এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • চাগ্রীর গপ্পো

    সে
    নাটক | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ | ২১০৫২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 188.83.87.102 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪১652308
  • ক্রিকেটারের নামটা মাথার মধ্যে ঘোরে, দোকানদার সিডিটা খুঁজছে, এরই মধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানির মতো আমার মনে পড়ে যায় একটা জিনিস। একটা নাম। সেই ব্যাঙ্কটার নাম! কদিন থেকেই ভাবছিলাম, এম দিয়ে শুরু, ম দিয়ে ম দিয়ে কোন ব্যাঙ্কের নাম হয়? এখন মনে পড়ে গেছে। ফটিকচাঁদের মতো আমিও উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠতে পারি - সব মনে পড়ে গেছে হারুন্দা!
    কিন্তু সব তো মনে পড়েনি। ব্যাঙ্কের নামটা মনে পড়লেও, সেটা এখনকর নাম নয়। পুরোনো নামটা মনে পড়েছে। নতুন নাম হয়েছে ব্যাঙ্কটার সেটা জানি। সেই নতুন নামেই অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম। তবু কেন যে পুরোনো নামটাই মনে পড়ল, কে জানে। অবশ্য একটা নাম জানা থাকলে অন্য নাম বের করতে অসুবিধে হবে না মনে হয়।
  • . | 59.207.222.236 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৮:১৩652309
  • মার্কেনটাইল ব্যাঙ্ক তো এইচএসবিসি হয় অনেক আগে।
  • de | 24.139.119.172 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ১২:৪৯652310
  • তাপ্পর?
  • সে | 188.83.87.102 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৪:১০652311
  • এই তোরা খবর শুনেছিস?
    দেবরূপ খুব রহস্যের ভঙ্গীতে বলে। শনিবারের সকাল। আজই আমাদের আলস্যের শেষদিন। সোমবারেই তো আবার নবাব্দা ব্যাক করবে।
    কোন খবর? পেপারে বেরিয়েছে কিছু?
    স্থানীয় সংবাদ।
    রেডিওয়?
    আরে না। বুড়োকে কাল দেখিনি, আজও না।
    আমরা চুপ করে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছি ও কী বলবে তার অপেক্ষায়।
    কোনো খারাপ খবর কিছু?
    ম্‌মারা গেছেন?
    না। বুড়োর ছেলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। হস্‌পিটালাইজ্‌ড্‌।
    সেকী!
    কবে?
    কখন?
    পরশুই তো দেখা হোলো। টাকা নিয়ে এলাম।
    এখন কেমন আছে?
    সেটা ঠিক জানি না। অফিসে ঢুকবার সময় ওদের ওখানে কাজ করে যে ছেলেটা সে ই বলল।
    আমরা অল্পক্ষণ চুপচাপ থাকি, তারপরে যেই কে সেই ঠাট্টা ইয়ার্কি শুরু হয়ে যায়।
    কী এঁকেছিলি বলতো? তোর ছবি দেখেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেল!
    এত দাম হেঁকেছিলি ছবির যে দাম শুনেই হার্টে ধাক্কা লেগেছে?
    সব তপনের দোষ।
    সব তোর দোষ।
    হা হা হি হি চলতে থাকে।
    তপন বিষন্ন হাসি হাসে।
    শুনবি কত দিয়েছে? সাতশো টাকা। ঐ ফ্রেমের দামই আমার পড়েছে ছশো, ক্যানভাস, রং এসবের কস্ট শুনলে তো বিশ্বাসই করবি না। আমার পরিশ্রমটাতো বাদই দিচ্ছি।
    আমরা চুপ করে শুনি।
    আমি নিজে থেকে কোনো দাম চাইনি। বলেছিলাম আপনি যেমন ভালো বুঝবেন দেবেন। তখন সাতশো দিলো। যাক্‌গে। এখন এসব আলোচনা করাটা ঠিক নয়। সেরে উঠুক, সুস্থ হয়ে যাক এটাই চাই। এইটাই চাইব। টাকা পয়সা তুচ্ছ জিনিস। আসবে যাবে।

    কাজরী একটু পরে ঢোকে অফিসে।
    কোন হস্‌পিটালে আছে? কোঠারী? ক্যালকাটা হস্‌পিটাল? উড্‌ল্যান্ড? আমাদের দেখতে যাওয়া উচিৎ।
    কিন্তু অনেক খোঁজখবর নিয়েও জানা যায় না হাসপাতালের ঠিকানা।
  • ঐশিক | 24.140.33.186 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৮:৩৩652312
  • দারুন লেখা,
  • সে | 188.83.87.102 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ২০:২০652313
  • কুমার শানুর প্রোগ্রাম আছে সল্ট লেক স্টেডিয়ামে। কাজরী নাকি কার্ড দিতে পারে। চাই কারো? আমার চাই না। রোববার জুদাই দেখেছি। আর নয়। আর মাগনার জিনিস নেবো না। কাজরী সেই ক্রিকেটারের থেকে প্রেজেন্ট নিয়েছে। কটনের সালোয়ার সুট। খুব সুন্দর এম্ব্রয়ডারী করা। কিন্তু ফ্রীতে কিছু হয় নাকি এই দুনিয়ায়? খুব আপনজন ছাড়া বিনামূল্যে এভাবে জিনিস পাওয়া যায়? দাম চোকাতে হয় না? নেওয়া উচিৎ কি অনুচিৎ সেসব তো অনেক পরের কথা।
    বাসবীর সঙ্গে একবার এই নিয়ে কথা হয়েছিলো। দেয়ার ইজ নো ফ্রী রাইড।
    নেইই তো। বাসবীও স্বীকার করে। এই যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে, বিয়ে হয়ে গেলেও ঐ একই কথা। আস্তে আস্তে বুঝেছি সবকিছুর সঙ্গেই প্রাইস ট্যাগ থাকে। এমনি এমনি কেউ কিচ্ছু দেয় না।
    তাও ওরা টিকিটের বায়না করে রাখল। কেউ একটা কেউ দুটো। আমি এসব জলসার ফ্যান নই। কুমার শানুরও নই।
    এদিকে আমার এক উপদ্রব শুরু হয়েছে। কদিন যাবদ বাড়ীতে রাত্রিবেলা উটকো ফোনকল আসছে। একটাই লোক। প্রথমে গলা শুনে মনে হয়েছিলো মাতাল হবে হয়ত। কিন্তু সে সারারাত ফোন করে করে অশ্রাব্য কথাবার্তা বলে চলেছে আমার নাম করে করে। আমার নাম জানে, ফোন নম্বর জানে- যদিও এই ফোন আমার নয়, কোথায় চাকরি করি সেটাও জানে। অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রস্তাব দিচ্ছে। নিজের নাম বলছে না। পুলিশ যাব বললে আরো খারাপ খারাপ কথাঅ বলছে। বলছে ও নিজেই নাকি পুলিশ। ফোন কেটে দিলে আবার ফোন করছে। তখন বাধ্য হয়ে লাইন কেটে রিসিভার নামিয়ে রাখছি।
    রোজই ভাবি অফিসে এসে এটা কারো সঙ্গে আলোচনা করব, কিন্তু রোজই ভুলে যাই। এই চাকরিতে জয়েন করবার পরেই নিশ্চয় সেই লোকটা আমার ব্যাপারে জেনেছে।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ২১:১০652314
  • কাজরীর চেনা কোন দাদার থ্রু টিকিট আসবে। তিনি আছেন রাইটার্সে। আমাদের একের পর এক অবাক হবার পালা। নবাব্দা অবশ্য এসব আলোচনায় নেই। শিলিগুড়ি গ্যাংটক এসব ঘুরে এসে খুবই ক্লান্ত। বিজনেস কিছু আসবে নির্ঘাৎ। এত করে যখন রায়দাকে নিয়ে যাওয়া হোলো।
    রায়দাকে নাকি এরপর থেকে ফ্লাইটে নিয়ে যাওয়াই সস্তার ও সুবিধের অপশান। যাবার সময় ট্রেনে উঠেই হাতে বোতল ধরিয়ে দিতে হয়েছে। দামী বোতল। সারারাত তিনি পান করেছেন ও তৎসহ লেকচার। মাঝে মধ্যে চেঁচামেচি। কম্পার্টমেন্টের অন্যান্য যাত্রীরা তাদের অসুবিধার কথা বলেছে। তারপরে সম্পূর্ণ মাতাল হয়ে গিয়ে তিনি ঘুমোতে যান। তবে একটাই সুখবর কোনো বমি টমি করেন নি। এটা হচ্ছে রায়দার বৈশিষ্ট। যত মদই খান না কেন, নো বমি। ফিরবার সময় অবশ্য মাতলামির সুযোগ ছিলো না। পুরো লোড হয়েই ফ্লাইটে উঠেছিলেন, কিন্তু এত অল্প সময়ের ফ্লাইটে বিশেষ কোনো সীন ক্রিয়েট করতে পারেন নি। বোঝা যাচ্ছে যে, অনেক ঝক্কি পোয়াতে হয়েছে নবাব্দাকে। কিন্তু আর কী উপায়? এই লাইনে লোকজন মোটামুটি এইরকমই।

    এই অফিসের কেউ এইধরনের বদমায়েসী আমার সঙ্গে করবে বলে বিশ্বাস হয় না। সকলে আমার নম্বরও জানে না। আর কে জানে আমার বাড়ীর ফোন নম্বর? কাকে দিয়েছি? আমার তো কোনো ফোন আসে না। কে হতে পারে? পুষ্পিতাকে দিয়েছিলাম নম্বর। কিন্তু ওতো মেয়ে। যে লোকটা ফোন করছে সেতো সম্পূর্ণ অপরিচিত কণ্ঠস্বর। কলে বেরোতে একটু দেরি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু একটা ফোন করি পুষ্পিতাকে, বড্ড অশান্তি হচ্ছে রোজ রাতে। কোনো একটা উপায় বের করতে হবে। পুলিশে যাব? কিন্তু ফোন তো আমার নামে নয়। পুষ্পিতাকে ফোন করে বললাম, তোমার বস ফিরেছেন? বলেছিলে না ফোন করে জেনে নিতে?
    না, উনি কাল ফিরবেন মনে হয়। কেমন আছো?
    এই আছি। একটা লোক জানোতো রোজ রাত্রে ফোন করে করে জ্বালিয়ে মারছে। নোংরা কতাবার্তা বলছে।
    ওমা! তাই নাকি?
    আর বোলোনা, রিসিভার নামিয়ে রেখে ঘুমোতে যেতে হয়। রাত নটার পর থেকেই শুরু হয়ে যায়। আবার ধরো বারোটা নাগাদ যদি রিসিভারটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিই, অমনি আবার শুরু হয়ে যাবে। নন্‌স্টপ। কী করি বলোতো?
    তুমি গলাটা চেনো না, না?
    কী করে চিনবো? অচেনা লোক তো। কিন্তু একই লোক। পুলিশে যাব?
    সেতো তুমি যেতেই পারো, কিন্তু... দাঁড়াও একটু ভাবতে দাও।
    আর কী ভাববে? পুলিশ ছাড়া আর কোনো সলিউশান নেই। পাশেই লালবাজার, আজ ভাবছি ওখানে গিয়ে কথা বলি। ওরা যদি ট্র্যাক করতে পারে কে করছে।
    এক কাজ করো। তোমার লাঞ্চ ব্রেক কখন?
    আমাদের আবার লাঞ্চ ব্রেক। কেন?
    তোমার সঙ্গে মীট করছি, এই ধরো সাড়ে বারোটা নাগাদ। তোমার অফিসের সামনে। তখন কথা হবে।
    তুমি আমার সঙ্গে যাবে লালবাজার? চেনো ওখানে কাউকে?
    দাঁড়াও না। তুমি সাড়ে বারোটায় থেকো, আমি আসছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ২১:৪৯652315
  • নবাব্দা ডাকলেন দেবরূপ ও আমাকে। শোনো, তোমরা দুজনে কাল ভোর ভোর বেরিয়ে যাও। সারাটা দিন ওখানে থাকো, দ্যাখো কীরকম স্কোপ আছে। আশেপাশে টুকিটাকি যদি কিছু থাকে। বিকেলের দিকে ব্যাক কোরো।
    কোথায় বেরোবো?
    আহা তোকে সেদিন বলছিলাম না। দুর্গাপুর।
    ব্ল্যাক ডায়মন্ড ধরে নিও।
    ওকে নবাব্দা। ক্যাশ দিন। ভোরের দিকে ট্যাকসি নিতে হবে, ওকে তুলতে হবে (আমাকে দেখিয়ে) ওর বাড়ী থেকে। তারপরে দুর্গাপুরেও খরচ আছে, খেতে হবে, ট্রেনের টিকিট আছে।
    কত দেবো বলো?
    এক হাজার দিন।
    ফিরে এসে হিসেব দেবে কিন্তু। আমাকে আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে।
    নবাব্দা ক্যাশ দিয়ে দিলেন। দশটা একশো টাকার নোট। দেবরূপের হাতে।
    দেবরূপ বলল, শোন, আমি তোকে সাড়ে তিনটের সময় তুলে নেবো। ঠিকানাটা দে। ডিরেকশানটা... ওহ্যাঁ তুই তো বলেছিলি। গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি কিন্তু, ট্যাক্সিতে মিটার উঠবে। দেরি করবি না, বুঝেছিস? তোরা মেয়েরা সাজতে এত সময় নিস।
    আমার তখন অদ্ভুত একটা উত্তেজনা। অফিসের কাজে অন্য শহরে যাচ্ছি। বিজনেস ট্রিপ! এসব তো আগে কত লোকের মুখে শুনেছি। শেষে আমিও? আনন্দে পাগোল পাগোল লাগে।

    এইরে! সাড়ে বারোটা বাজতে চলল। পুষ্পিতা এসে যাবে। আমি দেবরূপকে কাটিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে যাই সিঁড়ি দিয়ে।
    দরজার মুখে এসে পৌঁছতেই দেখি গনেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের মোড় ঘুরে পুষ্পিতা ঢুকছে ক্ষেত্র দাস লেনের গলিটাতে।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ২২:৫০652316
  • বাব্বাঃ তুমি তো খুব পাঙ্কচুয়াল! ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে এসে গেছ। কেমন আছো?
    আমার সপ্রশংস উক্তিতে পুষ্পিতার কোনো প্রতিক্রিয়া হয়না। অন্ততঃ বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝা যায় না। ওশুধু আমার হাতটা টেনে ধরে বলে, চলো, তাড়াতাড়ি চলো।
    বুঝতেই পারছি যে ওর হাতে সময় কম, মাত্র এক কি দেড় ঘন্টার লাঞ্চব্রেকের সময়টুকু সে আমায় দিতে চায়।
    তাড়াতাড়ি চলো।
    কিন্তু ওদিকে কেন?
    লালবাজার যেতে হলে তো আমরা রাস্তাটা ক্রস করে হেঁটেই...
    তুমি এসো না আমার সঙ্গে।
    আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ওর সঙ্গে যাই। বাসে করে বাবুঘাট। সেখান থেকে নেমে হাইকোর্টের দিকে। হাইকোর্টের পেছন দিকটায় এসে একটা খোলামেলা জায়গা। লাঞ্চ টাইম। চতুর্দিকে অসংখ্য হকারের খাবার বিক্রি করছে। দোসা। ডেচকি ভরা ইডলি। পুরি তরকারি, চপ, সিঙাড়া, কলা, কমলালেবু, জয়নগরের মোয়া, কাচের বাক্সে সন্দেশ পান্তুয়া চমচম রসগোল্লা, কাটাফল। অফিসের বাবুরা সব কিনে কিনে খাচ্ছেন। অনেকটা মেলার মতো। ফাল্গুনের দুপুর, আমরা মনটাও আজ খুশি খুশি।
    পুষ্পিতা হনহনিয়ে হেঁটে চলে ঐ মেলার মধ্যে দিয়ে। যেন এসব জায়গার নাড়ি নক্ষত্র ওর চেনা। যেন ও জানে ঠিক কোনখানটায় ও যাবে।
    আমি এখানে এক্কেবারে নতুন, কোনোদিনো আসিনি আগে, তাই ওকে অনুসরণ করতে গিয়ে ঠোক্কর খাই লোকজনদের সঙ্গে।
    একটা লোক শালপাতায় ভরা কাটাফল কাঠি দিয়ে তুলে তুলে খাচ্ছে। আড়াআড়ি তাকে দেখতে পেশেই পুষ্পিতা দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ায়।
    এই যে! এই যে এখানে। দেখে যাও কে তোমাকে নোংরা টেলিফোন করছে।
    পুষ্পিতা লোকটাকে ধরে ধাক্কা দেয়, তার শালপাতাঘরা কাটা ফলগুলো মাটিতে পড়ে যায়। পাকা পেঁপে, কলার টুকরো।
    লোকটা প্রথমে একটু চমকালেও তারপরে ঘুরে দাঁড়ায়। তার ডানহাতে তখনো ফল তুলবার কাঠি।
    কী হচ্ছেটা কী এখানে?
    জোর ধমক লাগায় লোকটা। বছর চল্লিশ বা বেশি বয়স। কাঁচাপাকা চুল। জুলপিগুলো বেশি সাদা। রোগা মতো। বগলে ধরে রেখেছে একটা চেনদেয়া ছোটো ব্যাগ। আশেপাশের লোকেরাও এদিকে তাকায়। অবশ্য যে যার খাবার খেতে ব্যস্ত। তারই মধ্যে যে যেমন পারছে উপভোগ করে নিচ্ছে এই সীন।

    লজ্জা করে না? ভালো একটা মেয়েকে রাত্রিবেলায় ফোন করে নোংরা প্রস্তাব দিতে? দেখুন আপনারা দেখুন।
    চিৎকার করছে পুষ্পিতা।
    বড্ড বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু। টেনে এক থাপ্পড় মারব। নোংরা মেয়েছেলে কোথাকার! কার পয়সায় চলছে তোর এসব দেল্লালি? কার টাকায়?
    ওমা! এই গলার স্বরতো আমি চিনি। এই তো সেই লোক, যে আমাকে রোজ ফোনে অশ্লীল কথা বলে।
    ভীড় জমে যাচ্ছে।
    লোকটা হন্‌হন্‌ করে হেঁটে ভীড় কাটিয়ে হাঁটতে থাকে হাইকোর্টের দিকে। পুষ্পিতও দৌড়চ্ছে পেছনে, আমিও পুষ্পিতার পেছন পেছন পা চালাচ্ছি। লোকটাকে কোথায় দেখেছি মনে হচ্ছে আগে।
    পুষ্পিতা আবার গিয়ে লোকটাকে ধরে ফ্যালে পেছন থেকে কলার টেনে।
    এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। তারপরে বলে, আমার দিকে ফিরে। শোনো, তোমার বন্ধু নিজে আসলে কে সেটা জানো? কত টাকা ওকে আমি দিই সেটা ওর কাছ্হ থেকে জেনে নাও।
    তারপরে পুষ্পিতাকে বলে, কার পয়সায় চলছে তো এতদিন? কার টাকায় এত ফুটানি। কস্তুরী, বড্ড বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু। এক সেকেন্ডের মধ্যে তোমার সবকিছু আমি বন্ধ করে দিতে পারি। এক সেকেন্ডও লাগবে না, বুঝেছো?
    একসেকেন্ড - এই কথাটা বলবার সময় লোকটা হাতে তুড়ি দেয়।
    তারপরে পকেট থেকে রুমাল বের করে ফলের রস মুছতে মুছতে সাধারনভাবে হেঁটে চলে যায় হাইকোর্টের ভেতরে।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ২৩:১৩652318
  • পুষ্পিতা তখনো চেঁচিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু নিষ্ফল সেই চ্যাঁচানি। লোকটা বেশি চেঁচায়নি। ওর ক্ষমতা ওর দাপট সবকিছুই পুষ্পিতার থেকে বেশি। এ যেন বিরাট একটা দশাসই চেহারার কুকুরের পাশে ছোট্টো একটা কুকুর। ছোটোটা খুব চেঁচায়, গলার জোরে বড়োটার সঙ্গে নিজের ক্ষমতা কম্পেনসেট করে।
    কিন্তু পুষ্পিতাকে লোকটা কস্তুরী বলে ডাকল কেন? লোকটার নামই বা কী? এই তো মনে হয় সেই লোক যাকে সঙ্গে নিয়ে পুষ্পিতা একদিন আমার বাড়ী এসেছিলো, পয়লা বৈশাখের দিন। সে ই তো মনে হয়। কিন্তু ভালো করে মেলাতে পারছি না। লোকটা সেদিন প্রায় কোনো কথাই বলেনি। এসব কাদের সঙ্গে মেশে মেয়েটা? আমিতো ভেবেছিলাম ওর বয়ফ্রেন্ড, ওর প্রেমিক। হয়ত বিয়ে টিয়ে করবে। এসব কী কথা বলে গেল লোকটা? ঐ লোককে পুষ্পিতা আমার ফোন নম্বর দিয়েছে? কেন?
    পুষ্পিতা হাঁফাচ্ছে। চোখের চশমাটা খুলে ফেলল।
    তুমি কি জল খাবে?
    না না।
    কোল্ড ড্রিঙ্ক?
    ঠিক আছে একটা পেপসি দাও। একটাই কেনো ভাগাভাগি করে খাবো।
    এই লোকটা কে বলোতো? আমি তো ভেবেছিলাম তোমার বয়ফ্রেন্ড।
    বয়ফ্রেন্ড না কচু। বাজে লোক। সব মিথ্যে বলে গেল জানো তো? একটা কথাও বিশ্বাস কোরো না ওর। বদমাইশ লোক একটা। ও আগে আরো অনেকবার তোমার কন্ট্যাক্ট নাম্বার চেয়েছে আমাকে।
    এসব কী বলছে মেয়েটা?
    সেকী! কেন?
    বাদদাও ওসব। শোনোনা। আমার সম্পর্কে খুব বাজে ইম্প্রেশান হোলো তোমার তাই না?
    না।
    আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি জানোতো। তাকেই বিয়ে করব। একটু দেরি হচ্ছে। আরেকটা ভালো জব খুঁজছি। স্যালারীটা আরেকটু বেশি হলে তারপরে বিয়ে করব আমরা। তোমাকে ইনভাইট করব। আসবে তো?
    আসব।
    এই লোকটা হচ্ছে জানোয়ার একটা।
    ওর নাম কী? কোথায় থাকে?
    জানোয়ারের আবার নাম। হাইকোর্টে চাকরি করে। ভেবেছে টাকা দিলেই সব কেনা যায়।
    তুমি ওকে আমার নম্বর দিয়েছিলে কেন বলোতো?
    তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেবেতো? আমি বুঝতে পারিনি। আসলে আমার খরচ একটু বেশি। আমি দামী জিনিস পছন্দ করি।
    কে না করে বলো?
    হ্যাঁ কিন্তু আমার টেস্ট একটু ভালো ভালো জিনিস, ড্রেস।
    ও তোমাকে কস্তুরী বলল না?
    ও টা আমার আরেকটা নাম। ডাকনাম।
    কোল্ডড্রিঙ্কটা ও একাই পুরোটা খেয়ে ফ্যালে।
    এমা! সবটা খেয়ে ফেললাম। আমি দামটা দিয়ে দিচ্ছি।
    দাম দেয়া হয়ে গেছে। ঐ নিয়ে ভেবো না আর।
    না। আর ভাবব না। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিলে তো? একটা কথা। আজকের পর আর কোনোদিন আমরা যোগাযোগ রাখব না। রাস্তায় দেখলেও চিনব না। ঠিক তো?
    ঠিক।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ২৩:৫০652319
  • হাইকোর্ট এলাকা থেকে আমি একা একা ধীরে ধীরে হেঁটে ফিরি অফিসে। কালকে দুর্গাপুর যাবার কথায় আনন্দে মেতে ছিলাম, সেই আনন্দটায় কালি ঢেলে দিলো এরা। কী ডেঞ্জারাস লোক! অন্যায় করে কোনো লজ্জা আক্ষেপ তো নেই ই নেই, উপরন্তু আবার শাসাচ্ছে। এই লোক আবার গভর্নমেন্টের চাকরিও করে। সে অবশ্য নতুন আর কী? সেদিনই তো ঘোষবাবু বলছিলেন বেলেঘাটার সেল্স্‌ট্যাক্স অফিস হচ্ছে দুর্নীতির আখড়া। টপ টু বটম সব ঘুষখোর। অফিসার, ক্লার্ক, পিওন, সব জায়গায় টাকা খাওয়াতে হয়। এই হাইকোর্টও সেরকমই মনে হচ্ছে। একটা লোক দিনদুপুরে রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে নির্লজ্জের মতো নিজের ক্ষমতার বড়াই করে গেল। অপরাধের জন্যে লাজ্জিত হওয়া তো দূরে থাক, উপরন্তু ক্ষমতা জাহির করে, ভয় পর্যন্ত দেখিয়ে গেল। এরা টাকা দিয়ে মেয়েদের সঙ্গ কেনে। মেয়েটাও ভালো ভালো জিনিষের লোভের টানে এক্স্‌ট্রা ইনকাম করে চলেছে। কতোরকমের লোক আছে এই শহরে। কি অদ্ভুত সব এদের লজিক। পুলিশকে বললে পুলিশ কি আমার অভিযোগ শুনবে? কার কথা বিশ্বাস করবে পুলিশ? লোকটাতো বলল পুষ্পিতা একটা কলগার্ল। আরো অনেক কিছুই বলেছে। নামটা পর্যনত কস্তুরী বলল। আমার কথা বিশ্বাস করবে না পুলিশ। আমি তো একটা কলগার্লের বন্ধু। কলগার্লের বন্ধুর চেয়ে থেকে ঐ লোকটা অনেক বেশি রেসপেক্টেড নাগরিক। গভর্ণমেন্ট সার্ভেন্ট। তাও আবার উচ্চ আদালতে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:২৯652320
  • সব এলোমেলো যাচ্ছে। সমস্ত চিন্তাভাবনা আমার টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। কি ভয়ানক এই পৃথিবীতে রয়েছি। ন্যায় অন্যায়ের যে লেসনগুলো পেয়ে এসেছি সেগুলো সব অবসোলিট? একি ভয়ঙ্কর যুগ! এর মধ্যে আমি বাঁচব কেমন করে? বেঁচে থাকলেও সে কেমন বাঁচা? অফিসে ফিরবার পথে অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তা ভুলে চলে গিয়েছিলাম আর এন মুখার্জ্জি রোডে। সেখান থেকে লালবাজার খুবই কাছে। ভাবছিলাম রিপোর্ট করি। তারপরে ভেবে দেখলাম, আরো কত অসংখ্য অন্যায়েরওতো রিপোর্ট করিনি। এটাও বাদ থাকুক। এটাও ক্ষমা করে দিলাম। এই দুনিয়ায় যদি পাপ পুণ্যের সুবিচার থাকে তবে বিচার কোথাও একটা হবেই। কেউ বলে ভগবান আছে। থাক বা না থাক, এসমস্তর হিসেব ডেবিট ক্রেডিটের কোনো একটা খাতায় নির্ঘাৎ লেখা হয়ে থাকছে। দুর্বল মানুষ কোনো বিচার পায় না। সত্যিই কি তাই? কে কোথা থেকে মার খাবে তার সব কি আমরা জানি?
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:০৭652321
  • অফিসের আবহাওয়া এক্কেবারে অন্যরকম। নবাব্দা বেরিয়ে গেছেন একটু আগে। এদিকে তারপরেই খবরে প্রকাশ যে বুড়োর ছেলে গতকালই নাকি উড্‌ল্যান্ড থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ীতে বেডরেস্টে আছেন। অতএব আমাদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে বুড়োর ছেলেকে দেখতে যাওয়া। গেট ওয়েল সুন কার্ড না দিলেও চলবে, কিন্তু এক তোড়া গোলাপ দেওয়া চাইই চাই।
    গ্লোবনার্সারীতে সন্ধ্যের দিকে গোলাপের তোড়া একটু কমদামে পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু নবাব্দা বেরিয়ে গেছে টাকা দেবে কে?
    দেবরূপের কাছে হাজার টাকা আছে, কাজরী সেটাই প্রায় কেড়ে নিতে চাইছে, এরকম সময় আমার অকুস্থলে প্রবেশ।
    আমায় দেখতে পেয়ে দেবরূপ দলে ভারী হয়।
    ঐ তো ও এসে গেছে ওকেই জিগ্যেস করে দ্যাখ কার ভোর তিনটেয় বেরোচ্ছি আমরা।
    ভোর তিনটে নয়, রাত তিনটে।
    ঐ একই হোলো। তুই টাকা খরচ করে ফেললে আমরা যাবো কীকরে? তারচেয়ে তোরা কাল যা। বুড়োর ছেলেতো আর বেডরেস্ট থেকে লাফ মেরে পালাবে না।
    কাজরী নাচার। তার যাবার মুড হয়েছে সে যাবেই যাবে। বেগতিক দেখে দেবরূপ কেটে পড়ে।
    এখন টাকাটাই হচ্ছে মূল সমস্যা।
    বাসবী বলে, ফুল ছাড়াই চলো না, কী আবার হবে? দেখা করাটাই তো আসল।
    উঁহু। আচ্ছা এ অফিসে নবাব্দা না থাকলে পয়সা কে দেয়?
    এটার উত্তর আমরা জানি না। কিন্তু চাপ দিতেই বেরিয়ে পড়ল ঘোষবাবুর কাছে একটা চাবি থাকে পেটিক্যাশের। অন্য চাবিটা তপনের জিম্মায়। তপনকে ফোর্স করা হলে সে পেটিক্যাশ খুলে দেয়।
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪০652322
  • পেটিক্যাশে আছে সাকুল্যে সাড়ে তিনশ টাকা। কাজরী পুরোটাই নিয়ে নেবে। তপন কিছুতেই দেবে না। দুজনে মিলে কাড়াকাড়ি চলছে।
    দেড়শো নে।
    দেড়শোয় একটা গোলাপের বুকে হবে? তুই কোনোদিনো ফুল কিনেছিস যে এরকম বুদ্ধুর মতো কথা বলছিস?
    কত দাম হয় ফুলের বুকের?
    হ্যাঁ, এতক্ষনে পথে এসেছিস। জানিস না, সেটা বল। দুশোর নীচে হয় না। খাটিয়ায় বাঁধবার রজনীগন্ধার স্টিক হয় ঐ দামে। তারপরে ট্যাক্সি ভাড়া আছে না?
    ট্যাক্সি করে যাবি?
    না তো কি বাসে করে যাবো ফুল নিয়ে নিউ আলিপুর? খিস্তি করতে ইচ্ছে করছে তোকে।
    কেন? মেট্রোয় যা। তারপরে ট্যাক্সি নিবি।
    তোর এত মাথাব্যাথা কেনরে? তোর নিজের পকেট থেকে যাচ্ছে? জানিস, এই ফুলটা নিয়ে গেলে নবাব্দার ইজ্জত প্রেস্টিজ কতটা বেড়ে যাবে বুড়োর কাছে?
    যা ভালো বুঝিস কর। নবাব্দা জিগ্যেস করলে কী জবাব দেবো আমি?
    তোকে কিচ্ছু বলতে হবে না। আমি ফুল রেসপন্সিবিলিটি নিচ্ছি তো।
    শেষে তিনশোয় রফা হয়। ক্যাশবাক্স ফাঁকা রাখতে নেই। লক্ষ্মী চলে যায়, অমঙ্গল হয় ব্যবসায়, এইসব বুঝিয়ে সুঝিয়ে পঞ্চাশ টাকা দয়া করে বাক্সে ফেরৎ দেয় কাজরী।
    আমার কি না গেলেই নয়? কাল আমার বিজনেস ট্রিপ।
    তো?
    না মানে ভোরে বেরোতে হবে।
    বেরোবি ভোরে। তোকে কি সারারাত আটকে রাখব নাকি?
    হ্যাঁ হ্যাঁ তুমিও চলো প্লীজ।
    বাসবী আমাকে ছাড়া একা কাজরীর সঙ্গে যেতে চাইছে না।
    আমরা তিনজন মেয়ে ছুটে যাই নিউ মার্কেটে। তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। আমরা লিন্ডসে স্ট্রীটের কার পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে থাকি। কাজরী একাই চলে যায় ফুল কিনতে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে এক তোড়া লাল গোলাপ কিনে, বেশ প্লাস্টিকের মোড়কে বাঁধামতো, আমরা ট্যাক্সি ধরে ফেলি। নিউ আলিপুর জি ব্লক।
    ট্যাক্সিতেই সন্ধ্যা ঘনায়। কাজরী ননস্টপ বকে যাচ্ছে। কত কত সেলিব্রিটিদের ও চেনে, কোথায় কত কানেকশান। কুমার শানুকেও চেনে।
    সত্যি?
    চিনিতো। গোটা কোলকাতায় একটাই ডানাওয়ালা গাড়ী আছে। গ্যারেজের মধ্যে থাকে। শানু কোলকাতায় এলে ওটায় চড়ে।
    ডানা ওয়ালা গাড়ি আবার কী?
    তোরা না, জাস্ট গেঁয়ো। ঐ গাড়ীর দরজা দুটো যখন খোলে না, তখন ঠিক পাখীর ডানার মতো ওপরদিকে খুলে যায়। দেখিসনি কখনো?
    আমরা দেখিনি।
    ঠিক আছে। এখন জেনে রাখ।
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৯652323
  • বুড়োর বাড়ী পেল্লাই একখানা বটে। সামনে বাগাব ফাগান আছে মনে হয়। সন্ধ্যের অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না, কিন্তু ফুলের গন্ধ আসছে। সেবাড়ীরই দোতলায় আমরা পৌঁছলাম।
    জুতো খুলে রেখে আধো অন্ধকার প্রকান্ড ঘরে ঠান্ডা মার্বেলের ওপর দিয়ে হেঁটে আমরা তিনমূর্তি পেশেন্টের খাট থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়ালাম।
    রোগী আগেই খবর পেয়েছিলেন। আধশোয়া অবস্থায় হাসিমুখে কাজরীর হাত থেকে গোলাপের বুকে গ্রহন করলেন। আমরা দুজনে তফাতেই দাঁড়িয়ে রয়েছি। কাজরী সম্পূর্ণ অচেনা লোকটির সঙ্গে বাক্যালাপ শুরু করে দিলো।
    কী? এখন কেমন লাগছে?
    পেশেন্ট অল্প হাসি হাসি মুখে বললেন, এখন লম্বা বেডরেস্ট নিতে বলেছে ডাক্তার।
    হুঁ। হার্টের ধাক্কা বলে কথা। সাবধানে থাকতে হবে।
    এইভাবে বাক্যালাপ চতে লাগল। আমরা ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘরের ভেতরটা পর্যবেক্ষণ করছি। রোগীর পায়ের দিকের দেয়ালে ঠিক মধ্যিখানে একটা সোনালী ফ্রেম অন্ধকারেও দেখা যাচ্ছে। এই ফ্রেমটা আমাদের চেনা। যদিও এই আবছা আলোয় ভেতরের অয়েল পেন্টিংটা ঠিক ঠাওর হচ্ছে না। যাকগে গুণী শিল্পীর শিল্পকর্ম এখন ধনীর বেডরুমে শোভা পাচ্ছে। তপন জানতে পারলে খুশি হবে। ও এলে দেখতে পেত। কিন্তু ওকে আনা হয় নি।
    দরজার বাইরে থেকে রোগীর স্ত্রী উঁকি দিলেন মনে হোলো। অন্য কোনো মহিলাও হতে পারেন। এরপরে একটা বাচ্চা মেয়ে এলো। কাজের মেয়ে।
    চা খাবেন আপনারা?
    না।
    না।
    না।
    মেয়েটি চলে গেল।
    আমরাও বিদায় জানিয়ে ফিরে চললাম।

    এখন ফিরতে হবে। এখন ফুলের বুকে নেই, ট্যাক্সিও চাই না। তিনজনের গন্তব্য বিভিন্ন। বাসস্টপের দিকে এগোবার আগেই একটা ফুচকাওয়ালা।
    চল ফুচকা খাই।
    ঝাল খাবিতো ভালো করে? অ্যাই ভালো করে ঝাল দিয়ে মাখোতো।
    পেট ভরে ফুচ্‌কা খাওয়া হোলো।
    বাসবী ও আমি দাম দিতে যাচ্ছি। কাজরী বাধা দিলো।
    পয়সা আছে তো।
    ফুচ্‌কা ওয়ালাকে দাম মিটিয়ে কাজরী বলে, একটু দাঁড়া হিসেবটা করে নিই। তারপরে টাকা গোনে।
    পারহেড আমাদের প্রফিট হয়েছে বাইশ টাকা করে, এই নে। আমি তোদের পঁচিশ টাকা করে দিচ্ছি, তোরা আমাকে তিনটাকা করে ফেরৎ দিবি।
    অ্যাঁ?
    টাকা কেন দিচ্ছ?
    বাঃ! দেবো না? সমান সমান ভাগ করছি তো।
    এমা! না না।
    টাকা নিতে পারব না।
    তাহলে কি পুরোটাই আমি নেব নাকি? তোরাও নে। ইকুয়াল শেয়ার। যদিও বুদ্ধিটা আমার।
    এই না না, টাকা দিও না। তারচেয়ে ঐটাকাটা দিয়ে পেস্ট্রি কিনে অফিসে সবাইকে ভাগ করে খাইও।
    সেই ভালো।
    আর হিসেবটা কেমন করে দেবে নবাব্দাকে?
    হিসেব? হা হা। এমন হিসেব লিখে আনব না, তোদের নবাব্দা তো কোন ছার ঐ ঘোস্‌বাবুর বাবাও সেই ব্যালেন্সশীটে কোনো ভুল ধরতে পারবে না।
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৩652324
  • রাত তিনটে কুড়ি।
    মেইন গেটের চাবি খোলানোর ব্যবস্থা করে আগেভাগেই দাঁড়িয়ে রয়েছি ফুটপাথের ওপরে। সমস্ত কিছু বন্ধ। সব অন্ধকার। শুধু দূর থেকে হ্যালোজেনের আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। ফুটপাথের বেলগাছটার নীচে গোটাতিনেক কুকুর ঘুমোচ্ছে। ওরা রাস্তার নেড়ি কুকুর, এপাড়ার কুকুর। আমাকে চেনে। অলস টাইপের। উঠল না। হাওয়া দিচ্ছে। প্লাস্টিকের ব্যাগ উড়ে যাচ্ছে রাস্তায়। একটাও গাড়ী নেই। দূরে অন্য কোথা থেকে কিছু গাড়ীর শব্দ হয়ত কান পাতলে শোনা যাবে। মাঝরাতের লরির শব্দ। বা হয়তো মোটোর গাড়ী। আরো দশ মিনিট। সময়ের জ্ঞান ঠিক থাকলে দেবরূপ সাড়ে তিনটেতেই এসে যাবে। আমাকে খুব কথ শুনিয়েছিলো না, মেয়েরা দেরি করে, সাজতে গুজতে টাইম নেয়, হ্যান ত্যান। এখন দেখবি কে আগে এসেছে।
    একটা জিনিস কিন্তু হয়েছে। সারারাত টেলিফোনটা চুপ ছিলো। ভাবলাম আউট অফ অর্ডার হয়ে গেছে নাকি? কিন্তু বেরোনোর আগে রিসিভার তুলে দেখে নিয়েছি ডায়াল টোন আছে। তাহলে ঐ লোকটাই ছিলো কালপ্রিট। যতই ঝামেলা অপমান হোক না কেন, ওষুধে কাজ দিয়েছে।
    তিনটে পঁইত্রিশে ট্যাক্সিটা দেখা গেল। কাছে আসতেই আমাকে দেখে ইউটার্ণ নিলো।
    উঠে আয়।
    দেবরূপ খুব সেন্ট লাগিয়েছে। একটা ব্লেজারও পরেছে। সঙ্গে সেই রোজকার ভিআইপি ব্রীফকেস। অন্যদিন ওটার মধ্যে করে ও টিফিন বক্স আনে। সেই টিফিন বক্সে থাকে তিনটুকরো এগ্‌টোস্ট। ওর বউ বানিয়ে দেয় সেই টিফিন। এছাড়া আর কিছুই থাকে না ওর ব্রীফকেসে। আজও ও টিফিন এনেছে নাকি সঙ্গে? এত ভোরে ওর বউকে দিয়ে টিফিন বানিয়ে আনলো? দুপুর হতে হতে খাবারটা নষ্ট হয়ে যাবে নাতো?
    ট্যাক্সি চলছে শাঁই শাঁই করে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ দিয়ে। কোনো ট্র্যাফিক জ্যাম নেই। মহ্যে একটা কি দুটো গাড়ি দেখলাম। এই ভোররাতটাতে মনে হয় সবাই ঘুমোয়। আর একটু পর থেকেই জেগে ওঠা শুরু হতে থাকবে। একটা বাস বেরিয়ে আসবে লেক ডিপো থেকে। সে শুধু তুলে আনবে স্টেট ট্রান্সপোর্টের কর্মীদের। সেই বাসও এতক্ষনে বেরিয়েছে বলে মনে হয় না। বা হয়ত বেরোলেও বেরোতে পারে। মোটকথা আমরা চলেছি বিজনেস ট্রিপে। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড কত তাড়াতাড়ি পেরিয়ে এলাম।
    তুই জানিস তো ঠিকানাটা?
    ডিভিসির?
    ও যে কেউ বলে দেবে। অত বড়ো একটা অর্গ্যানাইজেশন।
    কার সঙ্গে দেখা করবি জানিস?
    ছাড়তো। আগে যাই। রিল্যাক্স কর। আজ আমি পুরো রিল্যাক্স করব।

    হাওড়ার স্টেশনে এত ভোরেও বেশ ভীড়। দেবরূপ টিকিট কেটে আনে। আট নম্বরে লাগবে মনে হচ্ছে। আট? নাকি ছয়? না না, আটই।
    আমরা পা চালাই। গাড়ী তখনো লাগে নি।
    জানিসতো এই ব্ল্যাক ডায়মন্ডের দোতলা বগি আছে?
    দোতলা ট্রেন?
    হ্যাঁ। কেন তুই জানতিস না?
    আমি কোনোদিনো দোতলা ট্রেন দেখিনি।
    একটু পরেই দেখতে পাবি। চা খাবি?
    না। আমার ঘেন্না করে। কিরকম নোংরা লাগে হাওড়া স্টেশন।
    খেয়েই দেখ না।
    না, তুই খা।
    আস্তে আস্তে ভোরের আলো কখন যেন ফুটে গেছে। লোকজন দৌড়ছে। ব্ল্যাকডায়মন্ড ঢুকে পড়েছে কোন ফাঁকে। খবরের কাগজের বান্ডিল ভর্তি বিরাট বিরাট ঠেলাগাড়ী মানুষজনের তোয়াক্কা না করেই ছুটে চলেছে একপাশ দিয়ে। এই সব কাগজ চলেছে কোলকাতার বাইরে। আমরা বেশি তাড়াতাড়ি কাগজ পাই, ওরা পায় পরে।
    এই সমস্ত হুড়োহুড়িতে আমি দেখতে চেষ্টা করছি দোতলা ট্রেনটা কেমন। কোথায় দোতলা?
    অ্যাই তুই উঠে পড়, জায়গা পাবি নাতো বসবার।
    তুই যে বললি দোতলা ট্রেন?
    হ্যাঁ আছে দোতলা বগি,একদম সামনের দিকে।
    কোথায়?
    এখন দেখতে হবে না ওঠ।

    সাধারন একটা একতলা কামরায় মুখোমুখি দুটো জানলার সীট নিয়ে বসে পড়ি। ট্রেন যে ডিরেকশানে যাবে, সেই ডিরেকশানেই বসতে হবে আমাকে। আর তাকিয়ে থাকতে হবে বাইরের দিকে। নইলেই আমি বমি করে ফেলব।
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:২৭652325
  • আমাদের সহযাত্রীরা বেশ ভালো জামা কাপড় পরা। কোনো গরীব শ্রেণীর নোংরা কাপড়পরা দাসবাবুর মতো লোকজন নেই। অন্ততঃ আমাদের আশেপাশের সীটে নেই। মোটামুটি সকলেই অফিসের কাজে বা ব্যবসার ব্যাপারে চলেছেন দুর্গাপুর কি আসানসোল। পানাগড় অবধি গুছিয়ে আড্ডা চলল। দেবরূপ হেভি স্টাইল মেরে কথা বলছে, যেন কি একটা কেউ কেটা।
    ওর নিজের পরিচয় দিচ্ছে, কোলকাতায় একটা লীডিং অ্যাভার্টাইজিং ফার্মে আছি। দুর্গাপুরে যাচ্ছি ক্লায়েন্ট ভিজিট করতে। হ্যাঁ, অফিসের গাড়িতেও যাওয়া যায়। এক্সপ্রেসওয়েটা খুব ভালো করেছে। কিন্তু ব্ল্যাক ডায়মন্ড ও ভালো।
    এই ছেলেই পারবে বিজনেস আনতে। মুখে কথার খই ফুটছে। ব্রীফকেসটা এমন করে ধরে রেখেছে হাতে যেন ওর মধ্যে কতো মূল্যবান কাগজপত্র আছে।
    তারপরে কিছু ইম্‌পর্ট্যান্ট ডকুমেন্ট্স্‌ সাইন করানোর থাকে। সব তো দূর থেকে ফোনে বা চিঠিতে হয় না। বুঝতেই পারছেন ফেস টু ফেস বসতে হয় ক্লায়েন্টদের সঙ্গে। প্রচুর পেপারওয়ার্ক্স থাকে।
    ওর কথাবার্তায় কে বুঝবে যে আমরা জানিনা পর্যন্ত কার সঙ্গে দেখা করব। অ্যাড্রেসও জানা নেই। দেবরূপের জুতোর শুকতলা হাঁ হয়ে গেছল মুচিকে দিয়ে পেরেক ফেরেক লাগিয়ে চালাচ্ছে। গোড়ালিটা ক্ষয়ে গেছে। এই ট্রিপের টাকা থেকে বাঁচিয়ে প্রথমেই কোলকাতায় গিয়ে ও একজোড়া জুতো কিনবে। অবিকল এই জুতোটার মতো। যাতে নবাব্দা টের করতে না পারেন যে ও টাকা সরিয়েছে। অথচ ভালো জুতো না থাকলে অত হাঁটবে কেমন করে? ক্ষয়ে যাওয়া জুতোয় ধুলো ঢোকে রোজ, ও বলেছে। দেড় হাজার টাকার মাস মাইনের অ্যাকাউন্ট্‌স্‌ একজিকিউটিভ কীকরে চকচকে জুতো পরে রোজ অফিসে আসে, তার আসল রহস্যটা জানতে কেউ আগ্রহী হয় না।
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৫:৩৬652326
  • দুর্গাপুরে নেমে আমরা খুঁজতে লেগেছি ট্যাক্সি। মিটারে নয়, দরদাম করে একটা রেট ঠিক করা হোলো।
    মেন গেটে যাবেন তো?
    কেন আরো গেট আছে নাকি?
    আছে তো।
    মেইন গেটটাতেই যাবো।
    ট্যাক্সি দুর্গাপুর স্টীল প্ল্যান্টের মেইন গেটের অল্প দূরে আমাদের ছেড়ে দেয়।

    তুই কিন্তু আমায় গুলিয়ে দিচ্ছিলি।
    কোনটা?
    তুই ডিএস্‌পি কে কতোবার ডিভিসি বলেছিস জানিস?
    সরি। আমার গুলিয়ে যায় বারবার।
    একটা হচ্ছে দামোদর, অন্যটা দুর্গাপুর। দুটো এক হোলো?
    আমি হাসিমুখে দোষ স্বীকার করে নিই।

    এখন কথা হচ্ছে যে অদূরেই যে প্রকান্ড গেটটা রয়েছে, তার পাশেই একটা ঘর, এবং সেখানে গেটপাস ছাড়া কারোকে ঢুকতে দিচ্ছে না। আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে গেটপাস জোগাড় করে তবে ঢুকতে হয়। নবাব্দা এতদিন এই লাইনে রয়েছেন, একটা ব্যবসা চালাচ্ছেন, দেবরূপের ভাষায় লীডিং অ্যাড্‌ভার্টাইজিং ফার্ম চালাচ্ছেন, আর এতটুকু সেন্স নেই যে এই প্রকান্ড প্রতিষ্ঠানটায় এসে বিজনেস নেওয়াটা কোনো ফাজলামি নয়? এদের কাণ্ডজ্ঞান সম্বন্ধে সত্যিই সন্দেহ হয়। সব জায়গায় সামনে মেয়ে এগিয়ে দিলেই হয় না। ঘটে বুদ্ধি থাকা দরকার। আমি লিখে দিচ্ছি, আমি বা দেবরূপ তো দূরের কথা, স্বয়ং রম্ভা ঊর্বশী এমনকি কাজরীকেও এই গেট দিয়ে উইদাউট গেটপাস কেউ ঢুকতে দেবে না। এটা একটা হাই সিকিওরিটি এরিয়া। কিন্তু এখন কী কর্তব্য আমাদের? জাস্ট ফিরে যাবো?
    দেবরূপ গেটের পাশের ঘরটায় গিয়ে খুব কায়দা করে বোঝায় কোলকাতা থেকে আসছি, লীডিং অ্যাডভার্টাইজিং ফার্ম ইত্যাদি।
    লোকটা মনে হয় কার্ড দেখতে চাইল।
    দেবরূপ ব্রীফকেস খুলল।
    ইশ্‌শ্‌ এবারে ওর হালকা গোলাপী রংচটা ময়লা টিফিন কৌটোটা বেরিয়ে পড়বে। সেটা কেউ দেখে ফেললে আর ওসব লীডিং ফার্ম টার্ম বিশ্বাস করবে না।
    না। ব্রীফকেসে টিফিন কৌটো নেই। একটা রুমাল, ডটপেন। কয়েকটা ভিজিটিং কার্ড। নামের জায়গাটা ফাঁকা। নিজের নামটা সেখানে লিখে দেবরূপ লোকটাকে দিলো।
    সেইটে হাতে নিয়ে লোকটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলল, এ ক্যা হ্যায়? গেটপাস নেহি হ্যায়?
    গেটপাসতো নেহি হ্যায়।
    গেটপাস লাগেগা।
    লোকটা কার্ড ফিরিয়ে দিলো।
    আরো কিছুক্ষণ চেষ্টা চরিত্র করবার পরেও ঐ সিকিওরিটি কিছুতেই নরম হলো না।
    আমরা ওখান থেকে সরে এসে বাইরে অপেক্ষা করছি। কয়েকজন ভদ্রলোক ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন মনে হচ্ছে ওখানকার এম্‌প্লয়ী, মরিয়া হয়ে দেবরূপ তাঁদেরই প্রায় আক্রমণ করল।
    এত স্পীডে কথা বলে গেল যে ওঁরা প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেছলেন। তারপরে বললেন, ও আচ্ছা, কিন্তু এখানে তো প্রায়র অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া ঢোকা সম্ভব নয়।
    শেষকালে ঐ তিনজনের মধ্যে দুজনের সঙ্গে অল্প কথা ও কার্ড বিনিময় করল দেবরূপ।
    তারপরে অনেক থ্যাঙ্কস্‌ ট্যাঙ্ক্‌স্‌ দিয়ে নমস্কার বাই ইত্যাদি করে আমাকে বলল, হেভি খিদে পেয়ে গেছে রে। লাঞ্চ করতে হবে।
    আর এখানকার কাজ?
    হয়ে গেছে তো।
    কীরকম? কখন হোলো?
    ঐ তো। কার্ড দেখিয়ে দেবো নবাব্দাকে। ওটাই প্রমাণ। বলব প্রোডাকশানের এই দুই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলেছি। কার্ড দুটো খুব ইম্‌পরট্যান্ট। দাঁড়া আগে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখি, কোথাও পড়ে টড়ে হারিয়ে গেলেই হলো।
    আর বিজ্ঞাপন?
    তুই কি সরল রে! ডিএসপি বিজ্ঞাপন দেওয়াবে অ্যাড্‌হিয়ার অ্যাড্‌ভার্টাইজিং কে দিয়ে? এটা একটা আধাসরকারী সংস্থা মনা। এখানে চ্যানেল করা অতো সহজ নয়। নবাব্দা বেশি পেঁয়াজি করলে বলে দেবো নিজে যান। তেমন হলে ঐ রায়দাকে নিয়ে আসুন। তখন নিজেরাই বুঝে নেবে কত ধানে কত চাল। চল চল হেভি খিদে পাচ্ছে। আজ ব্রেকফাস্ট করিনি। চাইনিজ খাবি?
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৫:৫৯652327
  • গেটের সামনে থেকে ট্যাক্সি নিয়ে আমরা চললাম একটা ভালো রেস্টুরেন্টের সন্ধানে। সামান্য একটু গিয়েই ছিমছাম একটা রেস্টুরেন্ট। বাথরুম ঘুরে এসে আমরা মেন্যু কার্ড দেখতে লাগলাম। দেবরূপ বিয়ার খেতে চাইছে। দুরকম আছে হেওয়ার্ড্‌স্‌ আর কল্যানী ব্ল্যাক লেবেল।
    কল্যানীটাই নিতে বললাম, কিন্তু হেওয়ার্ড্‌সের নামটা বেশ বিলিতি বিলিতি, দেবরূপ হেওয়ার্ড্‌স্‌ ই নেবে।
    নিবি। নে। আমি তো খাচ্ছি না।
    তুই খাবি না?
    নো।
    তারিয়ে তারিয়ে বিয়ার খেলো। নবাব্দাকে মোটামুটি কী বলব সেটা ঠিক করে নিলাম দুজনে। এসব কথা ট্রেনে ভালো করে আলোচনা করা না ও যেতে পারে, আশেপাশে নানারকম লোকজন থাকবে।
    তারপরে মিক্স্‌ড্‌ ফ্রায়েড রাইস উইথ চিলি চিকেন।
    আহ্‌! এর নাম বিজনেস ট্রিপ। এরকম ট্রিপ যদি বছরে তিনটে চারটে হয়, তাহলে বিন্দাস চাকরি করা যায়। বুঝলি? খেয়ে দেয়ে আরামসে বেরিয়ে পড়ব। ট্রেন ধরে সোজা কোলকাতা।

    ফেরার পথে দেবরূপ প্রথমটায় ঘ্যানঘ্যান করে ওর বৌয়ের গল্প করে গেল। তারপরে কিছুক্ষন ঘুমোলো। মাঝখানে একটা স্টেশনে আমরা নেমে পড়লাম। তারপরে কিসব টিকিট নিয়ে এলো অন্য একটা ট্রেন ধরে হাওড়া নয় আমরা কেমন করে যেন শেয়ালদা লাইনে সোজা পৌঁছে গেলাম নিজের নিজের স্টপে। প্রথমে আমি নামব । তারপরে ও আরেকটু পরে নামবে- লেকগার্ডেন্‌স্‌।
    ফেরার ট্রেন প্রায় ফাঁকাই ছিলো বলা যায়।
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৬:০৬652329
  • আমার এই চাকরির গল্পটা যে ক্রমশ শেষের দিকে চলে আসছে সেটা সহজেই অনুমেয়। এখন বাকি থাকছে শুধু কুমার শানুর কনসার্ট আর দুয়েকটা টুকিটাকি। এই গল্পটা যতক্ষন না শেষ হচ্ছে, অন্য গল্পটা শুরু করা যাবে না। আগেই বলেছি যে গল্পগুলোর অবস্থান একের পর এক সময়ের ক্রমানুসারে নয়। বরং বলা যেতে পারে ডিস্ক্রিট। তাই একটার সঙ্গে অন্যটার মিল অমিল খুঁজতে যাওয়া বৃথা। হারিয়ে যাওয়া লুডোর ঘুঁটি সব। যেকটা খুঁজে পাওয়া যাবে ঐ দিয়েই যাহোক তাহোক করে খেলতে হবে আর কি।
  • Lama | 160.107.177.85 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৬:৫৬652330
  • কি যে বলা যায়। থাক। চুপচাপ দাঁড়িয়েই থাকি। মাথার টুপি হাতে রেখে
  • সে | 188.83.87.102 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৭:০৮652331
  • মাস ফুরিয়ে আসছে। এগিয়ে আসছে মাইনে পাবার দিন। কাজের ফাঁকে টুক করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটা দেখে নিতে হবে। অনেক জিনিস পত্র ঘেঁটে এটিয়েম কার্ড পেয়েছি, কিন্তু পিন নম্বরটা মনে পড়ছে না ভালো করে। আবছা মনে পড়ে।
    দুর্গাপুরের গল্পটা নবাব্দা কতটা বিশ্বাস করেছেন সেটা ওঁর মুখ দেখে বোঝা যায় নি। দেবরূপ সেদিনই নতুন জুতো কিনে সেটা পায়ে দিয়ে এলো। এটার রং একটু হালকা আগেরটার থেকে, খুব খুঁটিয়ে না দেখলে টের পাবে না কেউ।
    বাসবীর মুখে শুনলাম আমরা যখন দুর্গাপুরে গেছলাম তখন কাজরীর সঙ্গে নবাব্দার হেভি ঝগড়া হয়েছে। ও টাকা চেয়েছিলো এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক বাবদ। নবাব্দা দেন নি। বলেছেন মাসের শেষে মাইনে দেবেন। কাজরী ভয় দেখিয়েছে, ঐ অ্যাকাউন্ট বাবদ ছ হাজার টাকা না দিলে ও এই কন্ট্র্যাক্ট ক্যানসেল করিয়ে দেবে। তারপরে কী ডিসিশান হয়েছে সেটা বাসবী আমায় বলে নি। জানলেও বলেনি।
    তপন লুকিয়ে লুকিয়ে কম্পিউটার শিখে নিচ্ছে। কম্পিউটার দিয়ে কেমন করে ছবি আঁকতে হয়, এডিট করতে হয়। ওর এক বন্ধু আছে সে ওকে শিখিয়ে দিচ্ছে।
    একটা নড়বড়ে কোম্পানীতে আমরা অসহায় কজন কর্মচারী। আমাদের মাইনে কারো দেড় হাজার কারো আটেরোশো কারো দুহাজার। উদয়াস্ত লক্ষ্যহীনভাবে খেটে চলেছি। কোনো প্ল্যান নেই পরিকাঠামো নেই। অথচ ব্যবসাও চলছে নড়বড়িয়ে। কিন্তু চলছে।
    কয়েকটা কোল্ড কল করে নেবো আজ সেই উদ্দেশ্য নিয়ে বেরিয়ে ব্যাঙ্কেও ঢুঁ মারলাম। তিনবার ভুল পিনকোড দেবার পরে এটিয়েম মেশিন আমার কার্ডটা গিলে ফেলল।
    পেছনে আরো লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে।
    ব্যাঙ্কের ভেতরে ঢুকে কারোকে জিগ্যেস করতে হবে। এখন সব চিনতে পারছি। লাইনে দাঁড়ালাম। আমার টার্ণ আসতেই চেয়ার টেনে যেই বসেছি, সমস্ত কর্মচারীরা উঠে দাঁড়িয়েছে। সবার দৃষ্টি গেট দিয়ে যিনি ঢুকে আসছেন তাঁর প্রতি। এক প্রৌঢ়া ভদ্রমহিলা। তাঁর সঙ্গে আরেকজন ভদ্রমহিলা, যুবতী। শ্রদ্ধায় সম্ভ্রমে সবাই কেমন চুপ করে গেছে। আমার সামনের অফিসার বললেন, এদিকে আসুন এদিকে আসুন। আমায় সরে যেতে বললেন। ওঁরা কথা বলতে লাগলেন। আমি উঠে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। পাশের অফিসার ফাঁকা হতে তাঁর সামনে গিয়ে বসলাম।
    আমার এটিয়েম কার্ডটা মেশিন গিলে ফেলেছে।
    ভুল পিন দিয়েছিলেন?
    তাই তো মনে হচ্ছে।
    আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বরটা মনে আছে?
    না।
    আপনার নাম, ঠিকানা?
    বললাম।
    কোনো আইডি প্রুফ আছে আপনার সঙ্গে? যেমন ধরুন ভোটার্স কার্ড, পাসপোর্ট?
    নেই।
    সঙ্গে নেই? তাহলে তো একটু মুশকিল। অন্যদিন নিয়ে আসুন। কার্ড আমরা বের করে রাখবো।
    ওগুলো খুঁজে পাচ্ছি না।
    ভদ্রমহিলা চিন্তিত হয়ে পড়েন।
    আচ্ছা একটা প্রশ্ন করব?
    হ্যাঁ বলুন।
    ঐ ওঁরা কারা?
    কারা?
    ঐ যে ওঁরা এলেন, সবাই উঠে দাঁড়ালেন আপনারা। ওঁরা কে?
    বুঝেছি। উনি তো? উনি হাইকোর্টের জাজ। আপনার চেকবুক আছে তো।
    হারিয়ে গেছে।
    তাহলে তো প্রত্যেকটা আনইউজ্‌ড্‌ চেকের জন্যে আপনাকে ফাইন দিতে হবে।
    কত ফাইন?
    সেটা দেখতে হবে। কতগুলো আনইউজ্‌ড্‌ চেক ছিলো?
    মনে নেই।
    আপনার কি কোনো অসুখ করেছে?
    না। আসলে একটা দুর্ঘটনার পরে আমি অনেক কিছু ভুলে গেছি।
    আচ্ছা। আপনি দোতলায় চলে যান এই সিঁড়ি দিয়ে। ওখানে আমাদের ম্যানেজার আছেন। ওখানে গিয়ে বলুন। উনি বলে দেবেন কী করতে হবে।
    দোতলার ম্যানেজারকেও এসবই আবার রিপিট করে বলি। দেখুন আমার স্মৃতি কিছু হারিয়ে গেছে সেগুলো আস্তে আস্তে ফিরে আসছে, এখন আপনারা যদি ফাইন নেন, তাহলে আর কী বলব? যদি ঐ দুর্ঘটনায় আমার মৃত্যু হতো তাহলে তো এখানে আসতাম না।
    আপনার আইডি প্রুফটা খুব দরকার। আপনি পাসপোর্টও হারিয়ে ফেলেছেন।
    হ্যাঁ।
    ঐ দুর্ঘটনার সময়েই?
    হ্যাঁ, তখন সঙ্গে ছিলো।
    পুলিশের কাছে খোঁজ নিয়েছেন?
    না।
    একবার খোঁজ নিন। আপনাকে একটা টাকাও ফাইন দিতে হবে না। সিগ্‌নেচারটা মনে আছে?
    আছে। সই করব?
    করুন।
    সইটা উনি মিলিয়ে নেন। তারপরে কোথায় একটা ফোন করেন। অল্প পরেই এটিয়েম কার্ডটা আমার হাতে চলে আসে। আপনাকে একটা নতুন পিন দেবো আমরা। একদম ঘাবড়াবেন না। আপনি যে প্রাণে বেঁচে গেছেন এটাই ভগবানের একটা বিরাট আশীর্ব্বাদ।
  • Du | 230.225.0.38 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৯:৩৪652332
  • এটা আমি দেখেছি তাই আরও ভালো লাগছে যে এই গল্পের মধ্যে দিয়েই পুরোনো ভারতটা বদলে আজকের ইন্ডিয়া হয়ে যাচ্ছে। একরকমভাবে একটা নতুন দেশের হয়ে ওঠা ঘটে চলেছে কথায় কথায়।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১০:১৯652333
  • দুকে ক.............
  • lcm | 118.91.116.131 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১০:৩৪652334
  • এগজ্যাক্টলি। এই বদলটা আমি মিস করেছি। লেখাটা পড়লে কিছুটা ধরা যাচ্ছে।
  • de | 24.139.119.172 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১০:৪৬652335
  • অপূর্ব!!
  • কল্লোল | 111.63.84.131 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১১:১৪652336
  • বড় ভালো লেখা। আগের লেখাগুলোয় (রাশিয়ার গপ্পো, দূতাবাসের গপ্পো) একটা ছটফটানি ছিলো। ভালো লেগেছিলো খুব। কিন্তু এই লেখাটা কেমন মায়াময়। আবিষ্ট করে দেয়।
  • kiki | 125.124.41.34 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৪:৩৯652337
  • রাশিয়ার গল্প কিছুটা মিসিয়েছি মনে হয়, লিঙ্ক প্লিজ।
  • spa | 71.246.161.170 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৫:৪৯652340
  • সে, খুব ভালো লিখ ছেন। কিন্তু, অফিসে এসে এই সব পড়ে টড়ে দোকান খুল তে তো অনেক সময় লেগে যায়। তার কি হবে? আবার এম ন লিখ্ছেন যে না পড়ে কিছু শুরু করা যায় না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন