এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • চাগ্রীর গপ্পো

    সে
    নাটক | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ | ২০৮৪৪ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Atoz | 161.141.84.102 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:২৮652541
  • আশির দশকের মাঝামাঝির সময় রেডিওতে হতো, আরব্য রজনী, রবিবার দুপুরে। খুব প্রিয় ছিল।
    "শেহরা জা আ আ ন
    হাজার রাতে রানী
    শোনাও তোমার কাহিনি ইইইইই "
    এরকম একটা গানও থাকতো শুরুতে।
    ঃ-)
  • Atoz | 161.141.84.102 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৩৩652542
  • ভালো গল্প কীরকম টিভি রেডিও সিনেমা নাটক সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে! ঃ-)
  • সে | 188.83.87.102 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৪২652543
  • ব্রেক শেষ। এখন শুরু করছি আরেকটা গল্প। এই চাকরিটা খুঁজে পাওয়াতেই একটা বিরাট পরিবর্তন এলো জীবনে।
    তাহলে একটু গোড়া থেকেই বলি। ভৈশ পর্বের শেষে একটু মৃদু হিন্ট আছে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের একটা কর্মস্থলে সম্ভাব্য চাকরির। এটা কিন্তু সেই চাকরিটা নয়। এটা অনেক পরের কথা। কিন্তু সেই সময়ের কিছু পরে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছিলো। মেয়ে না বলে ভদ্রমহিলাই বলি, তিনি আমার চেয়ে অন্ততঃ বছর আষ্টেক কি দশেকের বড়ো। এঁর সঙ্গে খুব মাঝে সাঝে দেখা হয়ে যেত। অল্প দুচারটে কথা। ব্যস্‌। তারপরে বিরাট একটা গ্যাপ। এরপরে আবার হঠাৎ দেখা। কিন্তু দুজনের দুজনকে বেশ মনে আছে। এবার থেকে প্রত্যেক সপ্তাহেই একবার করে দেখা হতে লাগল। ঘন্টা দেড় দুই গল্প আড্ডা হয়, একে অপরের সম্পর্কে একটু একটু করে জানছি। তখন আমার মোটামুটি বেকার জীবন। হাতে পয়সাকড়ি নেই। বাচ্চাকে বাড়ির কাছেপিঠে কোনো ইস্কুলে ভর্তি করতে পারছিনা। সে ইস্কুলে যায় না, লেখাপড়া হবার সমূহ সম্ভাবনা যখন নেই, তখন ছবি আঁকাটা শেখাচ্ছি। সেই সূত্রেই এই ভদ্রমহিলার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠছে। তার ছেলেও আঁকা শিখছে। আমি বেকার জেনে সে খুব আশ্চর্য হয়ে গেল, বাচ্চাকে ইস্কুলে পাঠাতে পারছিনা জেনেও ঘাবড়ে গেল। তারপরে বলল, তুমি তো খুব সহজেই চাকরি পেতে পারো।
    কীরকম? আমিতো বহুদিন যাবদ খুঁজে চলেছি।
    তুমি ঠিক জায়গায় খোঁজো নি মনে হচ্ছে। দাঁড়াও, আমার শ্বশুরমশাইয়ের চেনা এক ভদ্রলোক আছেন, তাঁর সঙ্গে তোমার যোগাযোগ করিয়ে দেবো। নেক্স্ট্‌ উইকে তো দেখা হচ্ছেই।
    আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে জর্দাপান খেয়ে ফেললাম, মেয়েটিকে ভাঁড়ের চা খাওয়ালাম। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই পুরো ব্যাপারটা ভুলে গেলাম।
    পরের সপ্তাহে যে সম্ভাব্য চাকরির ব্যাপারে মেয়েটির শ্বশুরমশাইয়ের চেনা ভদ্রলোকের খবরাখবর নিতে হবে, সেটা বেমালুম ভুলে গিয়েছি। আঁকার ইস্কুলটায় ডুব মারার প্ল্যান করেছি। হঠাৎ, ব্যাপারটা মনে পড়ে গেল। কিন্তু ততক্ষনে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। তখন বেরোলে যখন পৌঁছবো ততক্ষনে ক্লাস শেষ হতে বেশিক্ষন বাকি থাকবে না। ক্লাসের দরকার নেই, মেয়েটির সঙ্গে দেখা করবার জন্যেই পড়িমরি করে ছুটে চললাম আঁকার ইস্কুলে।
    গিয়ে দেখি বাচ্চাদের গার্জেনমণ্ডলী গুলতানিতে ব্যস্ত, কিন্তু সেই ভদ্রমহিলা নেই। আমি কারোকে খুঁজছি বুঝতে পরে একজন কর্মচারী শুধোলেন, কাকে খুঁজছেন বলুন তো?
    আমার দেওয়া ডেস্‌ক্রিপশান শুনে তিনি বললেন, ও! উনি তো ঐদিকে অডিটোরিয়ামে বসে নাটক দেখছেন।
    কি মুশকিল, আমার তো নাটকের টিকিট নেই।
    টিকিট লাগবে না, আপনি ঢুকে যান।
    কেউ কিছু বলবে নাতো?
    না না, ফালতু গ্রুপ, সেরকম লোকই হয়নি।
    হলে ঢুকে দেখি তিনচার রো পরেই আমার বান্ধবীটি বসে রয়েছে। সঙ্গে চশমাপরা এক ভদ্রলোক। দুজনে খুব মন দিয়ে নাটক দেখছেন।
    গোড় থেকে দেখিনি বলেই হয়ত, ঐ নাটক আমি বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারলাম না। হলে বড়োজোর জনা কুড়ি দর্শক। হুট করে উঠে পড়লে খারাপ দেখাবে, তাই বসে আছি। নাটক শেষ হতে সে আমাদের আলাপ করিয়ে দিলো।
    এ হচ্ছে আমার বান্ধবী।
    নমস্কার।
    আর এ আমার..
    নমস্কার
    বুঝেছি, বুঝেছি, আপনার কথা অনেক শুনেছি। আপনার বাবার চেনা এক ভদ্রলোক...
    বান্ধবী আমায় মাঝপথে থামিয়ে দেয়।
    তোমার সঙ্গে ও ব্যাপারে পরে কথা বলছি।
    ওরা আমাকে ওখানে দাঁড় করিয়ে রেখে দুজনে গেটের দিকে চলে যায়, আমি অপেক্ষা করে থাকি। রবিবার, দুপুর প্রায় বারোটা বাজে। অডিটোরিয়ামের পেছনের দিকে গাছপালার মধ্যে থেকে একটা সাপ বেরিয়েছিলো বোধহয়, সেটা নিয়ে হৈচৈ শোনা যায়। সাপটাকে মারা হচ্ছে তা শুনতে পাই। অন্যদিক থেকে মেয়েটিও একা ফিরে আসে আমার দিকে।
    অ্যাই শোনো, আমি না খুব সরি গো। তোমার কথাটা না আমি শ্বশুরমশাইকে বলতে একদম ভুলে গেছি। আসলে এত বিজি ছিলাম সারা উইক... নেক্স্‌ট উইকে সব খবর নিয়ে আসব।
  • Nina | 80.215.71.199 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৭:২৪652544
  • উফ থেমে গেলে এর মধ্যেইঃ-(
  • kumu | 132.161.246.211 | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৯:৩৯652545
  • সে,অসাধারণ আপনার লেখা।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৫652546
  • পরের সপ্তাহে তো গার্জেনদের আসর রমরমা। একদিকে মহিলামহল সিঁড়ির ধাপে ধাপে বসে ক্লিন্টন ও মোনিকা লিউইন্স্‌কির খবরের ওপরে আরো স্পেশাল মশলা ছড়িয়ে হাসি মশকরার সঙ্গে উপভোগ করছেন, অন্যদিকে পুরুষমহল খানিকটা দূরে রোয়াকে গোটা দুই বেঞ্চিতে বসে ম্যান্‌লি আলোচনায় ব্যস্ত, যেমন ধরুন পোলিটিক্স এবং তার মধ্যে বিশেষ করে জ্যোতিবাবু মারা গেলে কে উত্তরসূরী হবে - এই টপিক, খেলাধুলোর খবর, শেয়ার মার্কেটের টুকুটাকি, ইত্যাদি। এর ফাঁকে ফাঁকে যুবতী মায়েরা যখন বাচ্চাদের স্টুডিওতে পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন, তখন তাঁদের দিকে মনোযোগ ঘুরে যাচ্ছে, আলোচনাগুলো অগোছালো হয়ে যায় তখন। আমার অবশ্য বসবার কোনো নির্দিষ্ট স্থান নেই। মহিলামহল আমায় বেশ কিছুদিন আগেই খেদিয়ে দিয়েছে। তার পরেও একবার গেছলাম ঐ সিঁড়িতে, তখন তারাই উঠে চলে গেল এক এক করে। অন্যদিকে, পুরুষমহলের বেঞ্চিদুটোর একটা সাইডে কয়েকদিন বসেছি। এরা কোনো আপত্তি করেনি, তারপরে আস্তে আস্তে এদের আড্ডায় ঢুকে গেছি। আমার সেই বান্ধবীটিও এখন এই বেঞ্চির দিকেই বসাটা পছন্দ করে। এদিকে খবরের কাগজ হাতে হাতে ঘোরে, এবং প্রায় প্রত্যেকেরই একটা করে নিকনেম দেওয়া হয়েছে আড়ালে। সেটা সে নিজে জানে না, অন্যরা জানে। যেমন মনে করুন, পোর্ট ট্রাস্টে চাকরি করেন এক ভদ্রলোক, কথায় কথায় বলেছিলেন যে তাঁর মামা হচ্ছেন পুলিশের বেশ উচ্চপদস্থ ব্যক্তি - তো এই সুবাদে এনার নাম দেয়া হোলো জলপুলিশ। জলপুলিশের সঙ্গে প্রায়ই কথাকাটাকাটি লেগে যায় যে ভদ্রলোকের, যিনি প্লাস্টিকের ব্যবসা করেন, তাঁর নাম আগে সাহাবাবু ছিলো, কিন্তু যেদিন তিনি জানালেন যে আর্লি যৌবনে কিঞ্চিৎ নকশাল আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, অমনি রাতারাতি নাম হয়ে গেল নকশাল। এদিকে নকশান আবার আমার এই বান্ধবীটিকে দেখলে অল্প আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, তিনি ওর নতুন নাম দিয়েছেন - নিভাশশী। আরেকজন ভদ্রলোকের কোম্পানীতে লালঝান্ডার দৌলতে তালা পড়ে গেছে, কবে খুলবে ঠিক নেই, খুব রেগে থাকেন তিনি - তাঁর নাম লকাউট। আরেকজন আছেন, তাঁর নাম কেশকালাতেল। আমাকেও এরা নির্ঘাৎ কোনো নাম দিয়েছে আড়ালে, সেটা অবশ্য আমার জানবার কথা নয়।
    নকশালের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললাম। জলপুলিশ আজও তক্কে তক্কে আছে এঁকে ক্ষেপিয়ে দেবার, এমন সময় নকশাল আমায় চোখের ইশারা করে নীচু গলায় বললেন, নিভাশশী। তাকিয়ে দেখি প্রায় আধঘন্টা লেট করে আমার সেই বান্ধবী হন্তদন্ত হয়ে ছেলেকে নিয়ে স্টুডিওর দিকে দৌড়চ্ছে।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৭652547
  • আমি নিশ্চিন্ত হলাম, আজ নিশ্চয় তার শ্বশুরমশাইয়ের বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগের ডিটেল পাবো। ছেলেকে স্টুডিওয় পৌঁছিয়ে সে এদিকেই আসবে নির্ঘাৎ। কিন্তু না, সে ছেলেকে পৌঁছিয়ে দেখি হন্‌হন্‌ করে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে, আমাদের বেঞ্চির দিকে তাকালোই না।
    নকশাল মুষড়ে পড়লেন। অন্যদিকে কেশকালাতেল আমাকে বললেন, ঐ দেখুন আপনার বন্ধুতো চলে যাচ্ছেন!
    আমি ওখান থেকে উঠে পড়ে নিভাশশীর পেছন পেছন দৌড়ে তাকে ধরে ফেলি। সে ততক্ষণে প্রায় মেন গেট অবধি পৌঁছে গেছে।
    কী হোলো! চলে যাচ্ছো নাকি?
    সে পেছন ফিরে আমায় দেখে। একটু দাঁড়ায়।
    আর বোলো না, গাড়ীতে আমার হাজবেন্ড ওয়েট করছে। ও গাড়ী নিয়ে চলে যাবে, আমি ওর সঙ্গে দুটো কথ বলে নিই।
    আমরা দুজনেই পৌঁছে যাই গাড়ীর কাছে। হাজবেন্ড বাইরেই অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু একী! এক সপ্তাহের মধ্যে চেহারা এত পাল্টালো কীকরে? গত সপ্তাহে দেখলাম রোগা ফর্সা মাথাভর্তি চুল, মোটা লেন্সের চশমা পরা অনেক আগে শম্ভু মিত্র যেমন দেখতে ছিলেন সেইরকম একজনকে। এখন দেখছি অল্প ভুঁড়ি হয়েছে, চশমা আছে তবে লেন্স অত পুরু নয়, এবং এক সপ্তাহের মধ্যে মাথা ভরা টাক! কীকরে সম্ভব? আমার কি মাথার গোলমাল হয়ে গিয়েছে? নিভাশশী আবার আমায় আলাপ করিয়ে দেয়, এ হচ্ছে আমার বান্ধবী, তোমায় যার কথা বলেছি...
    নমস্কার।
    নমস্কার।
    আর ও হচ্ছে..
    বুঝেছি।

    সে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলে, পাঁউরুটি একদম নেই কিন্তু, তুমি প্লীজ ক্যালকাটা ক্লাব থেকে নিয়ে এসো না।
    স্বামী ভদ্রলোক নিজের জিন্‌স্‌ ও টিশার্ট এবং চটি জুতোপরা চেহারার দিকে তাকিয়ে বলেন, এই ড্রেসে যাওয়া যাবে না। তুমি বরং যাও, তারপরে তোমাকে এখানে ড্রপ করে দিয়ে যাচ্ছি।
    নিভাশশী গাড়িতে উঠতে উঠতে আমায় বলে, অ্যাই, তুমি চলে যেও না কিন্তু, আমি দশ মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৭652548
  • চলে আর যাবোটাই বা কোথায়? গেটের বাইরেই ঘুরঘুর করি। চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, একটা পান কিনে মুখে দিলাম। এখন চা খাবার ইচ্ছে নেই। রাস্তায় নজর রাখি সেই লাল মারুতিটা কখন আসে।
    বেশিক্ষন ওয়েট করতে হয় না। নিভাশশী ফিরে আসে। এসেই আমায় বলে, দাঁড়াও, সব লিখে এনেছি, এই নাও।
    এই বলে আমার হাতে ধরিয়ে দেয় চিরকুট। তাতে এক ভদ্রলোকের নাম, ঠিকানা লেখা। সাউথ এণ্ড পার্ক। টেলিফোন নম্বরও রয়েছে।
    এঁর সঙ্গে দেখা করব?
    হ্যাঁ, তবে পারলে একটা ফোন করে তবে যেও।
    তোমাকে কী বলে যে ধন্যবাদ দেবো।
    ওসব পরে দিও। আর শোনো। আর একটা কথা।
    কী?
    ও হ্যাঁ, ইয়ে, মানে...
    আমি চুপচাপ অপেক্ষা করি।
    হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম আর কি, সেটা হচ্ছে যে, তোমার সিভি আছে তো?
    সিভি?
    বায়োডাটা
    লিখেছিলাম একটা।
    টাইপ করা নেই?
    টাইপ করিয়ে নেবো, বেশিক্ষন লাগবে না।
    সে ই ভালো। টাইপ করা সিভি নিয়ে দেখা কোরো। আর..
    হ্যাঁ বলো।
    আমাকে জানিও উনি কী বললেন।
    নিশ্চয়ই, আমি তোমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানাবো।
    আমার মনে হয়, তুমি শিগগিরি একটা ভালো চাকরি পেয়ে যাবে, বুঝেছো?
    কি জানি! এত বাজে সব এক্স্‌পিরিয়েন্স হয়েছে।
    ওহ্যাঁ, যেটা বলছিলাম..
    কী?
    শাড়ি পরে দেখা কোরো ওঁর সঙ্গে, ফ্রক টক না পরাই ভালো।
    ঠিক আছে।
    উনি আসলে একটু সেকেলে লোকতো।
    হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতে পারছি।
    আর লাস্ট উইকে যাকে দেখেছো আমার সঙ্গে, হি ইজ নট্‌ মাই হাজবেণ্ড।
    ও আচ্ছা।
    তাহলে ঐ কথাই রইল। ফোন করে তবে যেও কিন্তু।
    তোমাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৯652549
  • রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের প্রায় শেষপ্রান্তে প্রচুর টাইপিস্ট ফুটপাথে টেবিলে টাইপরাইটার রেখে টুলের ওপর বসে বসে টাইপ করে। চাকরির অ্যাপ্লিকেশন, চিঠি, বায়োডাটা, এভিডেভিট, আরো নানারকম চিঠিপত্র। সেখানেই গেলাম। গিয়ে জানলাম, দুরকমের টাইপ রাইটার চলছে এখন মার্কেটে। একটা হচ্ছে সাধারন টাইপরাইটার, অন্যটা ইলেকট্রনিক। যার যেটা দরকার। দুটোরই ডিম্যাণ্ড আছে। ইলেকট্রনিকটায় খরচ প্রায় দুগুণ পড়ে, কিন্তু টাইপে ভুল হবার উপায় নেই, ভুল ধরা পড়লেই সেটা মুছে ফেলা যায়। ওগুলো অবশ্য ফুটপাথের ওপরে পাওয়া যাবে না। দোকানের ভেতরে যেতে হবে। সেখানে এসি লাগানো ঠাণ্ডা ঘরে ঐ মেশিন রাখা থাকে। ভালো চাকরির জন্যে চাই ভালো করে টাইপ করা বায়োডেটা। এক ঘন্টার মধ্যেই আমার হাতে চলে এলো দেড়পাতার টাইপ করা সিভি। ওপরে কায়দা করে লেখা আছে কারিকুলাম ভিটে। এখন নিভাশশীর শ্বশুরমশায়ের সেই বন্ধুকে ফোন করে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফিক্স করতে হবে।
    ফোন করতেই ভদ্রলোককে পেয়ে গেলাম। তিনি সেই সপ্তাহের মধ্যেই একটা সময় বলে দিলেন। আর কী চাই? এখন শুধু একটা সোবার দেখে শাড়ী জোগাড় করে ফেলতে পারলেই আমি ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারব। ফোনের দোকান থেকে বেরিয়ে দুপা যেতে না যেতেই দেখি হেভি ভীড় ফুটপাথে।
    রাস্তার ওপরে একটা পুলিশের ভ্যানও রয়েছে।
    কী হয়েছে দাদা?
    কি জানি, কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে মনে হয়।
    খুন টুন নাকি? (অন্য আরেকজন জিগ্যেস করে)
    আরে না না। মধুচক্র।
    মধুচক্র?
    আমার বোকার মতো প্রশ্ন শুনে দুয়েকজন হ্যা হ্যা করে হেসে ফ্যালে।
    মধুচক্র জানেন না!
    এবার দেখতে পাই, একটা বাড়ীর ভেতর থেকে কয়েকজন মেয়েকে ধরে নিয়ে পুলিশ ভ্যানে তোলে।
  • Nina | 83.193.157.237 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:০৯652551
  • থামতে জানার আর্টঃ-(
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৯:৪৬652552
  • সাউথ এণ্ড পার্কের ঠিকানার সেই বাড়ীতে যথাসময়ে দোতলার সিঁড়িতে পৌঁছলে বাড়ীর পরিচারিকা আমার নাম পরিচয় জেনে কোল্যাপ্‌সিব্‌ল্‌ গেট খুলে ভেতরে ঢুকতে দেয়। ঢুকবার পরে আবার গেটে তালা পড়ে যায়।
    এটা কী ধরণের ব্যাপার? হয়ত এরকমই চলছে, কিন্তু কোনো অচেনা বাড়ীতে অতিথি হিসেবে খুবই অসহায় লাগে। কিছুটা অপ্রস্তুতও। এত সন্দেহ? এত ইনসিকিওরিটি? কোনো আগন্তুকের জন্যে এটা যে চুড়ান্ত অভদ্রতা, সেটা এরা বোঝে না? কী আর করব এসব ভেবে! ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলে দেখি।
    ভদ্রলোককে তাঁর অফিস ঘরে পাই। নিজের পরিচয়, কোন সূত্রে এসেছি, এইসমস্ত বলে বায়োডেটা বের করে হাতে ধরিয়ে দিলাম।
    উনি অল্প চোখ বুলোলেন তাতে, তারপরে আমায় ফিরিয়ে দিলেন কাগজটা।
    আমার এক বন্ধু একটা কম্পানী খুলেছে।
    ভদ্রলোক কথা বলতে শুরু করলেন। আমি শুনে নিচ্ছি।
    ওরা মেনলি ডাটা ওয়্যারহাউজিং করে।
    ও আচ্ছা। (ডাটা ওয়্যারহাউজিং যে কী বস্তু জানিই না, ডাটা জানি, ডাটা বেস ও শুনেছি, কিন্তু এটা আবার কী বস্তু রে বাবা?)
    আপনার কি সিমিলার এরিয়ার কাজ করা আছে?
    আমি প্রমাদ গুনতে থাকি। সিমিলার এরিয়া তো দূরে থাক, বিগত চাকরিগুলোয় কাছাকাছির কোনো ফিল্ডেই কিছু করিনি। কিন্তু সেসব বললে হবে না। আমি যাকে বলে একেবারে মরীয়া। খুব কায়দা করে প্রসঙ্গটা ম্যানেজ করতে চেষ্টা করি।
    দেখুন, এই এরিয়াটা রিলেটিভলি নতুন (আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছি), এবং ..
    উনি আমার মুখের কথা কেড়ে নেন।
    কারেক্ট। ওরা খুব নতুন নতুন জিনিস নিয়েই কাজ করছে।
    (যাক বাবা, ঢিল ছোঁড়া সার্থক হয়েছে, প্রসঙ্গ ঘুরে যাচ্ছে। এখন সেই কোম্পানীটার ঠিকানা জানতে হবে। নতুন কোম্পানী যখন, লোক টোক এখনো নিচ্ছে হয়ত..)
    আপনিও কি ডাটা ওয়্যারহাউজিং এর ফিল্ডের?
    আমি পাল্টা প্রশ্ন করি। ভদ্রলোক আমায় কতটা কী প্রশ্ন করবেন ঐ বিষয়ে - সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
    আরে না না! আমি কম্পিউটারের কিস্যু জানিনা। আমি, তারপর (বন্ধুর শশুরের নাম করলেন).. আমরা সব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। এমনকি আমার যে বন্ধু ঐ কম্প্যানীটা খুলেছে, ও ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেট।
    ও আচ্ছা! (মুখে হাসি ফোটে আমার, যাক বাঁচা গেল, পরীক্ষা নেবে না এখন)
    ওরা খুব ভালো ভালো কাজ করছে শুনলাম।
    কী নাম যেন ভদ্রলোকের?
    উনি নামটা বললেন।
    কোথায় অফিস?
    অফিস? গত কমাস তো ওর বাড়ীতেই অফিসটা ছিলো, এখন মনে হয় বালীগঞ্জ প্লেসে বড়ো করে একটা সেটাপ বানিয়েছে।
    বালীগঞ্জ প্লেসের কোনখানটায় বলুনতো?
    কেন? আপনি যাবেন নাকি?
    ভদ্রলোকের শেষ প্রশ্নটা শুনে একটু খটকা লাগে। উনি কি চান না যে আমি যাই? উনি কি আমায় একেবারেই অনুপযুক্ত মনে করছেন এই চাকরির ব্যাপারে? কী উত্তর দেবো এখন? উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকি। উনি আমার ব্যাপারে কোনো উৎসাহ দেখান না।
    আপনার এখন ওখানে যাবার কোনো প্রয়োজন নেই। আগে আমি কথা বলে দেখি।
    আমার বায়োডেটাটা রেখে দিন তবে।
    না না, আমি দেখে নিয়েছি যেটুকু দেখবার। তাছাড়া সব তো বুঝবো ও না। আমি কথা টথা বলে আপনার বন্ধুকে জানিয়ে দেবো।
    ভদ্রলোক উঠে পড়লেন চেয়ার থেকে।
    এর অর্থ আমায় চলে যেতে হবে। আমি অনেক ধন্যবাদ নমস্কার, একটু দেখবেন স্যার, এইসব বলে ঘর থেকে বেরিয়ে বেরোবার দরজার কাছটায় দাঁড়াই। অপেক্ষা করি, কতক্ষনে ঝি এসে কোল্যাপ্‌সিবল্‌ গেটের তালা খুলে দেয়।
  • de | 69.185.236.53 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৪:৫১652553
  • তারপর?
  • a | 213.219.201.58 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৪:৫৯652554
  • ডাটা ওয়ারহাউজিং ও চলে এল। জিও জিও
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:৪৯652555
  • কতোবড়ো এলাকা হবে বালিগঞ্জ প্লেস? ফাইনাইট কোয়ান্টিটি নিশ্চয়। চাপা চাপা ছান মেরে বের করে ফেলব শান্তনু করের কোম্পানী। এই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ভদ্রলোকের সামহাউ আমাকে পছন্দ হয় নি। কেন পছন্দ হয় নি সেটা আমি জানি না, কিন্তু ওঁর আচরণে সেটা স্পষ্ট। উনি যে চান না আমি শান্তনু করের সঙ্গে দেখা করি সেটা বুঝতে খুব বেশি আই কিউ লাগে না। দ্বিতীয়তঃ যখন ফিরে আসছি, তখন ভদ্রতা সৌজন্য করে দুটো কথা, কি দরজা অবধি এগিয়ে দেওয়া, খুবই ছোটো জিনিস এগুলো, এসব করতে পয়সা খরচ হয় না, তবুও তিনি এগুলো করেন নি। অবশ্য আমি তো দেশ ছেড়েছিলাম বহুকাল আগে, তারপরে বিরাট একটা গ্যাপের পর আবার কোলকাতাকে নতুন করে দেখছি, মানুষজন বড্ড পাল্টে গেছে। এত অভদ্র আর দাম্ভিক লোক কি আগে রিলেটিভলি কম ছিলো? নাকি আমিই স্বদেশ সম্পর্কে ভালো ভালো ধারণা যত্নে লালন করেছি মনে? তাই বোধহয় এত আঘাত পাই এদের ব্যবহারে।
    সাউথ এণ্ড পার্ক থেকে হাঁটা পথ বালীগঞ্জ প্লেস। আজ শনিবার। আড়াইটে ফাড়াইটে হবে। একডালিয়া এভারগ্রীনের ঠাকুরটা যেখানে হয়, সেইখানে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল অনিন্দ্যর সঙ্গে। এবছরের গোড়ায় সেই যে অ্যাডহিয়ার থেকে চাকরি চলে গেছল আমার, সেই অ্যাডহিয়ারে শেষের দিকে আসত এই অনিন্দ্য। সদ্য বিএ পাশ, ইংলিশ অনার্স। স্টেট্‌স্‌ম্যানে ঢুকেছে তখন। ও আমাকে দেখেই চিনলো।
    আরে!
    কী খবর তোমার? এখনো কি স্টেট্স্‌ম্যানেই?
    হ্যাঁ। আর তুমি?
    আমি এখন আইটিতে জয়েন করেছি।
    অনিন্দ্য হাঁ হয়ে যায় শুনে।
    আইটি?
    হ্যাঁ, বেশিদিন নয়, এই কাছেই আমার অফিস। বালিগঞ্জ প্লেসে। এসো না একদিন।
    কী করছো আইটিতে?
    ডাটা ওয়্যারহাউজিং।
    অনিন্দ্য সম্ভবতঃ বুঝতে পারে না ব্যাপারটা। কীরকম থতোমতো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
    আমি ওকে বাই করে, বালীগঞ্জ প্লেসের দিকে হাঁটতে থাকি।
    এ খবর নবাব্দার কানে পৌঁছতে বেশি সময় লাগবে না।
    ঐতো সাউথ পয়েন্ট স্কুল, টেস্টি কর্ণার মিষ্টির দোকান, ডানদিকে ঘুরলেই পাঠভবনের বাচ্চাদের ইস্কুলটা, কারোকে জিগ্যেস করতে হবে।
    বেশিক্ষণ লাগে না কোম্পানীটা খুঁজে পেতে। কোম্পানীর নাম জানতাম না, শুধু কম্পিউটারের একটা অফিস নতুন খুলেছে এদিকে, এটুকু বলতেই খুঁজে পাওয়া গেল অফিসটা। রেসিডেন্‌শিয়াল এলাকায়, চারপাঁচটা ফ্ল্যাট নিয়ে এলাহি কাণ্ড চলছে।
    দরজার মুখে সিকিওরিটি গার্ড শুধোলেন, কার সঙ্গে দেখা করবেন?
    শান্তনু কর।
    ও! স্যার তো এখন নেই।
    নেই?
    অন্য কারো সঙ্গে দেখা করবেন কি? অনেক দূর থেকে আসছেন?
    না, আসলে একটা দরকার ছিলো।
    আর্জেন্ট?
    তা বলতে পারেন।
    তাহলে ওনাকে ফোন করে দিন।
    হ্যাঁ, ফোন করা যায়, কিন্তু নম্বরটাতো খুঁজে পাচ্ছি না।
    আপনি এখানে বসুন আমি নম্বর এনে দিচ্ছি।
    সিকিওরিটির ভদ্রলোক তাঁর টুলটা আমায় ছেড়ে দিয়ে ভেতরে ঢুকে যান।
    আমি উঁকি মেরে দেখি ভেতরে কাঠের মিস্ত্রি কাজ করছে। প্লাইউড্‌ ধুলো, ইলেকট্রিকের তার এদিকে ওদিকে ছড়ানো। তারই মধ্যে হেঁটে যেতে দেখি সুবেশ একজিকিউটিভদের। কোনো রিসেপশান বলে কিছু নেই।
    ভদ্রলোক ফিরে আসেন।
    এই নিন নম্বর। প্রথমটা স্যারের মোবাইল নম্বর, বাকি দুটো হচ্ছে এখানকার ল্যান্ড লাইন।
    আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ দাদা।
    আরে না না, আমরা তো আছি এইজন্যেই।
    কোম্পানীর সাইনবোর্ডটা বাইরে কোথাও খুঁজে পেলাম না, জানেন তো।
    না, এই তো সবে খুলেছে, সবই নতুন, আস্তে আস্তে সাইনবোর্ড লাগাবে।
    কী নাম দিয়েছে?
    সেঞ্চুরী ইন্‌ফোটেক।
    আসি দাদা।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:২১652556
  • ইউরেকা!
    ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। মোবাইলে ফোন করব? মোবাইলে করলে ভদ্রলোক হয়ত অসন্তুষ্ট হতে পারেন। এক কাজ করি ঘন্টাখানেক পরে ল্যাণ্ডলাইনে ট্রাই নিই।
    কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করি ফার্ণ রোডের দিকটায়, তারপরে কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে তিনটেয় একটা দোকান থেকে ফোন করি ল্যাণ্ড লাইনে।
    হ্যালো।
    পুরুষ কণ্ঠ ফোনে।
    সেঞ্চুরী ইন্‌ফোটেক?
    ইয়েস। কাকে চাইছেন?
    মিঃ শান্তনু কর কি আছেন?
    না, উনি তো এখন কোলকাতার বাইরে। আপনি কে বলছেন?
    আমি নিজের নাম বলি, অল্প করে ইন্ট্রো দিই যে চাকরির ব্যাপারে ওঁর সঙ্গে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে চাই।
    আপনি এখন কোথা থেকে বলছেন?
    ফার্ণ রোড থেকে।
    সেতো খুবই কাছে। সময় থাকলে এখনি চলে আসুন। আমিই ইন্টারভিউটা নেবো আর কি।
    এখনি চলে আসব?
    হ্যাঁ হ্যাঁ চলে আসুন, চেনেন কি জায়গাটা, ডিরেকশানটা বলছি।
    না, ডিরেকশান লাগবে না।
    এসে আমার নাম বলবেন, দিব্যেন্দু দত্ত।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:৪৪652557
  • একঘন্টা পরে ফের আমায় আসতে দেখে সিকিওরিটি গার্ড ভদ্রলোকটি বলেন, স্যার কিন্তু এখনো আসেন নি। আজ বোধয় আর আসবেন না।
    না, আমি মিঃ দত্তর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।
    কোন দত্ত? এখানে অনেকগুলো দত্ত আছেন।
    দিব্যেন্দু দত্ত।
    আপনি বসুন ভেতরে।

    সেইদিনই একঘন্টার মধ্যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারে সই টই হয়ে আমার চাকরি হয়ে যায়। ছহাজার টাকা মতো নেট স্যালারী হবে মাসে মাসে।
    নেট স্যালারী মানেটাই বা কী? অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারে লেখা আছে অ্যানুয়াল গ্রস স্যালারি, সে ও প্রায় এক লাখ!

    একি সত্যি? নাকি স্বপ্ন দেখছি? আজ নভেম্বরের আট তারিখ। চাইলে আমি সোমবার মানে দশ তারিখ থেকেই জয়েন করতে পারি, তবু একটু সময় চেয়ে নিই। সতেরো তারিখ থেকে জয়েন করব বলে বেরিয়ে আসছি, তখন মিঃ দত্ত আমার হাতে একটা বই দেন। টান্নেনবাউমের লেখা মিনিক্স এর ওপরে বই। টার্মিনোলজিগুলো ইংরিজিতে জেনে ঝালিয়ে নেওয়া।
    একহাতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, অন্যহাতে মোটা বইটা - আর মনের মধ্যে ধেই ধেই করে নাচবার মতো আনন্দ। বইটা পড়তে হবে। হাতে একটা সপ্তাহ সময় পাওয়া গেছে।

    আচ্ছা, টান্নেনবাউম মানে ফার গাছ না? মানে ক্রীস্টমাস ট্রী।
    ক্রীস্টমাস হতে এখনো দেড়মাস বাকি যদিও, তাতে কী? ক্রীস্টমাস গিফ্‌ট্‌ তো পেয়ে গেছি হাতে।

  • de | 24.139.119.171 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:২৪652558
  • ক্যাবাৎ!!
  • Du | 74.233.173.157 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:৪১652559
  • নাও অনিল কাপুরেরই গান - জিন্দেগী অস রহা হু মে ঈ ঃ)
  • সে | 188.83.87.102 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:৪৫652560
  • এখন ব্রেক দিচ্ছি। ব্রেকের পরে গপ্পো উইল বি কন্টিনিউড।
  • ranjan roy | 113.242.197.192 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২২:০৯652562
  • ধিন তা ধিনা, পাকা নোনা।ঃ))))
    ক্যাবাৎ! ক্যাবাৎ!!
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৫652563
  • অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটা থেকে চাকরি শুরু করা এবং চাকরি করতে থাকার মধ্যে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যায়। তখন ভাবতাম হয়ত সবই কাকতালীয়, এখন ষোলো বছর পরে ঘুরে দেখলে বুঝি, সবগুলো কাকতালীয় ছিলো না।
    শরতের সেই দুপুরে যেদিন অডিটোরিয়ামের পেছনে সাপ মারবার আওয়াজ চেঁচামেচি শুনেছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে, কানে এসেছিলো সাপটা বিষাক্ত। কোন সাপ বিষাক্ত, কোনটা নয় - তা দেখলে চেনা যায়, তার চেহারায় তার পরিচয় লেখা থাকে, অথচ মানুষের ক্ষেত্রে কিচ্ছুটি বুঝবার উপায় নেই।
    এ গল্পগুলো তো আমার নিজের গল্প, সেজন্যেই এখানে অভিজ্ঞতা সব আমার নিজের। এখানে "এসে" লিখতে বসার দায়বদ্ধতা নেই। তাই রেফারেন্সিং যেমন দেবো না, আবার ইচ্ছে হলে হয়ত দিতেও পারি; তেমনি কিছুটা বক্তব্যের পক্ষে, কিছুটা বিপক্ষে লিখে, গোড়ায় ইন্ট্রোডাকশান এবং শেষে কন্‌ক্লুশান জুড়ে দেয়া রচনা এটা নয়। পঞ্চাশ ভাগ সুখের কথা আর পঞ্চাশ ভাগ দুঃখের গল্প পড়তে যদি কেউ এসে থাকেন, কেটে পড়ুন এই বেলা। সে আশার গুড়ে কিচ্‌কিচে বালি মিলবে। এ গল্পগুলো সম্পূর্ণভাবে আমার নিজের, এ নাটকে একজনও যদি দর্শক না থাকে, কেউ না পড়ে এই লেখা, তাতে কিচ্ছু এসে যাবে না। এখানে টক ঝাল মিষ্টি তেতো নুন কোনো কিছুরই কোনো ব্যালেন্স থাকবে না, সে হুমকি পষ্টাপষ্টি জানিয়ে ব্রেক শেষ করছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৭652564
  • অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার*

    এখন আঠারো* বছর পরে
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫৯652565
  • সতরই নভম্বরের আগে থেকেই ঘটতে থাকে একটার পর একটা ঘটনা। যেই খবর ছড়িয়ে যায় যে এতদিনে মোটামুটি একটা ভালো চাকরি পেয়েছি, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় অসহযোগিতা, সর্ব দিক থেকে। সেই সঙ্গে মুখোমুখি হই অসংখ্য বাধার। কী জাস্টিফিকেশান থাকতে পারে এসবের?
    এতদিন যে কার্যতঃ প্রায় বেকার ছিলাম, কোনো বাঁধা ইনকাম ছিলো না, ছিলো না গ্রাসাচ্ছাদনের উপায়, মাথর ওপরে কোনো স্থায়ী ছাদ নেই, বাচ্চাকে পড়াশুনো করানোর উপায় নেই, খাওয়াতে পরাতেই পারছি না - তখন প্রতি পদে পদে নিন্দিত হয়েছি। যে সব দোষ করিনি তার জন্যেও মাথা পেতে নিন্দার ভার বহন করতে হয়েছে। জানতাম সেটাই দস্তুর, সেটাই দুনিয়ার নিয়ম। তুমি যদি একা হও, তখন তোমায় সমস্ত রকম বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। যত সাহসই থাকুক না কেন, একদল ভীতু মানুষ তোমায় শেষ করে দিতে পারে। এটা অনেকটা পাথর ছুঁড়ে মারবার মতো। স্টোনিং টু ডেথ এর মতো টিম ওয়ার্ক। একজনকে হত্যা করতে খুব বেশি সাহস লাগে না এই দলের। ঘিরে দাঁড়াও, তারপর পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারো। খুব বেশি ভারী পাথরও লাগবে না। প্রত্যেকে অল্প অল্প কন্ট্রিবিউট করলেই যথেষ্ট। এসব ক্ষেত্রে টিম স্পিরিটের কোনো অভাব দেখা যায় না।
    সেসব সময় পেরোতে পারিনি চাকরি পাওয়া সত্ত্বেও। চাকরিটা করতে পারলে হয়। প্রথমেই আমার বাচ্চাকে কেড়ে নেওয়া হলো। আবার। এবার দূরে সরিয়ে রাখা হবে। ক্লাস ওয়ানে পড়বার কথা তার, তাকে পাঠানো হয়ে গেল হোস্টেলে। দামী কোনো হোস্টেল নয়, সাদামাটা। কিন্তু আমার অনুমতি কেউ নিলো না। আমার যেহেতু টাকা নেই, তাই কোনো নিজস্ব মত ও থাকতে পারে না।
    এই দৃশ্যগুলো উপভোগ করবার মতো জনতা যে কতো বিপুল সংখ্যক হতে পারে, তা সেদিন নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে অসুবিধে হতো। এটা প্রথম স্টেপ। আর্থিকভাবে যাতে কোনোমতেই স্বাবলম্বী হতে না পারি। আমি অবশ্য কোনো বাধা দিই নি। আমায় প্রায়োরিটি বুঝে কাজ করতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরা তো চেষ্টা করবেই আমাকে দুর্বল করে দিতে, যাতে মুখ থুবড়ে পড়ে যাই। সেটা হয়ে গেলেই এদের উদ্দেশ্য সফল হয়ে যাবে। আমি আবারো বেকার বেরোজগার হয়ে যাবো। মনে হয় সেটাই এরা চায়।
    আরো বাধা ছিলো। যেমন টান্নেনবাউমের বইটা পড়তে পারি না। পড়তে বসবার কোনো উপায়ই নেই। শেষে বই নিয়ে চলে যাই নলবনে। কুড়ি টাকার টিকিট কিনে ভেতরে বসে টানা পড়তে থাকি যতটা পারা যায়। সূর্যের আলো কমে আসা অবধি।
    অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাবার পরের দিন দেখা হল না নিভাশশীর সঙ্গে। সেই রবিবারে সে আসে নি আঁকার ইস্কুলে। আর তার পরের রবিবার আমি যাইনি সেথায়। কারণ আমার সঙ্গের ছাত্রীটি তখন হোস্টেলে।
    এর পরের দিনই আমার জয়েনিং ডে। দুরুদুরু বুকে অফিসে উপস্থিত হলাম সকাল সকাল। কী কাজ আমার তখনো জানিনা। অফিসে খুব কম লোকজন। ডিরেক্টর দুতিন জন, সেলসের লোক, আমি ও আরো জনা দুই তিন। এছাড়া রয়েছেন তিনজন পিওন, ক্যশিয়ারবাবু ও দুজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট। আরো নাকি জনা পনের লোক আছে। তারা বিকেলে আসে, সন্ধ্যের মুখে। একটা লম্বা ঘরে সারি সারি কম্পিউটার, একটা সার্ভার। রিমোট কন্ট্রোলে চালানো এসি। এখানেই বসি। বাইরের প্রকাণ্ড অফিস স্পেসে তখন ছুতোর মিস্তিরিরা কাজ করে, ইন্টেরিয়ার ডিজানের কোম্পানীর লোকেরা সেখানে ফিতে টিতে দিয়ে কত কি মাপে। আমার বড্ড ভয় করে, আমি কাজ পারব তো? এরা আমায় তাড়িয়ে দেবে না তো?
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:১৩652566
  • এত দামী কম্পিউটার এর আগে কখনো ছুঁয়ে দেখা হয় নি আগে। এগুলো সব পেন্টিয়াম। অফিস স্পেসের একটা বিরাট জায়গা জুড়ে রাখা আছে বিরাট বিরাট বাক্স। নতুন নতুন কম্পিউটার সেগুলোর মধ্যে। বেশি বড়ো বাক্সগুলো হচ্ছে মনিটার। পনেরো ইঞ্চি, আর সতেরো ইঞ্চির। প্রচন্ড ভারী সেই বাক্সগুলো। আমাকে ওগুলো বয়ে বয়ে নিয়ে আসতে হয় একদিকে। তারপরে বাক্স উল্টিয়ে খাপ খুলে মনিটরের স্ট্যান্ড লাগাতে হয়। তারপরে মনিটর বের করে টেবিলের ওপরে তুলে রাখা। ঐ তুলে রাখবার টাইমটাতেই ঘাবড়াই, যদি ফস্কে যায়, যদি ভেঙে যায়! খুব দামী জিনিস নিশ্চয় এগুলো। কম্প্যাক কোম্পানীর। তারপরে তো অন্য বাক্স থেকে আসল কম্পিউটারটা বের করে মনিটরে লাগিয়ে, পাওয়ার অন করে প্রথমবারের মতো চালানো। ছোটোগুলোর ষোলো এম্বি র‌্যাম, বড়োগুলো বত্তিরিশ এম্বি। ছোটোগুলো উন্ডোজ নাইন্টিফাইভ, বড়োগুলো এন্টি। এসবে হয়ে গেলে একটার পর একটা সফ্ট্‌ওয়্যার ইন্স্‌টল করা থাকে, নেটওয়ার্কের মধ্যে ঢোকানোর ব্যাপার থাকে, আর সর্বক্ষণ শুনতে হয় আনন্দ সেনগুপ্তর টিটকিরি। তিনি আমার অলিখিত বস। মোট পঁচাত্তরটা মেশিন বসবে এই অফিসে। আপাতত এইরকমই প্ল্যান।
  • Du | 74.233.173.162 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৯:৪১652567
  • কি অশ্চর্য্য সে যেমন লিখলে সেইটাই মনে হয়েছিল আমার।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:৪০652568
  • চাকরিজীবনে প্রচুর খারাপ লোকের সংস্পর্শে আসতে হয়েছে, তাদের কারো কারো গল্প আগেই করে ফেলেছি, সেই তালিকায় আনন্দ সেনগুপ্তর নাম না লিখলে অন্যায় করা হবে। এর কাজই হচ্ছে আমার পেছনে লাগা। ফ্রম ডে ওয়ান। ভাবখানা এমন, যে আমায় চাকরি দিয়ে উনি আমায় উদ্ধার করে ফেলেছেন। অথচ চাকরির ইন্টারভিউয়ের সময় ইনি ছিলেনই না ধারে কাছে। কথা বলেছিলাম ডিরেক্টর মিঃ দিব্যেন্দু দত্তর সঙ্গে। কিন্তু আনন্দ সেনগুপ্ত এখন আমাকে একজন সাবর্ডিনেট হিসেবে পেয়ে টর্চার করবার একটা পাত্র পেয়েছে যেন। প্রথমটায় সত্যিই বুঝতাম না। নতুন বিয়ে হয়ে আসা কনে বৌ যেমন শ্বশুরবাড়ীর কোনো একজন পাজি আত্মীয়ের রকম সকম প্রথমদিকে বুঝে উঠতে পারে না, সেইরকম। সে সর্বদা আমার ভুল ধরেই চলেছে। ভুল না করলেও, সেটা ভুল বলে চাউর করে দিচ্ছে। তারপরে যখন সত্যিটা বেরিয়ে ওপড়বে, তখন কিন্তু টুঁ শব্দটি করবে না, বা আগে যে সে ভুল বলেছিলো সেটা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করবে না। আমি ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকি, আবার কী ভুল করে বসলাম।
    সকাল নটা থেকে অফিস শুরু হবার কথা, কিন্তু আমায় আসতে হয় সাতটার মধ্যে। মেরে কেটে সাতটা বেজে দশ। এটাও ঐ আনন্দর নিয়ম। কাগজে কলমে কিছু নেই, কিন্তু সে আমায় নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবার জন্যে কিছু ব্যবস্থা করেছে। অসাধারন তার এইসমস্ত বুদ্ধি।
  • pj | 120.227.22.152 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:২৭652569
  • অসাধারণ
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:৩০652570
  • অফিসে সার্ভার রাখার জন্যে যে ঘরটা তৈরী হবে সেটা এখনো নির্মীয়মান। তাই সার্ভার রাখা থাকে ঐ লম্বা ঘরটায়, যেখানে আরো কম্পিউটার রয়েছে এবং ডিরেক্টর এবং পিওনদের দের বাদ দিয়ে সকলে সেখানেই বসি পাশাপাশি লম্বা দুটো টেবিল ধরে; কিন্তু নির্মীয়মান সার্ভারঘরে ঢুকলে তার ভেতর দিয়ে আরেকটা ঘরে পৌঁছনো যায়। মেরেকেটে চারফুট বাই দশ ফুট মতো হবে প্রস্থে দৈর্ঘ্যে। সেই ঘরে রয়েছে পেল্লাই একটা যন্ত্র। প্রায় দু থেকে আড়াই ফুট চওড়া এবং পাঁচফুট মতো লম্বা জিনিসটা। উচ্চতায় ফুট ছয়েকের বেশিই হবে। সেটার গায়ে অনেক লাল হলদে আলো আছে, হাতলের মতো সুইচ আছে, ঘোরানো কাঁটা আছে। ওটার নাম ইউপিএস। বিঘ্নহীন ভাবে বিদ্যুতের জোগান দেবার জন্যেই এটা রাখা হয়েছে। হুটহাট করে কারেন্ট চলে গেলে সার্ভার খারাপ হয়ে যাবে, কম্পিউটারগুলো ও বিগড়ে যেতে পারে অকালে, তাই এই যন্ত্রটার মাধ্যমে পাওয়ার সাপ্লাই হয় গোটা অফিসে, শুধু কম্পিউটার সার্ভার নয়, এমনকি এয়ারকন্ডিশনার পর্যন্ত। জিনিসটা রোজ সকালে অন করবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমার ওপরে। ওটি অন না হলে কোনো যন্ত্রই চলবে না। রোজ সন্ধ্যেবেলা ঐ ইউপিএসটিকে অফ্‌ করে বেরিয়ে যান আনন্দ। আনন্দ না থাকলে অন্য কেউ করে দেয়। অফিস বেশ দেরী করেই ভাঙে, সাড়ে ছটার পরে অফিসের খরচে ভালো খাবার দাবার আনানো হয় যেহেতু, অনেকেই সাতটা অবধি কাটিয়ে দেয় গড়িমসি করে।
    এখন যেটা বলছিলাম, সকাল সাতটার মধ্যে ইউপিএস অন করি যখন, তখন কেউ থাকে না অফিসে, কেবল সেই সিকিওরিটি কোম্পানীর নাইট গার্ড ছাড়া। ইউপিয়েসটা অন করতে মিনিট চার পাঁচেক লাগে। তারপরে সার্ভার অন করোরে, সমস্ত কিছুর ব্যাকাপ নাও রে। এই সার্ভারের ব্যাকাপ যতক্ষন না শেষ হচ্ছে, তার মধ্যে কেউ যেন বাইরে থেকে সার্ভাররে কিছু কাজ কর্ম না করে। করলেই নাকি চিত্তির হয়ে যাবে। আমায় সেরকমই বোঝানো হয়েছে। ধীরে ধীরে ব্যাকাপ নেবার সময় বাড়তে থাকে। এসমস্ত হয়ে গেলে আরো কিছু জিনিস চেক টেক করে, ইন্টারনেটের জন্যে কানেকশান অন করতে হয়। কিছুতেই কানেকশান হয় না। চেষ্টা করতে করতে নাজেহাল হয়ে যাই। ইন্টারনেটে কানেকশান না হলে যে মেইল সার্ভারে কোম্পানীর মেইল ডাউনলোড করা যাবে না। এসব করতে করতে নটা সাড়ে নটা বেজে যায়। অফিসের বাবুবিবিরা আস্তে আস্তে তখন ঢুকছেন। এনারা সব অফিসের গাড়ীতে করে আসেন। দু তিনটে মোটোর গাড়ী অফিসে ঢুকলেই সবাই হৈ চৈ করে ওঠে চা চা করে।
    নটার আগেই পিওন দীপক ও অজয়দা হীটার অন করে গুঁড়ো দুধ জাল দিয়ে এক গ্লাস করে দুধ ও বিস্কুট খেয়ে টয়লেটে ঢুকে যায় প্রাতঃকৃত্য সারতে। দীপক দেখি বড়োসাহেব শান্তনু করের টয়লেটটাই বেশি প্রেফার করে, অজয়দার কোনো বাছবিচার নেই, উনি ছেলেদের টয়লেটেই ঢুকে যান।
    আনন্দ যতক্ষণ না অফিসে এসে উপস্থিত হচ্ছে, ইন্টারনেটের কানেকশান কিছুতেই ঠিক করা যায় না। অর্থাৎ অত সকাল সকাল অফিসে এসে নিঃশব্দে সমস্ত কাজকর্ম করে রেখেও আমায় কুড়োতে হবে শুধু তাচ্ছিল্য ও অপমান। আনন্দ এসেই বলবে, ওঃ আবার কী হোলো?
    কেউ একজন রিপোর্ট করবে, ইন্টারনেট কানেকশান হচ্ছে না আনন্দদা।
    সেকি! আজও?
    সবাই মুখ টিপে হাসে।
    আমি না আসা অবধি দেখছি কোনো কিছুই ঠিকঠাক হয় না।
    তুমি হচ্ছো বস্‌ লোক।
    অ্যাই, ইয়ার্কি করবি না একদম।
    না আনন্দদা, তুমি হচ্ছ আমাদের সিস্টেম্‌স্‌ অ্যাডমিনিস্‌ট্রেটর, তোমাকে না হলে চলে?
    সকাল সকাল মাথা গরম করাস না তো! দীপক! চা দে। আর আমার অ্যাসিস্টেন্টটাও হয়েছে যা না... আস্তে আস্তে ওদের কথার আওয়াজ ফেড আউট করে যায়, ওরা চা সিগারেট খেতে ঢোকে একটা ঘরে। সেই ঘরেও এসি চলে।
    মিনিট পনেরো কুড়ি চা সিগারেট পানের পরে আসর ভেঙে যাবে, স্মোকিং রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে সবাই আবার রিকোয়েস্ট করবে আনন্দকে। তখন আনন্দ বলবে, দেখি কী হোলো আজ। তার পরে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ম্যাজিকের মতো এসে যাবে ইন্টারনেট কানেকশান।
    আমি মরমে মরে যাবো প্রত্যেকটা দিন।
    রোজ, প্রায় প্রত্যেক দিনই, বা প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন এম্‌প্লয়ী জয়েন করে এই অফিসে। তারাও লক্ষ্য করে এই নিয়ম, আনন্দর সঙ্গে তারাও মেতে ওঠে টিটকিরি ঠাট্টায়।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:৫৩652571
  • জয়েনিংএর আগের একটা ছোট্টো ঘটনা উল্লেখ করতে ভুলে গেছি। এটা খুব ইন্টারেস্টিং, বাদ দেয়া মনে হয় ঠিক হবে না। সেই নলবনে যখন পড়তে যেতাম, একদিন বেশ দেরি করে বাড়ী ফিরে দেখি একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। বাচ্চাটা ইলেট্রিকিউটেড হয়েছিলো, বেশ কিছুক্ষন ধরে। কোথায় একটা বেড়াতে গিয়েছিলো, সেখানেই একটা টেবিল ফ্যান হাতে করে সরিয়ে রাখতে গিয়ে এই কাণ্ড ঘটেছে। কেউ বলে দুমিনিট, কেউ বলে বেশি। আমি তো ছিলাম না ঘটনাস্থলে। বুদ্ধি করে সে বাড়ীর ঝি নাকি তখন দৌড়ে গিয়ে মেন সুইচ অফ করে দিয়েছিলো। বাচ্চাটা প্রাণে বেঁচেছে ঠিকই, কিন্তু দুটো হাত পুড়ে গেছে, হাতের তালুগুলো পোড়া, পায়ের তলাতেও পোড়া দাগ। কথা বলতে পারছে না ভালো করে, শুধু বলছে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বারবার। নিঃশ্বাসে কষ্ট, বুকে কষ্ট। যথারীতি শুভানুধ্যায়ী মহিলারা জড়ো হয়ে উপদেশ দিচ্ছেন।
    জল দেবেন না।
    ইলেকট্রিকের পোড়ায় জল খেতে নেই।
    দুধ দিন।
    গরম দুধ দিন।
    এইরকম অনেক সুচিন্তিত মতামত। আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। এদেরকে সরিয়ে দেবার মতো, চলে যেতে বলবার মতো ক্ষমতাও আমার নেই। শারীরিক ক্ষমতা নয়, সামাজিক ক্ষমতা। এরা কথা উপদেশের বন্যা বইয়ে নিজ নিজ কাজে চলে যাওয়া অবধি কান বন্ধ করে রাখি। কানের বাইরে হাত না দিয়েও কেমন করে কান বন্ধ করতে হয় সে কৌশল রপ্ত হয়ে গেছে ক্রমে ক্রমে।
    অবশ্য শিশুটি সেরে উঠবার বেশি সময় পায় না, তাকে তো চলে যেতে হয় হোস্টেলে। শুনেছি বাচ্চারা হোস্টেলে যাবার আগে নাকি বাধা দেয়, কাঁদে, ঝামেলা করে; গল্পের বইয়েও এমন পড়েছি। এখানে তেমন হয় হয় না। কৃপন হাতে তাকে কিনে দিই কয়েকটা বাবলগাম। বুমার।
    সে গেয়ে ওঠে, বিগ্‌ বিগ্‌ বুমার!


    তারপরে বলে, তুমি কিন্তু মন দিয়ে চাকরিটা কোরো, আমার জন্যে কোনো চিন্তা কোরো না।
  • সে | 188.83.87.102 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:৩৫652573
  • নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকটায় হোস্টেলে ছুটি পড়ে গেল যেন কী একটা কারণে। অল্প কদিন হোস্টেলবাসের পরেই বাচ্চা ফিরে এসেছে। এতে চিন্তা ডবল হয়ে যায়। নিশ্চিন্ত হয়ে অফিসের কাজ করতে পারি না। ভয় হয় আবার কী কী সারপ্রাইজ পাবো বাড়ী ফিরলে। একেই তো অফিসে তঠস্থ হয়ে থাকি। ছমাস না কাটালে পার্মানেন্ট হবো না। অথচ মাত্র তো দু সপ্তাহও কাটে নি ভালো করে। তবে সারপ্রাইজের জন্যে বেশি অপেক্ষা করতে হয় না। সে শনিবারে বাড়ী ফিরতেই দেখে আরেক দুর্ঘটনা। বাচ্চার হেড ইনজুরি। দেয়ালে টাঙানো তালপাতার সেপাই পেড়ে আনতে গিয়ে টেবিলের ওপরে দাঁড়িয়ে ছিলো;ব্যালেন্স রাখতে না পেরে টেবিল উল্টিয়ে পড়ে গেছে। অজ্ঞান অবস্থাতেই ছিলো কতক্ষণ কে জানে, অনেক পরে নজরে এসেছে। ক্ষণে ক্ষণেই জ্ঞান হারাচ্ছে, সঙ্গে বমি হয়ে যাচ্ছে জল। শুধু জল। চিন্তা হয়। কে যেন উপদেশ দিয়ে গেছে আর্ণিকা খাইয়ে রাখতে। তার ওপরে আমার তো দোষের শেষ নেই, বাচ্চাকে রেখে রেখে বেরিয়ে যাই, কোনো দায়িত্বজ্ঞান নেই। বোঝাই যাচ্ছে যে আমোদ আহ্লাদ করতে বেরিয়েছিলাম। এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ে নিভাশশীর কথা। ডাক্তার চাই একজন। আমি তো এদেশের এই শহরের কিছুই তেমন চিনি না। টাকা জমা পড়ে গেছে ব্যাঙ্কে, মাস শেষ হবার আগেই। ভাঙা মাসের মাইনে। নিভাশশীর চেনা ডাক্তার দম্পতির চেম্বারে ছুটি রিক্সা নিয়ে। সেখানে দুরন্ত অভিজ্ঞতা। ঘটনাচক্রে এই দম্পতি আবার মিঃ শান্তনু করের বাড়িতে একতলায় ভাড়া থাকেন। নিঃসন্তান ছিলেন এঁরা বহুকাল। ইদানীং একটি পুত্রসন্তান দত্তক নিয়েছেন। মধ্য চল্লিশের এই দম্পতির জেরার মুখে যাকে বলে জেরবার হয়ে যাই, আমার বাচ্চাটিকে চিকিৎসা করতে অস্বীকার করেন ডক্টর রায়। ডঃ শ্রীমতি দাশগুপ্তা, যাঁর নামেই সংলগ্ন প্যাথোলজিক্যাল লেবরেটরি, তিনি ঝাঁঝিয়ে এসে প্রশ করেন আমাকে।
    শান্তনুদার কোম্পানীতে কী চাকরি করো? রিসেপ্‌শনিস্ট?
    যেন রিসেপ্‌শানিস্টের বাচ্চার চিকিৎসার অধিকার নেই।
    বোঝাতে চাই যে আমি নিভাশশীর বন্ধু, সে ই পাঠিয়েছে এখানে, তাকে কি একটা ফোন করতে পারি?
    টেলিফোনে তালা দেওয়া। অনেক রিকোয়েস্টের পরে তালা খুলে দেয়। ফোন করে জানাই বান্ধবীকে, এই অবস্থা। সে ও ফোনে কথা বলে ডাক্তারের সঙ্গে, তারপরে বলে, তুমি ওখানেই থাকো, আমি আসছি।
    ওখানে না থেকে তো উপায়ও নেই। একেবারে কোলের শিশুতো নয়, তাকে কোলে করে বেশিক্ষণ ঘোরা যায় না, সেতো অর্ধ অচেতন মতো হয়ে রয়েছে। সেই সন্ধ্যেয় দুই বন্ধুতে মিলে চষে ফেলি প্রায় কলকাতার হাসপাতাল, শিশুমঙ্গল থেকে পার্ক চিল্ড্রেন্স্‌ সেন্টার। সেখানে বেড পাওয়া যায় না। অবশেষে পার্ক নার্সিং হোম।
    রাতের বাসে ফিরছি, বান্ধবী বলে , তোমার ওড়না কোথায় গেল?
    কখন কোথায় পড়ে গেছে জানিও না।
    পরে সে জানিয়েছিলো, যে বালিগঞ্জ গার্ডেনের সেই ডাক্তার দম্পতি তাকে খুব করে সাবধান করে দিয়েছে আমার সঙ্গে মিশতে। তাদের ঘোর সন্দেহ, আমি হচ্ছি কলগার্ল। ওড়না ছিলো না নাকি যখন বাচ্চাকে নিয়ে পৌঁছই। সেটাই কলগার্ল হবার চিহ্ন। কর্গার্লের বাচ্চার চিকিৎসা করেন না এঁরা। মেডিক্যাল এথিক্‌স্‌ বলে একটা ব্যাপার আছে তো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন