এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • চাগ্রীর গপ্পো

    সে
    নাটক | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ | ২০৮৪৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 24.99.101.247 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৭:১২652474
  • মিউজিক! মিউজিক!
  • সে | 188.83.87.102 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৭:১৬652475
  • বুড়া | 113.18.171.88 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৭:০০652476
  • সবিনয়ে বলি ক্যাটওয়াক মানে বেড়ালের মতো হাঁটা নয়, বরং বেড়ালের যাতায়াতের মতো সরু প্ল্যাটফর্ম। থিয়েটারের মঞ্চে বা সিনেমার সেটে দর্শকের চোখের বাইরে অনেক উঁচুতে এপার ওপার সরু পথ তৈরি করা থাকে। মূলত আলোক সম্পাতের কর্মীরাই ব্যবহার করেন আলো লাগাতে। এটাকেই ক্যাটওয়াক বলে। ফ্যাশন শো নামটা ধার করেছে কারণ সরু ramp ওরকম দেখতে বলে। এরও ব্যবহার থিয়েটার থেকেই নেওয়া, যাঁরা মিনার্ভায় LTG-র নাটক দেখেছেন স্মরণ করতে পারবেন।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ১৯:৩১652477
  • ব্রেক শেষ।
    এখন আমরা কথা বলব কমান্ডার সাহাবের সঙ্গে। ইনি এখন অবশ্য ভারতীয় নৌবাহিনীতে নেই, মার্চেন্ট নেভিতে কাজ করেন। মিঃ হাসান।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ২০:২১652478
  • মিঃ হাসানের সঙ্গে আলাপ নেহাৎই কাকতালীয়ভাবে এক ঈদের দিনে। সপরিবারে পুত্রকন্যাসহ মাংস ফল মিষ্টান্ন ইত্যাদি নিয়ে তিনি পায়ের ধুলো দিয়েছিলন। অত্যন্ত অমায়িক ও মিষ্টভাষী মানুষ। সেদিনই তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর অভিপ্রায়, আরো একটা নতুন ব্যবসা খুলবার। আরো একটা, কারন এর এরমধ্যেই তাঁর গোটা তিন চার ব্যবসা রয়েছে, যার মধ্যে দুটো ট্যানারি। পরিবেশ দূষণের কারনে কোলকাতার ভেতরে ট্যানারি চালাবার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার বাহাদুর, এই নিয়ে অনেক সমস্যা মামলা মোকদ্দমা চলছে। ব্যাপারটা হয়ত কিছুদিন অবধি ঠেকিয়ে রাখা যাবে, কিন্তু এড়ানো যাবে না। অন্যদিকে কোলকাতা থেকে সরিয়ে বাইরে ট্যানারি খোলাতেও সমস্যা বিস্তর। মুসলমানদের লোকে চট করে জমি বেচতে চায় না। অবশ্য মল্লিকপুরে ইনি বেশ খনিকটা জমি কিনে রেখেছেন, যদিও সেটা বাড়ি বানিয়ে বসবাসের জন্যে, ট্যানারির জন্যে নয়। এ ছাড়া রয়েছে প্রেসের ব্যবসা, করোগেটেড প্যাকিং বাক্সের ব্যবসা কিন্তু সেগুলোও তেমন ভালো চলছে না। তার মূল কারন হচ্ছে তাঁর মার্চেন্ট নেভির চাকরি। সেখানে মোটা অর্থ উপার্জ্জন হয়, কিন্তু বছরে আট থেকে দশমাস কাটে জাহাজে। ব্যবসায়ে সাফল্যের মূলমন্ত্র হলো নিজে দেখভাল করা। বিশ্বস্ত লোক পাওয়া যায় না। আগের পক্ষের ছেলে একটা ব্যবসা দেখছে বটে, কিন্তু সবকটা তার হাতে দেওয়া যাচ্ছে না, আবার বর্তমান পক্ষের ছেলে মেয়েরা এখনো সাবালক হয়নি, স্ত্রী একেবারেই সাধাসিধে এবং নিরক্ষর। এসমস্ত আলোচনা গল্পের ছলেই করছিলেন তিনি, এবং আমিও শুনছিলাম আর পাঁচটা দিনন্দিন আলাপ আলোচনার মতো করে। মাঝে সাঝে দুয়েকটা প্রশ্নও করেছি, যেমন, মল্লিকপুর কোথায়? জানা গেল সেটা বারুইপুর পেরিয়ে। অল্পক্ষণ পরে ছেলেমেয়েসহ পরিবারকে বসিয়ে রেখে তিনি ধাঁ করে ঘন্টা তিনেকের জন্যে বেরিয়ে মল্লিকপুর থেকে ঘুরেও এলেন। সেখানে আছে তাঁর কিছু চেনাজানা শ্রমিক, তাদের ঈদের বকশিস দেওয়া দরকার।
  • ঐশিক | 24.140.33.186 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ১১:৩২652479
  • লড়াই এর গপ্প এগিয়ে চলুক
  • de | 69.185.236.53 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ১১:৫৮652480
  • ক্ষী অভিজ্ঞতা!! বাপরে!
  • a | 213.219.201.58 | ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ২০:১১652481
  • আপ
  • সে | 188.83.87.102 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৩652482
  • মিঃ হাসানের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ওঁর বাচ্চা ছেলেমেয়ে দুটো আমার বাচ্চার বন্ধু, তাদের সূত্রেই আলাপ, কিন্তু ভদ্রলোকের সঙ্গে আরেকটা কমন ব্যাপার আমার ছিলো। আমরা দুজনেই অবিভক্ত সোভিয়েত দেশ দেখেছি। হয়ত ভিন্ন আঙ্গিকে, কিন্তু সেটাই একটা যোগসূত্র। মধুর স্মৃতির। ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন জায়গায়, কিন্তু স্মৃতি রোমন্থনের জন্যে সেটাই কাফি। সত্তরের দশকে যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কোনো চাকরি পাচ্ছিলেন না কমান্ডার সাহাব। সেই বছরটা নাকি ছিলো ইঞ্জিনিয়ারদের জন্যে অভিশপ্ত। শেষে যোগ দেন ভারতীয় নৌবাহিনীতে। অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন এবং কাজে উন্নতি হতে থাকে। ভারতীয় নৌসেনাকে আধুনিক প্রযুক্তি শেখানোর জন্যে পাঠানো হতো সোভিয়েত দেশে। সেই সুযোগ সকলে পেত খুব কম লোক। সেই সূত্রেই তিনি কাটিয়েছিলেন টানা এক বছর সুদূর প্রাচ্যের ভাদিভস্তকে। সেখানেই ভাষা শেখা, ভাষা শিখে তবে কাজ শেখা। সমুদ্রের ওপর দিয়ে রোজ প্রায় এক দেড় কিলোমিটার হেঁটে যাওয়া, জমাট সমুদ্রের বরফের ফাটলে পড়ে গিয়ে প্রাণসংশয়, উদ্ধার হবার পরে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে সেরে ওঠা, এই সমস্ত ভঙ্কর রোমহর্ষক গল্প শোনানোর আগ্রহী শ্রোতা পেয়েযান তিনি।
    ভ্লাদিভস্তকের জমাট সমুদ্রের ওপরে নির্দিষ্ট হাঁটার পথ ভুলে গিয়ে কেমন করে ফাটলে পড়ে গেছলেন, সেকথা বলতে বলতে কুড়ি বছর পরেও যেন ভয়ে শিউরে ওঠেন। ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতা। আকস্মিকভাবে মৃত্যুর সম্মুখীন। চিন্তা ভাবনার জন্যে এক সেকেন্ডের কোনো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভগ্নাংশও নেই। কিছু বুঝবার আগেই টুপ করে ডুবে গেলেন হীমশীতল জলের মধ্যে। এইরকম ঘটলে কেউ বাঁচেনা। সমুদ্রের সেই ভয়াবহ শীতল জলের গভীরে ডুবতে ডুবতেই অনেকের হার্ট ফেল হয়ে যায়, অথবা কিছুটা ডুববার পরে যখন কেউ উঠে আসে, সে জলের তল পায় না, মাথার ওপরে থাকে কয়েক মিটার পুরু বরফের চাঁই। কিন্তু বিধি সদয় ছিলেন। ঠিক যে ফাঁক দিয়ে গলে পড়েছিলেন, অপ্রত্যশিতভাবে সেই ফাঁক দিয়েই টুপ করে ওপরে উঠে এলেন। রবারের বল মাটিতে যেমন বাউন্স করে উঠে আসে। সোভিয়েত নৌসেনা মুহূর্তের মধ্যে তাঁকে তুলে ফেলে। তাড়াতাড়ি কম্বলে জড়িয়ে অচৈতন্য মিঃ হাসানকে নিয়ে যায় জাহাজে। সেই অবস্থাতেই জ্ঞান ফেরার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় প্রথাগত চিকিৎসা। এইটুকু বলে মিঃ হাসান মুচকি হাসেন।
    প্রথাগত চিকিৎসাটা কী?
    ঢক্‌ঢক্‌ করে গিলিয়ে দেওয়া হয় অনেকটা ভোৎকা।
    তারপর? আর কোনো অসুস্থতা হয় নি?
    বিলকুল নেহি। উইদিন অ্যান আওয়ার আই ওয়জ পারফেক্টলি অলরাইট।
    মিঃ হাসান আমায় অনুরোধ করেন তাঁকে সহযোগিতা করবার জন্যে। উনি কম্পুইটার ট্রেনিং ইন্স্‌টিটিউট খুলতে চলেছেন এক পার্টনারের সঙ্গে। তোপসিয়ায়। শুধু প্রফিট নয়, এই ব্যবসার উদ্দেশ্য অন্য। ঐ অঞ্চলে বসবাস করে এক বিশাল মুসলমান সম্প্রদায়। তাদের শেখাতে হবে কম্পিউটার। সুলভে, বা বিনামূল্যে। দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। পিছিয়ে থাকলে চলবে না।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫১652484
  • বেশ কিছুদিন যাবদ্‌ যেহেতু আমি আবার বেকার এবং সাকার হবার এমন একটা সম্ভাবনা যখন সেধে সেধে আমায় ডাকছে, তখন হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলবার মতো ধৃষ্টতা কোনোমতেই সাজে না। এনিয়ে গুছিয়ে ভলো করে আলোচনা করা দরকার। কেমন কোম্পানী কেমন পয়সাকড়ি কী পড়াতে হবে কাদের পড়াতে হবে কতটা সময় দিতে হবে, সব মিলিয়ে এই নতুন জীবিকায় আমার ভবিষ্যৎই বা কী, এসব জেনে নেওয়া দরকার। ভেসে ভেসে অনেক তো হলো, শুধু অনিশ্চয়তাকে সম্বল করে দিনমজুরির জীবন যে কীরকম তাতো কম জানা হয় নি। সাহস করে আরেকটু স্থিতিশীল কিছু খুঁজতে দোষ কোথায়? ফোন করে একটা দিন ঠিক করি। মিঃ হাসানের ছুটির দিন প্রায় ফুরিয়ে আসতে চলেছে। আবার চলে যেতে হবে জলে, তার আগেই এই নতুন ব্যবসার উদ্বোধন হয়ে যাওয়া চাই।
    আমায় তিনি নিয়ে চলেন তাঁর বিজনেস পার্টনারের সঙ্গে আলাপ করাতে। তিলজলা তোপসিয়া এলাকায়। বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে দেজ মেডিকেলের দিক ধরে পিকনিক গার্ডেন পেরিয়ে শুরু হয়ে যাচ্ছে এই এরিয়া। মূল কোলকাতার থেকে কেমন যেন বিচ্ছিন্ন। দোকানপাট রাস্তা মানুষের পোশাক আশাক ভাষা, সমস্ত অনেকটাই আলাদা। কোলকাতার মধ্যে যে এরকম আরেকটা কোলকাতা আছে, বা এরকম আরো অনেক কোলকাতা আছে তা ধীরে ধীরে শিখি। ঘিঞ্জি অঞ্চল, আর কেমন যেন বড্ড বেশি আনপ্ল্যান্ড। মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হেলায় ফেলায় গড়ে ওঠা একটা সভ্যতা। রাজাবাজার, এলিয়ট রোড বা পার্কসার্কাস অঞ্চলে সে মুসলমান প্রধান এলাকা, সেগুলোর সঙ্গে এই অঞ্চলের তুলনা হয় না। বরং মিল পাই মেটিয়া বুরুজ গার্ডেনরীচ খিদিরপুরের সঙ্গে। সেরকম কোনো বাসের ব্যবস্থা প্রায় নেইই বলা চলে। রাস্তাগুলো সরু, ভাঙা, এবড়ো খেবড়ো। জঞ্জাল ভর্তি, আর সম্স্ত জায়গাটা জুড়ে বড্ড বেশি দারিদ্র্যের ছপ। অথচ ওরই মধ্যে রয়েছে কলকারখানা, ব্যবসা বানিজ্যও হচ্ছে। সন্ধ্যে হয়ে আসে, মসজিদগুলোর মাইকে শুরু হয়ে যায় আজান, মন্ত্রের মতো সমস্ত মেয়েরা মাথা ঢেকে ফেলে কাপড়ে। রিক্সা নিয়ে হয়। সাইকেল রিক্সা। তারপরে একটা সরু গলির মুখে থামে রিক্সা। আঁকাবাঁকা সেই গলির মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ কয়েকটা চার পাঁচতলা বাড়ি যাহোক তাহোক করে বানানো। তারই একটায় ঢুকি আমরা দুজন। গেটের মুখে দুটো নেড়ি কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে অলসভাবে। তিনচারটে শিশু কেউ বসে আছে রাস্তার পাশে, কেউ দাঁড়িয়ে, ময়লা জামা পরনে, নাকের নীচে সর্দি জমে রয়েছে। পাশ কাটিয়ে ঢুকে যাই ভেতরে। তেতলায় একটা ফ্ল্যাটে বেল টিপতে দরজা খুলে দেন এক ত্রিশোর্ধ যুবক। ইনিই পার্টনার। মুক্তার আহমেদ। সদ্য নামাজ সেরে এসেছেন, মাথায় তখনো রয়েছে কুরুশে বোনা টুপি।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:০৩652485
  • মিঃ হাসানের আগমনে মুক্তার আহমেদের মুখে ফুটে ওঠে আনন্দ শ্রদ্ধা মেলানো অভিব্যক্তি। ওঁকে কোথায় বসতে দেবেন, কী খেতে দেবেন, কেমন করে আতিথেয়তা রক্ষা করবেন, খেই পান না। সরু একটা করিডোর কাম বারান্দা পেরিয়ে ফ্ল্যাটের মধ্যিখানটায় ঢুকি। একটা হলঘরমতো, তার একপাশে দুটো বড়ো ঘর, বাথরুম, একদিকে জানলা, অন্যদিকে আরেকটা ঘর, সেটার দেয়াল ঘেঁষেই ছিলো করিডোর, সেই ঘরটা বন্ধ। আর আছে একটা ছোটোখাটো রান্নাঘর। ভদ্রলোক একাই থাকেন এখানে। অকৃতদার। এক কিশোর ছেলে সেখানে চাকরের কাজ করে। তড়িঘড়ি আমাদের আপ্যায়ন করতে সে এক থালা ভর্তি করে আম কেটে আনে। আর আসে গোলাপজল দেয়া শরবৎ, স্টিলের গেলাসে। প্রায় আসবাবহীন এই ফ্ল্যাট। থাকার মধ্যে ঐ ঘরদুটোর প্রত্যেকটায় রয়েছে একটা একটা করে মোট দুটো কম্পিউটার। দেখে মনে হয় পুরোনো। সেই কম্পিউটার রাখার জন্যে সস্তার তক্তা দিয়ে বানানো টেবিল। লোহার চেয়ার। নেড়া দেয়াল। কাচের জানলা। বদ্ধ গুমোট। এত ঘিঞ্জি এই পাড়া, যে গ্রীষ্মের এই সন্ধ্যেতেও এতটুকু হাওয়া বয় না। দুটো চেয়ার দখল করে বসেছি মিঃ হাসান ও আমি। মিঃ আহমেদের বসবার জন্যে কোনো আসন নেই। তিনি গদোগদোভাবে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমের থালাটুকু রাখবার জন্যে টেবিল থেকে কীবোর্ড সরিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানেই চেপেচুপে স্থান পেয়েছে শরবতের গেলাসদুটো। এখন মিঃ আহমেদের হাতে হালুয়া ও অন্যান্য মিষ্টান্ন ভরা আরেকটা থালা। সেটা যে তিনি কোথায় রাখবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না। আমি শশব্যস্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চাই। চেয়ারটুকু খালি হলে সেখানেই নাহয় থালাটুকু রাখা যাবে। কিন্তু এঁরা দুজনেই আমায় বাধা দেন। তবে কি মিঃ আহমেদ ওভাবেই থালা হাতে দাঁড়িয়ে থাকবেন? সেতো ভারি অস্বস্তিকর অবস্থা হবে। মিঃ আহমেদের জন্যে কতটা জানিনা, তবে আমার নিজের জন্যে অবশ্যই। এই সমস্যা থেকে বেরোনোর উপায় হচ্চে দ্রুতগতিতে আম খেয়ে নিয়ে থালা খালি করে দেওয়া। কিন্তু আমি হলাম গিয়ে অতিথি। আমার রয়েসয়ে খাওয়া উচিৎ। ভদ্রতা বলে একটা ব্যাপার আছে। এদিকে আবার ভন্‌ভন্‌ করে মাছি উড়ছে। মিঃ আহমেদ একহাতে থালা নিয়ে অন্য হাতে মাছি তাড়াচ্ছেন। হালুয়াটা আড়চোখে দুয়েকবার পর্যবেক্ষন করলাম। এটা সুজি দিয়ে বানানো বাঙালী মোহনভোগ নয়, মোটামোটা বরফির আকৃতির হালকা বাদামী রঙের মিষ্টি। আর যাই হোক, সুজি নয়, অন্য কিছু। পাশে উজ্জ্বল গোলাপী রং দেওয়া রসের মিষ্টি রয়েছে। দানাদার টাইপের। আর রয়েছে পেঁড়াজাতীয় কিছু জিনিস, ক্ষীরের মিষ্টিও হতে পারে, আড়চোখে দেখে ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না। এবং রয়েছে নিমকি। এই নিমকি জিনিসটা মিষ্টির দোকানে শোকেসে যেমন দেখা যায়, ঠিক তেমনি। এই ব্যাপারে আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।
    এই ত্রিশঙ্কু অবস্থাতেই দিব্য কথাবার্তা আলাপ আলোচনা হতে লাগল। খুব শিগগীরই এখানে অনুষ্ঠিত হবে ট্রেনিং সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। দিনক্ষন ঠিক করে ফেলা হলো। ফ্রাইডে। সেটাই শুভদিন। এটাই সেই ট্রেনিং সেন্টার। হলঘরটা এবং আরো একটা ঘর ব্যবহৃত হবে ক্লাসরুমের জন্যে। একটা সুন্দর নামও ঠিক হয়ে গেছে। সেই নামেই ট্রেড লাইসেন্স বের করা হবে। ট্রাইডেন্ট। ট্রাইডেন্ট কম্পিউটার সিস্টেমস্‌।
    আমি লজ্জা লজ্জা করে দুপিস্‌ আম খেলাম, শরবৎ পুরোটাই খেলাম। প্রচন্ড গরমে ঐ শরবৎ যেন অমৃত। মিঃ হাসানও দু তিন পিস আম খেলেন। মিষ্টি ও নিমকির থালার একটা আইটেমও আমরা খাইনি। মিঃ আহমেদ খুব পেড়াপিড়ি করতে লাগলেন, কিন্তু মিঃ হাসানকে দেখে যা বুঝলাম এরকমই রেওয়াজ আতিথ্য রক্ষা করার। তারপরে সেখান থেকে খোদা হাফেজ করে বেরিয়ে আমরা চলাম গড়িয়াহাটের দিকে। একটা জায়গায় বসে ধীরে সুস্থে আলোচনা করতে হবে। এই নতুন ট্রেনিং সেন্টার সম্পর্কে আমার মতামত জানতে চান মিঃ হাসান। আবার আমাকেও জেনে নিতে হবে কিছু জিনিস। গড়িয়াহাট আমার পরিচিত কোলকাতা। বসে আলোচনা করবার জন্যে একটা জায়গা চাই। সন্ধ্যে সাড়ে ছটা সাতটা মতো বাজে। ভীড় ঠেলে একটা এয়ারকন্ডিশান্ড রেস্টুরেন্টে বসে, জিরিয়ে নিয়ে খাবার খেতে খেতে কথা বলা যাবে। এরকমই প্ল্যান ওঁর।
    নিয়তির কী অদ্ভুত পরিহাস। মিঃ হাসান আমায় নিয়ে ঢুকলেন বেদুইনে।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:৪১652486
  • সেটাও ছিলো প্রখর গ্রীষ্মের এমনই একটা সন্ধ্যা। মধ্যিখানে কেটে গেছে একটা বছর। ওখানে ঢুকবার আগে আমার মনে হয় পাদুটো যেন রাস্তার সঙ্গে আটকে গেছে, আর কিছুতেই এগোবে না সামনে, যেন পক্ষাঘাত হয়েছে। দোকানের সামনে বাইরে যেখানটায় কাবাব সেঁকাসেঁকি চলছে, সেই অবধি চলে এসেছি, কিন্তু আর ভেতরে ঢুকতে তো মন চায় না। সেদিনের সেই অপমান তো জীবনেও ভুলবার নয়। কিন্তু গেটের সামনে থেকেই এরা হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। আইয়ে সাব, আইয়ে সাব। আসুন আসুন। কী দেব? আসুন, ভেতরে গিয়ে বসুন। কমান্ডার সাহাব কিছুটা এগিয়ে গিয়েছেন, তারপরে পেছন ফিরে আমায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলেন, দিস্‌ প্লেস ইজ্‌ নট এক্স্‌পেন্সিভ, ইফ্‌ ইউ ডু নট লাইক দিস্‌ প্লেস উই ক্যান গো টু সাম বেটার প্লেস। হোয়াট অ্যাবাউট কোয়ালিটি? শ্যাল উই গো টু কোয়ালিটি?
    বেদুইনের দুজন কর্মচারী তখন আমদের প্রায় টানা হেঁচড়া শুরু করেছে। আইয়ে স্যার, অন্দর আইয়ে। ভেতরে গিয়ে বসুন। আপস্টেয়ার্স মে আচ্ছা জায়গা আছে। প্লীজ ম্যাডাম।
    ভেতরে ঢুকি। ওপরে নয়, নীচেই বসি। সেদিন যে চেয়ারটায় বসতে গেলে এরা আমায় প্রায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলো সেই চেয়ারে অন্য একজন বসে আছে। এরা আমায় দেখে চিনতে পেরেছে কি? পারেনি মনে হয়। আমার কিন্তু মনে আছে সেই মুখগুলো।
    পহলে ঠান্ডা লে কে আও। বাদ্‌মে অর্ডার লেনা।
    টুঁ শব্দটি করেনা ওয়েটার। ঝপাঝপ দু বোতল পেপ্‌সি এনে দেরাখে টেবিলে। তারপর অর্ডার করেন কমান্ডার সাহাব। মাটন রেজালা, চিকেন বিরিয়ানী, স্যালাদ, আরো কী কী যেন।
    রেজালা পছন্দ হয় না মিঃ হাসানের। বলেন, ইয়ে গোশ্‌ৎ ঠিকসে নেহি পাকায়া। ওয়ান ডে আই উইল ইনভাইট ইউ টু টেস্ট্‌ অথেন্টিক মাটন রেজালা।
    অউর কুছ্‌ চাইয়ে সাব? দিদি আর কিছু লাগবে?
    ওয়েটারকে পরে আসতে বলে আমরা ট্রেনিং সেন্টারের আলোচনায় মনোযোগী হই। এত তাড়াতাড়ি ঘুরে যায় চাকা? জয় মা সিদ্ধেশ্বরী, যখন বসবার কোনো জায়গা থাকত না, তোমার থানে এক কোণে বসে কত কথা তোমায় বলেছি মনে মনে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দেখালে তোমার লীলা। তবু নাকি আমি নাস্তিক? যার কেউ নেই তার ভগবান আছেন।
  • সে | 188.83.87.102 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৫:১১652487
  • সাড়ে তিন হাজার টাকার মাইনে ঠিক হয় আমার। সপ্তাহে দু তিন দিন ক্লাস থাকবে। আমার ইচ্ছে হলে তার বেশিও আসতে পারি। কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিক ছাড়াও ঐ অঞ্চলে যাবার আরেকটা পথ আছে সেটা নিউ বালিগঞ্জের ভেতর দিয়ে। সেটা হাঁটা পথ। রিকশা পুরো পথ যাবে না। রিকশা বদলাতে হবে।
    কেন?
    নিউ বালিগঞ্জ শেষ হবার পরে তিলজলার একটা জায়গায় একটা নালা আছে। কালভার্ট। সেটা পার হবার জন্যে পায়ে হাঁটা সরু একটা ইটের পথ। তার ওপরে রিকশা যেতে পারে না। কোলকাতার ভেতরের সেই কোলকাতাটাকে সেইভাবেই আলাদা ভুখন্ডে বিচ্ছিন্ন করে রাখা আছে। অথচ ঐ পথটুকু চলনসই করে রাখলে যাতায়াতের উপায়টা সহজ হতো। সেই যোগাযোগটুকু কেন যে এত দুর্গম করে রাখা তার সদুত্তর কেউ দিতে পারবে না।
    কদিন পর থেকে ঐ পথেই শুরু হবে আমার নিত্য যাওয়া আসা। কালভার্টের এপারে পরিচ্ছন্ন ক্রমবর্ধমান নগরীতে প্রোমোটারদের কল্যানে গড়ে উঠছে বিবিধ হাউজিং সোসাইটি। অনেক বাড়ীর সঙ্গেই গ্যারেজে গাড়ী রয়েছে। কিন্তু সেই গাড়ী এই পথ দিয়ে সরাসারি পৌঁছবে না ওদিকে। ঘুরে যেতে হবে অন্ততঃ তিন চার কিলোমিটার। তেমনি ওপারের অ্যাসিড গন্ধভরা খানা খন্দ ডোবা পরিবেষ্টিত চামড়ার কারখানার সরু এবড়ো খেবড়ো রাস্তা পেরিয়ে কোনো গাড়ী বা রিক্সা সরাসরি ঢুকতে পারবে না এদিকে। ওপারে আবার মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের প্ল্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গজিয়ে উঠছে দ্বিতল, ত্রিতল বা আরো করো কয়েকতলা। এদিকের লোক, ওদিকে তেমন যেতে চায় না। ভয় পায়। অচেনার প্রতি সহজাত যে ভয়টা সাধারনত থাকে মানুষের, সেই ভয়টা। রেজালাটা সত্যিই কেন জানি না মুখে রোচে না।
    আমি মনস্থির করে ফেলি, ঐ শর্টকাটই নেবো। হাঁটতে কষ্ট হলে কিছুটা রিকশা করে যাবো, বাকিটা ফের হাঁটবো। অত ভয় করলে চলবে আমার?
  • s | 117.131.42.250 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৮:২৬652488
  • গল্পদিদির আসর। এই আনন্দ চলতেই থাকুক।
  • pathak | 233.29.204.178 | ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ১৬:৩৮652489
  • এই ব্যাপারটা একদম বন্ধ হয়ে গেছে
  • কল্লোল | 125.242.184.199 | ০৯ জানুয়ারি ২০১৫ ১৭:০০652490
  • সে কোই? ব্রেক তো অনেকটা হলো।
  • se | 87.78.82.82 | ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ২৩:৩৬652491
  • আমি এখন কদিন হল প্রাগে। কাল ঘরে ফিরছি। তারপরে লিখব।
  • s | 117.131.42.250 | ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২৭652492
  • এই ঠান্ডায় প্রাগে? ভগবান আপনাকে সুস্থ রাখুন।
  • কল্লোল | 125.242.185.239 | ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৬:৫৮652493
  • হুঁ হুঁ বাওয়া, সে আমাদের রাশান ঠান্ডা হজম করে এয়েচে।
  • ?? | 59.207.249.211 | ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৯:৪৬652495
  • ওটা প্রাহা না?
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৫652496
  • শুক্রবার। জৈষ্ঠের সকাল গড়িয়ে দুপুর প্রায়। কসবার দিক থেকে নিউ বালীগঞ্জ হয়ে হাঁটা শুরু করেছি। একটার পর একটা গলি পেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। সেই নিউ বালীগঞ্জ। সেই মডেলিং এর প্র্যাকটিস। অবশ্য সেসব চেনামুখেরা এখন আমায় দেখতে পাবে না। দেখলেও চিনতে পারবে কি না সন্দেহ হয়। কারন মধ্যিখানে কেটে গিয়েছে একবছরেরও বেশি সময়। এই এক বছরে বয়স ছাড়াও আমার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বাসস্থান বদলেছে বেশ কয়েকবার। চেহারা পাল্টেছে। বেড়েছে একটার পর একটা জীবিকা বদলানোর অভিজ্ঞতা। কোলকাতা বিয়াল্লিশ থেকে কোলকাতা ঊনচল্লিশ ধরে হাঁটছি। চড়া রোদ। গৃহস্থ এলাকা। সমস্ত বাড়ীরই দরজা জানলা বন্ধ। ফাঁকা পথ। যদি পথ হারিয়ে ফেলি তবে কারোকে জিজ্ঞেস করতে পারব না। তবুও পথ ভুল হয় না। একটা সময় পৌঁছে যাই সেখানে, যেখানে সেই সীমানা। সেই কালভার্ট। সেইটে পেরোতেই দৃশ্যাবলী পাল্টে যায় আগাগোড়া। মাথায় ঘোমটা টানা মেয়েদের দেখি। এদিকের বাড়ীগুলো দেখলেই মনে পড়ে যায় মুক্তার আহমেদের সঙ্গে দেখা করবার দিনটা। পথ চিনতে ভুল হয়নি আমার। পাঁকাল জলা জমি থেকে দুর্গন্ধ আসছে। চামড়া অ্যাসিডের গন্ধ। কালো জল। প্লাস্টিক। আবর্জনা। তিলজলা ধরে পিকনিক গার্ডেনকে এড়িয়ে যে অলিগলি, সেই পথে চল্লিশ মিনিট কি পঞ্চাশ মিনিট বা হয়তো একঘন্টা হাঁটবার পর পেয়ে যাই সেই চেনা রাস্তা। হ্যাঁ ঐ তো, ঐ বাড়ীটা। জুম্মার নমাজ শেষ হয়েছে। প্রায় পরপর দুটো ইটিং হাউসের প্রত্যেকটার সামনেই গামা সাইজের ডেচ্‌কিতে বিরিয়ানি। নমাজ শেষে লোকেরা সেখানে ভিড় করে বিরিয়ানি কিনছে। এদের অনেকেই সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরা। আরো বিক্রি হচ্ছে চাঁপ। সমস্তই বীফ। বেশ গমগমে পরিবেশ। লোহার গ্রীলের দরজা ঠেলে আমি অপ্রশ্বস্ত সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে চলি। বেল টিপতেই দরজা খুলে দেয় সেই কিশোর ভৃত্য। আজ সে পরে আছে পরিষ্কার জামা প্যান্ট। ভেতরের হলঘরটায় দশ বারোটা ফোল্ডিং চেয়ার পাতা হয়েছে। সেগুলোর মুখোমুখি একটা হাতল ওয়ালা চেয়ার। যা বোঝা যাচ্ছে কোম্পানীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি। মিঃ হাসান এককোণে দাঁড়িয়ে একজন লম্বা ভদ্রলোকের সঙ্গে খুব গম্ভীরভাবে কথা বলছিলেন। আমায় দেখতে পেয়েই স্বাগত জানালেন, তারপরে সেই ভদ্রলোকটির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন, লেট মী ইন্ট্রোডিউস্‌ ক্যাপ্টেন সাহাব, শী ইজ্‌ ...
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫৭652497
  • এলাকার হোমরাচোমরা ব্যক্তিরা একে একে এসে গেছেন জুম্মার নামাজ সেরে। এসে গেছেন লোকাল কাউন্সিলার সাহাব। সেই সঙ্গে ভবিষ্যৎ ছাত্রছাত্রী গোটা পাঁচেক। মিষ্টি ও শরবতের আয়োজন হয়েছে। সেসব সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন মুক্তার আহমেদ। তিনি বিনয়ে প্রচন্ড গদোগদো। মুখে লাজুক লাজুক হাসি। ছোটো ছোটো দল হাসি ঠাট্টা করে চলেছে। সকলের বসবার জায়গা নেই। একেবারে উৎসব বাড়ীর পরিবেশ। ক্যাপ্টেন সাহাব আমার পাশে এসে বসলেন। আমরা পেছনের সারিতে বসেছি। সামনের দিকে হোমরাচোমরারা। আস্তে আস্তে হাসি ঠাট্টা গুঞ্জন থেমে গেল। মিঃ হাসান নীচুস্বরে কাউন্সিলার সাহাবকে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে ডাকলেন।
  • কল্লোল | 125.185.156.96 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৬:১১652498
  • প্রাহার এট্টা কিস্যা আছে, হয়তো অনেকেরই জানা।
    ভূগোলের মাস্টার পড়াচ্ছেন সাবেক চেকোস্লোভাকিয়া তখনও বর্তমান। তার রাজধানী প্রেগু। তাতে এক ছাত্র উঠে দাঁড়িয়ে কয় - স্যার ওটা প্রেগু নয় প্যাগ। মাস্টার কইলেন - ডোন্ট আর্গ।
    ভাবছি এখন হলে কি বলতেন? ডোন্ট আহা?

    সে - আরেট্টু বড় করে হয় না?
  • কল্লোল | 125.185.156.96 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৬:১২652499
  • * প্রাগ
  • b | 135.20.82.164 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৮:৫৫652500
  • টইকে বেলাইন করার এই নৈরাজ্যবাদী চেষ্টার প্রতি তীব্র #ধিক্কার/ জানালাম।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ১০:০২652501
  • টই একটু ধীরে ও অনিয়মিত চলবে, কারন হচ্ছে স্বাস্থ্য একটু বেগতিক। :-)
  • de | 69.185.236.54 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ১১:২১652502
  • ধীরেসুস্থে লিখুন, কোন তাড়া নেই!
  • কল্লোল | 111.63.92.249 | ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ১৩:৩৩652503
  • হ্যাঁ হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে উঠুন। ততক্ষণ আমরা বসে আছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৭652504
  • বিস্‌মিল্লাহ এ রহমান এ রহিম, বলে কাউন্সিলার সাহাব বক্তব্য শুরু করলেন।
    ঘরে পিনড্রপ নীরবতা।
    হাম মুসলমানো কে লিয়ে...
    বক্তৃতা চলল অন্ততঃ ঘন্টাখানেক। এর মধ্যে কারেন্ট একবার চলে গিয়ে আবার ফিরেও এসেছে। গরমে ঘেমে উঠেছি সকলেই, কিন্তু প্রত্যেকেই মন দিয়ে সেই বক্তৃতা শুনে চলেছে। শুধু কিশোর ভৃত্য রান্নাঘরে আরো শরবৎ ও মিষ্টান্নের আয়োজন করে চলেছে। জলের কল খোলা ও বন্ধ করবার শব্দ, গ্রীষ্মের পড়ন্ত বিকেলের কাগেদের ক্ষীণ ডাক, নীচে রাস্তার কলে জল আসার পরে বালতির আওয়াজ, এইরকম দুয়েকটা আওয়াজ ছাড়া ব্যাকগ্রাউন্ডে আর কোনো ডিস্টারব্যান্স নেই।
    মূল বক্তব্য হচ্ছে এই, যে এই এলাকার মুসলমানদের মধ্যে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়বার অন্যতম কারণ উচ্চশিক্ষার অভাব, বিশেষ করে কম্পিউটার শিক্ষা। এই ব্যাপারটা নজর আন্দাজ করলে আখেরে পিছিয়েই থাকতে হবে। তাই যত শীঘ্র সম্ভব সস্তায় কম্পিউটার শিক্ষার জন্যে মিঃ হাসান যে পদক্ষেপ নিয়েছেন সেই শুভ উদ্দেশ্যকে উনি বাহবা দিচ্ছেন এবং সুপারিশ করছেন যাতে সকলেই একে একে এই প্রচ্ষ্টাকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে সাহায্য করে। আর্থিক অনুদান সম্ভব হচ্ছে না, কারণ প্রতিষ্ঠানটি প্রাইভেট, কিন্তু এলাকার যুবসমাজ যদি এই শিক্ষার সুযোগ নেয়, তবে আখেরে তাদেরই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সুবিধে হবে। হিন্দুরা দলে দলে কম্পিউটার শিখে নিয়ে ভালো ভালো চাকরি বাকরি পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমরাই বা পিছিয়ে থাকব কেন? আমাদের যুবকরা বেরোজগার থাকবে কেন?
    মাঝেমধ্যে তিনি স্থানীয় হোমরাচোমরা কয়েকজন সমাজপতি গোছের লোকজনের নামোল্লেখ করলেন। তাঁরাও এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন সেটাও জানালেন।
    বক্তৃতাশেষে বিপুল করধ্বনির মধ্যেই শরবৎ ও মিষ্টি পরিবেশিত হয়ে গেল।
  • সে | 188.83.87.102 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৩652506
  • অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলেও ভাঙা উৎসববাড়ীর পরিবেশ। এলেবেলেরা চলে গেলেও, হোমরাচোমরারা তখনও উপস্থিত। কাউন্সিলার সাহেব ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা অবশ্য চলে গেছেন। ফোল্ডিংচেয়ারগুলোয় বসে আছি আমরা জনা দশেক। ক্যাপ্টেন সাহাব ও তাঁর দুই যুবতী কন্যা, কমাণ্ডার সাহাব, একজন ধনী ব্যবসায়ী ও তাঁর কিশোর পুত্রদ্বয়, যারা এবারেই বোর্ডের পরীক্ষা দিয়েছে - রেজাল্ট আসন্নপ্রায়, আরো জনা দুই প্রবীন মানুষ। মুক্তার আহমেদকে দেখা যাচ্ছে না, তিনি সম্ভবতঃ বাকি হোমরাচোমরাদের এগিয়ে দিতে গিয়েছেন। কিশোর ভৃত্য অতিরিক্ত চেয়ারগুলো ভাঁজ করে একেধারে জমা করে রাখে। ঘোর বিকেলে মাইকে আজানের আওয়াজ শুরু হতেই ক্যাপ্টেন সাহেবের কন্যাদ্বয় মাথায় ওড়না তুলে নেয়। সবাই একটু চুপ করে ফের কথা বলতে শুরু করে। আমার কেমন যেন নিজেকে বিজাতীয় লাগে। আমিও মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা তুলে দিই। মেয়েদুটো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে হাসে, মুখে কিছু বলে না।
    আলোচনা হয়, ক্লাস কবে থেকে শুরু হবে, কী থাকবে পাঠক্রমে। মোটকথা, আমরা এখন সিলেবাস কমিটির লোকজন। আমিও কথা বলি। উর্দু জানিনা বলে ইংরিজিতে। আমার অন্য ইন্স্‌টিটিউটে পড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকে এঁদের বোঝাতে চাই কী কী জিনিসের এখন মার্কেটে চাহিদা। কিন্তু সেসব যে চাইলেই পাঠক্রমে ঢোকানো যাবে তাতো নয়। আমাদের ইন্‌ফ্রাস্ট্রাকচার উন্নত নয়। দুটো আধভাঙা পুরোনো কম্পিউটার, সফ্টওয়্যার প্রায় কিছুই নেই, ফক্সপ্রো আছে একটায়, মেশিনগুলোয় জায়গা কম, মেমরি কম, নতুন সফ্ট্‌ওয়ার জোগাড় হলেও এই থ্রিএইট্টিসিক্স মেশিনগুলোয় কতটা কাজ কাজ করা যাবে সেটাই মূল প্রশ্ন।
    তাই ঠিক হয়, প্রথমেই থিয়োরি শেখানোর কাজ চলুক। মাস দেড়দুই থিয়োরী শেখানোর পরে ছাত্রদের গতিপ্রকৃতি জানা যাবে। তারপরে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করা যাবে এখন।
    এখন আর দেরী নয়, সোমবার সকাল থেকেই ক্লাস শুরু হচ্ছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন