞ্জারদের যাবার ব্যবস্থা। বাস আসবে। গোটা দুয়েক বাস তো আসবেই। আমি এখন ঐ ভিড়ের দিকে ঠেলাঠেলিতে যাবো না। অফিসের হর্তাকর্তারা, সাঙ্গোপাঙ্গোরা চলে যাক আগে। একটু ফাঁকা হোক। পরের বাসে যাবো।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:১৭619887
  • ভেজা ফ্রাই
    ------------

    আমাদের অফিসে অনেকগুলো দেবাশিস। বাংলায় এদের নামের বানান নানারকম হতে পারে, কিন্তু ইংরিজিতে হুবহু এক। আমি আপাতত গোটা পাঁচেক দেবাশিসের সঙ্গে ডিরেক্টলি বা ইনডিরেক্টলি পরিচিত হয়েছি। শুনেছি আরো আছে। অফিসের সিস্টেমে অ্যাড্রেস লিস্টে সার্চ মারলে প্রচুর চেনা অচেনা দেবাশিসকে পাওয়া যাবে। আমার চেনা পাঁচজনের মধ্যে তিনজন দাদা শ্রেণীর, অর্থাৎ শুধু বয়সে বড়ো নয়, এরা চাকরির পদমর্যাদায়ও বেশ উঁচু ধাপের। এদের মধ্যে একজনতো ডিরেক্টরও। এই তিনজনের যেকোনো একজনকে রেফার করে কথা বললে বুঝতে অসুবিধে হতে পারে, কারণ তিনজনেই দেবাশিসদা। তাহলে উপায়? মোটামুটি একটা প্যাটার্ণ ফলো করে লোকেরা এই তিনজনকে ডিফারেন্শিয়েট করতে পারত। ডিরেক্টরকে "আমাদের দেবাশিসদা" বলে, আরেকজন জাঁদরেল প্রোজেক্ট ম্যানেজারকে শুধু দেবাশিসদা বলে এবং তৃতীয়জনকে "দেবাশিসদা মানে ডক্টর দেবাশিস মুখার্জি" বলে রেফার করা হতো। এই তৃতীয়জন উচ্চপদস্থ কর্মচারী এবং প্রোজেক্ট ম্যানেজার হলেও, এর দাপট অপেক্ষাকৃত কম ছিল। শোনা যায় একসময়ে এই তৃতীয় দেবাশিসদা যাদবপুরে প্রোফেসারি করলেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সেসব ছেড়ে এই কোম্পানী জয়েন করে। এবং তারও আগে এই দেবাশিসদার একটা রাজনৈতিক হিস্ট্রিও আছে। দেবাশিসদা দাবী করত, যে সে এক্স নকশাল, যদিও জেলে যায় নি, তবে চেতলায় পৈত্রিক বাড়ি হওয়ায় কিশোরকাল থেকেই নকশালদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ক্রমশঃ নকশাল বনে যাওয়া। তা এসব শুনে সবাই আড়ালে হাসাহাসি করত, বা হয়ত এসব কারণেই এই দেবাশিসদা প্রোজেক্ট ম্যানেজার হিসেবে সেরকম খ্যাতি অর্জন করতে পারে নি। কোম্পানীর অ্যাগ্রেসিভ অ্যাপ্রাইজাল প্রোসেসের ঘোড়দৌড়ে মানুষটা কীভাবে চাকরি বাঁচিয়ে বছরের পর বছর টিঁকে থাকত বা তখনো অবধি টিঁকে ছিল, সে এক সন্দেহজনক ব্যাপার। আড়ালে এই দেবাশিসদার আরেকটা নাম ছিল, "নকশাল দেবাশিসদা"। এসমস্ত খবরাখবর আমার জানার কথা নয়, কারণ এগুলো জানবার জন্য কোলিগদের সঙ্গে যতটা মেলামেশা এবং ভাবের আদানপ্রদান করতে হয়, তার যোগ্যতা বা সুযোগ কোনোটাই আমার ছিল না, কিন্তু নিয়তিঘটিত কারণে অনেক কিছু ওভার হিয়ার করে ফেলতাম, বা হয়ত লোকজন এসব আলোচনার সময়ে আমাকে বেনাইন এলিমেন্ট হিসেবেই ট্রিট করত। সেরকম একটা আলোচনা আমার খুব কাছেপিঠেই চলছে এরকম সময়ে কানে এলো যে, দেবাশিসদার চাকরিটা টিঁকে থাকবার মূল কারণ সে ছোরা রিভলভার এসমস্ত খুব ভাল চালাতে জানে, নকশাল পিরিয়ডে কয়েকটা মার্ডারও করেছে। এখন একে চাকরি থেকে তাড়ালে, সে রিভেঞ্জ নেবেই। প্রাণের ভয়ে ডিরেক্টররা একে কিচ্ছু করতে পারছে না। দিনকে দিন এরকম আলোচনা শুনে আমিও তৃতীয় দেবাশিসদার থেকে একটু দূরত্ব রেখে চলতাম। তখনো তিনমাস হয়নি চাকরিতে। তা একদিন সকালে দেখি সেই দেবাশিসদা আমার বসার জায়গার দিকটায় এগিয়ে আসছে। মোটামুটি কাছাকাছি এসে বলল, ও, তুমি আজ এখানে বসেছো? আমি তোমাকে এতক্ষণ চারতলায় খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম। কী করছ এখানে?
    না মানে সেরকম কিছু না।
    ওঠো ওঠো। ব্যাগ ফ্যাগ নিয়ে এসো আমার সঙ্গে।
    কো_কোথায় দেবাশিসদা?
    আ___হ! চলোই না এখন। কাজ আছে, কাজ।
    মানে প্রোজেক্ট?
    আমি একটু আশার আলো দেখি। দেবাশিসদা কিছু বলে না। একটু মিটমিটিয়ে হাসে। অফিসের নীচে একটা ট্যাক্সি নিই আমরা। ড্রাইভার মিটার ডাউন করে স্টার্ট নিলে, দেবাশিসদা বলে, এক্সাইড মোড়।
  • Arpan | 101.214.5.87 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:৩২619888
  • ই কী রে!

    সব চেনা লোকজন বেরিয়ে পড়ছে। ঃ)))
  • sch | 132.160.114.140 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:৪১619889
  • মানে নাম কি বদলানো হচ্ছে না? নাকি বদলান সত্তেও চেনা যাচ্ছে
  • Arpan | 101.214.5.87 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:৪৭619890
  • গল্পটা চলুক। আমি মুখে কুলুপ আঁটলাম।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৫:০৭619892
  • দেবাশিসদা বসেছে ড্রাইভারের ঠিক পেছনে। আমি পরে উঠেছি, তাই বাঁদিকে জানলা ঘেঁষে বসে রয়েছি এবং স্লাইট নার্ভাস তাই জড়োসড়ো। চিংড়িহাটার মোড় পেরোতেই ট্যাক্সি লেফ্ট টার্ণ নিলো এবং সকাল সাড়ে নটার রোদ ডিরেক্ট এসে পড়ল আমার ওপরে। জানলার কাচটা নামানো যাচ্ছে না। ল্যাগব্যাগে চেহারার দেবাশিসদা সরে এসে ছোরা রিভলভার চালানো হাত দিয়ে কাচ নামানোর হাতল ঘোরানোর চেষ্টা করতে লাগল। আমি সিঁটিয়ে বসে আছি। হাতলটা খুলে বেরিয়ে এলো হাতে। কাচ একটুও নামল না। ড্রাইভারকে জোর ধমক দিলো দেবাশিসদা। ড্রাইভার গাড়ি সাইড করে থামালো বাইপাসের ওপরেই। তারপর একটু কসরৎ করতেই কাচটা পুরো নেমে গেল। সায়েন্স সিটি অবধি গজগজ করতে করতে চলল দেবাশিসদা। তারপরে আবার রাইট টার্ণ রোদ সরে গেছে, কিন্তু অফিস আওয়ারের ট্র্যাফিক জ্যাম, ড্রাইভারের সঙ্গে ফের তর্ক বিতর্ক ইত্যাদি হয়ে চলেছে, সেই সঙ্গে আমরা লোয়ার সার্কুলার রোড ( মতান্তরে এজেসিবোসরাড) ধরে এগোচ্ছি গন্তব্যের দিকে। মোড়ের কাছে গাড়ি থামানো যাবে না, এই নিয়ে আরেকপ্রস্থ ঝামেলা বিবাদের পর লর্ড সিনহা রোডের ভেতর গাড়ি ঢুকিয়ে ট্যাক্সিওয়ালা গাড়ি থামিয়ে দিলো। তার ট্র্যাফিক সার্জেন্টের ভয় আছে।
    দেবাশিসদাও দমবার পাত্র নয়, আমি চেতলার ছেলে, তুমি আমাকে সার্জেন্ট দেখাচ্ছো?
    যাইহোক, ড্রাইভার আর যাবে না। ভাড়া মিটিয়ে আমরা বাকি রাস্তাটা হেঁটে মেরে দিলাম। মোড়ের মাথায় মস্ত বিল্ডিং, সেখানেই আমাদের কাজ। মানে এরাই আমার প্রথম ক্লায়েন্ট। লিফটের বোতাম টিপবার পরে দেবাশিসদা আমাকে জিগ্যেস করল, তুমি এর আগে বড়োসড়ো ইন্সটলেশানের কাজ করেছো তো?
    না। এখনো অবধি একটাই করেছি, ছোট সিস্টেম, অফিসের টেস্ট সার্ভারে।
    দেবাশিসদা কী যেন একটু ভাবল। তারপরে বলে, ও ঠিক আছে, আমি দেখিয়ে দেবো, এভাবেই কাজ করতে করতে শিখে যাবে। কটা বাজল বলো তো? ধুরন্ধরের সঙ্গে কথা বলতে হবে আগে।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৬:৩৯619893
  • এই ঘটনার অনেক পরে যখন ইয়োরোপে পাকাপাকি বসবাস করতে এলাম, তখন "কালচারাল শক" বলে একটা শব্দবন্ধের মুখোমুখি হই। স্থানীয় লোকজন কথাচ্ছলে জিগ্যেস করত কোনো কালচারাল শক পাচ্ছি কিনা। শব্দবন্ধটা আগে জানতাম না, কিন্তু এই এখন লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে, যে শুধু ইয়োরোপ অ্যামেরিকা কেন, বা অন্য দেশ কেন, ভারতবর্ষের মধ্যেই আমরা নানারকম কালচারাল শকের মুখোমুখি হয়েছি। যাই হোক, ঘটনায় ফিরে যাচ্ছি।
    লিফটে করে সেই ক্লায়েন্ট সাইটে পৌঁছনোর পরে যে লোকটি আমাদের আপ্যায়ন করে সার্ভাররুমে নিয়ে গেল, সেই হ্যান্ডসাম যুবকের নাম ধুরন্ধর। কারোর নাম যে এরকম হতে পারে তা আমার জানা ছিল না। কালচারাল শক অনুভব করলাম। লোকটি আবার ডক্টর মুখার্জি বলতে অজ্ঞান। আমি ডক্টর মুখার্জির সাইড কিক্। ধুরন্ধর আমাদের দরকারি যা যা দেখাবার দেখিয়ে দিল। সার্ভাররুমে প্রচন্ড ধুলো। এরকম একটা ট্র্যাফিকবহুল বড়োরাস্তার মোড়ের ওপর অফিস, তা সে যত উঁচু তলাতেই হোক না কেন ধুলোর প্রকোপ অগ্রাহ্য করা যায় না। ঘরের এসি টা সারানো হয় নি, তাই কাচের জানলা খোলা রাখতে হয়েছে। দেবাশিসদা এই ধুলের ব্যাপারে একটু কম্পলেইন করল ধুরন্ধরকে। সে চলে গেলে আমাকে বলল, নাও এবার দ্যাখো কীভাবে ইন্সটলেশনটা শুরু করা যায়। পাশে দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে গাইড করবে, এরকমই ভেবে নিয়েছি আমি। সিস্টেম অন করাই ছিলো, খুচখাচ এটা ওটা চেক করছি, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি দেবাশিসদা তার নিজস্ব ল্যাপটপ অন করে একটু দূরে বসে আছে। ভাবলাম একটু ওয়েট করি। তারপরে দেবাশিসদা ল্যাপটপের ঢাকনা নামিয়ে রেখে ঘরের বাইরে কোথায় চলে গেল। অপেক্ষা করছি। ভাবলাম টয়লেট গেছে। বা হয়ত ধুরন্ধরের সঙ্গে কথা বলছে। আরেকটু ওয়েট করলাম। তারপরে আমিও সার্ভাররুমের বাইরে এসে দেবাশিসদাকে খুঁজতে লাগলাম। বেশিদূর যেতে হলো না, ছোট্ট করিডোরের এক কোণে জানলার সামনে দাঁড়িয়ে দেবাশিসদা নীচের দিকে তাকিয়ে আছে। নীচে নদীর মতো বয়ে চলেছে ট্র্যাফিক। শুধু ট্র্যাফিক দেখা নয়, তার এক হাতে রয়েছে মোবাইল ফোন, কানের সঙ্গে চেপে ধরা, সম্ভবত কেউ রয়েছে ফোনের অন্যপ্রান্তে। আড়চোখে আমাকে দেখে নিয়ে দেবাশিসদা ফোনে বলল, হ্যাঁ এইত রয়েছে এখানে, কথা বলবে? বলো।
    এবার আমার হাতে মোবাইল ফোনটা দিয়ে বলল, নাও কথা বলো।
    জীবনে এই প্রথম মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছি। বেশ ভারী জিনিস, হাত কেঁপে যায়। কার সঙ্গে কথা হচ্ছে কিছুই জানি না। আমি কানে ফোন চেপে বলি, হ্যালো।
    ওপাশ থেকে এক পুরুষ কণ্ঠ ঝাঁজিয়ে প্রশ্ন করে, তুমি ওখানে কী করছ?
    আমি দেবাশিসদার দিকে তাকাই। বলি, কে?
    ওপ্রান্ত থেকে আবার ঝাঁজালো গলা, আমি সিদ্ধেশ্বর। তুমি কোন আক্কেলে আমাদের কারোকে না জানিয়ে দেবাশিসদার সঙ্গে চলে গেলে?
    আমি ব্যাপারটা কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। তবে কি দেবাশিসদার সঙ্গে এখানে আসাটা আমার ঠিক হয়নি? কিন্তু সেটা আমি জানব কেমন করে? অফিসের কোনো কাজে অফিসের সিনিয়র কোলিগের সঙ্গে একটা ক্লায়েন্টের অফিসে এসেছি। এতে এত উত্তেজিত হবার কী আছে আমার মাথায় ঢুকছে না। আমরা কি নাবালক প্রেমিক প্রেমিকা নাকি, যারা ঘর ছেড়ে পালিয়েছে জানতে পেরে বাপমায়েরা চিন্তিত হয়ে পড়বে? সিদ্ধেশ্বর এত মেজাজ দেখাচ্ছে কেন? ওদিকে আমার হাতে ফোন দিয়ে দেবাশিসদা সার্ভাররুমে ঢুকে গেছে। সিদ্ধেশ্বরের প্রশ্নের কোনো উত্তর আমার জানা নেই, তবে বুঝতে পারছি যে কোনো একটা গণ্ডগোল আছে। মোবাইলফোনে অনভ্যস্থ আমি দৌড়ে গিয়ে দেবাশিসদাকে ফোনটা ফিরিয়ে দিতেও পারছিনা। যেন একটা অদৃশ্য তার দিয়ে বাঁধা রয়েছে ফোনটা জানলার পাশে। আমার কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সিধু এবার ঝাঁজ কমিয়ে কথা বলে।
    শোনো, এই প্রোজেক্টে তোমার নাম নেই। কাজটা দেবাশিসদার একার করার কথা। একা করতে ভয় পাচ্ছে বলে তোমাকে তুলে নিয়ে গেছে।
    "তুলে নিয়ে গেছে"! এই বাক্যটাও বিচ্ছিরি শোনালো। ওদিক থেকে সিদ্ধেশ্বর প্রশ্ন করছে, কী হলো, বুঝতে পারছ?
    তাহলে এখন কী করব বলে দাও। অফিসে ফিরে যাচ্ছি তাহলে।
    না, না, ওয়েট। তুমি ওখানেই থাকো। যতটা পারবে করবে। কালকেও ওখানেই ডিরেক্ট চলে যেও, কাল আমি যেতে পারি।
    এই অব্দি কথাবার্তা হবার পরে আমি সার্ভাররুমে ঢুকে দেবাশিসদাকে মোবাইলটা ফেরৎ দিয়ে দিলাম।
  • | 213.132.214.88 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৭:৪০619894
  • বোঝো!!

    টোটাল লোকজন সব!! ঃ)
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২০:২৪619895
  • ধুরন্ধর করিৎকর্মা লোক। তার শুধু একজন গাইড লাগে। এইযে পাশে রয়েছি আমরা মানে দেবাশিসদা ও আমি, এতেই সে মনোবল পেয়ে গেল। আমরা পেছন থেকে তাকে উৎসাহ দিচ্ছি এবং সে টকাটক ফাইল সিস্টেম মাউন্ট করে যাচ্ছে। গুছিয়ে পারমিশান টারমিশান দিয়ে সে প্রিইন্সটলেশন স্টেজ কম্পলিট করে ফেলল। এসব দেখে দেবাশিসদাও উৎসাহ পেয়ে গেলেন। "দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ" বলতে যে কী বোঝায়, সেটা আমরা ফিল করতে পারছি। "যায় যাবে যাক প্রাণ" টাইপের মোটিভেশন পেয়ে গেছি আমরা। ইন্সটলেশন শুরু হয়ে গেল। সে এক তুরীয় অনুভূতি। সময় কোথা দিয়ে চলে যাচ্ছে টের পাওয়া যাচ্ছে না।
    ক্রমশ লাঞ্চ টাইম ঘনিয়ে এলো। ঘনিয়ে এলো বলাটা ঠিক নয়, কারণ তখন প্রায় আড়াইটে তিনটে বাজে। টিপিক্যাল লাঞ্চ আওয়ার পেরিয়ে গেছে। নীচে অফিস পাড়ায় খাবার সাপ্লাই করা হকারেরা ডেচকি তুলে নিয়ে চলে গেছে অলরেডি। আছে কিছু মিষ্টির দোকান, যারা সর্বক্ষণ খোলা থাকে। লাঞ্চ ও ডিনার মধ্যবর্তী এ এক অদ্ভূত সান্ধ্য টাইম স্লট। এরকম সময়ে যা পাওয়া যায় তাকে বলে স্ন্যাক্স। উল্টোফুটে হলদিরামের দোকান রয়েছে, কিন্তু দেবাশিসদার একদম পছন্দ নয় ভুজিয়াওয়ালার দোকান। অবশেষে একটু হাঁটাহাঁটি করে আমরা ক্যাথলিনস এর মিষ্টির দোকানে ঢুকলাম। মাইক্রোওয়েভ থেকে গরম করা চিকেন প্যাটিশ ও মুখ মিষ্টি করবার জন্য চকোলেট পেস্ট্রি। গলা ভেজানোর জন্য কোল্ড ড্রিংকস। ধুরন্ধর দাম মিটিয়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু দেবাশিসদা তাকে সে স্কোপই দিলো না। তবে কথা রইল আগামীকাল ধুরন্ধর আমাদের একটা ঠিকঠাক লাঞ্চ খাওয়াবে।
    খাওয়া দাওয়ার পাট শেষ হবার পরে আমরা ফের ক্লায়েন্ট সাইটের দিকে যাচ্ছি, এমন সময় দেবাশিসদা বলল, দ্যাখো আমাকে ছাড়াই তোমরা আজ বাকিটা কন্টিনিউ করো। এমনিতেই আজ অনেকটা কাজ এগিয়ে গেছে, কাল সকালে আমি এখানে চলে আসছি।
    ধুরন্ধর আমাকে বলল, তাহলে আপনিও এখন চলে যান, আমি আর একটু পরেই বেরিয়ে যাব।
    ধুরন্ধর অফিসে ঢুকে গেলে দেবাশিসদা আমাকে বলল, কাল সিধু আসবে বলেছে। আমরা যে আজ একটু আগে আগে বেরিয়ে গেলাম সেটা আবার ওকে বলতে যেও না যেন।
  • avi | 37.63.185.93 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২০:৫৩619896
  • আহা, এক্সাইডের পাশের এই সমস্ত গলিঘুঁজিগুলো গত দশ বছরে কত যে ঘুরে বেড়াই, বেশ ভালো লাগছে পড়তে।
  • dc | 120.227.225.59 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২১:০৮619897
  • এক্সাইডের মোড়ের কাছেই একটা গলিতে কলকাতার সেরা মোমো পাওয়া যায়।
  • avi | 37.63.177.213 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২১:১৫619898
  • হ্যাঁ, পরপর তিনটে - মোমো প্লাজা, অর্কিড প্লাজা আর হামরো মোমো। একটু আগের গলিতে (যেখানে ঢুকলে আমার প্রতি সন্ধ্যায় মনে হয় সামনের বাঁকে শশীবাবু টলতে টলতে বেরিয়ে এসে সিং, সিং বলবেন) টিবেটান ডিলাইটস। সেকালে ২৪ ঘন্টা কাজে থাকলে থুকপা খেয়ে ডিনার করা হত এগুলোতে।
  • Robu | 11.39.56.237 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২২:২৪619899
  • টিবেটান ডিলাইটসটাই শুনেছি সবচেয়ে ভাল, নয় কি?
    কুমড়োদির লেখা অসাম হচ্ছে, চালিয়ে যান।
  • dc | 132.174.153.177 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২২:২৬619900
  • টিবেটান ডিলাইটস। কোন কথা হবেনা।
  • avi | 37.63.177.213 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২২:২৯619901
  • হামরো মোমোর পর্ক মোমো ভালো, অর্কিডের থুকপা ভালো, টিবেটান ডিলাইটসের বাকি ওই ফ্রায়েড রাইস হাবিজাবি সাইড ডিশ ইত্যাদি ভালো। মোমো অবিশ্যি মোমো প্লাজাও ভালো করে। টিডি আর হামোতে বসার জায়গা খুব কম।
  • paps | 125.187.32.50 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৯:৪২619903
  • কুম ড়োদি আরো লিখুন
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন