এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • চাগ্রীর গপ্পো

    সে
    নাটক | ১৩ নভেম্বর ২০১৪ | ২০৮৪৯ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • lcm | 118.91.116.131 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:৪১652641
  • রঞ্জনদা ঠিক কইসেন। চাগ্রি লাইফ বা স্কুল লাইফ বা রাশিয়া বা পিতামাতা বা সন্তান -- যাই নিয়েই হোক -- এদের কলমটি ফুরফুরে, স্টাইলটি সাবলীল...
  • Tim | 188.91.253.22 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:৫২652642
  • পড়তে শুরু করলে থামা যাচ্ছেনা। আমারও মনে হয়নি নিরাসক্ত সবসময়, বরং ঐ @ যা বললেন, সেটাই মনে হলো।
    তুলনাটা যখন এসেই গেছে, তাই বলি। দমদির লেখায় নিরাসক্তিই প্রধান, একটা কনসিস্টেন্ট নিরাসক্তি, যার শুরু থেকে শেষ যেকোনো ঘটনাতেই প্রায় অদৃশ্য "তো?" ট্যাগ থাকে। সে-দির লেখার নিরাসক্তিটা হলো একেবারে শেষে, ঐ যেখানে ব্র্যাকেটের মধ্যে ক্রমশঃ লেখা থাকার কথা, সেখানে।
    এরকম আমার মনে হলো, ব্যক্তিগত মত আর কি।
  • de | 24.139.119.172 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:১৯652643
  • সে র লেখা অনেকের কাছেই লড়াইয়ের প্রেরণা হয়ে থাকবে -

    সে, লিখুন!
  • Atoz | 161.141.84.175 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৬652644
  • প্রায় বছর দশেক আগে অন্য এক সাইটে সে এর(অন্য নিক নেমে) এই কাহিনিগুলোর কিছু কিছু যখন প্রথম পড়ি, তখন একটা অদ্ভুত শক লেগেছিল। এমন হয়? তখন সদ্য বাসাখাঁচা থেকে আকাশে বেরোনো নিতান্ত নভিস আমি, ভারী অবাক লাগতো। তারপর থেকে কেবলই পড়তাম, কেবলই। যেখানেই দেখেছি সে এর লেখা, সেইগুলোই পড়েছি। সেই সাইট বদলে গেল, সেখানে আর যাওয়া হলো না, এখানে লেখা দেখতাম, পড়তাম। অতীত বর্তমান দেশ বিদেশ কল্পনা বাস্তব সব মিলিয়ে যেন এক আশ্চর্য মহাকাহিনী বলে মনে হতো। খুব খুব মন দিয়ে পড়তাম, পড়ি।
    কোনোদিন বলা হয় নি সেভাবে, আজ সুযোগ পেয়ে বলে গেলাম।
    শুভেচ্ছা রইলো।
  • mila | 193.90.37.87 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৫:৩১652645
  • সে এর লেখাতা মুগ্ধ হয়ে পরছি, আরো লেখার লিংক থাকলে দেবেন প্লিজ
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫২652646
  • গমগম করছে সেঞ্চুরী ইন্‌ফরমেশন সিস্টেম্‌স্‌। সন্ধ্যা সাড়ে ছয় ঘটিকা। আস্তে আস্তে কেটে পড়ার মতলব করছি। প্রায় বারো ঘন্টা হতে চলল। কাজ তেমন কিছু নেই হাতে। সাধারণতঃ সেই সময়টায় কাজের ঝোঁকটা খুব বেড়ে যায় সবার। সাতটার দিকটায় একটা হেড কাউন্ট হয়। সেটা করে দীপক। যারা কেটে যাবো, কেটে যাবো করছে, তাদেরটা ধরা হয় না, কিন্তু যারা সন্ধ্যের সাতটার কি আরো পরের মাইলস্টোন ধরবে বলে বসে আছে, তাদের জন্যে খাবারের অর্ডার দেওয়া হয়। লোভনীয় বস্তু। কাটলেট, ফিশফ্রাই, এই ধরণের বস্তু আসে ক্যাম্পারী থেকে। দোকানটা একটু দূরে, এবং ক্যাশিয়ারবাবুকে এইসময় পেটিক্যাশ থেকে হিসেব করে টাকা বের করে দিতে হয়। ক্যাম্পারীতে লাইন থাকে, তাই দীপককেও তাড়াহুড়ো করে বেরোতে হয়। সবসময় অতোগুলো চিকেন ব্রেস্ট কাটলেট, কি ঐধরণের জিনিস রেডি থাকে না। কিছু হয়তো পাওয়া গেল, বাকিটা গড়িয়াহাটের মোড়ের রোলের দোকান থেকে কিছু রোল কিনে এনে ভরাতে হয়। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি। অত নোনতা খাবার খেয়ে যাতে মুখ মেরে না যায়। একেকদিন একেকরকম। সরভাজা, সন্দেশ, মালাইচমচম, এইসমস্ত মিলিয়ে মিশিয়ে। আশ্চর্যজনকভাবে খাবার এসে গেলেই সবার খেয়ে দেয়ে বাড়ী ফেরার তাড়া পড়ে যায়। এ জিনিস কয়েকবার দেখেছি, প্যাটার্ণটা পরিচিত। দীপক আমাকে দেখে বলল, দিদি আপনি কি থাকবেন?
    নাঃ, বেরিয়ে যাবো।
    দীপক মাথা গুণতে থাকে নিঃশব্দে, আঙুল না তুলে। ল্যাব ঘরের বাইরে ভেতরে মিলিয়ে জনা তিরিশেক পাত পড়ে অন অ্যান্‌ অ্যাভারেজ। দীপক বেরিয়ে যেতেই হঠাৎ একজন বলে, অ্যাই অ্যাই তাড়াতাড়ি কর, সাড়ে ছটা বেজে গেছে কিন্তু। দেরি হয়ে গেলে ঢুকতে দেবেনা ওখানে।
    তড়িঘড়ি চার পাঁচজন উঠে পড়ে। সেই দেখে আরো চারপাঁচজন।
    ব্যাপারটা কী?
    প্রচণ্ড দ্রুততায় তারা ঠিক করে ফালে যে দুটো ট্যাক্সি নিলেই হয়ে যাবে।
    আলোচনায় শুনতে পাই, তাদের গন্তব্য কোঠারী। কোঠারী মেডিকেল সেন্টার।
    ওরা চলে গেলে মিতা এসে ঢোকে ল্যাবে। একটা কম্পিউটার অন করে শুরু করে টাইপিং। গোটা ষাট পাতার প্রিন্টেড একটা ডকুমেন্ট। দেখছে আর টাইপ করছে। কোনোদিকে হুঁশ নেই ওর।
    আমি পাশে বসে আছি দেখে বলে, তুই আমায় একটু হেল্প করবি প্লীজ? তুই রিডিং পড় আমি টাইপ করছি।
    এটা কী জিনিস? কবের মধ্যে শেষ করতে হবে এটা?
    আজ।
    আজ!
    হ্যাঁ, আজ। কাল সকালে জমা দিতে হবে।
    অসম্ভব! কীকরে তুই ষাটপাতা প্রিন্টেড মেটিরিয়াল আজ রাতের মধ্যে টাইপ করবি?
    ওরে বাবা! করতেই হবে।
    তুই বড়ো জোর পাঁচ পাতা পেরে উঠবি। তারপরে তো সব মেশিন মেশিন অফ হয়ে যাবে রে। সার্ভার শাটডাউন হবে। ইউপিয়েস শাটডাউন হয়ে গেলে তোর কম্পিউটার চলবে কীকরে? তোর একার জন্যে সারারাত ইউপিয়েস অন থাকবে নাকি?
    তাহলে?
    এই কাজটা এত দেরিতে শুরু করেছিস কেন?
    কোথায় দেরিতে শুরু করেছি?
    দেরি নয়? সাড়ে ছটার সময় একটা ষাট পেজের ডকুমেন্ট...
    আস্তে কথা বল।
    আস্তেই বলছি। কে দিয়েছে তোকে এই কাজ?
    মিতা প্রায় ফিস্‌ফিস্‌ করে বলে , মিস্টার ভট্টাচারইয়া।
    কে?
    আস্তে বল্‌ না। অজিত ভট্‌চাজ।
    কবে দিয়েছে?
    এইতো সাড়ে পাঁচটা পোনে ছটা নাগাদ। তখন রিসেপশানে আরো কাজ ছিলো, অনেকগুলো ফোন কল আসছিলো, মিস্টার করকে কিছু নাম্বার কানেক্ট করে দিতে হচ্ছিলো।
    তুই তাহলে ওকে গিয়ে বল, যে এটা আজকের মধ্যে সম্ভব নয়।
    ওরে বাবা। আমি পারব না বলতে।
    ভয় পাচ্ছিস?
    মিতা চুপ করে থাকে।
    সত্যিইতো, আমি কাকে বলছি? আমি নিজে ভয় পাই না?
    ওকে সাহস জোগাচ্ছি, এদিকে নিজের ক্ষেত্রে এসব সাহস থাকে না আমার।
    দাঁড়া, অন্য অপশান ভাব। মনে কর, আমি যদি পাশের মেশিনটায় বসে অন্য পাতাগুলো টাইপ করি? তাহলে দুজনে মিলে কাজ করে যতটা পারা যায় টাইপ করে ফেলবো।
    মিতা বলে, আমি কিন্তু একপাতার ওপরে টাইপ করে ফেলেছি অলরেডি। কিন্তু পুরোটা হবে না রে। ফিফটি পার্সেন্ট ও যদি করে ফেলি, তাহলে কাল খুব ভোরে এসে... তুই যেন সকালে কটায় আসিস?
    সাতটার আগেই আসি।
    কাল আরেকটু ভোরে আয় না, এসে ইউপিয়েসটা অন করে দিলেই আমি টাইপ করতে আরম্ভ করে দেবো।
    ঠিক আছে, আমি আসব ভোরে। কিন্তু এত বড়ো জিনিস হবে বলে ময়ে হয় না।
    মিতা টাইপ করতেই থাকে।
    আমি ওর পাশে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকি, মেন্টাল সাপোর্ট। টাইপ করে পেরে উঠবো না। আমার স্পীড খুব কম।

    খানিকখন পরে দীপক খাবার নিয়ে এসে, এত কম লোক দেখে অবাক হয়ে যায়।
    কী ব্যাপার? স্যারেরা সব চলে গেছে? প্রায় দশজনের খাবার বেশি হয়ে গেল গেল। কেন চলে গেল? আমি তো দৌড়ে গিয়ে খাবার নিয়ে এলাম।
    পাশের থেকে কে একজন বলে ওঠে, ওরা কোঠারীতে গেছে।
    কোঠারীতে? কেন? কেউ অসুস্থ নাকি?
    ঐ তো বলাবলি করছিলো, সৌম্যদার মেয়ের জ্বর হয়েছে, কোঠারীতে ভর্তি করেছে।
    ওমা!
    সেকি!
    কতদিন ধরে জ্বর?
    ইশ্‌ আমায় তো কেউ বলেনি। বললে আমিও যেতাম।
    এবাবা, কালকেও তো সৌম্যদার সঙ্গে কথা হোলো বিকেলে।
    আজ আসেনি, না? একদম খেয়াল করিনি।
    ইশ্‌ যাওয়া উচিৎ ছিলো।
    কালকে যাস। এখন দিন সাতেক তো রেখে দেবেই।
    এই সীজন চেঞ্জের সময়টা খুব খারাপ, চারদিকে জ্বরজারি শুরু হয়েছে।

    এইসব আলোচনা মন্তব্যের মধ্যেই ব্রেস্ট কাটলেট পরিবেশিত হয়ে যায়, কেউ কেউ দুটো কি তিনটেও নিয়ে নেয়। বেশি আনা হয়ে গেছে, না খেলে শুদ্ঘু শুধু নষ্ট হবে।
    দীপক, আছে তো অন্যদের জন্যে?
    হ্যাঁ স্যার অনেক আছে, এই দেখুন না।
    তাহলে আরেকটা দাও।
    আরো নিন না, অনেকগুলো বেঁচে গেছে।

    এরকই ফাঁকে দেখি, শেখর বলে একটা ছেলে, সে ও ওর‌্যক্‌ল্‌ এক্স্‌পার্ট, মিতার ঐ ডকুমেন্টটার দিকে ঝুঁকে পড়ে দেখে, তারপরে বলে - হোয়াই আর ইউ টাইপিং দিস্‌?
    শেখর তামিল ছেলে, বাংলা আলোচনা বোঝে না। কাটলেট খায় না, সরভাজাও না। সে উঠেই পড়ছিলো, কিন্তু ডকুমেন্টটা দেখে থমকে দাঁড়িয়েছে।
    আমরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করি।
    শেখর বলে, আই হ্যাভ সীন দ্য সফ্ট্‌ কপি সামহোয়ার।
    কী বলছে রে ছেলেটা!
    দাঁড়া।
    ইয়েস্‌, ইট শুড বী সামহোয়ার ইন্‌ দ্য ফাইল সার্ভার।
    আই ক্যান সার্চ ইট। ডু ইয়ু নো, দ্য নেম অফ দ্য ফাইল।
    ও ইয়েস! ইনডিড।
    শেখর নামটা বলে দেয়।
    ওকে ধন্যবাদ দিই আমরা। ও চলে যায়।
    খুঁজতে হবে ফাইলটা, একখুনি খু?ন্জতে হবে। যে ডকুমেন্ট ইতিম্ধ্যেই আছে, সেটা আবার টাইপ করবার কোনো মানেই হয় না।
    আমি খুঁজে দিচ্ছি তোকে। আমার অ্যাক্সেস আছে, অ্যাড্‌মিনিস্‌ট্রেটর্স অ্যাকসেস।
    মিনিট দুয়েকের মধ্যেই ফাইলটা পাওয়া যায়। হুবহু একই ডকুমেন্ট। অবিকল।
    মিতাকে দিয়ে দিই সেটার কপি।
    তুই চুপচাপ বাড়ি চলে যা। কাল সকালে এসে প্রিন্ট আউট নিয়ে ওর টেবিলে রেখে দিস।
    আমরা দুজনে একসাথে বেরিয়ে যাই, অফিস থেকে।
    মিতা বলে, জানিস আমার মা একটা কথা খুব বলে। বলে, শনি কি গ্রহ নক্ষত্র? শনি হচ্ছে মানুষ।
    যা বলেছিস। আমারো শনির দশা চলছে।
  • ranjan roy | 24.99.222.132 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:৫৪652647
  • একেবারে শু বা!!
  • de | 24.97.56.221 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১২:৫৪652648
  • সামহাউ বাঙালীদের মধ্যেই এই ধরনের জীব আমি অনেক দেখেছি - সাবর্ডিনেটদের হ্যারাস করতে পারলে যাদের আনন্দের সীমা থাকে না। সেই তুলনায় কিন্তু অবাঙালীরা, বিশেষতঃ সাউথের লোকেরা কম অসভ্য হয়। একটু সুইপিং স্টেটমেন্ট করলাম - কিন্তু এটা আমার অভিজ্ঞতা।
  • সিকি | 166.107.33.122 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:০৭652649
  • এটা আমারও অভিজ্ঞতা। বিভিন্ন কোম্পানিতে, একই ধরণের - প্রতিটি কেসেই বাঙালি।
  • daxini | 116.51.234.71 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৩:৫৪652651
  • তামিলনাডুতে সোজা হিসেব। বস হোলো গড ও সাবর্ডিনেট ডগ। দু পক্ষই মোটামুটি মেনে চলে এই নিয়মটা। অতএব কম্প্লেনের কোন জায়্গা নেই।
    জীবনের প্রায়োরিটি হল - প্রথম - অফিস ও বস। দ্বিতীয় - পরিবার সেখানে ছেলে, মেয়ে, বৌ, শাশুড়ী, শ্বশুর, বাবা, মা এই অর্ডারে। আগেকার দিনে শাশুড়ী মানে দিদি কারণ মামা শ্রেষ্ঠ পাত্র।
    তৃতীয় - পাড়ার মন্দির ও পুরোহিত।
    চতুর্থ - কিছু আত্মীয়
    ও সবশেষে বন্ধু, বেশিরভাগ সময়ে এটা শূন্যও হতে পারে।
  • কল্লোল | 125.185.146.100 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৪:৩৬652652
  • আমি অবশ্য এই ৩৫ বছরের চাগ্রীতে এমন কিছু দেখিনি। খুব ভালো ও খারাপ বাঙ্গালী বস, বেশ ভালো ও খারাপ তামিল বস। অতি গোলমেলে মারোয়ারী বস যে প্রায় বাঙ্গালী। আজ অবধি এই কয় জাতের বসই পেয়েছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:২২652653
  • কাল সকালে আসবি তো?
    আমি তো খুব সকালেই আসি, বাস ফাসের ঝামেলা নেই, ওয়াকিং ডিস্‌ট্যান্স।
    হ্যাঁ, কাল সকালে এসে, বুঝলিতো, প্রিন্ট আউটটা নিয়ে রেখে দেবো। অনেকগুলো পাতা তো, একটু সময় লাগবে। আমার মেশিন থেকে কখনো প্রিন্ট আউট নিই নি।
    ওসব হয়ে যাবে, তুই জাস্ট সকাল সকাল চলে আয়।

    তারপরে খেয়াল হয়, কাল তো ঝাঁজীর সঙ্গে ইন্টারনেট কানেক্‌শানের প্রবলেমটা নিয়েও বসতে হবে। ইশ্‌, ওঁকে তো বলাই হোলো না কালকে তাড়াতাড়ি করে অফিসে আসতে। বেশি লোকজন এসে গেলে কি ওঁকে নিয়ে সার্ভাররুমে ঢোকা যাবে? সার্ভাররুমে ঢুকবার কোনো রেস্ট্রিকশান নেই যদিও, হরদম লোকে হুটহাট ওখানে ঢুকে যায়, হয়ত আনন্দর সঙ্গে কোনো কন্‌ফিডেন্‌শিয়াল আলোচনা আছে, সেটা স্মোকিং রুমে করা যাবে না, অন্য কেউ থাকতে পারে। তখন আনন্দ তাকে নিয়ে সার্ভাররুমে ঢুকে কাচের দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি যেখানটায় বসি সেখান থেকে দেখা যায়। কাচের দেয়াল, কাচের দরজা। সবই দেখা যাবে, কিন্তু কিছুই শোনা যাবে না।
    কিন্তু আমি যদি ঝাঁজীকে নিয়ে সার্ভাররুমে ঢুকি আনন্দ কি আমায় ছেড়ে দেবে? এ কোম্পানীতে যারা কাজ করছে তারা সবাই জানে যে এই সিচুয়েশনে আমি পার পাবো না। সেইজন্যেই ভোরবেলা আসতে হবে। বেলা হয়ে গেলে, অনেক লোক ঘুরঘুর করে, তারা যে আনন্দর কাছে কথ লাগায় না এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না।
    পরদিন আরো বেশি তাড়াতাড়ি আসি। নাইটগার্ড অলকবাবু একটু অবাকই হন।
    কী ব্যাপার বলুনতো? আজ এত সকাল সকাল?
    কাজ আছে অলকদা।
    ইউপিয়েস, সার্ভার, সমস্ত একে একে অন করে, অন্যান্য কাজ চাপিয়ে দিয়েছি, যেমন ব্যাকাপ, ইত্যাদি। মিতার কিন্তু আসবার নামই নেই। ভালো ব্যবস্থা। এত প্ল্যান করে করে সব করা হোলো, অথচ যার প্রয়োজন, তার নিজের কোনো হুঁশ নেই।
    দাঁত কেলাতে কেলাতে ম্যাডাম এলেন আটটা পার করে।
    আর বলিস না, কিছুতেই তাড়াতাড়ি বেরোতে পারলাম না।
    এরপরে সে ফিরিস্তি দেয় হাজারটা কাজের।
    তোর দরকার, তুইই বুঝবি কতটা আর্জেন্ট।

    এরপরে, সে কম্পিউটার অন করে বসে। তারপরে আমার কাছে এসে জিগ্যেস করে, ইন্টারনেটে কানেক্ট করা যাচ্ছে না তো।
    জানি।
    এমা! কেন? ইন্টারনেটটা কখন অন করবি?
    ওটা আমি নয়, আনন্দ অন করে। তুই জানিস না?
    ও! তাই? তুই করতে পারিস না? করে দেনা! একটু হটমেল দেখবো।
    আর তোর প্রিন্ট আউট?
    নিয়ে নিচ্ছি। এক্‌খুনি ফায়ার করছি।

    এইরকম করতে করতে দীপকের চায়ের জল ফুটে যায়, তাতে দুধ ঢালা হয়, চায়ের পাতা দেওয়া হয়, চিনি। তারপরে মিতা চায়ের কাপ নিয়ে গরম চায়ে চুমুক দিতে থাকে।

    আমিধৈর্য হারিয়ে ওখান থেকে চলে যাই নিজের জায়গায়।
    কি মুশ্‌কিল, ঝাঁজী এখনো এলেন না, সেকল্‌ ম্যানেজার যে, সে পাড়ার ছেলে দুটো তিনটে বাড়ীর ব্যবধানে থাকে, সে আজ একটু তাড়াতাথি এসে গেছে। সম্ভবতঃ কোনো ক্লায়েন্ট কলে বেরোতে হবে, তাই এত তাড়া।
    আওয়াজ পাই, সে এবং মিতা খুব গল্প করছে। অথচ প্রিন্ট আউট যে নেয়া হয়নি সে আমি আমার কম্পিউটার থেকেই পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৬:২৭652654
  • সেকল্‌* ম্যানেজার নয়, সেল্‌স্‌ ম্যানেজার। প্রচুর টাইপো হচ্ছে।
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:০০652655
  • ঝাঁজী যখন এলেন, তখন বেশ দেরি হয়ে গেছে। যারা অফিসের ক্যাবে আসে না, তাড়া ছাড়া অনেকেই এসে গেছে এক এক করে। এই অবস্থায় আজ আর কিছু করা সম্ভব নয়। তবু ঝাঁজীকে বললাম, কালকে একটু আর্লি আসতে পারবেন?
    টুমরো?
    ইয়েস।
    বাট টুমরো ইজ্‌ স্যাটার্ডে। আই'ল লীভ ফর জামশেদপুর দিস আফটারনুন।
    ওহ্‌! ভুলেই গেছলাম। উইকেন্ড।
    হাসি মুখে সায় দেন ঝাঁজী।
    জামশেদপুরের বাড়ীতে ওঁদের জয়েন্ট ফ্যামিলি, বাবা মা বৌ ছেলে। আড়াই বছরের ছোটো ছেলেটার মুখ দেখতে প্রতি উইকেন্ডেই প্রায় ছুটে যান বাড়ী।
    ওদের কোলকাতায় এনে রাখতে পারেন না?
    দ্যাট্‌'ল বি ডিফিকাল্ট।
    কেন?
    উত্তরে জানান, দেশের বাড়ীতে ছেলেকে দেখে রাখবার অনেক মানুষজন আছে। সে সবার চোখের মণি। আবার স্ত্রীর পক্ষেও চাকরি ছড়ে দিয়ে কোলকাতায় আসা সম্ভব নয়।
    আপনার স্ত্রী চাকরি করেন? কোথায়?
    সেম প্লেস হোয়ার আই ওয়ার্কড বিফোর। শী ইজ্‌ অ্যান্‌ এঞ্জিনীয়ার।

    নিজের বোকামিতে নিজের ওপরেই রাগ হয়। কেমন যেন ধরেই নিয়েছিলাম, ওঁর স্ত্রী চাকরি বাকরি করেন না।
    ঠিক আছে ঝাঁজী, একটা প্লান করে রাখি তবে, মান্ডে আপনি খুব আর্লি আসুন, তখন আমরা ইন্টারনেটের প্রবলেমটা সল্‌ভ্‌ করবার চেষ্টা করব।
    ওকে, ডান।

    মিতাকে তাড়া দিই। একটু পরে অজিত ভট্‌চাজ ওকে কথা শুনিয়ে কাঁদিয়ে দিতে পারে। কিছু কিছু নমুনা আগেই দেখেছি।
    প্রিন্ট আউট চালিয়ে দিই। যথেষ্ট কাগজ ভরা থাকে প্রিন্টারে। এই প্রিন্টারটা মিতার বসবার টেবিল থেলে কাছেই। মার্কেটিং এর মেয়েরা যেখানে বসে সেইখানে রাখা।
    শেষরক্ষা হোক এটাই চাই।
    প্রিন্টিং চলছে, এমন সময়ে অজিত ভট্‌চাজের প্রবেশ। সে সম্ভবতঃ ঐ ষাট পেজের ডকুমেন্টের ব্যাপারে ভুলে গিয়েছে। আমি প্রিন্টারটা আড়াল করে দাঁড়িয়ে। পাতা পঞ্চাশ বেরোনোর পরে হাল্কা একটা পেপার জ্যাম মতো হয়েছিলো, সেটা প্রায় তৎক্ষণাৎ সামলানো হয়েছে।
    নিজের কাচের কেবিনে ঢুকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এলেন অজিত ভট্‌চাজ। এদিক ওদিক তাকালেন। আমার সঙ্গে চোখাচোখি হলো। এই দিকটায় আমার থাকার কথা নয়। মুখে কিছু বললেন না। তারপরে মনে পড়ে গিয়েছে। মিতাকে ডেকে বললেন, তোমাকে যে লেখাটা দিয়েছিলাম সেটা কদ্দূর?
    মিতা মুখ তুলে তাকিয়ে বলল, ওটা হয়ে গেছে।
    হয়ে গেছে, শুনে আশ্চর্য হলেও মুখে তা প্রকাশ করল না অজিত ভট্‌চাজ। যেন কিছুই হয় নি এমন একটা ভাব মুখে এনে বলল, তাহলে ওটা আমার টেবিলে দিয়ে যাও।
    মিতা উঠে আসে প্রিন্টারের কাছে। প্রায় হয়ে এসেছে, পাতা কয়েক বাকি।
    ওকে উঠে আসতে দেখে মিঃ ভট্‌চাজ ও ফলো করেন ওকে। মিতার হাতে আমি প্রিন্ট আউটএর কাগজগুলো তুলে দিচ্ছি দেখে মিঃ ভট্‌চাজ ঝুঁকে দেখেন কাগজগুলো; তারপরে ফেটে পড়েন রাগে।
    তোমাদের কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই? এতগুলো পাতা প্রিন্ট আউট নিচ্ছ? ছি ছি। এতগুলো পাতা!
    মিতা হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে। আমিও বুঝছি না, সমস্যাটা কোথায়? টেবিলের ওপরে লেখাটা কীভাবে দিয়ে আসা সম্ভব, প্রিন্ট আউট না নিলে?
    ভট্‌চাজের চেঁচামেচিতে ক্যাশিয়ার পুলকবাবু একটু উঁকি মারলেন এদিকে।
    সরি স্যার। (মিতা ক্ষমা চাইছে। ও কি জানে ওর দোষটা কোথায়?)
    সরির কথা নয়। আমার কাছে সরি বলে কী হবে? কাগজ মানে বোঝো? কাগজ মানে গাছ। প্রকৃতি। নেচার! ক্ষমা চাইতে হলে চাও গাছের কাছে।

    কেউ টুঁ শব্দটি করে না। স্যার খুব রেগে আছেন।

    স্মোকিং রুমে ঢুকে পুলকবাবু মিতাকে জিগ্যেস করেন, কী হয়েছিলো বলোতো?
    মিতা ঘাবড়ে আছে। কিছুই বলতে পারে না। আমি অল্প বোঝাতে যাই, কিন্তু কোথা থেকে শুরু করব এই গল্প?
    পুলকবাবু মুরুব্বির মতো হেসে বলেন, অজিত ভট্‌চাজ হচ্ছে অন্য মাপের মানুষ। ভেরি লার্নেড ম্যান। ব্যবসায় নেমেছে ঠিকই, কিন্তু আসলে লোকটা হাই লেভেলের ইন্টেলেক্‌চুয়াল।
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:১৪652656
  • ম্যাডাম।
    পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দীপক।
    লাঞ্চের জন্যে কিছু আনতে হবে?
    আমার জন্যে? হঠাৎ?
    না, মানে যদি কিছু আনাতে হয়। সবার জন্যেই অর্ডার নিচ্ছি, তাই...
    সে তো রোজই নিস দেখি, আজকে হঠাৎ আমাকে বলছিস কেনো? জানিস না আমি রোজ ভাত নিয়ে আসি সঙ্গে করে?
    হ্যাঁ, সেতো জানিই।
    দীপক মাথা চুলকোয়।
    তাহলে?
    আসলে ম্যাডাম, একটা কথা ছিলো।
    কী কথা?
    আপনি একটু পরে যখন খেতে আসবেন ঐ ঘরটায় তখন বলব।
    দীপক চলে যায়।
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:১২652657
  • সওয়া বারোটা বাজে। আমি টিফিন খেতে ঢুকেছি রান্নাঘরটায়। ইলেকট্রিক স্টোভ নেবানো। তার ওপরে অ্যালুমিনিয়ামের সস্‌প্যানে সরপড়া ঠান্ডা চা। দেয়ালে অ্যাকোয়াগার্ড। অন্যদিকটায় নড়বড়ে নোংরা পুরোনো কাঠের টেবিল। তার ওপরে অনেক জিনিসপত্র বাসন কোসন বোঝাই করা, আঠারো লিটারি জেরিক্যানটাও কেদ্‌রে পড়ে আছে একধারে, এখন ফাঁকা। সন্ধ্যে হলেই সে আবার ভরে উঠবে নিয়মমতো। টেবিলের এককোণে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে টিফিনকৌটো খুলে আমি ভাত মাখছি, ডিমসেদ্দ আছে একধারে। এই ঘরটা একটা সরু করিডোরের ঠিক মাঝের দিকটায় পড়ে যেতে আসতে। ঘরটার একপাশে স্মোকিং রুম। স্মোকিং রুমের পাশের ঘরটা অজিত ভট্‌চাজের স্পেশাল কামরা। স্পেশাল, কারণ, ঐ কাচের ঘরটায় কাচগুলোয় কী যেন একটা পাতলা মতো রঙীন প্লাস্টিক লাগানো আছে। নীল রঙের। ঘরের ভেতরে বসলে বাইরেটা দেখা যায়, কিন্তু বাইরে থেকে ভতরটা অস্বচ্ছ, ঝাপসা, কিছু ঠাওর করবার উপায় নেই। ঘরের ভেতর থেকে দেখা যাবে বাইরে রিসেপশান। অজিত ভট্‌চাজ চেয়ারে বসে সবাইকে দেখতে পায়। সোজাসুজি নায়, পাশ ফিরে বসে কাজ করছে মার্কেটিং এর মেয়েরা। এই ঘর মনে করিয়ে দেয় চার্চের কন্‌ফেশন বক্স। প্রীস্ট দেখতে পাবে সীনারকে স্পষ্ট পাশ ফিরে বসে থাকতে, কারণ প্রীস্টের ঘরে আলো কম। অন্যদিকে সীনার যেখানে বসে থাকবে, সেখান থেকে প্রীস্টকে চেনা যায় না।
    রান্নাঘরের অন্যদিকের ঘরটার পাশে আছে একটা বড়োসড়ো ঘর, ঐটাতেই আমার ইন্টারভিউ হয়েছিলো, কিন্তু এখন সেটা খালি পড়ে থাকে। ট্রেনিং রুমের অনুকরণে এখানেও হালফ্যাশানের চেয়ার- যেগুলোর হতলে ছোট্টো একটা করে ফোল্ডিং বোর্ড লাগানো থাকে। এই ঘরে দেয়ালে একটা বোর্ডও আছে। ট্রেনিং হতে দেখিনি কখনো, কিন্তু খাওয়া দাওয়া হয় লাঞ্চের সময়। কনসাল্টেন্টরা চেয়ার বাগিয়ে বসেন সব। দীপক একে একে সার্ভ করে দেয় খাবার অর্ডারমাফিক। একসঙ্গে সকলের তো ঠাঁই হবার নয়, তাই দুটো ব্যাচে খাওয়া হয়, উৎসববাড়ীর মতো। ফার্স্ট ব্যাচ শুরু হয় একটা নাগাদ, সবার খাওয়া দাওয়ার পাট চুকতে চুকতে আড়াইটে এমনি তিনটে টিনটেও হয়ে যায় কোনো কোনো দিন।
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:৪৩652658
  • ভাত খাচ্ছি একা ঘরে। দীপক নেই। একটু পরে আশিসদা ঢুকলেন। অনেকক্ষণ ধরে বাইরে রোদে ঘুরেছেন মনে হচ্ছে দেখে। ঘামে ভিজে রয়েছেন। হাতে একটা কালো ব্যাগ।
    আমায় দেখতে পেয়ে বললেন, খাচ্ছেন? খেয়ে নিন। আমি একটু জল খাবো। সেই সকালে বেরিয়েছিলাম, এই এখন ফিরছি।
    দীপক কোথায় আশিসদা?
    ফেরেনি এখনো? ও। ওতো এখন টিফিন কিনতে গেছে। আমিতো এতক্ষণ ইলেট্রিক সাপ্লাইয়ের লাইনে দঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবকটা বিল জমা দিয়ে এলাম।
    আমি ভাত খাচ্ছি, আশিসদা কথা বলে চলেন।
    কোম্পানীর বিলতো অনেক আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। এগুলো হচ্ছে সব আপনাদের বিল।
    আমাদের বিল মানে?
    আহা, আপনার বিল নয়। আপনার নাম করেছি কি? করিনি তো? আপনি ছাড়াও বাকিরা আছে না? পঁচিশ তিরিশটা বিল প্রত্যেক মাসে লাইন দিয়ে জমা দিতে হয়। সব স্যারেরা হাতে বিল টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলবে, আশিস বিলটা জমা করে দিও। আশিস এই নাও আমার বিলটা। এই করে করে এতগুলো বিল হয়ে যায়। সব আবার নিজের বিলও না। নাম কর বলছি না, কিন্তু অনেকের দুটো তিনটে বিল। একটা নিজের ফ্ল্যটের, অন্যটা বাপ মা যেখানে থাকে সেখানকার, কারো আবার শ্বশুরবাড়ীর ইলেকট্রিকের বিল। এখন আমি একা কীকরে এতজনের বিল জমা দেবো বিচার করে বলুন তো।
    ঠিকই তো।
    একটা লাইন মানে একটা বিল। খুব বেশি হলে দুটো। কিন্তু তিরিশটা বিল মানে কী দাঁড়াচ্ছে? কতবার লাইন দিতে হবে? তাও যদি কদিন সময় থাকে হাতে, আমি রোজ লাইনে দাঁড়াতে পারি। কিন্তু সবাই দেবে একেবারে শেষের দিন। ঐদিনে জমা না দিলে রিবেটের টাকা মার যাবে। সামনের মাস থেকে বলে দেবো একজনের থেকে একটার বেশি বিল আমি নেবো না।
    আশিসদা, এদের বাড়ীর ইলেকট্রিকের বিল লাইন দিয়ে ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ে জমা দেওয়াটাও কি আপনার ডিউটির মধ্যে পড়ে?
    সেসব হিসেব করে লাভ আছে? কোনটা ডিউটির মধ্যে পড়ে আর কোনটা পড়ে না সে হিসেব করতে গেলে তো কাজ অনেক কম। অজিত স্যারের বাবা মায়ের জন্যে রেলের টিকিট কাটা ডিউটোর মধ্যে পড়ে? পুজো তো সেই অক্টোবরে, কিন্তু পুজোর ছুটির সময় ট্রেনের টিকিটের রিজার্ভেশন ক মাস আগে খোলে জানেন?
    জানিনা।
    রিজার্ভেশন খুলবে যেদিন, তার আগের রাত্রে কয়লাঘাটা জানেন? স্ট্র্যান্ড রোর্ড?
    জানি।
    ঐখানে রেলের রিজার্ভেশন অফিসে আগের দিন রাত থেকে লাইন পড়ে। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে আনা আমাদের কাজ। আমরা হচ্ছি পিওন বেয়ারা। আমাদের কাজের টাইপটাই অন্যরকম। কোনটা ঠিক, কোনটা ডিউটি, এসবের কোনো বাঁধাধরা লাইন নেই। এই যে দীপক ঘুরে ঘুরে খাবার আনতে যায়, এটা ওর ডিউটির মধ্যে পড়ে? হ্যাঁ বললে হ্যাঁ, না বললে না। আমাদের যখন কাজে নিয়েছিলো, তখন এসব বলে নি। অফিসের কোনো কাজে আমরা ঘুরব, দরকার পড়লে ছুটে ছুটে কাজ করব, কিন্তু আজ এর বুড়ো বাপ মায়ের জন্যে ট্রেনের টিকিট কাটো রে, কাল ওর বাচ্চার সাঁতারের ক্লাসে ভর্তি হবার ফর্ম তুলে আনো, পরশু সিনেমার অ্যাডভান্স টিকিট কাটো, আরো অনেক কিছু আছে। করে দিই ভালো মনে, না করলেও এরা জোর খাটাতে পারবে না।
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৯:০৭652659
  • আপনার খাওয়া হয়ে গেল?
    হ্যাঁ, কিন্তু দীপক তো এলো না।
    আর কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বে।
    ও এলে বলবেন আমার সঙ্গে কী কথা ছিলো যেন ওর।
    আপনার সঙ্গে?
    হ্যাঁ।
    না না, ওটা দীপককে দিয়ে আমিই বলে পাঠিয়েছিলাম। আমিই ওকে বলেছি কালকে, যে ম্যাডামের সঙ্গে কথা আছে একটা ব্যাপারে। দীপক নয়। আমার কথা আছে আপনার সঙ্গে।
    কী কথা আশিসদা?
    বলছি। দাঁড়ান, বাইরেটা দেখে আসি।
    আশিসদা বাইরে গিয়ে দেখে নেন কেউ এদিকে আসছে কিনা। স্মোকিংরুম আর ট্রেনিং রুমেও উঁকি মেরে দেখে আসেন। তারপরে আমাকে বলেন, আমরা পিওন, কিন্তু আমাদেরো চোখ আছে। আমরাও অনেক কিছু দেখতে পাই, কিন্তু সবসময় বলতে পারি না। একটা জিনিস রোজই দেখছি, খেয়ালও করছি কিছুদিন ধরে, একটু বাইরে আসুন, হ্যাঁ হ্যাঁ ঐখানটায় দাঁড়ান। এবার দেখুন।
    আশিসদা নীচুছাদওয়ালা সেই অপ্রশ্বস্ত করিডোরের সিলিঙের একটা দিকে আঙুল তুলে দেখান। অনেকগুলো তার যাচ্ছে সেখান দিয়ে। একটা তার অল্প ঝুলে আছে। অল্প ছেঁড়া মতো, প্লাস্টিকের কভারের বাইরে বেরিয়ে এসেছে ধাতব তার। খুব মন দিয়ে দেখলে বোঝা যায় ছেঁড়া তারটা হাত দিকে পাকিয়ে কোনোমতে জুড়ে রাখা হয়েছে।
    কী এটা বলুনতো? কীসের তার এটা?
    আশিসদা চুপ করে তাকিয়ে থাকেন আমার দিকে। তারপরে বলেন, ফোনের লাইন। ঐ লাইনটাই যাচ্ছে আপনার সর্ভাররুমের দিকে। রোজ সন্ধ্যেবেলা বেরোনোর আগে আনন্দ এটা খুলে দিয়ে যায়। আপনি ততক্ষণে বাড়ী চলে গেছেন। সকালে আপনি এসে কিছুতেই ইন্টারনেট কানেক্ট করতে পারছেন না তো? আমরা ডেইলি দেখছি। তারপরে দেখবেন, যে ই আনন্দস্যার আসবে, ওমনি সব ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক যেন ম্যাজিক। ও এসে চা চাইবে, আশিস চা দাও, অজয় চা দাও, তারপরে চা নিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে যাবে। কী? ঠিক বলছি তো?
    ঠিক।
    তারপরে চা খেয়ে সবাই বেরিয়ে গেলে, ও লাস্টে বেরোবে। একদম লাস্টে। তারপরে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে হাতটা তুলে ঐ তারটা স্যাট করে জুড়ে দিয়ে গ্যাট্‌গ্যাট করে সার্ভাররুমে চলে যাবে। এটা ফার্স্ট দেখেছে দীপক, তারপরে আমরাও দেখেছি। এই রান্নাঘরে থাকিতো। আমরা যে দেখেছি সেটা ও জানে না। আর যদি দেখেও থাকে, না দেখার চান্সই বেশি, তবুও, ধরে নিচ্ছি যদি দেখতেও পায় আমাদের, তো ভাববে, আশিস দেখলো, দীপক দেখলো, ও কী হবে, ওরা তো মুর্খ, ওরা আর কতটা কী বুঝবে?
  • সে | 188.83.87.102 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৯:১৭652660
  • এরকম একটা খবর আশিসদার কাছ থেকে পাবো কোনোদিনো কল্পনাও করতে পারিনি। এতটাই হতবম্ব হয়ে গেছি। যে পুরো জিনিসটা যেন এখনো হজম হচ্ছে না। নেহাৎ কাল শনিবার, নইলে কালকেই সকালে এসে ব্যাপরটা ভেরিফাই করে নিতে পারতাম। ঝাঁজীকে খবরটা দিতে হবে। ঐ অবস্থাতেই বেরিয়ে যাচ্ছি দেখে আশিসদা ঠেকালেন।
    ম্যাডাম, এখন কারোকে কিছু বলবেন না। আর হাতটা ধুয়ে যান, হাতে সকড়ি লেগে আছে। সোমবার সকালে এসে ঠান্ডা মাথায় দেখবেন; মিলিয়ে নেবেন আশিস ঠিক বলেছিলো কি না।
    কী বলব আশিস দা? আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে।
    অন্য কেউ হলে বলতাম না। আপনি বলেই বললাম। আনন্দ যত বদমায়েসীই করুক না কেন আমাদের তো হাত পা বাঁধা। কিন্তু এরকম জিনিস দেখতে পেলেই আপনাকে খবর দিয়ে দেবো।
  • a x | 138.249.1.202 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:০৭652662
  • আমি এটাই ভেবেছিলাম, ডায়াল আপ শুনে - কোথাও ফোনের লাইন খুলে রাখা হয়!

    কিন্তু আমি সত্যি অবাক হচ্ছি এই লেভেলে সাবোতাজ করে লোকে, এইরকম ভাবে স্রেফ হায়ারার্কি দেখানোর জন্য হ্যারাস করে, অহেতুক কাজ দেয়। এদের নিশ্চয়ই ভয়ানক লেভেলের ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স নিজেদের নিয়ে! কিম্বা নিজেরাও এই প্রসেসের মধ্যে দিয়ে গেছে বলে, সেটার শোধ তুলছে এইভাবে।
  • Tim | 101.185.15.213 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ২০:৩৩652663
  • খুব হয়। আমার বাবা প্রাইভেট ফার্মে চাক্রি করেছেন অনেকদিন। এইসব গল্প শুনে শুনেই বড়ো আর বুড়ো হলাম। পিওনদের অ্যাবিউজ, সাবর্ডিনেটের অ্যাকাউন্টস ঘেঁটে দেওয়া, কাজে ভুল করে দিয়ে র‌্যালা নেওয়া এসব প্রাইভেট ফার্মে চাকরির রুল্স অফ দ্য গেম। এই চাপ নিতে নিতে ক্রনিক অসুখে ক্ষয়ে যায় লোকে।

    তবে এগুলোকে শুধুই ইনসিকিয়রিটি দিয়ে বিচার করলে হবেনা। এতে যথেষ্ট সুবিধে হয়। কখনো মেটেরিয়াল লাভ, কখনও ব্রাউনি পয়েন্ট যা প্রোমোশনে কাজে দেয়, বা বোনাসের সময়। কি ভাগ্যি আইটি বুম হয়ে এইসব বালবিচি চাকরির মুখে লাথি মারতে পেরেছে লোকজন। এই লেভেলের স্ট্রেস যে না দেখেছ বিশ্বাস করবেনা।
  • সে | 188.83.87.102 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৪২652664
  • ভেবেছিলাম, যে এই ইন্টারনেটের কানেকশানের ভূত তাড়াতে পারলে একটা সমস্যা অন্ততঃ কমবে। কিন্তু যে সমস্যাগুলো লোকে ইচ্ছে করে তৈরী করে সেগুলোর সমাধান করা যায় না। একটা দূর হলে অন্য আরেকটা উপস্থিত হবে। চেনা জানা সমস্যার তবু গতিপ্রকৃতি কিছুটা হলেও পরিচিত, কিন্তু যেগুলো নতুন নতুন তৈরী হবে এবং আচম্বিতে আক্রমন হানবে, সেগুলোর ব্যাপারে তো কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। এমনকি সেগুলোর তীব্রতা কোনোভাবেই আগে থেকে মেপে রাখবার উপায় নেই। এই কোম্পানীতে ঢুকে অনেক কিছু জেনেছি শিখেছি কাজ করতে করতে। কম্পিউটারের কাজ যেমন ঠেকা খেতে খেতে শিখেছি, তেমনি জেনেছি যে কিছু মানুষ থাকে, যারা অন্য কারো ওপরে অন্যায় বা অত্যাচার হতে দেখলে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে ভালোবাসে। এগিয়ে এসে অন্যায়ের প্রতিবাদ তো দূরে থাক। একটা লোকও নেই এই কোম্পানীতে যে অন্যায় হতে দেখলে প্রতিবাদ করে। পঁচাত্তরটার বেশি কম্পিউটার আছে এখানে, প্রায় প্রত্যেকটা মেশিনই আমার নিজে হাতে ইন্‌স্টল ও কনফিগার করা; এমপ্লয়ী সংখ্যা আরো বেশি, কিন্তু তাদের মধ্যে একটা লোকেরও সৎসাহস নেই যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। বরং অনেকেই যোগ দেয় ক্ষমতাবানের দলে, কুৎসিত হাসিঠাট্টা করে আমাকে নিয়ে, চায়ের কাপ নিয়ে স্মোকিং রুমে ঢুকে যোগ দেয় আনন্দর সঙ্গে আমার গুষ্টি উদ্ধার করতে। রোজ। সকাল বিকেল। এই এদের রুটিন। এবং এদের সংখ্যা এই কোম্পানীতে সিংহভাগ। আমি আগে এসব জানতাম না, কিন্তু আস্তে আস্তে সমস্ত টের পাই।
    সৌম্যদার মেয়ের জ্বর হওয়া নিয়ে যখন বাড়াবাড়ি রকমের সহানুভূতি প্রকাশ হতে লাগল, সেটা শুধু আমারই নয়, পিওন বেয়ারা, ড্রাইভার, গেট কীপার, মানে সহজ হিসেবে সো কল্ড চাকরবাকরদের খুবই চোখে লেগেছিলো। আর আমার তো চোখে লাগবেই। আমার মেয়ে একাধিকবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থেকেছে আমার এই কমাসের চাকরি জীবনে। কেউ খোঁজ নিতে যায় নি। একজনও নয়। আচ্ছা, নাহয় আইডিতে যাওয়াটা খুব রিস্কি, কিন্তু মুখের কথা জিগ্যেস করা, কিংবা হেড ইন্‌জুরির সময়ে পার্ক নার্সিং হোম? সেটা তো আইডির মতো ভয়ের কিছু নয়, উপরন্তু বড়োলোকদের জায়গা। কোনো গরীব নার্সিং হোম নয়। মোটা টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া করতে হয়, দামী ডাক্তারেরা চিকিৎসা করে সেখানে। কই সেখানেও তো কেউ দেখা করতে আসে নি! কেন? আমি কম মাইনের সিস্টেম্‌স্‌ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বলে? নাকি মেয়ে বলে? আমার ফ্যামিলিতে কোনো মেল মেম্বার নেই বলে? প্রশ্নতো মনে আসবেই। বারবার আসবে, এবং সঙ্গত কার্নেই এসব প্রশ্ন বারবার উঠবে। অথ্চ সৌম্যদার মেয়ের জ্বর হওয়া নিয়ে সে কি বাড়াবাড়ি। প্রথমদিনতো সৌম্যদা এলেনই না অফিসে, স্ত্রীও মেয়ের সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছেন। দ্বিতীয়দিনে তিনি একবার ঢুঁ মেরেছিলেন। ওঁকে নিয়ে সবাই এত আহাউহু করতে লাগল যে বলবার নয়। যারা আগের দিনই কোঠারীতে গিয়ে দেখা করে আসতে পেরেছে তারাও ছুটে এলো। যারা যেতে পারেনি, তারাও অনেক দুঃখপ্রকাশ, আক্ষেপ ইত্যাদিতে ভরিয়ে তুলল সেঞ্চুরীর অফিস স্পেস। সৌম্যদা বলে চলেছেন অসুখের ও চিকিৎসার রিসেন্ট আপডেট। কতরকমের টেস্ট হয়েছে, ব্লাড, ইউরিন, ইত্যাদি, কতগুলোর রিপোর্ট এসে গেছে, কতগুলো এখনো বাকি। টেম্পারেচার কমেছে। ডাক্তার সন্দেহ করছে ইন্‌ফ্লুয়েঞ্জা, মনে হয় ভয়ের কিছু নেই, কিন্তু সাতটা দিন থাকতেই হবে।
    আবার শ্রোতাদের আরেক তরফের আহা উহু।
    তাহলে তোমার খাওয়া দাওয়া কীকরে হচ্ছে? বৌদি তো বাড়ীতে নেই।
    আর খাওয়া দাওয়া!
    সেকি? কেন?
    শরীরের যত্ন নাও।
    আর যত্ন নেওয়া।
    না না, সেকি! তুমি আবার এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে তো আরোই আসুবিধে হবে।
    তোমাকে এখন সুস্থ থাকতে হবে, বুঝেছো?
    ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করো।

    এই রকমের আলোচনা চলে ঘন্টা খানেক, তারপরে চা সিগারেট, টুক করে ওরই ফাঁকে খোঁজ নিয়ে নেওয়া অ্যামেরিকা যাত্রার ব্যাপারটা কতটা এগোলো, তারপরেই সৌম্যদা চলে যান।
    অন্যরাও দল বেঁধে ছুটে যায় কোঠারীতে।

    সিকিওরিটি গার্ড রাজীববাবু বলেন, অফিস তো এরই মধ্যে অর্ধেক ফাঁকা হয়ে গেল ম্যাডাম।
    সৌম্যদার মেয়ের অসুখ।
    কী অসুখ? সাংঘাতিক কিছু বলে তো মনে হয় না।
    না, জ্বর হয়েছিলো, তাই কোঠারীতে ভর্তি করেছিলো।
    এখন কেমন? জ্বর সেরে গেছে?
    তাইত শুনি।
    আর কদিন চলবে এসব?
    কি জানি! আপনিও দেখুন, আমরাও দেখি।
    তেলেমাথায় তেল দেওয়াটা না আমাদের একটা রোগ, জানেন তো সেটা?
    মাথা নাড়ি।
    আচ্ছা বলুনতো রাজীবদা, আমার বাচ্চার যখন অসুখ করেছিলো...
    তুলনা টানবেন না ম্যাডাম। এসব জিনিস যত দেখি, হাসি পায়। আপনার টাইমে ওরা যায় নি, বেঁচে গেছেন।
    কেন এরকম বলছেন রাজীবদা?
    আরে ধুর, এরা কি কেউ সত্যিকারের বন্ধু নাকি? সবই লোকদেখানো আহাউহু। অন্তর থেকে এরা কেউ কারো বন্ধু না। একটা দলের মধ্যে থাকে সবকটা। এগুলো ঐ দলের নিয়ম। এসব না করলে দলছুট হবার রিস্ক আছে না?
  • সে | 188.83.87.102 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২১652665
  • সোমবারে অফিসে এসে দেখি, যা হবার তাই। লাইনটা হালকা করে খুলে রাখা। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে যে একটুর জন্যে ঐ হাইটে আমার হাত পৌঁছচ্ছে না। টোয়ের ওপরে দাঁড়িয়েও না। একটা চেয়ার লাগবে। অফিস স্পেসের চেয়ারগুলো কায়দা করা রিভলভিং চেয়ার, ওসব চেয়ারের ওপরে দাঁড়ানো যায় না। দাঁড়াতে গেলে উল্টে পড়বার সম্ভাবনাই বেশি। বাকি রইল ট্রেনিং রুমের চেয়ার। ওগুলো ঘুরে যায় না, গদি টদিও নেই। সেরকমই একটা টেনে আনি। তার জুড়ে দিই। মন্ত্রেও মতো কাজ হয়, ইন্টারনেট কানেকেশান সাকসেসফুল। অফিসে যখন এক এক করে সকলে আসে, নির্বিঘ্নে নিজেদের হটমেল চক করতে লেগে যায়, ইয়াহু চ্যাট, আইসিকিউ, সমস্ত চলছে। তানিয়া আইসিকিউয়ে প্রেম করছে। সবাই খুশি।
    আনন্দকে নিয়ে পুলকারটা যখন আসে, সাড়ে দশটা বাজেনি তখনো। ঝাঁজীকে ঘটনাটা সংক্ষেপে বলা হয়ে গেছে। বাকিরা কেউ জানে না। কেউ খেয়ালও করেনি যে আনন্দস্যার আসবার আগেই ইন্টারনেট চলছে। এমনকি আনন্দ নিজেও বুঝে উঠতে পারে নি। অজয়দা লক্ষ্য করে যে কিছুক্ষণ পরে আনন্দ এসে ঐ লাইনটা জোড়া দেখে ফের চলে যায়। সম্ভবতঃ ভেবেছে যে আগের লাস্ট টাইমে তারটা খুলে রাখতে ভুলে গেছে।
    এটা আমাদের গেস। অজয়দার গেস।
    মুখে কিছু বলে না যদিও, কিন্তু সারাটা দিন গম্ভীর হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে আমার মুখটা পড়বার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি নির্বিকার।
    আমি সুযোগ পেলেই ঝাঁজীর কাছে চলে যাই।
    কী করছেন ঝাঁজী?
    একটা অ্যাপ্লিকেশন বানাচ্ছি, জাভা দিয়ে।
    আপনি জাভা জানেন?
    থোড়া বহুৎ।
    খুব শক্ত?
    নট রিয়েলি।
    কী অ্যাপ্লিকেশন বানাচ্ছেন?
    একটা ব্যাঙ্কিং টুল।
    প্রোজেক্ট?
    হো হো করে হেসে ওঠেন ঝাঁজী।
    নো নো, ইট্‌স্‌ জাস্ট টাইম পাস। প্রোজেক্ট কাঁহা হ্যায়? প্রোজেক্ট কে লিয়ে হি তো সব ওয়েট কর রাহা হ্যায়।
    আমায় অপ্রতিভ দেখেই বোধহয় ঝাঁজী ঐ ব্যাঙ্কিং অ্যাপ্লিকেশনটা দেখান আমাকে। এখনো পুরোটা তৈরী হয় নি, অনেক কিছু ঢুকবে এক এক করে।
    ব্যাঙ্কটার নাম, Gouri Sean's Bank
    বানান ভুল আছে ঝাঁজী। এস ই এন সেন।
    ও ইয়েস! থ্যাঙ্ক্‌ ইয়ু ফর কারেক্টিং মী।
  • সে | 188.83.87.102 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৫652666
  • মঙ্গলবারে খোলা তার পাইনি।
    শত্রুপক্ষ বুঝবার চেষ্টা করছে আমি ব্যাপারটা বুঝে ফেলেছি কি না। মঙ্গলবারে তাই থমথমে পরিবেশ। ওরই মধ্যে অন্যান্য কাজকর্ম রয়েছে। টের পাচ্ছি এক জোড়া চোখ সর্বক্ষণ আমাকে লক্ষ্য করে চলেছে। আনন্দ। সেইজন্যেই আমি যেন কিছুই বুঝিনি এরকম ভাণ করে অলস ভাবে রয়েছি।
    তার পরের দিন এসে দেখলাম। তার খোলা রয়েছে। খেলা জমে গেছে। তার খুলেই রাখা যায়, কিন্তু তাতে লাভ নেই। আবার জুড়ে রাখলে আনন্দ বুঝে যাবে। এক কাজ করা যাক। লাইনটা জুড়ে রেখে ঝপাঝপ মেইলটা ডাউনলোড করে রাখি। তারপরে আনন্দ আসবার আগেই খুলে দেবো। খুলবার জন্যে চেয়ার লাগবে না। একটু লাফিয়ে টানলেই হয়ে যাবে, সেরকম দরকার পড়লে অজয়দাকে বলব। অজয়দা লম্বা আছে।
    কানেকশান চালু আছে, কিছু কিছু লোক এসেও গেছে অফিসে, ইন্‌ক্লুডিং ঝাঁজী। ঝাঁজীর মতামতটা নিয়ে দেখি, কী বলেন।
    ঝাঁজী আমার প্ল্যানটা বাতিল করে দিলেন। বললেন, লাইন আবার খুলবার দরকারই নেই, কী করবে ও?
    ও যদি জেনে যায় যে আমি বুঝে ফেলেছি?
    তাতে ভয়টা কার? আপনার?
    না, তা নয়।
    তাহলে? ও দোষ করেছে, ও ভয় পাক। আপনি ভয় পাবেন না। এটাই তো সমস্যা, যী দোষ করে সে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়ায়, যে সাফার করে সে ভয়ে মরে।
    এখন সাহস পাচ্ছি।
    আচ্ছা ঝাঁজী, যদি এরকম করি, ঐ ছেঁড়া তারটা একটা টেপদিয়ে মুড়ে রাখি, বা ধরুন দিব্যেন্দু দত্তকে বলে দিলাম, যে একটা ফল্ট পাওয়া গেছে, হাজারহোক ওঁর তো জানা উচিৎ, উনিই তো টেকনিক্যাল ডিরেক্টর।
    সহি বাৎ।

    আমি সোজা চলে যাই অ্যাকাউন্টসে। পুলকবাবু, একটা টেপ পাওয়া যাবে? ব্ল্যাক টেপ গোছের? ইন্টারনেটের টেলিফোন লাইনটা একটা জায়গায় ছেঁড়া, বারবার খুলে যাচ্ছে।
    পুলকদা ড্রয়ার খুলে টেপ বের করে দেন। তারপরে বলেন, ও বাবা, তুমিও জানো এসব?
    এসব মানে? কীসব?
    কিছু না।
    বলুন না।
    ঐ আর কি, এসব তো কারোরই অজানা নয়। আনন্দর বদমাইসী। হিঁ হিঁ।
  • সে | 188.83.87.102 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫২652667
  • সেদিন বিকেল থেকেই ক্ষণে ক্ষণে শুনতে পাচ্ছি, জেম্‌স্‌ আসছে।
    এই আপাত নিরীহ কথাটার মধ্যে আছে ভয়ের আবহ। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে এটা বলা হয়। জেম্‌স্‌ আসছে। রোজ। একটু একটু করে। কখনো সকালে, কখনো সন্ধ্যায়, কখনো স্বগতোক্তি, কখনো কারোর সঙ্গে আলোচনাকালে আনন্দ ঘোষণা করে জেম্‌স্‌ আসছে।
    খুব ছোটো বাচ্চাদের দুষ্টুমি থামাতে যেমন ভূতের ভয়, কি পুলিশের ভয় দেখানো হতো আগেকার দিনে, সেই পদ্ধতি। আনন্দর আলোচনার মধ্যে থেকেই বিবরণ পাওয়া যায় জেম্‌সের। সে কোথা থেকে আসছে সেটা স্পষ্ট নয়, কিন্তু তার অসামান্য প্রতিভা। সে একজন প্রথমশ্রেণীর সিস্টেম্‌স্‌ অ্যাড্‌মিনিস্‌ট্রেটর। এন্টি থেকে লিনাক্স, সমস্ত ফ্লেভারের ইউনিক্স সিস্টেম তার বাঁয়ে হাত কি খেল। সার্ভার থেকে ওয়ার্ক স্টেশন, ব্যাকাপ, প্রিন্টিং, অ্যান্টি ভাইরাস, অসবস্ত কিছুতে সে তুখোড় খেলোয়াড়। দন্নাদন স্ক্রিপ্ট লিখে ফ্যালে, সে এলেই ঝকমকিয়ে উঠবে সেঞ্চুরী। সেই হবে আনন্দর যোগ্য অ্যাসিট্যান্ট। প্রায় প্রত্যেকদিনই জেম্‌সের অসামান্য সব ক্ষমতার গল্প শোনা যেত, আমাকে শোনানো ই সেসবের উদ্দেশ্য। সে নাকি এমন একটা পার্ল স্ক্রীপ্ট লিখেছে যে, কোনো এক কোম্পানীর সব কটা ওয়ার্ক শেশন তার কথায় ওঠাবসা করে।
    এই পার্ল স্ক্রীপ্ট জিনিসটা শুনে আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম। ঊনিশ্‌শো আটানব্বইয়ের গোড়ায় গুগুল দিয়ে সার্চ করা জানতাম না। এক্সাইট একটা সার্চ ইন্ঞ্জিন ছিলো, ইয়াহু আরেকটা, আর অল্টাভিস্টা। মোটের ওপরে এই তিনটেই। কিন্তু সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে খুঁজে দেখবার কথা মাথাতেই আসছে না তখন। সামনে সমূহ বিপদ। সুপার ম্যান লেভেলের সিস্টেম্‌স্‌ অ্যাড্‌মিনিস্ট্রেটর জেম্‌স্‌ আসছে আমার চাকরি কেড়ে নিতে।
    ভয়ে সিঁটিয়ে থাকি আমি। দিনকে দিন ঝিমিয়ে যাই। নতুন কিছুই শিখতে পারি না। সর্বক্ষণ মনের মধ্যে টেনশন। এ চাকরি চলে গেলে আবার রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে যে!
  • সে | 188.83.87.102 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫৫652668
  • অসবস্ত* নয়, সমস্ত
    শেশন* নয়, স্টেশন
  • সে | 188.83.87.102 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৪:৩৩652669
  • আনন্দর সঙ্গে এখন সরাসরি সঙ্গত করতে রঙ্গমঞ্চে দেখা যাচ্ছে স্নেহা কে। স্নেহা আমারই সমবয়সী মনে হয় দেখলে, বড়ো হলেও হতে পারে। সে জয়েন করেছে সেই তখন, যখন বাচ্চা লুকোনোর ঘটনাটা ঘটেছিলো। মোটামুটি নামকরা একটা ওষুধের কোম্পানীর প্রোজেক্টের কাজ তখন এসেছে। স্নেহা এলো প্রোজেক্ট লীডার হয়ে। সে নিজেও এমসিয়ে, তার আন্ডারে তিনজন ডেভালাপারও এমসিয়ে। এরা ছোট্টো একটা ঘরে বসে প্রোজেক্টের কাজ করত। তা সেই প্রোজেক্ট মনে হয় শেষ হয়ে গেছে, বা নতুন কিছু হচ্ছে, সেসব খবর আমাকে কেউ দেয়ও না। আমিও আগ্রহ দেখাই না আজকাল। তো সেই স্নেহা এখন ওর‌্যাক্‌ল্‌ ডিবিয়ে হয়ে গেছে। সার্ভাররুমে এখন সেও যাতায়াত করে। সান সোলারিসের একটা সার্ভারে ওর‌্যাক্‌ল্‌ আছে, সেইটায় সে কাজ করে। ঐ সময়ে আমি সার্ভাররুমে ঢুকে অন্য কোনো সার্ভারে কিছু কাজ করতে চাইলে সে বেশ বিরক্ত বোধ করে। খুব সাবধানে আড়াল করে রাখে স্ক্রীণটা, যেন আমি সবকিছু দেখে নেবো; দেখে ফেললেই মস্ত ক্ষতি করে দেবো। এছাড়া আনন্দর সঙ্গে তার এখন খুব বন্ধুত্ব। দুজনে সার্ভাররুমে অনেকক্ষণ করে কাটায়। স্নেহা মাঝে মাঝে আমার দিকে এমন করে তাকায়, যেন অদ্ভুত কোনো একটা জীবকে দেখছে।
    গত কদিন যাবদ শুরু হয়েছে আনন্দর নতুন খেলা। সকালে অফিসে এসেই দেখব সার্ভারে লগ অন করতে পারছি না। উইন্ডোজ সার্ভারের অ্যাড্‌মিনিস্ট্রেটরের পাসওয়ার্ড সে বদলে দিয়ে গেছে আগের দিন সন্ধ্যেবেলা। ইউনিক্স সার্ভারের রুটের পাসওয়ার্ড অবশ্য সে পাল্টায় না। কিন্তু উইন্ডোজের প্রাইমারী ডোমেইন কন্ট্রোলারের পাসওয়ার্ড পাল্টে দেবার দরুণ , কোনো কাজ এগোয় না। অপেক্ষা করতে হয়, কতক্ষণে আনন্দ আসবে। সকলে বিরক্ত হয় আমার ওপরে, কিন্তু আনন্দ তো আমাকে জানায় নি নতুন পাসওয়ার্ড। সবার রাগ গিয়ে পড়ে আমার ওপরে। স্নেহার চোখে হয় ঘৃণা, নয় রাগ। পারলে মনে হয় সে আমায় ভষ্মই করে ফেলবে।

    কয়েকদিন অপরিবর্তিত থাকে পাসওয়ার্ড, ফের না জানিয়ে বদলে দেয়। এই খেলা চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। তারপরে অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাজ দেয় আমাকে। ঘুরে ঘুরে প্রত্যেকটা মেশিনের সফ্টওয়ার ও হার্ডওয়ার ইন্‌ভেন্‌টরি নিয়ে এসো। খাতায় লিখে লিখে। আজই চাই, সন্ধ্যের মধ্যে।
    কেমন করে এত ডেটা জোগাড় করব আমি? মেশিনগুলো খালি পেলে তো? সেসব মেশিনে যারা বসে আছে, কেউ এক মিনিটের জন্যেও ছেড়ে দেবে না, সবাই মহা ব্যস্ত, চ্যাট আছে, ইমেল আছে, এটাওটা ডাউনলোড চলছে, চাকরির অ্যাপ্লিকেশন ছাড়ছে সবাই নানান জায়গায়। কাজ কম তাদের?
    তারই মধ্যে কয়েকজন প্রোজেক্টের কাজও করে। তাদের কাছে গিয়ে ইন্‌ভেন্টরির জন্যে মেশিনে একমিনিট বসতে চাইলে তো মেরেই ফেলবে মনে হয়। আনন্দর চেলা সব, নয় দলের লোক। আমাকে নীচু চোখে দেখা এবং অপমান করাটাই এদের নীতি।
    সৌম্য চক্রবর্তি, মিঃ ঝাঁ, আরো বেশ কয়েকজন অ্যামেরিকা চলে গেছেন। বড্ড অসহায় লাগে। এভাবে আর কদিন? কাকে গিয়ে বলব এইসব? কে বিশ্বাস করবে আমার কথা?
  • সে | 188.83.87.102 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৫:০৫652670
  • প্রথম দফায় যারা তিন মাসের কড়ারে বিওয়ান ভিসায় গেছল অ্যামেরিকা, তারা সব কেমন করে করে যেন অন্য চাকরি নিয়ে ফেলেছে ওদেশেই। তারা এক এক করে চাকরি ছেড়ে দিলো। রোজ এই খবরগুলো পাই। সেই সমস্ত ইউজার আইডিগুলোকে আলাদা করে ফেলা হয়। শুধু আলোকরঞ্জন ফিরে এসেছিলো সেবার। তারপরে অবশ্য সে চলে গিয়েছিলো আবার, ভালো চাকরির ব্যবস্থা করে। যা বুঝি, সেঞ্চুরীর মাধ্যমে এরা প্রথমে অ্যামেরিকা যায়, তারপরে ওখানেই চাকরির ব্যবস্থা করে ফেলে, সেঞ্চুরী এদের আটকাতে পারে না।
    কিন্তু কিছুদিন আগে যারা গেল, শেখর, সৌম্যদা, ইত্যাদিরা, এদের মধ্যে দুজন ফিরে এসেছিলো। মিঃ ঝাঁ প্রোজেক্টের শেষে ফিরে এলেন, সৌম্যদাকে প্রোজেক্টের গোড়াতেই বলতে গেলে জোর করে ফেরৎ পাঠিয়ে দিলো ক্লায়েন্ট। সেখবর শব্দের গতিবেগে ছড়িয়ে পড়ল, অফিস স্পেসে, ল্যাবে, স্মোকিং রুমে। সৌম্যদা নাকি কিস্যু করে দেখাতে পারে নি। ক্লায়েন্ট খুব কড়া করে মেইল লিখেছে আমাদের অফিসে। খুবই লজ্জার কথা এটা। সবাই জানল, সবাই খুব হিহি করে হাসি মজা করল। দুদিনের মধ্যেই সৌম্যদা অফিসে এলেন।
    সবাই অ্যামেরিকার গল্প শুনতে ঝুঁকে পড়ল সৌমদ্যার কিউবিক্‌ল্‌এ।
    চলে এলে?
    এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?
    আর কটা দিন কাটিয়ে এলে পারতে।
    সবার চোখে কৌতুক।
    ওরে বাবা! আর বলিস না! ফিরে এসে বেঁচে গেছি। ধড়ে প্রাণ পেয়েছি। ও দেশ আমার জন্যে নয়। দ্যাখ, আমি হচ্ছি বেসিক্যালি চক্রবেড়িয়ার ছেলে। এখন বোসপুকুরে ঠাকুরের কৃপায় খুবই ছোট্টো একটা মাথা গুঁজবার ঠাঁই করে নিয়েছি, এইই যথেষ্ট। ওসব অ্যামেরিকা আমার জন্যে নয়।
    কেন সৌম্যদা? এরকম বললে তো আমরাও ভয় পেয়ে যাচ্ছি।
    না না! তোরা ভয় পাবি কেন? তোরা যা! আমি সেকেলে লোক, কোলকাতা না হলে আমার চলবে না। পাড়ায় দুটো মিষ্টির দোকান চাই, পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকান লাগবে একটা, একটা পানের দোকান, একটা ভালো দেখে তেলেভাজার দোকান, রোববারে বাজার করতে যাবো থলে হাতে, টাটকা মাছ কিনব, টাটকা খাসির মাংস, আরো অনেক কিছু আছে, ওসব অ্যামেরিকায় পাবো কোত্থেকে? এ কটাদিনের মধ্যেই একেবারে হাঁফিয়ে উঠেছি। তারপরে বাচ্চাকাচ্চা মানুষ করাতেও শুনলাম ওখানে প্রচুর ঝামেলা। আমি তো মনে কর ওখানে গিয়ে তোদের বৌদিকে নিয়ে, আমাদের বাচ্চা মেয়েটাকে থেকে গেলাম। কোলককাতার অন্য সুখ সুবিধার কথা গুলো মনে কর ছেড়েই দিচ্ছি। কিন্তু তারপর? এক তো, শাসন করা বারণ, চড় চাওপড় মারাও নীকি বেআইনি! শুনেছিস কখনো? তারপরে, মেয়ে যখন একটু বড়ো হবে, তখন কিন্তু তার নিজের মতামত হবে। তখন কিন্তু আমাদের দুজনের মতামতই যথেষ্ট নয়, বুঝলি? এবার ধর আমরা দেশে ফিরে আসতে চাই, আর মেয়ে যদি তখ্ন বেঁকে বসে, যদি বলে যে সে ফিরবে না, তখন কিন্তু আমরা চাইলেও ফিরতে পারব না। এইরকম কড়া নিয়ম ঐ দেশে। বাইরে থেকে যেরকম ভেবে ওখানে গিয়েছিলাম, আদতে দেশটা সেরকম না।
    সবাই হাঁ করে শুনছিলো এই কথাগুলো। কেউ বলে ওঠে, তাহলে তো ফিরে ভালোই করেছো। তোমাকে আমাদের মধ্যে না পয়ে, আমরাও বোর হয়ে গেছলাম এ কদিন। কেউ ঘুনাক্ষরেও কথা তোলে না প্রোজেক্টের ব্যাপারে।
  • adhuli | 230.245.42.248 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৬:৩৭652671
  • কলকাতায় নিজের এক বছর এর কাজের অভিজ্ঞতা মনে পরে যাচ্ছে। এখনো বিতৃষ্ণা-তে ভরে থাকে মনটা ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে, এত বছর পরেও। কাজ তো সব জায়গাতেই এক, কিন্তু এই অকারণে পেছনে লাগার যে অদ্ভুত মানসিকতা, এটা কলকাতায় যতটা দেখেছি, আর কোথাও এতটা পাইনি। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যাই হোক।
  • কল্লোল | 125.242.155.238 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১১:২২652673
  • নাঃ। আনন্দ লোকটাতো দেখছি হারামীর হাতবাক্সো!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন