এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • চাগ্রীর গপ্পো

    সে
    নাটক | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ | ২০৮৫৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • - | 109.133.152.163 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:২০652674
  • খারাপ তো সবই খারাপ এমন হয় কি?
    ভালোমন্দ মিশিয়েই তো সারা দুনিয়া! যাগ্গে, গপ্পো চলুক।
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৫652675
  • আসলে এরই মধ্যে একটা ছোটাসা ব্রেক দিয়েছিলাম, কিন্তু সেকথা লিখতে ভুলে গেছলাম।
    সেই ব্রেকটি এখন শেষ। আবার লিখছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৯652676
  • হুম্‌। এতজন বিবাহিত পুরুষ আছেন কোম্পানীতে, তাঁদের অনেকেরই ছোটো বড়ো মাঝারি বয়েসের বাচ্চা কাচ্চা আছে। আমি জয়েন করবার পরে অন্ততঃ তিনজনের একটি সন্তানলাভ হয়েছে। দুজনের পুত্রলাভ, একজনের কন্যালাভ। তাছাড়া বিয়েও হয়েছে তিনজনের, আরো দুতিন জনের বিয়ে হচ্ছে হবো করছে। ফলে উৎসবের পরিবেশ মাঝে মাঝেই মাতিয়ে তোলে সেঞ্চুরীকে। সমস্ত উৎসবের জন্যেই গণহারে চাঁদা তোলার ব্যাপার থাকে, তারপরে থাকে অনুষ্ঠানবাড়ীতে গিয়ে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার। বিয়ে অন্নপ্রাশন বাদ দিলে, একটা শ্রাদ্ধবাড়ীও অ্যাটেন্ট করতে হয়েছে, সেখানে যদিও চাঁদা তুলবার ব্যাপার ছিলো না। কোম্পানীর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের মা মারা গেলেন। দিনের বেলার শ্রাধানুষ্ঠানে গেছলাম, রাতের ভোজসভায় যাইনি। শোনা যায় অসম্ভব ভালো খাওয়া দাওয়া হয়েছিলো সে রাতে। এরই মধ্যে জয়েন করে একটি ছেলে। বেশি কথা বলতে পারে না সকলের সঙ্গে। সে এসেইছে অ্যামেরিকার প্রোজেক্টে যাবে বলে। মাসখানেকও সময় নেই তার। সে ও টুক করে বিয়ে করে ফেলল। নিজের উদ্যোগেই। সমস্ত আয়োজন নিজে করেছে, ওর নিজের বাবা মায়ের দিকে তেমন কেউ নেই, সব খুব দূরে কোথায় গ্রামে থাকে। অত্যন্ত অনাড়ম্বর সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে সে আমাদের সকলকে সপরিবারে আসবার নিমন্ত্রণ করেছিলো, খুব আন্তরিকতার সঙ্গে। খুব বেশি লোক হয় নি। মিতা, সপরিবারে আমি, দিব্যেন্দুদা, ও আরো গুটিকয় আমন্ত্রিত আসে যায় সে অনুষ্ঠানে। এই কজনই বরপক্ষের লোক। বাকি সব শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। খুব যত্নআত্তি করেছিলো সে। তবু ফিরে গিয়ে সেই অনাড়ম্বর বৌভাতের গল্প করে করে টিটকিরি ঠাট্টায় জমজমাট থাকে অফিস স্পেস। বেশ কিছুদিন। যতদিন না ছেলেটির ভিসা ইন্টারভিউয়ের দিনটি আসে। খুব বেশি কায়দা করে ইংরিজি বলতে পারে না সে। অ্যামেরিকান এম্ব্যাসিতে নাকি তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, আর ইয়ু ম্যারেড?
    উত্তরে সে বলে, ইয়েস! আই হ্যাভ্‌ ম্যারেজ সার্টিফিকেট।
    এইটে শুনে নাকি ভিসা অফিসার একটু সন্দেহের চোখে দেখেন তাকে।
    কী করতে যাচ্ছে, কোন বিষয়ের ওপরে কাজ, এইসব শুনে, টানা পরীক্ষা নেন ওর‌্যাকলের ওপরে।
    সে পরীক্ষায় সে পাশ করবেই নিঃসন্দেহে। কিন্তু আরো কীসব কাগজ চেয়ে পাঠান তাঁরা।
    দুপুরের দিকে হন্তদন্ত হয়ে অফিসে ফেরে নিরুপম নামের সেই ছেলেটি।
    তাকে তখন কয়েক প্রস্থ জেরা করে মার্কেটিং ডিরেক্টর অজিত ভট্‌চাজ ও অন্য কয়েকজন মুরুব্বি। তারপরে হাসির ঢেউ খেলে যায় সর্বত্র।
    কি অদ্ভুত ছেলেরে বাবা! ওকে জিগ্যেস করেছে, আরিউ ম্যারেড? তো তাতে ও বলেছে, ইয়েস! আই হ্যাভ ম্যারেজ সার্টিফিকেট। হোঃ হোঃ হোঃ।
    কী বলেছে? কী বলেছে?
    বলেছে, আই হ্যাভ ম্যারেজ সার্টিফিকেট।
    ওমা! তাই? উরি বাবারি! হো হো ক্যানো?
    আবার বল, আবার বল..
    আই হ্যাভ ম্যারেজ সার্টিফিকেট।
    গাঁট একটা। কী দরকার তোর ম্যারেজ সার্টিফিকেট নিয়ে কথা বলবার? তোকে কি কেউ জিগ্যেস করেছে যে তোর ম্যারেজ সার্টিফিকেট আছে কি নেই?

    নিরুপমের কানেও এইসব ব্যাঙ্গোক্তি ঢুকছে কিনা কে জানে! অসম্ভব ঢ্যাঙা সেই ছেলেটাকে দেখি খুব চিন্তিত মুখে বেরিয়ে যায় অফিস থেকে। ভিসা সে পায় ঠিকই। সস্ত্রীক সে চলে যায় অ্যামেরিকা। আর ফেরেনি অফিসে। চাকরি বদলে ফ্যালে ওদেশে গিয়ে। অথচ সেই "আরিউ ম্যার্ড? এবং ইয়েস আই হ্যাভ ম্যারেজ সার্টিফিকেট"এর ফাটা রেকর্ড বারে বারে বেজে গেছে ঐ অফিসে। নিরুপম চলে যাবার অনেক অনেক দিন পর অবধি ঐ ফাটা রেকর্ডই ছিলো অনেকের বিনোদনের সামগ্রী।
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১২652677
  • তিনজনের একটি করে* সন্তানলাভ হয়েছে।
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩652678
  • অ্যাটেন্ড*

    প্রচুর টাইপো হচ্ছে।
  • nina | 83.193.157.237 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৯:২১652679
  • সে,
    ঝাজী---চ্ন্দ্রবিন্দু লাগবেনা---
    মুগ্ধ হয়ে পড়ছি
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:২০652680
  • থ্যাঙ্ক্‌স্‌ নিনা। ভুল শুধরে দিলেন।
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৫:৫৫652681
  • একটা অন্নপ্রাশনের নেমন্তন্ন খেয়েছি চাকরির একেবারে গোড়ার দিকে। দমদমে। ওর‌্যাক্‌ল্‌ স্পেশালিস্ট সৌরভের মেয়ের অন্নপ্রাশন ছিলো সেটা। শীতের কোনো এক রবিবারে। সেদিন আমার সেঞ্চুরীর ক্রিকেট ম্যাচও ছিলো গল্‌ফ্‌ গ্রীণের দিকে একটা অসমান মতো মাঠে। দশ ওভার - দশ ওভার করে খেলা। ওর‌্যাক্‌ল্‌, সি প্লাস প্লাস, পাইথন, ম্যানেজার, সবাই হৈ হৈ করে খেলছে, আর মেয়েরা মাঠের সাইডে দাঁড়িয়ে সানগ্লাস পরে ছাতা মাথায় সাপোর্ট করছে। ম্যানেজারেরা বেশি করে অ্যাপ্রিসিয়েশান ও হাততালি পাচ্ছেন, দু বলে আউট হলেও হাততালি, আবার বল করতে গিয়ে একের পর এক ছয় দিলেও বাঃ বাঃ করে উঠছে জনতা। সবাই তো খেলছে না। প্রায় সকলেই এসেছে, অন্ততঃ যারা উইকেন্ডে দেশের বাড়ি যায় না, তারা প্রত্যেকেই এসেছে। শুধু কাজ করলে তো হবে না। খেলাও একটা টিম ওয়ার্ক। অফিসের বাইরেও প্রমাণ করতে হবে, তুমি কত বড়ো টিম প্লেয়ার, ছুটির দিনে ঘরে বৌ বাচ্চা ফেলে এসে কি সুন্দর টিম ওয়ার্কে পার্টিসিপেট করছ। তারপরে তো যেতে হবে নেমন্তন্ন অ্যাটেন্ড করতে সুদূর দমদমে। সৌরভের মেয়ের আজ হচ্ছে মুখেভাত। খেলা শেষে সবাই প্রায় লাইন করে হিসি করতে যায় অজিত ভট্‌চাজের বাড়ী। গল্ফ গ্রীণের সেই খেলার মাঠের অনতিদূরেই তার ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্ট। সে নিজেও খেলেছে। টল, ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম অজিত ভট্‌চাজের রূপে মুগ্ধ অ্যাড্‌মিনিস্‌ট্রেটিভ অ্যাসিট্যান্ট্‌রা হিসি করবার অজুহাতে অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে ওঁর বৌকেও মেপে নিতে চায়। বৌ তখন ছোটো শিশুকে ঘুম পাড়িয়েছেন সবে। সবাই পা টিপে টিপে, গিয়ে গিয়ে হিসি করেই নিঃশব্দে ফিরে আসে। অজিত ভট্‌চাজের ফ্যানের সংখ্যা গোটা কয়েক। মেয়ে ফ্যানেদের কাছে ইনি হলেন বাঙালী টম্‌ ক্রুজ। হাইট বাঙালী হিসেবে যকে বলে টল, গায়ের রং ও ফর্সা, পেটের ভুঁড়িটা আস্তে আস্তে বাড়ছে যদিও, সেভাবে দেখতে গেলে ইনি টম্‌ ক্রুজের বিটা ভার্শান না হলেও চরম নিন্দুকও নিঃসন্দেহে ডিস্‌কাউন্ট এডিশান হিসেবে মেনে নেবে।
    ডিরেক্টরদের তো গাড়ী আছেই, তাহলে দাঁড়ালো গিয়ে তিনটে মোটোর গাড়ী, এবং দুটো পুলকার। চেপে চেপে বসলে এঁটে যাবে সকলেই। খেলা শেষে হিসি টিসি করে প্রেশ হয়ে নিয়ে রওনা দিলাম সকলে মধ্যাহ্নভোজের উদ্দেশ্যে।
    পাত পেড়ে সবাইকে খাইয়েছিলো সৌরভ। ভাত ডাল ভজাভুজি তরকারি ইত্যাদির সঙ্গে বিশেষ আকর্ষণ গামা সাইজের পাবদা মাছ। থালায় আঁটছে না এমন সাইজ। শেষপাতে তবক দেওয়া সন্দেশ। সৌরভের কন্যাকে ভুরিভুরি আশীর্ব্বাদ করে ফিরে চললাম সকলে নিজ নিজ ঘরে। ফেরার পথে আলোচনা হয়, এরপরে কার পালা? আর কার বাচ্চার অন্নপ্রাশন আসছে নেক্স্ট্‌? অজিত ভট্‌চাজ নাকি ত্রিদিব ভট্‌চাজ?
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:২৩652682
  • একটু গরম পড়তেই হৈ হৈ করে এসে গ্যালো ত্রিদিব ভট্‌চাজের ছেলের মুখে ভাত। এঁর বাড়ী অফিস থেকে দুমিনিটের হাঁটা পথ। অফিস থেকে বেরিয়েই রাস্তাটা ক্রস করেই গলির মধ্যে প্রাচীন দ্বিতল বাড়ি। অট্টালিকা বললেও বলা চলে। এই অন্নপ্রাশনটা হবে ওয়ার্কিং ডে তে। দুপুরে ঐ ট্রেনিং রুমটায় আর পাত পড়বে না। দীপককেও ঐ একটা দিন অন্ততঃ ছুটে ছুটে খাবার কিনতে হবে না। গরম যত বাড়ছে স্যার ও ম্যাডামদের খাবারের রেঞ্জেও বেড়ে যাচ্ছে ডাইভার্সিটি। কেউ চায় বালীগঞ্জ ফাঁড়ির ধাবার লস্যি, তো কেউ চাইবে শর্মাজ থেকে পিস্তা ইলাইচি দেয়া শরবৎ। দুপুর রোদে সে জিনিস বয়ে আনতে হবে দ্রুতগতিতে, দেরি করলেই লস্যি হোক কি শরবৎ - কোনোটাই আর হিম শীতল থাকবে না, হয়ে যাবে বিস্বাদ, লস্যির ফেনা কমে যাবে, স্যারেরা মুখ বিকৃত করবেন, ম্যাডামেরা খেঁকিয়ে উঠলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই।
    মোটকথা এদিন দুপুরে ত্রিদিবের বাড়ী সকলের নেমন্তন্ন। মুরুব্বিদের সপরিবারে যেতে অনুরোধ করেছেন ত্রিদিব। বাকিদের আলাদা করে সেভাবে কিছু নয়; ঐ যেরকম যতটা বলা যায় - তোমরা সব এসো কিন্তু, দুপুরে খাবে, আঙুরের চাটনি আছে মেন্যুতে।
    বারোটা থেকেই টুকটাক পাঁচ ছজনের গ্রুপ লাজুক লাজুক মুখ করে রাস্তা পেরিয়ে গলিটার মধ্যে ঢুকে যেতে লাগল। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক দেখে আমরাও যে যার ওয়ার্ক স্টেশন লক করে দিয়ে গুটিগুটি এগিয়ে গেলাম নেমন্তন্ন বাড়ীর দিকে। খুঁজে পাবার কোনো ঝামেলা নেই, কানাগলির শেষ বাড়িটিই উৎসবে মুখর। ভেতরে ঢুকেই বড়ো বড়ো কয়েকটা ঘরে খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়েছে। যে শিশুটির অন্নপ্রাশন তাকে অবিশ্যি দেখা যাচ্ছে না। সে নির্ঘাৎ ভেতরে কোথাও আছে, নয়ত ঘুমোচ্ছে।
    এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি। ত্রিদিবকে কখনো আমি নাম ধরে ত্রিদিব বলে ডাকিনি আমি। আমাকে বলা হয়েছিলো এঁকে ত্রিদিবদা বলে ডাকতে। মিস্টার ভট্টাচারিয়া বলেও হয়ত ডাকা যেত, কিন্তু এই কোম্পানীতে ম্যানেজিং ডিরেক্টর ব্যতীত আর বিশেষ করোকে মিস্টার ওমুক কি মিস্টার তোমুক বলবার চল নেই। দুয়েকজন বৃদ্ধ শেয়ার হোল্ডার আছেন, কিন্তু তাঁরা হচ্ছেন ব্যতিক্রম। অথচ, আরেকটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। ত্রিদিব আমার চেয়ে জুনিয়র। হতে পারে যাদপ্পুরের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট গোল্ড মেডালিস্ট, কিন্তু হিসেব করলে তো বয়েসে আমার চেয়ে ছোটো। বয়েসে ছোটো একটা লোককে দাদা বলে ডাকব? সেরকম যে ডাকা হয় না, তা ও না। পিওন বেয়ারাতো হরদম হাঁটুর বয়সী লোকজনকে স্যার আপনি, দাদা আপনি, দিদি আপনি, ম্যাডাম আপনি - এইরকম বলে চলেছে। সেইসব হাঁটুর বয়সী স্যারেরা ম্যাডামেরাও পিওনদের তুমি তুমি করে কত রকম কাজের আদেশ করে। আমার ক্ষেত্রেও কি সিচুয়েশনটা একই হচ্ছে তাহলে? ত্রিদিবের থেকে অনেক বেশি এডুকেশনাল ডিগ্রী থাকা সত্ত্বেও, বয়সে বড়ো হওয়া সত্ত্বেও, ওকে আমায় ত্রিদিবদা বলে ডাকতে হবে? এটাই সমাজের দস্তুর? আশিসদা, অজয়দা, রাজীবদা, মুখার্জ্জিদা, - এইসব চাকরবাকর শ্রেণীর লোকেদের রোজ ঠিক কতটা অপমান বয়ে বেড়াতে হয়? আমার চেয়েও বেশি?
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:১১652684
  • অবশ্য আমি একটা অন্য শর্টকাট নিয়েছি। কোনো নাম ধরেই একে ডাকি না। আনন্দকে যেমন আনন্দদা বলতে বলেছিলো আনন্দ, অথচ সে নাকি বয়সে আমার চেয়ে ছোটো, অন্ততঃ মাঝে মাঝেই নিজের জন্মসাল বলে বেড়ায়, যেটা আমার জন্মের ঠিক পরের বছর, আমাকে তুমি তুমি করে ডাকে। আমি আনন্দ হোক কি ত্রিদিব, কারোকেই দাদা বলি না, আপনি করে বলি। নাম ধরেও ডাকিনা। এরা সব পাওয়ারফুল লোকজন, আমাকে তুমি করে ডাকবার আগে আমার পার্মিশান নেবারও প্রয়োজন বোধ করে না।
    তা এখন আমি ত্রিদিব কি মিস্টার ভট্টাচারিয়ার বাড়ি দুপুরের নেমন্তন্ন রক্ষা করতে এসেছি। সঙ্গে পাশে পাশে রয়েছে মিতা। আমাদের তো কেউ, এসো এসো বলে খাতির করে ভেতরে নিয়ে যাবে না, নিজেদেরই দায়িত্ব নিয়ে ঢুকে জায়গা করে খেতে বসতে হবে। বাঁদিকে একটা ঘরে দেখলাম অনেকেই খাচ্ছে, পরিবেশন হচ্ছে। মানে ঐ ব্যাচটা বেশ খানিকক্ষণ আগেই খেতে শুরু করেছে, ওঘরে খালি জয়গাও নেই। সোজাসুজি আরেকটা ঘরে এরই মধ্যে টেবিল হেবিল পেরে থালা গেলাস সব সাজানো হয়েছে, এখনো কেউ ঢোকেনি সেথায়। ঐ বাড়ীরই কোনো ভৃত্যশ্রেণীর লোক আমাদের দুজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, যান না, ভেতরে গিয়ে বসুন। এই ঘরটায় বসুন। সে লোক ভৃত্যও হতে পারে, রাঁধুনির সাগরেদও হতে পারে, মোটকথা ফর্সা কাপড় পরা কেউ নয়। আমরা দুজনায় গুটি গুটি গিয়ে ঐঘরে বসলাম। খাবার পরিবেশনে দেরি আছে মনে হয়। অন্য ঘরটা থেকে হৈ হল্লা, হাসি মশ্‌করার আওয়াজ এদিকে আসছে। আমরা নিজেদের মধ্যে নীচুস্বরে গল্প করছি, এরই মধ্যে একটু মিডিয়াম ভলিউমে সোরগোল শোনা গেল। ডিরেক্টর মণ্ডলী, তারপরে সস্ত্রীক আনন্দ, আরো কয়েকজন হোমরা চোমরারা এসে পড়েছে। আসুন আসুন, আরে কী সৌভাগ্য, এই টাইপের আপ্যায়নের আওয়াজ পষ্ট শোনা যায়,গলার আওয়াজেও সকলকেই চিনতে পারি। তারপরে ত্রিদিব তাদেরকে নিয়ে আমরা যে ঘরে বসে আছি, সেখানে ঢোকায়। খুব যত্ন করে করে তাদেরকে বসতে বলে। এইচার ম্যানেজার, তিনজন ডিরেক্টর, সস্ত্রীক আনন্দ, কয়েকজন ওর‌্যাক্‌ল্‌ ফাইনানশিয়াল, এঁরা চেয়ার দখন করে হাসি হাসি মুখে বসে পড়েন। আরো কয়েকটা চেয়ার খালি আছে। এবার ত্রিদিব আমাদের কাছে এসে নীচু গলায় বলেন আমাকে ও মিতাকে - তোমরা কাইন্ডলি একটু বাইরে যাবে? ঐ ঘরটা আর একটু পরেই পরিষ্কার করে দেবে। ঐ ঘরটায় তোমরা বোসো, কেমন? একখুনি হয়ে যাবে। দু মিনিটও লাগবে না।
    সে ঘর থেকে তখন নিমন্ত্রিতরা এক এক করে বেরিয়ে এঁটো হাত ধুতে যাচ্ছে দেখতে পাই।
    অদ্ভুত লাগে। খুবই অদ্ভুত লাগে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন, যে কিছুই করবার নেই। এরই মধ্যে এসে গেছেন মুখার্জ্জিদা (ড্রাইভার), দীপক, অজয়দা, আরো কে কে যেন। ঘর সাফ করে দিয়ে যায় লোক। হ্যাঁ, বেশ দ্রুততার সঙ্গেই। এই খাবার এখন বিস্বাদ লাগবে, রুচবে না মুখে, তবু বসতে হবে, অভিনয় করে যেতে হবে, যেন কত আনন্দ করে খাচ্ছি।
    পাশের সেই ঘরটায় যারা বসেছে, তাদের জন্যে স্পেশাল মেন্যু, স্পেশাল খাতির। আমাদের ঘরে একবার ঢুকে দায়সারা "কী খাচ্ছো তো সব ঠিকঠাক?" বলেই ত্রিদিবদা ঢুকে যান আবার ঐ ঘরটায়। একবার বাচ্চাকে নিয়ে এসে দেখানো হয় সেখানে। এঘরে কেউ বাচ্চাটাকে নিয়ে আসে না। ওঁর স্ত্রী আসেন ঐ ঘরে, আলাপ পরিচয়, কুশল বিনিময়, হাসি বিনয় আশীর্ব্বাদ, আরো দুটো মিষ্টি দেবার জন্যে, আরো একটা স্পেশাল আইটেম খাওয়ানোর জন্যে পেড়াপিড়ি, সমস্ত শোনা যাচ্ছে, দরজাগুলো তো হাট করে খোলা।
    মিতা নীচুস্বরে বলে, আমার ধারণা ছিলো ত্রিদিবদা অন্ততঃ ভদ্রলোক, এখন তো দেখছি একেবারে পাচাটা ছোটোলোকরে!
    কী হবে এসব বলে? কোনো লাভ নেই।
    হ্যাঁ, সে ই। কোনো লাভ নেই। আমরাও কিন্তু সমান সমান চাঁদা দিয়েছি। এক পয়সা কম দিয়েছি কি?

    ফেরার পথে আমরা ঠিক করি, এর পর থেকে এইধরণের লোকেরা যদি নেমন্তন্ন করে, একদম যাব না। যাবো ও না, চাঁদাও দেবো না একপয়সা। দেখব, কী করতে পারে। দুই বন্ধু প্রতিজ্ঞা করি অফিসে ফিরে আসতে আসতে। অসম্মানের নেমন্তন্নবাড়ীতে না গিয়ে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে আনন্দমনে দুমুঠো মুড়ি চিবিয়ে নেবো বরং আনন্দ করে। নে, কী করবি করে নে।
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:৪৫652685
  • জেম্‌স্‌ আসছে। পাসওয়ার্ডও বদলে বদলে যাচ্ছে বিনা নোটিশে। হঠাৎ। আচমকা। ঝাজীর সঙ্গে এব্যাপারে অলোচনা করলে মনে হয় কিছু সমাধান বের করতে পারব। ল্যাবের একটা কোণে বসে আছেন ঝাজী। পাশের চেয়ারে পুষ্পেন্দ্র গুপ্তা, নতুন জয়েন করেছে। পুষ্পেন্দ্র গুপ্তা, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। সঙ্গে ওর‌্যাকল ফাইনাশিয়ালের জ্ঞান। প্রোজেক্টের অপেক্ষায় বসে বসে একটা লাইব্রেরী ডেটাবেস বানাচ্ছেন মাইক্রোসফ্ট অ্যাক্সেস দিয়ে।
    ঝাজীকে গিয়ে বললাম আনন্দর নতুন কীর্তিকলাপ।
    চুতিয়া হ্যায়!
    চুতিয়া হ্যায় শুনে পুষ্পেন্দ্র ঘার ফিরে তাকালো ঝাজীর দিকে।
    কৌন?
    ঔর কৌন হো হোগা? হামারা সিয়ে।
    সিয়ে মৎলব?
    নট ইয়ু। সিয়ে মৎলব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট নেহি, সিয়ে মৎলব সিস্টেম্‌স্‌ অ্যাডমিনিস্‌ট্রেটর।
    পুষ্পেন্দ্র পুনরায় মাইক্রোসফ্ট্‌ অ্যাকসেসে নিবিষ্ট হয়।
    চলিয়ে, লেট্‌ গো টু দ্য স্মোকিং রুম।
    ঝাজীকে নিয়ে স্মোকিং রুমে ঢুকি।
    হ্যাভিউ এভার নোটিস্‌ড্‌ ওয়ান থিং?
    কী জিনিস বলুনতো?
    ঝাজী বুঝিয়ে বলেন।
    আপনি যখনই স্মোকিং রুমে ঢুকবেন, যদি কেউ আগে থেকে এঘরে থাকে, তারা সব বেরিয়ে যাবে। লক্ষ্য করেছেন কি আগে?
    লক্ষ্য তো করেইছি ঝাজী। আজ কিছু নতুন নয় এটা, বরাবরই এরকম হচ্ছে।
    হ্‌ম্‌ম্‌।
    ঝাজী চুপ করে থাকেন অল্পক্ষণ।
    শুনুন, আপনাকে বলি তবে। অ্যামেরিকা থেকে ফিরবার পরে এই জিনিসটা আমি খুব ভালো করে নোটিস করেছি। সকালে কি বিকেলে, এই ঘরটায় চা নিয়ে সবাই এসে দাঁড়ায়। ছোটোখাটো কথাবর্তা হয়। সিগারেট খায়। চা খাওয়া হয়ে গেলে, সবাই বেরিয়ে যায়। এখন এর মধ্যে একটা ব্যাপার হচ্ছে, দ্য মোমেন্ট আপনি এই ঘরে চায়ের কাপ হাতে ঢুকলেন, সবাই চুপ হয়ে গেল, এবং সবাই হুড়্‌হুড়্‌ করে বেরিয়ে গেল।
    ঠিক বলেছেন ঝাজী।
    আরেকটা ব্যাপারও আমি দেখেছি, শুধু আনন্দ থাকলেই নয়, আনন্দ না থাকলেও এই একই প্যাটার্ণে ওরা বিহেভ করে।
    হুঁ, আপনি একদম ঠিক বলছেন।
    এবার দেখুন, মিতা কিংবা আমি যখন থাকি, আমরা এটা করি না। মিতা আপনার ফ্রেন্ড, আমিও আপনার ফ্রেন্ড।
    সেতো ঠিক।
    কিন্তু আপনার ফ্রেন্ড হওয়া সত্ত্বেও, আমি এলে কিন্তু ওরা বেরিয়ে যাবে না, মিতা এলেও বেরিয়ে যাবে না, কেবল আপনি এলে বেরিয়ে যাবে। বুঝতে পারছেন ব্যাপারটা?
    আমি চুপ করে থাকি।
    তো এই নিয়ে, কালকে আমি একটা ব্যাপার করেছি।
    কী করেছেন?
    শুনুন না। কালকেও সবাই চা খাচ্ছি, আপনি একটু পরে এলেন।
    হ্যাঁ, মানে আমি সার্ভাররুমে কাজ করছিলাম তাই একটু পরেই আসি চা খেতে।
    দ্যাট্‌স্‌ নট দ্য পয়েন্ট। দ্য পয়েন্ট ইজ, আপনি এলেন, সঙ্গে সঙ্গে অ্যাজ আ রুল অফ থাম্ব ওরা বেরিয়ে গেল। আই নিউ দ্যাট। সবার লাস্টে বেরোলো মেনকা, আফটার দ্যাট অই অলসো ওয়েন্ট আউট। আমি আপনাকে কম্প্যানী দিতে এই ঘরে অ্যানাদার ফাইভ কি টেন মিনিট্‌স্‌ থেকে যেতে পারতাম তো? কিন্তু থাকলাম না। কেন জানেন?
    কেন?
    বরিয়ে গিয়ে আমি মেনকাকে ধরলাম। আই আস্ক্‌ড্‌ হার এ সিম্পল্‌ কোয়েশ্চেন। হোয়েনেভার শী এন্টার্স দ্য রুম, হোয়াই অল্‌ অফ্‌ ইয়ু সাডেন্‌লি উইশ্‌ টু লীভ দ্য প্লেস? তো ও কি রিপ্লাই দিলো জানেন? ও বললো, হামারে বাতেঁ খতম হো জাতে হ্যায়, ইসি লিয়ে হাম নিকল জাতে হ্যায়। তো, আমি জিগ্যেস করলাম, ইজ্‌ন্ট ইট ভেরি সারপ্রাইজিং দ্যাট, এভরি টাইম শী এন্টার্স দ্য রুম, অ্যান্ড রাইট অন দ্যাট মোমেন্ট এভরি ডে, তুমহারে সারে বাতেঁ উসি ওয়খৎ খতম হো জাতে হ্যায়? ইজ্‌ন্ট ইট ভেরি স্ট্রেঞ্জ? দেন শী গট্‌ অ্যাংরি উইথ মী।
    আমি হাঁ হয়ে শুনি ঝাজীর কথা। চুপ করে থাকি কিছুক্ষণ। এরপরে ঝাজী কথা বলেন।
    আপনি যে ভাবছেন আনন্দ আপনার শত্রু, এটা ঠিক নয়।
    ঠিক নয়?
    না না, ঠিক আছে। ও শত্রু, কিন্তু ওকে সাপোর্ট করে এরা, যারা আপনি ঢুকলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, তা সে আনন্দ থাকুক কি না থাকুক।
    হ্যা ঝাজী। দেয়ার ইজ্‌ সামথিং ভেরী রং হিয়ার...
    নট ওনলি হিয়ার, ইট ইস ইন আওয়ার সোসাইটি। অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কা পাসোয়ার্ড বদল হো জানা তো জাস্ট দ্য টিপ অফ দ্য আইসবার্গ।
  • !! | 134.123.228.218 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:৪৮652686
  • বাপরে কি সব লোকজন, এরাই আসল বাঙালী
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৯:১৮652687
  • সিয়ে=সিস্টেম্‌স্‌ অ্যাড্‌মিনিস্ট্রেটর দেখে মনে হতে পারে ভুল লিখেছি। কিন্তু না। ওটা ছিলো আমাদের (আমার ও ঝাজীর) কোড ওয়ার্ড। এস্‌এ না বলে সিয়ে বলা।
    সিস্টেম্‌স্‌ অ্যাড্‌মিনিস্ট্রেটর থেকে সিস্যাডমিন্‌, সেটা থেকে সিস্‌অ্যা, এবং ফাইনাল অপভ্রংশ সিয়ে। যাতে আনন্দ কিছুতেই ডিকোড করতে না পারে।
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:০৭652688
  • মেয়েকে ইস্কুলে ভর্তি করাবো বলে অফিসে আসতে দেরী হতে পারে। ঠিক দেরী নয়, মধ্যে কয়েক ঘন্টা থাকবো না। ক্লাস ওয়ানে তো পাঠানোই গেল না। ঘরে বসিয়ে রাখতে হয়েছিল। অ্যাক্সিডেন্ট হাসপাতাল ফের অসুখ ফের হাসপাতাল, ফের ঘরে থেকে হাসপাতাল পরবর্তী সেরে উঠবার সময়, নানারকম অ্যালার্জি, নতুন করে ভ্যাক্সিনেশন, এই সমস্ত করতে করতে ইস্কুলে আর যাওয়াই হোলো না তার। শিক্ষাবর্ষের শেষে একটা পরীক্ষা মতো হয়, সেই পরীক্ষার দিনে যেতেই হবে। ভোরের দিকে বাসে করে পৌঁছে দিতে যাই ইস্কুলে, মাঝপথে সেই ভোরের আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে। সঙ্গে ছাতা নেই, দুজনেই ভিজছি বাস থেকে নেমে। সপ্‌সপে ভিজে জামা ছাড়িয়ে যে নতুন জামা পরাবো সে উপায়ও নেই, জামা গায়েই শুকোয়, পরীক্ষা সে কেমন দেয় জানি না। ফের জ্বর আসে, পরের দিন আর পরীক্ষা দিতে যাওয়া হয় না।
    আর দরকার নেই ঐ ইস্কুলে যেয়ে। বড্ড দূরের ইস্কুল। দরকার হলে কাছে পিঠেই যদি ইস্কুল থাকে সেখানেই সময়করে ভর্তি হয়ে যাবে। জীবনের প্রথম এবং প্রধান প্রায়োরিটি বেঁচে থাকা। ওসব লেখাপড়া অনেক পরের জিনিস। সবার আগে বাঁচতে হবে। কদিন পরে ইস্কুলে গেলে যদি মূর্খ হয়ে থাকে, তবে মূর্খ থাকাই ঢের ভালো অমন লেখাপড়ার থেকে। দামী দামী লেখাপড়া শেখা লোকজনদের সঙ্গে তো সর্বক্ষণ ওঠাবসা করছি। দিনের মধ্যে বারো ঘন্টাই তো কাটে এদের সঙ্গে। হাতে গুণে দেখিয়ে দিক কেউ, এদের মধ্যে কজন মানুষের মতো মানুষ? দেখিয়ে দিক, এত গাদা গাদা ডিগ্রী নিয়ে কজন সত্যিকারের শিক্ষিত। শুধু কোড লিখলেই যদি মানুষ হওয়া যেত, সারাক্ষণ কম্পিউটার চালালেই যদি সত্যিকারের শিক্ষিত হয়ে যেত প্রত্যেকে, তবে দুনিয়ায় তো সত্যিই বড়ো সুখের দিন।
    খুঁজে পেতে ইস্কুল একটা বের করেছি পদ্মপুকুরের ওদিকটায় জগুবাজারের কাছে। খবর নিয়েছি ভর্তি করতে পরীক্ষায় বসতে হবে না, ক্লাস টু তেই নিয়ে নেবে বলেছে। এখন তো নীচু ক্লাসে পরীক্ষায় পাশ ফেলের ব্যাপার নেই, তাই ঐ পরীক্ষায় অ্যাবসেন্টের কাগজ দেখালেই হবে। এসব হচ্ছে জনগনের ইস্কুল, অবৈতনিক বাংলা মিডিয়াম। বার্থ সার্টিফিকেট ও ঐ আগের ইস্কুলের পরীক্ষায় অ্যাবসেন্টের কাগজ নিয়ে কাল যেতে হবে সকালে। ভোরে এসে কাজকর্ম যতটা পারি এগিয়ে গিয়ে, সাড়ে নটা দশটা নাগাদ বেরিয়ে যাবো। ঘন্টা দেড় দুয়ের বেশি লাগবে বলে মনে হয় না।
    আনন্দ যদি ঝামেলা করে, কোনো কাজের ছুতোয় আটকে দেয়, তাই আগে থেকে ওকে কিছু না বলাই ভালো। আগে থেকে জানা থাকলে মতলব কষবে কী করে আমায় বাগড়া দেয়া যায়।
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৪৪652689
  • কারোকে কিছু বলিনি। যেই দেখেছি ওরা সব ঢুকেছে স্মোকিং রুমে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে নিয়ে, ব্যস্‌ সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেছি ঝড়ের বেগে। নির্ধারিত সময়ের কিছু আগেই পৌঁছে যাই ইস্কুলে। ছোটো একটা ফর্ম ফিলাপ করবার ব্যাপার। তারপরে ঐ কাগজ দুটো দেখালেই কাজ হয়ে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু ভেবে এসেছি এক, হোলো আরেক। প্রাইমারী সেকশানের ইনচার্জ দিদিমনি বিদেশের বার্থ সার্টিফিকেট কিছুতেই অ্যাকসেপ্ট করবেন না। তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম্‌ কোলকাতা কর্পোরেশনের বাথ সার্টিফিকেট ব্যতীত আর কিছুই চেনেন না। যতই বোঝাই, এই দেখুন বার্থ সার্টিফিকেটের একটা সার্টিফায়েড কপিও আছে ভারতীয় দূতাবাসের থেকে, এই দেখুন অশোক স্তম্ভের সীলমোহর।
    কে কার কথা শোনে? আশোক স্তম্ভের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় কর্পোরেশনের শীলমোহর। কিছুক্ষণ কথা বলবার পরেই বুঝি যে ঐ দিদিমনি কোনোদিনো অন্য কোনো বার্থ সার্টিফিকেট চোখেই দেখেন নি, যা দেখেছেন সমস্ত কোলকাতা কর্পোরেশনের। এঁকে বোঝাতে যাওয়া বৃথা। ইনি বুঝবেন না। বোঝালেও বুঝতে চাইবেন না। মাঝখান থেকে ইস্কুলে ভর্তি করানোটা না বানচাল হয়ে যায়। একটু সময় চেয়ে নিই ওঁর কাছে। চেষ্টা করে দেখতে হবে যদি বার্থ সার্টিফিকেট জোগাড় করা যায় কর্পোরেশন থেকে। দিদিমনিকে যতই বোঝাই যে আগের ইস্কুলে তো এই বিদেশের বার্থ সার্টিফিকেটই নিলো, কিছু তো ঝামেলা করেনি; ততই এই দিদির আঁতে ঘা লাগে। আগের ইস্কুল যা করেছে করেছে, আমরা আইন মেনে চলি, আমরা কর্পোরেশনের বার্থ সার্টিফিকেট ছাড়া ভর্তি নিই না।
    মাথায় উঠলো অফিসে যাওয়া। দিদিমনি মাত্র একদিন সময় দিয়েছেন। কালকেই এনে দিতে হবে ওঁর পছন্দের বার্থ সার্টিফিকেট।
    কর্পোরেশন অফিসে দৌড়লাম। বার্থ সার্টিফিকেটের দপ্তর কোথায় ভাই? ঐ তো উপরে, চনে যান, এইদিকে সিঁড়ি আছে। চলে যাই সেখানে। মান্ধাতার আমলের বিল্ডিং এ পেল্লাই সব ঘর, তারই একটায় ঢুকি। বড়ো বড়ো টেবিল বাগিয়ে জনা তিন চার কর্মচারী। তাঁরা কেরাণী না অফিসার বোঝা শক্ত। বিদেশের বার্থ সার্টিফিকেট ও তার ভারতীয় অনুলিপি, যেটায় অশোকস্তম্ভ আছে- দুটো ই মেলে ধরি সামনে। এগুলো দিয়ে কি এখান থেকে কি বার্থ সার্টিফিকেট বের করা সম্ভব?
    না সম্ভব নয়। টেবিলের ও প্রান্তে বসা কর্মচারী বলেন, কোলকাতা কর্পোরেশনের এলাকার মধ্যে যে জন্মায় নি, তাকে কীকরে কোলকাতা কর্পোরেশনের বার্থ সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে? কোলকাতা কি তার জন্মস্থান?
    একদম সঠিক আর্গুমেন্ট। কিন্তু এই আর্গুমেন্ট ঐ দিদিমনিকে কীকরে বোঝাবো? এই মুহূর্তে ঐ দিদিমনির ক্ষমতা অনেক। তিনি না চাইলে ইস্কুলে ভর্তি না ও নিতে পারেন। তিনি যে ভুল, সেটা প্রমাণ হয়ে গেলেও কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে। যাহোক করে কিছু একটা সমাধান তো বের করতেই হবে।
    নীচে নামতেই দেখি কয়েকজন দালাল আমায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল, কী লাগবে দিদি? বার্থ সার্টিফিকেট?
    কী অসামান্য ক্ষমতা এদের। মুখ দেখেই মনের কথা বুঝে গেছে।
    ব্যক্ত করি আমার মনের বাসনা। এই বার্থ সার্টিফিকেটে যেমন যেমন আছে, ঠিক তেমনি করে কর্পোরেশনের সার্টিফিকেট বানিয়ে দিন।
    শুধু প্লেস অফ বার্থটা আমরা মানিকতলা মেন রোড করে দেবো। একটা ডাক্তারের সার্টিফিকেট লাগবে, আর হাজারটা টাকা দিন।
    হাজার টাকা কেন?
    বাঃ ডাক্তারের সার্টিফিকেট করতে হবে ওপরে অফিসারকে ঘুষ দেওয়া আছে।
    ডাক্তারের সার্টিফিকেট কেন ভাই?
    আপনার কাছে হাসপাতাল বা নার্সিং হোমের কাগজ নেই যেহেতু, বাচ্চাটাকে হোম ডেলিভারী করে দেবো। সেই হোম ডেলিভারীর জন্যে একটা ডাক্তার লাগবে তো।
    অতি সংকটেও হাসি পেয়ে যায় এর কথা শুনে। কিন্তু ভাই আমার যে আজই লাগবে জিনিসটা।
    আজতো হবে না দিদি।
    তাহলে কীকরে চলবে বলুন? কাল ইস্কুলে ভর্তির লাস্ট ডেট।
    লাস্ট ডেট? ঠিক আছে আপনি দুঘন্টা পরে ঘুরে আসুন। টাকাটা দিন এখনই।
    টাকা দিই।
    দুঘন্টা পরে আপনাকে আমি কোথায় পাবো?
    এইখানেই থাকি আমরা। বাবলু বলবেন, যে কেউ ডেকে দেবে।

    দুঘন্টা পরে সত্যিই হাতে এসে যায় কর্পোরেশনের বার্থ সার্টিফিকেট।
    এই মধ্যিখানের সময়টা ক্রমাগত হাঁটাহাঁটি করে গেছি জানবাজারের দিকটায়। সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে ধড়ে প্রাণ আসে। এখন অফিসে ফিরতে হবে। আনন্দ যদি বেশি ঝামেলা করে তো আজ ওরই একদিন কি আমারই একদিন।
  • সে | 188.83.87.102 | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২১:০৮652690
  • নাঃ, আনন্দ বেশি ঝামেলা করবার স্কোপই পায় নি। এতটাই আশ্চর্য হয়ে গেছল আমাকে দেখে।
    কী ব্যাপার? তুমি এখন এলে নাকি?
    নাতো! সকালেই এসেছিলাম, সমস্ত কাজ করে রেখেই বেরিয়েছি, ঘন্টা ছয়েক ছিলাম না, দরকারি কাজ ছিলো, ইস্কুলে ভর্তির ব্যাপারে।
    ঝড়ের বেগে বলে যাই।
    আনন্দ এরকম স্পীডে কথা বলতে আগে আমায় কখনো শোনে নি।
    তা ইস্কুলে ভর্তি হয়ে গেছে?
    কাল হবে, আজ বার্থ সার্টিফিকেট বের করলাম কর্পোরেশন থেকে, ঘুষ দিয়ে।
    কই দেখি দেখি..
    দেখালাম।
    এই দেখুন, ঘুষ দিলে কি না হয়। সব কিছু হুবহু এক, শুধু বার্থ প্লেসটা মানিকতলা মেন রোড।
    এহ্‌হে! এই সুযোগে বয়েসটাও অল্প কমিয়ে নিতে পারতে।
    আমি অবাক হয়ে তাকাই লোকটার দিকে।
    না মানে খুব বেশি নয়, ছ মাস কি বছরখানেক। তাতে আখেরে ওরই লাভ হোতো আরকি। এরকম স্কোপ তো সবাই পায় না আজকাল। তাই।
    ও ফিরিয়ে দেয় কাগজটা আমার হাতে।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৫652691
  • অবৈতনিক বাংলা ইস্কুলে সে আগেও পড়ত (হোস্টেলটা ছিলো অতিরিক্ত), এখানে এবারেও অবৈতনিক বাংলা ইস্কুল। সুবিধের মধ্যে এই ইস্কুলের বাস আছে। ইস্কুল বাস। মাসে দুশো টাকা ভাড়া। ইস্কুলের নিজস্ব কোনো বেতন নেই, শুধু বছরে একবার টাকা পঁয়তাল্লিশ দিতে হয়, সেটা গরমের দিনগুলোয় ইলেকট্রিক পাখা চালানোর খরচ বাবদ। এই ইস্কুলে কোনো পড়াশুনোর চাপ নেই, ইংরিজি পড়ানো বারণ; তবে কানাঘুষো শোনা যায়, যে ক্লাস ফোরে নাকি লুকিয়ে এবিসিডি শিখিয়ে দেওয়া হয়। আসল ইংরিজি শুরু হবে ক্লাস সিক্স থেকে। ভালোই হয়েছে। অফিসে নিয়মিত যা সব কানে আসে বিভিন্ন কোলিগদের থেকে। ক্লাস টু তো খুব উঁচু ক্লাস, নার্সারির বাচ্চাদের পড়ার চাপ, সেই নিয়ে বাপেদের (মায়েরা এই অফিসে কাজ করেন না) উদ্বেগ মিশ্রিত গর্বের সীমা পরিসীমা নাই। সমস্তই প্রায় মিশনারী স্কুলের গল্প। তাদের কোনোটায় সেন্ট লাগানো, কোনোটায় সেন্ট লাগানো নেই। মোটকথা বাচ্চাদের পড়াশুনোর চাপে বাপেরা খুবই উত্তেজিত। কার ইস্কুল কত বেটার, এই নিয়েও একটা আন্ডারকারেন্টের খেলা। তবে আমার ভাগ্য ভালো, আমার এই বাংলা অবৈতনিক ইস্কুল সমস্ত কম্পিটিশনের গন্ডির বাইরে।

    আজকাল নিয়মিত আনাগোনা ইন্‌শিওরেন্সের বিবিধ এজেন্টের। কতরকমের ইন্‌শিওরেন্স কোম্পানী যে আছে ও আরো কত শত পলিসি আছে, তা এইসব এজেন্টদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় না হলে জানা অসম্ভব। এই সব এজেন্টদের অসাধারণ গুণ থাকে, কোনোভাবেই অপমানিত বোধ না করবার। অনেককেই দেখেছি মুখের ওপরে কেউ খুবই অভদ্রভাবে চলে যেতে বলল, কিন্তু এজেন্টের মুখে তখনো লেগে থাকে দুষ্টু দুষ্টু হাসি। যেন ভারী মজার কথা শুনেছেন, আহা যেন কী যেন একটা প্রেমের কথা! তাকে হয়ত তাড়িয়েই দেওয়া হচ্ছে, সেই সব শুনেও লাজুক লাজুক মুখ করে প্রশ্ন করবে সেই এজেন্ট, তাহলে কবে আসব আবার? কাল? পরশু? আচ্ছা বেশ, তাহলে নেক্স্‌ট্‌ উইকে একবার আসব। (এই শেষ বাক্যটা একটু আবদারের ঢঙে)।
    একজন ইনশিওরেন্সের এজেন্ট আমায় দেখলেই পিছু ধরতেন, সার্ভার রুম অবধি প্রায় তাড়া করেছেন। কিছুতেই বোঝাতে পারি না যে আমার লাইফটা ইন্‌শিওর করবার মতো দামী কোনো বস্তুই নয়। এর দাম অতীব কম। তবুও শোনা না। তিনিও আমায় বোঝান যে এটা থেকে ট্যাক্স রিবেট আরো কত কী! ইনকাম ট্যাক্সের আওতাতেই আসে না আমার স্যালারী, সেইটা যেদিন জানলেন, আমায় দেখেও আর তাকান না।
    তবে বাকী সকল এক্‌জিকিউটিভদেরই লাইফ্‌ ইনশিওরেন্স করবার খুব প্রয়োজন। এসব ছাড়াও আরো কতোরকমের আমানতের কোম্পানী আছে, তারা প্রায়ই অফিসে এসে ঘুরঘুর করে। কারোকে রিসেপশানের দিকে এগোতে দেখলেই খপ্‌ করে ধরে ফ্যালে, তারপরে তাকেই বলে অন্য আরেকজনকে ভেতর থেকে ডেকে আনতে। আগে জানতাম ব্যাঙ্কে যেতে হয় আমানতকারীকে, এখানে দেখি ব্যাঙ্কই চলে আসে আমানতকারীর কাছে। ব্যাঙ্ক মানে ব্যাঙ্কের এজেন্ট। এই সমস্ত কাজ করতে করতে এক্‌জিকিউটিভ্‌রা টায়ার্ড হয়ে যান। সমস্ত কিছু গুছিয়ে রাখা ভালো, ঝপ্‌ করে অ্যামেরিকা থেকে ডাক এসে গ্যালে তখন? তখন কি আর সময় পাওয়া যাবে?

    এইরকমই একটা বিকেল বেলায় রিসেপশনে একজন মহিলার আবির্ভাব। লক্ষ্য করে দেখুন, মহিলা লিখেছি, ভদ্রমহিলা লিখিনি। মহিলা ও ভদ্রমহিলার মধ্যে যদি একটা সুক্ষ্ম সীমরেখা থাকে, তো তিনি হয় এপাশে নয় ওপাশে, ঠিক করে বোঝা যাচ্ছে না। কারণ হচ্ছে এঁর কাপড় চোপড়। পুরোপুরি ঠিক খেলো ও নয়, আবার সোবার ভদ্র দামী গ্রেসফুলও নয়। খুবই সূক্ষ্ম একটা লাইন রয়েছে। খালি চোখে সেইটে ধরা সহজ নয়। তবে মনে হচ্ছে ইনি আইটি ইন্ডাস্ট্রির কেউ নন। হারগিজ নন। এবং বাজী রেখে বলা যেতে পারে যে, ওর‌্যাক্‌ল্‌ কাকে বলে, ইনি বলতে পারবেন না। হতে পারে ইনি কুরিয়র কোম্পানীর কোনো পিওন, নচেৎ অন্য সমস্ত সম্ভাবনা ধোপে টিঁকবার নয়। ইনশিওরেন্সের বা বাঙ্কের এজেন্ট তো কোনোভাবেই নয়।
    রিসেপশানে বসে আছে মিতা। ইনি মিতার সামনে এসে বললেন, পুলক আছে? পুলককে ডেকে দিন।
    পুলক, মানে আপনি পুলকবাবুর কথা বলছেন?
    হ্যাঁ।
    ওঁর শাঁখা সিঁদুর নোয়া পলা ইত্যাদি দেখে মিতা ভাবে হয়ত ইনি পুলকবাবুর স্ত্রী। তবু জিগ্যেস করতে হয়, তাই বলে, আপনি কি ওঁর...
    আমি ওর বন্ধু। হয়েছে?
    মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উত্তর দেন তিনি।
    গিয়ে বলুন শান্তা এসেছে।
    মিতা আর গিয়ে কাকে বলবে? পুলকবাবু সমস্তই শুনতে পেয়েছেন নিজের বসার জায়গা থেকে। তিনি সিঁটিয়ে ভয়ে কুঁকড়ে দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছেন। ওদিকটায় খুব বেশি লুকোনোর জায়গাও নেই।
    অ্যাড্‌মিনিস্‌ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট মধুমিতা পুলকদার কাজে সব্সময় সাহায্য করে; সে ই সার্টলি এসে বলে, পুলকদা তো জাস্ট বেরিয়েছে একটা পেমেন্টের ব্যাপারে। ফিরতে একটু দেরি হবে।
    সেকি! বেরিয়ে গেছে? ফিরবে না আর আজ?
    না, মানে ফিরবেন হয়ত, কিন্তু দেরী হবে।
    কতক্ষণ?
    সেটা তো ঠিক বলতে পারছি না, তবে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যেতে পারে।
    বেশ, তবে আমি এখানেই ওয়েট করছি।
    এই বলে রিসেপশানের সোফায় গ্যাঁট বসে বসে পড়লেন শান্তাদেবী।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৮652692
  • কিছুক্ষণ পরে শান্তাদেবীকে চা বিস্কুট এনে দেওয়া হয়, এবং তিনি যখন চা বিস্কুট নিতে ব্যস্ত, সেই ফাঁকে পুলকবাবু সাবধানে দ্রুত গতিতে একজনের আড়াল নিয়ে পালিয়ে যান অফিসের ভেতর দিকটায়। মূল অফিস স্পেস যেখানে। ওদিকেও একটা দরজা আছে, কিন্তু সেটা তালা বন্ধ থাকে। সেটা সন্তর্পনে খুলিয়ে সে যাত্রায় পালিয়ে বাঁচেন পুলকবাবু।
    বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে করে শান্তাদেবী আবারো খোঁজ করেন পুলকবাবুর। এবার জানানো হয়, আজ উনি আর আসবেন না মনে হয়।
    পরের দিন বিকেলে নয়, দুপুরে এসে উপস্থিত হন শান্তাদেবী। আজ আর পালানোর কোনো উপায়ই রইল না। ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ঘর থেকে বেরিয়েই যাকে বলে হাতে নাতে ধরা পড়ে গেলেন। বাধ্য হয়ে দেঁতো হাসি হাসতে হোলো। তারপরে ওঁকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন পুলকবাবু।
    এর পরেও কখনো সখনো শান্তাদেবী এসেছেন পুলকবাবুর সন্ধানে। টাকার প্রয়োজনে।
    পুলকদার কাছে সবসময় টাকা থাকত না, অন্যদের কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে দিয়ে দিতেন। বলতেন, আসলে আমারই দোষ, লাস্ট দু সপ্তাহ ওদিকে যাওয়াই হয় নি। টাকা ফুরিয়ে গেছে, তাই এসেছে। কী করবে? সংসার চালাতে হবে তো? একা মেয়েমানুষ!
  • সে | 188.83.87.102 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৫652693
  • সেদিন মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের দিকটায় একটু উত্তেজনা। সকাল সাড়ে দশটা কি এগারোটা হবে। শুভাশিসের বাড়ী থেকে ফোন। শুভাশিস আবার তখন সীটে নেই, হয় ডিরেক্টের ঘরে, নয়ত বাইরে কোথাও। যোধপুরপার্কের দিকে ওর ফ্ল্যাট, সেখানে স্ত্রী ও সদ্যোজাত শিশুপুত্র। স্ত্রীর গলা খুব উত্তেজিত।
    খোঁজ পড়ে গেল শুভাশিসের। সে খবর পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে এসে ঘাবড়ে এককার।
    কী হয়েছে?
    ফোনের ওপার থেকে শুভাশিসের স্ত্রী কেঁদে ফেলেছে ততক্ষণে।
    বাড়ীতে হিজড়ারা এসেছে দল বেঁধে। ছেলেকে দেখেছে। এখন টাকা চাইছে।
    শুভাশিস ফোনে বলে, তো টাকা দিয়ে দাও। কত চেয়েছে?
    যা বোঝা যায়, হিজড়ারা হাজার দুয়েক কি আরো বেশি চেয়েছে। কম দিলে নেবে না। যাবেও না। না দিলে ঝামেলা করবে বলে শাসাচ্ছে।
    ফোনের এদিক থেকে শুভাশিসও ক্রমশঃ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তাহলে পুলিশে খবর দাও।
    এসব শুনে এগিয়ে আসেন পুলকবাবু।
    ভুলেও পুলিশে যেও না যেন। তাহলে ঝামেলার কোনো সমাধান হবে না। পুলিশ ওদের ধরবে না।
    কেন? ধরবে না কেন?
    দেবাশিস রেগে যায়।
    আরে বাবা, এটা বুঝছ না কেন? ওরা কি মেল না ফিমেল? কোন পুলিশ আসবে ওদের ধরতে? তারপরে অ্যারেস্ট করে রাখবেটা কোথায়? লক আপে? ও খুব ঝামেলার ব্যাপার। টাকা দিয়ে বিদেয় করে দাও মানে মানে।
    কিন্তু এত টাকা নিয়ে যাবে, একি জুলুম নাকি?
    কী করবে? ওদের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে পারবে? সবাই দেয়, দিতে বাধ্য হয়। ওরা হচ্ছে সমাজের বাইরের।
    শুভাশিস কথা না বাড়িয়ে বাড়ি চলে যায়, যাবার পথে এটিয়েম থেকে টাকা তুলে নেবে সে।
    অফিসে অনেকক্ষণ ধরে আলোচনা চলতে থাকে হিজড়াদের উৎপাতের। কেমন করে তারা ভয় দেখায়, কাপড় তুলে নাচে। হাততালি দেয়, ভয় দেখায়।
    কেন এমনটা করতে হয় ওদের? লোকেদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে জোর করে বাচ্চা দেখে টাকা তোলা, এটা ছাড়া আর কোনো প্রোফেশন কেন নেই এদের? এই যে এত বিয়ে হচ্ছে, বাচ্চা জন্মাছে অফিসে, আমরা অন্নপ্রাশনে খেতে যাচ্ছি, যদি এইসব বাচ্চার মধ্যে কেউ অমনটা হয়ে জন্মায়? ঊনিশ্‌শো আটানব্বইয়ে এলজিবিটি রাইট্‌স্‌ নিয়ে লোকে মোটেই তেমন ওয়াকিবহাল নয়। সত্যিই যদি এদের কারো ঘরে জন্মায়, তবে কি তা আশীর্বাদ না অভিশাপ? অভিশাপ। শিশুটির জন্যে চুড়ান্ত অভিশাপ। তার নিজের পরিচয়ের জন্যে নয়, তাকে ভালোবেসে আগলে যত্ন করে তুলবার মতো মাতাপিতার খুব অভাব। নিজের বাপ মা ই তাকে যদি ভালো না বাসে, তবে সমাজের বাকি লোকেরা তো দূরের লোক। পর। তাদের কাছ থেকে কীই বা আর আশা করা যায়। কেন এত হিংস্র এই সমাজ? দু হাজার কি পাঁচ হাজার চেয়েছে। না দিলে অনর্থ করবে বলে শাসিয়েছে। জুলুম। হ্যাঁ জুলুম তো বটেই। কিন্তু কেন এমন জুলুমের পথ বেছে নিতে হবে এদের? ঊনিশশো আটানব্বইয়ে এই প্রশ্নের উত্তর কেউ দেয় না। শুধু মজা পায় হিজড়েদের নিয়ে। ভয় মিশ্রিত মজা। এ হোলো ফোঁড়ার ব্যাথা। মাঝে মাঝে টিপলে অল্প অল্প ব্যাথা লাগে। ভালোই লাগে।
  • Som | 34.233.64.121 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৬:৫৮652695
  • বড় ভালো লেখা।

    সে এর বাকি লেখা গুলোর লিংক পেলে বড় ভালো হত। গোগ্রাসে পড়ে চলেছি।
  • de | 69.185.236.53 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:৩৬652696
  • এ লেখা পড়ার পরে আর কিছু লিখতে ইচ্ছে করে না!
  • | 213.99.211.18 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:২০652697
  • তোমার এত ডিটেলস মনে আছে।?এত ঘটনা , এত চরিত্র...

    পড়তে খুব ভালো লাগছে।
  • Som | 34.233.64.121 | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৯:২৭652698
  • আমার মনে হয় সে ডায়েরি লেখে। তখনই লেখা লেখি করত।

    আমার ভীষণ ভালো লাগছে সে। চলুক।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০৯652699
  • গরমকালটা কেটে গিয়ে বর্ষা এল, শরৎকালেও বর্ষাই থাকবে মনে হয়। সেই আগের মতো, সেই অনেক আগের মতো, যখন ছোটো ছিলাম, বা যখন দেশ ছেড়েছিলাম, সেই তখনকার মতো শুকনো শরৎ আর নেই। ক্লাইমেট পাল্টে গেছে। অনেক বছর পরে এসে সে পরিবর্তন ঝপ করে বুঝতে পারি। প্যাচ্‌প্যাচে বর্ষায় সবার মর্জিমাফিক টিফিন নিয়ে আসতে আসতে দীপক নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। তার ওপরে বালীগঞ্জ প্লেসে তো যখন তখন জল দাঁড়িয়ে যায়। ড্রাইভাররা বলাবলি কর, এখানে কুকুরে পেচ্ছাপ করলেও একহাঁটু জল। জল যেই জমবে, ব্যস্‌, অল্প পরেই কারেন্ট চলে যাবে। কারেন্ট চলে গেলে আমায় দেখতে হবে ইউপিয়েস কতক্ষণ আর লোড নেবার ক্ষমতা রাখে। সেইটে দেখে এসেই, খুঁজতে হবে, কারা কারা শুধু মুদু কম্পিউটারে কাজ করে যাচ্ছে; শুধুমুধু মানে চ্যাট। চ্যাটের তো শেষ নেই, সর্বক্ষণ চ্যাট। যার যত বেশি দেয়ালের আড়াল, যত বেশি কোণের দিকে সীট, তার তত অ্যাডভান্টেজ। নেশাগ্রস্থ চ্যাটুড়েরা ওতেই মজে থাকে, দীপক খাবার নিয়ে এসে খবর দেয়, স্যার, ম্যাডাম, লাঞ্চ এসে গেছে, তখন তারা নিজ নিজ ব্যাচে খেতে যায় আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে। চ্যাটে চ্যাটে বেলা হয়, আমি উঁকি মেরে রিকোয়েস্ট করি, ইউপিয়েস আর লোড টানতে পারবে না, খুব আর্জেন্ট কোনো কিছু না থাকলে মেশিনটা অফ করে দেবে?
    বাবুরা সব চ্যাটে আচ্ছন্ন, খোঁয়াড়ি যেন ভাঙছেইনা, সেই জগৎ থেকে বর্তমান জগতে ফিরে এসে বলেন, ঠিকাছে ঠিকাছে, কিংবা, আর দুমিনিট - এই কন্‌ভার্সেশনটা শেষ করে নিই।
    তানিয়ার চ্যাটে চ্যাটে প্রেম হয়েছে। সে বাড়ীতে গিয়েও চ্যাট করতে চায়, কম্পিউটার কিনেছে একটা, কিন্তু ইন্টারনেটের কানেকশান নেয় নি। আমাকে বলেছিলো, আমাকে এখানকার ইউজার নেম আর পাস্‌ওয়ার্ড দিবি? দে না, দে না, দে না বাবা! তোর তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আমি রাত্রে চ্যাট করব বাড়ী থেকে, তখন তো অ্যামেরিকায় সকাল।
    না তানিয়া, আমি দিতে পারব না।
    কেন এমন করছিস? কী ক্ষতি হবে দিলে তোর? কেউ হিসেব রাখছে? তোর পকেট থেকে পয়সা যাচ্ছে? তুই না বহুৎ গাঁট আছিস।
    তুই বরং আনন্দর কাছে গিয়ে চা।
    ধুস্‌! আনন্দর কাছে চাইব কেন? তুই দে। আমার খুব দরকার, বুঝলি তো।
    সরি, আমার কাছে চাস না। এরকম করলে আমি আনন্দকে বলে দিচ্ছি, ও ইন্টারনেটের পাসওয়ার্ড বদলে দিক আমার আর নতুন পাসওয়ার্ড জানবার দরকার নেই।
    তানিয়া রেগে যায়। তাও সর্বক্ষণ ছোঁক ছোঁক করতে থাকে, সুযোগ পেলেই চোখের ইশারায়, দে না, দে না, দে না। একবার মাত্র ইউজ করব।
    দেব না। বলে দিলাম তো। কী করবি কর।
    আমাকে শত্রু ভাবছিস?
    শত্রু? কেন? ঐ স্মোকিং রুম থেকে দল বেঁধে বেরিয়ে যাস, আমায় বয়কট করিস তোরা, সেগুলোর জন্যে বলছিস?
    ও! এই জন্যে? মাইরি বলছি, বিশ্বাস কর, আমি ওদের দলে নেই। তুই যখন আমার সঙ্গে চা খেতে চাইবি, ডাকিস, আমি তোর সঙ্গে গিয়ে চা খাবো। বিদ্যা হস্ত। মা কালীর দিব্যি। তোকে ছুঁয়ে বলছি।
    আর কত নীচে নামবি তানিয়া?
    না, এই শেষের বাক্যটা মুখ দিয়ে বেরোয় না আমার, মনে মনে বলি ওর দিকে তাকিয়ে।
    ও তখনো করুণ চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ভিখিরির মতো, ভিএস্‌এন্‌এল এর পাস্‌ওয়ার্ডের জন্যে।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০১652700
  • কিন্তু তানিয়া হাল ছাড়ে না। আনন্দর সঙ্গে হ্যাহ্যাহিহি আছে, কিন্তু ভেবে রেখেছে আমি খুব দুর্বল, অল্প চাপ দিলেই পাসওয়ার্ডটা দিয়ে দেবো। সুযোগ পেলেই এসে কথা বলছে যেচে যেচে। ঘুষ দিতে চাইছে ভালো ব্যবহার। এগুলো নিয়ে চিন্তা করলে কুল কিনারা পাই না। এক তো প্রমাণ করে দিলো যে ও নিজে কতটা ডিজ্‌অনেস্ট, তারপের এটাও প্রকাশ হয়ে গেল যে ওরা দল বেঁধে আমায় বয়কট করে মজা পায়, এখন আবার নির্লজ্জের মতো এসে সেই আমার কাছেই পাস্‌ওয়ার্ড চাইছে; চুরি করতে কোনো লজ্জা বা দ্বিধা নেই, আবার ঘুষ দিয়ে আমায়ও তাতে সামিল করতে চাইছে। আর কি অদ্ভুত অদ্ভুত যুক্তি! পাস্‌ওয়ার্ডের বিনিময়ে ভালো ব্যবহার! কিংবা, তুই চাস না আমার ভালো হোক? তুই চাস না, আমি অ্যামেরিকায় সেট্‌ল্‌ করি? হিংসে হচ্ছে তোর? সেইজন্যে দিচ্ছিস না পাস্‌ওয়ার্ডটা? আড়ালে দেখা হলেই কি মিষ্টি করে হাসছে, আমার শাড়ীটার প্রশংসা করল, ফিগারের প্রশংসা করল। এই শাড়ী আমি প্রায় রোজই পরি। আমার এই একটাই শাড়ী আছে উইথ্‌ ম্যাচিং ব্লাউজ। যদিন শাড়ী পরিনা, সেদিন ফ্রক পরে আসি। এতদিন ধরে শাড়ীটা দেখছে, রং চটে ফিকে হয়ে গেছে, সেই শাড়ীর প্রশংসা। এই ছ সাত মাসে ফিগার একটুও বদলায় নি, সেই আগের মতই আছে, তবু তানিয়া আমায় নির্লজ্জের মতো তেল দেয়। অবশ্যই আড়ালে। যেই সেখানে অন্য কেউ এসে পড়ে ওমনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে নিয়ে সেখান থেকে কেটে পড়ে। এই মেয়ে কে বিশ্বাস করব আমি?
    তাছাড়া কোম্পানীর জিনিস ওকে দেবো কেন?
    শেষ দান টা দেয় তানিয়া - তুই নিজের জন্যে হলে এই কানেকশান ইউজ করতিস না? তোর যদি নিজের দরকার হোতো?
    মনে মনে এবারো উত্তর দিই - তুই সবাইকে নিজের মতো করে ভাবছিস, সেটাই তোর সমস্যা।
    কিন্তু মুখে কিছুই বলি না। চলে যাই ওখান থেকে।

    এরপরে তানিয়া খুব সকাল সকাল আসা শুরু করে দেয় অফিসে।
    ভোরে আমি আসবার এক ঘন্টার মধ্যেই সে উপস্থিত।
    কোণে ওর কিউবিক্‌ল্‌ এ বসে কাজ করছে। মানে চ্যাট করছে। অনেক সময় দেখি ঘুরে বেড়াচ্ছে অফিসময়। গুনগুনিয়ে গান গাল। খুব সুরেলা গলা ওর। খুব সুন্দর কাজ। রিসেপশানের দিকে যায়, আবার নিজের সীটে ফিরে আসে। কেউই তো নেই প্রায় অফিসে। তারপরে নিজের সীটে বসে চমৎকার গান গায় সে। সার্ভাররুম থেকে স্পষ্ট ভালো শোনা যায় না যদিও, কিন্তু যেই দরজাটা খুলি, শুনি খালি গলায় গাইছে সে গান। এই গানটা - একটু আরো নয় কাছে থাকো না

    সুরে ভরে ওঠে সেঞ্চুরী। দীপক কি অজয়দা, এরাও দূর থেকে গান শুনে থমনে দাঁড়িয়ে যায়; তারিফ করে বলে, ম্যাডামের গলায় খুব কাজ আছে।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:২৪652701
  • এরকম হয়েছে দিনের পর দিন। তারপরে কিছুদিন হয়ত বাদ রইল ওর ভোর ভোর আসা। আবার এলো ভোরে। এসে আমার সঙ্গে গল্পও করে চায়ের ঘরটায়। অবশ্যই অন্যরা আসবার আগে। আর চায় না পাসওয়ার্ড। বুঝতে পারি, সে সকাল সকাল এসে অফিস থেকেই বেশি বেশি করে চ্যাট করছে। সেসব আটকানোর কোনো আইন নেই অফিসে। কেঁচো খুঁড়তে গেলে হয়ত সাপ বেরিয়ে পড়বে; তাই ওসব জিনিস নিয়ে কেউ ঘাঁটায় না। করছে, করুক। এইরকমই চলছিলো। একদিন দিব্যেন্দু দত্ত একটু চেঁচামেচি করলেন, মিতাকে ডেকে পাঠিয়েছেন নিজের ঘরে। সেখান থেকে ফিরে মিতা আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়।
    জানিস কি কে রোজ সকালে একঘন্টা করে অ্যামেরিকায় ফোন করে?
    আমি কীকরে জানবো?
    আমি অফিসে আসবার আগে। তখন তো ইপিয়েবিএক্স টা থেকে তিনটে ডিরেক্ট লাইন হয়ে থাকে। সেই সময়ে ঐ তোদের দিকটায় একটা টেলিফোন থেকে কোনোদিন একঘন্টা, কোনোদিন চল্লিশ মিনিট অ্যামেরিকার একটা নাম্বারে কেউ ফোন করে।
    বলিস কী!
    দিব্যেন্দুদা, নম্বরটা দেখিয়েছেন আমাকে। এর পর থেকে ডিরেক্ট লাইন থাকবে সন্ধ্যেবেলা, যার কল করতে হবে, সে রিসেপশানে এসে কল করবে। এক লাখ টাকার ওপরে টেলিফোনের বিল এসেছে, অন্য লাইনগুলোয় তিরিশ হাজার করে। ফোনের বিলের টাকা বাকি পড়েছে। হয়ত লাইন কেটে দেবে একটা। সেঞ্চুরীর অবস্থা ভালো নয়, ডিডি বলছিলো।
    ডিডি মানে দিব্যেন্দুদা।
    হঠাৎ আমার মাথায় বিদ্যুতের মতো খেলে যায় ঘটনাটা। তানিয়া প্রায়ই ভোরে আসা শুরু করেছে, টেলিফোনে তারমানে ও ই রোজ গান শোনায়, কথা বলে, অ্যামেরিকার নম্বর ডায়াল করে করে। চেষ্টা করলে ওকে হাতে নাতে ধরা যায়। তাতে হ্যারাসমেন্ট হবে ওর। চাকরি থেকে ওকে তাড়াবেন না দিব্যেন্দু দা, কারণ ওকেও তো পাঠানো হবে অ্যামেরিকায়, ওর‌্যাক্‌ল্‌এর প্রোজেক্টের কাজে। মাঝখান থেকে আমি যদি বলে দিই যে ও ই এই কাজ করেছে, তাহলে তো এরা মানবে না, বরং আমাকেই দুষবে, চাই কি আমার ঘাড়েও পুরো দোষটা চাপিয়ে দিতে পারে। তার চেয়ে একটা কাজ করা যাক, ওকে বারণ করে দিতে পারি।
    ওকে আড়ালে ডেকে বলি, শোন, তুই কি অ্যামেরিকায় ফোন করিস এখান থেকে?
    না! কেন?
    করিস কি না সেটা বল।
    হ্যঁ হয়ত এক দুবার করে থাকতে পারি। কেন? তুই কী করে জানলি?
    করিস না আর।
    ও চুপ করে কিছুক্ষণ তাকায় আমার দিকে।
    কেন? কেউ কিছু বলেছে? মিতা বলেছে? ও লাগিয়েছে আমার নামে?
    কেউ লাগায় নি তোর নামে। টেলিফোনের বিল থেকেই সব জানা যায়।
    আমি যে ফোন করেছি, তার কোনো প্রমাণ আছে কি? নেই তো? তাহলে আমার ঘাড়ে দোষ চাপানো হবে কেন?
    কেউ তোর ঘাড়ে কোনো দোষ চাপাচ্ছে নাতো। তোর নাম ও কেউ জানে না। শুধু বলছি যে আর করিস না। শুধু শুধু এত টাকা বিল।
    এত টাকা বিল? তুই জানিস, কীকরে টাকা নয় ছয় হয় এই কোম্পানীতে? কোন লেভেলের চুরি হয় তোর কোনো ধারণা আছে? কেউ যদি আমার নাম তোলে না, আমি সবার সামনে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৭652702
  • বর্ষার মরশুমেই দীপক নতুন প্রোপোজাল নিয়ে এলো। বিজনেস প্রোপোজাল। কোম্পানীর মার্কেটিং ম্যানেজার অজিত ভট্‌চাজের একটা হ্যাঁয়েই সেই প্রোপোজাল অনায়াসে পাশও হয়ে গেল। দীপক বুদ্ধিমান ছেলে। এখন সে আর রোজ রোজ সারাটা সকাল দুপুর ঘুরে ঘুরে খাবার আনার কাজ করবে না। অল্প বিস্তর পয়সাকড়ির লাভ যে তাতে থাকে না এমন নয়। কিন্তু খাটুনি বড্ড বেশি। তার থেকে অনেক ভালো একটা উপায় সে বের করে ফেলেছে। একটা কেটারিং কোম্পানীর সঙ্গে নিজেই কথাবার্তা বলে সব ব্যবস্থা করেছে। সপ্তাহে পাঁচদিন ঢালাও খাবার আসবে কেটারিং কোম্পানী থেকে। একেক দিন একেক রকম মিল। ননভেজ। কেউ চাইলে তার জন্যে ভেজ। বাঁধা হিসেব। পার ডে অ্যাতো করে। কিন্তু বুধবারে স্পেশাল মিল। যেমন, ভাতের বদলে ফ্রায়েড রাইস, মাছের ঝোলের বদলে হয়ত ফিশ্‌ ফ্রাই, এই রকম। সেইজন্যে বুধবারের মিলে দশটাকা বেশি রেট। ঐ ট্রেনিং রুমেই দুটো কি তিন্টে ব্যাচে খাওয়া দাওয়া হবে। দীপক নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে পরিবেশন করে খাওয়াবে সকলকে। সবাইকে রোজ রোজ খেতে হবে এমন কোনো বাধ্য়্বাধকতাও নেই। একদিন আগে বলে দিলে ভালো, খুব বেশি লেট হলে দিনের দিনই সকালের দিকে বলে রাখা যেতে পারে, কিন্তু খুব বেশি লেট করে ফেললে মিল পাওয়া যাবে কিনা সে গ্যারান্টি নেই। দীপক নিজে কীরকম রেটে এই খাবার আনাচ্ছে সেটা ইম্মেটিরিয়াল; যারা কিনছে তারা এই দামে রাজি থাকলেই ব্যবসা চলবে। দীপককে এখন প্রত্যেকের সীটে গিয়ে গিয়ে স্যার কী খাবেন আজ? ম্যাডাম, আজকের খাবারটা যদি বলেন, ... এইসব হাঙ্গামা পোয়াতে হবে না। উপরন্তু এই মিল সিস্টেম চালু হবার সুবাদে, অন্য করো জন্যেও বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার হ্যাফা নেই। মিল নেবে তো নাও, নয়ত নিজের লাঞ্চের ব্যবস্থা নিজে করো।
    ট্রেনিং রুমের নাম পাল্টে হয়ে যায় লাঞ্চরুম।
    প্রতিদিন সারাটা দুপুর সেখানে হৈ হৈ কাণ্ড। দুটো, তিনটে কি চারটে ব্যাচে পাত পেড়ে খাবার আয়োজন। সামনে একটা বড়ো টেবিলের (এই টেবিলেই কাগজপত্র ইত্যাদি ছিলো আমার ইন্টারভিউয়ের দিন) ওপরে খুব সন্তর্পনে এনে রাখা হয় বড়ো বড়ো ডেচ্‌কি। কেটারিং সার্ভিসের দুজন কর্মচারী সেগুলো বয়ে বয়ে আনে। দীপক তাদের হুকুম করে, কোনটা কোথায় রাখতে হবে। থালা বাসন ও আসে রোজ। আরো ছোটো ছোটো ডেচকিতে অন্যান্য খাবার দাবার মিষ্টি ইত্যাদি। প্রথমেই বড়ো একটা থালায় বেশি বেশি করে খাবার ঢালা হয়। পার প্লেট যদি বরাদ্দ থাকে একটা করে মুর্গীর ঠ্যাং, তো সেটায় দেওয়া হবে দুপিস বড়ো বড়ো মুরগীর ঠ্যাং, কি একটার জায়গায় দুটো ফিশ্‌ফ্রাই, সন্দেশ একটার জায়গায় তিনটে, এইরকম। সেই বেশি বেশি খাবার ভর্তি থালাটা চলে যায় দুটো ঘর পেরিয়ে, সেই নীল কাচ দেওয়া ঘরটায়। অজিত ভট্‌চাজ অন্যদের সঙ্গে বসে খান না। ওঁকে খাবার দেবার পরে, অন্যদের পরিবেশন করা শুরু হয়। যে পুজোর যেমন নিয়ম। সবার আগে ঠাকুরকে ভোগ দিতে হবে তো।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:০৮652703
  • কোম্পানীর মার্কেটিং ডিরেক্টর*
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৩652704
  • আশিসদা বলেন, দীপক বাচ্চা ছেলে হলে কী হবে? মাথাটা খুব শার্প। যদি মাধ্যমিকটা পাশ করে নিতো, অনেক কাজে দিতো। যেকোনো বিজনেসই বলুন, তা সে যত ছোটো বিজনেসই হোক না কেন, লেখাপড়া জানা থাকলে একটা অ্যাড্‌ভান্টেজ আছে না? ওকে পাঠিয়েওছিলাম জানেন তো করুণাময়ীতে ঐ অফিসটায়, বিকাশভবনই মনে হয়, মাধ্যমিক বোর্ডের অফিসে, যদি প্রাইভেটে মাধ্যমিকটা দিতে পারে। কিন্তু ওর লেখাপড়ার দিকে ঝোঁকটা কম। এখন পয়সা জমাচ্ছে বিয়ে করবে বলে। মেয়েও দেখছে ওর বাড়ীর লোক।
    দীপকের মাথাটা সত্যিই খুব শার্প। দেবতার ভোগ যেমন দিতে জানে, তেমনি ক্ষমতার হায়ারার্খি বুঝে বুঝে প্রত্যেকটা খাবারের প্লেট কাস্টমাইজ্‌ড্‌। বড়ো মেঝো ছোটো পিস্‌ হায়ারার্খি বুঝে বুঝে পরিবেশিত হয়। কারো জন্যে দুহাতা এক্স্‌ট্রা ঝোল। ও সব জানে। এতদিন ধরে কোম্পানীতে আছে, সবাইকে অবজার্ভ করেছে। জেনে গেছে কীকরে টিঁকে থাকতে হবে, শুধু টিঁকে থাকাই নয়, চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে ব্যবসাটাকে। তবু মাঝে মধ্যে অনর্থ হয়। লাঞ্চ রুমের ভেতর থেকে হৈ চৈ এর আওয়াজ বাইরেও আসে। যারা রেগুলার খদ্দের, যারা লক্ষ্য করে যাচ্ছে যে মুর্গী বা মাছের বড়ো বড়ো পিসগুলো নিয়ম করে বিশেষ কারো কারো পাতে চলে যাচ্ছে, তাদেরই মধ্যে থেকে এক্জন কি দুজন বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। সরাসরি মুর্গীর পিসের সাইজের তুলনা তো করা যায় না, অন্য খুঁত বের করা সহজ, যেমন, মুর্গী ভালো করে রান্না হয় নি, হাড়ের গা থেকে তখনো কিছুটা কাঁচা রয়েছে, রক্ত দেখা যাচ্ছে।
    দীপক এদের শান্ত করতে হিম্‌সিম্‌ খেয়ে যায়। কেটারিং এর ছেলেগুলোকে বকে ধমকায় হুমকি দেয়, তারাও মাথা নীচু করে সব তিরষ্কার শোনে। কোনো প্রতিবাদ করে না। কাস্টমার ইজ্‌ অলওয়েজ্‌ রাইট। খদ্দের হোলো গিয়ে দেবতা। তবে দেবতাদেরও রেটিং আছে। দেবতাদের খচানো উচিৎ নয়, অপদেবতাদেরতো আরোই নয়। দীপক মাফ চেয়ে নেয় হাত জোড় করে করে। স্যার, আপনার কাছ থেকে আজকের টাকাটা নিতে পারব না।
    আরে না না।
    না স্যার। আপনার খাওয়াটা নষ্ট হয়ে গেল। খুব খারাপ লাগছে।
    স্যার গোঁজ হয়ে থাকে। জোর করে দীপকের হাতে টাকা গুঁজে দেয়।
    স্যার আজকের মতো ক্ষমা করে দিলেন তো? আমি ওদের বলব ঠিক করে রান্না করতে। আসলে কত দিক দেখবো বলুনতো একা? এতগুলো প্লেট রোজ নিজের হাতে সামলানো.. তবে আপনি চিন্তা করবেন না স্যার, আমি ওদের ভালো করে বলে দিয়ে আসবো। হয় ঠিকমতো খাবার সাপ্লাই দাও, নয়তো অন্য জায়গা থেকে কন্ট্র্যাক্ট করে নেবো।
    এরপর থেকে এই স্যার আর খুঁত পাবেন না। এঁর প্লেটে বড়ো বড়ো পিস পরিবেশিত হবে।
    আমি তো ওখানে খাই না, কিন্তু মিতা খায় মাঝে মধ্যে। এসব খবর ওর থেকেই পাই। আর খবর দেন অজয়দা।
    লাঞ্চের পর থেকে সারা অফিসে ভরে থাকে খাবার দাবারের গন্ধ। মশলা, মাংস, রোজওয়াটার। এসি চললেও গন্ধ কমে না। গন্ধে গা গুলোয় আমার।
  • সে | 188.83.87.102 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৯652706
  • একদিন এরকমই একটা মিল খেয়ে লাঞ্চরুম থেকে বেরিয়ে আমার কাছে এলো মিতা।
    শোন, একটু বাইরে আয়।
    বাইরে গেলাম। অফিসের বাইরে।
    লাঞ্চের পরে বাবুরা আর স্মোকিং রুমে স্মোক করেন না। অফিসের বাইরে বেরিয়ে, রাস্তার ওপরে ঘুরে ঘুরে, কিংবা ফুটপাথে জড়ো হয়ে স্মোক করেন। সাউথ পয়েন্টের বাচ্চাদের যুবতী মায়েরা তখন খলবলিয়ে গল্প করতে করতে নিজের নিজের বাচ্চা নিয়ে বাড়ী ফিরছে। নয়নাভিরাম দৃশ্য। স্যারেরা সিগারেটে টান দিতে দিতে এই দৃশ্য উপভোগ করছেন, ফাঁকে ফাঁকে নিজের মধ্যে আলাপ আলোচনা হচ্ছে।
    মিতা আমাকে বলল, ফেঞ্চ ভাষাটা কীরম জানিস?
    কেন?
    বল্‌ না। জানিস?
    এই কথা বলবার জন্যে তুই আমায় বাইরে ডেকে নিয়ে এলি?
    না, আরো আছে, বলছি। তার আগে বল, ভাষাটা কেমন? কঠিন?
    হ্যাঁ, কঠিন। আমি শিখেছিলাম একসময়। আলিয়াঁস ফ্রাঁসেজে।
    কোথায়? কোথায়? কী বললি জায়গাটার নাম?
    তুই শিখতে চাস?
    কতদিন লাগবে শিখতে?
    সে কীকরে বলব? কতটা শিখতে চাস, তোর শিখবার স্পীড কেমন, কোর্সে কতটা শেখাবে, অনেক রকমের ভেরিয়েব্‌ল্‌ আছে না?
    মিতা চিন্তা করে কিছু একটা।
    আর কিছু বলবি কি?
    না আর কিছু না।
    তাহলে চল ভেতরে।
    অফিসের ভেতরে ঢুকবার মুখটায় বলে, আসলে একজনের সঙ্গে আমার চ্যাটে আলাপ হয়েছে। ফ্রেঞ্চ।
    তাই নাকি!
    সেইজন্যেই ভাবছিলাম, ভাষাটা যদি শিখে নিই।
    নিশ্চয় শিখবি।
    সেটাই ভাবছি। লোকটার নাম হচ্ছে আন্দ্রে।
    ফ্রেঞ্চে উচ্চারণ হবে অঁদ্রে।
    মিতা দুয়েকবার আউড়ে নেয়, অঁদ্রে, অঁদ্রে, অঁদ্রে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন